id
stringlengths
3
7
url
stringlengths
31
795
title
stringlengths
1
93
text
stringlengths
13
179k
en_url
stringlengths
30
381
en_title
stringlengths
1
351
en_text
stringlengths
0
21.3k
1500
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%96%E0%A6%BE
কার্মান রেখা
কার্মান রেখা পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ট থেকে ১০০ কিমি (৬০ মাইল) উপরে একটি কল্পিত রেখা, যা সাধারণত পৃথিবীর বায়ূমন্ডল হতে মহাকাশকে আলাদা করতে ব্যবহৃত হয়। এই সংজ্ঞাটি বিমানচালনাবিদ্যা (aeronautics ) এবং নভশ্চরণবিদ্যা (astronautics) বিষয়ে আন্তর্জাতিক মান নির্ধারক ও তথ্য সংরক্ষক সংস্থা Fédération Aéronautique Internationale (FAI) দ্বারা গ্রহণ করা হয় । হাঙ্গেরীও-আমেরিকান প্রকৌশলী এবং পদার্থবিজ্ঞানী থিওডোর ভন্‌ কার্মান (১৮৮১-১৯৬৩) এর নাম অনুসারে এই নামকরণ করা হয়। তিনি প্রথম গনণা করে দেখান যে, এই সীমায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল এতই পাতলার যে, বিমান চালানোর সম্ভব নয়। কেননা, সেক্ষেত্রে একটি বিমানকে বাতাসের উপর ভরদিয়ে চলাচলের জন্য এর বেগ পৃথিবীর আবর্তন গতির সমান হতে হবে। তথ্যসূত্র বহিসংযোগ FAI ওয়েবসাইটে কার্মান রেখার উপর নিবন্ধ বায়ুমণ্ডলের স্তর – NOAA কার্মান রেখা সঙ্গীত ভিডিও নাসা কার্মান রেখা ক্যালকুলেটর ভূগোল মহাকাশ বায়বান্তরীক্ষ ব্যক্তিনামাঙ্কিত শব্দ বা শব্দগুচ্ছ
https://en.wikipedia.org/wiki/K%C3%A1rm%C3%A1n_line
K%C3%A1rm%C3%A1n_line
null
1501
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF%20%E0%A6%AA%E0%A7%8B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%81%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87
অঁরি পোয়াঁকারে
অঁরি পোয়াঁকারে ( – ) ফরাসি গণিতবিদ, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ, প্রকৌশলী ও দার্শনিক, এবং গণিতের ইতিহাসের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৌলিক প্রতিভা বলে স্বীকৃত। তাকে প্রায়ই বহুশাস্ত্রবিদ এবং গণিতের সর্বশেষ বিশ্ববাদী বলা হয়। কর্মজীবন একজন গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে পোয়াঁকারে বিশুদ্ধ গণিত, ফলিত গণিত, গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান এবং নভোবলবিজ্ঞানে অনেক মৌলিক অবদান রেখেছেন। তিনি পোয়াঁকারে অনুমানকে সুত্রবদ্ধ করেন, যা গণিতবিশ্বে একটি বিশ্ববিখ্যাত অমীমাংসিত সমস্যা হিসেবে বিবেচিত ছিল; শেষ পর্যন্ত ২০০২-০৩ সালে এসে এটি সমাধান করা সম্ভব হয়। পোয়াঁকারে গণিতের ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি যিনি বিশৃঙ্খল নিয়ন্ত্রণবাদী তন্ত্র আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক বিশৃঙ্খলা তত্ত্বের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। এছাড়া তাকে আধুনিক টপোগণিতের একজন প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মহাজাগতিক বলবিজ্ঞান বিষয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তিনি অভিসারী ও অপসারী শ্রেণী সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য উপস্থাপন করেন। তথ্যসূত্র পাদটীকা গণিতবিদ ফরাসি গণিতবিদ ১৮৫৪-এ জন্ম ১৯১২-এ মৃত্যু ব্রুস পদক বিজয়ী ২০শ শতাব্দীর প্রাবন্ধিক সিলভেস্টার পদক বিজয়ী ১৯শ শতাব্দীর ফরাসি গণিতবিদ ১৯শ শতাব্দীর প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর ফরাসি দার্শনিক মহাদেশীয় দার্শনিক প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য গাণিতিক বিশ্লেষক রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য বিজ্ঞানের দার্শনিক মাতেউচি পদক বিজয়ী
https://en.wikipedia.org/wiki/Henri_Poincar%C3%A9
Henri_Poincar%C3%A9
null
1502
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
বাংলাদেশের জেলা
জেলা বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তর। কয়েকটি উপজেলা নিয়ে একটি জেলা গঠিত হয়। প্রশাসনিকভাবে একটি জেলা একটি বিভাগের অধিক্ষেত্রভুক্ত। বর্তমানে বাংলাদেশের বিভাগ ৮টি: ১. ঢাকা বিভাগ, ২. চট্টগ্রাম বিভাগ ৩. রাজশাহী বিভাগ, ৪. রংপুর বিভাগ, ৫. বরিশাল বিভাগ, ৬. সিলেট বিভাগ, ৭. খুলনা বিভাগ, ও ৮. ময়মনসিংহ বিভাগ। বিভাগগুলোর অন্তর্গত ৬৪টি জেলা রয়েছে। এছাড়া প্রস্তাবিত নতুন দুইটি বিভাগ রয়েছে। এগুলো হলো পদ্মা বিভাগ এবং মেঘনা বিভাগ। ১৯৭১-এ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাকালে জেলার সংখ্যা ছিল ১৯ টি। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীতকরণের প্রক্রিয়া চালু করেন। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠালগ্নে পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশের জেলার সংখ্যা ছিল ১৭ টি। ১৯৬৯-এ ময়মনসিংহ জেলার টাঙ্গাইল মহকুমা ও বরিশাল জেলার পটুয়াখালী মহুকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালে ময়মনসিংহের জামালপুর মহুকুমাকে একটি জেলায় উন্নীত করা হয়। শ্রেণিবিভাগ বাংলাদেশ সরকার জেলা সমূহকে গুরুত্ব ও উপজেলার সংখ্যার ভিত্তিতে ৪টি শ্রেণিতে ভাগ করে। শ্রেণিগুলো হলো 'বিশেষ', 'এ', 'বি' ও 'সি'। বর্তমানে ৬৪টি জেলার মধ্যে ‘বিশেষ’ শ্রেণিতে ৬টি, ‘এ’ শ্রেণিতে ২৬টি, ‘বি’ শ্রেণিতে ২৬টি এবং ‘সি’ শ্রেণিতে ৬টি জেলা রয়েছে। ৮ বা এর বেশি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলাকে ‘এ’, ৫ থেকে ৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলাকে ‘বি’ এবং পাঁচটির কম উপজেলা নিয়ে গঠিত জেলাকে ‘সি’ শ্রেণির জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। অবস্থানগত কারণে বেশি গুরুত্বপূর্ণ জেলাকে ‘বিশেষ ক্যাটাগরি’র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গুরুত্ব বিবেচনায় ‘বিশেষ ক্যাটাগরি’তে ছয়টি জেলা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ময়মনসিংহ, খুলনা, ঢাকা, গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী। এছাড়াও ‘এ’ শ্রেণিতে ২৬টি, ‘বি’ শ্রেণিতে ২৭টি ও ‘সি’ শ্রেণিতে ৫টি জেলা রয়েছে। ঢাকা বিভাগে ‘এ’ শ্রেণির ৩টি, ‘বি’ শ্রেণির ৭টি ও ‘সি’ শ্রেণির ১টি জেলা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে ৭টি ‘এ’ শ্রেণি, ৩টি ‘বি’ শ্রেণির জেলা রয়েছে। রাজশাহী বিভাগে ৪টি ‘এ’ শ্রেণি ও ৩টি ‘বি’ শ্রেণির জেলা রয়েছে। রংপুর বিভাগে ‘এ’ শ্রেণির জেলা ৩টি, ‘বি’ শ্রেণির জেলা রয়েছে ৫টি। খুলনা বিভাগে এ শ্রেণির জেলা রয়েছে ২টি, ‘বি’ শ্রেণির জেলা রয়েছে ৪টি জেলা এবং ‘সি শ্রেণির রয়েছে ৩টি জেলা। বরিশাল বিভাগে ‘এ’ শ্রেণির জেলা ২টি, ‘বি’ শ্রেণির জেলা ৩টি এবং ‘সি’ শ্রেণির জেলা ১টি। ময়মনসিংহ বিভাগে ‘এ’ শ্রেণির জেলা ১টি, বি শ্রেণির জেলা ২টি। সিলেট বিভাগের চারটি জেলায়ই ‘এ’ শ্রেণির। শ্রেণি অনুযায়ী সরকার জেলার সরকারি দফতরগুলোতে জনবল নিয়োগ, উন্নয়ন পরিকল্পনা ও ত্রাণ বরাদ্দও করে। নতুন কিছু উপজেলা সৃষ্টি হওয়ায় অনেক জেলারই শ্রেণি পরিবর্তন হওয়ায় সেগুলোকে একত্রিত করে নতুন শ্রেণিবিন্যাস করা হয়েছে। জেলা পরিষদ একজন চেয়ারম্যান, পনেরো জন সদস্য ও পাঁচ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়, যারা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। জেলার প্রধান বাংলাদেশের জেলার বিচার বিভাগের প্রধান। জেলার প্রধান বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, জেলার দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কর্ণধার এবং জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি। তিনি জেলাতে একমাত্র গ্রেড-১ অফিসার। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের জেলার প্রধান ম্যাজিস্ট্রেট। তিনি একাধারে জেলার ম্যাজিস্ট্রেটদের অধিকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের কর্ণধার, জেলা ম্যাজিস্ট্রেসির প্রধান এবং জাস্টিস অব পিস বা শান্তি রক্ষাকারী বিচারপতি হিসেবে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় ও আইনের শাসন সমুন্নত রাখার নিমিত্তে ত্বরিত সিদ্ধান্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য দায়িত্ব ও ক্ষমতাপ্রাপ্ত। জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা, সর্বত্র শান্তি রক্ষা করা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তার দায়িত্ব। ফৌজদারি কার্যবিধির বিধান মোতাবেক প্রাপ্ত ক্ষমতাবলে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলার পুলিশ, প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও বিভাগগুলো ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কিনা বা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে কিনা তা দেখভাল করেন। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জেলাতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান বিচারপতির সাথে যোগাযোগের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাংলাদেশের জেলার দ্বিতীয় প্রধান কোর অফিসার বা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদমর্যাদা ১৭ নং ক্রমিকে অবস্থিত। জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার ডিভিশন ভিত্তিক সেনানিবাসের প্রধান। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা জিওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশে ঢাকা,‌ টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, যশোর,পটুয়াখালী, বগুড়া, রংপুর, সিলেট ইত্যাদি জেলাতে ডিভিশন ভিত্তিক সেনানিবাস রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, যে সেনানিবাসে একটি ডিভিশন আছে সেই সেনানিবাসের প্রধান থাকেন একজন মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অফিসার। আর যেই সেনানিবাসে একটি ব্রিগেড বা লগ এরিয়া রয়েছে সেই সেনানিবাসের প্রধান থাকেন একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অথবা কর্নেল পদের অফিসার। অন্যদিকে, যেই সেনানিবাসে মাত্র একটি ইউনিট থাকে সেই সেনানিবাসের প্রধান থাকেন একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদের অফিসার। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী মেজর জেনারেলের পদমর্যাদা ১৬, ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের পদক্রম ২১, কর্নেলের পদক্রম ২২ এবং লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদক্রম ২৪। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জেলা পরিষদের প্রশাসনিক প্রধান। তার নেতৃত্বে ১৫ জন সদস্য ও ৫ জন সংরক্ষিত আসনের মহিলা সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠিত হয়, যারা জেলার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদক্রম ২৪। জেলা প্রশাসক জেলার মুখ্য আমলা ও ভূমিরাজস্ব কর্মকর্তা। তিনি একই সাথে জেলা কালেক্টর, ডেপুটি কমিশনার ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট‌। ফলে তিনি ভূমি ব্যবস্থা পরিচালনা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সমন্বয় সাধন এবং সাধারণ ও স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে কাজ করেন। জেলা প্রশাসক মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের একজন প্রতিনিধি। তিনি তার কাজের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নিকট জবাবদিহি করেন। তিনি জেলার মুখ্য প্রটোকল অফিসার হিসেবে জেলাতে সফরকারী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রটোকল দেবার দায়িত্ব পালন করেন। অর্ডার অব প্রিসিডেন্স অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের পদক্রম ২৪। পুলিশ সুপার জেলার পুলিশ বাহিনীকে নেতৃত্ব দেন। তিনি থানায় দায়েরকৃত মামলার যথাযথ তদন্ত নিশ্চিত করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক নির্ধারিত আমলী আদালতের অধিক্ষেত্রের প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের ব্যবস্থা করেন। পুলিশ সুপার অপরাধ প্রতিরোধ, উদঘাটন এবং অপরাধীকে আইনের আওতায় আনতে সচেষ্ট থাকেন। তিনি আদালতের নির্দেশ মোতাবেক ওয়ারেন্ট, সমন, তদন্তের আদেশ ইত্যাদি তামিল ও বাস্তবায়নের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আদালত কর্তৃক সুষ্ঠু বিচারকার্য সম্পাদনার স্বার্থে তিনি প্রসিকিউশন বিভাগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতের সাথে সমন্বয় ও সম্পর্ক রক্ষা করেন। ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে পুলিশ সুপারের পদক্রম ২৫। পদমর্যাদা বাংলাদেশের পদমর্যাদা ক্রম অনুযায়ী সিনিয়র পদক্রম ১৫, মেজর জেনারেলের পদক্রম ১৬, চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ১৭, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২১, কর্নেলের পদক্রম ২২, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের পদক্রম ২৩, জেলা প্রশাসক (ডিসি)/লেফটেন্যান্ট কর্নেলের পদক্রম ২৪ এবং পুলিশ সুপার (এসপি) এবং মেজরের পদক্রম ২৫ নম্বরে অবস্থিত। জেলার তালিকা বিভাগীয় জেলাসমুহ সৃষ্টির সময়রেখা কুষ্টিয়া জেলা থেকে মেহেরপুর জেলা ও চুয়াডাঙ্গা জেলা সৃষ্টি। বৃহত্তর জেলা বৃহত্তর জেলা হল ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর বর্তমান বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যেসকল জেলা বিদ্যমান ছিল সেগুলো বৃহত্তর জেলা হিসেবে পরিচিত। বৃহত্তর জেলা ১৭ টি; দেশ ভাগের পূর্বে পূর্ববঙ্গে ১৫ টি জেলা ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় নদীয়া জেলা থেকে বৃহত্তর কুষ্টিয়াকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে জেলার সংখ্যা হয় ১৬ টি। পরবর্তীতে গণভোটের মাধ্যমে বৃহত্তর সিলেট পাকিস্তানে যোগদান করলে জেলা হয় ১৭ টি। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে জেলা ছিল ১৯ টি; পাকিস্তান শাসনামলে ১৯৬৯ সালে টাঙ্গাইল ও পটুয়াখালী জেলার সৃষ্টি হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম নবগঠিত জেলা জামালপুর; ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের ২০তম জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসের দ্বারা ৬৪ টি জেলা গঠন করা হয় ১৯৮৪ সালে; এরশাদ সরকারের সময়। বৃহত্তর জেলাগুলোর তালিকা : বৃহত্তর ঢাকা: ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নরসিংদী। বৃহত্তর ময়মনসিংহ: ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, শেরপুর,টাঙ্গাইল, জামালপুর ও কিশোরগঞ্জ। বৃহত্তর দিনাজপুর: দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়। বৃহত্তর রংপুর: রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী ও গাইবান্ধা। বৃহত্তর রাজশাহী: রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বৃহত্তর যশোর: যশোর, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল। বৃহত্তর কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর। বৃহত্তর খুলনা: খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা। বৃহত্তর ফরিদপুর: ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুর। বৃহত্তর বগুড়া: বগুড়া ও জয়পুরহাট। বৃহত্তর পাবনা: পাবনা ও সিরাজগঞ্জ। বৃহত্তর বরিশাল: বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা। বৃহত্তর কুমিল্লা: কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া। বৃহত্তর নোয়াখালী: নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী। বৃহত্তর সিলেট: সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার। বৃহত্তর চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। পার্বত্য চট্টগ্রাম: রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। প্রস্তাবিত জেলা প্রস্তাবিত জেলা হিসেবে ৬৫ তম জেলা ভৈরব; ২০০৯ সালের ১২ অক্টোবর সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নেয় কিশোরগঞ্জ জেলার ১৩টি উপজেলা থেকে ভৈরবসহ পাঁচটি উপজেলা নিয়ে ভৈরব জেলা গঠন করার। তবে তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। আরও দেখুন বাংলাদেশ বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিষয়ের তালিকা বাংলাদেশের রূপরেখা বাংলাদেশের বিভাগসমূহ বাংলাদেশের জেলাসমূহের তালিকা বাংলাদেশের উপজেলা বাংলাদেশের উপজেলার তালিকা বাংলাদেশের ইউনিয়ন বাংলাদেশের ইউনিয়নের তালিকা বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের তালিকা বাংলাদেশের পৌরসভার তালিকা বাংলাদেশের শহরের তালিকা তথ্যসূত্র বহি:সংযোগ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বাংলাদেশের প্রশাসনিক অঞ্চল এশিয়ার দেশের প্রশাসনিক উপবিভাগ দেশের দ্বিতীয় স্তরের প্রশাসনিক উপবিভাগ বাংলাদেশের ভূগোল সম্পর্কিত তালিকা
https://en.wikipedia.org/wiki/Districts_of_Bangladesh
Districts of Bangladesh
The divisions of Bangladesh are further divided into districts or zilas (Bengali: জেলা). The headquarters of a district is called the district seat (Bengali: জেলা সদর, romanized: zila sadar). There are 64 districts in Bangladesh. The districts are further subdivided into 495 subdistricts or upazilas.
1504
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A7%88%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF
জৈবপ্রযুক্তি
জৈবপ্রযুক্তি বা জীবপ্রযুক্তি হলো বৈজ্ঞানিক ও প্রকৌশলগত নীতি অনুসরণ ও প্রয়োগ করে জীবদের ব্যবহার করার মাধ্যমে মানুষের জন্য কল্যাণকর ও ব্যবহারযোগ্য প্রয়োজনীয় মালামাল তৈরির বিশেষ প্রযুক্তি। এটি মূলত জীববিদ্যাভিত্তিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে যখন প্রযুক্তি কৃষি, খাদ্য বিজ্ঞান, এবং ঔষধশিল্পে ব্যবহৃত হয়। ১৯১৯ সালে হাঙ্গেরীয় কৃষি প্রকৌশলী কারোলি এরাকি সর্বপ্রথম জৈবপ্রযুক্তি শব্দটি ব্যবহার করেন। জাতিসংঘের কনভেনশন অন বায়োলোজিক্যাল ডাইভার্সিটি অনুসারে জৈব প্রযুক্তিকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়: ইতিহাস যদিও কৃষিকাজে জৈবপ্রযুক্তি বহুকাল পূর্বে থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে, তবুও উদ্ভিদের চাষাবাদে এর আধুনিকতম প্রয়োগ দেখা যায়। নব্যপ্রস্তর যুগের নবোপলীয় বিপ্লবের পর থেকেই কৃষিকে খাদ্য উৎপাদনের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম হিসেবে গণ্য করা হয়। আধুনিক যুগের কৃষকেরা শ্রেষ্ঠ বীজ নির্বাচন ও ব্যবহার করে সর্বোচ্চ ফলন ঘটিয়ে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণ করছে। যখন শস্য ও জমির পরিমাণ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছিল, তখন এমন কিছু জীব এবং তাদের থেকে উৎপন্ন পদার্থের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা মাটির উর্বরাশক্তি বৃদ্ধি করে, নাইট্রোজেন সংবদ্ধকরণ করে, এবং ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ বা পেস্ট দমন করে। কৃষির ইতিহাসে দেখা যায়, কৃষক ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন উদ্ভিদের সাথে কোনো উদ্ভিদের প্রজনন ঘটিয়ে উদ্ভিদের জিনে কিছু পরিবর্তন ঘটিয়ে জৈবপ্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ উন্মোচন করেছেন। বিয়ারের গাঁজন ও আদিম জৈবপ্রযুক্তির একটি উদাহরণ। এই পদ্ধতিগুলো মেসোপটেমিয়া,মিশর,চিন এবং ভারতে প্রচলিত ছিল এবং পদ্ধতিগুলোর জীববৈজ্ঞানিক মূলনীতিগুলো এখনো একই রয়েছে। ১৮৫৭ সালে লুই পাস্তুরের গাঁজনবিষয়ক কাজের আগে এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্টভাবে কিছু বোঝা না গেলেও এটিই একপ্রকার খাদ্যকে অন্য প্রকার খাদ্যে রূপান্তরকারী জৈবপ্রযুক্তির প্রাথমিক রূপ। গাঁজন প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন প্রকার খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে অ্যালকোহল উৎপন্ন হয়। হাজার বছর ধরে মানুষ শস্য এবং প্রাণীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। এই পদ্ধতিতে প্রত্যাশিত উন্নত বৈশিষ্ট্যধারী জীবের মিলনে সৃষ্ট সন্তান একই বৈশিষ্ট্য ধারণ করে। উদাহরণস্বরূপ, এই পদ্ধতি ব্যবহার করে বৃহত্তম ও সর্বাধিক মিষ্টি ভুট্টা উৎপাদন করা হয়েছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিজ্ঞানীগণ অণুজীব সম্পর্কে অনেক তথ্য লাভ করতে থাকেন এবং পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের নতুন নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। ১৯১৭ সালে Chaim Weizmann বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে প্রথম বিশুদ্ধ অণুজীব কালচারের প্রয়োগ করেন। তিনি Clostridium acetobutylicum ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে ভুট্টার স্টার্চ প্রক্রিয়াজাত করে অ্যাসিটোন উৎপাদন করেছিলেন যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের খুব দরকার ছিল বিস্ফোরক তৈরি করতে। জৈবপ্রযুক্তি অ্যান্টিবায়োটিকের উন্নতিতেও ব্যবহৃত হয়েছে। অ্যালেকজান্ডার ফ্লেমিং ১৯২৮ সালে Penicillium মোল্ড আবিষ্কার করেন। তার কাজ Howard Florey, Ernst Boris Chain এবং Norman Heatley কে পরিচালিত করে পেনিসিলিন উদ্ভাবনের দিকে। ১৯৪০ সাল থেকে পেনিসিলিন মানুষের দেহে ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ নিরাময়ে ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রয়োগ ৪টি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। এগুলো হচ্ছে স্বাস্থ্য কৃষি শিল্পে শস্য ও অন্যান্য পণ্যের (যেমন: জৈবিক উপায়ে পচনশীল প্লাস্টিক, উদ্ভিজ্জ তেল, জৈব জ্বালানি) ব্যবহার পরিবেশ অণুজীব দ্বারা জৈব পদার্থ প্রক্রিয়াজাতে জৈবপ্রযুক্তির প্রয়োগ হয়। আকরিক থেকে ধাতু নিষ্কাশনে ব্যাকটেরিয়ার ব্যবহারও জৈবপ্রযুক্তির উদাহরণ। এছাড়া কোনো জিনিসকে পুনরায় ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা, বর্জ্য শোধন, কলকারখানা দ্বারা দূষিত এলাকা পরিষ্কার এবং জীবাণু অস্ত্র তৈরিতে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। জৈবপ্রযুক্তির বিভিন্ন শাখাকে শনাক্ত করার জন্য কিছু শব্দ বা পরিভাষা উদ্ভূত হয়েছে। যেমন:- গোল্ড বায়োটেকনোলজি বা স্বর্ণ জৈবপ্রযুক্তি এই শাখাটি মূলত বায়োইনফরমেটিকসের উপরে ভিত্তি করে গঠিত হয়েছে যা জৈবপ্রযুক্তির একটি আন্তঃবিষয়ক ক্ষেত্র যেখানে জীববিজ্ঞানের সমস্যাগুলো দ্রুত সাজানো যায় এবং তথ্য বিশ্লেষণ করা যায় কম্পিউটারের প্রযুক্তি ব্যবহার করে।এ টি অন্যান্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- functional genomics, structural genomics and proteomics যা জৈবপ্রযুক্তি ও ওষুধশিল্পের মূল উপাদান তৈরিতে সাহায্য করে। ব্লু বায়োটেকনোলজি বা নীল জৈবপ্রযুক্তি মূলত সামুদ্রিক সম্পদকে কাজে লাগিয়ে শিল্পক্ষেত্রে বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনের ক্ষেত্র। যেমন- জৈব জ্বালানি পরিশোধনের ক্ষেত্রে সালোকসংশ্লেষণকারী মাইক্রো-শৈবাল ব্যবহৃত হয়। গ্রিন বায়োটেকনোলজি বা সবুজ জৈবপ্রযুক্তি জৈবপ্রযুক্তির সেই শাখা, যেখানে জৈবপ্রযুক্তি কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। যেমন- মাইক্রোপ্রোপাগেশনের মাধ্যমে একসাথে অনেক উদ্ভিদ উৎপন্ন করা যায়। নির্দিষ্ট পরিবেশে বেড়ে ওঠার জন্য ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ (বাইরে থেকে জিন প্রবেশ করানোর মাধ্যমে উৎপন্ন উদ্ভিদ) তৈরি বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকারী এবং অধিক ফলনশীল উদ্ভিদ উৎপাদন। রেড বায়োটেকনোলজি বা লাল জৈবপ্রযুক্তি চিকিৎসা শাস্ত্র এবং ওষুধ শিল্পে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এই শাখার অন্তর্গত কাজগুলো হল টিকা ও অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি, বিভিন্ন থেরাপি, কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি, কৃত্রিম হরমোন তৈরি, স্টেম কোষ প্রভৃতি তৈরি। হোয়াইট বায়োটেকনোলজি বা সাদা জৈবপ্রযুক্তি এটিকে শিল্প জৈবপ্রযুক্তিও বলা হয় কারণ এই প্রযুক্তি শিল্প ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন- বিভিন্ন এনজাইমের সঠিক ব্যবহারের ফলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক পদার্থ তৈরি এবং ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ ধ্বংস করা হয়। ইয়োলো বায়োটেকনোলজি বা হলুদ জৈবপ্রযুক্তি খাদ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি।যেমন- গাঁজন পদ্ধতিতে ওয়াইন, পনির, বিয়ার প্রভৃতি উৎপাদন। বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তিও এই ‌শাখার আলোচ্য বিষয়। গ্রে বা ধূসর জৈবপ্রযুক্তি পরিবেশে প্রয়োগকৃত জৈবপ্রযুক্তি। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবেশ দূষণ দূর করাই এর প্রধান লক্ষ্য। ব্রাউন বা বাদামি জৈবপ্রযুক্তি শুষ্ক বা মরুভূমি এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত জৈবপ্রযুক্তি। এক্ষেত্রে জৈবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বীজ উৎপাদন করা হয় যা কঠিন প্রাকৃতিক সমস্যাগুলো মোকাবেলা করতে সক্ষম। ভায়োলেট বা বেগুনি জৈবপ্রযুক্তি এই ক্ষেত্রটি জৈবপ্রযুক্তির আইনি, নৈতিক এবং দার্শনিক দিকগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত। ডার্ক বা অন্ধকার জৈবপ্রযুক্তি সন্ত্রাসবাদে জৈবপ্রযুক্তির ব্যবহার, জীবাণু অস্ত্র তৈরি এই শাখার অন্তর্গত।যেমন- অণুজীব বা বিষাক্ত পদার্থ ব্যবহার করে মানুষ, গবাদি পশু বা ফসলের রোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষতি সাধন করা। কৃষি তথ্যসূত্র প্রযুক্তি জৈবপ্রযুক্তি অণুজীববিজ্ঞান
https://en.wikipedia.org/wiki/Biotechnology
Biotechnology
Biotechnology is a multidisciplinary field that involves the integration of natural sciences and engineering sciences in order to achieve the application of organisms and parts thereof for products and services. The term biotechnology was first used by Károly Ereky in 1919 to refer to the production of products from raw materials with the aid of living organisms. The core principle of biotechnology involves harnessing biological systems and organisms, such as bacteria, yeast, and plants, to perform specific tasks or produce valuable substances. Biotechnology had a significant impact on many areas of society, from medicine to agriculture to environmental science. One of the key techniques used in biotechnology is genetic engineering, which allows scientists to modify the genetic makeup of organisms to achieve desired outcomes. This can involve inserting genes from one organism into another, and consequently, create new traits or modifying existing ones. Other important techniques used in biotechnology include tissue culture, which allows researchers to grow cells and tissues in the lab for research and medical purposes, and fermentation, which is used to produce a wide range of products such as beer, wine, and cheese. The applications of biotechnology are diverse and have led to the development of essential products like life-saving drugs, biofuels, genetically modified crops, and innovative materials. It has also been used to address environmental challenges, such as developing biodegradable plastics and using microorganisms to clean up contaminated sites. Biotechnology is a rapidly evolving field with significant potential to address pressing global challenges and improve the quality of life for people around the world; however, despite its numerous benefits, it also poses ethical and societal challenges, such as questions around genetic modification and intellectual property rights. As a result, there is ongoing debate and regulation surrounding the use and application of biotechnology in various industries and fields.
1505
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BF%E0%A7%8E%20%E0%A6%93%20%E0%A6%AC%E0%A7%88%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%A8%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8C%E0%A6%B6%E0%A6%B2
তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল
তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বা বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল (ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং নামেও পরিচিত) প্রকৌশল পেশার একটি প্রধান শাখা যা মূলত তড়িৎ বর্তনী ও তড়িৎচুম্বকত্ব নিয়ে কাজ করে। উল্লেখযোগ্য পেশা হিসেবে তড়িৎ প্রকৌশল আত্মপ্রকাশ করে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, যখন টেলিগ্রাফি এবং বিদ্যুৎশক্তির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। বর্তমানে তড়িৎ প্রকৌশলের ব্যাপ্তি বিদ্যুৎশক্তি, নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ইলেকট্রন বিজ্ঞান, টেলিযোগাযোগ সহ আরও কিছু উপশাখা জুড়ে বিস্তৃত। যখন শুধু তড়িৎ ও বৈদ্যুতিন প্রকৌশল বলা হয় তখন মূলত যে শাখা বড় আকারের বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতি যেমন বিদ্যুৎশক্তি সঞ্চালন, বৈদ্যুতিক মোটর নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি সংক্রান্ত কার্যাবলি সম্পাদন করে তাকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে ক্ষুদ্র আকারের বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি যেমন কম্পিউটার, সমন্বিত বর্তনী ইত্যাদি বৈদ্যুতিন প্রকৌশলের অন্তর্গত। অন্য কথায় তড়িৎ বা বৈদ্যুতিক প্রকৌশলীগণ সাধারণত শক্তি সঞ্চালনের জন্য বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাকে কাজে লাগান আর বৈদ্যুতিন প্রকৌশল প্রকৌশলীগণ তথ্য আদানপ্রদানের কাজে বিদ্যুৎ শক্তিকে ব্যবহার করেন। মৌলিক তত্ত্বের দিকটি বিবেচনা করলে বলা যায়, তড়িৎ প্রকৌশলে পরিবাহীর মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয় এবং বৈদ্যুতিন প্রকৌশলে অর্ধপরিবাহী এবং অন্তরকের মধ্য দিয়ে প্রবাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়। ইতিহাস আদি ইতিহাস সপ্তদশ শতক থেকেই বিদ্যুৎশক্তি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি আকর্ষণীয় বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু এর উপরে গবেষণা করার তীব্রতা বাড়তে থাকে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এসে। এই শতকে গেয়র্গ সিমোন ওম, মাইকেল ফ্যারাডে, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। ১৮২৭ সালে জর্জ ও'ম কোন তড়িৎ পরিবাহীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ ও এর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্যের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয়ের সূত্র প্রদান করেন যা ও‍’মের সূত্র নামে পরিচিত। মাইকেল ফ্যারাডে ১৮৩১ সালে তড়িৎচুম্বকীয় আবেশ আবিষ্কার করেন এবং ১৮৭৩ সালে জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল বিদ্যুৎ ও চৌম্বক শক্তির একীভূত রূপ সম্পর্কিত তত্ত্ব প্রকাশ করেন। তখন তড়িৎ প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবেই বিবেচিত হতো। পরে, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী প্রদান শুরু করে। ১৮৮৩ সালে জার্মানির টেখনিশে উনিভের্সিটেট ডার্মষ্টাট এবং যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মত তড়িৎ প্রকৌশল পাঠ্যসূচী প্রণয়ন করে। এই সময়ে তড়িৎ প্রকৌশল সম্পর্কিত কাজের পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। ১৮৮২ সালে সর্বপ্রথম টমাস আলভা এডিসন লোয়ার ম্যানহাটনের ঊনপঞ্চাশ জন গ্রাহকের কাছে ১১০ ভোল্টের বিদ্যুৎ সরবরাহ করেন। তার সরবরাহকৃত বিদ্যুৎ ছিল একমুখী প্রবাহ ধরনের। ১৮৮৭ সালে নিকোলা টেসলা পরিবর্তী প্রবাহ ধরনের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কৃতিস্বত্ব বা স্বত্ত গ্রহণ করেন। পরবর্তী কয়েক বছর টেসলা ও এডিসনের মধ্যে সরবরাহকৃত বিদ্যুতের ধরন নিয়ে দ্বন্দ্ব চলতে থাকে। এই দ্বন্দ্ব বিদ্যুতের লড়াই (War of Currents) নামে পরিচিত। বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সঞ্চালনের পদ্ধতি হিসেবে পরিবর্তী প্রবাহ একমুখী প্রবাহকে সরিয়ে স্থান দখল করে নেয় মূলত সঞ্চালন ব্যবস্থার তুলনামূলক দক্ষতা ও উন্নততর নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে। এই দুজনের অবদানের কারণে তড়িৎ প্রকৌশল বেশ অগ্রসর হয়ে যায়। আবেশ মোটর ও পলিফেজ ব্যবস্থার উপরে টেসলার কাজ অনেক দিন ধরে বিজ্ঞানীদেরকে প্রভাবিত করে রাখে। অন্যদিকে টমাস এডিসন বৈদ্যুতিক টেলিগ্রাফ এবং স্টক টিকারের প্রভূত উন্নতি ঘটান যা তার কোম্পানির জন্য অত্যন্ত লাভজনক হয়। এডিসনের কোম্পানি পরে বিখ্যাত জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। ইতিমধ্যে ১৮ শতকের শেষ দিকে তড়িৎ প্রকৌশলের জগতে অন্যান্য দিকপালের আগমন শুরু হয়ে যায়।<ref>{{ওয়েব উদ্ধৃতি | শিরোনাম = ইতিহাস | কর্ম = ন্যাশনাল ফায়ার প্রোটেকশন এসোসিয়েশন | ইউআরএল = http://www.nfpa.org/itemDetail.asp?categoryID=500&itemID=18020&URL=About%20Us/History | সংগ্রহের-তারিখ = 19 January 2006 | প্রকাশক = NFPA জার্নাল | আর্কাইভের-ইউআরএল = https://web.archive.org/web/20070928060123/http://www.nfpa.org/itemDetail.asp?categoryID=500&itemID=18020&URL=About%20Us%2FHistory | আর্কাইভের-তারিখ = ২৮ সেপ্টেম্বর ২০০৭ | অকার্যকর-ইউআরএল = হ্যাঁ }}</ref> আধুনিক উন্নয়ন বেতারের উন্নয়নের সময়কালে অনেক বিজ্ঞানী ও আবিষ্কারক বেতার এবং ইলেক্ট্রনিক্সের উন্নয়নে অবদান রাখেন। হাইন্‌রিশ হের্ৎস ১৮৮৮ সালে তার বিখ্যাত ইউএইচএফ (UHF) পরীক্ষার সময়ে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে বেতার তরঙ্গ প্রেরণ (স্পার্ক গ্যাপ ট্রান্সমিটারের সাহায্যে) ও চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। ১৮৯৫ সালে নিকোলা টেসলা নিউ ইয়র্কের ওয়েষ্ট পয়েন্টে অবস্থিত তার পরীক্ষাগার থেকে ৮০.৪ কিমি দূরে বেতার সংকেত ধরতে সক্ষম হন। ১৯০৪ সালে জন ফ্লেমিং প্রথম বেতার টিউব, যা ডায়োড নামে পরিচিত, আবিষ্কার করেন। দুই বছর পরে রবার্ট ভন লিবেন ও লি ডি ফরেষ্ট পৃথক গবেষণায় বিবর্ধক টিউব বা ট্রায়োড আবিষ্কার করেন। তারপর ১৯৩১ সালে ম্যানফ্রেড ভন আর্ডেনে ক্যাথোড রশ্মি নল আবিষ্কার করেন যা পরবর্তীতে টেলিভিশন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছিল। ১৯২০ সালে আলবার্ট হাল ম্যাগনিট্রন আবিষ্কার করেন যা ১৯৪৬ সালে পার্সি স্পেনসারকে মাইক্রোওয়েভ ওভেন উদ্ভাবনে সহায়তা করেছিল। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী ডঃ উইম্পেরিসের নেতৃত্বে রাডার (এটিও ম্যাগনিট্রন ব্যবহার করে তৈরী) উদ্ভাবনের পথে অনেকদূর এগিয়ে যায় এবং ১৯৩৬ সালের আগস্ট মাসে বাউডসেতে প্রথম রাডার কেন্দ্র স্থাপন করে। ১৯৪১ সালে কনরাড ৎসুজে পৃথিবীর প্রথম সম্পূর্ণ র্কমক্ষম ও প্রোগ্রাম করার উপযোগী কম্পিউটার জেডথ্রি (Z3) জনসমক্ষে আনেন। এরপর ১৯৪৬ সালে জন প্রেসপার একার্ট ও জন মাউচলি এনিয়াক উদ্ভাবন করেন যা পৃথিবীতে কম্পিউটার যুগের সূচনা করে। এইসব যন্ত্রের গাণিতিক দক্ষতা বিজ্ঞানীদেরকে অ্যাপোলো মিশন ও নাসার চাঁদে অবতরণ সহ সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তির আবির্ভাব ঘটাতে এবং নিত্য নতুন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়তা করছে। ১৯৪৭ সালে উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শকলি, জন বারডিন এবং ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইনের ট্রানজিস্টর উদ্ভাবন ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের জগতে নতুন দুয়ার উন্মোচন করে এবং এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫৮ সালে জ্যাক কিলবি এবং ১৯৫৯ সালে রবার্ট নয়েস পৃথকভাবে সমন্বিত বর্তনী উদ্ভাবন করেন। ইন্টেলের মার্সিয়ান হফ ১৯৬৮ সালে প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর উদ্ভাবন করেন এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার আবিষ্কারের পথ করে দেন। যদিও ইন্টেল ৪০০৪, ৪-বিটের প্রসেসর যা ১৯৭১ সালে আবিষ্কৃত হয়, প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে কিন্তু ১৯৭৩ সালে ৮-বিটের প্রসেসর ইন্টেল ৮০৮০ আবিস্কৃত হওয়ার পরই প্রথম ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্ম হয়। এই কম্পিউটারটির নাম ছিল অল্টেয়ার ৮৮০০। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা তড়িৎ প্রকৌশলীগণ একটি স্নাতক সম্মাননা অর্জন করে থাকেন যার প্রধান বিষয় থাকে তড়িৎ প্রকৌশল। এই সম্মাননা সাধারণত চার অথবা পাঁচ বছরের পড়াশোনার সফল সমাপনান্তে প্রদান করা হয় এবং এই সম্মাননা বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে স্নাতক (সম্মান) প্রকৌশল, স্নাতক (সম্মান) বিজ্ঞান, স্নাতক (সম্মান) প্রযুক্তি বা স্নাতক (সম্মান) প্রায়োগিক বিজ্ঞান নামে প্রদান করা হয়। এই সম্মাননার পাঠ্যতালিকায় প্রধানত পদার্থবিজ্ঞান, গণিত, পপকল্প ব্যবস্থাপনা এবং তড়িৎ প্রকৌশলের নির্দিষ্ট বিষয়াদি থাকে। প্রাথমিক পর্যায়ের বিষয়গুলোতে তড়িৎ প্রকৌশলের সকল বা প্রায় সকল শাখা সর্ম্পকে শিক্ষাদান করা হয়। পরবর্তীতে পড়াশুনার শেষের দিকে শিক্ষার্থীরা এক বা একাধিক শাখা বেছে নিয়ে তাতে বিশেষত্ব অর্জন করে। কিছু সংখ্যক তড়িৎ প্রকৌশলী স্নাতকোত্তর সম্মাননা যেমন স্নাতকোত্তর প্রকৌশল সম্মাননা বা প্রকৌশলে এমপিএইচ সম্মাননাও অর্জন করেন। স্নাতকোত্তর প্রকৌশল সম্মাননার পাঠ্যতালিকা গবেষণা, বিষয়ভিত্তিক পড়াশোনা অথবা এই দুইয়ের সংমিশ্রণে গঠিত হয়। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের অনেক দেশে স্নাতকোত্তর প্রকৌশল সম্মাননাকে একটু দীর্ঘ দৈর্ঘ্যের স্নাতক সমমানের সম্মাননা গণ্য করা হয়। পেশাদার প্রকৌশলী বিশ্বের অধিকাংশ দেশে প্রকৌশলে স্নাতক সম্মাননা প্রাপ্তি পেশাদার প্রকৌশলী হবার প্রথম ধাপ হিসেবে গণ্য হয়। প্রকৌশলে স্নাতক সম্মাননা অর্জনের পরে একজন প্রকৌশলীকে পেশাদারিত্বের সনদ অর্জনের জন্য বেশ কিছু শর্ত (প্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতা অর্জনসহ) পূরণ করতে হয়। এই সনদ অর্জনের পরে একজন প্রকৌশলী পেশাদার প্রকৌশলী(যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও দক্ষিণ আফ্রিকায়), চার্টার্ড প্রকৌশলী ( যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, ভারত ও জিম্বাবুয়েতে), পি ইঞ্জ (বাংলাদেশে), চার্টার্ড পেশাদার প্রকৌশলী (অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে), ইউরোপীয় প্রকৌশলী (ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভুক্ত বেশিরভাগ দেশে) ইত্যাদি নামে অভিহিত হন। পেশাদারিত্বের সনদ অর্জনের লাভ দেশ ভেদে কমবেশি হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় "কেবলমাত্র একজন পেশাদার প্রকৌশলীই (প্রফেশনাল ইঞ্জিনিয়ার) জনস্বার্থে বা ব্যক্তিমালিকানাধীনে নির্মিত প্রকৌশল কাজ সমূহে মোহরাংকন করতে পারবেন।‍" কোন কোন দেশে এই যোগ্যতা রাজ্য এবং রাষ্ট্রীয় আইন দ্বারা বিধিবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে যেমন কুইবেকের "ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাক্ট"। কোন কোন দেশে অবশ্য এরকম কোন আইনের অস্তিত্ব নেই। তবে আইন থাকুক বা নাই থাকুক, সব দেশের সব পেশাদারিত্বের সনদ প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ নীতিগত ভাবে একটি নিয়ম মেনে চলে যা তাদের সকল সদস্যকে মেনে চলতে হয় অন্যথায় বহিষ্কৃত হবার সম্ভাবনা থাকে। এভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলি প্রকৌশল পেশার নীতিগত মান সমুন্নত রাখতে মূল্যবান ভূমিকা পালন করে। এমনকি আদালতে যেখানে কাজের জন্য সনদের অত্যন্ত ক্ষুদ্র মূল্য প্রদান করা হয় অথবা মূল্য দেওয়াই হয়না, সেখানেও প্রকৌশলীদের চুক্তিনামা মেনে চলতে হয়। কোন কারণে যদি একজন প্রকৌশলীর নির্মাণ বা কাজ ব্যর্থ হয়, তাহলে তিনি অবহেলার দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন, এমনকি চরমক্ষেত্রে "ক্রিমিনাল নেগলিজেন্স" বা অবহেলার অপরাধে দণ্ডিত হতে পারেন। একজন প্রকৌশলীর কাজকে অবশ্যই আরো অনেক রীতি এবং নীতি যেমন গৃহনির্মাণ নীতি বা পরিবেশ আইন মেনে সম্পন্ন হতে হয়। তড়িৎ প্রকৌশলীদের উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইইই) এবং ইন্সটিটিউশন অফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইই)। আইইইই-এর ভাষ্যমতে তারা তড়িৎ প্রকৌশলে পৃথিবীর মোট প্রকাশনা ও নিবন্ধের ৩০ শতাংশ প্রকাশ করে, সারা বিশ্বে তাদের ৩৬০,০০০ জনেরও বেশি সদস্য রয়েছে এবং তারা বাৎসরিক ৩০০টিরও বেশি সম্মেলনের আয়োজন করে। আইই ১৪টি জার্নাল প্রকাশ করে, সারা বিশ্বে তাদের সদস্য সংখ্যা ১২০,০০০ জনেরও বেশি, এবং তারা দাবী করে তারা ইউরোপের সর্ববৃহৎ পেশাদার প্রকৌশলী সংস্থা। প্রাযুক্তিক জ্ঞান এবং দক্ষতা প্রকৌশলীদের ভুবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। তাই পেশাদারিত্ব বজায় রাখার স্বার্থে প্রযুক্তি সর্ম্পকিত সংস্থার সদস্য হওয়া, নিজ নিজ ক্ষেত্রের সাময়িকীসমূহে অবহিত থাকা এবং ক্রমাগত জ্ঞানার্জন করার অভ্যাস বজায় রাখা জরুরী। যন্ত্রপাতি এবং কর্মক্ষেত্র গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম থেকে শুরু করে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন পর্যন্ত তড়িৎ প্রকৌশলীরা প্রযুক্তির একটি বিশাল স্থান দখল করে আছেন। তারা বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা এবং ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন, আবিষ্কার বা উদ্ভাবন, নিরীক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় তারা টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার নকশা প্রণয়ন করতে পারেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের কার্যক্রম দেখাশুনা করতে পারেন, ঘরবাড়ির আলো ও বিদ্যুৎ বণ্টন ব্যবস্থা দেখাশুনা করতে পারেন, গৃহকর্মে ব্যবহার্য যন্ত্রের নকশা প্রণয়ন করতে পারেন অথবা শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতির বৈদ্যুতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেন। তড়িৎ প্রকৌশলের মূল ভিত্তি হল পদার্থবিজ্ঞান আর গণিত, কারণ এর মাধ্যমে কোন যান্ত্রিক ব্যবস্থার কার্যপদ্ধতি কী হবে তার যৌক্তিক ও গাণিতিক বিশ্লেষন করা যায়। আধুনিককালের বেশিরভাগ প্রকৌশল কার্যক্রমে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয় এবং বৈদ্যুতিক ব্যবস্থা বা যন্ত্রপাতির নকশা প্রনয়নের সময় কম্পিউটারের সহায়তা নেওয়া এখন স্বাভাবিক হয়ে গেছে। যদিও চিন্তা বা আইডিয়াগুলো অঙ্কনের মাধ্যমে দ্রুত অন্যদের কাছে পৌঁছে দেয়ার দক্ষতাকে এখনো অমূল্য বিবেচনা করা হয়। যদিও সকল তড়িৎ প্রকৌশলীরই প্রাথমিক বর্তনী তত্ত্ব বা সার্কিট থিওরি জানা আছে, তবুও তাদের কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত বলে তারা কাজ অনুসারে বিভিন্ন তত্ত্ব ব্যবহার করেন। মূলত কে কোন তত্ত্ব ব্যবহার করেন তা তাদের কর্মক্ষেত্রের উপরে নির্ভর করে। যেমন একজন তড়িৎ প্রকৌশলী যার কর্মক্ষেত্র ভিএলএসআই (সমন্বিত বর্তনী বা আইসি ডিজাইনের কাজ), তার কাজের জন্য কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান এবং কঠিন অবস্থা পদার্থবিজ্ঞান নিত্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু যিনি বৃহদাকারের তড়িৎ যন্ত্রাদি নিয়ে কাজ করেন তার জন্য এগুলো নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। এমনকি একজন তড়িৎ প্রকৌশলী যিনি টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন, তার জন্য বর্তনী তত্ত্বও অপ্রয়োজনীয় হতে পারে কারণ তিনি কাজ করেন তৈরি যন্ত্রাংশ নিয়ে। সম্ভবত তড়িৎ প্রকৌশলীদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় দক্ষতা হচ্ছে দৃঢ় গাণিতিক দক্ষতা, কম্পিউটার জ্ঞান এবং তড়িৎ প্রকৌশলের সাথে সম্পর্কিত প্রাযুক্তিক ভাষা ও ধারণা সহজেই আত্মস্থ করার ক্ষমতা। বেশিরভাগ প্রকৌশলীর ক্ষেত্রেই প্রকৌশল সম্পর্কিত কাজ তাদের কাজের একটা ছোট অংশ। অন্যান্য কাজ যেমন গ্রাহক বা ব্যবহারকারীদের সাথে প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা, বাজেট তৈরী, প্রকল্পের সময়সূচী তৈরি ইত্যাদি তাদের কাজের একটা বড় অংশ বলে বিবেচিত হয়। অনেক জ্যেষ্ঠ বা ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলী কলাকুশলী এবং অন্যান্য প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে গঠিত একটা দলের নেতৃত্ব দেন। এজন্য প্রকল্প ব্যবস্থাপনার দক্ষতা একটা বড় ভূমিকা পালন করে। বেশিরভাগ প্রকৌশল প্রকল্পের সাথে দলিলপত্রাদি তৈরি ও ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন হয় এবং দক্ষ লিখিত যোগাযোগ ক্ষমতা এক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তড়িৎ প্রকৌশলীদের কাজের স্থান তাদের কাজের ধরনের মতই বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরির কারখানার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অত্যাধুনিক গবেষণাগারে যেমন তড়িৎ প্রকৌশলীদেরকে দেখা যায়, তেমনি তড়িৎ প্রকৌশলীদেরকে পাওয়া যায় কোন পরামর্শ প্রদানকারী সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে অথবা কোন ভূ-গর্ভস্থ খনিতে। কর্মক্ষেত্রে তড়িৎ প্রকৌশলীগনকে প্রায়ই বিজ্ঞানী, ইলেকট্রিশিয়ান, কম্পিউটার প্রোগ্রামার বা অন্যান্য প্রকৌশলী ইত্যাদি বিভিন্ন পেশার লোকজনদের কাজকর্ম দেখাশোনা করতে হয়। শাখাসমূহ তড়িৎ প্রকৌশলের অনেক শাখা রয়েছে, তার মধ্যে নিম্নোক্ত শাখাগুলো সর্বাপেক্ষা পরিচিত। অনেক তড়িৎ প্রকৌশলী এগুলোর একটি শাখায় কাজ করলেও অনেকেই আবার একাধিক শাখার সমন্বয়ে কাজ করেন। কখনওবা কোন কোন শাখা যেমন ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বা কম্পিউটার প্রকৌশলকে তাদের বিপুল ব্যাপ্তির কারণে প্রকৌশলেরই আলাদা বিভাগ বলে ধরা হয়। বিদ্যুৎ শক্তি তড়িৎ সংক্রান্ত প্রকৌশল বা শক্তি প্রকৌশল প্রধানত বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন, সঞ্চালন ও বণ্টন এবং এ সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি যেমন রূপান্তরক, বৈদ্যুতিক জেনারেটর, বৈদ্যুতিক মোটর ইত্যাদি তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে কাজ করে। পৃথিবীর অনেক এলাকায় অনেক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের জেনারেটরকে একসাথে একটি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত করা হয় যাকে গ্রিড বলে। সরকারীভাবে এই গ্রিডের রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনা করা হয়। বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীগণ এই কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন থেকে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করে সস্তায় বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারেন। বিদ্যুৎ শক্তি প্রকৌশলীরা এই গ্রিডের নকশা প্রণয়ন ও স্থাপন থেকে শুরু করে এই গ্রিডের সাথে সংযুক্ত হওয়া যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল মূলত অত্যাধুনিক যান্ত্রিক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক সমূহের নকশা প্রণয়ন নিয়ে কাজ করে যেন এই যান্ত্রিক ব্যবস্থাগুলোকে চাহিদা অনুযায়ী কাজ করানো যায়। এমন নিয়ন্ত্রক প্রণয়ন করার জন্য তড়িৎ প্রকৌশলীরা তড়িৎ বর্তনী, ডিজিটাল সংকেত প্রসেসর এবং অতিক্ষুদ্র নিয়ন্ত্রক ব্যবহার করে থাকেন। নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলের ব্যবহার আধুনিক বাণিজ্যিক বিমান সংস্থার ফ্লাইট এবং প্রচালন ব্যবস্থা থেকে শুরু করে অনেক আধুনিক মোটরযানের গতি নিয়ন্ত্রণ পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। শিল্প কারখানার স্বনিয়ন্ত্রণের (Automation) ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে। নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলীরা নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রনয়নের সময় প্রায়ই ফিডব্যাক ব্যবস্থা ব্যবহার করেন। উদাহরণ স্বরূপ স্বয়ংক্রীয় গতি নিয়ন্ত্রিত মোটরগাড়ীর কথা বলা যায়। এগুলোতে মোটরযানের গতির উপরে সার্বক্ষনিক নজরদারী করা হয় এবং ফলাফল নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ক্রমাগত প্রেরণ করা হয়। ফলে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ফলাফল অনুসারে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। নভোখেয়াযান উৎক্ষেপণ থেকে শুরু করে মহাশূন্যে এর পরিচালনায় নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশল ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রনিক্স ইলেকট্রনিক প্রকৌশল প্রধানত ইলেকট্রনিক বর্তনীর নকশা প্রণয়ন এবং পরীক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। ইলেকট্রনিক বর্তনী সাধারণত রোধক, ধারক, আবেশক, ডায়োড প্রভৃতি দ্বারা কোন নির্দিষ্ট কার্যক্রম সম্পাদন করার জন্য তৈরি করা হয়। বেতার যন্ত্রের টিউনার যেটি শুধুমাত্র আকাংক্ষিত বেতার স্টেশন ছাড়া অন্য গুলোকে বাতিল করতে সাহায্য করে, ইলেকট্রনিক বর্তনীর একটি উদাহরণ। পাশে আরেকটি উদাহরনের ছবি দেওয়া হলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল পরিচিত ছিল রেডিও প্রকৌশল নামে। তখন এর কাজের পরিধি ছিল রাডার, বাণিজ্যিক বেতার এবং আদি টেলিভিশন নিয়ে। বিশ্বযুদ্ধের পরে যখন ভোক্তা বা ব্যবহারকারীকেন্দ্রিক যন্ত্রপাতির উন্নয়ন শুরু হল, তখন থেকে প্রকৌশলের এই শাখা বিস্তৃত হতে শুরু করে এবং আধুনিক টেলিভিশন, অডিও ব্যবস্থা, কম্পিউটার এবং মাইক্রোপ্রসেসর এই শাখার অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে বেতার প্রকৌশল নামটি ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়ে দশকের শেষ নাগাদ ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল নাম ধারণ করে। ১৯৫৯ সালে সমন্বিত বর্তনী উদ্ভাবনের পূর্বে ইলেকট্রনিক বর্তনী তৈরি হত বড় আকারের পৃথক পৃথক যন্ত্রাংশ দিয়ে। এই সব বিশাল আকারের যন্ত্রাংশ দিয়ে তৈরি বর্তনীগুলো বিপুল জায়গা দখল করত এবং এগুলো চালাতে অনেক শক্তি লাগত। এই যন্ত্রাংশগুলোর গতিও ছিল অনেক কম। অন্যদিকে সমন্বিত বর্তনী বা আইসি অসংখ্য (প্রায়ই ১০ লক্ষ বা এক মিলিয়নেরও বেশি) ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র তড়িৎ যন্ত্রাংশ, যাদের বেশিরভাগই মূলত ট্রানজিস্টর, দিয়ে গঠিত হয়। এই যন্ত্রাংশগুলোকে একটা ছোট্ট, প্রায় একটা কয়েনের আকারের সিলিকন চিলতে বা চিপের উপরে সমন্বিত করে সমন্বিত বর্তনী তৈরি করা হয়। বর্তমানের অত্যাধুনিক কম্পিউটার বা নিত্য দিনের প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি সবই প্রধানত সমন্বিত বর্তনী বা আইসি দ্বারা নির্মিত। মাইক্রোইলেকট্রনিক্স মাইক্রোইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল অত্যন্ত ক্ষুদ্র, মূলত আণুবীক্ষণীক স্তরে, ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশের নকশা ও নির্মাণ নিয়ে কাজ করে। এসব ক্ষুদ্র ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ সমন্বিত বর্তনী তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয় অথবা কখনো কখনো নিজেরাই ইলেকট্রনিক যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সবচেয়ে প্রচলিত এবং পরিচিত মাইক্রোইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ হচ্ছে অর্ধপরিবাহী ট্রানজিস্টর। কিন্তু সকল প্রধান ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ যেমন রোধক, ধারক, আবেশক ইত্যাদিকে আণুবীক্ষণীক স্তরে তৈরি করা যায়। প্রায় সকল মাইক্রো ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ তৈরির জন্য সিলিকনকে অন্য কোন রাসায়নিক পদার্থের সাথে আণবিক স্তরে নির্দিষ্ট অনুপাতে মিশিয়ে চাহিদামতো ততিচ্চুম্বকীয় বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি করা হয়। এই কারণে মাইক্রো ইলেকট্রনিক্সের সাথে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান ও রসায়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ নাম শুনেই বোঝা যায় সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণ মূলত বৈদ্যুতিক বিশ্লেষণ এবং প্রভাবায়নের কাজ করে। সংকেত দুই ধরনের হতে পারে। প্রথমত অ্যানালগ সংকেত, যেখানে সংকেত তথ্য অনুযায়ী ক্রমাগত পরিবর্তিত হয়। দ্বিতীয়ত ডিজিটাল সংকেত, যেখানে সংকেত তথ্য অনুসারে বিচ্ছিন্ন কিছু মান অনুযায়ী দফায় দফায় পরিবর্তিত হয়। অ্যানালগ সংকেতের ক্ষেত্রে শাব্দিক সংকেত বিবর্ধন ও পরিশ্রুতকরণ এবং টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে সংকেত মড্যুলেশন ও ডিমড্যুলেশন সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণের আওতায় পড়ে। অন্যদিকে ডিজিটাল সংকেতের ক্ষেত্রে ডিজিটালি স্যাম্প্‌লকৃত সংকেতের সংকোচন, ত্রুটি চিহ্নিতকরণ ও ত্রুটি সংশোধন সংকেত প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্যে পড়তে পারে। টেলিযোগাযোগ টেলিযোগাযোগ প্রকৌশল তড়িৎ প্রকৌশলের সেই শাখা যা সমকেন্দ্রিক তার (কো-এক্সিয়াল কেবল), অপটিক্যাল ফাইবার অথবা শূন্যস্থানের মত কোন চ্যানেল বা মাধ্যম দ্বারা তথ্য আদানপ্রদান নিয়ে কাজ করে। শূন্যস্থান দিয়ে তথ্য আদানপ্রদানের খাতিরে তথ্যকে প্রেরণের উপযোগী বাহক কম্পাংকে (ক্যারিয়ার ফিকোয়েন্সি) রূপান্তরের জন্য বাহক তরঙ্গে কোডিং করতে হয়। এই প্রক্রিয়াটির নাম মড্যুলেশন। সুপরিচিত এনালগ মডুলেশন কৌশলের মধ্যে বিস্তার মড্যুলেশন এবং কম্পাংক মডুলেশন উল্লেখযোগ্য। কোন যোগাযোগ ব্যবস্থার দক্ষতা এবং ব্যয় ব্যবহৃত মড্যুলেশন কৌশলের উপরে নির্ভর করে। দক্ষ ব্যবস্থা স্বাভাবিকভাবেই বেশি ব্যয়বহুল। তাই দক্ষ যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রণয়ন করার সাথে সাথে ব্যয়ও সংকোচন করে এ দুইয়ের মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রাখা প্রকৌশলীর দায়িত্ব। একটি যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করা হয়ে গেলে টেলিযোগাযোগ প্রকৌশলীগণ তখন ঐ ব্যবস্থায় ব্যবহৃতব্য প্রেরক ও গ্রাহক যন্ত্রের (ট্রান্সমিটার ও রিসিভার) নকশা করেন। কখনো কখনো গ্রাহক ও প্রেরক যন্ত্র একসাথে করে ট্রান্সসিভার নামের উভমুখী যোগাযোগের যন্ত্র তৈরি করা হয়। প্রেরক যন্ত্র ডিজাইন করার সময় এর দ্বারা ব্যবহৃতব্য তড়িৎ শক্তির পরিমাণ একটা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে কারণ এর সাথে প্রেরক যন্ত্রের প্রেরিত সংকেতের শক্তি জড়িত। যদি কোন প্রেরক যন্ত্রের প্রেরিত সংকেতের শক্তি অপর্যাপ্ত হয়, তবে প্রেরিত তথ্যের সাথে নয়েজ মিশে তথ্য নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সহায়ক যন্ত্র সম্পর্কিত প্রকৌশল সহায়ক যন্ত্র সম্পর্কিত প্রকৌশলে প্রধানত পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন জিনিস পরিমাপের যেমন চাপ, তাপমাত্রা, বেগ ইত্যাদি মাপ-জোখের উপযোগী যন্ত্র তৈরী নিয়ে কাজ করা হয়। এই সকল সূক্ষাতিসূক্ষ যন্ত্রপাতি তৈরী করার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের উপরে খুব ভালো দখল থাকতে হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ঊড়োজাহাজ নিয়ন্ত্রণের জন্য এমন যন্ত্র প্রয়োজন হয় যা ক্রমাগত বাতাসের গতি এবং ভূমি হতে উচ্চতা মাপতে থাকে। আবার পেলশিয়ার-সীবেক এফেক্ট নীতি ব্যবহার করে তাপযুগলের সাহায্যে যে কোন দুটি বিন্দুর মধ্যে তাপমাত্রার পার্থক্য নিরূপণ করা হয়। প্রায়শঃই দেখা যায় সহায়ক যন্ত্রপাতিসমূহ এককভাবে ব্যবহৃত হয় না, বরং কোন বৃহদ তড়িৎ প্রকৌশল ব্যবস্থার অংশ বা সহায়ক হিসেবে অথবা সংবেদী যন্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এগুলো এমনকি দৈনন্দিন কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিতেও ব্যবহৃত হয়। যেমন রেফ্রিজারেটরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সুইচটি ব্যবহৃত হয় তা আসলে একটি তাপযুগল। এই তাপযুগল আবার বড় বড় ফার্নেসের স্থির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করার কাজেও ব্যবহৃত হয়। এই কারণে সহায়ক যন্ত্র সম্পর্কিত প্রকৌশলকে প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ প্রকৌশলের প্রতিরূপ বলা হয়ে থাকে। কম্পিউটার প্রকৌশল কম্পিউটার প্রকৌশল কম্পিউটার ডিজাইন ও কম্পিউটার ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে নতুন হার্ডওয়্যার ডিজাইন থেকে শুরু করে পিডিএ ডিজাইন এমনকি কোন শিল্প কারখানা নিয়ন্ত্রণের জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত। কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ কোন কম্পিউটার ব্যবস্থার সফটওয়্যার নিয়েও কাজ করেন। অবশ্য প্রায়শই জটিল সফটওয়্যার ডিজাইন করাকে সফটওয়্যার প্রকৌশলের মধ্যে ধরা হয় এবং সফটওয়্যার প্রকৌশলকে আলাদা একটি শাখা ধরা হয়। কম্পিউটার প্রকৌশলীগণ যে সমস্ত যন্ত্র সম্পর্কে কাজ করেন, ডেস্কটপ কম্পিউটার তার একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ। বর্তমানে কম্পিউটার ভিডিও গেমের কনসোল থেকে শুরু করে ডিভিডি প্লেয়ার পর্যন্ত নাগরিক জীবনের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে জড়িয়ে আছে। নিদ্যদিনের ব্যবহার্য সকল ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি কম্পিউটারের সবচেয়ে ব্যবহার বেশি লাগছে অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাগারে। আধুনিক গবেষণা এমন স্তরে পৌঁছেছে যে, বাস্তব যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরীক্ষণ পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে উঠেছে। তাই কম্পিউটার সিম্যুলেশন তার জায়াগা করে নিয়েছে। আধুনিক জ্যোতির্বিজ্ঞান, বিশ্বতত্ত্ব, জৈব প্রযুক্তি এবং জিনতত্ত্বে এর ব্যবহার নিত্য নৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এই বিষয়টি অবশ্য সফ্‌টওয়্যার প্রকৌশলের অধীনে আলোচিত হয়। সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শাখা তড়িৎ প্রকৌশল ও যন্ত্র প্রকৌশলের সমন্বয়ে মেকাট্রনিক্স বা তড়িৎযন্ত্র প্রকৌশল শাখার সৃষ্টি হয়েছে। এরকম সমন্বিত যন্ত্র ব্যবস্থাকে ইলেকট্রোমেকানিক্যাল বা তড়িৎযান্ত্রিক ব্যবস্থা বলা হয় এবং এখন এগুলোর দ্রুত প্রসার ঘটছে। স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন ব্যবস্থা, গার্হস্থ্য তাপ নিয়ন্ত্রণ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং উড়োজাহাজ ও মোটর গাড়ীর বিভিন্ন উপব্যবস্থা তড়িৎযান্ত্রিক ব্যবস্থার উদাহরণ।তড়িৎযান্ত্রিক ব্যবস্থা'' শব্দটি মূলত বৃহদাকারের ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলেও ভবিষ্যতে অত্যন্ত ক্ষুদ্রাকৃতির তড়িৎযন্ত্রের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ডিজিটাল প্রজেক্টরে উন্নত ছবি সৃষ্টির জন্য, ইঙ্কজেট প্রিন্টারে উচ্চ মানের ছবি ছাপার নজল তৈরির জন্য ক্ষুদ্র তড়িৎযন্ত্র (মাইক্রো ইলেকট্রোমেকানিক্যাল ব্যবস্থা - এমইএমএস) ব্যবহৃত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে যে, ভবিষ্যতে শরীরে অভিযোজন করার উপযোগী অতি ক্ষুদ্র চিকিৎসা যন্ত্র এবং উন্নততর আলোক যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রণয়নের কাজে ক্ষুদ্র তড়িৎযন্ত্র সহায়তা করবে। আরেকটি সম্পর্কিত শাখা হলো বায়োমেডিক্যাল প্রকৌশল, যা মূলত চিকিৎসাবিদ্যার যন্ত্রপাতি ডিজাইন নিয়ে কাজ করে। এর মধ্যে স্থায়ী যন্ত্রপাতি যেমন ভেন্টিলেটর, এমআরআই স্ক্যানার এবং ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাফ মনিটর এবং বহনযোগ্য যন্ত্রপাতি যেমন ককলিয়ার ইমপ্ল্যান্ট, কৃত্রিম পেসমেকার এবং কৃত্রিম হৃদযন্ত্র অন্তর্ভুক্ত। আরও দেখুন ইনস্টিটিউট অফ ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার্স কম্পিউটার প্রকৌশল যন্ত্র প্রকৌশল ইলেকট্রনিক্স বায়োমেডিকেল প্রকৌশল টেলিযোগাযোগ শক্তি প্রকৌশল তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আইইইই-এর ইতিহাস বৈদ্যুতিক বর্তনী তৈরি সম্বন্ধে জানুন আইইইই-এর অসদ জাদুঘর স্লোয়ান ক্যারিয়ার সেন্টার তড়িৎ প্রকৌশল - তড়িৎ প্রকৌশলকে পেশা হিসেবে নিতে আগ্রহীদের জন্য। এমআইটি ওপেন কোর্সওয়্যার - তড়িৎ প্রকৌশলের অনলাইন কোর্স সিলেবাস ও লেকচার। প্রকৌশলের শাখা কম্পিউটার প্রকৌশল ইলেকট্রনিক প্রকৌশল প্রকৌশল তড়িৎ প্রকৌশল
https://en.wikipedia.org/wiki/Electrical_engineering
Electrical engineering
Electrical engineering is an engineering discipline concerned with the study, design, and application of equipment, devices, and systems which use electricity, electronics, and electromagnetism. It emerged as an identifiable occupation in the latter half of the 19th century after the commercialization of the electric telegraph, the telephone, and electrical power generation, distribution, and use. Electrical engineering is divided into a wide range of different fields, including computer engineering, systems engineering, power engineering, telecommunications, radio-frequency engineering, signal processing, instrumentation, photovoltaic cells, electronics, and optics and photonics. Many of these disciplines overlap with other engineering branches, spanning a huge number of specializations including hardware engineering, power electronics, electromagnetics and waves, microwave engineering, nanotechnology, electrochemistry, renewable energies, mechatronics/control, and electrical materials science. Electrical engineers typically hold a degree in electrical engineering, electronic or electrical and electronic engineering. Practicing engineers may have professional certification and be members of a professional body or an international standards organization. These include the International Electrotechnical Commission (IEC), the Institute of Electrical and Electronics Engineers (IEEE) and the Institution of Engineering and Technology (IET, formerly the IEE). Electrical engineers work in a very wide range of industries and the skills required are likewise variable. These range from circuit theory to the management skills of a project manager. The tools and equipment that an individual engineer may need are similarly variable, ranging from a simple voltmeter to sophisticated design and manufacturing software.
1508
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B6%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF
মহাকাশ প্রযুক্তি
মহাকাশ প্রযুক্তি বলতে পৃথিবীর সীমানার বাইরে মহাকাশে বিভিন্ন কাজে (যেমন - মহাকাশযানের পরিচালনা, মহাকাশ পর্যবেক্ষণ, ইত্যাদি) ব্যবহৃত প্রযুক্তিকে বোঝায়। বহিঃসংযোগ মহাকাশ প্রযুক্তি মহাকাশ প্রযুক্তি
https://en.wikipedia.org/wiki/Space_technology
Space technology
Space technology is technology for use in outer space. Space technology includes space vehicles such as spacecraft, satellites, space stations and orbital launch vehicles; deep-space communication; in-space propulsion; and a wide variety of other technologies including support infrastructure equipment, and procedures. Many common everyday services for terrestrial use such as weather forecasting, remote sensing, satellite navigation systems, satellite television, and some long-distance communications systems critically rely on space infrastructure. Of the sciences, astronomy and Earth science benefit from space technology. New technologies originating with or accelerated by space-related endeavors are often subsequently exploited in other economic activities.
1513
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%81%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87-%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%BF%20%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B0
অঁদ্রে-মারি অম্পেয়্যার
অঁদ্রে-মারি অম্পেয়্যার (এম্পিয়ার বা অ্যাম্পিয়ার নামেও পরিচিত) () (জানুয়ারি ২০, ১৭৭৫ – জুন ১০, ১৮৩৬) একজন ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী। তাড়িৎ-চৌম্বকত্বে অবদানের জন্য তিনি বিখ্যাত। তড়িৎ প্রবাহের আন্তর্জাতিক একক অ্যাম্পিয়ারের নামকরণ তার সম্মানে করা হয়েছে। তড়িচ্চুম্বকত্বে অবদান অম্পেয়্যার পর্যবেক্ষণ করেছিলেন, দুটি বিদ্যুৎবাহী তারকে যদি সমান্তরালে পাশাপাশি রাখা হয় তবে তার দুটি পরস্পরকে আর্কষণ করে। তবে তারদুটিতে একই দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করতে হবে। আর যদি দু তারে বিদ্যুৎ প্রবাহ যদি পরস্পরের বিপরীত দিকে হয়, তাহলে তারদুটি পরস্পরকে বিকর্ষণ করবে। তিনি একটা পরীক্ষাও করেছিলেন এ বিষয়ে। একটি তারকে স্পিংয়ের মতো করে পেঁচিয়েছিলেন। ফলে তারে একটি কুণ্ডলি তৈরি হয়েছিল। যাকে বলে কয়েল। কুণ্ডলির একটি প্যাঁচ আরেকটি পাঁচের সাথে সমান্তরালে অবস্থান করে। এরপর সেই কুণ্ডলির ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলেন অ্যাম্পিয়ার। যেহেতু একই দিকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হচ্ছে, তাই প্রতিটা প্যাঁচেরও বিদ্যুৎ প্রবাহের দিক এক। আবার প্যাঁচগুলো পরস্পরের সমান্তরালে রয়েছে, সুতরাং এদের ভেতরে প্রবল আকর্ষণ বল কাজে করে। একটি প্যাঁচ আরেকটি প্যাঁচের আকর্ষণ শক্তি বাড়িয়ে দেয়। পুরো কুণ্ডলিটি তাই একটা শক্তিশালি চুম্বকের মতো কাজ করে। কুণ্ডলির একটা দিক চুম্বকের উত্তর মেরুর মতো এবং আরেকটা দিক চুম্বকের দক্ষিণ মেরুর মতো কাজ করে। বৈদ্যুতিক মোটর এই নীতির উপর নির্ভর করে ঘোরে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Ampère and the history of electricity - a French-language, edited by CNRS, site with Ampère's correspondence (full text and critical edition with links to manuscripts pictures, more than 1000 letters), an Ampère bibliography, experiments, and 3D simulations Ampère Museum⇾Biographie d'Ampère - a French-language site from the museum in Poleymieux-au-Mont-d'or, near Lyon, France Catholic Encyclopedia on André Marie Ampère André-Marie Ampère: The Founder of Electromagnetism - Background information and related experiments lccn ১৭৭৫-এ জন্ম ১৮৩৬-এ মৃত্যু ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী ফরাসি রোমান ক্যাথলিক রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য চুম্বকত্ব স্থির তড়িৎ রয়েল সোসাইটি অব এডিনবার্গের সভ্য রয়েল সুয়েডীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য
https://en.wikipedia.org/wiki/Andr%C3%A9-Marie_Amp%C3%A8re
Andr%C3%A9-Marie_Amp%C3%A8re
null
1514
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B6%20%E0%A6%87%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B8%20%E0%A6%85%E0%A6%82%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%AE
অন্দের্শ ইয়োনাস অংস্ট্রেম
অন্দের্শ ইয়োনাস অংস্ট্রেম (আগস্ট ১৩, ১৮১৪ – জুন ২১, ১৮৭৪) একজন সুয়েডীয় পদার্থবিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ। তিনি বর্ণালীবীক্ষণের জনকদের একজন। জীবনী অন্দের্শ ১৮১৪ সালের ১৩ আগস্ট মেডেলপ্যাড, সুইডেন এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ইয়োহান অংস্ট্রেম। অন্দের্শ হার্নোসান্ডে পড়াশুনা করেন। ১৮৩৩ সালে তিনি উপসালায় চলে যান এবং সেখানে উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৩৯ সালে তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের ডসেন্ট হন। ১৮৪২ সালে ব্যবহারিক জ্যোতির্বিদ্যার অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য তিনি স্টকহোম মানমন্দির এ যান। পরের বছর তিনি উপসালা জ্যোতির্বিদ্যা মানমন্দির এ তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি (১৮৫০), রয়েল সোসাইটি (১৮৭০), এবং ফরাসি ইনস্টিটিউট (১৮৭৩) এর নির্বাচিত সদস্য। তার পুত্র নুট অংস্ট্রেমও (১৮৫৭-১৯১০) একজন পদার্থবিদ। তিনি ১৮৭৪ সালের ২১ জুন উপসালায় মৃত্যুবরণ করেন। তথ্যসূত্র ১৮১৪-এ জন্ম ১৮৭৪-এ মৃত্যু সুয়েডীয় পদার্থবিজ্ঞানী সুয়েডীয় জ্যোতির্বিদ ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য রয়েল সুয়েডীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী
https://en.wikipedia.org/wiki/Anders_Jonas_%C3%85ngstr%C3%B6m
Anders_Jonas_%C3%85ngstr%C3%B6m
null
1515
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%93%20%E0%A6%85%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A7%8B%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%A1%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B
আমেদেও অ্যাভোগাড্রো
লরেঞ্জো রোমানো আমেদেও কার্লো অ্যাভোগাড্রো, কোয়ারেগনা এবং সেরেতোর কাউন্ট (, এছাড়াও , ৯ আগস্ট ১৭৭৬৯ জুলাই ১৮৫৬) একজন ইতালীয় রসায়নবিদ। তিনি বর্তমানের অ্যাভোগাড্রোর সূত্র নামের আণবিক তত্ত্বের জন্য অধিক সমাদৃত। এই সূত্রানুযায়ী, নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও চাপে একই আয়তনের গ্যাসসমূহে একই সংখ্যক অণু থাকবে। তাকে সম্মান জানাতে ১ মোলে প্রাথমিক সত্তার (পরমাণু, অণু, আয়ন বা অন্য কণা) পরিমাণ, কে অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক নামকরণ করা হয়েছে, যা সাতটি মৌলিক এসআই এককের মধ্যে অন্যতম, যাকে NA দ্বারা প্রকাশ করা হয়। জীবনী আমেদেও অ্যাভোগাড্রো ১৭৭৬ খ্রিষ্টাব্দে সার্ডিনিয়া কিংডমের তুরিনে (বর্তমানে ইতালির অংশ) এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ২০ বছর বয়সে যাজকীয় অনুশাসন বিষয়ে স্নাতক হন এবং অনুশীলন শুরু করেন। খুব শীঘ্রই তিনি নিজেকে পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিতের (তখন ইতিবাচক দর্শন বলা হতো) দিকে উত্সর্গ করেছিলেন, এবং ১৮০৯ সালে ভেরসেলির একটি লাইসোতে (উচ্চ বিদ্যালয়) পড়াতে শুরু করেছিলেন। তার পরিবার সেখানেই বসবাস করত এবং সেখানে তাদের কিছু সম্পত্তিও ছিল। ১৮১১ সালে তিনি Essai d'une manière de déterminer les masses relatives des molécules élémentaires des corps, et les proportions selon lesquelles elles entrent dans ces combinaisons ("কোনো পদার্থের অনুগুলির আপেক্ষিক ভর এবং অনুগুলি কি অনুপাতে পদার্থটিতে অবস্থান করে তা নির্ণয় বিষয়ক একটি প্রবন্ধ ") শিরোনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন, যার মধ্যে "অ্যাভোগাড্রো অনুকল্প" অন্তর্ভুক্ত ছিল। অ্যাভোগাড্রো এই প্রবন্ধটি জিন-ক্লড ডেলামেথেরির Journal de Physique, de Chimie et d'Histoire naturelle ("পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং প্রাকৃতিক ইতিহাসের সাময়িকী")-এ জমা দিয়েছেন। ১৮২০ সালে তিনি তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হন। তুরিন তখন প্রথম ভিক্টর এমমানুয়েল এর অধীনে সার্ডিনিয়ার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত সেভোয়ার্ড কিংডমের রাজধানী ছিল। অ্যাভোগাড্রো ১৮২১ সালের বিপ্লব আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। ফলস্বরূপ, তিনি ১৮২৩ সালে তার পদটি হারিয়েছিলেন ( বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হিসাবে, এটি ছিল "এই আকর্ষণীয় বিজ্ঞানীকে ভারী শিক্ষাদানের দায়িত্ব থেকে বিশ্রাম দেওয়া হলো, যাতে তিনি তার গবেষণাগুলিতে আরও ভাল মনোযোগ দিতে সক্ষম হন")। অবশেষে, রাজা চার্লস অ্যালবার্ট ১৮৪৮ সালে একটি সংবিধান (স্ট্যাটুটো আলবার্টিনো) মঞ্জুর করেছিলেন। এর আগে অ্যাভোগাড্রো ১৮৩৩ সালে তুরিনের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে এসেছিলেন, যেখানে তিনি আরও বিশ বছর অধ্যাপনা করেছিলেন। অ্যাভোগাড্রোর ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায় যা নিখুঁত ও ধর্মীয় বলে মনে হয়। তিনি ফেলিসিতা মাজেকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের ছয় সন্তান ছিল। অ্যাভোগাড্রো পরিসংখ্যান, আবহাওয়া এবং ওজন এবং পরিমাপ নিয়ে কাজ করেছেন (তিনি পাইডমন্টে মেট্রিক সিস্টেম প্রবর্তন করেছিলেন) এবং পাবলিক ইন্সট্রাকশন সম্পর্কিত রয়্যাল সুপিরিয়র কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। তিনি ১৮৫৬ সালের ৯ জুলাই মৃত্যুবরণ করেন। সাফল্য আণবিক তত্ত্বে অ্যাভোগাড্রোর অবদানকে সম্মান জানাতে প্রতি মোল পদার্থে অণুর সংখ্যা NA কে "অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক" নামকরণ করা হয়েছে। এই ধ্রুবকের মান হলো অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবক ব্যবহার করে রাসায়নিক বিক্রিয়ার সংখ্যা হিসাব করা হয়। এর ফলে রসায়নবিদগন কোন বিক্রিয়ায় কতটুকু উৎপাদ উৎপন্ন হবে তা খুবই নিখুঁত ও নির্ভুলতার সাথে নির্ণয় করতে পারেন। জোহান জোসেফ লসমিড সর্বপ্রথম অ্যাভোগাড্রো ধ্রুবকের মান বা এক মোলে কণার সংখ্যা গণনা করেছিলেন যা কখনও কখনও জার্মান ভাষী দেশগুলিতে লসমিড সংখ্যা হিসাবে পরিচিত (লসমিড ধ্রুবকের এখন অন্য অর্থ রয়েছে)। অ্যাভোগাড্রোর সূত্র অনুযায়ী একই আয়তনের (একই তাপমাত্রা এবং চাপে) সকল গ্যাসের ভর যথাক্রমে তাদের আণবিক ভরের সাথে সম্পর্কিত। সুতরাং, কোনো নমুনার জ্ঞাত পরিমাণের ভর থেকে একটি গ্যাসের আপেক্ষিক আণবিক ভর গণনা করা যেতে পারে। ১৮০৮ সালে জোসেফ লুই গে-লুস্যাক আয়তন (এবং গ্যাসগুলির সংমিশ্রণ) সম্পর্কে তার সূত্র প্রকাশের পর অ্যাভোগাড্রো এই অনুকল্পটি বিকশিত করেছিলেন। অ্যাভোগাড্রোকে সবচেয়ে বড় যে সমস্যার সমাধান করতে হয়েছিল তা হলো পরমাণু এবং অণু সম্পর্কিত সসময়ের বিভ্রান্তি। তাঁর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলো স্পষ্টভাবে একটি অপরটির থেকে আলাদা করা। তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে গ্যাসগুলি অণু দ্বারা গঠিত এবং এই অণুগুলি পরমাণুর সমন্বয়ে গঠিত। (উদাহরণস্বরূপ, জন ডাল্টন এই সম্ভাবনাটি বিবেচনা করেননি।) অ্যাভোগাড্রো আসলে "পরমাণু" শব্দটি ব্যবহার করেননি কারণ "পরমাণু" এবং "অণু" শব্দ দুটি প্রায় কোনও পার্থক্য ছাড়াই তখন ব্যবহার করা হতো। এছাড়াও, তিনি ওজন থেকে পৃথক হিসেবে ভরের সংজ্ঞার প্রতি আরও মনোযোগ দিয়েছিলেন। ১৮১৫ সালে গ্যাসের ঘনত্ব সম্পর্কে তিনি Journal de Physique (পদার্থবিজ্ঞান সাময়িকী)-তে Mémoire sur les masses relatives des molécules des corps simples, ou densités présumées de leur gaz, et sur la constitution de quelques-uns de leur composés, pour servir de suite à l'Essai sur le même sujet (একই বিষয় সম্পর্কিত প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিকে প্রাথমিক অণুসমূহের আপেক্ষিক ভর, বা গ্যাসগুলির প্রস্তাবিত ঘনত্ব এবং তাদের কয়েকটি মিশ্রণের সংস্থাগুলি সম্পর্কিত টীকা) শিরোনামের নিবন্ধ প্রকাশ করেছিলেন। ১৮২১ সালে তিনি আরও একটি গবেষণাপত্র, Nouvelles considérations sur la théorie des proportions déterminées dans les combinaisons, et sur la détermination des masses des molécules des corps (মিশ্রণে নির্ধারিত অনুপাতের তত্ত্ব সম্পর্কিত নতুন বিবেচনা এবং পরমাণুর ভর নির্ধারণের বিষয়ে) প্রকাশ করেছিলেন যার পরপরই Mémoire sur la manière de ramener les composès organiques aux lois ordinaires des proportions déterminées ("নির্ধারিত অনুপাতের সাধারণ সূত্রগুলো দ্বারা জৈব যৌগ অনুসন্ধানের পদ্ধতি বিষয়ে টীকা")। ১৮৪১ সালে Fisica dei corpi ponderabili, ossia Trattato della costituzione materiale de' corpi তে তার গবেষণা ৪ খণ্ডে প্রকাশ করেন। তত্ত্বটির প্রতিক্রিয়া বিজ্ঞানী সম্প্রদায় অ্যাভোগাড্রোর তত্ত্বের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেয়নি এবং তা অবিলম্বে গৃহীত হয় নি। তিনবছর পর অঁদ্রে-মারি অম্পেয়্যার একটি অনুরূপ তত্ত্ব (তার ; অনুপাতের সংকল্পে যে ব্যবস্থাগুলি সংখ্যার সাথে মিলিত হয় এবং তাদের অবিচ্ছেদ্য কণাগুলি তৈরি হয় সেই কণাগুলির সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থা অনুযায়ী সংহত হয় সেই বিষয়ে) প্রস্তাব করেছিলেন, তবে একই তাত্পর্য তাঁর তত্ত্বের প্রতিও দেখানো হয়েছিল। কেবল চার্লস ফ্রেডেরিক গেরহার্ট এবং অগাস্ট লরেন্টের জৈব রসায়ন সম্পর্কিত অধ্যয়নগুলির মাধ্যমেই এটি প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছিল যে অ্যাভোগাড্রোর সূত্রানুযায়ী একই পরিমাণ গ্যাসের আয়তন একই কেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, কিছু অজৈব পদার্থ ব্যবহার করে সম্পাদিত পরীক্ষাগুলি বিপরীত ফলাফল দিয়েছিল। অ্যাভোগাড্রোর মৃত্যুর চার বছর পরে ১৮৬০ সালে কার্লসরুহে কংগ্রেসের ঘোষণা অনুযায়ী স্ট্যানিসালাও ক্যানিজারো শেষ পর্যন্ত এটিকে সমাধান করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে এই ব্যতিক্রমগুলি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আণবিক বিচ্ছিন্নতার কারণে হয়েছিল এবং অ্যাভোগাড্রোর সূত্র কেবল আণবিক ভরই নয়, পারমাণবিক ভরকেও নির্ধারণ করেছিল। ১৯১১ সালে তুরিনে একটি সভা অ্যাভোগাড্রোর ১৮১১ সালের পত্রটি প্রকাশের শততম বার্ষিকী স্মরণ করে। রাজা তৃতীয় ভিক্টর এমানুয়েল উপস্থিত ছিলেন এবং রসায়নে অ্যাভোগাড্রোর দুর্দান্ত অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। ১৮৫৭ সালে রুডলফ ক্লসিয়াসের প্রস্তাবিত গ্যাসের গতিতত্ত্বের সাথে অ্যাভোগাড্রোর সূত্রের আরও প্রমাণ সরবরাহ করেছিলেন। ইয়াকোবুস হেনরিকুস ফান্ট হফ দেখিয়েছিলেন যে অ্যাভোগাড্রোর তত্ত্বটি দ্রবণের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। অ্যাভোগাড্রো পারমাণবিক-আণবিক তত্ত্বের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে প্রশংসিত। আরও দেখুন অ্যাভোগাড্রাইট (খনিজ) তথ্যসূত্র আরও পড়ুন Morselli, Mario. (1984). Amedeo Avogadro, a Scientific Biography. Kluwer. . Review of Morselli's book: Pierre Radvanyi, "Two hypothesis of Avogadro", 1811 Avogadro's article analyzed on BibNum (click 'Télécharger'). বহিঃসংযোগ ১৭৭৬-এ জন্ম ১৮৫৬-এ মৃত্যু ইতালীয় রোমান ক্যাথলিক ইতালীয় রসায়নবিদ প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
https://en.wikipedia.org/wiki/Amedeo_Avogadro
Amedeo Avogadro
Lorenzo Romano Amedeo Carlo Avogadro, Count of Quaregna and Cerreto (, also US: , Italian: [ameˈdɛːo avoˈɡaːdro]; 9 August 1776 – 9 July 1856) was an Italian scientist, most noted for his contribution to molecular theory now known as Avogadro's law, which states that equal volumes of gases under the same conditions of temperature and pressure will contain equal numbers of molecules. In tribute to him, the ratio of the number of elementary entities (atoms, molecules, ions or other particles) in a substance to its amount of substance (the latter having the unit mole), 6.02214076×1023 mol−1, is known as the Avogadro constant. This constant is denoted NA, and is one of the seven defining constants of the SI.
1516
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%A8%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%A1%E0%A6%BF%E0%A6%A8
জন বারডিন
জন বারডিন একজন মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী। ট্রানজিস্টর আবিষ্কারের জন্য তিনি উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শকলি ও ওয়াল্টার হাউজার ব্র্যাটেইন এর সাথে ১৯৫৬ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান। পরবর্তীতে ১৯৭২ সালে তিনি অতিপরিবাহিতার তত্ত্ব আবিষ্কারের জন্য দ্বিতীয় বারের জন্য নোবেল পুরস্কার লাভ করেন লিয়ান নেইল কুপার এবং জন রবার্ট শ্রিফারের সাথে। ট্রানজিস্টর উদ্ভাবনের ফলেই আধুনিক যুগে প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটেছে। উদ্ভব ঘটেছে তথ্যপ্রযুক্তির যুগের। বর্তমানে কম্পিউটার থেকে শুরু করে ক্ষেপণাস্ত্র পর্যন্ত সর্বত্রই ট্রানজিস্টরের ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। তার অতিপরিবাহিতা আবিষ্কারও আধুনিকতার প্রসারে অবদান রেখেছে। এই প্রযুক্তিটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সিএটি স্ক্যান এবং এমআরআই করার জন্য ব্যবহৃত হয়। ১৯৯০ সালে লাইফ সাময়িকী কর্তৃক লিপিবদ্ধ "শতাব্দীর সেরা ১০০ মার্কিন প্রভাবশালী ব্যক্তি" শীর্ষক তালিকায় বারডিন স্থান পেয়েছিলেন। জীবনী জন বারডিন ১৯০৮ সালের ২৩ মে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের ম্যাডিসনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ডঃ চার্লস আর বারডিন এবং "অ্যালথিয়া হারমার বারডিনের" পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন। তার বাবা চার্লস বারডিন শারীরস্থান বিজ্ঞানের শিক্ষক এবং ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসনের চিকিৎসাবিজ্ঞান স্কুলের প্রথম ডিন ছিলেন। বিয়ের আগে অ্যালথিয়া ডিউই ল্যাবরেটরি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন এবং একটি পুরো ডেকোরেশন ব্যবসা পরিচালনা করতেন। বিয়ের পর তিনি চারুকলার জগতে পরিচিত মুখ হয়ে উঠেন। ছোটবেলায়ই গণিতে বারডিনের মেধার পরিচয় পাওয়া গিয়েছিল। সপ্তম গ্রেডে পড়ার সময় বারডিনের শিক্ষক তাকে গণিতের উচ্চতর পড়াশোনার প্রতি উৎসাহিত করতেন। পরবর্তী বছরগুলোতে বারডিন তার এই শিক্ষককে গণিতের তার প্রথম উৎসাহ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি ১৯২৮ সালে University of Wisconsin–Madison থেকে তড়িৎ প্রকৌশলে ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯২৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তড়িৎ প্রকৌশলেই মাস্টার অব সায়েন্স ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৩৬ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবন ১৯৩৮ সালে বারডিন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করে। ১৯৪৩ সালে তাকে ম্যানহাটন প্রজেক্ট এ যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়, কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানান। ১৯৪৫ সালে বারডিন বেল ল্যাব্‌স এ যোগ দেন। তিনি সেখানে উইলিয়াম ব্র্যাডফোর্ড শকলির নেতৃত্বাধীন সলিড স্টেট ফিজিক্সের একটি গবেষণা দলে যোগ দেন। ১৯৫১ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইন এ যোগ দেন। তিনি সেখানে তড়িৎ প্রকৌশল ও পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিসেবে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। পুরস্কার ও সম্মাননা Stuart Ballentine Medal, Franklin Inst. (1952); Buckley Prize, Am. Physical Soc. (1954); John Scott Medal, Philadelphia (1955); Nobel Prize (Physics) shared with W. H. Brattain and W. Shockley (1956); Vincent Bendix Award, Amer. Soc. Eng. Educ. (1964); National Medal of Science (1965); Michelson-Morley Award, Case-Western Reserve (1968); Medal of Honor, Inst. of Electrical and Electronics Eng. (1971); Nobel Prize (Physics) shared with L. N. Cooper and J. R. Schrieffer (1972); James Madison Medal, Princeton (1973); National Inventors Hall of Fame (1974); Franklin Medal, Franklin Inst. (1975); Presidential Medal of Freedom (1977); Washington Award, Western Soc. Eng. (1983); Founders Awards, Nat. Acad. Eng. (1984); Lomonosov Prize, USSR Acad. of Sci. (1988); The Harold Pender Award, University of Pennsylvania (1988). সম্মানসূচক ডিগ্রি তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ The Bardeen Archives at the University of Illinois at Urbana-Champaign Biography from PBS Biography from the Nobel Foundation Biography from Nobel-Winners.com IEEE History Center biography Interview of John Bardeen about his experience at Princeton IEEE 2nd Int. Conference on Computers, Communications and Control (ICCCC 2008), an event dedicated to the Centenary of John Bardeen (1908-1991) Associated Press Obituary of John Bardeen as printed in The Boston Globe মার্কিন পদার্থবিজ্ঞানী মার্কিন প্রকৌশলী মার্কিন উদ্ভাবক নোবেল বিজয়ী পদার্থবিজ্ঞানী পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞানী তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী বেল গবেষণাগারের বিজ্ঞানী ১৯০৮-এ জন্ম প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ১৯৯১-এ মৃত্যু উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয় অ্যাট আর্বানা-শ্যাম্পেইনের শিক্ষক আইইইই মেডেল অব অনার বিজয়ী ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স বিজয়ী মার্কিন অজ্ঞেয়বাদী ২০শ শতাব্দীর মার্কিন পদার্থবিদ মার্কিন নোবেল বিজয়ী মার্কিন তড়িৎ প্রকৌশলী আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটির বিশিষ্ট সভ্য রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম প্রাপক কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী
https://en.wikipedia.org/wiki/John_Bardeen
John Bardeen
John Bardeen (; May 23, 1908 – January 30, 1991) was an American physicist and electrical engineer. He is the only person to be awarded the Nobel Prize in Physics twice: first in 1956 with William Shockley and Walter Brattain for the invention of the transistor; and again in 1972 with Leon N. Cooper and John Robert Schrieffer for a fundamental theory of conventional superconductivity known as the BCS theory. The transistor revolutionized the electronics industry, making possible the development of almost every modern electronic device, from telephones to computers, and ushering in the Information Age. Bardeen's developments in superconductivity—for which he was awarded his second Nobel Prize—are used in nuclear magnetic resonance spectroscopy (NMR), medical magnetic resonance imaging (MRI), and superconducting quantum circuits. Born and raised in Wisconsin, Bardeen received a Ph.D. in physics from Princeton University. After serving in World War II, he was a researcher at Bell Labs and a professor at the University of Illinois. In 1990, Bardeen appeared on Life magazine's list of "100 Most Influential Americans of the Century." Bardeen is the first of only three people to have won multiple Nobel Prizes in the same category (the others being Frederick Sanger and Karl Barry Sharpless in chemistry), and one of five persons with two Nobel Prizes.
1517
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%A8%20%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%81%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9F%20%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2
জন স্টুয়ার্ট বেল
জন স্টুয়ার্ট বেল (জুন ২৮, ১৯২৮ – অক্টোবর ১, ১৯৯০) একজন আইরিশ পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি বেল এর উপপাদ্য এর প্রণেতা। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান শাখায় এই উপপাদ্যটিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বলে গণ্য করা হয়। শিক্ষাজীবন বেল ১৯৪৮ সালে কুইন্স ইউনিভার্সিটি অব বেলফাস্ট থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫৬ সালে বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ John Bell and the most profound discovery of science (December 1998) The Most Profound Discovery of Science (September 2006) ১৯২৮-এ জন্ম ১৯৯০-এ মৃত্যু আয়ারল্যান্ডীয় পদার্থবিজ্ঞানী আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্সের সদস্য ২০শ শতাব্দীর ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রয়েল সোসাইটির সভ্য কণা পদার্থবিজ্ঞানী কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানী ইংরেজি অনুবাদক
https://en.wikipedia.org/wiki/John_Stewart_Bell
John Stewart Bell
John Stewart Bell FRS (28 July 1928 – 1 October 1990) was a physicist from Northern Ireland and the originator of Bell's theorem, an important theorem in quantum physics regarding hidden-variable theories. In 2022, the Nobel Prize in Physics was awarded to Alain Aspect, John Clauser, and Anton Zeilinger for work on Bell inequalities and the experimental validation of Bell's theorem.
1519
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%81-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%93
জঁ-বাতিস্ত বিও
জঁ-বাতিস্ত বিও () (২১শে এপ্রিল, ১৭৭৪-৩রা ফেব্রুয়ারি, ১৮৬২) ছিলেন ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী, গণিতবিদ এবং জ্যোতির্বিদ। পাদটীকা ফরাসি গণিতবিদ ফরাসি পদার্থবিজ্ঞানী ১৭৭৪-এ জন্ম ১৮৬২-এ মৃত্যু আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য ফরাসি পুরকৌশলী প্যারিসের বিজ্ঞানী আলোক পদার্থবিজ্ঞানী ১৯শ শতাব্দীর ফরাসি গণিতবিদ ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য রয়েল সুয়েডীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য ফরাসি রোমান ক্যাথলিক প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী
https://en.wikipedia.org/wiki/Jean-Baptiste_Biot
Jean-Baptiste Biot
Jean-Baptiste Biot (; French: [bjo]; 21 April 1774 – 3 February 1862) was a French physicist, astronomer, and mathematician who co-discovered the Biot–Savart law of magnetostatics with Félix Savart, established the reality of meteorites, made an early balloon flight, and studied the polarization of light. The biot (a CGS unit of electrical current), the mineral biotite, and Cape Biot in eastern Greenland were named in his honour.
1520
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%A1%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%97%20%E0%A6%AC%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A7%8E%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8
লুডভিগ বোলৎসমান
লুডভিগ এডুয়ার্ড বোলৎসমান () (২০শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৪৪ - ৫ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৬) প্রখ্যাত অষ্ট্রীয় পদার্থবিজ্ঞানী, দার্শনিক ও গণিতজ্ঞ। তিনিই প্রথম বলেছিলেন, পরমাণুকে না দেখলেও কিছু পরিসাংখ্যিক সমীকরণের মাধ্যমে তাদের গতিবিধি বর্ণনা করা সম্ভব। এভাবেই তিনি পরিসাংখ্যিক গতিবিদ্যার জন্ম দেন। তখনকার প্রতিষ্ঠিত নিয়মের বাইরে গিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, তাপগতিবিদ্যায় সম্ভাব্যতার ধারণা সংযোজন করা উচিত। এভাবে তার হাত ধরে পরিসাংখ্যিক তাপগতিবিদ্যারও জন্ম হয়েছিল। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন প্রকৃতির বিশৃঙ্খলাকে এনট্রপি নামক একটি গাণিতিক রাশির মাধ্যমে পরিমাপ করা সম্ভব। সে সময় প্রচলিত ধ্রুব প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রকৃতির বাস্তব বিশৃঙ্খলা এবং সম্ভাব্যতার প্রভাব আবিষ্কার করেছিলেন বলেই তাকে বলা হয় দ্য জিনিয়াস অফ ডিসঅর্ডার। পেশাগত জীবনে আর্নস্ট মাখ-এর মত বিজ্ঞানীদের সক্রিয় বিরোধিতায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। মাখ এবং তার সমর্থকরা পরমাণু পর্যবেক্ষণ করা যায় না বলে তা বিশ্বাস করতেন না, বরং সবকিছু শক্তি দিয়ে ব্যাখ্যার চেষ্টা করতেন। আজীবন মাখ এবং অস্টভাল্ডদের শক্তিবাদ (এনার্জেটিক্স) নামের এই তত্ত্বের বিরোধিতা করেছেন বোলৎসমান। অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনে তার মা এবং ১১ বছরের ছেলের মৃত্যুতে তিনি ভেঙে পড়েন। মনস্তত্ত্ববিদদের মতে, এই জিনিয়াস অফ ডিসঅর্ডার যে রোগে ভুগছিলেন তার নাম বাইপোলার ডিসঅর্ডার। জার্মানির লাইপৎসিগে একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। সবশেষে ১৯০৬ সালে ইতালির ত্রিয়েস্তের নিকটে একটি স্থানে আত্মহত্যার মাধ্যমেই এই মহান বিজ্ঞানীর জীবনাবসান ঘটে। বলা হয় আর ২০ বছর বেঁচে থাকলে তিনি দেখে যেতে পারতেন যে, তার পরমাণু এবং সম্ভাব্যতার প্রতি নিরংকুশ সমর্থনই জয়লাভ করেছে, শক্তিবাদ ছদ্ম-বিজ্ঞান হিসেবে পরিত্যক্ত হয়েছে। বোলৎসমানের গবেষণা আধুনিক কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম বিশ্বতত্ত্বের জন্যও খুব প্রয়োজনীয়। বোলৎসমান মনে করতেন সমগ্র মহাবিশ্ব (বহুবিশ্ব) তাপীয় সাম্যাবস্থায় আছে। তিনি এও বুঝতে পেরেছিলেন, তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র পরম নয়, বরং পরিসাংখ্যিক। সুতরাং সেই সমগ্র মহাবিশ্বের মধ্যে অপরিহার্যভাবেই পরিসাংখ্যিক ব্যত্যয় (ফ্লাকচুয়েশন) শুরু হবে এবং তার স্থানে স্থানে সাম্যাবস্থা থেকে বিচ্যুতি দেখা দেবে। এই স্থানীয় বিচ্যুতিগুলোই জন্ম দেবে আমাদের মত অসংখ্য মহাবিশ্বের। বর্তমানে অবশ্য এ ধরনের চিন্তাধারাকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করা হয় না। কারণ পরিসাংখ্যিক ব্যত্যয় বিরল এবং একটি মহাবিশ্ব সৃষ্টির মত ব্যত্যয় আরও বিরল। তবে জ্ঞানের এই ধারার অগ্রদূত হিসেবে লুক্রেতিউসের পরই বোলৎসমানের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। জীবনী প্রাথমিক জীবন শৈশব লুডভিগ এডুয়ার্ড বোলৎসমানের পিতামহ গটফ্রিড লুডভিগ বোলৎসমান ১৭৭০ সালে জার্মানির রাজধানী বার্লিন থেকে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় এসে বাদ্যযন্ত্র নির্মাণের ব্যবসা শুরু করেন। এখানেই বিয়ে করেন, ছেলের নাম রাখেন লুডভিগ গেয়র্গ বোলৎসমান। গেয়র্গ বড় হয়ে অস্ট্রীয় সরকারের রাজস্ব বিভাগে যোগ দেন, ১৮৩৭ সালে বিয়ে করেন সালৎসবুর্গের এক বণিকের কন্যা কাথেরিনা মারিয়া পাউয়েনফাইন্ডকে। উল্লেখ্য গেয়র্গ প্রোটেস্ট্যান্ট হলেও মারিয়া ছিলেন ক্যাথলিক মতের অনুসারী। গেয়র্গের আর্থিক অবস্থা খুব ভাল না হলেও মারিয়ার বাবা ছিলেন খুবই ধনাঢ্য। তাদের পরিবারের নামানুসারে সালৎসবুর্গ শহরে এখনও Pauernfeindgasse এবং Pauernfeindstrasse নামে দুটি স্থান আছে। গেয়র্গ ও মারিয়ার বড় সন্তান লুডভিগ বোলৎসমানের জন্ম হয় ১৮৪৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে, অর্থাৎ শ্রোভ মঙ্গলবার এবং অ্যাশ বুধবারের ঠিক মাঝামাঝি সময়ে। পরবর্তী জীবনে তিনি বলতেন, এমন একটা সময়ে জন্ম নেয়ার কারণেই তার আবেগ মূহুর্মূহু পরিবর্তিত হয়, তীব্র আনন্দের মধ্যে থেকেই আবার হঠাৎ তীব্র হতাশায় নিমজ্জিত হন। উল্লেখ্য অ্যাশ বুধবার খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের একটি বিশেষ দিন যা ইস্টারের ৪৬ দিন পর পালিত হয়, এই দিন থেকেই কঠোরভাবে ধর্মপালন শুরু হয় যা পরবর্তী ইস্টারের পূর্ব পর্যন্ত চলে। আর অ্যাশ বুধবারের আগের দিনটিই হচ্ছে শ্রোভ মঙ্গলবার। বোলৎসমানের জন্মস্থান ভিয়েনার তৃতীয় জেলা (গেমাইন্ডেবেৎসির্কে), লান্ডস্ট্রাসেতে। ১৮৪৬ সালে তার ছোট ভাই আলবার্ট এবং দুই বছর পর ছোট বোন হেডভিগের জন্ম হয়। তিন ভাইবোনেরই ব্যাপ্টিজম হয় ক্যাথলিক ধর্মমত অনুসারে এবং তারা ক্যাথলিক হিসেবেই বেড়ে উঠতে থাকে। আলবার্ট মাধ্যমিক স্কুলে থাকার সময় নিউমোনিয়ায় মারা যায়। শিক্ষাজীবন বোলৎজমানের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন হয় বাড়িতে গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে। তারা বাবাকে প্রথমে ভেল্স এবং পরে লিনৎস শহরে চলে আসতে হয়। লিনৎসেই বোলৎসমান স্থানীয় জিমনেসিয়ামে পড়াশোনা শুরু করেন। স্কুলে সব সময়ই খুব ভাল করতেন, বিজ্ঞান এবং গণিতের প্রতি তখন থেকেই তার খুব আগ্রহ ছিল। শেষ জীবনে তার চোখের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, ছোটবেলায় সন্ধ্যার পর মোমবাতি জ্বালিয়ে দীর্ঘক্ষণ পড়াশোনা করা। লিনৎসে তিনি আন্টোন ব্রুকনারের কাছে পিয়ানো বাজাতে শিখেন। অবশ্য শিক্ষক নিয়ে মায়ের অসন্তুষ্টির কারণে এক সময় তাকে পিয়ানো শেখা ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু নিজে নিজে পিয়ানো বাজানো কখনও ত্যাগ করেননি। বয়স কালে ছেলের সাথে বাজাতেন, ছেলে আর্থুর লুডভিগ বাজাতো বেহালা আর তার সাথে তাল মিলিয়ে তিনি বাজাতেন পিয়ানো। ১৫ বছর বয়সে বোলৎসমানের বাবা যক্ষ্ণায় মারা যান। ছোট ভাইয়ের মৃত্যুও হয় এর কিছুকাল পর। এই দুটি মৃত্যু তার জীবনে বড় ছাপ ফেলেছিল। ভিয়েনায় অধ্যয়ন ১৯ বছর বয়সে তিনি উনিফেরসিটেট ভিয়েন-এ (ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়) পদার্থবিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে ভর্তি হন। সেখানকার পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট মাত্র ১৪ বছর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ডপলার ক্রিয়ার আবিষ্কারক বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ডপলার (১৮০৩-৫৪)। উনিফেরসিটেট ভিয়েন অস্ট্রিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি। এটি সে সময় যথেষ্ট স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। বোলৎসমান যখন এখানে আসেন তখন আনড্রিয়াস ফন এটিংসহাউজেন সবেমাত্র পরিচালকের পদ ত্যাগ করেছেন, নতুন পরিচালক নির্বাচিত হয়েছেন ইয়োসেফ স্টেফান (১৮৩৫-৯৩)। বেশ কম বয়সেই স্টেফান পরিচালক হয়েছিলেন এবং পরে বিকিরিত তাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য অনেক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। স্টেফান তার শিক্ষার্থীদের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে কথাবার্তা বলতেন, এই গুণটি বোলৎসমান খুব পছন্দ করেন। স্টেফানের মৃত্যুর পর এক শোকবাণীতে তিনি লিখেছিলেন, ভিয়েনার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ৩ বছর পর বোলৎসমান পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এর মধ্যেই তার দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে তার পিএইচডি গবেষণার কোন অভিসন্দর্ভ ছিল না। কারণ ১৮৭২ সালের পূর্বে ভিয়েনায় পিএইচডি (দর্শন) ডিগ্রির জন্য কোন অভিসন্দর্ভ জমা দিতে হতো না। ১৮৬৭ সালে বোলৎসমান ভিয়েনায় সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। তখন ভিয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটটি ছিল খুব ছোট, এর্ডবের্গারস্ট্রাসে-তে তাদের একটিমাত্র ছোট গবেষণাগার ছিল। কিন্তু ইনস্টিটিউটের সদস্য সবাই ছিলেন তুখোড়। এই সদস্যদের প্রশংসায় বোলৎসমান লিখেছিলেন, উত্তরণের দিনগুলো গ্রাৎসের বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৬৮ সালে বোলৎসমান শিক্ষকতায় কৃতিত্বের জন্য ফেনিয়া লেগেন্ডি পুরস্কার লাভ করেন এবং ১৯৬৯ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে গ্রাৎস বিশ্ববিদ্যালয়ে গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মনোনীত হন। সে সময় গ্রাৎস ইউরোপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি হতে চলেছিল। বোলৎসমান এখানে আসার কিছুদিন পূর্বে স্থির-তড়িৎ গবেষণায় অবদানের জন্য বিখ্যাত বিজ্ঞানী আউগুস্ট টোয়েপলার এখানকার পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক হয়ে আসেন। টোয়েপলার তার অন্যতম বন্ধু ও উপদেষ্টায় পরিণত হয়েছিলেন। টোয়েপলার প্রশাসনিক কাজেও খুব দক্ষ ছিলেন। তিনি কিছুদিনের মধ্যেই পদার্থবিজ্ঞানের জন্য একটি নতুন ভবন, নতুন যন্ত্রপাতি এবং আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থার করেন। বোলৎসমান গ্রাৎসে তাই গবেষণার খুব ভাল পরিবেশ পেয়েছিলেন। এর বদৌলতেই ১৮৭২ সালে ইম্পেরিয়াল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর (বর্তমান নাম - Österreichische Akademie der Wissenschaften, অস্ট্রীয় বিজ্ঞান একাডেমি) প্রসিডিংসে তার সবচেয়ে বিখ্যাত গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করতে সক্ষম হন। গবেষণাপত্রটির নাম ছিল Weitere Studien über das Wärmegleichgewicht unter Gasmolekülen (ইংরেজি ভাষায়: Further Studies on the Thermal Equilibrium of Gas Molecules) যার বাংলা করলে দাঁড়ায় গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে নতুন গবেষণা। ম্যাক্সওয়েল-বোলৎসমান বণ্টনের প্রাথমিক রূপ এই রচনাতেই প্রকাশিত হয়েছিল। এতে তিনি এমন একটি সমীকরণ প্রকাশ করেন যার মাধ্যে অসংখ্য অণু দিয়ে গঠিত একটি গ্যাসের বিবর্তন ব্যাখ্যা করা যায়। উল্লেখ্য, এটিই প্রথম সমীকরণ যাতে সম্ভাবনার উপর ভিত্তি করে সময়ের সাথে কণার বিবর্তন দেখানো হয়েছিল। সে সময় তাত্ত্বিক গবেষণার পাশাপাশি বোলৎসমান গ্রাৎসে একটি পরীক্ষণও চালিয়ে যাচ্ছিলেন, বিষয় ছিল প্রতিসরাংক এবং dielectric permittivity-র মধ্যে সম্পর্ক। এই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন ১৮৭৩ সালে। ইয়োহান ইয়োসেফ লশমিট মারা যাওয়ার পর তার শোকবাণীতে বোলৎসমান লিখেছিলেন, তখন আমি সালফার কেলাসের গোলক নিয়ে গবেষণা করতে চাচ্ছিলাম। কেউ যেহেতু এই কেলাস গুঁড়ো করতে চায় না সেহেতু লশমিট আমাকে পরামর্শ দিল বুর্গথেয়াটার এর টিকেট কেনার লাইনে দাঁড়িয়ে তার সাথে কাজটা করতে। এতে কার্বন ডাইসালফাইডের গন্ধে সবাই লাইন ছেড়ে পালাবে। টোয়েপলার যথেষ্ট অর্থ সংস্থান করতে পেরেছিলেন বলেই বোলৎসমান তখন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের সাথে কাজ করতে যেতে পারতেন। সে সময় তিনি জার্মানির হাইডেলবার্গে বিখ্যাত রসায়নবিদ রবার্ট ভিলহেল্ম ফন বুনসেন (১৮১১-৯৯) এবং গণিতজ্ঞ লেও কোনিগসবের্গারের (১৮৩৭-১৯২১) সাথে কাজ করেন। বার্লিনে কাজ করেন গুস্তাফ কির্খফ (১৮২৪-৮৭) এবং শক্তির একটি নিত্যতা সূত্র প্রদানের জন্য বিখ্যাত হেরমান লুডভিগ ফের্ডিনান্ড ফন হেল্মহোলৎসের সাথে। এরা সবাই সে সময় খুব বিখ্যাত ছিলেন। বোলৎসমান হেল্মহোলৎসকে খুব পছন্দ করতেন। এমনকি অনেক সময় হেল্মহোলৎস ছাড়া তিনি কথা বলার মত আর কাউকে পেতেন না। তার সম্পর্কে একবার মাকে লিখেন, ১৮৭৩ সালে বোলৎসমান ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনায় গণিতের অধ্যাপক পদে আমন্ত্রণ পান। ভিয়েনার অধ্যাপক হওয়া সে সময় অস্ট্রিয়ায় সবচেয়ে বড় সম্মান বলে বিবেচিত হয়, এখনও হয়। অনেক সময় অবশ্য এতে হিতে বিপরীতও হতো। কিন্তু বোলৎসমানের ভিয়েনায় যাওয়ার ব্যাপারে সম্ভবত আরেকটি বিষয়ও কাজ করেছিল, তিনি আরও পরীক্ষণমূলক কাজ করতে চাচ্ছিলেন। বোলৎসমান পরিচিত ছিলেন পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে। কিন্তু ভিয়েনায় গণিত বিভাগে নিয়োগ দিতে গিয়ে সেখানকার নির্বাচকরা যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তার গবেষণাপত্রগুলো গণিতের কাজ হিসেবেও চমৎকার, বিশেষত তাত্ত্বিক বলবিদ্যা এবং সম্ভাব্যতার ক্যালকুলাস নিয়ে তার কাজ প্রশংসা করার মত এবং তাপ নিয়ে কাজ করার সময়ও তিনি গণিতে বিশেষ পারদর্শিতা দেখিয়েছেন। প্রেম গ্রাৎস ত্যাগ করার পূর্বেই বোলৎসমানের সাথে তার ভবিষ্যৎ স্ত্রী হেনরিয়েটে ফন আইগেন্টলারের পরিচয় হয়েছিল। সোনালী লম্বা চুল ও নীল চোখের এই তরুণী বোলৎসমানের ১০ বছরের ছোট ছিলেন। হেনরিয়েটের বাবা-মা মারা গিয়েছিলেন, তিনি থাকতেন গ্রাৎসের দক্ষিণে স্টাইনৎসের একটি বাড়িতে। এই বাড়ির কর্তা-কর্ত্রীর সন্তান হচ্ছেন নামকরা অস্ট্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ভিলহেল্ম কিনৎসল। তিনি পেশায় শিক্ষক ছিলেন, কিন্তু বোলৎসমানের সাথে পরিচয় হওয়ার পর আবার গণিত পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু সে সময় মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার চল ছিল না, তবে তা নিষিদ্ধও ছিল না। গ্রাৎসের দর্শন অনুষদের প্রধান অধ্যাপক হিরৎসেলজানতেন না হেনরিয়েটে কেন গণিত পড়তে চায়। তিনি তার আর্জি শোনার পর বলেছিলেন, মেয়েদের কাজ রান্নাবান্না, ঘর-সংসার করা। তবে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হয়েই প্রথম সেমিস্টারের লেকচারগুলোর শোনার অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় সেমিস্টারের শুরুর আগেই মেয়েদের দর্শন অনুষদ মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া নিষিদ্ধ করে একটি আইন জারি করে। হেনরিয়েটে এই আইনের বিরুদ্ধে অস্ট্রিয়ার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পিটিশন পেশ করেন। মন্ত্রণালয় থেকে তাকে পড়ার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু পরের সেমিস্টার শুরুর আগে আবারও সেই সমস্যার উদ্ভব ঘটে। অবশ্য বোলৎসমানের সাথে বাগ্‌দান হওয়ার পর তার পড়াশোনার ইচ্ছা চলে যায়, অধ্যাপক হিরৎসেল যা বলেছিলেন তাই পালন শুরু করেন, রান্না শিখেন গ্রাৎসের লর্ড মেয়রের বাসায়, যিনি তার বাবার বন্ধু ছিলেন। ১৯৭৩ সালেই বোলৎসমান ভিয়েনায় চলে যান। ভিয়েনা থেকে নিয়মিত চিঠি লিখতেন হেনরিয়েটেকে। বাগ্‌দানের পর বোলৎসমানের সাথে তার হবু-স্ত্রীর যেসব চিঠি আদান-প্রদান হয়েছিল সেগুলো নিয়ে জার্মান ভাষায় একটি বই বেরিয়েছে, যার ইংরেজি নাম Illustrious Professor: Dearly beloved Louis: Ludwig Boltzmann, Henriette von Aigentler, Correspondence। বইটি সম্পাদনা করেছেন বোলৎসমান ও হেনরিয়েটের পৌত্র অধ্যাপক ডিটার ফ্লাম। এই চিঠিগুলোতে বোলৎসমানের জীবনের কিছু উল্লেখযোগ্য দিকের পরিচয় পাওয়া যায়। বইয়ের শিরোনাম থেকে দেখা যায় ঘনিষ্ঠতা হওয়ার পর হেনরিয়েটে লুডভিগকে কেবল "লুইস" বলে সম্বোধন করত। বোলৎসমান প্রথমে তাকে Hochgeehrtes Fraulein নামে সম্বোধন করলেও পরে শুধু "ইয়েটি" (Jetty) ব্যবহার শুরু করেন। সম্বোধনের এই পরিবর্তন ঘটে ৩০শে নভেম্বর ও ৬ ডিসেম্বরের মাঝের সপ্তাহটিতে, চিঠি থেকে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোলৎসমান ১৮৭৫ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর হেনরিয়েটেকে বিয়ের প্রস্তাব দেন, চিঠির মাধ্যমে। এই চিঠি থেকে দেখা যায় তখনও ভিয়েনায় মুদ্রাস্ফীতির সমস্যা ছিল। এই চিঠিতে তিনি নিজের আর্থিক অবস্থার বিবরণ দেন, ১৮৭৪ সালে তার বার্ষিক আয় ছিল ৫৪০০ ফ্লোরিন। দুজনের জন্য এটা যথেষ্ট বলেই মনে হয়েছিল বোলৎসমানের। কিন্তু চিঠিতে এও লিখেন যে, ভিয়েনায় দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেলে হেনরিয়েটার অবসর বিনোদন এবং আনন্দের জন্য এই অর্থ যথেষ্ট হবে না। এই চিঠিতে তিনি বিয়ে সম্পর্কেও তার চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেন, "পরিবারের সার্বিক দেখভাল একজন স্বামীর জন্য আবশ্যকীয় এবং এক্ষেত্রে তার একমাত্র মূলধন তার কর্ম। কিন্তু আমার মতে স্ত্রী যদি কেবল স্বামীর গৃহপরিচারিকা হয়ে থাকে, তার আনন্দ এবং উদ্যমগুলো ভাগাভাগি না করে বা বুঝতে না পারে, তার সাথে কাঁধ মিলিয়ে সংগ্রাম করতে না পারে তাহলে ভালবাসা চিরস্থায়ী হতে পারে না।" ২৫শে নভেম্বর হেনরিয়েটের লেখা আরেকটি চিঠি থেকে জানা যায় বোলৎসমানকে ফ্রেইবুর্গে একটি পদে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উল্লেখ্য তখন তিনি ভিয়েনায়। হেনরিয়েটে তার চিঠিতে এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত দেননি। তিনি যেহেতু কেবল লুডভিগকেই চান সেহেতু তিনি কোথায় থাকবেন তা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে এটুকু নির্লিপ্ততা দেখিয়ে তিনি আবার ভিয়েনা ছেড়ে যাওয়ার সুবিধা-অসুবিধার কথা বলেন, যেহেতু বোলৎসমান তার পরামর্শ চেয়েছিলেন। সুবিধার মধ্যে তিনি বলেন, ফ্রেইবুর্গে পেশাদারী কাজ কম, স্ত্রী ও পরিবারকে বেশি সময় দিতে পারবেন, একটি পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান হতে পারবেন। কিন্তু মূল অসুবিধা হচ্ছে, ফ্রেইবুর্গের বেতন ভিয়েনার প্রায় অর্ধেক, অবশ্য সেখানে খাবার খরচও ভিয়েনা থেকে কম আর বাসার কোন ভাড়া দিতে হবে না। বোলৎসমানের পৌত্রের কাছ থেকে জানা যায় হেনরিয়েটে তাকে Mein liebes dickes Schatzerl (sweet fat darling) বলে ডাকতেন। বোলৎসমান খুব নরম মনের মানুষ ছিলেন, স্ত্রীর কাছ থেকে দূরে কোথাও যেতে হলে চোখের পানি ধরে রাখতে পারতেন না। ভিয়েনায় অধ্যাপনা এবং বিয়ে ১৮৭৫ সালে বোলৎসমানের প্রথম বিখ্যাত গবেষণাপত্রের সেই সমীকরণটি তার বন্ধু লশমিটের সমালোচনার মুখে পড়ে। এ বিষয়ে লশমিটের বক্তব্য অপ্রত্যাবর্তন হেঁয়ালি বা লশমিটের হেঁয়ালি নামে পরিচিত। বোলৎসমান এই সমালোচনার জবাবও দিয়েছিলেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে আলোচিত হবে। ভিয়েনায় প্রশাসনিক কাজ অনেক বেশি ছিল, নরম মনের বোলৎসমানের পক্ষে সবকিছু চালিয়ে যাওয়া সহজ ছিল না। তার পুরোটা সময়ই চলে যেতো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজে। ১৮৭৬ সালেই তার গ্রাৎসে ফিরে যাওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়। তার বিয়েও হওয়ার কথা সে বছর। হেনরিয়েটে যেহেতু গ্রাৎসের মেয়ে এবং সে যেহেতু ভিয়েনায় উপযুক্ত বাসা খুঁজে পাচ্ছিল না সেহেতু বিয়ের পর গ্রাৎসে থাকাটাই তার জন্য সবচেয়ে ভাল ছিল। তাই সুযোগটির জন্য বোলৎসমান অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন। গ্রাৎসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সমৃদ্ধির পেছনে মূল অবদান টোয়েপলারের। নতুন ভবনও তিনি নির্মাণ করিয়েছিলেন। ১৮৭৩ থেকে ১৮৭৬ এর মধ্যে ইনস্টিটিউটের জন্য ২৮,০০০ ফ্লোরিনের যন্ত্রপাতি কিনেছিলেন। কিন্তু ১৮৭৬ এ বোলৎসমানকে লেখা এক চিঠিতে টোয়েপলার বলেন, তিনি সরকারের কাছ থেকে যথেষ্ট অর্থ পাচ্ছেন না। সে বছরই তিনি গ্রাৎস ছেড়ে জার্মানির ড্রেসডেনে চলে যান। এতে গ্রাৎসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধানের পদটি ফাঁকা হয়ে যায়। এই পদ বোলৎসমানের কাছে ছিল স্বপ্নের মত। কিন্তু এই পদে তার একজন প্রতিদ্বন্দী ছিলেন, যিনি আবার পেশাগত ক্ষেত্রেও বোলৎসমানের বিরুদ্ধমনা ছিলেন। তার নাম আর্নস্ট মাখ। মাখ ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ সাল পর্যন্ত গ্রাৎসের গণিত বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। তার Die Mechanik in Hirer Enlwickelung historisch-kritisch dargestellt (ঐতিহাসিক ও সমালোচনামূলক দৃষ্টকোণ থেকে বলবিজ্ঞানের উন্নয়ন) নামক গবেষণাপত্রটি বিজ্ঞানীদের একেবারে নতুন একটি প্রজন্মের জন্ম দিয়েছিল যে প্রজন্মের সবচেয়ে বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন আলবার্ট আইনস্টাইন। ১৮৭৬ সালে মাখ প্রাগ-এ ছিলেন কিন্তু চাচ্ছিলেন গ্রাৎসে ফিরে যেতে। অন্যদিকে বোলৎসমান ও হেনরিয়েটের বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গিয়েছিল জুলাইয়ের ১৭ তারিখ। তখনও তিনি নিশ্চিত না বিয়ের পর তাকে ভিয়েনায় থাকতে হবে নাকি গ্রাৎসে, বাসা কোথায় দেখতে হবে- ভিয়েনায় নাকি গ্রাৎসে। বিয়ের তারিখের ৫ দিন পূর্বে তারা বিয়ে করে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়, যেখানে যেতে হবে হোক। কিন্তু এর পরপরই মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসে, গ্রাৎসের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান মনোনীত হন বোলৎসমান। বিয়ে করে গ্রাৎসে থাকতে শুরু করে নবদম্পতি। গ্রাৎসে প্রত্যাবর্তন বোলৎসমান দম্পতি গ্রাৎসে ১৪ বছর ছিলেন। এই শহরেই তাদের দুই ছেলে লুডভিগ হুগো (১৮৭৮-৮৯) ও আর্থুর (১৮৮১-১৯৫২) এবং দুই মেয়ে হেনরিয়েটে (১৮৮০-১৯৪৫) ও ইডার (১৮৮৪-১৯১০) জন্ম হয়। গ্রাৎস ছেড়ে যাওয়ার পর তাদের তৃতীয় মেয়ে এলসার (১৮৯১-১৯৬৬) জন্ম হয়। অবশ্য গ্রাৎসে থাকার সময়ই বোলৎসমানের মা মারা যান, ১৮৮৫ সালে। এই মৃত্যুটি ছাড়া গ্রাৎসে তার জীবন ছিল সুখের। এ সময় অস্ট্রিয়ার অনেক রাষ্ট্রীয় সম্মাননা পান তিনি। এ সময়ই তিনি প্রকৃতি সম্পর্কে তার পরিসাংখ্যিক মনোভাবকে শাণিত করেন। অস্ট্রীয় সরকার তার প্রশাসনিক কাজগুলো করে দেয়ার জন্য গ্রাৎসে Extraordinarius (সহযোগী অধ্যাপক) নামে একটি পদ তৈরি করে তাতে আর্থুর ফন এটিংসহাউজেনকে (১৮৫০-১৯৩২) মনোনয়ন দেয়। ১৮৭৮ সালে বোলৎসমান অনুষদের প্রধান হন। ১৮৮১ সালে সরকারী কাউন্সিলর, ১৮৮৫ তে ইম্পেরিয়াল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস এর সদস্য এবং ১৮৮৯ সালে কোর্ট কাউন্সিলর হন। অন্যান্য দেশ থেকেও তাকে অনেক সম্মাননা দেয়া হয়। পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পাশাপাশি গ্রাৎসে আরেকটি পদ ছিল, তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের চেয়ার। প্রথমবার যখন গ্রাৎসে ছিলেন তখন এই পদ বোলৎসমানের ছিল। কিন্তু এবার এই পদে থাকেন আরেক অস্ট্রীয় বিজ্ঞানী হাইনরিখ স্ট্রাইনৎস। স্ট্রাইনৎসের ক্যারিয়ার খুব বেশি সফল নয়। কিন্তু বোলৎসমান সব সময় তাকে সহায়তা করেছেন। এ সময় বোলৎসমানকে রাজকীয় উপাধি দেয়ার ইচ্ছা পোষণ করে রাজপরিবার। কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি, উত্তরে বলেছিলেন, তার জন্য তার মধ্যবিত্ত পরিবারের উপাধিই ভাল, এবং তার সন্তান ও তাদের বংশধরদের জন্যও আশাকরি সে উপাধিই যথেষ্ট হবে। এ সময়টা বোলৎসমানের জন্য খুব ব্যস্ততারও ছিল না। তাকে সাহায্য করার জন্য ছিল এটিংসহাউজেন। অনুষদের প্রধান হিসেবেও খুব বেশি কিছু করতে হতো না, ব্যস্ত থাকলে উপ-প্রধানকে দায়িত্ব দিতে পারতেন। তাই সে সময়কার বিখ্যাত সব পদার্থবিজ্ঞানীর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছিলেন। এদের মধ্যে রয়েছেন হেনড্রিক আন্টুন লরেনৎস, হেল্মহোলৎস, ভিলহেল্ম অস্টভাল্ড, এবং কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির ক্যাভেন্ডিশ অধ্যাপক পদে ম্যাক্সওয়েলের উত্তরসূরী জন উইলিয়াম স্ট্রাট। এ সত্ত্বেও তার সে সময়কার চিঠি পড়ে মনে হয়, তিনি ভাবতেন তিনি বিজ্ঞানীদের মূল গোষ্ঠীর বাইরে আছেন, ভেতরে থাকলে আরও আলোচনা করতে পারতেন। অবশ্য তিনি টোয়েপলারকে এও বলেছিলেন যে, বিয়ে মানুষকে অলস করে দেয়, যতটা ভেবেছিলেন তার চেয়েও বেশি। এ কারণেই বোধহয় ইনস্টিটিউটের প্রধান পদে তার উত্তরসূরী লেওপোল্ড ফাউন্ডলার বলেছিলেন, তিনি এসে দেখেন ইনস্টিটিউটের ভবনটি শূকরের খামাড় হয়ে আছে। বোঝাই যায়, গবেষণার চাপে হয়ত বোলৎসমান ইনস্টিটিউটের দিকে নজর দিতে পারেননি। ১৮৭৭ সালে বোলৎসমান দুটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন যার একটির (১৮৭৭খ) আলোচ্য বিষয়ে ছিল এনট্রপি। এতে তিনি পরমাণুর বিশৃঙ্খলার গাণিতিক পরিমাপ হিসেবে এনট্রপি ব্যবহার করেছিলেন। বিকিরণ চাপ নিয়ে ইতালীয় পদার্থবিজ্ঞানী আদোলফো বারতোলির গবেষণা থেকে খুব অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন তিনি। এই অনুপ্রেরণায় ১৮৮৬ সালে তার শিক্ষক ইয়োসেফ স্টেফানের সূত্রের একটি অনন্যসাধারণ প্রমাণ আবিষ্কার করেন। একই বছর তার আরেকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় যাতে তিনি এমন সব গ্যাসীয় অণু নিয়ে আলোচনা করেন যারা মিথস্ক্রিয়া করছে এবং যাদের বিভব শক্তি আছে। এই গবেষণাপত্র খুব একটা পরিচিত না হওয়ায় অনেক বিজ্ঞানী এখনও মনে করেন বোলৎসমান কেবলই আদর্শ গ্যাস নিয়ে কাজ করেছেন। কিন্তু এটি দেখলে মনে হয় উইলার্ড গিবস নয় বরং বোলৎসমানকেই সাম্যাবস্থার পরিসাংখ্যিক বলবিদ্যার জনক হিসেবে আখ্যায়িত করা উচিত। ১৮৮৬ সালে হাইনরিশ হেরৎস এর তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ এবং আলো বিষয়ক গবেষণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি নিজেই হেরৎসের পরীক্ষণটি পুনরায় করার চেষ্টা করেন। উল্লেখ্য ম্যক্সওয়েল ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গ এবং আলো একই, হেরৎস তা প্রমাণ করেন। এ বিষয়ে বোলৎসমানের গবেষণা গ্রাৎস ত্যাগের পূর্বে তার শেষ প্রকাশিত লেখাগুলোতে লিপিবদ্ধ আছে। গ্রাৎসে থাকার সময় তার চরিত্রের একটি লক্ষ্যণীয় দিক হচ্ছে, এ সময় তিনি বিজ্ঞান এবং সাধারণ অর্থে জ্ঞানের দার্শনিক দিকগুলো নিয়ে আলোচনা থেকে বিরত থাকতেন। ১৮৮৭ সালের একটি গবেষণাপত্রে বোলৎসমান তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রকে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করেন। বেশ স্বল্প সময়ের মধ্যেই গ্যাসের গতীয় তত্ত্ব বিষয়ে বোলৎসমানের দৃষ্টিভঙ্গি বিশ্বব্যাপী, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে, পরিচিত হয়ে উঠে। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ১৮৭৬ সালে প্রকাশিত এইচ ডব্লিউ ওয়াটসনের বইয়ে যাতে তিনি গ্যাসের গতি তত্ত্ব ব্যাখ্যায় বোলৎসমানের পদ্ধতি ব্যবহার করেন। ১৮৮২ সালে লেখা ম্যাক্সওয়েলের একটি জীবনী গ্রন্থে তাকে গ্যাসের গতি তত্ত্বের জনকদের একজন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানীদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল ১৮৮৫-৮৭ সালের মধ্যে দুজন ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর (পিটার টেইট এবং উইলিয়াম বার্নসাইড) সাথে তার বিতর্ক। বোলৎসমানের গবেষণাপত্রগুলো অনেক দীর্ঘ হওয়ায় সবাই সেগুলো পড়ার ধৈর্য রাখত না। তাই এই আলোচনাগুলো তাকে ইংরেজভাষী বিশ্বে পরিচিত হতে সাহায্য করেছিল। তাই বিশ্বের নানা দিক থেকে তার জন্য পুরস্কার ও সম্মাননা আসতে থাকে। গ্রাৎসের এই ১৪ বছরে তিনি পৃথিবীর সেরা পদার্থবিজ্ঞানীদের একজনে পরিণত হন। দুঃখময় শেষ জীবন অসুস্থতার পূর্বসূত্র বিশ্ববিখ্যাত হওয়ার পরই ১৮৮৮ সালের জানুয়ারি থেকে বোলৎসমানের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এত বিখ্যাত এবং ধিরস্থির একজন মানুষ কেন হঠাৎ এমন হয়ে গেলেন তার কোন সুস্পষ্ট কারণ জানা যায় না। তবে বেশ কিছু ঘটনাকে তার পূর্বসূত্র হিসেবে উল্লেখ করা যায়। খুব বেশি হতাশা এবং উদ্বিগ্নতায় ভোগা এবং খুব নরম মনের মানুষ হওয়ার কারণেই সম্ভবত তার উপর এই ঘটনাগুলো এতোটা প্রভাব ফেলেছিল। বোলৎসমানের জীবনীকার Carlo Cercignini পূর্বসূত্র হিসেবে যে ঘটনাগুলো উল্লেখ করেছেন সেগুলোই এখানে বর্ণীত হবে। ঘটনার সূত্রপাত ১৮৮৫ তে। এই বছর তার মা মারা যান। ৪১ বছর বয়সে মাকে হারানো অস্বাভাবিক কোন ঘটনা নয়। কিন্তু বোলৎসমান ১৫ বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন এবং সে কারণে মার প্রতি তার আকর্ষণ একটু বেশিই ছিল। উল্লেখ্য এই বছর তিনি কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেননি, এবং কোন চিঠি লিখেছেন বলেও জানা যায়নি। পরবর্তী ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত। বোলৎসমান ছিলেন গ্রাৎস বিশ্ববিদ্যালয়ের রেক্টর। অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আবাসিক ভবনের দায়িত্ব ছিল তার উপর। এমন দায়িত্বের জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। এর মধ্যে আবার ১৮৮৭ সালের ২২শে নভেম্বর গ্রাৎসের জার্মানিবাদী ছাত্ররা আবাসিক ভবনের একটি থেকে অস্ট্রিয়ার রাজার মূর্তি সরিয়ে নেয় এবং হাব্‌সবুর্গ রাজপরিবারবিরোধী শ্লোগান দিতে থাকে। রেক্টর হিসেবে এই পরিস্থিতি সমাধানের দায়িত্ব ছিল বোলৎসমানের উপর এবং স্টিরিয়ার গভর্নর, ভিয়েনার প্রশাসন ও স্বয়ং রাজা তার উপর ভরসা করে ছিল। এই বিদ্রোহ ৪ মাস স্থায়ী হয়েছিল। এদিকে ১৮৮৭ সালের ১৭ অক্টোবর জার্মানির বার্লিনে বোলৎসমানের বন্ধু গুস্তাফ কির্খফ মৃত্যুবরণ করেন। ইউনিভার্সিটি অফ বার্লিনের কর্তৃপক্ষ তাকে আমন্ত্রণ জানালে তিনি এ বছরের শেষ দিকে বার্লিনে যান। সেখানে তাকে কির্খফের পদে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়। এর মানে তিনি হতে পারবেন কির্খফের উত্তরসূরী এবং হেল্মহোলৎসের সহকর্মী। তিনি প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন এবং এমনকি বিভাগে তার কক্ষও ঠিক করে ফেলেন। ১৮৮৮ সালের মার্চে তিনি আবার পদটি গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান, যদিও ততোদিনে জার্মানির রাজা কাইজার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ফেলেছিলেন। এর কারণ হিসেবে অনেকে উল্লেখ করেন, জার্মানিতে চাপ গ্রাৎসের চেয়ে অনেক বেশি ছিল কিন্তু বোলৎসমান চাপ পছন্দ করতেন না। তবে কারণ আরও রয়েছে। বোলৎসমানের সম্ভাব্য অস্ট্রিয়া ত্যাগের খবর জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে গ্রাৎসে পৌঁছে যায়। এই সুযোগে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের প্রধান হাইনরিশ স্ট্রাইনৎস তার অর্থ বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবী জানান। ফেব্রুয়ারির ১ তারিখে তার সহযোগী এটিংসহাউজেন টেখনিশে হোখশুলে (গ্রাৎসের তৎকালীন পলিটেকনিক) তে একটি পদে যোগ দেন। এতে নিজের বিভাগেই বোলৎসমান সমর্থন ও সহযোগিতা হারান। গ্রাৎসে ফিরে বোলৎসমান বুঝতে পারেন তিনি দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে ফেলেছেন, অস্ট্রীয় সরকারের অনুমতি না চেয়ে বার্লিনকে সম্মতি দিয়ে দেয়াটা ঠিক হয়নি। অস্ট্রীয় সরকারও চাচ্ছিল না তাদের সবচেয়ে বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের একজনকে এভাবে হারাতে। তারাও বোলৎসমানকে বোঝাতে শুরু করে। এই চাপেই তিনি মানসিক ভারসাম্য কিছুটা হারাতে শুরু করেন। তিনি মার্চে বার্লিনকে চিঠি লিখে জানান, চোখের সমস্যার কারণে বার্লিনের পদটিতে ঠিকমত কাজ করা তার পক্ষে কষ্টকর হবে। কিন্তু সেখান থেকে জবাব আসে, এ নিয়ে তার চিন্তা করার কোন প্রয়োজন নেই। অগত্য তিনি আরও এক ধাপ এগিয়ে ব্যাখ্যা করেন কেন তিনি এই পদটির জন্য যোগ্য নন: কিন্তু অন্য সূত্র থেকে জানা যায় বোলৎসমান তার গবেষণা ক্ষেত্র নিয়ে সব সময়ই খুব ওয়াকিবহাল থাকতেন। তার এই লেখা থেকে বোঝা যায়, তিনি কারও প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারলে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তেন, সব সময় নিখুঁত হতে চাইতেন। যাহোক, অবশেষে ১৮৮৮ সালের ৯ই জুলাই কাইজার ভিলহেল্ম ২ তাকে মনোনয়ন দিয়ে করা চুক্তিটি বাতিল করে দেন। এসব ঘটনার পরই বোলৎসমানের মধ্যে নিউরাস্থিনিয়া (মনঃগ্লানি) এবং চরম হতাশার লক্ষণ (বাইপোলার ডিসঅর্ডার) দেখা দিতে শুরু করে। তার জীবনের শান্তি এবং সুন্দরের দিন শেষ হয়ে আসে, হতাশা, অসন্তোষ এবং অস্থিরতা তাকে অধিকার করে নেয়। তিনি ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকেন এই আশায় যে, হয়ত নতুন স্থানে শান্তি মিলবে। যেহেতু তিনি বার্লিন নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়েছিলেন, সেহেতু গ্রাৎসে থাকতে তার অসুবিধা থাকার কথা না। কিন্তু বাইপোলার ডিসঅর্ডার থাকার কারণে এটাই তার পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। বার্লিনকে কেন না বলেছিলেন তা তিনি নিজেই জানতেন না। আর গ্রাৎসে ফিরে আসার পর মনে হচ্ছিল, তিনি কি আর সেই মহান বিজ্ঞানী নেই। নিজের বিখ্যাত এবং মহান সত্তাটির সাথে গ্রাৎসের তাকে তুলনা করতে শুরু করেছিলেন। এই অস্থিরতা এবং হতাশার মধ্যেই ১৮৮৯ সালে তার ছেলে, লুডভিগ, মাত্র ১১ বছর বয়সে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের রোগে মারা যায়। আরও ভয়াবহ হচ্ছে, তিনি এই মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ী করতেন। তিনি মনে করতেন, রোগের ভয়াবহতা বুঝতে না পারা এবং ভুল ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কারণেই তার ছেলে মারা গেছে। এই মৃত্যু তার হতাশা ও মানসিক রোগে নতুন মাত্রা যোগ করে। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন এবং একা থাকতে শুরু করেন। গ্রাৎস ত্যাগ তার প্রথম চিন্তা ছিল গ্রাৎস ত্যাগ করা। গ্রাৎসে তার প্রতি তার সহকর্মীদের আচরণ পাল্টে গিয়েছিল, তিনি নিজেও মনে করতেন তার আরও ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার যোগ্যতা রয়েছে এবং তার ছেলে মারা গেছে এই শহরে। সব মিলিয়ে গ্রাৎস তার কাছে বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। ১৮৮৮ সালের জুলাইয়ে যেখানে কাইজার তার চুক্তিপত্র বাতিল করলেন সেখানে সে বছরেরই শেষ দিকে তিনি হেল্মহোলৎসকে চিঠি লিখে জানালেন, তিনি সুস্থ হয়ে গেছেন এবং বার্লিনে যেতে চান। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তার যত বন্ধু ছিল তাদের সবাইকে জানাতে থাকলেন যে তিনি গ্রাৎস ত্যাগ করতে চান। তার এই বন্ধুদের মধ্যে যে প্রথম তাকে আনার সুযোগটি কাজে লাগালেন তিনি হচ্ছেন জার্মানির মিউনিখের অয়গেন ফন লোমেল। তিনি নোবেল বিজয়ী রসায়নবিদ আডোলফ ফন বাইয়ার এর সহায়তায় ইউনিভার্সিটি অফ মিউনিখের তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে বোলৎসমানের জন্য একটি পদের ব্যবস্থা করেন। মিউনিখে তখন এমন কোন পদ ছিল না, কেবল তার জন্যই এই পদটি তৈরি করা হয়। মিউনিখ কর্তৃপক্ষ যুক্তি হিসেবে দেখায়, তাত্ত্বিক ও পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞান দিনদিন আলাদা হয়ে যাচ্ছে এবং একজনের পক্ষে দুই বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে, বোলৎসমান যেহেতু গণিতে খুবই দক্ষ সেহেতু তিনি তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে পারবেন যা ম্যক্সওয়েল, ক্লাউসিয়ুস এবং হেল্মহোলৎসের গবেষণাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাবে। গ্রাৎস ত্যাগের সময় বোলৎসমানের সম্মানে একটি বিদায়ী অনুষ্ঠান হয়। নতুন রেক্টর এবং এইচ স্ট্রাইনৎস তাদের বক্তৃতায় আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, বোলৎসমান আবার অস্ট্রিয়ায় ফিরে আসবেন। উত্তরে বোলৎসমান বলেন, মিউনিখে বোলৎসমান মিউনিখে বোলৎসমান প্রতি সপ্তাহে হোফব্রেউহাউসে বিয়ার নিয়ে সহকর্মীদের সাথে বিজ্ঞান বিষয়ক আলোচনার জন্য। এখানে আসতেন গণিতবিদ ভালটার ফন ডুক, আলফ্রেড প্রিংশাইম, পদার্থবিজ্ঞানী লোমেল ও লেওনহার্ড সোনকে, রসায়নবিদ বাইয়ার, জ্যোতির্বিজ্ঞানী হুগো ফন সেলিগার এবং প্রকৌশলী কার্ল ফন লিন্ডে। এ সময় তিনি পরিবার নিয়ে থাকতেন মাক্সিমিলিয়ান স্ট্রাসেতে, বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার প্রিয় অপেরা দুটোই ছিল বাসা থেকে কাছে। প্রায় রিচার্ড ভাগনারের সুর শুনতে যেতেন। দিনদিন তার চোখের অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে, অনেক সময় বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র বা বই তার স্ত্রী পড়ে শোনাতেন যাতে তার চোখ অধিক পরীশ্রম থেকে রেহাই পায়। তবে বাভারিয়ার সরকার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোন পেনশন দেয় না বলে তখন থেকেই বোলৎসমান তার পরিবারের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। চোখের অবস্থা ভাল নয় দেখেই ১৮৯৬ সালের মধ্যে তার বিখ্যাত বই Lectures on Gas Theory লিখে ফেলেন। ১৮৯২ সালে লোশমিটকে লেখা এক চিঠি থেকে জানা যায় ততোদিনে তার আবার দেশের বাড়ির জন্য খারাপ লাগতে শুরু করে। তিনি লিখেন যে ভাল আছেন কিন্তু অস্ট্রিয়ার চেয়ে ভাল নয়। এই বছর তার পুরনো শিক্ষক ইয়োসেফ স্টেফান মারা যান। ভিয়েনা কর্তৃপক্ষ চেষ্টা করুন স্টেফানের পদে বোলৎসমানকে নিয়ে আসতে। কিন্তু এদিকে মিউনিখ তার বেতন বাড়িয়ে দেয় এবং তার জন্য একজন ব্যক্তিগত সচিবের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাকে থাকতে অনুরোধ করে। তিনি ভিয়েনাকে বলেন, আপাতত অন্তত ১ বছর তিনি মিউনিখে থাকতে চান। এ সময় বোলৎসমানের জীবনের একজন উল্লেখযোগ্য সাক্ষী হচ্ছেন জাপানে পদার্থবিজ্ঞান গবেষণা উন্নয়নের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হানতারো নাগাওকা। তার একটি চিঠি থেকে জানা যায়, বোলৎসমান মিউনিখে পড়াচ্ছেন জেনেই তিনি মিউনিখে এসেছেন। এতেই বোঝা যায় বোলৎসমান কতোটা বিখ্যাত ছিলেন। ১৮৯৪ সালে মিউনিখে থাকা অবস্থায় বোলৎসমান ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের পিএইচডি অনারিস কজা হন। অক্সফোর্ডে তিনি প্রভূত সম্মান পেয়েছিলেন। এ বছরের বসন্তে ভিয়েনা এবং মিউনিখের মধ্যে তার পছন্দ ঘন ঘন পরিবর্তিত হতে থাকে। অবশেষে জুনে মিউনিখ ছেড়ে ভিয়েনা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন তিনি অস্ট্রিয়ার সেরা বিজ্ঞানী। ভিয়েনায় তাকে গ্রহণের জন্য বিশাল আয়োজন করা হয়েছিল। দর্শন অনুষদ রাসায়নিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি পদ বাতিল করে তাকে অর্থ যোগান দেয়। শর্ত থাকে, তিনি হঠাৎ দায়িত্ব পালনের অযোগ্য বিবেচিত হলে তাকে পূর্ণ অবসরকালীন ভাতা দিতে হবে। ভিয়েনা-লাইপৎসিগের অস্থির সময় বোলৎসমানকে ভিয়েনায় আনার জন্য অস্ট্রীয় কর্তৃপক্ষ যে মহাযজ্ঞের আয়োজন করেছিল তার মোহ অচিরেই কেটে যায়। বোলৎসমান বুঝতে পারেন, ১৮ বছর ভিয়েনার বাইরে থাকার কারণে এখন এখানে তার কোন বন্ধুমহল নেই। তার উপর আছে আর্নস্ট মাখের তীব্র বিরোধিতা। মাখের দর্শন ছিল বোলৎসমানীয় দর্শনের একেবারে বিপরীত এবং আরও সমস্যা ছিল, একটি সঠিক হলে অন্যটি সঠিক হতে পারে না। মাখ মনে করতেন, পরমাণু দেখা যায় না বলে তা নিয়ে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই, তবে গণিত মেলানোর খাতিরে কিছুটা আলোচনা করা যেতে পারে। এর বদলে তিনি শক্তির আদান-প্রদাণের মাধ্যমে সব ব্যাখ্যা করতে চাইতেন। তার এই দর্শনের নাম হয়েছিল শক্তিবাদ বা এনার্জেটিক্স। তবে বর্তমানে একে বিজ্ঞান না বলে ছদ্ম-বিজ্ঞান বলা হয়। বোলৎসমান মাখের বিরোধিতার সাথে মানসিকভাবে পেরে উঠতেন না, কারণ মানসিকভাবে তিনি মাখের চেয়ে দুর্বল ছিলেন। ১৮৯৫ সাল থেকে মাখ ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনার দর্শন ও বিজ্ঞানের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছিলেন। তার সাথে বোলৎসমানের সরাসরি কোন বিতর্ক না হলেও মাখ বোলৎসমানকে মূল্য দিতেন না, নিজেকে বোলৎসমানের তুলনায় বুদ্ধিমান মনে করতেন। এমনকি বোলৎসমানের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়েও তিনি নেতিবাচক মন্তব্য করতেন। একবার দার্শনিক হাইনরিশ গোমপেরৎস-কে লেখা একটি চিঠিতে তিনি বলেন, "বোলৎসমান ক্ষতিকর নয়, তবে প্রচণ্ড কাঁচা এবং খাপছাড়া। কোথায় সীমারেখা টানতে হবে এ নিয়ে তার কোন ধারণাই নেই। তার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক বিষয় সম্পর্কেও এই কথা খাটে, এগুলো তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।" শক্তিবাদ নিয়ে মাখ, অস্টভাল্ড এবং হেল্ম-এর সাথে বোলৎসমানের বিতর্ক আলাদা অনুচ্ছেদে আলোচিত হবে। এসব বৈজ্ঞানিক বিতর্কের কারণে বোলৎসমান ভাবতে শুরু করেন, জার্মানিতে তার কাজ খুব কম মূল্য পাচ্ছে। তিনি একা হয়ে যান। এইচ-তত্ত্বের বিরোধিতা করে সেরমেলোর মন্তব্যের জবাবে তিনি লিখেছিলেন, "সেরমেলোর গবেষণাপত্র প্রমাণ করে যে আমার লেখা সবাই ভুল বুঝছে। অবশ্য এই ভেবে আমি সন্তুষ্ট যে, এটা প্রমাণ করে জার্মানিতে আমার লেখা অন্তত কেউ পড়তে শুরু করেছে।" এর মাঝে ভিয়েনা নিয়ে তার অসন্তুষ্টি বেড়েই চলে। তিনি গবেষণাগারের কোর্স থেকে অব্যাহতি চান। কিছুদিন পর অস্টভাল্ডকে লিখেন, জার্মানির চেয়ে এখানে অনেক কম ছাত্র গবেষণা করতে চায়, এখানে বৈজ্ঞানিক আলোচনাও খুব কম হয়। বছর বছর খানেক পর তার স্ত্রী বলেছিলেন, ভিয়েনার তার কাজ ছিল স্কুল-মাস্টারের মত। এটি অবশ্যই বোলৎসমানের মেধার প্রতি সুবিচার ছিল না। তিনি অস্ট্রিয়ার রাজনীতি নিয়েও অসন্তুষ্ট ছিলেন। ১৯০০ সালে বোলৎসমান ইউনিভার্সিটি অফ লাইপৎসিগে অধ্যাপনার একটি পদ গ্রহণ করেন। এখানে ভৌত রসায়নবিদ ভিলহেল্ম অস্টভাল্ড ইতিমধ্যে গবেষণার একটি চমৎকার পরিবেশ গড়ে তুলেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগ দেয়ার সময় তাকে জার্মানি এবং বহির্বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদার্থবিজ্ঞানী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তির সম্ভাবনা যখন দেখা দিচ্ছিল তখন বোলৎসমান খুশিই হয়েছিলেন। কিন্তু প্রস্তাবটি গ্রহণ করতে গিয়ে তার প্রচণ্ড মানসিক ধকল যায়। তিনি মানসিক ভারসাম্য হারাতে বসেন, এমনকি কিছুদিন একটি মানসিক হাসপাতালে অবস্থান করেন। যথারীতি লাইপৎসিগেও বোলৎসমানের শান্তি আসেনি। অস্টভাল্ড ব্যক্তিগত জীবনে তার বন্ধু হলেও মাঝে মাঝে তাদের বিতর্ক এত চরমে উঠে যেতো কেউই ভারসাম্য রাখতে পারতেন না। এসব কারণে বোলৎসমানের অবস্থা ভিয়েনার চেয়েও খারাপ হয়ে পড়ে। একসাথে কাজ করতে তিনি পছন্দ করতেন, কিন্তু অস্টভাল্ডের সাথে প্রতিনিয়ত বিতর্ক করতে গিয়ে তিনি বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। এখানেই একবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। অবশেষে স্বাস্থ্যহানির কারণ দেখিয়ে প্রাদেশিক সরকারের কাছে অনুরোধ করেন তাকে অব্যাহতি দিতে। এরপর তিনি আবার ভিয়েনা ফিরে যেতে চান। উল্লেখ্য তিনি যাওয়ার পরও ভিয়েনায় তার পদটি শূন্যই ছিল। তাই ১৯০২ সালে আবার ভিয়েনা ফিরে যেতে সক্ষম হন। এর মধ্যে ১৯০১ সালে স্ট্রোক করার কারণে মাখ অবসরে চলে গিয়েছিলেন। ভিয়েনায় ফিরে আসলেও, লাইপৎসিগ গমনের কারণে অস্ট্রীয় সরকার বোলৎসমানকে পুরোপুরি ক্ষমা করেনি। উপরন্তু তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন ছড়াচ্ছিল। অনেকে বলছিল, সে মানসিকভাবে অসুস্থ এবং দায়িত্ব পালনের অযোগ্য। গবেষণা ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তাই রাজা এবং ভিয়েনা কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছিল। মন্ত্রী বোলৎসমানের ডাক্তারদের সাথে কথা বলেন এবং তাকে এই মর্মে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করতে হয়েছিল তিনি পুনরায় অস্ট্রিয়া ত্যাগের চেষ্টা করবেন না। স্বভাবতই তিনি হয়ে পড়েছিলেন অস্ট্রিয়ার বৈজ্ঞানিক স্বাধীনতার প্রতীক। তবে এখানেও সুখে থাকতে পারেননি। তার ইনস্টিটিউটের জন্য অর্থ সংস্থান কমে যায়। এমনকি তাকে পুনরায় অস্ট্রিয়ার বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য হতে ঝামেলা পোহাতে হয়। কারণ মিউনিখ যাওয়ার কারণে তাকে এই সদস্যপদ ত্যাগ করতে হয়েছিল। ১৯০৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার স্ত্রী লাইপৎসিগে রয়ে যাওয়া কন্যা ইডাকে লিখেন, "তোমার বাবার অবস্থা দিনদিন আরও খারাপ হচ্ছে। সে আমাদের ভবিষ্যতের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। আমি ভেবেছিলাম ভিয়েনায় জীবন ভাল হবে।" চোখের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে বেশ কিছুকাল ধরে তার স্ত্রী বিভিন্ন গবেষণাপত্র পড়ে শোনাতেন। কিন্তু এ সময় অবস্থা এতোই খারাপ হয়ে যায় যে তাকে টাকা দিয়ে গবেষণাপত্র পড়ে শোনানোর জন্য একজন সেক্রেটারি রাখতে হয়, আর তার গবেষণাপত্রগুলো লিখে দেন স্বয়ং তার স্ত্রী। পাশাপাশি মাঝেমাঝেই তার হাঁপানির সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে, বেশি কাজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড মাথা ব্যথায় ভুগেন। এ সময় শিক্ষকতার কাজ ছিল এমন: তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের একটি কোর্সের জন্য সপ্তাহে ৫ ঘণ্টা, একই বিষয়ে একটি সেমিনার, এবং প্রতি ২ সেমিস্টার পরপর সপ্তাহে ১ ঘণ্টার আরেকটি কোর্স। উপরন্তু, ১৯০৩ থেকে তিনি সপ্তাহে দুই ঘণ্টার দর্শনের কোর্সটিও পড়ানো শুরু করেন, যেটি আগে মাখ পড়াতেন। এত চাপ তার সইছিল না। এ সময় বোলৎসমানের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেকচার ছিল দর্শনের উপর লেকচারগুলো। তিনি ভেবেছিলেন, দর্শনই তার আসল জায়গা। প্রথম লেকচারে তার অভাবনীয় সাফল্য আসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় মিলনায়তন নির্বাচন করার পরও তার লেকচারে অনেককে আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তার লেকচার উপলক্ষে কক্ষটি সাজানো হয় এবং লেকচারের পর শিক্ষার্থীরা প্রচুর সম্ভাষণ জানাতে থাকে। সকল সংবাদপত্রই খবরটি ছাপে। অস্ট্রিয়ার ফিরে আসার কারণে খুব খুশি হয়ে সম্রাট ফ্রানৎস-ইয়োসেফ বলেন, খবরের কাগজে তার লেকচার সম্পর্কে জেনেছেন। অবশ্য দু-তিনটি লেকচারের পর তার উৎসাহে ভাটা পড়ে, সেই সাথে শিক্ষার্থীদেরও। এতে তার মধ্যে ব্যর্থতার অনুভূতি আসে। এ সময় ফ্রানৎস ব্রেন্টানো-কে লেখা কিছু চিঠি থেকে জানা যায় লেকচারগুলো তার কাছে কত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। উল্লেখ্য, ব্রেন্টানো ভিয়েনায় দর্শন পড়াতেন, কিন্তু ক্যাথলিক ধর্মপ্রচারক হয়ে বিয়ে করার কারণে তাকে অস্ট্রিয়া ত্যাগে বাধ্য করা হয়। বোলৎসমান যখন চিঠিগুলো লিখেছেন তখন তিনি ইতালিতে ছিলেন। বোলৎসমান একবার এমন ভাব নিয়ে ফ্লোরেন্সে তার সাথে দেখা করার জন্য গিয়েছিলেন যে মনে হচ্ছিল তিনি তার মনঃরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যাচ্ছেন। তখনও তিনি সন্ধ্যায় বন্ধু-বান্ধবের সাথে আড্ডা দিতেন। তথাপি ভোর ৫ টায়ও তাকে কাজ করতে দেখা যেতো। এটিও চরম হতাশার রোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ। এই রোগে আক্রান্তরা অনেক যখন ম্যানিক তথা পাগলামির দশায় থাকে তখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে অনেক কাজ করে, আর হতাশার দশা আসার সাথে সাথে তার মাঝে অবসাদ এবং ঘুম ঘুম ভাব নেমে আসে। এমনটি হলে সে কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলে, সকাল সকাল তার ঘুমকাতর চোখ দেখা যায় এবং সে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ বোলৎসমান তিন বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে গিয়েছিলেন। ১৮৯৯ সালে প্রথম বারের মত যান, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে। ব্রেমেন থেকে কাইজার ভিলহেল্ম ডের গ্রোসে জাহাজে চড়ে সাউদাম্পটন এবং Cherbourg হয়ে নিউ ইয়র্ক পৌঁছান। প্রথমে ম্যাসাচুসেটসের ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি ইন ওরচেস্টারে বলবিদ্যার মৌলিক নীতি ও সূত্র নিয়ে চারটি লেকচার দেন। ক্লার্ক ইউনিভার্সিটি তখন ১০ম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছিল। এখানে তিনি সম্মানসূচক পিএইচডি ডিগ্রিও গ্রহণ করেন। এই ভ্রমণের সময় বোলৎসমান তার বাচ্চাদের উদ্দেশ্যে ৬টি চিঠি লিখেছিলেন। লিখেছিলেন, নিউ ইয়র্ক সিটি দেখে তিনি এবং হেনরিয়েটে দুজনেই মুগ্ধ, এখানে আছে ঘন ঘন ইলেকট্রিক ট্রাম, উপরে বাষ্প ইঞ্জিনের ট্রেন আর নিচে সুন্দর রাস্তা। বস্টন-কে তাদের বেশ ধূলিমাখা মনে হয়েছিল। এছাড়া তারা মন্ট্রিল, বাফেলো, ওয়াশিংটন ডিসি, বাল্টিমোর এবং ফিলাডেলফিয়া গিয়েছিলেন। শারীরিক ও মানসিক অবস্থা খারাপ থাকা সত্ত্বেও বোলৎসমান ১৯০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট লুইসে একটি সম্মেলনে যোগ দিতে যান। এবার সাথে নেন ছেলে আর্থুর লুডভিগকে। উল্লেখ্য ১৯০১ সালে স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্য তিনি এই ছেলেকে নিয়েই ভূমধ্যসাগরে জাহাজ ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। এবার নিউ ইয়র্ক যান হামবুর্গ থেকে বেলগ্রাফিয়া নামক একটি জাহাজে করে। ১০ দিনের এই ভ্রমণ তার জন্য খুব কষ্টের ছিল, মূলত হর্নের আওয়াজে ঘুমাতে না পারার কারণে। এ সময় তারা ডেট্রয়েট ও শিকাগো যান, ফিরে আসেন ডয়েচলান্ড জাহাজে করে। ১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র যান শেষবারের মত, একা। এবার ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি-র একটি গ্রীষ্মকালীন স্কুলে ৩০টি লেকচার দেন। অস্টভাল্ড এবং তিনি দুজনেই এই স্কুলের দাওয়াত পেয়েছিলেন। বোলৎসমানের Reise eines deutschen Professors ins Eldorado (এলদোরাদো-তে এক জার্মান অধ্যাপক) নামক রচনায় এই ভ্রমণের একটি চমৎকার বর্ণনা পাওয়া যায়। শেষবার আমেরিকায় থাকাকালে তিনি আবারও হাঁপানিতে আক্রান্ত হতে শুরু করেন। ক্যালিফোর্নিয়ার আবহাওয়া তার সহ্য হয়নি। বোলৎসমানের আগমন সম্পর্কে মার্কিন সংবাদপত্র The Daily California এ ধরনের খবর ছাপে: "প্রেসিডেন্ট হুইলার গ্রীষ্মকালীন স্কুলে নামীদামী অধ্যাপকদের আনার ব্যাপারে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সাদরে গৃহীত হয়েছে। ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনার তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক লুডভিগ বোলৎসমান তার নিমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্রে বোলৎসমান পৃথিবীর সেরা বিজ্ঞানীদের অন্যতম। ভৌত রসায়নের জন্য অধ্যাপক আরহেনিয়ুস যা করেছেন তিনি গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানের জন্য তাই করেছেন।" বোলৎসমান তার ইংরেজি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু তার ইংরেজি লেকচার যারা শুনেছেন তাদের মন্তব্য সে কথা বলে না। অনেকেই তার ইংরেজির সমালোচনা করেছেন। একজন লিখেছেন, "তিনি জার্মান ভাষায় কথা বললে অধিকাংশ শ্রোতাই তাকে বুঝতে পারত। কিন্তু সপ্তাহে ৪ দিন করে তথাকথিত ইংরেজিতে বলেছেন এবং বলার বিষয়টি ছিল Mechanical Analogies of Thermodynamics with Special Reference to the Theorems of Statistical Mechanics"। বার্কলির সবাই এখনও তার ব্যাপারে খানিকটা ক্ষুব্ধ, এর একটি কারণ ছিল তার খাপছাড়া আচরণ এবং একজন জার্মান অধ্যাপক হয়ে দর্শকদের অতিরিক্ত মুগ্ধ করার জন্য বলা ইংরেজি। করুণ মৃত্যু লুডভিগ বোলৎসমান ১৯০৬ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ইতালির ত্রিয়েস্তের নিকটে দুইনো নামক একটি ছোট গ্রামে আত্মহত্যা করেন। এই গ্রামটি আড্রিয়াটিক সাগরের তীরে অবস্থিত। এখানে এসেছিলেন মূলত স্বাস্থ উদ্ধারের জন্য বেড়াতে, সপরিবারে। ৬ তারিখেই তাদের ভিয়েনা ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। সম্ভবত, দুইনোতেও এতদিন থেকেও স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি না হওয়ার কারণে তিনি আবার সেই চরম হতাশায় নিমজ্জিত হয়েছিলেন, নিজের বৈজ্ঞানিক কর্মদক্ষতা নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছিলেন এবং সেই তাড়না থেকেই নিজেকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু যে ঘটনার সাথে এই আত্মহনন একেবারেই মেলানো যায় না তা হচ্ছে, মাত্র এক মাস আগেই তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণ নিয়ে রসাত্মক একটি লেখা লিখেছিলেন। তবে সম্ভবত তিনি শেষ যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আরও হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। বার্কলির গ্রীষ্মকালীন স্কুল বা ভিয়েনার দর্শনের ক্লাস, কোথাওই লেকচারগুলো তার মনমত হয়নি। ছাত্রদের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, তিনি শিক্ষক হিসেবে খুবই উঁচু মানের ছিলেন এবং শিক্ষার্থীরা মনে করত লেকচার দিতে তার খুব ভাল লাগে। কিন্তু তার সেক্রেটারি স্টেফান মায়ারের ভাষ্য থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, বোলৎসমান লেকচার দেয়াকে খুবই কষ্টকর মনে করতেন এবং হঠাৎ কোন লেকচার বাতিল হলে খুশিই হতেন। কিন্তু প্রতিটি লেকচারেই নিজের সর্বোচ্চটা দেয়ার চেষ্টা করতেন, এবং বক্তৃতাটি সফল না হলে ভেঙে পড়তেন। ভিয়েনায় দর্শনের লেকচারগুলোর ক্ষেত্রে বোধহয় তার এমনটিই হয়েছিল। ক্যালিফোর্নিয়া ভ্রমণের কাহিনী রচনাটি ছিল তার জীবনের শেষ আনন্দের ছটা। কিন্তু বাইপোলার ডিসঅর্ডারের রোগীদের ক্ষেত্রে প্রায়ই আনন্দের পর হঠাৎ তীব্র হতাশা নেমে আসে। এক মাসের মধ্যেই তিনি এমন হতাশা এবং কষ্টে ভুগতে শুরু করেছিলেন যে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। তবে এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, সে সময় ভিয়েনার বুদ্ধিজীবীদের আত্মহত্যার ঘটনা খুব বেশি বিরল ছিল না। একটি অস্থির সময়ে নড়বড়ে রাজতন্ত্রের শাসনের ভেতরে থেকে ভিয়েনায় গড়ে উঠেছিল একটি শক্তিশালী স্বাধীন বুদ্ধিজীবী গোষ্ঠী। বোলৎসমানের মৃত্যুর বেশ কিছুকাল পরে এখানেই জন্মেছিল ভিয়েনা সার্কেল। কিন্তু আত্মহত্যা করেছিলেন অনেকেই। যেমন: অস্ট্রিয়ার রাজপুত্র রুডলফ যিনি সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেছিলেন, লুডভিগ ভিটগেনস্টাইনের তিন ভাই, অটো ভাইনিংগার যিনি আত্মহত্যার কিছুদিন পূর্বেই সেক্স অ্যান্ড ক্যারেক্টার নামের একটি অসামান্য বই লিখেছিলেন, গীতিকবি গেয়র্গ ট্রাকল, গুস্তাফ মালারের ছোট ভাই অটো মালার, আলফ্রেড রেডল এবং স্থপতি এডুয়ার্ড ফান ডার নুল যে নিজ হাতে নির্মিত রাজকীয় অপেরা হাউজের সমালোচনা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে বোলৎসমানের আত্মহত্যার পূর্বে কিছু সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করা যায় যেগুলো হয়থ তার হতাশায় ইন্ধন যুগিয়েছিল। ১৯০৬ সালের মে মাসে ইউনিভার্সিটি অফ ভিয়েনার দর্শন অনুষদের প্রধান মন্ত্রণালয়ের কাছে চিঠি লিখে জানান যে, বোলৎসমান নিউরাস্থিনিয়ায় ভুগছে এবং তার বৈজ্ঞানিক কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত নয়। তার চোখের অবস্থা ভাল যাচ্ছিল না। একজন বেনামী সাংবাদিকের কথা থেকে জানা যায়, ১৯০৫ সালের শেষ দিকে বোলৎসমানে মিউনিখে একটি মানসিক হাসপাতালে গিয়েছিলেন, কিন্তু অচিরেই মিউনিখ ছেড়ে ভিয়েনা চলে যান। তার ছাত্র লুডভিগ ফ্লাম (যিনি তার মেয়ে ইডাকে বিয়ে করেছিলেন) বলেন, "ছাত্র হিসেবে আমার বোলৎসমানের দেয়া শেষ লেকচারটি শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল, ১৯০৫-০৬ মৌসুমের শীতকালীন সেমিস্টারে। মানসিক সমস্যার কারণে তিনি লেকচার বন্ধ করে দেন। আমি এবং আরেকজন ছাত্র তার ভেরিং-এর বাসায় মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছিলাম। পরীক্ষা শেষে আমরা যখন ফিরে আসছি তখন তার কাতর গোঙানির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।" এ বছরেরই গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারে স্বয়ং মাখের মুখে শোনা যায়, তিনি সপরিবারে দুইনো গিয়েছিলেন তার স্ত্রীর একটি বহু পুরনো ইচ্ছা পূরণের উদ্দেশ্যে। তবে এ সময়ও তার অবস্থা খুব একটা ভাল ছিল না। ডি ৎসাইট পত্রিকার ৭ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৬ এর একটি নিবন্ধে এমনটি বলা হয়েছিল, "দুইনোতে বোলৎসমান খুব চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন ছিলেন, বিশেষত ভিয়েনায় ফিরে আসার জন্য। তবে এছাড়া তার অবস্থা ছিল আগের তুলনায় ভাল। মৃত্যুর দিন তাকে খুব উৎফুল্ল দেখা গিয়েছিল। তার স্ত্রী এবং মেয়ে সাঁতার কাটতে গেলে তিনি আত্মহত্যার কাজটি করেন।" ডি ৎসাইটেরই আরেকটি লেখা থেকে জানা যায়, তিনি কীভাবে আত্মহত্যা করেছিলেন: কেসমেন্ট জানালার আড়াআড়ি দণ্ডের সাথে একটি ছোট রশি ঝুলিয়ে। তার মেয়েই তাকে প্রথম মৃত অবস্থায় আবিষ্কার করেছিল। তবে কোথায় আত্মহত্যা করেছেন তা নিয়ে দুই ধরনের কথা আছে। অধিকাংশের বর্ণামতে তার হোটেল রুমে, তবে আউগুস্তে ডিকের ভাষ্যমতে, বোলৎসমানের সহকর্মী, গণিতবিদ মের্টেন বলেছেন, বোলৎসমান দুইনোর গীর্জায় আত্মহত্যা করেছিলেন। তার মৃত্যুর পরও হেনরিয়েটে অনেকদিন বেঁচে ছিলেন, ১৯৩৮ সালের ৩রা ডিসেম্বর মারা যান। বোলৎসমানের মৃত্যুতে প্রচণ্ড আহত হয়েছিলেন এরভিন শ্রোডিঙার, তখন তার বয়স ছিল ১৯ বছর। তিনি বোলৎসমানের কাছে তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞান পড়ার ব্যাপারে খুব আগ্রহী ছিলেন। প্রচণ্ড আশাহত হয়েছিলেন দার্শনিক লুডভিগ ভিটগেনস্টাইন, তিনিও ১৯০৬ সালে লিনৎস ছেড়ে বোলৎসমানের কাছে শেখার পরিকল্পনা করছিলেন। উল্লেখ্য ভিটগেনস্টাইন তার সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ Tractatus Logico-Philosophicus-এ হাইনরিশ হেরৎস ও বোলৎসমানের পদার্থবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের দর্শনের সাথে সারেন কিয়েরকেগর ও ল্যেভ তল্‌স্তোয়-এর নীতিবিদ্যা মেলানোর চেষ্টা করেছিলেন। দুইনোতে বোলৎসমানের মৃত্যুর কথা বলতে গিয়ে মুর দুইনোর-ই বিখ্যাত কবি রাইনার মারিয়া রিলকে-র তিনটি চরণ উদ্ধৃত করেন। বোলৎসমানের জীবনীকার কার্লো কেরচিনিয়ানি তার পূর্বে আরও দুটি চরণ যোগ করেন। এই পাঁচটি চরণ বোলৎসমানের মৃত্যুকালীন মনস্ততত্ত্বকেই তুলে ধরে। পদার্থবিজ্ঞানে অবদান এনট্রপি তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র এবং তাপীয় সাম্যাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্যতা তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক (১৮৭৭খ) গবেষণাপত্রে বোলৎসমান যা প্রকাশ করেছিলেন তাকে পরবর্তীতে আইনস্টাইন বোলৎসমান নীতি নামে আখ্যায়িত করেন। তিনি তার ১৮৭২ এর গবেষণাপত্রের ফলাফলগুলোকে এখানে আরও বিস্তৃত করেন এবং পরমাণুর বিশৃঙ্খলাকে এনট্রপির মাধ্যমে গণিতে প্রকাশ করেন। বোলৎসমানের আগে পদার্থবিজ্ঞানের পরমাণুর গঠন বিষয়ক কোন আলোচনা ছাড়াই পরমাণুর গতির বিশৃঙ্খলা নিয়ে গবেষণা করা হতো। আর যদি দেখা যেতো কোন প্রক্রিয়া ঘটা নিষেধ তাহলে সেটা ব্যাখ্যার জন্য এনট্রপি নিয়ে আসা হত। কিন্তু বোলৎসমান দেখান, এনট্রপি একটি ম্যাক্রো দশার সম্ভাব্যতা ছাড়া আর কিছুই নয়, যাকে আবার মাইক্রো পর্যায়ের সম্ভাব্যতার সাথে মেলানো যায়। অণুগুলোর সম্ভাব্যতা বর্ণনার মাধ্যমে ম্যাক্রো পর্যায়ে সম্ভাব্যতা বোঝার জন্য তিনি একটি সমীকরণ প্রণয়ন করেন যা ভিয়েনায় তার সমাধিফলকে মুদ্রিত আছে। এনট্রপির এই সমীকরণটি হচ্ছে: যেখানে  = 1.3806505(24) × 10−23 J K−1 হচ্ছে বোলৎসমান ধ্রুবক, Wahrscheinlichkeit, তথা একটি ম্যাক্রো দশা কতবার ঘটে তা। একে একটি ব্যবস্থার ম্যাক্রো দশার সাথে সংশ্লিষ্ট যতগুলো মাইক্রো অবস্থা আছে তা। মাক্স প্লাংক এই সমীকরণটির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেন, "এনট্রপি এবং সম্ভাব্যতার মধ্যে লগারিদমিক সংযোগ প্রথম উত্থাপন করেছিলেন বোলৎসমান, তার গ্যাসের গতি তত্ত্ব বিষয়ক গবেষণায়"। বিশৃঙ্খলা হিসেবে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র আমরা কেন কিছু ঘটনা একবারের বেশি বা একেবারেই দেখতে পাইনা তা বোলৎসমানের পরিসাংখ্যিক বণ্টন দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় যে কাজটি তিনি নিজেই করেন। আগে এর ব্যাখ্যা দেয়া হত তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের মাধ্যমে। এর পরপরই এনট্রপি ধারণার জন্ম হয়েছিল। আসলে সে সময় বাষ্প ইঞ্জিনের ব্যবহার বাড়তে থাকায় তাপগতিবিদ্যার সাথে গালিলেও গালিলেই এবং আইজাক নিউটন দের চিরায়ত গতিবিদ্যার সমন্বয় সাধন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। এই সমন্বয় তৈরি করা হয়েছিল গ্যাসের গতীয় তত্ত্বের মাধ্যমে এনট্রপি যার একটি ফসল। স্টোস-ৎসাল-আনসাৎস এবং আরগডিক অনুকল্প বোলৎসমান সমীকরণ ১৮৭২ সালে গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে নতুন গবেষণা নামক গবেষণাপত্রে বোলৎসমান গ্যাস অণুর বণ্টন নিয়ে তার সবচেয়ে বিখ্যাত সমীকরণ প্রকাশ করেন যা বোলৎসমান সমীকরণ নামে পরিচিত। পাশাপাশি, এতেই প্রথমবারের মত ম্যাক্রো তথা বৃহৎ পরিমণ্ডলে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা করেন। এতে সম্ভাবনার মাধ্যমে অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করাটা ছিল বৈপ্লবিক। গ্যাস অণুগুলোর মধ্যে অসংখ্য সংঘর্ষ হয় এবং একটি সংঘর্ষ থেকে আরেকটি সংঘর্ষের দূরত্ব খুবই কম, এক মিলিমিটারের প্রায় ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগ। অণুগুলোর এই মিথস্ক্রিয়া অসংখ্যভাবে হতে পারে। মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে তারা ধীরে ধীরে বিশৃঙ্খল হবে এবং এই বিশৃঙ্খল হওয়ার জন্য অসংখ্য প্রক্রিয়া রয়েছে, অর্থাৎ তারা অসংখ্য প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খল হতে পারে। তাই শুরুতে কিছু অণুর অবস্থান বা বেগ সামান্য পরিবর্তন করলে শেষ দশায় তেমন কোন পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এই বিশৃঙ্খল গ্যাস অণুগুলোকে আবার শুরুর অবস্থায় ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা হবে খুবই কম। বিশৃঙ্খল হওয়ার অসংখ্য প্রক্রিয়া থাকলেও পুনরায় শৃঙ্খলিত হওয়ার প্রক্রিয়া কেবল একটি, বা খুবই কম সংখ্যক। অর্থাৎ অণুগুলোকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা তাত্ত্বিকভাবে অসম্ভব নয়, কিন্তু খুবই অসম্ভাব্য। অসম্ভব এর বদলে অসম্ভাব্য শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমেই বোলৎসমান পরিসাংখ্যিক বলবিদ্যার জন্ম দেন। বোলৎমান এমন একটি সমীকরণ লিখেছিলেন যার মাধ্যমে একটি গ্যাস অণুর কোন সময়ে একটি নির্দিষ্ট বেগ এবং অবস্থানে থাকার সম্ভাবনা নির্ণয় করা যায়। একটি ঘরের মধ্যকার গ্যাস অণু থেকে শুরু করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশোদ্যত মহাকাশ খেয়াযান পর্যন্ত সবকিছুর ক্ষেত্রেই এই সমীকরণ প্রয়োগ করা যায়। সমীকরণটির গাণিতিক রূপ হচ্ছে: যেখানে, হচ্ছে কণার বণ্টন অপেক্ষক (ডিস্ট্রিবিউশন ফাংশন) যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের কণার অবস্থান ও ভরবেগ নির্দেশ করে। কণার উপর প্রযুক্ত বল, কণার বেগ, কণার ভর এবং t হচ্ছে সময়। আবিষ্কারের পরপর বোলৎসমান ঠিক বুঝতে পারেননি তিনি কি অর্জন করেছেন। তিনি ভেবেছিলেন চিরায়ত বলবিদ্যার গণ্ডির মধ্যে থেকেই তিনি নতুন কিছু একটা করেছেন। এর প্রমাণ পাওয়া যায় তার গবেষণাপত্রের শুরুর কথাগুলোতে, "এটা মনে করা ভুল হবে যে, সম্ভাব্যতার তত্ত্ব ব্যবহার করেছি বলে বলবিদ্যায় তাপের তত্ত্ব অনিশ্চয়তা হয়ে পড়বে... বরং বোঝা উচিত, এখন থেকে উপসংহারে পৌঁছার ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হতে হবে।" কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি চিরায়ত নিয়ম ভেঙে একেবারে সম্ভাব্যতার নতুন যুগ শুরু করেছিলেন। শুরুতে বোলৎসমান ভাবছিলেন, চিরায়ত নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম হয়ত তিনি বুঝতে পেরেছেন। কিন্তু তার তত্ত্বে সম্ভাবনার ব্যবহার ছিল অনেক বেশি। দেখা যাচ্ছে, তার সমীকরণ যতটা বৈপ্লবিক ছিল তিনি নিজেও ১৮৭২ সালে ততটা বৈপ্লবিক কথা বলেননি। তবে সমীকরণের অব্যর্থতা বোঝা যায় তার সহকর্মীদের প্রতিক্রিয়া দেখে। প্রায় সবাই তার তত্ত্বকে পরিবর্তন করতে বলেছিলেন, বলেছিলেন তিনি যেন এসব ছেড়ে অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করেন। বোলৎসমানের দর্শন মূলধারার দর্শনে লুডভিগ বোলৎসমানের কোন যুগান্তকারী অবদান নেই, কারণ তিনি ছিলেন মূলত গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী। কিন্তু দর্শন বিষয়ে তিনি বিস্তর পড়াশোনা করেছিলেন এবং একটি নিজস্ব দার্শনিক চিন্তাধারার জন্মও দিয়েছিলেন। দার্শনিক দিক দিয়ে তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর বাস্তববাদী এবং বস্তুবাদী। অবশ্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মূলেই রয়েছে এই বাস্তববাদ। তার দার্শনিক চিন্তাধারা লিপিবদ্ধ আছে তার লেখা জনগণের প্রতি নামক বইটিতে। ১৯০৩ সালের দিকে ভিয়েনায় দার্শনিক হিসেবেও তিনি স্বীকৃত ছিলেন, যার প্রমাণ পাওয়া যায় আর্নস্ট মাখের অবসর গ্রহণের পর বিজ্ঞানের দর্শন বিষয়ক একটি পদে তাকে নিয়োগদান। শিক্ষক হিসেবে বোলৎসমান গ্রাৎসে তার শিক্ষকতার মূল বিষয় ছিল পরীক্ষণমূলক পদার্থবিজ্ঞান। এখানে তিনি তাত্ত্বিক ধারণা ব্যাখ্যার জন্য যান্ত্রিক নমুনা ব্যবহার করতেন। যেমন, ম্যাক্সওয়েলের তড়িচ্চুম্বকীয় তত্ত্ব ব্যাখ্যার জন্য তিনি বিসিকেল (সাইকেল) নামে একটি যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। দুটি তড়িৎ বর্তনীর পারষ্পরিক প্রভাব ব্যাখ্যার জন্য এটি খুবই কার্যকর একটি যন্ত্র ছিল। যন্ত্রটি বানানোর দায়িত্ব দিয়েছিলেন গ্রাৎসের প্রধান মেকানিক গাস্টাইগারকে। যন্ত্রটি সম্পর্কে বোলৎসমানের ছাত্র এরেনফেস্ট ১৯০৬ সালে তার মৃত্যুর পর শোকবাণীতে বলেছিলেন, চলন এবং বিভিন্ন বলের ক্রিয়া পরিষ্কারভাবে উত্থাপন করাটা বোধহয় বোলৎসমানের কাছে নৈসর্গিক আনন্দের বিষয় ছিল। আর্নল্ড সমারফেল্ড বলেছিলেন, "মিউনিখে আমার প্রাক্তন বিভাগের পাশে বোলৎসমানের বিসিকেলের একটি নমুনা সংরক্ষিত ছিল যা তার আদেশেই বানানো হয়েছিল।... তবে এটি তড়িৎগতিবিদ্যার চেয়ে যন্ত্রকৌশলের কাজে বেশি ব্যবহৃত হতো।" এই বিসিকেলের দুটি নমুনা ছিল, একটি গ্রাৎসে, অন্যটি মিউনিখে। যুদ্ধের সময় দুটিই হারিয়ে যায়। ১৯৮৫ সালে বোলৎসমানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত এবটি প্রদর্শনী উপলক্ষে গ্রাৎসে যন্ত্রটির একটি নকল তৈরি করেন তৎকালীন প্রধান মেকানিক কুর্ট আন্সপের্গার। মিউনিখে থাকার সময় বোলৎসমানের শিক্ষকতার একজন সাক্ষী হানতারো নাগাওকা। নাগাওকার চিঠি থেকে বোলৎসমানের শিক্ষকতা জীবন সম্পর্কে যা যা জানা যায় তা হচ্ছে: "তিনি সেখানে গ্যাসের গতি তত্ত্ব এবং পদার্থবিজ্ঞানে হ্যামিল্টনের নীতির প্রয়োগ বিষয়ে পড়াতেন। তার মতে হেল্মহোলৎস ছাড়া বোলৎসমানের মত শিক্ষক আর নেই, তবে বোলৎসমান হেল্মহোলৎসের তুলনায় অনেক স্পষ্টভাবে কথা বলেন, তার কথা সহজেই বোঝা যায়। কিন্তু মাঝে মাঝে বোলৎসমানের কিছু কাজে বুদ্ধিহীনতার লক্ষণ দেখা যায়। তিনি ম্যক্সওয়েলকে অনেক পছন্দ করেন, তার লেকচারগুলো ম্যক্সওয়েলীয় ধারায় গড়া। তিনি এমন একজন মানুষ যাকে সবারই ভালবাসতে পারার কথা।" বোলৎসমান তার ক্লাসে কোন দরিদ্র ছাত্র অকৃতকার্য হলে নিজেকেই দোষী মনে করতেন। জীবনের শেষ বছরগুলোতে তার ক্লাসে কোন ছাত্র কোনদিন অকৃতকার্য হয়নি। তার লেকচারগুলো ছিল খুব প্রাণবন্ত, সময় সময় অনেক স্থূল উদাহরণ দিয়ে বোঝাতেন। তার ক্লাসে শিক্ষার্থীরা যেকোন ধরনের প্রশ্ন করতে পারত, এমনকি তার সমালোচনাও করতে পারত। কোন একটি ধারার প্রতি পক্ষপাতিত্ব তিনি সমর্থন করতেন না, বিজ্ঞান বা দর্শন কোনকিছুতেই নয়। শিক্ষার্থীদের সাথে তার সম্পর্কও ছিল খুব আন্তরিক। তার সাথে দূরত্ব বা অতিভক্তি বজায় রেখে কথা বলতে হতো না কারও। লিজে মাইটনারের লেখা থেকে জানা যায় তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপনে বিশ্বাস করতেন, তাদের প্রশংসা করতেন এবং চরিত্র বোঝার চেষ্টা করতেন। সময় সময় তাদেরকে নিজের বাসায় নিমন্ত্রণ করতেন এবং নিজে পিয়ানো বাজিয়ে শোনাতেন। বোলৎসমানের ব্যক্তিত্ব বোলৎসমান প্রকৃতি খুব ভালবাসতেন। প্রায়শই বাগানে হাঁটতে বেরোতেন, হাঁটতে হাঁটতে তার বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন গাছগাছালি চিনিয়ে দিতেন। অন্যান্য অধ্যাপকদের মত বোলৎসমানকেও পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট থেকে একটি বাড়ি দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এর বাইরে তিনি ওবেরক্রোইসবাখের নিকটে একটি খামাড় বাড়ি ক্রয় করেন। সেখান থেকে স্টিরিয়ার গ্রামাঞ্চল দেখা যেতো, পরিবারের সাথে তিনি এই বাড়িতেই থাকতেন। গাছগাছালি খুব ভাল চিনতেন। নিজ বাড়িতে বাগান করেছিলেন, এমনকি প্রজাপতিও সংগ্রহ করতেন। ছোটবেলায় তিনি খুব একটা শরীর চর্চা করার সুযোগ পাননি। এজন্য নিজের বাড়িতে ব্যায়ামের কিছু উপকরণ কিনে রেখেছিলেন যাতে তার বাচ্চারা তা থেকে বঞ্চিত না হয়। নিজের পড়ার ঘর থেকে বাইরের পরিবেশ দেখতে পেতেন। তার প্রতিবেশী সবাই ছিল কৃষক। তার একটি অ্যালসেশিয়ান কুকুর ছিল। প্রতিদিন যখন বোলৎসমানের কাজ শেষের পথে তখন কুকুরটি খামাড় বাড়ি থেকে বেরিয়ে ইনস্টিটিউটে চলে আসত। তার জন্য অপেক্ষা করত। বোলৎসমান এলে তার সাথে সাথে পাশের একটি পাবে যেতো। তিনি যখন দুপুড়ের খাবার খেতেন তখন কুকুরটি তার পায়ের সাথে বসে থাকত। বোলৎসমান এমনকি একটি গাভীও কিনেছিলেন। মাঝেমাঝেই তাকে গাভীটিকে নিয়ে গ্রাৎসের রাস্তায় হাঁটতে দেখা যেতো। কারণ তিনি প্রাণিবিজ্ঞানের সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছিলেন এটাই কুকুরের দুধ দোয়ানোর সর্বোত্তম পন্থা। বোলৎসমান খেতেন খুব আস্তে আস্তে, সম্ভবত মায়োপিয়া থাকার কারণে। রাজবাড়িতে আমন্ত্রণে গেলে সমস্যা হতো তার। কারণ রাজবাড়িতে নিয়ম হচ্ছে রাজার খাওয়া শেষ হওয়ার পর কেউ খেতে পারবে না। দেখা যেতো বোলৎসমান ঠিকমতো খাওয়া শুরুর আগেই বাবুর্চি তার চোখের সামনে দিয়ে সব খাবার নিয়ে চলে যেতো। তিনি নিজের বাচ্চাদের খুব পছন্দ করতেন। একবার তার ছোট মেয়ে একটি পোষা বানর কিনতে চেয়েছিল। তার মা এতে একেবারেই রাজি হয়নি। কিন্তু বোলৎসমান তার আবদার কিছুটা হলেও মেটাতে তাকে খরগোশ কিনে দেন এবং খরগোশগুলোর জন্য নিজের গ্রন্থাগারে একটি খাঁচাও স্থাপন করে দেন। বোলৎনমানের প্রিয় শখের মধ্যে ছিল বরফে স্কেটিং, হাঁটা এবং সাঁতার কাটা। সন্ধ্যায় বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতেও পছন্দ করতেন। নিজের বাড়িতে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন এবং তাতে তার পিএইডি শিক্ষার্থীদেরকেও আমন্ত্রণ করতেন। অনুষ্ঠানে প্রথম বক্তৃতা দিতেও তার জুড়ি ছিল না। কারণ তিনি ভাল কৌতুক করতে পারতেন, মাঝেমাঝে ব্যঙ্গাত্মক কবিতাও লিখতেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে Beethoven im Himmel বা স্বর্গে বেটোফেন। শিল্পজ্ঞান এবং কবিতা ধ্রুপদী জার্মান সাহিত্য সম্পর্কে বোলৎসমান অনেক জানতেন। মাঝেমাঝে বিভিন্ন সাহিত্যিকের লেখা থেকে উদ্ধৃতিও দিতেন। তার Populdre Schriften (জনগণের প্রতি) নামের বইটি উৎসর্গ করেছিলেন বিখ্যাত জার্মান কবি ফ্রিডরিশ শিলারের উদ্দেশ্যে। শিলারই সম্ভবত লুডভিগের প্রিয় কবি ছিলেন। কারণ শিলার ব্যক্তিস্বাধীনতার কথা বলতেন এবং সৌন্দর্য্যকে কখনও নৈতিকতা থেকে আলাদা করতেন না। সঙ্গীতজ্ঞদের মধ্যে তার প্রিয় ছিল লুডভিগ ফান বেটোফেন। বেটোফেনের গান পিয়ানোতে বাজাতে খুব পছন্দ করতেন তিনি। ছেলে আর্থুরকে সাথে নিয়ে কখনও কখনও চেম্বার সঙ্গীত বাজাতেন। কনসার্টে যেতে পছন্দ করতেন এবং ভিয়েনার অপেরা মঞ্চের নিয়মিত দর্শক ছিল। জীবনের শেষ ৫-৬ বছরে বোলৎসমান বেটোফেনকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছিলেন যার নাম বেটোফেন ইম হিমেল (লাতিন বর্ণমালায়: Beethoven im Himmel)। কবিতার বিষয়বস্তু ছিল মানব জীবনের কষ্ট এবং মৃত্যুর আকাঙ্ক্ষা। একে তিনি Scherzgedicht তথা ব্যঙ্গাত্মক কবিতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। কবিতার প্রথমে দেখা যায়, বোলৎসমান পৃথিবীর দুঃখ-কষ্ট এবং পীড়ন আর সহ্য করতে না পেরে মৃত্যু কামনা করছেন। এর সাথে তার ব্যক্তি জীবনও মিলে যায়, কারণ তিনি সে সময় মৃত্যুই চাচ্ছিলেন। কিন্তু এক সময় ভাষা ব্যঙ্গাত্মক রূপ নেয়। দেখা যায়, তার প্রার্থনা ঈশ্বর শুনেছে, তিনি মারা গেছেন। মৃত্যুর পর তার আত্মা স্বর্গে আরোহণ করছে। পথে তিনি আরও অনেক বিশ্বের সন্ধান পান, কিন্তু স্বর্গই মূল লক্ষ্য হওয়ায় ভ্রুক্ষেপ করেননা সেদিকে। অবশেষে স্বর্গে পৌঁছালে পর পরী ও ঈশ্বরের বার্তাবাহকেরা তাকে গান গেয়ে শোনায়। সেই গান তার কাছে বড় একঘেয়ে লাগে। গানটি আরও কিছুক্ষণ শোনার পর তিনি এর সাথে বেটোফেনের সুরের সামঞ্জস্য লক্ষ্য করেন। পরীদের কাছ থেকে জানতে পারেন, গানটি ঈশ্বরের আদেশে বেটোফেনই লিখেছেন। এই প্রেক্ষিতে বোলৎসমান বেটোফেনের সাথে দেখা করতে চান এবং পরীরা তাকে সে পথে নিয়ে যায়। সাক্ষাতে বেটোফেন তাকে জিজ্ঞেস করেন গানটি তার ভাল লেগেছে কিনা। তিনি নিরব থাকেন। বেটোফেন বলতে উৎসাহ দিলে তিনি জানান, তার এখানকার গানগুলো পৃথিবীর মত ভাল লাগছে না। উত্তরে বেটোফেন বলেন, তিনি স্বর্গে এসে গান লেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কারণ এখানে তার সৃজনশীলতা নষ্ট হয়ে গেছে, তার গান এবং সুরের মূল অনুপ্রেরণা ছিল মানুষের বেদনা। সেই বেদনাই যখন নেই তখন গানও নেই। কেবল শেষ বিচার বলে কিছু একটা আছে বলেই তিনি ঈশ্বরের আদেশে এই গানটি লিখেছেন। তিনি বোঝান যে, পৃথিবীতে বিরাজমান বেদনাই আমাদের মানবীয় অনুভূতির মূল উপজীব্য। এসব শোনার পর বোলৎসমান মানব জীবনের আয়রনি বুঝতে পারেন। তার কবিতার শেষ পংক্তিগুলো এমন: ঘণ্টা খানেক পূর্বে তিনি বেদনামুক্তির আশায় মৃত্যু প্রার্থনা করছিলেন। অথচ স্বর্গে এসে সেই মানুষই পৃথিবীর বেদনা ফিরে পেতে আকুতি করে। বিজ্ঞান এবং দর্শনে বোলৎসমানের প্রভাব রচনাসমূহ বোলৎসমানের রচনাগুলোকে চারটি সময় ভাগ করা যায়। প্রথম সময়কালটি হচ্ছে গঠনের কাল, ১৮৬৬ থেকে ১৮৭১ সাল পর্যন্ত। ১৮৬৮ থেকে ১৮৭১ পর্যন্ত প্রকাশিত পেপারগুলোতে ম্যাক্সওয়েলের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ম্যক্সওয়েল পড়ার পরই তিনি এগুলো লিখেছিলেন। এগুলোতে তাপীয় সাম্যাবস্থায় থাকা গ্যাসের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, সম্ভাবনাভিত্তিক বিন্যাসের সাহায্যে। তবে তিনি আরও সাধারণ তত্ত্বে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, যেমন এক সময়ে বাইরে থেকে প্রযুক্ত বল এবং বহু-পরমাণু গ্যাসের উল্লেখ শুরু করেন। সম্ভাবনার বিভিন্ন ধারণা নিয়ে কথা বলেছেন এগুলোতে, যেমন: কালিক গড়, কণা গড়, বা এনসেম্বল গড়। এই গবেষণাপত্রগুলোর মূল ফলাফল ছিল, Stoßzahlansatz (সমভাবাপন্ন অনুমিতি) এর আলোকে ম্যক্সওয়েলের বণ্টন অপেক্ষক স্থিতিশীল, বা সাম্যাবস্থায় থাকে। অবশ্য এই সময়ে তিনি একেবারে ভিন্ন একটি পদ্ধতিও প্রয়োগ করেন যা স্টোসৎসালআনসাৎস-এর উপর নির্ভর করে না, বরং এর্গোডিক অনুকল্পের উপর নির্ভর করে। এতে একটি নতুন বণ্টন অপেক্ষকের জন্ম হয় সীমায় যা ম্যক্সওয়েলীয় বণ্টনে পরিণত হয়। এ সময় এনসেম্বল এর ধারণাও দেন, কিন্তু ৮০-র দশকের আগে তা গুরুত্ব পায়নি। গবেষণাপত্র ও বইয়ের তালিকা ১৮৬৬, Über die Mechanische Bedeutung des Zweiten Hauptsatzes der Wärmetheorie (তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের বলবিদ্যাগত গুরুত্ব সম্পর্কে), Wiener Berichte, 53: 195–220 ১৮৬৮, Studien über das Gleichgewicht der lebendigen Kraft zwischen bewegten materiellen Punkten (দুটি গতিশীল পদার্থ বিন্দুর মধ্যে গতিশক্তির ভারসাম্য প্রসঙ্গে), Wiener Berichte, 58: 517–560 ১৮৭১(ক), Über das Wärmegleichgewicht zwischen mehratomigen Gasmolekülen (বহুআণবিক গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা প্রসঙ্গে), Wiener Berichte, 63: 397–418 ১৮৭১(খ), Einige allgemeine Sätze über Wärmegleichgewicht (তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে কিছু সাধারণ উপপাদ্য), Wiener Berichte, 63: 679–711 ১৮৭১(গ), Analytischer Beweis des zweiten Haubtsatzes der mechanischen Wärmetheorie aus den Sätzen über das Gleichgewicht der lebendigen Kraft (গতিশক্তির সাম্যাবস্থা বিবেচনার মাধ্যমে তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্রের একটি তাত্ত্বিক প্রমাণ), Wiener Berichte, 63: 712–732 ১৮৭২, Weitere Studien über das Wärmegleichgewicht unter Gasmolekülen (গ্যাস অণুর তাপীয় সাম্যাবস্থা বিষয়ে নতুন গবেষণা), Wiener Berichte, 66: 275–370 ১৮৭৭(ক), Bermerkungen über einige Probleme der mechanische Wärmetheorie (তাপগতিবিদ্যার সূত্রসমূহের সমস্যা বিষয়ে কিছু মন্তব্য), Wiener Berichte, 75: 62–100 ১৮৭৭(খ), Über die beziehung dem zweiten Haubtsatze der mechanischen Wärmetheorie und der Wahrscheinlichkeitsrechnung respektive den Sätzen über das Wärmegleichgewicht (তাপগতিবিদ্যার দ্বিতীয় সূত্র এবং তাপীয় সাম্যাবস্থার সাথে সংশ্লিষ্ট সম্ভাব্যতা তত্ত্বের মধ্যে সম্পর্ক), Wiener Berichte, 76: 373–435 ১৮৮১, Referat über die Abhandlung von J.C. Maxwell: "Über Boltzmann's Theorem betreffend die mittlere verteilung der lebendige Kraft in einem System materieller Punkte" (ম্যাক্সওয়েলের গবেষণাপত্র, "পদার্থ বিন্দুর গড় গতিশক্তির বণ্টনের উপর বোলৎসমানের তত্ত্ব প্রসঙ্গে", বিষয়ে), Wied. Ann. Beiblätter, 5: 403–417 ১৮৮৪, Über die Eigenschaften Monocyklischer und andere damit verwandter Systeme (একচাক্রিক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে), Crelles Journal, 98: 68–94 ১৮৮৭(ক), Neuer Beweis zweier Sätze über das Wärmegleichgewicht unter mehratomigen Gasmolekülen (বহু-পরমাণবিক গ্যাসে তাপীয় সাম্যাবস্থার দুটি উপপাদ্যের নতুন প্রমাণ), Wiener Berichte, 95: 153–164 ১৮৮৭(খ), Über einige Fragen der Kinetische Gastheorie (গ্যাসের গতি তত্ত্ব বিষয়ে কিছু প্রশ্ন), Wiener Berichte, 96: 891–918 ১৮৯২, III. Teil der Studien über Gleichgewicht der lebendigen Kraft (৩. গতিশক্তির ভারসাম্য বিষয়ক গবেষণার অংশ), Münch. Ber., 22: 329–358 ১৮৯৫(ক), On certain questions in the theory of gases (গ্যাসের তত্ত্বের উপর কিছু প্রশ্ন নিয়ে), নেচার, 51: 413–415 ১৮৯৫(খ), On the minimum theorem in the theory of gases (গ্যাসের তত্ত্বে ন্যূনতম উপপাদ্য বিষয়ে), নেচার, 52: 221 ১৮৯৬(ক), Vorlesungen über Gastheorie: Vol I (গ্যাস তত্ত্ব বিষয়ক লেকচার), লাইপৎসিগ, প্রকাশক - ইয়োহান আমব্রোসিয়ুস বার্থ; ১৮৯৬(খ), Entgegnung an die wärmetheoretischen Betrachtungen des Hrn. E. Zermelo (জনাব আর্নস্ট সেরমেলো-র তাপের তাত্ত্বিক বিশ্লেষণের উত্তরে), Wied. Ann., 57: 772–784 ১৮৯৭(ক), Zu Hrn Zermelos Abhandlung "Über die mechanische Erklärung irreversibler Vorgänge" (ৎসেরমেলোর রচনা "অপ্রত্যাবর্তী প্রক্রিয়ার বলবিদ্যামূলক ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে"-এর উপর), Wied. Ann., 60: 392–398 ১৮৯৭(খ), Über einige meiner weniger bekannte Abhandlungen über Gastheorie und deren Verhältnis zu derselben (গ্যাস তত্ত্ব এবং এ সম্পর্কিত আমার অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিছু গবেষণাপত্র প্রসঙ্গে), Verh. des 69. Vers. Deutschen Naturf. und Ärzte, Braunschweig, 19–26 ১৮৯৭(গ), Über die Unentbehrlichkeit der Atomistik in der Naturwissensschaft (বিজ্ঞানে পরমাণু তত্ত্বের গুরুত্ব সম্পর্কে), Annalen der Physik und Chemie, 60: 231 ১৮৯৭(ঘ), Über die Frage der objektiven Existenz der Vörgange in der unbelebten Natur (নিষ্প্রাণ প্রকৃতির বিভিন্ন প্রক্রিয়ার নৈর্বক্তিক অস্তিত্ব প্রসঙ্গে), Wiener Berichte, 106: 83 ১৮৯৮(ক), Vorlesungen über Gastheorie: Vol II (গ্যাস তত্ত্ব বিষয়ক লেকচার), লাইপৎসিগ, বার্থ; ২ খণ্ড একসাথে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এস জি ব্রাশ, Lectures on Gas Theory, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলি প্রেস। ১৮৯৮(খ), Über die sogenannte H-Kurve (তথাকথিত এইচ-বক্ররেখা সম্পর্কে), Math. Ann., 50: 325–332 ১৯০৪, (J. Nabl-র সাথে), Kinetische theorie der Materie (পদার্থের গতিবিদ্যা), Encyclopädie der Mathematischen Wissenschaften, Volume V/1, pp. 493–557. ১৯০৫, Populäre Schriften (জনগণের প্রতি), লাইপৎসিগ, ইয়োহান বার্থ পুরস্কার এবং সম্মাননা তথ্যসূত্র আরও দেখুন বোলৎসমান সমীকরণ বোলৎসমান সূচক ম্যাক্সওয়েল-বোলৎসমান বণ্টন বোলৎসমান ধ্রুবক বহিঃসংযোগ Ruth Lewin Sime, Lise Meitner: A Life in Physics ১ম অধ্যায়: Girlhood in Vienna, বোলৎসমানের জীবন ও কর্ম সম্পর্কে তার ছাত্রী লিজে মাইটনারের বক্তব্য। লুডভিগ বোলৎসমান , উনিফেরসিটেট ভিয়েন। আলি ইফতেখারি, লুডভিগ বোলৎসমান (১৮৪৪-১৯০৬) সায়েন্সওয়ার্ল্ডে জীবনী ১৮৪৪-এ জন্ম ১৯০৬-এ মৃত্যু অস্ট্রীয় পদার্থবিজ্ঞানী অস্ট্রীয় দার্শনিক ভিয়েনার ব্যক্তি লুডভিগ বোলৎসমান আত্মহননকারী গণিতবিদ ১৯০৬-এ আত্মহত্যা প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য গাণিতিক পদার্থবিজ্ঞানী রয়েল সুয়েডীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য ভিয়েনার বিজ্ঞানী তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী
https://en.wikipedia.org/wiki/Ludwig_Boltzmann
Ludwig Boltzmann
Ludwig Eduard Boltzmann (German pronunciation: [ˈluːtvɪç ˈbɔlt͡sman]; 20 February 1844 – 5 September 1906) was an Austrian physicist and philosopher. His greatest achievements were the development of statistical mechanics, and the statistical explanation of the second law of thermodynamics. In 1877 he provided the current definition of entropy, S = k B ln ⁡ Ω {\displaystyle S=k_{\rm {B}}\ln \Omega } , where Ω is the number of microstates whose energy equals the system's energy, interpreted as a measure of the statistical disorder of a system. Max Planck named the constant kB the Boltzmann constant. Statistical mechanics is one of the pillars of modern physics. It describes how macroscopic observations (such as temperature and pressure) are related to microscopic parameters that fluctuate around an average. It connects thermodynamic quantities (such as heat capacity) to microscopic behavior, whereas, in classical thermodynamics, the only available option would be to measure and tabulate such quantities for various materials.
1523
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE
গ্রাম
গ্রাম হল জনবসতির একটি একক। এটি প্রধানত কৃষিভিত্তিক অঞ্চলে মনুষ্য সম্প্রদায়ের ছোটো বসতি। যেখানে বসবাসরত সম্প্রদায়রা কৃষিকাজ কৃষিভিত্তিক ও বিভিন্ন ছোটোখাটো কাজের (যেমন কুমোরের বা কর্মকারের কাজ) মাধ্যমে খুব সাধারণভাবে জীবন যাপন করে থাকে। গ্রাম সাধারণত বড়ো শহর বা রাজধানী থেকে দূরে অবস্থিত হয়। গ্রামে শহরের মতো তেমন আধুনিক সুবিধাগুলো থাকেনা। এই কারণে জমিদার ও রাজাগণ শহরে বসবাস করলেও গ্রামের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতেন। প্রাচীন সামন্ততান্ত্রিক সমাজে কৃষিভিত্তিক গ্রাম ছিল রাজস্ব আহরণের উৎস। একটি গ্রামে কৃষিজীবী ছাড়াও কামার, কুমার, মাঝি, মেথর, জেলে প্রভৃতি পেশার লোকের বসবাস থাকে। গ্রাম মূলত একটি স্বশাসিত এলাকা হিসাবে পরিগণিত হত। দক্ষিণ এশিয়া আফগানিস্তান আফগানিস্তানে গ্রাম বা দেহ (দারি / পশ্তু : ده) হল আফগান সমাজের মাঝারি আকারের মানব বসতি, যা পাড়া বা কালা (দারি : قلعه, পশতু : کلي), চেয়ে বড় হলেও শহর বা শর (দারি : شهر, পশ্তু : শহর) এর চেয়ে ছোট। কালা'র বিপরীতে, দেহ সাধারণত একটি বৃহত্তর জনবসতি হয় যার মধ্যে একটি বাণিজ্যিক ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত থাকে, যদিও আরও বড় শরে সরকারী ভবন এবং পরিষেবা যেমন উচ্চশিক্ষার স্কুল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, থানা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। বাংলাদেশ বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী গ্রামে বসবাসকারী জনসংখ্যা হল ১১,০৪,৮০,৫১৪ জন, যা দেশের মোট জনসংখ্যার ৭৬.৬৯%। ১৭৯৩ সালের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের পর গ্রামীণ শাসন ও কর ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। এ ব্যবস্থায় গ্রামের জমির পূর্ণ অধিকার পায় জমিদার। আধুনিক রাষ্ট্রব্যাবস্থায় গ্রাম পর্যায়ে স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা নির্বাচন পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবং পৃথক প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। পাকিস্তান পাকিস্তানিদের বেশিরভাগই গ্রামাঞ্চলে বাস করেন। ২০১৭ সালের হিসাব মতে পাকিস্তানীদের প্রায় ৬৪% গ্রামাঞ্চলে বাস করে। পাকিস্তানের বেশিরভাগ গ্রামাঞ্চল শহরগুলির কাছাকাছি এবং প্রাথমিক-নগর অঞ্চল হয়ে থাকে। সংজ্ঞা অনুসারে পাকিস্তানের কোনও পল্লী অঞ্চল এমন একটি অঞ্চল যা একটি নগরীর সীমানায় আসে না এমন অঞ্চল বা নগরীর সীমানার বাইরের অঞ্জল। গ্রামকে উর্দুতে দেহাত বা গাওঁ বলা হয়। পাকিস্তানি গ্রামের জীবন আত্মীয়তা এবং বিনিময় সম্পর্কের দ্বারা চিহ্নিত।এরা মুসলমান। ভারত বিংশ শতাব্দীর শুরুতে মহাত্মা গান্ধী ঘোষণা করেছিলেন যে, "ভারতের আত্মা তার গ্রামগুলোতে বাস করেন"। ২০১১ সালের ভারতীয় জনগণনা অনুসারে ৬৮.৮৪% ভারতীয় (প্রায় ৮৩ কোটি ৩১ লাখ মানুষ) বিভিন্ন গ্রামে বাস করেন। গ্রামের আকারে যথেষ্ট পরিমাণে পার্থক্য রয়েছে। ২৩৬,০০৪ টি ভারতীয় গ্রামে জনসংখ্যা ৫০০-রও কম, এবং ৩,৯৭৬ টি গ্রামে ১০,০০০-এর বেশি জনসংখ্যা রয়েছে। স্থানীয় ধর্মীয় অনুসরণ অনুসারে বেশিরভাগ গ্রামগুলির নিজস্ব মন্দির, মসজিদ বা গির্জা রয়েছে। দক্ষিণপূর্ব এশিয়া মালয়েশিয়া মালয়েশিয়ার গ্রামকে ক্যামপাং (কখনও কখনও ইংরেজি ভাষায় কামপং বা কমপং উচ্চারিত হয়) বল হয়ে থাকে। মালয়েশিয়ায় কমপুং ১০,০০০ জন বা তারও কম লোকের বাসস্থান হিসাবে নির্ধারিত হয়। ঐতিহাসিক কাল থেকে, প্রতিটি মালয় গ্রামের নেতৃত্বে থাকেন একটি পঙ্গুলু (গ্রাম প্রধান), যিনি তাঁর গ্রামে নাগরিক বিষয় শোনার ক্ষমতা রাখেন (আরও তথ্যের জন্য মালয়েশিয়ার আদালত দেখুন)। মধ্য এশিয়া আউয়েল (কাজাখ: Ауыл) কাজাখস্তানের একটি শব্দ যার অর্থ "গ্রাম"। ২০০৯ সালের কাজাখস্তানের আদমশুমারি অনুসারে, ৪২.৭% কাজাখ (৭.৫ মিলিয়ন মানুষ) বিভিন্ন গ্রামে বাস করে। এই ধারণাটির সাথে সাথে "আউয়েল" শব্দের পাশাপাশি উত্তর কাজাখস্তানে স্লাভিক শব্দ "সেলো" ব্যবহৃত হত। চিত্রশালা তথ্যসূত্র বসতি প্রশাসনিক একক গ্রাম মূল বিষয়ের নিবন্ধ গ্রামীণ ভূগোল নগর ভূগোল জনবহুল স্থানের ধরন
https://en.wikipedia.org/wiki/Village
Village
A village is a clustered human settlement or community, larger than a hamlet but smaller than a town (although the word is often used to describe both hamlets and smaller towns), with a population typically ranging from a few hundred to a few thousand. Although villages are often located in rural areas, the term urban village is also applied to certain urban neighborhoods. Villages are normally permanent, with fixed dwellings; however, transient villages can occur. Further, the dwellings of a village are fairly close to one another, not scattered broadly over the landscape, as a dispersed settlement. In the past, villages were a usual form of community for societies that practice subsistence agriculture and also for some non-agricultural societies. In Great Britain, a hamlet earned the right to be called a village when it built a church. In many cultures, towns and cities were few, with only a small proportion of the population living in them. The Industrial Revolution attracted people in larger numbers to work in mills and factories; the concentration of people caused many villages to grow into towns and cities. This also enabled specialization of labor and crafts and the development of many trades. The trend of urbanization continues but not always in connection with industrialization. Historically, homes were situated together for sociability and defence, and land surrounding the living quarters was farmed. Traditional fishing villages were based on artisan fishing and located adjacent to fishing grounds. In toponomastic terminology, the names of individual villages are called Comonyms (from Ancient Greek κώμη / village and ὄνυμα / name, [cf. ὄνομα]).
1524
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B7
পুরুষ
পুরুষ (প্রতীক: ♂ ) বা পুংলিঙ্গ বলতে বোঝানো হয় জীবের সেই জৈবিক লিঙ্গকে যে শুক্রাণু নামক জননকোষ উৎপাদন করে যা নিষিক্তকরণ প্রক্রিয়ায় বড় আকারের ডিম্বাণুর ,সাথে মিলিত হয়। সাধারণ অর্থ পৃথক লিঙ্গের অস্তিত্ব বিভিন্ন সময়ে এবং বিভিন্ন বংশে স্বাধীনভাবে বিকশিত হয়েছে, অভিসারী বিবর্তনের উদাহরণ। পুনরাবৃত্তমূলক প্যাটার্ন হলো দুই বা ততোধিক সঙ্গমের ধরন সহ সমজাতীয় প্রজাতির মধ্যে যৌন প্রজনন যার মধ্যে একই গঠন এবং আচরণের (কিন্তু আণবিক স্তরে ভিন্ন) গ্যামেট সহ অ্যানিসোগ্যামাস প্রজাতি থেকে পুরুষ এবং মহিলা ধরণের গ্যামেট থেকে ওগ্যামাস প্রজাতি যেখানে মহিলা গেমেট খুব বেশি। পুরুষের চেয়ে অনেক বড় এবং নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই। একটি ভালো যুক্তি রয়েছে যে এই প্যাটার্নটি সেই প্রক্রিয়াগুলির শারীরিক সীমাবদ্ধতার দ্বারা চালিত হয়েছিল যার দ্বারা দুটি গ্যামেট যৌন প্রজননের জন্য প্রয়োজনীয় হিসাবে একত্রিত হয়। তদনুসারে, লিঙ্গকে প্রজাতি জুড়ে সংজ্ঞায়িত করা হয় উৎপাদিত গ্যামেটের প্রকারের দ্বারা (যেমন: spermatozoa vs. ova) এবং একটি বংশের পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে পার্থক্য সবসময় অন্য বংশের পার্থক্যের পূর্বাভাস দেয় না। বিভিন্ন লিঙ্গের জীব বা প্রজনন অঙ্গের মধ্যে যৌন দ্বিরূপতা শুধুমাত্র প্রাণীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; পুরুষ গ্যামেটগুলি অন্যদের মধ্যে কাইট্রিড, ডায়াটম এবং ভূমি উদ্ভিদ দ্বারা উত্পাদিত হয়। ভূমি উদ্ভিদে, স্ত্রী এবং পুরুষ শুধুমাত্র স্ত্রী এবং পুরুষ গ্যামেট-উৎপাদনকারী জীব এবং কাঠামোই নয় বরং স্পোরোফাইটের গঠনগুলিকেও চিহ্নিত করে যা পুরুষ ও স্ত্রী উদ্ভিদের জন্ম দেয়। আরো দেখুন পুরুষ প্রতীক স্ত্রী নারী লিঙ্গ তথ্যসূত্র লিঙ্গ পুরুষ যৌনতা
null
null
null
1525
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B7
মানুষ
মানুষ বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী জীব। আধুনিক মানুষ (হোমো স্যাপিয়েন্স, প্রাথমিকভাবে এসএসপি হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স) হল হোমিনিনা উপজাতির (অথবা মানব জাতিগোষ্ঠী) একমাত্র বিদ্যমান সদস্য। শিম্পাঞ্জি, গরিলা ও বনমানুষের মত মানুষ বানর পরিবারের অন্তর্গত হোমিনিডি গোত্রের একটি শাখা। স্থলচর প্রাণী হিসাবে তাদের বৈশিষ্ট হল স্থির খাড়া অবস্থান এবং দ্বিপদী চলৎশক্তি; অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন এবং ভারী সরঞ্জাম ব্যবহারে সক্ষমতা; অন্যান্য প্রাণির চেয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে জটিলতর ভাষার ব্যবহার, আকারে বৃহত্তর ও জটিল মস্তিষ্ক এবং খুবই উন্নত ও সংঘবদ্ধ প্রাণী। প্রারম্ভিক হোমিনিন-বিশেষত অস্ট্রালোপিথেসিন, যাদের মস্তিষ্ক এবং শারীরিক গঠন অনেকটা পূর্বতন অ-মানব বানরের মতো, যাদের হমো প্রজাতির হোমিনিন না বলে "মানব" বলা হয়। এই হোমিনিনিদের কিছু অংশ আগুন ব্যবহার করত, ইউরেশিয়ার অধিকাংশ স্থান তারা দখল করে নিয়েছিল এবং আফ্রিকাতে প্রায় ২০০,০০০ বছর পূর্বে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছিল। তারা প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে আচরণগত আধুনিকতার প্রমাণ দিতে শুরু করেছিল। অভিবাসনের বেশ কয়েকটি তরঙ্গের মাধ্যমে আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে এসেছিল এবং বিশ্বের বেশ কিছু অঞ্চলে বসবাস করা আরম্ভ করেছিল। মানুষের বিস্তার এবং তাদের বৃহত্তর ও বর্ধমান জনসংখ্যার পরিমাণ পরিবেশের বৃহৎ ক্ষেত্র এবং বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ স্থানীয় প্রজাতির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই বিবর্তনীয় সাফল্য ব্যাখ্যা করে যে তাদের বিশেষভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত নিওকরটেক্স, প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স এবং অস্থায়ী ভাগসহ অপেক্ষাকৃত বড় মস্তিষ্ক সামাজিক শিক্ষার মাধ্যমে উচ্চ মাত্রার যুক্তি খণ্ডন, ভাষার ব্যবহার, সমস্যার সমাধান, সামাজিকতা এবং সংস্কৃতি গড়তে সক্ষম করে তুলে। মানুষ অন্য কোনও প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে। তারাই একমাত্র বিদ্যমান প্রজাতি যারা আগুনের ব্যবহার সম্পর্কে দক্ষ এবং তারা খাবার রান্না করে খায় এবং তারাই একমাত্র বিদ্যমান প্রজাতি যারা লজ্জা নিবারণের জন্য কাপড় পরিধান করে এবং বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ও শিল্পকলা উদ্ভাবন এবং ব্যবহার করার ক্ষেত্রেও তারা পারদর্শী। বিবর্তন বিবর্তনবাদী তথ্য মানুষের বিবর্তন সম্পর্কে নানা নৃতাত্ত্বিক মতবাদ আছে। বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী, মানুষ আর পৃথিবীতে বিদ্যমান অন্যান্য নরবানরেরা অনেককাল আগে একই পূর্বপুরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তিত হয়েছে এবং ভিন্ন উৎসজাত অন্যান্য শাখাগুলো থেকে অতীতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর বর্তমানে বিদ্যমান শিম্পাঞ্জি ও গরিলা থেকে আলাদা ধারা বা বংশানুক্রম তৈরি করেছে। সে হিসেবে মানুষ আধুনিক নরবানরগুলোর সাথে সম্পর্কযুক্ত হলেও সরাসরি উত্তরসূরী নয়। মানুষ আসলে এসেছে বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের সাধারণ পূর্বপুরুষ হিসেবে কথিত প্রাইমেট থেকে। আধুনিক মানুষ বা হোমো স্যাপিয়েন্স প্রজাতি বা হোমো স্যাপিয়েন্স স্যাপিয়েন্স উপপ্রজাতি সকল মহাদেশ ও বড় দ্বীপগুলোতে বসতি স্থাপন করে; তারা ১২৫,০০০-৬০,০০০ বছর পূর্বে ইউরেশিয়ায়, ৪০,০০০ বছর পূর্বে অস্ট্রেলিয়ায়, ১৫,০০০ বছর পূর্বে আমেরিকায় এবং হাওয়াই, ইস্টার আইল্যান্ড, মাদাগাস্কার ও নিউজিল্যান্ডসহ দূরবর্তী দ্বীপসমূহে ৩০০ থেকে ১২৮০ খ্রিষ্টাব্দে পৌঁছে। বানর থেকে মানুষের উদ্ভব হয়নি, বরং সঠিকভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ প্রজাতিরও উদ্ভব ঘটেছে বহুদিন আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ধরনের প্রাইমেট থেকে। শিম্পাঞ্জি, গরিলা এবং ওরাং ওটাং (বনমানুষ)-এর মতো প্রাণীকূলেরও উদ্ভব ঘটেছে সেই একই সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে। প্রাণের বিকাশ এবং বিবর্তনকে একটা বিশাল গাছের সাথে তুলনা করা যায়। একই পূর্বপূরুষ থেকে উদ্ভূত হয়ে বিবর্তনীয় জাতিজনি বৃক্ষের বিভিন্ন ডাল পালা তৈরি হয়েছে । এর কোন ডালে হয়তো শিম্পাঞ্জির অবস্থান, কোন ডালে হয়ত গরিলা আবার কোন ডালে হয়ত মানুষ। অর্থাৎ, একসময় তাদের সবার এক সাধারণ পূর্বপুরুষ ছিলো, ১.৪ কোটি বছর আগে তাদের থেকে একটি অংশ বিবর্তিত হয়ে ওরাং ওটাং প্রজাতির উদ্ভব ঘটে। তখন, যে কারণেই হোক, এই পূর্বপুরুষের বাকি জনপুঞ্জ নতুন প্রজাতি ওরাং ওটাং এর থেকে প্রজননগতভাবে আলাদা হয়ে যায় এবং তার ফলে এই দুই প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে তাদের নিজস্ব ধারায়। আবার প্রায় ৯০ লক্ষ বছর আগে সেই মুল প্রজাতির জনপুঞ্জ থেকে আরেকটি অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং পরবর্তিতে ভিন্ন ধারায় বিবর্তিত হয়ে গরিলা প্রজাতির উৎপত্তি ঘটায়। একইভাবে দেখা যায় যে, ৬০ লক্ষ বছর আগে এই সাধারণ পুর্বপুরুষের অংশটি থেকে ভাগ হয়ে মানুষ এবং শিম্পাঞ্জির বিবর্তন ঘটে। তারপর এই দুটো প্রজাতি প্রজননগতভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তখন থেকেই একদিকে স্বতন্ত্র গতিতে এবং নিয়মে মানুষের প্রজাতির বিবর্তন ঘটতে শুরু করে, আর ওদিকে আলাদা হয়ে যাওয়া শিম্পাঞ্জির সেই প্রজাতিটি ভিন্ন গতিতে বিবর্তিত হতে হতে আজকের শিম্পাঞ্জিতে এসে পৌঁছেছে। জীবাশ্ম রেকর্ড থেকে প্রমাণ গরিলা, শিম্পাঞ্জী এবং হোমিনিন বংশের মধ্যে পার্থক্যের সামান্য পরিমাণ জীবাশ্ম প্রমাণ রয়েছে। হোমিনিন বংশের সদস্য হিসাবে প্রস্তাবিত প্রাচীন জীবাশ্মগুলি ছিল স্যালেনথ্রোপাস টিচডেনেসিস ৭ মিলিয়ন বছর আগের, অর্রোরিন টিউগেনেসিস ৫ কোটি ৭০ লক্ষ বছর আগের এবং আর্দিপীথেকাস কাদাব্বা ছিল ৫.৬ মিলিয়ন বছর আগের । এই প্রতিটি প্রজাতির হোমিনিনদের দ্বিপদী পূর্বপুরুষদের সাথে যুক্ত করা হয়েছে, কিন্তু এই ধরনের সব দাবী অনেক বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছিল । এটাও সম্ভব যে এই তিনটি শাখার যেকোনো একটি আফ্রিকান এপস এর অন্য শাখার পূর্বপুরুষ, অথবা একটি পূর্বপুরুষ হোমিনিন এবং অন্যান্য আফ্রিকান হোমোনয়েডিয়ার (এপস) সাথে ভাগ করে নিয়েছে । এই প্রাথমিক জীবাশ্ম প্রজাতি এবং হোমিনিন বংশের মধ্যে সম্পর্কের প্রশ্ন এখনো সমাধান করা সম্ভব হয়নি । এই প্রারম্ভিক প্রজাতিগুলি থেকে প্রায় ৪ মিলিয়ন বছর আগে অস্ট্রালোপিথেসিন্স উদ্ভূত হয় যা পরে বিভিন্ন শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল (প্যারানথ্রোপাস নামেও পরিচিত)। সম্ভবত তাদের মধ্যে একটি শাখা হল ২৫ মিলিয়ন বছর আগের অস্ট্রালোপিথেসিন্স গর্হী, একে জেনাস হোমোর সরাসরি পূর্বপুরুষ বলে ধারণা করা হয়। হোমো প্রজাতির প্রাথমিক সদস্য হোমো হ্যাবিলিস ২.৪ মিলিয়ন বছর পূর্বে বিকশিত হয়েছিল। হোমো হ্যাবিলিস প্রথম প্রজাতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে কারণ তারা যে পাথরের সরঞ্জাম ব্যবহার করত তার সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে । সম্প্রতি ২০১৫ সালে, উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় কেনিয়াতে যে পাথরের সরঞ্জামগুলি পাওয়া গেছে তা সম্ভবত হোমো হ্যাবিলিসের পূর্বাভাস দিয়েছে যেগুলি প্রায় ৩.৩ মিলিয়ন বছর বয়স পুরাতন ছিল। তবুও, হোমো হ্যাবিলিসের মস্তিষ্কগুলি শিম্পাঞ্জীর মতো একই আকারের ছিল এবং তাদের প্রধান অভিযোজন ছিল পার্থিব জীবনযাত্রার অভিযোজন হিসেবে বাইপেডালিজম (দুপায়ে চলাফেরা করা) । পরের মিলিয়ন বছরে এন্সিফালিজেশন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবং জীবাশ্ম রেকর্ড অনুযায়ী হোমো ইরেক্টাস এর আগমন ঘটেছিল যাদের করোটির ক্ষমতা দ্বিগুণ ছিল। হোমো ইরেক্টাস ছিল প্রথম হোমোনিনা যারা আফ্রিকা ছেড়েছিল এবং এই প্রজাতিগুলি আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে ১.৩ থেকে ১.৮ মিলিয়ন বছর আগে ছড়িয়ে পড়েছিল। এইচ. ইরেক্টাসের একটি জনগোষ্ঠীকে কখনও কখনও একটি পৃথক প্রজাতি হোমো এরগ্যাস্টার হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয় যারা আফ্রিকায় থাকত এবং পরে হোমো স্যাপিয়েন্সে পরিণত হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয় যে তারাই প্রথম অগ্নি এবং জটিল সরঞ্জাম ব্যবহার করত। হোমো এরগ্যাস্টার / ইরেক্টাস এবং আর্কাইক মানুষেরা যেমন হোমো রোডেসিয়েন্সিস আফ্রিকা থেকে এসেছিল, কিন্তু জর্জিয়ার দুমানসিতে তাদের transitional ফর্মগুলি পাওয়া গিয়েছিল। আফ্রিকান হোমো ইরেক্টাস এর বংশধররা ৫০০,০০০ বৎসর পূর্বে ইউরেশিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল পরে তারা পর্যায়ক্রমে হোমো এন্টিসেসর, হোমো হাইডেলবার্গেনসিস এবং হোমো নিয়ানডার্টালেনসিস এ বিবর্তিত হয়েছিল । আধুনিক মানুষের প্রাচীন জীবাশ্ম মধ্য পেলিওলিথিক প্রায় ২০০,০০০ বছর আগে যেমন ওমো ইথিওপিয়া অবশিষ্ট আছে এবং হার্টোর জীবাশ্মকে কখনও কখনও হোমো স্যাপিয়েন্স ইডাল্টু হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। পরবর্তীকালে ফিলিস্তিন এবং দক্ষিণ ইউরোপ থেকে যে স্কাল বা আর্কাইক হোমো স্যাপিয়েন্সের জীবাশ্ম পাওয়া যায় তা প্রায় ৯০,০০০ বছর আগের ছিল। ২০১৯ সালের অক্টোবরে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী আধুনিক মানুষ প্রায় ২ লক্ষ বছর আগে আফ্রিকা থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং এর উৎপত্তিস্থল ছিল বতসোয়ানা শারীরিক অভিযোজন মানব বিবর্তনটি বেশ কিছু মস্তিষ্কগত, উন্নয়নমূলক, শারীরবৃত্তীয় এবং আচরণগত পরিবর্তনের দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে যা মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের শেষ সাধারণ পূর্বপুরুষের মধ্যে সংগঠিত হয়েছিল। এই অভিযোজনগুলির মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ১. দুপায়ে হাঁটা , ২. বর্ধিত মস্তিষ্কের আকার, ৩. দীর্ঘ অন্টোজেনি (গর্ভাবস্থা এবং শিশুকাল), ৪. যৌন দ্বিমাত্রিকতা (নিউটেনি)। এই সব পরিবর্তনগুলির মধ্যে সম্পর্ক চলমান বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য অঙ্গসংস্থানসংক্রান্ত পরিবর্তনগুলির মধ্যে ক্ষমতার বিবর্তন এবং নির্ভুল গ্রিপ অন্তর্ভুক্ত ছিল, একটি পরিবর্তন এইচ.ইরেক্টাসের মধ্যে ঘটেছিল। বাইপেডালিজম হচ্ছে হোমিনিন লাইনের মৌলিক অ্যাডাপটিশন, এবং এটিকে সকল বাইপেডাল হোমিনিনদের কঙ্কাল পরিবর্তনের পিছনে একটি প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। প্রাচীনতম দ্বিপদীয় হোমিনিনকে বলা হয় সাহেলানথ্রপাস বা অর্রোরিন, আর্ডিপিথেকাস হল একটি পূর্ণ বাইপেডাল যা কিছুটা পরে ঘটেছিল। গরিলা এবং শিম্পাঞ্জি একই সময়ের মধ্যে পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছিল। এবং সাহেলানথ্রপাস বা অর্রোরিন হতে পারে মানুষের পূর্বপুরুষ যারা ঐসব প্রাণীদের সাথে মিল ছিল । প্রাথমিকভাবে দ্বিপদলগুলি অস্ট্রালোপিথেসিন্স যা পরবর্তীতে জেনাস হোমোতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বাইপেডালিজমের অভিযোজনীয় মূল্যের বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে। এটা সম্ভব যে বাইপেডালিজম অনুকূলে ছিল কারণ এটি পৌঁছানোর এবং খাদ্য বহন করার জন্য হাতকে মুক্ত করে দিয়েছিল । কারণ এটি চলন্ত অবস্থায় শক্তি সংরক্ষণ করেছিল যা তাদেরকে দীর্ঘ পথ চলতে এবং শিকার করতে সক্ষম করেছিল। অথবা সরাসরি সূর্যের উদ্ভাসিত পৃষ্ঠকে হ্রাস করে হাইপারথারমিয়া এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে মনে করা যেতে পারে। মানব প্রজাতির মস্তিষ্ক অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় অনেক বড় হয়ে থাকে - সাধারণত আধুনিক মানুষের মধ্যে ১,৩৩০ সেন্টিমিটার যা শিম্পাঞ্জি বা গরিলার মস্তিষ্কের আকারের দ্বিগুণ। এনসেফালাইজেশনের প্যাটার্নটি হোমো হ্যাবিলিসের সাথে শুরু হয়েছিল যা প্রায় ৬০০ সেন্টিমিটার শিম্পাঞ্জির চেয়ে বড় মস্তিষ্ক ছিল এবং হোমো ইরেক্টাস (৮০০-১,১০০ সেমি ) এবং এটি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল গড় সাইজের ১,৩০০-১,৯০০ সেন্টিমিটার যা নিনদারথালস এর মস্তিষ্ক ছিল যা কিনা হোমো স্যাপিয়েন্সের চেয়েও বড় (কিন্তু কম স্বস্তিযুক্ত)। মানবজাতির জন্মকালীন মস্তিষ্কের বৃদ্ধির প্যাটার্নটি অন্যান্য এপস (হিট্রোক্রনি) থেকে পৃথক যা অল্পবয়স্ক মানুষের মধ্যে সামাজিক শিক্ষা ও ভাষা শিক্ষার জন্য বর্ধিত সময়ের সুযোগ করে দেয় । যাইহোক, মানুষের মস্তিষ্ক এবং অন্যান্য এপসের কাঠামোর মধ্যে পার্থক্যগুলি মাপের পার্থক্যগুলির তুলনায় আরো বেশি গুরুত্ব বহন করে। সময়ভিত্তিক ভলিউম বৃদ্ধির ফলে মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকায় অসমভাবে প্রভাব পড়েছে - ভাষাগত প্রক্রিয়াগুলির জন্য কেন্দ্রগুলির অন্তর্গত সাময়িক লোবগুলি অপরিসীমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, যেমন প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স রয়েছে যা জটিল সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং সামাজিক আচরণ নিয়ন্ত্রণের সাথে সম্পর্কিত। এনসেফালাইজেশন খাদ্য হিসাবে মাংসের উপর বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছিল বা রান্নার বিকাশ ঘটেছিল, এবং ধারণা করা হয় যে মানব সমাজ আরো জটিল হয়ে উঠায় সামাজিক সমস্যা সমাধানের জন্য বুদ্ধিমত্তা বৃদ্ধি পেয়েছিল। হ্রাসকৃত যৌন ডিমরফিজম প্রাথমিকভাবে পুরুষের দাঁতে তা লক্ষ্য করা গেছে অন্যান্য এপের প্রজাতি (গিবনস ব্যতীত)। মানুষের মধ্যে যৌনতা সম্পর্কিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তন বিবর্তনের সাথে জড়িত ছিল। মানব জাতিই হল বানরসদৃশ একমাত্র প্রজাতি যাদের মধ্যে মেয়েরা সারা বছর উর্বর থাকে এবং যার মধ্যে শরীরের দ্বারা উৎপাদিত কোন বিশেষ সংকেত উৎপাদিত হয় (যেমন estrus এর সময় জেনিটাল ফুলে যাওয়া)। তবুও মানুষের শরীরের চুল এবং চামড়ার অধীনস্থ ফ্যাটের মধ্যে যৌন দ্ব্যর্থতা বজায় রাখে এবং সামগ্রিক আকারে নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে এর পরিমাণ প্রায় ২৫% বেশি থাকে । বংশবৃদ্ধির দীর্ঘসূত্রতা বৃদ্ধির কারণে বেড়ে যাওয়া পিতামাতার জন্য প্রয়োজনীয় সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে জোড়া সম্পর্কের উপর জোর দেয়ার কারণ হিসাবে এই পরিবর্তনগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছে । হোমো স্যাপিয়েন্সের উত্থান উচ্চ প্যালিওলিথিক সময়ের (৫০,০০০ বিপি) প্রারম্ভে, ভাষার উৎপত্তি, সঙ্গীতের উৎপত্তি এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক বিশ্ব নিয়ে আচরণগত আধুনিকতার পূর্ণ বিকাশ ঘটে। আধুনিক মানুষ আফ্রিকা থেকে ছড়িয়ে পড়ে, যেমন হোমো নিনডারথালেন্সিস এবং তথাকথিত ডেনিসোভ্যানের মতো অন্য হোমিনিডদের মুখোমুখি তারা হয়েছিল। প্রারম্ভিক মানুষ এবং এই বোন প্রজাতির মধ্যে মিথস্ক্রিয়া একটি দীর্ঘ বিতর্কিত উৎস ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে যে মানুষ এই আগের প্রজাতির প্রতিস্থাপিত হয়েছিল কিনা বা নাকি তারা ইন্টারব্রিডের মতই ছিল। এমনকি এই ক্ষেত্রে এই পূর্ববর্তী জনগোষ্ঠী আধুনিক মানুষের জিনগত উপাদানে অবদান রাখতে পারে। মানব ও নিনার্থাল জিনোমের সাম্প্রতিক গবেষণায় আর্কিয়াক হোমো স্যাপিয়েন্স, নিনেন্ডারথাল এবং ডেনিসোভানদের মধ্যে জিন প্রবাহের বৈশিষ্ট্য আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ২০১৬ সালের মার্চে, গবেষণায় দেখা যায় যে আধুনিক মানুষ হোমিনিন এবং ডেনিসোভানস এবং নেনডারথালসের সাথে প্রজনন প্রক্রিয়ার সাথে জড়িয়ে পরেছিল যার প্রমাণ বহু জায়গায় পাওয়া যায় বলে ধারণা করা হয়। আফ্রিকার বাহিরে এই ছড়িয়ে পড়া উত্তরপূর্ব আফ্রিকা থেকে প্রায় ৭০,০০০ বছর বিপি শুরু হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়। বর্তমান প্রমাণ থেকে বোঝা যায় যে এটি ছিল মাত্র এক ধরনের ছড়িয়ে পড়া যা কেবল কয়েকশ লোকের সাথে জড়িত ছিল। মানুষের অধিকাংশই আফ্রিকায় থাকত এবং বিভিন্ন ধরনের পরিবেশে তারা রূপান্তরিত হতো। আধুনিক মানুষ হোমিনিনদের পরিবর্তে পরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছিল (প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বা হাইব্রিডাইজেশনের মাধ্যমে)। তারা ইউরেশিয়া ও ওশেনিয়াতে ৪০,০০০ বৎসর বিপি এবং আমেরিকাতে অন্তত ১৪,৫০০ বৎসর বিপি বসবাস করত। ইতিহাস সভ্যতার রূপান্তর প্রায় ১০,০০০ বছর আগে পর্যন্ত মানুষ শিকারি-জড়ক হিসাবে বসবাস করতো । তারা ধীরে ধীরে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর আধিপত্য লাভ করতে শুরু করেছিল । সাধারণত তারা গুহাগুলির মধ্যে প্রায়ই ব্যান্ড সোসাইটি নামে পরিচিত ছোট ভ্রম্যমাণ দলগুলিতে বসবাস করত। কৃষি উদ্ভাবনের ফলে নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব ঘটেছিল, খাদ্যের উদ্বৃত্ততা বেড়ে যাবার ফলে মানুষের স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছিল, তাছাড়া পশুপালন এবং ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ধাতু সরঞ্জাম ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল। কৃষিকাজ বাণিজ্য ও সহযোগিতাকে উৎসাহিত করেছিল যা জটিল সমাজের দিকে নিয়ে গিয়েছিল । প্রাথমিক সভ্যতাগুলি যেমন - মেসোপটেমিয়া, মিশর, ভারত, চীন, মায়া, গ্রিস এবং রোমান সভ্যতা যাদের মাধ্যমে মানব সভ্যতার যাত্রা শুরু হয়েছিল। মধ্যযুগের শেষের দিকে এবং প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের মধ্যে বিপ্লবী চিন্তাভাবনা ও প্রযুক্তির উত্থান দেখা দেয়। পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে অনুসন্ধান এবং ইউরোপীয় ঔপনিবেশিকতা বিশ্বের অধিকাংশ অংশ ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিল যা পরে স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের দিকে জনগণকে বাধ্য করেছিল। আধুনিক বিশ্ব এবং প্রাচীন জগতের মধ্যে সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে যে দ্রুত পরিবর্তন হয়েছিল এই ধারণাটি মূলত ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে অগ্রগতির উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। মানুষের কার্যকলাপের সমস্ত অঞ্চলে অগ্রগতির ফলে বিবর্তন এবং মনোবিশ্লেষণের মত নতুন তত্ত্বের উদ্ভব ঘটেছে, যা পরিবর্তিত মানবতার দৃষ্টিভঙ্গি নামে পরিচিত। উনিশ শতাব্দী পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক বিপ্লব, প্রযুক্তি বিপ্লব, শিল্প বিপ্লব এবং নতুনতর প্রযুক্তি উদ্ভাবনের ফলে স্বাধীন আবিষ্কারের, যেমন বিমান এবং অটোমোবাইল এর উদ্ভাবন হয়েছে। তাছাড়া শক্তি উন্নয়ন, যেমন কয়লা এবং বিদ্যুৎ এর ব্যবহার বেড়েছে। ইহা জনসংখ্যা বৃদ্ধি (বিশেষত আমেরিকাতে) এবং উচ্চতর জীবন প্রত্যাশার সাথে সম্পর্কযুক্ত, বিশ্ব জনসংখ্যা দ্রুত উনিশ এবং বিংশ শতাব্দীতে অনেক বৃদ্ধি পায় যা ছিল গত শতাব্দীর ১০% বেশি। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে তথ্য যুগের আবির্ভাবের সাথে সাথে আধুনিক মানুষ এমন এক জগতে বাস করে যারা ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক ও পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে এবং ৩.৩ বিলিয়ন মোবাইল ফোনের সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও মানুষের মধ্যে আন্তঃসংযোগ বিজ্ঞান, শিল্প, আলোচনা এবং প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির জন্য উত্সাহিত করেছে সাথে সাথে এটি সাংস্কৃতিক সংঘর্ষ এবং ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্র উৎপাদন ও ব্যবহারকেও পরিচালিত করেছে। মানব সভ্যতা পরিবেশগত ধ্বংস এবং দূষণ উল্লেখযোগ্যভাবে অন্যান্য প্রকারের প্রাণীর চলমান বিলুপ্তিকে ত্বরান্বিত করছে, যা ভবিষ্যতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে আর দ্রুততর করবে। বাসস্থান এবং জনসংখ্যা প্রারম্ভিক মানুষের বসতিসমূহ জলের উৎসের কাছাকাছি ছিল এবং জীবনধারণের উপর ভিত্তি করে বেঁচে থাকার জন্য তারা অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করতো, যেমন - শিকারের জন্য পশু, শস্য চাষের জন্য জমি, এবং গবাদি পশু। মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আবাসনের পরিবর্তন করেছিল, যেমন - সেচ, নগর পরিকল্পনা, নির্মাণ, পরিবহন, উৎপাদন সামগ্রী, বনভূমি উজাড় এবং মরুকরণ এর মাধ্যমে। প্রায়ই বাসস্থান পরিবর্তন করার মূল কারণ ছিল বস্তুগত সম্পদ বৃদ্ধি, তাপের উৎস বৃদ্ধি, খাদ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি, নৃতাত্ত্বিক উন্নতি, বা সম্পদ বা অন্যান্য মানব বসতিগুলির অ্যাক্সেসের সুবিধার উন্নতির লক্ষ্যে কাজ করা। বড় আকারের বাণিজ্য ও পরিবহন অবকাঠামোর উন্নয়নের ফলে এই সম্পদগুলির কাছাকাছি থাকা অপ্রয়োজনীয় হয়ে ওঠেছিল এবং অনেক স্থানে এগুলি জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং হ্রাসের পিছনে একটি চালিকা শক্তি নয়। তথাপি, যে পদ্ধতিতে বাসস্থান পরিবর্তিত হয় তা প্রায়ই জনসংখ্যার পরিবর্তনের একটি প্রধান নির্ধারক হিসাবে কাজ করে। প্রযুক্তি দ্বারা মানুষ সব মহাদেশে উপনিবেশ স্থাপন করতে এবং জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। গত শতাব্দীর মধ্যে মানুষ এন্টার্কটিকা, সমুদ্রের গভীরে এবং বাইরের স্থান অনুসন্ধান করেছে, যদিও এই পরিবেশের বৃহৎ পরিসরে ঔপনিবেশীকরণ এখনও সম্ভবপর নয়। স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির মধ্যে মানুষই সংখ্যায় বেশি, প্রায় ৭ বিলিয়ন এর উপর জনসংখ্যা। অধিকাংশ মানুষ (৬১%) এশিয়ায় বাস করে। অবশিষ্ট লোক আমেরিকায় (১৪%), আফ্রিকায় (১৪%), ইউরোপে (১১%) এবং ওশেনিয়ায় (০.৫%) বসবাস করে। এন্টার্কটিকা এবং বাইরের স্থানে প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে মানব বসতি ব্যয়বহুল এবং সাধারণত সময়কাল সীমিত। তাছাড়া বৈজ্ঞানিক, সামরিক বা শিল্প অভিযান ও ঐখানে সংরক্ষিত। মহাকাশে জীবন যাপন খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে, তেরো জনের বেশি মহাকাশে বসবাসের কোন নির্ধারিত সময় নেই। ১৯৬৯ এবং ১৯৭৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে দুইজন মানুষ চাঁদে সংক্ষিপ্ত সময় কাটিয়েছিলেন। ২০০০ সালের ৩১ শে অক্টোবর থেকে প্রাথমিক ক্রুদের যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে কেউ না কেউ আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে অবস্থান করতেছে। যাইহোক, মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থান মানুষের তৈরি বস্তু দ্বারা পরিদর্শন করা হয়েছে। ১৮০০ সাল থেকে জনসংখ্যা এক বিলিয়ন থেকে ৭ বিলিয়ন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে, ২০০৪ সালে ৬.৩ বিলিয়ন মানুষ (৩৯.৭%) এর মধ্যে ২.৫ বিলিয়ন জনসংখ্যা শহুরে এলাকায় বসবাস করেছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউএন এর ধারণা ছিল যে বছরের শেষ নাগাদ বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যা শহুরে এলাকায় বসবাস করবে। শহরে বসবাসকারী মানুষেরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করে যেমন দূষণ এবং অপরাধ এর অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে শহরের ভিতরে এবং উপশহরের বস্তিতে এর মাত্রা একটু বেশি লক্ষ্য করা যায় । শহরে বসবাসের সামগ্রিক জনসংখ্যার অনুপাত আগামী দশকগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মানুষের একটি নাটকীয় প্রভাব আছে। মানুষ হিংস্র শিকারি, তারা অন্য প্রজাতির দ্বারা কদাচিৎ শিকার হয়। বর্তমানে, জমির উন্নয়ন, জীবাশ্ম জ্বালানীর দূষণ এবং দূষণের মাধ্যমে মানুষ বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভূমিকা পালন করতেছে বলে মনে করা হয়। যদি এটি তার বর্তমান হারে অব্যাহত থাকে তবে পূর্বাভাস দেওয়া হয় যে পরবর্তী শতাব্দীতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সব ধরনের গাছপালা ও প্রাণী প্রজাতির অর্ধেক বিপন্ন হয়ে যাবে। জীববিজ্ঞান শারীরবিদ্যা এবং দেহতত্ব মানুষের শারীরবৃত্তির বেশিরভাগ দিকগুলো পশুপাখি সম্পর্কিত অনুঘটকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বা সমানভাবে পরিচিত। মানুষের শরীর সাধারণত পা, ধড়, বাহু, ঘাড় এবং মাথা নিয়ে গঠিত । একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীর প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন (১) কোষ নিয়ে গঠিত। মানুষের শরীরের মধ্যে সর্বাধিক সংজ্ঞায়িত সিস্টেমগুলি হল, যেমন- স্নায়ুতন্ত্র, কার্ডিওভাসকুলার, সার্কোলেটরি, ডাইজেস্টিব, এ্যানডক্রিন, ইমিউন, ইন্টিগোমেন্টারী, লিমফেটিক, মোসকোস্কেলিটাল, প্রজনন, শ্বাসযন্ত্র এবং মূত্রনালি। অন্যান্য এপস এর মত মানুষের বহিরাগত লেজ নেই, তাদের বিভিন্ন ধরনের রক্তের গ্রুপ রয়েছে, প্রতিবাদযোগ্য অঙ্গুষ্ঠি রয়েছে এবং যৌন মিলনে তারা দ্বিরুপ। মানুষ এবং শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে ছোটখাটো শারীরিক পার্থক্য রয়েছে তার মধ্যে দুপায়ে হাটা অন্যতম। একটি বড় পার্থক্য হল যে মানুষের অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় অনেক বেশি দ্রুত এবং আরও নির্ভুলভাবে নিক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে। প্রাণীজগতে মানুষ সর্বোত্তম লম্বা দূরত্বের দৌড়বিদদের মধ্যে রয়েছে, তবে অল্প দূরত্বে তারা ধীরগতি সম্পন্ন। মানুষের শরীরের পাতলা চুল এবং আরও উৎপাদনশীল ঘাম গ্লান্ড দীর্ঘ পথ দৌড়ানোর সময় তাপের নিবিড়তা এড়িয়ে চলতে সাহায্য করে। বাইপেডালিজমের ফলস্বরূপ, মানব নারীর সংকোচিত জন্ম নালি রয়েছে। পায়ের আঙ্গুলের মত মানব প্যালভিসের গঠন অন্য প্রাইমেটদের থেকে ভিন্ন। আধুনিক মানুষের পেলভির এই সুবিধার জন্য অধিকাংশ স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় শিশু জন্মদান অনেক বেশি কঠিন এবং বিপজ্জনক, বিশেষত অন্যান্য প্রাণীর তুলনায় মানব শিশুর মাথা বড় আকারের হয়ে থাকে। এর মানে হল যে, মানবজাতির সন্তানদের জন্মের সময় অবশ্যই তাদের দিক পরিবর্তন করতে হবে, যা অন্য প্রাইমেটগুলি করে না। এবং এটি মানুষকে একমাত্র প্রজাতি বানায় যেখানে সাধারণত মেয়েদের (তাদের নিজস্ব প্রজাতির অন্যান্য সদস্য) জন্ম প্রদানে ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। আংশিক বিবর্তনীয় সমাধান হিসাবে মানুষের ভ্রূণ কম উন্নত এবং দুর্বল হয়ে জন্মায়। শিম্পাঞ্জিদের শিশু ছয় মাস বয়স পর্যন্ত মানব শিশুদের চেয়ে উন্নত থাকে, যখন মানুষের মস্তিষ্কের দ্রুত উন্নয়ন শিম্পাঞ্জীদের অতিক্রম করে ফেলে। মানব নারী ও শিম্পাঞ্জী নারীদের মধ্যে আরেকটি পার্থক্য হল নারীরা মেনোপজের মধ্য দিয়ে যায় এবং তাদের জীবনের শেষের দিকের কয়েক দশক তারা অনুর্বর হয়ে যায়। সকল অ-মানব বানর প্রজাতি মৃত্যু পর্যন্ত জন্ম দিতে সক্ষম। মেনোপজ সম্ভবত উন্নত হয়েছে তরুণ আত্মীয়দের বিবর্তনমূলক সুবিধা (আরও যত্নশীল সময়) প্রদান করার জন্য। বাইপেডালিজম ব্যতিরেকে, ঘ্রাণ, শ্রবণশক্তি, প্রোটিন হজম করা, মস্তিষ্কের আকার এবং ভাষার ক্ষমতা মানুষকে শিম্পাঞ্জি থেকে পৃথক করে তুলে। মানুষের মস্তিষ্ক শিম্পাঞ্জির তুলনায় প্রায় তিনগুণ বড় হয়ে থাকে। আরও গুরুত্বপূর্ণ হল, শরীর থেকে মস্তিষ্কের অনুপাত শিম্পাঞ্জির তুলনায় মানুষের মধ্যে অনেক বেশি, এবং মানুষের একটি বৃহত্তর সংখ্যক স্নায়ুকোষের সঙ্গে উল্লেখযোগ্যভাবে আরও উন্নত সেরিব্রাল কর্টেক্স আছে। মানুষের বুদ্ধিমত্তার ক্ষমতা অন্যান্য বানরের তুলনায় অসাধারণ। মানুষের কথা বলার ক্ষমতা প্রাইমেটদের থেকে অনন্য। মানুষ নতুন এবং জটিল ধারণা তৈরি করতে এবং প্রযুক্তি বিকাশ করতে সক্ষম, যা পৃথিবীতে অন্য প্রাণীর মধ্যে অপ্রতুল। এটি অনুমান করা হয় যে, প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যে পুরুষের জন্য বিশ্বব্যাপী গড় উচ্চতা প্রায় ১৭২ সেমি (৫ ফুট ৭ ১/২ ইঞ্চি) এবং বিশ্বব্যাপী বয়স্ক মেয়েদের গড় উচ্চতা প্রায় ১৫৮ সেন্টিমিটার (৫ ফুট ২ ইঞ্চি)। কিছু ব্যক্তিদের মধ্যে সংকোচন মাজ বয়সেই শুরু হতে পারে আবার অত্যন্ত বয়স্ক অবস্থায়ও হতে পারে। ইতিহাস জুরে দেখা যায় মানুষ সর্বত্র লম্বা হয়ে গেছে, এর কারণ হিসাবে উন্নত পুষ্টি, স্বাস্থ্যসেবা এবং জীবনযাপনের অবস্থার ফলকে দায়ী করা হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের গড় ওজন পুরুষের জন্য ৫৪-৬৪ কেজি (১১৯-১৪১ পাউন্ড) এবং মেয়েদের জন্য ৭৬-৮৩ কেজি (১৬৮-১৮৩ পাউন্ড)। অন্যান্য অবস্থার মতো শরীরের ওজন এবং শরীরের ধরন উভয় জেনেটিক সংবেদনশীলতা এবং পরিবেশের দ্বারা প্রভাবিত এবং ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যদিও মানুষের অন্য প্রাইম্যাটের তুলনায় কম চুল হয়, তবে তাদের মাথায়, বগল এবং পিউবিক এলাকায় চুল অনেক লম্বা হয়। তাছাড়া মানুষের দেহের উপর হেয়ার ফলিকস এর পরিমাণ শিম্পাঞ্জির তুলনায় বেশি থাকে। প্রধান পার্থক্য হলো মানুষের চুল শিম্পাঞ্জির তুলনায় ছোট , চিকন এবং কম রঞ্জক, এইভাবে তাদের দেখতে কঠিন হয়ে যায়। মানুষের সমগ্র দেহে প্রায় ২ মিলিয়ন ঘাম গ্লান্ড আছে যা শিম্পাঞ্জির চেয়েও অনেক বেশি । শিম্পাঞ্জির ঘাম গ্লান্ড খুব কম যা মূলত করতল এবং পায়ের পাতার উপর অবস্থিত। মানুষের দাঁতের সূত্র হল: ২.১.২.৩ ২.১.২.৩ অন্যান্য প্রাইমেটদের তুলনায় মানুষের সমানুপাতিক ছোট পেলেটস এবং অনেক ছোট ছোট দাঁত থাকে । প্রাইমেটদের শুধুমাত্র ছোট এবং তুলনামূলকভাবে flush canine দাঁত আছে । মানুষের চারিত্রিকভাবে ঘন দাঁত রয়েছে, যার ফলে হারানো দাঁত থেকে ফাঁকটি সাধারণত অল্প বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে দ্রুত কভার হয়ে যায় । মানুষ ধীরে ধীরে তাদের আক্কেল দাঁত হারান, কিছু ব্যক্তির মধ্যে এই দাঁতের অনুপস্থিতি লক্ষ করা যায়। বংশাণুবিজ্ঞান সব স্তন্যপায়ীদের মতো মানুষ একটি ডিপলয়েড ইউক্যারিওটিক প্রজাতি। মানুষের শরীরের প্রতিটি কোষে ২৩ টি ক্রোমোজমের দুটি সেট আছে, প্রতিটি সেট একজন পিতা বা মাতা থেকে প্রাপ্ত। Gametes শুধুমাত্র ক্রোমোজমের একটি সেট, যা দুইজন পিতামাতার সেটের একটি মিশ্রণ। ২৩ জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে ২২ জোড়া হল অটোসোম এবং এক জোড়া হচ্ছে যৌন ক্রোমোজোম। অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির মতো মানুষের XY যৌন-সংকল্প ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে নারীদের যৌন ক্রোমোজোমে XX থাকে এবং পুরুষদের XY থাকে। ২০০৩ সালে এক মানব জিনোমের পূর্ণতা লাভ করা হয়েছিল, এবং বর্তমানে প্রজাতির জেনেটিক বৈচিত্র্যের একটি নমুনা অর্জনের জন্য প্রচেষ্টা করা হচ্ছে (আন্তর্জাতিক হ্যাপম্যাপ প্রকল্প দেখুন)। বর্তমান অনুমান অনুসারে মানুষের প্রায় ২২,০০০ জিন রয়েছে। অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় মানুষের ডিএনএ ভিন্নতা খুব কম, সম্ভবত লেইথ প্লাইস্টোসিনের (প্রায় ১০০,০০০ বছর আগে) জনসংখ্যার প্রবাহের কথা উল্লেখ করে, যার মধ্যে মানব জনসংখ্যার একটি অল্প সংখ্যক প্রজননকারী জোড়া হ্রাস পেয়েছিল। নিউক্লিওটাইড বৈচিত্র্যটি একক মিউটেশনের উপর ভিত্তি করে ঘটে যা একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিসমস (এসএনপিএস) নামে পরিচিত। মানুষের মধ্যে নিউক্লিওটাইড বৈচিত্র্যটি প্রায় ০.১%, যেমন ১০০০ বেস জোড়া প্রতি ১টি পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এক হাজার নিউক্লিওটাইডের মধ্যে একটির পার্থক্যের কারণে দুটি মানুষের জিনোমের মধ্যে প্রায় ৩ মিলিয়ন নিউক্লিওটাইডের পার্থক্য হয়। যদিও মানুষের জিনোমে প্রায় ৩ বিলিয়ন নিউক্লিওটাইড রয়েছে। এই একক নিউক্লিওটাইড পলিমরফিজম(বেশিরভাগ সিএনপিএস) নিরপেক্ষ কিন্তু কিছু (প্রায় ৩ থেকে ৫%) কার্যকরী এবং আলেলেস এর মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ফেনোটাইপিক পার্থক্যকে প্রভাবিত করে। প্রাকৃতিক নির্বাচনের অধীনে নয় এমন জিনোমের অংশগুলির সাথে তুলনা করে যা মোটামুটি স্থিতিশীল হারে মিউটেশনের সৃষ্টি করে সমগ্র মানব প্রজাতির একটি জেনেটিক গাছ পুনর্গঠন। প্রতিবার একটি নির্দিষ্ট পরিব্যক্তি একটি ব্যক্তির মধ্যে প্রদর্শিত হয় এবং তার বা তার পূর্বপুরুষদের কাছে প্রেরণ করা হয় যার মাধ্যমে একটি হ্যাপলোগ্রুপ গঠিত হয় সেই ব্যক্তির সমস্ত বংশধরদের সহ যা এই পরিবর্তনটি বহন করবে। শুধুমাত্র মায়ের কাছ থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া গিয়েছিল এমন মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ তুলনা করে জেনেটিক্সবাদীরা এই উপসংহারে পৌঁছেছে যে, সমস্ত আধুনিক মানুষের মধ্যে যে জেনেটিক মার্কার পাওয়া গেছে তা গত সাধারণ মেয়ে পূর্বপুরুষের কাছ থেকে এসেছিল। তথাকথিত মাইটোকোন্ড্রিয়াল ইভ, অবশ্যই প্রায় ৯০,০০০ থেকে ২০০,০০০ বছর আগে বসবাস করত। ২০০৬ সালে প্রথম বর্ণনা করা হিউম্যান এক্সিলারেটেড অঞ্চলে মানুষের জিনোমের ৪৯ টি ভাগে বিভক্ত হয়েছে যা ক্রান্তীয় বিবর্তনের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হয়েছিল কিন্তু তা মানুষের মধ্যে অদ্ভুতভাবে ভিন্ন। মানুষ এবং তাদের নিকটতম পশু আত্মীয় (শিম্পাঞ্জি) (এইচএআর১ মানব-শিম্পাঞ্জীর মধ্যে বৃহত্তম পার্থক্যের ডিগ্রী দেখানো হয়েছে) তাদের পার্থক্য অনুযায়ী তাদের নামকরণ করা হয়। একাধিক প্রজাতির জিনোমিক ডাটাবেসগুলি স্ক্যান করার মাধ্যমে যা পাওয়া যায় তাতে ধারণা করা হচ্ছে এই মিউটেটেড এলাকা মানুষের নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যগুলিতে অবদান রাখতে পারে। জীবনচক্র অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীর মত মানব প্রজনন যৌনক্রিয়া দ্বারা অভ্যন্তরীণ নিষেকের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই প্রক্রিয়া চলাকালীন সময় পুরুষ নারীর যোনিতে তার স্থায়ী লিঙ্গকে সন্নিবেশ করান এবং সিম্যান ত্যাগ করে যাতে শুক্রাণু থাকে। শুক্রাণু যোনি ও জরায়ুর মাধ্যমে গর্ভাশয়ে বা ফলোপিয়ান টিউবগুলিতে নিষেকের জন্য ভ্রমণ করে। নিষেক এবং ইমপ্লান্টেশন এর পর মহিলাদের জরায়ুর মধ্যে গর্ভদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। ভ্রূণকোষ মহিলা জরায়ুতে বিভক্ত হয় ভ্রূণ হওয়ার জন্য, যা গর্ভধারণের ৩৮ সপ্তাহ (৯ মাস) ধরে একটি ভ্রূণে রূপান্তরিত হয়। সময়ের ব্যবধানে সম্পূর্ণরূপে ভ্রূণ মহিলার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয় এবং প্রথমবার একটি শিশু হিসাবে স্বাধীনভাবে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয়। এই সময়ে বেশিরভাগ আধুনিক সংস্কৃতি শিশুকে আইনের পূর্ণ সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার হিসাবে বিবেচনা করে, যদিও কিছু বিচারব্যবস্থা যখন তারা জরায়ুতে থাকে তখন মানুষের ভ্রূণের বিভিন্ন স্তরকে ভিন্ন ভিন্নভাবে বিচার করে। অন্যান্য প্রজাতির তুলনায় মানবজাতির জন্মদান প্রক্রিয়া অনেক বিপদজনক। ২৪ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে বেদনাদায়ক মুহূর্ত পার করতে হয় কখনও কখনও তা মা বা শিশু উভয়ই মৃত্যুর মুখোমুখি হয়।<ref>According to the July 2: 2007 Newsweek magazine, a woman dies in childbirth every minute, most often due to uncontrolled bleeding and infection, with the world's poorest women most vulnerable. The lifetime risk is 1 in 16 in sub-Saharan Africa, compared to 1 in 2,800 in developed countries.</refname=এটি মূলত অপেক্ষাকৃত বড় মাথা এবং মা এর অপেক্ষাকৃত সংকীর্ণ পেলভিসের কারণে হয়।</ref> এটি তুলনামূলকভাবে ভ্রূণের মাথার বড় পরিধি এবং মায়ের সংকীর্ণ শ্রোণিচক্র উভয়ের কারণেই হতে পারে। ধনী দেশগুলির মধ্যে বিংশ শতাব্দীতে নতুন​প্রযুক্তিগুলির আবির্ভাবের ফলে সফল এবং সহজভাবে জন্মদানের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পক্ষান্তরে, গর্ভধারণ এবং প্রাকৃতিক উপায়ে বাচ্চা প্রসব করানোর ক্ষেত্রে পৃথিবীর উন্নয়নশীল অঞ্চলে বিপজ্জনক অনিয়ম লক্ষ্য করা যায়, এর ফলে উন্নত দেশের তুলনায় অনুন্নত দেশে মাতৃ মৃত্যুর হার প্রায় ১০০ গুণ বেশি। উন্নত দেশগুলিতে শিশু সাধারণত ওজনে ৩-৪ কেজি (৭-৯ পাউন্ড) এবং জন্মের সময় উচ্চতা থাকে ৫০-৬০ সেমি (২০-২৪ ইঞ্চি)। তবে জন্মের সময় ওজন কম হওয়া উন্নয়নশীল দেশগুলির মধ্যে সাধারণ যার ফলে এই অঞ্চলে শিশু মৃত্যুহার উচ্চ মাত্রার হয়ে থাকে। জন্মের সময়ের অসহায় অবস্থা সত্ত্বেও মানুষ সাধারণত বয়স ১২ থেকে ১৫ বছর বয়সের মধ্যে যৌন পরিপক্বতার মধ্যে পৌঁছায়। ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত নারীর শারীরিক বিকাশ চালতে থাকে, তবে তা পুরুষের বেলায় এই প্রক্রিয়া ২১ বছর বয়স পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। মানব জীবন বেশ কয়েকটি পর্যায়ে বিভক্ত হতে পারে: প্রাক-শৈশবকাল, শৈশব, বয়ঃসন্ধিকাল, যৌবন, বয়স্কতা এবং বার্ধক্য। তবে এই পর্যায়গুলির দৈর্ঘ্য সংস্কৃতি ও সময়কাল জুড়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে থাকে। অন্য প্রাইমেটদের তুলনায় বয়ঃসন্ধিকালে মানুষ অস্বাভাবিক দ্রুত বৃদ্ধির অভিজ্ঞতা অর্জন করে, যেখানে শরীর ২৫% আকারে বৃদ্ধি পায় । উদাহরণস্বরূপ, শিম্পাঞ্জিরা শুধুমাত্র ১৪% বৃদ্ধি পায় যেখানে কোন সুস্পষ্ট বৃদ্ধির কোন লক্ষণ নেই। এই বৃদ্ধির উপস্থিতি শিশুদের শারীরিকভাবে ছোট রাখতে প্রয়োজন হতে পারে যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা মানসিকভাবে পরিপক্বতা লাভ করে। মানুষ কয়েকটি প্রজাতির মধ্যে একটি প্রজাতি যেখানে মেয়েদেরকে রজোবন্ধের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এটি প্রস্তাব করা হয়েছে যে, মেনোপজটি নারীর সামগ্রিক প্রজনন সাফল্যের সাথে বৃদ্ধি করে তার বর্তমান সন্তানসন্ততিতে আরও বেশি সময় ও সম্পদ বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করে এবং বয়স্কদের মধ্যে সন্তান ধারণ অব্যাহত রাখার পরিবর্তে তাদের সন্তানদের (দ্য গ্র্যান্ডমাদার হাইপোথিসিস) লালন পালন করতে মনোযোগ দিতে পারে। জৈব বা জিনগত কারণ সহ বিভিন্ন কারণে পুরুষদের তুলনায় নারীরা প্রায় চার বছর বেশি বাঁচে। ২০১৩ সালের হিসাবে একটি মেয়ের বিশ্ব গড় আয়ু ৭০.২ বছর অনুমান করা হয় যেখানে পুরুষদের বিশ্ব গড় আয়ু হল ৬৬.১ বছর। মানুষের জীবনের প্রত্যাশা উল্লেখযোগ্যভাবে ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের সাথে প্রভাবিত হয়, বেশিরভাগ অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে সম্পর্কযুক্ত- উদাহরণস্বরূপ হংকংয়ে মেয়েদের গড় আয়ু ৮৪.৪ বছর এবং পুরুষদের গড় আয়ু ৭৮.৯ বছর। এবং সোয়াজিল্যান্ডে প্রাথমিকভাবে এইডসের কারণে নারী ও পুরুষের গড় আয়ু ৩১.৩ বছর হয়। উন্নত বিশ্বে সাধারণত বার্ধক্যজনিত বা মাঝারি বয়স শুরু হয় প্রায় ৪০ বছর বয়স থেকে। উন্নয়নশীল বিশ্বে মাঝারি বয়স শুরু হয় ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। যেখানে ইউরোপে পাঁচজন ব্যক্তির মধ্যে একজন ৬০ বছরের বা তার চেয়ে বেশি বয়সী হয়, সেখানে আফ্রিকানদের মধ্যে ২০ জনের মধ্যে মাত্র একজন ৬০ বছর বা তার চেয়েও বেশি বয়সী হয়। ২০০২ সালে জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী পৃথিবীর ১০০ বছর বা তারও বেশি বয়সের মানুষের মোট সংখ্যা ২১০,০০০ অনুমান করা হয়। অন্তত একজন ব্যক্তি জেন ক্যালমেট যিনি ১২২ বছর বয়সে পৌঁছে গেছেন বলে জানা যায়। অনেকেরই উচ্চতর বয়স দাবি করা হয়েছে কিন্তু তারা যথাযথভাবে প্রমাণিত হয়নি। সাধারণ খাদ্য মানুষ হচ্ছে সর্বভুক প্রাণী, তারা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ, পশু এবং মৎস্য উপাদান গ্রহণ করতে সক্ষম। বাসস্থানের সাথে সাথে খাদ্য উৎসের পরিবর্তন হয় এবং সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আদর্শের সাথেও এর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। মানব গোষ্ঠীগুলির বেশিরভাগ নিরামিষভোজী থেকে মাংসভোজী হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে, মানুষের খাদ্যতালিকাগত বিধিনিষেধগুলির কারণে পুষ্টির অভাব জনিত রোগ হতে পারে; যাইহোক, স্থিতিশীল মানব গ্রুপ পুষ্টিকর সুষম খাদ্যের উৎস ব্যবহার করতে জেনেটিক বিশেষজ্ঞ এবং সাংস্কৃতিক কনভেনশন উভয় মাধ্যমে অনেক খাদ্যতালিকাগত অনুকরণে নিজেরা অভিযোজিত হয়েছে। মানুষের খাদ্য বিশেষভাবে মানুষের সংস্কৃতিতে প্রতিফলিত হয় এবং খাদ্য বিজ্ঞানের উন্নয়নে নেতৃত্ব দেয়। প্রায় ১০,০০০ বৎসর আগে কৃষি উন্নয়নের আগে, হোমো স্যাপিয়েন্স শিকারি পদ্ধতিকে তাদের খাদ্য সংগ্রহের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এটি বন্য খেলা সহ স্থায়ী খাদ্য উত্সগুলির (যেমন ফল, শস্য, কন্দ, এবং মাশরুম, পোকা লার্ভা এবং জলজ মোলাস্ক) জড়িত, যা খাওয়ার জন্য শিকার করা এবং হত্যা করা আবশ্যক। হোমো ইরেক্টাসের সময় মানুষ খাদ্য প্রস্তুত ও রান্না করার জন্য আগুন ব্যবহার করতো বলে প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রায় দশ হাজার বছর আগে মানুষ কৃষিকাজকে বিকশিত করেছিল যার ফলে তাদের খাদ্যতালিকা যথেষ্ট পরিবর্তিত হয়েছে। এই পরিবর্তনের ফলে মানুষের গঠন পরিবর্তিত হতে পারে; ডেইরি ফার্মিংয়ের মাধ্যমে খাদ্যের একটি নতুন এবং সমৃদ্ধ উৎস সরবরাহ করে যার ফলে কিছু প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ল্যাকটোজ ডাইজেস্ট করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কৃষির কারণে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শহরগুলির উন্নয়ন হয়েছে, এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব বৃদ্ধির কারণে সংক্রামক ব্যাধির ব্যাপক বিস্তার ঘটেছে । যে ধরনের খাবার খাওয়া হয় এবং যা তৈরি করা হয় তা মূলত সময়, স্থান এবং সংস্কৃতি দ্বারা ব্যাপকভাবে বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়। সাধারণভাবে, মানুষ শরীরের মধ্যে জমায়িত চর্বির উপর নির্ভর করে খাদ্য ছাড়াই দুই থেকে আট সপ্তাহ জন্য বেঁচে থাকতে পারে। জল ছাড়াই বেঁচে থাকা সাধারণত তিন বা চারদিন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকে। প্রায় ৩৬ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ক্ষুধার সাথে সম্পর্কিত কারণে। বাল্যকালের অপুষ্টিও সাধারণ এবং রোগের বৈশ্বিক বোজা বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। তবে বৈশ্বিক খাদ্য বিতরণ সুষম না হওয়ার কারণে কিছু মানুষের মধ্যে স্থূলতা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে স্বাস্থ্যগত জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে কিছু উন্নত এবং কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে । বিশ্বব্যাপী এক বিলিয়নের উপরে মানুষ এখন অনেক মোটা । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন ৩৫% লোক স্থূল হয়ে যাচ্ছে, তখন এটিকে "স্থূলতা মহামারী" হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে । স্থূলতা মূলত বৃদ্ধি পায় তখনি যখন ব্যয় করার তুলনায় বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা হয়। তাই অত্যধিক ওজন বৃদ্ধি সাধারণত যেসব খাবারে বেশি ক্যালোরি থাকে তাদের দ্বারা সৃষ্ট হয়। জৈব বৈচিত্র্যতা কোনও দুজন মানুষ-এমনকি মোনোজাইগোটিক যুগলও -জেনেটিকালি অভিন্ন নয় । জিন ও পরিবেশ মানবিক জৈব বৈচিত্র্যকে দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্যাবলী থেকে শারীরবৃত্তীয় রোগ এবং মানসিক ক্ষমতার বিষয়গুলোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের উপর জিন এবং পরিবেশের সঠিক প্রভাব ভালোভাবে বোঝা যায় না। সর্বাধিক বর্তমান জেনেটিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণ পূর্ব আফ্রিকায় আধুনিক মানুষের একটি সাম্প্রতিক একক উৎসকে সমর্থন করে, যা ৬০,০০০ বছর পূর্বে প্রথম স্থানান্তর করা হয়েছিল। গ্রেট এপসের তুলনায়, এমনকি আফ্রিকান জনসংখ্যার মধ্যেও মানব জিনের ক্রমগুলি-উল্লেখযোগ্যভাবে সমজাতীয়। গড় মানুষের মধ্যে জিনগত মিল রয়েছে ৯৯.৯%। সমগ্র মানব জিন পুলের তুলনায় বন্য শিম্পাঞ্জির মধ্যে প্রায় ২-৩ গুণ বেশি জেনেটিক বৈচিত্র্য রয়েছে। বিভিন্ন পরিবেশগত চাপের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে মানুষের শরীরের ক্ষমতা অসাধারণ, যার ফলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা এবং উচ্চতার সাথে নিজেদেরকে খাপ খাওয়াতে পারে। ফলস্বরূপ, মানুষকে পৃথিবীর প্রায় সব অঞ্চলে মহাজাগতিক প্রজাতি হিসাবে পাওয়া, যেমন- গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্ট, শুষ্ক মরুভূমি, অত্যন্ত ঠাণ্ডা আর্কটিক অঞ্চল এবং ব্যাপকভাবে দূষিত শহরগুলি সহ। অধিকাংশ অন্যান্য প্রজাতি তাদের সীমিত অভিযোজন দ্বারা কয়েকটি ভৌগোলিক এলাকায় সীমাবদ্ধ। মানব প্রজাতির জৈব বৈচিত্র্য রয়েছে- যেমন রক্তের ধরন, ক্লিনিক্যাল বৈশিষ্ট্য, চোখের রঙ, চুলের রঙ এবং টাইপ, উচ্চতা এবং বিল্ড, এবং সারা বিশ্বে চামড়ার রঙের পরিবর্তন ও লক্ষণীয় বিষয়। মানুষের শরীরের ধরন বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক উচ্চতা ১.৪ এবং ১.৯ মিটার (৪ ফুট ৭ ইঞ্চি এবং ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি) এর মধ্যে, যদিও এটি লিঙ্গ এবং জাতিগত উৎসের উপর অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে নির্ভর করে। শারীরিক আকার আংশিকভাবে জিন দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং বিশেষ করে শৈশবকালে একটি প্রভাব হিসাবে খাদ্য, ব্যায়াম, এবং ঘুমের ধরন দ্বারা প্রভাবিত হয়। একটি বিশেষ জাতিগত গোষ্ঠীর প্রতিটি লিঙ্গের জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক উচ্চতার জন্য আনুমানিক একটি সাধারণ বণ্টন প্রণালী অনুসরণ করে। মানুষের বিবর্তনীয় ইতিহাসের সূত্র বা জেনেটিক বৈচিত্র্যের যে দিকগুলি চিকিৎসা গবেষণার জন্য প্রাসঙ্গিক সেগুলি বিশেষ মনোযোগ পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, জিনগুলি যা বয়স্ক মানুষরা ল্যাকটোজকে ডাইজেস্ট করতে পারে তাদের মধ্যে উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি উপস্থিত থাকে যা থেকে অনুমান রা তারা দীর্ঘকাল ধরে গবাদি পশুর লালন পালনের সাথে জড়িত ছিল, যা গুরুর দুধের উপর নির্ভর করে জনসংখ্যার জিনের পক্ষে প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রস্তাব দেয়। কিছু বংশগত রোগ যেমন সিকেল সেল অ্যানিমিয়া জনসংখ্যার মধ্যে ঘন ঘন হয় যেখানে সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়ার জীবাণু সংক্রমণ ঘটেছে- এটা বিশ্বাস করা হয় যে একই জিনটি ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহনকারীর মধ্যে যারা সংক্রমিত হয়নি তাদের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একইভাবে, আর্কটিক বা গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে বা উচ্চতর উচ্চতায় অবস্থিত নির্দিষ্ট জলবায়ুগুলির দীর্ঘস্থায়ী জনগোষ্ঠীগুলি এমন পরিবেশে উৎস সংরক্ষণের জন্য সুনির্দিষ্ট ফেনোটাইপ তৈরি করে রেখেছে যা ক্ষতিকর পরিবেশে ছোট আকারের এবং স্টকী বিল্ডের জন্য ঠাণ্ডা অঞ্চল এবং গরম অঞ্চলের লম্বা বা ল্যাংকি, উচ্চ উচ্চতায় বসবাসের জন্য উচ্চ ফুসফুসের ক্ষমতা থাকতে হবে। অনুরূপভাবে, যাদের ত্বকের রঙ গাঢ় তারা সূর্যের অতিবেগুনী বিকিরণ থেকে অতিরিক্ত সুরক্ষা বা বিবর্তনীয় সুবিধা লাভ করে এবং যারা মেরু অঞ্চলের কাছাকাছি বসবাস করে তাদের হালকা ত্বক বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। মানুষের চামড়া এবং চুলের রঙ মেলানিনস নামে রঙ্গকগুলির উপস্থিতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। মানুষের ত্বকের রং অন্ধকার বাদামী থেকে হালকা কালো, অথবা এমনকি অ্যালবিনিজমের ক্ষেত্রে প্রায় সাদা বা বর্ণহীন হতে পারে। সাদা চুলের রঙ সাদা থেকে লাল থেকে গাঢ় বাদামী থেকে কালো রঙের হতে পারে, যা সর্বাধিক ঘন হয়। চুলের রঙ ত্বক ও চুলের মধ্যে মেলানিনের পরিমাণ (একটি কার্যকরী সূর্য ব্লকিং রঙ্গক) উপর নির্ভর করে, বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চুলে মেলানিনের ঘনত্ব ফেঁকাশে এমনকি সাদা হয়ে যেতে পারে চুলের। বেশীরভাগ গবেষকরা বিশ্বাস করেন যে অন্ধকার ত্বক একটি অভিযোজন যা অতিবেগুনী সূর্যের বিকিরণের বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসাবে প্রবর্তিত হয়, যা ফুলেটের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা অতিবেগুনী বিকিরণ দ্বারা ধ্বংস হয়। হালকা চামড়া রঙ্গকতা ভিটামিন ডি হ্রাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়, যা তৈরি করতে সূর্যের আলোর প্রয়োজন হয়। সমসাময়িক মানুষ যাদের স্কিন রঙ্গক ভিন্ন পৃথিবীর চারপাশে তাদেরকে ক্লিনিক্যালি বিরক্তি অনুভব করতে হয় এবং সাধারণত একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক এলাকা অতিবেগুনী বিকিরণের স্তরের সাথে সম্পর্কযুক্ত । অতিবেগুনি রশ্মির প্রকাশের প্রতিক্রিয়ায় মানুষের ত্বকেরও অন্ধকার (ট্যান) হওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। গঠনগত বৈচিত্র্য মানব প্রজাতির মধ্যে জিনগত বৈচিত্র্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ডিগ্রী পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে বিদ্যমান। যদিও নিউক্লিওটাইড জেনেটিক ভ্যারিয়েশন গ্লোবাল জনসংখ্যা জুড়ে একই লিঙ্গের ব্যক্তি 0.১% থেকে বেশি নয়, পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য ১% এবং ২% এর মধ্যে। যদিও প্রকৃতিতে এর ভিন্নতা বিদ্যমান, এটি মানব পুরুষ এবং পুরুষ শিম্পাঞ্জি বা মানব মহিলা এবং মহিলা শিম্পাঞ্জিদের মধ্যে জেনেটিক পার্থক্য আছে । জেনেটিক পার্থক্য ঘটে মূলত শারীরবৃত্তীয়, হরমোনীয়, স্নায়ুতন্ত্র এবং পুরুষদের এবং মহিলাদের মধ্যে শারীরিক পার্থক্য বিদ্যমান, যদিও লিঙ্গের উপর সমাজের প্রকৃতি ও পরিবেশগত প্রভাব সম্পূর্ণরূপে বুঝা যায়না । পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় গড় ১৫% ভারী এবং ১৫ সেন্টিমিটার (৬ ইঞ্চি) বেশি লম্বা হয়। তাছাড়া পুরুষ ও মহিলার শরীরের ধরন, শরীরের অঙ্গ এবং সিস্টেম , হরমোনের মাত্রা, সেন্সরীয় সিস্টেম, যৌনতা এবং পেশীর ভরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । গড়পড়তা দেহের উপরের অংশে শরীরের শক্তি প্রায় ৪০-৫০% এবং ২০-৩০% দেহের নিচের অংশে শরীরের শক্তির দিক দিয়ে পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে । মহিলাদের শরীরে চর্বি সাধারণত পুরুষদের চেয়ে আনুপাতিক হারে বেশি আছে। মহিলাদের পুরুষদের তুলনায় লাইটার ত্বক আছে; গর্ভাবস্থা এবং দুধ খাওয়ানোর সময় মহিলাদের মধ্যে ভিটামিন ডি (যা সূর্যালোক দ্বারা সংশ্লেষিত হয়) জন্য একটি উচ্চ প্রয়োজন দ্বারা ব্যাখ্যা করা হয়েছে । নারী ও পুরুষের মধ্যে ক্রোমোজোমের পার্থক্য থাকার কারণে কিছু X এবং Y ক্রোমোজোম সংক্রান্ত অবস্থার এবং রোগ শুধুমাত্র পুরুষদের বা মহিলাদের উপর প্রভাব ফেলে। পুরুষদের এবং মহিলাদের মধ্যে অন্যান্য শর্তাধীন পার্থক্য যৌন ক্রোমোজোম সম্পর্কিত নয় । এমনকি শরীরের ওজন এবং ভলিউমের জন্য অনুমতি দেওয়ার পরেও পুরুষের ভয়েস সাধারণত মহিলা ভয়েসের চেয়ে একটু গভীর। সারা বিশ্ব জুড়ে প্রায় প্রত্যেক জনসংখ্যার মধ্যে নারীদের দীর্ঘ জীবনকাল রয়েছে। সাধারণত পুরুষদের বড় শ্বাসনালি এবং শাখা ব্রংকাই থাকে, প্রতি ইউনিট শরীরের ভরের প্রায় ৩০% বেশি ফুসফুসের ভলিউম থাকে। তাদের বৃহত্তর হৃদযন্ত্র রয়েছে, ১০% উচ্চ রক্তচাপের সংখ্যা , উচ্চ হিমোগ্লোবিন, বেশি অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা আছে। তাদের উচ্চতর ঘূর্ণনশীল উপাদানগুলি (ভিটামিন কে, প্রোথ্রোমোবিন এবং প্লেটলেট) আছে। এই পার্থক্য জখমের দ্রুত নিরাময় এবং উচ্চতর পেরিবারাল ব্যথা সহনশীলতা সৃষ্টি করে। মহিলাদের মধ্যে বেশিরভাগ শ্বেত রক্ত​কোষ (সংরক্ষিত এবং সার্কোলেটিং), আরও বেশি গ্রানোলোসাইট এবং বি এবং টি লিম্ফোসাইট থাকে। অধিকন্তু, তারা পুরুষদের তুলনায় দ্রুততর এন্টিবডি উৎপাদন করে। অতএব তারা কম সংক্রামক রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং এইগুলি অল্প সময়ের জন্য অব্যাহত থাকে। থোলজিস্টরা বলে যে নারীরা, অন্যান্য নারী এবং সামাজিক গোষ্ঠীর একাধিক সন্তানসন্ততির সাথে আলাপচারিতায় একটি চ্যালেঞ্জিং সুবিধা হিসেবে এই বৈশিষ্ট্যগুলি উপভোগ করেছেন। ড্যালি ও উইলসনের মতে, "মানুষের মধ্যে মধ্যে পার্থক্য বেশি একক বিবাহের স্তন্যপায়ী প্রাণীর তুলনায় কিন্তু বহুবিবাহের স্তন্যপায়ী প্রাণীগুলির তুলনায় অনেক কম।" তবে মানুষের নিকটতম আত্মীয়ের মধ্যে যৌন দ্বিমুখীতা মানুষের তুলনায় অনেক বেশি, মানুষের যৌন দ্বিমুখীতা হ্রাস দ্বারা চিহ্নিত করা আবশ্যক, সম্ভবত কম প্রতিযোগিতামূলক মিলন নিদর্শনকে কারণ হিসাবে বিবেচনা করা আবশ্যক। একটি প্রস্তাবিত ব্যাখ্যা হল, মানুষের যৌনতা আরও উন্নত হয়েছে মানব যৌনতা তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয় bonobo, যা অনুরূপ যৌন দ্বিমুখীতা প্রদর্শন করে, polygynandrous এবং সামাজিক বন্ধন শক্তিশালী এবং আগ্রাসন কমাতে সাহায্য করে। একই লিঙ্গের মানুষের ৯৯.৯% জেনেটিকালি অভিন্ন। মানুষের ভৌগোলিক জনসংখ্যার মধ্যে সামান্য পার্থক্য রয়েছে এবং বেশিরভাগ পরিবর্তন ঘটে যা স্থানীয় এলাকার মধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে রয়েছে এবং তা জনসংখ্যার মধ্যে নয়। মানুষের মধ্যে জিনগত পার্থক্য ০.১%, ৮৫% নির্বাচিত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্যমান, তারা ইতালীয়, কোরিয়ান বা কুর্দি হতে পারে। দুটি এলোমেলোভাবে নির্বাচিত কোরিয়ান জিনগতভাবে একজন কোরিয়ান এবং একজন ইতালীয় হিসাবে ভিন্ন হতে পারে। যে কোন জাতিগত গোষ্ঠী পৃথিবীর মানুষের জেনেটিক বৈচিত্র্যের ৮৫% অন্তর্ভুক্ত। জিনগত তথ্য দেখায় যে জনসংখ্যা গ্রুপ কীভাবে সংজ্ঞায়িত হয় তাও কোনও ব্যাপার নয়, একই জনগোষ্ঠীর দুইজন মানুষ একে অপরের থেকে ভিন্ন দুটি ভিন্ন জনগোষ্ঠী থেকে দুইজন ব্যক্তি হিসাবে ভিন্ন। বর্তমান জেনেটিক গবেষণায় দেখানো হয়েছে যে আফ্রিকান মহাদেশের মানুষের অধিকাংশ জেনেটিকালি বৈচিত্রপূর্ণ। আফ্রিকার মানুষের মধ্য যেমন জেনেটিক বৈচিত্র্য আছে পৃথিবীর আর কোথাও তেমন নেই। আফ্রিকার জেনেটিক গঠনে ১৪ জনগোষ্ঠীর জনগোষ্ঠীকে চিহ্নিত করেছিল। মানব জিনগত বৈচিত্র্যটি আফ্রিকার অভিবাসী দূরত্বের সাথে স্থানীয় জনবসতিতে হ্রাস পায় এবং এটি মানব অভিবাসনের সময় বিঘ্নের ফলাফল বলে মনে করা হয়। মানুষ দীর্ঘতম সময়ের জন্য আফ্রিকায় বসবাস করেছে যা এই জনসংখ্যার মধ্যে জিনগত পরিব্যক্তি একটি উচ্চ বৈচিত্র্য সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত হয়েছে । শুধুমাত্র আফ্রিকার জনগোষ্ঠীর অংশ মহাদেশের বাইরে চলে এসেছিল, তাদের সাথে সাথে আসল আফ্রিকান জেনেটিক বৈচিত্র্যের একটি অংশ নিয়ে এসেছিল। আফ্রিকান জনসংখ্যার আশ্রয়গত জেনেটিক আল্লেলস বিশ্বের অন্যান্য স্থানে পাওয়া যায় না। আফ্রিকার বাইরের জনসংখ্যা থেকে পাওয়া সমস্ত সাধারণ আল্লেলস আফ্রিকান মহাদেশ পাওয়া যায়। মানুষের ভৌগোলিক বৈচিত্র্যের বণ্টন জটিল এবং ক্রমাগত সময়ের সাথে পরিবর্তিত হয় যা জটিল মানব বিবর্তনীয় ইতিহাসকে প্রতিফলিত করে। বেশিরভাগ মানুষের জৈব বৈচিত্র্য ক্লিনিক্যালি বিতরণ করা হয় যা ধীরে ধীরে এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে মিশে যায়। বিশ্বজুড়ে মানব গোষ্ঠীগুলির বহুবিধ পলিমোরফিক জিনের ফ্রিকোয়েন্সি আছে। উপরন্তু, বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যগুলি অসম্পর্কিত এবং প্রতিটির পৃথক পৃথক ক্লিনিকাল বৈচিত্র্য আছে। উপযোগীকরণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি এবং জনসংখ্যার থেকে জনসংখ্যার ভিন্ন হয়। ভৌগোলিক জনসংখ্যার মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর অভিযোজনীয় প্রতিক্রিয়াগুলি পাওয়া যায় যেখানে পরিবেশগত উদ্দীপনাগুলি শক্তিশালী (যেমন তিব্বতিরা উচ্চতর উচ্চতায় অভিযোজিত)। ক্লিনিক্যালি ভৌগোলিক জিনগত বৈচিত্র্যটি প্রাগৈতিহাসিক সময় থেকে মানব জনসংখ্যার মধ্যে স্থানান্তর এবং মিশ্রণের দ্বারা আরও জটিল হয়ে ওঠে। মানুষের পরিবর্তন খুব অসঙ্গতিপূর্ণ: অধিকাংশ জিন একসঙ্গে ক্লাস্টার করেন না এবং একসঙ্গে উত্তরাধিকারসূত্রে উত্তীর্ণ হয় না । স্কিন এবং চুলের রঙ উচ্চতা, ওজন বা অ্যাথলেটিক ক্ষমতার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। ভৌগোলিক উপাত্তের মাধ্যমে মানব প্রজাতি একই ধরনের বৈষম্যমূলক ভাগ করে নেয় না। স্কিনের রঙ অক্ষাংশের সাথে পরিবর্তিত হয় এবং কিছু লোক লম্বা হয় অথবা তাদের বাদামী চুল থাকে। একটি জনসংখ্যার মধ্যে বিশেষ বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে একটি পরিসংখ্যানগত সম্পর্ক আছে, কিন্তু বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ বা একসাথে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া যায় না। এইভাবে, জিনগুলি যা উপকারী শারীরিক বৈশিষ্ট্যের জন্য কোন কোড দরকার বলে দেয়- যেমন ত্বকের রঙ, চুলের রঙ বা উচ্চতা- মানব বংশের একটি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র অংশকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং তা জিনগত অনুভূতির সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ায় পাওয়া যায় এমন ডার্ক-স্কিন জনসংখ্যা একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত নয়। এমনকি একই অঞ্চলেও, শারীরিক ফেনোটাইপ জিনগত অনুভূতির সাথে সম্পর্কিত নয়: অন্ধকার-ত্বক বিশিষ্ট ইথিওপিয়ানরা হালকা ত্বক বিশিষ্ট আর্মেনীয়দের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত অন্ধকার-চামড়ার বান্টু জনবসতির তুলনায়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার (আন্দামানিজ) পিগমি জনসংখ্যার আফ্রিকান পিগমি জনগোষ্ঠীর অনুরূপ শারীরিক বৈশিষ্ট্য যেমন ছোট আকারের, গাঢ় চামড়া, এবং কোঁকড়া চুলের অনুরূপ তবে এই জনগোষ্ঠীর সাথে জেনেটিক্যালি ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত নয়। জেনেটিক বৈশিষ্ট্যগুলি শারীরিক বৈশিষ্ট্যগুলির উপর প্রভাব ফেলে (যেমন ত্বকের রঙ) - জেনেটিক দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো মূলত অর্থহীন - তারা শত কোটি নিউক্লিওটাইডগুলি একজন ব্যক্তির ডিএনএতে অন্তর্ভুক্ত করে। একই রূপের সাথে মানুষের বংশবৃদ্ধি দ্বারা একে অপরকে একত্রে আবদ্ধ করা হয় না এবং একটি নির্দিষ্ট বংশের মধ্যে কেবলমাত্র একই বৈশিষ্ট্যের জটিল বৈশিষ্ট্যগুলি অন্তর্ভুক্ত নয়। মনোবিজ্ঞান মস্তিষ্ক মানুষের মস্তিষ্ক, মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ফোকাল পয়েন্ট পেরিফেরাল স্নায়ুতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়া "নিচু," অনাকাঙ্ক্ষিত বা প্রাথমিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত কার্যক্রমগুলি যেমন শ্বাস ও হজম করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এটি চিন্তা, যুক্তি এবং বিমূর্ততার মতো "উচ্চতর" বিষয়গুলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই জ্ঞানীয় প্রক্রিয়াগুলি মন গঠন করে, এবং তাদের আচরণগত পরিণতিগুলি মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অধ্যয়ন করা হয়। সাধারনভাবে মানুষের মস্তিষ্ক উচ্চতর ক্রিয়াকাণ্ড আরও দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে পারে বলে মানব মস্তিষ্কে অন্য কোনও পরিচিত প্রজাতির চেয়ে বেশি "বুদ্ধিমান" বলে মনে করা হয়। যদিও কিছু অ-মানব প্রজাতি কাঠামো তৈরি এবং সহজ সরঞ্জামগুলি ব্যবহার করতে সক্ষম হয়- বেশিরভাগ তারা প্রবৃত্তি ও অনুকরণের মাধ্যমে করে- মানব প্রযুক্তি অনেক বেশি জটিল এবং ক্রমাগত সময়ের সাথে সাথে আরও উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে। ঘুম এবং স্বপ্ন মানুষ সাধারণত আহ্নিক হয়। প্রতিদিন একজন প্রাপ্তবয়স্ক লোকের গড় ঘুমের প্রয়োজন সাত থেকে নয় ঘণ্টা এবং একজন শিশুর জন্য নয় থেকে দশ ঘণ্টা ; বয়স্ক লোক সাধারণত ছয় থেকে সাত ঘণ্টা ঘুমায়। ঘুমের বঞ্চনা স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, যদিও এই তুলনায় কম ঘুম হওয়া মানুষের মধ্যে সাধারণ বিষয়। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি চার ঘণ্টা ঘুমের সাথে শারীরবৃত্তীয় সীমাবদ্ধতা এবং মানসিক অবস্থায় পরিবর্তনের সম্পর্ক আছে, যেমন- স্মৃতি শক্তি হ্রাস পাওয়া, ক্লান্তি, আগ্রাসন এবং শারীরিক অস্বস্তিতে ভুগতে পারে। মানুষ ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন স্বপ্নদর্শনে মানুষ একটি দৃশ্যের মধ্যে ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য চিত্র ও শব্দ ব্যবহার করে, যা একজন স্বপ্নদর্শক সাধারণত একজন পর্যবেক্ষকের তুলনায় স্পষ্ট বোঝেন। ড্রিমিং পনস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয় এবং যার বেশিরভাগই ঘুমের REM(অস্থায়ী স্মৃতি) ধাপে ঘটে। চেতনা এবং চিন্তা মানুষই স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্ব-সচেতন এক প্রজাতি যারা মিররের মধ্যে নিজেদের প্রতিকৃতি দেখতে পারে। ১৮ মাসের মধ্যে অধিকাংশ মানুষের সন্তানরা বুঝতে পারে যে মিররের ইমেজটি অন্য কোনও ব্যক্তির নয়। মানুষের মস্তিষ্ক ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে বাহ্যিক জগতকে উপলব্ধি করে, এবং প্রতিটি মানুষ তার অভিজ্ঞতা দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়, যার ফলে অস্তিত্বের বিষয়ভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং সময় উত্তরণ ঘটে। মানুষের আছে চেতনা, আত্ম সচেতনতা, এবং মন, যাকে চিন্তাধারার মানসিক প্রক্রিয়া বলা হয়। এইগুলিকে স্ব-সচেতনতা, বুদ্ধি, দক্ষতা, এবং নিজের এবং নিজের সাথে পরিবেশের সম্পর্কের বিষয়টি অনুধাবন করার মত গুণাবলীর অধিকারী বলে বলা হয়। মানুষের মন বাইরের জগতের সৃষ্টি বা অনুভূতির কতটুকু তৈরি করে তা বিতর্কের বিষয়, যেমনটি উপরে বর্ণিত পদগুলির সংজ্ঞা এবং বৈধতা উপরে দেয়া হয়েছে। মন এবং মস্তিষ্কের শারীরিক দিক স্নায়ুতন্ত্রের বর্ধিতকরণ দ্বারা স্নায়ুবিদ্যায় স্টাডি করা হয় এবং আচরণগত বিষয় মনোবিজ্ঞানে স্টাডি করা হয়। এবং মাঝে মাঝে সংহতভাবে সংজ্ঞায়িত এলাকা মনোবিজ্ঞানের সেই অংশে মানসিক অসুস্থতা এবং আচরণগত রোগের ট্রিটমেন্ট করা হয়। মনোবিজ্ঞান অগত্যা মস্তিষ্ক বা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষেত্রকে উল্লেখ করে না, তবে তা মনোবিশ্লেষণীয় বা তথ্য প্রক্রিয়াকরণ তত্ত্বের ভিত্তিতে বিশুদ্ধভাবে তৈরি করা যেতে পারে। ক্রমবর্ধমানভাবে, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বোঝার জন্য তাকে মনস্তাত্ত্বিক তত্ত্ব এবং অনুশীলনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে, বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্নায়ুবিজ্ঞান এবং জ্ঞানীয় স্নায়ুবিজ্ঞানগুলির ক্ষেত্রে তার প্রয়োগ বেড়ে যাচ্ছে।. চিন্তার প্রকৃতি মনোবিজ্ঞান এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কেন্দ্রবিন্দু। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান অধ্যয়নের মূল বিষয় হল মানসিক প্রক্রিয়া 'অন্তর্নিহিত আচরণ পর্যবেক্ষণ করা। এটি মনকে বোঝার জন্য একটি কাঠামো হিসাবে তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবহার করে। উপলব্ধি, শেখার, সমস্যা সমাধানের, মেমরি, মনোযোগ, ভাষা এবং আবেগ সব ভালোভাবে গবেষণা করার ক্ষেত্রের হিসাবে পরিচিত। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞান একটি চিন্তার স্কুলের সাথে যুক্ত যা জ্ঞাতব্যবাদ নামে পরিচিত, যা অনুগামী মানসিক ফাংশনের তথ্যের প্রক্রিয়াকরণ মডেলের জন্য যুক্তি দেয়, তাছাড়া তা ইতিবাচক ও পরীক্ষামূলক মনোবিজ্ঞানের দ্বারা জানানো হয়। জ্ঞানীয় মনোবিজ্ঞানের কৌশল এবং মডেল ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে যা মনোবিজ্ঞান গবেষণা এবং প্রয়োগ উভয় ক্ষেত্রে মানসিক তত্ত্ব মূলধারার গঠন হিসাব কাজ করে। মানুষের মনের উন্নয়নের উপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার মাধ্যমে বিকাশমূলক মনোবিজ্ঞান মানুষকে বুঝতে সাহায্য করে যে, মানুষ কীভাবে পৃথিবীকে উপলব্ধি করে, বোঝে এবং সেই অনুসারে কাজ করে এবং এই প্রক্রিয়ায় কীভাবে তাদের বয়স পরিবর্তন হয়। এটি বুদ্ধিবৃত্তিক, জ্ঞানীয়, স্নায়ু, সামাজিক বা নৈতিক বিকাশের উপর দৃষ্টিপাত করতে পারে। প্রেরণা এবং আবেগ অনুপ্রেরণা মানুষের সব ইচ্ছাকৃত কর্মের পিছনে চালিকা শক্তি হিসাবে কাজ করে । প্রেরণা আবেগের উপর ভিত্তি করে- বিশেষত, সন্তুষ্টির জন্য অনুসন্ধান (ইতিবাচক মানসিক অভিজ্ঞতা), এবং সংঘাত পরিহার করা। ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক মস্তিষ্কের পৃথক স্তর দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়, যা সামাজিক নিয়ম দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে একজন ব্যক্তি নিজেকে আঘাত বা সহিংসতার কারণ হতে পারে কারণ তাদের মস্তিষ্ক এই কর্মগুলির একটি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে শর্তযুক্ত। প্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি সমস্ত জানা প্রতিক্রিয়াগুলির কার্য সম্পাদনের সাথে জড়িত। মনোবিজ্ঞানের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিহার এবং লিবিডো চেতনা প্রধান কর্মসূচী হিসেবে বিবেচিত হয়। অর্থনীতিতে, অনুপ্রেরণাকে প্রায়ই উদ্দীপক হিসাবে দেখা হয়; এটি আর্থিক, নৈতিক বা বাধ্যকারী হতে পারে। ধর্ম সাধারণত ঐশ্বরিক বা শয়তানের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করে। সুখ বা সুখী হওয়ার অবস্থা হল মানুষের মানসিক অবস্থা। সুখের সংজ্ঞা একটি সাধারণ দার্শনিক বিষয়। কিছু মানুষ মানবসমাজ এবং শারীরিক স্বাস্থ্যের সবচেয়ে ভাল অবস্থাকে সুখ হিসাবে নির্ধারণ করতে পারে। অন্যেরা তাকে অভাব এবং দুঃখকষ্ট থেকে স্বাধীনতা হিসাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারে ; ভাল জিনিস সংক্রান্ত চেতনা; মহাবিশ্ব বা সমাজের মধ্যে আশ্বাসের একটি জায়গা। মনুষ্য আচরণের উপর আবেগ উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে বলা যেতে পারে, যদিও ঐতিহাসিকভাবে বহু সংস্কৃতি এবং দার্শনিকরা এই প্রভাবকে অনির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দেওয়ার জন্য নিরুৎসাহিত করেছেন। অনুভূতিপূর্ণ অভিজ্ঞতাগুলি আনন্দ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যেমন ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বা উচ্ছ্বাসের সাথে, তেমনি ঘৃণা, ঈর্ষা বা দুঃখের মত অপ্রীতিকর অনুভূতির সাথে তুলনা করা যায়। সামাজিকভাবে শেখা এবং বেঁচে থাকা ভিত্তিক আবেগের মধ্যে প্রায়ই একটি পার্থক্য আছে যা স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। অন্যান্য স্নায়বিক ঘটনা থেকে মানুষের আবেগকে ভিন্ন হিসাবে নোট যোগ্য, বিশেষ করে সংস্কৃতির ক্ষেত্রে যেখানে আবেগকে শারীরিক অবস্থা থেকে পৃথক বিবেচনা করা হয়। কিছু সাংস্কৃতিক চিকিৎসা তত্ত্বের মধ্যে আবেগকে শারীরিক স্বাস্থ্যের নির্দিষ্ট রূপগুলির সমতুল্য বলে বিবেচিত হয় যা কোনও পার্থক্যকে বিদ্যমান বলে মনে করা হয় না। স্টোয়িক্স বিশ্বাস করেন যে অত্যধিক আবেগ ক্ষতিকর ছিল, কিছু সুফি শিক্ষক অনুভব করেছিলেন যে চরম আবেগ ধারণাগত পরিপূর্ণতা লাভ করতে পারে একটি , যা প্রায়শই অতিরঞ্জিত রূপে অনুবাদ করা হয়। আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারায়, কিছু সুশৃঙ্খল আবেগগুলিকে একটি জটিল স্নায়ুতন্ত্র বলে মনে করা হয় যা গৃহপালিত এবং অ গৃহপালিত স্তন্যপায়ীর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারের হতে পারে । এগুলি সাধারণত উচ্চতর বেঁচে থাকার প্রক্রিয়া এবং একে অপরের সাথে পরিবেশগত পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে; যেমন, বিশুদ্ধ অনুভূতি সব ক্ষেত্রে অনুমিত এবং প্রাকৃতিক স্নায়ু ফাংশন থেকে আলাদা নয় যেমন আগে ধারণা করা হত । যাইহোক, যখন মানুষ সভ্য টেন্ডেমের মধ্যে কাজ করে, তখন এটি উল্লেখ করা হয়েছে যে চরম আবেগ অনুভূতিহীন আচরণের ফলে সামাজিক ব্যাধি এবং অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। যৌনতা এবং ভালোবাসা মানুষের জন্য যৌনতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ফাংশন আছে: এটা জৈব প্রজনন নিশ্চিত করার পাশাপাশি ব্যক্তিদের মধ্যে শারীরিক অন্তরঙ্গতা, বন্ড এবং শ্রেণীক্রম তৈরি করে। যৌন ইচ্ছা বা লিবিডোকে একটি শারীরিক আবেগ হিসাবে মনে করা হয়, যেমন প্রেম, বিস্ময় এবং ঈর্ষাকে শক্তিশালী আবেগের সঙ্গে অনুভব করা হয়। মানব প্রজাতির মধ্যে যৌনতার তাৎপর্য প্রতিফলিত হয় তাদের মধ্যে কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য লুকিয়ে থাকে যার মধ্যে রয়েছে লুক্কায়িত ডিম্ব, বাইরের স্ক্রোটামের বিবর্তন এবং শুক্রাণু প্রতিযোগিতা, একটি ওএস লিঙ্গের অনুপস্থিতি, স্থায়ী সেকেন্ডারি যৌন বৈশিষ্ট্য এবং জোড়া গঠনকে একটি সাধারণ সামাজিক কাঠামো হিসাবে যৌন আকর্ষণের উপর নির্ভর করে । বিপরীতে, অন্যান্য প্রাইমেটদের ঋতুকাল প্রায়ই দৃশ্যমান লক্ষণের মাধ্যমে প্রকাশ করে, মানব মায়েদের এমন স্বতন্ত্র বা দৃশ্যমান লক্ষণ থাকে না, পাশাপাশি তারা তাদের উর্বর সময়ের বাইরে যৌন বাসনা ভোগ করে। এই অভিযোজনগুলি ইঙ্গিত দেয় যে মানুষের মধ্যে যে যৌনতা আছে তা বনবোর অনুরূপ, এবং জটিল মানব যৌন আচরণের একটি দীর্ঘ বিবর্তনীয় ইতিহাস আছে। যৌনতা নিয়ন্ত্রণে মানুষের পছন্দগুলি সাধারণত সাংস্কৃতিক আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত হয় যা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রায়ই ধর্মীয় বিশ্বাস বা সামাজিক রীতিনীতি দ্বারা নির্ধারিত হয়। অগ্রগামী গবেষক সিগমুন্ড ফ্রয়েড বিশ্বাস করতেন যে মানুষ পলিমোরফেন বিকৃত হয়ে জন্মগ্রহণ করে, যার মানে যে কোনও বস্তু আনন্দের উৎস হতে পারে। ফ্রয়েডের মতে মানুষ যৌন উন্নয়নের পাঁচটি ধাপ অতিক্রম করে এবং প্রক্রিয়া চলাকালে বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রণার কারণে যেকোনো পর্যায়ে তা স্থির করা যায়। অন্য প্রভাবশালী যৌন গবেষক আলফ্রেড কিন্সে এর মতে, লোকেরা যেকোনো সময় যৌন অনুভূতির সাথে জড়িয়ে পড়তে পারে, যেখানে কেবলমাত্র ছোট সংখ্যালঘুরা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক বা সমকামী। নিউরোলজি এবং জেনেটিক্সের সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা যায় যে বিভিন্ন রকম যৌন প্রবৃত্তি নিয়ে মানুষ জন্ম নিতে পারে। আচরণ সামাজিক বিবর্তন অন্যন্য বাঁদর জাতীয় স্তন্যপায়ীর মত মানুষও সাধারণতঃ দলবদ্ধ-ভাবে থাকে। কিন্তু মানুষের স্থায়ী বসতি প্রতিষ্ঠা অপেক্ষাকৃত নতুন (১৫ হাজার বছরের কম)। প্রাইমেটকে বানরের শব্দার্থ হিসেবে বিবেচনা করলে এটা স্বীকার করতেই হবে যে, মানুষও একধরনের প্রাইমেট বা বানর জাতীয় প্রাণী বৈ কিছু নয়। বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে মাঙ্কি একটি অধিবর্গ বা প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ, আধুনিক ফাইলোজেনেটিক্সে প্যারাফাইলেটিক গ্রুপ শক্তভাবে এড়িয়ে চলা হয়। আমরা কোন মাঙ্কি অবশ্যই নই, তবে অবশ্যই অবশ্যই আমরা প্রাইমেট। আমাদের পাশাপাশি অবস্থিত একজোড়া চোখ, ত্রিমাত্রিক, রঙ্গীন, স্টেরিও দৃষ্টি, চোখের পেছনে বিশাল বড় একটা মাথা, আড়াই শত দিনের কাছাকাছি গর্ভকালীন সময়, বয়ঃপ্রাপ্ত হবার পূর্বে একটা অস্বাভাবিক রকম বিশাল শৈশব, ল্যাটেরাল থেকে ক্রমান্বয়ে স্ক্যাপুলার ডোর্সাল অক্ষে পিছিয়ে যাওয়া, পেন্ডুলার পিনেস এবং টেস্টস, অস্বাভাবিক বিকাশপ্রাপ্ত প্রাইমারি সেন্সরি কর্টেক্স আমাদের বানায় বানরজাতীয় জীব বা প্রাইমেট, এটা আমরা পছন্দ করি আর নাই করি। মানুষ সহ সব নরবানরই স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্তর্গত প্রাইমেট বর্গে পড়েছে। এখন পর্যন্ত প্রাইমেটদের দু'শরও বেশি প্রজাতির সন্ধান বিজ্ঞানীরা পেয়েছেন। মানুষকে এই প্রাইমেট বর্গের মধ্যে হোমিনিডি অধিগোত্রের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়। ভাষার আবির্ভাব মানুষের বুদ্ধির উন্নতি মানুষের জটিল ভাষা ব্যবহার করার ক্ষমতার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। তাই এরা আজ আধুনিক সভ্যতা আবিষ্কার করতে পেরেছে। শারীরিক গঠন ও প্রক্রিয়া বিবর্তন চার পায়ের বদলে দুই পায়ে চলতে আরম্ভ করার সাথে সাথে মানব শরীর-গঠন ও শরীর-প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে নানা পরিবর্তন দেখা দিতে আরম্ভ করে। যেমন পেটের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলিকে নিচে পড়ে যাওয়ার থেকে রক্ষা করার জন্য শ্রোণীচক্রের ব্যাস ছোট হয়। বাচ্চার জন্মের পথ সরু হয়ে যাওয়াতে গর্ভে মস্তিষ্ক বৃদ্ধি সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই বাচ্চাকে ভূমিষ্ঠ হতে হয়। তার ফল সদ্যোজাত মানবশিশু শারীরিক ও মানসিকভাবে পরনির্ভরশীল। তাকে বহুদিন মা-বাবা ও অন্যান্যদের অভিভাবকত্বে বড় হতে হয়। এখানে ভাষার অবদান গুরত্বপূর্ণ। মুখ ও গলার গঠনে পরিবর্তন হওয়ার কারণে মানুষ অনেক জটিল মনোভাব আদানপ্রদানে সক্ষম হয়। মানুষের উদ্বর্তনের সবথেকে মূল্যবান উপহার মস্তিষ্কের উন্নতি। মানুষের মস্তিষ্ক প্রাণীরাজ্যে বৃহত্তম না হলেও আপেক্ষিকভাবে বৃহত্তরদের অন্যতম। মানুষ জন্মাবার বহুবছর অবধি স্নায়ুতণ্ত্রের বিকাশ অব্যহত থাকে। অন্যান্য মানুষদের সঙ্গে ভাষা ও ভঙ্গীর সাহায্যে ভাব বিনিময় করতে করতে বহু আচার-ব্যবহার অধীকৃত হয়, যা জন্মগত ভাবে (জীনের মাধ্যমে) সহজে বর্তায়না। দলবদ্ধ সমাজব্যবস্থাও এতে উপকৃত হয়। কিছু বিশেষজ্ঞের মতে বয়স্কা মহিলদের মাসিকবন্ধ হয় তথা রজোনিবৃত্তি ঘটে বলে তাদের ভুমিকা মায়ের বদলে দিদিমায় উপনীত হয়, ফলে তাদের দুই প্রজন্ম পরের মানবশিশুদেরও সুরক্ষা বর্ধিত হয়, শিক্ষা ত্বরান্বিত হয়। মানুষই একমাত্র প্রাণী যাদের বয়ঃসন্ধি ও রজোনিবৃত্তি আছে। আরও দেখুন মানব প্রকৃতি মানব বিবর্তনের কালপঞ্জি প্রাইমেট হলোসিন বর্ষপঞ্জী তথ্যসূত্র মানুষ ১৭৫৮-এ বর্ণিত স্তন্যপায়ী মূল বিষয়ের নিবন্ধ শীর্ষ খাদ্যশিকারী প্রাণী কার্ল লিনিয়াস কর্তৃক নামকরণকৃত ট্যাক্সা
https://en.wikipedia.org/wiki/Human
Human
Humans (Homo sapiens, meaning "thinking man") or modern humans are the most common and widespread species of primate, and the last surviving species of the genus Homo. They are great apes characterized by their hairlessness, bipedalism, and high intelligence. Humans have large brains, enabling more advanced cognitive skills that enable them to thrive and adapt in varied environments, develop highly complex tools, and form complex social structures and civilizations. Humans are highly social, with individual humans tending to belong to a multi-layered network of cooperating, distinct, or even competing social groups – from families and peer groups to corporations and political states. As such, social interactions between humans have established a wide variety of values, social norms, languages, and traditions (collectively termed institutions), each of which bolsters human society. Humans are also highly curious, with the desire to understand and influence phenomena having motivated humanity's development of science, technology, philosophy, mythology, religion, and other frameworks of knowledge; humans also study themselves through such domains as anthropology, social science, history, psychology, and medicine. There are estimated to be more than eight billion humans alive. Although some scientists equate the term "humans" with all members of the genus Homo, in common usage it generally refers to Homo sapiens, the only extant member. All other members of the genus Homo, which are now extinct, are known as archaic humans, and the term "modern human" is used to distinguish Homo sapiens from archaic humans. Anatomically modern humans emerged around 300,000 years ago in Africa, evolving from Homo heidelbergensis or a similar species. Migrating out of Africa, they gradually replaced and interbred with local populations of archaic humans. Multiple hypotheses for the extinction of archaic human species such as Neanderthals include competition, violence, interbreeding with Homo sapiens, or inability to adapt to climate change. Humans began exhibiting behavioral modernity about 160,000–60,000 years ago. For most of their history, humans were nomadic hunter-gatherers. The Neolithic Revolution, which began in Southwest Asia around 13,000 years ago (and separately in a few other places), saw the emergence of agriculture and permanent human settlement; in turn, this led to the development of civilization and kickstarted a period of continuous (and ongoing) population growth and rapid technological change. Since then, a number of civilizations have risen and fallen, while a number of sociocultural and technological developments have resulted in significant changes to the human lifestyle. Genes and the environment influence human biological variation in visible characteristics, physiology, disease susceptibility, mental abilities, body size, and life span. Though humans vary in many traits, humans are among the least genetically diverse species. Any two humans are at least 99.5% genetically similar. Humans are sexually dimorphic: generally, males have greater body strength and females have a higher body fat percentage. At puberty, humans develop secondary sex characteristics. Females are capable of pregnancy, usually between puberty, at around 12 years old, and menopause, around the age of 50. As omnivorous creatures, they are capable of consuming a wide variety of plant and animal material, and have used fire and other forms of heat to prepare and cook food since the time of Homo erectus. Humans can survive for up to eight weeks without food and several days without water. Humans are generally diurnal, sleeping on average seven to nine hours per day. Childbirth is dangerous, with a high risk of complications and death. Often, both the mother and the father provide care for their children, who are helpless at birth. Humans have a large, highly developed, and complex prefrontal cortex, the region of the brain associated with higher cognition. Humans are highly intelligent and capable of episodic memory; they have flexible facial expressions, self-awareness, and a theory of mind. The human mind is capable of introspection, private thought, imagination, volition, and forming views on existence. This has allowed great technological advancements and complex tool development through complex reasoning and the transmission of knowledge to subsequent generations through language. Humans have had a dramatic effect on the environment. They are apex predators, being rarely preyed upon by other species. Human population growth, industrialization, land development, overconsumption and combustion of fossil fuels have led to environmental destruction and pollution that significantly contributes to the ongoing mass extinction of other forms of life. Within the last century, humans have explored challenging environments such as Antarctica, the deep sea, and outer space. Human habitation within these hostile environments is restrictive and expensive, typically limited in duration, and restricted to scientific, military, or industrial expeditions. Humans have briefly visited the Moon and made their presence felt on other celestial bodies through human-made robotic spacecraft. Since the early 20th century, there has been continuous human presence in Antarctica through research stations and, since 2000, in space through habitation on the International Space Station.
1526
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%81%E0%A6%A8%20%E0%A6%86%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A6
হুমায়ুন আজাদ
হুমায়ুন আজাদ (২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ - ১২ আগস্ট ২০০৪ খ্রিস্টাব্দ; ১৪ বৈশাখ ১৩৫৪ - ২৬ শ্রাবণ ১৪১১ বঙ্গাব্দ) একজন বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক, ভাষাবিজ্ঞানী, সমালোচক, রাজনীতিক ভাষ্যকার, কিশোরসাহিত্যিক, গবেষক, এবং অধ্যাপক ছিলেন। তিনি বাংলাদেশের অন্যতম প্রথাবিরোধী এবং বহুমাত্রিক লেখক যিনি ধর্ম, মৌলবাদ, প্রতিষ্ঠান ও সংস্কারবিরোধিতা, যৌনতা, নারীবাদ ও রাজনীতি বিষয়ে তার বক্তব্যের জন্য ১৯৮০-এর দশক থেকে পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আর্কষণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হুমায়ুন আজাদের ৭টি কাব্যগ্রন্থ, ১২টি উপন্যাস ও ২২টি সমালোচনা গ্রন্থ, ৭টি ভাষাবিজ্ঞানবিষয়ক, ৮টি কিশোরসাহিত্য ও অন্যান্য প্রবন্ধসংকলন মিলিয়ে ৬০টিরও অধিক গ্রন্থ তার জীবদ্দশায় এবং মৃত্যু পরবর্তী সময়ে প্রকাশিত হয়। ১৯৯২ সালে তার নারীবাদী গবেষণা-সংকলনমূলক গ্রন্থ নারী প্রকাশের পর বিতর্কের সৃষ্টি করে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাড়ে চার বছর ধরে বইটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ছিল। এটি তার বহুল আলোচিত গবেষণামূলক কাজ হিসাবেও স্বীকৃত। এছাড়াও তার পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটি পাঠকমহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। তার রচিত প্রবচন সংকলন ১৯৯২ সালে হুমায়ুন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ নামে প্রকাশিত হয়। তাকে ১৯৮৬ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার এবং ২০১২ সালে সামগ্রিক সাহিত্যকর্ম এবং ভাষাবিজ্ঞানে বিশেষ অবদানের জন্য মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। ২০০৩ সালে তার রচিত কিশোরসাহিত্য ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না (১৯৮৫) এবং আব্বুকে মনে পড়ে (১৯৯২) জাপানি ভাষায় অনূদিত হয়েছিলো। হুমায়ুন আজাদ প্রথাগত ধ্যানধারা সচেতনভাবে পরিহার করতেন। তার সাহিত্যের বৈশিষ্ট্য পল্লীপ্রেম, নর-নারীরপ্রেম, প্রগতিবাদিতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা, সামরিক শাসন ও একনায়কতন্ত্রের বিরোধিতা এবং নারীবাদের জন্য পরিচিত। তার ধর্মীয় ও রাজনৈতিক বিশ্বাস এবং ব্যক্তিগত অভীষ্ট তার সাহিত্যকে প্রভাবান্বিত করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করেছিলেন। পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসে মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে ২০০৪ সালে তিনি হামলার শিকার হন। জীবন প্রাথমিক জীবন হুমায়ুন আজাদ ২৮ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে তার মাতামহের বাড়ি, তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমানে বাংলাদেশ) অধীন বিক্রমপুরের কামারগাঁয় জন্ম নেন; যেটি বর্তমানে মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার অন্তর্গত। তার জন্ম নাম ছিল হুমায়ুন কবীর। ১৯৮৮ সালে ২৮ সেপ্টেম্বর নাম পরিবর্তনের মাধ্যম তিনি বর্তমান নাম ধারণ করেন। তার বাবা আবদুর রাশেদ প্রথম জীবনে বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও পোস্টমাস্টার পদে চাকরি করতেন, পরে ব্যবসায়ী হন। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দে তার বাবা মৃত্যুবরণ করেন। মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী, যিনি ২০০৩ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তিন ভাই এবং দুই বোনের মধ্যে আজাদ ছিলেন পিতামাতার দ্বিতীয় পুত্রসন্তান। ছেলেবেলায় তার ১৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি রাড়িখাল গ্রামে বেড়ে ওঠেন। পরবর্তীতে তার বিভিন্ন লেখায় বিভিন্ন ভাবে রাড়িখাল গ্রামের বর্ণনা উঠে এসেছে এবং এ গ্রাম নিয়ে তিনি "রাড়িখাল : ঘুমের ভেতরে নিবিড় শ্রাবণধারা" নামে একটি লেখা প্রকাশ করেন। আজাদের মতে তার শৈশব ও কৈশোর ছিল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ খণ্ড, যে সময়ের কথা প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তার ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না (১৯৮৫), নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু (২০০০), শ্রাবণের বৃষ্টিতে রক্তজবা (২০০২) এবং বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে। আজাদের গ্রামের মাইল দুয়েক দক্ষিণে রয়েছে পদ্মা নদী, রাতের বেলায় নদীতে স্টিমার চলার ধ্বনি শৈশবে তাকে প্রভাবিত করায় তিনি তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম দেন অলৌকিক ইস্টিমার (১৯৭৩)। ১৯৫২ সালে আজাদ দক্ষিণ রাড়িখাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ইনফ্যান্ট (প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা) শ্রেণীতে ভর্তি হন, সেখানে তিনি ইনফ্যান্ট থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার বছর অধ্যয়ন করেন। চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ার জন্য তিনি স্যার জে সি বোস ইন্সটিটিউটে ভর্তি হন। ছেলেবেলা থেকেই তিনি ছিলেন মেধাবী। এ বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন (মাধ্যমিক) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উচ্চশিক্ষা ১৯৬২ সালে উচ্চশিক্ষার জন্য আজাদ ঢাকায় চলে আসেন। মানবিক বিভাগে পড়ার ইচ্ছা থাকলেও বাবার ইচ্ছায় ১৯৬২ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ঢাকা কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৪ সালে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এরপর একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদে বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি এবং ১৯৬৮ সালে একই বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয় পরীক্ষায় তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। হুমায়ুন আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াকালীন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রাবাসে থাকতেন। কর্মজীবন ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে ২২ বছর বয়সে তার কর্মজীবন শুরু হয় চট্টগ্রাম কলেজে প্রভাষক হিসাবে। সেখানে কিছুকাল কর্মরত থাকার পর ১৯৭০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। একই বছর ১২ ডিসেম্বর তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসাবে যোগ দেন। ১৯৭৩ সালে তার প্রথম গবেষণা গ্রন্থ রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা এবং একইবছর সেপ্টেম্বরে কাব্যগ্রন্থ অলৌকিক ইস্টিমার প্রকাশিত হয়। সে বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে ভাষাবিজ্ঞান পড়তে স্কটল্যান্ডে চলে যান। ১৯৭৬ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। তার গবেষণার বিষয় ছিল বাংলা ভাষায় সর্বনামীয়করণ। এই গবেষণাপত্র ১৯৮৩ সালে প্রোনোমিনালাইজেশন ইন বেঙ্গলি নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়। এডিনবরায় গবেষণাকালীন সময়ে তিনি রবার্ট ক্যাল্ডরের সহযোগিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ এবং নিজের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলেন, যেগুলি "লিডস বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল" এবং এডিনবরার বিশ্ববিদ্যালয়ের "চ্যাপম্যান" সাময়িকপত্রে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী অধ্যাপক হিসাবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীকালে বাংলা বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন। সাহিত্যকর্ম হুমায়ুন আজাদের কবিতার মাধ্যমে সাহিত্যচর্চার শুরু হয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হবার পর তবে বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে থাকাকালীন তার "ঘড়ি বলে টিক টিক" শিরোনামে প্রথম লেখা প্রবন্ধ ছাপা হয়েছিল দৈনিক ইত্তেফাকের শিশুপাতা কচিকাঁচার আসরে। শৈশবে পরবর্তীতে তিনি এই পত্রিকায় একাধিক প্রবন্ধ লিখেছিলেন। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৭। তার প্রকাশিত-অপ্রকাশিত কবিতাসমূহ জীবদ্দশায় হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৯৩) ও কাব্যসংগ্রহ (১৯৯৮) এবং মৃত্যুর পরে কাব্যসমগ্র (২০০৫) বইয়ে প্রকাাশিত হয়। তিনি ১২টি উপন্যাস লিখেছেন। তার উপন্যাসসমূহ উপন্যাসসমগ্র ১ (২০০১), উপন্যাসসমগ্র ২ (২০০২) এবং উপন্যাসসমগ্র ৩ (২০০৩) বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬) নামে ১টি মৌলিক ছোটগল্পের বই লিখেছেন। এছাড়াও তার ৮টি কিশোরসাহিত্য, এবং ৮টি ভাষাবিজ্ঞান বিষয়ক বই রয়েছে। কবিতা হুমায়ুন আজাদ কবিতার দ্বারা লেখালেখিতে হাত দিয়েছিলেন, তিনি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন তখনই তিনি মূলত কবিতা রচনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়-জীবন শেষ করার পরেও ১৯৭২ সাল পর্যন্ত তিনি কবিতা লিখতে থাকেন। ষাটের দশকের পরিব্যাপ্ত হতাশা, দ্রোহ, ঘৃণা, বিবমিষা, প্রেম ইত্যাদি তার কবিতার প্রধান বিষয় ছিলো। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম অলৌকিক ইস্টিমার যা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭৩-এর জানুয়ারিতে। কাব্যগ্রন্থটি তিনি উৎসর্গ করেন ১৯৬৮-১৯৭২ সালে তার নিজেরই কাটানো রাত-দিনগুলোর উদ্দেশ্যে। তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ জ্বলো চিতাবাঘ প্রথম প্রকাশিত হয় মার্চ ১৯৮০ সালে। ১৯৮৫ সালে প্রকাশিত সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে, তৃতীয় কাব্যগ্রন্থটি তিনি সমসাময়িক দুই বাংলাদেশী লেখক হুমায়ূন আহমেদ এবং ইমদাদুল হক মিলনকে উৎসর্গ করেছেন। প্রত্যুত্তরে ইমদাদুল হক মিলন তার বনমানুষ উপন্যাসটি হুমায়ুন আজাদকে উৎসর্গ করেন। ১৯৮৭ সালের মার্চে প্রকাশিত হয় তার চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ যতোই গভীরে যাই মধু যতোই ওপরে যাই নীল। তার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ আমি বেঁচে ছিলাম অন্যদের সময়ে প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি ১৯৯০ সালে। এর আট বছর পর ফেব্রুয়ারি ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত হয় তার ষষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্দু। কাব্যগ্রন্থটি আজাদ তার 'প্রিয় মৃতদের জন্য' উৎসর্গ করেন। সপ্তম এবং শেষ কাব্যগ্রন্থ পেরোনোর কিছু নেই প্রকাশিত হয় ফেব্রুয়ারি, ২০০৪ সালে। জীবদ্দশায় তার সাতটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তবে আজাদের মৃত্যুর পর ফেব্রুয়ারি, ২০০৫ সালে এই সাতটি কাব্যগ্রন্থ সহ আরো কিছু অগ্রন্থিত ও অনূদিত কবিতা নিয়ে কাব্যসমগ্র প্রকাশিত হয়। নব্বইয়ের দশক থেকে ঢাকার আগামী প্রকাশনী তার গ্রন্থাবলীর প্রধান প্রকাশক ছিল। গল্প হুমায়ুন আজাদ সর্বপ্রথম একটি ছোটগল্প লিখেছিলেন এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়া শেষ করে স্কটল্যান্ড থেকে এসে, গল্পটির নাম তিনি দিয়েছিলেন অনবরত তুষারপাত। এই গল্পটি তিনি পরে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাতে ১৯৭৯ সালে প্রকাশ করেছিলেন। এই গল্পটি সহ ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত লেখা আরও পাঁচটি গল্প তিনি যাদুকরের মৃত্যু (১৯৯৬) বইতে সংকলিত করেছিলেন। এরপর তিনি শিশুকিশোরদের জন্য আরো তিনটি গল্প লিখেন যেগুলো তিনি কিছু শিশুতোষ কবিতা সহ বুকপকেটে জোনাকি পোকা (১৯৯৩) গ্রন্থে সংকলন করেন। তিনি বইয়ের শুরুর দিকে বলেছিলেন, উপন্যাস মূলত কবি, গবেষক ও প্রাবন্ধিক হলেও হুমায়ূন আজাদ ১৯৯০-এর দশকে ঔপন্যাসিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ২০০৪ সালে মৃত্যু অবধি তার প্রকাশিত উপন্যাসের সংখ্যা ছিলো ১২টি। ১৯৯৪ সালে তিনি ঔপন্যাসিক হিসেবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করেন প্রথম উপন্যাস ছাপ্পান্নো হাজার বর্গমাইল-এর মধ্যে দিয়ে। বাংলাদেশের সামরিক শাসন প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাসটি তিনি উৎসর্গ করেছেন উপন্যাসের প্রধান চরিত্র রাশেদকে, তার বাবার নামও ছিলো রাশেদ, তিনি উপন্যাসের উৎসর্গ পাতায় এভাবে লিখেছিলেন, ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত হয় নারী-পুরুষের মধ্যেকার শারীরিক ও হৃদয়সম্পর্কের নানা আবর্তন এবং পরিণতির আখ্যানমূলক উপন্যাস সব কিছু ভেঙে পড়ে। সব কিছু ভেঙে পড়ের পর তিনি মানুষ হিসেবে আমার অপরাধসমূহ উপন্যাস লিখেছিলেন যেটি ছিলো একজন সরকারি কর্মকর্তার তার বন্ধুর স্ত্রীকে বিয়ে করা নিয়ে এবং তিনি এ-উপন্যাসটি বাংলাদেশের খ্যাতিমান আইনজীবী ব্যারিস্টার আমির উল ইসলামকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত উপন্যাস কবি অথবা দণ্ডিত অপুরুষ-এ হুমায়ুন আজাদ হাসান রশিদ নামের একজন কল্পিত বাঙালি কবির একজন বিবাহিত নারীর সাথে বিয়ে ছাড়া একত্রবাসের বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন। ২০০২ সালে প্রকাশিত ১০,০০০, এবং আরো ১টি ধর্ষণ ছিলো বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজের একটি ধর্ষিত মেয়ের জীবন নিয়ে যে তার ধর্ষণের ফসল বাচ্চাকে হত্যা করে। ২০০৪ সালে প্রকাশিত পাক সার জমিন সাদ বাদ ছিলো ধর্মীয় মৌলবাদ নিয়ে এবং একটি খুনের স্বপ্ন উপন্যাস ছিলো একজন তরুণের অপর একটি তরুণীর জন্য ভালোবাসার কাহিনী নিয়ে। পাক সার জমিন সাদ বাদে তিনি মৌলবাদে দীক্ষিত এক পুরুষকে সবার শেষে প্রেমের কাছে পরাজিত করান। দেখান যে কণকলতা নামের তরুণীর জন্য উপন্যাসের প্রধান নায়ক অপরাধ-জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে আর একটি খুনের স্বপ্নতে তিনি নায়িকা সুফিয়ার জন্য নায়কের অন্ধ প্রেমকেই করে তুলেছিলেন প্রধান উপজীব্য বিষয় যে নায়ক পরে নায়িকাকেই খুন করার চিন্তা করে। একটি খুনের স্বপ্ন উপন্যাসটি হুমায়ুন আজাদ তার নিজেরই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের (১৯৬৪-১৯৬৮) স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে লিখেছিলেন। হুমায়ুন আজাদ ফালি ফালি ক’রে কাটা চাঁদ (২০০১) উপন্যাসে শিরিন নামের এক কল্পিত ব্যক্তিত্ব সম্পন্না নারীর অবতারণা করেছেন এই মনে করে যে মানসিক সম্পর্ক রাখা একটি গভীর আস্থার ব্যাপার। উপন্যাসটি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী নারীবাদের একটি চিত্র তুলে ধরে। শিরিনের স্বামী রয়েছে যার নাম দেলোয়ার কিন্তু সে একদা খালেদ নামের এক পুরুষের সঙ্গে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় নিজের এক প্রকারের সম্মতিতেই। শিরিন পরে তার স্বামী দেলোয়ারের সঙ্গে বাস করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয় এবং খালেদ তাকে প্রেম প্রস্তাব দিলে সেটাও প্রত্যাখ্যান করে। এছাড়াও নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটি ছিলো একজন কিশোর-বালকের কাহিনীর ভেতর দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রচিত উপন্যাস, যেখানে কিশোর-বালকটি গ্রামীণ পরিবেশে বড় হয়। নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটিকে তিনি বাংলাসাহিত্যের অন্যতম প্রধান উপন্যাস মনে করতেন। তুলনা করতে গিয়ে এই উপন্যাসকে বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালীর উপন্যাসের তুলনায় অনেক ভালো উপন্যাস বলে মনে করেছিলেন। পথের পাঁচালীর অপু চরিত্রের সঙ্গে নিজের জীবনের মধুর জলকদর চরিত্রকে তুলনা করতে গিয়ে জলকদর চরিত্রকেই অনেক বেশি শিল্পোত্তীর্ণ চরিত্র মন্তব্য করেছিলেন তিনি। তিনি আরও বলেছিলেন যে, জলকদরের ভিতর দিয়ে তিনি নিজের কৈশোরজীবনকে দেখেছিলেন। নিজের সঙ্গে নিজের জীবনের মধু উপন্যাসটির আগে কিশোরদের জন্য হুমায়ুন আজাদ এর আগে আব্বুকে মনে পড়ে নামে একটি উপন্যাসিকা লিখেছিলেন যেটা ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো এবং আমাদের শহরে একদল দেবদূত নামের আরো একটি কিশোর-উপন্যাসিকা ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। ভাষাবিজ্ঞান গবেষণা ১৯৬০-এর দশকে আজাদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন পশ্চিমের ভাষাবিজ্ঞানী চম্‌স্কি-উদ্ভাবিত রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ তত্ত্বটি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আজাদ এই তত্ত্বের কাঠামোর ওপর ভিত্তি করে বাংলা ভাষার রূপমূলতত্ত্ব তথা বাক্যতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন। এর মাধ্যমে বাংলার ভাষাবিষয়ক গবেষণায় আধুনিক ভাষাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূত্রপাত ঘটে। তার পিএইচডি অভিসন্দর্ভের নাম ছিল প্রোনোমিনালাইজেশান ইন বেঙলি (অর্থাৎ বাংলা সর্বনামীয়করণ)। পরবর্তীতে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে একই শিরোনামের এটি ইংরেজি ভাষায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দি ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড থেকে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি বাংলা ভাষার বাক্যতত্ত্বের ওপর বাক্যতত্ত্ব নামে একটি বই বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশ করেন। একই সালে বাংলা একাডেমি থেকে তিনি বাঙলা ভাষা শিরোনামে দুই খণ্ডের একটি দালীলিক সঙ্কলন প্রকাশ করেন, যাতে বাংলা ভাষার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ওপর বিগত শতাধিক বছরের বিভিন্ন ভাষাবিদ ও সাহিত্যিকের লেখা গুরুত্বপূর্ণ ভাষাতাত্ত্বিক রচনা সংকলিত হয়। এই তিনটি গ্রন্থ বাংলা ভাষাবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হিসাবে বিবেচিত। তিনি পরবর্তীকালে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান (১৯৮৮) ও অর্থবিজ্ঞান (১৯৯৯) শিরোনামে দুইটি সংক্ষিপ্ত প্রাথমিক পাঠ্যপুস্তক লেখেন। ১৯৯০-এর দশকের শেষের দিকে তিনি বাংলা ভাষার একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রচনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তবে মৃত্যুর কারণে তার এই আগ্রহ বাস্তবায়িত হয় নি। প্রবন্ধ ১৯৭৬ সালে প্রথম প্রকাশিত 'লাল নীল দীপাবলি বা বাঙলা সাহিত্যের জীবনী' বইটি ছিলো হুমায়ুন আজাদের দ্বিতীয় প্রবন্ধ, এর আগে তিনি 'রবীন্দ্রপ্রবন্ধ: রাষ্ট্র ও সমাজচিন্তা' (১৯৭৩) নামের একটি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। ১৯৯২ সালে প্রকাশিত নারী স্বাধীন বাংলাদেশে নারীবাদ বিষয়ক প্রথম বই। এই প্রবন্ধগ্রন্থের জন্য তিনি তীব্র সমালোচিত হন। ফলে ১৯৯৫ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং প্রায় সাড়ে চার বছর পরে ২০০০ সালের ৭ মার্চ উচ্চবিচারালয় বইটির নিষিদ্ধকরণ আদেশ বাতিল করে। ফরাসি নারীবাদী দার্শনিক সিমোন দ্যা বোভোয়ারের ১৯৪৯ সালের গ্রন্থ দ্বিতীয় লিঙ্গ হুমায়ুন আজাদ ২০০১ সালে বাংলায় অনুবাদ করেন। সিমোন দ্যা বোভোয়ারের লেখা তাকে নারীবাদের প্রতি অনেক আকৃষ্ট করেছিল। ফেব্রুয়ারি ২০০৩ সালে প্রকাশিত আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম গ্রন্থে তিনি তার স্বপ্নের বাংলাদেশের করুণ অবস্থা দেখে ব্যথিত হয়েছিলেন। বইটিতে তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে তিনি যেরকম প্রগতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন তার স্বপ্ন আগেই ভেঙে গেছে, তিনি বাংলাদেশের সমাজের অধঃপতন খুবই আক্ষেপের সঙ্গে প্রকাশ করেছিলেন। তাছাড়া ২০০০ সালে প্রকাশিত মহাবিশ্ব ছিলো একটি বিজ্ঞান-প্রবন্ধ। ব্যক্তিগত জীবন হুমায়ুন আজাদ ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর পড়ার সময় লতিফা কোহিনুর নামের এক তরুণীর সঙ্গে পরিচিত হন এবং ১৯৭৫ সালের ১২ই অক্টোবর তাদের বিয়ে হয় টেলিফোনে; আজাদ তখন স্কটল্যান্ডে আর লতিফা বাংলাদেশে ছিলেন। তাদের দুই কন্যা মৌলি আজাদ, স্মিতা আজাদ এবং এক পুত্র অনন্য আজাদ। জ্যেষ্ঠ কন্যা মৌলি আজাদ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সহকারী সচিব হিসাবে দায়িত্বরত। বিশ্বাস ও দর্শন আজাদ ব্যক্তিগতভাবে ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন না এবং তিনি সরাসরি ধর্মের সমালোচনা করে লেখেননি তবে ধর্মীয় মৌলবাদের প্রত্যক্ষ বিরোধিতা করতেন এবং এটি বিভিন্ন ভাবে তার লেখায় প্রকাশ পেয়েছে। তিনি বাংলাদেশের সমাজে চলা রক্ষণশীলতা এবং প্রথার বিরোধিতা করতেন। সর্বপ্রথম গুস্তাভ ফ্লবেয়ারের আদলে ১৯৯১ প্রকাশিত প্রবচনগুচ্ছ ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। হুমায়ুন আজাদের লেখালেখিতে উদারপন্থা, বিজ্ঞানমনস্কতার এবং একই সঙ্গে দ্রোহের ছাপ স্পষ্ট ছিলো। একটি বৈষম্যহীন আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার স্বপ্ন তিনি দেখতেন। তিনি তার লেখনীতে প্রকাশ করেছিলেন, রাজনৈতিক-সামাজিক সমালোচনা ১৯৮০-র দশকের শেষভাগ থেকে হুমায়ুন আজাদ সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। এ সময় তিনি খবরের কাগজ নামীয় সাপ্তাহিক পত্রিকায় সম্পাদকীয় নিবন্ধ লিখতে শুরু করেন। সামরিক শাসনের বিরোধিতা দিয়ে তার রাজনৈতিক লেখালিখির সূত্রপাত। মাতাল তরণী (১৯৯২) ছিলো তার রাজনৈতিক-সমাজ সমালোচনার সংকলনগ্রন্থ। হত্যা প্রচেষ্টা ২০০৩ সালে ইত্তেফাক পত্রিকার ঈদ সংখ্যায় হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছিল। ২০০৪-এর একুশে বইমেলাতে উপন্যাসটি বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে দেশের মৌলবাদী গোষ্ঠী তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়, এবং বিভিন্ন স্থানে হুমায়ুন আজাদের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালায়। তিনি এই উপন্যাসটিতে ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে পরোক্ষভাবে ফ্যাসিবাদী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ করেন এবং এর কঠোর সমালোচনা করেন, উপন্যাসটি তিনি ১৯৭১ সালেকে উৎসর্গ করে লিখেছিলেন। তারই জের ধরে ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ফেব্রুয়ারি বাংলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের দ্বারা আক্রমণের শিকার হন তিনি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নির্দেশে আজাদ প্রথমে বাংলাদেশের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, ঢাকাতে চিকিৎসা লাভ করেন যেখানে প্রধানমন্ত্রী তাকে দেখতে গিয়েছিলেন, পরে হুমায়ুন আজাদকে সরকারিভাবেই থাইল্যান্ডে পাঠানো হয় এবং তিনি সেখান থেকে অনেকটা সুস্থ হয়ে ফিরে আসেন বাংলাদেশে। হুমায়ুন আজাদের উপর কারা হামলা করেছিলো তা অনেক দিন ধরে অজানা ছিলো; জামাত-উল-মুজাহিদীন বাংলাদেশ সংক্ষেপে জেএমবি নামক ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের একজন শীর্ষনেতা শায়খ আব্দুর রহমান পরবর্তীতে হুমায়ুন আজাদ এবং একইসাথে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম ইউনুসকে হত্যার নির্দেশ দেবার কথা স্বীকার করেছিলো। এই হত্যা প্রচেষ্টার মামলা দ্রুত শেষ করার জন্য উচ্চ আদালত ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে আদেশ প্রদান করে। সমালোচনা ২০০৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সংসদ সদস্য দেলোয়ার হোসেন সাঈদী জাতীয় সংসদে হুমায়ুন আজাদের পাক সার জমিন সাদ বাদ (২০০৪) উপন্যাসটিকে ইসলামবিরোধী আখ্যায়িত করে বিভিন্ন সমাবেশে বক্তব্য দেন এবং এ ধরনের লেখকদের লেখা বন্ধ করতে ব্ল্যাসফেমি আইন (ধর্ম অবমাননা বিরোধী আইন) প্রণয়নের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এই উপন্যাসটিতে হুমায়ুন আজাদ তীব্র রূপক-ঋণাত্মক ভাবে বাংলাদেশের একটি কাল্পনিক মৌলবাদী সংগঠনের চিত্র তুলে ধরেছিলেন। পুরস্কার এবং সম্মাননা মৃত্যু ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের উপর কাজ করার জন্য জার্মান সরকারের নিকট একটি বৃত্তির আবেদন করেছিলেন। ২০০৪-এর ৭ আগস্ট জার্মান কবি হাইনরিখ হাইনের ওপর গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ আগস্ট রাতে একটি অনুষ্ঠান থেকে প্রত্যাবর্তনের পর আবাসস্থলে আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। ১২ আগস্ট আবাসস্থলের নিজ কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদের মৃত্যুর পর জার্মান সরকারের তত্ত্বাবধানে মিউনিখে তার নিজ বাসভবনে পাওয়া সব জিনিসপত্র ঢাকায় তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। ওই জিনিসপত্রের ভেতরেই পাওয়া যায় তার হাতের লেখা তিনটি চিঠি। চিঠি তিনটি আলাদা তিনটি পোস্ট কার্ডে লিখেছেন বড় মেয়ে মৌলিকে, ছোট মেয়ে স্মিতাকে এবং একমাত্র ছেলে অনন্য আজাদকে। অনুমান করা হয়, ওই লেখার অক্ষরগুলোই ছিল তার জীবনের শেষ লেখা। তার মরদেহ কফিনে করে জার্মানি থেকে ঢাকায় আনা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাযার নামাজ শেষে তার মরদেহ রাড়িখালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয় এবং পরে তার কবর সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে একটি বইয়ের মত করে বানানো হয়। টীকা তথ্যসূত্র উৎস বহিঃসংযোগ ১৯৪৭-এ জন্ম ২০০৪-এ মৃত্যু বাংলা ভাষার লেখক বাঙালি কবি বাঙালি ঔপন্যাসিক বাঙালি ছোটগল্পকার বাঙালি লেখক বাংলাদেশী কবি বাংলাদেশী প্রাবন্ধিক বাংলাদেশী পুরুষ লেখক বাংলাদেশী ভাষাবিজ্ঞানী আধুনিক কবি নারীবাদী লেখক সামগ্রিক অবদানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক বিজয়ী ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুন্সীগঞ্জ জেলার লেখক ২০শ শতাব্দীর ঔপন্যাসিক ২০শ শতাব্দীর কবি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী কবি ২০শ শতাব্দীর প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর বাঙালি ঔপন্যাসিক বাংলাদেশী নারীবাদী লেখক বাংলাদেশী পুরুষ ঔপন্যাসিক বিক্রমপুরের ব্যক্তি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাংলাদেশী পুরুষ কবি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী লেখক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী
https://en.wikipedia.org/wiki/Humayun_Azad
Humayun Azad
Humayun Azad (28 April 1947 – 12 August 2004) was a Bangladeshi poet, novelist, short-story writer, critic, linguist, columnist and professor of Dhaka University. He wrote more than sixty titles. He was awarded the Bangla Academy Literary Award in 1986 for his contributions to Bengali linguistics. In 2012, the government of Bangladesh honored him with Ekushey Padak posthumously for his contributions to Bengali literature.
1528
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A5%20%E0%A6%A0%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%B0
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (৭ মে ১৮৬১ – ৭ আগস্ট ১৯৪১; ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ – ২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একাধারে বাঙালি কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথকে “গুরুদেব”, “কবিগুরু” ও “বিশ্বকবি” অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় বা মৃত্যুর অব্যবহিত পরে প্রকাশিত হয়। তার সর্বমোট ৯৫টি ছোটগল্প ও ১৯১৫টি গান যথাক্রমে গল্পগুচ্ছ ও গীতবিতান সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় প্রকাশিত ও গ্রন্থাকারে অপ্রকাশিত রচনা ৩২ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলী নামে প্রকাশিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের যাবতীয় পত্রসাহিত্য উনিশ খণ্ডে চিঠিপত্র ও চারটি পৃথক গ্রন্থে প্রকাশিত। এছাড়া তিনি প্রায় দুই হাজার ছবি এঁকেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের রচনা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি প্রথম অ-ইউরোপীয় এবং প্রথম এশীয় হিসেবে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার এক ধনাঢ্য ও সংস্কৃতিবান ব্রাহ্ম পিরালী ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতৃপুরুষের আবাসভূমি বাংলাদেশের খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার অন্তর্গত ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ গ্রামে। বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার "অভিলাষ" কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন।<ref name = sarbanajer8>সর্বজনের রবীন্দ্রনাথ, পৃ. ৮</ref> ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়। ১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'নাইট' উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়। রবীন্দ্রনাথের কাব্যসাহিত্যের বৈশিষ্ট্য ভাবগভীরতা, গীতিধর্মিতা চিত্ররূপময়তা, অধ্যাত্মচেতনা, ঐতিহ্যপ্রীতি, প্রকৃতিপ্রেম, মানবপ্রেম, স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম, রোম্যান্টিক সৌন্দর্যচেতনা, ভাব, ভাষা, ছন্দ ও আঙ্গিকের বৈচিত্র্য, বাস্তবচেতনা ও প্রগতিচেতনা। রবীন্দ্রনাথের গদ্যভাষাও কাব্যিক। ভারতের ধ্রুপদি ও লৌকিক সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য বিজ্ঞানচেতনা ও শিল্পদর্শন তার রচনায় গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। কথাসাহিত্য ও প্রবন্ধের মাধ্যমে তিনি সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে নিজ মতামত প্রকাশ করেছিলেন। সমাজকল্যাণের উপায় হিসেবে তিনি গ্রামোন্নয়ন ও গ্রামের দরিদ্র মানুষ কে শিক্ষিত করে তোলার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। এর পাশাপাশি সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন। রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ও আমার সোনার বাংলা গানদুটি যথাক্রমে ভারত প্রজাতন্ত্র ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। মনে করা হয় শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত শ্রীলঙ্কা মাতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দ্বারা অনুপ্রাণিত ও উৎসাহিত হয়ে লেখা হয়েছে। পারিবারিক ইতিহাস ঠাকুরদের আদি পদবী কুশারী। কুশারীরা ভট্টনারায়ণের পুত্র দীন কুশারীর বংশজাত। দীন কুশারী মহারাজ ক্ষিতিশূরের নিকট কুশ (বর্ধমান জেলা) নামক গ্রাম পেয়ে গ্রামের অধিবাসী হন ও কুশারী নামে খ্যাত হন। রবীন্দ্রনাথের জীবনীকার প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায় তার রবীন্দ্রজীবনী ও রবীন্দ্রসাহিত্য-প্রবেশক গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে ঠাকুর পরিবারের বংশপরিচয় দিতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, পরবর্তীকালে কুশারীরা বঙ্গদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে- যশোরের ঘাটভোগ-দমুরহুদা থেকে ঢাকার কয়কীর্তন থেকে বাঁকুড়ার সোনামুখী থেকে খুলনার পিঠাভোগ পর্যন্ত। পিঠাভোগের কুশারীরাই এদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও অবস্থাপন্ন হয়ে ওঠে। জীবন প্রথম জীবন (১৮৬১–১৯০১) শৈশব ও কৈশোর (১৮৬১ - ১৮৭৮) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতার জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দে, সোমবার জন্মগ্ৰহণ করেছিলেন। তার পিতা ছিলেন ব্রাহ্ম ধর্মগুরু দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৭–১৯০৫) এবং মাতা ছিলেন সারদাসুন্দরী দেবী (১৮২৬–১৮৭৫)। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন পিতা ও মাতার চতুর্দশ সন্তান। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ছিল ব্রাহ্ম আদিধর্ম মতবাদের প্রবক্তা।"দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর", রবিজীবনী, প্রথম খণ্ড, প্রশান্তকুমার পাল, পৃ. ১৯ ১৮৭৫ সালে মাত্র চোদ্দ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের মাতৃবিয়োগ ঘটে। পিতা দেবেন্দ্রনাথ দেশভ্রমণের নেশায় বছরের অধিকাংশ সময় কলকাতার বাইরে অতিবাহিত করতেন। তাই ধনাঢ্য পরিবারের সন্তান হয়েও রবীন্দ্রনাথের ছেলেবেলা কেটেছিল ভৃত্যদের অনুশাসনে।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনস্মৃতি (অধ্যায়: "ভৃত্যরাজক তন্ত্র"), বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগ, কলকাতা, পৃ. ২১-২৪ শৈশবে রবীন্দ্রনাথ কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্ম্যাল স্কুল, বেঙ্গল অ্যাকাডেমি এবং সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজিয়েট স্কুলে কিছুদিন করে পড়াশোনা করেছিলেন। কিন্তু বিদ্যালয়-শিক্ষায় অনাগ্রহী হওয়ায় বাড়িতেই গৃহশিক্ষক রেখে তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ছেলেবেলায় জোড়াসাঁকোর বাড়িতে অথবা বোলপুর ও পানিহাটির বাগানবাড়িতে প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে বেশি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৭৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি, ১২ বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথের উপনয়ন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর তিনি কয়েক মাসের জন্য পিতার সঙ্গে দেশভ্রমণে বের হন। প্রথমে তারা আসেন শান্তিনিকেতনে। এরপর পাঞ্জাবের অমৃতসরে কিছুকাল কাটিয়ে শিখদের উপাসনা পদ্ধতি পরিদর্শন করেন। শেষে পুত্রকে নিয়ে দেবেন্দ্রনাথ চলে যান পাঞ্জাবেরই (অধুনা ভারতের হিমাচল প্রদেশ রাজ্যে অবস্থিত) ডালহৌসি শৈলশহরের নিকট বক্রোটায়। এখানকার বক্রোটা বাংলোয় বসে রবীন্দ্রনাথ পিতার কাছ থেকে সংস্কৃত ব্যাকরণ, ইংরেজি, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ও ইতিহাসের নিয়মিত পাঠ নিতে শুরু করেন। দেবেন্দ্রনাথ তাকে বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের জীবনী, কালিদাস রচিত ধ্রুপদি সংস্কৃত কাব্য ও নাটক এবং উপনিষদ্‌ পাঠেও উৎসাহিত করতেন। ১৮৭৭ সালে ভারতী পত্রিকায় তরুণ রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রচনা প্রকাশিত হয়। এগুলি হল মাইকেল মধুসূদনের "মেঘনাদবধ কাব্যের সমালোচনা", ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী এবং "ভিখারিণী" ও "করুণা" নামে দুটি গল্প। এর মধ্যে ভানুসিংহ ঠাকুরের পদাবলী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই কবিতাগুলি রাধা-কৃষ্ণ বিষয়ক পদাবলির অনুকরণে "ভানুসিংহ" ভণিতায় রচিত। রবীন্দ্রনাথের "ভিখারিণী" গল্পটি (১৮৭৭) বাংলা সাহিত্যের প্রথম ছোটগল্প। ১৮৭৮ সালে প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রনাথের প্রথম কাব্যগ্রন্থ তথা প্রথম মুদ্রিত গ্রন্থ কবিকাহিনী। এছাড়া এই পর্বে তিনি রচনা করেছিলেন সন্ধ্যাসংগীত (১৮৮২) কাব্যগ্রন্থটি। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কবিতা "নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ" এই কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। যৌবন (১৮৭৮-১৯০১) ১৮৭৮ সালে ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডে যান রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে তিনি ব্রাইটনের একটি পাবলিক স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮৭৯ সালে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনে আইনবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। কিন্তু সাহিত্যচর্চার আকর্ষণে সেই পড়াশোনা তিনি সমাপ্ত করতে পারেননি। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন শেকসপিয়র ও অন্যান্য ইংরেজ সাহিত্যিকদের রচনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। এই সময় তিনি বিশেষ মনোযোগ সহকারে পাঠ করেন রিলিজিও মেদিচি, কোরিওলেনাস এবং অ্যান্টনি অ্যান্ড ক্লিওপেট্রা। এই সময় তার ইংল্যান্ডবাসের অভিজ্ঞতার কথা ভারতী পত্রিকায় পত্রাকারে পাঠাতেন রবীন্দ্রনাথ। উক্ত পত্রিকায় এই লেখাগুলি জ্যেষ্ঠভ্রাতা দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমালোচনাসহ প্রকাশিত হত য়ুরোপযাত্রী কোনো বঙ্গীয় যুবকের পত্রধারা নামে। ১৮৮১ সালে সেই পত্রাবলি য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র নামে গ্রন্থাকারে ছাপা হয়। এটিই ছিল রবীন্দ্রনাথের প্রথম গদ্যগ্রন্থ তথা প্রথম চলিত ভাষায় লেখা গ্রন্থ। অবশেষে ১৮৮০ সালে প্রায় দেড় বছর ইংল্যান্ডে কাটিয়ে কোনো ডিগ্রি না নিয়ে এবং ব্যারিস্টারি পড়া শুরু না করেই তিনি দেশে ফিরে আসেন। ১৮৮৩ সালের ৯ ডিসেম্বর (২৪ অগ্রহায়ণ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) ঠাকুরবাড়ির অধস্তন কর্মচারী বেণীমাধব রায়চৌধুরীর কন্যা ভবতারিণীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের বিবাহ সম্পন্ন হয়। বিবাহিত জীবনে ভবতারিণীর নামকরণ হয়েছিল মৃণালিনী দেবী (১৮৭৩–১৯০২ )। রবীন্দ্রনাথ ও মৃণালিনীর সন্তান ছিলেন পাঁচ জন: মাধুরীলতা (১৮৮৬–১৯১৮), রথীন্দ্রনাথ (১৮৮৮–১৯৬১), রেণুকা (১৮৯১–১৯০৩), মীরা (অতসী)(১৮৯৪–১৯৬৯) এবং শমীন্দ্রনাথ (১৮৯৬–১৯০৭)। এঁদের মধ্যে অতি অল্প বয়সেই রেণুকা ও শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু ঘটে। ১৮৯১ সাল থেকে পিতার আদেশে নদিয়া (নদিয়ার উক্ত অংশটি অধুনা বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলা), পাবনা ও রাজশাহী জেলা এবং ওড়িশার জমিদারি গুলির তদারকি শুরু করেন রবীন্দ্রনাথ। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে রবীন্দ্রনাথ দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেছিলেন। জমিদার রবীন্দ্রনাথ শিলাইদহে "পদ্মা" নামে একটি বিলাসবহুল পারিবারিক বজরায় চড়ে প্রজাবর্গের কাছে খাজনা আদায় ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে যেতেন। গ্রামবাসীরাও তার সম্মানে ভোজসভার আয়োজন করত। ১৮৯০ সালে রবীন্দ্রনাথের অপর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ মানসী প্রকাশিত হয়। কুড়ি থেকে ত্রিশ বছর বয়সের মধ্যে তার আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ ও গীতিসংকলন প্রকাশিত হয়েছিল। এগুলি হলো প্রভাতসংগীত, শৈশবসঙ্গীত, রবিচ্ছায়া, কড়ি ও কোমল ইত্যাদি। ১৮৯১ থেকে ১৮৯৫ সাল পর্যন্ত নিজের সম্পাদিত সাধনা পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু উৎকৃষ্ট রচনা প্রকাশিত হয়। তার সাহিত্য জীবনের এই পর্যায়টি তাই "সাধনা পর্যায়" নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গল্পগুচ্ছ গ্রন্থের প্রথম চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই এই পর্যায়ের রচনা। এই ছোটগল্প গুলিতে তিনি বাংলার গ্রামীণ জনজীবনের এক আবেগময় ও শ্লেষাত্মক চিত্র এঁকেছিলেন। মধ্য জীবন (১৯০১–১৯৩২) ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ সপরিবারে শিলাইদহ ছেড়ে চলে আসেন বীরভূম জেলার বোলপুর শহরের উপকণ্ঠে শান্তিনিকেতনে। এখানে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮৮৮ সালে একটি আশ্রম ও ১৮৯১ সালে একটি ব্রহ্মমন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আশ্রমের আম্রকুঞ্জ উদ্যানে একটি গ্রন্থাগার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ চালু করলেন "ব্রহ্মবিদ্যালয়" বা "ব্রহ্মচর্যাশ্র" নামে একটি পরীক্ষামূলক স্কুল। ১৯০২ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর মাত্র ত্রিশ বছর বয়সে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবী মারা যান। এরপর ১৯০৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর কন্যা রেণুকা, ১৯০৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বর কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়। এসবের মধ্যেই ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ তার জ্যেষ্ঠপুত্র রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠান আধুনিক কৃষি ও গোপালন বিদ্যা শেখার জন্য। ১৯০৭ সালে কনিষ্ঠা জামাতা নগেন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়কেও কৃষিবিজ্ঞান শেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সময় শান্তিনিকেতনের ব্রহ্মবিদ্যালয়ে অর্থসংকট তীব্র হয়ে ওঠে। পাশাপাশি পুত্র ও জামাতার বিদেশে পড়াশোনার ব্যয়ভারও রবীন্দ্রনাথকে বহন করতে হয়। এমতাবস্থায় রবীন্দ্রনাথ স্ত্রী'র গয়না ও পুরীর বসতবাড়ি বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন। ইতোমধ্যেই অবশ্য বাংলা ও বহির্বঙ্গে রবীন্দ্রনাথের কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছিল। ১৯০১ সালে নৈবেদ্য ও ১৯০৬ সালে খেয়া কাব্যগ্রন্থের পর ১৯১০ সালে তার বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হয়।রবীন্দ্রজীবনকথা, পৃ. ২০২-০৪ ১৯১৩ সালে গীতাঞ্জলি (ইংরেজি অনুবাদ, ১৯১২) কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য সুইডিশ অ্যাকাডেমি রবীন্দ্রনাথকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদান করে। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে 'স্যার' উপাধি (নাইটহুড) দেয়। পরে ১৯১৯(ইং) সনে তিনি জালিয়ানওয়ালাবাগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ব্রিটিশপ্রদত্ত নাইটহুড উপাধি ঘৃণাভরে ত্যাগ করেন। ১৯২১ সালে শান্তিনিকেতনের অদূরে সুরুল গ্রামে মার্কিন কৃষি-অর্থনীতিবিদ লেনার্ড নাইট এলমহার্স্ট, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং শান্তিনিকেতনের আরও কয়েকজন শিক্ষক ও ছাত্রের সহায়তায় রবীন্দ্রনাথ "পল্লীসংগঠন কেন্দ্র" নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল কৃষির উন্নতিসাধন, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি রোগ নিবারণ, সমবায় প্রথায় ধর্মগোলা স্থাপন, চিকিৎসার সুব্যবস্থা এবং সাধারণ গ্রামবাসীদের মধ্যে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি করা। ১৯২৩ সালে রবীন্দ্রনাথ এই সংস্থার নাম পরিবর্তন করে রাখেন "শ্রীনিকেতন"। শ্রীনিকেতন ছিল মহাত্মা গান্ধীর প্রতীক ও প্রতিবাদসর্বস্ব স্বরাজ আন্দোলনের একটি বিকল্প ব্যবস্থা। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথ, গান্ধীর আন্দোলনের পন্থা-বিরোধী ছিলেন। পরবর্তীকালে দেশ ও বিদেশের একাধিক বিশেষজ্ঞ, দাতা ও অন্যান্য পদাধিকারীরা শ্রীনিকেতনের জন্য আর্থিক ও অন্যান্য সাহায্য পাঠিয়েছিলেন। ১৯৩০-এর দশকের প্রথম ভাগে একাধিক বক্তৃতা, গান ও কবিতায় রবীন্দ্রনাথ ভারতীয় সমাজের বর্ণাশ্রম প্রথা ও অস্পৃশ্যতার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। শেষ জীবন (১৯৩২-১৯৪১) জীবনের শেষ দশকে (১৯৩২-১৯৪১) রবীন্দ্রনাথের মোট পঞ্চাশটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তার এই সময়কার কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), শ্যামলী ও পত্রপুট (১৯৩৬) – এই গদ্যকবিতা সংকলন তিনটি। জীবনের এই পর্বে সাহিত্যের নানা শাখায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। তার এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফসল হলো তার একাধিক গদ্যগীতিকা ও নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬; চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) কাব্যনাট্যের নৃত্যাভিনয়-উপযোগী রূপ) , শ্যামা (১৯৩৯) ও চণ্ডালিকা (১৯৩৯) নৃত্যনাট্যত্রয়ী। এছাড়া রবীন্দ্রনাথ তার শেষ তিনটি উপন্যাসও (দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)) এই পর্বে রচনা করেছিলেন। তার অধিকাংশ ছবি জীবনের এই পর্বেই আঁকা। এর সঙ্গে সঙ্গে জীবনের শেষ বছরগুলিতে বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত হয় তার বিজ্ঞান-বিষয়ক প্রবন্ধ সংকলন বিশ্বপরিচয়। এই গ্রন্থে তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানের আধুনিকতম সিদ্ধান্তগুলি সরল বাংলা গদ্যে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। পদার্থবিদ্যা ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কে তার অর্জিত জ্ঞানের প্রভাব পরিলক্ষিত হয় তার কাব্যেও। সে (১৯৩৭), তিন সঙ্গী (১৯৪০) ও গল্পসল্প (১৯৪১) গল্পসংকলন তিনটিতে তার বিজ্ঞানী চরিত্র-কেন্দ্রিক একাধিক গল্প সংকলিত হয়েছে। জীবনের এই পর্বে ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্রতম প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩৪ সালে ব্রিটিশ বিহার প্রদেশে ভূমিকম্পে শতাধিক মানুষের মৃত্যুকে গান্ধীজি "ঈশ্বরের রোষ" বলে অভিহিত করলে, রবীন্দ্রনাথ গান্ধীজির এহেন বক্তব্যকে অবৈজ্ঞানিক বলে চিহ্নিত করেন এবং প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন। কলকাতার সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থা ও ব্রিটিশ বাংলা প্রদেশের দ্রুত আর্থসামাজিক অবক্ষয় তাকে বিশেষভাবে বিচলিত করে তুলেছিল। গদ্যছন্দে রচিত একটি শত-পংক্তির কবিতায় তিনি এই ঘটনা চিত্রায়িতও করেছিলেন। জীবনের শেষ চার বছর ছিল তার ধারাবাহিক শারীরিক অসুস্থতার সময়। এই সময়ের মধ্যে দুইবার অত্যন্ত অসুস্থ অবস্থায় শয্যাশায়ী থাকতে হয়েছিল তাকে। ১৯৩৭ সালে একবার অচৈতন্য হয়ে গিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থা হয়েছিল কবির। সেবার সেরে উঠলেও ১৯৪০ সালে অসুস্থ হওয়ার পর আর তিনি সেরে উঠতে পারেননি। এই সময়পর্বে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতাগুলি ছিল মৃত্যুচেতনাকে কেন্দ্র করে সৃজিত কিছু অবিস্মরণীয় পংক্তিমালা। মৃত্যুর সাত দিন আগে পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টিশীল ছিলেন। দীর্ঘ রোগভোগের পর ১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বিশ্বভ্রমণ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট বারো বার বিশ্ব ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সালের মধ্যে তিনি পাঁচটি মহাদেশের ত্রিশটিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন। প্রথম জীবনে দুই বার (১৮৭৮ ও ১৮৯০ সালে) তিনি ইংল্যান্ডে গিয়েছিলেন। ১৯১২ সালে ব্যক্তিগত চিকিৎসার জন্য তৃতীয়বার ইংল্যান্ডে গিয়ে ইয়েটস প্রমুখ কয়েকজন ইংরেজ কবি ও বুদ্ধিজীবীদের কাছে সদ্য রচিত গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করে শোনান। কবিতাগুলি শুনে তারাও মুগ্ধ হয়েছিলেন। ইয়েটস স্বয়ং উক্ত কাব্যের ইংরেজি অনুবাদের ভূমিকাটি লিখে দিয়েছিলেন। এই ভ্রমণের সময়েই "দীনবন্ধু" চার্লস ফ্রিয়ার অ্যান্ড্রুজের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচয় ঘটে। ১৯১৩ সালে সুইডিশ অ্যাকাডেমি তাকে নোবেল পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯১৬-১৯১৭ সালে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ সাম্রাজ্যবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে কতকগুলি বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতাগুলি সংকলিত হয় তার ন্যাশনালিজম (১৯১৭) গ্রন্থে।"Tagore's Works – A Chronology: 1878-1941", The Calcutta Municipal Gazette: Tagore Memorial Special Suppelement, Calcutta Municipal Corporation, 2006 edition, Kolkata, p. 146 তবে জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথের বিরূপ মতামত উক্ত দুই দেশে সেই সফরকালে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল। ১৯২০-১৯২১ সাল নাগাদ আবার ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান কবি। এই সফরের সময় পাশ্চাত্য দেশগুলিতে তিনি সংবর্ধিত হয়েছিলেন। ১৯২৪ সালে রবীন্দ্রনাথ যান চীন সফরে। এরপর চীন থেকে জাপানে গিয়ে সেখানেও জাতীয়তাবাদবিরোধী বক্তৃতা দেন কবি। ১৯২৪ সালের শেষের দিকে পেরু সরকারের আমন্ত্রণে সেদেশে যাওয়ার পথে আর্জেন্টিনায় অসুস্থ হয়ে কবি ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোর আতিথ্যে তিন মাস কাটান। স্বাস্থ্যের কারণে পেরু ভ্রমণ তিনি স্থগিত করে দেন। পরে পেরু ও মেক্সিকো উভয় দেশের সরকারই বিশ্বভারতীকে ১,০০,০০০ মার্কিন ডলার অর্থসাহায্য প্রদান করেছিল। ১৯২৬ সালে বেনিতো মুসোলিনির আমন্ত্রণে ইতালি সফরে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। প্রথমে মুসোলিনির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলেও, পরে লোকমুখে তার স্বৈরাচারের কথা জানতে পেরে, মুসোলিনির কাজকর্মের সমালোচনা করেন কবি। এর ফলে উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ছেদ পড়ে। এরপর রবীন্দ্রনাথ গ্রিস, তুরস্ক ও মিশর ভ্রমণ করে ভারতে ফিরে আসেন। ১৯২৭ সালে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ চার সঙ্গীকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথ গিয়েছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে। এই সময় তিনি ভ্রমণ করেন বালি, জাভা, কুয়ালালামপুর, মালাক্কা, পেনাং, সিয়াম ও সিঙ্গাপুর। ১৯৩০ সালে কবি শেষবার ইংল্যান্ডে যান অক্সফোর্ডে হিবার্ট বক্তৃতা দেওয়ার জন্য। এরপর তিনি ভ্রমণ করেন ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ১৯৩২ সালে ইরাক ও পারস্য ভ্রমণে গিয়েছিলেন কবি। এরপর ১৯৩৪ সালে সিংহলে যান রবীন্দ্রনাথ। এটিই ছিল তার সর্বশেষ বিদেশ সফর। রবীন্দ্রনাথ যেসকল বইতে তার বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা গুলি লিপিবদ্ধ করে রাখেন সেগুলি হল: য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র (১৮৮১), য়ুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি (১৮৯১, ১৮৯৩), জাপান-যাত্রী (১৯১৯), যাত্রী (পশ্চিম-যাত্রীর ডায়ারি ও জাভা-যাত্রীর পত্র, ১৯২৯), রাশিয়ার চিঠি (১৯৩১), পারস্যে (১৯৩৬) ও পথের সঞ্চয় (১৯৩৯)। ব্যাপক বিশ্ব ভ্রমণের ফলে রবীন্দ্রনাথ তার সমসাময়িক অরিঁ বের্গসঁ, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট ফ্রস্ট, টমাস মান, জর্জ বার্নার্ড শ, এইচ জি ওয়েলস, রোম্যাঁ রোলাঁ, সিগমুন্ড ফ্রয়েড প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন।Chakravarty 1961, pp. 100–103 জীবনের একেবারে শেষপর্বে পারস্য, ইরাক ও সিংহল ভ্রমণের সময় মানুষের পারস্পরিক ভেদাভেদ ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে তার বিতৃষ্ণা আরও তীব্র হয়েছিল মাত্র। অন্যদিকে বিশ্ব পরিক্রমার ফলে ভারতের বাইরে নিজের রচনাকে পরিচিত করে তোলার এবং বহির্বিশ্বের সঙ্গে রাজনৈতিক মতবিনিময়ের সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি। সৃষ্টিকর্ম রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন মূলত এক কবি। মাত্র আট বছর বয়সে তিনি কাব্যরচনা শুরু করেন। তার প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তার জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তার সামগ্রিক চিঠিপত্র উনিশ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তার প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী "রবীন্দ্রনৃত্য" নামে পরিচিত। কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথম জীবনে ছিলেন বিহারীলাল চক্রবর্তীর (১৮৩৫-১৮৯৪) অনুসারী কবি। তার কবি-কাহিনী, বনফুল ও ভগ্নহৃদয় কাব্য তিনটিতে বিহারীলালের প্রভাব সুস্পষ্ট। সন্ধ্যাসংগীত কাব্যগ্রন্থ থেকে রবীন্দ্রনাথ নিজের বক্তব্য প্রকাশ করতে শুরু করেন। এই পর্বের সন্ধ্যা সঙ্গীত, প্রভাতসংগীত, ছবি ও গান ও কড়ি ও কোমল কাব্যগ্রন্থের মূল বিষয়বস্তু ছিল মানব হৃদয়ের বিষণ্ণতা, আনন্দ, মর্ত্যপ্রীতি ও মানবপ্রেম। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী এবং তার পর প্রকাশিত সোনার তরী (১৮৯৪), চিত্রা (১৮৯৬), চৈতালি (১৮৯৬), কল্পনা (১৯০০) ও ক্ষণিকা (১৯০০) কাব্যগ্রন্থে ফুটে উঠেছে রবীন্দ্রনাথের প্রেম ও সৌন্দর্য সম্পর্কিত রোম্যান্টিক ভাবনা। ১৯০১ সালে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার পর রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার প্রাধান্য লক্ষিত হয়। এই চিন্তা ধরা পড়েছে নৈবেদ্য (১৯০১), খেয়া (১৯০৬), গীতাঞ্জলি (১৯১০), গীতিমাল্য (১৯১৪) ও গীতালি (১৯১৪) কাব্যগ্রন্থে। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সূচনা ঘটলে বলাকা (১৯১৬) কাব্যে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় আধ্যাত্মিক চিন্তার পরিবর্তে আবার মর্ত্যজীবন সম্পর্কে আগ্রহ ফুটে ওঠে। পলাতকা (১৯১৮) কাব্যে গল্প-কবিতার আকারে তিনি নারীজীবনের সমসাময়িক সমস্যাগুলি তুলে ধরেন। পূরবী (১৯২৫) ও মহুয়া (১৯২৯) কাব্যগ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ আবার প্রেমকে উপজীব্য করেন। এরপর পুনশ্চ (১৯৩২), শেষ সপ্তক (১৯৩৫), পত্রপুট (১৯৩৬) ও শ্যামলী (১৯৩৬) নামে চারটি গদ্যকাব্য প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষ দশকে কবিতার আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু নিয়ে কয়েকটি নতুন পরীক্ষানিরীক্ষা চালিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সময়কার রোগশয্যায় (১৯৪০), আরোগ্য (১৯৪১), জন্মদিনে (১৯৪১) ও শেষ লেখা (১৯৪১, মরণোত্তর প্রকাশিত) কাব্যে মৃত্যু ও মর্ত্যপ্রীতিকে একটি নতুন আঙ্গিকে পরিস্ফুট করেছিলেন তিনি। শেষ কবিতা "তোমার সৃষ্টির পথ" মৃত্যুর আট দিন আগে মৌখিকভাবে রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের কবিতায় মধ্যযুগীয় বৈষ্ণব পদাবলি, উপনিষদ্‌, কবীরের দোঁহাবলি, লালনের বাউল গান ও রামপ্রসাদ সেনের শাক্ত পদাবলি সাহিত্যের প্রভাব লক্ষিত হয়।Stewart & Twichell 2003, p. 94 তবে প্রাচীন সাহিত্যের দুরূহতার পরিবর্তে তিনি এক সহজ ও সরস কাব্যরচনার আঙ্গিক গ্রহণ করেছিলেন। আবার ১৯৩০-এর দশকে কিছু পরীক্ষামূলক লেখালেখির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে আধুনিকতা ও বাস্তবতাবোধের প্রাথমিক আবির্ভাব প্রসঙ্গে নিজ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেছিলেন কবি। বহির্বিশ্বে তার সর্বাপেক্ষা সুপরিচিত কাব্যগ্রন্থটি হল গীতাঞ্জলি। এ বইটির জন্যই তিনি সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেছিলেন। নোবেল ফাউন্ডেশন তার এই কাব্যগ্রন্থটিকে বর্ণনা করেছিল একটি "গভীরভাবে সংবেদনশীল, উজ্জ্বল ও সুন্দর কাব্যগ্রন্থ" রূপে। ছোটগল্প রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক ছোটগল্পকার।ছোটগল্পের কথা, ভূদেব চৌধুরী, পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি, কলকাতা, পৃ. ২০০০ মুদ্রণ, পৃ. ৫৬ মূলত হিতবাদী, সাধনা, ভারতী, সবুজ পত্র প্রভৃতি মাসিক পত্রিকাগুলির চাহিদা মেটাতে তিনি তার ছোটগল্পগুলি রচনা করেছিলেন। এই গল্পগুলির উচ্চ সাহিত্যমূল্য-সম্পন্ন। রবীন্দ্রনাথের জীবনের "সাধনা" পর্বটি (১৮৯১–৯৫) ছিল সর্বাপেক্ষা সৃষ্টিশীল পর্যায়। তার গল্পগুচ্ছ গল্পসংকলনের প্রথম তিন খণ্ডের চুরাশিটি গল্পের অর্ধেকই রচিত হয় এই সময়কালের মধ্যে। গল্পগুচ্ছ সংকলনের অন্য গল্পগুলির অনেকগুলিই রচিত হয়েছিল রবীন্দ্রজীবনের সবুজ পত্র পর্বে (১৯১৪–১৭; প্রমথ চৌধুরী সম্পাদিত পত্রিকার নামানুসারে) তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি গল্প হল "কঙ্কাল", "নিশীথে", "মণিহারা", "ক্ষুধিত পাষাণ", "স্ত্রীর পত্র", "নষ্টনীড়", "কাবুলিওয়ালা", "হৈমন্তী", "দেনাপাওনা", "মুসলমানীর গল্প" ইত্যাদি। শেষ জীবনে রবীন্দ্রনাথ লিপিকা, সে ও তিনসঙ্গী গল্পগ্রন্থে নতুন আঙ্গিকে গল্পরচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তার গল্পে পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলি বা আধুনিক ধ্যানধারণা সম্পর্কে মতামত প্রকাশ করতেন। কখনও তিনি মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের বৌদ্ধিক বিশ্লেষণকেই গল্পে বেশি প্রাধান্য দিতেন। রবীন্দ্রনাথের একাধিক ছোটগল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র, নাটক ও টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। তার গল্পের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রায়ণ হল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত তিন কন্যা ("মনিহারা", "পোস্টমাস্টার" ও "সমাপ্তি" অবলম্বনে) ও চারুলতা ("নষ্টনীড়" অবলম্বনে) , তপন সিংহ পরিচালিত অতিথি, কাবুলিওয়ালা ও ক্ষুধিত পাষাণ, পূর্ণেন্দু পত্রী পরিচালিত স্ত্রীর পত্র ইত্যাদি। উপন্যাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মোট তেরোটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলি হল: বৌ-ঠাকুরাণীর হাট (১৮৮৩), রাজর্ষি (১৮৮৭), চোখের বালি (১৯০৩), নৌকাডুবি (১৯০৬), প্রজাপতির নির্বন্ধ (১৯০৮), গোরা (১৯১০), ঘরে বাইরে (১৯১৬), চতুরঙ্গ (১৯১৬), যোগাযোগ (১৯২৯), শেষের কবিতা (১৯২৯), দুই বোন (১৯৩৩), মালঞ্চ (১৯৩৪) ও চার অধ্যায় (১৯৩৪)। বৌ-ঠাকুরাণীর হাট ও রাজর্ষি ঐতিহাসিক উপন্যাস। এদুটি রবীন্দ্রনাথের প্রথম উপন্যাস রচনার প্রচেষ্টা। এরপর থেকে ছোটগল্পের মতো তার উপন্যাসগুলিও মাসিকপত্রের চাহিদা অনুযায়ী নবপর্যায় বঙ্গদর্শন, প্রবাসী, সবুজ পত্র, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।চোখের বালি উপন্যাসে দেখানো হয়েছে সমসাময়িককালে বিধবাদের জীবনের নানা সমস্যা। নৌকাডুবি উপন্যাসটি আবার লেখা হয়েছে জটিল পারিবারিক সমস্যাগুলিকে কেন্দ্র করে। গোরা রবীন্দ্রনাথের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। এই উপন্যাসে দেখানো হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধের হিন্দু ও ব্রাহ্মসমাজের সংঘাত ও ভারতের তদানীন্তন সামাজিক ও রাজনৈতিক সমস্যাগুলি। ঘরে বাইরে উপন্যাসের বিষয়বস্তু ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে নারী ও পুরুষের সম্পর্কের জটিলতা। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের জটিলতা আরও সূক্ষ্মভাবে উঠে এসেছে তার পরবর্তী যোগাযোগ উপন্যাসেও। চতুরঙ্গ উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথের “ছোটগল্পধর্মী উপন্যাস”। স্ত্রীর অসুস্থতার সুযোগে স্বামীর অন্য স্ত্রীলোকের প্রতি আসক্তি – এই বিষয়টিকে উপজীব্য করে রবীন্দ্রনাথ দুই বোন ও মালঞ্চ উপন্যাসদুটি লেখেন। এর মধ্যে প্রথম উপন্যাসটি মিলনান্তক ও দ্বিতীয়টি বিয়োগান্তক। রবীন্দ্রনাথের শেষ উপন্যাস চার অধ্যায় সমসাময়িক বিপ্লবী আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একটি বিয়োগান্তক প্রেমের উপন্যাস। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্যজিৎ রায়ের ঘরে বাইরে ও ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালি। প্রবন্ধ ও পত্রসাহিত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অসংখ্য প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। এইসব প্রবন্ধে তিনি সমাজ, রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, সাহিত্যতত্ত্ব, ইতিহাস, ভাষাতত্ত্ব, ছন্দ, সংগীত ইত্যাদি নানা বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রকাশ করেন। রবীন্দ্রনাথের সমাজচিন্তামূলক প্রবন্ধগুলি সমাজ (১৯০৮) সংকলনে সংকলিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন সময়ে লেখা রাজনীতি-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি সংকলিত হয়েছে কালান্তর (১৯৩৭) সংকলনে। রবীন্দ্রনাথের ধর্মভাবনা ও আধ্যাত্মিক অভিভাষণগুলি সংকলিত হয়েছে ধর্ম (১৯০৯) ও শান্তিনিকেতন (১৯০৯-১৬) অভিভাষণমালায়। রবীন্দ্রনাথের ইতিহাস-সংক্রান্ত প্রবন্ধগুলি স্থান পেয়েছে ভারতবর্ষ (১৯০৬), ইতিহাস (১৯৫৫) ইত্যাদি গ্রন্থে। সাহিত্য (১৯০৭), সাহিত্যের পথে (১৯৩৬) ও সাহিত্যের স্বরূপ (১৯৪৩) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যতত্ত্ব আলোচনা করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ধ্রুপদি ভারতীয় সাহিত্য ও আধুনিক সাহিত্যের সমালোচনা করেছেন যথাক্রমে প্রাচীন সাহিত্য (১৯০৭) ও আধুনিক সাহিত্য (১৯০৭) গ্রন্থদুটিতে। লোকসাহিত্য (১৯০৭) প্রবন্ধমালায় তিনি আলোচনা করেছেন বাংলা লোকসাহিত্যের প্রকৃতি। ভাষাতত্ত্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের চিন্তাভাবনা লিপিবদ্ধ রয়েছে শব্দতত্ত্ব (১৯০৯), বাংলা ভাষা পরিচয় (১৯৩৮) ইত্যাদি গ্রন্থে। ছন্দ ও সংগীত নিয়ে তিনি আলোচনা করেছেন যথাক্রমে ছন্দ (১৯৩৬) ও সংগীতচিন্তা (১৯৬৬) গ্রন্থে। বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠাতা রবীন্দ্রনাথ তার শিক্ষা-সংক্রান্ত ভাবনাচিন্তার কথা প্রকাশ করেছেন শিক্ষা (১৯০৮) প্রবন্ধমালায়। ন্যাশনালিজম (ইংরেজি: Nationalism, ১৯১৭) গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ উগ্র জাতীয়তাবাদের বিশ্লেষণ করে তার বিরোধিতা করেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দর্শন বিষয়ে যে বিখ্যাত বক্তৃতাগুলি দিয়েছিলেন সেগুলি রিলিজিয়ন অফ ম্যান (ইংরেজি: Religion of Man, ১৯৩০; বাংলা অনুবাদ মানুষের ধর্ম, ১৯৩৩) নামে সংকলিত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে লেখা জন্মদিনের অভিভাষণ সভ্যতার সংকট (১৯৪১) তার সর্বশেষ প্রবন্ধগ্রন্থ। জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বপরিচয় (১৯৩৭) নামে একটি তথ্যমূলক প্রবন্ধগ্রন্থ রচনা করেছিলেন। জীবনস্মৃতি (১৯১২), ছেলেবেলা (১৯৪০) ও আত্মপরিচয় (১৯৪৩) তার আত্মকথামূলক গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথের সামগ্রিক পত্রসাহিত্য আজ পর্যন্ত উনিশটি খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া ছিন্নপত্র ও ছিন্নপত্রাবলী (ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণীকে লেখা), ভানুসিংহের পত্রাবলী (রানু অধিকারীকে (মুখোপাধ্যায়) লেখা) ও পথে ও পথের প্রান্তে (নির্মলকুমারী মহলানবিশকে লেখা) বই তিনটি রবীন্দ্রনাথের তিনটি উল্লেখযোগ্য পত্রসংকলন। নাট্যসাহিত্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে ছিলেন নাট্যকার ও নাট্যাভিনেতা। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ির পারিবারিক নাট্যমঞ্চে মাত্র ষোলো বছর বয়সে অগ্রজ জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত হঠাৎ নবাব নাটকে (মলিয়ের লা বুর্জোয়া জাঁতিরোম অবলম্বনে রচিত) ও পরে জ্যোতিরিন্দ্রনাথেরই অলীকবাবু নাটকে নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৮৮১ সালে তার প্রথম গীতিনাট্য বাল্মীকিপ্রতিভা মঞ্চস্থ হয়।বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ. ১৯২ এই নাটকে তিনি ঋষি বাল্মীকির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৮৮২ সালে রবীন্দ্রনাথ রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে কালমৃগয়া নামে আরও একটি গীতিনাট্য রচনা করেছিলেন। এই নাটক মঞ্চায়নের সময় তিনি অন্ধমুনির ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। গীতিনাট্য রচনার পর রবীন্দ্রনাথ কয়েকটি কাব্যনাট্য রচনা করেন। শেকসপিয়রীয় পঞ্চাঙ্ক রীতিতে রচিত তার রাজা ও রাণী (১৮৮৯) ও বিসর্জন (১৮৯০) বহুবার সাধারণ রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হয় এবং তিনি নিজে এই নাটকগুলিতে অভিনয়ও করেন। ১৮৮৯ সালে রাজা ও রাণী নাটকে বিক্রমদেবের ভূমিকায় অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। বিসর্জন নাটকটি দুটি ভিন্ন সময়ে মঞ্চায়িত করেছিলেন তিনি। ১৮৯০ সালের মঞ্চায়নের সময় যুবক রবীন্দ্রনাথ বৃদ্ধ রঘুপতির ভূমিকায় এবং ১৯২৩ সালের মঞ্চায়নের সময় বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথ যুবক জয়সিংহের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। কাব্যনাট্য পর্বে রবীন্দ্রনাথের আরও দুটি উল্লেখযোগ্য নাটক হল চিত্রাঙ্গদা (১৮৯২) ও মালিনী (১৮৯৬)।বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ. ২০৪ কাব্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ প্রহসন রচনায় মনোনিবেশ করেন। এই পর্বে প্রকাশিত হয় গোড়ায় গলদ (১৮৯২), বৈকুণ্ঠের খাতা (১৮৯৭), হাস্যকৌতুক (১৯০৭) ও ব্যঙ্গকৌতুক (১৯০৭)। বৈকুণ্ঠের খাতা নাটকে রবীন্দ্রনাথ কেদারের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। ১৯২৬ সালে তিনি প্রজাপতির নির্বন্ধ উপন্যাসটিকেও চিরকুমার সভা নামে একটি প্রহসনমূলক নাটকের রূপ দেন।বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস, পৃ. ২০৮-০৯ ১৯০৮ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ রূপক-সাংকেতিক তত্ত্বধর্মী নাট্যরচনা শুরু করেন। ইতিপূর্বে প্রকৃতির প্রতিশোধ (১৮৮৪) নাটকে তিনি কিছুটা রূপক-সাংকেতিক আঙ্গিক ব্যবহার করেছিলেন। কিন্তু ১৯০৮ সালের পর থেকে একের পর এক নাটক তিনি এই আঙ্গিকে লিখতে শুরু করেন। এই নাটকগুলি হল: শারদোৎসব (১৯০৮), রাজা (১৯১০), ডাকঘর (১৯১২), অচলায়তন (১৯১২), ফাল্গুনী (১৯১৬), মুক্তধারা (১৯২২), রক্তকরবী (১৯২৬), তাসের দেশ (১৯৩৩), কালের যাত্রা (১৯৩২) ইত্যাদি। এই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রধানত শান্তিনিকেতনে মঞ্চ তৈরি করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে অভিনয়ের দল গড়ে মঞ্চস্থ করতেন। কখনও কখনও কলকাতায় গিয়েও ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ করতেন তিনি। এই সব নাটকেও একাধিক চরিত্রে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য: ১৯১১ সালে শারদোৎসব নাটকে সন্ন্যাসী এবং রাজা নাটকে রাজা ও ঠাকুরদাদার যুগ্ম ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৪ সালে অচলায়তন নাটকে অদীনপুণ্যের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৫ সালে ফাল্গুনী নাটকে অন্ধ বাউলের ভূমিকায় অভিনয়; ১৯১৭ সালে ডাকঘর নাটকে ঠাকুরদা, প্রহরী ও বাউলের ভূমিকায় অভিনয়। নাট্যরচনার পাশাপাশি এই পর্বে ছাত্রছাত্রীদের অভিনয়ের প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ পুরোন নাটকগুলি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ করে নতুন নামে প্রকাশ করেন। শারদোৎসব নাটকটি হয় ঋণশোধ (১৯২১), রাজা হয় অরূপরতন (১৯২০), অচলায়তন হয় গুরু (১৯১৮), গোড়ায় গলদ হয় শেষরক্ষা (১৯২৮), রাজা ও রাণী হয় তপতী (১৯২৯) এবং প্রায়শ্চিত্ত হয় পরিত্রাণ (১৯২৯)। ১৯২৬ সালে নটীর পূজা নাটকে অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে নাচ ও গানের প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই ধারাটিই তার জীবনের শেষ পর্বে “নৃত্যনাট্য” নামে পূর্ণ বিকাশ লাভ করে। নটীর পূজা নৃত্যনাট্যের পর রবীন্দ্রনাথ একে একে রচনা করেন শাপমোচন (১৯৩১), তাসের দেশ (১৯৩৩), নৃত্যনাট্য চিত্রাঙ্গদা (১৯৩৬), নৃত্যনাট্য চণ্ডালিকা (১৯৩৮) ও শ্যামা (১৯৩৯)। এগুলিও শান্তিনিকেতনের ছাত্রছাত্রীরাই প্রথম মঞ্চস্থ করেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৫টি গান রচনা করেছিলেন। ধ্রুপদি ভারতীয় সংগীত, বাংলা লোকসংগীত ও ইউরোপীয় সংগীতের ধারা তিনটিকে আত্মস্থ করে তিনি একটি স্বকীয় সুরশৈলীর জন্ম দেন। রবীন্দ্রনাথ তার বহু কবিতাকে গানে রূপান্তরিত করেছিলেন। রবীন্দ্র-বিশেষজ্ঞ সুকুমার সেন রবীন্দ্রসংগীত রচনার ইতিহাসে চারটি পর্ব নির্দেশ করেছেন। প্রথম পর্বে তিনি জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্ট গীতের অনুসরণে গান রচনা শুরু করেছিলেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে (১৮৮৪-১৯০০) পল্লীগীতি ও কীর্তনের অনুসরণে রবীন্দ্রনাথ নিজস্ব সুরে গান রচনা শুরু করেন। এই পর্বের রবীন্দ্রসংগীতে ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট সংগীতস্রষ্টা মধুকান, রামনিধি গুপ্ত, শ্রীধর কথক প্রমুখের প্রভাবও সুস্পষ্ট। এই সময় থেকেই তিনি স্বরচিত কবিতায় সুর দিয়ে গান রচনাও শুরু করেছিলেন। ১৯০০ সালে শান্তিনিকেতনে বসবাস শুরু করার পর থেকে রবীন্দ্রসংগীত রচনার তৃতীয় পর্বের সূচনা ঘটে। এই সময় রবীন্দ্রনাথ বাউল গানের সুর ও ভাব তার নিজের গানের অঙ্গীভূত করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর রবীন্দ্রনাথের গান রচনার চতুর্থ পর্বের সূচনা হয়। কবির এই সময়কার গানের বৈশিষ্ট্য ছিল নতুন নতুন ঠাটের প্রয়োগ এবং বিচিত্র ও দুরূহ সুরসৃষ্টি। তার রচিত সকল গান সংকলিত হয়েছে গীতবিতান গ্রন্থে। এই গ্রন্থের "পূজা", "প্রেম", "প্রকৃতি", "স্বদেশ", "আনুষ্ঠানিক" ও "বিচিত্র" পর্যায়ে মোট দেড় হাজার গান সংকলিত হয়। পরে গীতিনাট্য, নৃত্যনাট্য, নাটক, কাব্যগ্রন্থ ও অন্যান্য সংকলন গ্রন্থ থেকে বহু গান এই বইতে সংকলিত হয়েছিল। ইউরোপীয় অপেরার আদর্শে বাল্মীকি-প্রতিভা, কালমৃগয়া গীতিনাট্য এবং চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, ও শ্যামা সম্পূর্ণ গানের আকারে লেখা। রবীন্দ্রনাথের সময় বাংলার শিক্ষিত পরিবারে নৃত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতীর পাঠক্রমে সংগীত ও চিত্রকলার সঙ্গে সঙ্গে নৃত্যকেও অন্তর্ভুক্ত করেন। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের লোকনৃত্য ও ধ্রুপদি নৃত্যশৈলীগুলির সংমিশ্রণে তিনি এক নতুন শৈলীর প্রবর্তন করেন। এই শৈলীটি "রবীন্দ্রনৃত্য" নামে পরিচিত। রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ও নৃত্যনাট্যগুলিতে গানের পাশাপাশি নাচও অপরিহার্য। বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী উদয় শংকর যে আধুনিক ভারতীয় নৃত্যধারার প্রবর্তন করেছিলেন, তার পিছনেও রবীন্দ্রনাথের প্রেরণা ছিল। চিত্রকলা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিয়মিত ছবি আঁকা শুরু করেন প্রায় সত্তর বছর বয়সে। চিত্রাঙ্কনে কোনো প্রথাগত শিক্ষা তার ছিল না। প্রথমদিকে তিনি লেখার হিজিবিজি কাটাকুটিগুলিকে একটি চেহারা দেওয়ার চেষ্টা করতেন। এই প্রচেষ্টা থেকেই তার ছবি আঁকার সূত্রপাত ঘটে। ১৯২৮ থেকে ১৯৩৯ কালপরিধিতে অঙ্কিত তার স্কেচ ও ছবির সংখ্যা আড়াই হাজারের ওপর, যার ১৫৭৪টি শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্রভবনে সংরক্ষিত আছে। দক্ষিণ ফ্রান্সের শিল্পীদের উৎসাহে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তার প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয় প্যারিসের পিগাল আর্ট গ্যালারিতে। এরপর সমগ্র ইউরোপেই কবির একাধিক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ছবিতে রং ও রেখার সাহায্যে রবীন্দ্রনাথ সংকেতের ব্যবহার করতেন। রবীন্দ্রনাথ প্রাচ্য চিত্রকলার পুনরুত্থানে আগ্রহী হলেও, তার নিজের ছবিতে আধুনিক বিমূর্তধর্মিতাই বেশি প্রস্ফুটিত হয়েছে। মূলত কালি-কলমে আঁকা স্কেচ, জলরং ও দেশজ রঙের ব্যবহার করে তিনি ছবি আঁকতেন। তার ছবিতে দেখা যায় মানুষের মুখের স্কেচ, অনির্ণেয় প্রাণীর আদল, নিসর্গদৃশ্য, ফুল, পাখি ইত্যাদি। তিনি নিজের প্রতিকৃতিও এঁকেছেন। নন্দনতাত্ত্বিক ও বর্ণ পরিকল্পনার দিক থেকে তার চিত্রকলা বেশ অদ্ভুত ধরনেরই বলে মনে হয়। তবে তিনি একাধিক অঙ্কনশৈলী রপ্ত করেছিলেন। তন্মধ্যে, কয়েকটি শৈলী হল- নিউ আয়ারল্যান্ডের হস্তশিল্প, কানাডার (ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশ) পশ্চিম উপকূলের "হাইদা" খোদাইশিল্প ও ম্যাক্স পেকস্টাইনের কাঠখোদাই শিল্প। রাজনৈতিক মতাদর্শ ও শিক্ষাচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রাজনৈতিক দর্শন অত্যন্ত জটিল। তিনি সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ও ভারতীয় জাতীয়তাবাদীদের সমর্থন করতেন। ১৮৯০ সালে প্রকাশিত মানসী কাব্যগ্রন্থের কয়েকটি কবিতায় রবীন্দ্রনাথের প্রথম জীবনের রাজনৈতিক ও সামাজিক চিন্তাভাবনার পরিচয় পাওয়া যায়। হিন্দু-জার্মান ষড়যন্ত্র মামলার তথ্যপ্রমাণ এবং পরবর্তীকালে প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, রবীন্দ্রনাথ গদর ষড়যন্ত্রের কথা শুধু জানতেনই না, বরং উক্ত ষড়যন্ত্রে জাপানি প্রধানমন্ত্রী তেরাউচি মাসাতাকি ও প্রাক্তন প্রিমিয়ার ওকুমা শিগেনোবুর সাহায্যও প্রার্থনা করেছিলেন। আবার ১৯২৫ সালে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে স্বদেশী আন্দোলনকে "চরকা-সংস্কৃতি" বলে বিদ্রুপ করে রবীন্দ্রনাথ কঠোর ভাষায় তার বিরোধিতা করেন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ তার চোখে ছিল "আমাদের সামাজিক সমস্যাগুলির রাজনৈতিক উপসর্গ"। তাই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বৃহত্তর জনসাধারণের স্বনির্ভরতা ও বৌদ্ধিক উন্নতির উপর অধিক গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। ভারতবাসীকে অন্ধ বিপ্লবের পন্থা ত্যাগ করে দৃঢ় ও প্রগতিশীল শিক্ষার পন্থাটিকে গ্রহণ করার আহ্বান জানান রবীন্দ্রনাথ। রবীন্দ্রনাথের এই ধরনের মতাদর্শ অনেককেই বিক্ষুব্ধ করে তোলে। ১৯১৬ সালের শেষ দিকে সানফ্রান্সিসকোয় একটি হোটেলে অবস্থানকালে একদল চরমপন্থী বিপ্লবী রবীন্দ্রনাথকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিল। কিন্তু নিজেদের মধ্যে মতবিরোধ উপস্থিত হওয়ায় তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথের গান ও কবিতার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে তিনি নাইটহুড বর্জন করেন। নাইটহুড প্রত্যাখ্যান-পত্রে লর্ড চেমসফোর্ডকে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, "আমার এই প্রতিবাদ আমার আতঙ্কিত দেশবাসীর মৌনযন্ত্রণার অভিব্যক্তি।" রবীন্দ্রনাথের "চিত্ত যেথা ভয়শূন্য" ও "একলা চলো রে" রাজনৈতিক রচনা হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। "একলা চলো রে" গানটি গান্ধীজির বিশেষ প্রিয় ছিল। যদিও মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সম্পর্ক ছিল অম্লমধুর। হিন্দু নিম্নবর্ণীয় জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে গান্ধীজি ও আম্বেডকরের যে মতবিরোধের সূত্রপাত হয়, তা নিরসনেও রবীন্দ্রনাথ বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। ফলে গান্ধীজিও তার অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ তার "তোতা-কাহিনী" গল্পে বিদ্যালয়ের মুখস্থ-সর্বস্ব শিক্ষাকে প্রতি তীব্রভাবে আক্রমণ করেন। এই গল্পে রবীন্দ্রনাথ দেখিয়েছিলেন, দেশের ছাত্রসমাজকে খাঁচাবদ্ধ পাখিটির মতো শুকনো বিদ্যা গিলিয়ে কীভাবে তাদের বৌদ্ধিক মৃত্যুর পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। ১৯১৭ সালের ১১ অক্টোবর ক্যালিফোর্নিয়ার সান্টা বারবারা ভ্রমণের সময় রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা সম্পর্কে প্রথাবিরুদ্ধ চিন্তাভাবনা শুরু করেন। শান্তিনিকেতন আশ্রমকে দেশ ও ভূগোলের গণ্ডীর বাইরে বের করে ভারত ও বিশ্বকে একসূত্রে বেঁধে একটি বিশ্ব শিক্ষাকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনাও এই সময়েই গ্রহণ করেছিলেন কবি। ১৯১৮ সালের ২২ অক্টোবর বিশ্বভারতী নামাঙ্কিত তার এই বিদ্যালয়ের শিলান্যাস করা হয়েছিল। এরপর ১৯২২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন হয়েছিল এই বিদ্যালয়ের। বিশ্বভারতীতে কবি সনাতন ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্রহ্মচর্য ও গুরুপ্রথার পুনর্প্রবর্তন করেছিলেন। এই বিদ্যালয়ের জন্য অর্থসংগ্রহ করতে কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন তিনি। নোবেল পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ অর্থ তিনি ঢেলে দিয়েছিলেন এই বিদ্যালয়ের পরিচালন খাতে। নিজেও শান্তিনিকেতনের অধ্যক্ষ ও শিক্ষক হিসেবেও অত্যন্ত ব্যস্ত থাকতেন তিনি। সকালে ছাত্রদের ক্লাস নিতেন এবং বিকেল ও সন্ধ্যায় তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক রচনা করতেন। ১৯১৯ সাল থেকে ১৯২১ সালের মধ্যে বিদ্যালয়ের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে তিনি একাধিকবার ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণ করেন। প্রভাব বিংশ শতাব্দীর বাঙালি সংস্কৃতিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব অত্যন্ত ব্যাপক। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ তথা দার্শনিক অমর্ত্য সেন রবীন্দ্রনাথকে এক "হিমালয়প্রতিম ব্যক্তিত্ব" ও "গভীরভাবে প্রাসঙ্গিক ও বহুমাত্রিক সমসাময়িক দার্শনিক" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। বত্রিশ খণ্ডে প্রকাশিত রবীন্দ্র রচনাবলী বাংলা সাহিত্যের একটি বিশেষ সম্পদ হিসেবে পরিগণিত হয়। রবীন্দ্রনাথকে "ভারতের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি" হিসেবেও বর্ণনা করা হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মবার্ষিকী "পঁচিশে বৈশাখ" ও প্রয়াণবার্ষিকী "বাইশে শ্রাবণ" আজও বাঙালি সমাজে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালিত হয়ে থাকে। এই উপলক্ষে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি, শান্তিনিকেতন আশ্রম ও শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে প্রচুর জনসমাগম হয়। শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ-প্রবর্তিত ধর্মীয় ও ঋতুউৎসবগুলির মাধ্যমেও তাকে শ্রদ্ধা নিবেদনের রীতি অক্ষুণ্ণ আছে। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসবে ও অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রসংগীত গাওয়া বা রবীন্দ্ররচনা পাঠের রেওয়াজও দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এগুলি ছাড়াও কবির সম্মানে আরও কতকগুলি বিশেষ ও অভিনব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় রাজ্যের আরবানাতে আয়োজিত বার্ষিক "রবীন্দ্র উৎসব", কলকাতা-শান্তিনিকেতন তীর্থ-পদযাত্রা "রবীন্দ্র পথপরিক্রমা" ইত্যাদি। জীবদ্দশাতেই ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা ও পূর্ব এশিয়ায় প্রভূত জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ইংল্যান্ডে ডার্টিংটন হল স্কুল নামে একটি প্রগতিশীল সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপনে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন তিনি। অনেজ জাপানি সাহিত্যিককে তিনি প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রবীন্দ্রনাথের গ্রন্থাবলি অনূদিত হয় ইংরেজি, ওলন্দাজ, জার্মান, স্প্যানিশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষায়। চেক ভারততত্ত্ববিদ ভিনসেন্স লেনসি সহ একাধিক ইউরোপীয় ভাষায় তার গ্রন্থ অনুবাদ করেন। ফরাসি নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আন্দ্রে জিদ্, রাশিয়ান কবি আনা আখমাতোভা , প্রাক্তন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী বুলেন্ত একেভিত, মার্কিন ঔপন্যাসিক জোনা গেইল সহ অনেকেই অনুপ্রেরণা লাভ করেন রবীন্দ্রনাথের রচনা থেকে। ১৯১৬-১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে দেওয়া তার ভাষণগুলি বিশেষ জনপ্রিয়তা ও প্রশংসা পায়। তবে কয়েকটি বিতর্ককে কেন্দ্র করে ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে জাপান ও উত্তর আমেরিকায় তার জনপ্রিয়তা হ্রাস পায়। কালক্রমে বাংলার বাইরে রবীন্দ্রনাথ "প্রায় অস্তমিত" হয়ে পড়েছিলেন। চিলিয়ান সাহিত্যিক পাবলো নেরুদা ও গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল, মেক্সিকান লেখক অক্টাভিও পাজ ও স্প্যানিশ লেখক হোসে অরতেগা ওয়াই গ্যাসেৎ, থেনোবিয়া কামপ্রুবি আইমার, ও হুয়ান রামোন হিমেনেথ প্রমুখ স্প্যানিশ-ভাষী সাহিত্যিকদেরও অনুবাদের সূত্রে অনুপ্রাণিত করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯১৪ থেকে ১৯২২ সালের মধ্যে হিমেনেথ-কামপ্রুবি দম্পতি রবীন্দ্রনাথের বাইশটি বই ইংরেজি থেকে স্প্যানিশে অনুবাদ করেছিলেন। দ্য ক্রেসেন্ট মুন (শিশু ভোলানাথ'') সহ রবীন্দ্রনাথের বেশ কিছু রচনার বিস্তারিত পর্যালোচনা ও স্প্যানিশ সংস্করণ প্রকাশও করেছিলেন তারা। উল্লেখ্য, এই সময়েই হিমেনেথ "নগ্ন কবিতা" (স্প্যানিশ: «poesía desnuda») নামে এক বিশেষ সাহিত্যশৈলীর উদ্ভাবন ঘটান। রবীন্দ্রনাথের মূল বাংলা কবিতা পড়েননি এমন বহু পাশ্চাত্য সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচক রবীন্দ্রনাথের গুরুত্ব অস্বীকারও করেছিলেন। গ্রাহাম গ্রিন সন্দিগ্ধচিত্তে মন্তব্য করেছিলেন, "ইয়েটস সাহেব ছাড়া আর কেউই রবীন্দ্রনাথের লেখাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেন না।" রবীন্দ্রনাথের সম্মানের কিছু পুরনো লাতিন আমেরিকান খণ্ডাংশ সম্প্রতি আবিষ্কৃত হয়েছে। নিকারাগুয়া ভ্রমণের সময় সালমান রুশদি এই জাতীয় কিছু উদাহরণ দেখে অবাক হন। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নামাঙ্কিত স্মারক ও দ্রষ্টব্যস্থল রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়। জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, বীরভূম — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়। শান্তিনিকেতন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গন। শিলাইদহ কুঠিবাড়ি, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি কুঠিবাড়ি। রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সম্মানে বাংলাদেশে তার নামাঙ্কিত বিশ্ববিদ্যালয়। রবীন্দ্র পুরস্কার — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সাহিত্য পুরস্কার। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আন্তর্জাতিক পুরস্কার — ভারত সরকার প্রদত্ত একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। রবীন্দ্রসদন — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত কলকাতার একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাগৃহ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রধান কার্যালয়। রবীন্দ্র সেতু — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত হাওড়া ও কলকাতা শহরের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সেতু। রবীন্দ্র সরোবর, কলকাতা — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নামাঙ্কিত ভারতের একটি জাতীয় হ্রদ। এটি কলকাতার বৃহত্তম হ্রদ। রবীন্দ্রনাথ সড়ক, যশোর, বাংলাদেশ । 'মনিহার' সিনেমা হল থেকে চৌরাস্তার (চার রাস্তা) মোড় এর মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী রাস্তা । রবী ঠাকুর মোড়, দক্ষিণ কলকাতার ইএম বাইপাস ও রাসবিহারী অ্যাভিনিউ-এর সংযোগস্থলের নতুন নাম। ৩০ জুন : আন্তর্জাতিক রবীন্দ্রকাব্যপাঠ দিবস পাদটীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি প্রাথমিক সংকলন মূল অনুবাদ গৌণ নিবন্ধ বই অন্যান্য আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ ব্যাখ্যামূলক "… ও তার ভারত", নোবেল ফাউন্ডেশন "… সাম্প্রতিক নিবন্ধাবলি", পরবাস "… প্রতিষ্ঠাতা", বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় অডিওবই "সাধনা: …", লিব্রিভক্স কথোপকথন … আলবার্ট আইনস্টাইনের সঙ্গে এবং এইচ জি ওয়েলসের সঙ্গে, স্কুল অফ উইসডম রচনাবলি … বিচিত্রা প্রকল্প থেকে … পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির ভাষা প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ প্রকাশিত … প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ থেকে … টেগোরওয়েব থেকে … জিকেটুডে থেকে … উইকিলাইব্রেস থেকে ১৮৬১-এ জন্ম ১৯৪১-এ মৃত্যু বাংলা সাহিত্য বাঙালি লেখক বাঙালি কবি রোম্যান্টিক কবি নোবেল বিজয়ী সাহিত্যিক ভারতীয় নোবেল বিজয়ী বাঙালি নোবেল বিজয়ী জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা ব্রাহ্ম হিন্দু পুনর্জাগরণ কলকাতার ব্যক্তি বাংলার নবজাগরণ বাঙালি চিত্রশিল্পী বাঙালি হিন্দু বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাঙালি কবি কলকাতার সঙ্গীতজ্ঞ ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় দার্শনিক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় প্রাবন্ধিক সমকালীন ভারতীয় দার্শনিক শান্তিনিকেতনের সাথে যুক্ত ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় সুরকার ভারতীয় শাস্ত্রীয় সুরকার ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক শিল্পী লেখক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি কবি কলকাতার লেখক ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বাঙালি দার্শনিক বাঙালি জমিদার ভারতীয় বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা বাঙালি জাতীয়তাবাদী বাংলা ভাষার কবি বাঙালি গীতিকার ভারতীয় হিন্দু ভারতীয় পুরুষ নাট্যকার ভারতীয় পুরুষ গীতিকার ভারতীয় পুরুষ প্রাবন্ধিক ঠাকুর পরিবার ভারতীয় পুরুষ কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় চিত্রশিল্পী ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি বাঙালি পুরুষ কবি পশ্চিমবঙ্গের কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় নাট্যকার নাইটস ব্যাচেলর পশ্চিমবঙ্গের চিত্রশিল্পী ১৯শ শতাব্দীর পুরুষ সঙ্গীতজ্ঞ
https://en.wikipedia.org/wiki/Rabindranath_Tagore
Rabindranath Tagore
Rabindranath Tagore ( ; pronounced [roˈbindɾonatʰ ˈʈʰakuɾ]; 7 May 1861 – 7 August 1941) was an Indian poet, writer, playwright, composer, philosopher, social reformer, and painter of the Bengal Renaissance. He reshaped Bengali literature and music as well as Indian art with Contextual Modernism in the late 19th and early 20th centuries. Author of the "profoundly sensitive, fresh and beautiful" poetry of Gitanjali, in 1913 Tagore became the first non-European and the first lyricist to win the Nobel Prize in Literature. Tagore's poetic songs were viewed as spiritual and mercurial; where his elegant prose and magical poetry were widely popular in the Indian subcontinent. He was a fellow of the Royal Asiatic Society. Referred to as "the Bard of Bengal", Tagore was known by the sobriquets Gurudeb, Kobiguru, and Biswokobi. A Bengali Brahmin from Calcutta with ancestral gentry roots in Burdwan district and Jessore, Tagore wrote poetry as an eight-year-old. At the age of sixteen, he released his first substantial poems under the pseudonym Bhānusiṃha ("Sun Lion"), which were seized upon by literary authorities as long-lost classics. By 1877 he graduated to his first short stories and dramas, published under his real name. As a humanist, universalist, internationalist, and ardent critic of nationalism, he denounced the British Raj and advocated independence from Britain. As an exponent of the Bengal Renaissance, he advanced a vast canon that comprised paintings, sketches and doodles, hundreds of texts, and some two thousand songs; his legacy also endures in his founding of Visva-Bharati University. Tagore modernised Bengali art by spurning rigid classical forms and resisting linguistic strictures. His novels, stories, songs, dance dramas, and essays spoke to topics political and personal. Gitanjali (Song Offerings), Gora (Fair-Faced) and Ghare-Baire (The Home and the World) are his best-known works, and his verse, short stories, and novels were acclaimed—or panned—for their lyricism, colloquialism, naturalism, and unnatural contemplation. His compositions were chosen by two nations as national anthems: India's "Jana Gana Mana" and Bangladesh's "Amar Shonar Bangla" .The Sri Lankan national anthem was also inspired by his work. His Song "Banglar Mati Banglar Jol" has been adopted as the state anthem of West Bengal.
1529
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%80%20%E0%A6%A8%E0%A6%9C%E0%A6%B0%E0%A7%81%E0%A6%B2%20%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE
কাজী নজরুল ইসলাম
কাজী নজরুল ইসলাম (২৪ মে ১৮৯৯ – ২৯ আগস্ট ১৯৭৬; ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬ – ১২ ভাদ্র ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার মাত্র ২৩ বছরের সাহিত্যিক জীবনে সৃষ্টির যে প্রাচুর্য তা তুলনারহিত। সাহিত্যের নানা শাখায় বিচরণ করলেও তার প্রধান পরিচয় তিনি কবি। তাঁর জীবন শুরু হয়েছিল অকিঞ্চিতকর পরিবেশে। স্কুলের গণ্ডি পার হওয়ার আগেই ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন। মুসলিম পরিবারের সন্তান এবং শৈশবে ইসলামী শিক্ষায় দীক্ষিত হয়েও তিনি বড় হয়েছিলেন একটি ধর্মনিরপেক্ষ সত্তা নিয়ে। একই সঙ্গে তার মধ্যে বিকশিত হয়েছিল একটি বিদ্রোহী সত্তা। ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার তাকে রাজদ্রোহিতার অপরাধে কারাবন্দী করেছিল। তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন অবিভক্ত ভারতের বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হয়েছিলেন। যে নজরুল সুগঠিত দেহ, অপরিমেয় স্বাস্থ্য ও প্রাণখোলা হাসির জন্য বিখ্যাত ছিলেন, ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারাত্মকভাবে স্নায়বিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে পড়লে আকস্মিকভাবে তার সকল সক্রিয়তার অবসান হয়। ফলে ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যু অবধি সুদীর্ঘ ৩৪ বছর তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রযোজনায় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দে তাকে সপরিবারে কলকাতা থেকে ঢাকা স্থানান্তর করা হয়। ১৯৭৬ সালে তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। বিংশ শতাব্দীর বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশে তাকে “জাতীয় কবি“ হিসাবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তার কবিতা ও গানের জনপ্রিয়তা বাংলাভাষী পাঠকের মধ্যে তুঙ্গস্পর্শী। তার মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতা বোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা গত প্রায় একশত বছর যাবৎ বাঙালির মানস পীঠ গঠনে ভূমিকা রেখে চলেছে। জন্ম ও প্রাথমিক জীবন ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে এক বাঙালি মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম। চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকে অবস্থিত। পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তার বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় কাজী সাহেবজান ও কনিষ্ঠ উম্মে কুলসুম। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল "দুখু মিয়া"। নজরুল গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করতেন। মক্তবে (মসজিদ পরিচালিত মুসলিমদের ধর্মীয় স্কুল) কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ সালে যখন তার পিতার মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে। এ সময় নজরুল মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে হাজি পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াযযিন (আজান দাতা) হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে তিনি অল্প বয়সেই ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকর্মে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে। তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়। মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে নজরুল বেশি দিন ছিলেন না। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল) দলে যোগ দেন। তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট উস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফার্সি ও উর্দূ ভাষায় তার দখল ছিল। এছাড়া বজলে করিম মিশ্র ভাষায় গান রচনা করতেন। ধারণা করা হয়, বজলে করিমের প্রভাবেই নজরুল লেটো দলে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ঐ অঞ্চলের জনপ্রিয় লেটো কবি শেখ চকোর (গোদা কবি) এবং কবিয়া বাসুদেবের লেটো ও কবিগানের আসরে নজরুল নিয়মিত অংশ নিতেন। লেটো দলেই সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। এই দলের সাথে তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন, তাদের সাথে অভিনয় শিখতেন এবং তাদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ পুরাণসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন। সেই অল্প বয়সেই তার নাট্যদলের জন্য বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে চাষার সঙ, শকুনীবধ, রাজা যুধিষ্ঠিরের সঙ, দাতা কর্ণ, আকবর বাদশাহ, কবি কালিদাস, বিদ্যাভূতুম, রাজপুত্রের গান, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ এবং মেঘনাদ বধ কাব্য । একদিকে মসজিদ, মাজার ও মক্তব জীবন, অপর দিকে লেটো দলের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের অনেক উপাদান সরবরাহ করেছে। নজরুল কালীদেবীকে নিয়ে প্রচুর শ্যামা সঙ্গীত ও রচনা করেন, নজরুল তার শেষ ভাষনে উল্লেখ্য করেন - “কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।” ১৯১০ সালে নজরুল লেটো দল ছেড়ে ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। লেটো দলে তার প্রতিভায় সকলেই যে মুগ্ধ হয়েছিল তার প্রমাণ নজরুল লেটো ছেড়ে আসার পর তাকে নিয়ে অন্য শিষ্যদের রচিত গান: "আমরা এই অধীন, হয়েছি ওস্তাদহীন / ভাবি তাই নিশিদিন, বিষাদ মনে / নামেতে নজরুল ইসলাম, কি দিব গুণের প্রমাণ", এই নতুন ছাত্রজীবনে তার প্রথম স্কুল ছিল রাণীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুল, এরপর ভর্তি হন মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে যা পরবর্তীতে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে। মাথরুন স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক যিনি সেকালের বিখ্যাত কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার সান্নিধ্য নজরুলের অনুপ্রেরণার একটি উৎস। কুমুদরঞ্জন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নজরুল সম্বন্ধে লিখেছেন, যাহোক, আর্থিক সমস্যা তাকে বেশ দিন এখানে পড়াশোনা করতে দেয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। প্রথমে যোগ দেন বাসুদেবের কবিদলে। এর পর একজন খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নেন। এভাবে বেশ কষ্টের মাঝেই তার বাল্য জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। এই দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ'র সাথে তার পরিচয় হয়। দোকানে একা একা বসে নজরুল যেসব কবিতা ও ছড়া রচনা করতেন তা দেখে রফিজউল্লাহ তার প্রতিভার পরিচয় পান। তিনিই নজরুলকে ১৯১৪ খ্রিষ্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আবার রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে যান এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণি থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই পড়াশোনা করেন। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষা না দিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। এই স্কুলে অধ্যয়নকালে নজরুল এখানকার চারজন শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এরা হলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল, বিপ্লবী চেতনাবিশিষ্ট নিবারণচন্দ্র ঘটক, ফার্সি সাহিত্যের হাফিজ নুরুন্নবী এবং সাহিত্য চর্চার নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। সৈনিক জীবন ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশের নওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। উক্ত রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবির কাছে তিনি ফার্সি ভাষা শিখেন। এছাড়া সহ-সৈনিকদের সাথে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখেন, আর গদ্য-পদ্যের চর্চাও চলতে থাকে একই সাথে। করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধি ইত্যাদি। এই করাচি সেনানিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসী, ভারতবর্ষ, ভারতী, মানসী, মর্ম্মবাণী, সবুজপত্র, সওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা। এই সময় তার কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ফার্সি কবি হাফিজের কিছু বই ছিল। এ সূত্রে বলা যায় নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনানিবাসেই। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এরপর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন। সাংবাদিক জীবন যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্‌ফর আহমদ। এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়। প্রথম দিকেই মোসলেম ভারত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, উপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস বাঁধন হারা এবং কবিতা বোধন, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী, খেয়া-পারের তরণী, কোরবানি, মোহরর্‌ম, ফাতেহা-ই-দোয়াজ্‌দম্‌, এই লেখাগুলো সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। এর প্রেক্ষিতে কবি ও সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার মোসলেম ভারত পত্রিকায় তার খেয়া-পারের তরণী এবং বাদল প্রাতের শরাব কবিতা দুটির প্রশংসা করে একটি সমালোচনা প্রবন্ধ লিখেন। এ থেকেই দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচকদের সাথে নজরুলের ঘনিষ্ঠ পরিচয় শুরু হয়। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে কাজী মোতাহার হোসেন, মোজাম্মেল হক, কাজী আবদুল ওদুদ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, আফজালুল হক প্রমুখের সাথে পরিচয় হয়। তৎকালীন কলকাতার দুটি জনপ্রিয় সাহিত্যিক আসর গজেনদার আড্ডা এবং ভারতীয় আড্ডায় অংশগ্রহণের সুবাদে পরিচিত হন অতুলপ্রসাদ সেন, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমাঙ্কুর আতর্থী, শিশিরকুমার ভাদুড়ী, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মেলন্দু লাহিড়ী, ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ করমতুল্লা খাঁ প্রমুখের সাথে। ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন থেকে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কাজী মোতাহার হোসেনের সাথে নজরুলের বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুলাই তারিখে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ঐ বছরই এই পত্রিকায় "মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারী শুরু হয়। যাই হোক সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান। একইসাথে মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিতা ও সঙ্গীতের চর্চাও চলছিল একাধারে। তখনও তিনি নিজে গান লিখে সুর দিতে শুরু করেননি। তবে ব্রাহ্মসমাজের সঙ্গীতজ্ঞ মোহিনী সেনগুপ্তা তার কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়ে স্বরলিপিসহ পত্রিকায় প্রকাশ করছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে: হয়তো তোমার পাব দেখা, ওরে এ কোন স্নেহ-সুরধুনী- সওগাত পত্রিকার ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম গান প্রকাশিত হয়। গানটি ছিল: "বাজাও প্রভু বাজাও ঘন"। পারিবারিক জীবন ১৯২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসের দিকে নজরুল মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন। তার সাথেই তিনি প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সাথে যার সাথে তার প্রথমে প্রণয় ও পরে বিয়ে হয়েছিল। তবে এর আগে নজরুলের বিয়ে ঠিক হয় আলী আকবর খানের ভগ্নী নার্গিস আসার খানমের সাথে। বিয়ের আখত সম্পন্ন হবার পরে কাবিনের নজরুলের ঘর জামাই থাকার শর্ত নিয়ে বিরোধ বাধে। নজরুল ঘর জামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং বাসর সম্পন্ন হবার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। তখন নজরুল খুব অসুস্থ ছিলেন এবং প্রমিলা দেবী নজরুলের পরিচর্যা করেন। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। নজরুল সাম্যবাদের একজন অগ্রদূত ছিলেন। তিনি মুসলিম হয়েও চার সন্তানের নাম বাংলা এবং আরবি/ফারসি উভয় ভাষাতেই নামকরণ করেন। যথা: কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ। বিদ্রোহী নজরুল তখন দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নজরুল কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে থেকে আবার কুমিল্লা ফিরে যান ১৯ জুনে- এখানে যতদিন ছিলেন ততদিনে তিনি পরিণত হন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে। তার মূল কাজ ছিল শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাওয়া। তখনকার সময়ে তার রচিত ও সুরারোপিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে "এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত-নিশি ভোরে/ একি এ শুনি ওরে/ মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে" প্রভৃতি। এখানে ১৭ দিন থেকে তিনি স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল- এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেন, "ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী"- নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। এই কবিতায় নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেন:- ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দের ১২ আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করেন। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো। ১৯২০-এর দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপর স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে তাতে ধূমকেতু পত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে এই বাণী লিখা থাকতো। পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশিত হয়। এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দি প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দি দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দি বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন: ১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। নজরুলকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন (১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি ২২) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে কবিতাটি রচনা করেন। অসুস্থতা ও মৃত্যু নবযুগে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল বেতারে কাজ করছিলেন। এমন সময়ই অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুষ্পষ্টরূপে জানা যায় ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে। এরপর তাকে মূলত হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এতে তার অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। সেই সময় তাকে ইউরোপে পাঠানো সম্ভব হলে নিউরো সার্জারি করা হত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। এরপর নজরুল পরিবার ভারতে নিভৃত সময় কাটাতে থাকে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তারা নিভৃতে ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে কবি ও কবিপত্নীকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল নজরুলের আরোগ্যের জন্য গঠিত একটি সংগঠন যার নাম ছিল নজরুল নিরাময় সমিতি, এছাড়া তৎকালীন ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় সহযোগিতা করেছিলেন। কবি চার মাস রাঁচিতে ছিলেন। এরপর ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে নজরুল ও প্রমীলা দেবীকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। মে ১০ তারিখে লন্ডনের উদ্দেশ্যে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ছাড়েন। লন্ডন পৌঁছানোর পর বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন: রাসেল ব্রেইন, উইলিয়াম সেজিয়েন্ট এবং ম্যাককিস্ক- তারা তিনবার নজরুলের সাথে দেখা করেন। প্রতিটি সেশনের সময় তারা ২৫০ পাউন্ড করে পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। রাসেল ব্রেইনের মতে নজরুলের রোগটি ছিল দুরারোগ্য বলতে গেলে আরোগ্য করা ছিল অসম্ভব। একটি গ্রুপ নির্ণয় করেছিল যে নজরুল "ইনভল্যুশনাল সাইকোসিস" রোগে ভুগছেন। এছাড়া কলকাতায় বসবাসরত ভারতীয় চিকিৎসকরাও আলাদা একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। উভয় গ্রুপই এই ব্যাপারে একমত হয়েছিল যে, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা ছিল খুবই অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। লন্ডনে অবস্থিত লন্ডন ক্লিনিকে কবির এয়ার এনসেফালোগ্রাফি নামক এক্স-রে করানো হয়। এতে দেখা যায় তার মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব সঙ্কুচিত হয়ে গেছে। ড: ম্যাককিস্কের মত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক একটি পদ্ধতি প্রয়োগকে যথোপযুক্ত মনে করেন যার নাম ছিল ম্যাককিস্ক অপারেশন। অবশ্য ড: ব্রেইন এর বিরোধিতা করেছিলেন। এই সময় নজরুলের মেডিকেল রিপোর্ট ভিয়েনার বিখ্যাত চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও পাঠানো হয়েছিল। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসার্জন অধ্যাপক রোঁয়েন্টগেন ম্যাককিস্ক অপারেশনের বিরোধিতা করেন। ভিয়েনার চিকিৎসকরাও এই অপারেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানান। তারা সবাই এক্ষেত্রে অন্য আরেকটি পরীক্ষার কথা বলেন যাতে মস্তিষ্কের রক্তবাহগুলির মধ্যে এক্স-রেতে দৃশ্যমান রং ভরে রক্তবাহগুলির ছবি তোলা হয় (সেরিব্রাল অ্যানজিওগ্রাফি)- কবির শুভাকাঙ্খীদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে ভিয়েনার চিকিৎসক ডঃ হ্যান্স হফের অধীনে ভর্তি করানো হয়। এই চিকিৎসক নোবেল বিজয়ী চিকিৎসক জুলিয়াস ওয়েগনার-জাউরেগের অন্যতম ছাত্র। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর কবিকে পরীক্ষা করানো হয়। এর ফলাফল থেকে ড. হফ বলেন যে, কবি নিশ্চিতভাবে পিক্‌স ডিজিজ নামক একটি নিউরনঘটিত সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্তদের মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল ও পার্শ্বীয় লোব সঙ্কুচিত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন বর্তমান অবস্থা থেকে কবিকে আরোগ্য করে তোলা অসম্ভব। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা ভিয়েনায় নজরুল নামে একটি প্রবন্ধ ছাপায় যার লেখক ছিলেন ডঃ অশোক বাগচি- তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভিয়েনায় অবস্থান করছিলেন এবং নজরুলের চিকিৎসা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। যাহোক, ব্রিটিশ চিকিৎসকরা নজরুলের চিকিৎসার জন্য বড় অঙ্কের ফি চেয়েছিল যেখানে ইউরোপের অন্য অংশের কোন চিকিৎসকই ফি নেননি। অচিরেই নজরুল ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ভিয়েনা যান এবং ড. হ্যান্স হফের কাছে বিস্তারিত শোনেন। নজরুলের সাথে যারা ইউরোপ গিয়েছিলেন তারা সবাই ১৯৫৩ সালের ১৪ ডিসেম্বর রোম থেকে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। বাংলাদেশে আগমন ও প্রয়াণ ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে নজরুলকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদানের সরকারি আদেশ জারী করা হয়। এরপর যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে এবং বিখ্যাত গিটারবাদক কাজী অনিরুদ্ধ মৃত্যুবরণ করে। ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, "মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই / যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই":- কবির এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তার সমাধি রচিত হয়। তবে প্রমিলা দেবীর শেষ ইচ্ছা ছিল তার স্বামীকে যেন তার কবরের পাশে (চুরুলিয়ায় নজরুলের পৈতৃক বাড়িতে) সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু প্রমিলার শেষ ইচ্ছাটি আর পূরণ হয়ে উঠে নি। তার জানাজার নামাজে ১০ হাজারেরও অধিক মানুষ অংশ নেয়। জানাজা নামায আদায়ের পরে রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকামণ্ডিত নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে নিয়ে যান। বাংলাদেশে তার মৃত্যু উপলক্ষে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয় এবং ভারতের আইনসভায় কবির সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সাহিত্যকর্ম কবিতা ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ও ভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: "প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্‌-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা" ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তার শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি, লিচু-চোর, খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমাণ। কবি তার মানুষ কবিতায় বলেছিলেন: তিনি কালী দেবিকে নিয়ে অনেক শ্যামা সঙ্গিত রচনা করেন, ইসলামী গজলও রচনা করেন। সঙ্গীত নজরুলের গানের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। নজরুলের গান নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত। ১৯৩৮ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। সেখানে তিনটি অনুষ্ঠান যথাক্রমে 'হারামণি', 'নবরাগমালিকা' ও 'গীতিবিচিত্রা'র জন্য তাকে প্রচুর গান লিখতে হতো। 'হারামণি' অনুষ্ঠানটি কলকাতা বেতার কেন্দ্রে প্রতি মাসে একবার করে প্রচারিত হতো যেখানে তিনি অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত ও বিলুপ্তপ্রায় রাগরাগিণী নিয়ে গান পরিবেশন করতেন। উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানের শুরুতে তিনি কোনো একটি লুপ্তপ্রায় রাগের পরিচিতি দিয়ে সেই রাগের সুরে তার নিজের লেখা নতুন গান পরিবেশন করতেন। এই কাজ করতে গিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম নবাব আলী চৌধুরীর রচনায় 'ম আরিফুন নাগমাত' ও ফার্সি ভাষায় রচিত আমীর খসরুর বিভিন্ন বই পড়তেন এবং সেগুলোর সহায়তা নিয়ে বিভিন্ন ধরনের রাগ আয়ত্ত করতেন। এসব হারানো রাগের ওপর তিনি চল্লিশটিরও বেশি গান রচনা করেন। তবে স্বভাবে অগোছালো হওয়ায় নজরুল টুকরো কাগজে এসব গান লিখলেও সেগুলো মাসিক ভারতবর্ষের সঙ্গীত বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জগৎ ঘটক একটি মোটা বাঁধানো খাতায় স্বরলিপিসহ তুলে রাখতেন। বাংলা গানের দুর্ভাগ্য যে, এই সংকলিত খাতাটি পরবর্তী সময়ে হারিয়ে যায় যার বিজ্ঞপ্তি তিনি সে সময়কালের দৈনিক সংবাদপত্রগুলোতে দিয়েছিলেন কিন্তু সেটি আর পাওয়া যায়নি। গদ্য রচনা, গল্প ও উপন্যাস নজরুলের প্রথম গদ্য রচনা ছিল "বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী"। ১৯১৯ সালের মে মাসে এটি সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সৈনিক থাকা অবস্থায় করাচি সেনানিবাসে বসে এটি রচনা করেছিলেন। এখান থেকেই মূলত তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটেছিল। এখানে বসেই বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: "হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে"। ১৯২২ সালে নজরুলের একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয় যার নাম ব্যথার দান- এছাড়া একই বছর প্রবন্ধ-সংকলন যুগবাণী প্রকাশিত হয়। চলচ্চিত্র নজরুল 'ধূপছায়া ' নামে একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন। এটিতে তিনি একটি চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন। ১৯৩১ সালে প্রথম বাংলা সবাক চলচ্চিত্র ‘জামাই ষষ্ঠী’র ও শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত ‘গৃহদাহ’ চলচ্চিত্রের সুরকার ছিলেন তিনি। গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন ১৯৩৩ সালে পায়োনিয়ার ফিল্মস কোম্পানির প্রযোজনায় নির্মিত চলচ্চিত্র ‘ধ্রুব’ এবং সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন ১৯৩৭ সালের ‘গ্রহের ফের’ চলচ্চিত্রের। ১৯৩৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘পাতালপুরী’ চলচ্চিত্রের ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৩৮ সালে নির্মিত ‘গোরা’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। ১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাপুড়ে’ চলচ্চিত্রের কাহিনীকার ও সুরকার ছিলেন তিনি। ‘রজত জয়ন্তী’, ‘নন্দিনী’, ‘অভিনয়’, ‘দিকশূল’ চলচ্চিত্রের গীতিকার ছিলেন নজরুল। ‘চৌরঙ্গী’ চলচ্চিত্রের গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন নজরুল। চৌরঙ্গী হিন্দিতে নির্মিত হলেও সেটার জন্য ৭টি হিন্দি গান লেখেন তিনি। রাজনৈতিক দর্শন সৈনিক জীবন ত্যাগ করে নজরুল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে বাস করছিলেন। মুজফ্‌ফর আহমদ ছিলেন এদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত। এখান থেকেই তাই নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু হয়। মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতি ও বক্তৃতায় অংশ নিতেন। এ সময় থেকেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সাথে পরিচিত হন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তার লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন সাম্যবাদী ও সর্বহারা কবিতাগুচ্ছ। এরই সাথে প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুবাদ জাগ অনশন বন্দী ওঠ রে যত- তার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রেড ফ্ল্যাগ-এর অবলম্বনে রচিত রক্তপতাকার গান। তখন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন এবং মাওলানা মুহাম্মদ আলি ও শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন- অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতারণ। আর খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্ত শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা, কারণ এই সমন্বিত সুলতানী শাসন ব্যবস্থার প্রধান তথা তুরস্কের সুলতানকে প্রায় সকল মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের খলিফা জ্ঞান করতো। নজরুল এই দুটি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা তথা স্বরাজ অর্জনে বিশ্বাস করতেন যা মহাত্মা গান্ধীর দর্শনের বিপরীত ছিল। আবার মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের সালতানাত উচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন তুরস্ক গড়ে তোলার আন্দোলনের প্রতি নজরুলের সমর্থন ছিল। তারপরও তিনি অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। এর কারণ, এই সংগ্রাম দুটি ভারতীয় হিন্দু মুসলমানদের সম্মিলিত সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। তবে সব দিক বিচারে নজরুল তার রাষ্ট্রীয় ধ্যান ধারণায় সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়েছিলেন কামাল পাশার দ্বারা। নজরুল ভেবেছিলেন তুরস্কের মুসলমানরা তাদের দেশে যা করতে পেরেছে ভারতীয় উপমহাদেশে কেন তা সম্ভব হবে না? গোড়ামী, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নজরুলের অবস্থান ছিল কঠোর। আর তার এই অবস্থানের পিছনে সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল কামাল পাশার। সে হিসেবে তার জীবনের নায়ক ছিলেন কামাল পাশা। নজরুলও তার বিদ্রোহী জীবনে অনুরূপ ভূমিকা পালনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। উল্লেখ্য ১৯২১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে মুজফ্‌ফর আহমদ ও নজরুল তালতলা লেনের যে বাসায় ছিলেন সে বাড়িতেই ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়েছিল। ১৯১৭ সনের রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমেও নজরুল প্রভাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে কখনই এই দলের সদস্য হন নি, যদিও কমরেড মুজফ্‌ফর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আজীবন। ১৯২০ এর দশকের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণের চেষ্টা করেন। প্রথমে কংগ্রেসে সমর্থন লাভের জন্য তিনি কলকাতা যান। কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে তিনি একাই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে তিনি তেমন সাফল্য পান নি। এরপর সাহিত্যের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক চিন্তার বহিঃপ্রকাশ অব্যাহত থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে যায়। সম্মাননা ভারত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় "নজরুল অ্যাকাডেমি" নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে "কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন"। ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাংলা সাহিত্যের সর্বোচ্চ পুরস্কার জগত্তারিণী স্বর্ণপদক নজরুলকে প্রদান করা হয়। ১৯৬০ সালে ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণে ভূষিত করা হয়। বাংলাদেশ কাজী নজরুল ইসলামকে ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। তার রচিত "চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল" বাংলাদেশের রণসঙ্গীত হিসেবে গৃহীত। নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমি, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ও শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়। এছাড়া সরকারিভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউট- ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ''। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। চিত্রশালা আরও দেখুন নজরুলগীতি নজরুল রচনা তালিকা ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ টীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি বহিঃসংযোগ ১৮৯৯-এ জন্ম ১৯৭৬-এ মৃত্যু বাঙালি কবি বাঙালি গীতিকার বাঙালি সুরকার বাঙালি ছোটগল্পকার বাঙালি ঔপন্যাসিক বাঙালি চলচ্চিত্র অভিনেতা ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক বিজয়ী সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী মুসলিম কবি বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বাংলাদেশী সুন্নি মুসলিম পশ্চিম বর্ধমান জেলার ব্যক্তি বিদ্রোহী কবি বাংলাদেশী পুরুষ কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় অনুবাদক ২০ শতকের ভারতীয় দার্শনিক ভারতীয় পুরুষ কবি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী কবি ২০শ শতাব্দীর বাঙালি কবি ১৯৭৬-এ একুশে পদক বিজয়ী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় দার্শনিক বাঙালি ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি বাংলাদেশী পুরুষ সঙ্গীতজ্ঞ ভারতীয় দিনলিপিকার ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী শিল্পী ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী সঙ্গীতশিল্পী ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী অভিনেতা ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী লেখক ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী সঙ্গীতজ্ঞ বাঙালি পুরুষ কবি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী ব্যক্তি বাঙালি মুসলিম বাঙালি জাতীয়তাবাদী বাঙালি লেখক হিন্দুধর্ম ও ইসলাম ঢাকার লেখক একুশে পদক বিজয়ী স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্য ও শিক্ষায় পদ্মভূষণ প্রাপক পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গীতজ্ঞ কাজী নজরুল ইসলামের সমাধিসৌধে সমাধিস্থ পশ্চিমবঙ্গের কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় লেখক ভারতীয় পুরুষ লেখক ২০শ শতাব্দীর বাঙালি পশ্চিমবঙ্গের ব্যক্তি ভারতীয় কবি ভারতীয় ছোটগল্পকার ভারতীয় গীতিকার ভারতীয় নাট্যকার ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় নাট্যকার ভারতীয় পুরুষ নাট্যকার ভারতীয় প্রাবন্ধিক ভারতীয় পুরুষ প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর প্রাবন্ধিক ভারতীয় ঔপন্যাসিক ভারতীয় পুরুষ ঔপন্যাসিক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিক
https://en.wikipedia.org/wiki/Kazi_Nazrul_Islam
Kazi Nazrul Islam
Kazi Nazrul Islam (Bengali: কাজী নজরুল ইসলাম, pronounced [kad͡ʒi ˈnod͡ʒɾul islam] ; 25 May 1899 – 29 August 1976) was a Bengali poet, writer, journalist, and musician. He is the national poet of Bangladesh. Nazrul produced a large body of poetry, music, messages, novels, and stories with themes that included equality, justice, anti-imperialism, humanity, rebellion against oppression and religious devotion. Nazrul Islam's activism for political and social justice as well as writing a poem titled as "Bidrohī", meaning "the rebel" in Bengali, earned him the title of "Bidrohī Kôbi" (Rebel Poet). His compositions form the avant-garde music genre of Nazrul Gīti (Music of Nazrul). Born into a Bengali Muslim Kazi family hailing from Burdwan district in Bengal Presidency (now in West Bengal, India), Nazrul Islam received religious education and as a young man worked as a muezzin at a local mosque. He learned about poetry, drama, and literature while working with the rural theatrical group Leṭor Dôl, Leṭo being a folk song genre of West Bengal usually performed by the people from Muslim community of the region. He joined the British Indian Army in 1917 and was posted in Karachi. Nazrul Islam established himself as a journalist in Calcutta after the war ended. He criticised the British Raj and called for revolution through his famous poetic works, such as "Bidrohī" ('The Rebel') and "Bhangar Gan" ('The Song of Destruction'), as well as in his publication Dhūmketu ('The Comet'). His nationalist activism in Indian independence movement led to his frequent imprisonment by the colonial British authorities. While in prison, Nazrul Islam wrote the "Rajbôndīr Jôbanbôndī" ('Deposition of a Political Prisoner'). His writings greatly inspired Bengalis of East Pakistan during the Bangladesh Liberation War. Nazrul Islam's writings explored themes such as freedom, humanity, love, and revolution. He opposed all forms of bigotry and fundamentalism, including religious, caste-based and gender-based. Nazrul wrote short stories, novels, and essays but is best known for his songs and poems. He introduced the ghazal songs in the Bengali language and is also known for his extensive use of Arabic and Persian influenced Bengali words in his works. Nazrul Islam wrote and composed music for nearly 4,000 songs (many recorded on HMV gramophone records), collectively known as Nazrul Gīti. In 1942 at the age of 43, he began to be affected by an unknown disease, losing his voice and memory. A medical team in Vienna diagnosed the disease as Pick's disease, a rare incurable neurodegenerative disease. It caused Nazrul Islam's health to decline steadily and forced him to live in isolation. He was also admitted in Ranchi (Jharkhand) psychiatric hospital for many years. At the invitation of the Government of Bangladesh, Nazrul Islam's family took him to Bangladesh and moved to Dhaka in 1972. He died on 29 August 1976.
1531
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A1%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%A1%20%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%A5
ডোনাল্ড কানুথ
ডনাল্ড কানুথ মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ও স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়-এর প্রফেসর এমেরিটাস। তার বই দ্য আর্ট অফ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কম্পিউটার বিজ্ঞানের যুগসুচনাকারী গ্রন্থ, তিনি টুরিং পুরস্কার সহ অসংখ্য সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। কানুথকে বলা হয় অ্যালগরিদমিক বিশ্লেষণের জনক। অ্যালগরিদমের গনন জটিলতা বিশ্লেষণের কড়াকড়ি গাণিতিক পদ্ধতির উদ্ভাবনে তিনি অবদান রাখেন এবং এর মাধ্যমে অসীমতটীয় সংকেতকেও জনপ্রিয় করে তোলেন। জন্ম ও শৈশব কানুথ উইসকনসিন রাজ্যের মিলউকি শহরে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানে বাবা একটা ছোটখাট মুদ্রণ ব্যবসার মালিক ছিলেন এবং মিলাউকির লুথেরান হাই স্কুলে হিসাবরক্ষণের শিক্ষক ছিলেন। সেই বিদ্যালয়েই কানুথ পরে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন সন্মাননা লাভ করেন। অপ্রচলিত পথে বুদ্ধি কাজে লাগানোর ব্যপারে শৈশবেই কানুথ পারদর্শী ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র থাকাকালীন সময়ে একটা প্রতিযোগিতা জেতেন। সেখানে তিনি "Ziegler's Giant Bar" বাক্যাংশটির বর্ণগুলি ব্যবহার করে ৪৫০০টি বিভিন্ন শব্দ তৈরি করেন; বিচারকদের তালিকায় ছিল মাত্র ২৫০০টি শব্দ। এই প্রতিযোগিতা থেকে প্রাপ্ত পুরস্কার ছিল তাঁর স্কুলের জন্য একটি টেলিভিশন এবং শ্রেণীর সবার জন্য ক্যান্ডি বার। তথ্যসূত্র মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ১৯৩৮-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স বিজয়ী গ্রেস মারে হপার অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী হার্ভি পুরস্কার বিজয়ী আইইই জন ভন নিউম্যান মেডেল বিজয়ী ফ্যারাডে পদক বিজয়ী জার্মান বংশোদ্ভূত মার্কিন ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ ২১শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ মার্কিন সুরকার মার্কিন কম্পিউটার প্রোগ্রামার কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী আমেরিকান ম্যাথমেটিকাল সোসাইটির সভ্য অ্যাসোসিয়েশন ফর কম্পিউটিং মেশিনারির সভ্য রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য রুশ বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির বিদেশী সদস্য ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য ক্যালিফোর্নিয়ার বিজ্ঞানী টুরিং পুরস্কার বিজয়ী
https://en.wikipedia.org/wiki/Donald_Knuth
Donald Knuth
Donald Ervin Knuth ( kə-NOOTH; born January 10, 1938) is an American computer scientist and mathematician. He is a professor emeritus at Stanford University. He is the 1974 recipient of the ACM Turing Award, informally considered the Nobel Prize of computer science. Knuth has been called the "father of the analysis of algorithms". Knuth is the author of the multi-volume work The Art of Computer Programming. He contributed to the development of the rigorous analysis of the computational complexity of algorithms and systematized formal mathematical techniques for it. In the process, he also popularized the asymptotic notation. In addition to fundamental contributions in several branches of theoretical computer science, Knuth is the creator of the TeX computer typesetting system, the related METAFONT font definition language and rendering system, and the Computer Modern family of typefaces. As a writer and scholar, Knuth created the WEB and CWEB computer programming systems designed to encourage and facilitate literate programming, and designed the MIX/MMIX instruction set architectures. He strongly opposes the granting of software patents, and has expressed his opinion to the United States Patent and Trademark Office and European Patent Organisation.
1532
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%A1%20%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A8
ক্লড শ্যানন
ক্লড শ্যানন (এপ্রিল ৩০, ১৯১৬ - ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০০১) একজন মার্কিন গণিতবিদ, তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশলী ও বিজ্ঞানী। তিনি তথ্যতত্ত্ব বা Information theory এবং ডিজিটাল বর্তনী বিষয়ে গবেষণার সূচনা করেন এবং তিনি "তথ্য তত্ত্বের জনক" হিসেবে পরিচিত। প্রাথমিক জীবন শ্যাননের জন্ম মিশিগানের পেটস্কি শহরে। জীবনের প্রথম ১৬ বছর কাটিয়েছেন মিশিগানের গেলর্ড শহরে। তিনি সেখানকার গেলর্ড হাই স্কুল হতে ১৯৩২ খ্রীস্টাব্দে পাস করেন। কিশোর বয়সে তিনি ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর বার্তাবাহক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি টমাস আলভা এডিসন এর দূর সম্পর্কের আত্মীয়। বুলিয়ান তত্ত্ব ১৯৩২ খ্রীস্টাব্দে শ্যানন মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয় এ প্রবেশ করেন। সেখানে তিনি জর্জ বূল এর তত্ত্ব সম্পর্কে জানতে পারেন। ১৯৩৬ খ্রীস্টাব্দে তিনি তড়িৎ প্রকৌশল ও গণিত - এই দুই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করেন। এর পর তিনি ম্যাসাচুসেট্‌স ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি) তে গ্রাজুয়েট শিক্ষা শুরু করেন। সেখানে তিনি ভ্যানেভার বুশ এর ডিফারেন্সিয়াল এ্যানালাইজার (যা এক প্রকারের এনালগ কম্পিউটার) এর উপর কাজ করেন। এই গবেষণা করার সময় শ্যানন উপলব্ধি করেন যে, বূলের তত্ত্ব কম্পিউটার বিজ্ঞানে খুব কার্যকর ভাবে ব্যবহার করা যাবে। তার মাস্টার্স গবেষণার থিসিস এর উপর একটি গবেষণাপত্র, A Symbolic Analysis of Relay and Switching Circuits, ১৯৩৮ খ্রীস্টাব্দে ট্রান্সাকশন্স অফ আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ ইলেক্ট্রিকাল ইঞ্জিনিয়ারস নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই পত্রটির জন্য শ্যানন আমেরিকান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটের আলফ্রেড নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক হাওয়ার্ড গার্ডনার শ্যাননের এই থিসিসকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস্টার্স থিসিস বলে অভিহিত করেছেন। তথ্যসূত্র ১৯১৬-এ জন্ম ২০০১-এ মৃত্যু মার্কিন গণিতবিদ মার্কিন কম্পিউটার বিজ্ঞানী ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির প্রাক্তন শিক্ষার্থী ম্যাসাচুসেট্‌স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির শিক্ষক মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আইইইই মেডেল অব অনার বিজয়ী ন্যাশনাল মেডেল অফ সাইন্স বিজয়ী হার্ভি পুরস্কার বিজয়ী ক্লড ই. শ্যানন পুরস্কার বিজয়ী ২০শ শতাব্দীর মার্কিন প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর মার্কিন পুরুষ লেখক ২০শ শতাব্দীর মার্কিন গণিতবিদ ২০শ শতাব্দীর মার্কিন অ-কল্পকাহিনী লেখক ২০শ শতাব্দীর নাস্তিক ২১শ শতাব্দীর নাস্তিক মার্কিন নাস্তিক মার্কিন বংশাণুবিদ মার্কিন পুরুষ প্রাবন্ধিক আলঝেইমার রোগ থেকে মৃত্যু রয়েল সোসাইটির বিদেশি সদস্য তথ্য তত্ত্ব মার্কিন ফিলোসফিক্যাল সোসাইটির সদস্য রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য স্নায়ুযুদ্ধের ব্যক্তিত্ব
https://en.wikipedia.org/wiki/Claude_Shannon
Claude Shannon
Claude Elwood Shannon (April 30, 1916 – February 24, 2001) was an American mathematician, electrical engineer, computer scientist and cryptographer known as the "father of information theory" and as the "father of the Information Age". Shannon was the first to describe the Boolean gates (electronic circuits) that are essential to all digital electronic circuits, and was one of the founding fathers of artificial intelligence. He is credited alongside George Boole for laying the foundations of the Information Age. At the University of Michigan, Shannon dual degreed, graduating with a Bachelor of Science in both electrical engineering and mathematics in 1936. A 21-year-old master's degree student at the Massachusetts Institute of Technology (MIT) in electrical engineering, his thesis concerned switching circuit theory, demonstrating that electrical applications of Boolean algebra could construct any logical numerical relationship, thereby establishing the theory behind digital computing and digital circuits. The thesis has been claimed to be the most important master's thesis of all time, as in 1985, Howard Gardner described it as "possibly the most important, and also the most famous, master's thesis of the century", while Herman Goldstine described it as "surely ... one of the most important master's theses ever written ... It helped to change digital circuit design from an art to a science." It has also been called the "birth certificate of the digital revolution", and it won the 1939 Alfred Noble Prize. Shannon then graduated with a PhD in mathematics from MIT in 1940, with his thesis focused on genetics, with it deriving important results, but it went unpublished. Shannon contributed to the field of cryptanalysis for national defense of the United States during World War II, including his fundamental work on codebreaking and secure telecommunications, writing a paper which is considered one of the foundational pieces of modern cryptography, with his work described as "a turning point, and marked the closure of classical cryptography and the beginning of modern cryptography." The work of Shannon is the foundation of secret-key cryptography, including the work of Horst Feistel, the Data Encryption Standard (DES), Advanced Encryption Standard (AES), and more. As a result, Shannon has been called the "founding father of modern cryptography". His mathematical theory of communication laid the foundations for the field of information theory, with his famous paper being called the "Magna Carta of the Information Age" by Scientific American, along with his work being described as being at "the heart of today's digital information technology". Robert G. Gallager referred to the paper as a "blueprint for the digital era". Regarding the influence that Shannon had on the digital age, Solomon W. Golomb remarked "It's like saying how much influence the inventor of the alphabet has had on literature." Shannon's theory is widely used and has been fundamental to the success of many scientific endeavors, such as the invention of the compact disc, the development of the Internet, feasibility of mobile phones, the understanding of black holes, and more, and is at the intersection of numerous important fields. Shannon made numerous contributions to the field of artificial intelligence, writing papers on programming a computer for chess, which have been immensely influential, and also his Theseus machine was the first electrical device to learn by trial and error, being one of the first examples of artificial intelligence. He also co-organized and participated in the Dartmouth workshop of 1956, considered the founding event of the field of artificial intelligence. He also made contributions to multiple other fields, such as detection theory and combinatorics. Rodney Brooks declared that Shannon was the 20th century engineer who contributed the most to 21st century technologies. Shannon's achievements are considered to be on par, in his field, with those of Albert Einstein and Sir Isaac Newton in theirs.
1533
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%AC%E0%A7%80%E0%A6%9C%E0%A6%97%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%A4
বুলিয়ান বীজগণিত
বুলিয়ান বীজগণিত নিয়ে ইংরেজ গণিতবিদ জর্জ বুল ১৮৪৭ সালে তার প্রকাশিত প্রথম গ্রন্থ দ্য ম্যাথমেটিক্যাল অ্যানালাইসিস ওফ লজিক (যুক্তিবিজ্ঞানের গাণিতিক বিশ্লেষণ)-এ‌ সর্বপ্রথম আলোচনা করেন। পরবর্তীতে তিনি ১৮৫৪ সালে গণিত ও যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে তার এন ইনভেস্টিগেশান অফ দ্য লজ অফ থট (চিন্তার নিয়ম নিয়ে কিছু চিন্তাভাবনা) গ্রন্থে বুলিয়ান বীজগণিত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। বুলিয়ান বীজগণিত তিনভাবে সাধারণ বীজগণিত থেকে ভিন্ন হতে পারে: চলকের মান গ্রহণে, যা সাংখ্যিক কোন চিহ্নের বদলে লজিক মেনে চলে, যথাক্রমে "১" এবং "০"; এই মানগুলোতে প্রযোজ্য অপারেশনে; এবং এই অপারেশনগুলোর বৈশিষ্ট্যে, অর্থাৎ তাদের নিয়মে। গাণিতিক যুক্তি, ডিজিটাল যুক্তি, গণকযন্ত্রের প্রোগ্রামিং, সেট তত্ত্ব এবং পরিসংখ্যানে বুলিয়ান বীজগণিতের ব্যবহার রয়েছে। জর্জ বুল সর্বপ্রথম গণিত ও যুক্তির মধ্যে সম্পর্ক আবিষ্কার করেন এবং গণিত ও যুক্তির ওপর ভিত্তি করে এক ধরনের বীজগণিত তৈরি করেন, যাকে বুলিয়ান বীজগণিত বলা হয়। সত্যক সারণি বুলিয়ান বীজগণিতে সত্যক সারণি বলতে বোঝায় একাধিক শর্তের বিভিন্ন মানের জন্য সম্পূর্ণ শর্তের মান কি সত্য নাকি মিথ্যা তা প্রকাশক সারণি৷যেমন বক্তব্যটির ক্ষেত্রে বক্তব্যটি সত্য হবে যদি কিন্তু হয় বক্তব্যটি সত্য হবে যদি কিন্তু হয় বক্তব্যটি মিথ্যা হবে যদি কিন্তু হয় বক্তব্যটি মিথ্যা হবে যদি কিন্তু হয়৷ উপর্যুক্ত ক্ষেত্রগুলোকে সত্যক সারণিরূপে প্রকাশ করলে পাওয়া যাবে অপারেশনসমূহ বুলিয়ান বীজগণিতে মূলত তিনটি মৌলিক অপারেশন বা ক্রিয়া রয়েছে-যৌক্তিক যোগ,যৌক্তিক গুণ এবং পরিপূরক৷ পরবর্তীকালে ক্লড শ্যানন নামে তার এক ছাত্র বুলিয়ান অ্যালজেব্রাকে ইলেকট্রনিক্স এর সাথে যুক্ত করেন এবং তা ব্যবহার ও করেন। ফলে বৈদ্যুতিক গণনা যন্ত্র তৈরি কাজের শুরু হয়। যৌক্তিক যোগ বুলিয়ান বীজগণিতে যৌক্তিক যোগ মানে সাধারণ বিবৃতিতে অথবা বোঝায়৷ যেমন - যদি বৃষ্টি হয় অথবা রাস্তা ভেজা থাকে তাহলে করিম যাবে৷ এখন রাস্তা ভেজা থাকলেই করিম যাবে৷আবার বৃষ্টি হলেই করিম যাবে৷ দুটি শর্তের একটি সত্য হলেই করিম যাবে৷ বুলিয়ান বীজগণিতেে বক্তব্যটি হবে - (যেখানে বৃষ্টি হওয়ার চলক a এবং রাস্তা ভেজা থাকার চলক b) তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ How Stuff Works – Boolean Logic Science and Technology - Boolean Algebra contains a list and proof of Boolean theorems and laws. বীজগাণিতিক যুক্তি
https://en.wikipedia.org/wiki/Boolean_algebra
Boolean algebra
In mathematics and mathematical logic, Boolean algebra is a branch of algebra. It differs from elementary algebra in two ways. First, the values of the variables are the truth values true and false, usually denoted 1 and 0, whereas in elementary algebra the values of the variables are numbers. Second, Boolean algebra uses logical operators such as conjunction (and) denoted as ∧, disjunction (or) denoted as ∨, and negation (not) denoted as ¬. Elementary algebra, on the other hand, uses arithmetic operators such as addition, multiplication, subtraction, and division. Boolean algebra is therefore a formal way of describing logical operations in the same way that elementary algebra describes numerical operations. Boolean algebra was introduced by George Boole in his first book The Mathematical Analysis of Logic (1847), and set forth more fully in his An Investigation of the Laws of Thought (1854). According to Huntington, the term "Boolean algebra" was first suggested by Henry M. Sheffer in 1913, although Charles Sanders Peirce gave the title "A Boolian [sic] Algebra with One Constant" to the first chapter of his "The Simplest Mathematics" in 1880. Boolean algebra has been fundamental in the development of digital electronics, and is provided for in all modern programming languages. It is also used in set theory and statistics.
1534
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
পশ্চিমবঙ্গের জেলা
ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ এবং ভারতের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, অসম ও সিকিম রাজ্য অবস্থিত। রাজ্যের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এর মধ্যবর্তী অঞ্চলে গঙ্গা পূর্বমুখে এবং তার শাখানদী হুগলি দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে। রাজ্যের উত্তরবঙ্গ অঞ্চলে অবস্থিত শিলিগুড়ি করিডোর উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে। পশ্চিমবঙ্গ একাধিক ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। যেমন, দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল, রাঢ় অঞ্চল, পশ্চিমের উচ্চভূমি ও মালভূমি অঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, সুন্দরবন এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল। ১৯৪৭ সালে, যখন ভারত স্বাধীনতা লাভ করে, তখন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশ বিভাজনের পরিকল্পনা অনুযায়ী উক্ত প্রদেশের ১৪টি জেলা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য গঠিত হয়। ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি পূর্বতন দেশীয় রাজ্য কোচবিহার একটি জেলা রূপে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর রাজ্যের হুগলি জেলার একটি অংশরূপে যুক্ত হয়। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী, পুরুলিয়া জেলার বঙ্গভুক্তি ঘটে এবং বিহারের অপর একটি অংশ পশ্চিম দিনাজপুরের সঙ্গে যুক্ত হয়। পরবর্তীকালে পশ্চিম দিনাজপুর, মেদিনীপুর, চব্বিশ পরগনা, ও জলপাইগুড়ি জেলার মতো বৃহদাকার জেলাগুলিকে দ্বিধাবিভক্ত করা হয়। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ৫টি বিভাগ ও ২৩টি জেলা থেকে বেড়ে ৩০টি জেলায় হয়েছে। ১লা আগস্ট ২০২২ মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে ৭টি জেলার কথা ঘোষণা করেন ( নতুন ৭টি জেলা হল - সুন্দরবন, ইচ্ছেমতী, বসিরহাট,রানাঘাট,বিষ্ণুপুর, বহরমপুর ও কান্দি ) বিভাগগুলি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলাগুলি জেলাশাসকের দ্বারা শাসিত হয়। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা কলকাতা জেলায় অবস্থিত। অন্যান্য জেলাগুলি মহকুমা ও ব্লকে বিভক্ত। এগুলি যথাক্রমে মহকুমা শাসক ও ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকের দ্বারা শাসিত হয়। এই রাজ্যের পঞ্চায়েত ব্যবস্থা ত্রিস্তরীয়। গ্রামস্তরে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা "গ্রাম পঞ্চায়েত", ব্লকস্তরে "পঞ্চায়েত সমিতি" ও জেলাস্তরে "জেলা পরিষদ" নামে পরিচিত। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে বর্ধমান জেলা বিভক্ত হয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় পরিণত হয়েছে। এই সালেই ঘোষিত আরো দুটি জেলা হল ঝাড়গ্রাম জেলা ও কালিম্পং জেলা। ভূগোল পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে তিনটি রাষ্ট্র নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এবং পাঁচটি ভারতীয় রাজ্য সিকিম, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা ও অসম অবস্থিত। সিকিম ও ভুটান রাজ্যের উত্তরে, নেপাল উত্তর-পশ্চিমে, বিহার ও ঝাড়খণ্ড পশ্চিমে, ওড়িশা দক্ষিণ-পশ্চিমে, বঙ্গোপসাগর দক্ষিণে, এবং বাংলাদেশ ও অসম পূর্বে অবস্থিত। পশ্চিমবঙ্গই ভারতের একমাত্র রাজ্য যার উত্তরে হিমালয় ও দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। এই দুইয়ের মধ্যে পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে গঙ্গা রাজ্যে প্রবেশ করে পদ্মা নাম ধারণ করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তবে বাংলাদেশে প্রবেশের পূর্বে এর প্রধান শাখানদী হুগলি বিচ্ছিন্ন হয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর , মালদহ ও কালিম্পং জেলা— গঙ্গার উত্তরে অবস্থিত এই জেলাগুলি একসঙ্গে উত্তরবঙ্গ নামে পরিচিত। উত্তরবঙ্গ তিনটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভক্ত। যথা, দার্জিলিং হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চল এবং উত্তরবঙ্গ সমভূমি। শিলিগুড়ি করিডর (যা ‘চিকেনস নেক’ নামেও পরিচিত) উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষা করছে। গঙ্গার দক্ষিণে অবস্থিত জেলাগুলি হল: বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর,ঝাড়গ্রাম ,হুগলি, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। এই অঞ্চলটি দক্ষিণবঙ্গ নামে পরিচিত। দক্ষিণবঙ্গ পাঁচটি প্রধান ভৌগোলিক অঞ্চলে বিভাজিত। যথা, রাঢ় অঞ্চল, পশ্চিমের মালভূমি ও উচ্চভূমি অঞ্চল, উপকূলীয় সমভূমি অঞ্চল, সুন্দরবন ও গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চল। রাজ্যের রাজধানী কলকাতা কলকাতা জেলা নিয়ে গঠিত। ১৯৭০-এর দশকে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপটি ভারত ও বাংলাদেশ উভয় রাষ্ট্রই নিজের বলে দাবি করে থাকে। ইতিহাস ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে স্বাধীনতা অর্জনের সময় ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রদেশটি ধর্মীয় ভিত্তিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়। উক্ত প্রদেশের হিন্দুপ্রধান পশ্চিমাঞ্চলটিকে নিয়ে গঠিত হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় পশ্চিমবঙ্গ ১৪টি জেলায় বিভক্ত ছিল— বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান, কলকাতা, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, হুগলি, হাওড়া, মালদহ, মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ, নদিয়া, পশ্চিম দিনাজপুর ও চব্বিশ পরগনা। বর্তমান কোচবিহার জেলা অতীতে ছিল কোচবিহার নামে এক দেশীয় রাজ্য। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ২০ অগাস্ট এই রাজ্য সরকারিভাবে ভারতে যোগ দেয়। ওই বছর ১২ সেপ্টেম্বর প্রশাসনিক ক্ষমতার হস্তান্তর শুরু হয় এবং তা সমাপ্ত হয় ১৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ জানুয়ারি। এরপর কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পূর্বতন ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর একটি গণভোটের মাধ্যমে ভারতে যোগদানের পক্ষে মতপ্রকাশ করে। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে চন্দননগর ভারতভুক্ত হয় এবং ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের ২ অক্টোবর এটি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার একটি অংশে পরিণত হয়। ১৯৫৬ খ্রিস্টব্দের রাজ্য পুনর্গঠন আইন অনুযায়ী ভাষার ভিত্তিতে ভারতীয় রাজ্যগুলির সীমানা পুনর্নির্ধারিত হয়। এই আইন বলবৎ হলে বিহারের একটি অংশ পশ্চিম দিনাজপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত হয় এবং ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ নভেম্বর বিহারের মানভূম জেলার পুরুলিয়া মহকুমাটি একটি পূর্ণাঙ্গ জেলার আকারে পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরবর্তীকালে কয়েকটি বৃহদাকার জেলাকে ছোটো জেলায় দ্বিখণ্ডিত করা হয়। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ পূর্বতন চব্বিশ পরগনা জেলাটিকে ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা গঠিত হয়। ১৯৯২ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল পূর্বতন পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা গঠিত হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারি পূর্বতন মেদিনীপুর জেলা দ্বিখণ্ডিত করে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গঠিত হয়। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দার্জিলিং পার্বত্য অঞ্চলে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা ও তার সমর্থকেরা পুনরায় পৃথক 'গোর্খাল্যান্ড' রাজ্যের দাবি উত্থাপন করতে শুরু করেছেন। অন্যদিকে ২০০০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ কামতাপুর পিপলস পার্টি ও তার সমর্থকেরা সমগ্র উত্তরবঙ্গ নিয়ে পৃথক 'কামতাপুর' রাজ্যের দাবি জানায়। প্রশাসনিক গঠন প্রত্যেক জেলার শাসনভার একজন জেলাশাসকের হাতে ন্যস্ত থাকে। তিনি জেলা সমাহর্তা বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট নামেও পরিচিত। জেলাশাসক সাধারণত ভারতীয় প্রশাসনিক সেবা (আইএএস) অথবা পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস (ডব্লিউবিসিএস) ক্যাডারের আধিকারিক হন এবং তাকে নিয়োগ করেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। কলকাতা বাদে প্রত্যেকটি জেলা মহকুমায় বিভক্ত। মহকুমাগুলি মহকুমা শাসক বা সাব-ডিভিশনাল অফিসারের (এসডিও) দ্বারা শাসিত। পুরসভা অঞ্চল বাদে মহকুমার অবশিষ্টাংশ সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত থাকে। ব্লকগুলি হঠিত হয় সেন্সাস টাউন (নগরাঞ্চল) ও গ্রাম পঞ্চায়েত (গ্রামাঞ্চল) নিয়ে। ব্লকের শাসনভার ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক বা ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসারের (বিডিও) হাতে ন্যস্ত থাকে। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত গঠিত হয়। এটি পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় সর্বনিম্ন স্তরের স্বায়ত্তশাসন সংস্থা। গ্রাম পঞ্চায়েতে নেতৃত্বভার পঞ্চায়েত প্রধানের হাতে ন্যস্ত থাকে। ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে পশ্চিমবঙ্গ পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক ব্লকে একটি করে পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। এই সমিতির সদস্যরা হলেন সংশ্লিষ্ট ব্লকের সকল গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং ব্লকের সকল বিধায়ক। পঞ্চায়েত সমিতির প্রধানকে সভাধিপতি বলা হয়। পঞ্চায়েত ব্যবস্থার তৃতীয় স্তরটি হল জেলা পরিষদ। এটি জেলা স্তরের সংগঠন। জেলা পরিষদের সদস্যরা হলেন উক্ত জেলার সকল সভাধিপতি এবং জেলার সকল বিধায়ক। জেলা পরিষদের প্রধান হলেন জেলা সভাধিপতি। দার্জিলিং জেলায় কোনো জেলা পরিষদ নেই। এই জেলার শিলিগুড়ি মহকুমার জন্য একটি অনুরূপ মহকুমা পরিষদ বিদ্যমান। দার্জিলিং জেলার দার্জিলিং সদর, কালিম্পং ও কার্শিয়ং মহকুমা তিনটির প্রশাসনিক দায়িত্ব ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দে গঠিত দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিলের হাতে দেওয়া হয়েছিল। হিল কাউন্সিল জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুর্ত, পরিবহন, পর্যটন, বাজার, ক্ষুদ্রশিল্প, কৃষি, কৃষি জলপথ, বন (সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যতীত), জলসরবরাহ, গবাদি পশু, বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল। সম্প্রতি এই অঞ্চলের প্রশাসনিক দায়িত্ব পেয়েছে গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন বা জিটিএ। জেলা প্রশাসনের হাতে রয়েছে নির্বাচন, পঞ্চায়েত, আইনশৃঙ্খলা ও রাজস্ব ইত্যাদি বিভাগ। জেলা প্রশাসন জিটিএ ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সংযোগরক্ষাকারী সংস্থার কাজও করে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের প্রতিটি জেলার দায়িত্বে থাকেন একজন করে জেলা পুলিশ সুপার। ১৮৬১ খ্রিষ্টাব্দের পুলিশ আইন অনুযায়ী, এই বিধি সমগ্র ভারতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। জেলা পুলিশ সুপার ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস (আইপিএস) ক্যাডারের আধিকারিক। প্রতিটি মহকুমায় একটি করে মহকুমা পুলিশ বিভাগ করেছে। মহকুমা পুলিশের দায়িত্বে থাকেন সহ-পুলিশ সুপারের সমমর্যাদাসম্পন্ন কোনো পুলিশ অফিসার। মহকুমা পুলিশের অধীনে থাকে একাধিক পুলিশ কেন্দ্র। এর প্রত্যেকটির দায়িত্ব ন্যস্ত থাকে একজন করে পুলিশ ইনস্পেক্টরের হাতে। পুলিশ কেন্দ্রগুলি আবার একাধিক থানা নিয়ে গঠিত। প্রতিটি থানার দায়িত্বে থাকেন একজন করে পুলিশ ইনস্পেক্টর (শহরাঞ্চল) বা সাব-ইনস্পেক্টর (গ্রামাঞ্চল)। সমগ্র পশ্চিমবঙ্গ কলকাতা উচ্চ আদালতের এক্তিয়ারভুক্ত এলাকা। অধিকাংশ জেলাতেই জেলা আদালত ছাড়াও অন্যান্য নিম্ন আদালতের অস্তিত্ব থাকলেও, রাজ্যের সকল মহকুমায় আদালত নেই। কয়েকটি জেলা নিয়ে একটি বিভাগ গঠিত। প্রতিটি বিভাগের দায়িত্ব একজন করে বিভাগীয় কমিশনারের হাতে ন্যস্ত। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা পাঁচটি বিভাগে বিন্যস্ত: জেলা পরিসংখ্যান প্রস্তাবিত জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে বসিরহাট জেলা৷ দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলা থেকে সুন্দরবন জেলা৷ মুর্শিদাবাদ জেলাকে উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত করে উত্তর মুর্শিদাবাদ জেলা ও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ জেলা৷ মালদহ জেলাকে উত্তর দক্ষিণে বিভক্ত করে উত্তর মালদহ জেলা ও দক্ষিণ মালদহ জেলা৷ বাঁকুড়া জেলাকে ভেঙে বিষ্ণুপুর ও বাঁকুড়া জেলা জনপরিসংখ্যান নিচে ভারতের জেলাগুলির জনসংখ্যার পরিসংখ্যানগত (২০১১ খ্রিষ্টাব্দের জনগণনার ভিত্তিতে) অবস্থানের ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলির জনসংখ্যার পরিসংখ্যান দেওয়া হল। ২০১১-পরবর্তী সময়ে দার্জিলিং জেলা থেকে নতুন কালিম্পং জেলা, জলপাইগুড়ি জেলা থেকে নতুন আলিপুরদুয়ার জেলা, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা থেকে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা এবং বর্ধমান জেলা থেকে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা গঠন করা হয়৷ তথ্যসূত্র ৪২. West Bengal New 7 Districts Name ( পশ্চিমবঙ্গের নতুন 7 জেলার নাম ) https://www.sarkarisuvidha.in/2022/08/mamata-banerjee-announces-7-new-district-names-in-west-bengal.html (তারিখ 3 অগাস্ট 2022) পশ্চিমবঙ্গের জেলা পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কিত তালিকা ভারতের জেলাসমূহের তালিকা
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_districts_of_West_Bengal
List of districts of West Bengal
The Himalayas lies in the north of West Bengal and the Bay of Bengal is at the south. Between them, the river Ganga flows eastwards and its main distributary, the Hooghly River, flows south to reach the Bay of Bengal. The Siliguri Corridor, which connects North-East India with rest of the India, lies in the North Bengal region of the state. Geographically, West Bengal is divided into a variety of regions—Darjeeling Himalayan hill region, Terai and Dooars region, North Bengal plains, Rarh region, Western plateau and high lands, coastal plains, Sundarbans and the Ganga Delta. In 1947, when India gained independence, the state of West Bengal was formed, with 14 districts, as per partition plan of the then Bengal province of British India. The former princely state Koch Bihar joined as a district on 26 January 1950, and the former French enclave Chandannagore joined as part of the Hooghly district in 1954. The States Reorganisation Act of 1956 led to addition of Purulia district to the state and to enlargement of West Dinajpur district. Later, larger districts such as West Dinajpur, 24 Parganas and Midnapore were bifurcated. West Bengal is now divided into 23 districts which includes the newly formed Alipurduar district (formed on 25 June 2014), Kalimpong district (formed on 14 February 2017), Jhargram district (formed on 4 April 2017), and the splitting of the former Bardhaman district into Purba Bardhaman district and Paschim Bardhaman district (formed on 7 April 2017). The districts are grouped into five divisions. Divisions are administered by Divisional Commissioners. Kolkata, the capital of the state, constitutes the Kolkata district. Other districts are further divided into administrative units such as subdivisions and blocks, administered by SDO and BDO, respectively. The Panchayati Raj has a three-tier structure in the state. The atomic unit is called a Gram Panchayat, which is the Panchayat organisation for a collection of villages. The block-level organisations are called Panchayat Samiti, and the district-level organisations are named Zilla Parishad. The West Bengal cabinet has approved the creation of seven new districts on 1 August 2022. This will number district from 23 to 30. New Sundarban District from existing South 24 Parganas District, new Ichhamati District and Basirhat District from existing North 24 Parganas District. New Ranaghat District from existing Nadia District and Bishnupur District from existing Bankura district. While new Jangipur District and Berhampore district from existing Murshidabad District will be carved out.
1541
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%A3%E0%A7%81-%E0%A6%87%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%A8%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8
অণু-ইলেকট্রন বিজ্ঞান
অণু-ইলেকট্রন বিজ্ঞান বা ইংরেজি পরিভাষাতে মাইক্রোইলেকট্রনিক্‌স () ইলেকট্রন বিজ্ঞানের একটি শাখা, যাতে অত্যন্ত ক্ষুদ্র মাপের (সাধারণত মাইক্রোমিটার মাপের বা তার চেয়েও ক্ষুদ্র) ইলেকট্রনীয় যন্ত্রাংশের বৈশিষ্ট্য ও অণু-উৎপাদন (microfabrication মাইক্রোফ্যাব্রিকেশন) নিয়ে গবেষণা করা হয়। এই যন্ত্রাংশগুলি অর্ধপরিবাহী পদার্থ দিয়ে প্রস্তুত করা হয়। বেশির ভাগ ইলেকট্রনীয় যন্ত্রাংশের অতিক্ষুদ্র অণু-ইলেকট্রনীয় রূপ রয়েছে, যেমন ট্রানজিস্টর, ধারক, আবেশক, রোধক, ডায়োড, অন্তরক এবং পরিবাহী --- এগুলির সবগুলিকেই ইলেকট্রনীয় অণু-যন্ত্রাংশ হিসেবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল সমন্বিত বর্তনীসমূহ (আইসি) মূলত ট্রানজিস্টর দিয়ে তৈরি। অ্যানালগ বর্তনীতে সাধারণত রোধ এবং ধারক থাকে। কিছু উচ্চ কম্পাঙ্কের অ্যানালগ বর্তনীতে আবেশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রযুক্তিগত কৌশলের অগ্রগতির সাথে সাথে ইলেকট্রনীয় অণু-যন্ত্রাংশসমূহের মাপ ক্রমে হ্রাস পাচ্ছে। ক্ষুদ্রতর মাপে বর্তনীর অন্তর্নিহিত ধর্ম, যেমন আন্তঃসংযোগ (ইন্টারকানেকশন), ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এগুলি "পরজীবী প্রভাব" (parasitic effects) হিসেবে পরিচিত। অণু-ইলেকট্রন প্রকৌশলীর লক্ষ্য হল এইসব প্রভাব যতটা সম্ভব কমানোর চেষ্টা করা এবং একই সাথে ক্ষুদ্রতর, দ্রুততর এবং আরও কমদামী অণু-যন্ত্রাংশ উৎপাদন করা। আরও দেখুন তড়িৎ প্রকৌশল ডিজিটাল বর্তনী অ্যানালগ বর্তনী ইন্টেল সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসরসমূহের তালিকা পেন্টিয়াম ইলেকট্রনিক্স
https://en.wikipedia.org/wiki/Microelectronics
Microelectronics
Microelectronics is a subfield of electronics. As the name suggests, microelectronics relates to the study and manufacture (or microfabrication) of very small electronic designs and components. Usually, but not always, this means micrometre-scale or smaller. These devices are typically made from semiconductor materials. Many components of a normal electronic design are available in a microelectronic equivalent. These include transistors, capacitors, inductors, resistors, diodes and (naturally) insulators and conductors can all be found in microelectronic devices. Unique wiring techniques such as wire bonding are also often used in microelectronics because of the unusually small size of the components, leads and pads. This technique requires specialized equipment and is expensive. Digital integrated circuits (ICs) consist of billions of transistors, resistors, diodes, and capacitors. Analog circuits commonly contain resistors and capacitors as well. Inductors are used in some high frequency analog circuits, but tend to occupy larger chip area due to their lower reactance at low frequencies. Gyrators can replace them in many applications. As techniques have improved, the scale of microelectronic components has continued to decrease. At smaller scales, the relative impact of intrinsic circuit properties such as interconnections may become more significant. These are called parasitic effects, and the goal of the microelectronics design engineer is to find ways to compensate for or to minimize these effects, while delivering smaller, faster, and cheaper devices. Today, microelectronics design is largely aided by Electronic Design Automation software.
1542
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%20%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AA%E0%A7%8B%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%A8
ইন্টেল কর্পোরেশন
ইন্টেল কর্পোরেশন একটি আমেরিকান বৈশ্বিক প্রযুক্তি কোম্পানি এবং আয়ের উপর নির্ভর করে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সেমিকন্ডাক্টর চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান। এটি মাইক্রোপ্রসেসরের এক্স৮৬ সিরিজের আবিষ্কারক, প্রসেসরটি বেশিরভাগ পারসোনাল বা ব্যক্তিগত কম্পিউটারে দেখা যায়। ইন্টেল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জুলাই ১৮, ১৯৬৮ সালে ইন্টিগ্রেটেড ইলেক্ট্রনিক্স কর্পোরেশন (কেউ কেউ ইন্টিগ্রেটেডকে ইন্টিলিজেন্স মনে করে থাকে) হিসেবে। ইন্টেল কম্পিউটার প্রসেসর তৈরির পাশাপাশি আরো তৈরী করে মাদারবোর্ড চিপসেট, নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কন্ট্রোলার, ইন্ট্রিগ্রেটেড সার্কিট, ফ্ল্যাস মেমোরি, গ্রাফিক্স কার্ড, সংযুক্ত প্রসেসর এবং অন্যান্য আরো অনেক কিছু যা কম্পিউটার এবং যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়। এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন সেমিকন্ডাক্টরের অগ্রগামী রবার্ট নয়েস এবং গর্ডন মুর এবং এন্ড্রু গুভ। ইন্টেল আধুনিক প্রযুক্তি চিপ নকশা এবং উৎপাদন করায় সমর্থ। যদিও শুরুতে ইন্টেল শুধু মাত্র ইন্জিনিয়ার এবং প্রযুক্তিবিদদের কাছে পরিচিত ছিল, কিন্তু ১৯৯০ দশকের বিজ্ঞাপন "ইন্টেল ইনসাইড" এটাকে এবং এটার "পেন্টিয়াম" প্রসেসরকে ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে। ইন্টেল ছিল প্রথমদিকের স্ট্যাটিক র‍্যাম এবং ডায়নামিক র‍্যামের স্মৃতির উন্নয়নকারী এবং এটাই তাদের ব্যবসাকে ১৯৮১ সাল পযর্ন্ত পরিচিতির মাধ্যম ছিল। যখন ইন্টেল প্রথম বাণিজ্যিক মাইক্রোপ্রসেসর চিপ বানায় ১৯৭১ সালে, এটা তাদের প্রধান ব্যবসায় তখনও পরিনত হয়নি কারণ তখনও পারসোনাল বা ব্যক্তিগত কম্পিউটার জনপ্রিয় হয়নি। ইন্টেল ১৯৯০ দশকে, নতুন মাইক্রোপ্রসেসরের উপর ব্যাপক বিনিয়োগ করে কম্পিউটার শিল্পের চাহিদা পূরণ এবং উৎসাহদানের লক্ষ্যে। এই সময়েই ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসরের চিপের প্রভাবশালী সরবরাহকারী হিসেবে এবং জানা যায় আক্রমণাত্মক এবং কোন কোন সময় বেআইনি কৌশল গ্রহণকারী হিসেবে এটার বাজার ধরে রাখার জন্য। বিশেষভাবে, এএমডি এবং মাইক্রোসফটের সাথে প্রতিযোগিতা হয় পিসি শিল্প করায়ত্ত করতে। ২০১০ সালের মিলওয়ার্ড ব্রাউন অপটিমর রেংকিংয়ে বিশ্বের ১০০ শক্তিশালী ব্র্যান্ড এর মধ্যে এর অবস্থান ছিল ৪৮তম। ইন্টেল ইলেক্ট্রিকাল ট্রান্সমিশন এবং প্রজন্মে গবেষণা শুরু করেছে। ইন্টেল সম্প্রতি ৩ মাত্রার ট্রানজিস্টরের নমুনা দেখিয়েছে, যেটা কার্যক্ষমতা এবং শক্তি সঞ্চয় করতে সাহায্য করবে ইন্টেল তাদের ২২ ন্যানোমিটার প্রযুক্তির প্রসেসরে ব্যাপকভাবে ত্রিমাত্রিক ট্রানজিস্টর ব্যবহার করবে, যা ট্রাই গেট ট্রানজিস্টর নামে পরিচিত। কর্পোরেট ইতিহাস উৎপত্তি ইন্টেল স্থাপিত হয় ১৯৬৮ সালে মাউন্টেন ভিউ, ক্যালিফোর্নিয়ায়। গর্ডণ ই. মুর (একজন রসায়নবিদ এবং পদার্থবিদ) এবং রবার্ট নয়েস (পদার্থবিদ এবং ইন্টিগ্রেটেড সার্কিটের সহকারী উদ্ভাবক) যখন "ফেয়ারচাইল্ড সেমিকন্ডাক্টর" ছেড়ে যান তখন তারা এটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর এর তৃতীয় চাকুরীজিবী ছিল এ্যন্ডি গ্রুভ, একজন রাসায়নিক কারিগর যিনি এই কোম্পানিকে পরিচালনা করেন ১৯৮০ এর দশকের বেশিরভাগ এবং ১৯৯০ এর দশকের সময় যখন ইন্টেল উন্নতিলাভ করেছিল। প্রথমদিকে মুর এবং নয়েচ চেয়েছিলেন কোম্পানির নাম রাখা হবে "মুর নয়েচ"| কিন্তু এটি শুনতে প্রায় "মোর নয়েজ" এর মত শোনায় এবং ইলেক্ট্রনিক পণ্যের নামের সাথে মিলে না বিধায় এটি বাধ দেয়া হয়। এরপর প্রায় একবছর যাবৎ এনএম ইলেক্ট্রনিকস নামটি ব্যবহার করা হয় ইন্টেল নামটি দেয়ার আগে। এটি এসেছে ইন্টিগ্রেটেড ইলেক্ট্রনিকস থেকে সংক্ষেপে "ইন্টেল"। তখন ইন্টেল নামটি একটি হোটেল চেইনের জন্য ট্রেডমার্ক ছিল এতেকরে ইন্টেলকে তাদের নামের অধিকার ক্রয় করতে হয়। প্রথমদিকের ইতিহাস প্রতিষ্ঠার প্রথম থেকেই, ইন্টেল তাদের আলাদা করতে সক্ষম হয় তাদের সেমিকন্ডাক্টর তৈরীর ক্ষমতা দিয়ে। এদের প্রাথমিক পণ্য ছিল স্ট্যাটিক র‍্যানডম একসেস মেমোরি চিপ। ১৯৭০ দশকে ইন্টেলের ব্যবসা বেড়ে যায় যখন তারা তাদের উৎপাদন এবং প্রসারন করতে সক্ষম হয়। তারা আরো বেশি করে নানা পণ্য তৈরী করতে শুরু করে, এখনও তারা বিভিন্ন মেমোরি যন্ত্রাংশে রাজত্ব করছে। ১৯৭১ সালে যখন ইন্টেল তাদের প্রথম বাণিজ্যিক প্রসেসর তৈরী করে এবং প্রথমদিকের মাইক্রোকম্পিউটারগুলোর একটি তৈরী করে ১৯৭২ সালে কিন্তু তখনও ১৯৮০ দশকের শুরুর দিকে এটি শুধু ডাইনামিক র‍্যানডম একসেস মেমোরি চিপ বানাত। ১৯৮৩ সালের দিকে জাপানি উৎপাদকরা সেমিকন্ডাক্টর তৈরী করতে শুরু করে এতে প্রতিযোগিতা বেড়ে যায়। এতে করে ইন্টেলের আয় কমতে থাকে এবং তখনকার পারসোনাল কম্পিউটারে (আইবিএম পারসোনাল কম্পিউটার) সাফল্যে সিইও গ্রুভ কোম্পানির দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন মাইক্রোপ্রসেসরে। তাদের ব্যবসায়িক মৌলিক দিকও পরিবর্তন করেন। ১৯৮০ দশকের শেষের দিকে তার এই সিদ্ধান্ত সফল প্রমাণিত হয়। মাইক্রোপ্রসেসর সরবরাহকারী হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠান তখন সৌভাগ্যের অধিকারী হয় পারসোনাল কম্পিউটার বাজারে এবং ১০ বছর জুড়ে পিসি শিল্পে তারা নজিরবিহিন আয় এবং হার্ডওয়্যার সরবরাহ করে। ১৯৯১ সালে তাদের শুরু করা "ইন্টেল ইনসাইড" বাজারজাতকরন প্রোগ্রাম তাদের ভোক্তাদের বিশ্বস্ত এবং সংযুক্ত করে সাফল্য ত্বরান্বিত করে। এতে করে তাদের তৈরী করা পেন্টিয়াম প্রসেসর ঘরে ঘরে পৌছায়। ইন্টেলের পুরনো বছরগুলোর কার্যক্রম একটি ডকুমেন্টারী ফিল্মে দেখা যাবে নাম "সামথিং ভেনচারড"। চাহিদা কমে যাওয়া এবং আধিপত্য বিস্তারে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ২০০০ সালের পর, প্রসেসরের চাহিদা হ্রাস পায়। প্রতিযোগিরা, বিশেষ করে এএমডি শেয়ার বাজারের বড় অংশ অধিগ্রহণ করে। শুরুতে কম ক্ষমতার এবং মধ্যম ক্ষমতার প্রসেসর এবং ধীরে ধীরে পুরো পণ্যের বাজার এবং মূল বাজারে ইন্টেলের অবস্থান আশঙ্কাজনকহারে কমে যায়। ২০০০ দশকের প্রথমদিকে,শুধু সেমিকন্ডাক্টরে নজর না দিয়ে কোম্পানীর সিইও ক্রেইগ ব্যারেট চেষ্টা করেছিলেন কোম্পানীর ব্যবসাকে বিস্তৃত করতে। কিন্তু এইসব প্রচেষ্টার কিছু মাত্র সাফল্য এনেছিল। ১৯৮৪ সালে যখন, ইন্টেল এবং সেমিকন্ডাক্টর ইন্ডাস্ট্রি এসোসিয়েশন সেমিকন্ডাক্টর চিপ প্রোটেকশন এক্ট তৈরী করার উদ্যোগ নেয়। তার আগ পযর্ন্ত ইন্টেল কিছু বছর মামলায় জড়িত ছিল। কারণ আমেরিকার আইন, ইন্টেলের মাইক্রোপ্রসেসরের নকশার ইন্টেলেকচুয়াল প্রোপার্টি রাইট প্রথমাবস্থয় চিহ্নিত করতে পারেনি। ১৯৮০ দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০ দশকের প্রথমদিকে আইনটি পাশ হয়। তখন ইন্টেল অভিযুক্ত করে সেইসব কোম্পানিদের যারা ৮০৩৮৬ সিপিইউ চিপের প্রতিযোগী তৈরী করতে চেয়েছিল। যদিও তারা মামলাটি হেরে যায়। ২০০৫ সালে, সিইও পল ওটেলিনি কোম্পানীকে পুনরায় সাজায় এবং কোম্পানীর নজর কোর প্রসেসর এবং চিপসেট (বিভিন্ন প্লাটফর্মে) ব্যবসায় নিবদ্ধ করে। যেটার কারণে তাদের ২০,০০০ নতুর কর্মীর নিয়োগ দিতে হয়। ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে আয় কমে যায় ইন্টেলের এবং তারা নতুনভাবে কোম্পানি গঠন করে। ফলে ২০০৬ সালের জুলাইতে ১০,৫০০ অথবা মোট কর্মীদের ১০% কর্মী সাময়িক ছাটাই করা হয়। পুনরুত্থান বাজারে নিজস্ব অবস্থান হারিয়ে ইন্টেল তার পুরনো শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখতে নতুন পণ্যের মডেল উন্নয়ন করা শুরু করে। যেটা "টিক-টক মডেল" হিসেবে জানা যায়, এই উদ্যোগটি বার্ষিক নতুন মাইক্রোআর্কিটেকচার প্রবর্তন এবং প্রক্রিয়া প্রবর্তন উপর ভিত্তি করে করা হয়। ২০০৬ সালে, ইন্টেল পি৬ এবং নেটব্রাষ্ট পণ্য উৎপাদন করে যার সাইজ ছিল ৬৫ এনএম(ন্যানোমিটার) । এক বছর পরে এটা কোর মাইক্রোআর্কিটেকচার উন্মোচন করে বিস্তৃতভাবে। এটা প্রসেসরের কার্যক্ষমতা এত বাড়িয়ে দেয় যে ইন্টেল তার শীর্ষ স্থান দখল অভিযানে এগিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ২০০৮ সালে, ইন্টেল আরেকটি পেনরিন মাইক্রোআর্কিটেকচার বাজারে আনে, যেটাতে ৬৫ ন্যানোমিটার এর জায়গায় ৪৫ ন্যানোমিটার ব্যবহার করা হয়। এবং তার পরের বছরই তারা বাজারে ছাড়ে নিহালেম আর্কিটেকচার যাতে সিলিকনের আকার করা হয় ৩২ ন্যানোমিটার প্রক্রিয়ায়। এটি বাজারে সফলতার সাথে প্রবেশ করে এবং ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ইন্টেলই প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর কর্পোরেশন নয় যারা এটা প্রথম করছে। উদাহরণসরূপ ১৯৯৬ সালের দিকে গ্রাফিক্স চিপ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এনভিডিয়াকেও একই সমস্যায় পড়তে হয়। এক্সমাপের প্রসেসর বিক্রয় ব্যবসা ২০০৬ সালের জুনের ২৭ তারিখে ইন্টেলের এক্সস্কেল সম্পদ বিক্রয় ঘোষণা করা হয়। ইন্টেল এক্সস্কেল প্রসেসর ব্যবসা মারভেল টেকনোলজি গ্রুপের কাছে বিক্রয় করতে সম্মত হয় প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলারে। এর কারণ ইন্টেলের এক্স৮৬ কোর এবং সার্ভার ব্যবসায়ে নিয়োজিত হওয়া এবং এর কাজ শেষ হয় ২০০৬ সালের ৯ই নভেম্বরে। অর্জন ২০১০ সালের অগাষ্ট মাসে, ইন্টেল ঘোষণা করে দুটো প্রধান অর্ন্তভুক্তিকরণ। ১৯শে অগাষ্ট, ইন্টেল ঘোষণা করে তার ম্যাকআফি (একটি কম্পিউটার সিকিউরিটি টেকনোলজি কোম্পানি) কেনার পরিকল্পনা করছে। তারা প্রায় ৭·৬৮ বিলিয়ন ডলারে কেনার পরিকল্পনা করে এবং তারা ঘোষণা করে যদি চুক্তিটি সম্পাদিত হয় তবে নতুন পণ্য বের করা হবে ২০১১ সালের আগে। এই ঘোষণার দুই সপ্তাহ হওয়ার আগেই, কোম্পানী ঘোষণা করে ইনফাইনিওন টেকনোলজি(একটি তারবিহীন পণ্যের ব্যবসা) কিনে নেয়ার কথা। তারা ইনফাইনিওনের পণ্য ল্যাপটপ, স্মার্টফোন, নেটবুক, টেবল্যাট এবং কম্পিউটার পণ্যে ব্যবহার এবং একই সাথে ইন্টেলের সিলিকন চিপে ওয়্যারলেস মডেম সংযুক্ত করার উদ্যোগ নেয়। ইন্টেল ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রেগুলেটরি'র কাছ থেকে ম্যাকআফি কেনার অণুমতি পায় ২০১১ সালের ২৬শে জানুয়ারি। ইন্টেল তাদের পণ্যের সমস্ত দরকারি তথ্য নিরাপত্তা ফার্মটিকে প্রয়োজনমত দিতে সম্মত হয় যেটা নিরাপত্তা ফার্মটি ইন্টেলের চিপ এবং পারসোনাল কম্পিউটারে ব্যবহার করতে পারবে। এতে করে ইন্টেলের কর্মীর সংখ্যা দাড়ায় প্রায় ৯০,০০০ যাতে ১২,০০০ সফটওয়্যার ইন্জ্ঞিনিয়ার রয়েছে। ২০১১ সালের মার্চে, ইন্টেল সিসডিসফট (একটি কাইরো ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান)বেশিরভাগ কিনে নেয়। প্রসারণ ফেব্রুয়ারি ২০১১: কোম্পানী নতুন একটি মাইক্রোপ্রসেসর তৈরী করবে আরিজোনা, চেন্ডলারে যেটা ২০১৩ সাল নাগাদ শেষ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং খরচ হচ্ছে প্রায় ৫ বিলিয়ন। এগুলোতে ৪০০০ কর্মীর প্রয়োজন হবে। কোম্পানির তিন ভাগ পণ্য উৎপাদিত হয় ইউনাইটেড স্টেটসে। যদিও তিনভাগ আয় হয় বিদেশ থেকে। এপ্রিল ২০১১: এটি স্মার্টফোন উৎপাদন করবে জিটিই কর্পোরেশনের সাথে একত্রিত হয়ে, চায়নার বাজারে হবে এর পাইলট প্রজেক্ট কারণ সেখানে রয়েছে মোবাইল ফোনের এআরএম প্রসেসরের আদিপত্য। স্মার্টফোনগুলো ইন্টেল এটম প্রসেসরের ভিত্তিতে তৈরী করা হবে। পণ্য এবং বাজারের ইতিহাস এসর‍্যাম এবং মাইক্রোপ্রসেসর কোম্পানির প্রথম পণ্য ছিল শিপ্ট রেজিস্টার মেমোরি এবং র‍্যাম ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট এবং ডির‍্যাম, এসর‍্যাম এবং রম ইত্যাদিতে ইন্টেল ১৯৭০ এর দশকে প্রতিযোগী হিসেবে প্রচন্ডরকম বেড়ে উঠে। একইসাথে, ইন্টেলের কারিগর মার্চিয়ান হপ, ফেডরিকো ফেজিন, স্টানলে মেঝর এবং মাসোটোসি শিমা ইন্টেলের প্রথম মাইক্রোপ্রসেসর আবিষ্কার করেন। এটি বিজিকমের (একটি জাপানি কোম্পানি) ক্যালকুলেটরের আসিক বা এএসআইসি পরিবর্তে এর উন্নয়ন হয় এবং পরিবর্তিত হয়। ইন্টেল ৪০০৪ বাজারে ছাড়া হয় নভেম্বরের ১৫, ১৯৭১ সালে। যদিও মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টেলের প্রধান ব্যবসা হয়নি ১৯৮০ এর দশকের মাঝামাঝি পযর্ন্ত। ডির‍্যাম থেকে মাইক্রোপ্রসেসর ১৯৮৩ সালে, ব্যক্তিগত কম্পিউটারের সূর্যোদয়ের যুগে, ইন্টেলের মুনাফা চাপের মুখে পড়ে জাপানি মেমোরি চিপের কারণে, এবং তখনই কোম্পানীর প্রধান এন্ডি গ্রুভ কোম্পানীর নজর শুধু মাত্র মাইক্রোপ্রসেসরে নিযুক্ত করে। গ্রুভ এই ব্যপারটি ওনলি দ্যা প্যারনয়েড সারভাইব বইতে উল্লেখ্য করেন। তার পরিকল্পনার মূল উপাদান হল সংস্কার, তারপর বিবেচ্য সংস্কারগুলো, যাতে করে সাফল্য পাওয়া জনপ্রিয় ৮০৮৬ মাইক্রোপ্রসেসরের একমাত্র উৎস হওয়া যায়। তখন থেকেই, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট খুব বেশি আস্থার ছিল না একমাত্র সরবরাহকারীদের কাছে, কিন্তু গ্রুভ প্রসেসরের উৎপাদন করে তিনটি ভিন্ন ভোগৌলিক এলাকায় এবং প্রতিযোগীদেরকে যেমন জিলগ এবং এএমডিকে চিপের নকশার লাইসেন্স দেয়া বন্ধ করে। যখন পিসি শিল্প বৃদ্ধি পায় ১৯৮০র দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০র দশকে ইন্টেল ছিল প্রধান লাভজনক প্রতিষ্ঠান। ইন্টেল, এক্স৮৬ প্রসেসর, এবং আইবিএম পিসি ইন্টেলে ৪০০৪ এবং এর সিরিজ ৮০০৮ ও ৮০৮০ কখনোই বড় লাভজনক আয়কারী মাইক্রোপ্রসেসর ছিল না, যদিও মাইক্রোপ্রসেসর গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যখন প্রসেসর ৮০৮৬ এবং তার আরেকটি ভার্সন ৮০৮৮ তৈরী হয় ১৯৭৮ সালে তখন ইন্টেল এগুলো বাজারজাত এবং ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য বিক্রয়ের পরিকল্পনা হাতে নেয় যার নাম ছিল "অপারেশন ক্র্যাশ"। আইবিএম তাদের প্রথম ব্যক্তিগত কম্পিউটার বাজারে ছাড়ে ১৯৮১ সালে, এবং এটি দ্রুতই সাফল্য অজর্ন করে। ১৯৮২ সালে, ইন্টেল তৈরী করে ৮০২৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর, যেটি দুই বছর পরে, আইবিএমের পিসি/এটিতে ব্যবহার করা হয়। "কম্প্যাক" প্রথম আইবিএমের পিসির ক্লোন উৎপাদক, ১৯৮৫ সালে উৎপাদন করে একটি ডেস্কটপ সিস্টেম যা ৮০২৮৬ প্রসেসর দিয়ে তৈরী। এবং ১৯৮৬ সালে আরো দ্রুততম প্রসেসর ৮০৩৮৬ দিয়ে তৈরী করে, যা আইবিএমকে পেছনে ফেলে দেয় দ্রুততার দৌড়ে এবং প্রতিযোগী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে আর ইন্টেলও এভাবে প্রধান সরবরাহকারী হিসেবে উঠে আসে। ১৯৭৫ সালে কোম্পানীটি একটি প্রজেক্ট শুরু করেছিল যার উদ্দেশ্য ছিল ৩২-বিটের মাইক্রোপ্রসেসর তৈরী করা সেটি তারা বের করে ১৯৮১ সালে যার নাম ছিল ইন্টেল আইএপিএক্স ৪৩২। কিন্তু এই প্রজেক্টি এতটাই আধুনিক এবং উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন ছিল সেইসময় তা উল্লেখিত ক্ষমতায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি এবং বাজারেও তা সফল হয়নি। তাই ইন্টেল এক্স৮৬ ৩২-বিটের পরিবর্তে বাজারজাত করতে শুরু করে। ৩৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর এই সময়ে এন্ডি গ্রুভ ডির‍্যাম থেকে কোম্পানীর দৃষ্টি নিবদ্ধ করান মাইক্রোপ্রসেসরে। তার ধারণা ছিল মাইক্রোপ্রসেসরের(৩৮৬) "সিঙ্গেল-সোর্স" বা "একমাত্র-পরিবেশক" হওয়া। এর আগে ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসর নাম মাত্র উৎপাদন করত এবং উৎপাদন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা হয় উৎপাদন বিঘ্নিত বা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেত। এতে করে ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ বিঘ্নিত হত। এই অবস্থায় ভোক্তারা সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উৎপাদকদের চিপ ব্যবহার করত। ৮০৮০ এবং ৮০৮৬ সিরিজের মাইক্রোপ্রসেসর বিভিন্ন কোম্পানী দ্বারা প্রস্তুত হয়েছিল এর মধ্যে এএমডি উল্লেখ্যযোগ্য। গ্রুভ সিদ্ধান্ত নেন অন্য প্রস্তুতকারকদের ৩৮৬ এর নকশার অণুমতি না দেয়ার এবং তিনি তিনটি ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় (সান্তা ক্লারা; ক্যলির্ফোনিয়া, হিলসবোরো; ওলিগণ, পনিক্স; আরিজোনা) উৎপাদনের পরিকল্পনা নেন আর ভোক্তাদের নীরবিচ্ছিন্ন সরবরাহের নিশ্চয়তা দেন। কমপেক ডেস্কপ্রো ৩৮৬ সফল হলে, ৩৮৬ হয় সিপিইউ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম, এবং ইন্টেলই হয় তার একমাত্র বিশেষ সরবরাহকারী। এই ব্যবসায়িক সফলতা ও লাভের ফলে ইন্টেল আরো উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন চিপ তৈরীতে মনোযোগ নিবদ্ধ করে। এতে করে ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসর চিপ ব্যবসায় নিজেদেরকে শীর্ষস্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ৪৮৬, পেন্টিয়াম এবং ইটানিয়াম ইন্টেল ৪৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর ছাড়ে ১৯৮৯ সালে এবং ১৯৯০ সালের মধ্যেই দ্বিতীয় নকশার দল গঠন করে, নকশার কোড নাম হয় "পি৫" এবং "পি৬" পি৫ প্রথমে চেনা হত অপারেশন বাইসাইকেল নামে যা প্রসেসরের সাইকেলের উপর নির্ভর করে রাখা হয়। পি৫ ১৯৯৩ সালে বাজারে ছাড়া হয় ইন্টেল পেন্টিয়াম নামে। নামটি রাখা হয় রেজিষ্টার করার সমস্যার কারণে কারণ নম্বর রেজিষ্টার করা বেশ কঠিন। ১৯৯৫ সালে পি৬ যা ছিল পেন্টিয়াম প্রো ছাড়া হয় এবং ১৯৯৭ সালে সেটা উন্নত করে পেন্টিয়াম ৩ করা হয়। সান্তা ক্লারায় চিপ নকশার দল ১৯৯৩ সালে এক্স৮৬ আর্কিটেকচার যার কোড নাম পি৭ নকশা উন্নয়ন করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু প্রথমবারের চেষ্টা পরের বছর গড়ায়। পরে হিউলেট-প্যাকার্ড ইন্জ্ঞিনিয়ারদের সাথে ইন্টেল মিলে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই উদ্যোগ আবার পুনরুজ্জিবিত করা হয় যদিও ইন্টেল প্রাথমিক নকশার দ্বায়িত্ব নেয়। ফলাফলে আইএ-৬৪ যা ৬৪ বিটের একটি আর্কিটেকচার (ইটানিয়াম) শেষ পযর্ন্ত বাজারে আসে ২০১১ সালের জুনে। কিন্তু ইটানিয়ামের কর্মক্ষমতা আশানুরুপ হয়নি। এটি এএমডির সাথে এক্স৮৬ আর্কিটেকচার তুলনায় নিম্নমান প্রমাণিত হয়। ২০০৯ সাল পযর্ন্ত ইটানিয়াম উন্নয়ন করা হয় এবং বাজারে রাখা হয়। হিলসবোরোর দল উইলমেট প্রসেসরের (কোড নাম পি৬৭ এবং পি৬৮) নকশা করে যেটা বাজারজাত করা হয় পেন্টিয়াম ৪ নামে। সুপার কম্পিউটার ইন্টেলের বৈজ্ঞানিক কম্পিউটার বিভাগ ১৯৮৪ তে গঠন করা হয় জাসটিন রেটনারের মাধ্যমে। যাতে নকশা এবং উৎপত্তি করা যায় প্যারালাল কম্পিউটার মাইক্রোপ্রসেসরের ভিত্তিতে যেগুলো হাইপারকিউব টপোলজিতে যুক্ত থাকবে। ১৯৯২ সালে নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ইন্টেল সুপারকম্পিউটিং সিস্টেম ডিভিশন এবং আইর‍্যাপ (iWarp) আর্কিটেক্সার এর আওতায় নেয়া হয়। এই বিভাগ নকশা করেছে অনেক সুপারকম্পিউটার সিস্টেমের যেমন ইন্টেল আইপিএসসি/১, আইপিএসসি/২, আইপিএসসি/৮৬০, প্যারাগণ এবং এএসসিআই রেড। এ্যপলের সাথে অংশীদারী ৬ই জুন, ২০০৫ এ্যপলের সিইও স্টিভ জবস ঘোষণা করেন যে এ্যপল তাদের পাওয়ারপিসি তে ইন্টেলের এক্স৮৬ ব্যবহার করবে, কারণ ভবিষ্যতের পাওয়ারপিসির কার্যক্ষমতা এ্যপলের চাহিদাকে মেটাতে পারছিল না। প্রথম ম্যাক/ম্যাকিনটোশ কম্পিউটার যেটাতে ইন্টেলের প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে ঘোষণা করা হয় ১০ই জানুয়ারি, ২০০৬ এবং এ্যপল আগস্ট পযর্ন্ত ইন্টেল প্রসেসর দ্বারা ম্যাকের জন্য ব্যবহারকারীরা সাড়া দেয়। এ্যপলের এক্সসার্ভ সার্ভার ইন্টেলের এক্সইওন প্রসেসর দ্বারা হালনাগাদ বা উন্নয়ন করা হয়। কোর ২ ডুয়ো বিজ্ঞাপনী বিরোধ ২০০৭ সালে কোম্পানিটি এর কোর ২ ডুয়ো প্রসেসরের জন্য একটি ছাপানো বিজ্ঞাপন ছাড়ে যাতে ছয়জন আফ্রিকান (কালো চামড়া) দৌড়বিদ একজন ককেশিয়ান (সাদা চামড়া) পুরুষের কাছে মাথা নত করে আছে(আসলে ছবিটি নেয়া হয়েছিল দৌড়খেলার মাঠ থেকে) একটি অফিসে। ন্যান্সি ভ্যগত, ইন্টেলের মার্কেটিং ভাইস প্রসিডেন্টের মতে, সাধারণ মানুষ এই বিজ্ঞাপনটিকে "মূখর্তা এবং অপমানসূচক" হিসেবে নিয়েছে। খুব দ্রুত এর প্রচারণা ঘুটিয়ে নেয়া হয় এবং বেশ কিছু কর্মকর্তা প্রকাশ্যে ক্ষমা চায় তাদের কর্পোরেট ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। ক্লাসমেট পিসি ইন্টেলের ক্লাসমেট পিসি হচ্ছে ইন্টেল কোম্পানীর প্রথম সবচেয়ে কমদামি নোটবুক। কর্পোরেট কার্যাবলী ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে, ইন্টেলের ছিল প্রায় ১,০০,০০০ জন কর্মচারী এবং ২০০ সহয়তাকেন্দ্র বিশ্ব জুড়ে। ২০০৫ সালের আয় ছিল ৩৮.৮ বিলিয়ন এবং ফরচুন ৫০০ এ এর অবস্থান ছিল ৪৯ তম। আমেরিকান স্টক ইক্সচেঞ্জ এনএএসডিএকিউ এ এটার স্টক চিহ্ন হল আইএসটিসি। ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সালে এর প্রথমদিকের ভোক্তা ছিল এইচপি এবং ডেল। নেতৃত্ব এবং কর্পোরেটের গঠন রবার্ট নয়েস ছিল ইন্টেলের সিইও যখন এটা প্রতিষ্ঠা করা হয় (১৯৬৮ সালে), এতে যোগ দেয় এর যুগ্ম প্রতিষ্ঠাতা গর্ডন মুর (১৯৭৫ সালে। এন্ডি গ্রুভ কোম্পানীর প্রধান হয় ১৯৭৯ সালে এবং সিইও হয় ১৯৮৭ সালে যখন গর্ডন মুর হয় চেয়্যারম্যান। ১৯৯৮ সালে, গ্রুভ গর্ডন মুর এবং ক্রেইগ বেরেট (তখন কোম্পানীর প্রধান) কে নিয়ে সফল হন এবং অব্যাহতি নেন। ১৮ই মে ২০০৫ সালে, বেরেট অব্যাহতি নেয়ার আগে পল ওটেলিনির কাছে কোম্পানীর দায়দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। পল ওটেলিনি ছিলেন কোম্পানীর প্রধান এবং ইন্টেলের নকশার ডিজাইন এর দায়িত্বে ছিলেন যেটা আইবিএম পিসিতে ব্যবহার করা হয়। বোর্ড অব ডিরেক্টরস'রা ওটেলিনি কে সিইও নির্বাচন করেন, এবং বেরেটকে গ্রুভের জায়গায় পরিবর্তন করেন যিনি চেয়্যারম্যান ছিলেন। গ্রুভ যদিও চেয়্যারম্যান হিসেবে অব্যাহতি নেন তবুও কোম্পানীর একজন বিশেষ উপদেশদাতা হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালের মে মাসে, বেরেট চেয়্যারম্যান পদ থেকে অব্যাহতি নেন এবং জেন শ নতুন চেয়্যারম্যান নির্বাচিত হন। বোর্ড অব ডিরেক্টরদের বর্তমান সদস্য হল ক্রেইগ বেরেট, চারলিন বার্শেফস্কি, সুসান ডেকার, জেমস গাজি, রিড হানডট, পল ওটেলিনি, জেমস প্লামার, ডেবিড পট্রাক, জেন শ, জন থ্রনটন এবং ডেবিড ইওফি। একটি স্কুলের অর্থায়ন নিউ মেক্সিকোর রিও রেনচোতে ইন্টেল হল প্রধান নেতৃত্বস্থানীয় চাকুরিদাতা। ১৯৯৭ সালে, সানডোভাল কাউন্টি এবং ইন্টেল কর্পোরেশনের যৌথ অংশীদারি অর্থায়নে রিও রেনচো উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। অর্থায়ন ইন্টেলের বাজার মূলধন ১২২.৪১ বিলিয়ন ডলার (২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ অনুযায়ী), এটি কেনাবেচা করে এনএএসডিএকিউ দ্বারা যেখানে তাদের চিহ্ন আইএনটিসি। আরো যেসব চিহ্ন দিয়ে শেয়ার কেনাবেচা হয় সেগুলো হল- ডো জনস ইন্ডাসট্রিয়াল এভারেজ, এসএন্ডপি ৫০০, এনএএসডিএকিউ-১০০, রাসেল ১০০০ ইন্ডেক্স, রাসেল ১০০০ গ্রোথ ইন্ডেক্স, এসওএক্স এবং জিএসটিআই সফটওয়্যার ইন্ডেক্স। ২০০৮ সালের ১৫ই জুলাই, ইন্টেল ঘোষণা করে তারা কোম্পানীর ইতিহাসে সবোর্চ্চ আয় করে ২০০৮ সালে। সনিক লোগো বিখ্যাত D♭  D♭  G♭  D♭  A♭ জিঙ্গেল, সনিক লোগো, অডিও সনিক লোগো তৈরী করা হয়েছিল মিউসিখভারনিউগান(Musikvergnuegen) দ্বারা এবং লিখেছিলেন ওয়াল্টার ওয়্যারজোয়া (১৯৮০র দশকের অস্ট্রিয়ান ব্যান্ড এডেলউইসের)। ইন্টেলের পেন্টিয়াম ৩, ৪ এবং কোর প্রসেসরগুলোর শুরুতে (প্রত্যেকটির) সনিক লোগোতে এবং সুরে পরিবর্তন আনা হয়েছিল কিন্তু এখনো জিঙ্গেলটি ব্যবহার করা হয়। আইটি ব্যবস্থাপক ৩:অদৃশ্য শক্তিরা আইটি ব্যবস্থাপক ৩:অদৃশ্য শক্তিরা একটি ওয়েব ভিত্তিক সিমুলেশন গেম যা ইন্টেলের তৈরী। এই খেলায় আপনি একটি কোম্পানীর আইটি শাখা ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন। এই খেলার উদ্দেশ্য হল প্রযুক্তি এবং দক্ষতা ব্যবহার করে ছোট ব্যবসা থেকে ব্যবসায়কে বিশ্বজুড়ে সম্প্রসারণ করা। ধর্মীয় বিরোধ ইসরাইলে নিয়োজিত ইন্টেলের অফিস শনিবার অর্থোডক্স জিউদের প্রতিবাদ/বিক্ষোভের মুখোমুখি হয়। কিন্তু কোন ধরনের ধংসাত্মক কর্মকাণ্ড সংঘঠিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরের কিছু কর্মীদের (যারা ওভার টাইম করছিল শাবাটের দিন) খবর অনুযায়ী, ইসরাইলে ইন্টেলের অবস্থা অপরিবর্তিত ছিল। প্রতিযোগিতা ১৯৮০ দশকে পুরো বিশ্বে, সেমিকন্ডাক্টর বিক্রয়কারীদের মধ্যে প্রথম দশজনের একজন ছিল। ১৯৯১ সালে, ইন্টেল চিপ প্রস্তুতকারক হিসেবে আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে বড় কোম্পানী ছিল এবং তখন থেকেই তার অবস্থান ধরে রাখে। অন্য শীর্ষ সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানী হল এএমডি, স্যামসাং, টেক্সাস ইস্ট্রুমেন্টস, তোসিবা এবং এসটিমাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স। পিসি চিপ সেটের প্রতিযোগীরা হল এএমডি, ভায়া টেকনোলজিস, সিস এবং এনভিডিয়া। ইন্টেলের নেটওর্য়াক যন্ত্রসমূহের প্রতিযোগীরা হল ফ্রিস্কেল, ইনফেনিয়ন, ব্রডকম, মার্ভেল টেকনোলজি গ্রুপ এবং এএমসিসি। ফ্ল্যাস মেমোরি যন্ত্রসমূহের প্রতিযোগীরা হল স্প্যানশন, স্যামসাং, কিউমন্ডা, তোশিবা, এসটিইলেক্ট্রনিক্স এবং হাইনিক্স। এক্স৮৬ প্রসেসর বাজারে, একমাত্র প্রধান প্রতিযোগি হল এএমডি, যার সাথে সম্পূর্ণ ক্রস লাইসেন্সিং চুক্তি ছিল ১৯৭৬ থেকে। যাতে উল্ল্যেখ ছিল, প্রত্যেক অংশীদার অন্য পেটেন্ট করা প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে কোন প্রকার জরিমানা ছাড়া কিছু সময়ের জন্য। এই চুক্তি বাতিল হয় যখন এএমডি দেউলিয়া হয় একটি ঘটনায়। কিছু ছোট ছোট প্রতিযোগী যেমন ভায়া এবং ট্রান্সমেটা কম ক্ষমতার এক্স৮৬ প্রসেসর তৈরী করে থাকে কম ক্ষমতার কম্পিউটার এবং কিছু বহন উপযোগী যন্ত্রপাতির জন্য। প্রতিযোগিতা রহিত করার দাবিসমূহ জাপান ২০০৫ সালে, স্থানীয় বাণিজ্য মেলা কমিশন (Fair Trade Commission) ইন্টেলের জাপানি আইন এন্টিমনোপলি ভাঙ্গার প্রমাণ পায়। কমিশনটি ইন্টেলকে তাদের ছাড় উঠিয়ে নিতে বলে যা এএমডির বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক। আইনি ঝামেলা এড়াতে ইন্টেল তাদের নির্দেশ মেনে নেয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২০০৭ সালের জুলাইয়ে, ইউরোপিয়ান কমিশন ইন্টেলকে এন্টি-কম্পিটিটিভ প্রাকটিস বা প্রতিযোগিতা রহিত করার জন্য অভিযুক্ত করে বিশেষত এএমডির বিরুদ্ধে। অভিযোগটি দেখতে হলে দেখতে হবে পেছনের দিকে, ২০০৩ সালে, কম্পিউটার প্রস্তুতকারকদেরকে তাদের পছন্দমত দামে ইন্টেলের চিপ কেনার সুযোগ দেয় এবং প্রস্তুতকারকদের এএমডি চিপ দিয়ে বানানো কম্পিউটার যাতে দেরিতে অথবা বাতিল করে দেয়ার জন্য টাকা দেয় ইন্টেল। একইসাথে সরকারী প্রতিষ্ঠান বা সরকার এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ দামের চেয়ে কমদামে চিপ সরবরাহ করে তারা। ইন্টেলের দাবি ছিল এগুলো অযৌক্তিক এবং মিথ্যা বরং তারা ভোক্তার সহায়ক বাজার তৈরী করেছে। জেনারেল কাউন্সিল ব্রুস সয়েল দাবি করেন, কমিশন কিছু তথ্যসংক্রান্ত অণুমানে ভুল বুঝেছে যাতে দাম এবং উৎপাদন খরচ ছিল। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে, ইন্টেল মন্তব্য করে এর মিউনিখ অফিসে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রেগুলেটর অভিযান চালিয়েছে। ইন্টেল রির্পোট দেয় এটা তদন্তকারীদের সাহায্য করছিল। ইন্টেলের বার্ষিক আয়ের ১০% পর্যন্ত জরিমানা কাটা হয়। একই সময়ে এএমডি একটি ওয়েবসাইট ছেড়ে অভিযোগের পক্ষে জোরদার দাবি জানায়। ২০০৮ এর জুনে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন নতুন জরিমানা ধার্য করে ইন্টেলের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালের মে, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রমাণ পায় যে ইন্টেল প্রতিযোগিতা রহিত করায় জড়িত ছিল এবং সাথে সাথে ১.৪৪ বিলিয়ন জরিমানা ধার্য করে। তারা প্রমাণ পায় ইন্টেল তাদের চিপ ব্যবহারের জন্য এসার, ডেল, এইচপি, লেনোভো এবং এনইসিকে অর্থ প্রদান এবং অন্যান্য কোম্পানির ক্ষতি সাধনের জন্য যাতে এএমডিও রয়েছে। ইউরোপিয়ান কমিশন বলে যে, ইন্টেল তাদের মার্কেট বজায় রাখতে প্রতিযোগীদের হটাতে ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ করছিল যা ইউ এন্টিট্রাস্ট নিয়মকে সম্পূর্ণ ভঙ্গ করেছে। জরিমানার সাথে ইন্টেলকে বলা হয় যাতে সবধরনের বেআইনি কাজ বন্ধ করতে। ইন্টেল জানায় তারা এর বিরুদ্ধে আপিল করবে। দক্ষিণ কোরিয়া ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে, দক্ষিণ কোরিয়া রেগুলেটরস ইন্টেলকে অভিযুক্ত করে এন্টিট্রাস্ট আইন ভাঙ্গার দায়ে। তদন্তকাজ শুরু হয়েছিল ২০০৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, যখন কর্মকর্তারা ইন্টেলের দক্ষিণ কোরিয়ান অফিসে অভিযান চালায়। যদি দোষী সাব্যস্ত হয়, এর বার্ষিক বিক্রয়ের ৩% জরিমানা করা হবে। ২০০৮ সালের জুনে, ন্যায্য বাণিজ্য কমিশন ইন্টেলকে ২৫.৫ মিলিয়ন জরিমানা দিতে বলে। অভিযোগ করা হয়, ইন্টেল তার বিশাল ব্যবসায়িক অবস্থানের সুযোগ নিয়ে কোরিয়ান কম্পিউটার প্রস্তুতকারকদের কে টাকা দিয়েছিল এই শর্তে যে তারা এএমডি থেকে পণ্য কিনবে না। যুক্তরাষ্ট্র নিউ ইয়র্ক ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে তদন্ত শুরু করে ইন্টেলের এটা দেখতে যে তারা মাইক্রোপ্রসেসরের দাম এবং বিক্রয়ে এন্টিট্রাস্ট আইন ভঙ্গ করছে কিনা। ২০০৮ সালের জুনে, ফেডারেল ট্রেড কমিশন একই ভাবে তদন্ত শুরু করে ইন্টেলের বিরুদ্ধে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল ট্রেড কমিশন ঘোষণা করে এটি ইন্টেলের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিবে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে। ২০০৮ সালের নভেম্বরে, দুই বছরের তদন্তের পথ ধরে, নিউ ইয়র্কের এটর্নি জেনারেল এন্ড্রু কুমো ইন্টেলকে অভিযুক্ত করে ঘুষ এবং অন্য কোম্পানিকে বাধ্য করার দায়ে। এতে দাবি করা হয়, ইন্টেল কম্পিউটার প্রস্তুতকারকদের তাদের চিপ প্রতিযোগীদের চাইতে বেশি কেনার জন্য এবং টাকা তুলে নেয়ার হুমকি দেয় যদি তারা প্রতিযোগিদের সাথে একত্র হয়ে বা কাছাঁকাছি হয়ে কাজ করে কিন্তু ইন্টেল এসব অভিযোগ অস্বীকার করে। ২০১০ সালের জুলাইয়ের ২২ তারিখ, ডেল সম্মত হয় ইউ. এস সিকিউরিটিস এবং ইক্সচেঞ্জ কমিশনের সাথে বোঝাপড়া করতে যেখানে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার জরিমানা ধার্য করা হয়েছিল কারণ ডেল তার বিনিয়োগকারীদের হিসাবরক্ষনের সঠিক তথ্য প্রকাশ করত না। বিশেষ করে, সিইসি জরিমানা করে ২০০২-২০০৬ পযর্ন্ত সময়কে, যেসময় ডেলের ইন্টেলের সাথে চুক্তি হয়েছিল রিবেট পাওয়া নিয়ে এএমডির চিপ ব্যবহার না করার শর্তে। এইসব রিবেট বিনিয়োগকারীদের কাছে প্রকাশ করা হত না। কিন্তু কোম্পানীর আর্থিক অবস্থার উপর নির্ভর করে বিনিয়োগকারীদের চাহিদা মেটানোতে ব্যবহার করা হত। সিইসি বলে যে, ২০০৭ সালের প্রথম তিন মাসে, ৭০% অপারেটিং আয় পেয়ে থাকে। ডেল ২০০৬ সালে এএমডিকেও সরবরাহকারী হিসেবে নেয়, এতে করে ইন্টেল তাদের রিবেট দেয়া বন্ধ করে দেয়, এতে করে ডেলের আর্থিক অবস্থা খারাপ হতে থাকে। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Intel official website Intel Software Network মার্কিন মার্কা ১৯৬৮-এ প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি ন্যাসড্যাকে তালিকাভুক্ত কোম্পানি কম্পিউটার হার্ডওয়্যার কোম্পানি মাদারবোর্ড কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সদর দফতর বহুজাতিক কোম্পানি নেটবুক নির্মাতা অর্ধপরিবাহী কোম্পানি ইন্টেল এক্স৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর ইন্টেল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কম্পিউটার কোম্পানি কম্পিউটার মেমোরি কোম্পানি কম্পিউটার স্টোরেজ কোম্পানি গ্রাফিক্স হার্ডওয়্যার কোম্পানি লিনাক্স কোম্পানি সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরীয় অঞ্চল ভিত্তিক প্রস্তুতকারক কোম্পানি মোবাইল ফোন প্রস্তুতকারক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সফটওয়্যার কোম্পানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সান ফ্রান্সিসকো উপসাগরীয় অঞ্চল ভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি
https://en.wikipedia.org/wiki/Intel
Intel
Intel Corporation is an American multinational corporation and technology company headquartered in Santa Clara, California, and incorporated in Delaware. Intel designs, manufactures and sells computer components and related products for business and consumer markets. It is considered one of the world's largest semiconductor chip manufacturers by revenue and ranked in the Fortune 500 list of the largest United States corporations by revenue for nearly a decade, from 2007 to 2016 fiscal years, until it was removed from the ranking in 2018. In 2020, it was reinstated and ranked 45th, being the 7th-largest technology company in the ranking. Intel supplies microprocessors for most manufacturers of computer systems, and is one of the developers of the x86 series of instruction sets found in most personal computers (PCs). It also manufactures chipsets, network interface controllers, flash memory, graphics processing units (GPUs), field-programmable gate arrays (FPGAs), and other devices related to communications and computing. Intel has a strong presence in the high-performance general-purpose and gaming PC market with its Intel Core line of CPUs, whose high-end models are among the fastest consumer CPUs, as well as its Intel Arc series of GPUs. The Open Source Technology Center at Intel hosts PowerTOP and LatencyTOP, and supports other open source projects such as Wayland, Mesa, Threading Building Blocks (TBB), and Xen. Intel (Integrated electronics) was founded on July 18, 1968, by semiconductor pioneers Gordon Moore (of Moore's law) and Robert Noyce, along with investor Arthur Rock, and is associated with the executive leadership and vision of Andrew Grove. The company was a key component of the rise of Silicon Valley as a high-tech center, as well as being an early developer of SRAM and DRAM memory chips, which represented the majority of its business until 1981. Although Intel created the world's first commercial microprocessor chip—the Intel 4004—in 1971, it was not until the success of the PC in the early 1990s that this became its primary business. During the 1990s, the partnership between Microsoft Windows and Intel, known as "Wintel", became instrumental in shaping the PC landscape and solidified Intel's position on the market. As a result, Intel invested heavily in new microprocessor designs in the mid to late 1990s, fostering the rapid growth of the computer industry. During this period, it became the dominant supplier of PC microprocessors and was known for aggressive and anti-competitive tactics in defense of its market position, particularly against AMD, as well as a struggle with Microsoft for control over the direction of the PC industry. Since the 2000s and especially the late 2010s, Intel has faced increasing competition from AMD, resulting in a significant decline of its dominance and market share in the PC market. Nevertheless, with a 68.4% market share as of 2023, Intel still leads the x86 market by a wide margin.
1543
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E2%80%8C%E0%A6%B8
সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স
সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স (ইংরেজি: Sun Microsystems সান্‌ মায়্‌ক্রোসিস্টাম্‌জ়্‌) একটি বহুজাতিক প্রকৌশলবিষয়ক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।যার প্রধান কার্যালয় সান্তা ক্লারা,ক্যালিফোর্নিয়াতে অবস্থিত।এটি ২৪শে ফেব্রুয়ারি,১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত। সান মিক্রোসিস্টেমস প্রধানত কম্পিউটার সার্ভার, ওয়ার্কস্টেশন প্রস্তুতকারক। যদিও সানকে হার্ডওয়ার কোম্পানি হিসাবা বলা হয়েছে তার পরেও তারা বেশ কিছু নামকরা সফটওয়্যার তৈরি করেছে।তার মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো সোলারিস (এটি একটি অপারেটিং সিস্টেম), জাভা প্লাটফর্ম, ওপেন অফিস, ডাটাবেজ ম্যানেজমেন্ট করার জন্যে মাইএসকিউএল। ২০০৯ সালের ২০ এপ্রিলের এক চুক্তি অনুযায়ী ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি ওরাকল কর্পোরেশন সান মাইক্রোসিস্টেমসকে ৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয়। বিনোদ খোসলা এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তথ্যসূত্র বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ১৯৮২-এ প্রতিষ্ঠিত মুক্ত সফটওয়্যার কোম্পানি ২০১০-এর অধিগ্রহণ ও একত্রীকরণ
https://en.wikipedia.org/wiki/Sun_Microsystems
Sun Microsystems
Sun Microsystems, Inc. (Sun for short) was an American technology company that sold computers, computer components, software, and information technology services and created the Java programming language, the Solaris operating system, ZFS, the Network File System (NFS), and SPARC microprocessors. Sun contributed significantly to the evolution of several key computing technologies, among them Unix, RISC processors, thin client computing, and virtualized computing. Notable Sun acquisitions include Cray Business Systems Division, Storagetek, and Innotek GmbH, creators of VirtualBox. Sun was founded on February 24, 1982. At its height, the Sun headquarters were in Santa Clara, California (part of Silicon Valley), on the former west campus of the Agnews Developmental Center. Sun products included computer servers and workstations built on its own RISC-based SPARC processor architecture, as well as on x86-based AMD Opteron and Intel Xeon processors. Sun also developed its own storage systems and a suite of software products, including the Solaris operating system, developer tools, Web infrastructure software, and identity management applications. Technologies included the Java platform and NFS. In general, Sun was a proponent of open systems, particularly Unix. It was also a major contributor to open-source software, as evidenced by its $1 billion purchase, in 2008, of MySQL, an open-source relational database management system. At various times, Sun had manufacturing facilities in several locations worldwide, including Newark, California; Hillsboro, Oregon; and Linlithgow, Scotland. However, by the time the company was acquired by Oracle Corporation, it had outsourced most manufacturing responsibilities. On April 20, 2009, it was announced that Oracle would acquire Sun for US$7.4 billion. The deal was completed on January 27, 2010.
1545
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B2%20%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%B8%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসরসমূহের তালিকা
এই নিবন্ধে প্রদত্ত কালানুক্রমিক (chronological) ও বংশানুক্রমিক (generational) ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসরসমূহের তালিকাটিতে ইন্টেল কম্পানির তৈরি সমস্ত মাইক্রোপ্রসেসর - পথপ্রদর্শনকারী ৪-বিট ৪০০৪ (১৯৭১) থেকে শুরু করে বর্তমানের পেন্টিয়াম ৪এফ (ইএম৬৪টি সহ) (২০০৪) - উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। ৪ বিট প্রসেসর ইন্টেল ৪০০৪:প্রথম সিঙ্গেল চিপ মাইক্রোপ্রসেসর সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় নভেম্বর ১৫,১৯৭১ ক্লক রেট ৭৪০ কিলোহার্টয ০.০৭ এমআইপিএস বাস এর প্রস্থ ৪ বিট পিএমওএস ট্রান্সিস্টরস সংখ্যা ২৩০০, ১০ মাইক্রোমিটারে এড্রেসেবল মেমরি ৬৪০ বাইটস প্রোগ্রাম মেমরি ৪ কিলোবাইটস প্রথম দিকের বাণিজ্যিক মাইক্রোপ্রসেসর এর মধ্যে অন্যতম Busicom ক্যালকুলেটরে ব্যবহার করার জন্য মূলত তৈরী করা হয়ে ছিল এমসিএস-৪ পরিবার: ৪০০৪-সিপিইউ ৪০০১-রম এবং ৪ বিট পোর্ট ৪০০৩-১০ বিট শিফ্ট রেজিস্টার ৪০০৮-মেমরি+I/O ইন্টারফেস ৪০০৯-মেমরি+I/O ইন্টারফেস ইন্টেল ৪০৪০ এমসিএস-৪০ পরিবার: ৪০৪০-সিপিইউ ৪১০১-১০২৪-বিট (২৫৬ × ৪) স্ট্যাটিক র‌্যমের সাথে আলাদা I/O ৪২০১-৪মেগাহার্টয ক্লক জেনারেটর ৪২০৭-জেনারেল পারপোস বাইট I/O পোর্ট ৪২০৯-জেনারেল পারপোস বাইট I/O পোর্ট ৪২১১-জেনারেল পারপোস বাইট I/O পোর্ট ৪২৬৫-প্রোগ্রামেবল জেনারেল পারপোস I/O ডিভাইস ৪২৬৯-প্রোগ্রামেবল কিবোর্ড ডিসপ্লে ডিভাইস ৪২৮৯-স্ট্যান্ডারড মেমরি ইন্টারফেস এমসিএস-৪/৪০ এর জন্য ৪৩০৮-৮১৯২-বিট (১০২৪ × ৮) রম w/ ৪-বিট I/O পোর্ট ৪৩১৬-১৬৩৮৪-বিট (২০৪৮ × ৮) স্ট্যাটিক রম ৪৭০২-২০৪৮-বিট (২৫৬ × ৮) ইপিরম ৪৮০১–৫.১৮৫মেগাহার্টয ক্লক জেনারেটর ক্রিস্টাল ৪০০৪/৪২০১এ বা ৪০৪০/৪২০১\এ এর জন্য ৮ বিট প্রসেসর ইন্টেল ৮০০৮ সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় এপ্রিল ১,১৯৭২ ক্লক রেট ৫০০ কিলোহার্টয (৮০০১–১: ৮০০ কিলোহার্টয) ০.০৫ এমআইপিএস বাস এর প্রস্থ ৮ বিট এনহেসমেন্ট লোড পিএমওএস লজিক ট্রান্সিস্টরস সংখ্যা ৩৫০০, ১০ মাইক্রোমিটারে এড্রেসেবল মেমরি ১৬ কিলোবাইটস পুরাতন ৮ বিট মাইক্রোকম্পিউটার, ডাম্ব টারমিনাল, সাধারণ ক্যালকুলেটর, বোতলজাত করার যন্ত্র এর জন্য আদর্শস্বরূপ মূলত মাইক্রোকম্পিউটারে ব্যবহারের জন্য তৈরী করা হয়ে ছিল ইন্টেল ৮০৮০ সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় এপ্রিল ১,১৯৭৪ ক্লক রেট ২ মেগাহার্টয(সর্বোচ্চ ৮০৮০B:৩ মেগাহার্টয) ০.৬৪ এমআইপিএস বাস এর প্রস্থ ৮ বিট ডাটা এবং ১৬ বিট এড্রেস এনহেসমেন্ট লোড এনএমওএস লজিক ট্রান্সিস্টরস সংখ্যা ৬০০০ এড্রেসেবল মেমরি ৬৪ কিলোবাইট ৮০০৮ থেকে ১০ গুন বেশি পারফরমেন্স Altair ৮৮০০, ট্রাফিক বাতি, cruise মিসাইল এ ব্যবহার করা হত ইন্টেল ৮০৮৫ সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় মার্চ,১৯৭৬ ক্লক রেট ৩ মেগাহার্টয ০.৩৭ এমআইপিএস বাস এর প্রস্থ ৮ বিট ডাটা এবং ১৬ বিট এড্রেস ডেপ্লেসন লোড এনএমওএস লজিক ট্রান্সিস্টরস সংখ্যা ৬৫০০,৩ মাইক্রোমিটারে এমসিএস-৮৫ পরিবার: ৮০৮৫-সিপিইউ ৮১৫৫-র‌্যাম+ ৩ টি I/O পোর্ট+টাইমার "Active Low CS" ৮০৫৬-র‌্যাম+ ৩ টি I/O পোর্ট+টাইমার "Active High CS" ৮১৮৫-এসর‌্যাম ৮২০২-ডাইনামিক র‌্যাম কন্ট্রোলার ৮২০৩-ডাইনামিক র‌্যাম কন্ট্রোলার ৮২০৫-১ ৮ বাইনারি ডিকোডার এর ৮২০৬-ভুল ধরার এবং ঠিক করার ইউনিট ৮২০৭-ডাইনামিক র‌্যাম কন্ট্রোলার ৮২১০-TTL থেকে MOS Shifter এবং উচু ভোল্টেজ ক্লক ড্রাইভার ৮২১২-৮ বিট I/O পোর্ট ৮২১৬-৪ বিট Parallel Bidirectional বাস ৮২১৯-বাস কন্ট্রোলার ৮২২২-ডাইনামিক র‌্যাম রিফ্রেশ কন্ট্রোলার ৮২২৬-৪ বিট Parallel Bidirectional বাস ড্রাইভার ৮২৩১-অ্যারিথমেটিক প্রসেসিং ইউনিট ৮২৩২-ভাসমান পয়েন্ট প্রসেসর ৮২৩৭-DMA কন্ট্রোলার ৮২৪৪-সাধারণ গ্রাফিক্স ডিসপ্লে ডিভাইস (SECAM ) ৮২৪৫-সাধারণ গ্রাফিক্স ডিসপ্লে ডিভাইস (PAL সিস্টেম) ৮২৫১-কমিউনিকেশন কন্ট্রোলার ৮২৫৩-প্রোগ্রামেবল ইন্টারভাল টাইমার ৮২৫৪-প্রোগ্রামেবল ইন্টারভাল টাইমার ৮২৫৫-প্রোগ্রামেবল পেরিফেরাল ইন্টারফেস ৮২৫৬-মাল্টিফানশন সমর্থন কন্ট্রোলার ৮২৫৭-DMA কন্ট্রোলার ৮২৫৯-প্রোগ্রামেবল ইন্টারাপ্ট কন্ট্রোলার ৮২৭১-প্রোগ্রামেবল ফ্লপি ডিস্ক কন্ট্রোলার ৮২৭২-Single/Double Density ফ্লপি ডিস্ক কন্ট্রোলার ৮২৭৩-প্রোগ্রামেবল HDLC/SDLC Protocol কন্ট্রোলার ৮২৭৪-Multi-Protocol সিরিয়াল কন্ট্রোলার ৮২৭৫-CRT কন্ট্রোলার ৮২৭৬-Small সিস্টেম CRT কন্ট্রোলার ৮২৭৮-প্রোগ্রামেবল কিবোর্ড ইন্টারফেস ৮২৭৯-কিবোর্ড/ডিসপ্লে কন্ট্রোলার ৮২৮২-৮-বিট Non-Inverting Latch with Output Buffer ৮২৮৩-৮-বিট Inverting Latch with Output Buffer ৮২৯১-GPIB Talker/Listener ৮২৯২-GPIB কন্ট্রোলার ৮২৯৩-GPIB ট্রান্সিভার ৮২৯৪-ডাটা Encryption/Decryption ইউনিট+১ O/P পোর্ট ৮২৯৫-ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টার কন্ট্রোলার ৮২৯৬-GPIB ট্রান্সিভার ৮২৯৭-GPIB ট্রান্সিভার ৮৩৫৫-১৬,৩৮৪-বিট (২০৪৮ × ৮) রম with I/O ৮৬০৪-৪০৯৬-বিট (৫১২ × ৮) পিরম ৮৭০২-২K-বিট (২৫৬ × ৮ ) পিরম ৮৭৫৫-ইপিরম+২ I/O পোর্ট মাইক্রোকন্ট্রোলার এরা হচ্ছে ICs যার সাথে রয়েছে সিপিইউ,র‌্যাম,রম (বা পিরম বা ইপিরম),I/O পোর্টস,টাইমস এবং ইন্টারাপ্ট ইন্টেল ৮০৪৮ Single accumulator Harvard architecture এমসিএস-৪৮ পরিবার ৮০২০-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০২১-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০২২-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার এর সাথে অন চিপ A/D কনভার্টার ৮০৩৫-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৩৯-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪০-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪১-ইউনিভারসালl পেরিফেরাল ইন্টারফেস ৮-বিট স্লেইভ মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৬৪১-ইউনিভারসালl পেরিফেরাল ইন্টারফেস ৮-বিট স্লেইভ মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৪১-ইউনিভারসালl পেরিফেরাল ইন্টারফেস ৮-বিট স্লেইভ মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪২-ইউনিভারসালl পেরিফেরাল ইন্টারফেস ৮-বিট স্লেইভ মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৪২-ইউনিভারসালl পেরিফেরাল ইন্টারফেস ৮-বিট স্লেইভ মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮২৪৩-ইনপুট/আউটপুট এক্সপান্দার ৮০৪৮-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪৮-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৪৮-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪৯-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪৮-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৪৯-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৫০-সিঙ্গেল-কম্পোনেন্ট ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ইন্টেল ৮০৫১ Single accumulator Harvard architecture এমসিএস-৫১পরিবার ৮০৩১-৮-বিট কন্ট্রল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৩২-৮-বিট কন্ট্রল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৪৪-High পারফরমেন্স ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার এর সাথে অন চিপ সিরিয়াল কমিউনিকেশন কন্ট্রোলার ৮৩৪৪-High পারফরমেন্স ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার এর সাথে অন চিপ সিরিয়াল কমিউনিকেশন কন্ট্রোলার ৮৭৪৪-High পারফরমেন্স ৮-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার এর সাথে অন চিপ সিরিয়াল কমিউনিকেশন কন্ট্রোলার ৮০৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৫২-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৫৪-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০৫৮-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩৫২-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩৫৪-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩৫৮-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৫২-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৫৪৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৫৮-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০১৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩১৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭১৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০১৫২-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩১৫২-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০২৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩২৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭২৫১-৮-বিট কন্ট্রোল ওরিয়েন্টেড মাইক্রোকন্ট্রোলার ইন্টেল এমসিএস-৯৬ পরিবার ৮০৯৪-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৪৮-পিন রমলেস Without A/D) ৮০৯৫-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৪৮-পিন রমলেস With A/D) ৮০৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৬৮-পিন রমলেস Without A/D) ৮০৯৭-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৬৮-পিন রমলেস With A/D) ৮৩৯৪-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৪৮-পিন With রম Without A/D) ৮৩৯৫-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৪৮-পিন With রম With A/D) ৮৩৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৬৮-পিন With রম Without A/D) ৮৩৯৭-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৬৮-পিন With রম With A/D) ৮৭৯৪-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৪৮-পিন With ইরম Without A/D) ৮৭৯৫-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৪৮-পিন With ইরম With A/D) ৮৭৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৬৮-পিন With ইরম Without A/D) ৮৭৯৭-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার (৬৮-পিন With ইরম With A/D) ৮০৯৮-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩৯৮-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭৯৮-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০১৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৩১৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮৭১৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার ৮০২৯৬-১৬-বিট মাইক্রোকন্ট্রোলার বিট স্লাইস প্রসেসর ইন্টেল ৩০০০ পরিবার সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় ১৯৭৪ সালে ৩০০১-মাইক্রোকন্ট্রোল ইউনিট ৩০০২-২-বিট অ্যারিথমেটিক লজিক ইউনিট স্লাইস ৩০০৩-লুক-অ্যাহেড ক্যারি জেনারেটর ৩২০৫-হাই-পারফরমেন্স ৮টির মধ্যে ১ টি বাইনারি ডিকোডার ৩২০৭-কোয়াড বাইপোলার থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং ড্রাইভার ৩২০৮-হেক্স সেন্স অ্যাম্প এবং ল্যাচ এমওএস মেমরিস এর জন্য ৩২১০ টিটিএল থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং উচু ভোল্টেজ ক্লক ড্রাইভার ৩২১১ ইসিএল থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং উচু ভোল্টেজ ক্লক ড্রাইভার ৩২১২-মাল্টিমোড ল্যাচ বাফার ৩২১৪ ইন্টারাপ্ট কন্ট্রোল ইউনিট ৩২১৬-প্যারালাল,ইনভারটিং বাই-ডাইরেকশনাল বাস ড্রাইভার ৩২২২ রিফ্রেশ কাউন্টার ৪ কিলোবাইট এনএমওএস ডির‌্যাম এর জন্য ৩২২৬-প্যারালাল,ইনভারটিং বাই-ডাইরেকশনাল বাস ড্রাইভার ৩২৩২-এড্রেস মাল্টিপ্লেক্সার এবং রিফ্রেশ কাউন্টার ৪ কিলোবাইট ডির‌্যাম এর জন্য ৩২৩৫-কোয়াড বাইপোলার থেকে এমওএস ড্রাইভার ৩২৪২-এড্রেস মাল্টিপ্লেক্সার এবং রিফ্রেশ কাউন্টার ১৬ কিলোবাইট ডির‌্যাম এর জন্য ৩২৪৫-কোয়াড বাইপোলার টিটিএল থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং ড্রাইভার ৪ কিলোবাইট এর জন্য ৩২৪৬-কোয়াড বাইপোলার ইসিএল থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং ড্রাইভার ৪ কিলোবাইট এর জন্য ৩৪০৪-হাই-পারফরমেন্স ৬-বিট ল্যাচ ৩৪০৮ হেক্স সেন্স অ্যাম্প এবং ল্যাচ এমওএস মেমরিস এর জন্য বাস এর প্রস্থ ২-এন বিটস ডাটা/এড্রেস (নির্ভর করবে স্লাইস সংখ্যা ব্যবহারের উপর) আইপিএলডিস:ইন্টেল প্রোগ্রামেবল লজিক ডিভাইস ইন্টেল পিএলডি পরিবার আইএফএক্স ৭৮০-১০এনএস এফএলইএক্স লজিক FPGA এর সাথে SRAM সুবিধা ৮৫সি২২০-৮০ এবং ৬৬ দ্রুত গতি সম্পন্ন রেজিস্টার্ড ব্যান্ডউইথ ৮-ম্যাক্রোসেল পিএলডিস ৮৫সি২২৪-৮০ এবং ৬৬ দ্রুত গতি সম্পন্ন রেজিস্টার্ড ব্যান্ডউইথ ৮-ম্যাক্রোসেল পিএলডিস ৮৫সি২২ভি১০-দ্রুত ১০-ম্যাক্রোসেল CHএমওএস μপিএলডি ৮৫সি০৬০-দ্রুত ১৬-ম্যাক্রোসেল সিএইচএমওএস পিএলডি ৮৫সি০৯০-দ্রুত ২৪-ম্যাক্রোসেল সিএইচএমওএস পিএলডি ৮৫সি৫০৮-দ্রুত ১-মাইক্রোন সিএইচএমওএস ডিকোদার/ল্যাচ μপিএলডি ৮৫সি৯৬০-প্রোগ্রামেবল বাস কন্ট্রোল পিএলডি ৫এসি৩১২-১-মাইক্রোন সিএইচএমওএস ইপিএলডি ৫এসি৩২৪-১-মাইক্রোন সিএইচএমওএস ইপিএলডি ৫সি১২১-ইপিএলডি ৫সি০৩১-৩০০ গেইট সিএমওএস পিএলডি ৫সি০৩২-৮-ম্যাক্রোসেল পিএলডি ৫সি০৬০-১৬-ম্যাক্রোসেল পিএলডি ৫সি০৯০-২৪-ম্যাক্রোসেল পিএলডি ৫সি১৮০-৪৮-ম্যাক্রোসেল পিএলডি সিগণাল প্রসেসের ইন্টেল ২৯০০ পরিবার ২৯১০-পিসিএম কোডেক – µ ল ২৯১১-পিসিএম কোডেক – এ ল ২৯১২-পিসিএম লাইন ফিল্টারসমূহ ২৯১৩-কম্বাইন্ড সিনগেল চিপ পিসিএম কোড এবং ফিল্টার ২৯১৪-কম্বিনেশন কোডেক/ফিল্টার ২৯১৬-১৬ পিন সিএইচএমওএস সিনগেল চিপ পিসিএম কোডেক এবং ফিল্টার µ-ল ২৯১৭-১৬ পিন সিএইচএমওএস সিনগেল চিপ পিসিএম কোডেক এবং ফিল্টার এ-ল ২৯২০-সিগণাল প্রসেসের ২৯২১-রম সিগণাল প্রসেসের ২৯৪৮-ফিচার কন্ট্রোল কম্বো ২৯৫০-ফিচার কন্ট্রোল কম্বো ২২-পিন ,৭ সিগণালিং চ্যানেল ২৯৫১-ফিচার কন্ট্রোল কম্বো ২৮-পিন ,৭ সিগণালিং চ্যানেল,সেকেন্ডারি এনালগ ইনপুট এবং আউটপুট ২৯৫২-ইন্টাগ্রেটেড I/O কন্ট্রোলার ২৯৫৩-অ্যাডভান্সড ট্রান্সিভার ২৯৭০-সিনগেল চিপ মডেম ৮৯০২৭-২৪০০ বিপিএস ইন্টালিজেন্ট মডেম চিপ সেট ডিজিটাল ক্লকস প্রসেসর ইন্টেল ৫০০০ পরিবার এসব ডিভাইসগুলো সিএমওএস প্রযুক্তির ৫১০১-১০২৪-বিট (২৫৬ × ৪) স্ট্যাটিক র‌্যাম ৫২০১/৫২০২-এলসিডি ডিকোডার-ড্রাইভার ৫২০৩ এলসিডি ড্রাইভার ৫২০৪-সময়-সেকেন্ডস/তারিখ এলসিডি ডিকোডার-ড্রাইভার ৫২৩৪-কোয়াড সিএমওএস-থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং ড্রাইভার ৪ কিলোবাইট এনএমওএস র‌্যাম এর জন্য ৫২৩৫-কোয়াড সিএমওএস-টিটিএল থেকে এমওএস লেভেল শিফটার এবং ড্রাইভার ৪ কিলোবাইট এনএমওএস এর জন্য ৫২৪৪-কোয়াড সিসিডি ক্লক ড্রাইভার ৫৮০১-নিম্ন ক্ষমতা সম্পন্ন অসকিলেটর-ডিভাইডার ৫৮১০-সিনগেল চিপ এলসিডি সময়-সেকেন্ডস/তারিখ দেখার সার্কিট ৫৮১৪ ৪-ডিজিট এলসিডি। ৫৮১৬ ৬-ডিজিট এলসিডি। ৫৮৩০ ৬-ডিজিট এলসিডি + ক্রোনোগ্রাফ বিজনেস সোল্ড ১৬ বিট প্রসেসরস: x৮৬ এর উৎস ইন্টেল ৮০৮৬ সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় জুন ৮, ১৯৭৮ ক্লক রেটস: ৪.৭৭মেগাহার্টযস এর সাথে ০.৩৩ এমআইপিএস ৮ মেগাহার্টযস এর সাথে ০.৬৬ এমআইপিএস ১০মেগাহার্টযস এর সাথে ০.৭৫ এমআইপিএস বাস এর প্রস্থ ১৬ বিটস ডাটা এবং ২০ বিটস এড্রেস ট্রান্সিস্টরস সংখ্যা ৬০০০, ৩ মাইক্রোমিটারে এড্রেসেবল মেমরি ১ মেগাবাইট ৮০৮০ থেকে ১০ গুন বেশি পারফরমেন্স ইন্টেল ৮০৮৭ ইন্টেল ৮০৮৮ সর্বপ্রথম উপস্থাপন করা হয় জুন ১, ১৯৭৯ ক্লক রেটস: ৪.৭৭মেগাহার্টযস এর সাথে ০.৩৩ এমআইপিএস ৮ মেগাহার্টযস এর সাথে ০.৭৫ এমআইপিএস ইন্টারনাল আরকিটেকচার ১৬ বিটস এক্সটারনাল বাস এর প্রস্থ ৮ বিটস ডাটা এবং ২০ বিটস এড্রেস ট্রান্সিস্টরস সংখ্যা ২৯০০০, ৩ মাইক্রোমিটারে এড্রেসেবল মেমরি ১ মেগাবাইট ৮০৮৬ এর মতই অবিকল কেবল এটির ৮ বিটস এক্সটারনাল বাস ছাড়া ব্যবহৃত হত আইবিএম পিসি এবং পিসি ক্লোন গুলোতে বহিঃসংযোগ ইন্টেল মাইক্রোপ্রসেসর কম্পিউটার যন্ত্রাংশ ইন্টেল ইন্টেল এক্স৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_Intel_processors
List of Intel processors
This generational list of Intel processors attempts to present all of Intel's processors from the 4-bit 4004 (1971) to the present high-end offerings. Concise technical data is given for each product.
1546
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A7%8B%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF
রোমান সাম্রাজ্য
রোমান সাম্রাজ্য (লাতিন: Imperium Rōmānum; ইম্পেরিউম্ রোমানুম্) প্রাচীন রোমান সভ্যতার একটি পর্যায়, সাম্রাজ্যটি একজন সম্রাটের নেতৃত্বে থাকা সরকারের দ্বারা পরিচালিত হত এবং রোমান সাম্রাজ্যের শাসনাধীন অঞ্চলসমূহ ভূমধ্যসাগরের চারিদিকে ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। খ্রিঃপূঃ ১০০-৪০০ খ্রিঃ পর্যন্ত রোম পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহত্তম নগরী ছিল, এবং রোমান সাম্রাজ্যের জনসংখ্যা ৫০-৯০ মিলিয়নে উন্নীত হয়েছিল (যা তৎকালীন সময়ে পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় ২০% ছিল)। এর আগে গৃহযুদ্ধ এবং রাজনৈতিক সংঘাতের ফলে রোমে বিরাজমান ৫০০ বছরের রোমান প্রজাতন্ত্রে চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। অস্থিরতার ঐ সময়ে জুলিয়াস সিজার কে স্থায়ী ডিক্টেটর বা ন্যায়পালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। খ্ৰী:পূ: ৪৪-তে তাকে কয়েকজন ষড়যন্ত্রকারীরা হত্যা করে। ফলস্বরূপ গৃহযুদ্ধ এবং হত্যালীলা অব্যাহত থাকে। সিজারের পোষ্য পুত্র অক্টাভিয়ান খ্রী:পূ: ৩১-এ এক্টিয়ামের যুদ্ধে মার্ক এন্টনী এবং ক্লিওপেট্রাকে পরাজিত করে। এরপর অক্টাভিয়ান অদমনীয় হয়ে উঠে এবং খ্রী:পূ: ২৭-এ রোমান সিনেটে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অসীম ক্ষমতা দেয়ার সাথে আউগুস্তুস উপাধি প্রদান করে যা রোমান সাম্রাজ্যের শুরুর একটি মাইলফলক। রোমান প্রজাতন্ত্র প্রায় ১৪০০ বছর ধরে প্রচলিত ছিল। এর প্রথম দুই শতক রাজনৈতিক সুস্থরতা এবং সমৃদ্ধির কারণে এদের “রোমান শান্তি”র যুগ হিসেবে অভিহিত করা হয়। অক্টেভিয়ানের বিজয়ের পর রোমান সাম্রাজ্যের পরিসর নাটকীয়ভাবে সম্প্রসারিত হয়। ৪১ সালে কেলিগুলার হত্যার পর সিনেটে পুনরায় প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বিবেচনা করা হয়। কিন্তু ইতোমধ্যে প্রেইটোরিয়ান দেহরক্ষী বাহিনী ক্লডিয়াসকে সম্রাট ঘোষণা করে। ক্লডিয়াসের নেতৃত্বে রোমানরা ব্রিটানিয়াকে নিজ সাম্রাজ্যের অন্তর্গত করে। অক্টেভিয়ানের পর এটাই ছিল সর্ববৃহৎ রাজ্য বিস্তারের ঘটনা। ক্লডিয়াসের পরবর্তী সম্রাট নীরো ৬৮ সালে আত্মহত্যা করার পর পুনরায় রাজনৈতিক অস্থিরতার উদ্ভব হয়। গৃহযুদ্ধ এবং বিদ্রোহের (ইহুদী-রোমান যুদ্ধ) সময় চারজন সেনাধ্যক্ষক সম্রাট ঘোষণা করা হয়। ৬৯ সালে ভেসপাসিয়ানে বিজয় লাভ করে এবং ফ্লেভিয়ান রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে। তার পুত্র পরবর্তী সম্রাট টাইটাসে রোমের বিখ্যাত কলোসিয়াম নির্মাণ করে। টাইটাসের অল্প সময়ের রাজত্যের পর তার ভাই ডমিটিয়ান রোমান সিংহাস করে এবং দীর্ঘকাল রাজত্বের পর হত্যার বলি হয়। এরপর সিনেট পাঁচজন সম্রাটকে বাছাই করে। এদ্বিতীয় সম্রাট ট্রাজানের শাসনামলে রোমান সাম্রাজ্র্বোচ্চ শিখরে উন্নীত হয়। কমডাসরাজত্বকালে অস্থিরতা আর পতনোন্মুখ গতি পুনরায় আরম্ভ হয় এবং ১৯২ সালে তাকে হত্যা করা হয়, পঞ্সম্রাটের শাসনামলে। এরপর সেপ্টিমাস সেভেরাস সম্হয়। ২৩৫ সালে আলেকজান্ডার সেভেরাসের হত্যার পর রোমান রাজনৈতিক ক্ষেত্ৰে প্রবল অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং রোমান সিনেটে মাত্র ৫০ বলোককে সম্রাট ঘোষণা করে। ডিয়ক্লেটিয়ানের শাসনকালে দেশ চার ভাগে ভাগ করে প্রত্যেকটি অংশে একজন নির্দিষ্ট শাসনকর্তা নিয়োগ করা হয় যার ফলস্বরূপ দেশে পুনরায় সুস্থিরতা আসলেও প্ৰথম কনষ্টেণ্টাইন এর শাসনকালে গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে এর অবসান ঘটে, এবং সকল প্রতিদ পরাভূত করে তিনি একছত্র সম্রাট হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। কনস্টেন্টাইন রোমান রাজধানী বাইজেন্টাইনে স্থানান্তর করেন এবং তার সন্মানার্থে কনষ্টাণ্টিনপল হিসেবে জায়গার নতুন নামাকরণ করা হয়। নগরীর পতন আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এটি ছিল প্রাচ্যের রাজধানী। তিনি খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পর রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে এটা গৃহীত হয়। সাম্রাজ্যের পূর্বাঞ্চল(বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য) বিশ্বের এক অগ্রণী শক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়। সংযুক্ত রোমান সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট প্রথম থিয়ডসিয়া মৃত্যুর পর ক্ষমতার অপব্যবহার, গৃহযুদ্ধ, বহিরআগ্রাসন, অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ইত্যাদি কারণে রোমান সাম্রাজ্যের আধিপত্য ক্ৰমশ হ্রাস পায় বলে মনে করা হয়। রোমান সাম্রাজ্য অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক ক্ষেত্রে সেই সময়কার সবথেকে শক্তিশালী এবং সমৃদ্ধিশালী সাম্রাজ্যসমূহের অন্যতম ছিল। এটি ছিল প্রাচীন কালের এবং পৃথিবীর বৃহত্তম সাম্রাজ্যসমূহের একটি। ট্রাজানের সময়কালে এর আয়তন ছিল ৫০ লাখ বর্গ কিলোমিটার , যা ২১ শতকের ৪৮ টি জাতিগোষ্ঠীর সম পর্যায়ের এবং প্রায় ৭ কোটি লোকের বসবাস ছিল যা তৎকালীন বিশ্ব জনসংখ্যার ২১% ধারণ করছিল। রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি এবং স্থায়ীত্বই লেটিন এবং গ্রীক ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, আবিষ্কার, স্থাপত্য, দর্শন, আইন এবং সরকার গঠনের বিস্তৃতি এবং স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করেছিল। তথ্যসূত্র সাম্রাজ্য প্রাক্তন সাম্রাজ্য পশ্চিমা সংস্কৃতি ইউরোপের প্রাক্তন সাম্রাজ্য রোমান সাম্রাজ্য ইউরোপের প্রাক্তন রাষ্ট্র আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্র প্রাচীন আফ্রিকার রাষ্ট্র ৪৭৬-এ বিলুপ্ত ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ইতিহাস
https://en.wikipedia.org/wiki/Roman_Empire
Roman Empire
The Roman Empire ruled the Mediterranean and much of Europe, Western Asia and North Africa. The Romans conquered most of this during the Republic, and it was ruled by emperors following Octavian's assumption of effective sole rule in 27 BC. The western empire collapsed in 476 AD, but the eastern empire lasted until the fall of Constantinople in 1453. By 100 BC, Rome had expanded its rule to most of the Mediterranean and beyond. However, it was severely destabilized by civil wars and political conflicts, which culminated in the victory of Octavian over Mark Antony and Cleopatra at the Battle of Actium in 31 BC, and the subsequent conquest of the Ptolemaic Kingdom in Egypt. In 27 BC, the Roman Senate granted Octavian overarching military power (imperium) and the new title of Augustus, marking his accession as the first Roman emperor. The vast Roman territories were organized into senatorial provinces, governed by proconsuls who were appointed by lot annually, and imperial provinces, which belonged to the emperor but were governed by legates. The first two centuries of the Empire saw a period of unprecedented stability and prosperity known as the Pax Romana (lit. 'Roman Peace'). Rome reached its greatest territorial extent under Trajan (r. 98–117 AD), but a period of increasing trouble and decline began under Commodus (r. 180–192). In the 3rd century, the Empire underwent a 50-year crisis that threatened its existence due to civil war, plagues and barbarian invasions. The Gallic and Palmyrene empires broke from the state away and a series of short-lived emperors led the Empire, which was later reunified under Aurelian (r. 270–275). The civil wars ended with the victory of Diocletian (r. 284–305), who set up two different imperial courts in the Greek East and Latin West. Constantine the Great (r. 306–337), the first Christian emperor, moved the imperial seat from Rome to Byzantium in 330, and renamed it Constantinople. The Migration Period, involving large invasions by Germanic peoples and by the Huns of Attila, led to the decline of the Western Roman Empire. With the fall of Ravenna to the Germanic Herulians and the deposition of Romulus Augustus in 476 by Odoacer, the Western Empire finally collapsed. The Eastern Roman Empire survived for another millennium with Constantinople as its sole capital, until the city's fall in 1453. Due to the Empire's extent and endurance, its institutions and culture had a lasting influence on the development of language, religion, art, architecture, literature, philosophy, law, and forms of government across its territories. Latin evolved into the Romance languages while Medieval Greek became the language of the East. The Empire's adoption of Christianity resulted in the formation of medieval Christendom. Roman and Greek art had a profound impact on the Italian Renaissance. Rome's architectural tradition served as the basis for Romanesque, Renaissance and Neoclassical architecture, influencing Islamic architecture. The rediscovery of classical science and technology (which formed the basis for Islamic science) in medieval Europe contributed to the Scientific Renaissance and Scientific Revolution. Many modern legal systems, such as the Napoleonic Code, descend from Roman law. Rome's republican institutions have influenced the Italian city-state republics of the medieval period, the early United States, and modern democratic republics.
1547
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
ব্যাবিলনিয়া
ব্যাবিলনিয়া () ছিল মধ্য-দক্ষিণ মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক ও সিরিয়া) ভিত্তিক একটি প্রাচীন আক্কাদিয়ান-ভাষী রাজ্য এবং সাংস্কৃতিক এলাকা। ১৮৯৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে একটি ছোট অ্যামোরাইট-শাসিত রাজ্যের উদ্ভব হয়েছিল, যেখানে ব্যাবিলন ছিল একটি ছোট প্রশাসনিক শহর। আক্কাদিয়ান সাম্রাজ্যের (২৩৩৫-২১৫৪ খ্রিস্টপূর্ব) সময় এটি ছিল নিছক একটি ছোট প্রাদেশিক শহর কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব ১৮ শতকের প্রথমার্ধে হাম্মুরাবির রাজত্বকালে ব্যাপকভাবে প্রসারিত হয় এবং একটি প্রধান রাজধানীতে পরিণত হয়। হাম্মুরাবির রাজত্বকালে এবং তার পরে, ব্যাবিলোনিয়াকে "আক্কাদের দেশ" বলা হতো, আক্কাদীয় সাম্রাজ্যের পূর্ববর্তী গৌরবের কথা উল্লেখ করে। সুমের এবং আক্কাদ নামের এলাকা দুইটি ব্যাবিলনিয়ার অংশ ছিলো। খ্রিস্টপূর্ব যাবো ২৩ শতকে আক্কাদের রাজা সারগনের সময়কালের একটি কাদামাটির ফলকে প্রথম ব্যাবিলনিয়ার উল্লেখ পাওয়া যায়। সিরিয়ার মরুভূমি অঞ্চলে অ্যামোরাইট নামের এক জাতি বাস করত। এরা খ্রীষ্টপূর্ব 1894 অব্দে মেসোপটেমিয়ায় এসে সুমের ও আক্কাদ নগরীর মাঝামাঝি ব্যাবিলন নামক স্থানে একটি সভ্যতা গড়ে তোলে। এটিই ব্যাবিলন সভ্যতা নামে পরিচিত। ব্যাবিলন শব্দটির অর্থ "দেবতার নগরী"। টাইগ্রিস ও ইউফ্রেটিস নদী দুটি যেখানে সবচেয়ে কাছাকাছি এসেছে সেখানেই গড়ে তোলা হয়েছে এই নগরী। ব্যাবিলনীয় সভ্যতার স্থপতি এবং প্রথম রাজা ছিলেন বিখ্যাত অ্যামোরাইট নেতা সুমুয়াবাম। নগরীর ঘর-বাড়ি গুলো রোদে শুকানো ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিলো। প্রতিটি নগরে নির্মাণ করা হয়েছিলো জিগুরাট। বরিসিবাপ নগরের জিগুরাটটি ছিলো সাত তলাবিশিষ্ট। 650 ফুট উচু পিরামিডের মতো জিগুরাটে ছিলো বিচার কক্ষ, স্কুল কক্ষ ও সমাধি। ব্যাবিলন ছিল প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ নগরী। ১৭৭০ থেকে ৩২০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের সময়টিতে ব্যাবিলনই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় শহর। ২ লাখেরও বেশি জনসংখ্যার প্রথম নগরী বলেও মনে করা হয় ব্যাবিলনকে। খ্রিস্টপূর্ব ৫ম শতকের দিকে ব্যাবিলন নগরীটি সুরক্ষিত ছিল বিশাল আকারের প্রাচীরের আড়ালে। পুরো নগরী বেষ্টন করে ছিল ২ স্তরের প্রাচীর, যেন প্রথম প্রাচীরের পতন ঘটলেও দ্বিতীয়টি দিয়ে শত্রু ঠেকানো যায়। গ্রিক ঐতিহাসিক হেরোডোটাসের মতে এ দেয়ালগুলো ছিল ৩০০ ফুট উঁচু, ৮০ ফুট চওড়া ও ৫৫ মাইল জুড়ে বিস্তৃত। অবশ্য বর্তমানকালের ঐতিহাসিকদের মতে হেরোডোটাস বাড়িয়ে বলেছিলেন। তাদের মতে দেয়ালগুলো ছিলো ৯০ ফুট উঁচু ও ১০ মাইল লম্বা। এ দুই দেয়ালের মাঝে ছিল পরিখা, যা শত্রুপক্ষের জন্য শহরের ভেতরে প্রবেশ করাকে রীতিমতো অসম্ভব করে রেখেছিল। আরও ছিল ওয়াচ টাওয়ারগুলোতে সার্বক্ষণিক সশস্ত্র পাহারার ব্যবস্থা। এছাড়া ইউফ্রেটিস নদী শহরটির মাঝ দিয়ে প্রবাহিত ছিল। ফলে অবরুদ্ধ থাকাবস্থায় পানির সরবরাহ নিয়েও তাদের চিন্তার কিছু ছিল না। ৫৩৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে পারস্যের রাজা ২য় সাইরাস, যিনি ‘সাইরাস দ্য গ্রেট’ নামেই বেশি পরিচিত। তিনি আক্রমণ করে বসেন ব্যাবিলনে। কিন্তু ব্যাবিলনের সৈন্যরা সাইরাসের এ আক্রমণকে পাত্তাই দেয়নি। তারা তখন ফসল কাটার উৎসবে ব্যস্ত ছিল। শহরের নিরাপত্তা নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভোগা ব্যাবিলনের সৈন্যদের কাছে সাইরাস যেন ছিলেন এক শিশু। কিন্তু চারদিকে প্রাচীর ঘেরা শহরের ভেতর বহমান ইউফ্রেটিস নদীর প্রবেশপথে গেট নির্মাণ করে রাখলেও এদিকে বাড়তি আর কোনো প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রাখেনি তারা। শহরটির সৈন্যরা কখনও আশা করেনি, পানির নিচে কেউ সেই গেট ভেঙে তাদের শহরে আক্রমণ চালাবে। এছাড়া পানির নিচে কেউ এত দীর্ঘ সময় ধরে দম আটকে রাখতে পারবে বলেও মনে করেনি তারা। আর তাদের ঠিক সেই জায়গা দিয়েই আক্রমণ করলেন সাইরাস। নদীর আশপাশে বিভিন্ন খাল ও অন্যান্য জলাশয় খনন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ব্যবস্থা করলেন তিনি। ফলে নদীতে পানির স্তর নিচে নেমে যায়। তখনই দেখা মেলে গেটগুলোর। এরপর এক রাতে গোপনে তার সৈন্যরা সেখানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে শহরে প্রবেশ করে এর মূল ফটকটি খুলে দেয়। এরপর মৌমাছির ঝাঁকের মতো শহরের ভেতরে ঢুকে পড়ে সাইরাসের বাহিনী। প্রকৃত অবস্থাটি ব্যাবিলনের সৈন্যদের বুঝতে বেশ কিছুক্ষণ সময় লেগেছিল। যখন বুঝল ততক্ষণে বেশ দেরি হয়ে গেছে। আর দিনরাত নাচগান ও মদের রাজ্যে ডুবে থাকায় তারা সেভাবে প্রতিরোধও গড়তে পারেনি। সাইরাস দ্য গ্রেটের সৈন্যদলের কাছে কচুকাটা হতে হয়েছিল তাদের। সমাজ ব্যাবলনীয় সমাজ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত ছিলো। উচু শ্রেণীতে ছিলো রাজা, পণ্ডিত, পুরোহিত ও সৈন্য। এদের নিজস্ব জমি ছিলো। শিল্পী ও স্বাধীন ব্যবসায়ীরা ছিলেন মধ্য শ্রেণীতে। আর নিন্ম শ্রেণীতে ছিলো কৃষক, সাধারণ শ্রমিক ও দাসরা। ব্যাবলনীয় সমাজে যুদ্ধবন্দীদের দাস করা হতো। রাজা হাম্বুরাবি ব্যাবিলনীয় সভ্যতার রাজা হাম্বুরাবি একটি উল্লেখযোগ্য নাম। তিনি ছিলেন ব্যাবিলনের ষষ্ঠ রাজা। তিনি খ্রীষ্টপূর্ব 1792 অব্দে ব্যাবিলনের রাজা হন। তিনি খন্ড-বিখন্ড নগররাষ্ট্রগুলোকে একত্রিত করে একটি শক্তিশালী রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। তার শাসনামলকে ব্যাবিলনের ইতিহাসে স্বর্ণযুগ বলা হয়। পৃথিবীতে প্রথম লিখিত আইন প্রচলন হয় ব্যাবিলনে যার প্রণেতা ছিলেন বিখ্যাত অ্যামোরাইট নেতা হাম্মুরাবি। ব্যাবিলনের সর্বাধিপতি এ রাজা খ্রীষ্টপূর্ব 1750 অব্দে মৃত্যুবরণ করেন। তথ্যসূত্র মেসোপটেমিয় সভ্যতা প্রাচীন সভ্যতা ব্যাবিলনিয়া খ্রিস্টপূর্ব ২য় সহস্রাব্দের স্থাপনা প্রাচীন পূর্ব-ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এশিয়ার প্রাক্তন রাজতন্ত্র পশ্চিম এশিয়ার ইতিহাস প্রাক্তন সাম্রাজ্য
https://en.wikipedia.org/wiki/Babylonia
Babylonia
Babylonia (; Akkadian: 𒆳𒆍𒀭𒊏𒆠, māt Akkadī) was an ancient Akkadian-speaking state and cultural area based in the city of Babylon in central-southern Mesopotamia (present-day Iraq and parts of Syria and Iran). It emerged as an Akkadian populated but Amorite-ruled state c. 1894 BC. During the reign of Hammurabi and afterwards, Babylonia was retrospectively called "the country of Akkad" (māt Akkadī in Akkadian), a deliberate archaism in reference to the previous glory of the Akkadian Empire. It was often involved in rivalry with the older ethno-linguistically related state of Assyria in the north of Mesopotamia and Elam to the east in Ancient Iran. Babylonia briefly became the major power in the region after Hammurabi (fl. c. 1792–1752 BC middle chronology, or c. 1696–1654 BC, short chronology) created a short-lived empire, succeeding the earlier Akkadian Empire, Third Dynasty of Ur, and Old Assyrian Empire. The Babylonian Empire rapidly fell apart after the death of Hammurabi and reverted to a small kingdom centered around the city of Babylon. Like Assyria, the Babylonian state retained the written Akkadian language (the language of its native populace) for official use, despite its Northwest Semitic-speaking Amorite founders and Kassite successors, who spoke a language isolate, not being native Mesopotamians. It retained the Sumerian language for religious use (as did Assyria which also shared the same Mesopotamian religion as Babylonia), but already by the time Babylon was founded, this was no longer a spoken language, having been wholly subsumed by Akkadian. The earlier Akkadian and Sumerian traditions played a major role in the descendant Babylonian and Assyrian culture, and the region would remain an important cultural center, even under its protracted periods of outside rule.
1551
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%A6%E0%A6%BE%20%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE
খালেদা জিয়া
বেগম খালেদা জিয়া (জন্ম: আগস্ট ১৫ ১৯৪৫), জন্মগত নাম খালেদা খানম পুতুল, একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব যিনি ১৯৯১-১৯৯৬ সাল এবং ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী রূপে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মাঝে দ্বিতীয় মহিলা সরকারপ্রধান (বেনজির ভুট্টোর পর)। তার স্বামী জিয়াউর রহমানের শাসনকালে তিনি ফার্স্ট লেডি ছিলেন। তিনি বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) চেয়ারপার্সন ও দলনেত্রী, যা তার স্বামী জিয়াউর রহমান কর্তৃক ১৯৭৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮২ সালে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে ১৯৯০ সালে সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবে এরশাদের পতনের পূর্ব পর্যন্ত খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের জন্য চলমান আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে সহায়তা করেন। ১৯৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হওয়ায় তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৯৬-এর স্বল্পস্থায়ী সরকারেও তিনি দায়িত্বপালন করেন,যখন কিনা অন্য দলগুলো উক্ত নির্বাচনকে বর্জন করেছিল। ১৯৯৬ সালের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। খালেদা জিয়ার দল পুনরায় ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালে। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি নিজস্ব ৫টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই জয়ী হন। ফোর্বস সাময়িকীর বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাবান নারী নেতৃত্বের তালিকায় ২০০৪ সালে জিয়ার অবস্থান ১৪তম, ২০০৫ সালে ২৯তম, ও ২০০৬ সালে ৩৩তম। ২০০৬ সালে তার সরকারের নির্ধারিত শাসনকাল শেষ হওয়ার পর, ২০০৭ সালে নির্ধারিত নির্বাচন রাজনৈতিক সহিংসতা ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণে বিলম্বিত হয়, ফলশ্রুতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক সামরিক পদ্ধতিতে রক্তপাতবিহীন ক্ষমতা অধিগ্রহণ করা হয়। উক্ত সরকারের সময়কালে, খালেদা জিয়া তার দুই সন্তানসহ দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হন। গত দুই দশকের অধিকাংশ সময়ে, খালেদা জিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সাল থেকে তারা অনুক্রমিকভাবে প্রধানমন্ত্রী হয়ে আসছেন। ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে, খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে পাঁচ বছরের কারাবাসের দণ্ডপ্রাপ্ত হন। এতে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একটি এতিমখানা ট্রাস্ট গঠনের সময় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। প্রারম্ভিক জীবন বেগম খালেদা জিয়ার প্রকৃত নাম খালেদা খানম পুতুল। আগস্ট ১৫, ১৯৪৫ সালে দিনাজপুরে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। তিন বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি তৃতীয়। ভাইয়েরা সবার ছোট। তার পিতামহ হাজী সালামত আলী, মাতামহ জলপাইগুড়ির তোয়াবুর রহমান। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার এবং মা বেগম তৈয়বা মজুমদার। দিনাজপুর শহরের মুদিপাড়া। আদি পৈতৃকনিবাস ফেনী জেলার ফুলগাজী উপজেলার শ্রীপুর গ্রামের মজুমদার বাড়ী। বাবা জনাব ইস্কান্দর মজুমদার ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। ইস্কান্দার মজুমদার ১৯১৯ সালে ফেনী থেকে জলপাইগুড়ি যান। বোনের বাসায় থেকে মেট্রিক পাস করেন ও পরে চা ব্যবসায়ে জড়িত হন। ১৯৩৭ সালে জলপাইগুড়িতে বিয়ে করেন। জলপাইগুড়ির নয়াবস্তি এলাকায় ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত বসবাস করেন এবং ১৯৮৪ সালের ১৫ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। মা বেগম তৈয়বা মজুমদার ছিলেন একান্তভাবে একজন গৃহিণী । তিনি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গেই থাকতেন। খালেদা পাঁচ বছর বয়সে দিনাজপুরের মিশন স্কুলে ভর্তি হন এরপর তিনি দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন একই বছর তিনি জিয়াউর রহমানকে বিয়ে করেন। এরপর থেকে তিনি খালেদা জিয়া বা বেগম খালেদা জিয়া নামে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তান এ বসবাসের পূর্বে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের সুরেন্দ্রনাথ কলেজ এ পড়াশোনা করেন। তার স্বামী বাংলাদেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জিয়াউর রহমান বীরউত্তম।১৯৬০ সালের আগস্ট মাসে জিয়াউর রহমানের সাথে তার বিয়ে হয়। জিয়া তখন ছিলেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একজন ক্যাপ্টেন। ডি এফ আই এর কর্মকর্তা রূপে তখন দিনাজপুরে কর্মরত ছিলেন। তার এক ভাই মেজর(অবঃ) সাঈদ এস্কান্দার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ফেনী-১ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ছিলেন। তার দুই ছেলের মধ্যে বড় তারেক রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। তার কনিষ্ঠ ছেলে আরাফাত রহমান কোকো ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি মালায়া হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান। আরাফাত রহমান একজন ব্যবসায়ী ছাড়াও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও সিটি ক্লাবের সাথে যুক্ত ছিলেন। ১৯৬৫ সালে খালেদা জিয়া স্বামীর সাথে পশ্চিম পাকিস্তানে (বর্তমানে পাকিস্তান)যান। ১৯৬৯ সালের মার্চ পর্যন্ত করাচিতে স্বামীর সাথে ছিলেন। এরপর ঢাকায় চলে আসেন। কিছুদিন জয়দেবপুর থাকার পর চট্টগ্রামে স্বামী কর্মহেতু স্থানান্তরিত হলে তার সঙ্গে সেখানে এবং চট্টগ্রামের ষোলশহর অঞ্চলে বসবাস করেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভকালে খালেদা জিয়া কিছুদিন আত্মগোপন করে থাকার পর ১৬ মে নৌপথে ঢাকায় চলে আসেন। বড় বোন খুরশিদ জাহানের বাসায় ১৭ জুন পর্যন্ত থাকেন। ১৯৭১ সালের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল জামশেদের অধীনে বন্দী ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে তিনি মুক্তি পান। রাজনীতিতে আসার আগ পর্যন্ত বেগম জিয়া একজন সাধারণ গৃহবধূ ছিলেন। মূলত দুই পুত্রকে লালন পালন ও ঘরের কাজ করেই সময় কাটাতেন। জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি থাকাকালীনও রাজনীতিতে বেগম জিয়ার উপস্থিতি ছিল না। ২০২১ সালের এপ্রিলে খালেদা জিয়া করোনা আক্রান্ত হন। তার বাসা ফিরোজার আরো ৮ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। ২০২২ সালে তিনি খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক কর্মজীবন ১৯৮১ সালের ৩০ মে এক সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়াউর রহমান নিহত হন। এরপর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা কর্মীদের আহ্বানে তিনি ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল এরশাদ বিচারপতি আব্দুস সাত্তারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বেগম জিয়া এর বিরোধিতা করেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে দলের চেয়ারপার্সন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলন ১৯৮৩ সালের বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন আরম্ভ হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সূচনা করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনেরো দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচির সূত্রপাত করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া "এরশাদ হটাও"শীর্ষক এক দফার আন্দোলনের সূত্রপাত করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। তারপর পুনরায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের উপক্রম হয়। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর অবিরাম, নিরলস ও আপোসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন। প্রধানমন্ত্রিত্বের ১ম মেয়াদকাল ১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার প্রতিষ্ঠিত করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমেদ কে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাশ হয়। প্রধানমন্ত্রিত্বের ২য় মেয়াদকাল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। যা পরবর্তীতে ৯৬ এর একদলীয় নির্বাচন হিসেবে গণ্য হয়। সকল বিরোধীদলের আপত্তির পর ও খালেদা জিয়া ও তার দল এই একক নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগ সহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করে। এই সংসদ মাত্র ১৫ দিন স্থায়ী হয়। খালেদা জিয়া এই সংসদের ও প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। প্রবল গণ আন্দোলন ও বর্হিবিশ্বের চাপে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস হয় এবং খালেদা জিয়া পদত্যাগ করেন। বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের ১ম মেয়াদকাল ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মোট ১১৬ আসনে জয় লাভ করে, যা সরকার গঠনে যথেষ্ট ছিল না। আওয়ামী লীগ মোট ১৪৭ আসন লাভ করে, তারা জাতীয় পার্টির সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করে। বিএনপি সপ্তম সংসদে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের পাঁচ বছর শাসনকালে সংসদে বিরোধী দলনেত্রী ছিলেন । প্রধানমন্ত্রিত্বের ৩য় মেয়াদকাল অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও জাতীয় পার্টির সাথে চারদলীয় ঐক্যজোট গঠন করে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া এই সংসদেও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর এই সংসদের মেয়াদ শেষ হয়। বিরোধীদলীয় নেতৃত্বের ২য় মেয়াদকাল ২০০৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় ঐক্যজোট বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হয়। মহাজোটের প্রায় ২৬০ টি আসনের বিপরীতে চার দলীয় ঐক্যজোট মাত্র ৩২টি আসন লাভ করে। আটক ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য রূপে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট পাঁচ বার তিনি আটক হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর আটক হন। তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর ৩ তারিখে দুর্নীতির অভিযোগে পুত্রসহ আটক হন। ২০০৮ সালের ১১ই সেপ্টেম্বার তিনি সর্বোচ্চ বিচারালয়ের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক বন্দী হবার পর দীর্ঘ এক বছর সাত দিন কারাগারে অবস্থানকালে তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোন অভিযোগেরই উল্লেখযোগ্য কোন অগ্রগতি হয়নি এবং চলতে থাকা তদন্তে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২ কোটি ১০ লাখ টাকা আত্মসাতের দায়ে তার ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয়। এরপরই তাকে বন্দী করে পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগার কাশিমপুরে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ ১৩ নভেম্বর ২০১০ বেগম জিয়া তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছেড়ে যান। তিনি অভিযোগ করেন যে তাকে বলপ্রয়োগে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। তবে সরকারি পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি স্বেচ্ছায় বাড়ি ত্যাগ করেছেন। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া। ১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়া চট্টগ্রামে এক ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে নিহত হলে ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুস সাত্তার সেনানিবাসের ওই বাড়িটি খালেদার নামে বরাদ্দ দেন। বিদেশ সফর ২০১২ সালে বেগম খালেদা জিয়া একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিদেশ সফর করেন। আগস্টে তিনি রাজ পরিবারের আমন্ত্রণে সৌদি আরবে যান এবং পবিত্র ওমরাহ পালন করেন। এই সফরে তিনি সৌদি রাজপুত্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের সাথে সাক্ষাত করেন। তাদের বৈঠকে দ্বিদেশীয় সম্পর্ক ও সৌদি আরবে বাংলাদেশের শ্রম বাজারের সংকট উত্তরণের বিষয়ে আলোচনা হয়। অক্টোবরে খালেদা জিয়া চীনা কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সফর করেন। সফরকালে তিনি চীনের রাষ্ট্রীয় ও দলীয় ঊর্ধ্বতন নেতৃবৃন্দের সাথে দেখা করেন। চীনের উপ-রাষ্ট্রপতি ও ভবিষ্যত একচ্ছত্র নেতা শি চিনফিংয়ের সাথে বৈঠকে তিনি বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও পদ্মা সেতু নির্মাণে বিনিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা করেন। বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক বিষয়াবলিও তাদের আলোচনায় উঠে আসে। শি চিনফিং ছাড়াও খালেদা জিয়া কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক বিষয়ক প্রধান ওয়াং চিয়ারুইয়ের সাথে দেখা করেন। উল্লেখ্য এ বছরের মাঝামাঝিতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্য মূল অর্থদাতা বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনলে বিশ্ব ব্যাংককে অনুসরণ করে একাধিক দাতা সংস্থা ঋণদান থেকে সরে দাঁড়ায় ও প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। বেগম জিয়ার চীন সফর সম্পন্ন হওয়ার একদিন পর তার রাজনৈতিক দল বিএনপি ঘোষণা দেয় যে চীনা নেতৃবৃন্দ দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে চীন সরকারের বিনিয়োগের বিষয়ে খালেদা জিয়াকে নিশ্চিত করেছেন। একই মাসে খালেদা জিয়া ভারত সরকারের আমন্ত্রণে ভারত সফরে যান। সফরের শুরুতে তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় বিরোধী দলীয় প্রধান ও বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে বৈঠক করেন। সফরকালে তিনি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রী সালমান খুরশিদ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন ও পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন । খালেদা জিয়ার ভারত সফরের আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিল দ্বিদেশীয় সম্পর্ক, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা, তিস্তা পানি চুক্তি এবং বৃহত্তর অঞ্চলের ভূরাজনীতি ও নিরাপত্তা। জন্মতারিখের অসামঞ্জস্য জিয়া ১৫ ই আগস্টকে তাঁর জন্মদিন হিসাবে দাবি করেছেন, যা বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি বিতর্কের বিষয়। ১৫ই আগস্ট হল সেদিন যেদিন জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল। যার ফলে, ১৫ ই আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। জিয়া সরকারের কোন শনাক্তকরণ নথিতেই তার জন্মদিন ১৫ই আগস্ট হিসেবে পাওয়া যায় না। তার ম্যাট্রিক পরীক্ষার সার্টিফিকেটে ১৯৪৫ সালের ৯ই আগস্টের জন্মের তারিখ তালিকাভুক্ত করা হয়। তার বিবাহের শংসাপত্রে ৫ সেপ্টেম্বর ১৯৪৫ কে জন্মতারিখ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। খালেদা জিয়ার পাসপোর্টে ১৯ আগস্ট ১৯৪৫ কে তার জন্ম তারিখ হিসেবে নির্দেশ করে। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক মিত্র কাদের সিদ্দিকী ১৫ই আগস্টে তাকে জন্মদিন উদ্‌যাপন না করার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। এই বিষয়ে হাইকোর্ট জিয়ার বিরুদ্ধে একটি পিটিশন দায়ের করেছিল। সর্বশেষ বেগম খালেদা জিয়া করোনা টেস্টের জন্য তার জন্মদিন ৮ মে ১৯৪৬ উল্লেখ করেছিলেন। পদক ও সম্মাননা ২০১১ সালের ২৪ শে মে নিউ জার্সি স্টেট সিনেটে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ’ফাইটার ফর ডেমোক্রেসি’ পদক প্রদান করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট সিনেট কর্তৃক কোন বিদেশিকে এ ধরনের সম্মান প্রদানের ঘটনা এটাই ছিল প্রথম। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩১ জুলাই তাকে ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’ সম্মাননা দেয় কানাডিয়ান হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (সিএইচআরআইও) নামের একটি সংগঠন। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি উক্ত দাবি করার পাশাপাশি কানাডার এই প্রতিষ্ঠানটির দেওয়া ক্রেস্ট ও সনদপত্র সাংবাদিকদের সামনে উপস্থাপন করে। সমালোচনা আওয়ামী লীগ শাসনামলে জিয়া এতিমখানা দুর্নীতি মামলা ও নাইকো দুর্নীতি সহ বিভিন্ন মামলায় তার নামে আসে। আরও দেখুন খালেদা জিয়ার নামানুসারে জিনিসের তালিকা শেখ হাসিনা ইংলাক সিনাওয়াত্রা রওশন এরশাদ টীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ জীবিত ব্যক্তি ফেনী জেলার রাজনীতিবিদ রাজনীতিতে বাংলাদেশী নারী দিনাজপুর জেলার রাজনীতিবিদ বাঙালি মুসলিম বাংলাদেশী মুসলিম বাঙালি রাজনীতিবিদ বিরোধীদলীয় নেতা (বাংলাদেশ) বিরোধীদলীয় নেত্রী ১৯৪৫-এ জন্ম বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের নেতা বাংলাদেশের ফার্স্ট লেডি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বাংলাদেশের বন্দী ও আটক ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী রাজনীতিবিদ ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী নারী রাজনীতিবিদ খালেদা জিয়া মজুমদার–জিয়া পরিবার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন বগুড়া জেলার ব্যক্তি দিনাজপুর জেলার ব্যক্তি জাতীয় সংসদের মহিলা সদস্য বাংলাদেশী বন্দী ও আটক পঞ্চম জাতীয় সংসদ সদস্য ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ সদস্য সপ্তম জাতীয় সংসদ সদস্য অষ্টম জাতীয় সংসদ সদস্য নবম জাতীয় সংসদ সদস্য মহিলা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী
https://en.wikipedia.org/wiki/Khaleda_Zia
Khaleda Zia
Begum Khaleda Zia (born 15 August 1945) is a Bangladeshi politician who served as the prime minister of Bangladesh from March 1991 to March 1996, and again from June 2001 to October 2006. She was the first female prime minister of Bangladesh and second female prime minister in the Muslim world, after Benazir Bhutto. She is the widow of one of the former presidents of Bangladesh, Ziaur Rahman. She is the chairperson and leader of the Bangladesh Nationalist Party (BNP) since 1984, which was founded by her husband in 1978. After a military coup in 1982, led by army chief General Hussain Muhammad Ershad, Zia helped lead the movement for democracy until the fall of Ershad in 1990. She became the prime minister following the BNP party win in the 1991 general election. She also served briefly in the short-lived government in 1996, when other parties had boycotted the first election. In the next round of general elections of 1996, the Awami League came to power. Her party came to power again in 2001. She has been elected to five separate parliamentary constituencies in the general elections of 1991, 1996 and 2001. Since the 1980s, Zia's chief rival has been Awami League leader Sheikh Hasina. Since 1991, they have been the only two serving as the prime minister of Bangladesh. Following the end of her government's term in 2006, the scheduled January 2007 elections were delayed due to political violence and in-fighting, resulting in a bloodless military takeover of the caretaker government. During its interim rule, it charged Zia and her two sons with corruption. Zia was sentenced to a total of 17 years in prison for the Zia Orphanage Trust corruption case and Zia Charitable Trust corruption case in 2018. A local court handed her the verdict for abusing power as the prime minister while disbursing a fund in favor of newly formed Zia Orphanage Trust. Referring to the international and domestic legal experts, the U.S. State Department in its 2020 Country Reports on Human Rights Practices opined that "lack of evidence to support the conviction" suggests the case was a political ploy to remove her from the electoral process. Amnesty International raised concerns that her "fair trial rights are not respected". As of 2020, Zia was facing a total 36 cases against her including the Zia Orphanage Trust corruption Case and Zia Charitable Trust corruption case. Zia was transferred to a hospital for medical treatment in April 2019. In March 2020, she was released for six months on humanitarian grounds with the conditions that she would stay at her home in Gulshan, Dhaka and not travel abroad. She is also informally prohibited from making political moves, as doing so would result in re-imprisonment. In September 2022, the 6-month period suspension of her sentence was granted for the sixth consecutive time. She remained in Dhaka Central Jail from 2018 until 5 August 2024, after a nationwide wave of protests resulted in incumbent prime minister Hasina fleeing to India and the Bangladesh President issuing a release order of Zia. In its list of the 100 Most Powerful Women in the World, Forbes magazine ranked Zia at number 14 in 2004, number 29 in 2005, and number 33 in 2006.
1552
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%93%20%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BF
হায়াও মিয়াজাকি
হায়াও মিয়াজাকি (宮崎 駿or宮﨑 駿, মিয়াজাকি হায়াও , জাপানি: [mijaꜜzaki hajao] ; জন্ম 5 জানুয়ারী, 1941) একজন জাপানি অ্যানিমেটর, চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং মাঙ্গা শিল্পী । স্টুডিও ঘিবলির একজন সহ-প্রতিষ্ঠাতা , তিনি একজন দক্ষ গল্পকার এবং জাপানি অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্মগুলির স্রষ্টা হিসাবে আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করেছেন এবং অ্যানিমেশনের ইতিহাসে সর্বাধিক দক্ষ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের মধ্যে একজন হিসাবে বিবেচিত । জাপানের সাম্রাজ্যের টোকিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন , মিয়াজাকি ছোটবেলা থেকেই মাঙ্গা এবং অ্যানিমেশনের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তিনি 1963 সালে টোই অ্যানিমেশনে যোগ দেন । টোই অ্যানিমেশনে তাঁর প্রথম বছরগুলিতে তিনি একজন মধ্যবর্তী শিল্পী হিসেবে কাজ করেন এবং পরে পরিচালকের সাথে সহযোগিতা করেন। ইসাও তাকাহাতা । টোয়েইতে মিয়াজাকি যে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলিতে অবদান রেখেছিলেন তার মধ্যে রয়েছে ডগি মার্চ এবং গালিভারস ট্রাভেলস বিয়ন্ড দ্য মুন । 1971 সালে এ-প্রোতে যাওয়ার আগে তিনি Toei-তে অন্যান্য চলচ্চিত্র যেমন পুস ইন বুটস এবং অ্যানিমেল ট্রেজার আইল্যান্ডের মূল অ্যানিমেশন প্রদান করেন, যেখানে তিনি তাকাহাতার পাশাপাশি লুপিন দ্য থার্ড পার্ট I সহ -পরিচালনা করেন । 1973 সালে Zuiyō Eizō (পরে নিপ্পন অ্যানিমেশন নামে পরিচিত) যাওয়ার পর , মিয়াজাকি ওয়ার্ল্ড মাস্টারপিস থিয়েটারে একজন অ্যানিমেটর হিসেবে কাজ করেন এবং টেলিভিশন সিরিজ ফিউচার বয় কোনান (1978) পরিচালনা করেন। তিনি তার প্রথম ফিচার ফিল্ম দ্য ক্যাসেল অফ ক্যাগলিওস্ট্রোর পাশাপাশি টেলিভিশন সিরিজ শার্লক হাউন্ড পরিচালনার জন্য 1979 সালে টোকিও মুভি শিনশা- তে যোগ দেন । একই সময়ে, তিনি ভ্যালি অফ দ্য উইন্ড (1982-1994) এর মাঙ্গা নৌসিকা লেখা ও চিত্রিত করা শুরু করেন এবং টপক্রাফ্ট দ্বারা নির্মিত 1984 সালের চলচ্চিত্র অভিযোজন পরিচালনাও করেন । মিয়াজাকি 1985 সালে স্টুডিও ঘিবলি সহ-প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ঘিবলির সাথে অনেক চলচ্চিত্র পরিচালনা করেন যার মধ্যে রয়েছে লাপুটা: ক্যাসল ইন দ্য স্কাই (1986), মাই নেবার টোটোরো (1988), কিকি'স ডেলিভারি সার্ভিস (1989), এবং পোরকো রোসো (1992)। চলচ্চিত্রগুলি জাপানে সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক সাফল্যের সাথে দেখা হয়েছিল। মিয়াজাকির ফিল্ম প্রিন্সেস মনোনোকে ছিল প্রথম অ্যানিমেটেড ফিল্ম যেটি বছরের সেরা ছবির জন্য জাপান একাডেমি পুরস্কার জিতেছিল , এবং 1997 সালে মুক্তির পর জাপানে সংক্ষিপ্তভাবে সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে;  পশ্চিমা বিশ্বে এর বিতরণ জাপানের বাইরে ঘিবলির জনপ্রিয়তা এবং প্রভাবকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করে। তার 2001 সালের চলচ্চিত্র স্পিরিটেড অ্যাওয়ে জাপানের ইতিহাসে সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্র হয়ে ওঠে,  সেরা অ্যানিমেটেড ফিচারের জন্য একাডেমি পুরস্কার জিতেছে এবং প্রায়ই 21 শতকের সেরা চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে স্থান পেয়েছে। মিয়াজাকির পরবর্তী চলচ্চিত্রগুলি- হাউলস মুভিং ক্যাসেল (2004), পনিও (2008), এবং দ্য উইন্ড রাইজেস (2013)-ও সমালোচনামূলক এবং বাণিজ্যিক সাফল্য উপভোগ করেছিল। দ্য উইন্ড রাইজেস- এর মুক্তির পর , মিয়াজাকি ফিচার ফিল্ম থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন, যদিও তিনি পরে তাঁর দ্বাদশ ফিচার ফিল্ম দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন (2023) লেখা ও পরিচালনায় ফিরে আসেন। মিয়াজাকির কাজগুলি প্রকৃতি এবং প্রযুক্তির সাথে মানবতার সম্পর্ক , প্রাকৃতিক ও ঐতিহ্যবাহী জীবনযাপনের নিদর্শন, শিল্প ও কারুশিল্পের গুরুত্ব এবং সহিংস বিশ্বে শান্তিবাদী নীতি বজায় রাখার অসুবিধার মতো বিষয়গুলির পুনরাবৃত্তি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। তার চলচ্চিত্রের নায়করা প্রায়শই শক্তিশালী মেয়ে বা যুবতী নারী এবং তার বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নৈতিকভাবে অস্পষ্ট প্রতিপক্ষকে মুক্তির গুণাবলী সহ উপস্থাপন করে। মিয়াজাকির কাজগুলি অত্যন্ত প্রশংসিত এবং পুরস্কৃত হয়েছে ; নভেম্বর 2012 সালে অসামান্য সাংস্কৃতিক অবদানের জন্য তাকে সাংস্কৃতিক যোগ্যতার একজন ব্যক্তি হিসাবে মনোনীত করা হয়েছিল এবং নভেম্বর 2014 সালে অ্যানিমেশন এবং সিনেমার উপর তার প্রভাবের জন্য একাডেমি অনারারি পুরস্কার পেয়েছিলেন । মিয়াজাকিকে প্রায়শই অসংখ্য অ্যানিমেটর, পরিচালক এবং লেখকদের অনুপ্রেরণা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রারম্ভিক জীবন হায়াও মিয়াজাকির জন্ম 5 জানুয়ারী, 1941, জাপানের সাম্রাজ্যের টোকিও শহরে , চার পুত্রের মধ্যে দ্বিতীয়।  তার বাবা, কাতসুজি মিয়াজাকি (জন্ম ১৯১৫),  মিয়াজাকি বিমানের পরিচালক ছিলেন , তার ভাইয়ের কোম্পানি,  যেটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ফাইটার প্লেনের জন্য রুডার তৈরি করত ।  মিয়াজাকির প্রথম জীবনে ব্যবসাটি তার পরিবারকে ধনী থাকতে দেয়।  মিয়াজাকির বাবা পেইন্টিং কেনা এবং অতিথিদের কাছে প্রদর্শন করা উপভোগ করতেন, কিন্তু অন্যথায় শৈল্পিক বোঝার খুব কমই জানা ছিল।  তিনি বলেছিলেন যে তিনি ১৯৪০ সালের দিকে ইম্পেরিয়াল জাপানিজ আর্মিতে ছিলেন ; তার কমান্ডিং অফিসারের কাছে ঘোষণা করার পর যে তিনি তার স্ত্রী এবং ছোট সন্তানের কারণে যুদ্ধ না করতে চান, তাকে আনুগত্য সম্পর্কে একটি বক্তৃতা দেওয়ার পর ছেড়ে দেওয়া হয়।  মিয়াজাকির মতে, তার বাবা প্রায়ই তাকে তার কাজের কথা বলতেন, দাবি করেন যে তিনি ৭০ বছর বয়সের পর নাইটক্লাবে যোগ দিতে থাকেন। [  কাতসুজি মিয়াজাকি ১৮ মার্চ, ১৯৯৩ সালে মারা যান। প্রায়ই তার বাবাকে নেতিবাচকভাবে দেখেছিলেন এবং তিনি কখনও "উচ্চ বা অনুপ্রেরণামূলক" কিছু বলেননি।  তিনি তার পিতার সাথে একটি গুরুতর আলোচনা না করার জন্য অনুশোচনা করেছিলেন এবং অনুভব করেছিলেন যে তিনি তার "নৈরাজ্যবাদী অনুভূতি এবং দ্বন্দ্বকে আলিঙ্গন করার বিষয়ে তার উদ্বেগের অভাব" উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন। মিয়াজাকি উল্লেখ করেছেন যে তার কিছু প্রাচীন স্মৃতি "বোমা বিধ্বস্ত শহর" এর।  1944 সালে, যখন তার বয়স তিন বছর, মিয়াজাকির পরিবার উতসুনোমিয়াতে চলে যায় ।  1945 সালের জুলাই মাসে উতসুনোমিয়াতে বোমা হামলার পর , তিনি এবং তার পরিবার কানুমাতে চলে যান ।  বোমা বিস্ফোরণ মিয়াজাকির উপর একটি স্থায়ী ছাপ রেখেছিল, তার বয়স তখন চার বছর।  শৈশবে, মিয়াজাকি হজমের সমস্যায় ভুগছিলেন, এবং তাকে বলা হয়েছিল যে তিনি 20 বছরের বেশি বাঁচবেন না, তাকে একজন বহিষ্কৃত মনে করে ।  1947 থেকে 1955 সাল পর্যন্ত মিয়াজাকির মা ইয়োশিকো মেরুদণ্ডের যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন ; তিনি বাড়িতে থেকে নার্স করার আগে হাসপাতালে প্রথম কয়েক বছর অতিবাহিত.  ইয়োশিকো ছিলেন মিতব্যয়ী,  এবং একজন কঠোর, বুদ্ধিজীবী মহিলা হিসেবে বর্ণনা করেন যিনি নিয়মিত "সামাজিকভাবে স্বীকৃত নিয়ম" নিয়ে প্রশ্ন করেন।  তিনি মিয়াজাকির সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং তাঁর এবং তাঁর পরবর্তী কাজের উপর একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিলেন।  ইয়োশিকো মিয়াজাকি 1983 সালের জুলাই মাসে 72 বছর বয়সে মারা যান। মিয়াজাকি 1947 সালে উত্সুনোমিয়ার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল শুরু করেন, প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শেষ করেন। তার পরিবার সুগিনামি-কুতে ফিরে যাওয়ার পর , মিয়াজাকি ওমিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণী এবং ইফুকু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণী সম্পন্ন করেন, যেটি ওমিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম গ্র্যাজুয়েট ক্লাসের অংশ হিসেবে ইফুকু থেকে স্নাতক হওয়ার পর,  তিনি ওমিয়া জুনিয়র হাই স্কুলে  [ জা ] পড়েন ।  তিনি একজন মাঙ্গা শিল্পী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন,  কিন্তু আবিষ্কার করেছিলেন যে তিনি মানুষকে আঁকতে পারেন না; পরিবর্তে, তিনি কয়েক বছর ধরে শুধুমাত্র প্লেন, ট্যাঙ্ক এবং যুদ্ধজাহাজ আঁকেন।  মিয়াজাকি তেতসুজি ফুকুশিমা , সোজি ইয়ামাকাওয়া  [ জা ] এবং ওসামু তেজুকার মতো বেশ কিছু মাঙ্গা শিল্পীদের দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন । মিয়াজাকি তার প্রথম দিকের অনেক কাজ ধ্বংস করে দিয়েছিলেন, বিশ্বাস করেন যে তেজুকার শৈলীকে অনুলিপি করা "খারাপ ফর্ম" ছিল কারণ এটি একজন শিল্পী হিসাবে তার নিজের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে।  এই সময়ে, মিয়াজাকি প্রায়ই তার বাবার সাথে সিনেমা দেখতেন, যিনি ছিলেন একজন আগ্রহী চলচ্চিত্র দর্শক; মিয়াজাকির স্মরণীয় চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে রয়েছে মেশি (1951) এবং তাসোগারে সাকাবা (1955)। ওমিয়া জুনিয়র হাই থেকে স্নাতক হওয়ার পর, মিয়াজাকি টয়োটামা হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন।  তার তৃতীয় ও শেষ বছরে, অ্যানিমেশনের প্রতি মিয়াজাকির আগ্রহের জন্ম দেয় পান্ডা অ্যান্ড দ্য ম্যাজিক সার্পেন্ট (১৯৫৮),  জাপানের প্রথম ফিচার-লেংথ অ্যানিমেটেড ফিল্ম রঙিন;  তিনি তার প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য অধ্যয়ন না করে সিনেমাটি দেখতে বেরিয়েছিলেন ।  মিয়াজাকি পরে বলেছিলেন যে তিনি চলচ্চিত্রের নায়িকা বাই-নিয়াং-এর প্রেমে পড়েছিলেন এবং ছবিটি তাকে কাঁদিয়েছিল এবং একটি গভীর ছাপ ফেলেছিল;  তিনি লিখেছেন যে তিনি "[তার] আত্মার গভীরে সরে গিয়েছিলেন" এবং "চলচ্চিত্রের খাঁটি, আন্তরিক জগত" তার একটি দিককে নিশ্চিত করেছে যে "বিশ্বকে অস্বীকার করার পরিবর্তে বিশ্বকে নিশ্চিত করার জন্য মরিয়া হয়ে আকাঙ্ক্ষিত"।  টয়োটামা থেকে স্নাতক হওয়ার পর, মিয়াজাকি গাকুশুইন ইউনিভার্সিটিতে রাজনৈতিক অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন , জাপানি শিল্প তত্ত্বে প্রধান হন।  তিনি "শিশু সাহিত্য গবেষণা ক্লাব"-এ যোগ দেন, "কমিক্স ক্লাবের সবচেয়ে কাছের জিনিস";  তিনি কখনো কখনো ক্লাবের একমাত্র সদস্য ছিলেন।  তার অবসর সময়ে, মিয়াজাকি মিডল স্কুল থেকে তার শিল্প শিক্ষকের সাথে দেখা করতেন এবং তার স্টুডিওতে স্কেচ করতেন, যেখানে দুজনে পান করতেন এবং "রাজনীতি, জীবন, সব ধরণের বিষয়ে কথা বলতেন"।  এই সময়ে, তিনি মঙ্গাও আঁকেন; তিনি কখনো কোনো গল্প শেষ করেননি, কিন্তু গল্পের শুরুর হাজার হাজার পৃষ্ঠা জমা করেছেন। তিনি প্রায়শই মাঙ্গা প্রকাশকদের কাছে তাদের গল্প ভাড়া দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করতেন। 1960 সালে, মিয়াজাকি আনপো বিক্ষোভের সময় একজন পথিক ছিলেন, আশাহি গ্রাফে ছবি দেখার পর আগ্রহ তৈরি করেছিলেন ; ততক্ষণে, তিনি বিক্ষোভে অংশ নিতে দেরি করেছিলেন।  মিয়াজাকি 1963 সালে গাকুশুইন থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিতে ডিগ্রি নিয়ে স্নাতক হন । চলচ্চিত্রের তালিকা: ক্যাসেল ইন দ্য স্কাই (১৯৮৬) কিকি'স ডেলিভারি সার্ভিস (১৯৮৯) মাই নেইবর তোতোরো (১৯৮৮) প্রিন্সেস মনোনোকে (১৯৯৭) স্পিরিটেড অ্যাওয়ে (২০০১) হাউল'স মুভিং ক্যাসেল (২০০৪) দ্য উইন্ড রাইজেস (২০১৩) আনিমে পরিচালক জাপানি চলচ্চিত্র পরিচালক ১৯৪১-এ জন্ম অ্যানি পুরস্কার বিজয়ী একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার বিজয়ী নারীবাদী শিল্পী নারীবাদী লেখক জাপানি চিত্রনাট্যকার জীবিত ব্যক্তি নারীবাদী পুরুষ মাঙ্গা শিল্পী
https://en.wikipedia.org/wiki/Hayao_Miyazaki
Hayao Miyazaki
Hayao Miyazaki (宮崎 駿 or 宮﨑 駿, Miyazaki Hayao, Japanese: [mijaꜜzaki hajao]; born January 5, 1941) is a Japanese animator, filmmaker, and manga artist. A founder of Studio Ghibli, he has attained international acclaim as a masterful storyteller and creator of Japanese animated feature films, and is widely regarded as one of the most accomplished filmmakers in the history of animation. Born in Tokyo City in the Empire of Japan, Miyazaki expressed interest in manga and animation from an early age, and he joined Toei Animation in 1963. During his early years at Toei Animation he worked as an in-between artist and later collaborated with director Isao Takahata. Notable films to which Miyazaki contributed at Toei include Doggie March and Gulliver's Travels Beyond the Moon. He provided key animation to other films at Toei, such as Puss in Boots and Animal Treasure Island, before moving to A-Pro in 1971, where he co-directed Lupin the Third Part I alongside Takahata. After moving to Zuiyō Eizō (later known as Nippon Animation) in 1973, Miyazaki worked as an animator on World Masterpiece Theater, and directed the television series Future Boy Conan (1978). He joined Tokyo Movie Shinsha in 1979 to direct his first feature film The Castle of Cagliostro as well as the television series Sherlock Hound. In the same period, he began writing and illustrating the manga Nausicaä of the Valley of the Wind (1982–1994) and directed the 1984 film adaptation produced by Topcraft. Miyazaki co-founded Studio Ghibli in 1985. He directed numerous films with Ghibli, including Laputa: Castle in the Sky (1986), My Neighbor Totoro (1988), Kiki's Delivery Service (1989), and Porco Rosso (1992). The films were met with critical and commercial success in Japan. Miyazaki's film Princess Mononoke was the first animated film ever to win the Japan Academy Film Prize for Picture of the Year, and briefly became the highest-grossing film in Japan following its release in 1997; its distribution to the Western world greatly increased Ghibli's popularity and influence outside Japan. His 2001 film Spirited Away became the highest-grossing film in Japanese history, winning the Academy Award for Best Animated Feature, and is frequently ranked among the greatest films of the 21st century. Miyazaki's later films—Howl's Moving Castle (2004), Ponyo (2008), and The Wind Rises (2013)—also enjoyed critical and commercial success. Following the release of The Wind Rises, Miyazaki announced his retirement from feature films, though he later returned to write and direct his twelfth feature film The Boy and the Heron (2023), for which he won his second Academy Award for Best Animated Feature. Miyazaki's works are characterized by the recurrence of themes such as humanity's relationship with nature and technology, the wholesomeness of natural and traditional patterns of living, the importance of art and craftsmanship, and the difficulty of maintaining a pacifist ethic in a violent world. The protagonists of his films are often strong girls or young women, and several of his films present morally ambiguous antagonists with redeeming qualities. Miyazaki's works have been highly praised and awarded; he was named a Person of Cultural Merit for outstanding cultural contributions in November 2012, and received the Academy Honorary Award for his impact on animation and cinema in November 2014. Miyazaki has frequently been cited as an inspiration for numerous animators, directors, and writers.
1560
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%B8%E0%A7%8B%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE
আমার সোনার বাংলা
আমার সোনার বাংলা হলো বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত। বঙ্গমাতা সম্পর্কে এই গানটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক ১৯০৫ সালে রচিত হয়। বাউল গায়ক গগন হরকরার গান "আমি কোথায় পাব তারে" থেকে এই গানের সুর ও সঙ্গীত উদ্ভূত। ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে এই গানটি রচিত হয়েছিলো। ১৩ জানুয়ারি, ১৯৭২ তারিখে মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকে এ গানটির প্রথম দশ চরণ সদ্যগঠিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে নির্বাচিত হয়। ১৯০৫ সালে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ”বাউল” নামক গ্রন্থে গানটি অন্তর্ভুক্ত আছে। ব্যুৎপত্তি সোনা শব্দটির অর্থ "স্বর্ণ" এবং সোনার শব্দটির আক্ষরিক অর্থ "স্বর্ণের অন্তর্গত" বা "স্বর্ণ দিয়ে তৈরি" এবং "আর" দখল করে। এটি "প্রিয়" অর্থপ্রিয় পরিভাষা হিসাবে ব্যবহৃত কিন্তু গানের মধ্যে সোনার বাংলা শব্দটি বাঙালির মূল্যবোধ প্রকাশ করতে পারে বা ফসল তোলার আগে ধানক্ষেতের রঙের তুলনা বোঝানো হয়েছে। ইতিহাস রচনা ও সুরারোপ আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিলো ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। গানটির পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়নি, তাই এর সঠিক রচনাকাল জানা যায় না। সত্যেন রায়ের রচনা থেকে জানা যায়, ১৯০৫ সালের ৭ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে আয়োজিত একটি প্রতিবাদ সভায় এই গানটি প্রথম গীত হয়েছিলো। এই বছরই ৭ সেপ্টেম্বর (১৩১২ বঙ্গাব্দের ২২ ভাদ্র) সঞ্জীবনী পত্রিকায় রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরে  গানটি মুদ্রিত হয়। এই বছর বঙ্গদর্শন পত্রিকার আশ্বিন সংখ্যাতেও গানটি মুদ্রিত হয়েছিলো। তবে ৭ আগস্ট উক্ত সভায় এই গানটি গীত হওয়ার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। বিশিষ্ট রবীন্দ্রজীবনীকার প্রশান্তকুমার পালের মতে, আমার সোনার বাংলা ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ আগস্ট কলকাতার টাউন হলে অবস্থা ও ব্যবস্থা প্রবন্ধ পাঠের আসরে প্রথম গীত হয়েছিলো। আমার সোনার বাংলা গানটি রচিত হয়েছিলো শিলাইদহের ডাকপিয়ন গগন হরকরা রচিত আমি কোথায় পাব তারে আমার মনের মানুষ যে রে গানটির সুরের অণুষঙ্গে। সরলা দেবী চৌধুরানী ইতিপূর্বে ১৩০৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ মাসে তার শতগান সংকলনে গগন হরকরা রচিত গানটির স্বরলিপি প্রকাশ করেছিলেন। উল্লেখ্য, রবীন্দ্রনাথের বঙ্গভঙ্গ-সমসাময়িক অনেক স্বদেশী গানের সুরই এই স্বরলিপি গ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছিলো। যদিও পূর্ববঙ্গের বাউলদের ভিডমিড ও ভাটিয়ালি সুরের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের পরিচিতি ইতঃপূর্বেই হয়েছিলো বলে জানা যায়। ১৮৮৯-১৯০১ সময়কালে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারির কাজে ভ্রমণ ও বসবাসের সময় বাংলার লোকজ সুরের সঙ্গে তার আত্মীয়তা ঘটে। তারই অভিপ্রকাশ রবীন্দ্রনাথের স্বদেশী আন্দোলনের সমসাময়িক গানগুলি, বিশেষত আমার সোনার বাংলা। যেভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ১ মার্চ গঠিত হয় স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পরে ৩ মার্চ তারিখে ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত জনসভা শেষে ঘোষিত স্বাধীনতার ইশতেহারে এই গানকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে এই গান প্রথম জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গাওয়া হয়। গানের কথা মূল কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা সম্পূর্ণ আমার সোনার বাংলা গানটি এখানে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গানের প্রথম দশ চরণ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃত। আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি। চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥ ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥ কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো— কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে। মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো, মরি হায়, হায় রে— মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥ তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিলে রে, তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি। তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে, মরি হায়, হায় রে— তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥ ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে, সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে, তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে, মরি হায়, হায় রে— ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥ ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাথা পেতে— দে গো তোর পায়ের ধুলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে। ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে, মরি হায়, হায় রে— আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি জনপ্রিয়তা শ্রোতাদের পছন্দানুসারে বিবিসি বাংলার তৈরি সেরা বিশটি বাংলা গানের তালিকায় এই গানটি প্রথম স্থান দখল করে। বিশ্ব রেকর্ড ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে ঢাকা জাতীয় প্যারেড ময়দানে একসঙ্গে ২৫৪, ৫৩৭ জন জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মাধ্যমে গিনেস বিশ্ব রেকর্ড করে। চলচ্চিত্রায়ন চলচ্চিত্রকার শহীদ জহির রায়হান ১৯৭০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত তার বিখ্যাত জীবন থেকে নেওয়া কাহিনীচিত্রে এই গানের চলচ্চিত্রায়ন করেন। আরও দেখুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টিকর্ম। নতুনের গান (বাংলাদেশের রণ সঙ্গীত)। একুশের গান, বাংলা ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে রচিত গান। জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে, ভারতের জাতীয় সঙ্গীত। বাংলা সঙ্গীত পাদটীকা বহিঃসংযোগ বাংলাদেশী সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত গান জাতীয় সঙ্গীত বাংলা ভাষার গান পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাস দেশাত্মবোধক গান বাংলাদেশী দেশাত্মবোধক গান রবীন্দ্রসঙ্গীত অভিযোজিত গান বাংলাদেশী গান এশীয় জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা বাঙালি জাতীয়তাবাদ
https://en.wikipedia.org/wiki/Amar_Sonar_Bangla
Amar Sonar Bangla
"Amar Sonar Bangla" (Bengali: আমার সোনার বাংলা, lit. 'My Golden Bengal', pronounced [ˈamaɾ ˈʃonaɾ ˈbaŋla]) is the national anthem of Bangladesh. An ode to Mother Bengal, the lyrics were written by Bengali polymath Rabindranath Tagore in 1905, while the melody is derived from Baul singer Gagan Harkara's "Ami Kothay Pabo Tare", set to Dadra tala. The modern instrumental rendition was arranged by Bangladeshi musician Samar Das.
1561
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6%20%E0%A6%B0%E0%A6%AB%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%28%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0%29
মোহাম্মদ রফিক (ক্রিকেটার)
মোহাম্মদ রফিক (জন্ম: ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭০) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তিনি সব ধরনের ক্রিকেট খেলতেন ও টেস্ট ক্রিকেটে তিনি বাংলাদেশের নেতৃত্বদানকারী উইকেট শিকারি বোলার ছিলেন। তিনি একজন বাঁ-হাতি স্পিনার ছিলেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার যিনি একদিনের আন্তর্জাতিকে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশী ক্রিকেটার যিনি টেস্ট ম্যাচে ১০০ উইকেট লাভ করেছিলেন। তিনি মাঝে মাঝে ব্যাট হাতে তার দলের জন্য ভূমিকা রাখতেন। যখন বাংলাদেশ দলের দ্রুত রানের প্রয়োজন হত, তখন তাকে ওপেনার হিসেবে পাঠানো হত। ক্রিকেট বিশ্বে অবদানের জন্য রফিককে বিভিন্নভাবে সম্মানিত করা হয়েছে, ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার সিরিজে তিনি বিশ্ব একাদশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন এবং ২০০৭ সালে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে প্রদর্শনী সিরিজে তিনি এশিয়া একাদশের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ২০২০-২১ রোড সেফটি ওয়ার্ল্ড সিরিজে তিনি বাংলাদেশ লেজেন্ডস ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন। ঘরোয়া খেলোয়াড়ী জীবন ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশের ২য় বিভাগ খেলায় বাঁ-হাতি সিমার হিসাবে তিনি খেলোয়াড়ী জীবন শুরু করেছিলেন। ১৯৮৮ সালে, তিনি বাংলাদেশ বিমান ক্রিকেট দলে যোগদান করেন। তারপর পাকিস্তানি অলরাউন্ডার ওয়াসিম হায়দারের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে স্লো অর্থোডক্স স্পিন বোলার হিসাবে তার রূপান্তর ঘটে। ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হয়ে ২য় সার্ক ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেন, সেখানে ভারতের এ দলের বিপক্ষে তিনি ২৫ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের জয়ে অবদান রাখেন। তিনি ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি বিজয়ী বাংলাদেশ দলের একজন সদস্য ছিলেন। সব মিলিয়ে তিনি ৯ ম্যাচে ১০.৬৮ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন। তার সেরা ২৫ রানে ৪ উইকেট এসেছিল সেমি-ফাইনালে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। তার স্পিন সহযোগী এনামুল হক মনি'র সাথে তিনি টুর্নামেন্টে ১২ উইকেট নিয়েছিলেন। এছাড়াও কেনিয়ার বিরুদ্ধে ফাইনালে তিনি ১৫ বলে মূল্যবান ২৬ রান করেছিলেন। ২০০৮ সালের আগস্টে ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগ (আইসিএল) এ নাম লেখানোর কারণে, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক রফিক ১৩ জন পেশাদার খেলোয়াড়দের সাথে দশ বছরের জন্য সকল ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন, কিন্তু এক বছর পরে আইসিএল এর সাথে তিনি সম্পর্ক ত্যাগ করেন এবং নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে পুনরায় ফিরে আসেন। তিনি এখনও ঢাকা বিভাগের হয়ে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলছেন এবং সম্প্রতি ফাইনালে আবাহনী লিমিটেডের হয়ে ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সের মাধ্যমে তিনি বিগ বস টি-টুয়েন্টি প্রিমিয়ার লীগ শুরু করেন। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়ী জীবন ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট অভিষেক হয় রফিকের। ১৯৯৫ সালের ওয়ানডে অভিষেকেও প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩৩ টেস্ট ও ১২৫ ওয়ানডে খেলেছেন রফিক। টেস্টে তার বোলিং গড় ৪০.৭৬ ও ওয়ানডেতে বোলিং গড় ৩৭.৯১ । তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ১৯৭০-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশী ক্রিকেটার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটার বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বাংলাদেশের টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার এসিসি এশীয় একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটার সিলেট বিভাগের ক্রিকেটার ১৯৯৮ কমনওয়েলথ গেমসের ক্রিকেটার ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার বাংলাদেশী ক্রিকেট কোচ আইসিএল বাংলাদেশ একাদশের ক্রিকেটার ঢাকা ওয়ারিয়র্সের ক্রিকেটার আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেটার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটার পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটার জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিজয়ী কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ঢাকার ক্রিকেটার
https://en.wikipedia.org/wiki/Mohammad_Rafique_(cricketer)
Mohammad Rafique (cricketer)
Mohammed Rafique (Bengali: মোহাম্মদ রফিক, born 5 September 1970) is a Bangladeshi cricket coach and former cricketer. He was the first Bangladeshi bowler to take 100 wickets in Test matches and ODI matches. Rafique is known for his contribution to Bangladesh Cricket. He played for the World XI in the Super Series against Australia in 2005 and the Asia XI for the exhibition series against Africa XI in 2007. He was named captain of Bangladesh Legends cricket team in 2020-21 Road Safety World Series. On 20 January 2022, Rafique joined Asia Lions along with Habibul Bashar in Legends League Cricket, where he took 2 wickets against India Maharajas.
1562
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%B0%20%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%20%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%AF%E0%A6%BC
নাইমুর রহমান দুর্জয়
নাইমুর রহমান দুর্জয় (জন্ম: ১৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪) একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার। তিনি ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি অফব্রেক স্পিনার। বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদের দুইবারের সাবেক সদস্য। জন্ম নাইমুর রহমান দুর্জয় ১৯৭৪ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার। সিংজুরী ইউনিয়নের বৈকুণ্ঠপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম অধ্যক্ষ সায়েদুর রহমান এবং মাতা নীনা রহমান। কর্মজীবন বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার। তিনি বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। ডাক নাম দুর্জয়। তিনি ৮ টি টেস্ট ও ২৯ টি একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ খেলেন। ২০০০ সালে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট ম্যাচে তার অধিনায়ক হিসেবে অভিষেক হয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি মানিকগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশের ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েসন এর প্রেসিডেন্ট এবং তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নির্বাচক ও পরিচালক। তার বাবা অধ্যক্ষ সায়েদুর রহমান মানিকগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সাংসদ সদস্য। তার মা মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের ২৩ বছর সভাপতিত্ব করেন। তিনি খুব জনপ্রিয় একজন সফল নেতা । বিশেষ করে তিনি সাধারণ ছাত্র ও ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ! ব্যক্তিগত জীবন নাইমুর রহমান দুর্জয় ঘিওর উপজেলার হ্যাপী রহমানের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ১৯৭৪-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশী ক্রিকেটার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটার বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ঢাকা মহানগরীর ক্রিকেটার ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটার ১৯৯৮ কমনওয়েলথ গেমসের ক্রিকেটার ১৯৯৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকে ৫ উইকেট লাভকারী ক্রিকেটার দশম জাতীয় সংসদ সদস্য একাদশ জাতীয় সংসদ সদস্য মানিকগঞ্জের ক্রীড়াবিদ ঢাকা মেট্রোপলিশের ক্রিকেটার বাংলাদেশী ক্রিকেট কোচ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতিবিদ জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার বিজয়ী কমনওয়েলথ গেমসে বাংলাদেশের প্রতিযোগী মানিকগঞ্জ জেলার ব্যক্তি ঢাকা বিভাগ থেকে আগত ক্রিকেটার
https://en.wikipedia.org/wiki/Naimur_Rahman
Naimur Rahman
Naimur Rahman Durjoy (born 19 September 1974) is a Bangladeshi politician and retired cricketer. He is the former Jatiya Sangsad member from the Manikganj-1 constituency representing the Bangladesh Awami League party. Durjoy served as the first captain of Bangladesh national cricket team. At international level, he played 8 Test and 29 ODI matches for the team.
1568
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%81%E0%A6%A7%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AE
হিন্দুধর্ম
হিন্দুধর্ম ভারতীয় উপমহাদেশীয় ধর্ম বা জীবনধারা। এটি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম, যার অনুসারী সংখ্যা ১২০ কোটিরও বেশি, বা বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার ১৫-১৬%, যারা হিন্দু নামে পরিচিত। হিন্দু শব্দটি একটি উচ্ছসিত, এবং হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম জীবিত ধর্ম হিসেবে দেখা হয়। অনেক অনুশীলনকারীই তাদের ধর্মকে সনাতন ধর্ম বা চিরন্তন পন্থা হিসাবে উল্লেখ করেন, যেমনটি হিন্দু ধর্মগ্রন্থে প্রকাশিত হয়েছে, যার দ্বারা এর উৎস মানব ইতিহাসের বাইরে, এমন ধারণা বুঝানো হয়। এ ধর্মের মূলে বেদ হওয়ায় এটি ‘বৈদিক ধর্ম’ নামেও পরিচিত। হিন্দুধর্ম হল বিভিন্ন দর্শন এবং ভাগ করা ধারণা, আচার, বিশ্বতাত্ত্বিক ব্যবস্থা, তীর্থস্থান এবং ভাগ করা পাঠ্য উৎস দ্বারা চিহ্নিত একটি বৈচিত্র্যময় চিন্তাধারা যা ধর্মতত্ত্ব, অধিবিদ্যা, পুরাণ, বৈদিক যজ্ঞ, যোগব্যায়াম, আগমিক আচার এবং মন্দির নির্মাণ নিয়ে আলোচনা করে। ধর্মীয় আচারগুলো মূলত ধর্ম (নৈতিকতা), অর্থ (সমৃদ্ধি), কাম (আকাঙ্খা) ও মোক্ষ (ঈশ্বর প্রাপ্তি) এই চারটি অর্জনের লক্ষ্যে পালন করা হয়, যাকে একসাথে বলা হয় পুরুষার্থ; সেইসাথে আছে কর্ম এবং সংসার (মৃত্যু ও পুনর্জন্মের চক্র)। যজ্ঞ, ধ্যান, পূজা, কীর্তন, ইষ্টনাম জপ, তীর্থযাত্রা প্রভৃতি আচার অনুষ্ঠানের পাশাপাশি দয়া, সংযম, ধৈর্য, প্রাণীর প্রতি অহিংসা ইত্যাদি চিরন্তন নৈতিক জীবনাচরণের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাহ্যিক আচরণ পালন অপেক্ষা মোক্ষ প্রাপ্তির উপায়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়ে, যা অর্জনের জন্য কেউ কেউ জাগতিক বস্তুগত সম্পদ ত্যাগ করে সন্ন্যাস জীবন গ্রহণ করে থাকে। হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলো শ্রুতি ("শোনা") এবং স্মৃতি ("স্মরণীয়") প্রধানত দুটি ভাগে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। বেদ, উপনিষদ্, পুরাণ, মহাভারত, রামায়ণ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা প্রভৃতি এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত, যার মধ্যে বেদ হচ্ছে সর্বপ্রধান, সর্বপ্রাচীন ও সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ধর্মগ্রন্থ। আবার ছয়টি আস্তিক দর্শন রয়েছে যা বেদের স্বীকৃতি দেয়। যথা: সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈশেষিক, মীমাংসা এবং ব্রহ্মসূত্র। যদিও পুরাণকাল বিদ্যাশাস্ত্র হাজার বছরের একটি বংশানুক্রমিক উপস্থাপন করে, বৈদিক ঋষিদের থেকে শুরু করে, পণ্ডিতরা হিন্দুধর্মকে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে ব্রহ্মতান্ত্রিক অর্থোফ্রাক্সির সংমিশ্রণ বা সংশ্লেষণ হিসাবে বিবেচনা করেন, যার বিভিন্ন শিকড় রয়েছে এবং কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠাতা নেই। এই হিন্দু সংশ্লেষণ বৈদিক যুগের পরে উদ্ভূত হয়, ৫০০-২০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং ৩০০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে, দ্বিতীয় নগরায়নের সময় এবং হিন্দুধর্মের প্রাথমিক ধ্রুপদী যুগে, যখন মহাকাব্য এবং প্রথম পুরাণ রচনা করা হয়েছিল। এটি মধ্যযুগীয় যুগে উন্নতি লাভ করে, ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের পতনের সাথে সাথে। বর্তমানে হিন্দুধর্মের চারটি বৃহত্তম সম্প্রদায় হল বৈষ্ণবধর্ম, শৈবধর্ম, শাক্তধর্ম এবং স্মার্তবাদ। হিন্দু গ্রন্থগুলিতে কর্তৃত্ব এবং চিরন্তন সত্যের উৎসগুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তবে এই সত্যগুলির বোঝাপড়া আরও গভীর করতে এবং ঐতিহ্যকে আরও উন্নত করার জন্য কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার একটি শক্তিশালী হিন্দু ঐতিহ্যও রয়েছে। হিন্দু ধর্ম ভারত, নেপাল এবং মরিশাসের উপর সর্বাধিক স্বীকৃতপ্রাপ্ত বিশ্বাস। বালি, ইন্দোনেশিয়া, ক্যারিবিয়ান, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, ওশেনিয়া, আফ্রিকা এবং অন্যান্য অঞ্চল সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায় পাওয়া যায়। বুৎপত্তি হিন্দু শব্দটি এসেছে ইন্দো-আর্য সংস্কৃত সিন্ধু শব্দটি থেকে। সিন্ধু ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক নদীর নাম। ঐতিহাসিকভাবে সিন্ধুনদের পূর্বে বর্তমান ভারতকেই হিন্দুদের ভূমি বলে বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তীকালের আরবি সাহিত্যেও আল-হিন্দ শব্দটির মাধ্যমে সিন্ধু নদ অববাহিকায় বসবাসকারী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। ত্রয়োদশ শতাব্দীতে ভারতের নামের সমার্থক শব্দ হিসেবে হিন্দুস্তান বা হিন্দুস্থান শব্দটির উৎপত্তি হয়। এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ "হিন্দুদের দেশ"। প্রথমদিকে হিন্দু শব্দটি ধর্মনির্বিশেষে ভারতীয় উপমহাদেশের সকল অধিবাসীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। কেবলমাত্র চৈতন্যচরিতামৃত ও চৈতন্য ভাগবত ইত্যাদি কয়েকটি ষোড়শ-অষ্টাদশ শতাব্দীর বাংলা গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মগ্রন্থে যবন বা ম্লেচ্ছদের থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পৃথক করার জন্য শব্দটি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষভাগে ইউরোপীয় বণিক ও ঔপনিবেশিক শাসকেরা ভারতীয় ধর্মবিশ্বাসগুলির অনুগামীদের একত্রে হিন্দু নামে অভিহিত করে। ধীরে ধীরে এই শব্দটি আব্রাহামীয় ধর্মসমূহ অথবা অবৈদিক ধর্মবিশ্বাসগুলির (যেমন জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও শিখধর্ম) অনুগামী নন এবং সনাতন ধর্ম নামক ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন সকল ভারতীয় বংশোদ্ভুত ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে পড়ে। ইংরেজি ভাষাতে ভারতের স্থানীয় ধর্মীয়, দার্শনিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগুলি বোঝাতে হিন্দুইজম বা হিন্দুধর্ম কথাটি চালু হয় ঊনবিংশ শতাব্দীতে। সংজ্ঞা সার্বিক সহিষ্ণুতা থেকে মতবৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য ও হিন্দুধর্মের রক্ষণশীল উদারতা ধ্রুপদী পাশ্চাত্য চিন্তাধারায় এই ধর্মের সংজ্ঞা নিরুপণের প্রধান বাধাস্বরূপ। হিন্দুধর্ম মূলত একটি ব্যবহারিক ধর্মচেতনা। একাধিক প্রথা, সংস্কার ও আদর্শ এতে সন্নিবেশিত। তাই অনেকের মতে এই ধর্মের একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করা বেশ অসুবিধাজনক। সেই কারণে ‘রিলিজিয়ন’ বা ধর্ম অপেক্ষা ‘রিলিজিয়াস ট্র্যাডিশন’ বা ধর্মসংস্কার হিসেবেই একে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়িত করা হয়। এই বৈশিষ্ট্য হিন্দুধর্মকে বিশ্বের প্রাচীনতম ধর্মবিশ্বাসের পাশাপাশি বিশ্বের সর্বাধিক বৈচিত্র্যপূর্ণ ধর্মের শিরোপাও দান করেছে। অধিকাংশ ধর্মীয় সংস্কার পবিত্র ধর্মশাস্ত্র বেদ হতে সঞ্জাত। যদিও এর ব্যতিক্রমও দুর্লভ নয়। কোনো কোনো সংস্কার অনুসারে মোক্ষ বা পারত্রিক মুক্তিলাভের জন্য কিছু প্রথানুষ্ঠান অপরিহার্য। যদিও এই ব্যাপারেও মতানৈক্য বিদ্যমান। কোনো কোনো হিন্দু দার্শনিক মহাবিশ্বের সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়ের পশ্চাতে এক অস্তিবাদী পরাসত্তার সন্ধান করে ফেরেন, আবার কোনো কোনো হিন্দু নাস্তিকতার চর্চা করে থাকেন। হিন্দুধর্ম কর্মফলের ভিত্তিতে পুনর্জন্মবাদে বিশ্বাস রাখে। মোক্ষ এই ধর্মে জন্ম ও মৃত্যুর চক্রাকার বৃত্ত থেকে মুক্তিরই অপর নাম। যদিও হিন্দুধর্মের ক্ষেত্রের বাইরে বৌদ্ধ ও জৈনধর্মও এই মতবাদে বিশ্বাস রাখে। এই কারণে হিন্দুধর্মকে মনে করা হয় বিশ্বের জটিলতম ধর্মবিশ্বাসগুলির অন্যতম। এই জটিলতা ব্যতিরেকেও হিন্দুধর্ম যে শুধুমাত্র একটি সংখ্যাগতভাবে সুবৃহৎ জনগোষ্ঠীর ধর্মচেতনা তাই নয়, প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে প্রচলিত এই ধর্মবিশ্বাস পৃথিবীর অধুনা বর্তমান ধর্মগুলির মধ্যে প্রাচীনতমও বটে। ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি তথা বিশিষ্ট দার্শনিক সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে “একটি বিশ্বাসমাত্র” বলতে অস্বীকার করেন। বরং এই ধর্মের যুক্তি ও দর্শনের দিকটি বিচার করে তিনি খোলাখুলিভাবেই এই মত ব্যক্ত করেন যে হিন্দুধর্মের সংজ্ঞা দান করা অসম্ভব। শুধুমাত্র এই ধর্ম অনুশীলনই করা যায়। তেমনই কোনো কোনো পণ্ডিত সুসংজ্ঞায়িত ও রক্ষণশীল ধর্মীয় সংগঠন না বলে হিন্দুধর্মকে “অস্পষ্ট সীমানায়” বর্গায়িত করার পক্ষপাতী। কয়েকটি ধর্মমত হিন্দুধর্মে কেন্দ্রীয়। অন্যগুলি ঠিক কেন্দ্রীয় না হলেও এই পরিসীমার আওতার মধ্যেই পড়ে। এরই ভিত্তিতে ফেরো-লুজি হিন্দুধর্মের সংজ্ঞায়নে একটি “উদাহরণমূলক তাত্ত্বিক অন্বেষণ” (“প্রোটোটাইপ থিওরি অ্যাপ্রোচ”) চালিয়েছেন। ঊনবিংশ শতকে হিন্দু পুনর্জাগরণবাদীগণ ‘হিন্দু-ইজম’ শব্দটির প্রয়োগ শুরু করার পর থেকেই হিন্দুধর্ম একটি বিশ্বধর্ম হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। এছাড়াও শব্দটির প্রাথমিক প্রয়োগ ঘটিয়েছিলেন পশ্চিমা প্রাচ্যবিদ বা ‘প্রথম যুগের ভারততত্ত্ববিদগণ’, যাঁদের বক্তব্য সাধারণত একপেশে ছিল বলে মনে করা হয়। যদিও হিন্দুধর্মের শিকড় ও তার বিভিন্ন শাখাপ্রশাখার প্রাচীনত্বের ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। সকলেই স্বীকার করেছেন যে প্রাগৈতিহাসিক সিন্ধু সভ্যতা থেকে ঐতিহাসিক বৈদিক সভ্যতার প্রাথমিক পর্ব জুড়ে ছিল হিন্দুধর্মের সূচনালগ্ন। কেবলমাত্র ধর্মবৈভিন্ন প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে বৈদিক সংস্কারের ভিত্তিতে হিন্দুধর্মের একটি রূপ দান করেছেন পশ্চিমা প্রাচ্যবিদগণ – এমন কথাও বলেছেন কেউ কেউ। কিন্তু তা সত্য নয়। সংজ্ঞা বা ‘হিন্দুইজম’ বা হিন্দুধর্ম শব্দটির দ্বারা কি বোঝায় তা এই কারণেই বলা সম্ভব নয় যে এই ধর্মের কোনো একক প্রতিষ্ঠাতা নেই। হিন্দুধর্মে, বা কারো কারো ভাষ্য অনুযায়ী হিন্দুধর্মসমূহে মোক্ষলাভের প্রণালীটি এক এক সম্প্রদায়ের নিকট এক এক প্রকার। বৈদিক ধর্মের যে রূপগুলি পরিলক্ষিত হয়, তা হিন্দুধর্মের বিকল্প নয় - বরং তার প্রাচীনতম রূপ। তাই পশ্চিমা প্রাচ্যবিদদের লেখায় বৈদিক ধর্ম, ব্রাহ্মণ্যবাদ ও হিন্দুধর্মের মধ্যে যে প্রভেদ দেখানো হয়ে থাকে তারও বিশেষ যুক্তি নেই। কেউ কেউ মনে করেন, হিন্দুধর্মে কোনো “অনুশাসনের আকারে নিবদ্ধ কোনো একক ধর্মীয় বিশ্বাস” প্রচলিত নেই। এই জন্য ইসলামের বিরাট সংগঠনের পাশে এটিকে এক সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ধর্মব্যবস্থা বলে অভিহিত করা হয়। আবার কেউ কেউ ইহুদি ধর্মের সঙ্গে এর ঘনিষ্ঠ একাত্মতার কথাও বলে থাকেন। পাশ্চাত্য দৃষ্টিকোণ থেকে, ধর্ম কি এবং কীভাবে তা আরও প্রাচীন ধর্মবিশ্বাসগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত তারই বিচারে হিন্দুধর্মকে যাচাই করা হয়। ‘ধর্মবিশ্বাস’ (‘ফেইথ’) শব্দটি ‘ধর্ম’ (‘রিলিজিয়ন’) অর্থে প্রয়োগের ফলে এই বিষয়ে জটিলতা বৃদ্ধি পায়। কোনো কোনো পণ্ডিত এবং অনেক হিন্দু দেশীয় ‘সনাতন ধর্ম’-এর সংজ্ঞাটির পক্ষপাতী। এই সংস্কৃত শব্দবন্ধটির অর্থ ‘চিরন্তন ধর্ম (বিধি)’ বা ‘চিরন্তন পন্থা’। উপবিভাগ হিন্দুধর্ম আজ একাধিক শাখায় বিভক্ত। দেবতার উপাসনার উপর ভিত্তি করে প্রধান বিভাগগুলি হল বৈষ্ণবধর্ম, শৈবধর্ম, স্মার্তবাদ ও শাক্তধর্ম। এছাড়াও হিন্দুধর্ম একাধিক ঐশ্বরিক শক্তিতে বিশ্বাস করে। অনেক হিন্দুই বিশ্বাস করে দেবতারা একক, নৈর্ব্যক্তিক যা ঈশ্বরের চূড়ান্ত সরূপ। আবার কিছু হিন্দু মনে করেন যে একটি নির্দিষ্ট দেবতা সকল দেবতার প্রধান এবং বিভিন্ন দেবদেবীরা বিভিন্ন রূপ প্রকাশের মাধ্যমে তারই প্রতিনিধিত্ব করে। একাধিক ছোটো বিভাগ বা উপবিভাগ লক্ষিত হয়, যাদের অনেকগুলিই পরস্পরের সঙ্গে অংশত যুক্ত। তবে আজকের হিন্দুরা মোটামুটিভাবে পূর্বোক্ত চারটি প্রধান শাখার কোনো না কোনো একটির সদস্য। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাস, আত্মার পুনরায় দেহধারণ এবং কর্মফল সেইসাথে ধর্ম বিশ্বাস (দায়িত্ব, অধিকার, আইন, আচার, গুণাবলী এবং বেঁচে থাকার সঠিক পথ নির্দেশনার সমস্টি)। ২০০৭ সালে অধিকতর জটিল ও সূক্ষ্ম বিবেচনার নিরিখে একাধিক মতের বিভিন্নতা ও বৈচিত্র্যের দিকটি বিচার করে ম্যাকড্যানিয়েল - হিন্দুধর্মের ছয়টি জাতিগত "ধরন" বের করেন। এই বিভাগগুলি হলঃ লৌকিক হিন্দুধর্ম – বিভিন্ন স্থানীয় ঐতিহ্য ও লৌকিক দেবদেবীর পূজাকে কেন্দ্র করে আঞ্চলিক বা সম্প্রদায় স্তরের ধর্মবিশ্বাস যা প্রাগৈতিহাসিক কাল বা অন্ততপক্ষে বেদ রচিত হবার আগে থেকে প্রচলিত। বৈদিক হিন্দুধর্ম – এই বিশ্বাসটি এক শ্রেণীর ব্রাহ্মণ (বিশেষত শ্রুতিবাদী) সমাজে আজও প্রচলিত। বৈদান্তিক হিন্দুধর্ম – উপনিষদের শিক্ষা অবলম্বনে প্রচারিত। উদাহরণ – অদ্বৈত (স্মার্তবাদ) যৌগিক হিন্দুধর্ম – পতঞ্জলি রচিত যোগসূত্র অবলম্বনে প্রচারিত। ধার্মিক হিন্দুধর্ম বা প্রাত্যহিক নৈতিকতা – কর্ম ও হিন্দু বিবাহ সংস্কার ইত্যাদি সামাজিক নিয়মকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শাখা। ভক্তিবাদ – বৈষ্ণবধর্মের অনুরূপ ভক্তিকেন্দ্রিক মতবাদ। মাইকেলস তিনটি হিন্দু ধর্ম এবং হিন্দু ধার্মিকতার চারটি ধরন আলাদা করেন। তিনটি হিন্দু ধর্মের ধরন হলঃ- "ব্রাহ্মন-সাংস্কৃতিক হিন্দুধর্ম", "লৌকিক ও উপজাতীয় ধর্ম" এবং "প্রতিষ্ঠিত ধর্ম"। হিন্দু ধার্মিকতার চারটি রূপ হল প্রাচীন শাস্ত্রীয় "কর্মফল মার্গ", জ্ঞান মার্গ, ভক্তি মার্গ, এবং সর্বশেষটি হল "বীরত্বমূলক" যার মূলে রয়েছে সামরিক ঐতিহ্য। সামরিক ঐতিহ্যভিত্তিক বীরত্বমূলক ধর্মের একটি উদাহরন হল রাম যাকে বিষ্ণুর অবতার বলা হয়। এরূপ ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল রাজনৈতিক হিন্দুধর্ম। "বীরত্বমূলক" ধর্মের অপর নাম বীর্য মার্গ। মাইকেলের মত অনুযায়ী, নয় জন হিন্দুর মধ্যে অন্তত একজন জন্ম থেকে এক বা উভয় "ব্রাহ্মন-সাংস্কৃতিক হিন্দুধর্ম" বা "লৌকিক ও উপজাতীয় ধর্ম" অনুসারি হয় (অনুশীলন বা অ-অনুশীলন যাই হোক না কেন)। তিনি হিন্দুদের ধর্ম অনুশাসন বেছে নেবার উপর ভিত্তি করে শ্রেণীকরণ করেন এবং দেখেন যে সবাই "প্রতিষ্ঠিত ধর্মের" একাধিক শাখার যে কোন একটি বাছাই করে। যেমন বৈষ্ণব এবং শিব উপাসক হন। সেই সাথে যদিও ব্রাহ্মণ-সাংস্কৃতিক ধারার পূজা পদ্ধতি করা হয় তবুও পুরোহিত ব্রাহ্মণদের উপর জোর কম দেয়া হয় (যেহেতু গুনার্জনের দ্বারা যে কেউই ব্রাহ্মণের মত পূজা করতে পারে)। তিনি আরও উল্লেখ্য করেন যে "প্রতিষ্ঠিত ধর্মের" অংশ হিসেবে বৌদ্ধ, জৈনধর্ম, শিখধর্ম রয়েছে তবে তারা এখন স্বতন্ত্র ধর্ম হিসেবে পালিত হয়। তাছাড়া সৃষ্টিশীল বিশ্বাস নিয়ে আন্দোলন করা ব্রাহ্ম সমাজ, ব্রহ্মবিদ্যা-সম্বন্ধীয় সমাজ, সেইসাথে বিভিন্ন "গুরু" এবং নতুন ধরনের ধর্মীয় আন্দোলনের পথিকৃৎ মহর্ষি মহেশ যোগী এবং আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ ইত্যাদি হল "প্রতিষ্ঠিত ধর্ম" ভিত্তিক বিভিন্ন সংস্থা, সমাজ বা ব্যক্তি। তাদের সকলেরই মূল হল প্রতিষ্ঠিত ধর্ম বা আদি ধর্ম। হিন্দু দৃষ্টিভঙ্গি সনাতন ধর্ম ১৯ শতকের শেষের দিকে হিন্দু জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সময় “সনাতন” শব্দটি হিন্দুধর্মের অপর নাম হিসাবে প্রকাশ হয়েছিল। এর কারণ ছিল "হিন্দু" শব্দটি অ-দেশিয় ফার্সি শব্দ হওয়ায় এর ব্যবহার যেন না করা হয়। সংস্কৃতে সনাতন ধর্মের অর্থ হয় ‘চিরন্তন ধর্ম’ বা ‘চিরন্তন পন্থা’। সনাতন ধর্মকে কেবল কোনো জাতিবাচক বা সম্প্রদায় ভিত্তিক না বলে সকলের জন্য এক পন্থা হিসেবে প্রচারিত হয়। যেমন, দাহ ক্ষমতা অগ্নির বৈশিষ্ট, তেমনি সনাতনকে মানবমাত্র ধর্ম বা বিধি হিসেবে দেখা হয়, যেখানে ধর্মের বিশেষণ বাচক শব্দ হিসেবে এর প্রয়োগ হয়। অনেক ক্ষেত্রে সনাতন শব্দটি ঈশ্বর বুঝাতেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর অনুসারীগণ সনাতন ধর্মকে অপরিবর্তনশীল (যা ছিল, আছে এবং থাকবে) বলে মনে করেন। অর্থাৎ যে ধর্মের কখনো পরিবর্তন বা বিনাশ হয় না, তাই সনাতন ধর্ম। বৈদিক ধর্ম হিন্দু আধুনিকতাবাদ আইনগত সংজ্ঞা পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি বৈচিত্র্য এবং ঐক্য বৈচিত্র্য হিন্দুধর্মের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর বিশালত্ব। বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব, গাণপত্য প্রভৃতি সম্প্রদায়; দ্বৈত, অদ্বৈত, বিশিষ্টাদ্বৈত প্রভৃতি মতবাদ; জ্ঞান, কর্ম, ভক্তি, ত্রিয়া মার্গ ইত্যাদি বিভিন্ন বৈচিত্রপূর্ণ বৈশিষ্ট্যে হিন্দুধর্মের বিশালত্বের পরিচয় পাওয়া যায়। তাই হিন্দু ধর্মকে প্রায়শই একক ধর্মের পরিবর্তে ধর্মের পরিবার হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এই ধর্মের পরিবারের প্রতিটি ধর্মের মধ্যেই বিভিন্ন ধর্মতত্ত্ব, অনুশীলন ব্যবস্থা এবং পবিত্র গ্রন্থ রয়েছে। হিন্দু ধর্মে "বিশ্বাস বা ধর্মের একীভূত বিশ্বাসের ঘোষিত কোন ব্যবস্থা নেই", বরং এটি ভারতের ধর্মীয় বহুত্ববোধের বিশ্বাসের সমন্বিত একটি বিশাল শব্দ। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট অনুসারে: হিন্দু ধর্ম শব্দের একক সংজ্ঞা নিয়ে সমস্যাটির আরেকটি অংশটি হ'ল হিন্দু ধর্মের কোনও প্রতিষ্ঠাতা নেই। এটি বিভিন্ন ঐতিহ্যের সংমিশ্রন যার মধ্যে রয়েছে "ব্রাহ্মণ্যিক অর্থোপ্রেসি, ত্যাগের ঐতিহ্য এবং জনপ্রিয় বা স্থানীয় ঐতিহ্য"। হিন্দু ধর্মের জন্য একত্রী মতবাদ হিসাবে আস্তিক্যবাদ ব্যবহার করাও কঠিন, কারণ কিছু হিন্দু দর্শন সৃষ্টির একটি তত্ত্ববিদ্যাকে স্বীকার করে, অন্য হিন্দুরা নাস্তিক বা হয়েছে। হিন্দুধর্মের মূল ও ঐক্য হিন্দুধর্মের এই বিশালত্বের কেন্দ্রে রয়েছে বেদ চতুষ্ঠয়। বেদে কর্মকাণ্ড ও জ্ঞানকাণ্ড নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। হিন্দুধর্মের অন্যান্য সকল শাস্ত্র বেদ হতে উদ্ভুত এবং বেদই এসব শাস্ত্রসমূহের পরম প্রমাণ। হিন্দুবিশ্বাসীদের মতে, ঋষিগণ অতীন্দ্রিয় উপলব্ধির দ্বারা বেদের জ্ঞান আহরণ করেছিলেন। তাই বেদের সাথে কোনো শাস্ত্রের বৈষম্য ঘটলে বেদের সিদ্ধান্তই প্রামাণিক বিবেচিত হয় এবং বেদ বিরুদ্ধ কোনো মতবাদ হিন্দুধর্মের অঙ্গ বলে বিবেচিত হয় না। ধর্মবিশ্বাস হিন্দুধর্ম এমনই মূলধারার ধর্মবিশ্বাস যা সুবিস্তৃত ভৌগোলিক ক্ষেত্রে এক বহুধাবিভক্ত জাতিগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের মধ্যে দিয়ে বিকাশলাভ করেছে। এই বিকাশলাভ সম্ভবপর হয়েছে মূলত দুটি পন্থায়: হিন্দুধর্মের পুরনো রীতিনীতির নবীকরণ এবং বহিরাগত রীতিনীতি ও সংস্কৃতি থেকে আত্মীকরণ। এর ফলে ধর্মীয় ক্ষেত্রে বিরাট বৈচিত্র্যময় সমাবেশ গড়ে উঠেছে। এই সমাবেশে যেমন স্থান পেয়েছে অসংখ্য ছোটো ছোটো আদিম ধর্মমত, তেমনই স্থান পেয়েছে সমগ্র উপমহাদেশে লক্ষাধিক মতাবলম্বী সমন্বিত প্রধান ধর্মসম্প্রদায়গুলিও। বৌদ্ধধর্ম বা জৈনধর্মের থেকে পৃথক ধর্মবিশ্বাসরূপে হিন্দুধর্মের পরিচিতিও তাই এই মতাবলম্বীদের অনুমোদনসাপেক্ষ বিষয়। হিন্দু ধর্মবিশ্বাসের প্রধান উপাদানগুলি হল: ধর্ম (নৈতিকতা), সংসার (জন্ম-মৃত্যু-পুনর্জন্মের চক্র), কর্ম (ক্রিয়া ও তার প্রতিক্রিয়া), মোক্ষ (সংসার থেকে মুক্তি) ও বিভিন্ন যোগ (ধর্মানুশীলনের পন্থা)। ঈশ্বর ধারণা ঈশ্বর হিন্দুধর্মের এমন একটি বিষয়, যার সময়কাল ও শাখাভেদে(একেশ্বরবাদ, বহুদেববাদ, সর্বেশ্বরবাদ, অদ্বৈতবাদ, দ্বৈতবাদ, ত্রৈতবাদ) বহু অর্থ প্রচলিত রয়েছে। হিন্দু ধর্মের গ্রন্থানুসারে, এই ঈশ্বর নানান রূপের হতে পারে। প্রাচীন শাস্ত্রে, বিষয়ভেদে ঈশ্বর শব্দের অর্থ পরমাত্মা, শাসক, প্রভু, রাজা, রাণী বা স্বামী।মধ্যযুগে হিন্দুশাস্ত্রগুলোর শাখাভেদে ঈশ্বর শব্দের অর্থ ভগবান, পরমেশ্বর, ইষ্টদেবতা বা বিশেষ আত্মা,, যা কালক্রমে ব্যক্তি ঈশ্বরের রূপ নেয়। শৈবমতে ঈশ্বর হচ্ছেন মহাদেব, যিনি তার ভক্তদের কাছে কখনো মহেশ্বর বা কখনো পরমেশ্বর বলে পূজনীয়। বৈষ্ণবধর্মে ঈশ্বর বিষ্ণুর সাথে সমার্থক। আবার ভক্তিবাদে ঈশ্বর হিন্দুধর্মের বহু দেব-দেবীর মধ্যে ভক্তের দ্বারা নির্বাচিত, যিনি এক বা একাধিক হতে পারে। আর্য সমাজ বা ব্রাহ্ম সমাজের মতো আধুনিক ধর্মশাখাগুলোর ক্ষেত্রে ঈশ্বর নিরাকার অদ্বিতীয়, পরমপিতা। যোগশাখায় ঈশ্বর ইষ্টদেবতা বা আদর্শস্থানীয়, প্রকারান্তরে গুরু হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন। সনাতন ধর্মের যোগ দর্শনে ঈশ্বরকে ব্যক্তি ঈশ্বর বা আধ্যাত্মিক ভাবে তাকে ডাকা হয়, তার সাধনা করা হয়। অদ্বৈত বেদান্তে ঈশ্বর এক অদ্বৈতবাদী সত্তা, যিনি জড়ের সাথে জীবের সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম। দেবতা ও অবতারগণ হিন্দু দেবতা বলতে যোগশাস্ত্রের ইষ্টদেবতা, তেত্রিশ বৈদিক দেবতা বা শতাধিক পৌরাণিক দেবতাদের কথা বোঝানো যায়। বাংলায় দেবতা শব্দটি দেব শব্দের সমার্থক শব্দরূপে বহুল প্রচলিত। যাস্কের মতে ‘দীপ্’ ধাতু হতে দেব শব্দ এসেছে যা প্রকাশার্থক, অথবা যিনি দ্যুস্থানে বা আকাশে থাকেন তিনিই দেব, অথবা যিনি যজ্ঞফল দান করেন তিনিই দেব। দেবের স্ত্রীলিঙ্গ হল দেবী। হিন্দুধর্মে দেবতা বলতে উপাস্য বোঝানো হয়। এদের মধ্যে মুখ্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, শিব, শ্রী বা লক্ষ্মী, পার্বতী বা দুর্গা, ব্রহ্মা, সরস্বতী প্রভৃতি। মুখ্য দেবতার উপাসকরা হিন্দুধর্মের ভিন্ন শাখাগুলোর জন্ম দিয়েছেন যেমন শৈবমত,বৈষ্ণবমত ও শাক্তমত। আবার শাখাগুলোর মধ্যে বহু মিলও রয়েছে। হিন্দু দেবতাদের অবতারের ধারণাটি বহু প্রাচীন। দেবতারা যখন দেহ ধারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হন, তখন তাদের অবতার বলা হয়। অবতারের অর্থ দেবতাগণ পৃথিবীতে দেহ ধারণ করে অবতরণ হওয়া। ভগবদ্গীতায় বলা আছে যে, যখনই ধর্মের পতন ঘটবে, তখন সাধুদিগের পরিত্রাণ ও অধর্মাচারীর বিনাশের উদ্দেশ্যে ভগবান বিষ্ণু স্বয়ং দেহধারণ করে পৃথিবীতে আবির্ভূত হবেন। হিন্দু সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলেন হিন্দু দেবগণ। চিত্রকলা ও স্থাপত্যে মূর্তির আকারে এবং বিভিন্ন শাস্ত্রগ্রন্থে, বিশেষত ভারতীয় মহাকাব্য ও পুরাণে নানান উপাখ্যানে তাদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। অনেক হিন্দুই তাদের ইষ্টদেবতার রূপে ঈশ্বরকে পূজা করে থাকেন। ইষ্টদেবতার নির্বাচন ব্যক্তিগত, আঞ্চলিক বা পারিবারিক ঐতিহ্য অনুসারে হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে হিন্দুধর্মাবলম্বীগণ প্রত্যেক দেবতাকে ঈশ্বরের এক একটি করে বিশেষ জ্ঞান বা প্রাকৃতিক শক্তির প্রকাশক বলে মনে করেন। প্রত্যেকটি প্রাকৃতিক বস্তুর মাঝে প্রাচীন ঋষিগণ এক অদৃশ্য শক্তির অনুভব করেছিলেন সহস্ত্র বছর পূর্বেই, যা বহু দেবতার মাঝে একত্ববাদের মূল দর্শন। কর্ম ও সংসার কর্মের আক্ষরিক অর্থ হল কার্য, ক্রিয়া অথবা করণ এবং বলা যেতে পারে এটি হল "কারণ এবং করণের (কার্যের) নৈতিক ধর্ম"। উপনিষদ্ মতে একজন মানুষ (অর্থাৎ‍ জীবাত্মা) সংস্কার (লব্ধ জ্ঞান) অর্জন করে তার শারিরীক ও মানসিক কর্মের মধ্যে দিয়ে। মানুষের মৃত্যুর পর সমস্ত সংস্কারগুলি যথাযথ ভাবে তার লিঙ্গ-শরীরে (যে শরীর রক্ত-মাংসের শরীর থেকে সুক্ষ অথচ আত্মার থেকে স্থূল) বিদ্যমান থাকে এবং পরজন্মে তার সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ তৈরী করে। সুতরাং, একটি সর্বজনীন, নিরপেক্ষ, এবং অব্যর্থ কর্মের ধারণা মানুষের পুনর্জন্মলাভের সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যক্তিত্ব, বৈশিষ্ট্য, এবং পরিবার সম্পর্কিত ধারণার সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ও ভাগ্য প্রভৃতি ধারণাগুলিকে কর্ম একত্রে সংযুক্ত করেছে। কার্য, কারণ, জন্ম, মৃত্যু এবং পুনর্জন্মের বৃত্তাকার পরম্পরাই হল সংসার। দেহধারণ এবং কর্মফল ধারণা সম্পর্কে হিন্দুধর্মে দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ চিন্তার প্রকাশ দেখা যায়। শ্রীমদ্ভগ্বতগীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে: বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্নাতি নরোহপরাণি। তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী। অর্থাৎ: মানুষ যেমন জীর্ণ-শীর্ণ পুরোনো বস্ত্রগুলি ত্যাগ করে অন্য নতুন বস্ত্র গ্রহণ করে, সেইরূপ জীবাত্মা পুরোনো শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর গ্রহণ করে। যেখানে সংসার ক্ষণিকের আনন্দ দেয়, যা মানুষকে আরেকটি বিনাশশীল শরীর পরিগ্রহ করতে উত্‍সাহী করে। সেখানে মোক্ষ এই সংসারের গণ্ডী থেকে মুক্ত হয়ে চির আনন্দ ও শান্তির বিশ্বাস প্রদান করে। হিন্দুধর্মের বিশ্বাস যে অনেকগুলি জন্মান্তরের পর অবশেষে জীবাত্মা মহাজাগতিক আত্মায় (ব্রহ্ম/পরমাত্মা) মিলিত হতে ব্যাকুল হয়। জীবনের চরম লক্ষ্যকে (চরম লক্ষ্য বলতে এখানে মোক্ষ অথবা নির্বাণ অথবা সমাধি) বিভিন্ন ভাবে বোঝানো হয়েছে: যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে একাত্মতার বোধ; যেমন ঈশ্বরের সঙ্গে অবিছ্যেদ্য সম্পর্কের বোধ; যেমন সমস্ত বস্তুর সম্পর্কে অদ্বৈত বোধ; যেমন আত্ম বিষয়ক বিশুদ্ধ নিস্বার্থতা ও জ্ঞান; যেমন নিখুঁত মানসিক শান্তিলাভ; এবং যেমন পার্থিব বাসনার থেকে অনাসক্তি বোধ। এই ধরনের উপলব্ধি মানুষকে সংসার এবং পুনর্জন্মের বন্ধন থেকে মুক্ত করে। আত্মার অবিনশ্বরতায় বিশ্বাস থাকার ফলে, মৃত্যুকে পরমাত্মার তুলনায় নেহাত্‍ই তুচ্ছ মনে হয়। অত:পর, একজন ব্যক্তি যার কোন ইচ্ছা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষা বাকি নেই এবং জীবনের কোন দায়িত্বই বাকি নেই অথবা একটিও রিপু দ্বারা আক্রান্ত নয়, সে প্রায়োপবেশন (সংস্কৃত ভাষায় प्रायोपवेशनम्, যার আক্ষরিক অর্থ হল মৃত্যু কামনায় উপবাসের মাধ্যমে দেহত্যাগ) দ্বারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে পারে। মোক্ষের ধারণা সংবলিত বিষয়গুলি বিভিন্ন হিন্দু দার্শনিক গোষ্ঠীগুলির ক্ষেত্রে বিভিন্ন। উদাহরণ স্বরূপ, যেমন অদ্বৈত বেদান্তবাদীরা বিশ্বাস করে যে মোক্ষ লাভের পর একটি জীবাত্মা নিজেকে পরমব্রহ্ম ব্যতীত অন্য কিছু মনে করতে পারেনা। আবার দ্বৈতবাদীরা নিজেদের ব্রহ্মের অংশ বলে মনে করে, এবং মোক্ষ লাভের পর স্বর্গালোকে ঈশ্বরের সঙ্গে অনন্তকাল বাস করবে বলে বিশ্বাস করে। সুতরাং, এক কথায় বলা যায় যে যেখানে দ্বৈতবাদীরা চায় "চিনি খেতে", সেখানে অদ্বৈতবাদীরা চায় "চিনি হতে"। আধ্যাত্মিক অনুশীলনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হিন্দু ধর্মে জীবনের তাৎপর্য নিরূপনে ঈশ্বর বা পরমাত্মার অস্তিত্ব, জন্মান্তরবাদ, কর্মফল ইত্যাদি বিষয় জড়িত। ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষ এই চারটি বিষয়ের প্রাপ্তি জীবনের উদ্দেশ্য। এই চারটিকে পুরাষার্থ বলা হয়। ধর্ম: "(ধর্মীয় ও সামাজিক) নীতিবোধ, আধ্যাত্মিক ও আনুষ্ঠানিক কর্তব্যকর্ম। অর্থ: "(জাগতিক ও অর্থনৈতিক) প্রগতি।" কাম: "(পার্থিব) সুখ।" মোক্ষ: "(আধ্যাত্মিক) মুক্তি।" এই চারটি বিষয়ের মধ্যে মোক্ষ হচ্ছে জীবনের চূড়ান্ত প্রাপ্তি। দেহের সঙ্গে যতক্ষন পর্যন্ত জীবাত্মার সম্বন্ধ থাক ততক্ষণ জীব দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করে। মৃত্যুর পর পুনরায় দেহ ধারণ হয় বলে এই দুঃখের নিবৃত্তি হয় না। জন্মান্তরের ধারণা অনুযায়ী জীবের জন্ম-মৃত্যু চক্রাকারে চলতে থাকে যতক্ষন না পর্যন্ত জীবাত্মা পরমাত্মার সঙ্গে একাত্ম হয়ে মোক্ষ লাভ করতে পারে। আর এই একাত্ম হওয়ার উদ্দেশ্যই জীবের জন্মের কারণ। হিন্দু ধর্মে আধ্যাত্মিক অনুশীলনের চূড়ান্ত লক্ষ্যকে এভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ঈশ্বরের সাথে আপনার আত্মার একত্বকে উপলব্ধি করা ঈশ্বরের সাথে আপনার চিরন্তন সম্পর্কের উপলব্ধি এবং বৈকুণ্ঠে গমন করা ঈশ্বরের করুণা অর্জন সকলের মাঝে ঈশ্বরের অবস্থান উপলব্ধি চিরপ্রশান্তি অর্জন করা বৈষয়িক বাসনা থেকে মুক্ত হওয়া স্বর্গ এবং নরকের ধারণা হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক সাহিত্যে নরক ও স্বর্গের ধারণাগুলি রয়েছে। এখানে অগণিত স্বর্গলোক এবং নরকলোকের কথা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে মৃতের আত্মা তাদের ভাল বা পাপী কাজের উপর নির্ভর করে পুরস্কৃত বা শাস্তি প্রাপ্ত হয়। যে আত্মা নরকের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম অঞ্চলে পড়েছে সেখান থেকে তাদের উত্তর পুরুষের পিণ্ডদানের মাধ্যমে উদ্ধার পেতে পারে। স্বর্গ বা নরকে একটি নির্দিষ্ট সময় অতিক্রমের করার পরে, আত্মা অবশেষে চুরাশি লক্ষ জীব দেহে পুনর্বার জন্ম হয়ে মনুষ্য দেহ লাভ করে। এভাবে আত্মমুক্তি অর্জনের জন্য একটি নতুন সুযোগ লাভ হয়। অনেক হিন্দু পণ্ডিতের মতে স্বর্গ-নরকের এরূপ ধারণা যথার্থ নয়। তাদের মতে স্বর্গ ও নরক মূলত এই জগৎেই ভোগ হয়ে থাকে। অন্য কোনো জগৎে যাওয়ার প্রয়োজন হয় না। ধর্মগ্রন্থ হিন্দুধর্ম "বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির দ্বারা আবিষ্কৃত আধ্যাত্মিক নিয়মের সঞ্চিত কোষাগার"-এর উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। লিপিবদ্ধ করার আগে বহু শতাব্দী ধরে, ধর্মগ্রন্থগুলি মুখস্থ বিদ্যার সাহায্যে পদ্য আকারে মুখে মুখে প্রেরিত হয়েছে। বহু শতাব্দী ধরে, ঋষিগণ ধর্মশাস্ত্রগুলিকে পরিবর্ধিত এবং তার শিক্ষাসমূহের পরিমার্জন করেছেন। বৈদিক পরবর্তী এবং বর্তমান হিন্দুদের বিশ্বাস, অধিকাংশ হিন্দু ধর্মগ্রন্থের সাধারণতঃ আক্ষরিক ব্যাখ্যা করা হয় না। ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয় সেগুলির সঙ্গে সংযুক্ত নৈতিকতা এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত রূপক অলঙ্কারযুক্ত অর্থবাদে। অধিকাংশ পবিত্র গ্রন্থগুলি সংস্কৃত ভাষায় লিখিত। ধর্মগ্রন্থগুলি শ্রুতি ও স্মৃতি এই দুই শ্রেণীতে বিভক্ত। শ্রুতি শ্রুতি (আক্ষরিক অর্থে: যা শুনতে হয় অর্থাৎ‍ শ্রোতব্য) বলতে প্রাথমিকভাবে বেদকে বোঝায়, যা প্রাচীন ভারতে লিপিবদ্ধ একাধিক গ্রন্থের একটি বৃহৎ সংকলন। ছান্দস্ ভাষায় রচিত বেদই ভারতীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। সনাতনীরা বেদকে "অপৌরুষেয়" ("পুরুষ বা লোক" দ্বারা কৃত নয়, অলৌকিক) এবং "নৈর্ব্যক্তিক ও রচয়িতা-শূন্য" (যা নিরাকার নির্গুণ ঈশ্বর-সম্বন্ধীয় এবং যার কোনো রচয়িতা নেই) মনে করেন। আর্ষ শাস্ত্র অনুযায়ী পরব্রহ্মই সৃষ্টির আদিতে মানব হিতার্থে বেদের জ্ঞান প্রকাশ করেন। সর্বপ্রথম অগ্নি, বায়ু, আদিত্য ও অঙ্গিরা এই চার ঋষি চার বেদের জ্ঞান প্রাপ্ত হন। পরবর্তিতে তাঁরা অন্যান্য ঋষিদের মাঝে সেই জ্ঞান প্রচার করেন এবং অলিপিবদ্ধভাবে পরাম্পরার মাধ্যমে তা সংরক্ষিত হয়ে এসেছে। বেদের সংখ্যা চার: ঋগ্বেদ, যজুর্বেদ, সামবেদ ও অথর্ববেদ। প্রত্যেকটি বেদ আবার চারটি প্রধান ভাগে বিভক্ত: সংহিতা (মন্ত্র ও আশীর্বচন), ব্রাহ্মণ (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও যজ্ঞাদির উপর টীকা), আরণ্যক (ধর্মীয় আচার, ধর্মীয় ক্রিয়াকর্ম, যজ্ঞ ও প্রতীকী যজ্ঞ) ও উপনিষদ্‌ (ধ্যান, দর্শন ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান-সংক্রান্ত আলোচনা)। যেখানে বেদ ধর্মানুষ্ঠানের উপর কেন্দ্রীভূত, সেখানে উপনিষদ আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টি ও দার্শনিক শিক্ষার উপর অধিশ্রিত, এবং ব্রহ্ম ও জন্মান্তর বিষয়ে আলোচিত। স্মৃতি শ্রুতি ছাড়া অন্যান্য হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলিকে সামগ্রিকভাবে স্মৃতি (যে বিষয় স্মরণ করা হইয়াছে) বলা হয়। স্মৃতির সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মহাকাব্যগুলি, যা মহাভারত এবং রামায়ণ ইত্যাদিতে নিহিত রয়েছে। ভগবদ্গীতা মহাভারতের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং হিন্দুধর্মের একটি সবচেয়ে জনপ্রিয় পবিত্র ধর্মগ্রন্থ। এতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের প্রাক্কালে রাজকুমার অর্জুনের উদ্দেশ্যে শ্রীকৃষ্ণের বলা দার্শনিক শিক্ষা রয়েছে। শ্রীকৃষ্ণ দ্বারা কথিত, ভগবদ্গীতা, বেদের সারাংশ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তবে কখনও কখনও গীতোপনিষদ্ বলে উল্লেখিত, ভগবদ্গীতা, ঔপনিষদি্ক তত্ত্বের কারণে, বিভাগ হিসাবে, প্রায় শ্রুতির মধ্যেই ধরা হয়। স্মৃতির অন্তর্গত পুরাণ, যা বিভিন্ন অবিস্মরণীয় আখ্যায়িকা দ্বারা হিন্দু ধারণা চিত্রিত করে। স্মৃতিশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত অন্যান্য গ্রন্থগুলি হল দেবীমাহাত্ম্যম্, তন্ত্র, যোগসুত্র, তিরুমন্ত্রম্, শিব সূত্র এবং হিন্দু আগম। মনুস্মৃতি হল একটি প্রচলিত নীতিগ্রন্থ, যা সামাজিক স্তরবিন্যাসের উপর নিবন্ধিত সামাজিক নিয়মাবলী, যা পরে ভারতীয় বর্ণাশ্রম তৈরি করতে সমাজকে সাহায্য করেছে। [পৃষ্ঠার প্রথমে ফেরত্‍ যান] ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে ধর্মানুশীলন যোগ কোনও হিন্দু জীবনের যে লক্ষ্যই নির্ধারণ করুক না কেন, সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ঋষিরা বিভিন্ন পদ্ধতি (যোগ) শিখিয়েছেন। যোগ বলতে ঈশ্বরের সঙ্গে সংযোগকে বুঝানো হয়। রাজ যোগের একটি অংশ যোগব্যায়াম যা স্বাস্থ্য, প্রশান্তি এবং আধ্যাত্মিক অন্তর্দৃষ্টির জন্য শরীর, মন এবং চেতনাকে গড়ে তোলে। যোগ নিবেদিত গ্রন্থগুলো হল পাতঞ্জলী যোগ সূত্র, হঠ যোগ প্রদীপিকা, ভগবত গীতা এবং তাদের দার্শনিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি হিসেবে উপনিষদ। এসব গ্রন্থে যেসব যোগের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক সিদ্ধতা (মোক্ষ বা সমাধি) অর্জন করা কথা বলা হয়েছেঃ ভক্তি যোগ - প্রেম এবং নিষ্ঠার পথ কর্ম যোগ - সঠিক কর্মের পথ রাজ যোগ - ধ্যানের পথ জ্ঞান যোগ - জ্ঞান বা প্রজ্ঞা বেশিরভাগ হিন্দুধর্মাবলম্বিইভক্তিযোগকে কলিযুগে আধ্যাত্মিক পূর্ণতা অর্জনের উপায় হিসেবে গ্রহণ করে। ভক্তিযোগ ছাড়াও একজন ব্যাক্তি অন্য যোগের পথে জীবন পরিচালনা করতে পারেন। অথবা চারটি যোগকে একত্রেও সাধনা করতে পারেন। জ্ঞান যোগের অনুশীলনের মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রতি "ভক্তি" সৃষ্টি হয়, যা ভক্তি যোগের মূল লক্ষ্য। আবার যারা ধ্যান চর্চা করেন (যেমন: রাজা যোগে ) তাদেরও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কর্ম যোগ, জ্ঞান যোগ এবং ভক্তি যোগ অনুসরণ করতে হয়। ভক্তি ভক্তি বলতে ঈশ্বরের প্রতি ভক্তের অচলা প্রেম, তার মাধ্যমে অংশগ্রহণ এবং একটি ব্যক্তিগত আকাঙ্খার প্রকাশ যা ঈশ্বরের নির্দেশিত পথে ভক্তকে পরিচালিত করে। ভক্তি-মার্গ হল আধ্যাত্মিকতা এবং বিকল্প অনেক সম্ভাব্য পথের একটি যার মাধ্যমে মোক্ষ লাভ করা যায়। অন্য পথগুলো হল জ্ঞানের পথ, কর্ম-পথ, রজ-মার্গ (চিন্তা ও ধ্যানের পথ). ভক্তি বিভিন্ন উপায়ে চর্চা করা হয়, মন্ত্র আবৃত্তি থেকে শুরু করে ধ্যান নাম জপ ইত্যাদি। যে কেউ বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে তা করতে পারে, অথবা একটি মন্দিরে মূর্তি অথবা একটি দেবতার পবিত্র প্রতীকীর সামনেও তা করতে পারে। সমসাময়িক হিন্দুধর্মে উপাসনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হল হিন্দু মন্দির এবং গার্হস্থ্য আসনকক্ষ। বিশেষ বিশেষ অনুষ্ঠানে মন্দিরগুলোতে ভক্তরা ভিড় করেন, কিন্তু অতি সাধারণভাবে বাড়ির বিশেষ অংশে রাখা ঠাকুরঘরে মূর্তি বা গুরুর সামনে বসে প্রার্থনা, পূজা অচর্না করা হয়। প্রত্যাহিক পূজার একটি পদ্ধতি হল আরতি কীর্ত্তন ও ধূপ দ্বীপ প্রজ্জলণ। ধূপ-দ্বীপের মাধ্যমে ঈশ্বরের স্তুতি পূর্বক গান গেয়ে পূজাকর্ম সম্পাদন করা হয়। উল্লেখযোগ্য আরতি গানগুলো হল ওম জয় জগদীশ হরে যা একটি বিষ্ণু প্রার্থনা আর সুখকর্তা দুখকর্তা যা একটি গণেশ প্রার্থনা। আবার উপাসনার মাধ্যমে ঈশ্বরের মূর্তির পাশাপাশি বিভিন্ন মহাপুরুষ বা অবতারেরও স্তুতি করা হয় উদাহরণস্বরূপ, হনুমানের আরতি করা হয় যেখানে হনুমান নিজেই ঈশ্বরের একজন ভক্ত (হনুমান নিজেই ঈশ্বরের একটি সরূপ)। অনেক মন্দিরে যেমন বালাজি মন্দিরে মূল দেবতা হল একটি বিষ্ণু অবতার। স্বামীনারায়ন মন্দিরে এবং বাড়ির পূজায় স্বামীনারায়নের আরতি করা হয় যাকে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর মানা হয়। তীর্থযাত্রা চতুরাশ্রম বর্ণ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ৪টা বর্ণ রয়েছে। যথাঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র। আধুনিক হিন্দু পণ্ডিতদের মতে মানুষের কর্মনুসারে এই বর্ণব্যবস্থা হয়ে থাকে। যেমন: যারা সাধনার পথ অনসরণ করেন তারা ব্রাহ্মণ, যারা রাজনীতি বা যুদ্ধের মাধ্যমে জীবনযাপন করেন তারা ক্ষত্রিয়, ব্যবসায়ীগণ বৈশ্য এবং ধর্মহীনরা শূদ্র হয়ে থাকে। প্রতীকীবাদ অহিংসা, নিরামিষভোজন এবং অন্যান্য খাদ্যরীতি হিন্দুরা প্রাণীর চর্চা করে এবং সকল প্রাণকে সম্মান করে। কারণ তারা মনে করে দেবত্ব সব জীবন তথা মানবকুল, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য প্রাণীতে বিরাজমান। অহিংসার বিষয়ে উপনিষদ্, মহাভারতে সহ অন্যান্য ধর্মগ্রন্থগুলোতে উল্লেখ্য রয়েছে। অহিংসা অনুযায়ী, অনেক হিন্দুধর্ম অনুসারীই জীবনের উচ্চতম উদ্দেশ্যকে সম্মানপূর্বক নিরামিষভোজন করে থাকেন। কঠোর নিরামিষভোজি হিসেবে ভারতে প্রায় ২০-৪২ ভাগ লোক কখনও কোন মাংস, মাছ বা ডিম খায় না (সব ধর্মের অনুগামী অন্তর্ভুক্ত)। বাকিরা কম কঠোর নিরামিষাশী বা অ-নিরামিষাশী হয়। যারা মাংস খেতে চায় তারা প্রানীদের দ্রুত মৃত্যু পদ্ধতি পছন্দ করে। কারণ দ্রুত মৃত্যুর ফলে প্রানীটি কম কষ্ট পায়। খাদ্য অভ্যাস অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হয়। বাংলাদেশি হিন্দু, পশ্চিমবঙ্গের হিন্দু এবং হিমালয় অঞ্চলে বাস করা হিন্দু, বা নদী উপকূলীয় অঞ্চলের হিন্দুরা নিয়মিত মাংস এবং মাছ খান। কিছু নির্দিষ্ট উৎসব বা অনুষ্ঠানে মাংস এড়িয়ে চলা হয়। হিন্দুরা প্রায় সবসময় গরুর মাংস ভক্ষণ থেকে বিরত থাকে। গরুকে হিন্দু সমাজে ঐতিহ্যগতভাবে একটি উপকারী ও দুগ্ধমাতার মতো মনে করা হয়, হিন্দু সমাজ নিঃস্বার্থ দানকারীর একটি প্রতীক হিসেবে গরুকে সম্মান করা হয়। আধুনিক সময়েও কিছু হিন্দু দল বা গোষ্ঠী আছে যারা কঠোর নিরামিষাশী প্রথা মেনে চলেন। অনেকে মাংস, ডিম, এবং সীফুড বর্জিত ডায়েটিং মেনে চলে। হিন্দু বিশ্বাসে খাদ্য শরীর মন ও আত্মাকে প্রভাবিত করে। হিন্দু ধর্মীয় রচনা যেমন উপনিষধ এবং Svātmārāma তে মিতাহারকে (সংযম খাওয়া) সুপারিশ করা হয়। ভগবদ্গীতার বানী অমৃত ১৭.৮ থেকে ১৭.১০ পযর্ন্ত শ্লোকে শরীর এবং মনের সাথে খাদ্যের সংযোগ বা প্রতিক্রিয়ার বিষয়ে উল্লেখ্য আছে। শাক্ত উপাসকেরা এবং বালি ও নেপাল অঞ্চ লের হিন্দুরা প্রাণী বলি প্রথা মেনে চলেন। উৎসর্গকৃত পশু প্রসাদ হিসেবে গ্রহণ করা হয়। উত্সৃষ্ট প্রাণী অনুষ্ঠান খাদ্য হিসাবে খাওয়া হয়. বিপরীতে, বৈষ্ণব হিন্দু অভিধর্ম ও সবলে প্রাণী আত্মাহুতি বিরোধিতা. প্রাণী অ-সহিংসতার নীতি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিন্দুধর্মে গৃহীত হয়েছে তাই প্রাণী বলি বিরল হয়ে উঠেছে এবং ঐতিহাসিকভাবে ধীরে ধীরে প্রথাটি প্রান্তিক অনভ্যাসে পরিণত হয়েছে। উৎসব মূল নিবন্ধ: হিন্দু উৎসব হিন্দু উৎসব (সংস্কৃত: उत्सव; আক্ষরিক অর্থে: উত্তরণ) প্রতীকী ধর্মানুষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা সুন্দরভাবে ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে ধর্মের পথে চালিত করে। হিন্দুধর্মে সারা বছর ধরে অনেক উৎসব রয়েছে। হিন্দু দেওয়ালপঞ্জিকাতে সাধারণত তাদের তারিখ নির্ধারিত থাকে। হিন্দু উৎসব সাধারণত পুরাণের ঘটনা অবলম্বনে, প্রায়শই ঋতু পরিবর্তন সঙ্গে সঙ্গে একত্রে উদ্‌যাপন করা হয়ে থাকে। সাধারণত উৎসবগুলি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ে আথবা ভারতীয় উপমহাদেশের নির্দিষ্ট অঞ্চলে উদ্‌যাপন করা হয়। কিছু ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হিন্দু উৎসব হল: মকর সংক্রান্তি মহা শিবরাত্রি পোঙ্গল দোলযাত্রা নবরাত্রি সরস্বতী পূজা থাইপুসম রাম নবমী কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী গণেশ চতুর্থী শিগমো দশেরা দুর্গা পূজা দীপাবলি গুদী পাডবা উগাদি বিহু বোনালু রথ যাত্রা গুরু পূর্ণিমা রাখিবন্ধন ওনাম্ গৌরী হব্য ছট্ পূজা বিষু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মন্দির (দেবস্থান) মন্দির হল ঈশ্বরের পূজাস্থল ও ঈশ্বর বিরাজের জায়গা। এটা একসঙ্গে মানুষ ও দেবতাদের মিলনস্থল ও কাঠামো। হিন্দুধর্মের ধারণা এবং বিশ্বাস প্রকাশ করতে প্রতীকীবাদী কর্মের মাধ্যমে ঈশ্বর পূজিত হন। একটি মন্দিরে হিন্দু সৃষ্টিতত্বের সব উপাদান প্রতীকী মাধ্যমে উপস্থিত থাকে। সর্বোচ্চ পেঁচান বা গম্বুজ আকৃতির ছাদ প্রতিনিধিত্ব করে ব্রহ্মার বাসভূমি এবং আধ্যাত্মিক মহাবিশ্বের কেন্দ্রস্থল হিসেবে ভাস্কর্য এবং লোগোতে প্রতীকায়িত করা হয় ধর্ম, কাম, অর্থ (জীবনের অর্থ ও উদ্দেশ্য), মোক্ষ এবং কর্মফল. বিন্যাস, প্রধান বৈশিষ্ট্য, পরিকল্পনা ও ভবনের প্রক্রিয়া এবং জ্যামিতিক প্রতীক প্রাচীন ধর্মানুষ্ঠানের প্রতিনধিত্ব করে। এভাবে হিন্দুধর্মের বিভিন্ন শাখায় যে সহজাত বিশ্বাস ও মান রয়েছে তার প্রতিফলণ ঘটে। হিন্দু মন্দির অনেক হিন্দুর (সব না) জন্য আধ্যাত্মিক গন্তব্যস্থল, সেইসাথে শিল্পকলা, বার্ষিক উৎসবস্থল, ষোড়শ সংস্কারের ধর্মানুষ্ঠানস্থল এবং গোষ্ঠীগত উদ্‌যাপনের কেন্দ্রস্থল। আশ্রম আশ্রম হচ্ছে তপস্বা, আধ্যাত্মিক, যোগিক বা শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে অন্য কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি স্থান। অবশ্য প্রাচীনকালে ‘আশ্রম’ শব্দের আরও ব্যাপক অর্থ ছিল। সে সময় ‘আশ্রম’ বলতে সংসার-ত্যাগীদের আবাসস্থল এবং সাধনা বা শাস্ত্রচর্চার কেন্দ্রকেও বোঝাত। সেখানে সপরিবারে মুনি-ঋষিরা বসবাস করতেন। তখন আশ্রমগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহূত হতো। যেখানে এক বা একাধিক গুরু থাকতেন। তারা ছাত্রদের রাজনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, শাস্ত্র, সাহিত্য, ভাষা ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। সে সময় ভারতবর্ষের শিক্ষাব্যবস্থাই ছিল আশ্রমভিত্তিক। পিতা-মাতা নির্দিষ্ট একটি বয়সে সন্তানদের আশ্রমে পাঠিয়ে দিতেন। তারা সেখানে থেকেই অধ্যয়ন করত। বিদ্যার্জন শেষ হলে ছাত্ররা স্নান করে এসে গুরুকে প্রণাম করত। তখন গুরু তাদের আশীর্বাদ করে অধীত বিদ্যা যথার্থভাবে কাজে লাগানোর উপদেশ দিতেন। ছাত্ররা এ বিশেষ দিনে বিশেষ উদ্দেশ্যে স্নান করে আসার পর তাদের বলা হতো স্নাতক, আর গুরু কর্তৃক ছাত্রদের এ বিশেষ আশীর্বাদ অনুষ্ঠানের নাম ছিল সমাবর্তন। একটি আশ্রম ঐতিহ্যগতভাবে হবে, তবে সমসাময়িক সময়ে বিশেষ করে বন বা পাহাড়ি অঞ্চলে মানুষের বাসস্থান থেকে অনেক দূরে অবস্থান, আধ্যাত্মিক নির্দেশনা ও ধ্যানের পক্ষে উপযুক্ত সতেজ প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে থাকা আবশ্যক নয়। আশ্রমবাসিরা নিয়মিত আধ্যাত্মিক এবং শারীরিক অনুশীলন করতেন, যেমন: বিভিন্ন ধরনের যোগ ব্যায়াম। যজ্ঞের মতো অন্যান্য ত্যাগ ও তপস্যাও করা হত। অনেক আশ্রম গুরু-শিষ্য ঐতিহ্যের অধীনে শিশুদের জন্য গুরুকুল, আবাসিক বিদ্যালয় হিসাবেও কাজ করতো। কখনও কখনও আশ্রমে তীর্থযাত্রার লক্ষ্য প্রশান্তি ছাড়াও যুদ্ধে কলাকৌশল নির্দেশনা গ্রহণও ছিলো। রামায়ণে প্রাচীন অযোধ্যার রাজকুমারগণ রাম এবং লক্ষ্মণ বিশ্বামিত্রর যজ্ঞকে রাবণের রাক্ষসদূতদের দ্বারা বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে তার আশ্রমে যান। রাজকুমাররা তাদের দক্ষতা প্রমাণ করার পর ঋষিদের কাছ থেকে যুদ্ধবিষয়ক শিক্ষা, বিশেষ করে ঐশ্বরিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে সামরিক নির্দেশনা পান। মহাভারতে কৃষ্ণ তার যুবক বয়সে অধ্যাত্মিক ও আধ্যাত্মিক উভয় বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য সন্দিপানির আশ্রমে গিয়েছিলেন। গুরুকূল গুরুকুল হল প্রাচীন ভারতের এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থা যেখানে শিষ্য গুরুগৃহে গুরুর সন্নিধ্যে বা তার সঙ্গে বাস করে শিক্ষা গ্রহণ করে। গুরুকুলে থাকার সময়, শিষ্যরা তাদের বাড়ি থেকে দূরে থাকবে। এই সময়টি হতে পারে কয়েকমাস থেকে কয়েক বছর। শিষ্যগণ গুরুর নিকট অধ্যয়ন করে এবং গুরুকে তার দৈনন্দিন জীবনে সাহায্য করে, এর মধ্যে দৈনন্দিন গৃহস্থালির জাগতিক কাজগুলোও করা হয়। কিছু পণ্ডিত বলেন, এই কার্যগুলো জাগতিক নয় বরং শিষ্যদের মধ্যে স্ব-শৃঙ্খলা জাগ্রত করার জন্য শিক্ষার অত্যন্ত প্রয়োজনীয় অংশ। শিক্ষা শেষে শিষ্য গুরুকুল ত্যাগ করার পূর্বে গুরুদক্ষিণা প্রদান করেন। তীর্থক্ষেত্র ইতিহাস হিন্দুধর্ম বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন ধর্ম তবে হিন্দু নামটি আধুনিকালের দেওয়া। এর প্রাচীন নাম হল সনাতন ধর্ম। আবার এই ধর্ম বৈদিক ধর্ম নামেও পরিচিত। এই ধর্ম বেদ এর উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। এ ধর্মত্ত্বের মূল কথা হল ঈশ্বরের অস্তিত্বেই সকল কিছুর অস্তিত্ব এবং সকল কিছুর মূলেই স্বয়ং ঈশ্বর। খ্রীস্টপূর্ব ৫৫০০-২৬০০ অব্দের দিকে যখন কিনা হাপ্পান যুগ ছিল ঠিক সেই সময়ই এ ধর্মের গোড়ার দিক। অনেকের মতে খ্রীস্টপূর্ব ১৫০০-৫০০ অব্দ। কিন্তু ইতিহাস বিশ্লেষকদের মতে আর্য (বা Aryan) জাতিগোষ্ঠী ইউরোপের মধ্য দিয়ে ইরান হয়ে ভারতে প্রবেশ করে খ্রীস্টপূর্ব ৩০০০-২৫০০ অব্দের মধ্যে, তারাই ভারতে বেদ চর্চা করতে থাকে এবং তারা সমগ্র ভারতে তা ছড়িয়ে দেয়। আর্য জাতিগোষ্ঠীরা অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলত। তারা চারটি সম্প্রদায়ে বিভক্ত ছিল এরা হলঃ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য এবং শূদ্র। এই সম্প্রদায়গুলো তৈরি করার অন্যতম কারণ হল কাজ ভাগ করে নেওয়া অর্থাৎ এক এক সম্প্রদায় এর লোক এক এক ধরনের কাজ করবে। অনেকের মতে হিন্দু শব্দটি আর্যদেরকে আফগানিস্তানের বাসিন্দা বা আফগানেরা দিয়েছে তারা সিন্দু নদের তীরবর্তী সনাতন ধর্মের সাধু সন্ন্যাসিদেরকে হিন্দু বলত, আর এই ভাবেই হিন্দু নামটি এসেছে। এই সনাতন ধর্মের সাধু সন্ন্যাসিরাই বেদ শ্রুতিবদ্ধ করেন অর্থাৎ ধ্যানের মাধ্যমে বেদ আয়ত্ত করেন। বেদ কোন একজন সাধু বা সন্ন্যাসির লব্ধকৃত নয়, বেদ হল বহু সাধু সন্ন্যাসিদের লব্ধকৃত এক মহান শ্রুতিবদ্ধ গ্রন্থ যা প্রথম অবস্থায় সবার মনে মনে ছিল পরে তাকে লিপিবদ্ধ করা হয়। বেদ এই লিঙ্কটির মাধ্যমে বেদ সম্পর্কে আরও জানতে পারবেন। তখন কার যুগে এই বেদের আধিপত্য ছিল ব্যাপক, অর্থাৎ সমাজের সকল কাজ বেদের মাধ্যমে চলত কারণ বেদে সমাজ চালানো, চিকিৎসা করা, গণনা করা এমন সব উপাদানই আছে। এই কারণে তখনকার সভ্যতাকে বলা হয় বৈদিক সভ্যতা। এই বৈদিক সভ্যতায় অর্থাৎ ঐ আমলে কোন মূর্তি পূজা করা হত না। সেই সময় হিন্দুদের প্রধান দেবতা ছিলেন ইন্দ্র, বরুন, অগ্নি এবং সোম। তারা যজ্ঞের মাধ্যমে পূজিত হত। তখনকার ঈশ্বর আরাধনা হত যজ্ঞ এবং বেদ পাঠের মাধ্যমে। সকল কাজের আগে যজ্ঞ করা ছিল বাঞ্ছনীয়। সে আমলে কোন মূর্তি বা মন্দির ছিল না। ধারণা করা হয়ে থাকে যে খ্রীস্টপূর্ব ৫০০ থেকে ১০০ অব্দের মধ্যে রামায়ণ এবং মহাভারত শ্রুতিবদ্ধ হয়। বর্তমানে এই সমস্ত মহান ধর্ম গ্রন্থগুলোর লিখিত রূপ হয়েছে। এই রামায়ণ এবং মহাভারতে লিপিবদ্ধ আছে ধর্ম এবং যুদ্ধের কাহিনী। এছারাও পুরাণ নামে যে ধর্মগ্রন্থগুলো রয়েছে তাতে দেবতাদের এবং অসুরদের যুদ্ধ নিয়ে ঘটনা আছে। যুগকরণ প্রাকবৈদিক ধর্ম (১৭৫০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত) বৈদিক যুগ (১৭৫০-৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) উত্‍পত্তি বৈদিক ধর্ম পাণ্ডুলিপি সার্বজনীন নির্দেশ "দ্বিতীয় নগরায়ণ" (৫০০-২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ) ধ্রুপদী হিন্দুধর্ম (২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-১১০০ খ্রীষ্টাব্দ) প্রাকধ্রুপদী হিন্দুধর্ম (২০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দ-৩০০ খ্রীষ্টাব্দ) "স্বর্ণযুগ" (গুপ্ত সাম্রাজ্য) (৩২০-৬৫০ খ্রিষ্টাব্দ) ধ্রুপদোত্তর হিন্দুধর্ম - পৌরাণিক হিন্দুধর্ম (৬৫০-১১০০ খ্রিষ্টাব্দ) আরও দেখুন ধ্রুপদোত্তর যুগ এবং হিন্দুধর্ম মধ্যযুগ মুসলমান শাসন ও হিন্দুধর্মের সম্প্রদায়সমূহ (১১০০-১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ) আধুনিক হিন্দুধর্ম (১৮৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে) জনসংখ্যার বিচারে হিন্দুধর্ম হিন্দুধর্ম ভারতের একটি প্রধান ধর্ম। দেশের ১২১ কোটি (২০১২ সালের গণনা অনুযায়ী) জনসংখ্যার প্রায় ৮০.৫% (প্রায় ৯৬ কোটি) মানুষ হিন্দুধর্মালম্বী। অন্যান্য উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যা পাওয়া যায় নেপাল (২.৩ কোটি), বাংলাদেশ (২.১ কোটি) এবং ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপ (৩৩ লক্ষ) প্রভৃতি যায়গায়। এছাড়াও সংখ্যাগরিষ্ঠ ভিয়েতনামী চ্যাম সম্প্রদায়ের মানুষ হিন্দুধর্ম অনুসরণ করে। দেশ অনুসারে হিন্দুধর্ম (২০০৮ এর পরিসংখ্যান) থেকে দেশের নিরীখে সর্বাধিক অনুপাতে হিন্দুধর্মালম্বী: ৮১.৩% ৮০.৫% ৪৮.৫% ২৮% ২৭.৯% ২৫% ২২.৫% ২০% ১২.৬% ৮% ৭.২% (রেউনিওঁ দ্বীপ) ৬.৭% ৬.৩% ৬.২৫% ৬% ৫.১% ৫% ৩% ২.৩% ২.১% জনসংখ্যার দিক থেকে, খ্রিস্টান এবং ইসলামের পরে হিন্দুধর্ম হল বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম ধর্ম। সমালোচনা, নিপীড়ন, এবং বিতর্ক সমালোচনা হিন্দুধর্ম ব্রাহ্মণ্যবাদ এর জন্য বহুল সমালোচিত। বর্ণ ব্যবস্থায় উচ্চ-শ্রেণীর ব্রাহ্মণ এবং নিম্ন শ্রেণীর দলিতের (শুদ্র) মধ্যে বৈষম্য তৈরি করে। কারণ শুদ্রদের নিম্নশ্রেণীর বলে মনে করা হত। তাদেরকে ছোঁয়া এবং তাদের থেকে দুরত্ব বজায় রাখার মাধ্যমে এরূপ আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটত। আধুনিক সময়ে মুসলমান এবং খৃষ্টানদের হিন্দুধর্ম ফিরিয়ে আনার বিষয়টিকেও সমালোচনা করা হয় এবং একে হিন্দুধর্ম আধিপত্য বিস্তারের কর্ম হিসেবে দেখা হয় বিশেষ করে ভারতে। হিন্দু জাতীয়তাবাদ এবং হিন্দুত্ব নিয়ে প্রায়ই হয় সমালোচনা করা হয় কারণ তারা ডানপন্থী মতামত পোষণ করে এবং কখনও কখনও হিংসাত্মক কাজও করে। এরূপ উগ্রবাদী আচরণকে কিছু লোক নাৎসিবাদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। নিপীড়ন হিন্দুরা ঐতিহাসিক এবং চলমান উভয় অভিজ্ঞতায় ধর্মীয় নিপীড়ন এবং পদ্ধতিগত ধর্মীয় হিংস্রতার শিকার হয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে জোরপূর্বক ধর্মান্তর, নথিভুক্ত গণহত্যা, এবং মন্দির, উপাশনালয়, পূজা মন্ডপ, দেব মূর্তি ভাংচুর। ঐতিহাসিক নিপীড়ন বেশি ঘটেছে মুসলমান শাসকদের সময় এবং খ্রিস্টান মিশনারীর দ্বারা। এর মধ্যে মুঘল আমলে বিশেষ করে, আওরঙ্গজেবের অধীনে হিন্দুরা নৃশংসভাবে নির্যাতিত হত এবং জিজিয়া কর দিতে বাধ্য হত। গোয়ায় ১৫৬০ সালের পর্তুগিজ অধিকরণের সময় হিন্দুরা সবচেয়ে নিষ্ঠুর নিপীড়নের শিকার হয়। ভারত দেশভাগের সময়ে প্রায় ২,০০,০০০ থেকে এক মিলিয়ন মানুষ (মুসলিম এবং হিন্দু উভয়) হত্যা করা হয়। আধুনিক কালেও হিন্দুরা বিশ্বের বহু অংশে বৈষম্যের ও নিপীড়নের সম্মুখীন হন বিশেষ করে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, ফিজি এবং অন্যান্য দেশে। সবচেয়ে বড় কারণ হল জোরপূর্বক ধর্ম রূপান্তর। ধর্মান্তর বিতর্ক আধুনিক যুগে, হিন্দুধর্ম থেকে এবং হিন্দুধর্মে ধর্মান্তর একটি বিতর্কিত বিষয়। কেউ কেউ ধর্মপ্রচারের মাধ্যমে ধর্মান্তরের মত প্রকাশ করে থাকেন তবে উভয়ই হিন্দুধর্ম অনুযায়ী নীতি গর্হিত কাজ। ভারতের বাইরে হিন্দু ধর্মীয় রূপান্তর সম্পর্কে একটি দীর্ঘ ইতিহাস আছে। বিশেষ করে ভারতীয় উপদ্বীপ থেকে ভারতের মার্চেন্ট ও ব্যবসায়ীরা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হিন্দুধর্মের ধারণা প্রচার করেন যার ফলে ধর্মান্তর হয়। ভারতের মধ্যে, প্রত্নতাত্ত্বিক এবং পাঠগত প্রমাণ রয়েছে যেমন দ্বিতীয় শতকে (বিসিই) হেলিওডোরাস পিলার অনুসারে গ্রিক ও অন্যান্য বিদেশীদের হিন্দুধর্ম রূপান্তরিত করা হত। খ্রিষ্টান, ইসলাম ও হিন্দুধর্ম ও অন্যান্য ধর্মের মধ্যে ধর্মান্ধকরণ, ধর্মান্তরকরণ বা আধিপত্য বিস্তারের ধারাটি খুবই সাম্প্রতিক এবং এই ধারা ১৯শ শতকে শুরু হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও দল বহু পুরাতন ধর্ম হওয়ায় সময়ের পরিক্রমায় বহু সাধু, ধর্মগুরু, দার্শনিক, বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, আবিষ্কারকসহ অনেক ব্যক্তিত্ব দেখা পাওয়া যায় যারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে সমাজ, ধর্ম, পরিবেশ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান, ইতিহাস ইত্যাদি বহু শাখায় তাদের স্বাক্ষর রেখে গেছেন। সেরকম উল্লেখ্য কিছু ব্যক্তিত্ব ও দলের নাম: ঋষিগণ ভৃগু নারদ দত্তাত্রেয় বশিষ্ঠ বিশ্বামিত্র মার্কন্ডেয় অগস্ত্য মুনি গার্গী জনক রাম হনুমান শ্রীকৃষ্ণ পাণিনি কপিল বাল্মীকি ব্যাস বাৎস্যায়ন বাসব ভাস্কর রামানুজ জয়দেব মধ্বাচার্য চৈতন্য তুলসী দাস তুকারাম অত্রি যাজ্ঞবল্ক্য শ্রীরাম যাস্ক সুগ্রীব লক্ষ্মণ ভরত শত্রুঘ্ন যুধিষ্ঠির ভীম অর্জুন নকুল সহদেব দ্রৌপদী সুফিবাদের উপর প্রভাব আবু বকর মুহাম্মাদ জাকারিয়া তার হিন্দুসিয়াত ওয়া তাসুর বইতে বলেন, আরব ও পাশ্চাত্য বহু একাডেমিকের মতে, ইবনে আরাবী, জালালুদ্দিন রুমি, বায়োজিদ বোস্তামি, আব্দুল কাদির জিলানি, মনসুর হাল্লাজ সহ আরও বহু প্রাথমিক সময়ের সুফি সাধক ইন্দো ইউরোপীয় অর্থাৎ ভারতীয়, ইরানীয় ও পাশাপাশি গ্রিক ইহুদি ও খ্রিস্টান ধর্মদর্শনের দ্বারা প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত ছিলেন, এই দাবির পক্ষে যেসব একাডেমিক, তারা হলেন, আল বিরুনি, ইহসান ইলাহী জহির, আনওয়ার আল-জুন্দি, উইলিয়াম জোন্স, আলফ্রেড ক্র্যামার, রোজেন, গোল্ডজিহার, মোরেনো, রবিন হর্টন, মনিকা হর্স্টমান, রেনোল্ড নিকোলসন, রবার্ট চার্লস জাহনার, ইবনে তাইমিয়া, মুহাম্মদ জিয়াউর রহমান আজমী ও আলি জায়ুর। হিন্দুধর্মের মতো সুফিগণও পুনর্জন্মকে তানাসুখ নামে সমর্থন করে থাকে। আল বিরুনি তার তাহক্বীক মা লিলহিন্দ মিন মাকুলাত মাকুলাত ফী আলিয়াক্বল'আম মারযুলা (ভারতের বক্তব্য নিয়ে সমালোচক গবেষণাঃ যৌক্তিকভাবে গ্রহণীয় নাকি বর্জনীয়) বইয়ে হিন্দুধর্মের কয়েকটি বিষয়ের সঙ্গে সুফিবাদের মিল দেখিয়েছেন, আত্মার সাথে রুহ, তানাসুখের সাথে পুনর্জন্ম, ফানাফিল্লাহর সঙ্গে মোক্ষ, ইত্তিহাদের সাথে জীবাত্মায় পরমাত্মায় মিলন, হুলুলের সাথে নির্বাণ, ওয়াহদাতুল উজুদের সাথে বেদান্ত, সাধনার সঙ্গে মুজাহাদা। জার্মান বংশোদ্ভূত ভারতবিদ মনিকা বোহ'ম-তেতেলবাখ বা মনিকা হর্স্টম্যান দাবি করেন যে, পাচটি যুক্তির দ্বারা প্রমাণ করা যায় যে সুফিবাদের উৎস হল ভারত ও হিন্দুধর্ম, যেগুলো হলোঃ প্রথমত, অধিকাংশ প্রাথমিক সুফি ছিল অনারব, যেমন ইব্রাহিম বিন আদহাম, ও শাকিক আল বলখি, বায়েজিদ বোস্তামি, ইয়াহিয়া ইবনে মুয়ায আল-রাযী, দ্বিতীয়ত, সুফিবাদ প্রথম উৎপত্তি ও বিকাশ লাভ করে ভারতের নিকটবর্তী ইরানের বর্তমান খোরাসান (পূর্বনাম পার্থিয়া, যাকে গ্রিকরা ডাকতো আরিয়ানা বা আর্যদের অঞ্চল নামে) প্রদেশে, তৃতীয়ত, ইসলাম আগমনের পূর্বে ইরানের পার্শ্ববর্তী তুর্কিস্তান ছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ধর্ম ও সংষ্কৃতির মিলনকেন্দ্র, চতূর্থত, মুসলিমরা নিজেরাই তাদের ধর্মে ভারতীয় প্রভাবের কথা স্বীকার করে, পঞ্চমত, প্রথম সুফিবাদ বা ইসলামী রহস্যবাদ এর অভ্যাস ও পদ্ধতির দিক থেকে ভারতীয় ছিল, কোন কারণ ছাড়াই নিজেকে পূর্ণরূপে সপে দেওয়া এবং নিজেদের সফরকে নির্জনতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রহস্যবাদকে ব্যবহার করা এবং একে মহিমান্বিত করে তাকে ব্যবহার করা হল মূলত ভারতীয় মতবাদ হতে উৎপন্ন। ওয়াহদাত আল-উজুদের সূফী ধারণা অদ্বৈত বেদান্তে দাবি করা বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গির কাছাকাছি। জিয়াউর রহমান আজমি দাবি করেন, ওয়াহাদাতুল উজুদের উৎপত্তি হিন্দুধর্মের বেদান্ত দর্শন থেকে, যা ইবনে আরাবি ভারত সফরের পর তার মক্কা বিজয় গ্রন্থে লিখেছেন, যা খলীফা আল মামুনের শাসনামলে আরবিতে অনূদিত হয় এবং মনসুর হাল্লাজ অসংখ্যবার ভারত সফরের সময় বিভিন্ন গ্রন্থে এই ধারণার কথা লিখেছেন। ভারত সফরের পর বাগদাদে ফিরে হাল্লাজ ধ্যানরত অবস্থায় বলতেন, ("আনাল্ হাক্ক") "আমিই পরম সত্য", যা তিনি নিয়েছিলেন ভারত ভ্রমণের সময় মহাবাক্য দর্শনের একটি বাক্য "অহম ব্রহ্মাস্মি" থেকে। সুফি ধর্মবিদ মার্টিন লিংস বলেছেন, সুফিবাদের মুরাকাবাকে হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের ধ্যানের সাথে তুলনা করা হয়। গোল্ডজিহার ও নিকোলসন মনে করেন যে, সুফিরা তাদের জুব্বা পরার রীতি বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছে, যাকে সুফিরা ইসলামী নবী মুহাম্মাদের আদর্শ বলে দাবি করে থাকে। সুফি ইসলামে ফানার ধারণাকে হিন্দুধর্মের সমাধির সাথে তুলনা করা হয়েছে। বায়েজিদ বোস্তামী ইসলামের সুফি সংস্করণে মোক্ষ ও নির্বাণ তত্ত্বকে বাক্বা নামে আমদানি করেছেন। হিন্দুধর্মের ভক্তিবাদ, ইন্দো-ইউরোপীয় বৈরাগ্যবাদ ও আঞ্চলিক মুনি, ঋষি, ফকির তথা বাউল দর্শন সুফি মতবাদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট। ভারতে মুসলিম সুফির পাশাপাশি হিন্দু সুফি সাধকগণও বিদ্যমান রয়েছে। জিয়াউর রহমান আজমী ইসলাম সম্পর্কে সুফিবাদের সাথে হিন্দুধর্মের সম্পর্কের বলেন, আরও দেখুন হিন্দুধর্ম হিন্দু হিন্দুধর্মে নাস্তিকতা হিন্দুধর্মের ইতিহাস হিন্দু দেওয়ালপঞ্জিকা হিন্দু দেবতা হিন্দু শাখাসম্প্রদায় হিন্দু পুরাণ হিন্দু জাতীয়তাবাদ দেশ অনুসারে হিন্দুধর্ম হিন্দুধর্মে বেদের ভূমিকা হিন্দু নীতিশাস্ত্র হিন্দু গুরু হিন্দু মন্দিরগুলির তালিকা বিশিষ্ট হিন্দুদের তালিকা ধর্মান্তরিত হিন্দুদের তালিকা হিন্দুধর্ম সম্পর্কিত নিবন্ধ তালিকা ধর্ম ও রীতিনীতি সম্পর্কিত ভারতের ধর্মবিশ্বাস প্রাচ্য দর্শন হিন্দু দর্শন বৌদ্ধধর্ম জৈনধর্ম শিখধর্ম ইসলাম ধর্ম খ্রিস্টধর্ম ইহুদি ধর্ম জরথুস্ত্রীয় ধর্ম খ্রিস্টধর্ম ও হিন্দুধর্ম বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্ম হিন্দু–ইসলাম সম্পর্ ও হিন্দুধর্ম ইহুদি ধর্ম ও হিন্দুধর্ম জৈনধর্ম ও হিন্দুধর্ম শিখধর্ম ও হিন্দুধর্ম আদি-ইন্দো-ইউরোপীয় ধর্ম আদি-ইন্দো-ইরানীয় ধর্ম পাদটীকা তথ্যসূত্র উৎস প্রকাশিত উত্‍স ওয়েব উত্‍স আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ Resources for Scholars and Students Encyclopædia Britannica, Hinduism All About Hinduism by Swami Sivananda (pdf) Heart of Hinduism: An overview of Hindu traditions Information on Hinduism or Santana dharma Ethical Democracy Journal - Notes on Hinduism Religious Tolerance page on Hinduism অডিও Paper on Hinduism by Swami Vivekananda - ১৮৯৩ সালে বিশ্বধর্ম মহাসভায় উপস্থাপিত (প্রকৃত পাঠ্যাংশ + অডিও সংস্করণ) Oxford Centre for Hindu Studies অক্সফোর্ড সেন্টার ফর হিন্দু স্টাডিস্ দ্বারা পণ্ডিত এবং ছাত্রদের জন্যে উল্লেখ্য উপাদান হিসাবে বক্তৃতা ও সেমিনার-এর এমপিথ্রী অডিও বিন্যাস ধর্ম ভারতীয় ধর্ম এশীয় জাতিগত ধর্ম মোক্ষ-কেন্দ্রিক ধর্ম বহু-ঈশ্বরবাদ আস্তিক সর্বজনীনতাবাদ
https://en.wikipedia.org/wiki/Hinduism
Hinduism
Hinduism () is an Indian religion or dharma, a religious and universal order by which its followers abide. The word Hindu is an exonym, and while Hinduism has been called the oldest religion in the world, it has also been described as sanātana dharma (Sanskrit: सनातन धर्म, lit. ''the eternal dharma''), a modern usage, based on the belief that its origins lie beyond human history, as revealed in the Hindu texts. Another endonym for Hinduism is Vaidika dharma. Hinduism entails diverse systems of thought, marked by a range of shared concepts that discuss theology, mythology, among other topics, in textual sources. Hindu texts have been classified into Śruti ("heard") and Smṛti ("remembered"). The major Hindu scriptures are the Vedas, the Upanishads, the Purānas, the Mahābhārata (incl Bhagavad Gita), the Rāmāyana, and the Āgamas. Prominent themes in Hindu beliefs include karma (action, intent and consequences) and the four Puruṣārthas, proper goals or aims of human life, namely: dharma (ethics/duties), artha (prosperity/work), kama (desires/passions) and moksha (liberation/freedom from the passions and the cycle of death and rebirth). Hindu religious practices include devotion (bhakti), worship (puja), sacrificial rites (yajña), and meditation (dhyāna) and yoga. The major Hindu denominations are Vaishnavism, Shaivism, Shaktism, and the Smarta tradition. The six Āstika schools of Hindu philosophy, which recognise the authority of the Vedas, are: Sānkhya, Yoga, Nyāya, Vaisheshika, Mimāmsā, and Vedānta. While the traditional Itihasa-Purana and its derived Epic-Puranic chronology present Hinduism as a tradition existing for thousands of years, scholars regard Hinduism as a fusion or synthesis of Brahmanical orthopraxy with various Indian cultures, having diverse roots and no specific founder. This Hindu synthesis emerged after the Vedic period, between c. 500–200 BCE and c. 300 CE, in the period of the second urbanisation and the early classical period of Hinduism when the epics and the first Purānas were composed. It flourished in the medieval period, with the decline of Buddhism in India. Since the 19th century, modern Hinduism, influenced by western culture, has also a great appeal to the west, most notably in the popularisation of yoga and various sects such as Transcendental Meditation and the Hare Krishna movement. Hinduism is the world's third-largest religion, with approximately 1.20 billion followers, or around 15% of the global population, known as Hindus. It is the most widely professed faith in India, Nepal, Mauritius, and in Bali, Indonesia. Significant numbers of Hindu communities are found in other countries of South Asia, in Southeast Asia, in the Caribbean, Middle East, North America, Europe, Oceania, Africa, and other regions.
1570
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%87%E0%A6%B8%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%AE
ইসলাম
ইসলাম (, ) একটি একেশ্বরবাদী এবং ইব্রাহিমীয় ধর্মবিশ্বাস যার মূল শিক্ষা হলো এক আল্লাহ ছাড়া আর কোন স্রষ্টা নেই এবং মুহাম্মাদ (ﷺ) হলেন আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্ম, যার অনুসারী এবং স্বীকৃতিদানকারীর সংখ্যা প্রায় ২০০কোটি যা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৪%। ইসলাম ধর্মের অনুসারী এবং স্বীকৃতিদানকারীরা মুসলিম এবং মুসলমান নামে পরিচিত। মুসলমানরা বিশ্বের ৫০ এর অধিক দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমষ্টি গঠন করেছে। ইসলামের মৌলিক শিক্ষা হলো আল্লাহ দয়ালু, করুনাময়, এক ও অদ্বিতীয় এবং একমাত্র ইবাদতযোগ্য প্রভু। মানবজাতিকে পথ প্রদর্শনের জন্য তিনি যুগে-যুগে অনেক নবী-রাসূল, আসমানী কিতাব এবং নিদর্শন পাঠিয়েছেন। ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো পবিত্র আল-কুরআন, যা স্বয়ং আল্লাহর বাণী; আর সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ (২৯ আগস্ট ৫৭০- ৮ জুন ৬৩২) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলা হয় যা হাদিস নামে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে সমস্ত সুন্নাহই হাদিস, কিন্তু সমস্ত হাদিস সুন্নাহ নয়। ইসলামী ধর্মগ্রন্থানুযায়ী, এটি আল্লাহর নিকট একমাত্র গ্রহণযোগ্য পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম সর্বজনীন ধর্ম। ইসলাম শুধুমাত্র মক্কা-মদিনা বা আরব দেশ ও জাতির জন্য নয় বরং ইসলাম বিশ্বের সকল বর্ণ, গোত্র, জাতি এবং ধনী-গরিব, সাদা-কালো ও আরব-অনারব সকল মানুষের জন্যই প্রেরিত ও একমাত্র মনোনীত ধর্ম। ইসলামী ধর্মমত অনুযায়ী, যুগে যুগে আদম, ইব্রাহিম, মুসা, ইসা সহ সকল রাসূলগণের উপর যেসব আসমানী কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল, মূল আরবি ভাষার কুরআন হলো তারই সর্বশেষ, পূর্ণাঙ্গ, অপরিবর্তিত ও চূড়ান্ত সংস্করণ। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে বিদায় হজ্বের দিন এই জীবন ব্যবস্থাটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে স্বয়ং স্রষ্টার কাছ থেকে। অন্যান্য ইব্রাহিমীয় ধর্মের মতো ইসলামও শেষবিচারের শিক্ষা দেয় যেখানে সৎকর্মশীলরা পুরস্কারস্বরূপ জান্নাত পাবে আর পাপীরা জাহান্নামের শাস্তি পাবে। ধর্মীয় কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম হলো ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ, যা পালন করা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অত্যাবশকীয় কর্তব্য। তাদেরকে ইসলামি আইন বা শরিয়াহ্ মেনে চলতে হয়, যা প্রকৃতপক্ষে সমাজ ও জীবনের সকল ক্ষেত্র ও যাবতীয় কার্যকলাপকে নির্ধারণ করে দেয়। ব্যাংক খাত থেকে দান-ছদকাহ্, নারী থেকে পরিবেশ সবই এর অন্তর্গত। মক্কা, মদিনা ও জেরুজালেম ইসলামে সবচেয়ে সম্মানিত ও পবিত্রতম তিন শহর। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী ইসলাম শুধুমাত্র কোন নতুন ধর্মই নয়, বরং সৃষ্টির শুরু থেকেই ইসলামের উৎপত্তি। আদম ছিলেন এই পৃথিবীর প্রথম মানব এবং মানবজাতির মধ্যে ইসলামের প্রথম নবি। আর সর্বশেষ ও চূড়ান্ত নবি হলেন মুহাম্মাদ, যিনি সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য সর্বেশষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ চূড়ান্ত নবী ও রাসুল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন স্রষ্টার পক্ষ থেকে। ইতিহাসগতভাবে এর উৎপত্তি ধরা হয় ৭ম শতকের শুরুর দিকে মক্কায় নবী মুহাম্মাদের নবুয়াতের পরবর্তী সময় থেকে। ৮ম শতক নাগাদ উমাইয়া খিলাফত পশ্চিমে ইবেরিয়া (স্পেন) থেকে পূর্বে সিন্ধু নদ পর্যন্ত বিরাট অঞ্চল জুড়ে সম্প্রসারিত হয়। ৮ম থেকে ১৩ শতককে ঐতিহ্যগতভাবে ইসলামি স্বর্ণযুগ বলা হয়। ঐতিহাসিকভাবে আব্বাসীয় খিলাফতের আমলে মুসলিম বিশ্ব বৈজ্ঞানিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে উন্নতির শীর্ষে ছিল। ইসলামের প্রসার ঘটেছে মূলত ধর্মপ্রচার এবং রাজ্যজয়ের মাধ্যমে। রাজ্যজয়গুলো ঘটেছিল আলাদা আলাদা সম্রাজ্যের দ্বারা যেমন উসমানীয় সম্রাজ্য, আর ধর্মান্তরিতকরণ ঘটেছিল ইসলামি ধর্মপ্রচার কার্যক্রমের সাথে এবং নতুন নতুন রাজ্যজয়ের প্রভাবে। মুসলিমরা দুইটি প্রধান সম্প্রদায়ের অন্তর্গত, সুন্নি (৮০-৯০%) এবং শিয়া (১০-২০%)। মূলত যারা শিয়া নয় তাদের সবাইকেই সুন্নি (মুসলিম) হিসেবে গণনা করা হয়। সুন্নি ইসলাম মূলত অনেকগুলো ইসলামী মতাদর্শের সমষ্টি। এছাড়াও কিছু মুসলিম নিজেদেরকে শিয়া সুন্নি কোনো দলেই ফেলেন না, তারা ইসলাম ধর্মের মধ্যে বিভাজনে বিশ্বাসী না। তারা কুরআন এবং হাদিসকে মূল ধরে এগুলোর আলোকে (ইজমা ও কিয়াস) ইসলাম পালন করে এবং নিজেকে বিশুদ্ধ মুসলিম হিসেবে গড়ার চেষ্টা করে। তবে কুরআন এবং হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনার ক্ষেত্রে ইজমা এবং কিয়াস গ্রহণযোগ্য নয় বলে তারা বিশ্বাস করে। আর তারা মনে করে সকল মুসলিমের উচিত ঐক্যবদ্ধ হয়ে নিজেদের দ্বীন (মাযহাব) হিসেবে ইসলামকে স্বীকার করা এবং নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবে পরিচয় দেওয়া। সর্ববৃহৎ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইন্দোনেশিয়া, বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার ১৩%-ই এখানে বাস করে। বিশ্বের সমগ্র মুসলিম জনসংখ্যার ৩১%-ই বাস করেন দক্ষিণ এশিয়ায়, মুসলিম জনগোষ্ঠীর বড় অংশটাই এই অঞ্চলে বসবাস করে। মধ্যপ্রাচ্য-উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলে বাস করেন ২০% এবং এটি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ধর্ম। ১৫% বাস করেন সাহারা-নিম্ন আফ্রিকাতে। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ মুসলিম সম্প্রদায় দেখা যায় আমেরিকা, ককেসাস, মধ্য এশিয়া, চীন, ইউরোপ, ইন্দোচীন, ফিলিপাইন, অস্ট্রেলিয়া ও রাশিয়াতে। ইসলাম ধর্মের অনুসারীরা আমেরিকা, চীন এবং ইউরোপেও বসবাস করেন। অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ধর্মান্তর ও উচ্চ জন্মহারের কারণে ইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্মীয় গোষ্ঠী। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে, ২১শতাব্দীর শেষের দিকে ইসলাম খ্রিস্টধর্মকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মে পরিণত হতে পারে। ব্যুৎপত্তি আরবি ভাষায়, ইসলাম (আরবি: إسلام, lit. 'submission [to God]') হলো সক্রিয় কর্মধারক, যা স-ল-ম (S-L-M-[س۔ل۔م]) ত্রিশব্দী মূল থেকে উদ্ভূত, যা বেশিরভাগই জমা, নিরাপত্তা এবং শান্তির ধারণার সাথে সম্পর্কিত পদ গঠন করে। ধর্মীয় প্রসঙ্গে, এটি আল্লাহর ইচ্ছার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণকে বোঝায়। ইসলামের অনুসারী মুসলমান (مُسْلمٌ) হলো একই ক্রিয়াপদ রূপের সক্রিয় কণা এবং এর অর্থ "আত্মসমর্পণকারী (আল্লাহর প্রতি)" বা "যে আত্মসমর্পণ করে (আল্লাহর প্রতি)"। হাদিসে জিব্রাইলে, ইসলামকে ত্রৈধের একটি অংশ হিসাবে উপস্থাপন করা হয় যার মধ্যে রয়েছে ঈমান (বিশ্বাস) এবং ইহসান (সম্পূর্ণতা)। "মুসলিম" শব্দটি আরবি "মুসলিম" (مسلم) শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ "আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী"। "মুসলিম" শব্দের সাথে ফারসি "ان" (আন্) প্রত্যয় যুক্ত করে "মুসলমান" (مسلمان) শব্দটি গঠিত হয়েছে। যা একটি বহুবচন প্রত্যয়। অর্থাৎ, "মুসলমান" শব্দটি মূলত বহুবচন শব্দ। তবে বাংলায় এটি একবচনের মতো ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ, বাংলা ভাষায় "মুসলমান" শব্দটি দ্বারা একজন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়। আর, বহুবচনের জন্য "মুসলমানরা" (مسلمانانএটি ফারসী বহুবচন, مُسْلِمُوْنَ -এটি আরবী বহুবচন ) শব্দটি ব্যবহৃত হয়। ইংরেজি ভাষী বিশ্বে, ইসলামকে ঐতিহাসিকভাবে মুহাম্মাদবাদ বলে অভিহিত করা হত। তবে, এই শব্দটি এখন আর ব্যবহার করা হয় না, কারণ এই নামটি মুহাম্মাদকে ইসলামের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে চিত্রিত করে যা অনেক মুসলিম অস্বস্তিকর বলে মনে করে। এই শব্দটি দাবি করে যে মুসলিমদের ধর্মে মানুষের ভূমিকা ঈশ্বরের চেয়ে বেশি, যা ইসলামের মূল বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। ধর্মীয় বিশ্বাস মুসলিমদের ধর্ম বিশ্বাসের মূল ভিত্তি আল্লাহর একত্ববাদ। তারা আরও বিশ্বাস করেন, তাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন নিখুঁত ও অবিকৃত এবং মানব ও জ্বীন জাতির উদ্দেশ্যে অবতীর্ণ আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা পুনরুত্থান দিবস বা কিয়ামত পর্যন্ত বহাল ও কার্যকর থাকবে। তবে কিছু সম্প্রদায়, যেমনঃ আহ্মদি বা কাদিয়ানী নামক সম্প্রদায় মনে করে মুহাম্মাদ শেষ নবী নন; বরং যুগের চাহিদা মোতাবেক নবুওয়াতের ধারা অব্যহত থাকবে। এবং শিয়াদের একটি বিরাট অংশ ইসমাঈলীয়দের মধ্যে প্রচলিত বিশ্বাস যে, ইমাম ইসমাঈল আখেরী নবী ছিলেন। কিন্তু অধিকাংশ ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে অবশ্যই নবি মুহাম্মাদ এর মাধ্যমে নবুয়তের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। তারা বিশ্বাস করেন যে তিনি খাতামুন নাবিয়্যিন বা সর্বশেষ নবী। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, আদম হতে শুরু করে আল্লাহ্ প্রেরিত সকল নবী-রাসুল ইসলামের বাণীই প্রচার করে গেছেন। কুরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে, ইসলামের দৃষ্টিতে ইহুদি ও খ্রিস্টান উভয় ধর্মাবলম্বীরাই হযরত ইব্রাহিম (আ.)এর শিক্ষার ঐতিহ্য পরম্পরা। উভয় ধর্মাবলম্বীকে কুরআনে "আহলে কিতাব" বলে সম্বোধন করা হয়েছে । কুরআনের সূরা আলে ইমরানে তাদেরকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, এই ধর্ম দুটির গ্রন্থসমূহের বিভিন্ন ঘটনা ও বিষয়ের উল্লেখ কুরআনেও রয়েছে, তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে এই দুই ধর্মের পন্ডিতগণ তাদের নিকট প্রদত্ত আল্লাহ্-এর বাণীর অর্থগত ও নানাবিধ বিকৃতসাধন করেছেন। মুসলিমরা বিশ্বাস করে, ইহুদিরা তাওরাতকে (তোরাহ) ও খ্রিষ্টানরা ইনজিলকে বিকৃতকরে আল্লাহর বাণীকে অস্বীকার করেছে। ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস।ইসলামের মূল ও প্রধান বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাসকেই ঈমান বলা হয়।ঈমান বা বিশ্বাসের মৌলিক বিষয় মোট ছয়টি (মতান্তরে সাতটি)। পরিপূর্ণ মুসলিম হওয়ার জন্য এই সাতটি বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। ঈমানের এই সাতটি বিষয় হলো আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস, ফেরেশতাগণের প্রতি বিশ্বাস, আসমানি কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস, নবি-রাসুলগণের প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস। মতান্তরে সাতটি বিষয়ের বাকি একটি হলো কিয়ামত বা পুনরুথ্থান দিবসের প্রতি বিশ্বাস। এটিকে মূলত আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসের সাথেই অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সৃষ্টিকর্তা মুসলিমরা বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তাকে 'আল্লাহ' বলে সম্বোধন করেন। ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো আল্লাহর একত্ববাদ বা তৌহিদ। আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে প্রথম, যাকে বলা হয় শাহাদাহ। এটি পাঠের মাধ্যমে একজন স্বীকার করেন যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোনো উপাস্য নাই এবং মুহাম্মাদ তার প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। সুরা ইখলাসে আল্লাহর বর্ণনা দেয়া হয়েছে এভাবে, আল্লাহ্ শব্দটি আল এবং ইলাহ যোগে গঠিত। আল অর্থ সুনির্দিষ্ট এবং ইলাহ অর্থ উপাস্য, যার অর্থ সুনির্দিষ্ট উপাস্য। খ্রিষ্টানরা খৃস্টধর্মকে একেশ্বরবাদী বলে দাবী করলেও মুসলিমরা খৃষ্টধর্মের ত্রিত্ববাদ (trinity) বা এক ঈশ্বরের মধ্যে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মার মিলন, এই বিশ্বাসের জন্য তাদের দাবিকে অস্বীকার করে। ইসলামি ধারণায় আল্লাহ সম্পূর্ণ অতুলনীয় ও পৌত্তলিকতার অসমতুল্য, যার কোনো প্রকার আবয়বিক বর্ণনা অসম্ভব। মুসলিমরা তাদের সৃষ্টিকর্তাকে বর্ণনা করেন তার বিভিন্ন গুণবাচক নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে। ইসলামে ঈমানের প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি হলো আল্লাহর উপর ঈমান (বিশ্বাস) আনা। আল্লাহর উপর ঈমান আনার অর্থ হলো আল্লাহর অস্তিত্বের উপর বিশ্বাস করা, আল্লাহকে এক এবং অদ্বিতীয় সৃষ্টিকর্তা হিসেবে মেনে নেয়া, তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং তিনিই একমাত্র উপাস্য,এই ধারণায় মনেপ্রাণে বিশ্বাসী হওয়া এবং তাঁর বাইরে অন্য যেকোনো কিছুর উপাসনা করা বা বিশ্বাস করা মহাপাপ, এই বিশ্বাস অন্তরে লালন করা। ইসলাম ধর্ম মতে, আল্লাহ হলেন সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা। তিনি জন্মগ্রহণ করেননি এবং কাউকে জন্ম দেননি। তিনি চিরস্থায়ী এবং সর্বশক্তিমান। আল্লাহর অস্তিত্ব চিরস্থায়ী এবং তিনি সর্বকালের জন্য। তিনি সবকিছু করতে সক্ষম। ইসলামপূর্ব যুগে আরব সমাজে, দেবতাদের অনেক নাম এবং উপাসনার পদ্ধতি ছিল। এই দেবতাগুলোর মধ্যে একটি ছিল হুবাল, যাকে মক্কার প্রধান দেবতা হিসেবে বিশ্বাস করা হত। হুবালের জন্য ব্যবহৃত একটি নাম ছিল "আল্লাহ", যা আরবিতে "ঈশ্বর" অর্থে একটি সাধারণ বিশেষণ। ইসলামের আগমনের সাথে সাথে, আরবরা একক ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বাস গ্রহণ করেছিল। এই নতুন ঈশ্বরকে "আল্লাহ" নামে ডাকা হয়েছিল, যা এখন আর একটি সাধারণ বিশেষণ হিসেবে ব্যবহৃত হয না, বরং ঈশ্বরের একমাত্র এবং বিশেষ নাম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ইসলামে, আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত অনেকগুলো নাম রয়েছে। এই নামগুলো আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলী এবং বৈশিষ্ট্যগুলোকে প্রতিফলিত করে। আসমাউল হুসনার মধ্যে ৯৯ টি নাম বিশেষভাবে বিবেচিত হয়। এই নামগুলো কুরআনে আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত অভিব্যক্তি থেকে উদ্ভূত। উদাহরণস্বরূপ, "আর-রহমান" (পরম করুণাময়) এবং "আর-রাহিম" (অতিশয় করুণাময়) নামগুলো আল্লাহর করুণা এবং দয়াকে প্রতিফলিত করে। "আল-আলিম" (সর্বজ্ঞ) এবং "আল-হাকিম" (বিজ্ঞ) নামগুলো আল্লাহর জ্ঞান এবং প্রজ্ঞাকে প্রতিফলিত করে। ইসলামে, আল্লাহর নামগুলো স্মরণ করা এবং জপ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুশীলন। এটি বিশ্বাস করা হয় যে আল্লাহর নামগুলোর জপ মানুষের আত্মার উপর প্রশান্তি নিয়ে আসে। ইসলামে তাওহীদ এবং শিরকের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাওহীদ হলো আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষা, যা ইসলামের মূল ভিত্তি। শিরক হলো আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক করা, যা ইসলামের দৃষ্টিতে সবচেয়ে বড় পাপ। তাওহীদ ছাড়া ইসলামের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং শিরক ইসলামের মূল ভিত্তিকে ধ্বংস করে দেয়। তাওহীদ ছাড়া কোনো ইবাদতই আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আর আল্লাহর সাথে শিরক করলে তার জন্য জাহান্নাম অবধারিত হয়ে যাবে। শিরকের কিছু উদাহরণ হলো, অন্য দেব-দেবীর উপাসনা করা, ভাগ্য গণনা করা, কবর পূজা করা, যাদু-টোনা করা, অন্যের ক্ষমতা বা সাহায্যের উপর নির্ভর করা ইত্যাদি। ইসলাম ধর্ম অনুসারে, আল্লাহ একজন অসীম ও সর্বশক্তিমান সত্তা। তিনি মানুষের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা ও একমাত্র উপাস্য। আল্লাহর অস্তিত্ব ও গুণাবলীর উপর বিশ্বাস ইসলামের একটি মৌলিক বিশ্বাস। কালাম হলো ইসলামের ঈমানী দর্শনের শাখা। এটি ঈশ্বরের অস্তিত্ব, গুণাবলী, প্রকৃতি এবং মানুষ ও ঈশ্বরের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। ঈশ্বরকে মানুষের মতো তুলনা করা সম্পর্কে ইহুদি, খ্রিস্টান এবং ইসলামের চিন্তাধারায় ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। একদল দাবি করে যে ঈশ্বরকে মানুষের মতো তুলনা করা ঠিক নয়, কারণ তিনি অসীম এবং অপার। অন্য দল দাবি করে যে ঈশ্বরকে মানুষের মতো তুলনা করা যেতে পারে, তবে সীমিতভাবে। পবিত্র গ্রন্থগুলোতে ঈশ্বরকে উপমা দেওয়া (তুলনা করা) এবং নিষ্পেক্ষ করা, উভয়ই পাওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, কুরআনে ঈশ্বরকে "আকাশের ও পৃথিবীর আলো" বলা হয়েছে, যা একটি উপমা। আবার, কুরআনে বলা হয়েছে যে ঈশ্বরকে কোন কিছুর সাথে তুলনা করা যায় না, যা একটি নিষ্পেক্ষতা। তিনটি ইব্রাহিমী ধর্মের এই বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করলে, এটি দেখা যায় যে পবিত্র গ্রন্থগুলোতে অর্থবাচক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি অর্থহীন বৈশিষ্ট্যগুলোও অনেক বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, ওহীতে তুলনার চেয়ে উপমা বেশি। মুসলিমরা বিশ্বাস করে, মানুষের কল্পনা, বিজ্ঞান ও দর্শন দ্বারা কখনই আল্লাহর বর্ণনা করা সম্ভব নয়। ফেরেশতা ফেরেশতা (আরবি: ملك, মালক)হলো এমন সত্তা যা ইসলামের দুটি প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ, কুরআন এবং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। কুরআনে ফেরেশতাদের সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে এবং হাদিসেও তাদের সম্পর্কে অনেক বাণী রয়েছে। ‘ফেরেশতা’ মূলত একটি ফার্সি শব্দ। আরবির ‘মালাকুন’ (একবচন) ও ‘মালাইকা’ (বহুবচন)-এর প্রতিশব্দ এটি। কুরআন ও হাদিসে ‘মালাইকা’ শব্দটিই ব্যবহৃত হয়েছে। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে বার্তাবাহক। ইসলামি পরিভাষায় ফেরেশতা এমন ‘নুরানি’ (আলোকিত) সৃষ্টির নাম, যারা যেকোনো সময় বিভিন্ন রূপ-আকৃতি ধারণ করতে পারেন। ফেরেশতাদের প্রধান কাজ হলো সর্বদা আল্লাহর ইবাদত করা। তবে তারা অন্যান্য নির্দিষ্ট দায়িত্বও পালন করে, যেমন আল্লাহর কাছ থেকে নবি-রাসুলগণের নিকট ঐশী বাণী পৌঁছানো, মানুষের কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ করা এবং মৃত্যুর সময় মানুষের রূহ (আত্মা) কবজ করা। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, ফেরেশতাদের বিভিন্ন উপাদান থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিছু ফেরেশতাকে আলো (নূর) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, আবার অন্যদেরকে আগুন (নার) থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। ইসলামী শিল্প এবং সাহিত্যে ফেরেশতাদের প্রায়ই মানব আকারে চিত্রিত করা হয়। তবে তাদের সাথে অতিপ্রাকৃত বৈশিষ্ট্যও থাকে, যেমন ডানা, বিশাল আকারের হওয়া বা স্বর্গীয় পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। ফেরেশতারা পানাহার, বৈবাহিক ও জৈবিক চাহিদা থেকে তারা পুরোপুরি মুক্ত থাকেন। তারা পুরুষও নন, নারীও নন। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, সৃষ্টিগতভাবে ফেরেশতাদের আল্লাহর অবাধ্যতার শক্তি দেওয়া হয়নি। সর্বদা তারা আল্লাহর হুকুম পালন করেন। ফেরেশতাদের অস্তিত্ব বিশ্বাস করা ঈমানের অন্যতম স্তম্ভ। তাদের মধ্যে কিছু, যেমন জিবরাইল (জিব্রীল) এবং মিকাইল (মিকা'ইল), ইসরাফিল, আজরাইল কুরআনে বিভিন্ন নামে উল্লিখিত হয়েছে। জিবরাইল হলেন আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ও শ্রেষ্ঠ ফেরেশতা। তিনি আল্লাহর নির্দেশে নবি-রাসূলদের নিকট ওহী নিয়ে আসতেন। ওহী ছাড়াও জিবরাইল অন্যান্য দায়িত্বও পালন করেন। মিকাঈল হলেন আল্লাহর অন্যতম প্রধান ফেরেশতা। তিনি প্রকৃতির ঘটনাবলী পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি বৃষ্টি, ঝড়, তুষারপাত, বাতাস প্রবাহিত করা ইত্যাদি দায়িত্ব পালন করেন। ইসরাফিল হলেন কিয়ামত ও পুনরুত্থান দিবসে শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা। তিনি প্রথমে শিঙ্গায় একবার ফুঁ দেবেন, যার ফলে কিয়ামত সংঘটিত হবে। এরপর তিনি দ্বিতীয়বার ফুঁ দেবেন, যাতে সকল প্রাণী হাশরের ময়দানে পুনর্জীবিত হবে। আজরাইল হলেন প্রাণীদের জীবনাবসান ঘটানোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা। তিনি প্রত্যেক প্রাণীর মৃত্যুর সময় তার কাছে গিয়ে তার প্রাণ কবজ করেন। কিরামান কাতেবীন হলেন মানুষের নেক ও মন্দ আমলগুলো লিখে রাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা। তারা মানুষের ডান ও বাম কাঁধে বসে থাকেন এবং তাদের সব কাজকর্ম লিখে রাখেন। মুনকার ও নাকির হলেন মানুষকে কবরস্থানে জিজ্ঞাসাবাদ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ফেরেশতা। তারা কবরস্থানে গিয়ে মৃত ব্যক্তিকে তার ঈমান ও আমল সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন। হামালাত আল-আরশ হলেন আল্লাহর আরশ বহনকারী ফেরেশতা। তারা আল্লাহর আরশ বহন করার জন্য বিশেষভাবে সৃষ্টি হয়েছেন। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, এর বাইরেও অসংখ্য ফেরেশতা রয়েছেন, যাঁদের সংখ্যা ও কাজ আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণিত জিব্রাইলের হাদিসে, ফেরেশতা জিব্রাইল, নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর বন্ধুদের সাথে একজন সাহাবীর ছদ্মবেশে দেখা করেন এবং নবীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন: ফেরেশতারা "মিরাজ" সম্পর্কিত সাহিত্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। "মিরাজ" হলো মুহাম্মাদের একটি যাত্রা, যেখানে তিনি জান্নাতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই যাত্রাকালীন সময়ে, মুহাম্মাদ বেশ কয়েকজন ফেরেশতার সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে জিবরাঈল এবং মিকাইল। অন্যান্য ফেরেশতারা প্রায়ই ইসলামী শেষবিচার, ধর্মতত্ত্ব এবং দর্শনে বৈশিষ্ট্যযুক্ত হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, ফেরেশতারা শেষবিচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তারা মানুষের কর্মকাণ্ড লিপিবদ্ধ করবে এবং ভালো লোকদের জান্নাতে ও মন্দ লোকদের জাহান্নামে নিয়ে যাবে। ফেরেশতারা ইসলামী ধর্মতত্ত্বেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা আল্লাহর সৃষ্টি এবং তার ইচ্ছার প্রতীক। ফেরেশতারা ইসলামী দর্শনেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তারা মানুষের আধ্যাত্মিক উন্নতির প্রতীক। ধর্মগ্রন্থ ইসলামের প্রাথমিক সপ্ত বিশ্বাসের অন্যতম প্রধান বিশ্বাস হলো আসমানি কিতাবে বিশ্বাস। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ মানুষের হিদায়াত বা পথনির্দেশের জন্য কিতাব নাজিল করেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রধান ফেরেশতা জিবরাইল এর মাধ্যমে বিশেষ বিশেষ নবী ও রাসুলদের কাছে পাঠানো বাণী হলো আসমানি কিতাব। এর মধ্যে ১০৪টি আসমানী কিতাব বিখ্যাত। এগুলোর মধ্যে ৪টি কিতাব অর্থাৎ বড় গ্রন্থ, আর ১০০টি রিসালা বা সহিফা অর্থাৎ পুস্তিকা বা ছোট বই। বড় চারটি কিতাব হলো তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন। এই চার বড় গ্রন্থ নাজিল হয়েছে বিশিষ্ট চারজন নবী ও রাসুলের প্রতি। যথা: তাওরাত হজরত মুসা এর প্রতি ইবরানি বা হিব্রু ভাষায়, যাবুর হজরত দাউদ এর প্রতি ইউনানি বা আরমাইক ভাষায়, ইঞ্জিল হজরত ঈসা এর প্রতি সুরিয়ানি ভাষায় এবং কুরআন মুহাম্মাদ এর প্রতি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়। সহিফাগুলো অবতীর্ণ হয়েছে হজরত আদম এর প্রতি ১০টি, হজরত শিশ এর প্রতি ৫০টি, হজরত ইদরিস এর প্রতি ৩০টি ও হজরত ইব্রাহিম এর প্রতি ১০টি। সহিফা ও কিতাবের মধ্যে কুরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব। এরপর আর কোনো কিতাব বা সহিফা নাজিল করা হয়নি এবং হবে না। কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে ইসলামের আখেরি পয়গাম্বর তথা সর্বশেষ নবী ও রাসুল হজরত মুহাম্মাদ এর প্রতি। এরপর আর কোনো নবী ও রাসুল আসবেন না। কুরআন কুরআন হলো ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ। এটি আল্লাহর দ্বারা প্রেরিত একটি ঐশ্বরিক বাণী যা মুহাম্মাদকে ফেরেশতা জিবরাইলের মাধ্যমে প্রদান করা হয়েছিল। কুরআন আরবি ভাষায় নাযিলকৃত এবং এটি ইসলামের বিশ্বাস, আইন ও নৈতিকতার ভিত্তি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ নিজেই ঘোষণা করেছেন যে তিনিই কুরআন অবতীর্ণ করেছেন এবং তিনিই এর সংরক্ষক। তিনি বলেন- মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে কুরআন আল্লাহর বাণী এবং এটি মানুষের দ্বারা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এই আয়াতটি সেই বিশ্বাসের ভিত্তি প্রদান করে। মুহাম্মাদ হলেন আল্লাহর শেষ বার্তাবাহক, যিনি তাঁর বাণীগুলোকে মানবজাতির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। আল্লাহ ২২ বছর ধরে মুহাম্মাদকে বাণী পাঠিয়েছিলেন। এই বাণীগুলোকে একত্রে কুরআন বলা হয়। ফেরেশতা জিবরাইল আল্লাহর বাণীগুলোকে মুহাম্মাদের কাছে নিয়ে এসেছিলেন। মুহাম্মাদ এই বাণীগুলোকে মনে (মুখস্থ) রাখতেন এবং অন্যান্য লোকদের কাছে পৌঁছে দিতেন। মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর, তাঁর সাহাবারা এই বাণীগুলোকে একত্রিত করে একটি কিতাব তৈরি করেছিলেন। কুরআন হলো আল্লাহর সর্বশেষ বাণী, যা তাঁর ইচ্ছার প্রতিফলন। কুরআনে আল্লাহর আদেশ এবং নিষেধ রয়েছে, যা মুসলমানদের অনুসরণ করতে হবে। কুরআন আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে, যা ইসলামের ধর্মীয় ভাষা হিসেবে বিবেচিত। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, কুরআন আল্লাহ‌র নিকট হতে মানুষের প্রতি পাঠানো হয়েছে এবং কুরআন আল্লাহর সরাসরি বাণী, তাই এর কোনো ভুল বা বিকৃতি নেই। মুহাম্মাদ ৪০ বছর বয়সে, এক রাতে মক্কার কাছে অবস্থিত হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় ছিলেন। এই গুহাটি মক্কার উপরে একটি পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। মুহাম্মাদ প্রায়ই এই গুহায় ধ্যান মগ্ন থাকতেন। জিব্রাইল, ইসলামের একজন ফেরেশতা, মুহাম্মাদের কাছে এসে তাকে নবুয়ত গ্রহণের জন্য আহ্বান জানান। নবুয়ত হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি বিশেষ বার্তা প্রদান করার ক্ষমতা। জিব্রাইল মুহাম্মাদকে "পড়ুন!" বলেছিলেন। জিবরাইলের আহ্বানের পরে, কুরআনের প্রথম আয়াত, সূরা আলাক্ব ‌এর প্রথম পাঁচ আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই আয়াতগুলোতে, আল্লাহ মুহাম্মাদকে বলছেন যে তিনি আল্লাহর রাসূল এবং তাকে মানুষকে আল্লাহর পথে ডাকতে হবে। কুরআনের সমগ্র অংশ মুহাম্মাদের কাছে দীর্ঘ সময় প্রায় ২৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে অবতীর্ণ হয়েছিল। এই কারণে, মুহাম্মাদ ধীরে ধীরে অন্যদের কাছে কুরআনের বাণী পৌছতে পারতেন। বেশিরভাগ ওহি (আয়াত), মুহাম্মাদ যখন ধ্যান মগ্ন থাকতেন, তখন নাযিল হত। এই আয়াত নাযিল প্রক্রিয়া ৬১০ সালে শুরু হয়েছিল এবং ২২ বছর যাবৎ স্থায়ী হয়েছিল। ইসলামপূর্ব আরবরা ছিল পৌত্তলিক। তারা বিশ্বাস করত যে প্রকৃতি দেবতাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তারা এই দেবতাদের আরাধনা করত এবং অনুগ্রহ লাভের জন্য তাদের কাছে প্রার্থনা করত। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতে, তারা গাছ, কূপ এবং পাহাড়কে পবিত্র মনে করত। তারা বিশ্বাস করত যে এই স্থানগুলোতে দেবতারা বাস করে। ইসলামপূর্ব আরবরা নির্দিষ্ট পাহাড় এবং পর্বতগুলোকে তাদের ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় গুরুত্বের কারণে বিশেষভাবে পবিত্র মনে করত। উদাহরণস্বরূপ, তারা সাফা এবং মারওয়া পাহাড়দ্বয়কে হজযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করত। তারা বিশ্বাস করত যে এই পাহাড়গুলোর মধ্যে দিয়ে হাঁটার মাধ্যমে তারা তাদের পূর্বপুরুষদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারত। কুরআন, ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ, কিছু বহুঈশ্বরবাদী উপাসনালয়কে বাতিল করে দিয়েছে। এই উপাসনালয়গুলোতে, আরবরা বিভিন্ন দেবতাদের পূজা করত। কুরআন এই দেবতাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে এবং একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করার আহ্বান জানায়। যাইহোক, কুরআন আরবদের ঐতিহ্যবাহী পবিত্রতাকে পুরোপুরিভাবে অস্বীকার করেনি। বরং, ইসলাম এই রীতিনীতিগুলোকে অনেকাংশে অব্যাহত রেখেছে। উদাহরণস্বরূপ, কুরআন হজযাত্রাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং সাফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে মধ্য দিয়ে হাঁটার আদেশ দিয়েছে। কুরআনে ধর্মীয় বিধিবিধান, সামাজিক বিধিনিষেধ, উপদেশ, উৎসাহ ও ভয়ভীতি এবং পূর্ববর্তী নবীগণের জীবনী গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে। এই বিষয়গুলো কুরআনের মূল বার্তাগুলোর মধ্যে রয়েছে। ইসলামের বিশ্বাস এবং শরিয়াতের মূল উৎস হলো কুরআন। কুরআন হলো ইসলামের প্রাথমিক উৎস, যা ইসলামের বিশ্বাস, অনুশীলন এবং আইনগুলোকে নির্ধারণ করে। কুরআনের শিক্ষাগুলো ইসলামের অনুসারীদের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করে। কুরআন ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে অবতীর্ণ হয়েছিল। এই সময়ের মধ্যে, হযরত মুহাম্মাদ বিভিন্ন ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে কুরআনের আয়াতগুলো পাঠ করেছিলেন। এই আয়াতগুলো একত্রিত হয়ে সূরা নামক বিভাগগুলো গঠন করে। কুরআনের প্রতিটি সূরা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। যেমন, ইবাদত, রাজনীতি, বিবাহ, পারিবারিক জীবন, অসহায়দের সাহায্য, স্বাস্থ্যবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি। কুরআনে মোট ১১৪টি সুরা রয়েছে। এই সূরাগুলোর দৈর্ঘ্য বিভিন্ন রকম। সবচেয়ে ছোট সূরা হলো সূরা কাওসার, যার মাত্র ৩টি আয়াত রয়েছে। সবচেয়ে বড় সূরা হলো সূরা বাকারা, যার ২৮৬টি আয়াত রয়েছে। কুরআনের প্রথম আয়াত হলো সূরা আলাক্বের প্রথম আয়াত। এই আয়াতটি হযরত মুহাম্মাদ এর কাছে ৬১০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছিল। সূরা আলাক্ব এর প্রথম আয়াতটি হলো- কুরআনের শেষ আয়াত হলো সূরা মায়িদাহ এর তৃতীয় আয়াত। এই আয়াতটি হযরত মুহাম্মাদ এর কাছে ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে মদীনায় অবতীর্ণ হয়েছিল। সূরা মায়িদাহ এর তৃতীয় আয়াত হলো- এই আয়াতটি ইসলামের পরিপূর্ণতা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির ঘোষণা। কুরআনের সূরা ও আয়াতগুলো ক্রমানুসারে বা বিষয় অনুসারে সাজানো হয়নি, বরং সাধারণভাবে দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। কুরআনের শুরুতে দীর্ঘ সূরাগুলো রয়েছে, আর শেষের দিকে ছোট সূরাগুলো রয়েছে। কুরআনের সবচেয়ে দীর্ঘ সূরাগুলো প্রথম দিকে রয়েছে, যেমন আল-বাকারা, আল-আ'রাফ এবং আল-ইমরান এর মত সূরাগুলো। আর সবচেয়ে ছোট সূরাগুলো শেষের দিকে রয়েছে, যেমন আল-কাউসার এবং আল-ইখলাস এর মত সূরাগুলো। পয়গম্বর ইসলাম ধর্মে, নবি ও রাসুল হলো সেইসব ব্যক্তিত্ব যাদেরকে আল্লাহ কর্তৃক মানুষের দিক-নির্দেশনা প্রদানের জন্য মনোনীত করা হয়েছে। ইসলামী পরিভাষায় তাদেরকে বলা হয় নবি (বহুবচনঃ أَنْبِيَاء, আনবিয়া, অর্থঃ প্রতিনিধি, সতর্ককারী) ও রাসুল (বহুবচনঃ رُسُل , রুসুল অর্থঃ বার্তাবাহক) বা মুরসাল (مُرْسَل, বহুবচনঃ مُرْسَلُون, মুরসালুন, অর্থঃ বার্তাবাহক)। নবি হলো সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে কোনো ঐশ্বরিক বাণী পেয়েছেন, কিন্তু তিনি সকল মানুষের কাছে তা প্রচার করার দায়িত্ব পাননি। অন্যদিকে, রাসুল হলো সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের জন্য কোনো ঐশী বাণী পেয়েছেন এবং তিনি সকল মানুষের কাছে তা প্রচার করার দায়িত্ব পেয়েছেন। আদম থেকে মুহাম্মাদ পর্যন্ত বহু নবি-রাসুল পৃথিবীতে এসেছেন। তাঁরা সকলেই আল্লাহর তাওহিদের কথা বলেছেন। তাঁর বিধানসমূহ মেনে চলতে আহ্বান জানিয়েছেন। কথায়, কাজে এবং আচার-ব্যবহারে তাঁরা ছিলেন আদর্শ ও চরিত্রবান। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে, যারা তাঁদের আদর্শ গ্রহণ করেছে তারা নাজাত (মুক্তি) পেয়েছে এবং আল্লাহর রহমত লাভ করেছে। আর যারা তাঁদের বিরোধিতা ও অবিশ্বাস করেছে, তাঁদের কথা মানেনি, তারা হয়েছে ধ্বংস। ইসলামি বর্ণনামতে, হযরত মুহাম্মাদ হলেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং সর্বশেষ নবি। তাঁর পরে আর কোনো নবি আসেন নি, আর আসবেনও না। এজন্য তাকে বলা হয় খাতামান্নাবিয়্যীন। খাতামান্নাবিয়্যীন অর্থ সর্বশেষ নবি। ইসলাম ধর্মে, নবি ও রাসুলের সংখ্যা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে, অধিকাংশ মুসলিম বিশ্বাস করেন যে, নবি ও রাসুলের সংখ্যা প্রায় ১২৪,০০০। নবিগণকে আল্লাহ কিছু বিশেষ গুণাবলী দিয়েছিলেন। এই গুণাবলীগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্ঞান, বোঝাপড়া, সত্যবাদিতা, পাপহীনতা ইত্যাদি। পূর্ববর্তী নবিগণ শেষ নবী মুহাম্মাদ এর আগমন ও কিয়ামতের সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছিলেন। ইসলামে কয়েকজন বিশেষ নবিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এই নবিদের মধ্যে রয়েছে আদম, নূহ, ইব্রাহিম, ইউসুফ, মূসা, দাউদ, ঈসা এবং মুহাম্মাদ। এই নবিগণকে আল্লাহ বিশেষ ধর্মগ্রন্থ ও বিধান দিয়েছিলেন। এই ধর্মগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে তাওরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরআন। ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ প্রত্যেক জাতির জন্য একজন বা একাধিক নবী পাঠিয়েছেন। এই নবীদের মাধ্যমে আল্লাহ মানুষকে সৎ ও ন্যায়ের পথে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করা হয়েছে, তবে এর বাইরেও আরও অনেক নবী এসেছেন বলে বিশ্বাস করা হয়। ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস অনুসারে, কুরআনে নাম উল্লেখ করা হোক বা না হোক, এর আগে যে সমস্ত নবী এসেছেন তাদের সকলের প্রতি বিশ্বাস করা আবশ্যক। যদি কোনো ব্যক্তি এই নবীগণের একজনের প্রতিও অবিশ্বাস স্থাপন করে, তাহলে সে প্রকৃত অর্থে মুসলমান নয়। মুহাম্মাদ ইসলাম ধর্ম অনুসারে, আল্লাহ বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। প্রত্যেক নবীই আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে ঈমান ও সত্যের বাণী পৌঁছে দিয়েছেন। মুহাম্মাদ হলেন এই প্রেরিত নবীদের মধ্যে সর্বশেষ নবী। তাঁর পর আর কোনো নবী আসবেন না। মুহাম্মাদ ছিলেন একজন রাসূল। রাসূল হলেন আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে ওহী বা ঈশ্বরের নির্দেশাবলী পেয়ে আসা ব্যক্তি। মুহাম্মাদ এর নিকট কুরআন নাযিল হয়েছিল। কুরআন হলো আল্লাহর পক্ষ থেকে মানুষের কাছে প্রেরিত সর্বশেষ ওহী। মুহাম্মাদ ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। ৬১০ সালে, তিনি হেরা গুহায় প্রথম ওহী লাভ করেন। মক্কার লোকেরা তার ধর্ম প্রচারকে মেনে নেয়নি এবং তাকে অপমান ও নির্যাতন করে। এর ফলে তিনি ৬২২ সালে মদিনায় হিজরত করেন। মদিনায়, তিনি ইসলামের একটি সমৃদ্ধ সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। তিনি মাঝে মাঝে মক্কার পৌত্তলিকদের সাথে যুদ্ধ করেন এবং ৬৩০ সালে মক্কা বিজয় করেন। ৬৩২ সালে, বিদায়ী ভাষণের পর তিনি মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, মুহাম্মাদ হলেন শেষ নবী এবং তাঁর মাধ্যমে আসা ধর্ম, ইসলাম, হলো একমাত্র সত্য ধর্ম। পূর্ববর্তী নবীগণও একই বার্তা নিয়ে এসেছিলেন, তবে তাদের অনুসারীরা তা বিকৃত করেছে ফেলেছে। এই কারণে, মুহাম্মাদকে আল্লাহ দ্বারা একই বার্তা পুনরায় পাঠানো হয়েছিল, তবে কিছু পরিবর্তন সহ যা এটিকে একটি নিখুঁত ধর্ম করে তোলে। কুরআনে মুহাম্মাদকে শেষ সময়ের শেষ নবী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে: হাদিস ও সুন্নাহ ইসলামি আইনের দুটি মূল উৎসের মধ্যে একটি। কুরআন হলো ইসলামি আইনের প্রথম এবং প্রধান উৎস। কুরআন হলো আল্লাহর বাণী এবং এটি ইসলামি আইনের ভিত্তি। হাদিস ও সুন্নাহ হলো কুরআনের ব্যাখ্যা এবং বিস্তার। এসব মুহাম্মাদ এর জীবনযাপনের উদাহরণ প্রদান করে, যা মুসলমানদের জন্য একটি আদর্শ। মুহাম্মাদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে যখন মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন, সেই সময় মক্কা ছিল একটি পিছিয়ে পড়া নগরী। এটি ছিল একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র, কিন্তু এটি শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের দিক থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। মুহাম্মাদ তার শৈশবের প্রথম দিকেই এতিম হয়ে পড়েন। তার বাবা আব্দুল্লাহ তার জন্মের আগেই মারা যান এবং তার মা আমিনা তার ছয় বছর বয়সে মারা যান। তারপর তার চাচা আবু তালিব তাকে লালন-পালন করেন। ২৫ বছর বয়সে, মুহাম্মাদ মক্কার একজন ধনী ও বিধবা নারী খাদিজা বিনতে খুওয়াইলিদ এর সাথে বিবাহ করেন। এই বিবাহটি মুহাম্মাদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। খাদিজার সমর্থন এবং ভালোবাসা তাকে একজন নেতা এবং ধর্মীয় নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। ৪০ বছর বয়সে, মুহাম্মাদ হেরা গুহায় ধ্যানরত ছিলেন। তখন জিবরাঈল তার কাছে আল্লাহর প্রথম ওহী নিয়ে আসেন। এই ওহী ছিল কুরআনের প্রথম আয়াত। প্রথম দিকে, মুহাম্মাদ এই আল্লাহর বাণী গোপনে প্রচার করতে। কিন্তু, তিন বছর পর, মুহাম্মাদ প্রকাশ্যে "একত্ববাদের" বিশ্বাস ঘোষণা করেন। তিনি মানুষকে ইসলাম ধর্মের প্রতি আহ্বান জানান, যা ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে অন্যান্য নবীরাও আগে থেকেই শিক্ষা দিয়েছিলেন। ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, মুহাম্মাদের পড়াশোনা বা লেখালেখির দক্ষতা ছিল না। তিনি মৌখিকভাবে কুরআন শিখেছিলেন এবং তার অনুসারীদের কাছে তা প্রচার করেছিলেন। মুহাম্মাদ মক্কায় ইসলাম প্রচার শুরু করার পর, তিনি কিছু লোকের সমর্থন পেয়েছিলেন, কিন্তু অনেকে তার প্রচার ও মতবাদের বিরোধিতা করেছিল। মক্কার কুরাইশ গোত্রের নেতারা মুসলিমদের উপর নির্যাতন শুরু করেছিল। এই নির্যাতন থেকে বাঁচতে, মুহাম্মাদ প্রথমে কিছু মুসলিমকে ৬১৫ সালে আবিসিনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন, যা অধুনা ইথিওপিয়ার অন্তর্গত। আবিসিনিয়ার খ্রিস্টান রাজা মুসলিমদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ৬২২ সালে, মুহাম্মাদ এবং তার সমর্থকরা মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। এই ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, কারণ এটি ইসলামের বিস্তারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মদিনায়, মুহাম্মাদ মুসলিমদের একটি সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ইসলামের প্রচার শুরু করেছিলেন। হিজরি বর্ষপঞ্জি বা ইসলামি বর্ষপঞ্জি, যা মুহাম্মাদ এর মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের তারিখ থেকে শুরু হয়। হিজরি বর্ষপঞ্জি একটি চান্দ্র বর্ষপঞ্জি, যার অর্থ এটি চাঁদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। হিজরি বর্ষপঞ্জি বিশ্বের অনেক মুসলিম দেশে ব্যবহৃত হয়। মদিনায় মুহাম্মাদ এর আগমনের পর, তিনি বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যা মদিনার সনদ নামে পরিচিত। এই চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে শান্তি ও সম্প্রীতির সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে মুহাম্মাদ ছিলেন প্রধান নেতা এবং ধর্মীয় নেতা। মদিনায় ইসলাম প্রচার ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গড়ে তোলার পর, মুহাম্মাদ মক্কার দিকে মনোনিবেশ করেন। মক্কা ছিল মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান, কারণ সেখানেই ইসলামের প্রথম দিকের ইতিহাস ঘটেছিল। ৬৩০ সালে মুহাম্মাদ একটি বৃহৎ মুসলিম সেনাবাহিনী গঠন করে মক্কা আক্রমণ করেন। মক্কার গোত্রগুলো মুহাম্মাদ এর শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং রক্তপাত ছাড়াই মক্কা বিজয় করা হয়। মুহাম্মাদ এর জীবনের লক্ষ্য ছিল ইসলামকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া। তিনি তার জীবনের শেষের দিকে বিভিন্ন রাজ্যের শাসকদের কাছে ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণপত্র পাঠান। এই আমন্ত্রণপত্রগুলোর মাধ্যমে মুহাম্মাদ ইসলামের বার্তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। পুনরুত্থান এবং বিচার ইসলাম ধর্মে, পুনরুত্থান ও বিচার দিবস হলো একটি বিশ্বাস যে একদিন সকল মানুষকে তাদের কর্মের বিচারের জন্য পুনরুজ্জীবিত করা হবে। এই বিশ্বাসটি কুরআন এবং হাদিসে ব্যাপকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কুরআনে, আল্লাহ বলেন, হাদিসে, নবী মুহাম্মাদ বলেন, ইসরাফিল (আরবি: إسرافيل) হলেন ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে চারজন প্রধান ফেরেশতার একজন, যিনি কিয়ামতের শুরুতে শিঙ্গায় ফুঁক দিবেন। এর অর্থ হলো ইসরাফিলের প্রথম বাঁশিতে কিয়ামত সংঘটিত হবে এবং দ্বিতীয় বাঁশিতে পুনরুত্থান ও পরকালের জীবন শুরু হবে।ইসলামি বিশ্বাস অনুসারে, কিয়ামতের সময় সম্পর্কে অবগত শুধুমাত্র আল্লাহ। এই অর্থে, কিয়ামতের সময় নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। তবে, মুহাম্মাদকে শেষ যুগের নবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইসলামে শেষ যুগের লক্ষণ হিসেবে অনেক কিছু বর্ণনা করা হয়েছে। এই লক্ষণগুলোর অনেকগুলোই বর্তমান বিশ্বে দেখা যাচ্ছে। তাই, অনেক মুসলিম মনে করেন যে, কিয়ামত খুবই নিকটবর্তী। কুরআনের অনেক সূরাতে কিয়ামতের দিনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন, সূরা কিয়ামত, সূরা আল-আহকাফ, সূরা আল-আম্বিয়া ইত্যাদি। এই আয়াতগুলোতে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও বিপর্যয়ের কথা বর্ণনা করা হয়েছে। কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা ও বিপর্যয় মানুষের কল্পনাতীত। সেদিন এমন কিছু ঘটবে যা মানুষের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে। যেমন, সূর্য ঠান্ডা হয়ে যাবে, চন্দ্র আলো হারিয়ে ফেলবে, নক্ষত্রগুলো ঝরে পড়বে, মানুষ কবরের মধ্যে থেকে বেরিয়ে আসবে ইত্যাদি। কুরআনের এই আয়াতর গুলোর মাধ্যমে মানুষকে কিয়ামতের দিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছে। এগুলো থেকে মানুষ বুঝতে পারে যে, কিয়ামতের দিন একটি বাস্তব ঘটনা এবং সেদিন প্রত্যেককে তার কর্মের জন্য হিসাব দিতে হবে।পৃথিবীর শেষ, কিয়ামত, পুনরুত্থান ও হিসাব-নিকাশের দিন, যাকে আখিরাত বলে, তা ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের মধ্যে একটি। অর্থাৎ, একজন মুসলমানের বিশ্বাসে এই চারটি বিষয় অবশ্যই থাকতে হবে। আখিরাতের দিন, আল্লাহ মানুষকে পুনরায় জীবিত করে একত্রিত করবেন। সেদিন কিছু মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে, যেখানে নেয়ামতের অভাব হবে না। আবার কিছু মানুষ জাহান্নামে প্রবেশ করবে, যেখানে ভয়াবহতম শাস্তি রয়েছে। কুরআনে আখিরাতের বিশ্বাসের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। সূরা বাকারার ৬২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর প্রতি ঈমান (বিশ্বাস) আনার সাথে সাথে মানুষের মুক্তি লাভ হবে। অর্থাৎ, একজন মানুষ যদি আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে, তাহলে সে আখিরাতে মুক্তি লাভ করবে। মুসলিমদের দৃষ্টিতে, ইসলাম হলো আল্লাহর দ্বীন বা ধর্ম। ইসলামের আগে যেসব ধর্ম ছিল, সেগুলোর বিধান ইসলাম দ্বারা বাতিল হয়ে গেছে। তাই, পৃথিবীর সকল মানুষকে ইসলামের অনুসারী হতে হবে। ইসলামের আগের ধর্মগুলোর অনুসারীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাসী ছিল এবং ভালো কাজ করত, তারাও মুক্তি পাবে। তবে, ইসলাম আসার পরও যদি কেউ ইসলাম গ্রহণ না করে এবং নিজের মতো করে আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস করে, তাহলে সে মুক্তি পাবে না। ইসলামে মুক্তি লাভের প্রধান উপায় হলো আল্লাহ ও তাঁর শেষ নবী মুহাম্মাদ এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। এই বিশ্বাসের প্রকাশ হলো "আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ তাঁর প্রেরিত রাসূল" এই বাক্যাংশটি, যাকে বলা হয় "শাহাদত"। কুরআনের কিছু আয়াতে বলা হয়েছে যে, ইহুদি ও খ্রিস্টানরা ইসলাম গ্রহণ না করলে তারা মুক্তি পাবে না। এটিকে ব্যাখ্যা করে ইসলামের পণ্ডিতরা বলেন যে, এই আয়াতগুলোতে মূলত ইসলামের প্রতি তাদের অবহেলা ও অনীহার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ, তারা যদি ইসলামের আহ্বানে সাড়া দিয়ে ইসলাম গ্রহণ করে, তাহলে তারা মুক্তি পাবে। এভাবে, ইসলামের দৃষ্টিতে মুক্তি লাভের জন্য দুটি স্তর রয়েছে। প্রথম স্তর হলো আল্লাহ ও তাঁর শেষ নবী মুহাম্মাদ এর প্রতি বিশ্বাস করা। দ্বিতীয় স্তর হলো ইসলামের বিধানাবলী মেনে চলা। ইসলামে, পুনরুত্থান হলো একটি শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া। শারীরিকভাবে, সকল মানুষকে তাদের মৃত্যুর আগের অবস্থায় পুনরুজ্জীবিত করা হবে। আধ্যাত্মিকভাবে, সকল মানুষকে তাদের কর্মের জন্য বিচারের জন্য দায়ী করা হবে। বিচার দিবস হলো একটি মহান দিন যখন আল্লাহ সকল মানুষের কর্মের জন্য তাদের বিচার করবেন। এই দিনটিতে, সকল মানুষকে তাদের কর্মের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। যারা ভালো কাজ করেছে তারা জান্নাতে যাবে এবং যারা খারাপ কাজ করেছে তারা জাহান্নামে যাবে। ইসলামে, পুনরুত্থান ও বিচার দিবস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস। এই বিশ্বাসটি মানুষকে তাদের কর্মের জন্য দায়ী হতে এবং ভালো কাজ করার জন্য উৎসাহিত করে। সৃষ্টিকর্তার পূর্বনির্ধারণ তকদির বা ভাগ্যে বিশ্বাস ইসলামের প্রাথমিক সপ্ত বিশ্বাসের অন্যতম। তকদির শব্দের আভিধানিক অর্থ মুকাদ্দার বা নির্ধারিত। তকদির শব্দটি কখনো কখনো সিদ্ধান্ত অর্থে ব্যবহৃত হয়। প্রতিটি বস্তুতে সৃষ্টিগতভাবে আল্লাহ নির্ধারিত প্রকৃতি প্রদত্ত তার নিজস্ব কিছু গুণ, ক্ষমতা ও সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকে। বস্তুর অন্তর্নিহিত গুণাগুণকে ‘কদর’ বলা হয়। কদর অর্থ ভাগ্য, অর্থাৎ যা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। কদর মানে নির্ধারিত অর্থাৎ যা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এটি মূলত কোনো বস্তুর সম্ভাবনাকে বোঝায়। যাকে ‘পদার্থের ধর্ম’ বলা যায়। ‘কদর’ বা সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হলো ‘আমল’ বা কর্ম এবং কর্মের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকে ‘নিয়ত’ বা ইচ্ছা। মানবসমাজে কর্ম অনুযায়ী ফল লাভ হয়। আল্লাহ নিয়ত বা ইচ্ছা অনুযায়ী ফল বা প্রতিদান দিয়ে থাকেন। তকদীর বা ভাগ্যের উপর বিশ্বাস বা তকদীরে বিশ্বাস হলো ইসলামের একটি মৌলিক বিশ্বাস। এই বিশ্বাস অনুসারে, আল্লাহ সবকিছুর স্রষ্টা এবং তিনিই সবকিছুর ভাগ্য নির্ধারণ করেন। ভালো বা খারাপ হোক, সবকিছুই আল্লাহর ইচ্ছা এবং নিয়ন্ত্রণের অধীনে ঘটে থাকে। সুন্নি ইসলামে, ভাগ্যের বিশ্বাসকে ঈমানের একটি শর্ত হিসাবে দেখা হয়। সুন্নি পণ্ডিতদের মতে, ভাগ্যের বিশ্বাস ছাড়া একজন ব্যক্তি মুমিন (পরিপূর্ণ মুসলিম) হতে পারে না। ভাগ্য বা তকদীর কুরআনে একটি সরাসরি বিষয় হিসাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে, কিছু হাদিসে ভাগ্যের উল্লেখ রয়েছে। জিবরাঈলের হাদীসে, মুহাম্মাদ ঈমানকে সংজ্ঞায়িত করার সময় ভাগ্যের উল্লেখ করেছেন। মুসলিম বিশ্বাসের মধ্যে, তকদীর বা ভাগ্যে বিশ্বাস একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই বিশ্বাস মুসলিমদেরকে তাদের জীবনে ঘটে যাওয়া সবকিছুকে আল্লাহর ইচ্ছা হিসাবে মেনে নিতে উদ্বুদ্ধ করে। তকদির বা ভাগ্যকে মুসলিম দার্শনিকেরা দুভাবে ব্যাখ্যা করেছেন: মুবরাম ও মুআল্লাক। মুবরাম অর্থ স্থিরকৃত, মুআল্লাক অর্থ পরিবর্তনীয়। মুসলিমরা বিশ্বাস করেন, আল্লাহ ভাগ্য নির্ধারণ করেছেন, আর তিনি তা পরিবর্তন করারও ক্ষমতা রাখেন। তারা আরও বিশ্বাস করেন, তকদির বা ভাগ্য নেক আমল (ভালো কাজ) দ্বারা, পিতা-মাতার দোয়া ও সদকা ইত্যাদির মাধ্যমে পরিবর্তন হয়। ইসলামি বর্ণনামতে তকদির বা ভাগ্য মানুষের অজানা, অজ্ঞেয় এবং অজেয়; অর্থাৎ কোনো মানুষের পক্ষে জানা সম্ভব নয় যে তা স্থির নাকি পরিবর্তনীয়। ইবাদত ইসলামে পাঁচটি ইবাদতকে ফরজ (অত্যাবশকীয় পালনীয়) মনে করা হয় - শাহাদাহ (বিশ্বাসের ঘোষণা), পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, যাকাত (দান-সদকা), রমজান মাসে রোজা রাখা এবং জ্বিলহজ্জ মাসে হজ্ব যাত্রা - যা সমষ্টিগতভাবে "ইসলামের রুকন" (আরকান আল-ইসলাম) নামে পরিচিত। এছাড়াও, মুসলিমরা অন্যান্য সুন্নত ও ঐচ্ছিক নফল ইবাদতও পালন করে যা পালন করতে উৎসাহিত করা হয় কিন্তু ফরজ ইবাদতের মত অত্যাবশকীয় হিসাবে বিবেচিত হয় না। সুন্নি মতবাদ ইসলাম ধর্মে এটা বিশ্বাস করা হয় যে ঈশ্বরের উপাসনা করার জন্য বিশ্বাসীদের কিছু ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এই বাধ্যবাধকতা বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে ভিন্ন। প্রাক-ইসলামী আরব বা অন্যান্য সমাজে কিছু উপাসনা যেমন প্রার্থনা, রোজা, তীর্থযাত্রা এবং বলিদানও (কুরবানি) বিদ্যমান ছিল। ইসলাম ধর্মে এসব উপাসনার অধিকাংশ সংরক্ষণ, কিছু পুনর্বিন্যাস এবং কিছু বাতিল করা হয়েছে। ইসলামের সুন্নি মতবাদ অনুসারে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ রয়েছে এবং সেগুলো পালন করা বিশ্বাসীদের জন্য বাধ্যতামূলক। যারা এসব বাধ্যবাধকতা পরিত্যাগ করে তারা ইসলাম ধর্ম অনুসারে মহাপাপ করে এবং এর জন্য কিছু ক্ষেত্রে শাস্তিও পায়। উদাহরণস্বরূপ, সুন্নি ইসলামের চারটি ফিকহ মাযহাব অনুসারে, যে সমস্ত মুসলিম নামাজ ত্যাগ করে তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত। সুন্নি বিশ্বাস অনুসারে এই বাধ্যবাধকতাগুলো বয়ঃসন্ধি বা বয়সের একটি নির্দিষ্ট পর্যায় থেকে শুরু হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বর্ণিত জিব্রাইলের হাদিসে, ফেরেশতা জিব্রাইল, নবী মুহাম্মাদ এবং তাঁর বন্ধুদের সাথে একজন সাহাবীর ছদ্মবেশে দেখা করেন এবং নবীকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন: সালাত, রোজা, হজ্ব ও যাকাতের মতো উপাসনার সময় এবং পরিমাণ ইসলামী সম্প্রদায়ের মধ্যে পরিবর্তিত হয়। একজন ব্যক্তি তার করা প্রতিটি ইবাদতের জন্য সওয়াব লাভ করে এবং সে ইবাদত পালনের মাধ্যমে পাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে। এই মূল্যায়নের বাস্তবিক প্রভাবও থাকতে পারে। ইসলামে নামাজ, রোজা বা যাকাতের মতো উপাসনা পরিত্যাগের ক্ষেত্রে শরিয়াভিত্তিক শাস্তি রয়েছে। এছাড়া, যদি কেউ কোনো ব্যক্তিকে বিনাকারণে ও অবৈধভাবে হত্যা করে তাহলে এই হত্যাকারীদের জন্য ভিন্ন ধরনের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পদ্ধতির বিধানও করা হয়েছে। যেমন, যদি এই লোকদের ধর্মত্যাগী (কাফির) বলে গণ্য করা হয়, তাহলে তাদের জানাজা করানো হয় না, তাদের মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয় না এবং তাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারেই থেকে যায়। ফিকাহ পন্ডিত এবং ইসলামী পন্ডিতরা বলেছেন যে মুসলিমরা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মেনে নেওয়া সত্ত্বেও যদি আর্থিক অসুবিধার কারণে যাকাত বা হজ্জের দায়িত্ব পালন করতে না পারে, তাহলে তারা গুনাহগার (পাপী) হিসেবে গণ্য হবে না। হানাফীদের মতে, ইসলাম পালনে অবহেলা বা প্রত্যাখ্যানের সাথে জড়িত কর্মের জন্য শাস্তি হওয়া উচিত, যার মধ্যে রয়েছে কোনো ব্যক্তিকে রক্তপাত না হওয়া পর্যন্ত প্রহার করা বা মৃত্যু পর্যন্ত তাকে বন্দী রাখা। উপরন্তু, যখন তারা মারা যায়, তাদের দেহাবশেষকে মুসলিম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুসারে শেষকৃত্য করা হয়। শাফেঈ ও মালেকী মাযহাবের মতে, নামায পরিত্যাগ করা এমন একটি অপরাধ যার শাস্তির পরিমাণ ও রূপ কুরআন এবং সুন্নাহ দ্বারা নির্ধারিত এবং যে ব্যক্তি তা পরিত্যাগ করে তাকে হুদুদ প্রয়োগ করে হত্যা করা উচিৎ। এবং এক্ষেত্রে তাদের দেহাবশেষকে মুসলিম অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় দাফন করা হয় এবং যদি তারা কোনো উত্তরাধিসূত্রে পাওয়া সম্পদ-সম্পত্তি রেখে যায় তবে সেগুলো তাদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। হাম্বলী সম্প্রদায়ের মধ্যে, যারা নামায ত্যাগ করে, তাদের ধর্মত্যাগী (কাফির) বলে গণ্য করা হয় এবং তাদের মতে, এদের তরবারি দিয়ে হত্যা করা উচিৎ। এক্ষেত্রে, এদের জানাজা করানো হয় না এবং লাশ মুসলিম কবরস্থানে দাফন করা হয় না। বিশ্বাসের ঘোষণা শাহাদাহ হলো ইসলামে বিশ্বাস ঘোষণার একটি শপথ। এর পূর্নাঙ্গ রূপ হলো "আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান রাসূলুল্লাহ" (أشهد أن لا إله إلا الله وأشهد أن محمداً رسول الله), যার অর্থ "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।" শাহাদাহই ইসলাম ধর্মের বাকি সব মৌলিক বিষয়ের ভিত্তি ও পূর্বশর্ত। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে ইচ্ছুক এমন অমুসলিমদেরকে সাক্ষীদের সামনে শাহাদাহ পাঠ করানো ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে বিবেচিত। উপাসনা ইসলামে নামাজ, যা আস-সালাহ বা আস-সালাত (আরবি: الصلاة) নামে পরিচিত, তাকে আল্লাহর সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ফিকহের ভাষায় ফরজকে বলা হয় কুরআনের নির্দেশ যা স্পষ্ট এবং ব্যাখ্যার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায় বাধ্যতামূলক (ফরজ)। এই বিশ্বাসটি সুন্নি ইসলামি সমাজের দ্বারা গৃহীত একটি অনুশীলন, যা কুরআনের আয়াত এবং হাদিসের ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তদনুসারে, সুন্নিরা, যারা ইসলামী বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ, তারা দিনে ৫ বার প্রার্থনা করে: সকাল, দুপুর, বিকাল, সন্ধ্যা এবং রাতের নামাজ। নামাজে রাকাত নামের একক পুনরাবৃত্তি থাকে, যার মধ্যে রুকু করা এবং আল্লাহর সামনে মাথা নত করা (সিজদাহ করা) অন্তর্ভুক্ত থাকে। নামাজের সূরা ও অন্যান্য দোয়া আরবি ভাষায় পাঠ করা হয় এবং কাবার দিকে মুখ করে আদায় করা হয়। এই ইবাদত আদায় করার জন্য পবিত্রতা অর্জনের প্রয়োজন হয়, যা অযু বা গোসলের মাধ্যমে অর্জন করার বিধান আছে। মসজিদ মুসলিমদের উপাসনালয়। মসজিদ একটি আরবি শব্দ। যদিও মসজিদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো একটি নামাজের স্থান হিসাবে ব্যবহার করা, তবে এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক কেন্দ্রও। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরবের মদিনায় মসজিদ আন-নববী ("নবীদের মসজিদ") একসময় মুসলিম গরিবদের আশ্রয়স্থল হিসাবেও কাজ করত। নামাজের সময় আযান দেওয়ার জন্য মসজিদে সাধারণত দুটি মিনার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সুন্নি সম্প্রদায়ের মতে, মিরাজের সময় আল্লাহ নিজেই মুহাম্মাদ এবং তার উম্মতকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন। অতএব, এই গোষ্ঠীর মুসলিমরা প্রার্থনাকে (নামাজ) অত্যন্ত গুরুত্ব দেয় কারণ তারা বিশ্বাস করে যে দৈনিক পাঁচবার নামাজ আদায়ের বিধান আল্লাহর নিকট হতেই সরাসরি নাজিল হয়েছিল। শিয়া এবং কুরআনবাদীরা (যে দলটি ধর্মীয় তথ্যসূত্র হিসাবে হাদিসকে প্রত্যাখ্যান করে) দিনে তিনবার নামাজ আদায় করে। এখানে তিনটি সময়ের নামাজের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন তিনটি সময়ের নামাজ তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা নেই। এই মতবাদে, নামাজের সময়ের দুটি আলাদা রীতিনীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রথম রীতিনীতি অনুসারে, নামাজের সময়গুলো হলো দুপুর-বিকাল, সন্ধ্যা-রাত এবং সকাল। দ্বিতীয় রীতিনীতি অনুসারে, নামাজের সময়গুলো হলো সন্ধ্যা, রাত এবং সকাল। প্রফেসর ডক্টর সুলাইমান আতেশের মতে, কুরআনে উল্লিখিত নামাজ হলো সকাল, সন্ধ্যা এবং রাতের নামাজ (তাহাজ্জুদ)। আলেভি ধর্মে, নামাজকে একজন ব্যক্তির ব্যক্তিগত বিশ্বাস এবং অনুশীলনের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিশ্বাস অনুসারে, নামাজের কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম বা প্রবিধান নেই যা অনুসরণ করতে হবে। প্রথমত, মসজিদে আযান দেওয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের নামাজের আহ্বান জানানো হয়। মুসলিমরা ইচ্ছা করলে নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে জমায়েত হয় অথবা তারা ইচ্ছা করলে একা বা দলবদ্ধভাবে যেকোনো পরিচ্ছন্ন স্থানে তা আদায় করতে পারে। নামাজের আগে অযু করার মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা হয়। অযু না করে নামায আদায় করা যায় না। অজুর মাধ্যমে হাত, মুখ, নাক, মুখমণ্ডল, কনুই পর্যন্ত বাহু, মাথার একটি নির্দিষ্ট অংশ (বা চুল), পা ও গোড়ালি ধুয়ে পরিষ্কার করা হয়। এই আচারের রূপ এবং বাস্তবায়ন সম্প্রদায়ের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ও পরিবর্তিত হতে পারে। নামাজ পড়ার সময়, মুসলমানদের অবশ্যই একটি নির্দিষ্ট দিকে মুখ করে দাঁড়াতে হয়, যাকে কিবলা বলা হয়। কিবলা হলো মক্কার কাবা শরিফের দিকে। মসজিদগুলোতে, কিবলার দিক নির্দেশ করতে মিহরাব নামে একটি সুসজ্জিত কাঠামো থাকে। মিহরাব হলো একটি অর্ধবৃত্তাকার গম্বুজ যা কাবা শরিফের দিকে নির্দেশ করে নির্মিত হয়। মসজিদের বাইরে, মুসলিমরা সাধারণত একটি সীজাদায় নামাজ পড়েন, যা একটি ছোট কাপড়ের টুকরো এবং এটি নামাজের সময় মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া হয়। দান যাকাত (আরবি: زكاة, zakāh) ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। এটি একটি অর্থনৈতিক ইবাদত যার মাধ্যমে ধনী ব্যক্তিরা তাদের সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ (প্রতি বছর মোট সঞ্চিত সম্পদের ২.৫%) গরীব ও অভাবীদের সাহায্যের জন্য দান করেন। যাকাতের অর্থ হলো ‘পরিশুদ্ধ করা’। ধনীদের সম্পদকে আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি আমানত মনে করা হয় এবং যাকাত প্রদানের মাধ্যমে সেই সম্পদকে পরিশুদ্ধ করা হয়। যাকাত কেউ ইচ্ছা করে দান করেন না, বরং এটি প্রতিটি স্বাধীন, পূর্ণবয়স্ক সামর্থ্যবান মুসলিম নর-নারীর জন্য বাধ্যতামূলক (ফরজ)। যাকাত দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত আছে। যেমন, যাকাত দেওয়ার জন্য একজন ব্যক্তির নিকট নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকতে হবে। নিসাবের পরিমাণ হলো সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ (৮৫ গ্রাম) বা সাড়ে বায়ান্নো তোলা (৬১২.৩৫ গ্রাম) রূপার মূল্যের সমপরিমাণ সম্পদ। এছাড়াও, যাকাতযোগ্য সম্পদ হিজরি সনের হিসাবে এক বছরের বেশি সময় অতিক্রম করতে হবে।এছাড়াও, সদকা, যাকাতের বিপরীতে, একটি অত্যন্ত উৎসাহিত ঐচ্ছিক দান। যাকাতের অর্থ গরীব-দুঃস্থদের সাহায্য, মুসাফির, দাসমুক্তি, ঋণগ্রস্তদের ঋণমুক্তিতে সহায়তা, ইসলামের প্রচার ও পৃষ্ঠপোষকতা ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়। মুসলিমদের মধ্যে বিতর্ক আছে যে, 'যাকাত' একটি কর নাকি একটি ইবাদত। যারা 'যাকাত'কে একটি কর হিসেবে বিবেচনা করেন, তাদের মতে, যেসকল মুসলিম শরিয়াহ-শাসিত দেশে বসবাস করেন না, তারা তাদের দেশের আইন অনুসারে কর প্রদান করেন, তাই ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের অতিরিক্তভাবে 'যাকাত' প্রদানের প্রয়োজন নেই। তবে, যদি 'যাকাত'কে একটি ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে তাদের অবশ্যই তা প্রদান করতে হবে। উপবাস ইসলামে রোজা (আরবি: صوم, ṣawm) হলো খাদ্য, পানীয় এবং ধূমপানের মতো অন্যান্য সকল ধরনের ভোগ্যপণ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা, যা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পালন করা হয়। রমজান মাসে মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। রোজা হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ জিনিস থেকে নিজেকে বিরত রাখার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা এবং দরিদ্রদের কথা চিন্তা করা। এছাড়াও আরও কিছু দিন আছে, যেমন আরাফাহর দিন, যখন রোজা রাখা مستحب (সুন্নত)। রমজান হলো ইসলামের পবিত্রতম মাস, যেখানে মুসলিমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও অনুগ্রহের জন্য রোজা রাখে। সুস্থ এবং প্রাপ্তবয়স্ক সকল মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা ফরজ। তবে, কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে, যেমন অসুস্থতা, ভ্রমণ বা স্তন্যদান, মুসলিমদের রোজা রাখার প্রয়োজন হয় না। রোজা সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পালন করা হয়। সুবহে সাদিক হলো ভোরের আলোর প্রথম সূক্ষ্ম রেখা এবং সূর্যাস্ত হলো সূর্যের সম্পূর্ণ অস্তমিত হওয়া। সেহরি হলো সুবহে সাদিকের পূর্বের খাবার যেটা গ্রহণের মাধ্যমে রোজা শুরু করা হয় এবং ইফতার হলো রোজা ভঙ্গের জন্য গ্রহণ করা সন্ধ্যার খাবার। সেহরি করা বাধ্যতামূলক (ফরজ) নয়, তবে এটি মুহাম্মাদ এর একটি সুন্নাত। তবে, ইফতার করা বাধ্যতামূলক। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে রমজান মাস হলো আল্লাহর কাছ থেকে প্রাপ্ত এক বিশেষ রহমত ও অনুগ্রহের মাস। এই মাসে, মুসলিমরা আল্লাহর কাছে আরও বেশি নিকটবর্তী হওয়ার এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা করে। রোজা রাখা হলো এই প্রচেষ্টারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে রোজা শুধুমাত্র শারীরিক আত্মার জন্যই নয়, আধ্যাত্মিক আত্মার জন্যও উপকারী। রোজা রাখার মাধ্যমে, মুসলমানরা তাদের ইচ্ছা শক্তিকে পরীক্ষা করে এবং তাদের আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখে। এটি তাদের আরও বেশি ধৈর্যশীল এবং সহনশীল হতে সাহায্য করে। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে, রমজান মাসে রোজাদার ব্যক্তি সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার পরিহার করার ফলে গরিব-দুঃখীদের অপরিমেয় দুঃখ-কষ্ট উপলব্ধি করতে শেখেন। এভাবে ধনী লোকেরা অতি সহজেই সমাজের অসহায় গরিব-দুঃখী, এতিম-মিসকিন ও নিরন্ন মানুষের প্রতি অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে তাদের জন্য সেহরি ও ইফতারের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের দান-খয়রাত, যাকাত-সদকা প্রদানসহ বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন। ইউনেস্কো ২০২৩ সালে মুসলিমদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় রীতি ইফতারকে অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আওতাভুক্ত করে। ইউনেস্কোর ভাষায়, ইফতার (ইফতারি কিংবা ইফতর হিসেবেও পরিচিত) রমজান মাসে সব ধরনের ধর্মীয় বিধান মানার পর সূর্যাস্তের সময় মুসলিমদের পালনীয় রীতি। সংস্থাটি মনে করে, এই ধর্মীয় রীতি পরিবার ও সমাজিক বন্ধন দৃঢ় করে এবং দান, সৌহার্দ্যের মতো বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসে। মুসলিমরা রমজান মাসকে অনেক গুরুত্ব দেয় কারণ তারা বিশ্বাস করে যে এই মাসে কুরআন নাযিল (অবতীর্ণ) হয়েছিল। কুরআন হলো ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ এবং মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে এটি আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই রমজান মাসে কুরআন নাযিল হওয়ার কারণে এই মাসটি মুসলিমদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানও পালন করা হয়। এই অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে তারাবির নামাজ পড়া, যা হলো একটি বিশেষ নামাজ যা রমজান মাসে পড়া হয় এবং কুরআন সম্পূর্ণ পড়া (খতম দেওয়া)। রমজান মাস শেষ হয় একটি বিশেষ ঈদের (উৎসব) মধ্য দিয়ে, যাকে ঈদুল ফিতর বলা হয়। এই ঈদ হলো এক মাস ধরে পালিত রোজা রাখার ইবাদতের সমাপ্তি। ঈদের দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ, এমনকি কেউ যদি ভুলেও রোজা রাখে, তাহলে তাকে কাফফারা দিতে হবে। ঈদ হলো একটি পুরস্কারের মতো, যা আল্লাহ তার বান্দাদেরকে রোজা রাখার জন্য দিয়ে থাকেন। তীর্থযাত্রা ইসলামী তীর্থযাত্র হজ্জ হলো মুসলমানদের জন্য পবিত্রতম শহর সৌদি আরবের মক্কায় অনুষ্ঠিত একটি বার্ষিক ইসলামি তীর্থযাত্রা। হজ্জ মুসলমানদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক ধর্মীয় ইবাদত। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম এবং তীর্থযাত্রীর অনুপস্থিতিতে তার পরিবার নিজেদের ভরণপোষণ করতে সক্ষম হলে সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জীবনে অন্তত একবার হজ্জ পালন করা ফরজ। ইসলামি পরিভাষায়, হজ্জ হলো সৌদি আরবের ইসলামের পবিত্র শহর মক্কায় অবস্থিত "আল্লাহর ঘর" কাবার উদ্দেশ্যে করা একটি তীর্থযাত্রা। এটি শাহাদাহ (আল্লাহর কাছে শপথ), সালাত (প্রার্থনা), যাকাত (দান) এবং সাওম (রমজানের রোজা) এর পাশাপাশি ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি স্তম্ভ। হজ্জ হলো মুসলিম জনগণের সংহতি এবং সৃষ্টিকর্তার (আল্লাহর) কাছে তাদের আত্মসমর্পণের একটি বাহ্যিক প্রকাশ। হজ্জ শব্দের অর্থ হলো "যাত্রায় যোগদান করা", যা যাত্রার বাহ্যিক কাজ এবং উদ্দেশ্যের অভ্যন্তরীণ কাজ উভয়কেই বোঝায়। তীর্থযাত্রাটির নিয়মগুলো পাঁচ থেকে ছয় দিনের মধ্যে সম্পন্ন করা হয়, যা ইসলামি বর্ষপঞ্জির শেষ মাস জিলহজ্জের ৮তারিখ থেকে ১২ বা ১৩তারিখ পর্যন্ত বিস্তৃত। যেহেতু ইসলামি বর্ষপঞ্জি একটি চন্দ্র পঞ্জিকা এবং ইসলামি বছর গ্রেগরীয় বছরের তুলনায় প্রায় এগারো দিন ছোট, তাই হজ্জের গ্রেগরীয় তারিখ প্রতি বছর পরিবর্তিত হয়। হজ্জ ৭ম শতাব্দীর ইসলামের নবি মুহাম্মাদের জীবনের সাথে জড়িত, তবে মক্কায় তীর্থযাত্রার এই অনুষ্ঠানটি ইব্রাহিমের সময়কাল পর্যন্ত হাজার হাজার বছর পুরনো বলে মুসলিমরা মনে করে থাকেন। হজের সময়, হজযাত্রী বা হাজিগণ লক্ষাধিক মানুষের পদযাত্রায় যোগ দেন, যারা একই সাথে হজের সপ্তাহের জন্য মক্কায় একত্রিত হন এবং একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান সম্পাদন করেন: প্রত্যেক ব্যক্তি কাবার(একটি ঘনক আকৃতির ভবন এবং মুসলিমদের জন্য প্রার্থনার জন্য ক্বিবলা) চারপাশে সাতবার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে হাঁটেন, সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মাঝখানে সাতবার দ্রুত পায়ে হেঁটে যান, তারপর জমজম কূপ থেকে পানি পান করেন, আরাফাতের পাহাড়ের ময়দানে গিয়ে অবস্থান করেন, মুজদালিফার ময়দানে একটি রাত কাটান এবং তিনটি স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ করার মাধ্যমে শয়তানকে প্রতীকী পাথর নিক্ষেপ করেন। একটি পশু কুরবানি করার পরে (যা একটি ভাউচার ব্যবহার করে সম্পন্ন করা যেতে পারে), হজযাত্রীদের তাদের মাথা ন্যাড়া করতে হয় বা চুল ছাঁটাই করতে হয় (পুরুষ হলে) বা চুলের প্রান্ত ছাঁটাই করতে হয় (মহিলা হলে)। এর পরে ঈদুল আযহার চারদিনব্যাপী বৈশ্বিক উৎসবের উদযাপন শুরু হয়। মুসলিমরা বছরের অন্য সময়ে মক্কায় ওমরাহ () বা "সংক্ষিপ্ত হজযাত্রা" করতে পারেন। তবে, ওমরাহ পালন করা হজের বিকল্প নয় এবং মুসলিমরা ওমরাহ করার পরেও তাদের জীবদ্দশায় অন্য কোনো সময়ে হজ পালন করতে বাধ্য যদি তাদের তা করার সামর্থ্য থাকে। অতিরিক্ত ধর্মীয় অনুশীলন নফল অর্থ অতিরিক্ত। অর্থাৎ তা ফরজ এবং ওয়াজিবের অতিরিক্ত। একে ফরজ ও ওয়াজিবের পরিপূরক হিসাবেও গণ্য করা হয়। নফল ইবাদতের মধ্যে রয়েছে, সাধ্যমতো নফল নামাজ পড়া, জিকির করা, তাসবিহ পড়া, দুরুদ শরিফ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, কবর জিয়ারত করা, মাসনুন দোয়াগুলো প্রয়োজনের সময় পড়া, ভালো কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ পড়া, দান সদকা করা, আল্লাহর সাহায্য ও অনুগ্রহ প্রার্থনা করা, যে কোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা, সর্বদা ওজু করা অবস্থায় থাকা ইত্যাদি। এমনকি একজন মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাতেও নফল ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়। অনেক হাদিসে নফল ইবাদত পালনের জন্য অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। একবার রাবিয়া ইবনে কাব আসলামি, নবী মুহাম্মাদকে আরজ করলেন, মুসলিমরা কুরআন তিলাওয়াত (পাঠ) করা এবং মুখস্থ করাকে একটি পুণ্যের (সওয়াবের) কাজ হিসেবে মনে করে। কুরআন ইসলামের পবিত্র গ্রন্থ এবং এটিকে সঠিকভাবে পাঠ করা ও মুখস্থ করাকে মুসলিমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য মনে করে। কুরআনকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করার জন্য তাজবিদ অনুসরণ করা হয়। তাজবিদ হলো কুরআনকে সঠিকভাবে উচ্চারণ করার একটি পদ্ধতি। তাজবিদের নিয়মগুলো কুরআনের শব্দগুলোর উচ্চারণ, স্বর, এবং দীর্ঘতা নির্ধারণ করে। রমজান মাসে অনেক মুসলিম পুরো কুরআন পাঠ করার চেষ্টা করে। রমজান একটি পবিত্র মাস যখন মুসলিমরা রোজা রাখে, বেশি বেশি নামাজ পড়ে এবং অন্যান্য ধর্মীয় কাজ করে। যে ব্যক্তি পুরো কুরআন মুখস্থ করেন তাকে হাফেজ বলা হয় এবং হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, এই ব্যক্তিরা বিচারের দিন অন্যদের জন্য সুপারিশ করতে পারবেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা (আরবিতে যাকে আল-দু'আ বলা হয়) করার জন্য একজন মুসলিমের নিজস্ব শিষ্টাচার রয়েছে যেমন ভিক্ষা করার মতো দু হাত উঁচু করে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করা। আল্লাহকে স্মরণ (ذكر, যিকর') বলতে আল্লাহকে উল্লেখ করে প্রশংসা করা বাক্যাংশকে বোঝায়। সাধারণত, এটিতে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতক প্রকাশ করার সময় করা হয়। আল্লাহর প্রশংসা করা (الحمد لله, আল-হামদু লিল্লাহ), নামাজের সময় বা কোন কিছুর প্রতি বিস্ময় বোধ করার সময় আল্লাহর মাহাত্ম্য ঘোষণা করা (سبحان الله, সুবহানাল্লাহ) এবং যেকোনো হালাল কাজ শুরুর আগে 'আল্লাহর নামে' (بِسْـــــــــمِ اللَّهِ الرَّحْمَـٰنِ الرَّحِـيْمِ, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম) শুরু করা এর অন্তর্ভুক্ত। শরিয়ত শারিয়াহ বা শরিয়ত (আরবি: شريعة) হলো "ইসলামের আইন"। এটি ইসলাম ধর্মের প্রার্থনা, লেনদেন এবং শাস্তি সহ ধর্মীয় আইনের সমস্ত ধারণা এবং নিয়মগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে। শরিয়ত ইসলামের ধর্মীয় আইন। এটি আল্লাহর নির্দেশাবলীর উপর ভিত্তি করে তৈরি। সাধারণ ধারণায়, শরিয়তের মূল উৎস হলো কুরআন। কুরআনে আল্লাহর নির্দেশাবলী ও নিষেধাজ্ঞাগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তাই, কুরআনে যা বর্ণিত হয়েছে তাই শরিয়তের আইন। শরিয়তের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদিস। হাদিস হলো নবী মুহাম্মাদ এর বাণী, কর্ম ও মৌন সম্মতি। হাদিসগুলো কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করে। তাই, হাদিসগুলোও শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিয়াস হলো এক ধরনের যুক্তি প্রয়োগের পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে, দুটি বিষয়ের মধ্যে একই কারণ (ইল্লত) থাকলে, সেই দুই বিষয়ের জন্য একই বিধান প্রযোজ্য হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উদাহরণস্বরূপ, কুরআনে বলা হয়েছে যে, শূকর খাওয়া হারাম। কারণ হলো, শূকর একটি অপবিত্র প্রাণী। এখন, যদি কোনো নতুন বিষয়ের সাথে শূকরের একই কারণ (অপবিত্রতা) থাকে, তাহলে সেই নতুন বিষয়টিও হারাম বলে বিবেচিত হবে। শাফিঈ এবং ইবনে কুদামাহর মতো কিছু ফকিহ মনে করেন যে, হারাম এবং হালাল খাবার নির্ধারণের জন্য আরবদের প্রকৃতি একটি গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড। এই মানদণ্ড অনুযায়ী, এমন খাবার যা আরবদের প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ তা হালাল এবং যা অসঙ্গতিপূর্ণ তা হারাম। শরিয়াহ একটি আইন ব্যবস্থা, কিন্তু এটি আধুনিক আইন ব্যবস্থার মতো নয়। আধুনিক আইন ব্যবস্থায় আইনগুলো স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত এবং সুরক্ষিত। আইনের ক্ষেত্র, নিয়ম এবং সীমানাগুলো স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে। আইন ব্যক্তিগত অধিকারের ভিত্তিতে রচিত। অন্যদিকে, শরিয়াহ একটি ধর্মীয় আইন ব্যবস্থা। এটি ইসলাম ধর্মের নীতি ও মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে রচিত। শরিয়াহ আইনগুলোর ক্ষেত্র, নিয়ম এবং সীমানাগুলো ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। শরিয়াহ আইনগুলো ব্যক্তিগত অধিকারের ভিত্তিতে রচিত নয়, বরং ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত নীতি ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে রচিত। আধুনিক বিশ্বে আইন, নীতি, রীতিনীতি, বিশ্বাস এবং উপাসনা হলো আলাদা আলাদা একক ধারণা। আইনের ক্ষেত্রটি নীতি, রীতিনীতি, বিশ্বাস এবং উপাসনার ক্ষেত্র থেকে আলাদা। তবে, শরিয়তে এই ধারণাগুলো একে অপরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত। শরিয়ত আইন, নীতিশাস্ত্র, রীতিনীতি, বিশ্বাস এবং উপাসনার মধ্যে পার্থক্য করে না। উদাহরণস্বরূপ, মদ্যপান বা অবৈধ যৌন ক্রিয়াকলাপের জন্য গুরুতর শাস্তির সম্মুখীন হতে পারে। শরিয়তের শাস্তিগুলো অপরাধের গুরুতরতার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় না। উদাহরণস্বরূপ, মদ্য পান করার জন্য শাস্তি হত্যার শাস্তির মতোই হতে পারে। এছাড়াও, শরিয়ত অপরাধী-ভুক্তভোগী বা ইচ্ছাকৃত-অনিচ্ছাকৃত পার্থক্য করে না। উদাহরণস্বরূপ, একজন ব্যক্তি যদি একজন অমুসলিমকে হত্যা করে, তাহলে শাস্তি একজন মুসলিমকে হত্যা করার শাস্তির মতোই হবে। শরিয়া আইনের অধীনে, অপরাধের প্রমাণ প্রমাণিত হওয়ার বা অপরাধীদের জন্য একই অপরাধের জন্য একই শাস্তি দেওয়ার মতো বাধ্যতামূলক প্রয়োজনীয়তা নেই। এর অর্থ হলো যে অপরাধীদের দোষী সাব্যস্ত করা এবং তাদের শাস্তি দেওয়ার জন্য সরকার বা বিচারকদের ব্যাপক ক্ষমতা রয়েছে। প্যাট্রিসিয়া ক্রোন, একজন ইংরেজ ঐতিহাসিক এবং ইসলামী আইনের বিশেষজ্ঞ। তিনি দাবি করেন যে শরিয়াহ আইনের মূল উৎস হলো নিকট প্রাচ্যের আইন, যা আলেকজান্ডারের সময়ে গ্রিক এবং রোমান আইনের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। তিনি আরও দাবি করেন যে মুসলিমরা এই আইনকে গ্রহণ করে এবং এটিকে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছে। ক্রোন দাবি করেন যে মুসলিমরা এই আইনকে "আল্লাহর আইন" হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যা তাদের শাসনকে ন্যায্যতা প্রদান করেছে। তারা এটিকে একটি সুশৃঙ্খল ব্যবস্থায় সংগঠিত করেছে, যাতে এটি সহজে বোঝা এবং প্রয়োগ করা যায়। তারা এটিকে তাদের নিজস্ব ধর্মীয় চিন্তাধারার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে তুলেছে, যাতে এটি ইসলামের মূল্যবোধের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হয়। ক্রোন আরও, দাবি করেন যে এই আইনটি উমাইয়া খিলাফতের সময় সাধারণত ব্যবহৃত হত, বিশেষ করে দ্বিতীয় খলিফা মুয়াবিয়ার সময়। উলামা, ইসলামী আইনবিদরা, এই আইনটিকে একটি নতুন রূপ দিয়েছে যা এখন শরিয়াহ নামে ডাকা হয়। ওআইসি হলো একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করে। এই সংস্থার সদস্য দেশগুলোর মধ্যে শরিয়া আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য রয়েছে। কিছু দেশ শরিয়া আইনকে সম্পূর্ণরূপে প্রয়োগ করে, কিছু দেশ আংশিকভাবে প্রয়োগ করে এবং কিছু দেশ শরিয়া আইনের আঞ্চলিক পার্থক্যগুলোকে স্বীকৃতি দেয়। শরিয়া আইন প্রয়োগকারী দেশগুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে মানবাধিকার, সমতা, নারী অধিকার, শিশুদের সুরক্ষা, ব্যক্তিগত পছন্দ এবং ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষা না করার মতো বিষয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হয়। এই সমালোচকরা যুক্তি দেন যে শরিয়া আইন এই বিষয়গুলোকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয় না এবং এর ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়। শরিয়া আইন এবং পশ্চিমা আইনের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দ্বন্দ্বের উৎস হলো ইসলামের ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতার ধারণার অন্তর্ভুক্তি না করা। পশ্চিমা আইন ব্যক্তিগত অধিকার ও স্বাধীনতার উপর জোর দেয়, যেখানে শরিয়া আইন ধর্মীয় কর্তৃত্বের উপর জোর দেয়। এই পার্থক্যটি শরিয়া আইন প্রয়োগকারী দেশগুলো এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের দিকে পরিচালিত করে। শরিয়াহ ইসলামের একটি প্রাচীন আইনি ব্যবস্থা যা নবী মুহাম্মাদের জীবন এবং তাঁর শিক্ষা দ্বারা অনুপ্রাণিত। এই ব্যবস্থাটি মানবাধিকারের অনেক নীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে কিছু অনুশীলন রয়েছে যা বস্তুবাদী ও নারীবাদীরা মানবাধিকারের বিরুদ্ধে গুরুতর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে। ইলহাদ শব্দের অর্থ ইসলাম থেকে বিচ্যুতি, ইরতিদাদ অর্থ ইসলাম ত্যাগী, ফাসিক অর্থ পাপী। এই শব্দগুলো প্রায়শই রাজনৈতিক মতবিরোধ বা ধর্মীয় স্বাধীনতার অনুশীলনকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হয়। বস্তুবাদী ও নারীবাদীরা দ্বারা এই অনুশীলনগুলোকে মানবাধিকারের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে। তেহরাত-হিজাব হলো ইসলামী আইনের একটি অনুশীলন যা মহিলাদের পোশাকের একটি নির্দিষ্ট ধারার প্রয়োগ করে। এই ধারাটি প্রায়শই মহিলাদের মুখ এবং শরীরের বেশিরভাগ অংশ ঢেকে রাখতে নির্দেশ করে। নারীবাদীরা প্রায়ই এই অনুশীলনটিকে নারীর অধিকারের লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করে। ইসলামের আইন ব্যবস্থায়, ফরজ ইবাদত বলতে এমন ইবাদতকে বোঝানো হয় যা পালন করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আবশ্যক। এই ইবাদতগুলো হলো কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত। ইসলামের আইন ব্যবস্থায়, এই ইবাদতগুলো ছেড়ে দেওয়াকে ধর্মত্যাগ হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ধর্মত্যাগ একটি গুরুতর অপরাধ এবং এর শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। বিংশ শতাব্দীতে, মানুষের মৌলিক অধিকারের ধারণা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে বিকাশ লাভ করে। এই ধারণার মধ্যে রয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা এবং আইনের অধীনে সমতা। মানুষের মৌলিক অধিকারের ধারণার বিকাশের ফলে, ইসলামি দেশগুলোতেও শরিয়া আইনের প্রয়োগে পরিবর্তন এসেছে। ইসলামের প্রাচীন আইন ব্যবস্থায়, ইবাদত পালনের পুরস্কার বা শাস্তি দুনিয়াতেই দেওয়া হবে বলে বিশ্বাস করা হতো। তবে, আজকাল মুসলিম দেশগুলোতে, অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ইবাদত পালনের পুরস্কার বা শাস্তি পরকালে দেওয়া হবে। মানুষের মৌলিক অধিকারের ধারণার বিকাশ এবং ইবাদত পালনের পুরস্কার বা শাস্তি পরকালে দেওয়া হবে বলে বিশ্বাসের ফলে, মুসলিম দেশগুলোতে ধর্মনিরপেক্ষতা বা আংশিকভাবে শরিয়া আইন অনুসরণ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধর্মীয় বিধিবিধান ধর্মীয় বিষয়গুলোর সংজ্ঞা নির্ভর করে যে কোন উৎস থেকে সংজ্ঞাটি এসেছে এবং সেই উৎসের অর্থ ও ব্যাপকতা কীভাবে ব্যাখ্যা করা হয় তার উপর। উদাহরণস্বরূপ, মাছের বাইরে সামুদ্রিক খাবার, মুতাহ বিবাহ এবং পোশাকের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতার মতো বিষয়গুলোর সংজ্ঞা বিভিন্ন ইসলামী সম্প্রদায় এবং মতবাদের মধ্যে ভিন্ন হতে পারে। ফকিহ পন্ডিতদের ইসলামী আইন এবং রীতিনীতির ব্যাখ্যার উপর ভিত্তি করে শরিয়ায় তা নির্ধারিত হয়। ফিকহ হলো কুরআন এবং হাদীসের উপর ভিত্তি করে ইসলামী আইন এবং রীতিনীতির ব্যাখ্যা। ফকিহ পন্ডিতরা কুরআন এবং হাদীসের আক্ষরিক অর্থ, সেইসাথে বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী ইসলামী আইনি পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে তাদের সিদ্ধান্ত নেন। উলামাদের ইসলামী আইন, নিষেধাজ্ঞা এবং বিধিবিধান নির্ধারণ করার, কিয়াস (সদৃশতার মাধ্যমে) নতুন নিয়ম তৈরি করার বা বিভিন্ন বিষয়কে শ্রেণীবদ্ধ করার ক্ষমতা রয়েছে। উলামারা ইসলামী আইনের বিশেষজ্ঞ এবং তাদের সিদ্ধান্তগুলো মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য প্রায়শই বাধ্যতামূলক বলে মনে করা হয়। ফরজ হলো এমন কাজ বা ইবাদত যা অবশ্যই অত্যাবশকীয়ভাবে করা উচিত। এগুলো আল্লাহর নির্দেশাবলীর উপর ভিত্তি করে এবং সেগুলো না করলে মহাপাপ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ পড়া, রোজা রাখা এবং হজ করা ফরজ। ওয়াজিব হলো এমন কাজ বা ইবাদত যা করা উচিত, তবে ফরজের মতো অত্যাবশকীয় নয়। এগুলোও আল্লাহর নির্দেশাবলীর উপর ভিত্তি করে, তবে সেগুলো কেউ না করলে মহাপাপ হবে না। উদাহরণস্বরূপ, জানাজার নামাজ পড়া এবং ঈদের নামাজ পড়া ওয়াজিব। সুন্নত হলো এমন কাজ বা আচরণ যা নবী মুহাম্মাদ তাঁর প্রাত্যহিক জীবনে করতেন। এগুলো ফরজ বা ওয়াজিব নয়, তবে এগুলো পালন করার জন্য উৎসাহিত করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, পাঁচ ওয়াক্তের নামাজের আগে সুন্নত নামাজ পড়া সুন্নত। মুস্তাহাব হলো এমন কাজ বা আচরণ যা করা ভালো, তবে বাধ্যতামূলক নয়। এগুলো করলে পুরস্কার (সওয়াব) পাওয়া যায়, তবে না করলে কোনো পাপ বা শাস্তি হবে না। উদাহরণস্বরূপ, দান করা এবং রমজান মাসের বাইরে রোজা রাখা মুস্তাহাব। নফল হলো আরও একপ্রকার ইবাদত যা সম্পূর্ণ ব্যক্তির ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। ব্যক্তি ইচ্ছা করলে তা করতেও পারে, আবার ইচ্ছা না করলে করতে নাও পারে। কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যেমন, নফল নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি। নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন তিলাওয়াতকে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত হিসেবে বিবেচনা করা হয়। হালাল হলো এমন কাজ বা বস্তু যা করা বা গ্রহণ বা ভক্ষণ করা বৈধ। এগুলো ইসলামের বিধান অনুসারে অনুমোদিত। উদাহরণস্বরূপ, হালাল মাংস খাওয়া এবং বিবাহ করা হালাল। মাকরুহ হলো এমন কাজ বা বস্তু যা করা বা গ্রহণ বা ভক্ষণ করা ইসলামী বিধানে অনুমোদিত, তবে সেগুলো এড়িয়ে চলা ভালো। এগুলো করলে পাপ হবে না, তবে এড়ানোর মাধ্যমে পুরস্কার (সওয়াব) পাওয়া যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, কাঁচা মাংস খাওয়া মাকরূহ। হারাম হলো এমন কাজ বা বস্তু যা করা বা গ্রহণ বা ভক্ষণ করা নিষিদ্ধ। এগুলো ইসলামের বিধান অনুসারে অনুমোদিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, সুদ গ্রহণ এবং ব্যভিচার করা হারাম। ইসলামি আইনে হারাম কাজ করা এবং হারাম জিনিস গ্রহণ ও ভক্ষণ করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এর শাস্তি ইসলামি আইনে ভয়াবহ হতে পারে। ইসলামী আইনের দৃষ্টিতে এইসব কাজের শারীরিক বা আধ্যাত্মিক ফল রয়েছে। ফরজ, ওয়াজিব এবং সুন্নত কাজগুলোর পরিত্যাগ এবং মাকরূহ ও হারাম কাজগুলির সম্পাদন শাস্তিমূলক প্রতিক্রিয়া পায়। এই শাস্তিগুলোকে হুদুদ বা তাজির শাস্তি বলা হয়। হুদুদ শাস্তিগুলো হলো নির্দিষ্ট, আইন দ্বারা নির্ধারিত শাস্তি। উদাহরণস্বরূপ, ব্যভিচারের শাস্তি পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা। তাজির শাস্তিগুলো হলো বিচারকের বিবেচনার উপর নির্ভর করা প্রদত্ত শাস্তি। উদাহরণস্বরূপ, নামাজ না পড়ার জন্য কারাদণ্ড দেওয়া। তাজির শাস্তিগুলোতে অপরাধের সাক্ষ্য বা অনুরূপ প্রক্রিয়া দ্বারা প্রমাণ বাধ্যতামূলক নয়। বিচারক অপরাধের অস্তিত্ব সম্পর্কে সন্তুষ্ট হলেই শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। কালেমবাদীরা দুটি ভাগে বিভক্ত: যুক্তিবাদী এবং ঐতিহ্যবাদী। যুক্তিবাদীরা বিশ্বাস করেন যে কোন কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ থাকতে হবে, যেখানে ঐতিহ্যবাদীরা বিশ্বাস করেন যে কোন কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এটি আল্লাহর দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যুক্তিবাদীদের যুক্তি হলো যে ধর্মশাস্ত্র একটি যুক্তিসঙ্গত শাস্ত্র এবং তাই এটি যুক্তির উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। তাদের মতে, কোন কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ থাকতে হবে এবং এই কারণগুলো ব্যবহার করে নতুন জিনিসগুলোকে নিষিদ্ধ বা অনুমোদিত হিসাবে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে। অন্যদিকে, ঐতিহ্যবাদীদের যুক্তি হলো যে ধর্মশাস্ত্র একটি ঐতিহ্যবাহী শাস্ত্র এবং তাই এটি ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে হওয়া উচিত। তাদের মতে, কোন কিছু নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো এটি আল্লাহর দ্বারা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং এই নিষেধাজ্ঞাগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা অনুচিত। নারী এবং বিবাহ ইসলামে বিবাহ একটি পবিত্র বিষয়। বিবাহের মাধ্যমে বৈধভাবে যৌনতা উপভোগ করাকে ইসলামে প্রশংসিত করা হয়েছে। বিবাহের বাইরে যৌনতা ব্যভিচার হিসেবে গণ্য করা হয় এবং এর জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিধান করা হয়েছে। ইসলামে বিবাহ একটি আইনি চুক্তি। এই চুক্তিতে স্বামী-স্ত্রী উভয়ের সম্মতি এবং সাক্ষীদের উপস্থিতি অপরিহার্য। স্বামীর-স্ত্রীর উভয়কে মুসলিম হওয়া, মহর নির্ধারণ এবং চুক্তির ঘোষণা করাও বিবাহের বৈধতার জন্য প্রয়োজনীয় শর্ত। শিয়া এবং সুন্নি মতবাদে মুতাহ বিবাহের বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। শিয়া মতবাদে মুতাহ বিবাহ একটি বৈধ সম্পর্ক। সুন্নি মতবাদ অনুযায়ী, মুতাহ বিবাহ আগে অবাধ ছিল, কিন্তু পরে তা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট কুরআনের আয়াত রহিত করা হয়েছে। মুতাহ বিবাহ সুন্নি মতবাদে ব্যভিচার হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয় এবং হারাম বলে বিবেচিত হয়। ইসলামে ব্যভিচার এবং সমকামিতা সম্পর্কে কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যভিচারের শাস্তি ৮০টি বেত্রাঘাত এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ৪০টি বেত্রাঘাত। সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। ইসলামী বিধান অনুসারে, বিবাহ চুক্তি সম্পাদনের জন্য সাক্ষী থাকা আবশ্যক। বিবাহের সাক্ষীদের অবশ্যই মুসলিম হতে হবে এবং বিয়ের বৈধতার জন্য ২ জন পুরুষ বা ১ জন পুরুষ এবং ২ জন মহিলাকে অবশ্যই সাক্ষ্য দিতে হবে। ইসলাম এবং কুরআনে নারীর স্থান বিষয়ে মুসলিমদের মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত ধারণা রয়েছে। একটি ধারণা হলো, ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদার আসনে বসায় এবং নারীদেরকে তাদের সমস্ত অধিকার প্রদান করে। অন্য ধারণা হলো, কুরআনকে পিতৃতান্ত্রিক আরব সমাজের প্রতিফলন হিসেবে দেখা হয়, যা নারীদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করে। প্রথম ধারণার সমর্থকরা যুক্তি দেন যে, কুরআন নারীদেরকে পুরুষদের সমতুল্য অধিকার প্রদান করে। তারা কুরআনের আয়াতগুলোর উল্লেখ করে যেগুলো নারীদেরকে শিক্ষা, সম্পত্তি এবং বিবাহের অধিকার প্রদান করে। তারা আরও যুক্তি দেন যে, ইসলাম নারীদেরকে পরিবার এবং সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য উৎসাহিত করে। দ্বিতীয় ধারণার সমর্থকরা যুক্তি দেন যে, কুরআন নারীদেরকে পুরুষদের অধীনস্থ অবস্থানে রাখে। তারা কুরআনের আয়াতগুলোর উল্লেখ করে যেগুলো নারীদেরকে পুরুষদের আনুগত্য করতে বলে। তারা আরও যুক্তি দেন যে, ইসলাম নারীদেরকে পর্দা করার এবং পুরুষদের সাথে নির্দিষ্টভাবে আচরণ করার নির্দেশ দেয়। এই দুটি ধারণার মধ্যে কোনটি সঠিক তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিছু মুসলিম মনে করেন যে, কুরআন নারীদেরকে পুরুষদের সমতুল্য অধিকার প্রদান করলেও অধিকারগুলোকে প্রায়শই ইসলামী সমাজে উপেক্ষা করা হয়। অন্য মুসলিমরা মনে করেন যে, কুরআন নারীদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে দেখায় এবং এই ধারণাটি ইসলামী আইন ও রীতিনীতিতে প্রতিফলিত হয়। ইসলামী সমাজে নারীর অবস্থান ইসলাম ধর্মের নিয়মকানুনের পাশাপাশি অন্যান্য কারণের দ্বারাও নির্ধারিত হয়। ইসলাম ধর্ম নারীর অধিকার ও মর্যাদাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ইসলামী আইনে নারীদের শিক্ষা, সম্পত্তি, বিবাহ এবং কর্মক্ষেত্রে অধিকার রয়েছে। তবে, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশ, জাতিগত গঠন এবং ইসলামপূর্ব সংস্কৃতির উত্তরাধিকারও নারীর অবস্থানকে প্রভাবিত করে। উদাহরণস্বরূপ, মধ্যপ্রাচ্যে নারীদের অবস্থান সাধারণত দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের অবস্থানের চেয়ে আলাদা। ইসলামী বিশ্বে নারীর অবস্থান সর্বত্র এবং সর্বদা একই নয়। বিভিন্ন সময় এবং বিভিন্ন স্থানে নারীদের অবস্থান ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী স্বর্ণযুগে নারীদের অবস্থান ছিল অনেকটা উন্নতির দিকে। তবে, পরবর্তীকালে নারীদের অবস্থার অবনতি ঘটেছে। ইসলামী আইনে দাসী বা কারিয়ার নারীদের অবস্থান স্বাধীন নারীদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। দাসী বা কারিয়ার নারীরা স্বাধীন নয় এবং তাদের উপর তাদের মালিকদের কর্তৃত্ব রয়েছে। তাই তাদের জন্য ভিন্ন পোশাকের নিয়ম, ধর্মীয় এবং সামাজিক অধিকার ও দায়িত্ব রয়েছে। কুরআনে নারীর পোশাক বিষয়ে বেশ কয়েকটি আয়াত রয়েছে, তবে এই আয়াতগুলোতে নারীর পোশাকের জন্য একটি স্পষ্ট এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা দেওয়া হয়নি। এই অস্পষ্টতা নারীর পোশাকের বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যার জন্ম দিয়েছে, যা ইসলামের ইতিহাসে দীর্ঘকাল ধরে বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিতর্কের এক প্রান্তে শুধুমাত্র আভারত হিসাবে সংজ্ঞায়িত নৈতিক স্থানগুলোর (যৌনাঙ্গ) আচ্ছাদন যথেষ্ট বলে মনে করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, নারীর অন্যান্য অংশ, যেমন হাত, পা এবং মুখ আবৃত করা আবশ্যক নয়। বিতর্কের অন্য প্রান্তে নারীর হাত এবং মুখ সহ পুরো শরীরকে আবৃত করার জন্য বাধ্য করা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, নারীর শরীর পুরুষের দৃষ্টি থেকে সম্পূর্ণরূপে আড়াল করা উচিত। ইসলামী মাযহাবগুলো নারীর পোশাক বিষয়ে বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছে, তবে তারা সকলেই নারীর শরীরকে আবৃত করার ধারণাকে সমর্থন করে। এই ধারণাটিকে পর্দা বলা হয়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে, নির্দিষ্ট অঞ্চলগুলো নিজস্ব আত্মীয়দের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, হানাফি এবং মালিকি মাযহাবগুলোতে নারীর হাত এবং মুখকে "ফিতনার অবকাশ না রেখে" খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এই অনুমতির অর্থ হলো নারীর হাত এবং মুখ শুধুমাত্র নিজের স্বামী, ছেলে, পিতা, ভাই এবং অন্যান্য নির্দিষ্ট আত্মীয়দের সামনে খোলা থাকতে পারে। অন্যদের সামনে, এই অঞ্চলগুলো আবৃত করা উচিত। ইতিহাস ইসলাম-পূর্ব আরব ইসলামপূর্ব আরব উপদ্বীপ ছিল বহুদেববাদী। প্রতিটি গোত্র তাদের নিজস্ব দেবতা ও দেবীদের বিশ্বাস ও উপাসনা করত। এই দেবতা ও দেবীরা বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা সহ বিভিন্ন বিষয়ের সাথে যুক্ত ছিল। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামপূর্ব আরবদের বিশ্বাসানুযায়ী, লাত ছিল পাতালের দেবী, উজ্জা ছিল উর্বরতার দেবী এবং মানাত ছিল ভাগ্যের দেবী। এই দেবতা ও দেবীদের আত্মা গাছ, পাথর, জলাশয় এবং কুয়োগুলোর সাথে সম্পর্কিত ছিল। এই স্থানগুলোকে পবিত্র বলে মনে করা হত এবং সেখানে প্রায়ই তাদের উপাসনা করা হত। আরব পুরাণে, মূর্তিগুলোকে দেবতা ও দেবীদের প্রতীক হিসাবে দেখা হত। এই মূর্তিগুলো প্রায়ই পাথর বা কাঠ দিয়ে তৈরি করা হত। মূর্তিগুলোকে পূজা করা হত এবং তাদের কাছে প্রার্থনা করা হত। ইসলামপূর্ব আরব উপদ্বীপে উপসনার জন্য অনেকগুলো পবিত্র স্থান ছিল। এই স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে কাবা, যা মক্কায় অবস্থিত একটি পবিত্র ঘনআকৃতির কাঠামো। কাবাকে ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। আরবরা নিষিদ্ধ মাসগুলোতে পবিত্র স্থানগুলো পরিদর্শন করত। এই মাসগুলোতে যুদ্ধ এবং সহিংসতা নিষিদ্ধ ছিল। পবিত্র স্থানগুলোতে পরিদর্শনকারীরা বিভিন্ন উপাসনা করত, যেমন প্রার্থনা, উপবাস এবং পশু জবাই। মক্কার কাবা প্রাচীনকালে বিভিন্ন আরব উপজাতিদের পৃষ্ঠপোষক দেবতাদের ১৬০টি মূর্তির আবাসস্থল ছিল। এই মূর্তিগুলো বিভিন্ন আকৃতি ও আকারের ছিল এবং সেগুলোকে বিভিন্ন নিয়মে পূজা করা হতো। কাবায় অবস্থিত তিনটি দেবী, মানাত, লাত এবং উজ্জাকে আল্লাহর কন্যা বলে মনে করা হতো। এই দেবীদেরকেও বিভিন্ন উপায়ে পূজা করা হতো। অন্যদিকে আরব সমাজে খ্রিস্টান, ইহুদিসহ বিভিন্ন একত্ববাদী সম্প্রদায়ও ছিল। এই সম্প্রদায়গুলো একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করত এবং মূর্তিপূজা করত না। স্থানীয় আরবদের মধ্যে হানিফরাও ছিল। হানিফরা একত্ববাদী ছিল এবং তারা একমাত্র আল্লাহর উপাসনা করত। তবে তাদেরকে কখনও কখনও ভুল করে খ্রিস্টান বা ইহুদিদের মধ্যে শ্রেণীবদ্ধ করা হতো। মুসলিম বিশ্বাস অনুসারে, মুহাম্মাদও একজন হানিফ ছিলেন এবং তিনি ইব্রাহিমের পুত্র ইসমাইলের বংশধর ছিলেন। ইসলামী সাহিত্যে, ইসলামের আগের আরব সমাজের যুগকে "আইয়ামে জাহেলিয়া" বা "অজ্ঞতার যুগ" বলা হয়। এই শব্দটি কুরআন ও হাদীসে আরবদের ইসলামের আগের বিশ্বাস ও আচরণকে ইসলামী যুগ থেকে আলাদা করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এই যুগের বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্যভিচার, চুরি, মূর্তিপূজা, অবিচার এবং দাসত্বের স্বাভাবিকতা। আইয়ামে জাহেলিয়ার সময় আরবরা ইসলামি শিক্ষার সাথে পরিচিত ছিল না। এই সময়ের মধ্যে, তারা প্রায়শই অজ্ঞতা, অন্ধবিশ্বাস এবং বর্বর আচরণে লিপ্ত ছিল। তারা প্রায়শই ব্যভিচার, চুরি, মূর্তি পূজা, অবিচার এবং দাসত্বে লিপ্ত হত। ইসলামী ইতিহাসবিদদের মতে, জাহিলী যুগে নারীদের নিম্নশ্রেণির মানুষ হিসেবে দেখা হত। বহুবিবাহ খুবই সাধারণ বিষয় ছিল। পতিতাবৃত্তি একটি সাধারণ পেশা ছিল এবং দাস মালিকরা তাদের দাসীদের এই কাজে বাধ্য করত। নারীরা তাদের বাবা বা স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেত না। সন্তানরা চাইলে তাদের বাবার মৃত্যুর পরে তাদের সৎমায়ের সাথে বিবাহ করতে পারত। বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার শুধুমাত্র পুরুষের ছিল এবং তা ছিল সীমাহীন। অভিজাতরা কন্যা সন্তান হলে তাকে একটি লজ্জার উৎস হিসেবে দেখত এবং তাদের হত্যা করত। এই সময়ে মেয়েদের জীবন্ত কবর দেওয়ার মতো জঘন্যতম কাজও করা হত। আরবরা অন্যান্য জাতি থেকে খুব বেশি আলাদা ছিল না শিশু হত্যার ক্ষেত্রে, যা উৎসর্গ বা অন্যান্য কারণে করা হত। মুহাম্মাদের জন্ম এবং ইসলামের প্রবর্তন (৫৭০-৬৩২) ইসলামী বিশ্বাস অনুসারে, মুহাম্মাদ ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন এবং জীবনের প্রথম দিকেই পিতৃমাতৃহীন হন। একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তিনি বেড়ে ওঠেন এবং 'আমিন' (বিশ্বস্ত) নামে পরিচিত হন। পরে তিনি তার মনিব, ব্যবসায়ী খাদিজাকে বিয়ে করেন। ৬১০ খ্রিস্টাব্দে, মক্কায় বিদ্যমান নৈতিক অবক্ষয় ও মূর্তিপূজা দ্বারা বিরক্ত হয়ে এবং নির্জনতা ও আধ্যাত্মিক চিন্তা-ভাবনার জন্য, মুহাম্মাদ মক্কার কাছে জাবালে নূর পর্বতের হেরা গুহায় আশ্রয় নেন। গুহায় থাকাকালীন সময়েই আল্লাহর নিকট হতে ফেরেশতা জিব্রাইলের মাধ্যমে তাঁর উপর কুরআনের প্রথম আয়াত নাযিল হয়। মুহাম্মাদের গুহায় থাকাকালীন অবস্থায় যে রাতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তাকে 'লায়লাতুল কদর' (শবে কদর) বলা হয় এবং এই ঘটনাটিকে ইসলামী ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচনা করা হয়। ৪০ বছর বয়স থেকে, জীবনের পরবর্তী ২২ বছর ধরে, মুহাম্মাদের নিকট আল্লাহর কাছ থেকে আয়াত অবতীর্ণ হতে থাকে এবং তিনি মানবতার কাছে প্রেরিত সর্বশেষ নবী হয়ে ওঠেন। মুহাম্মাদ প্রথম তিন বছর ধরে শুধুমাত্র তার পরিবার এবং আত্মীয়দের ইসলামের প্রতি আহ্বান জানান। এই সময়ে, তিনি তাদেরকে ইসলামের মূল বিষয়গুলো শিখিয়েছিলেন, যেমন আল্লাহর একত্ববাদ, তাঁর নবুওয়াত প্রাপ্তি, এবং ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভ। মক্কায় থাকাকালীন সময়ে মুহাম্মাদ প্রথমে গোপনে ও তারপর প্রকাশ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন এবং তার শ্রোতাদের বহুঈশ্বরবাদ ত্যাগ করে এক আল্লাহর উপাসনা করার আহ্বান জানান। ইসলামের প্রথম দিকের অনেক গ্রহণকারী ছিল নারী, গরীব, বিদেশী এবং দাসেরা যেমন প্রথম মুয়াজ্জিন বিলাল ইবনে রাবাহ আল-হাবাশি। মক্কার অভিজাতরা মনে করতেন যে এক আল্লাহর প্রচার করার মাধ্যমে মুহাম্মাদ তাদের সামাজিক ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করে তুলছেন কারণ তারা কাবার মূর্তিগুলোর জন্য তীর্থ করতে আসা তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে মুনাফা অর্জন করতো। মুহাম্মাদ যখন আরও বেশি মানুষকে ইসলামের প্রতি আহ্বান করতে শুরু করলেন, তখন মক্কার অনেক গোত্র তার বিরুদ্ধে বিরূপ হয়ে ওঠে। তারা তাকে এবং তার অনুসারীদের উপর নির্যাতন চালায়। এই নির্যাতনের মধ্যে রয়েছে শারীরিক আঘাত, সম্পত্তি ধ্বংস করা এবং সামাজিক বয়কট। মক্কার নির্যাতন থেকে বাঁচতে, মুহাম্মাদ ৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে কিছু মুসলিমকে আবিসিনিয়ায় পাঠিয়েছিলেন। আবিসিনিয়া ছিল একটি খ্রিস্টান রাজ্য, কিন্তু তারা মুসলিমদেরকে নির্যাতন থেকে রক্ষা করার জন্য আশ্রয় দিয়েছিল। মুসলিমদের উপর মক্কার অধিবাসীদের ১২ বছরের নির্যাতনের পর, ৬২২ খ্রিস্টাব্দে মুহাম্মাদ এবং তার সাহাবীরা ইয়াসরিব (বর্তমান মদিনা) শহরে হিজরত (অভিবাসন) করেন। সেখানে, মদিনার গ্রহীতাদের (আনসার) এবং মক্কার প্রবাসীদের (মুহাজির) সঙ্গে মুহাম্মাদ মদিনায় তার রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেন। মদিনার সকল উপজাতি মদিনার সনদে স্বাক্ষর করে। এই সনদটি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মুসলিম ও অমুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তাদের নিজস্ব আইন ব্যবহারের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত করে এবং সকল প্রকার বাহ্যিক হুমকি থেকে মদিনাকে রক্ষা করার জন্য সকল গোত্রের মাঝে একটি চুক্তি স্থাপন করে। ৬২২ সালে মদিনায় হিজরত করার পর, মুহাম্মাদ তাঁর অনুসারীদের সাথে মক্কার পৌত্তলিকদের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু মক্কার পৌত্তলিকরা তাদের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পর্ক স্থাপন করতে রাজি হননি। তাই, মুহাম্মাদ মুসলিম বাহিনী গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেন। এই যুদ্ধগুলোতে, মুসলিম বাহিনী বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিজয় লাভ করে। মক্কার বাহিনী ও তাদের মিত্ররা ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে বদরের যুদ্ধে মুসলিমদের কাছে পরাজিত হয় এবং তারপর উহুদের যুদ্ধে পরাজয়ের মধ্য দিয়ে মদিনাকে অবরোধ করতে ব্যর্থ হয় (মার্চ-এপ্রিল ৬২৭)। ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে, মক্কা এবং মুসলিমদের মধ্যে হুদায়বিয়ার সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়, কিন্তু দুই বছর পর মক্কার অধিবাসীরা এটিকে ভঙ্গ করে। আরও উপজাতি ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ায়, মক্কার বাণিজ্যপথগুলো মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। ৬৩০ সালে, মুহাম্মাদ একটি বড় মুসলিম বাহিনী গঠন করে মক্কায় অভিযান চালায়। এই অভিযানে, মুসলিম বাহিনী মক্কায় বিজয় অর্জন করে এবং কাবা থেকে সকল প্রকার মূর্তি অপসারণ করে। এই বিজয় আরব উপদ্বীপে ইসলামের বিস্তারকে আরও ত্বরান্বিত করেছিল। ৬৩২ সালে, মুহাম্মাদ বিদায় হজ্জ সম্পন্ন করেন এবং আরাফাত পাহাড়ে প্রায় ১২৪,০০০ মুসলিমের উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণে তিনি মুসলিমদেরকে পরস্পরের সাথে ভালোবাসা, সহানুভূতি এবং সহযোগিতার বন্ধন গড়ার আহ্বান জানান। উক্ত ভাষণের কয়েক মাস পরে, মদিনায় থাকাকালীন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মুহাম্মাদ এর মৃত্যুর আগে, আরব উপদ্বীপের বৃহৎ অংশের ইসলাম গ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল। তাঁর প্রচেষ্টার ফলে, আরব উপদ্বীপের মানুষরা ইসলাম গ্রহণ করে এবং একটি নতুন সমাজ গড়ে তোলে। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর মৃত্যুর সময় (৬২ বছর বয়সে) মুহাম্মাদ আরব উপদ্বীপের উপজাতিগুলোকে একটি একক ধর্মীয় রাষ্ট্রের অধীনে একত্রিত করেন। মুহাম্মাদ ছিলেন একজন মহান ধর্মীয় নেতা এবং তিনি বিশ্বের সকল মানুষকে ইসলামের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি তাঁর সময়ে পৃথিবীর অনেক বৃহৎ রাষ্ট্রের শাসকদের কাছে চিঠি প্রেরণ করেছিলেন এবং তাদের ইসলাম গ্রহণের জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইসলামের প্রাথমিক যুগ (৬৩২–৭৫০) মুহাম্মাদের প্রথম উত্তরাধিকারী, যাদের খলিফা বলা হয় - আবু বকর, উমর, উসমান ইবনে আফফান, আলী ইবনে আবু তালিব এবং কখনও কখনও হাসান ইবনে আলী - সুন্নি ইসলামে তাঁরা আল-খুলাফা আল-রাশিদুন ("খুলাফায়ে রাশেদীন") হিসাবে পরিচিত। মুহাম্মাদ এর মৃত্যুর পর আবু বকর, ওমর, উসমান এবং আলী ইসলামী রাষ্ট্রের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আবু বকর ছিলেন মুহাম্মাদ এর একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবী এবং তাঁর মৃত্যুর পর তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন। ওমর ছিলেন আবু বকর এর পরবর্তী খলিফা। তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। উসমান ছিলেন তৃতীয় খলিফা। তিনি একজন ধনী এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের প্রশাসনকে আরও শক্তিশালী করেছিলেন। আলী ছিলেন মুহাম্মাদ এর চাচাতো ভাই এবং তাঁর জামাই। তিনি চতুর্থ এবং শেষ খলিফা ছিলেন। আলী এর মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে হাসান খলিফা হিসেবে নির্বাচিত হন। কিন্তু হাসান কিছুদিন পরই মুয়াবিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। মুয়াবিয়া ইসলামী রাষ্ট্রের প্রথম উমাইয়া খলিফা ছিলেন। সুন্নি মুসলিমরা আবু বকর, ওমর, উসমান এবং আলীকে খোলাফায়ে রাশেদীন হিসেবে বিবেচনা করেন। এদের মধ্যে আলীকে তাঁর নৈতিকতা এবং ধর্মীয় জ্ঞানের জন্য বিশেষভাবে সম্মান করা হয়। অন্যদিকে, শিয়া মুসলমানরা শুধুমাত্র আলী এবং তাঁর বংশধরদেরকেই খলিফা হিসেবে বিবেচনা করে। তারা আবু বকর, ওমর এবং উসমানকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ইবাদি মুসলিমরা শুধুমাত্র আবু বকর এবং ওমরকে খলিফা হিসেবে বিবেচনা করে। তারা আলী এবং উসমানকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। আবু বকর-এর নেতৃত্বে কুরআন সংকলনের কাজ শুরু হয়েছিল। খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ-এর সময় সাত ফকীহের কমিটি গঠিত হয় এবং সেই ফকীহদের মতামতকে সমন্বয় করে মালিক ইবনে আনাস ইসলামী আইনশাস্ত্রের অন্যতম প্রাচীন গ্রন্থ মুওয়াত্তা রচনা করেন। খারিজিরা বিশ্বাস করত যে ভালো ও মন্দের মধ্যে কোনো আপোসযোগ্য মধ্যবর্তী অবস্থান নেই এবং যেকোনো মুসলিম গুরুতর পাপ করলে সে অবিশ্বাসী হয়ে যায়। তবে মুরজিয়ারা শিক্ষা দিয়েছিল যে মানুষের ন্যায়পরায়ণতা শুধুমাত্র আল্লাহর দ্বারা বিচার করা সম্ভব। অতএব, অপরাধীরা ভুল পথে পরিচালিত বলে বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু তাদের অবিশ্বাসী বলে নিন্দা করা উচিত নয়। এই মনোভাবটি মূলধারার ইসলামী বিশ্বাসে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাব বিস্তার করে। কিছু উপজাতি ইসলাম ছেড়ে দেয় এবং কিছু লোক নতুন নবী হিসাবে নিজেদের ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে নেতাদের অধীনে বিদ্রোহ সৃষ্টি করে কিন্তু আবু বকর তাদের রিদ্দা যুদ্ধে পরাজিত করেন। ইহুদি এবং আদিবাসী খ্রিস্টানদের স্থানীয় জনগোষ্ঠী জিজিয়া কর প্রদান করত এবং মুসলিমরা দ্রুতই নতুন নতুন এলাকা জয় করতে থাকে, যার ফলে পারস্য এবং বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যে খিলাফতের দ্রুত প্রসার ঘটে। ৬৪৪ সালে উসমানের হত্যার পর, আলী মুসলিম সম্প্রদায়ের দ্বিতীয় খলিফা নির্বাচিত হন। তবে, উসমানের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চাওয়া আয়িশা, মুয়াবিয়া এবং অন্যান্যরা আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ৬৫৬ সালে উটের যুদ্ধে আয়িশার সেনাবাহিনী আলীর কাছে পরাজিত হয়। ৬৫৭ সালে সিফফিনের যুদ্ধে আলী এবং মুয়াবিয়ার বাহিনী মুখোমুখি অবস্থান নেয়। যুদ্ধ সমাপ্তির জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আলী এই প্রস্তাব গ্রহণ করলেও মুয়াবিয়া তা প্রত্যাখ্যান করে। ৬৬১ সালে নাহরওয়ানের যুদ্ধে আলী এবং মুয়াবিয়ার বাহিনী আবারও মুখোমুখি অবস্থান নেয়। যুদ্ধে আলী পরাজিত হন এবং মুয়াবিয়াকে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। মুয়াবিয়ার নেতৃত্বে উমাইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠিত হয়। উমাইয়ারা একটি কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে এবং খিলাফতকে একটি সামরিক শক্তিতে পরিণত করে। তারা পারস্য, মিশর এবং উত্তর আফ্রিকা সহ বিস্তৃত অঞ্চল জয় করে। ৬৮০ সালে কারবালার যুদ্ধে আলী এবং ফাতিমার (মুহাম্মাদের কন্যা) পুত্র হোসেন ইবনে আলীকে মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের বাহিনী হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড মুসলিমদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের জন্ম দেয়। উমাইয়া রাজবংশ উত্তর আফ্রিকা, ইবেরীয় উপদ্বীপ, নারবোনীয় গল এবং সিন্ধু জয় করে। উমাইয়াদের বৈধতার অভাব ছিল এবং তারা ব্যাপকভাবে পৃষ্ঠপোষিত সামরিক বাহিনীর উপর নির্ভরশীল ছিল। যেহেতু জিজিয়া কর ছিল অমুসলিমদের দ্বারা প্রদত্ত একটি কর এবং এই করের উপরই সামরিক বাহিনীর অর্থায়ন নির্ভর করত, তাই উমাইয়ার প্রশাসকগন অনারবদের ধর্মপরিবর্তন অনুৎসাহিত করত, কারণ তারা মনে করত যে এই ধর্মান্তরকরণ প্রক্রিয়া তাদের রাজস্ব কমিয়ে দিতে পারে। যেখানে রাশিদুন খিলাফতে কঠোরতার প্রতি জোর দেয়া হয়েছিল, এমনকি উমর প্রতিটি কর্মকর্তার সম্পদের বিস্তারিত তালিকা চেয়েছিলেন, সেখানে উমাইয়া রাজবংশের এই বিলাসিতা ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়। ফলে খারেজীরা বার্বার বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেয়, যা খিলাফতকে প্রথম স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র গঠনের দিকে নিয়ে যায়। আব্বাসীয় বিপ্লবে, অনারব ধর্মপরিবর্তনকারীরা (মাওলা), উমাইয়া গোত্রের দ্বারা সরিয়ে দেওয়া আরব গোত্রগুলো এবং কিছু শিয়া একসঙ্গে একত্রিত হয়ে উমাইয়াদের উৎখাত করে এবং ৭৫০ সালে আব্বাসীয় রাজবংশের সূচনা হয়। আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের পরাজিত করে খিলাফতকে ইরাকের বাগদাদে স্থানান্তরিত করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগ ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক বিজয় এবং ধর্মীয় বিভাজনের একটি সময়। এই যুগের ঘটনাগুলো ইসলামের বিকাশকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ইসলামের প্রাথমিক যুগের শেষে, ইসলাম একটি শক্তিশালী ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠে। খিলাফত উত্তর আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং মধ্য এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বিস্তৃতি লাভ করে যা এই অঞ্চলে ইসলামের বিস্তার ইসলামী সংস্কৃতি, আইন এবং শিক্ষার বিকাশকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। ইসলামের স্বর্ণযুগ (৭৫০-১২৫৮) আব্বাসীয়রা ছিলেন মুহাম্মাদ এর চাচা আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর। তারা উমাইয়াদের আরব-কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন। ৭৫০ সালে আব্বাসীয়রা কুফায় একটি বিপ্লব ঘোষণা করে। এই বিপ্লবে উমাইয়া খলিফা মালিক ইবনে আনাসের পরাজিত হয় এবং আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসে। আব্বাসীয়রা উমাইয়াদের কাছ থেকে ইবেরীয় উপদ্বীপ ব্যতীত সমস্ত ভূখণ্ড দখল করে নেয়। ইবেরীয় উপদ্বীপের অংশ তখন উমাইয়াদের অধীনে একটি স্বাধীন খিলাফত হিসেবে পরিচিত ছিল, যাকে আন্দালুসীয় খিলাফত বলা হয়। আব্বাসীয়দের ৭৫০ সালে উমাইয়া খিলাফতকে উৎখাত করে ক্ষমতায় আসার ফলে মুসলিম বিশ্বে নতুন এক যুগের সূচনা হয়, যা আব্বাসীয় যুগ নামে পরিচিত। আব্বাসীয় খিলাফত ৭৫০ সাল থেকে ১২৫৮ সাল পর্যন্ত, অর্থাৎ ৫০৮ বছর স্থায়ী ছিল। এই সময়ের মধ্যে আব্বাসীয়রা মুসলিম বিশ্বের একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। তবে ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের বাগদাদ আক্রমণের ফলে আব্বাসীয় খিলাফত ভেঙে পড়ে। আব্বাসীয় যুগে আব্বাসীয়রা মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিক্ষা, শিল্প, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে আব্বাসীয় যুগ ছিল ইসলামের জন্য এক স্বর্ণযুগ। আব্বাসীয়রা ক্ষমতায় আসার পর খিলাফতের রাজধানী পরিবর্তন করা হয়। দামেস্ক থেকে রাজধানী সরিয়ে আনা হয় বাগদাদে। আব্বাসীয় খিলাফতের সময়, ৮ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাগদাদে বাইতুল হিকমত নামে একটি বৈজ্ঞানিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই কেন্দ্রটি বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির পণ্ডিতদের একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা ও উন্নয়ন করেছিলেন। এই সময়টিকে ইসলামের স্বর্ণযুগ বলা হয় কারণ এই সময়ে বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত, সাংস্কৃতিক ও শিল্পকলা বিষয়ে মুসলিমরা ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। আল-কিন্দি, আল ফারাবী, আল খারেজমি, ইবনে সিনা, হাসান ইবনুল হায়সাম, আল বিরুনি, ইবনে রুশদ, আল-জাজারি, আল-গাজ্জালি, ইবনে বতুতা, ইবনে খালদুন, উলুঘ বেগ এবং আরও অনেক বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত এই সময়ে অবদান রেখেছিলেন। তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ও উন্নয়ন করেছিলেন। তাদের কাজ মধ্যযুগীয় ইউরোপকে প্রভাবিত করেছিল। ইসলামের স্বর্ণযুগে, ভারত থেকে আন্দালুস পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হতো। এছাড়াও ঔষধ, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ইসলামি আইন ইত্যাদির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রেও গবেষণা করা হতো। এই সময়কালে, মুসলিম পণ্ডিতরা গ্রিক, লাতিন এবং অন্যান্য প্রাচীন ভাষাগুলো অনুবাদ করেন, যার ফলে এই সভ্যতাগুলোর জ্ঞান এবং চিন্তাভাবনাগুলো আরব এবং পারস্য বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই অনুবাদগুলো ইউরোপেও প্রভাব ফেলেছিল এবং রেনেসাঁর বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। চীনাদের সাথে যুদ্ধ এবং অন্যান্য সম্পর্কগুলোর সময় আরবরা কাগজের উৎপাদন কৌশল শিখেছিল। কাগজের ব্যবহারের ফলে পাণ্ডুলিপিগুলো আরও সহজে ছড়িয়ে পড়ে। আরবরা ভারত থেকে শূন্য এবং দশমিক পদ্ধতির আবিষ্কার গ্রহণ করেছিল। এর ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহ ও চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণ মানুষও পাটিগণিত বুঝতে ও ব্যবহার করতে সক্ষম হয়। গণিত ও পাটিগণিতের পাশাপাশি ত্রিকোণমিতিও বিকাশ লাভ করে। এই সময়ে উল্লেখযোগ্যভাবে পর্যবেক্ষণালয় নির্মিত হয় এবং আলোকবিজ্ঞান ও রসায়ন বিজ্ঞানও বিকশিত হতে থাকে।আল-শাফেয়ী হাদীসের সনদের সত্যতা নির্ধারণের একটি পদ্ধতি প্রণয়ন করেন। প্রাথমিক আব্বাসীয় যুগে, মুহাম্মদ আল-বুখারী এবং মুসলিম ইবনে আল-হাজ্জাজের মতো পণ্ডিতগণ সুন্নি হাদীসের প্রধান সংকলনগুলোকে সংকলিত করেন, অন্যদিকে আল-কুলায়নী এবং ইবন বাবুয়াহের মতো পণ্ডিতগণ শিয়া হাদীসের প্রধান সংকলনগুলো সংকলিত করেন। চারটি সুন্নি মাজহাব, হানাফি, হাম্বলি, মালিকি ও শাফিঈ, যথাক্রমে আবু হানিফা, আহমদ ইবনে হাম্বল, মালিক ইবনে আনাস এবং আল-শাফেয়ীদের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিপরীতে, জাফর আস-সাদিকের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে জাফরি আইনশাস্ত্র গঠিত হয়। নবম শতাব্দীতে, আল-তাবারী কুরআনের প্রথম তাফসীর (অর্থ ও বর্ণনা) তাফসীর আল-তাবারী সম্পন্ন করেন, যা সুন্নি ইসলামে সর্বাধিক উদ্ধৃত তাফসীরগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়ে ওঠে। হাসান আল-বসরির মতো তপস্বীরা একটি আন্দোলনকে অনুপ্রাণিত করে যা তাসাউফ বা সুফিবাদে পরিণত হয়। এই সময়ে, ধর্মতাত্ত্বিক সমস্যাগুলো, বিশেষত মুক্ত ইচ্ছার বিষয়ে, বিশিষ্টভাবে আলোচনা করা হয়। হাসান আল-বসরি মনে করতেন, যদিও আল্লাহ মানুষের কর্ম সম্পর্কে জানেন, কিন্তু ভালো এবং মন্দ কাজের আকাঙ্ক্ষা আসে মুক্ত ইচ্ছার অপব্যবহার এবং শয়তানের কুপ্ররোচনা থেকে। গ্রীক যুক্তিবাদী দর্শন মু'তাজিলা নামে পরিচিত এক ধরনের চিন্তাধারাকে প্রভাবিত করেছিল, যারা বিখ্যাত ওয়াসিল ইবনে আতার উদ্ভাবিত মুক্ত ইচ্ছার ধারণাকে সমর্থন করেছিল। আল-ফারাবি, ইবনে সিনা এবং ইবনে রুশদ এর মত দার্শনিকরা ইসলামের শিক্ষার সাথে অ্যারিস্টটলের ধারণাগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ করার চেষ্টা করেন, যা ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মের স্কোলাসিজম এবং ইহুদি ধর্মের মুসা বিন মৈমুনের কাজের অনুরূপ, অন্যদিকে আল-গাজালির মত অন্যরা এ ধরনের সমন্বয়বাদের বিরুদ্ধে যুক্তি দেখান এবং অবশেষে জয়লাভ করেন। ইসলামের স্বর্ণযুগ হিসেবে পরিচিত এই সময়ে, ইসলামী বিজ্ঞানে বিশাল অগ্রগতি সাধিত হয়। ঔষধ, গণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, কৃষি, পদার্থবিজ্ঞান, অর্থনীতি, প্রকৌশল এবং দৃষ্টিবিজ্ঞানসহ বিভিন্ন বিষয়ে মুসলিম বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আবূ আলী ইবনে সিনা (অ্যাভিসেনা) পরীক্ষামূলক ঔষধের একজন অগ্রগামী ছিলেন এবং তার রচিত ক্যানন অফ মেডিসিন' শতাব্দী ধরে ইসলামী বিশ্ব এবং ইউরোপে ঔষধের একটি প্রামাণিক পাঠ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। আর-রাজি (রাযেস) চিকিৎসাশাস্ত্রে প্রথম হাম এবং গুটিবসন্ত রোগকে আলাদাভাবে শনাক্ত করেন। সেই সময়ের সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রথম চিকিৎসকদের লাইসেন্স (অনুমতি) প্রদানের জন্য মেডিকেল ডিপ্লোমা প্রদান করা হতো। হাসান ইবনুল হায়সামকে আধুনিক বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির জনক এবং প্রায়শই "বিশ্বের প্রথম প্রকৃত বিজ্ঞানী" হিসেবে অভিহিত করা হয়। প্রকৌশলে, বানু মুসা ভাইদের নির্মিত স্বয়ংক্রিয় বাঁশি বাজানো যন্ত্রটিকে প্রথম প্রোগ্রামযোগ্য যন্ত্র বলে মনে করা হয়। গণিতে, আলগোরিদম শব্দটির উৎপত্তি মুহাম্মদ ইবনে মূসা আল-খারিজমির নাম থেকে, যিনি বীজগণিতের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচিত। তখনকার সময়ে সরকার বিজ্ঞানীদের বেতন আজকের পেশাদার ক্রীড়াবিদদের বেতনের সমান প্রদান করত। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস ৮৫৯ সালে প্রতিষ্ঠিত আল কারাওইন বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বের প্রাচীনতম ডিগ্রি-প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। খ্রিস্টান, ইহুদি এবং সাবিয়ানদের মতো অনেক অমুসলিমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামী সভ্যতায় অবদান রেখেছেনRémi Brague, Assyrians contributions to the Islamic civilization । বাইতুল হিকমাহ (হাউস অফ উইজডম) নামে পরিচিত প্রতিষ্ঠানে গ্রিক ও অন্যান্য সভ্যতার বইয়ের আরবি অনুবাদ এবং নতুন জ্ঞান উন্নয়নের জন্য খ্রিস্টান ও পার্সিয়ান পণ্ডিতদের নিয়োগ করা হয়েছিল।মেরি, জোসেফ ডব্লিউ এবং জেরে এল বাচারচ। "মধ্যযুগীয় ইসলামী সভ্যতা"। ভলিউম ১, সূচক এ–কে ২০০৬, পৃ. ৩০৪। আব্বাসীয় খিলাফত থেকে সৈন্যরা বিদ্রোহ করে ৮৬৮ সালে মিশরে তুলুনি রাজবংশ এবং ৯৭৭ সালে মধ্য এশিয়ায় গজনভি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করে। এই বিভাজনের সময়েই ৯৪৫ থেকে ১০৫৫ সালের মধ্যে শিয়া সতাব্দী আসে, যা হাজারবছরবাদী ইসমাইলি শিয়া মিশনারি আন্দোলনের উত্থান ঘটায়। একটি ইসমাইলি গোষ্ঠী, ফাতেমীয় রাজবংশ, ১০ম শতাব্দীতে উত্তর আফ্রিকা দখল করে নেয় এবং আরেকটি ইসমাইলি গোষ্ঠী, কারামাতিয়ানরা, মক্কা আক্রমণ করে এবং কাবাঘরে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর) চুরি করে নেয়। অন্য আরেকটি ইসমাইলি গোষ্ঠী, বুইদ রাজবংশ, বাগদাদ জয় করে এবং আব্বাসীয়দেরকে একটি নামমাত্র রাজতন্ত্রে পরিণত করে। সুন্নি সেলজুক রাজবংশ সময়ের ধর্মীয় পণ্ডিতদের মতামত প্রচার করে, বিশেষ করে নেজামিয়া নামে পরিচিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণের মাধ্যমে সুন্নি ইসলামকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রচারণা চালায়। এই নেজামিয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল-গাজ্জালী এবং শেখ সাদির সাথে সম্পর্কিত। ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের বাগদাদ আক্রমণ ও অবরোধ এবং আব্বাসীয় খিলাফতের পতন ইসলামী স্বর্ণযুগের সমাপ্তি ঘটায়। তবে কিছু কিছু সূত্র মতে এই সময় ১৪শ শতাব্দী পর্যন্ত, আবার কিছু সূত্র মতে ১৫শ শতাব্দী বা এমনকি ১৬শ শতাব্দী পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। মুসলিম বিশ্বের বিস্তার ধর্মীয় মিশনের মাধ্যমে চলতে থাকে, যা ভলগা বুলগেরিয়াকে ইসলামে রূপান্তরিত করে। দিল্লি সুলতানাত ভারতীয় উপমহাদেশের অনেক দূর পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং অনেকে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়, বিশেষ করে নিম্ন-বর্ণের হিন্দুরা, যাদের বংশধররা ভারতীয় মুসলিমদের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা গঠন করে। বাণিজ্যিক সুবাধে অনেক আগেই মুসলিমরা চীনে পৌঁছে, যেখানে তারা সংগং রাজবংশের আমদানি-রপ্তানি শিল্পে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। ইউয়ান রাজবংশে মুসলিমদেরকে শাসক সংখ্যালঘু শ্রেণী হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। প্রাক-আধুনিক যুগ (১২৫৮-১৮শ শতক) মুসলিম ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার সুবাধে বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করতেন এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার করতেন। সুফি তরিকার দরবেশরাও বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করতেন এবং মানুষকে ইসলামের শিক্ষায় দীক্ষা দিতেন। এইভাবে, ইসলাম বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অধীনে ইসলাম দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। এই ধর্মান্তর প্রায়ই বিভিন্ন ধর্মের বিশ্বাসের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘটত। উদাহরণস্বরূপ, হিন্দু লোককাহিনীতে মুহাম্মাদের উপস্থিতি দেখায় যে ইসলামে ধর্মান্তরিত ব্যক্তিরা কিভাবে তাদের পূর্ববর্তী ধর্মের কিছু বিশ্বাস ধরে রেখেছিল। এছাড়াও, মুসলিম তুর্করা তাদের নিজস্ব তুর্কি টেংরিবাদের বিশ্বাসের উপাদানগুলোকে ইসলামে অন্তর্ভুক্ত করেছিল। মিং রাজবংশের সময়কার চীনে, মুসলিমরা যারা আগের অভিবাসীদের বংশধর ছিল তারা চীনা সমাজে আত্মীকৃত হয়ে গিয়েছিল। কখনও কখনও, এই আত্মীকরণ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জোর করে করা হয়েছিল, যেমন চীনা নাম গ্রহণ এবং চীনা সংস্কৃতি মেনে চলা। তবে অনেক মুসলিম চীনারাও তাদের ইসলামী বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে ধরে রেখেছিল। নানজিং সেই সময় চীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী শিক্ষার কেন্দ্র ছিল। মঙ্গোলরা ১২৫৮ সালে বাগদাদ দখল করে এবং আব্বাসীয় খিলাফতকে ধ্বংস করে দেয়। আব্বাসীয় খিলাফত আরব সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল এবং এর পতনের ফলে আরব সংস্কৃতির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব পড়ে। ইরান ও মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত মুসলিম মঙ্গোল খানাতিরা ছিল মঙ্গোল সাম্রাজ্যের অংশ। মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খান ছিলেন একজন তুর্কি বংশোদ্ভূত মঙ্গোল নেতা। তিনি ১২শ শতাব্দীতে মধ্য এশিয়ায় মঙ্গোল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। মঙ্গোল সাম্রাজ্য তার শাসনামলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সাম্রাজ্য ছিল। এটি ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বিশাল অংশ জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৩শ শতাব্দীতে, মঙ্গোলরা ইরান ও মধ্য এশিয়ায় আক্রমণ করে এবং এই অঞ্চলগুলোকে তাদের সাম্রাজ্যের অংশ করে নেয়। মঙ্গোলরা এই অঞ্চলগুলোতে তাদের শাসন প্রতিষ্ঠা করে। মঙ্গোল শাসনাধীনে, ইরান ও মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত মুসলিম খানাতিরা পূর্ব এশিয়ায় বৃদ্ধিপ্রাপ্ত আন্তঃসংস্কৃতিক প্রবেশাধিকার থেকে উপকৃত হয়েছিল। পূর্ব এশিয়ায় তখন চীনা ও মঙ্গোল সাম্রাজ্য বিদ্যমান ছিল। এই দুটি সাম্রাজ্যের মধ্যে সংস্কৃতির আদান-প্রদান ছিল। ইরান ও মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত মুসলিম খানাতিরা সংস্কৃতির এই আদান-প্রদান থেকে উপকৃত হয়েছিল। নাসিরুদ্দিন আল-তুসি ছিলেন এই সময়কার একজন বিশিষ্ট পারস্য-তুর্কি পণ্ডিত। তিনি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, ধর্ম ও চিকিৎসাবিদ্যায় অবদান রেখেছিলেন। তিনি তার গণিত ও জ্যোতির্বিদ্যায় অবদানের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। নাসিরুদ্দিন আল-তুসির একটি গাণিতিক মডেল ছিল যা পরে নিকোলাস কোপার্নিকাস দ্বারা গৃহীত হয় বলে দাবি করা হয়। কোপার্নিকান সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তত্ত্ব প্রণয়ন করেছিলেন । জমশিদ আল-কাশি ছিলেন নাসিরুদ্দিন আল-তুসির ছাত্র। তিনি পাইয়ের একটি অনুমান প্রস্তাব করেছিলেন যা ১৮০ বছর ধরে অপেক্ষাকৃত সঠিক ছিল। পাই হলো একটি গাণিতিক ধ্রুবক যা একটি বৃত্তের পরিধিকে তার ব্যাসের দ্বারা ভাগ করে নির্ধারণ করা হয়। পাইয়ের মান প্রায় ৩.১৪। জমশিদ আল-কাশির অনুমানটি ছিল ৩.১৪১৫৯২। বারুদ অস্ত্রের উদ্ভব মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক কাঠামোতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল। বারুদ অস্ত্রগুলো তাদেরকে তাদের প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে একটি উল্লেখযোগ্য সামরিক সুবিধা দিয়েছিল, যা তাদেরকে তাদের কর্তৃত্বের প্রসার ঘটাতে সহায়তা করেছিল। এর ফলে, মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল একত্রিত হয়ে বৃহৎ এবং কেন্দ্রীয় রাষ্ট্র গঠন করেছিল। এই নতুন রাষ্ট্রকে "বারুদ সাম্রাজ্য" বলা হয় কারণ তাদের শক্তির উৎস ছিল বারুদ অস্ত্র। অটোমান সাম্রাজ্য ১৫১৭ খ্রিষ্টাব্দে হিজাজ অঞ্চল জয় করার পর, তারা নিজেদেরকে মুসলিম বিশ্বের নেতা হিসাবে ঘোষণা করেছিল। এই দাবিটিকে সমর্থন করার জন্য, তারা নিজেদেরকে খলিফা হিসাবে ঘোষণা করেছিল, যা মুসলিম বিশ্বের নেতার একটি ধর্মীয় উপাধি। সাফাভি রাজবংশ ১৫০১ খ্রিষ্টাব্দে ইরানে ক্ষমতায় এসেছিল। তারা ছিল একটি শিয়া মুসলিম রাজবংশ এবং তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধির ফলে মুসলিম বিশ্বে একটি নতুন ধরনের রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি হয়েছিল। বাবর, একজন তুর্কি মুসলিম শাসক, ১৫২৬ সালে ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই সাম্রাজ্যটি দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিম শাসনের একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিল। বারুদ সাম্রাজ্য বলতে বোঝায় সেই সাম্রাজ্যগুলো যেগুলো বারুদ ব্যবহার করে যুদ্ধ করতে পেরেছিল। এই সাম্রাজ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে উসমানীয় সাম্রাজ্য, সাফাভি সাম্রাজ্য এবং মুঘল সাম্রাজ্য। এই সাম্রাজ্যগুলোর কেন্দ্রীয় সরকারগুলোর ধর্ম ছিল ইসলাম। এই ধর্ম সাম্রাজ্যের জনসংখ্যার ধর্মীয় অনুশীলনকে প্রভাবিত করেছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্যের শাসকগণ সুফিবাদে বিশ্বাস করতেন। সুফিবাদ হলো ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক শাখা যা ব্যক্তিগত আধ্যাত্মিক অনুশীলনের উপর জোর দেয়। উসমানীয় শাসকগণ সুফিবাদের প্রচার করেছিলেন এবং সুফি দরগাহগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। এই কারণে, সুফিবাদ উসমানীয় সাম্রাজ্যের জনসাধারণের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। মৌলভি তরিকা এবং বেকতাশি তরিকা হলো সুফিবাদের দুটি প্রধান শাখা। এই তরিকাগুলোর সুফিদের উসমানীয় সাম্রাজ্যের সুলতানদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং সুফিবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের প্রতীক ছিল। সাফাভি সাম্রাজ্য ছিল একটি শিয়া ইসলামী সাম্রাজ্য। সাফাভি শাসকগণ দ্বাদশ ইমামবাদী শিয়া ইসলামকে প্রচার করেছিলেন। এই কারণে, দ্বাদশ ইমামবাদী শিয়া ইসলাম ইরান এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ইরানি অভিবাসীরা দক্ষিণ এশিয়ায় শিয়া ইসলামের বিস্তারে সহায়তা করেছে। এই অভিবাসীরা দক্ষ আমলা এবং জমিদার হিসাবে কাজ করত। তারা শিয়া ইসলামের শিক্ষা এবং অনুশীলনকে দক্ষিণ এশিয়ায় ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করেছিল। নাদির শাহ ছিলেন একজন শিয়া মুসলিম যিনি সাফাভি সাম্রাজ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি সুন্নিদের সাথে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি বারো ইমামবাদকে সুন্নি ইসলামের পঞ্চম মতবাদ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করেছিলেন, যাকে জাফারিবাদ বলা হয়। কিন্তু, এই প্রস্তাবটি উসমানীয় সাম্রাজ্য দ্বারা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। আধুনিক যুগ (১৮শ-২০শতক) ইবনে তাইমিয়া ছিলেন একজন বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত যিনি রক্ষণশীল ইসলামের প্রবক্তা ছিলেন। ১৪ শতকের গোড়ার দিকে, তিনি দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কারণ তিনি বিশ্বাস করতেন যে তারা ইসলামের মূল শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তিনি আলেমদের অন্ধ অনুকরণ করার পরিবর্তে তাদের নিজস্ব যুক্তি এবং বিবেচনা ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। ইবনে তাইমিয়া কাফির বলে মনে করা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে জিহাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তবে, তার রচিত রচনাগুলো তার জীবদ্দশায় কেবলমাত্র একটি মার্জিনাল ভূমিকা পালন করেছিল। কারণ তিনি তখনকার সময়ের প্রধান ইসলামী পণ্ডিতদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব ছিলেন একজন আরব ইসলামী পণ্ডিত যিনি ১৮শতকে আরবদেশে, ইবন তাইমিয়ার ও ইবনে কাইয়িমের রচনাবলী দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ওয়াহাবি আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। ইবনে তাইমিয়া ও ইবনে কাইয়িম ছিলেন দুজন ইসলামি পণ্ডিত যারা ইসলামের একটি রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে ইসলামের মূল নীতিগুলোকে বিকৃত করা হয়েছে এবং এটিকে তার খাঁটি রূপে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। ওয়াহাবি আন্দোলন বিশুদ্ধ ইসলামের পুনরুজ্জীবনের আহ্বান করেছিল।গাবোর অ্যাগোস্টন, ব্রুস অ্যালান দ্য মাস্টার্স এনসাইক্লোপিডিয়া অফ দ্য অটোমান এম্পায়ার ইনফোবেস পাবলিশিং ২০১০ পৃ. ২৬০ মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাব বিশ্বাস করতেন যে অনেক স্থানীয় ইসলামি রীতিনীতি, যেমন মুহাম্মাদের বা ঐশী ব্যক্তিদের সমাধিতে যাওয়া, পরবর্তীকালের নতুনত্ব এবং পাপ। তিনি এই রীতিনীতিগুলোকে ধ্বংস করার আহ্বান জানান। তিনি পবিত্র পাথর ও গাছ, সুফি মাজার, মুহাম্মাদ ও তাঁর সঙ্গীদের সমাধি এবং শিয়াদের বৃহত্তম হজস্থল কারবালার হোসেনের সমাধিও ধ্বংস করেন। ১৯শতকে মক্কা থেকে ফিরে আসার পর, মা ওয়ানফু ও মা দেবাও চীনে সালাফি আন্দোলনগুলোকে সমর্থন করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে চীনের ইসলামকে খাঁটি রূপে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত, সুফি গোষ্ঠীগুলোর দ্বারা নিপীড়িত হয়ে, তারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিলেন। ১৯ শতকে, লিবিয়ার সানুসি আন্দোলন এবং সুদানের মুহাম্মদ আহমদ আল-মাহদীর আন্দোলন, দুটি সুফি আন্দোলন ছিল যা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করে। সানুসি আন্দোলন লিবিয়ার একটি বিস্তৃত অঞ্চলকে নিয়ন্ত্রণ করেছিল এবং মুহাম্মদ আহমদ আল-মাহদীর আন্দোলন সুদানে একটি নতুন ইসলামী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এই সাফল্যগুলো দেখায় যে সুফিবাদ এখনও অনেক মুসলিমের জন্য একটি জনপ্রিয় এবং গ্রহণযোগ্য রূপ ছিল। ভারতের শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী ছিলেন একজন ইসলামি পণ্ডিত যিনি ১৮ শতকে বাস করতেন। তিনি সুফিবাদের একজন সমর্থক ছিলেন, তবে তিনি এটিকে আরও বেশি যুক্তিবাদী এবং বৈজ্ঞানিক করে তুলতে চেয়েছিলেন। তিনি সুফিবাদের কিছু রীতিনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন, যেমন কবরের উপর ভক্তি এবং মৃতদের কাছে প্রার্থনা করা। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভীর এই দৃষ্টিভঙ্গি দেওবন্দি আন্দোলনের উপর প্রভাব ফেলেছিল। দেওবন্দি আন্দোলন হলো একটি ইসলামি আন্দোলন যা ভারতে গড়ে উঠেছিল। আন্দোলনটি সুফিবাদের কিছু রীতিনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে, যা তারা অযৌক্তিক এবং বিদ্বেষপূর্ণ বলে মনে করে। দেওবন্দি আন্দোলনের কিছু রীতিনীতিকে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে রেজভী আন্দোলন গড়ে ওঠে। রেজভী আন্দোলন সুফিবাদের জনপ্রিয় রূপকে সমর্থন করে, যা দেওবন্দি আন্দোলন প্রত্যাখ্যান করে। রেজভী আন্দোলন সুফিবাদের অনুশীলনগুলোকেও পুনর্গঠিত করেছে, যাতে এগুলো আরও বেশি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। ১৮০০ সাল থেকে মুসলিম বিশ্ব, বিশেষ করে অমুসলিম ইউরোপীয় শক্তির সাথে তুলনা করলে, সাধারণভাবে রাজনৈতিকভাবে পিছিয়ে ছিল। এর আগে, ১৫ শতকে, রিকনকোয়েস্টা ইবেরিয়ায় মুসলিম উপস্থিতির অবসান ঘটাতে সক্ষম হয়েছিল। রিকনকোয়েস্টা হলো একটি শতাব্দীব্যাপী প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খ্রিস্টানরা ইবেরীয় উপদ্বীপ থেকে মুসলিমদের বহিষ্কার করেছিল। ১৯ শতকে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে মুঘল সাম্রাজ্যকে আনুষ্ঠানিকভাবে অধিগ্রহণ করেছিল। মুঘল সাম্রাজ্য ১৫২৬ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ভারতে শাসন করেছিল। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদের প্রতিক্রিয়ায়, অনেক বুদ্ধিজীবী ইসলামকে সংস্কার করার চেষ্টা করেন। ইসলামি আধুনিকতা, যা প্রাথমিকভাবে পশ্চিমা পণ্ডিতদের দ্বারা সালাফিবাদ নামে অভিহিত করা হয়েছিল, আধুনিক মূল্যবোধ এবং নীতি যেমন গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেছিল। ইসলামী আধুনিকতার উল্লেখযোগ্য অগ্রগামীদের মধ্যে রয়েছে মুহাম্মদ আবদুহ এবং জামাল উদ্দিন আফগানি। মুহাম্মদ আবদুহ ছিলেন একজন মিশরীয় ধর্মীয় নেতা এবং লেখক যিনি ইসলামকে আধুনিক বিশ্বের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য কাজ করেছিলেন। জামাল উদ্দিন আফগানি ছিলেন একজন আফগান ধর্মীয় নেতা এবং রাজনৈতিক কর্মী যিনি ইসলামী বিশ্বের পুনর্জাগরণের জন্য কাজ করেছিলেন। আবুল আ'লা মওদুদী আধুনিক রাজনৈতিকভাবে ইসলামকে প্রভাবিত করতে সাহায্য করেছিলেন। আবুল আ'লা মওদুদী ছিলেন একজন পাকিস্তানি ইসলামী পণ্ডিত যিনি একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে ছিলেন। আধুনিক ন্যায়সংহিতার অনুরূপে, শরিয়াহর সাথে প্রথমবারের মতো ১৮৬৯ সালে উসমানীয় সাম্রাজ্যের মেজেলে নীতি আংশিকভাবে আইনে রূপান্তরিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্য মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে পরাজিত হয়। এরপর, ১৯১৮ সালে ভার্সাই চুক্তির মাধ্যমে উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙে ভাগ করে দেওয়া হয়। ১৯২৪ সালে, তুরস্কের নতুন সরকার খিলাফতকে বিলুপ্ত করে দেয়। সর্ব-ইসলামবাদীরা মুসলিমদের একত্রিত করার চেষ্টা করেছিল এবং সর্ব-আরববাদীদের মতো ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী শক্তির সাথে প্রতিযোগিতা করেছিল। ১৯৬৯ সালে, জেরুজালেমের আল-আকসা মসজিদে দুজন ইহুদি ধর্মীয় নেতা দ্বারা আগুন দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায়, ১৯৬৯ সালে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) প্রতিষ্ঠিত হয়। ওআইসি একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা যা মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা এবং সমন্বয়ের লক্ষ্যে কাজ করে। শিল্পোন্নত দেশগুলোর সাথে যোগাযোগের ফলে অর্থনৈতিক অভিবাসনের মাধ্যমে মুসলিম জনগোষ্ঠী নতুন এলাকায় আসে। অনেক মুসলিম চুক্তিবদ্ধ শ্রমিক হিসেবে (বেশিরভাগ দক্ষিণ এশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া থেকে) ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে অভিবাসিত হয়, যা আমেরিকা অঞ্চলে শতাংশের হিসাবে বৃহত্তম মুসলিম জনগোষ্ঠী গঠন করে। সিরিয়া এবং লেবানন থেকে অভিবাসনের মাধ্যমে লাতিন আমেরিকায় মুসলিম জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। ফলস্বরূপ, সাহারা-নিম্ন আফ্রিকায় শহরাঞ্চলের বৃদ্ধি এবং বাণিজ্যের বৃদ্ধি মুসলিমদের নতুন এলাকায় বসতি স্থাপন এবং তাদের বিশ্বাস ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সুযোগ বৃদ্ধি করে দেয়, যার ফলে ১৮৬৯ থেকে ১৯১৪ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা সম্ভবত দ্বিগুণ হয়ে যায়। সমসাময়িক যুগ (২০ শতক-বর্তমান) ইসলামী আধুনিকতাবাদীরা আরব বসন্তের পর আরব বিশ্বে ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলনের উত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মুসলিম ব্রাদারহুড, জামায়াতে ইসলামী এবং একে পার্টি সহ এই আন্দোলনগুলো ইসলামী আধুনিকতাবাদের নীতিগুলোকে তাদের আদর্শের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করেছিল। একে পার্টি, যা তুরস্কের বর্তমান শাসক দল, ইসলামী আধুনিকতাবাদের নীতিগুলোকে অনুসরণ করে। একে পার্টি একটি গণতান্ত্রিক দল যা ইসলামী মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ১৯৭৯ সালের ইরানি বিপ্লব একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাজতন্ত্রকে উৎখাত করে একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই বিপ্লব ইসলামী আধুনিকতাবাদের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল, যা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন ধারা প্রদান করেছিল। সৈয়দ রশিদ রেজা সহ কিছু লোক ইসলামী আধুনিকতাবাদীদেরকে ইসলামের মূল্যবোধের উপর পশ্চিমা প্রভাবের জন্য দায়ী করেছিল। তারা এমন একটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছিল যা পশ্চিমা প্রভাব থেকে মুক্ত ছিল। ইসলামী আধুনিকতার কিছু বিরোধীরা এমন একটি ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছিল যা ইসলামের প্রাথমিক যুগের অনুরূপ ছিল। ইরাক ও সিরিয়ার ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই ধরনের একটি দল ছিল। আইএস একটি কঠোর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করেছিল যা আধুনিক বিশ্বের সমস্ত প্রভাবকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। ইসলামী আধুনিকতাবাদের বিরোধীদের মধ্যে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ছিল। কিছু লোক নীরব হয়ে পড়েছিল, অন্যরা সহিংসতা সৃষ্টির দিকে পরিচালিত হয়েছিল। ২০ শতকে, মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোর উত্থান ঘটে। এই আন্দোলনগুলো ধর্মীয় কর্তৃত্বের উপর জোর দেয় এবং রাজনৈতিক পরিবর্তনের আহ্বান জানায়। সরকারগুলো এই আন্দোলনগুলোকে বিভিন্ন উপায়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। তুরস্কে, সেনাবাহিনী ইসলামী সরকারকে উৎখাত করার জন্য অভ্যুত্থান চালায়। আধুনিক তুরস্কের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে কাজ করেছিলেন। তিনি ইসলামী রীতিনীতি ও সংস্কৃতির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন এবং ধর্মীয় নেতাদের থেকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ সরিয়ে নেন। এই নীতিগুলোর ফলে ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলনগুলোর উত্থান হয়। ১৯৮০ সালে, তুর্কি সেনাবাহিনীর একটি অভ্যুত্থান ইসলামী সরকারকে উৎখাত করে এবং ধর্মনিরপেক্ষ নীতিগুলো পুনরুদ্ধার করে। শ্যাফসরাব, যা মুসলিম মহিলাদের দ্বারা পরিধান করা একটি মাথার কাপড়, আইন দ্বারা সীমাবদ্ধ করা হয়েছিল, যেটা তিউনিসিয়াতেও ঘটেছিল। অন্যান্য দেশে, সরকারগুলো ইসলামী কর্তৃত্বকে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করে। উদাহরণস্বরূপ, সৌদি আরবে, সরকার ধর্মীয় শিক্ষা এবং প্রচার নিয়ন্ত্রণ করে। মিশরে, সরকার আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এই সরকারগুলো ইসলামী কর্তৃত্বকে ব্যবহার করে জনগণের সমর্থন অর্জন এবং ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলনগুলোকে দমন করার চেষ্টা করেছিল। সৌদি আরব এবং অন্যান্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইসলামী বিপ্লবী আন্দোলনগুলোর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিল। তারা এমন ইসলামী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থায়ন করেছিল যা তাদের পছন্দসই ঐতিহ্যবাহী ইসলামের প্রতিনিধিত্ব করে বলে মনে করে। এই গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে একটি হলো সালাফিবাদ, যা ধর্মীয় কর্তৃত্ত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মুসলিমরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে নিপীড়নের শিকার হয়। এই নিপীড়নগুলো রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে হয়। লাল খেমার, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং বসনিয়ার জাতীয়তাবাদী শক্তিগুলো মুসলিম সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নিপীড়ন চালিয়েছিল। এই শক্তিগুলো মুসলিমদের ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে তাদেরকে জনসংখ্যার বাকি অংশ থেকে আলাদা হিসাবে দেখেছিল এবং তাদেরকে দমন করার জন্য পদক্ষেপ নিয়েছিল। মায়ানমার সেনাবাহিনীর রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর নির্যাতনকে যখন ওএইচসিআর ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন গণহত্যা, জাতিগত নির্মূল এবং অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে শনাক্ত করে তখন জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই গণহত্যাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসাবে চিহ্নিত করে। ইন্টারনেট, টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ইত্যাদির মতো আধুনিক প্রযুক্তির উত্থানের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এখন ধর্মীয় জ্ঞানকে আরও সহজে জানতে পারে। এর ফলে ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুশীলনের মধ্যে নতুন নতুন প্রবণতা দেখা দিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলমানদের সাথে যোগাযোগের সুযোগ বেড়েছে। এর ফলে মুসলমানদের মধ্যে ধর্মীয় অনুশীলনের মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। যেমন, হিজাব পরা, যা একসময় মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকার মুসলিম মহিলাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, এখন বিশ্বের অন্যান্য অংশের মুসলিম মহিলাদের মধ্যেও এটি সাধারণ হয়ে উঠছে। এছাড়াও, কিছু মুসলিম বুদ্ধিজীবী পবিত্র গ্রন্থের উপর ভিত্তি করে ইসলামী বিশ্বাসকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য থেকে আলাদা করার চেষ্টা করছেন। এর ফলে ইসলামের একটি আরও "নির্ভুল" এবং "আধুনিক" ব্যাখ্যার বিকাশ হতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে মুসলমানরা এখন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের ধর্মীয় নেতাদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। এর ফলে স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী উলামাদের প্রভাব হ্রাস পেতে পারে এবং নতুন ধর্মীয় নেতাদের উত্থান হতে পারে। কিছু মুসলমান ইসলামের একটি আরও "ব্যক্তিগতকৃত" ব্যাখ্যা গ্রহণ করছেন। তারা বিশ্বাস করেন যে প্রত্যেক ব্যক্তির নিজের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং অনুশীলনকে নির্ধারণ করার অধিকার রয়েছে। এই ধরনের ব্যাখ্যাগুলোকে অনেকে "অসামঞ্জস্যপূর্ণ" বলে সমালোচনা করেন, কারণ তারা ইসলামের ঐতিহ্যবাহী ব্যাখ্যা থেকে সরে যায়। অনেক মুসলমান ধর্মনিরপেক্ষতাকে একটি বিদেশী আদর্শ হিসাবে দেখেন যা বৈদেশিক উপনিবেশকালীন শাসকদের দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারা বিশ্বাস করেন যে ধর্মনিরপেক্ষতা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। জনসংখ্যা ও বিস্তার ২০১৫ সালের হিসাবে, বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় ২৪%, বা প্রায় ১.৮ বিলিয়ন (প্রায় ১৮০কোটি) মানুষ মুসলিম।লিপকা, মাইকেল এবং কনরাড হ্যাকেট। [২০১৫] ৬ এপ্রিল ২০১৭। "কেন মুসলিমরা বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল ধর্মীয় গোষ্ঠী" (তথ্য বিশ্লেষণ)। ফ্যাক্ট ট্যাঙ্ক। পিউ রিসার্চ সেন্টার. ১৯০০ সালে, এই অনুমান ছিল ১২.৩%, ১৯৯০ সালে এটি ছিল ১৯.৯% এবং ২০৫০ সালের মধ্যে অনুপাত ২৯.৭% হবে বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। পিউ রিসার্চ সেন্টার অনুমান করেছে যে বিশ্বের ৮৭-৯০% মুসলিম সুন্নি এবং ১০-১৩% মুসলিম শিয়া মতাদর্শে বিশ্বাসী। প্রায় ৪৯টি দেশ মুসলিম-প্রধান, বিশ্বের মুসলিমদের ৬২% এশিয়ায় বাস করে এবং ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশে এককভাবে প্রায় ৮০কোটি অনুসারী রয়েছে। আরব মুসলিমরা বিশ্বের মুসলিমদের মধ্যে বৃহত্তম জাতিগোষ্ঠী গঠন করে, তারপরে বাঙালি মুসলিম এবং পাঞ্জাবী মুসলিমরা। বেশিরভাগ অনুমানই ইঙ্গিত দেয় যে চীনে প্রায় ২ থেকে ৩ কোটি মুসলিম বসবাস করে (চীনের মোট জনসংখ্যার ১.৫% থেকে ২%)। ইউরোপের অনেক দেশে খ্রিস্টধর্মের পরেই ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ২০০৫ সালে ইউরোপের মোট জনসংখ্যার ৪.৯% ইসলাম ধর্মের অনুসারী ছিল, যার মূল কারণ হিসেবে মূলত অভিবাসন এবং ২০০৫ সাল থেকে মুসলিমদের উচ্চ জন্মহার উল্লেখ করা হয়। ধর্মীয় ধর্মান্তর মুসলিম জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে কোনো বিশেষ প্রভাব ফেলে না কারণ "মুসলিম হওয়ার জন্য ধর্মান্তরিত হওয়া লোকের সংখ্যা আনুমানিকভাবে ইসলামি বিশ্বাস থেকে বিদায়ী হওয়া মুসলিমদের সংখ্যার সমান"। যদিও, ২০৫০ সালের মধ্যে প্রধানত সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা থেকে (২৯ লক্ষ) ধর্মীয় ধর্মান্তরের মাধ্যমে প্রায় ৩০ লক্ষ নতুন মুসলিম হওয়ার আশা করা হচ্ছে। সিএনএন-এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, "ইসলাম বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো আফ্রিকান-আমেরিকান জনগোষ্ঠী"। ব্রিটেনে, প্রতি বছর প্রায় ৬,০০০ লোক ইসলামে ধর্মান্তরিত হয় এবং ব্রিটিশ মুসলিম মাসিক জরিপের একটি নিবন্ধ অনুসারে, ব্রিটেনে নতুন মুসলিম ধর্মান্তরিতদের বেশিরভাগই ছিল নারী। দ্য হাফিংটন পোস্টের মতে, "পর্যবেক্ষকরা অনুমান করেন যে প্রতি বছর প্রায় ২০ হাজার আমেরিকান ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়", যাদের বেশিরভাগই নারী এবং আফ্রিকান-আমেরিকান। শতাংশ এবং মোট সংখ্যা উভয় ক্ষেত্রেই, ইসলাম বিশ্বের দ্রুততম ক্রমবর্ধমান প্রধান ধর্মীয় জনগোষ্ঠী এবং ২১ শতাব্দীর শেষের দিকে খ্রিস্টধর্মকে ছাড়িয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ধর্ম হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনুমান করা হচ্ছে, ২০৫০ সালের মধ্যে মুসলিমদের সংখ্যা বিশ্বজুড়ে খ্রিস্টানদের সংখ্যার প্রায় সমান হবে। প্রধান শাখা বা সম্প্রদায় সম্প্রদায় বা ধর্মীয় শাখা হলো ধর্মীয় নেতাদের বা সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপলব্ধি। অর্থাৎ, ধর্মীয় বিষয়ে একটি নির্দিষ্ট মতবাদ বা বিশ্বাস যা একটি নির্দিষ্ট ধর্মীয় গোষ্ঠী দ্বারা অনুসরণ করা হয়। ইসলামের ইতিহাসে, ধর্মীয় বিষয় ছাড়াও রাজনৈতিক কারণেও বিভিন্ন মতভেদ ও বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছে। এসব বিভাজনের ফলে ইসলামের মধ্যে বিভিন্ন সম্প্রদায় বা শাখার উদ্ভব হয়েছে। এই বিভাজনের মধ্যে কিছু সম্প্রদায়, যেমন বাবিবাদ ও বাহা'ইবাদ, এমন গভীর বিশ্বাসগত পার্থক্য দেখায় যে, সেগুলোকে ইসলামের থেকে আলাদা স্বাধীন ধর্ম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ, এই সম্প্রদায় ইসলামের মূল বিশ্বাস থেকে এতটাই বিচ্যুত যে, সেগুলোকে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত নাও বলা যেতে পারে। এই বিভাজনের বাইরেও ধর্মীয় নেতাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনা থেকে উদ্ভূত কিছু সম্প্রদায়ও রয়েছে। অর্থাৎ, ধর্মীয় নেতাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনা থেকেও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের বিভাজনের সৃষ্টি হতে পারে। মুসলিম বিশ্বে সুন্নি-শিয়া মতবাদের বাইরে যেসব প্রধান সম্প্রদায় সক্রিয় রয়েছে সেগুলো হলো: বাতিনী-সুফি প্রবণতা, সালাফি-ওয়াহাবি আন্দোলন, আহমদিয়া, কুরআনবাদ, ইয়াযদানিবাদ ইত্যাদি। ইসলামের পণ্ডিত মুহাম্মদ ইবনে আবু জাহরা তাঁর "মাজহাব আত-তারিখ" (ইসলামের ধর্মীয় মতবাদের ইতিহাস) নামক বইয়ে ইসলামের ধর্মীয় মতবাদগুলোকে তিনটি শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন: রাজনৈতিক মতবাদ, ধর্মীয় মতবাদ এবং ধর্মীয় আইনের মতবাদ। রাজনৈতিক মতবাদ ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদের মধ্যে তিনটি প্রধান মতবাদ রয়েছে: সুন্নি, শিয়া এবং খারিজি। এই তিনটি মতবাদের উদ্ভব এবং বিভাজন ইসলামের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই তিনটি মতবাদের রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন প্রভাবও হয়েছে। ইসলামের নবী মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর, রাষ্ট্রের নেতৃত্বের প্রশ্নে একটি বিভক্তি দেখা দেয়। কিছু লোক রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে ইমাম আলীর নেতৃত্বকে সমর্থন করে। শিয়া বিশ্বাস অনুসারে, ইমামত আলীর অধিকার এবং নবী তাঁর জীবদ্দশায় তা ইঙ্গিত করেছিলেন। সুন্নিরা আলীর ইমামতের বৈধতা স্বীকার করে, তবে নবী তাঁর জীবদ্দশায় তাঁর পরবর্তী ইমাম (খালিফা) হিসাবে আলীর ইঙ্গিত করেছেন বলে তারা বিশ্বাস করে না। শিয়াদের বেশিরভাগই আলীর আগের তিন খলিফা (আবু বকর, ওমর, ওসমান)-কে স্বীকার করে না, যখন সুন্নিরা তাদের স্বীকার করে। শিয়া এবং সুন্নিদের মধ্যে বিতর্ক এইভাবে রাজনৈতিক বিতর্কের সাথে (কে ইমাম হওয়া উচিত) শুরু হয়েছিল, সময়ের সাথে সাথে দুটি দল ইবাদত এবং বিভিন্ন আকিদা বিষয়ের ক্ষেত্রেও বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। তৃতীয় রাজনৈতিক দল খারিজিরা, শুরুতে আলীর সমর্থক ছিলেন। যাইহোক, সিফফিন যুদ্ধের পরে বিচারক নিযুক্ত করার ঘটনায় তারা পরে বিরোধিতা করেছিল, তারা এই বিচারকত্বকে কুফরি বলে দাবি করেছিল এবং একটি পৃথক দল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল। সুন্নি সুন্নি ইসলাম বা সুন্নবাদ ইসলামের বৃহত্তম সম্প্রদায়ের নাম। এই শব্দটি আহল আস-সুন্না ওয়াল জামাআত শব্দগুচ্ছের সংক্ষিপ্ত রূপ, যার অর্থ "সুন্নাহ (নবী মুহাম্মাদ এর আদর্শ) এবং সম্প্রদায়ের লোক"। সুন্নিরা বিশ্বাস করেন যে প্রথম চারজন খলিফা ছিলেন মুহাম্মাদ এর সঠিক উত্তরাধিকারী। তারা ইসলামের আইনগত বিষয়ের জন্য প্রধানত ছয়টি হাদিস গ্রন্থের উল্লেখ করেন, পাশাপাশি চারটি প্রচলিত ফিকহ মতবাদের একটি অনুসরণ করেন: হানাফি, হাম্বলি, মালিকি এবং শাফেয়ি। বিশ্বের সবচেয়ে সাধারণ মুসলিম সম্প্রদায় হল সুন্নিবাদ এবং বর্তমান মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০-৮৫% সুন্নি। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুসলিম সম্প্রদায় হলো সুন্নিরা। তাদের সংখ্যা প্রায় ১৮০কোটি। সুন্নিরা, শিয়াদের থেকে আলাদাভাবে, মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর খলিফা হওয়া প্রথম চার খলিফার (খুলাফায়ে রাশেদীন) সকলকে স্বীকৃতি দেয় এবং চার খলিফাকে "সত্যের উপর অটুট থাকা খলিফা" হিসাবে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসায় স্মরণ করে। সুন্নিরা বিশ্বাস করে যে মুহাম্মাদের মৃত্যুর পর খলিফা হওয়ার জন্য প্রথম চারজন ব্যক্তি সবচেয়ে যোগ্য ছিলেন। সুন্নিবাদে বিভিন্ন আলেম বিভিন্ন ইমামত/খিলাফতের সংজ্ঞা দেন, তবে সাধারণ বিষয় হলো যে কারও বংশ ইমামতের অধিকারী হওয়ার ধারণা নেই এবং এটি সাধারণভাবে শিয়াদের সাথে এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্যগুলোর মধ্যে একটি। সুন্নিরা বিশ্বাস করে যে ইমাম হওয়ার জন্য কারও উত্তরাধিকার থাকার প্রয়োজন নেই। প্রকৃতপক্ষে, ইমাম এবং খলিফা পদটি সুন্নিবাদে গুরুত্বপূর্ণ। সুন্নিরা বিশ্বাস করে যে ইমাম এবং খলিফা গুরুত্বপূর্ণ পদ, তবে তারা এটাও বিশ্বাস করে যে তারা ঈমানের একটি অপরিহার্য অংশ নয়। একইভাবে, মুহাম্মাদের নাতি হুসাইনকে কারবালার যুদ্ধে হত্যার ঘটনাটি সাধারণভাবে একটি দুঃখজনক ঘটনা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং ঘটনার জন্য দায়ী ইয়াজিদ, সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্রভাবে নিন্দিত হয় এবং সুন্নিবাদে এটি নাম হিসাবে ইয়াজিদ প্রায় কখনই ব্যবহৃত হয় না। সুন্নিরা কারবালার ঘটনাকে হৃদয়বিদারক ঘটনা হিসাবে স্মরণ করে, তবে তারা শিয়াদের মতো করে এটিকে প্রতি বছর অনুষ্ঠানের সাথে পালন করে না। শিয়াদের অনেক সম্প্রদায়ের দ্বারা স্বীকৃত যে ইমামদের অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা রয়েছে, তারা পাপমুক্ত এবং ভুলহীন, কিন্তু এই ধারণাগুলো সুন্নিবাদে নেই। সুন্নিরা বিশ্বাস করে না যে ইমামরা অসাধারণ বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা, জ্ঞান এবং প্রজ্ঞা সম্পন্ন, তারা পাপমুক্ত এবং ভুলহীন। এছাড়াও, শিয়া মতবাদে বেশিরভাগ ইমামদের কথা ও কর্ম হাদিস সংকলনে গণনা করা হয়, কিন্তু সুন্নিবাদে হাদিস সংকলনে শুধুমাত্র মুহাম্মাদের কথা এবং কর্মকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সুন্নিরা হাদিস সংকলনে ইমামদের কথা ও কর্ম অন্তর্ভুক্ত করে না। ঐতিহ্যবাহী ধর্মতত্ত্ব হলো সুন্নি মতবাদের একটি ধারা যার প্রবক্তা মূলত আহমদ ইবনে হাম্বল (৭৮০-৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ)। এই ধারার অনুসারীরা কুরআন ও সুন্নাহর আক্ষরিক অর্থে বিশ্বাস করেন এবং মনে করেন যে কুরআন অকৃত্রিম ও চিরন্তন। তারা ধর্মীয় ও নৈতিক বিষয়ে কালাম নামে যুক্তিবাদী ধর্মতত্ত্বের বিরোধিতা করেন। মুতাজিলাহ হলো সুন্নি মতবাদের আরেকটি ধারা যা প্রাচীন গ্রিক দর্শনের দ্বারা অনুপ্রাণিত। মাতুরিদি মতবাদের প্রবক্তা আবু মনসুর আল-মাতুরিদি (৮৫৩-৯৪৪ খ্রিস্টাব্দ)। এই মতবাদ অনুসারে, মৌলিক নৈতিকতার জন্য ধর্মগ্রন্থের প্রয়োজন নেই এবং ভালো ও মন্দ বুঝতে মানুষের বিবেকই যথেষ্ট। তবে মানুষের বোধগম্যতার বাইরের বিষয়গুলোর জন্য তারা ধর্মীয় প্রত্যাদেশের ওপর নির্ভর করে।আশআরি মতবাদের প্রবক্তা আল-আশআরি (আনু. ৮৭৪-৯৩৬ খ্রিস্টাব্দ)। এই মতবাদ অনুসারে, নৈতিকতা কেবল ঐশী প্রত্যাদেশ থেকে উদ্ভূত হতে পারে, তবে ব্যাখ্যা সংক্রান্ত বিষয়ে তারা বিবেককে গ্রহণ করে। এই মতবাদ মুতাজিলাহর পদ্ধতি এবং ঐতিহ্যবাহী ধর্মতত্ত্বের ধারণাগুলোকে একত্র করে। সালাফিবাদ হলো একটি পুনর্জাগরণ আন্দোলন যা মুসলিমদের প্রথম প্রজন্মের অনুশীলনগুলোতে ফিরে আসার আহ্বান জানায়। ১৮শ শতাব্দীতে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাব আধুনিক সৌদি আরবে স'লাফি আন্দোলন শুরু করেন, যাকে বহিরাগতরা ওয়াহাববাদ বলে অভিহিত করা হয়। আহলে হাদীস নামে একটি অনুরূপ আন্দোলনও শতাব্দী-জোড়া সুন্নি আইনি ঐতিহ্যের প্রতি গুরুত্ব কমিয়ে দিয়ে কুরআন ও হাদীসকে সরাসরি অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করে। নূরচু সুন্নি আন্দোলন শুরু করেন সাইদ নুরসী (১৮৭৭-১৯৬০); এটি তাসাউফ এবং বিজ্ঞানের দর্শনকে একত্রিত করে।রবার্ট ডব্লিউ হেফনার শরীয়া রাজনীতি: আধুনিক বিশ্বে ইসলামিক আইন ও সমাজ ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটি প্রেস ২০১১ পৃ. ১৭০ শিয়া শিয়া ইসলাম হলো ইসলামের দ্বিতীয় বৃহত্তম সম্প্রদায়। বিশ্বব্যাপী শিয়া মুসলমানদের সংখ্যা প্রায় ২০ কোটি, যা মোট মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় ১০%। শিয়া ইসলামের মূল বিশ্বাস হলো যে মুহাম্মাদ এর পর, ইসলামের নেতৃত্ব তার আত্মীয়দের মধ্যে থাকা উচিত। তারা বিশ্বাস করে যে মুহাম্মাদ তাঁর জীবনের শেষদিকে আলী ইবনে আবি তালিবকে তাঁর উত্তরাধিকারী হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। আলী ইবনে আবি তালিব মুহাম্মাদ এর চাচাতো ভাই, জামাই এবং একজন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিলেন। তিনি ইসলামের চতুর্থ খলিফা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শিয়া মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে আলী ইবনে আবি তালিব এবং তার বংশধররা বিশেষ আধ্যাত্মিক এবং রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রদান করেছিলেন। তারা এই নেতাদেরকে ইমাম বলে অভিহিত করে। শিয়ারা বিশ্বাস করে যে ইমামরা মুহাম্মাদ এর নির্দেশাবলী এবং শিক্ষা অনুসরণ করে ইসলামী সম্প্রদায়কে নেতৃত্ব দিয়েছেন। শিয়া ইসলামের ইতিহাস মুহাম্মাদ এর মৃত্যুর পর শুরু হয়। মুহাম্মাদ এর মৃত্যুর পর, আলী ইবনে আবি তালিব খলিফার পদে নির্বাচিত হন। তবে, আলী ইবনে আবি তালিব এবং তার বংশধরদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাগুলো মুসলমানদেরকে শিয়া-সুন্নি বিভাজনের দিকে পরিচালিত করে। গদীর-এ-খুমের ঘটনা সুন্নি ও শিয়া মুসলমানদের উভয়ের জন্যই একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ ঘটনাটি ঘটেছিল মুহাম্মাদের মক্কা থেকে তার শেষ হজ্জ পালন করে ফেরার পথে। গদীর-এ-খুমে মুহাম্মাদ তার চাচাতো ভাই আলীকে তার শেষ ইচ্ছাপত্রের কার্যকরকারী এবং তার ওলি (অধিকারী) হিসাবে মনোনীত করেন। শিয়া মুসলমানরা বিশ্বাস করেন যে, মুহাম্মাদ আলীকে তার পরে তার উত্তরসূরি (খলিফা) এবং ইমাম (আধ্যাত্মিক ও রাজনৈতিক নেতা) হিসাবে মনোনীত করেছিলেন। আলীর মতো প্রথম কয়েকজন ইমামকে সব শিয়া গোষ্ঠী এবং সুন্নি মুসলমানরা সম্মান করেন। বৃহত্তম শিয়া সম্প্রদায় ত্বালাশিয়া, দ্বাদশ ইমামে বিশ্বাস করে এবং আরও বিশ্বাস করে যে তাদের শেষ ইমাম আত্নগোপনে চলে গেছেন এবং একদিন ফিরে আসবেন। তারা বিশ্বাস করে যে দ্বাদশ ইমামের ভবিষ্যদ্বাণীটি দ্বাদশ খলিফার হাদিসে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যা সুন্নি এবং শিয়া উভয় উৎসেই লিপিবদ্ধ রয়েছে। দ্বিতীয় প্রাচীনতম শাখা, জায়েদীরা, ইমামদের বিশেষ ক্ষমতা প্রত্যাখ্যান করে এবং কখনও কখনও এটি শিয়া মতবাদ হিসাবে নয় বরং সুন্নি ইসলামের "পঞ্চম বিদ্যালয়" হিসাবে বিবেচিত হয়। ইসমাইলিরা দ্বাদশীর সাথে সাতম ইমামের পরিচয় নিয়ে বিভক্ত হয়েছে এবং পরবর্তী ইমামদের অবস্থান নিয়ে আরও গোষ্ঠীতে বিভক্ত হয়েছে, যার মধ্যে বৃহত্তম গোষ্ঠী হলো নিজারি। শিয়ারা ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ মেনে চলে। তারা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ এক, মুহাম্মাদ তার রাসুল, কুরআন আল্লাহর বাণী, সালাত বা নামাজ, যাকাত বা দান, রোজা বা সিয়াম এবং হজ বা মক্কায় তীর্থযাত্রা করা ফরজ। শিয়া মুসলমানরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাস করে, তবে তাদের প্রধান কেন্দ্রগুলো হলো ইরান, ইরাক, লেবানন, ইয়েমেন এবং ভারত। শিয়া ইসলাম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক শক্তি। শিয়া মুসলমানদের নিজস্ব বিশ্বাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য রয়েছে। তারা ইসলামের ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তারা বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুহাক্কিমা ইবাদি ইসলাম (বা ইবাদিবাদ) হচ্ছে বিশ্বজুড়ে প্রায় ১.৪৫ মিলিয়ন মুসলমান (সকল মুসলমানের প্রায় ০.০৮%) দ্বারা অনুশীলিত ইসলামের একটি শাখা, যাদের অধিকাংশই ওমানে বাস করেন। ইবাদিবাদকে প্রায়শই খারিজিদের একটি মধ্যপন্থী রূপভেদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়, যদিও ইবাদিবাদীরা নিজেরাই এই শ্রেণিবিভাগের বিরোধিতা করেন। খারিজিরা ছিল এমন গোষ্ঠী যারা খলিফা আলীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল কারণ তিনি এমন কারো সাথে মধ্যস্থতা গ্রহণ করেছিলেন যাকে তারা পাপী হিসাবে বিবেচনা করেছিল। অধিকাংশ খারেজী গোষ্ঠীর বিপরীতে, ইবাদিবাদ পাপী মুসলমানদের কাফের হিসেবে গণ্য করে না। ইবাদি হাদিস, যেমন জামে সহীহ সংকলন, প্রাথমিক ইসলামী ইতিহাস থেকে এমন বর্ণনাকারীদের তথ্যসূত্র ব্যবহার করে যাদেরকে তারা বিশ্বস্ত বলে মনে করে। কিন্তু অধিকাংশ ইবাদি হাদিসও মানক সুন্নি সংকলনগুলোতে পাওয়া যায় এবং সমসাময়িক ইবাদিগণ প্রায়শই মানক সুন্নি সংকলনগুলোকে অনুমোদন করে। অন্যান্য সম্প্রদায় আহমদিয়া আন্দোলন একটি ধর্মীয় আন্দোলন যা ১৮৮৯ সালে ভারতে মির্জা গোলাম আহমদ প্রতিষ্ঠা করেন। আহমদ দাবি করেন যে তিনি ইসলামের নবী মুহাম্মাদ এর পরে আল্লাহর সর্বশেষ নবী এবং নবুয়তের "ওয়াদা করা মসিহ" বা "ইমাম মাহদি"। আহমদিয়াদের সংখ্যা ১ থেকে ২ কোটি, যারা বিশ্বের ১৯২টি দেশে বসবাস করেন। আহমদিয়া মুসলিমদের বৃহত্তম জনসংখ্যা পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং নাইজেরিয়ায় রয়েছে। আহমদিয়ারা পৃথিবীর অনেক দেশে ধর্মীয় নিপীড়ন ও বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। পাকিস্তানে আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে সংবিধানে আইন রয়েছে এবং তাদেরকে মুসলিম হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। ইরানে আহমদিয়াদের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। অন্যান্য দেশ যেমন সৌদি আরব, ইয়েমেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতেও আহমদিয়াদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন রয়েছে। বেকতাশি আলেভিবাদ একটি সমন্বয়ী এবং অসাধারণ স্থানীয় ইসলামী ঐতিহ্য, যার অনুগামীরা আলী এবং হাজী বেকতাশ ভেলির রহস্যময় (বাতেনী) শিক্ষা অনুসরণ করেন। আলেভিবাদ হলো ১৪তম শতাব্দীর প্রথাগত তুর্কি বিশ্বাসের একটি মিশ্রণ। এটি সম্ভবত শিয়া এবং সুফি বিশ্বাসের পাশাপাশি টেংরিবাদ এবং সর্বপ্রাণবাদের সমন্বয়ে গঠিত। অনুমান করা হয় যে বিশ্বব্যাপী ১ থেকে ২ কোটিরও বেশি (~০.৫%–১% সমগ্র মুসলিমের) আলেভি রয়েছে। কুরআনবাদ ইসলামের একটি ধর্মীয় আন্দোলন যা এই বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে যে ইসলামী আইন এবং নির্দেশিকা শুধুমাত্র কুরআনের উপর ভিত্তি করা উচিত, সুন্নাহ বা হাদিসের উপর নয়। কুরআনবাদীরা উল্লেখযোগ্যভাবে ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের সকল বিশ্বাসের জন্য শুধুমাত্র কুরআনের বাণীর উপর নির্ভরশীল। কুরআনবাদ আন্দোলন ১৯ শতক থেকে বিকশিত হয়েছে। ভারতে সৈয়দ আহমদ খান, আবদুল্লাহ চক্রালাভী এবং গোলাম আহমদ পারওয়েজের মত চিন্তাবিদরা এই আন্দোলনের পথিকৃৎ ছিলেন। তারা হাদিস ঐতিহ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছিলেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে হাদিসগুলো নবী মুহাম্মাদ এর কথা এবং কাজের সঠিক দলিল নয়। মিশরের মুহাম্মদ তওফিক সিদ্দিকী আল-মানার পত্রিকায় "ইসলাম কেবল কুরআন" শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। এই নিবন্ধে তিনি কুরআনের একমাত্র কর্তৃত্বের পক্ষে যুক্তি দিয়েছিলেন। বিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে একজন বিশিষ্ট কুরআনবাদী ছিলেন রাশাদ খলিফা, মিশরীয়-আমেরিকান জৈবরসায়নবিদ যিনি কুরআনে একটি সংখ্যাগত ভিত্তি আবিষ্কার করার দাবি করেছিলেন এবং কুরআনবাদী সংগঠন "ইউনাইটেড সাবমিটারস ইন্টারন্যাশনাল" প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অসাম্প্রদায়িক মুসলিম অ-মাজহাবী মুসলিম বা অসাম্প্রদায়িক মুসলিম এমন একটি শব্দ যা এমন মুসলিমদের জন্য ব্যবহার করা হয় যারা কোনো নির্দিষ্ট ইসলামী মাজহাব বা দলের অন্তর্ভুক্ত নন বা নিজেকে তাদের সাথে চিহ্নিত করেন না। সাম্প্রতিক জরিপে বলা হয়েছে যে বিশ্বের কিছু অংশে মুসলিমদের একটি বড় অংশ নিজেকে "শুধু মুসলিম" হিসাবে চিহ্নিত করে, যদিও এই প্রতিক্রিয়ার অন্তর্নিহিত প্রেরণা নিয়ে খুব কম প্রকাশিত বিশ্লেষণ পাওয়া যায়। পিউ রিসার্চ সেন্টারের রিপোর্ট অনুযায়ী, "শুধু মুসলিম" হিসাবে নিজেকে চিহ্নিত করা জরিপে অংশগ্রহণকারীরা সাতটি দেশে মুসলিম জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ গঠন করে (এবং তিনটি দেশে উল্লেখযোগ্য হারে), যেখানে কাজাখস্তানে সর্বোচ্চ ৭৪ শতাংশ। অন্তত ২২টি দেশে প্রতি পাঁচজন মুসলিমের মধ্যে একজন এভাবে নিজেকে চিহ্নিত করেন। আধ্যাত্মিকতা সুফিবাদ (আরবি: تصوف, তাসাউফ) বা তাসাউফ হলো একটি ইসলামী আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা আল্লাহর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের উপর জোর দেয়। এটিকে প্রায়শই "ইসলামের অভ্যন্তরীণ দিক" হিসাবে বর্ণনা করা হয়। তাসাউফের লক্ষ্য হলো আল্লাহর সাথে একাত্মতা অর্জন করা, যাকে "ফানা" বা "নিঃশেষতা" বলা হয়। তাসাউফের অনুশীলনগুলো সাধারণত আধ্যাত্মিক নির্দেশনা, ধ্যানের অনুশীলন এবং আত্ম-শুদ্ধির উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তাসাউফের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে এই অনুশীলনগুলো তাদের আল্লাহর সাথে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলতে এবং আধ্যাত্মিকভাবে বিকশিত হতে সাহায্য করবে। তাসাউফ একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন যা ইসলামের মধ্যে বিকাশ লাভ করেছে, তবে এটি কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা গোষ্ঠীর সাথে সংযুক্ত নয়। তাসাউফের অনুসারীরা বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্য, যার মধ্যে রয়েছে সুন্নি, শিয়া এর মতো অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়। তাসাউফের শিক্ষাগুলো ইসলামের অন্যান্য দিকগুলোর সাথেও সংযুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, তাসাউফের অনুশীলনগুলো প্রায়শই ইসলামী আইন এবং নৈতিকতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।মানরজেফ, মাহদী। [২০০৯] ২০১৬। "আরবি এবং ইসলামী দর্শনে রহস্যবাদ." স্ট্যানফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ফিলোসফি, ই.এন. জাল্টা দ্বারা সম্পাদিত। ২৫ মে ২০২০ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। হাসান আল-বসরি (৬৪২-৭২৮) একজন বিখ্যাত সুফি পণ্ডিত ছিলেন। তিনি তাসাউফের একটি প্রাথমিক রূপের প্রচার করেছিলেন যা আল্লাহর প্রতি আনুগত্য এবং আল্লাহ ভীতির উপর জোর দেয়। মানসুর আল-হল্লাজ (৮৫৮-৯২২) এবং জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি (১২৯১-১৩২৭) দুজনেই বিখ্যাত সুফি পণ্ডিত ছিলেন। তারা তাসাউফের একটি রূপের প্রচার করেছিলেন যা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসার উপর জোর দেয়। জালালুদ্দিন রুমির কবিতা এবং সাহিত্য তাসাউফের শিক্ষাগুলোকে প্রভাবিত করেছে। তাঁর কবিতাগুলো বিশ্বজুড়ে পাঠকদের কাছে জনপ্রিয় এবং তিনি আমেরিকার সর্বাধিক পঠিত কবিদের একজন। সুফিরা তাসাউফকে ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করেন। তাসাউফ ইসলামের একটি অভ্যন্তরীণ আধ্যাত্মিক মাত্রা, যা আল্লাহর সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন এবং আধ্যাত্মিক পরিপূর্ণতা অর্জনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সুফিরা বিশ্বাস করেন যে তাসাউফ হলো ইসলামের প্রকৃত মূল। ঐতিহ্যবাহী সুফিগণ, যেমন বায়েজিদ বোস্তামি, জালালউদ্দিন রুমি, হাজী বেকতাশ ওয়ালী, জুনাইদ বাগদাদী এবং আবু হামিদ আল-গাজ্জালি, সুফিবাদ ইসলামের মূলনীতি এবং মুহাম্মাদের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত বলে দাবি করেন। তারা যুক্তি দেখান যে সুফিবাদ ইসলামের ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং এটি ইসলামের মূল উদ্দেশ্যগুলোর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ইতিহাসবিদ নিল গ্রিন যুক্তি দেখান যে মধ্যযুগে ইসলাম ছিল কমবেশি সুফিবাদ। তিনি যুক্তি দেখান যে সুফিবাদ ছিল মধ্যযুগে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আন্দোলন এবং এটি ইসলামী বিশ্বের সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। সুফি সাধকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মতো জনপ্রিয় ধর্মীয় অনুশীলনগুলোকে সুন্নি পুনরুজ্জীবনবাদী আন্দোলন সালাফিবাদের অনুসারীরা মূল ধর্ম থেকে বিচ্যুতি হিসেবে বিবেচনা করেন। তারা বিশ্বাস করেন যে সুফিরা ইসলামের মূলনীতি থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তারা ইসলামের মধ্যে বিদ'আত (নতুন উদ্ভাবন) প্রবর্তন করেছে। সালাফিরা কখনও কখনও সুফিদের ওপর শারীরিক আক্রমণ চালায়, যার ফলে সুফি-সালাফি সম্পর্কের অবনতি ঘটে। সালাফিরা মনে করে যে সুফিরা ইসলামের জন্য হুমকি এবং তাদেরকে দমন করা প্রয়োজন। সুফিদের ধর্মীয় সম্প্রদায়গুলো একজন শিক্ষক (ওয়ালি) কে ঘিরে গড়ে ওঠে। ওয়ালি হলেন একজন সুফি ব্যক্তিত্ব যিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতার উচ্চতর অবস্থায় পৌঁছেছেন। ওয়ালির আধ্যাত্মিক শিক্ষার সিলসিলা নবী মুহাম্মাদের সাথে যুক্ত হয়, যার অর্থ হলো ওয়ালি নবী মুহাম্মাদের আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি। সুফিরা তাদের ধর্মপ্রচার ও শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিম সমাজ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। সুফিরা ইসলামের শিক্ষা এবং মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের ধর্মপ্রচার কার্যক্রম ব্যবহার করেছে। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রতিষ্ঠা করেছেন যেখানে মুসলিমদের ইসলামের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। সুফিবাদ আহলে সুন্নাত আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে। আহলে সুন্নাত আন্দোলন একটি সুন্নি ইসলামী আন্দোলন যা দক্ষিণ এশিয়ায় প্রচলিত। সুফিবাদ আন্দোলনের শিক্ষা এবং অনুশীলনগুলো আহলে সুন্নাত আন্দোলনের উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে। সুফিবাদ মধ্য এশিয়ার পাশাপাশি তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, মরক্কো, সেনেগাল, চাদ এবং নাইজারের মতো আফ্রিকান দেশগুলোতেও প্রচলিত। মধ্য এশিয়ায়, সুফিবাদ ইসলামের প্রাথমিক বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আফ্রিকায়, সুফিবাদ ইসলামের প্রচার এবং বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। আইন ও বিচারবিদ্যা শরিয়াহ ইসলামী ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে গঠিত একপ্রকার ধর্মীয় আইন। এটি ইসলামের ধর্মীয় বিধান, বিশেষ করে কুরআন ও হাদিস থেকে উদ্ভূত। আরবিতে, শরীয়াহ শব্দটি আল্লাহর ঐশ্বরিক আইনকে বোঝায় এবং এটি ফিকহ (পণ্ডিতগণের ব্যাখ্যা) থেকে পৃথক।ভিকর, নাট এস. ২০১৪. "শরিয়াহ্." দ্য অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়া অফ ইসলাম অ্যান্ড পলিটিক্সে, ই. শাহিন সম্পাদিত।অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। আর্কাইভকৃত মূল ৪ জুন ২০১৪ তারিখে। ২৫ মে ২০২০ তারিখে সংগৃহীত। আধুনিক সময়ে এর প্রয়োগের পদ্ধতি মুসলিম প্রথাগতবাদী এবং সংস্কারকদের মধ্যে বিরোধের বিষয় হয়ে উঠেছে। ইসলামী ফিকহের প্রথাগত তত্ত্ব শরিয়ার চারটি উৎসকে স্বীকৃতি দেয়: কুরআন, সুন্নাহ (হাদিস ও সীরাত), কিয়াস (সাদৃশ্যমূলক যুক্তি) এবং ইজমা (বিচারকদের ঐকমত্য)। এই চারটি উৎস থেকে শরীয়ার আইন,বিধান ও দাবী নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন আইনি মতবাদ পদ্ধতি বিকশিত হয়েছে, যাকে ইজতিহাদ বলা হয়। প্রথাগত ফিকহ আইনি শাখাকে দুটি প্রধান শাখায় পৃথক করে: ইবাদত (আনুষ্ঠানিক উপাসনা) এবং মু'আমালাত (সামাজিক সম্পর্ক), যা একসঙ্গে বিস্তৃত বিষয় নিয়ে গঠিত। ইবাদত শাখাটি নামাজ, রোজা, হজ, এবং যাকাত সহ ইসলামের মৌলিক উপাসনাগুলো নিয়ে আলোচনা করে। মু'আমালাত শাখাটি বিবাহ, সম্পত্তি, চুক্তি, এবং অপরাধ সহ বিস্তৃত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করে। শরিয়তের বিধানগুলো জীবনের সকল কাজগুলোকে একটি শ্রেণীতি বিন্যস্ত করে, যাকে আহকাম বলা হয়। আহকামকে আবার পাঁচটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা হয়: বাধ্যতামূলক (ফরজ), সুন্নত (মুস্তাহাব), অনুমোদিত (মুবাহ), ঘৃণ্য (মাকরুহ) এবং নিষিদ্ধ (হারাম)। ইসলামে কাউকে ক্ষমা করাকে অনুপ্রানিত করা হয়েছে এবং ইসলামি ফৌজদারী আইনে, অপরাধীর প্রতি তার অপরাধের অনুপাতে শাস্তি প্রদান যখন বৈধ বলে বিবেচিত হয়, তখন অপরাধীকে ক্ষমা করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অপরাধীকে কোনো সুপকার করার মাধ্যমে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়াকে উৎকর্ষের শীর্ষ বলে গণ্য করা হয়। শরিয়ার কিছু কিছু ক্ষেত্র পশ্চিমা আইনের ধারণার সঙ্গে মিলে যায়, আবার অন্যগুলো আল্লাহর ইচ্ছার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনযাপনের সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে মিলে যায়। ঐতিহাসিকভাবে, শরিয়তের ব্যাখ্যা করতেন স্বাধীন আইনজ্ঞ (মুফতি)। তাদের আইনী মতামত (ফতোয়া) বিবেচনা করতেন শাসক-নিযুক্ত বিচারকরা, যারা কাজী আদালতের প্রধান বিচারক ছিলেন ও মাজালিম আদালতের বিচারকরা, যারা শাসক পরিষদের নিয়ন্ত্রণে ছিল এবং ইসলামি ফৌজদারি আইনে প্রয়োগ করতেন। আধুনিক যুগে, শরিয়ত-ভিত্তিক ফৌজদারি আইনগুলো ব্যাপকভাবে ইউরোপীয় ধারায় অনুপ্রাণিত আইন দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। উসমানীয় সাম্রাজ্যের ১৯শ শতাব্দীর তানজিমাত সংস্কারের ফলে মজল্লা দেওয়ানি ধারা প্রণীত হয়, যা শরিয়াকে সংস্কার করার প্রথম প্রচেষ্টা ছিল। যদিও অধিকাংশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের সংবিধানে শরিয়তের উল্লেখ রয়েছে। এর শাস্ত্রীয় নিয়মগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত অবস্থা ও পারিবারিক আইনে বহাল রাখা হয়েছে। এই আইনগুলো সংস্কার করা আইন পরিষদগুলি তাদের ঐতিহ্যবাহী আইনগত জ্ঞানের ভিত্তি ছাড়াই আধুনিকায়নের চেষ্টা করেছে।মায়ার, অ্যান এলিজাবেথ। ২০০৯। "আইন, আধুনিক আইনি সংস্কার ." ইসলামিক ওয়ার্ল্ডের অক্সফোর্ড এনসাইক্লোপিডিয়াতে, জে এল এসপোসিটো দ্বারা সম্পাদিত। অক্সফোর্ড: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস. ২০শ শতাব্দীর শেষের দিকে ইসলামী পুনর্জাগরণ ইসলামী আন্দোলনগুলোকে শরিয়ার সম্পূর্ণ বাস্তবায়নের আহ্বান জানায়। শরিয়ত ধর্মনিরপেক্ষ সরকার, মানবাধিকার, চিন্তার স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা নিয়ে বর্তমানে বিতর্ক চলছে। আইনশাস্ত্রীয় পদ্ধতি ফিকহের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিকে মাজহাব () বলা হয়। ফিকহ হলো ইসলামী আইনের শাখা যা ধর্মীয় আইনের উৎসগুলো থেকে ইসলামী আইনের অনুশীলন এবং প্রয়োগকে ব্যাখ্যা করে। মাজহাব হলো এমন পদ্ধতি যা এই ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগকে পরিচালনা করে। ইসলামের সুন্নি শাখায় চারটি প্রধান মাজহাব রয়েছে। তারা হলো: হানাফি, মালিকি, শাফিঈ এবং হাম্বলি। ইসলামের শিয়া শাখায় তিনটি প্রধান মাজহাব রয়েছে। তারা হলো: জাফরি, জায়েদি এবং ইসমাইলি। প্রতিটি মাজহাব তার নিজস্ব পদ্ধতিগত ভিত্তির উপর ভিত্তি করে ইসলামী আইন ব্যাখ্যা করে। এই পদ্ধতিগত ভিত্তিকে উসুল আল-ফিকহ বলা হয়। উসুলে ফিকহ হলো ইসলামী আইনের উৎসগুলোর ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগের জন্য ব্যবহৃত পদ্ধতিগুলোর একটি শ্রেণী। একজন মুসলিম ব্যক্তি একজন ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ বা মাজহাবের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে পারে। এটিকে 'অনুসরণ' বলা হয়। অনুসরণ করার অর্থ হলো একজন ব্যক্তি মাজহাবের পদ্ধতিগত ভিত্তির উপর নির্ভর করে আইন ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগ করে। একজন ব্যক্তি যদি অনুসরণ ব্যবহার না করে তবে তাকে 'গায়র মুকাল্লিদ' বলা হয়। গায়র মুকাল্লিদরা তাদের নিজস্ব যুক্তি এবং বিবেচনার উপর ভিত্তি করে ইসলামী আইন ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগ করে। একজন ব্যক্তি আইনকে স্বাধীন যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারে। এটিকে ইজতিহাদ' বলা হয়। ইজতিহাদ হলো ইসলামী আইন ব্যাখ্যা করার আরও একটি পদ্ধতি যা মাজহাবগুলোর পদ্ধতিগত ভিত্তির উপর নির্ভর করে না। ইসলামি সংস্কৃতি শিল্প ইসলামী শিল্পসমূহ ইসলামী সংস্কৃতির একটি বড় অংশ গঠন করে। ইসলামী শিল্প(সমূহ) শব্দটি একটি অপেক্ষাকৃত নতুন শব্দ। এই শব্দটি প্রথম আধুনিক যুগে ব্যবহৃত হয়েছিল। এর আগে, ইসলামী শিল্পকর্মগুলোকে সাধারণত তাদের নির্দিষ্ট ধরন বা শৈলীর দ্বারা উল্লেখ করা হত। তাই, সাধারণভাবে এটিকে একটি আধুনিক ধারণা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে। এই শব্দের দ্বারা বোঝানো হয় ইসলামী ভূখণ্ডে উৎপাদিত, ইসলামী সংস্কৃতির ছাপ বহনকারী শিল্পকর্মকে। ইসলামী শিল্পের মধ্যে রয়েছে স্থাপত্য, ভাস্কর্য, চিত্রকলা, অলংকার, কারুশিল্প, এবং অন্যান্য শিল্পকলার বিভিন্ন শাখা। ইসলামী শিল্পসমূহ ইসলামী বিশ্বাস, ঐতিহ্য, এবং সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। এসব শিল্পকর্ম অবশ্যই মুসলমানদের জন্য বা মুসলমানদের দ্বারা তৈরি হওয়ার প্রয়োজন নেই। ইসলামী শিল্প বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধর্মীয় এবং জাতিগত গোষ্ঠীর মানুষের দ্বারা তৈরি হয়েছে। ঐতিহাসিক মুসলিম শিল্পীদের দ্বারা আধুনিক যুগে ইসলামী শিল্পকে ধর্মীয় নয় বরং জাতীয় শিল্পের দিক থেকে মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে, ইসলামী শিল্পকে তার ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত, অন্যরা বিশ্বাস করে যে, এটিকে তার জাতিগত বা সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে বোঝা উচিত। এই ধারণাটি সাধারণত ভুল বলে মনে করা হয়। কেননা, ইসলামিক শিল্প সাধারণত ইসলামী বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটায়। শিল্পগুলো অনেক জাতিগত গোষ্ঠীর অবদানের ফলাফল হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। ইসলামী শিল্পের বিকাশে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর অবদান রয়েছে। সেই সময়গুলোতে ইসলামী ভূখণ্ডে বসবাসকারী নাগরিকদের আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। এই কারণে, আজ অনেক ঐতিহাসিক ইসলামী শিল্পীর বাসস্থান ও অঞ্চল দেখে তাদের জাতিগত উৎপত্তি জানা খুব কঠিন। ইসলাম ধর্মে, আল্লাহকে মানুষের মতো কল্পনা করা নিষিদ্ধ। ইসলামে আল্লাহকে "লা শারিকা লাহু" বলা হয়, যার অর্থ "তার কোনো শরিক নেই"। অর্থাৎ, আল্লাহ এক এবং অদ্বিতীয়। তিনি মানুষের মতো নন। তাই তাঁর কোনো রূপ বা ছবি বা মূর্তি বা প্রতিকৃতি তৈরি করাও নিষিদ্ধ (হারাম)। এই কারণে ইসলাম ধর্মে খ্রিস্টধর্মের মতো কোনো ধর্মীয় চিত্রকলার ঐতিহ্য গড়ে ওঠেনি। খ্রিস্টধর্মে, যীশুখ্রিস্টকে মানুষের মতো কল্পনা করা হয়। তাই খ্রিস্টধর্মে, যীশুখ্রিস্টের ছবি এবং মূর্তি তৈরি করা হয়। ইসলাম ধর্মে নবী-রাসূলদের দেবত্ব দেওয়া নিষিদ্ধ। তাই নবী-রাসূলদের ছবিও ধর্মীয় দিক থেকে অপ্রয়োজনীয়। ইসলামি বিশ্বাসানুসারে, নবী-রাসূলরা হলেন আল্লাহর প্রেরিত মানুষ। তারা মানুষ ছিলেন, দেবতা নয়। তাই তাদের ছবি তৈরি করার কোনো প্রয়োজন নেই। ইসলাম ধর্মে পৌত্তলিকতাকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়। পৌত্তলিকতায় মানুষের তৈরি মূর্তি বা ছবিকে পূজা করা হয়। তাই ইসলাম ধর্মে, বিশেষ করে ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে, শিল্পের প্রতি মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল নেতিবাচক। এই সময়ে, ইসলাম ধর্ম খুবই নতুন ছিল। মুসলমানরা পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করছিল। তাই তারা শিল্পকে পৌত্তলিকতার সাথে যুক্ত করত। তবে, কুরআনে শিল্পের বিরুদ্ধে কোনো সরাসরি নিষেধাজ্ঞা নেই। তাই পরবর্তী শতাব্দীতে, বিশেষ করে নতুন করে জয় করা অঞ্চলে, ইসলামিক ধারণা এবং প্রতীকগুলোর সাথে স্থানীয় শিল্প ঐতিহ্যগুলো সংমিশ্রণের ফলে, বিশেষ করে ইরানের অঞ্চলে, মুহাম্মাদসহ অন্যান্য নবী-রাসূলদের ছবি তৈরি করা হয়েছে। তবে, এই ছবিগুলো ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নয়, বরং ঐতিহাসিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। অর্থাৎ, এই ছবিগুলো মুহাম্মাদ এবং অন্যান্য নবী-রাসূলদের জীবন এবং কর্ম সম্পর্কে তথ্য প্রদান করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। পশ্চিমা বিশ্বে, চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য, শিল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রূপগুলোর মধ্যে রয়েছে। তবে ইসলামে, এই রূপগুলোকে প্রায়ই শিরক বা ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব করার মতো বিবেচনা করা হয়। এই কারণে, ইসলামি শিল্পে এই রূপগুলোর পরিবর্তে অন্যান্য রূপগুলোর উপর জোর দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামি শিল্পে কাঠ, ধাতবশিল্প, আলংকারিক শিল্প, পোড়ামাটির শিল্প এবং কাচের শিল্প খুব জনপ্রিয়। এই শিল্পগুলো প্রায়শই জ্যামিতিক এবং প্রতিসম নকশাগুলো ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। এই নকশাগুলো আল্লাহর সৃষ্টির জটিলতা এবং সৌন্দর্যকে প্রতিফলিত করে। ইসলামি শিল্পে ক্যালিগ্রাফিও একটি গুরুত্বপূর্ণ রূপ। কুরআন এবং অন্যান্য ইসলামিক পাঠ্যগুলো প্রায়শই ক্যালিগ্রাফিতে লেখা হয়। ক্যালিগ্রাফি শিল্পীরা কুরআনের শব্দগুলোকে সুন্দর এবং বর্ণময় উপায়ে লিখতে এসব ব্যবহার করে। এই লাইনগুলো ইসলামি শিল্পের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্যের উপর জোর দেয়। ইসলামি শিল্প শুধুমাত্র চিত্রকলা এবং ভাস্কর্য থেকে বিরত নয়, এটি একটি অনন্য শৈলী যা বিশ্বের অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। ইসলামী শিল্পে বাস্তবধর্মী চিত্রকর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তাই শিল্পীরা কল্পনাপ্রসূত শৈলীর মিনিয়েচার শিল্পকে বিকশিত করেছিলেন। মিনিয়েচার শিল্প হলো ছোট ছোট ছবির শিল্প, যা প্রায়ই পাতায় আঁকা হয়। ইসলামী মিনিয়েচার শিল্পে প্রায়ই উদ্ভিদ, প্রাণী এবং মানুষের চিত্রকর্ম দেখা যায়। হস্তলিপি (চারুলিপি) ইসলামী শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। হস্তলিপিতে সুন্দর করে লেখা হয় এবং এটি প্রায়ই ধর্মীয় পাঠ্য বা কবিতার জন্য ব্যবহার করা হয়। ইসলামী সমাজে, চিত্রকর্ম নিষিদ্ধ ছিল, তাই হস্তলিপি আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তৈজস শিল্প হলো হস্তলিপির সাথে সম্পর্কিত একটি আলংকারিক শিল্প। তৈজস শিল্পে প্রায়ই সোনা, রূপা এবং অন্যান্য মূল্যবান পাথরের ব্যবহার করা হয়। তৈজস শিল্প প্রায়ই কুরআনের নুসখাগুলোকে সজ্জিত করতে ব্যবহৃত হয়। ইসলামিক শিল্পের মধ্যে স্থাপত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে। ইসলামের শুরুর দিকে, মক্কা এবং মদিনা, যেখানে ইসলামের বিকাশ ঘটেছিল, সেখানকার স্থাপত্য খুব উন্নয়নশীল ছিল না। ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন সালতানাতের রূপ নেওয়ার পর স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। বিশেষ করে, এই সময়ের মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, প্রাসাদ, সেতু ও ক্যারাভানসরাই নির্মাণের মাধ্যমে স্থাপত্যের বিকাশ ঘটে। ইসলামের নিজস্ব উপাসনালয় মসজিদের স্থাপত্য, বিশেষ করে ইসলামী স্থাপত্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথম বিজিত ভূখণ্ডে, বিশেষ করে সিরিয়ার মতো জায়গায়, গির্জাগুলোকে মসজিদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। তবে, পরে নতুন বিজিত ভূখণ্ডে এবং নতুন প্রতিষ্ঠিত শহরগুলোকে মুসলমানরা মসজিদ নির্মাণ শুরু করে। বিভিন্ন জলবায়ু এবং জাতিগত সংস্কৃতির প্রভাবের কারণে মসজিদের স্থাপত্য অঞ্চল থেকে অঞ্চলে ভিন্ন হয়। এই ধরনের ধর্মীয় স্থানের স্থাপত্যতে চিত্র বর্ণনায় খুব একটা স্থান দেওয়া হয় না। এর পরিবর্তে, সেখানে আলংকারিক, প্রায়ই জ্যামিতিক ও আরবিস্ক ধরনের সজ্জা রয়েছে। ধর্মীয় নয় এমন স্থানের স্থাপত্যতে চিত্র বর্ণনায় স্থান দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিশেষ করে পুরানো হামামে এবং প্রাসাদে এটি দেখা যায়। তবে, ধর্মীয় স্থানের তুলনায় ধর্মীয় নয় এমন স্থানগুলো সময়ের সাথে সাথে ততটা ভালভাবে সংরক্ষণ করা হয়নি। ইসলামী স্থাপত্যে জ্যামিতিক সজ্জা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই সজ্জাটি প্রায়ই মসজিদের দেয়ালে, মেঝেতে এবং ছাদে দেখা যায়। জ্যামিতিক সজ্জা প্রায়ই ইসলামিক ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে যুক্ত। উদাহরণস্বরূপ, অনেক মুসলমান বিশ্বাস করেন যে মহাবিশ্ব একটি সুন্দর এবং পরিকল্পিত ব্যবস্থা এবং জ্যামিতিক সজ্জা এই ধারণাকে প্রতিফলিত করে। আরবিস্ক হলো একটি জটিল সজ্জামূলক শৈলী যা আরবি লিপির উপর ভিত্তি করে। আরবিস্ক ইসলামী স্থাপত্যে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। আরবিস্ক প্রায়ই মসজিদের দেয়ালে, মেঝেতে এবং ছাদে দেখা যায়। এটি প্রায়ই অন্যান্য সজ্জা উপাদানের সাথে একত্রিত হয়। ইসলামী স্থাপত্যে আরেকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হলো এর মিনার। মিনার হলো ইসলামী স্থাপত্যের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য। মিনারগুলো মসজিদের একটি উঁচু কাঠামো যা মুয়াজ্জিনরা নামাজের জন্য আহ্বান জানানোর জন্য ব্যবহার করেন। মিনারগুলো প্রায়ই মসজিদের মিহরাব বা নামাজের দিকে নির্দেশ করে নির্মিত হয়। গম্বুজ, কলাম এবং গেটওয়ে হল ইসলামী স্থাপত্যে ব্যবহৃত অন্যান্য সাধারণ উপাদান। গম্বুজগুলো প্রায়ই মসজিদের ছাদে দেখা যায়। কলামগুলো প্রায়ই মসজিদের ভিতরে এবং বাইরে পাওয়া যায়। গেটওয়েগুলো প্রায়ই মসজিদ এবং অন্যান্য ইসলামী ভবনগুলোতে দেখা যায়। ইসলামী স্থাপত্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন সংস্কৃতির উপর প্রভাব ফেলেছে। ইসলামী স্থাপত্য আফ্রিকা, এশিয়া, ইউরোপ এবং আমেরিকা জুড়ে পাওয়া যায়। ইসলামী স্থাপত্য অন্যান্য সংস্কৃতির স্থাপত্যের উপরও প্রভাব ফেলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামী স্থাপত্যের জ্যামিতিক সজ্জা এবং আরবিস্ক পশ্চিমা স্থাপত্যে প্রভাব ফেলেছে। ইসলামি শিল্পকলার ক্ষেত্রে বস্ত্র-ভিত্তিক শিল্পগুলোও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ইসলামী শিল্পকলায়, বস্ত্র শিল্পের মধ্যে রয়েছে কার্পেট, কাপড়, রুমাল এবং অন্যান্য বস্ত্র পণ্য। এই দ্রব্যগুলো বিভিন্ন ধরনের নকশা এবং কৌশল দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল, যা ইসলামী শিল্পের বৈচিত্র্য এবং সৌন্দর্যের একটি অনন্য উদাহরণ প্রদর্শন করে। বস্ত্র উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবেও একটি বড় আয়ের উৎস ছিল। ইসলামী বিশ্বে, বস্ত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য ছিল। বিভিন্ন ধরনের কাঁচামাল ব্যবহার করে বস্ত্র উৎপাদন করা হত, যার মধ্যে ছিল তুলা, রেশম, এবং উল। ইসলামী বিশ্বে বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র পণ্য তৈরি করা হত। এই পণ্যগুলো বিভিন্ন শৈলী এবং কৌশল দ্বারা তৈরি করা হত, যার মধ্যে রয়েছে বুনন, সেলাই এবং খোদাই। মধ্যযুগে গির্জায় পোপদের হাড় রাখার জন্য ব্যবহৃত বেশিরভাগ খোদাই করা কাপড়গুলো ইসলামী অঞ্চল থেকে এসেছিল। এই কাপড়গুলো তাদের সুন্দর নকশা এবং উচ্চমানের জন্য বিখ্যাত ছিল। আজও মধ্যযুগীয় ইসলামী কাপড়গুলো তাদের সৌন্দর্য এবং শিল্পমানের জন্য প্রশংসিত হয়। বিজ্ঞান ইসলাম এবং বিজ্ঞান ইতিহাসে দীর্ঘ সময় ধরে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত ছিল। ইসলামের প্রথম দিকের যুগে, মুসলমানরা বিজ্ঞানকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করত। তারা বিশ্বাস করত যে জ্ঞান অর্জন করা আল্লাহর ইচ্ছা এবং এটি এক ধরনের ইবাদত। এই কারণে, তারা বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল। ইসলামের স্বর্ণযুগে, ইসলামী ভূখণ্ডে অনেক বিজ্ঞানী গড়ে উঠেছিল এবং বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম খুবই বৃহৎ পরিসরে বিস্তার লাভ করেছিল। এই সময়ের মধ্যে, মুসলমান বিজ্ঞানীরা গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিল। তাদের কাজ পশ্চিমা বিশ্বের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। "ইলম" শব্দটি ইসলামী সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শব্দ।হিউজ, অ্যারন। "বিজ্ঞান, ইসলাম এবং।" ইসলাম এবং মুসলিম বিশ্বের বিশ্বকোষ। এড. রিচার্ড সি মার্টিন। ভলিউম ২। নিউ ইয়র্ক: ম্যাকমিলান রেফারেন্স ইউএসএ, ২০০৪। পৃ. ৬১১-৬১৪। এই শব্দটি বিজ্ঞানের পাশাপাশি জ্ঞানকে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। উভয় অর্থই ইসলামের সাথে একীভূত হয়েছে। মধ্যযুগে ইসলাম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এই সময়কালটি সাধারণত ৮ থেকে ১৫ শতক পর্যন্ত বিস্তৃত বলে মনে করা হয়। এই সময়কালে, ইসলামী বিশ্বে অনেক বিজ্ঞানী গড়ে উঠেছিল এবং অনেক বৈজ্ঞানিক কাজ করা হয়েছিল। এই কাজগুলো গণিত, চিকিৎসা বিজ্ঞান, জ্যোতির্বিদ্যা, রসায়ন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ছিল। এই সময়কালে, ইসলামী বিশ্ব বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি এবং শিল্পের মতো অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বের অন্যান্য রাজ্য এবং অঞ্চলগুলোকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। এই সাফল্য ইসলামী বিশ্বের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক উত্থানের প্রমাণ। এই সময়কালকে ইসলামের স্বর্ণযুগ বলা হয় কারণ এই সময়কালে ইসলামী বিশ্ব বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছিল। এই অগ্রগতিগুলো ইসলামী বিশ্বকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী অঞ্চলে পরিণত করেছিল। ইসলামী বিশ্বে উদ্ভূত বৈজ্ঞানিক ধারণা, ফলাফল এবং বিজ্ঞানীদের সমষ্টিকে কখনও কখনও "ইসলামী বিজ্ঞান" বলা হয়। এটি একটি বিস্তৃত ধারণা যা বিভিন্ন ক্ষেত্র এবং সময়কালকে অন্তর্ভুক্ত করে। ইসলামী বিজ্ঞানের মধ্যে রয়েছে গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসাবিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর কাজ। "ইসলামী বিজ্ঞান" এর মাধ্যমে ঠিক কী বোঝানো হয়েছে তা বিতর্কের বিষয়। কিছু লোক বিশ্বাস করে যে এটি শুধুমাত্র মুসলিম বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত গবেষণাকে বোঝায়, অন্যরা বিশ্বাস করে যে এটি আরও ব্যাপকভাবে ইসলামী বিশ্বে পরিচালিত সমস্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে বোঝায়। ইসলামী বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং বিজ্ঞানীদেরকে আরব বৈজ্ঞানিক গবেষণা এবং বিজ্ঞানীদের সাথে একই নয় বলে বিবেচনা করা উচিত নয়। এর কারণ হলো যে এই সময়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর থেকে এসেছিলেন। তাদের সাধারণ বিষয় ছিল জাতিসত্তার চেয়ে ইসলামী রাজ্যে বসবাসকারী মুসলমান হওয়া। উদাহরণস্বরূপ, আবু রায়হান আল-বেরুনি একজন পারস্য বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্বে কাজ করেছিলেন। তিনি গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল এবং অন্যান্য বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। তিনিকে প্রায়ই "ইসলামী বিজ্ঞানের জনক" বলা হয়। অন্যদিকে, ইবনে সিনা একজন পারস্য বংশোদ্ভূত দার্শনিক, চিকিৎসক এবং বিজ্ঞানী ছিলেন যিনি মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্বে কাজ করেছিলেন। তিনি চিকিৎসা বিজ্ঞানে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছিলেন। তাকে প্রায়ই "ইসলামী চিকিৎসা বিজ্ঞানের জনক" বলা হয়। আব্বাসীয় যুগে, হারুনুর রশিদ দ্বারা বাগদাদে "বাইতুল হিকমাহ" (জ্ঞানের ঘর) নামে একটি বিজ্ঞান কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে "ইসলামের স্বর্ণযুগ" শুরু হয়েছিল। "বাইতুল হিকমাহ" ছিল একটি বইয়ের ভাণ্ডার, একটি অনুবাদ কেন্দ্র এবং একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী বিশ্বে বিজ্ঞান ও শিক্ষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিছু সূত্র অনুসারে এই সময়কাল ১৪ শতক পর্যন্ত, কিছু সূত্র অনুসারে ১৫ শতক, এমনকি ১৬ শতক পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছিল। তবে, বেশিরভাগ ঐতিহাসিকের মতে, এই সময়কাল ১২৫৮ সালে মঙ্গোলদের দ্বারা বাগদাদের পতন এবং আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের সাথে শেষ হয়েছিল। এই সময়ে আল-কিন্দি, আল ফারাবী, আল-খারেজমি, জাবির ইবনে হাইয়ান, ইবনে সিনা, ইবনে হাইসাম, আল বিরুনী, ইবনে রুশদ, আল-জাজারী, আল গাজ্জালী, ইবনে খলদুন, ইবনে বতুতা, উলুঘ বেগ এবং আরও অনেক বিখ্যাত ইসলামী পণ্ডিত খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছিলেন। এই যুগে, ভারত থেকে আন্দালুস পর্যন্ত বিস্তৃত ভূখণ্ডে বৈজ্ঞানিক গবেষণা করা হচ্ছিল। ঔষধ, দর্শন, ধর্মতত্ত্ব, গণিত, জ্যামিতি, জ্যোতির্বিদ্যা, ইসলামী আইন সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গবেষণা করা হচ্ছিল। এই সময়ে, প্রাচীন গ্রীস সহ অতীত সভ্যতার উৎপাদিত জ্ঞান ও চিন্তাভাবনা, অনুবাদের মাধ্যমে ইসলামী বিশ্বে এবং আন্দালুসের মাধ্যমে ইউরোপে স্থানান্তরিত হয়েছিল। এই অনুবাদগুলো ইউরোপীয় রেনেসাঁর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি প্রদান করেছিল। চীনাদের সাথে যুদ্ধ এবং অন্যান্য সম্পর্ক চলাকালীন আরবরা কাগজ উৎপাদন কৌশল শিখেছিল এবং পাণ্ডুলিপির পরিবর্তে কাগজের ব্যবহারের মাধ্যমে লিখিত রচনাগুলো আরও সহজে ছড়িয়ে পড়েছে। কাগজের আবিষ্কার ইসলামী বিশ্বে শিক্ষা ও জ্ঞান বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। গণিত ক্ষেত্রে, ভারত থেকে প্রাপ্ত শূন্য এবং দশমিক পদ্ধতির আবিষ্কারের ফলে গণিতের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং পাটিগণিত সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে এমন একটি অবস্থায় এসেছিল এবং তা তারা দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে পারত। গণিত ও পাটিগণিতের পাশাপাশি ত্রিকোণমিতিও এই সময়ে বিকশিত হয়েছে। এই সময়ে মানমন্দির নির্মিত হয়েছিল; আলোকবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিপুলভাবে বিকশিত হয়। ইসলামী বিশ্বে বিজ্ঞানের উন্নয়নে প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের রচনাগুলোর অনুবাদ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। এই রচনাগুলোর মধ্যে ছিল গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, চিকিৎসা, দর্শন এবং অন্যান্য বিজ্ঞানের উপর কাজ। ইসলামী বিজ্ঞানীরা এই রচনাগুলো থেকে শিখেছিলেন এবং তাদের উপর ভিত্তি করে নতুন আবিষ্কার এবং উদ্ভাবন করেছিলেন। প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের রচনাগুলোর অনুবাদ অষ্টম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ঘটেছিল।পিটার্স, টেড। "বিজ্ঞান এবং ধর্ম।" এনসাইক্লোপিডিয়া অফ রিলিজিয়ন। এড. লিন্ডসে জোন্স। ভলিউম ১২, ২য় সংস্করণ। ডেট্রয়েট: ম্যাকমিলান রেফারেন্স ইউএসএ, ২০০৫। ৮১৮০-৮১৯২। গেল ভার্চুয়াল রেফারেন্স লাইব্রেরি।তাইলান, নেসিপ। "ইসলামী দর্শন"। পৃ. ১৩৬-১৩৮। এই সময়ে, ইসলামী বিশ্বে শিক্ষা এবং বিজ্ঞানের একটি নতুন যুগ শুরু হয়েছিল। পরবর্তীকালে, পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা ইসলামী বিশ্বে হারিয়ে যাওয়া বা ভুলে যাওয়া অনেক প্রাচীন গ্রিক রচনা আবিষ্কার করেছিলেন। এই রচনাগুলো পশ্চিমা বিজ্ঞানের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ইসলামী বিশ্বে একটি নতুন দর্শন এবং বিজ্ঞান ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল যা প্রাচীন গ্রিক দার্শনিকদের রচনাগুলো থেকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত ছিল। এই ঐতিহ্যটি অন্যান্য কিছু বাহ্যিক কারণের দ্বারাও পুষ্ট ছিল, যেমন ইসলাম ধর্ম এবং ইসলামী সংস্কৃতি। আল ফারাবী, ইবনে সিনা এবং ইবনে রুশদ ছিলেন ইসলামী বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত এবং গুরুত্বপূর্ণ দার্শনিক। তারা প্রাচীন গ্রিক দর্শন এবং বিজ্ঞানের উপর তাদের কাজের জন্য পরিচিত। তাদের কাজ পশ্চিমা বিশ্বে দার্শনিক এবং বৈজ্ঞানিক চিন্তার বিকাশকে প্রভাবিত করেছিল। ইসলামী দর্শনের মধ্যে অনেক ধারার উদ্ভব ঘটে। এই ধারাগুলোকে সাধারণত আস্তিক ও নাস্তিক এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়। আস্তিক ধারার চিন্তা ইসলামের মূল বিষয়বস্তুকে স্বীকার করে, যেমন আল্লাহর অস্তিত্ব, নবীগণের প্রামাণ্যতা, পরকাল ইত্যাদি। অন্যদিকে নাস্তিক ধারার চিন্তা ইসলামের মূল বিষয়বস্তুকে অস্বীকার করে। এটিকে বস্তুবাদও বলা হয়। বস্তুবাদী দর্শন হলো এমন একটি দর্শন যা মনে করে যে সবকিছুই বস্তুগত। বস্তুবাদীরা বিশ্বাস করেন যে ঈশ্বর বা আত্মা এই ধরনের বস্তুগত জিনিস নয়, তাই তাদের অস্তিত্ব নেই। ইসলামের দর্শনের মধ্যে দুইটি প্রধান ধারার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একটি ধারা হলো ইসলামী মূলনীতিগুলোকে প্রাধান্য দেয় এবং অন্য ধারাটি ইসলাম ও গ্রীক দর্শনের মধ্যে সমন্বয় করার চেষ্টা করে। প্রথম ধারার দার্শনিকরা বিশ্বাস করেন যে পরকাল শুধুমাত্র আধ্যাত্মিক হবে, মহাবিশ্ব চিরন্তন নয় এবং ঈশ্বর শূন্য থেকে সব সৃষ্টি করেননি। তারা মনে করেন যে ঈশ্বর সর্বদা ছিলেন এবং সবকিছু তাঁর থেকে উদ্ভূত হয়েছে। দ্বিতীয় ধারার দার্শনিকরা বিশ্বাস করেন যে পরকাল শারীরিকও হতে পারে, মহাবিশ্ব চিরন্তন হতে পারে এবং ঈশ্বর শূন্য থেকে সৃষ্টি করতে পারেন। তারা মনে করেন যে গ্রীক দর্শনের কিছু ধারণা ইসলামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ এবং এই ধারণাগুলোকে ইসলামী দর্শনে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ইসলামি তত্ত্বশাস্ত্র হলো যুক্তিবাদী এবং বহিরাগত প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত আরেকটি ধারা। এটি ইসলামি বিশ্বাস এবং ধর্মীয় রীতিনীতির একটি যুক্তিবাদী ব্যাখ্যা। এটি গ্রিক দার্শনিকদের রচনা এবং দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত। সময়ের সাথে সাথে ইসলামি দার্শনিক এবং তত্ত্ববিদরা বিভক্ত হয়ে গেছে এবং প্রায়শই বিতর্কের ক্ষেত্রে বিরোধী দলে অবস্থান নিয়েছে। এই বিভক্তির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনের উপর তাদের জোর, বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতিতে তাদের বিশ্বাস এবং বিভিন্ন দর্শনের উপর তাদের ব্যাখ্যা। ইসলামি দার্শনিকরা গ্রিক দার্শনিকদের রচনা এবং দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে ইসলামী ভিত্তিতে বিবেচনা করে এবং বিভিন্ন নীতিগুলো ব্যাখ্যা করেছিলেন। তারা যুক্তি এবং প্রমাণের উপর জোর দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, তত্ত্ববিদরা আরও ঐতিহ্যবাহী পথ গ্রহণ করেছিলেন এবং গ্রিক দার্শনিকদের দৃষ্টিভঙ্গিগুলোকে দ্বিতীয় সারিতে রেখেছিলেন। তারা ধর্মীয় ঐতিহ্য এবং কর্তৃত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন। বিশেষ করে আশ'আরী তত্ত্ববিদরা এই বিষয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন এবং বৈজ্ঞানিক কার্যকারণকে অস্বীকার করেছিলেন। আশ'আরীরা বিশ্বাস করতেন যে, আল্লাহ সবকিছুর কারণ এবং তিনিই সরাসরি বিশ্বের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, বৈজ্ঞানিক কার্যকারণ শুধুমাত্র একটি অনুমান এবং এটি বাস্তবতার একটি সঠিক প্রতিফলন নয়। ইসলাম ধর্ম বিজ্ঞান চর্চার পক্ষে এবং তা উৎসাহিত করে। কুরআনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত অনেক আয়াত রয়েছে যেগুলো মানুষকে চিন্তাভাবনা এবং জিজ্ঞাসা করতে উৎসাহিত করে। এছাড়াও, ইসলামে জ্ঞানকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং বলা হয় যে, জ্ঞান অর্জনের জন্য পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে যেতে হবে। এই কারণে, মধ্যযুগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে ইসলামী বিশ্বে উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানীরা জন্মগ্রহণ করেছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন: হাসান ইবনুল হায়সাম, আবু রায়হান আল-বেরুনি, ইবনুন নাফিস, ইবনে বাজা, ইবনে তুফায়েল, মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি, জাবির ইবনে হায়য়ান, আল-বাত্তানী, ওমর খৈয়াম, ইসমাইল আল-জাযারি, ইবনে খালদুন, নাসিরুদ্দীন তুসী, তাক্বী আদ দীন।ব্রেন্টজেস, সোনজা। "ইসলামী বিজ্ঞান।" ধারণার ইতিহাসের নতুন অভিধান। এড. মেরিয়ান ক্লাইন হরোভিটজ। ভলিউম ৩। ডেট্রয়েট: চার্লস স্ক্রিবনার্স সন্স, ২০০৫। পৃ. ১১৫৫-১১৬০। গেল ভার্চুয়াল রেফারেন্স লাইব্রেরি। এই বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন। হাসান ইবনুল হায়সাম আলোর প্রতিফলন এবং প্রতিসরণ সম্পর্কে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। আবু রায়হান আল-বেরুনি জ্যোতির্বিদ্যা, ভূগোল এবং গণিতে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। ইবনুন নাফিস রক্ত ​​সঞ্চালন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের তত্ত্বের জন্য বিখ্যাত। ইবনে বাজা জ্যোতির্বিদ্যা এবং গণিতে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। ইবনে তুফায়েল দার্শনিক গল্পের জন্য বিখ্যাত। মুহাম্মাদ ইবনে মুসা আল-খারেজমি গণিতে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। জাবির ইবনে হায়য়ান রসায়নে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। আল বাত্তানী জ্যোতির্বিদ্যা এবং গণিতে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। ওমর খৈয়াম জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত এবং কবিতার জন্য বিখ্যাত। ইসমাইল আল-জাযারি যন্ত্র-প্রকৌশলে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। ইবনে খালদুন সমাজবিজ্ঞানে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। নাসিরুদ্দীন তুসী জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত এবং প্রকৌশলে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। তাক্বী আদ দীন জ্যোতির্বিদ্যা এবং গণিতে তার কাজের জন্য বিখ্যাত। এই বিজ্ঞানীদের অনেকের আবিষ্কার এবং কাজ পশ্চিমা বিজ্ঞানের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তাঁদের আবিষ্কার এবং কাজ পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের অনুপ্রাণিত করেছে। এই মুসলিম বিজ্ঞানীদের আবিষ্কার এবং কাজ অত্যন্ত ব্যাপক ছিল। তারা দর্শন, গণিত, চিকিৎসা, আইন, জ্যোতির্বিদ্যা এবং সমাজবিজ্ঞান সহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।ব্রেন্টজেস, সোনজা। "ইসলামী বিজ্ঞান।" এর নতুন অভিধান, দালিনী কাপসায়াক সেকিল্ডেদি। ধারণার ইতিহাস। এড. মেরিয়ান ক্লাইন হরোভিটজ। ভলিউম ৩। ডেট্রয়েট: চার্লস স্ক্রিবনার্স সন্স, ২০০৫। পৃ. ১১৫৫-১১৬০। গেল ভার্চুয়াল রেফারেন্স লাইব্রেরি। সাহিত্য ইসলামে ভাষা ও সাহিত্য প্রধানত আরবী, ফার্সি, ভারতীয়, কুর্দি, তুর্কি ও বাংলা সাহিত্যের দ্বারা গঠিত এবং বিকশিত হয়েছে। ইসলামী সাহিত্যে সবচেয়ে বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম হলো আরব্য রজনীর গল্প। এই গল্পগুলো মধ্যযুগে মধ্যপ্রাচ্যে ফ্রেম গল্পের কৌশল ব্যবহার করে রচিত হয়েছিল। গল্পের মূল চরিত্র হল শেরজাদ, যিনি তার স্বামী, রাজা শাহরিয়ারকে তার গল্পের সাথে বিনোদন দিয়ে তার জীবন বাঁচায়। আরব্য রজনীর গল্পগুলো ১০ শতকের দিকে রচিত হওয়া শুরু হয় এবং ১৪ শতক পর্যন্ত তার চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। এই সময়ের মধ্যে, গল্পগুলোতে অনেকগুলো নতুন গল্প যোগ করা হয়েছিল এবং তারা বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। আরব্য রজনীর গল্পগুলো ১৮ শতকে পশ্চিমা সাহিত্যে বেশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে, যখন ফরাসি অনুবাদক অ্যান্টোইন গ্যাল্যান্ড এই গল্পগুলোকে অনুবাদ করেছিলেন। গ্যাল্যান্ডের অনুবাদটি ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল এবং এটি পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আরব্য রজনীর গল্পগুলোর প্রচার করতে সাহায্য করেছিল। আরব্য রজনীর গল্পগুলোর অনেকগুলো অনুকরণ লেখা হয়েছে, বিশেষ করে ফ্রান্সে। এই অনুকরণ গল্পগুলোর বিভিন্ন দিককে অন্বেষণ করেছে এবং তারা পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আরব্য রজনীর গল্পগুলোর প্রভাবকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। আলাদীনের জাদুর প্রদীপ, আলিবাবা ও চল্লিশ চোর এবং নাবিক সিন্দাবাদ আরব্য রজনীর সবচেয়ে বিখ্যাত গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গল্পগুলো বিশ্বজুড়ে পাঠকদের কাছে জনপ্রিয়। আরবি সাহিত্য হলো আরবি ভাষায় রচিত সাহিত্য, যার মধ্যে গদ্য এবং কবিতা উভয়ই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। আরবি সাহিত্যের মধ্যে রয়েছে উপন্যাস, গল্প, কবিতা, নাটক, প্রবন্ধ ইত্যাদি। আরবি ভাষায় সাহিত্যের জন্য ব্যবহৃত শব্দটি হলো "আদব", যা আরবি ভাষার "আদব" থেকে এসেছে। "আদব" শব্দের অর্থ নৈতিকতা, সংস্কৃতি এবং সমৃদ্ধি। তাই, আরবি সাহিত্যকে "আদব" বলা হয় কারণ এটি আরব সংস্কৃতির এবং আরবি ভাষার সমৃদ্ধির একটি প্রতিফলন। আরবি সাহিত্য পঞ্চম শতাব্দীতে উদ্ভূত হয়েছিল। এর আগে, আরবি ভাষা লিখিত ভাষা ছিল না। পঞ্চম শতাব্দীতে, আরবরা আরবি ভাষাকে একটি লিখিত ভাষায় রূপান্তরিত করে এবং আরবি সাহিত্যের বিকাশ শুরু করে। কুরআন হলো আরবি ভাষা ও সাহিত্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনা। এটি আরবি ভাষা সাহিত্যের একটি অসামান্য উদাহরণ এবং এটি আরব সংস্কৃতি ও ধর্মের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। কুরআন আরবি সাহিত্যের বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা ছিল। আরবি সাহিত্য ইসলামের স্বর্ণযুগে বিকাশ লাভ করেছিল। এই সময়ে, আরব কবি এবং লেখকরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ রচনা করেছিলেন, যা আজও আরবি সাহিত্যের অতুলনীয় সম্পদ। আরবি সাহিত্য আজও জীবিত রয়েছে এবং আরব বিশ্বের পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য অংশের কবি ও গদ্য লেখকদের দ্বারা অনুশীলন করা হয়। ফার্সি সাহিত্য হলো ফার্সি ভাষায় রচিত মৌখিক রচনা এবং লিখিত পাঠ্যগুলোর সমষ্টি। এটি একটি বিস্তৃত ধারনা যা কবিতা, গদ্য, নাটক, ইতিহাস, দর্শন, ধর্ম এবং বিজ্ঞানের মতো বিভিন্ন ধরণের সাহিত্যিক কাজকে অন্তর্ভুক্ত করে। ফার্সি সাহিত্যের ইতিহাস ২৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। ফারসি ভাষার উৎপত্তি প্রাচীন ইরানে, যা বর্তমানের ইরান, ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, ককেসাস এবং তুরস্ক নিয়ে গঠিত। এছাড়াও, ফারসি ভাষা মধ্য এশিয়ার কিছু অঞ্চলে এবং দক্ষিণ এশিয়ায়, যেখানে এটি ঐতিহাসিকভাবে প্রধান বা সরকারী ভাষা ছিল, সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে। জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি ছিলেন একজন বিখ্যাত ফারসি কবি যিনি ১৩ শতকে বাল্‌খ (বর্তমান আফগানিস্তান) এ জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার রচনাগুলো ফারসি ভাষায় লিখেছিলেন, যা তিনি মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। গজনভি সাম্রাজ্যের উত্থান, যা মধ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বিস্তীর্ণ অঞ্চল জয় করেছিল এবং দরবারের ভাষা হিসাবে ফারসি ভাষাকে গ্রহণ করেছিল। অন্যদিকে, বৃহৎ সেলজুক সাম্রাজ্যের উত্থান, যা যদিও তুর্কি উপজাতি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, তবুও তারা তাদের মধ্যে তুর্কি-ফারসি ঐতিহ্যকে ধারণ করেছিল এবং সময়ের সাথে সাথে ইরানি হয়ে উঠেছিল। কিছু লোক মনে করেন যে, অন্যান্য ভাষা থেকে ফার্সিতে অনুবাদ করা কাজগুলোও ফারসি সাহিত্যের অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়। এই কারণে, সমস্ত ফারসি সাহিত্য ফারসি ভাষায় লেখা হয়নি। উদাহরণস্বরূপ, খোরাসনের শাসক নাসির খসরু (৯৭৬-১০১০) গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর "রিপাবলিক" গ্রন্থটি ফারসি ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। এই অনুবাদটি ফারসি সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়, যদিও এটি ফারসি ভাষায় লেখা হয়নি। সমস্ত ফারসি ভাষায় লেখা কাজগুলো ফারসি বা ইরানি লেখকদের দ্বারা লেখা হয়নি। কারণ, তুর্কি, ককেশীয় এবং ভারতীয় কবি এবং লেখকরাও ফারসি সংস্কৃতির পরিবেশে ফারসি ভাষা ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তুর্কি কবি ওমর খৈয়াম (১০৪৮-১১৩১) তার বিখ্যাত রুবাইয়াৎ কাব্য ফারসি ভাষায় লিখেছিলেন। তিনি একজন তুর্কি ছিলেন না, তবে তিনি ফারসি সংস্কৃতির মধ্যে বড় হয়েছেন এবং ফারসি ভাষায় দক্ষ ছিলেন। ফেরদৌসি, শেখ সাদি, হাফেজ শিরাজি, ফরিদ উদ্দিন আত্তার, নিজামী গঞ্জেভী, জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি এবং ওমর খৈয়াম সহ ফারসি কবিরা পশ্চিমা সাহিত্যেও পরিচিত এবং অনেক দেশের সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছেন। এই কবিরা তাদের কাব্যিক প্রতিভা এবং দর্শনের জন্য বিখ্যাত। তাদের কাজগুলো বিশ্বজুড়ে পাঠকদের অনুপ্রাণিত করেছে। কুর্দি সাহিত্য হলো কুর্দি ভাষায় রচিত মৌখিক এবং লিখিত সাহিত্যকর্মের সমষ্টি। কুর্দি ভাষা একটি ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা যা মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে বসবাসকারী কুর্দি জনগোষ্ঠী দ্বারা কথিত হয়। কুর্দি সাহিত্যের একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে, যা কয়েক শতাব্দী ধরে রয়েছে। ইসলামের আগ পর্যন্ত, কুর্দিরা একটি মৌখিক সংস্কৃতি ছিল। তাদের কোনো লিখিত সাহিত্য ছিল না। তাই, ইসলামপূর্ব কুর্দি সাহিত্যের কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ বা তথ্য নেই। কুর্দি কাহিনীর একটি বড় অংশ মৌখিকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এই মৌখিক সাহিত্য আজও চলমান। কুর্দি কাহিনীর একটি বড় অংশ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে মুখে মুখে বলা হয়েছে। এই কাহিনীগুলো কুর্দি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তারা কুর্দিদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধকে প্রতিফলিত করে। ২০ শতকের গোড়ার দিক পর্যন্ত লিখিত সাহিত্য ছিল কবিতা আকারে। গদ্যের বিকাশ মূলত রাজনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের কারণে হয়েছে। এই উন্নয়নগুলো কুর্দিদের মধ্যে শিক্ষার হার বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে, যা গদ্যের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় ছিল। কুর্দি সাহিত্য ২০ শতকে দশক ধরে সীমাবদ্ধতা এবং নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়েছে। কুর্দিরা একটি বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী এবং তাদের উপর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সরকার দ্বারা নিপীড়ন চালানো হয়েছে। এই নিপীড়নগুলো কুর্দি সাহিত্যের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করেছে। পরিচিত প্রথম কুর্দি কবিরা হলেন আবদুসসামেদ বাবেক, আলী হারিরী, মেলায়ে বাতে, মোল্লা আহমেদ-ই জিজারী, ফকি তেইরান এবং আহমেদ-ই হানি। এই কবিরা ১০ম থেকে ১৭শ শতাব্দীর মধ্যে বাস করতেন এবং কুর্দি ভাষার বিভিন্ন উপভাষায় লিখেছেন। বিশেষ করে আহমেদ-ই হানি রচিত মেম ও জিন হলো সবচেয়ে পরিচিত রোমান্টিক কুর্দি রচনা। মেম ও জিন হলো একটি মহাকাব্য যা দুটি প্রেমিকের গল্প তুলে ধরে। এই মহাকাব্যটি কুর্দি সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে এবং এটি কুর্দি ভাষার একটি জনপ্রিয় রচনা। সবচেয়ে সুপরিচিত এবং ব্যাপকভাবে পরিচিত ঐতিহ্য হলো মেমে আলানের গান এবং মহাকাব্যিক কবিতা এবং সিয়বানদ এবং খেচে ঐতিহ্য। মেমে আলা একজন বিখ্যাত কুর্দি যোদ্ধা এবং তার গান ও মহাকাব্যিক কবিতা কুর্দি সংস্কৃতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। সিয়বানদ এবং খেচে হলো একটি দুঃখজনক প্রেমের গল্প যা কুর্দি সংস্কৃতিতে একটি জনপ্রিয় থিম। পারস্য-ইসলামী সংস্কৃতি ভারতীয় সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করতে শুরু করে যখন ভারত গজনভি সাম্রাজ্য দ্বারা দখল করা হয়েছিল। গজনভিরা ছিল একটি পারস্য-তুর্কি সাম্রাজ্য যা দশম শতাব্দীতে ভারতের উত্তর-পশ্চিম অংশে আধিপত্য বিস্তার করেছিল। তাদের শাসনকালে, তারা পারস্য ভাষা, সংস্কৃতি এবং ধর্মকে ভারতীয় সমাজে প্রবর্তন করেছিল। ফারসি ভাষা বেশিরভাগ ভারতীয় সাম্রাজ্যের সরকারী ভাষা হয়ে ওঠে। গজনভি সাম্রাজ্য, দিল্লি সালতানাত, বাংলা সালতানাত, দক্ষিণাত্য সালতানাত এবং মুঘল সাম্রাজ্য সহ অনেক ভারতীয় সাম্রাজ্য ফারসি ভাষাকে তাদের সরকারী ভাষা হিসেবে গ্রহণ করেছিল। ফারসি ভাষার এই ব্যবহার ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছিল। ফারসি শিল্প কর্মগুলো, যেমন সাহিত্য এবং গজলগুলো, উর্দু এবং অন্যান্য ভারতীয় সাহিত্যকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করেছিল। বাংলা মুসলমি সাহিত্য হলো বাংলা ভাষায় রচিত সাহিত্য যা বাঙালি মুসলিমদের দ্বারা রচিত বা তাদের জীবন ও সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। এই সাহিত্যের ইতিহাস মধ্যযুগে শুরু হয় এবং আধুনিক যুগ পর্যন্ত বিস্তৃত। মধ্যযুগীয় বাংলা সাহিত্যে ইসলাম ধর্মের প্রভাব ছিল সবচেয়ে বেশি। তুর্কি মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খলজি কর্তৃক বঙ্গদেশে মুসলিম রাজত্ব কায়েমের ফলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নবজন্ম ঘটে। ১৩৫২ খ্রিস্টাব্দে সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠা করেন। এই সময়কালে বাংলা মুসলিম সাহিত্যের সর্বাধিক বিস্তার ঘটে। ওই সময়কার মুসলমান কবিদের মধ্যে প্রাচীনতম হচ্ছেন- শাহ মুহম্মদ সগীর। তার কাব্য  ইউসুফ-জুলেখা' সুলতান গিয়াসউদ্দিন আজম শাহের রাজত্বকালে (১৩৮৯-১৪১০) রচিত বলে মনে করা হয়। এটি নবী ইউসুফ এর সংক্ষিপ্ত কাহিনী। কবি জৈনুদ্দীন রসুলবিজয় কাব্য রচনা করেছিলেন। তিনি গৌড় সুলতান ইউসুফ শাহের (১৪৭৪-৮১) সভাকবি ছিলেন। মুজাম্মিল ১৫শ' শতকের মধ্যবর্তী সময়ের কবি ছিলেন। তিনি প্রধানত তিনটি উল্লেখযোগ্য কাব্য রচনা করেন, নীতিশাস্ত্রবার্তা, সায়াৎনামা' ও 'খঞ্জনচরিত'। এর গল্পাংশ ফারসি থেকে নেওয়া। দোনাগাজীর বিখ্যাত কাব্য সয়ফুলমুলুক বদিউজ্জামাল'। তিনি সম্ভবত ১৬শ' শতকের মধ্যভাগের বাঙালি মুসলিম কবি। শেখ ফয়জুল্লাহ মধ্যযুগের একজন বিশিষ্ট বাঙালি মুসলিম সাহিত্যিক। তিনি পাঁচটি গ্রন্থ রচনা করেন, গোরক্ষবিজয়', 'গাজীবিজয়', 'সত্যপীর (১৫৭৫)', জয়নবের চৌতিশা' এবং রাগনামা'। দৌলত উজীর বাহরাম খাঁর রচনা করেন লায়লী-মজনু'; এটি ফারসি কবি জামীর 'লাইলী-মজনু' কাব্যের ভাবানুবাদ। এ ছাড়া মধ্যযুগে অন্যান্য মুসলমান কবির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- সৈয়দ সুলতান (আনু. ১৫৫০-১৬৪৮, কাব্য: নবীবংশ, শব-ই-মিরাজ, রসুলবিজয়, ওফাৎ-ই-রসুল, জয়কুম রাজার লড়াই, ইবলিসনামা, জ্ঞানচৌতিশা, জ্ঞানপ্রদীপ, মারফতি গান, পদাবলি),  নসরুল্লাহ্ খাঁ (আনু. ১৫৬০-১৬২৫, কাব্য: জঙ্গনামা, মুসার সওয়াল, শরীয়ৎনাম), শাহ মুহম্মদ সগীর, সৈয়দ হামজা, শাহ গরীবুল্লাহ, শেখ চান্দ, সৈয়দ আলাওল, নওয়াজিস খান, সৈয়দ মোহাম্মদ আকবর, আলি রজা, দৌলত কাজী, মুহম্মদ কবির, দোনাগাজী চৌধুরী, দৌলত উজির বাহরাম খান প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। বাঙালি মুসলমানদের সাহিত্যচর্চা অনেক আগে থেকে শুরু হলেও মূলত ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি এবং বিংশ শতকের শুরুতে মুসলমানদের সাহিত্য সাধনার নতুন ধারার সূচনা হয়। আধুনিক যুগে শেখ আবদুর রহিম হজরত মহাম্মদ (সা.)'র জীবনচরিত ও ধর্মনীতি (১৮৮৭) রচনা করেন। গোলাম মোস্তফা রচিত বিশ্বনবী (১৯৪২) মুহাম্মাদ এর শ্রেষ্ঠ জীবনী গ্রন্থগুলোর অন্যতম। এ সময়ে মুসলিম সাহিত্যিকদের মধ্যে যারা অনবদ্য অবদান রেখেছেন, তাদের আরও কয়েকজন হলেন- দীন মোহাম্মদ, এয়াকুব আলী চৌধুরী (১৮৮৮-১৯৪০), কাজী আকরম হোসেন (১৮৯৬-১৯৬৩), গোলাম মোস্তফা (১৮৯৭-১৯৬৪ খ্রি.), শেখ ফজলল করিম (১৮৮২-১৯৩৬ খ্রি.), আব্বাসউদ্দীন (১৯০১-১৯৫৯ খ্রি.), সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী (১৮৮০-১৯৩১ খ্রি.), কবি কায়কোবাদ (১৮৫৭-১৯৫১ খ্রি.), মুনশী মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ (১৮৬১-১৯০৭ খ্রি.), মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী (১৮৭৫-১৯৫০ খ্রি.) ও মোহাম্মদ আকরম খাঁ (১৮৬৮-১৯৬৯ খ্রি.), মোহাম্মদ আকরাম খাঁ, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ (১৮৮৫-১৯৬৯), এস ওয়াজেদ আলী (১৮৯০-১৯৫১), কাজী মোতাহার হোসেন (১৮৯৭-১৯৮১), আবুল মনসুর আহমদ (১৮৯৮-১৯৭৯), আবুল ফজল (১৯০৩-১৯৮৩), মোতাহের হোসেন চৌধুরী (১৯০৩-১৯৫৬), আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪), কবি বন্দে আলী মিয়া (১৯০৭-১৯৭৫) ও বেগম সুফিয়া কামাল (১৯১১-১৯৯৯) প্রমুখ। বাংলা ভাষায় সর্বপ্রথম পূর্ণাঙ্গ বাংলা তাফসির রচনা করেন শামসুল হক ফরিদপুরী (১৮৯৬-১৯৬৯)। বাংলা মুসলিম সাহিত্যের ইসলামি কবিতা ও গানের (গজল) ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামি ও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। যিনি কিনা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে বিবেচিত। নজরুল প্রচুর ইসলামী ভাবধারার কবিতা ও গান রচনা করেছেন। তার হাত ধরেই বাংলায় ইসলামী গান জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তাঁর রচিত ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ বাঙালি মুসলিম সমাজে এক প্রকার আলোড়ন এবং নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি করেছিল। এই গানটি ছাড়া বর্তমানে বাঙালি মুসলিমের ঈদ এক প্রকার অসম্পূর্ণই থেকে যায়। নজরুলের ইতিহাস সৃষ্টিকারী আত্মচারিত্রিক কালজয়ী কবিতা‘বিদ্রোহী’'তেও রয়েছে ইসলামী ভাবধারার প্রভাব। নবী মুহাম্মাদ এর এর শানে তিনি অসংখ্য নাত রচনা করেছেন। যার মধ্যে ‘ত্রিভূবনের প্রিয় মুহাম্মাদ’, ‘তোরা দেখে যা আমিনা মায়ের কোলে’, ‘আমি যদি আরব হতাম’, ‘তৌহিদেরই মুর্শিদ আমার’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও তিনি একের পর এক কালজয়ী ইসলামি কবিতা ও গজল রচনার মাধ্যমে বাংলা মুসলিম সাহিত্যকে এক অনন্য পর্যায়ে নিয়ে যান। বাঙালি মুসলিম কবি-সাহিত্যিকদের রচিত সাহিত্যে সমাজ সংস্কারের চিন্তা-চেতনা, জাতীয় ঐতিহ্যের ধ্যান-ধারণা, আত্মচেতনায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান প্রতিফলিত হয়। ১১ শতকে, তুর্কিরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পর, তুর্কি ভাষায় সাহিত্য রচনা শুরু হয়েছিল। এই সাহিত্যটি ইসলামি বিষয়বস্তুতে ভিত্তি করে ছিল এবং ফার্সি, আরবি এবং তুর্কি ভাষায় রচিত হয়েছিল। ১১ শতকে, সেলজুকদের আগমনের সাথে সাথে ফারসি ভাষার প্রয়োগ এবং ব্যবহার আনাতোলিয়ার অঞ্চলে শক্তিশালীভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়েছিল। সেলজুকরা ফারসি ভাষা, শিল্প এবং সাহিত্যের প্রবক্তা ছিলেন এবং তারা ফারসি ভাষাকে তাদের সরকারি ভাষা হিসাবে গ্রহণ করেছিল। এই ঐতিহ্যটি উসমানীয় সাম্রাজ্য দ্বারাও অনুসরণ করা হয়েছিল। উসমানীয়দেরকে সেলজুকদের উত্তরসূরি হিসাবে দেখা হতো এবং তারা সেলজুকদের ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্য ফারসি ভাষাকে তাদের সাহিত্য ভাষা হিসাবে ব্যবহার করেছিল এবং ফারসি ভাষায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্য রচনা করেছিল। ফারসি ভাষা উসমানীয় সাম্রাজ্যের সাহিত্য ভাষা ছিল। উসমানীয় সাম্রাজ্যের লেখকরা ফারসি ভাষায় সাহিত্য রচনা করেছিলেন এবং ফারসি ভাষা আনাতোলিয়ার ইসলামি সাহিত্যের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছিল। তুর্কি ভাষা ও সাহিত্যের প্রথম রচনাগুলো ১৩ শতকের শেষ এবং ১৪ শতকের শুরুর দিকে তুরস্কের মাটিতে রচিত হয়েছিল। এই রচনাগুলো ছিল মৌখিক এবং লিখিত উভয়ই। ১৯ শতক পর্যন্ত তুর্কি সাহিত্য ফারসি-ইসলামি ঐতিহ্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিকাশ লাভ করেছিল। এই সময়কালে, তুর্কি সাহিত্য দুটি প্রধান ধারায় বিভক্ত ছিল: লোক সাহিত্য এবং দেওয়ানি সাহিত্য। লোক সাহিত্য ছিল মৌখিক সাহিত্য যা জনসাধারণের মধ্যে প্রচলিত ছিল। এটি গল্প, কবিতা, গান এবং লোককাহিনী সহ বিভিন্ন রূপের সমষ্টি ছিল। দেওয়ানি সাহিত্য ছিল উচ্চতর সাহিত্য যা উসমানীয় দরবারের চারপাশে বিকাশ লাভ করেছিল। এটি ফারসি সাহিত্যের প্রভাবের অধীনে ছিল এবং কবিতা, গদ্য ও নাটক সহ বিভিন্ন রূপে বিভক্ত ছিল। উসমানীয় দরবারের চারপাশে, দেওয়ানী সাহিত্য প্রাধান্য পেয়েছিল। এর কারণ ছিল ফারসি সাহিত্যের প্রভাব, যা উসমানীয় দরবারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। জনসাধারণের মধ্যে মৌখিক ঐতিহ্য দীর্ঘ সময় ধরে অব্যাহত ছিল। এর কারণ ছিল লোক সাহিত্যের জনপ্রিয়তা, যা জনসাধারণের মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ ছিল। ১৯ শতকে, তানযিমাত যুগের সাথে সাথে তুর্কি সাহিত্যে পূর্বের প্রভাব হ্রাস পেতে শুরু করে। এর কারণ ছিল পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রভাব, যা তানযিমাত যুগের লেখকদের উপর একটি শক্তিশালী প্রভাব ফেলেছিল। এই সময়ে, তুর্কি সাহিত্যিকরা বিশেষ করে ফরাসি সাহিত্য থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। এর কারণ ছিল ফরাসি সাহিত্যের সাফল্য এবং এর আধুনিকতার ধারণা। থিয়েটার, সিনেমা ও সঙ্গীত ইসলাম থিয়েটারকে অনুমতি দেয়। যদিও ইসলামে থিয়েটারকে অনুমতি দেওয়া হয়, তবে এটি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। থিয়েটার প্রযোজনার ক্ষেত্রে, আল্লাহ, মুহাম্মাদ, অন্যান্য নবী-রাসূল, সাহাবী এবং ফেরেশতাদের চিত্রায়ন করা নিষিদ্ধ। এছাড়াও, থিয়েটার প্রযোজনাগুলো ইসলামী মূল্যবোধ এবং শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। মধ্যযুগীয় ইসলামী বিশ্বে পুতুল নাটক এবং তাজিয়া নামে পরিচিত জীবন্ত নাটক ছিল সবচেয়ে জনপ্রিয় নাট্য রূপ। পুতুল নাটকগুলো সাধারণত ইসলামপূর্ব কিংবদন্তি বা ইসলামী মহাকাব্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়। তাজিয়াগুলো ছিল ধর্মীয় নাটক যা আলী এবং তার পরিবারের শহীদ হওয়ার ইতিহাসকে স্মরণ করে। শিয়া ইসলামী নাটকগুলো বিশেষভাবে হাসান এবং হোসাইনের শহীদ হওয়ার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। হাসান এবং হোসাইন ছিলেন মুহাম্মাদ-এর নাতি এবং আলী-এর পুত্র। তারা তাদের চাচা মুয়াবিয়া-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত এবং নিহত হন। শিয়া মুসলমানরা তাদের শহীদদের জন্য গভীর শ্রদ্ধাশীল এবং তাজিয়াগুলো তাদের স্মরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ইন্দোনেশিয়ার ওয়ায়াং হলো পুতুল নাটকের সবচেয়ে প্রাচীন এবং স্থায়ী রূপগুলোর মধ্যে একটি। ওয়ায়াং সাধারণত কাঠের তৈরি হয় এবং একটি সুতির পর্দার পিছনে নিয়ন্ত্রিত হয়। ওয়ায়াং মূলত ইসলামপূর্ব কিংবদন্তি ঘটনাকে মঞ্চস্থ করে, তবে এটি আমির হামজা-এর মতো ইসলামী মহাকাব্যগুলোর জন্যও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। আমির হামজা ছিলেন মুহাম্মাদ-এর চাচাতো ভাই এবং একজন বীরযোদ্ধা। তার জীবন এবং কাজগুলো ওয়াং নাটকগুলোতে প্রায়শই চিত্রিত করা হয়। তুর্কি ছায়া নাটক কারাগোজ এবং হাজিভাত, অঞ্চলে পুতুল নাটককে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। এই নাটকগুলোতে, কারাগোজ এবং হাজিভাত নামক দুটি চরিত্র একটি হাস্যরসাত্মক এবং সমালোচনামূলক উপায়ে সমাজের বিভিন্ন দিকগুলোকে চিত্রিত করে। ইসলাম একটি বিশ্বব্যাপী ধর্ম যা বিভিন্ন সংস্কৃতি এবং ভাষার লোকেদের একত্রিত করে। এই বৈচিত্র্য ইসলামী সংগীতেও প্রতিফলিত হয়। বিভিন্ন অঞ্চল এবং সংস্কৃতির মুসলমানরা তাদের নিজস্ব অনন্য বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্য তৈরি করেছে। সেলজুক তুর্কিরা ইসলামী সংগীতের বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। তারা আনাতোলিয়ায় আসার পর, তারা তাদের নিজস্ব বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্যকে স্থানীয় ঐতিহ্যগুলোর সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। এই মিশ্রণ থেকে নতুন বাদ্যযন্ত্রের শৈলীর উদ্ভব হয়েছিল যা সারা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সাহারা-নিম্ন আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া এবং মালয় দ্বীপপুঞ্জে বিশাল মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে নিজস্ব অনন্য বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্য রয়েছে যা ইসলামী সংগীতের উপর প্রভাব ফেলেছে। তবে, এই অঞ্চলগুলোর বাদ্যযন্ত্রের ঐতিহ্যগুলো আনাতোলিয়া বা মধ্যপ্রাচ্যের মতো কেন্দ্র থেকে প্রভাবিত হয়নি। সুফিরা ইসলামের একটি আধ্যাত্মিক শাখা যা সঙ্গীতকে আধ্যাত্মিক অনুশীলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে দেখে। সুফিরা তাদের সংগীতকে ব্যবহার করে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের (দিদার) অনুভূতি অর্জনের জন্য। সুফিদের সংগীত সারা মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এটি ইসলামী সংগীতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। সমাজ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ইসলাম ধর্মে পুরোহিতের মতো কোনো ধর্মীয় নেতা নেই, যারা আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেন। ইসলামী ধর্মীয় নেতৃত্বের পদবী বোঝাতে ইমাম (إمام) শব্দটি ব্যবহার করা হয়, যা প্রায়শই ইসলামী ইবাদত পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। ধর্মীয় ব্যাখ্যা তত্ত্বাবধান করেন আলেম (علماء), যা ইসলামী শিক্ষায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মুসলিম পণ্ডিতদের দ্বারা গঠিত গোষ্ঠীকে বোঝাতে ব্যবহৃত একটি শব্দ। হাদিসের পণ্ডিতকে মুহাদ্দিস বলা হয়, আইনশাস্ত্রের পণ্ডিতকে ফকীহ (فقيه) বলা হয়, যিনি আইনগত মতামত বা ফতোয়া জারি করার যোগ্য তাকে মুফতি বলা হয় এবং কাজী হলেন একজন ইসলামী বিচারক। পণ্ডিতদের দেওয়া সম্মানসূচক উপাধির মধ্যে রয়েছে শেখ, মৌলভী এবং মওলানা। কিছু মুসলিমরা অলৌকিক ঘটনা (كرامات, karāmāt) এর সাথে সম্পর্কিত সাধকদেরও সম্মান করেন। শাসনকার্য ইসলামী অর্থনৈতিক আইনশাস্ত্রে ধনসম্পদ জমা করে রাখা এবং একচেটিয়া ব্যবসায়কে ঘৃণার চোখে দেখা হয়। শরিয়াহ মেনে চলার প্রচেষ্টায় ইসলামী ব্যাংকিং এর উদ্ভব হয়েছে। ইসলাম সুদকে নিষেধ করে, যা সাধারণত ব্যবসায়ে অধিক লাভ করাকে বোঝায়। পরিবর্তে, ইসলামী ব্যাংকগুলো ঋণগ্রহীতার সাথে অংশীদারিত্বে যায় এবং উভয়ই লাভ ও ক্ষতি ভাগ করে নেয়। অন্য আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো অনিশ্চয়তা এড়ানো, যা জুয়া হিসাবে বিবেচিত হয়। ৭২০ সালের আশেপাশে ব্যাপকভাবে ব্যক্তিগত কাজে পরিণত হওয়ার আগে পর্যন্ত রাশিদুন ও উমাইয়া খিলাফত বাইতুল-মাল নামে পরিচিত রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে দান-সদকার বন্টনে জড়িত ছিল। প্রথম খলিফা আবু বকর যাকাত বন্টন করেন, যা নির্ধারিত ন্যূনতম আয়ের প্রথম দিকের একটি উদাহরণ, যেখানে প্রতিটি নাগরিক বার্ষিক ১০ থেকে ২০ দিরহাম পেত। দ্বিতীয় খলিফা উমরের শাসনামলে শিশু সহায়তা চালু করা হয় এবং বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরা ভাতা পেতে সক্ষম হয়, যখন উমাইয়া খলিফা উমর ইবনে আবদুল আজিজ প্রতিটি অন্ধ ব্যক্তির জন্য এবং প্রতি দুইজন দীর্ঘদিন অসুস্থ ব্যক্তির জন্য একজন করে চাকর নিয়োগ করেন। জিহাদ অর্থ "আল্লাহর পথে সচেষ্ট বা সংগ্রাম করা" এবং এর সর্বব্যাপী অর্থ হলো "অসন্তোষের বিষয়টির সাথে লড়াই করতে নিজের সর্বোচ্চ শক্তি, প্রচেষ্টা, উদ্যোগ বা দক্ষতা প্রয়োগ করা"। শিয়া মুসলমানরা বিশেষভাবে আধ্যাত্মিক আত্ম-পূর্ণতা অর্জনের জন্য "মহান জিহাদ" এর উপর জোর দেন এবং "ছোট জিহাদ" কে যুদ্ধ হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। কোনো বিশেষণ ছাড়া ব্যবহার করা হলে, জিহাদকে প্রায়ই সামরিক অর্থে বর্ণনা করা হয়। জিহাদ হলো ইসলামী আইনে অনুমোদিত যুদ্ধের একমাত্র রূপ এবং এটি অবৈধ কাজ, সন্ত্রাসী, অপরাধী গোষ্ঠী, বিদ্রোহী, ধর্মত্যাগী এবং মুসলমানদের নিপীড়নকারী নেতা বা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঘোষণা করা যেতে পারে। বর্তমানে বেশিরভাগ মুসলিমই জিহাদকে কেবল প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের এক রূপ হিসাবে ব্যাখ্যা করেন। জিহাদ কেবলমাত্র কর্তৃপক্ষের সাথে জড়িতদের জন্যই ব্যক্তিগত কর্তব্য হয়ে ওঠে। বাকি জনগণের জন্য, এটি শুধুমাত্র সাধারণ সংগঠনের ক্ষেত্রে ঘটে। অধিকাংশ দ্বাদশবাদী শিয়া মুসলমান বিশ্বাস করেন যে, আক্রমণাত্মক জিহাদ কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের ঐশ্বরিকভাবে নিযুক্ত নেতা ঘোষণা করতে পারেন এবং সেইজন্য মুহম্মদ আল-মাহদীর আত্মগোপনের পর ৮৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে এটিকে স্থগিত করা হয়েছে। দৈনন্দিন ও পারিবারিক জীবন ইসলামী আদর্শে প্রতিটি দৈনন্দিন আমলই আদবের অন্তর্ভুক্ত, যেমন- শূকরের মাংস, রক্ত এবং মৃত পশুর মাংস গ্রহণ নিষিদ্ধ। স্বাস্থ্যকে আল্লাহর দানকৃত আমানত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং মদ জাতীয় মাদকদ্রব্য পান ও গ্রহণ নিষিদ্ধ (হারাম)। মাংস অবশ্যই হতে হবে শাকাশী প্রাণী থেকে যা মুসলিম, ইহুদি বা খ্রীষ্টান কর্তৃক আল্লাহর নামে জবাই করা হয়েছে। ইসলামে নারী-পুরুষের পোশাকের ক্ষেত্রে শালীনতা বজায় রাখার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। ইসলামে পুরুষদের জন্য সিল্ক এবং সোনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হায়া, যা প্রায়শই "লজ্জা" বা "নম্রতা" অর্থে ব্যবহৃত হয়, কখনও কখনও ইসলামের সহজাত চরিত্র হিসাবে বর্ণনা করা হয় এবং মুসলিমদের দৈনন্দিন জীবনের অনেক কিছুকে অবহিত করে। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামে পোশাকের নম্রতার একটি মানদণ্ডের উপর জোর দেওয়া হয়, উদাহরণস্বরূপ মহিলাদের জন্য হিজাব পরিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পবিত্রতা বজায় রাখার জন্য ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতাও জরুরি। ইসলামী বিবাহে, বরকে মহর প্রদান করতে হয়। ইসলামী বিশ্বের বেশিরভাগ পরিবারই এক সময়ে এক ব্যক্তির সঙ্গে বিবাহিত জীবনযাপনের প্রথার অনুসারি। ইসলামে মুসলিম পুরুষদের বহুবিবাহের অনুমতি দেওয়া হয় এবং একই সাথে চারজন স্ত্রী থাকতে পারে। ইসলামী শিক্ষা ও আইনশাস্ত্র দৃঢ়ভাবে স্বীকৃতি দেয় যে, যদি কোনও পুরুষ তার প্রতিটি স্ত্রীকে সমান আর্থিক এবং মানসিক সমর্থন দিতে না পারেন, তবে তার একজন মহিলাকে বিবাহ করা উচিত। বহুবিবাহের জন্য উল্লিখিত একটি কারণ হলো যে এটি একজন পুরুষকে একাধিক মহিলাকে আর্থিক সুরক্ষা দিতে দেয়, যাদের অন্যথায় কোন সমর্থন থাকবে না (যেমন বিধবা)। প্রথম স্ত্রী বিবাহের চুক্তিতে একটি শর্ত রাখতে পারেন যে, স্বামী তাদের বিবাহের সময় অন্য কোন মহিলাকে বিয়ে করতে পারবেন না। বিবাহের ক্ষেত্রেও সাংস্কৃতিক পার্থক্য রয়েছে। বহুস্বামীত্ব, এমন একটি অনুশীলন যেখানে একজন মহিলা দু'জন বা ততোধিক স্বামী গ্রহণ করেন, যা ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সন্তানের জন্মের পর তার ডান কানে আযান দেওয়া হয়। সপ্তম দিনে, আকিকা অনুষ্ঠান করা হয়, যেখানে একটি পশু কোরবানি করা হয় এবং এর মাংস গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়। শিশুর মাথার চুল কর্তন করা হয় এবং তার চুলের ওজনের সমান পরিমাণ অর্থ গরীবদের দান করা হয়। পুরুষদের খৎনা, যাকে খিতান বলা হয়, মুসলিম বিশ্বে প্রচলিত। পিতা-মাতাকে সম্মান করা ও তার আনুগত্য করা এবং বিশেষ করে বৃদ্ধ বয়সে তাদের যত্ন নেওয়া ইসলামের ধর্মীয় দায়িত্ব। একজন মৃত মুসলমানকে তাদের শেষ শব্দ হিসেবে শাহাদাহ্ উচ্চারণ করতে উৎসাহিত করা হয়। মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং সম্প্রদায়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় অংশ নেওয়া পুণ্যের কাজগুলোর মধ্যে বিবেচিত হয়। ইসলামি দাফনের রীতিতে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব (সাধারণত ২৪ ঘন্টার মধ্যে) দাফন করতে উৎসাহিত করা হয়। একই লিঙ্গের সদস্যদের দ্বারা মৃতদেহ গোসল করানো হয় এবং একটি পোশাকে আবৃত করা হয় যাকে কাফন বলা হয়। সালাত আল-জানাযা নামক একটি "জানাজার নামাজ" করা হয়। মৃতদের জন্য হাহাকার বা উচ্চস্বরে, শোকপূর্ণ চিৎকার করে শোকপালনকে নিরুৎসাহিত করা হয়। মৃতদেহ কবরে দাফন করা হয় এবং কবরগুলো প্রায়শই অচিহ্নিত থাকে, এমনকি শাসকদের জন্যও। শিল্প ও সংস্কৃতি "ইসলামী সংস্কৃতি" শব্দটি ধর্মের সাথে সম্পর্কিত সংস্কৃতির দিকগুলো বোঝাতে ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন উৎসব এবং পোশাকের রীতিনীতি। এটি ঐতিহ্যগতভাবে মুসলিম সংস্কৃতির দিকগুলোকে বোঝাতেও বিতর্কিতভাবে ব্যবহৃত হয়। "ইসলামী সভ্যতা" প্রাথমিক খিলাফতের সংশ্লেষিত সংস্কৃতির দিকগুলোকেও বোঝাতে পারে, যার মধ্যে অমুসলিমদের সংস্কৃতিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যাকে কখনও কখনও "ইসলামী" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ইসলামী শিল্পে স্থাপত্য, ক্যালিগ্রাফি, দৃশ্যকলা এবং সিরামিকের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্র অন্তর্ভুক্ত। যদিও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে আইনের সাথে সম্পর্কিত কারণে প্রায়শই জীবন্ত প্রাণীদের চিত্র তৈরি করতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, এই নিয়মটি বিভিন্ন পণ্ডিত এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়কালে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে। এই বিধিনিষেধকে ইসলামী শৈল্পিক সংস্কৃতির মূল দিক হিসাবে ক্যালিগ্রাফি, টালিকরণ এবং নকশার প্রাধান্য ব্যাখ্যা করতে ব্যবহার করা হয়েছে। উপরন্তু, মুহাম্মাদের চিত্রায়ন মুসলমানদের মধ্যে একটি বিতর্কিত বিষয়। ইসলামী স্থাপত্যে, বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রভাব রয়েছে যেমন উত্তর আফ্রিকান এবং স্প্যানিশ ইসলামী স্থাপত্য যেমন কাইরুয়ান জামে মসজিদ রোমান এবং বাইজেন্টাইন ভবন থেকে মার্বেল এবং পোরফিরি স্তম্ভ রয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার মসজিদগুলোতো প্রায়শই স্থানীয় জাভানীজ শৈলী থেকে বহু-স্তরের ছাদ থাকে। ইসলামী ক্যালেন্ডার একটি চান্দ্র পঞ্জিকা যা ৬২২ খ্রিস্টাব্দে হিজরতের দিন থেকে শুরু হয়। এই দিনটি খলিফা উমর নির্বাচন করেছিলেন, কারণ এটি মুহাম্মাদ এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল। ইসলামী ধর্মীয় ছুটির দিনগুলো চন্দ্র ক্যালেন্ডারের নির্দিষ্ট তারিখে পড়ে, যার অর্থ হলো যে সেগুলো গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের বিভিন্ন বছরে বিভিন্ন ঋতুতে ঘটে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী উৎসবগুলো হলো রমজান মাসের শেষ হওয়ার দিনে শাওয়াল মাসের ১ তারিখে ঈদুল ফিতর এবং হজ্জ (তীর্থযাত্রা) শেষ হওয়ার সাথে সাথে জিলহজ মাসের ১০ তারিখে ঈদুল আজহা। সাংস্কৃতিক মুসলিমরা ধর্মীয়ভাবে অনুশীলনকারী ব্যক্তি নন অর্থাৎ, তারা ইসলামের ধর্মীয় অনুশাসনগুলো অনুসরণ করে না, যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রোজা রাখা, হজ পালন করা ইত্যাদি। তবে, তারা এখনও নিজেদেরকে মুসলিম হিসাবে পরিচয় দেয় কারণ তারা ইসলামকে তাদের সংস্কৃতি এবং পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে বিবেচনা করে। উৎসব ও অনুষ্ঠান ইসলাম ধর্মে দুটি প্রধান উৎসব রয়েছে: ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। এছাড়াও, কিছু ছোটখাটো উৎসব রয়েছে যা বিভিন্ন দেশে উদযাপিত হয়, যেমন ইসলামি নববর্ষ, ঈদে মিলাদুন্নবী। ঈদুল ফিতর ঈদুল ফিতর মুসলমানদের প্রধান দুটি ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে একটি। আরবিতে "ঈদ" শব্দের অর্থ উৎসব বা আনন্দ, আর "ফিতর" শব্দের অর্থ বিদীর্ণ করা, উপবাস ভঙ্গ করা, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাওয়া। সুতরাং, ঈদুল ফিতর হলো রমজান মাসের এক মাস সিয়াম সাধনার পর রোজা ভাঙার আনন্দের উৎসব। ঈদুল ফিতর হলো ইসলামের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব। এটি রমজান মাসের রোজার শেষে পালিত হয়। ঈদের দিন সকালে মুসলিমরা ঈদগাহ বা মসজিদে একত্রিত হয়ে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে। নামাজের পর তারা একে অপরের সাথে কুশলাদি বিনিময় করে, মিষ্টি বিতরণ করে এবং আনন্দ-উৎসব করে। ঈদুল ফিতরের দিন ধনী মুসলমানরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী গরীবদের মাঝে ফিতরা প্রদান করে। ফিতরা হলো একটি সামাজিক দায়িত্ব যা মুসলমানদেরকে তাদের সম্পদের একটি অংশ গরীবদের সাথে ভাগ করে নিতে নির্দেশ দেয়। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে মুসলমানরা নতুন পোশাক পরে। ঈদের দিন মুসলমানরা একে অপরের সাথে মিষ্টি বিতরণ করে। ঈদের দিন মুসলমানরা আনন্দ-উৎসব করে, খেলাধুলা করে এবং পরিবার-পরিজনের সাথে সময় কাটায়। এদিন মুসলমানরা পরস্পরের সাথে কোলাকুলি, সালাম ও শুভেচ্ছা বিনিময় করে তাদের সামাজিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে তোলে। ঈদুল আজহা ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ হলো ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। ইসলামি চান্দ্র পঞ্জিকায়, ঈদুল আযহা জ্বিলহজ্জ মাসের ১০ তারিখে পড়ে। আন্তর্জাতিক (গ্রেগরীয়) পঞ্জিকায় তারিখ প্রতি বছর ভিন্ন হয়, সাধারণত এক বছর থেকে আরেক বছর ১০ বা ১১ দিন করে কমতে থাকে। ঈদের তারিখ স্থানীয়ভাবে জ্বিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে। ঈদুল আযহার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো ত্যাগ। এই দিনটিতে মুসলমানেরা ফজরের নামাযের পর ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকআত ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করে ও অব্যবহিত পরে স্ব-স্ব আর্থিক সামর্থ্য অনুযায়ী গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ বা উট আল্লাহর নামে কুরবানী করে। কুরবানী হলো ঈদুল আযহার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করা হয়। কুরবানির পশুকে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী জবাই করা হয়। জবাইকৃত পশুর মাংস তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম ভাগ গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়, দ্বিতীয় ভাগ আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং তৃতীয় ভাগ নিজের জন্য রাখা হয়। অন্যান্য অনুষ্ঠান ইসলামী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু ছোটখাটো উৎসব রয়েছে। এই উৎসবগুলো বিভিন্ন স্থানীয় ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে সম্পর্কিত। কিছু জনপ্রিয় উৎসবের মধ্যে রয়েছে: ইসলামি নববর্ষ: ইসলামি বর্ষপঞ্জির নতুন বছরকে ইসলামি নববর্ষ বলা হয়। নববর্ষ উপলক্ষে অনেক মুসলমান নতুন পোশাক পরে, মিষ্টি বিতরণ করে, এবং আনন্দ-উৎসব করে। মাহে রমজান: রমজান মাস হলো ইসলামের পবিত্র মাস। রমজান মাসে মুসলমানরা রোজা পালন করে। রোজা হলো একটি ধর্মীয় রীতি যা মুসলমানদেরকে আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য অর্জনের জন্য নির্দেশ দেয়। ঈদে মিলাদুন্নবী: ঈদে মিলাদুন্নবী হলো নবী মুহাম্মাদ এর জন্মদিন। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে অনেক মুসলমান মসজিদে নামাজ আদায় করে, নবী মুহাম্মাদ এর জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে আলোচনা করে, এবং আনন্দ-উৎসব করে। আশুরা: আশুরা বা মহররম হলো ইসলামী বর্ষপঞ্জির প্রথম মাসের দশম দিন। এই দিনটিকে মুসলিমরা বিশেষভাবে স্মরণ করে, কারণ এই দিনে ইমাম হোসাইন ও তাঁর সহযোদ্ধাদের কারবালার ময়দানে শহীদ হতে হয়েছিল। আশুরার দিনটিকে মুসলিমরা শোক ও আত্ম-শুদ্ধির দিন হিসেবে পালন করে। এদিন তারা রোজা রাখে, নামাজ পড়ে, পবিত্র কুরআন পাঠ করে এবং আশুরার ঘটনার উপর আলোচনা করে। আশুরার দিনটিকে শিয়া মুসলিমরা বিশেষভাবে স্মরণ করে। এই দিনটিকে তারা আনুষ্ঠানিকভাবে শোক ও আত্ম-শুদ্ধির দিন হিসেবে পালন করে। তারা আশুরার দিনটিতে কালো পোশাক পরে, মাথায় টুপি পরে এবং আশুরার ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করে। এছাড়াও, তারা আশুরার দিনটিতে খাবার দান করে, বিশেষ করে দুঃস্থ ও দরিদ্রদের। সুন্নি মুসলিমরাও আশুরার দিনটিকে স্মরণ করে, তবে তারা এটিকে শোক ও আত্ম-শুদ্ধির দিন হিসেবে পালন করে না। তারা আশুরার দিনটিতে রোজা রাখে এবং আশুরার ঘটনার উপর আলোচনা করে। আশুরার দিনটি একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন, কারণ এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের সাক্ষী। এটি একটি দিন, যখন সত্যের পক্ষে লড়াই করার জন্য একজন মহান ব্যক্তিকে শহীদ হতে হয়েছিল। আশুরার দিনটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, সত্যের পক্ষে লড়াই করা কখনই সহজ নয়, কিন্তু এটিই হল একমাত্র পথ যা মহানতার দিকে নিয়ে যাবে। শবে বরাত: শবে বরাত হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি আরবি মাস শাবানের ১৪ তারিখে পালিত হয়। শবে বরাত শব্দের অর্থ "রাত্রি মুক্তি"। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, এই রাতে আল্লাহ মানবজাতির জন্য রহমতের দরজা খুলে দেন এবং তাদের পাপ ক্ষমা করেন। শবে বরাতের রাতে, মুসলিমরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। তারা মসজিদে গিয়ে বিশেষ নামাজ পড়ে, পবিত্র কুরআন পাঠ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারা এই রাতে দান-খয়রাতও করে। শবে বরাতের রাতে, মুসলিমরা তাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে বিশ্বাস করে। তারা এই রাতে তাদের ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করে এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। শবে বরাত একটি সুন্দর এবং পবিত্র রাত্রি। এটি একটি রাত্রি যখন মুসলিমরা আল্লাহর কাছে তাদের পাপ ক্ষমা করার জন্য প্রার্থনা করে। শবে মেরাজ: শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজ হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় উৎসব। এটি আরবি মাস রজব মাসের ২৭ তারিখে পালিত হয়। শবে মেরাজ শব্দের অর্থ "ঊর্ধ্বগমনের রাত"। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, এই রাতে মুহাম্মাদ আল্লাহর নির্দেশে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত ভ্রমণ করেছিলেন। এরপর তিনি সিদরাতুল মুনতাহায় পৌঁছান, যেখানে তিনি আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করেন। শবে মেরাজের রাতে, মুহাম্মাদ অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান পেয়েছিলেন, যা মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তিনি জান্নাত ও জাহান্নামের দৃশ্য দেখেছিলেন, যা মুসলিমদের জন্য একটি সতর্কবার্তা। শবে মেরাজ মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিকটবর্তী হওয়ার এবং তাঁর নির্দেশাবলী অনুসরণ করার জন্য অনুপ্রাণিত করে। শবে মেরাজের রাতে, মুসলিমরা বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করে। তারা মসজিদে গিয়ে বিশেষ নামাজ আদায় করে, পবিত্র কুরআন পাঠ করে এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। তারা এই রাতে দান-খয়রাতও করে। শবে কদর: শবে কদর বা লাইলাতুল কদর হলো ইসলাম ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিবস। এটি রমজান মাসের শেষ দশকের কোনও বিজোড় রাতে পালিত হয়। শবে কদর শব্দের অর্থ "মর্যাদাপূর্ণ রাত"। মুসলিমরা বিশ্বাস করে যে, এই রাতে আল্লাহ কুরআন নাযিল করেছিলেন। পবিত্র কুরআনের সুরা কদরে বলা হয়েছে: ইসলামী উৎসবগুলো মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই উৎসবগুলো মুসলমানদেরকে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এগুলি মুসলমানদেরকে তাদের পরিবার-পরিজনের সাথে একত্রিত হওয়ার এবং আনন্দ-উৎসব করার একটি সুযোগ প্রদান করে। অন্যান্য ধর্মের উপর প্রভাব কিছু ধর্মীয় আন্দোলন, যেমন দ্রুজ, বারঘোয়াটা, ইয়েজদীবাদ, হা-মীম ইত্যাদি, ইসলাম থেকে উদ্ভূত হয়েছে বা ইসলামের সাথে সম্পর্ক রয়েছে। এই আন্দোলনগুলোর মধ্যে কোনটি পৃথক ধর্ম এবং কোনটি ইসলামের একটি সম্প্রদায় তা প্রায়ই বিতর্কের বিষয় হয়ে দাড়ায়। এই আন্দোলনগুলোর মধ্যে কিছু, যেমন দ্রুজ, ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গেছে। অন্যরা, যেমন ইয়েজদীবাদ, ইসলামের সাথে কিছু মিল বজায় রেখেছে। দ্রুজরা একটি গোপন ধর্মীয় গোষ্ঠী যারা লেবানন, সিরিয়া এবং ইসরায়েলে বাস করে। তারা বিশ্বাস করে যে ইমাম আল-হাকিম বি-আমর আল্লাহ, একজন ইসমাইলি ধর্মীয় নেতা, ঈশ্বরের অবতার ছিলেন। দ্রুজ বিশ্বাস ইসলামের সাথে অনেক মিল ভাগ করে নেয়, তবে এর কিছু অনন্য মতবাদও রয়েছে, যেমন ইমাম আল-হাকিমের ঈশ্বরের অবতার হওয়ার বিশ্বাস। ইয়েজদীরা একটি ধর্মীয় গোষ্ঠী যারা মূলত কুর্দিস্তানে বাস করে। তারা বিশ্বাস করে যে ঈশ্বর এক এবং অদ্বিতীয়, এবং তিনি ৭,০০০ বছর আগে আদমকে প্রেরণ করেছিলেন। ইয়েজদীরা ইসলামের সাথে কিছু মিল ভাগ করে নেয়, তবে তারা ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোর কিছুকে অস্বীকার করে, যেমন নবী মুহাম্মাদের নবুওয়াত। বাবিবাদ একটি ধর্মীয় আন্দোলন যা ১৯ শতকে ইরানে উত্থিত হয়েছিল। এটি সৈয়দ আলী মুহাম্মদ ই-শিরাজী আল-বাব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের একজন নবী ছিলেন। বাবিবাদ ইসলামের সাথে কিছু মিল ভাগ করে নেয়, তবে এটি ইসলামের মৌলিক নীতিগুলোর কিছুকে অস্বীকার করে, যেমন নবী মুহাম্মাদের নবুওয়াত। শিখধর্ম একটি ধর্মীয় আন্দোলন যা ১৫ শতকে ভারতে উত্থিত হয়েছিল। এটি গুরু নানক দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, যিনি দাবি করেছিলেন যে তিনি ঈশ্বরের একজন অবতর ছিলেন। শিখধর্ম ইসলাম এবং হিন্দুধর্মের কিছু দিককে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সমালোচনা ইসলামের সমালোচনা এর প্রাথমিক পর্যায় থেকেই বিদ্যমান রয়েছে। প্রাথমিক সমালোচনা এসেছে ইহুদি লেখক, যেমন ইবনে কামমুনা এবং খ্রিস্টান লেখকদের কাছ থেকে, যাদের অনেকে ইসলামকে খ্রিস্টান ধর্মত্যাগ বা মূর্তিপূজার একরূপ হিসাবে দেখেছেন, প্রায়শই এটিকে ধ্বংসাত্মক শর্তে ব্যাখ্যা করেছেন। খ্রিস্টান লেখকরা ইসলামের জান্নাতের কামোত্তেজক বিবরণের সমালোচনা করেছেন। আলী ইবনে সাহল রাব্বান আল-তাবারি কুরআনের জান্নাতের বর্ণনাকে এই বলে রক্ষা করেন যে, বাইবেলও এই ধরনের ধারণা বোঝায়, যেমন ম্যাথিয়ু সুসমাচারে মদ পান করা। ক্যাথলিক ধর্মতাত্ত্বিক অগাস্টিন অফ হিপ্পোর মতবাদ অনুসারে এটি জীবন ও মৃত্যু উভয় ক্ষেত্রেই শারীরিক সুখের বিস্তৃত প্রত্যাখ্যানের দিকে নিয়ে যায়। মুহাম্মাদের অবমাননাকর ছবিগুলো ১৪শ শতকের মহাকাব্য ডিভাইন কমেডিতে দান্তে আলিগেরি দ্বারা চিত্রিত করা হয়েছে, যা ৭ম শতাব্দীর প্রথম দিকে বাইজেন্টাইন চার্চের চিত্রগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে মুহাম্মাদকে আলী এর সাথে নরকের অষ্টম বৃত্তে চিত্রিত করা হয়েছে। দান্তে ইসলাম ধর্মকে সামগ্রিকভাবে দোষারোপ করেন না, বরং খ্রিস্টান ধর্মের পরে আরেকটি ধর্ম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিচ্ছিন্নতাবাদ (schism) এর জন্য মুহাম্মাদকে অভিযুক্ত করে। আধুনিক মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে ব্যক্তিদের প্রতি আচরণ, বিশেষ করে ইসলামী আইনের প্রয়োগের সাথে সম্পর্কিত মানবাধিকারের বিষয়গুলো নিয়েও সমালোচনা করা হয়। উপরন্তু, সাম্প্রতিক বহুসংস্কৃতিবাদী প্রবণতার জেরে, পশ্চিমে মুসলিম অভিবাসীদের আত্মীকরণের ক্ষেত্রে ইসলামের প্রভাব সম্পর্কে সমালোচনা করা হয়েছে। আরও দেখুন ইসলামি পরিভাষাকোষ ইসলামের ইতিহাস ইসলামি স্বর্ণযুগ আল্লাহ তাওহীদ মুসলিম কুরআন শরিয়ত মুহাম্মাদ ইসলামি সংস্কৃতি ইসলাম শিক্ষা কালেমা শাহাদত ইবাদত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ প্রধান ধর্মাবলম্বী গোষ্ঠীসমূহ ইসলামের রূপরেখা খিলাফত ইসলামে নারী সুন্নি ইসলাম ইসলাম এবং মুসলমান-সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহের সূচীপত্র তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি বিশ্বকোষ দ্যা কমপ্লিট ইডিয়ট'স গাইড তো আন্ডারস্ট্যান্ডিং ইসলাম, ২ন্ড এডিশন; ইয়াহিয়া আমেরিক (অথর); , প্রকাশনি: আলফা; 3rd edition 2011 হেভেন’স্‌ ব্যাংকার’স্‌; হ্যারিস ইরফান; প্রকাশক: পেঙ্গুইন গ্রুপ ফাতওয়া ইসলামিয়াঃ (ইসলামিক ভার্ডিক্টস) (8 Volume Set), প্রকাশনি:দার-উস-সালাম পাবলিকেশন্স (2001) এএসআইএন B000IXTSCK ইসলামিক ইকোনোমিকস্ : থিওরী এন্ড প্র্যাক্টিস; Prof. Dr. M A Mannan; ; প্রকাশক: Afsar Brothers অনুবাদ/রূপান্তর গ্রন্থ ইসলামী আইন ও আইন বিজ্ঞান ১ম-৩য় খণ্ড; ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ; প্রকাশক: ইসলামিক ফাউন্ডেশন আধুনিক লেনদেনের ইসলামী বিধান, মুফতী ইহসানুল্লাহ শায়েক, মাসুম আব্দুল্লাহ (অনুবাদক); প্রকাশক: মাকতাবাতুল আযহার যুগান্তকারী দ্বীনি বয়ান (১-৫ খন্ড), মাওলানা তারিক জামিল; প্রকাশক: নাদিয়াতুল কুরআন প্রকাশনী মুহাম্মদ স. নিকটতম সূত্রনির্ভর জীবনী ; মার্টিন লিংগস, ড. মোঃ এমতাজ হোসেন (অনুবাদক), ড. মনজুর রহমান (অনুবাদক); প্রকাশক: সৃজনী আলোকিত নারী মাওলানা তারিক জামিল, মাওলানা মুহাম্মদ যাইনুল আবিদীন (অনুবাদক); প্রকাশক: এদারায়ে কুরআন কাসাসুল আম্বিয়া, আল্লামা ইব্‌নে কাছীর রহ., মুহাম্মদ রফীকুল্লাহ নেছারাবাদী (অনুবাদক), মুফতী রূহুল আমীন যশোরী (সম্পাদক); প্রকাশক: কোহিনূর লাইব্রেরী এহইয়াউ উলুমিদ্দীন (সব খণ্ড একত্রে), হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযযালী রহ.; প্রকাশক: সোলেমানিয়া বুক হাউস বেহেশতী জেওর ১ম-৩য় খণ্ড (বক্স)(হার্ডকভার) (মাওলানা আশরাফ আলী থানভী চিশতী রহ.), মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ. (অনুবাদক); প্রকাশক: এমদাদিয়া লাইব্রেরী আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া (ইসলামের ইতিহাস : আদি-অন্ত) ১ম-১০ম খণ্ড, আবুল ফিদা হাফিজ ইব্ন কাসীর আদ-দামেশ্‌কী রহ. কর্তৃক, প্রকাশনি:ইসলামিক-ফাউন্ডেশন বাইবেল কুরআন ও বিজ্ঞান, ড. মরিচ বুকাইলি কর্তৃক, মোহাম্মদ নাছের উদ্দিন (সম্পাদক), ড. খ ম আব্দুর রাজ্জাক (সম্পাদক), প্রকাশনি:দারুস সালাম বাংলাদেশ অভিধান ডিকশনারী অব ইসলামিক ওয়ার্ডস অ্যান্ড এক্সপ্রেশন্স-রোমানাইজড্, এরাবিক, ইংলিশ, ২০১২, প্রফে. মুহাম্মদ ইসমাঈল সালেহ কর্তৃক, প্রকাশনি:দারুসসালাম ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স অক্সফোর্ড এরাবিক ডিকশনারী বিলিঙ্গুয়াল এডিশন ; প্রকাশনি: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস; বিলিঙ্গুয়াল এডিশন (আগস্ট ২৮, ২০১৪); দ্যা অক্সফোর্ড ডিকশনারী অব ইসলাম (অক্সফোর্ড কুইক রেফারেন্স), জন এল. ম্যাকার্থির ১ম সংস্করণ। এস্পোষিত (এডিটর); প্রকাশনি: অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস; ২০০৪); রোজনামচা জার্নাল অব ইসলামিক স্টাডিস, (১৯৯০) ১ (১): ১-এস-১ , প্রকাশনি:অক্সফোর্ড সেন্টার ফর ইসলামিক স্টাডিজ্—পিয়ার-রিভিউড অ্যাকাডেমিক জার্নাল বহিঃসংযোগ ইসলাম উইকিপ্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশন কুরআন আল কুরআন: ডিজিটাল আল হাদিস সুন্নাহ দোয়া ও রুকিয়াহ ইসলাম হাউস ইসলাম: প্রশ্ন ও উত্তর ইসলামি জবাব সালাহ.কম কুরানিক অডিও আইআরডি ফাউন্ডেশন উইকিপ্রকল্প ইসলাম ইব্রাহিমীয় ধর্ম ধর্ম আস্তিক্যবাদ একেশ্বরবাদ একেশ্বরবাদী ধর্ম মুসলিম ইসলাম শিক্ষা ইসলামের ইতিহাস মধ্যযুগীয় ইসলাম ইসলামি নীতিশাস্ত্র ইসলামি বিশ্বাস ও মতবাদ ইসলামি স্বর্ণযুগ ইসলামি সংস্কৃতি ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম ইসলাম শিক্ষা ইসলামি দর্শন ইসলাম ও সমাজ সুন্নি ইসলাম শরিয়ত মূলনীতি ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদ ধর্মীয় বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও আন্দোলন ধর্ম ও সমাজ ধর্ম ও রাজনীতি ইসলাম ও সরকার ইসলাম ও রাজনীতি আইন বিশ্বাস মতবাদ ধর্মের মধ্যে সম্পর্ক ধর্মীয় শিক্ষা ধর্মীয় বিশ্বাস ও মতবাদ শিক্ষা সাংস্কৃতিক শিক্ষা ধর্মতত্ত্ব ইসলামি ধর্মতত্ত্ব ইসলামবাদ জিহাদ আব্বাসীয় খিলাফত ইসলামি বিজ্ঞানের ইতিহাস ধর্মীয় দর্শন খিলাফত সত্য সর্ব-ইসলামবাদ ধর্ম ও বিজ্ঞান ইসলাম ও বিজ্ঞান ধর্মতন্ত্র ইসলামি আইন ঈশ্বরের ধারণা ইসলাম সম্পর্কিত তালিকা ধর্ম সম্পর্কিত তালিকা ধর্ম বিষয় সূচী সমাজ সমাজ সম্পর্কিত তালিকা সাংস্কৃতিক তালিকা জীবন-বিধান
https://en.wikipedia.org/wiki/Islam
Islam
Islam ( IZ-la(h)m; Arabic: ٱلْإِسْلَام, romanized: al-Islām, IPA: [alʔɪsˈlaːm], lit. 'submission [to the will of God]') is an Abrahamic monotheistic religion centered on the Quran and the teachings of Muhammad, the religion's founder. Adherents of Islam are called Muslims, who are estimated to number approximately 1.9 billion worldwide and are the world's second-largest religious population after Christians. Muslims believe that Islam is the complete and universal version of a primordial faith that was revealed many times through earlier prophets and messengers, including Adam, Noah, Abraham, Moses, and Jesus. Muslims consider the Quran to be the verbatim word of God and the unaltered, final revelation. Alongside the Quran, Muslims also believe in previous revelations, such as the Tawrat (the Torah), the Zabur (Psalms), and the Injil (Gospel). They believe that Muhammad is the main and final Islamic prophet, through whom the religion was completed. The teachings and normative examples of Muhammad, called the sunnah, documented in accounts called the hadith, provide a constitutional model for Muslims. Islam emphasizes that God is one and incomparable. It states that there will be a "Final Judgment" wherein the righteous will be rewarded in paradise (jannah) and the unrighteous will be punished in hell (jahannam). The Five Pillars—considered obligatory acts of worship—comprise the Islamic oath and creed (shahada); daily prayers (salah); almsgiving (zakat); fasting (sawm) in the month of Ramadan; and a pilgrimage (hajj) to Mecca. Islamic law, sharia, touches on virtually every aspect of life, from banking and finance and welfare to men's and women's roles and the environment. The two main religious festivals are Eid al-Fitr and Eid al-Adha. The three holiest sites in Islam are Masjid al-Haram in Mecca, Prophet's Mosque in Medina, and al-Aqsa Mosque in Jerusalem. The religion of Islam originated in Mecca in 610 CE. Muslims believe this is when Muhammad received his first revelation. By the time of his death, most of the Arabian Peninsula had converted to Islam. Muslim rule expanded outside Arabia under the Rashidun Caliphate and the subsequent Umayyad Caliphate ruled from the Iberian Peninsula to the Indus Valley. In the Islamic Golden Age, specifically during the reign of the Abbasid Caliphate, most of the Muslim world experienced a scientific, economic and cultural flourishing. The expansion of the Muslim world involved various states and caliphates as well as extensive trade and religious conversion as a result of Islamic missionary activities (dawah), as well as through conquests. The two main Islamic branches are Sunni Islam (85–90%) and Shia Islam (10–15%). While the Shia–Sunni divide initially arose from disagreements over the succession to Muhammad, they grew to cover a broader dimension, both theologically and juridically. Muslims make up a majority of the population in 49 countries. Approximately 12% of the world's Muslims live in Indonesia, the most populous Muslim-majority country; 31% live in South Asia; 20% live in the Middle East–North Africa; and 15% live in sub-Saharan Africa. Muslim communities are also present in the Americas, China, and Europe. Muslims are the world's fastest-growing major religious group, due primarily to a higher fertility rate and younger age structure compared to other major religions.
1572
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%8C%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5
মৌলিক পদার্থ
যে সব পদার্থকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত করলে ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায়না তাদেরকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলা হয়। যেমন বেরেলিয়াম, ইথিয়াম, হিলিয়াম। এদের একটি অণু একই রকম এক বা একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে তৈরি। যেমন, একটি মৌলিক পদার্থ, অক্সিজেনের অণু O2 দুটি একইরকম অক্সিজেন পরমাণু O এর সমন্বয়ে গঠিত। এ পর্যন্ত মোট ১১৮টি মৌল চিহ্নিত হয়েছে যার মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকী ২০টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করা হয়। সাধারণত, একটি মৌলের পরমাণুতে প্রোটন সংখ্যা নির্দিষ্ট বা একই মৌলের প্রতিটি পরমাণুতে সমান সংখ্যা প্রোটন থাকে (অর্থাৎ, তাদের প্রত্যেকের পারমাণবিক সংখ্যা একই এবং ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা ভিন্ন)। তাই, সাধারণভাবে প্রোটন সংখ্যা দ্বারা কোন মৌল চেনা যায়। তবে, একই মৌলের ভিন্ন প্রোটন সংখ্যা বিশিষ্ট পরমাণুও রয়েছে, যাদেরকে আইসোটোপ বলে। পারমাণবিক সংখ্যার ঊর্ধ্বক্রমানুসারে সাজালে, ১১৮ টি মৌলের প্রথম ৮০টির অন্তত একটি করে আইসোটোপের স্থায়ী রূপ রয়েছে (কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া), বাকী ৩৮টি মৌলের আইসোটোপ তেজষ্ক্রিয়, যা সময়ের সাথে ক্ষীয়মাণ। প্রকৃতিতে যে মৌলগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর ৩২টি মুক্তভাবে অর্থাৎ মৌলিক খনিজ রূপে থাকে (যেমন, তামা, সোনা, রূপা, কার্বন, গন্ধক ইত্যাদি)। বাকীগুলো বিভিন্ন যৌগ গঠন করে অর্থাৎ যৌগিক খনিজ রূপে বিদ্যমান। হাজার ১৮০৩ সালে ইংরেজ বিজ্ঞানী জন ডাল্টন পরীক্ষালব্ধ তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পদার্থের ক্ষুদ্রতম কণার সম্পর্কে বলেন। রাসায়নিক তালিকার লক্ষণীয়সমূহ মৌলের তালিকা প্রাচুর্য সমগ্র মহাবিশ্বের মত আমাদের সৌরজগতেও হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, যেগুলো তৈরী হয়েছে মহাবিষ্ফোরণের সময়। ভর হিসাবে ভূত্বকে সবচেয়ে বেশি পরিমানে পাওয়া যায় অক্সিজেন ও সিলিকন। অন্যদিকে, বায়ুমন্ডলে সবচেয়ে বেশি পরিমানে পাওয়া যায় নাইট্রোজেন (৭৮%)। এছাড়াও, বায়ুতে রয়েছে অক্সিজেন (২০%) এবং আর্গন (০.৯৭%)। ইতিহাস প্রাচীনকালে মনে করা হতো সমস্ত কিছু চারটি মৌলিক উপাদান থেকে এসেছে; মাটি, পানি, বায়ু ও আগুন। গ্রীক দার্শনিক প্লেটো এই মতামতকে সমর্থন করতেন। আরেক গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল এগুলোর পাশাপাশি ইথার নামক আরও একটি মৌলিক উপাদানের ধারণা দেন এবং মনে করতেন স্বর্গ তা দ্বারা তৈরী।আধুনিক যুগে, রবার্ট বয়েল সর্বপ্রথম মৌলিক পদার্থ সম্পর্কে ধারণা দেন, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। ১৭৮৯ সালে মৌলসমূহের প্রথম আধুনিক তালিকা দেন বিজ্ঞানী ল্যাভয়সিঁয়ে। তার তালিকায় তেত্রিশটি মৌল স্থান পায়, যার মধ্যে আলো এবং ক্যালরিক নামক এক বিশেষ পদার্থেরও উল্লেখ ছিল।ক্যালরিক সম্পর্কে ধারণা করা হত, ইহা কোন কোন বস্তুতে তাপের সঞ্চার করে, অর্থাৎ কোন বস্তুতে ক্যালরিক প্রবেশ করলে বস্তুটি উত্তপ্ত হয়। পরবর্তীতে, ১৮১৮ সালে বিজ্ঞানী বার্জেলিয়াস ঊনপঞ্চাশটি মৌলের একটি তালিকা প্রদান করেন, ১৮৬৪ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন নিউল্যান্ড মৌলগুলোকে তাদের ভর অনুসারে সাজিয়ে মৌলগুলোর প্রতি অষ্টম মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মের মধ্যে মিল পান । তবে, এরূপ তালিকার মাইলফলক আসে ১৮৬৯ সালে, যখন রাশিয়ান বিজ্ঞানী দিমিত্রি মেন্দেলিভ মৌলসমূহকে তাদের পারমাণবিক ভরের ক্রমানুসারে সাজিয়ে তৈরী করেন প্রথম পর্যায় সারণী। সেখানে ষেষট্টিটি মৌলের নাম উল্লেখ ছিল। ১৮৭১ সালে তিনি আরও পরিমার্জিত একটি তালিকা দেন এবং বেশ কিছু মৌলের ব্যাপারে বিষদভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। ১৯১৩ সালে প্রথমবারের মত পারমাণবিক সংখ্যার ক্রমানুসারে মৌলসমূহকে পর্যায় সারণীতে সজ্জিত করা হয়। এক বছরের মধ্যে প্রকৃতিতে প্রাপ্ত বাহাত্তরটি মৌলের সন্ধান মেলে এবং কৃত্রিমভাবেও বেশ কিছু মৌল তৈরী করা হয়। ১৯৫৫ সালে ১০১তম মৌলটি আবিষ্কৃত হয় এবং পর্যায় সারণী তৈরীতে দিমিত্রি মেন্দেলিভের অবদানের জন্য তার নামানুসারে মৌলটির নাম রাখা হয় মেন্দেলিভিয়াম। কার্বন, তামা, সোনা, রূপা, লোহা, গন্ধক, সীসা, পারদ, টিন ও দস্তা, এই দশটি মৌলের ব্যবহার চলে আসছে প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে। ১৫০০ সালের দিকে আরও তিনটি পদার্থ, আর্সেনিক, অ্যান্টিমনি ও বিসমাথকে মৌল হিসাবে সনাক্ত করা হয়। এরপর, ১৭৫০ সালের দিকে আবিষ্কৃত হয় ফসফরাস, কোবাল্ট ও প্লাটিনাম। ১৯০০ সালের মধ্যে আবিষ্কৃত হয় মৌলিক গ্যাসসমূহ (হাইড্রোজেন, আক্সিজেন, হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন), হ্যালোজেনসমূহ (ফ্লোরিন, ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়োডিন), কিছু তেজষ্ক্রিয় মৌল (ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, রেডিয়াম ও রেডন), কিছু বিরল মৃত্তিকা মৌল (সেরিয়াম, নিওডাইমিয়াম, ল্যান্থানাম ইত্যাদি), লিথিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যালুমিনিয়াম, সিলিকন, ক্রোমিয়াম, নিকেল, টাংস্টেন ইত্যাদি। ১৯০০ সালের পর আবিষ্কৃত হয় ফ্রান্সিয়াম, প্লুটোনিয়াম, নেপচুনিয়াম, হাফনিয়াম, অ্যাস্টেটিন ইত্যাদি। পরে, একবিংশ শতাব্দীতে কৃত্রিমভাবে অনেকগুলো মৌল তৈরী হয়েছে। যেমন, ২০০৬ সালের অক্টোবরে রাশিয়ায় তৈরী হয়েছে ১১৮তম মৌল, ২০০৯ সালে তৈরী হয়েছে ১১২তম মৌল যা ২০১০ সালে কোপারনিসিয়াম নামে স্বীকৃতি পায়, ২০১১ সালে ১১৪ ও ১১৬তম মৌলদ্বয় আবিষ্কৃত হয় এবং ২০১২ সালে তাদেরকে যথাক্রমে ফ্লেরোভিয়াম ও লিভারমোরিয়াম নামে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ১১৩, ১১৫, ১১৭ ও ১১৮তম মৌলগুলোকে চিহ্নিত করা হয়, যদিও এগুলো এখনও অনুমোদিত নয়। আরও দেখুন পর্যায় সারণী মৌলিক পদার্থের তালিকা পারমাণবিক সংখ্যার ভিত্তিতে মৌলিক পদার্থসমূহের তালিকা কল্পিত মৌল অসম্পূর্ণ রসায়ন নিবন্ধ মূল বিষয়ের নিবন্ধ রসায়ন
https://en.wikipedia.org/wiki/Chemical_element
Chemical element
A chemical element is a chemical substance that cannot be broken down into other substances by chemical reactions. The basic particle that constitutes a chemical element is the atom. Elements are identified by the number of protons in their nucleus, known as the element's atomic number. For example, oxygen has an atomic number of 8, meaning each oxygen atom has 8 protons in its nucleus. Atoms of the same element can have different numbers of neutrons in their nuclei, known as isotopes of the element. Two or more atoms can combine to form molecules. Chemical compounds are molecules made of atoms of different elements, while mixtures contain atoms of different elements not necessarily combined as molecules. Atoms can be transformed into different elements in nuclear reactions, which change an atom's atomic number. Almost all baryonic matter in the universe is composed of elements (among rare exceptions are neutron stars). When different elements undergo chemical reactions, atoms are rearranged into new compounds held together by chemical bonds. Only a few elements, such as silver and gold, are found uncombined as relatively pure native element minerals. Nearly all other naturally occurring elements occur in the Earth as compounds or mixtures. Air is mostly a mixture of molecular nitrogen and oxygen, though it does contain compounds including carbon dioxide and water, as well as atomic argon, a noble gas which is chemically inert and therefore does not undergo chemical reactions. The history of the discovery and use of elements began with early human societies that discovered native minerals like carbon, sulfur, copper and gold (though the modern concept of an element was not yet understood). Attempts to classify materials such as these resulted in the concepts of classical elements, alchemy, and similar theories throughout history. Much of the modern understanding of elements developed from the work of Dmitri Mendeleev, a Russian chemist who published the first recognizable periodic table in 1869. This table organizes the elements by increasing atomic number into rows ("periods") in which the columns ("groups") share recurring ("periodic") physical and chemical properties. The periodic table summarizes various properties of the elements, allowing chemists to derive relationships between them and to make predictions about elements not yet discovered, and potential new compounds. By November 2016, the International Union of Pure and Applied Chemistry (IUPAC) had recognized a total of 118 elements. The first 94 occur naturally on Earth, and the remaining 24 are synthetic elements produced in nuclear reactions. Save for unstable radioactive elements (radioelements) which decay quickly, nearly all elements are available industrially in varying amounts. The discovery and synthesis of further new elements is an ongoing area of scientific study.
1583
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%86%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%B2%20%E0%A6%96%E0%A6%BE%E0%A6%81%20%E0%A6%A8%E0%A6%A6
আড়িয়াল খাঁ নদ
আড়িয়াল খাঁ পদ্মার একটি প্রধান শাখা নদ। আড়িয়াল খাঁ হচ্ছে ফরিদপুর, মাদারীপুর ও বরিশাল জেলার একটি নদ। নদটির দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৩০০ মিটার এবং নদটির প্রকৃতি সর্পিলাকার। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বা "পাউবো" কর্তৃক আড়িয়াল খাঁ নদের প্রদত্ত পরিচিতি নম্বর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদী নং ২। ইতিহাস অতীতে নদটির নাম ছিল ভুবনেশ্বর। ১৮০১ সালে ঠগি দমনের জন্য আড়িয়াল খাঁ নামক একজন জমাদার গভর্ণমেন্ট কর্তৃক নিযুক্ত হয়। ভুবনেশ্বর নদ থেকে একটি খাল খনন করিয়ে তা প্রাচীন পদ্মার দক্ষিণাংশের সঙ্গে সংযুক্ত করিয়ে দেওয়া হয়। এই খালটিই কালক্রমে প্রবল রুপ ধারণ করে প্রাচীন পদ্মা ও ভুবনেশ্বরের কতকাংশ গ্রাস করে এবং সাধারণ জনগণের কাছে আড়িয়াল খাঁ নামে পরিচিত হয়। নদের গতিপ্রকৃতি বর্তমানে সমুদ্রগামী পদ্মার শাখাগুলোর মধ্যে মধুমতী ও আড়িয়াল খাঁ নদ দুটি প্রধান। পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ ঘাট থেকে প্রায় ৫১.৫ কিমি দক্ষিণ-পূর্বের পদ্মা থেকে এই শাখা নদ (আড়িয়াল খাঁ) প্রবাহিত হয়ে ফরিদপুর ও মাদারীপুর জেলার মধ্য দিয়ে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ও মুলাদী উপজেলার উত্তর-পূর্বভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তেঁতুলিয়া চ্যানেলে ঢুকেছে। আড়িয়াল খাঁ নদ চলার পথে নড়িয়ার খাল, পালং খাল, ভুবনেশ্বর, ময়নাকাটা, কুমার, কাইলা, নয়াভাঙনী, জয়ন্তী প্রভৃতি নদ-নদীর মাধ্যমে পদ্মা নদীর সাথে সংযোগ রক্ষা করে চলেছে। নদের গতিপথ প্রায়ই আঁকাবাঁকা। নদটি ভাঙনপ্রবণ। এর ফলে অনেক জনপদ এর গর্ভে বিলীন হয়েছে। মাদারীপুর শহরও এই নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে। এই নদীর তীরবর্তী উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো পিঁয়াজখালী, চৌধুরীহাট, উৎরাইল, দত্তপাড়া, কবিরাজপুর, লতিখোলা, সফিপুর, নোমরহাট, মাদারীপুর পৌরসভা, খাসেরহাট বন্দর। উনিশ শতকের শেষ দিকে আড়িয়াল খাঁ ছিল প্রধান ধারা। বর্তমানে এর শেষ প্রান্ত পলি ভরাট হয়ে মাদারীপুরের কাছে আড়িয়াল খাঁ দুটি শখায় বিভক্ত হয়েছে। বাঁ দিকের প্রবাহিত অংশ আড়িয়াল খাঁ। আর ডান দিকে টরকি নামে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যান্য তথ্য আড়িয়াল খাঁ নদটি সারা বছর নাব্য। মার্চ-এপ্রিলে পানির প্রবাহ কম থকে। তবে বর্ষাকালে পানি প্রবাহ বেশি থাকে। তখন জুলাই-আগস্ট মাসে প্রবাহের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪ হাজার ঘনমিটার/সেকেন্ড। এ সময় নদে পানির গভীরতা ১২ মিটার পর্যন্ত থাকে। নদটির মোট দৈর্ঘ্য ১৬৩ কিমি। মাদারীপুর পর্যন্ত স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটার পরিসর ০.৩২ মিটার। প্রস্থ ৩০০ মিটার। নদটির অববাহিকার আয়তন ১৪৩৮ বর্গ কিমি। আরও দেখুন বাংলাদেশের নদীর তালিকা বাংলাদেশের বড় নদীসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাপিডিয়ায় আড়িয়াল খাঁ নদী ফরিদপুর জেলার নদী মাদারীপুর জেলার নদী বরিশাল জেলার নদী সদরপুর উপজেলা
null
null
null
1586
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%B2%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8
বলবিজ্ঞান
বলবিজ্ঞান (গ্রিক: , ইংরেজি: Mechanics) (অথবা বলবিজ্ঞান) পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা, যেখানে কোনো বল প্রযুক্ত হওয়ার ফলে ভৌত বস্তুর সরণ বা অন্যান্য আচরণ এবং পরিবেশের উপর তার প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হয়ে থাকে। এটি গণিত শাস্ত্রেও অধীত হয়ে থাকে। মূলত বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থা নিয়ে এতে আলোচনা করা হয়। পদার্থবিজ্ঞানের এই শাখাটির সূচনাকাল বলা যেতে পারে প্রাচীন গ্রিক সভ্যতার স্বর্ণযুগকে। সেসময় অ্যারিস্টটল বিভিন্ন বস্তু, যেমন: পাথর, বাতাসে নিক্ষেপ করলে কেমন আচরণ করে, তা নিয়ে গবেষণা করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে বলবিজ্ঞানর ভিত্তি স্থাপনে অবদান রেখেছেন গ্যালিলিও ও ইয়োহানেস কেপলার এবং সবশেষে নিউটন বলবিজ্ঞানর মৌলিক তত্ত্বগুলোর অবতারণা করেন। অবশ্য নিউটনের উদ্ভাবিত নীতিগুলোকে নিয়ে নিউটনীয় বলবিজ্ঞান নামে একটি পৃথক শাখা গড়ে উঠেছে। যিনি বলবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা এবং গবেষণা করেন, তাঁকে বলবিজ্ঞানী বলা হয়। তাৎপর্য বলবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞানের মূল শাখা যা মানুষের চোখে দৃশ্যমান বৃহৎ জগৎ নিয়ে আলোচনা করে। সেই হিসেবে প্রাকৃতিক বিশ্ব সম্বন্ধে এটিই মূল তত্ত্ব প্রণয়নের দাবী করতে পারে। বলবিজ্ঞান মহাবিশ্বের যেকোন বস্তুর উপর চারটি মৌলিক বলের প্রভাব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করে। মৌলিক বল চারটি হল: মহাকর্ষ, সবল নিউক্লিয়, দূর্বল নিউক্লিয় এবং তাড়িতচৌম্বক বল। বলবিজ্ঞান প্রযুক্তির জগতেও একটি মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে। এটি ভৌত জ্ঞানসমূহকে মানুষের কাজে লাগানোর উপযোগী করে তৈরি করে থাকে। এজন্য অনেক সময় এই শাখাটিকে প্রকৌশল বা ফলিত বলবিজ্ঞান নামকরণ করা হয়ে থাকে যদিও অধুনা এ নামে একটি শাখা গড়ে উঠেছে। এদিক দিয়ে চিন্তা করলে বলবিজ্ঞানই অবয়ব, যন্ত্রের গঠন এবং যন্ত্রসমূহের ব্যবহার ও প্রয়োগবিধি নির্দেশ করে। যন্ত্র প্রকৌশল, মহাকাশ প্রকৌশল (aerospace), পুর প্রকৌশল, জৈব বলবিজ্ঞান, structural engineering, materials engineering, biomedical engineering ইত্যাদি অধ্যয়নে এটি সাহায্য কে থাকে। প্রকারভেদ চিরায়ত বলবিজ্ঞান নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ নিয়ে চিরায়ত বলবিজ্ঞানর ভিত রচিত হয়: নিউটনীয় বলবিজ্ঞান, গতি (সৃতিবিজ্ঞান) এবং বলের (গতিবিজ্ঞান) মৌলিক আলোচনা করে। ল্যাগ্রাঞ্জীয় বলবিজ্ঞান: (Lagrangian mechanics) একটি তাত্ত্বিক আচারপ্রিয়তা (formalism)। হ্যামিল্টনীয় বলবিজ্ঞান: আরেকটি তাত্ত্বিক আচারপ্রিয়তা। খ বলবিজ্ঞান, তারা: ছায়াপথ]] ইত্যাদির গতি। জ্যোতির্গতিবিজ্ঞান: নভোযান চালনা। কঠিন বলবিজ্ঞান: স্থিতিস্থাপকতা এবং দৃঢ় ও অল্প দৃঢ় বস্তুর আলোচনা। শব্দবিজ্ঞান: কঠিন এবং তরলে শব্দের আচরণ। স্থিতিবিজ্ঞান: যান্ত্রিক সাম্যাবস্থা। প্রবাহী বলবিজ্ঞান, তরল পদার্থের গতি। Continuum mechanics, mechanics of continua (both solid and fluid) তরল স্থিতিবিজ্ঞান (hydraulics): সাম্যাবস্থায় তরল। ফলিত বলবিজ্ঞান জৈব বলবিজ্ঞান পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞান অপেক্ষবাদিক অথবা আইনস্টাইন বলবিজ্ঞান। কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান নিম্নোক্ত বিষয়গুলো কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানর অংশ: কণা পদার্থবিজ্ঞান পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞান ঘনীভূত পদার্থ বিজ্ঞান: কোয়ান্টাম গ্যাস, কঠিন এবং তরল। কোয়ান্টাম পরিসাংখ্যিক বলবিজ্ঞান: কণাসমূহের বৃৎ সমন্বয়। চিরায়ত বলবিজ্ঞান বনাম কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান বলবিজ্ঞানর দুটি প্রধান শ্রেণী হচ্ছে চিরায়ত বলবিজ্ঞান এবং কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞান। এই দুটির মধ্যে মূলনীতিগত বেশ ভালো রকমের পার্থক্য রয়েছে। ঐতিহাসিকভাবে দেখলে চিরায়ত বলবিজ্ঞানই প্রথমে এসেছে আর কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানকে বলা যায় নব্য বলবিজ্ঞান। চিরায়ত বলবিজ্ঞানর ইতিহাস মানুষের ইতিহাস রচনার ইতিহাসের চেয়েও পুরনো, অন্যথায় কোয়ান্টাম অংশটির অস্তিত্ব ১৯০০ সালের পূর্বেই ছিলনা। তবে এই দুটি বিজ্ঞান একসাথেই ভৌত প্রকৃতির সমগ্র অংশের ব্যাখ্যা করতে সমর্থ হয়। পেশাদার সংগঠনসমূহ ফলিত বলবিজ্ঞান বিভাগ, আমেরিকান সোসাইটি অফ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার্‌স তরল গতিবিজ্ঞান বিভাগ, আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটি আরও দেখুন ফলিত বলবিজ্ঞান যন্ত্র প্রকৌশল পদার্থবিজ্ঞান বহিঃসংযোগ আইমেকানিয়া: বলবিজ্ঞান বিশারদদের ওয়েবসাইট ভার্জিনিয়া টেক-এর বলবিজ্ঞান বিষয়ক অনুষ্ঠান নব্য বলবৈজ্ঞানিক প্রভাব বলবিজ্ঞান যন্ত্রকৌশল
https://en.wikipedia.org/wiki/Mechanics
Mechanics
Mechanics (from Ancient Greek: μηχανική, mēkhanikḗ, lit. "of machines") is the area of physics concerned with the relationships between force, matter, and motion among physical objects. Forces applied to objects result in displacements, which are changes of an object's position relative to its environment. Theoretical expositions of this branch of physics has its origins in Ancient Greece, for instance, in the writings of Aristotle and Archimedes (see History of classical mechanics and Timeline of classical mechanics). During the early modern period, scientists such as Galileo Galilei, Johannes Kepler, Christiaan Huygens, and Isaac Newton laid the foundation for what is now known as classical mechanics. As a branch of classical physics, mechanics deals with bodies that are either at rest or are moving with velocities significantly less than the speed of light. It can also be defined as the physical science that deals with the motion of and forces on bodies not in the quantum realm.
1587
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%A3
ত্বরণ
বলবিজ্ঞানে ত্বরণ (Acceleration) হলো সময়ের সাথে কোনও বস্তুর বেগ পরিবর্তনের হার। এটি একটি সদিক রাশি বা ভেক্টর রাশি, অর্থাৎ এটির মান ও দিক উভয়ই বিদ্যমান। কোনও বস্তুর ত্বরণের দিক সেই বস্তুর উপর প্রযুক্ত বলসমূহের লব্ধি বলের দিকে হয়। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুসারে, ত্বরণের মান হলো নিম্নোক্ত দুটি কারণের সম্মিলিত প্রভাব: বস্তুতে প্রযুক্ত সমস্ত বাহ্যিক নীট বলের ক্ষেত্রে — ত্বরণের মান নীট লব্ধি বলের সরাসরি সমানুপাতিক। বস্তুটির ভর — ত্বরণের মান বস্তুর ভরের ব্যস্তানুপাতিক। ত্বরণের এসআই একক হলো মিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড (, )। উদাহরণস্বরূপ, যখন কোনও যানবাহন স্থির অবস্থা (একটি জড় প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে বেগ শূন্য) থেকে শুরু করে এবং ক্রমবর্ধমান গতিতে একটি সরলরেখা বরাবর গতিশীল হয়, তখন এটি ভ্রমণের দিকের দিকে ত্বরান্বিত হয়। যানবাহনটি বাঁক নিলে নতুন দিক বরাবর ত্বরান্বিত হয় এবং গতি ভেক্টর পরিবর্তিত হয়। বর্তমান গতির দিকে গাড়ির ত্বরণকে রৈখিক (বা বৃত্তীয় গতির ক্ষেত্রে স্পর্শিনী) ত্বরণ বলা হয়, যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে উপস্থিত যাত্রীরা পিছনের দিকে একটি বল অনুভব করেন। দিক পরিবর্তন করার সময়, কার্যকর ত্বরণকে কেন্দ্রমুখী (বা বৃত্তীয় গতির ক্ষেত্রে লাম্বিক) ত্বরণ বলা হয়, যার প্রতিক্রিয়া হিসাবে যাত্রীরা একটি অপকেন্দ্র বল অনুভব করেন। যদি গাড়ির গতি হ্রাস পায় তবে ত্বরণ বিপরীত দিকে হয় এবং গাণিতিকভাবে এটি ঋণাত্মক, যাকে কখনও কখনও মন্দন বলা হয় এবং মন্দনের প্রতিক্রিয়া হিসাবে যাত্রীরা তাদেরকে সামনে ঠেলে দেওয়ার মতো একটি জড়তা বল অনুভব করে। এই জাতীয় ঋণাত্মক ত্বরণ প্রায়শই মহাকাশযানে রেট্রোকেট জ্বালিয়ে অর্জন করা হয়। ত্বরণ এবং মন্দন উভয়ই একই বিবেচনা করা হয়, এগুলি উভয়ই বেগ পরিবর্তনের হার। এই ত্বরণগুলির প্রতিটি (স্পর্শিনী, কেন্দ্রমুখী, মন্দন) যাত্রীদের দ্বারা অনুভূত হয় যতক্ষণ না তাদের আপেক্ষিক (পার্থক্যমূলক) বেগ যানবাহনের সাপেক্ষে নিরপেক্ষ হয়। সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট্য গড় ত্বরণ একটি বস্তুর গড় ত্বরণ হলো নির্দিষ্ট সময় ব্যবধানে বেগের পরিবর্তন এবং সময় ব্যবধান এর ভাগফলের সমান। গাণিতিকভাবে, তাৎক্ষণিক ত্বরণ তাৎক্ষণিক ত্বরণ হলো, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সময়ের ব্যবধানে গড় ত্বরণের সীমাস্থ মান। ক্যালকুলাসের ভাষায় তাৎক্ষণিক ত্বরণ হলো সময়ের সাপেক্ষে বেগ ভেক্টরের অন্তরজ: যেহেতু ত্বরণকে সময় এর সাপেক্ষে বেগ এর অন্তরজ দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা হয়, এবং বেগকে সময়ের সাপেক্ষে সরণ এর অন্তরজের মাধ্যমে সংজ্ঞায়িত করা হয়, সেহেতু ত্বরণকে সময় এর সাপেক্ষে সরণ এর দ্বিতীয় অন্তরজ হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে: (এখানে এবং অন্য কোথাও যদি গতি একটি সরলরেখা বরাবর থাকে তবে সমীকরণগুলিতে ভেক্টর পরিমাণগুলিকে স্কেলার পরিমাণ দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে।) ক্যালকুলাসের মৌলিক উপপাদ্য অনুযায়ী দেখা যায় যে, ত্বরণ ফাংশন এর সমাকলন হলো বেগের ফাংশন ; যা হলো, ত্বরণ-সময় ( vs. ) লেখচিত্রের বক্ররেখার নিচের ক্ষেত্রফল, যা বেগ নির্দেশ করে। তেমনি, ত্বরণের অন্তরকলন জার্ক ফাংশন, এর সমাকলন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সময়ে ত্বরণ নির্ণয় করা যেতে পারে: একক ত্বরণের মাত্রা সমীকরণ হল বেগ (L/T) এবং সময়ের মাত্রার ভাগফল, অর্থাৎ L T−2 এবং এর এস.আই একক হলো মিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড (m s−2) বা মিটার প্রতি সেকেন্ড প্রতি সেকেন্ড; এবং সিজিএস একক হলো সেন্টিমিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড (cm s−2)। অন্যান্য বৃত্তীয় গতিতে চলমান একটি বস্তু - যেমন পৃথিবীকে প্রদক্ষিণকারী উপগ্রহ — গতির দিক পরিবর্তনের কারণে ত্বরান্বিত হয়, যদিও এর দ্রুতি স্থির থাকতে পারে। এক্ষেত্রে এটি কেন্দ্রমুখী (কেন্দ্রের দিকে নির্দেশিত) ত্বরণে চলছে। যথাযথ ত্বরণ বা মুক্ত-পতনের শর্ত সাপেক্ষে একটি বস্তুর ত্বরণ অ্যাক্সিলারোমিটার নামক যন্ত্র দ্বারা পরিমাপ করা হয়। চিরায়ত বলবিদ্যায় ধ্রুব ভরসম্পন্ন বস্তুর ক্ষেত্রে বস্তুর ভরকেন্দ্রের (ভেক্টর) ত্বরণ এর উপর প্রযুক্ত নীট বল ভেক্টরের (অর্থাৎ সমস্ত বলের যোগফল) সমানুপাতিক (নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র): যেখানে F হলো বস্তুর উপর প্রযুক্ত নীট বল, m হলো বস্তুর ভর, এবং a হলো ভরকেন্দ্রের ত্বরণ। বেগ যখন আলোর গতির কাছাকাছি পৌছায়, আপেক্ষিক প্রভাবগুলি ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্পর্শিনী এবং অভিকেন্দ্র ত্বরণ একটি কণার গতি একটি বক্রপথ বরাবর হলে সময়ের অপেক্ষক: যেখানে v(t) হলো পথ বরাবর বেগ, এবং নির্দিষ্ট মুহুর্তে গতির দিক নির্দেশকারী পথ বরাবর একটি একক ভেক্টর স্পর্শক। পরিবর্তনশীল বেগ v(t) এবং ut,এর পরিবর্তনশীল দিক বিবেচনা করে বক্রপথে চলমান একটি কণার ত্বরণ সময়ের দুটি অপেক্ষকের জন্য অন্তরকলনের চেইন বিধি ব্যবহার করে লেখা করা যেতে পারে: যেখানে un হলো কণার প্রক্ষেপন পথের একক (অভ্যন্তরস্থ) সাধারণ ভেক্টর (principal normal নামেও পরিচিত), এবং r হলো t সময়ে বক্রপথের ব্যাসার্ধ। এই উপাংশগুলিকে বলা হয় স্পর্শিনী ত্বরণ এবং সাধারণ বা কেন্দ্রমুখী ত্বরণ। ত্রি-মাত্রিক স্থান বক্ররেখার জ্যামিতিক বিশ্লেষণ, যা স্পর্শিনী, (মূল) সাধারণ এবং বাইনোমরাল ব্যাখ্যা করে, ফ্রেনেট-সেরেট সূত্রগুলি দ্বারা বর্ণিত হয়। বিশেষ ক্ষেত্র সমত্বরণ অভিন্ন বা ধ্রুবক ত্বরণ হল এক ধরনের গতি যাতে বস্তুর বেগ সমান সময়কালে সমান পরিমাণে পরিবর্তিত হয়। অভিন্ন ত্বরণের একটি প্রায়শই উদ্ধৃত উদাহরণ হলো অভিন্ন মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে মুক্তভাবে পড়ন্ত বস্তু। গতির প্রতিরোধের অনুপস্থিতিতে একটি পতিত বস্তুর ত্বরণ কেবল মহাকর্ষ ক্ষেত্র প্রাবল্য g (মহাকর্ষের কারণে সৃষ্ট ত্বরণও বলা হয়) এর উপর নির্ভরশীল। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্রানুযায়ী বস্তুর উপর প্রযুক্ত বল হলো: সমত্বরণের ক্ষেত্রে সাধারণ বিশ্লেষণমূলক বৈশিষ্ট্যের কারণে সরণ, প্রাথমিক এবং সময় নির্ভর বেগ এবং অতিবাহিত সময়ের সাথে ত্বরণ সম্পর্কিত সহজ সূত্র রয়েছে: যেখানে হলো অতিক্রান্ত সময়, হলো উৎস থেকে আদি সরণ, হলো তম সময়ে উৎস থেকে সরণ, হলো আদিবেগ, হলো তম সময়ে বেগ, এবং হলো সমত্বরণ বিশেষত, গতিকে দুটি লম্ব অংশে সমাধান করা যেতে পারে, একটি হলো ধ্রুব বেগ এবং অন্যটি উপরের সমীকরণ অনুসারে। গ্যালিলিও যেমন দেখিয়েছিলেন, নীট ফলাফল হলো পরাবৃত্তীয় গতি, যা পৃথিবী পৃষ্ঠের নিকটবর্তী শূন্যস্থানে একটি প্রাসের গতিপথ বর্ণনা করে। বৃত্তীয় গতি সমবৃত্তীয় গতির ক্ষেত্রে, যেখানে একটি বৃত্তাকার পথ ধরে ধ্রুব গতিতে এগিয়ে চলেছে, একটি কণা বেগ ভেক্টরের দিকের পরিবর্তনের ফলে একটি ত্বরণ অনুভব করে, যদিও এর মান স্থির থাকে। সময়ের সাপেক্ষে একটি বক্ররেখার বিন্দুর অবস্থানের অন্তরকলন, অর্থাৎ এর গতিবেগ সর্বদা বক্ররেখার ঠিক স্পর্শক বরাবর এবং এই বিন্দুর ব্যাসার্ধের সাথে লম্ব বরাবর অবস্থান করে। যেহেতু সমগতিতে স্পর্শকীয় দিকের গতিবেগ পরিবর্তন হয় না, ত্বরণ অবশ্যই ব্যাসার্ধের দিকে হতে হবে, যা বৃত্তের কেন্দ্রের দিকে নির্দেশ করে। এই ত্বরণটি ক্রমাগত বেগের ভেক্টরকে প্রতিবেশী বিন্দুতে স্পর্শক হওয়ার জন্য পরিবর্তন করে, যার ফলে গতিবেগের সাথে বেগ ভেক্টরটিকে ঘোরানো হয়। • নির্দিষ্ট দ্রুতি এর ক্ষেত্রে জ্যামিতিকভাবে সংঘটিত ত্বরণ (কেন্দ্রমুখী ত্বরণ) বৃত্তের ব্যাসার্ধ এর সমানুপাতিক, এবং এই দ্রুতির বর্গের হারে বৃদ্ধি পায়, • মনে রাখবেন যে, প্রদত্ত কৌণিক বেগ এর জন্য, কেন্দ্রমুখী ত্বরণ ব্যাসার্ধ এর সাথে সরাসরি সমানুপাতিক। এর কারণ ব্যাসার্ধ এর উপর বেগ এর নির্ভরতা। কেন্দ্রমুখী ত্বরণ ভেক্টরকে পোলার উপাংশে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে, যেখানে হলো বৃত্তের কেন্দ্র থেকে কণা পর্যন্ত দুরত্বের মানসম্পন্ন একটি ভেক্টর, এবং ত্বরণের দিক বিবেচনা করলে দাঁড়ায়, ঘূর্ণনের ক্ষেত্রে সচরাচর একটি কণার দ্রুতি বিন্দুর দূরত্ব এর সাপেক্ষে কৌণিক দ্রুতি হিসাবে প্রকাশ করা যেতে পারে এভাবে, এই ত্বরণ এবং কণার ভর বৃত্তাকার কেন্দ্রের দিকে নির্দেশিত প্রয়োজনীয় কেন্দ্রমুখী বল নির্ধারণ করে, যা এটিকে সমবৃত্তীয় গতিতে রাখার জন্য নীট বল হিসাবে এই কণার উপর প্রযুক্ত হয়। তথাকথিত 'কেন্দ্রবিমুখী বল' বস্তুর উপর বাহ্যিকভাবে কাজ করে বলে মনে হয়, যা একটি তথাকথিত নকল বল যা বস্তুর রৈখিক ভরবেগের কারণে বস্তুর প্রসঙ্গ কাঠামোতে অনুভূত হয়, যা গতির বৃত্তের জন্য একটি ভেক্টর স্পর্শক হিসেবে থাকে। অসম বৃত্তীয় গতিতে, অর্থাৎ, যেখানে বক্রপথের গতি পরিবর্তিত হচ্ছে, বক্ররেখার স্পর্শক বরাবর ত্বরণের অ-শূন্য উপাংশ রয়েছে, এবং প্রধান প্রান্তিকের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, যা দোলকের বৃত্তের কেন্দ্রে পরিচালিত করে, তা কেন্দ্রমুখী ত্বরণের ব্যাসার্ধ নির্ধারণ করে। স্পর্শিনী উপাংশটি কৌণিক ত্বরণ এবং ব্যাসার্ধ এর গুণফলের সমান, ত্বরণের স্পর্শিনী উপাংশটির চিহ্ন কৌণিক ত্বরণের () চিহ্ন দ্বারা নির্ধারিত হয় এবং স্পর্শকটি সর্বদা ব্যাসার্ধ ভেক্টরের ডান কোণে নির্দেশিত হয়। আপেক্ষিকতার সাথে সম্পর্ক বিশেষ আপেক্ষিকতা আপেক্ষিকতার বিশেষ তত্ত্বটি শূন্যস্থানে অন্য কোনো বস্তুর সাপেক্ষে আলোর বেগে চলমান বস্তুর আচরণ বর্ণনা করে। নিউটনীয় বলবিজ্ঞান হুবহু বাস্তবের সান্নিধ্য হিসাবে প্রকাশিত হয়েছে, নিম্ন গতিতে দুর্দান্ত নির্ভুলতার জন্য কার্যকর। আপেক্ষিক গতি আলোর গতির কাছাকাছি বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে ত্বরণ আর চিরায়ত সমীকরণ অনুসরণ করে না। আলোর গতির কাছাকাছি পৌঁছালে, প্রদত্ত বল দ্বারা উৎপাদিত ত্বরণ হ্রাস পায়, এবং আলোর গতির কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথে অপরিমেয় রূপে ক্ষুদ্র হয়ে যায়; ভরসম্পন্ন কোনও বস্তু এই গতির দিকে তাত্পর্যপূর্ণভাবে আগাতে পারে, তবে কখনও সেই গতিতে পৌঁছাতে পারে না। সাধারণ আপেক্ষিকতা কোনও বস্তুর গতির অবস্থা জানা না থাকলে, পর্যবেক্ষিত কোনো বল মাধ্যাকর্ষণ নাকি ত্বরণের কারণে তা পার্থক্য করা অসম্ভব — কারণ মাধ্যাকর্ষণ এবং প্রারম্ভিক ত্বরণের প্রভাব অভিন্ন এবং তার মধ্যে পার্থক্য করা অসম্ভব। আলবার্ট আইনস্টাইন এটিকে সমতুল্য নীতি হিসাবে অভিহিত করেছেন এবং বলেছিলেন যে কেবল পর্যবেক্ষকরা যারা মহাকর্ষের বলসহ কোনও ধরনের বলের প্রভাব বোধ করেন না তাদের ক্ষেত্রে এই সিদ্ধান্ত যুক্তিযুক্ত যে তারা ত্বরান্বিত হচ্ছে না। রূপান্তর আরও দেখুন বেগ সরণ মন্দন জড়তা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Acceleration Calculator সাধারণ ত্বরণ একক রূপান্তরকারী Acceleration Calculator ত্বরণ রূপান্তর ক্যালকুলেটর মিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড, কিলোমিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড মিলিমিটার প্রতি বর্গ সেকেন্ড ইত্যাদি একককে রূপান্তর করে। ত্বরণ গতিবিজ্ঞান সৃতিবিদ্যা অস্থায়ী হার পদার্থবিজ্ঞান ভেক্টর ভৌত রাশি
https://en.wikipedia.org/wiki/Acceleration
Acceleration
In mechanics, acceleration is the rate of change of the velocity of an object with respect to time. Acceleration is one of several components of kinematics, the study of motion. Accelerations are vector quantities (in that they have magnitude and direction). The orientation of an object's acceleration is given by the orientation of the net force acting on that object. The magnitude of an object's acceleration, as described by Newton's Second Law, is the combined effect of two causes: the net balance of all external forces acting onto that object — magnitude is directly proportional to this net resulting force; that object's mass, depending on the materials out of which it is made — magnitude is inversely proportional to the object's mass. The SI unit for acceleration is metre per second squared (m⋅s−2, m s 2 {\displaystyle \mathrm {\tfrac {m}{s^{2}}} } ). For example, when a vehicle starts from a standstill (zero velocity, in an inertial frame of reference) and travels in a straight line at increasing speeds, it is accelerating in the direction of travel. If the vehicle turns, an acceleration occurs toward the new direction and changes its motion vector. The acceleration of the vehicle in its current direction of motion is called a linear (or tangential during circular motions) acceleration, the reaction to which the passengers on board experience as a force pushing them back into their seats. When changing direction, the effecting acceleration is called radial (or centripetal during circular motions) acceleration, the reaction to which the passengers experience as a centrifugal force. If the speed of the vehicle decreases, this is an acceleration in the opposite direction of the velocity vector (mathematically a negative, if the movement is unidimensional and the velocity is positive), sometimes called deceleration or retardation, and passengers experience the reaction to deceleration as an inertial force pushing them forward. Such negative accelerations are often achieved by retrorocket burning in spacecraft. Both acceleration and deceleration are treated the same, as they are both changes in velocity. Each of these accelerations (tangential, radial, deceleration) is felt by passengers until their relative (differential) velocity are neutralized in reference to the acceleration due to change in speed.
1589
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%20%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3
বাংলা ব্যাকরণ
বাংলা ব্যাকরণ বাংলা ভাষার রূপমূলতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বের আলোচনা। বাংলা একটি দক্ষিণ এশীয় ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষা। ইতিহাস প্রাচীন ও মধ্যযুগে বঙ্গদেশে প্রধানত সংস্কৃত ব্যাকরণেরই চর্চা হয়েছে; খুব সামান্য হয়েছে প্রাকৃত ব্যাকরণের চর্চা। এখানে পাণিনির (আনু. খ্রি.পূ পঞ্চম শতক) অষ্টাধ্যায়ীর সূত্রের সংক্ষিপ্ত রূপান্তরই বেশি জনপ্রিয় ছিল। বাংলাদেশে অষ্টাধ্যায়ীর রূপান্তরগুলোর মধ্যে কাতন্ত্র (=ক্ষুদ্র তন্ত্র বা গ্রন্থ), বোপদেবের মুগ্ধবোধব্যাকরণ (মুগ্ধবোধ= মুগ্ধ অর্থাৎ মূঢ় বা অল্পজ্ঞদের বোধের নিমিত্ত রচিত ব্যাকরণ) এবং ক্রমদীশ্বরের (১৩শ শতক) সংক্ষিপ্তসার ও মহারাজ জুমরনন্দীকৃত (১৪শ শতক) এর বৃত্তি রসবতী বিশেষভাবে প্রচলিত ছিল। প্রাচীন ও মধ্যযুগে বাঙালির ব্যাকরণ চর্চা বলতে মোটামুটি এ ধরনের টীকাভাষ্য রচনাই বোঝায়। আর এসব রচনার কাজ সপ্তম শতকের দিকে শুরু হয়ে আধুনিক কালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ব্যাকরণকৌমুদী (১৮৫৩), চন্দ্রকান্ত তর্কালঙ্কারের কাতন্ত্রছন্দঃপ্রক্রিয়া (১৮৯৬) প্রভৃতির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ও প্রায়-অবসিত হয়েছে। বাংলা ভাষার ব্যাকরণ প্রথম রচনা করেন ইউরোপীয় পণ্ডিতরা। শুধু বাংলা ভাষার ব্যাকরণই নয়, নব্যভারতীয় প্রাদেশিক ভাষাগুলোর অধিকাংশেরই ব্যাকরণ রচনার সূত্রপাত তাদের হাতে। বিদেশীরা নানা প্রয়োজনে ভারতবর্ষের আঞ্চলিক ভাষাসমূহ শিখতে ও সহগামীদের শেখাতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে তাদের প্রয়োজনই বাংলাসহ অন্যান্য প্রাদেশিক ভাষার ব্যাকরণ রচনায় তাদেরকে উৎসাহিত করেছিল। আর এরকম প্রয়োজনের তাগিদেই পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানোএল দা আস্‌সুম্পসাঁউ (Manoel da Assumpcam) পর্তুগিজ ভাষায় প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। মনোএল ভাওয়ালের একটি গির্জায় ধর্মযাজকের দায়িত্ব পালনকালে ১৭৩৪-৪২ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে Vocabolario em idioma Bengalla, e Potuguez dividido em duas partes শীর্ষক গ্রন্থটি রচনা করেন। গ্রন্থটি দুটি অংশে বিভক্ত: প্রথম অংশ বাংলা ব্যাকরণের একটি সংক্ষিপ্তসার এবং দ্বিতীয় অংশ বাংলা-পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দাভিধান। গ্রন্থটি পর্তুগালের রাজধানী লিসবন থেকে ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে রোমান হরফে মুদ্রিত হয়। এর কাঠামোগত আদর্শ গৃহীত হয়েছে লাতিন ব্যাকরণ থেকে, তাই এতে বর্ণিত হয়েছে লাতিন ভাষার ধাঁচে। আর এতে শুধু রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্বই আলোচিত হয়েছে, ধ্বনিতত্ত্ব সম্পর্কে কোনো আলোচনা নেই। বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণ রচয়িতা  ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড। তার আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশিত হয় ১৭৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। হ্যালহেড ভাল সংস্কৃত জানতেন এবং তিনি বিশ্বাস করতেন, বাংলা ভাষার উদ্ভব সংস্কৃত থেকে। তাই তার ব্যাকরণে সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব লক্ষণীয়। হ্যালহেডের ব্যাকরণের বিষয়বিন্যাস সেকালের ইংরেজি ব্যাকরণের অনুরূপ হলেও মাঝে মাঝে তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের মূল সূত্রগুলোও ব্যাখ্যা করেছেন। মনোএল যেমন বাংলা ভাষাকে লাতিন ব্যাকরণের ছাঁচে ফেলে তার গ্রন্থ প্রণয়নের চেষ্টা করেছেন, হ্যালহেড তেমনি অনেকাংশেই বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের ছাঁচে ফেলে বিশ্লেষণ করেছেন। একারণে অনেক ক্ষেত্রেই তিনি সংস্কৃত ব্যাকরণের পারিভাষিক শব্দকে বাংলা ব্যাকরণের পারিভাষিক শব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছেন। হ্যালহেডের ব্যাকরণ সম্পূর্ণ ইংরেজিতে রচিত হলেও এতেই প্রথম বাংলা হরফ মুদ্রিত হয়, এ কারণে বাংলা মুদ্রণ শিল্পের ইতিহাসে গ্রন্থটি মূল্যবান। চার্লস উইলকিনসন এবং পঞ্চানন কর্মকার যৌথ প্রচেষ্টায় ছাপাখানার জন্য যে বাংলা হরফ (font) প্রবর্তন করেন, তার সাহায্যেই হ্যালহেডের গ্রন্থে বাংলা উদাহরণগুলো মুদ্রিত হয়েছে। এমনকি বেশ কিছু দীর্ঘ কবিতার উদাহরণও বাংলা হরফে মুদ্রিত হয়েছে। আঠারো শতকে রচিত বাংলা ব্যাকরণের এ দুটি নমুনা ছাড়া আর কোনো নিদর্শন পাওয়া যায়নি। উনিশ শতকে অবশ্য বাংলা ব্যাকরণ রচনার প্রাচুর্য লক্ষ্য করা যায়। এ শতকের প্রথমার্ধে রচিত বাংলা ব্যাকরণগুলো দুটি ধারায় বিভক্ত। প্রথম ধারার গ্রন্থগুলো বিদেশীদের (ব্যতীত) দ্বারা ইংরেজি ভাষায় রচিত। এগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বিদেশীদের বাংলা ভাষা শেখানো। (১৭৬১-১৮৩৪), হটন, ইয়েটস ও ওয়েঙ্গার এই ধারার ব্যাকরণবিদদের মধ্যে প্রধান। দ্বিতীয় ধারার রচয়িতারা ছিলেন প্রধানত বাঙালি এবং তাদের রচনার ভাষা বাংলা। এ ধারার পাঠক শ্রেণী ছিল এদেশের পাঠশালা ও ইংরেজি স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রীরা। প্রায় সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের ব্যাকরণের লেখক ছিলেন টোল বা চতুষ্পাঠীর সংস্কৃতজ্ঞ পণ্ডিতগণ; ফলে তারা বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত ব্যাকরণের আদর্শে বিচার করে এক ধরনের প্রেসক্রিপটিভ ব্যাকরণ রচনা করেন। রামমোহন রায় এই দুই ধারার ব্যাকরণ রচয়িতাদের মধ্যে ছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী। তিনি বিদেশী বা টোল-চতুষ্পাঠীর পণ্ডিতদের মতো বাংলা-সংস্কৃতের সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বাংলা ভাষার নিজস্ব উপাদান ও স্বাতন্ত্র্যের ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্রথমার্ধের দুটি ধারারই সম্প্রসারণ ঘটে। কিছু কিছু ব্যাকরণে (শ্যামাচরণ সরকার, ডানকান ফোর্বস, জন বীম্স্ এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য) বাংলার সংস্কৃত-ঘনিষ্ঠ শিষ্ট রূপটির পাশাপাশি কথ্য রূপের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এ সময়েই দেশী-বিদেশী ভাষাবিজ্ঞানীদের (বীম্স্, হর্নলে, রামকৃষ্ণ গোপাল ভাণ্ডারকর) উদ্যোগে তুলনামূলক ও ঐতিহাসিক ব্যাকরণের গোড়াপত্তন হয়। তাছাড়া সৃষ্টিশীল সাহিত্যিকদের (শ্যামাচরণ গঙ্গোপাধ্যায়, ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রমুখ) ভাষাবিষয়ক রচনার মাধ্যমে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষিত হয়েছে। উনিশ শতকের প্রথমেই রচিত হয় উইলিয়ম কেরীর বাংলা ব্যাকরণ A Grammar of the Bengali Language (১৮০১)। হ্যালহেডের ব্যাকরণের অনুকরণে কেরীর গ্রন্থটি প্রণীত, তবে হ্যালহেড যেসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেননি, যেমন বিশেষ্য, ক্রিয়াপদ বা পার্টিকেল ব্যবহারের ক্ষেত্র, কেরী তার রচনায় ওই সব ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। হেলিবেরির তৎকালীন ইস্ট-ইন্ডিয়া কলেজের সংস্কৃত ও বাংলার অধ্যাপক জি.সি হটন (Graves Chamney Haughton: ১৭৮৮-১৮৪৯) লন্ডন থেকে ১৮২১ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করেন Rudiments of Bengali Grammar। মূলত হেলিবেরি কলেজের বাংলা ভাষার শিক্ষার্থীদের জন্য হটন তার ব্যাকরণটি রচনা করেছিলেন। বাংলাদেশে দেশি-বিদেশী বৈয়াকরণেরা যে ধরনের ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন, সেগুলোর বিষয়বস্তুই কিঞ্চিৎ পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করে হটন তার ব্যাকরণটি রচনা করেন। যথার্থ ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন রেভারেন্ড ডব্লিউ ইয়েটস (Rev. W Yates: ১৭৯২-১৮৪৫)। তার ব্যাকরণটির নাম Introduction to the Bengali Language (১৮৪৭)। ইয়েটসের ব্যাকরণ দুটি খণ্ডে পরিকল্পিত: প্রথম খণ্ডে আলোচিত হয়েছে বাংলা ব্যাকরণ এবং দ্বিতীয় খণ্ডে সংকলিত হয়েছে বাঙালি কবিদের কবিতা ও সাময়িক সাহিত্যের অংশবিশেষ। ইয়েটস তার ব্যাকরণের বিষয় বিন্যাসে প্রায় সম্পূর্ণই নির্ভর করেছেন কেরীর ব্যাকরণের ওপর; তবে বাংলা ভাষার শুদ্ধতার ব্যাপারে তিনি কেরীর চেয়ে অনেক বেশি রক্ষণশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। রেভারেন্ড জে  কীথ (Rev. J  Keith) রচিত A Grammar of the Bengalee Language গ্রন্থে ছাত্র-শিক্ষকদের ব্যাকরণ সম্পর্কিত সাধারণ বিষয়গুলো প্রশ্নোত্তর আকারে সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রশ্নগুলো উত্তরের দিক থেকে রচিত হওয়ায় খুব একটা কৌতূহলোদ্দীপক নয়। দ্বিতীয়ত উত্তরগুলো আকারে সংক্ষিপ্ত, ফলে ব্যাকরণের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। রামমোহন রায়ের ইংরেজিতে রচিত ব্যাকরণ গ্রন্থ Bengali Grammar in the English Language প্রকাশিত হয় ১৮২৬ সালে, কলকাতার ইউনিটারিয়েন প্রেস থেকে। রামমোহন কেরী বা হটনের মতো সংস্কৃতের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ককে বড় করে দেখেননি। তিনি বাংলা ভাষার একটি মূল প্রবণতা লক্ষ্য করেছিলেন। তাই তিনিই প্রথম ব্যাকরণের বিভিন্ন প্রকরণ (বিশেষ্য, বিশেষণ, কারক ইত্যাদি) সম্পর্কে শুধু দৃষ্টান্ত নয়, খানিকটা তাত্ত্বিক আলোচনাও পাঠকের জন্য প্রয়োজনীয় বলে বিবেচনা করেছেন। রামমোহন তার আলোচনায় কোথাও সর্বজনবিদিত সংস্কৃত ব্যাকরণের সংজ্ঞার্থ ও পরিভাষা ব্যবহার করেছেন, আবার কোথাও বাংলা ভাষার প্রকৃতির প্রয়োজনে নতুন সংজ্ঞার্থ ও পরিভাষা রচনা করেছেন। ভাষার উৎপত্তি সম্পর্কে তিনি তার গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে যে আলোচনা করেছেন, কালের দিক থেকে তা ছিল সম্পূর্ণ বিপ্লবাত্মক। তিনি ব্যাকরণকে কোনো ঔচিত্যমূলক শাস্ত্র হিসেবে বিবেচনা করেননি, বরং ব্যাকরণকে তিনি দেখেছেন ভাষার বিশ্লেষণ বা বর্ণনামূলক শাস্ত্র হিসেবে। পদ ও পদের বিভাজন, সন্ধি, সমাস, বিশেষত case ও case-এর শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে রামমোহনের ধারণা সমকালের সকল ব্যাকরণবিদদের ধারণার চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন, অভিনব ও বাংলা ভাষার মূল প্রবণতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। আসসুম্পসাঁউ থেকে হটন, বিদেশীদের রচিত এসকল ব্যাকরণের মাধ্যমেই বাংলা ব্যাকরণ ক্রমশ নিজস্বরূপ লাভ করছিল। তবে এর সঙ্গে যুক্ত হয় আরও কয়েকটি সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এ দেশে বেশ কিছু সংখ্যক ইংরেজি-বাংলা বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য পাঠ্য ব্যাকরণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। এতকাল বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয়েছিল মূলত বিদেশীদের বাংলা ভাষা শিক্ষাদানের কথা বিবেচনা করে। এবার এই নতুন প্রয়োজন মেটাবার জন্য পাঠ্য ব্যাকরণ রচিত হতে শুরু করে। কিন্তু এগুলো মূলত হয়ে ওঠে সংস্কৃত ব্যাকরণের বাংলা রূপান্তর। বিদেশীরা বাংলা ভাষার নিজস্ব প্রকৃতি যতটুকু বুঝতে চেষ্টা করেছিলেন বা রামমোহন যেভাবে বাংলা ভাষার মূল প্রকৃতিকে শনাক্ত করতে চেয়েছিলেন, স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণগুলোতে তার সবকিছুই বর্জিত হয় এবং বহুদিন পর্যন্ত সেগুলোতে সংস্কৃতের প্রভাব রক্ষিত হয়। এর প্রধান কারণ তখন বিদ্যালয়ের প্রায় সকল শিক্ষকই ছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত। তাছাড়া তখন স্কুল সোসাইটির অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন, যিনি বিশ্বাস করতেন সংস্কৃতজ্ঞান ছাড়া বাংলা ভাষার শুদ্ধ লিখন, পঠন ও কথন সম্ভব নয়। ফলে বাংলা ব্যাকরণের মূল প্রবণতা সংস্কৃত ব্যাকরণের সূত্রে আবদ্ধ হয়ে যায়। বাঙালি কর্তৃক বাংলা ভাষায় ব্যাকরণ রচনার প্রথম প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয় রাধাকান্ত দেবের বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থে (দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৮২১)। এটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ নয়, অন্যান্য শিক্ষণীয় বিষয়ের সঙ্গে বাংলা বর্ণমালা, বর্ণের উচ্চারণ স্থান ও সংখ্যা, শব্দ, সন্ধি ইত্যাদি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে সংস্কৃত ব্যাকরণের রীতি অনুযায়ী এতে বিবৃত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মগুলোই যথাসম্ভব সংক্ষিপ্তভাবে পুনর্বিন্যস্ত করে বাঙ্গালা শিক্ষাগ্রন্থে লেখক উপস্থাপন করেছেন। বাংলা ভাষায় বাঙালির লেখা প্রথম পূর্ণাঙ্গ ব্যাকরণ রামমোহনের। স্কুল সোসাইটির অনুরোধে ১৮৩০ সালে তিনি এটি রচনা করেন, যা ১৮৩৩ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়। এতে তিনি কোনো নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি বটে, তবে ব্যাকরণের পরিভাষা নির্মাণের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত পূর্ণতার পরিচয় দিয়েছেন। বাংলা ব্যাকরণ রচনায় রামমোহনের মৌলিকত্ব এবং ভাষার প্রকৃতি বিচারে তার বিশ্লেষণ ক্ষমতা অত্যন্ত সঙ্গত ও যথাযথ। কিন্তু পরবর্তীকালের ব্যাকরণ রচয়িতারা তাকে অনুসরণ না করে বরং সংস্কৃতমুখী বাংলা ব্যাকরণ রচনার প্রতি অধিক মনোযোগী হয়েছেন। গৌড়ীয় ব্যাকরণ প্রকাশের পর উনিশ শতকের তিরিশের দশকে বাঙালির লেখা আরও কয়েকটি বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হয়েছিল। সেসবের মধ্যে গোপালচন্দ্র চূড়ামণির ব্যাকরণ সংগ্রহ (১৮৩৬), তারকনাথ রায়ের ব্যাকরণ সার (প্রকাশকাল অনুল্লিখিত) এবং পূর্ণচন্দ্র দে’র ব্যাকরণ (১৮৩৯) উল্লেখযোগ্য। উনিশ শতকের চল্লিশের দশকে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয়েছিল। সেগুলোর মধ্যে ভগবচ্চন্দ্র বিশারদের সাধু ভাষার ব্যাকরণসার সংগ্রহ (১৮৪০), ব্রজকিশোর গুপ্তের বঙ্গভাষা ব্যাকরণ (১৮৪০), রামচন্দ্র বিদ্যাবাগীশের শিশুসেবধি (১৮৪০), ক্ষেত্রমোহন দত্তের গৌড়ীয় ব্যাকরণ (১৮৪১) এবং জন রবিনসনের বঙ্গ ভাষার ব্যাকরণ ও ধাতু সংগ্রহ (১৮৪৬) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ভগবচ্চন্দ্রের ব্যাকরণ সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুকরণে রচিত এবং তার ভাষাও সংস্কৃত মিশ্রিত জটিল বাংলা। ব্রজকিশোর গুপ্তের ব্যাকরণও সংস্কৃত ব্যাকরণের ছায়ামাত্র। ক্ষেত্রমোহনের ব্যাকরণ রামমোহন রায়ের গৌড়ীয় ব্যাকরণের পুনর্লিখন। আর রবিনসনের ব্যাকরণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উইলিয়ম কেরীর A Grammar of the Bengali Language-এর বাংলা অনুবাদ। উনিশ শতকের প্রথমার্ধের মতো দ্বিতীয়ার্ধেও ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয়েছে। ইংরেজিতে শ্যামাচরণ সরকার (১৮১৪-৮২) রচিত Introduction to the Bengalee Language (১৮৫০) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকরণটির একটি বাংলা সংস্করণও (বাঙ্গালা ব্যাকরণ) প্রকাশিত হয়েছে ১৮৫২ সালে। এ গ্রন্থটির বিশেষত্ব হচ্ছে, এতে রামমোহনের অনুকরণে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃত আদর্শের পরিবর্তে তার স্বরূপে বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যা সমকালীন অন্য কেউ করেননি। তাছাড়া শ্যামাচরণই প্রথম বাংলা ভাষার শিষ্টরূপের পাশাপাশি লৌকিক কথ্যরূপেরও পরিচয় দিয়েছেন এবং বাংলা ভাষায় দেশজ ও বিদেশী (আরবি, ফারসি ইত্যাদি) শব্দের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য নির্দেশ করেছেন। ডানকান ফোর্বস (Duncan Forbes: ১৭৯৮-১৮৬৮) রচিত A Grammar of the Bengali Language to which added a selection of easy phrases and useful dialogues প্রকাশিত হয় ১৮৬১ সালের জুলাই মাসে। গ্রন্থটিতে তিনি হটনের অনুসরণে ব্যাকরণের প্রতিষ্ঠিত পুরাতন সূত্রগুলোকেই ছাত্রদের উপযোগী করে পুনর্বিন্যাস করেছেন। বিভাষী ছাত্রদের কথা বিবেচনা করে আরেকজন বিদেশী জি.এফ নিকল (GF Nicholl) রচনা করেন Manual of the Bengali Language, Comprising a Bengali Grammar and Lessons, with various appendices including an Assamese Grammar (১৮৮৫)। জন বীম্স (১৮৩৭-১৯০২) ছিলেন প্রধানত একজন ভাষাতাত্ত্বিক। তাই বর্ণনামূলক ভাষাতাত্ত্বিক পদ্ধতিতে রচিত তার The Oxford Oriental Series Grammar of the Bengali Language Literary and Colloquial (১৮৯১, ১৮৯৪) গ্রন্থে সমকালীন বাংলা ভাষার রূপ বিশ্লেষিত হয়েছে। যেহেতু বিদেশীদের কথ্য বাংলা শেখানোই ছিল ব্যাকরণটির প্রধান উদ্দেশ্য, সেহেতু কথ্য বাংলার রূপ ও ভাষাতাত্ত্বিক পরিচয় প্রদানের ব্যাপারেই বীম্সের প্রধান আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে, প্রথমার্ধের মতোই বাংলা ভাষায় বেশ কিছু স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ রচিত হয়, যদিও সেগুলোর স্বতন্ত্র কোনো বৈশিষ্ট্য ছিল না। দু’একজন ব্যাকরণবিদ প্রচলিত রীতি ভঙ্গ করে গদ্যের পরিবর্তে পদ্যে (নন্দকুমার রায়, ব্যাকরণ দর্পণ, ১৮৫২) এবং প্রশ্নোত্তরের ভঙ্গিতে (রাজেন্দ্রলাল মিত্র, ব্যাকরণ প্রবেশ, ১৮৬২) ব্যাকরণ রচনা করেন। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে অর্ধশতাধিক উল্লেখযোগ্য ব্যাকরণগ্রন্থ রচিত হয়েছে। রচয়িতাদের মধ্যে একজন ছিলেন বিদেশী (?, ধাতুমালা, ১৮৫৭), বাকিরা বাঙালি। বাঙালিদের মধ্যে আবার অধিকাংশই ছিলেন কলকাতার। কলকাতার বাইরে শ্রীরামপুর, কৃষ্ণনগর, হুগলি, শান্তিপুর, ঢাকা, বরিশাল, ময়মনসিংহ প্রভৃতি অঞ্চলের পণ্ডিতরাও ছিলেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন শ্যামাচরণ সরকার (বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ১৮৫২), নন্দকুমার রায় (ব্যাকরণ দর্শন, ১৮৫২), রাজেন্দ্রলাল মিত্র (ব্যাকরণ প্রবেশ, ১৮৬২), কৃষ্ণকিশোর বন্দ্যোপাধ্যায় (সরল ব্যাকরণ, ১৮৭৭), হরপ্রসাদ শাস্ত্রী (বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ১৮৮২) প্রমুখ। উনিশ শতকের মধ্যভাগে স্কুলপাঠ্য হিসেবে যেসব বাংলা ব্যাকরণ রচিত হয়, সেসবের অধিকাংশই ছিল সংস্কৃত ব্যাকরণের বঙ্গানুবাদ; বাংলা ভাষার স্বরূপ ও বৈশিষ্ট্য সেগুলোতে বিশ্লেষিত হয়নি। কিন্তু বীমস্, হর্নলে বা ভাণ্ডারকর এ সময়ে তুলনামূলক ভাষাতত্ত্ব চর্চার যে সূত্রপাত করেন, তাতে বেশ কিছু ব্যাকরণবিদ নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে বাংলা ব্যাকরণ রচনার তাগিদ অনুভব করেন। তাদের মধ্যে চিন্তামণি গঙ্গোপাধ্যায় (বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ১৮৮১), নকুলেশ্বর বিদ্যাভূষণ (ভাষাবোধ বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ১৮৯৮) ও হৃষিকেশ শাস্ত্রী (বাঙ্গালা ব্যাকরণ, ১৯০০) রচিত ব্যাকরণ উল্লেখযোগ্য। এঁরা বাংলা ব্যাকরণ রচনায় সম্পূর্ণরূপে সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাবমুক্ত ছিলেন না বটে, কিন্তু সংস্কৃত ব্যাকরণের বিষয়গুলো প্রথমে আলোচনা করে পরে বাংলা ভাষার নিজস্ব বৈশিষ্ট্যগুলো তাতে যুক্ত করেন। বাংলা ব্যাকরণ রচনার ক্ষেত্রে উনিশ শতকের তুলনায় বিশ শতক বহুমাত্রায় বৈচিত্র্যপূর্ণ। উনিশ শতকে এ বিষয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা হলেও কোন অনুসরণীয় আদর্শ তৈরি করা সম্ভব হয়নি। বিশ শতকে ভাষার আদর্শের মতো ব্যাকরণ রচনারও একটি আদর্শ রূপ ও পদ্ধতির অনুসন্ধানে বেশ কিছু প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। সেগুলোর মধ্যে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এবং (?) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বাংলা ভাষা চর্চায় পরিষদের নিরন্তর উৎসাহ প্রদান এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর পাঠ্য তালিকায় বাংলা ব্যাকরণ অন্তর্ভুক্তকরণের ফলে বাংলা ভাষার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া গ্রিয়ারসনের The Linguistic Survey of India-য় বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সন্নিবেশিত হওয়ায় এবং নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় (১৯১৩) বাংলা ভাষা বিদেশেও পরিচিতি লাভ করে। ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগ ও ভাষা আন্দোলন (১৯৪৮-৫২) এবং সেই প্রেরণায় বাংলা একাডেমীর প্রতিষ্ঠা (১৯৫৫) বাংলা ভাষা চর্চায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি (১৯৮৫) বাংলা ভাষা চর্চায় যে গুরুত্ব দিয়েছে তার প্রভাব বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ক্ষেত্রেও পড়েছে। এ শতকে একাডেমিক ব্যাকরণ রচনার চেষ্টা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয় এবং ব্যাকরণ প্রণয়নে ভাষা বিজ্ঞানের কলাকৌশলও প্রয়োগ করা হয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের একটি সভায় (১৯০১) পঠিত ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ প্রবন্ধে সমগ্র উনিশ শতকের ব্যাকরণকে মূলত দুই ধরনের ‘প্যাটেন্টে’ চিহ্নিত করেছিলেন: মুগ্ধবোধ প্যাটেন্ট এবং হাইলি-প্যাটেন্ট। প্রথম ধরনের লেখকরা ছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিত, আর দ্বিতীয় ধরনের লেখকরা ছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এছাড়া তৃতীয় এক ধরনের প্যাটেন্ট ব্যাকরণের কথাও তিনি বলেছিলেন, যাতে এই দুই ধরনের রচনার মিশ্রণ ঘটেছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী উক্ত প্রবন্ধে বাংলা ভাষার প্যাটেন্ট ব্যাকরণ রচনার পরিবর্তে প্রকৃত বাংলা ব্যাকরণ রচনার পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন। তার নির্দেশনাকে যথার্থ অর্থে কর্মে প্রয়োগ করেছেন রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী বাংলা ব্যাকরণ বিষয়ে কোনো সম্পূর্ণ গ্রন্থ রচনা করেননি, তবে তার শব্দকথা (১৩২৪) গ্রন্থে সংকলিত প্রবন্ধগুলোতে বাংলা ব্যাকরণ রচনা ও তার উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাকরণ সম্পর্কে তার রচিত প্রবন্ধগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ (১৩০৮), ‘বাঙ্গালা কৃৎ ও তদ্ধিত’ (১৩০৮), ‘কারক প্রকরণ’ (১৩১২), ‘না’ (১৩১২) ও ‘ধ্বনিবিচার’ (১৩১৪)। ব্যাকরণ রচনার উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনিই প্রথম বলেন, “ব্যাকরণশাস্ত্রের উদ্দেশ্য ভাষার মধ্যকার প্রচ্ছন্ন নিয়ম-শৃঙ্খলাগুলো আবিষ্কার করা, ভাষাকে শুদ্ধরূপে লিখতে, বলতে বা পড়তে শেখানো নয়।” বাংলা শব্দতত্ত্ব সম্পর্কে তরুণ বয়স থেকেই যে রবীন্দ্রনাথের আগ্রহ ছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তার শব্দতত্ত্ব (১৩৪২) গ্রন্থে সংকলিত ভাষাবিষয়ক প্রবন্ধগুলোতে। আর বাংলা ভাষা সম্পর্কে তার ধারণার পরিচয় পাওয়া যায় তার বাংলাভাষা পরিচয় (১৯৩৮) গ্রন্থে। এতে তিনি বাংলা ভাষার চলিত রূপের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কারণ তার কাছে ভাষা হচ্ছে সচল সমাজমনের নিত্য প্রবহমান অভিব্যক্তি; আর এই অভিব্যক্তি সবচেয়ে বেশি ধরা পড়ে চলিত ভাষায়। চলিত বাংলা রূপের পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি একাধিকবার বলেছেন, বাংলা হচ্ছে ভঙ্গিপ্রধান ভাষা এবং এই ভঙ্গির পরিচয়ই তিনি ধ্বনিতত্ত্ব, রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব এই তিন দিক থেকে উদ্ঘাটনের চেষ্টা করেছেন। উনিশ শতকের শেষে এবং বিশ শতকের শুরুতে বাংলা ব্যাকরণের রূপ ও প্রকৃতি নিয়ে যে তর্ক জমে ওঠে, ললিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় (১৮৬৮-১৯২৯) তার মধ্যে একটি সামঞ্জস্য বিধানের চেষ্টা করেন। তার ‘ব্যাকরণ বিভীষিকা’ (১৯১১), ‘সাধুভাষা বনাম চলিত ভাষা’ (১৯১৩), ‘বানান-সমস্যা’ (১৯১৩), ‘অনুপ্রাস’ (১৯১৩), ‘ক-কারের অহংকার’ (১৯১৫) প্রভৃতি রচনা তার ওই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ। বিশ শতকের শুরু থেকেই বাংলা ভাষা ও ব্যাকরণ চর্চার আরেকটি প্রবণতা পরিস্ফুট হতে থাকে, যার সঙ্গে আধুনিক ইউরোপীয় ভাষাচর্চার সম্পর্ক অত্যন্ত স্পষ্ট। বর্তমানেও এ ধরনের ব্যাকরণচর্চা চলছে এবং অব্যাহত গতিতে তা এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে দুই বাংলার ভাষা গবেষণায় যে প্রধান ধারাগুলো দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে: ১. তুলনামূলক ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান, ২. সাংগঠনিক ও রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ এবং ৩. উপভাষা তত্ত্ব। বিশ শতকের শুরুতেই প্রকাশিত হয় শ্রীনাথ সেনের ভাষাতত্ত্ব (১৯০০) গ্রন্থটি। এটিকেই, নানা অসঙ্গতি ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও, বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক ব্যাকরণ রচনার প্রথম নিদর্শন বলে বিবেচনা করা হয়। সমসাময়িককালে ঐতিহাসিক ব্যাকরণ রচনার আরেকটি নিদর্শন হচ্ছে যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধির (১৮৫৯-১৯৫৬) বাঙ্গালা ভাষা (১৯১২)। শ্রীনাথের তুলনায় যোগেশচন্দ্রের ভাষাতাত্ত্বিক জ্ঞান ও ইতিহাস দৃষ্টি অনেক বেশি পরিচ্ছন্ন ও সমৃদ্ধ। বাংলা ভাষার ঐতিহাসিক ব্যাকরণের অপর নিদর্শন হচ্ছে বিজয়চন্দ্র মজুমদারের (১৮৬১-১৯৪২) The History of the Bengali Language (১৯২০)। তিনিই প্রথম ঐতিহাসিকভাবে বাংলা ভাষায় বিদেশী উপাদানগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। এ গ্রন্থটি প্রকাশের পর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের Journal of the Department of Letters (Vol. III, ১৯২০)-এ ‘Outlines of an Historical Grammar of the Bengali Language’ শিরোনামে একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ রচনা করেন, যা পরবর্তীকালে ঐতিহাসিক ব্যাকরণ রচনার আদর্শ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। (১৮৯০-১৯৭৭) রচিত The Origin and Development of the Bengali Language' '(ODBL, ১৯২৬) নামক অদ্বিতীয় গবেষণা গ্রন্থে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাংলা ভাষার উপাদানগুলো চিহ্নিত ও বিশ্লেষিত হয়েছে। এ গ্রন্থের মাধ্যমে বাঙালির মাতৃভাষা চর্চার যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে পরবর্তী অনেকের ভাষাচর্চার সৌধ। বাংলা ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে বাংলায় প্রথম টেক্সট বই রচনার কৃতিত্ব হেমন্তকুমার সরকারের। তার গ্রন্থের নাম ভাষাতত্ত্ব ও বাংলা ভাষার ইতিহাস (১৯২৩)। তবে টেক্সট বইগুলোর মধ্যে সুকুমার সেন রচিত ভাষার ইতিবৃত্ত (১৯৩৯) সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। বাংলা ভাষার ইতিহাস বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টেক্সট বই হচ্ছে পরেশচন্দ্র মজুমদারের বাঙলা ভাষা পরিক্রমা (১৩৬৩)। ঐতিহাসিক ব্যাকরণের সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ রচিত বাঙ্গালা ভাষার ইতিবৃত্ত। সাংগঠনিক ভাষাবিজ্ঞানের ধারা ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠায় ঐতিহাসিক ব্যাকরণ চর্চার ধারা বর্তমানে ক্ষীণ এবং প্রায় অবসিত হয়ে উঠেছে। বাংলা ভাষায় আধুনিক ভাষাবিজ্ঞান চর্চার ক্ষেত্রে মুহম্মদ আবদুল হাইয়ের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে ইংল্যান্ডে তিনি বাংলা নাসিক্য ধ্বনি ও নাসিক্যীভবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেন (A Phonetic and Phonological Study of Nasasl and Nasalization in Bengali, ১৯৬০)। দেশে ফিরে তিনি রচনা করেন ধ্বনিবিজ্ঞান ও বাংলা ধ্বনিতত্ত্ব (১৯৬৪) গ্রন্থ। এর মাধ্যমেই বাংলা ভাষায় ভাষাতত্ত্ব চর্চার গতি পরিবর্তিত হয়। পরবর্তীকালে ইংল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আধুনিক ভাষাতত্ত্বে শিক্ষাগ্রহণ ও গবেষণা করেন কাজী দীন মুহম্মদ (Verbal piece in colloquial Bengali: A Phonological Study, ১৯৬১), মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (Some suprasegmental phonological features of Bengali, ১৯৫৯),  (The Phonemes of Bengali, ১৯৬১, ফার্গুসনের সঙ্গে যৌথভাবে), আমিনুল ইসলাম (A phonetic study of inter-word relations in Bengali, ১৯৬১), রফিকুল ইসলাম (Bengali Graphemics, ১৯৬০), আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ (A study of Standard Bengali and the Noakhali Dialect, ১৯৭৫), হুমায়ুন আজাদ (Pronominalisation in Bengali, ১৯৭৬) প্রমুখ। এঁদের মধ্যে হুমায়ুন আজাদের বাক্যতত্ত্ব (১৯৮৪) গ্রন্থটি চমস্কি সূচিত ভাষাবিজ্ঞানের ধারণাকে বাংলা ভাষায় সংযোজিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গে আধুনিক ভাষাবিজ্ঞানের চর্চা শুরু হয় বাংলাদেশে তা সমৃদ্ধি অর্জনের অনেক পরে। সেখানে যাঁরা সাংগঠনিক ব্যাকরণ নিয়ে বিশেষভাবে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু (বাংলা ভাষার আধুনিক তত্ত্ব ও ইতিকথা), সুহাস চট্টোপাধ্যায়, শিশিরকুমার দাশ, দীপঙ্কর দাশগুপ্ত, অনিমেষ কান্তি পাল, মঞ্জুলী ঘোষ, পৃথ্বীশ চক্রবর্তী, সমীর ঘোষ, সুকুমার বিশ্বাস, রামেশ্বর শ্ব’ প্রমুখের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। রূপান্তরমূলক সৃষ্টিশীল ব্যাকরণ নিয়ে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁদের মধ্যে প্রবাল দাশগুপ্ত (হালের পশ্চিমী ব্যাকরণতত্ত্ব, ১৯৭৪), পবিত্র সরকার (The Generative Phonological Component of the Grammar of Bengali, ১৯৭৫), উদয়নারায়ণ সিংহ (চর্যাবাক্যব্যবচ্ছেদবিষয়ক প্রস্তাব: ১ ক্রিয়াপদ, গাঙ্গেয়পত্র, ১৯৭৯; নোম চম্‌স্কি: সঞ্জননী ব্যাকরণবিপ্লব, ভাষা, ১৯৮৩), রামেশ্বর শ্ব’ (সাধারণ ভাষাবিজ্ঞান ও বাংলা ভাষা, ১৯৮৪) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। বাংলা উপভাষা নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত ঘটে আঞ্চলিক শব্দ সংগ্রহ ও তার অভিধান প্রণয়নের মধ্য দিয়ে। এ ক্ষেত্রে মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি যে অসীম ধৈর্য ও শ্রমে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষার অভিধান (১৯৬৫) প্রণয়ন করেছেন তা অতুলনীয়। পরবর্তীকালে তাকে অনুসরণ করে প্রকাশিত হয় কামিনীকুমারের লৌকিক শব্দকোষ (১৯৬৮)। এরই অনুষঙ্গে অনেকেই আঞ্চলিক শব্দ ও তার বিবরণ সংগ্রহে এগিয়ে আসেন। তাদের মধ্যে অনিমেষ কান্তি পাল, মনিরুজ্জামান, রাজীব হুমায়ুন প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বিদেশীদের মধ্যে অন্তত দু’জনের নাম এখানে উল্লেখ করার মতো যাঁরা বাংলা উপভাষা নিয়ে গবেষণা করেছেন। তারা হলেন জ্যাক এ ড্যাবস (পূর্ববঙ্গ উপভাষা, ১৯৬৫) ও নোরিহিকো উচিদা (চট্টগ্রামী উপভাষা, ১৯৬৯)। উপভাষা চর্চার পাশাপাশি সমাজ ভাষাবিজ্ঞান নিয়েও অনেকের আগ্রহ ও মূল্যবান কাজ ইদানীং সুধীমহলে আগ্রহ সৃষ্টি করেছে। তাদের মধ্যে নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী (খুলনা জেলার মাঝির ভাষা, ১৯২৪), সুকুমার সেন (Women’s dialect in Bengali, ১৯২৯; The caste dialects of the Muchis in South-western Burdwan, ১৯৬৫), পৃথ্বীশ চক্রবর্তী (Dialects of Ranakamars of Birbhum, ১৯৬৫), নির্মল দাশ (উত্তরবঙ্গের নারীর ভাষা, ১৯৭০), ভক্তিপ্রসাদ মল্লিক (অপরাধ জগতের ভাষা, ১৯৭২), আফিয়া দিল (Hindu-Muslim Dialects in Bengali, ১৯৭২), পবিত্র সরকার (বাংলা গালাগালির ভাষাতত্ত্ব, ১৯৭২; ভাষা-দেশ-কাল, ১৯৮৫); মনিরুজ্জামান (শিশুর ভাষা, ১৯৭৬), মনসুর মুসা (ভাষা পরিকল্পনার সমাজ ভাষাতত্ত্ব, ১৯৮৫), মৃণাল নাথ (সমাজ ভাষাবিজ্ঞানের রূপরেখা, ১৯৮৯), রাজীব হুমায়ুন (সমাজ ভাষাবিজ্ঞান, ১৯৯৩), সত্রাজিৎ গোস্বামী (বাংলা অকথ্য ভাষা ও শব্দকোষ, ২০০০) প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য। উনিশ শতকের মতো বিশ শতকেও বেশ কিছু বাংলা ব্যাকরণ বিভিন্ন বিদেশী ভাষায় রচিত হয়েছে, যেগুলোর প্রধান পাঠক বিদেশি-বিভাষী বাংলা শিক্ষার্থী। এগুলো উনিশ শতকে রচিত ব্যাকরণগুলোর তুলনায় খুব বেশি নতুনত্বের দাবিদার নয়। তবে এগুলোতে বাংলা ভাষার স্বরূপ ও প্রকৃতি সম্পর্কে পূর্বাপেক্ষা অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাকরণের তুলনায় গ্রন্থগুলো স্বশিখনের সহায়ক গ্রন্থ হয়ে উঠেছে। ইংরেজি, জার্মান, রুশ, জাপানি ও চেক ভাষায় রচিত এ ধরনের অন্তত ২৫ খানা গ্রন্থের কথা জানা যায়। এগুলোর কোনো কোনোটির রচয়িতা বাঙালি, আবার কোনো কোনোটি বাঙালি-অবাঙালির যৌথ রচনা। এ ধরনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো: ইংরেজি Introduction to Bengali: Edward C Dimock, Jr. Somdev Bhattacharji and Suhas Chatterjee, Chicago University, ১৯৫৯; Bengali Language Handbook: Punyaslok Roy, Washington, DC, ১৯৬৬, পুনর্মুদ্রণ পশ্চিমবঙ্গ  বাংলা আকাদেমি, ১৯৯৮;  An Introduction to Colloquial Bengali: Walter Sutton Page, Cambridge, ১৯৩৪; Learn Bengali Yourself: Bidhubhusan Dasgupta, 2nd ed, Calcutta, ১৯৪৮; Colloquial Bengali: Mufazzal Haider Choudhuri, Bangla Academy, Dacca, ১৯৬৩; জর্মন Praktische grammatik der Bengalischen umgangsprache: Biren Banerji, Vienna-leipzig, ১৯২৩; জাপানি Bengarugo nyummon: Tsuyoshi Nara Tokyo, ১৯৭৫; রুশ Uchebnik Danilchuk: D Litton and others, Uchebnik Bengalskogo Yazyka, Moscow, ১৯৫৯; চেক Ucebnico Bengalistiny: Dusan Zbavitel, Prag, ১৯৫৩ ইত্যাদি। বিশ শতকে যাঁরা বাংলায় ছাত্রপাঠ্য ব্যাকরণ রচনা করেছেন তাদের অধিকাংশই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বা নতুন কোনো ব্যাকরণিক সত্য আবিষ্কারের পরিবর্তে কেবল প্রচলিত পাঠ্যসূচির নির্দেশ অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে এর বাইরেও কেউ কেউ সমসাময়িক ভাষাতাত্ত্বিক আলোচনার প্রতি দৃষ্টি রেখে ব্যাকরণ রচনায় উদ্যোগী হয়েছেন। এই শতকের প্রথম থেকে শেষ দশক পর্যন্ত বহু ব্যাকরণগ্রন্থ রচিত হয়েছে। সেসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো: ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ (সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৯৩৯), ব্যবহারিক বাঙ্গালা ব্যাকরণ (বসন্তকুমার চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা, ১৯৪৪), অভিনব ব্যাকরণ (কাজী দীন মুহম্মদ ও সুকুমার সেন, ঢাকা, ১৯৪৮), ব্যাকরণ মঞ্জরী (মুহম্মদ এনামুল হক, রাজশাহী, ১৯৫১), ব্যাকরণ পরিচয় (মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, ঢাকা, ১৯৫৩), বাংলা ভাষার ব্যাকরণ (মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী ও ইব্রাহিম খলিল, ঢাকা, ১৯৭২) ইত্যাদি। এ শতকের ব্যাকরণগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ভাষা প্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ। এটি স্কুলপাঠ্য ব্যাকরণ হলেও মূলত তার ওডিবিএল অনুসরণেই রচিত। ফলে প্রচলিত ব্যাকরণ কাঠামো ভেঙ্গে সেখানে জায়গা করে নিয়েছে আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি। সুনীতিকুমারই প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মগুলো নির্বিচারে গ্রহণ না করে ইতিহাস ও উপযোগিতার সূত্রে সেগুলোকে গ্রহণ-বর্জন করেছেন। এ ব্যাকরণে তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলা ভাষার জন্য কোনো নিয়ম প্রতিষ্ঠা ও নিয়ম আরোপ করা নয়, বরং ভাষার অন্তর্নিহিত নিয়ম আবিষ্কার ও তার বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করা। বাংলা ব্যাকরণ রচনার এই দীর্ঘ ধারাবাহিকতায় এখনও নতুন নতুন ব্যাকরণগ্রন্থ রচিত হচ্ছে, কিন্তু সেগুলোর কোনোটিই নিরঙ্কুশ বাংলা ভাষার ব্যাকরণের মর্যাদা পায়নি; সংস্কৃত ব্যাকরণের প্রভাব এখনও অনেকাংশে রয়ে গেছে। উৎপত্তি পর্তুগিজ ধর্মযাজক মানুয়েল দা আস্‌সুম্পসাঁউ (Manoel da Assumpcam) বাংলা ভাষার প্রথম ব্যাকরণ রচনা করেন। ১৭৪৩ খ্রিষ্টাব্দে পর্তুগালের লিসবন শহর থেকে রোমান হরফে মুদ্রিত তার লেখা Vocabolario em idioma Bengalla, e Portuguez dividido em duas partes শীর্ষক গ্রন্থটির প্রথমার্ধে রয়েছে একটি সংক্ষিপ্ত, খণ্ডিত ও অপরিকল্পিত বাংলা ব্যাকরণ। এর দ্বিতীয়াংশে রয়েছে বাংলা-পর্তুগিজ ও পর্তুগিজ-বাংলা শব্দাভিধান। মানোএল ভাওয়ালের একটি গির্জায় ধর্মযাজকের দায়িত্ব পালনের সময় নিজের ও ভবিষ্যৎ ধর্মযাজকদের প্রয়োজনে এই ব্যাকরণ রচনা করেন; বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটানো তার লক্ষ্য ছিল না। লাতিন ভাষার ধাঁচে লেখা এই ব্যাকরণটিতে শুধু রূপতত্ত্ব ও বাক্যতত্ত্ব আলোচিত হযেছে, কিন্তু ধ্বনিতত্ত্ব নিয়ে কোনো আলোচনা করা হয় নি। এছাড়া পুরো আঠারো ও উনিশ শতকে লোকচক্ষুর আড়ালে থাকায় এই গ্রন্থটি বাঙালি ও বাংলা ভাষার কোনো উপকারেও আসেনি তখন। বাংলা ভাষার দ্বিতীয় ব্যাকরণটি রচনা করেন ইংরেজ প্রাচ্যবিদ ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেড (Nathaniel Brassey Halhed)। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির গভর্নর ওয়ারেন হেস্টিংসের (Warren Hastings) অনুরোধে তরুণ লেখক হ্যালহেড বাংলা ভাষার ব্যাকরণ রচনায় হাত দেন। তার লেখা A Grammar of the Bengal Language গ্রন্থটি ১৭৭৮ সালে প্রকাশিত হয়। এ ব্যাকরণটি অনেক কারণে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। পূর্বের পর্তুগিজ ধর্মযাজকদের মতো নিজ প্রয়োজনে নয়, নিঃস্বার্থ বুদ্ধিজীবী হ্যালহেডের ইচ্ছা ছিল বাংলা ভাষাকে একটি বিকশিত ভাষাতে পরিণত করা। বাংলা ব্যকরণের ক্রমবিকাশ উনিশ শতকে নিম্ন বর্ণিত ব্যক্তিগণ ইংরেজি ভাষায় বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেছিলেন। উইলিয়াম কেরি - (১৮০১ খ্রিঃ) গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য - (১৮১৬ খ্রিঃ) কিথ - (১৮২০ খ্রিঃ) হটন - (১৮২১ খ্রিঃ) রাজা রামমোহন রায় - (১৮২৬ খ্রিঃ) শ্যামবরণ সরকার - (১৮৫০ খ্রিঃ) বীমস্‌ - (১৮৭২ খ্রিঃ) শ্যামচরণ গাঙ্গুলি - (১৮৭৭ খ্রিঃ) যদুনাথ ভট্টাচার্য - (১৮৭৯ খ্রিঃ) কেপি ব্যানার্জি - (১৮৯৩ খ্রিঃ) উনিশ শতকে বাংলা ব্যাকরণ যারা বাংলা ভাষাতে রচনা করেন তারা হলেনঃ - রাজা রামমোহন রায় - (১৮৩৩ খ্রিঃ) শ্যামাচরণ সরকার - (১৮৫২ খ্রিঃ) ব্রজনাথ বিদ্যালংকার - (১৮৭৮ খ্রিঃ) নিত্যানন্দ চক্রবর্তী - (১৮৭৮ খ্রিঃ) নীলমণি মুখোপাধ্যায় - (১৮৭৮ খ্রিঃ) কেদারনাথ তর্করত্ন - (১৮৭৮ খ্রিঃ) চিন্তামনি গঙ্গোপাধ্যায় - (১৮৮১ খ্রিঃ) প্রসন্নচন্দ্র বিদ্যারত্ন - (১৮৮৪ খ্রিঃ) ধীরেশ্বর পাঁড়ে - (২য় সং, ১৮৯১)। বিশ শতকে প্রণীত বাংলা ব্যাকরণসমূহের প্রকৃতি-প্রণালীতে পূর্বের শতকের বৈশিষ্ট্য অনুসরণ পরিলক্ষিত হয়। ভাষা-সমালোচকদের কেউ কেউ বাংলা ব্যাকরণ চর্চার ক্ষেত্রে সংস্কৃত ব্যাকরণকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। পরবর্তী কালে বাংলা ব্যাকরণের আলোচিত বিষয়গুলোর ওপর গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা উপস্থাপন করেছেন বিশিষ্ট ভাষাতাত্ত্বিক সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়। তার রচিত “The Origin and Development of the Bengali Language” গ্রন্থে বাংলা ভাষার উদ্ভব ও ক্রমবিকাশ আলোচিত হয়েছে। বিশ শতকে উল্লেখযোগ্য কতিপয় ভাষাবিদ যারা বাংলা ব্যাকরণ রচনায় প্রয়াস পান তারা হলেনঃ - ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ - তার রচিত ‘বাঙ্গালা ব্যাকরণ ’ (প্রকাশকাল ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দ) সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় - তার রচিত ‘সরল ভাষাপ্রকাশ বাঙ্গালা ব্যাকরণ ’ (১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত) ড.মুহম্মদ এনামুল হক - তার রচিত ‘ব্যাকরণ মঞ্জুরী ' (১৯৫২ খিস্টাব্দে প্রকাশিত) মুহম্মদ আবদুল হাই - ‘প্রাথমিক বাংলা ব্যাকরণ ’ (১৯৬৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত) [ দিলীপ মজুমদার] বাংলা ব্যাকরণ অভিধান ( ২০০৭) ইউনিক বুক , কলকাতা থেকে প্রকাশিত [দিলীপ মজুমদার ] বাংলা ব্যাকরণ কোষ [২০১০] এডুকেশন ফোরাম , কলকাতা থেকে প্রকাশিত বাংলা ভাষারীতি কথ্য, চলিত ও সাধু রীতি বিভিন্ন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলের জনগণ নিজ নিজ অঞ্চলের ভাষায় কথা বলে। এগুলো আঞ্চলিক কথ্য ভাষা বা উপভাষা। পৃথিবীর সব ভাষায়ই উপভাষা আছে। এক অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষার সঙ্গে অপর অঞ্চলের জনগণের মুখের ভাষার যথেষ্ট পার্থক্য দেখা যায়। ফলে এমন হয় যে, এক অঞ্চলের ভাষা অন্য অঞ্চলের লোকের কাছে দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাধারণের কথ্য ভাষা দিনাজপুর বা রংপুরের লোকের পক্ষে খুব সহজবোধ্য নয়। এ ধরনের আঞ্চলিক ভাষাকে বলার ও লেখার ভাষা হিসেবে সর্বজনীন স্বীকৃতি দেওয়া সুবিধাজনক নয়। কারণ, তাতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষাভাষীদে মধ্যে ভাবের আদান-প্রদানে অন্তরায় দেখা দিতে পারে। সে কারণে, দেশের শিক্ষিত ও পণ্ডিতসমাজ একটি আদর্শ ভাষা ব্যবহার করেন। বাংলা ভাষাভাষী শিক্ষিত জনগণ ও আদর্শ ভাষাতেই পারস্পরিক আলাপ-আলোচনা ও ভাবের আদান-প্রদান করে থাকেন। বিভিন্ন অঞ্চলের উপভাষার কথ্য রীতি সমন্বয়ে শিষ্টজনের ব্যবহৃত এই ভাষাই । বাংলা, ইংরেজি, আরবি, হিন্দি প্রভৃতি ভাষার মৌখিক বা কথ্য এবং লৈখিক বা লেখ্য এই দুটি রূপ দেখা যায়। ভাষার মৌখিক রূপের আবার রয়েছে একাধিক রীতি : একটি চলিত কথ্য রীতি অপরটি আঞ্চলিক কথ্য রীতি। বাংলা ভাষার লৈখিক বা লেখ্য রূপেরও রয়েছে দুটি রীতি : একটি চলিত রীতি অপরটি সাধু রীতি। সাধু ও চলিত রীতির পার্থক্য ১. সাধু রীতি বাংলা লেখ্য সাধু রীতি সুনির্ধারিত ব্যকরণের নিয়ম অনুসরণ করে চলে এবং এর পদবিন্যাস সুনিয়ন্ত্রিত ও সুনির্দিষ্ট।  এ রীতি গুরুগম্ভীর ও তৎসম শব্দবহুল। সাধু রীতি নাটকের সংলাপ ও বক্তৃতার অনুপযোগী। এ রীতিতে সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ এক বিশেষ গঠন পদ্ধতি মেনে চলে। ২. চলিত রীতি  চলিত রীতি পরিবর্তনশীল। একশ বছর আগে যে চলিত রীতি সে যুগের শিষ্ট ও ভদ্রজনের কথিত ভাষা বা মুখের বুলি হিসেবে প্রচলিত ছিল, কালের প্রবাহে বর্তমানে তা অনেকটা পরিবর্তিত রূপ লাভ করেছে। এ রীতি তদ্ভব শব্দবহুল।  চলিত রীতি সংক্ষিপ্ত ও সহজবোধ্য এবং বক্তৃতা, আলাপ-আলোচনা ও নাট্যসংলাপের জন্য বেশি উপযোগী। সাধু রীতিতে ব্যবহৃত সর্বনাম ও ক্রিয়াপদ চলিত রীতিতে পরিবর্তিত ও সহজতর রূপ লাভ করে। বহু বিশেষ্য ও বিশেষণের ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে। ৩. আঞ্চলিক কথ্য রীতি সব ভাষারই আঞ্চলিক রূপের বৈচিত্র্য থাকে, বাংলা ভাষারও তা আছে। বিভিন্ন অঞ্চলে কথিত রীতির বিভিন্নতা লক্ষিত হয়; আবার কোথাও কোথাও কারো কারো উচ্চারণে বিভিন্ন অঞ্চলের ভাষার মিশ্রণও লক্ষ্য করা যায়। সাধু ও চলিত রীতির উদাহরণ ক. সাধু রীতি পরদিন প্রাতে হেডমাস্টার সাহেবের প্রস্তুত লিস্ট অনুসারে যে তিনজন শিক্ষক সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন, তাঁহারা আটটায় পূর্বেই ডাক-বাংলায় উপস্থিত হইলেন। একটু পরে আবদুল্লাহ আসিয়া হাজির হইল। তাহাকে দেখিয়া একজন শিক্ষক জিজ্ঞাসা করিলেন- আপনি যে! আপনার নাম তো হেডমাস্টার লিস্টে দেন নাই। - কাজী ইমদাদুল হক খ. চলিত রীতি পুল পেরিয়ে সামনে একটা বাঁশ বাগান পড়ল। তারি মধ্য দিয়ে রাস্তা। মচমচ করে শুকনো বাঁশ পাতার রাশ ও বাঁশের খোসা জুতোর নিচে ভেঙে যেতে লাগল। পাশে একটা ফাঁকা জায়গায় বুনো গাছপালা লতা ঝোপের ঘন সমাবেশ। সমস্ত ঝোপটার মাথাজুড়ে সাদা সাদা তুলোর মতো রাধালতার ফুল ফুটে রয়েছে। -বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বনাম বাংলা সর্বনামগুলোর সঙ্গে ইংরেজি সর্বনামগুলোর কিছুটা সাদৃশ্য আছে। এখানে প্রথম পুরুষ, দ্বিতীয় পুরুষ এবং তৃতীয় পুরুষের (নাম পুরুষ) ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা শব্দ ব্যবহার হয়। এই রীতি একবচন ও বহুবচন, এই দুইয়ের ক্ষেত্রেও শব্দগুলোর ইংরেজি প্রতিরূপগুলোর মত লিঙ্গভেদে পার্থক্য হয় না। অর্থাৎ, সে(পুং) বা সে(স্ত্রী) এই দুই ক্ষেত্রে একই সর্বনাম ব্যবহার হয়, কিন্তু নৈকট্যর জন্য, তৃতীয় পুরুষের ব্যবহার বিভিন্ন হয়। আরও দেখুন তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি  নির্মল দাশ, বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও তার ক্রমবিকাশ, বিশ্বভারতী, দ্বিতীয় প্রকাশ, ২০০০; Abdur Rahim Khondkar, The Portugues contribution to Bengali Prose, Grammar and Lexicography, Dacca, 1976; MA Qayyum, A Critical Study of the Early Bengali Grammar: Halhed to Haugton, Dhaka, 1982. বাংলা ব্যাকরণ বাংলা ভাষা ভাষা অনুযায়ী ব্যাকরণ বাংলাদেশের ভাষা ভারতের ভাষা
https://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_grammar
Bengali grammar
Bengali grammar (Bengali: বাংলা ব্যাকরণ Bangla bêkôrôn) is the study of the morphology and syntax of Bengali, an Indo-European language spoken in the Indian subcontinent. Given that Bengali has two forms, Bengali: চলিত ভাষা (cholito bhasha) and Bengali: সাধু ভাষা (shadhu bhasha), it is important to note that the grammar discussed below applies fully only to the Bengali: চলিত (cholito) form. Shadhu bhasha is generally considered outdated and no longer used either in writing or in normal conversation. Although Bengali is typically written in the Bengali script, a romanization scheme is also used here to suggest the pronunciation.
1612
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%A8%E0%A7%88%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%A6%E0%A6%B2%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B9%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%BE
বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলসমূহের তালিকা
বাংলাদেশে প্রধানত দ্বিদলীয় শাসনব্যবস্থা বিরাজমান। অর্থাৎ দুই দলের বাইরে অন্য কোনো দলের নামে নির্বাচনে জয়লাভ কারো পক্ষে অত্যন্ত কঠিন। এখানে প্রধান দুই দল পালাক্রমে দেশ শাসন করে থাকে। যা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে সমস্যার কারণ। তাছাড়া বর্তমানে কমিউনিস্ট দলগুলো জোটবদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ইস্যুতে গণআন্দোলন করছে। এছাড়া এখানে অনেকগুলো দল মিলে জোট করার ব্যাপার লক্ষ্যণীয়। নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশন অনুসারে একটি দল শুধু নিবন্ধিত হিসেবে স্বীকৃত হয় যদি এটি নিচে তালিকাভুক্ত দুটি শর্ত পূরণ করে: একটি দলকে আগের দুটি সংসদ নির্বাচনে নির্বাচনী প্রতীক সহ অন্তত একটি আসন নিশ্চিত করতে হবে। যে সব আসনে তাদের প্রার্থীরা পূর্বোক্ত সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন, সেসব আসনে মোট ভোটের পাঁচ শতাংশ নিশ্চিত করা। একটি কার্যকরী কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপন করতে হবে, যে কোন নামে এটিকে একটি কেন্দ্রীয় কমিটির নামে ডাকা যেতে পারে, কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় অফিস এবং অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন থানাতে অফিস থাকতে হবে। এবং প্রতিটি উপজেলায় দলের সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকতে হবে। ১৪, ২৬, ২৯, ৩৬ এবং ৩৯ নিবন্ধন নং সংবলিত দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। বর্তমান মোট দল সংখ্যা ৪৪ টি। দল ও জোটসমূহ সূত্র: রাজনৈতিক জোটসমূহ চৌদ্দ দলীয় জোট বিশ দলীয় জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যুক্তফ্রন্ট বাম গণতান্ত্রিক জোট সম্মিলিত জাতীয় জোট গণঐক্য গণতন্ত্র মঞ্চ অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহ গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী শ্রমিক কৃষক সমাজবাদী দল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী) (উমর) বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী) বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (সাঈদ) জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ন্যাপ ভাসানী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি বাংলাদেশ লেবার পার্টি নেজামে ইসলাম পার্টি নাগরিক ঐক্য বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ আমার বাংলাদেশ পার্টি গণ অধিকার পরিষদ বাংলাদেশ সনাতন পার্টি বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি আঞ্চলিক দলসমূহ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এন এম লারমা) ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) টীকা দল ও প্রতিক সুত্র: তথ্যসূত্র বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কিত তালিকা বাংলাদেশ-ভিত্তিক সংগঠনের তালিকা এশিয়ার রাজনৈতিক দলের তালিকা দেশ অনুযায়ী রাজনৈতিক দলের তালিকা
https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_political_parties_in_Bangladesh
List of political parties in Bangladesh
This article lists political parties in People's Republic of Bangladesh. Since the restoration of parliamentary democracy in 1991, Bangladesh has a fading two-party system, which means that two political parties dominate the general elections centrist Awami League (AL) and centre-right Bangladesh Nationalist Party (BNP), with extreme difficulty for anybody to achieve electoral success under the banner of another party. Although the AL and BNP dominated Bangladeshi politics for a long time, the two are currently leading coalitions of like-minded parties, with the AL leading the left-of-centre parties and the BNP rallying the right-of-centre parties.
2024
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%20%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AA%E0%A6%BF
বাংলা লিপি
বাংলা লিপি হলো একটি লিখন পদ্ধতি যেটি বাংলা, মণিপুরি, ককবরক, অসমীয়া ভাষায়‌ ব্যবহার করা হয়। বাংলা-অসমীয়া লিপি থেকে এই লিপির উদ্ভব। বাংলা লিপির গঠন তুলনামূলকভাবে কম আয়তাকার ও বেশি সর্পিল। বাংলা লিপিটি সিদ্ধং লিপি থেকে উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে করা হয়। অনুরূপ হিসেবে অসমিয়াকে মনে করা হলেও অসমীয়া লিপির উৎপত্তি বাংলা লিপি উৎপত্তির অন্তত আড়াইশ বছর পর। যে ভিন্নতা (বাংলা র; অসমীয়া ৰ ও ৱ এবং স্বতন্ত্র বর্ণ হিসেবে ক্ষ) আধুনিক বাংলা ও অসমীয়া ভাষায় দেখা যায়, সেটি ১৮ শতকের আগে ছিল না। পরবর্তীতে নিচে ফোঁটা দেওয়া র বাংলায় ব্যবহৃত হয়। বাংলা-অসমীয়া লিপি বা বাংলা লিপি বিশ্বের ৫ম সর্বাধিক ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি। ইতিহাস উৎস খ্রীঃ পূঃ দ্বিতীয়-প্রথম শতকে ব্রাহ্মী লিপির উত্তর ভারতীয় লিপিরূপ থেকে জন্ম নেয় কুষাণ লিপি, যা থেকে পরে গুপ্ত লিপির উৎপত্তি হয়। গুপ্ত লিপির ক্রমবিবর্তনের ফলে সিদ্ধমাতৃকা লিপির উৎপত্তি হয়, যার কালক্রমিক পরিণতি থেকে বাংলা লিপি বর্তমান রূপ ধারণ করে। বাংলা লিপির ব্যবহার প্রায়ই মধ্যযুগীয় ভারতের পূর্বাঞ্চলে এবং তারপর পাল সাম্রাজ্যের মধ্যে ব্যবহার ছিল। পরে বিশেষভাবে বাংলার অঞ্চলে ব্যবহার করা অব্যাহত ছিল। পরে বাংলা লিপিটিকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির রাজত্বের অধীনে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর দ্বারা আধুনিক বাংলা লিপিতে প্রমিত করা হয়েছিল। বর্তমান দিনে বাংলা লিপিটি বাংলাদেশ ও ভারতে সরকারী লিপির পদমর্যাদা স্থানে আছে, এবং বাংলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গে যুক্ত আছে। বাংলা মুদ্রণের প্রথম অর্ধশতাব্দী ১৭৭৮ সালে ন্যাথানিয়েল ব্র্যাসি হ্যালহেডের (হালেদ) আ গ্রামার অব দ্য বেঙ্গল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রকাশনার মাধ্যমে বাংলা মুদ্রণশিল্পের জন্ম হয়। বইটি ইংরেজি ভাষাতে লেখা হলেও এতে বাংলা বর্ণপরিচয় ও বাংলা লেখার নিদর্শন সবই বাংলা মুদ্রাক্ষরে ছাপা হয়। এই মুদ্রণে প্রথমবারের মত "বিচল হরফ" প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এই কৌশলে প্রতিটি হরফের জন্য আলাদা একটি ব্লক থাকে, যে ব্লকটিকে ইচ্ছামত নড়ানো ও বসানো যায়। জার্মানির ইয়োহানেস গুটেনবের্গ ছিলেন এই প্রযুক্তির উদ্ভাবক। বাংলা মুদ্রণে হালেদের বইতে চার্লস উইলকিন্স এবং তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার এই প্রযুক্তি প্রথমবারের মত প্রয়োগ করেন। ধাতুর ব্লকে ঢালাই করা একই আকৃতি একই হরফের জন্য একাধিক পাতাতে ব্যবহার করা যায় বলে বাংলা ছাপা হরফে একটা স্থায়ী, বৈষম্যহীন রূপ এসেছিল। তবে এই প্রথম দিককার হরফগুলো খুব সুদৃশ্য ও পরিণত ছিল না। ইংরেজি ভাষার তুলনায় বাংলা হরফের আকার ছিল বেশ বড়। ইউরোপে এর প্রায় তিনশত বছর আগেই বিচল হরফে ছাপার প্রযুক্তি শুরু হয়ে গেলেও বাংলা ভাষাতে এটি ছিল একেবারেই নতুন একটি ঘটনা। চার্লস উইলকিন্স ও তার সহকারী পঞ্চানন কর্মকার সম্ভবত এই বিষয়ে অভিজ্ঞ কারিগর ছিলেন না। ১৮০০ সালে শ্রীরামপুরে ব্যাপটিস্ট মিশন প্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে উইলিয়াম কেরি ও উইলিয়াম ওয়ার্ড ছিলেন ছাপাখানা বিশেষজ্ঞ। তারা সেখানে পঞ্চানন কর্মকারের চাকরির ব্যবস্থা করেন। এদের মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলা হরফের চেহারার উন্নতি হতে থাকে। ১৯শ শতকের তৃতীয় দশকেই বাংলা ছাপার চেহারা অনেকখানি পাল্টে যায়। ১৮৩১ সালে ভিনসেন্ট ফিগিন্স সম্ভবত প্রথম বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য বাংলা হরফ তৈরি করেছিলেন। এসময়কার বাংলা হরফের বৈশিষ্ট্যগুলো এরকম: অনুস্বারের নিচের দাগটি ছিল না। ছিল কেবল গোল চিহ্নটি। ব্যঞ্জনের খাড়া দাগের সাথে য-ফলা মিলে বাঁকিয়ে কমলার কোয়ার মত একটা চেহারা ছিল। এগুলো আজও কখনো কখনো দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক কম্পিউটারের লিখন হরফে স্য-তে এর দেখা মেলে। "তু" যুক্তাক্ষরটি বর্তমান চেহারা পায়। অর্থাৎ "ত"-এর নিচে "ু" বসিয়ে। "স্থ" (স+থ) যুক্তাক্ষরটি হালেদের সময়ে, অর্থাৎ ১৮শ শতকে "স"-এর নিচে পরিষ্কার "থ" লিখে দেখানো হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে এটি "স"-এর নিচে ছোট "হ"-এর মত অক্ষর বসিয়ে নির্দেশ করা হয়। ফলে যুক্তাক্ষরটি অস্বচ্ছ রূপ ধারণ করে। এখনো এই অস্বচ্ছ রূপটিই ব্যবহার করা হয়। এরকম আরো বহু যুক্তাক্ষরের অস্বচ্ছ রূপ ১৯শ শতকের শুরুর এই পর্বে নির্দিষ্ট হয়ে যায়। "র" অক্ষরটির হরফটি হালেদের সময়ে পেট কাটা "ব" (অসমীয়া ৰ) এবং "ব"-এর নিচে ফুটকি উভয় রূপেই বিদ্যমান ছিল। কিন্তু ১৮শ শতকের মাঝামাঝিতে এই পর্বের শেষে এসে বর্তমান ফুটকিযুক্ত রূপটিই সর্বত্র চালু হয়ে যায়। বিদ্যাসাগরীয় সংস্কার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ১৮৪৭ খ্রিষ্টাব্দে সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপনা ছেড়ে দিয়ে জীবিকা অর্জনের জন্য একটি ছাপাখানা খোলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা বর্ণমালা সংস্কারের জন্য অনেকগুলো প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এগুলো হল এরকম: সংস্কৃতের "य" বর্ণটি বাংলায় "য" হরফ দিয়ে লেখা হত, কিন্তু শব্দে অবস্থানভেদে এর উচ্চারণ "জ" কিংবা "য়"-এর মতো উচ্চারিত হত। বিদ্যাসাগর "জ" উচ্চারণের ক্ষেত্রে "য" বর্ণটি ব্যবহার এবং "য়" উচ্চারণের ক্ষেত্রে "য"-এর নিচে ফুটকি দিয়ে নতুন বর্ণটি ব্যবহারের প্রস্তাব করেছিলেন। একইভাবে "ড" ও "ঢ"-এর নিচে ফুটকি দিয়ে বিদ্যাসাগর "ড়" ও "ঢ়" হরফ দুইটির প্রচলন করেছিলেন। বিদ্যাসাগর বাংলা ভাষায় অব্যবহৃত "দীর্ঘ-ৠ" ও "দীর্ঘ-ৡ" বর্ণ দুইটি বর্জন করেছিলেন। তবে কেবল "ঌ" বর্ণটিও বাংলায় অব্যবহৃত ছিল, কিন্তু বিদ্যসাগর এ নিয়ে কিছু বলেননি। এছাড়া সংস্কৃত স্বরবর্ণমালার অন্তর্গত অনুস্বার (ং), বিসর্গ (ঃ), এবং চন্দ্রবিন্দু (ঁ) যেহেতু প্রকৃতপক্ষে ব্যঞ্জনবর্ণ সেহেতু বিদ্যাসাগর এই বর্ণগুলোকে ব্যঞ্জনবর্ণমালার অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। কিন্তু ব্যঞ্জনবর্ণ হলেও যেহেতু এগুলো স্বতন্ত্র বর্ণ নয়, অযোগবাহ বর্ণ সেহেতু কোন বাংলা অভিধানেই বিদ্যাসাগরপ্রণীত বর্ণক্রমটি গৃহীত হয়নি। বিদ্যাসাগর "ণ-ন" এবং "শ-ষ-স"-এর মধ্যে উচ্চারণের সমতা সম্ভবত লক্ষ্য করলেও এর কোন সংস্কার করেন নি। বিদ্যাসাগর বাংলা হরফের স্বচ্ছতা ও সমতা বিধানের জন্যও বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন: তিনি যফলাকে ব্যাঞ্জনের সাথে যুক্ত করে কমলার কোয়ার মতো না লিখে আলাদা করে লেখার ধারা চালু করেন। ফলে সর্বত্র যফলার আকার একই রূপ পেল। বিদ্যাসাগরের আগে ঋ-কার ব্যঞ্জনের তলে বিভিন্ন রূপে বসত। বিদ্যসাগরই প্রথম ব্যঞ্জনের নিচে পরিষ্কারভাবে "ৃ" চিহ্নটি বসিয়ে লেখা চালু করেন। একইভাবে হ্রস্ব-উ কারের জন্য "ু" লেখা চালু করেন। কিন্তু বিদ্যাসাগরের সংস্কারগুলো সম্পূর্ণ সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। অনেকগুলো অস্বচ্ছ যুক্তব্যঞ্জনের চিহ্ন অস্বচ্ছই থেকে গিয়েছিল। যেমন - "তু" "ত"-এর নিচে উ-কার দিয়ে লেখা হলেও "ন্তু", "স্তু" যুক্তাক্ষরগুলোতে পুরনো অস্বচ্ছ রূপটিই থেকে গেল। ইংরেজি বিচল হরফগুলো একটি ডালায় দুই খোপে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী সাজানো থাকত। কিন্তু বাংলায় এ নিয়ে তেমন কোন চিন্তা হয় নি। বিদ্যাসাগরই প্রথম বাংলা হরফের জন্য ডালার একটি নকশা এবং কোন হরফের পর কোন হরফ বসবে তার নিয়ম স্থির করে দেন। তার এই নকশাই ক্রমে সমস্ত বিচল হরফ ব্যবহারকারী বাংলা ছাপাখানাতে গৃহীত হয়। বাংলা মুদ্রণশিল্পে প্রতিষ্ঠিত হয় সমতা। বিদ্যাসাগর বাংলা মুদ্রণশিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। মূলত তার বেঁধে দেয়া নিয়মনীতি অনুসারেই পরবর্তী একশো বছর, বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধ পর্যন্ত বাংলা হরফ মুদ্রিত হয়। সময়ের সাথে বিদ্যাসাগরীয় হরফের সামান্য কিছু পরিমার্জনের চেষ্টাও করা হয়েছে। বিদ্যাসাগর নিজে বর্ণপরিচয়-এর ৬০তম সংস্করণ থেকে শব্দের শেষে অন্তর্নিহিত ও উচ্চারণযুক্ত ব্যঞ্জন, যেমন- "বিগত", "কত" শব্দের শেষের "ত"-টা, যেন "ৎ"-এর মত উচ্চারণ না হয়, সেজন্য এগুলোর উপর তারাচিহ্ন দেয়া প্রবর্তন করেন। বিংশ শতাব্দীতে অনেক লেখক একই কাজে ঊর্ধ্বকমা (') ব্যবহার করেছেন, যেমন- একশ', ইত্যাদি। তবে এই সংস্কারটি সর্বজনগৃহীত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বিদ্যাসাগরী হরফের দুই ধরনের এ-কার (মাত্রাছাড়া ও মাত্রাসহ) দুইটি ভিন্ন কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন। তিনি শব্দের শুরুর মাত্রাযুক্র এ-কার দিয়ে "অ্যা" ধ্বনি বুঝিয়ে ছাপানো শুরু করেন। তবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া অন্য বেশির ভাগ প্রকাশকই এই রীতিটি গ্রহণ করেনি। লাইনোটাইপ পর্ব ইউরোপে ১৯শ শতকের শেষ দিকে লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর চল হয়। ১৯৩০-এর দশকে বাংলা হরফও লাইনো মেশিনে ছাপানোর চিন্তাভাবনা শুরু হয়। লাইনোটাইপ মেশিনে ছাপানোর অনেক সুবিধা থাকলেও এর একটি অসুবিধা ছিল এতে আড়াইশো-র মত চিহ্ন রাখার ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু বিদ্যাসাগরীয় পদ্ধতিতে হরফের সংখ্যা ছিল বিশাল। "করণ টাইপ" নামের এক পদ্ধতিতে এর সংখ্যা কমলেও তার পরেও সব মিলিয়ে প্রায় ৬০০-র মত হরফের ব্লক প্রয়োজন হত। আনন্দবাজার প্রকাশনা সংস্থার সুরেশচন্দ্র মজুমদার রাজশেখর বসুর পরামর্শে বাংলা হরফের বিরাট আকারের সংস্কার সাধন করেন। তিনি স্বরবর্ণের কার-চিহ্নগুলো সকল ক্ষেত্রে একই আকারের রাখার ব্যবস্থা করলেন এবং এগুলো ব্যঞ্জন বা যুক্তব্যঞ্জনের নিচে বা উপরে না বসিয়ে সামান্য ডানে বা বামে সরিয়ে আলাদা অক্ষর হিসেবে ছাপার ব্যবস্থা করলেন। এছাড়াও তিনি অনেক যুক্তব্যঞ্জনের একই উপাদান ব্যঞ্জনাক্ষরের সাধারণ আদল আলাদা করে সেটির হরফ বানালেন, ফলে যুক্তব্যঞ্জন ছাপানোতেও হরফের সংখ্যার অনেক সাশ্রয় হল। শেষ পর্যন্ত সুরেশচন্দ্র বাংলা হরফের সংখ্যাকে চাবির ডালায় ১২৪টি এবং বিবিধ আরও ৫০টিতে নামিয়ে আনতে পেরেছিলেন। বাংলা অক্ষর স্বরবর্ণ বাংলা লিপিতে বর্তমানে ১১টি স্বরবর্ণ অক্ষর আছে যা ৭টি প্রধান স্বর উচ্চারণের জন্য ব্যবহৃত হয়। এই সাতটিকে মৌলিক স্বরবর্ণ বলে ৷ বাংলা ভাষার একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো যে এই ভাষায় অ স্বরবর্ণটির সংস্কৃত ভাষায় যেমন উচ্চারণ ছিল( ‌ ) বাংলায় সেই আসল উচ্চারণই আছে। বাংলা ভাষার মতোই অসমীয়া ভাষা ও ওড়িয়া ভাষাতেও এই উচ্চারণ আছে। কিন্তু হিন্দি ও অন্যান্য ভাষায় এটি আরবি ভাষার সংস্পর্শে এসে হারিয়ে গেছে। এই বর্ণ ও উচ্চারণটি প্রথম ইন্দো-ইউরোপীয় Proto-Indo-European ভাষায় ছিল এবং এটি উত্তরাধিকার সূত্রে সংস্কৃত, পুরোনো পার্সী, ল্যাটিন, গ্রিক, রাশিয়ান ইত্যাদি ইন্দো ইউরোপীয় ভাষাগুলোতে এসেছে। বাংলা লিপিতে ই এবং উ উচ্চারণের জন্য ২টি করে বর্ণ ব্যবহৃত হয়। সংস্কৃত ভাষা থেকে প্রভাবিত বলে সংস্কৃত ভাষার মতনই বাংলা লিপিতে ই এবং উ উচ্চারণের জন্য উচ্চারণের তারতম্যের ভিত্তিতে হ্রস্ব (ই এবং উ) এবং দীর্ঘ (ঈ এবং ঊ) এই দুই রকম বর্ণ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কলকতার আধুনিক বাংলা উচ্চারণে হ্রস্ব আর দীর্ঘ উচ্চারণে কোনো পার্থক্য নেই। যখন কোনো স্বরবর্ণ শব্দ বা শব্দাংশের প্রথমে বসে অথবা অন্য কোন স্বরবর্ণের পরে বসে, তখন তাকে আলাদা বর্ণ হিসেবে লেখা হয়। কিন্তু কোনো স্বরবর্ণ কোনো ব্যঞ্জনবর্ণের পরে বসলে, তখন নির্দিষ্ট চিহ্ন (বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন) দিয়ে একে প্রকাশ করা হয়। এই চিহ্নকে কার বলা হয়। যেমন, ক ব্যঞ্জনবর্ণের পরে এ স্বরবর্ণ বসলে তখন ে চিহ্ন বা এ-কার ব্যবহৃত হয়ে কে লেখা হয়। এই নিয়মের একমাত্র ব্যতিক্রম হল অ স্বরবর্ণ। এই বর্ণের কোনো চিহ্ন নেই কারণ এটি পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ। ব্যঞ্জনবর্ণের পরে অ বা কোনো স্বরবর্ণ না থাকলে ব্যঞ্জনবর্ণটির সাথে হসন্ত চিহ্ন (্) ব্যবহার করা হয়, যেমন ক্। নিম্নে আধুনিক বাংলা স্বরবর্ণের তালিকা ও উচ্চারণ প্রণালী দেখানো হল। এই ১১টি স্বরবর্ণ ছাড়াও ৠ, ঌ এবং ৡ এই তিনটি স্বরবর্ণ পূর্বে ব্যবহৃত হলেও বর্তমানে এদের ব্যবহার করা হয় না, এবং "অ" হচ্ছে সম্পূর্ণ ভাবে স্বতন্ত্র স্বরবর্ণ এবং পুরো বাংলা লিপির পূর্বনির্ধারিত সহজাত স্বরবর্ণ, তাই তার বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন নেই। ব্যঞ্জনবর্ণ বাংলায় কিছু ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে পূর্বে উচ্চারণে পার্থক্য থাকলেও এখন আর নেই, যেমন "ন" (দন্ত্য ন) ও "ণ" (মূর্ধন্য ণ)। "শ" (তালব্য শ) আর "ষ" (মূর্ধন্য ষ)-কে আধুনিক বাংলায় একই রকম উচ্চারণ করা হয়। "স" (দন্ত্য স) -র উচ্চারণ শব্দের উপর নির্ভর করে। "য" (অন্তঃস্থ য) আর "জ" (বর্গীয় জ)-র উচ্চারণও একই, তবে ফারসি-আরবি শব্দে এই ধ্বনির যে দন্ত্য উচ্চারণটি আছে, সেটি বুঝাতেও "য" ব্যবহৃত হয়, যেমন "দোযখ", "যাকাত"। এই দন্ত্য উচ্চারণটি বিভিন্ন আঞ্চলিক উচ্চারণেও শোনা যায়। নাসিক্য বর্ণ "ঙ" (উঙ/উম/উঁঅ) ও "ঞ" (ইঞ/নীয়/ইঁঅ) এবং অর্ধস্বর বর্ণ "য়" (অন্তঃস্থ অ) শব্দের প্রথমে আসতে পারে না। চলিত উচ্চারণে "ড়" (ড-এ শূন্য ড়) আর "ঢ়" (ঢ-এ শূন্য ঢ়)-এর উচ্চারণ কিছুটা "র"-এর কাছাকাছি। দুটোই শব্দের প্রথমে আসে না কারণ বিদ্যাসাগর এদের প্রবর্তন করেন শব্দের (শুধু) মাঝে বা শেষে "ড" এবং "ঢ"-এর তাড়ণযাত উচ্চারণ ইঙ্গিত করতে। সংশোধক বর্ণ সংখ্যা বিরামচিহ্ন ও অন্যান্য ব্যবহৃত চিহ্ন ঝঞ্জায় কোনো স্বরবর্ণ দ্বারা পৃথক না থাকলে সর্বাধিক চারটি ব্যঞ্জনবর্ণ পরস্পর যুক্ত হয়ে যুক্তাক্ষর তৈরী করতে পারে। সাধারণতঃ প্রথম ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্তাক্ষরের ওপরের দিকে বা বাম দিকে দেখা যায়। যুক্তাক্ষরে অনেক ক্ষেত্রে অংশগ্রহণকারী ব্যঞ্জনবর্ণ সংক্ষিপ্ত আকারে লেখা হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে মূল ব্যঞ্জনবর্ণের সঙ্গে তার কোনো সাদৃশ্য থাকে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ অবস্থায় ব্যঞ্জনবর্ণের যা উচ্চারণ, যুক্তাক্ষরে ব্যবহৃত হলে তার উচ্চারণের পরিবর্তন হয়ে যায়। যেমন "জ" এবং "ঞ" এর মিলনের ফলে তৈরী "জ্ঞ" যুক্তাক্ষরের উচ্চারণ "জ্ন" না হয়ে হয় "গ্গ"। (ব্যবহৃত ফন্টের কারণে কিছু অক্ষর উল্লেখিত রূপে প্রতীয়মান না হয়ে অন্য রূপে হতে পারে) নিলীন রূপ উচুনিচু: ক্ক, গ্ন, গ্ল, ন্ন, প্ন, প্প, ল্ল, ইত্যাদি... ব-কারান্ত (বফলা এর অন্তর্ভুক্ত): গ্ব, ণ্ব, দ্ব, ল্ব, শ্ব ইত্যাদি... পাশাপাশি: দ্দ, ন্দ, ব্দ, ব্জ, প্ট, শ্চ, শ্ছ, ইত্যাদি... আনুমানিক রূপ পাশাপাশি: দ্গ, দ্ঘ, ড্ড ব-কারান্ত (বফলা এর অন্তর্ভুক্ত): ধ্ব, ব্ব, হ্ব সঙ্কুচিত রূপ পাশাপাশি: ঙ্ক্ষ, ঙ্খ, ঙ্ঘ, ঙ্ম, চ্চ, চ্ছ, চ্ঞ, ড্ঢ, ব্‍ব "ত", উচুনিচু: ত্ন, ত্ম, ত্ব "ম", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ম্ন, ম্প, ম্ফ, ম্ব, ম্ভ, ম্ম, ম্ল "ষ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ষ্ক, ষ্ট, ষ্ঠ, ষ্প, ষ্ফ, ষ্ম "স", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: স্ক, স্খ, স্ট, স্ত, স্থ, স্ন, স্প, স্ফ, স্ব, স্ম, স্ল সংক্ষিপ্ত রূপ "জ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: জ্জ, জ্ঞ, জ্ব "ঞ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ঞ্চ, ঞ্ছ, ঞ্জ, ঞ্ঝ "ণ" ও "প", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ণ্ঠ, ণ্ড, প্ত, প্স, প্ট, ণ্ট, ণ্ঢ "ত" ও "ভ", আকৃতি পরিবর্তন: ত্ত, ত্থ, ত্র, ভ্র "থ", উচুনিচু এবং পাশাপাশি: ন্থ, স্থ, ম্থ "ম", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার প্রায় হারিয়ে দেয়): ক্ম, গ্ম, ঙ্ম, ট্ম, ণ্ম, ত্ম, দ্ম, ন্ম, ম্ম, শ্ম, ষ্ম, স্ম "স", উচুনিচুতে নিচে (নিজের উপরের আকার হারিয়ে দেয়): ক্স বৈকল্পিক রূপ "ঙ", আকৃতি পরিবর্তন: ঙ্ক, ঙ্গ, উদাহরণ: অঙ্ক, সঙ্গীত,সঙ্গ ইত্যাদি। "ধ", আকৃতি পরিবর্তন করে আর "ঝ"-র মতন রূপ নেয়: গ্ধ, দ্ধ, ন্ধ, ব্ধ,ল্ধ, রেফ: র্ক, র্খ, র্গ, র্ঘ, ইত্যাদি... রফলা: খ্র, গ্র, ঘ্র, ব্র, জ্র, ট্র, ঠ্র, ড্র, ম্র, স্র, ইত্যাদি... রফলা যুক্ত হলে আকৃতি পরিবর্তন হয়: ক্র, ত্র, ভ্র যফলা: ক্য, খ্য, গ্য, ঘ্য, দ্য, ন্য, শ্য, ষ্য, স্য, হ্য, ইত্যাদি... ব্যতিক্রমসমূহ "ক", "ত"-র মতন রূপ নেয়: ক্র, ক্ত "চ", "ব"-র মতন রূপ নেয়: ঞ্চ "ট"+"ট" (নিজের নিচে একটি বক্ররেখা তৈরি করে): ট্ট "ষ"+"ণ" -তে "ণ" নিজেকে ২বার বক্র করে: ষ্ণ "হ"+"ন" -তে "ন" নিজেকে বক্রের মতন করে নেয়: হ্ন "হ"+"ম" (আকৃতি পরিবর্তন): হ্ম ব্যতিক্রমী ব্যঞ্জনবর্ণ-স্বরবর্ণ সমন্বয় উ "গ" আর "শ" -র সঙ্গে "উ" যুক্ত হলে "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: গু, শু "ন" বা "স" এর সাথে "তু" যুক্ত হলে "ও"- র মতন নিচে বক্র তৈরি করে: ন্তু, স্তু ব্যঞ্জনের ডানে বক্র তৈরি করে: রু, গ্রু, ত্রু, থ্রু, দ্রু, ধ্রু, ব্রু, ভ্রু, শ্রু "হ"-র সঙ্গে উপরে বক্র তৈরি করে: হু ঊ যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: রূ, গ্রূ, থ্রূ, দ্রূ, ধ্রূ, ভ্রূ, শ্রূ ঋ "হ" -র সঙ্গে যুক্ত হলে ডানে ঘাই তৈরি করে: হৃ কিছু উদাহরণ: স+ত +র=স্ত্র, ম+প+র=ম্প্র, জ+জ+ব=জ্জ্ব, ক্ষ+ম=ক্ষ্ম চারবর্ণের যুক্তাক্ষর হতে পারে যেমন ন+ত+র+য= ন্ত্র্য, স্বাতন্ত্র্য শব্দে এটি দেখা যায় লিপি বৈশিষ্ট্য বাংলা অক্ষরগুলোর উপর মাত্রা অর্থাৎ একটি আনুভূমিক রেখা দেয়া হয়। বাংলাতে মাত্রার প্রদর্শন পরিমাণ অনেক কম। খ, শ, ণ, প, ইত্যাদি বাংলা হরফে মাত্রার পরিমাণ খুব কম। বাংলাতে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ের কিছু স্বতন্ত্র জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য এই প্রাক-মুদ্রণ যুগেই নির্দিষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এগুলোর মধ্যে নিচেরগুলো উল্লেখযোগ্য অনুভূমিক মাত্রা এবং বিভিন্ন হরফে এর পরিমাণ বেশির ভাগ বাংলা হরফে ব্যবহৃত উল্লম্ব রেখাকৃতি অংশটি। ক, ঝ, ধ, ব, র, ইত্যদি হরফে ব্যবহৃত ত্রিভুজাকৃতি রূপটি। একই ত্রিভুজটির খানিকটা বিকৃত রূপ খ, ঘ, থ, ফ, য, ষ, ইত্যাদিতে দেখতে পাওয়া যায়। লেখার দিকের সাথে অর্ধ-সমকোণে অঙ্কিত বিভিন্ন রেখাংশ বিভিন্ন হরফে দেখতে পাওয়া যায়। ই, ছ, হ, ইত্যাদির নিচের অংশে, এবং গ, প, শ, ইত্যাদিতে উল্লম্ব রেখার সাথে সংযুক্ত অবস্থায় এরকম রেখাংশ দেখতে পাওয়া যায়। উপরের সবগুলোই বাংলা হরফকে নিজস্ব জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে এবং অন্যান্য লিপি থেকে আলাদা করেছে। এসময়কার বাংলা হরফে আরও কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল, যেগুলো বর্তমান বাংলা হরফে অনুপস্থিত। যেমন - "র" হরফটিকে "ব"-এর পেটে দাগ কেটে দেখানো যেত। অর্থাৎ পেট-কাটা "ব" (ৰ) দিয়ে এটি নির্দেশ করা হত। বর্তমানে এটি অসমীয়া ভাষাতে প্রচলিত হলেও বাংলায় আর প্রচলিত নেই। বর্তমান বাংলা বেশ কিছু হরফের নিচে ফুটকি বা বিন্দু দেয়া হয়। এই ফুটকিগুলো এই যুগে প্রচলিত ছিল না। "র"-কে পেটকাটা ব দিয়ে নির্দেশ করা হত। "য়"-এর নিচে কোন বিন্দু ছিল না; এটি শব্দে অবস্থানভেদে ভিন্ন ভাবে উচ্চারিত হত। আবার "ড়" এবং "ঢ়"-এরও কোন অস্তিত্ব ছিল না। "ড" এবং "ঢ" শব্দের মাঝে বসলে "ড়" এবং "ঢ়"-এর মতো উচ্চারিত হত। ত+উ ব্যঞ্জন-স্বর সমবায়টি "ত্ত" দিয়ে প্রকাশ করা হত। আজও কোন কোন আধুনিক বাংলা যুক্তাক্ষরে, যেমন স+ত+উ = "স্তু" (যেমন- বস্তু) এবং ন+ত+উ = "ন্তু" (যেমন- কিন্তু) --- এই দুইটি যুক্তাক্ষরের ত+উ অংশে এর ফসিল দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় বাংলা ছাপা বইও বের হয়েছে। এগুলোতে বইয়ের একটি পাতা প্রথমে হাতে লেখা হত। তারপর সেই পুরো পাতার একটি প্রতিলিপি কাঠে বা ধাতুতে খোদাই করে নেওয়া হত। শেষে এই কাঠ বা ধাতুর ফলকে কালি লাগিয়ে একই পাতার অনেক কপি ছাপানো হত। একই লোকের হাতের লেখাতে যে বৈচিত্র্য থাকতে পারে, সেগুলো এই ছাপায় শুধরানো যেত না। বাংলা মুদ্রিত হরফের জ্যামিতিক গড়ন প্রতিটি মুদ্রিত বাংলা হরফ একটি অদৃশ্য চতুর্ভুজের মধ্যে বসানো থাকে। হরফের এই অদৃশ্য নকশাতে অনুভূমিক বরাবর প্রসারিত বেশ কিছু রেখা বাংলা হরফের জ্যামিতিক বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করেছে। মাত্রা বরাবর যে রেখাটি চলে গেছে, যা থেকে বেশিরভাগ হরফ ঝুলে থাকে বলে মনে হয়, তাকে মাত্রারেখা বলে। বেশির ভাগ হরফের নিচ যেখানে ঠেকে যায়, সেই বরাবর কল্পিত অনুভূমিক রেখাটিকে ভূমিরেখা বলে। রোমান হরফগুলোর মূল অংশ সর্বদা একটি অদৃশ্য ভূমিরেখার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। অন্যদিকে বাংলা হরফগুলো মাত্রা নামের একটি দৃশ্যমান রেখা থেকে নিচে ঝুলে থাকে। ফিওনা রস তাই বাংলা হরফের ভূমিরেখাকে "ধারণাগত ভূমিরেখা" আখ্যা দিয়েছেন। মাত্রারেখা থেকে ভূমিরেখার ব্যবধানকে "হরফের মূল উচ্চতা" বলে। মাত্রারেখার কিছু উপরে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যাতে ই-কার, ঈ-কার, ঐ-কার, রেফ ইত্যাদির মাথা গিয়ে ছুঁয়েছে; এটিকে শিরোরেখা বলে। একইভাবে ভূমিরেখার খানিকটা নিচে আরেকটি অনুভূমিক রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে উ-কার, ঊ-কার, ঋ-কার, ইত্যাদির নিচের প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে; একে পাদরেখা বলে। পাদরেখা থেকে শিরোরেখার ব্যবধানকে "হরফের উচ্চতা" হিসেবে ধরা যায়। মাত্রারেখার খানিকটা নিচে আরেকটি রেখা কল্পনা করা যায়, যেখানে বহু হরফের অংশবিশেষ দিক পরিবর্তন করে; একে মধ্যরেখা বলে। প্রতিটি হরফ যে অদৃশ্য চতুর্ভুজাকৃতি স্থানে বসে, তার দুইপাশে খানিকটা খালি জায়গা থাকে, একে পার্শ্বস্থান বলে। দুপাশের পার্শ্বস্থান বাদ দিলে হরফের মূল প্রস্থ পাওয়া যায়। আর পাশাপাশি দুইটি হরফের প্রতিটির পার্শ্বস্থান যোগ করলে পাওয়া যায় ঐ দুই হরফের মধ্যে ফাঁক। রোমানীকরণ বাংলার রোমানীকরণ হল বাংলা লিপিটিকে রোমান লিপিতে উচ্চারণ মতে অনুবাদ করা। বাংলা ভাষার জন্যে অনেক রকম রোমানীকরণ পদ্ধতি প্রস্তাবিত করা আছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনোটাই সরকারি ভাবে স্বীকৃত নয় বা ব্যবহারে কোনো সমরূপতা নেই। ইউনিকোড ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইউনিকোড স্ট্যাণ্ডার্ড এ বাংলা লিপিকে যোগ করা হয়। ইউনিকোডে বাংলা লিপির অবস্থান U+0980 থেকে U+09FF পর্যন্ত। আরও দেখুন বাংলা ব্রেইল ব্রাহ্মী লিপিসমূহ গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি বাংলা পলাশ বরন পাল। বাংলা হরফের পাঁচ পর্ব। স্বপন চক্রবর্তী সম্পাদিত মুদ্রণের সংস্কৃতি ও বাংলা বই গ্রন্থে। অবভাস। কলকাতা। ২০০৭। পলাশ বরন পাল। ধ্বনিমালা বর্ণমালা। প্যাপিরাস। কলকাতা। ২০০১। চিত্তরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। দুই শতকের বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশন। আনন্দ পাবলিশার্স। কলকাতা। ১৯৮১। অতুল সুর। বাংলা মুদ্রণের দুশো বছর। জিজ্ঞাসা। কলকাতা। ১৯৮৬। শ্রীপান্থ। যখন ছাপাখানা এল। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি। কলকাতা। ১৯৯৬। ইংরেজি Ross, Fiona. The Printed Bengali Character and Its Evolution (1999). London. Curzon. টীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ অনলাইনে বাংলা টাইপিং সরঞ্জাম মুক্ত বাংলা ফন্ট (হরফ) ব্রাহ্মী লিপি বাংলা ভাষা বাংলা লিপি শব্দিয় বর্ণমালা লিপি লিখন পদ্ধতি বাংলা মুদ্রণশিল্প বাঙালি সংস্কৃতি মৈতৈ ভাষা বাংলাদেশের ভাষা ভারতের ভাষা ভারতের সরকারিভাবে ব্যবহৃত লিখন পদ্ধতি
https://en.wikipedia.org/wiki/Bengali_alphabet
Bengali alphabet
The Bengali script or Bangla alphabet (Bengali: বাংলা বর্ণমালা, romanized: Bangla bôrṇômala, Meitei: বেঙ্গলি ময়েক, romanized: Bengali mayek) is the alphabet used to write the Bengali language based on the Bengali-Assamese script, and has historically been used to write Sanskrit within Bengal. It is one of the most widely adopted writing systems in the world (used by over 265 million people). It is one of the official scripts of the Indian Republic. It is used as the official script of the Bengali language in Bangladesh, West Bengal, Tripura and Barak valley of Assam Until recently, it was the usual script for the Meitei language in Manipur, but is being replaced by Meitei mayek. two of the official languages of India. From a classificatory point of view, the Bengali writing system is an abugida, i.e. its vowel graphemes are mainly realised not as independent letters, but as diacritics modifying the vowel inherent in the base letter they are added to. It is written from left to right and uses a single letter case, which makes it a unicameral script, as opposed to a bicameral one like the Latin script. It is recognisable, as are some other Brahmic scripts, by a distinctive horizontal line known as a mātrā (মাত্রা) running along the tops of the letters that links them together. The Bengali writing system is less blocky, however, and presents a more sinuous shape than the Devanagari script.
2025
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%AA%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE
জাতীয় পতাকা
জাতীয় পতাকা প্রত্যেক দেশের নিজস্ব প্রতীক-স্বরূপ, জাতীয় অনুষ্ঠানে প্রতিটি দেশের মানুষ স্বতন্ত্র জাতীয় পতাকা ব্যবহার করেন। সাধারণ মানুষ, বিদ্যালয়, আদালত সবাই যে কোনো সময় জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে পারে। তবে কিছু কিছু দেশে অসামরিক ভবনে শুধু কিছু নির্দিষ্ট দিনেই ওড়ানো যায়। সুস্পষ্ট তিন ধরনের জাতীয় পতাকা জলে ও স্থলে ব্যবহৃত হয়। যদিও অনেক দেশে একই পতাকা সব ধরনের ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়। স্থলের জাতীয় পতাকা স্থলে অসামরিক (FIAV চিহ্ন ), রাষ্ট্রীয় () ও সামরিক বা যুদ্ধ পতাকার () মধ্যে পার্থক্য থাকে। রাষ্ট্রীয় পতাকা সরকারীসংস্থাই শুধু ব্যবহার করতে পারে। আর আসামরিক পতাকা হচ্ছে সবার জন্য। সামরিক পতাকা বা যুদ্ধ পতাকা শুধু সামরিক সংস্থাগুলিই ব্যবহার করতে পারে। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে, বহু দেশই (যেমন, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য) একই পতাকা এই তিন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে। জাতীয় পতাকা বলতে কখনো কখনো সেই সব পতাকা গুলিকে বোঝায় যাদের এই তিন ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয় ()। আবার অনেক দেশে, বিশেষ করে লাতিন আমেরিকার দেশগুলিতে, অসামরিক ও রাষ্ট্রীয় পতাকার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, রাষ্ট্রীয় পতাকার সরলীকৃত রূপ হল অসামরিক পতাকা। এসব ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় পতাকায় সরকারী সিলমোহর থাকে, যেটা অসামরিক পতাকায় থাকে না। খুব কম দেশই আলাদা যুদ্ধ পতাকা ব্যবহার করে। উদাহরণ হিসাবে, চীন, তাইওয়ান ও জাপানের নাম করা যায়। আবার ফিলিপাইন্সের আলাদা যুদ্ধকালীন পতাকা না থাকলেও যুদ্ধের সময়, স্বাভাবিক নীল দিক উপরে রাখার বদলে জাতীয় পতাকা উল্টো করে লাল দিক উপরে রাখা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের মত কিছু দেশে, আপতকালীন পরিস্থিতিতে জাতীয় পতাকা উল্টো করে টাঙ্গানোর নিয়ম আছে। জলের জাতীয় পতাকা একটি জাহাজ কোন দেশের তা বোঝাতে এই পতাকা ব্যবহৃত হয়। এখানেও অসামরিক (), রাষ্ট্রীয় ) ও সামরিক পতাকার () বিভাজন আছে। ব্যক্তিগত জলযানে অসামরিক পতাকা, সরকারী জলযানে রাষ্ট্রীয় পতাকা ও যূদ্ধজাহাজে সামরিক পতাকা ব্যবহার হয়। এই পতাকা টাঙানোর জন্য নির্দিষ্ট দন্ড থাকে। এই দন্ড মাস্তুলের থেকে ছোট হলেও তা জাহাজের অন্যান্য পতাকা দন্ডের থেকে উন্নত হয়। বিমানের ক্ষেত্রে এই পতাকা বিমানের গায়ে রং করে আঁকা থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বা কানাডার মত কিছু দেশে জলের জাতীয় পতাকা, স্থলের জাতীয় পতাকার অনুরূপ। আবার যুক্তরাজ্য বা জাপানের মত দেশের ক্ষেত্রে এই দু'ধরনের পতাকা আলাদা। বেশিরভাগ দেশের তিন ধরনের জাতীয় পতাকা আলাদা হয় না, ব্যতিক্রম যুক্তরাজ্য। যুক্তরাজ্যের জলের অসামরিক পতাকা লাল, সামরিক পতাকা সাদা ও রাষ্ট্রীয় পতাকা নীল রঙের হয়। অনুরূপ পতাকা যদিও কোন দেশের জাতীয় পতাকা সেই দেশের একটি বিশিষ্ট প্রতীক, তাও বিশ্বে এমন অনেক জোড়া দেশ আছে যাদের পতাকার অনেকটাই একই রকম দেখতে; আর তাই সহজেই গুলিয়ে যায়। যেমন মোনাকোর আর ইন্দোনেশিয়ার পতাকা, শুধু পতাকার আকারের অনুপাতের দিক থেকে আলাদা। আবার হল্যান্ডের এবং লুক্সেমবুর্গের পতাকা আকারের অনুপাতে আলাদা তো বটেই, তাছাড়াও পতাকার নীল রঙের গাড়ত্বেও পার্থক্য আছে। আর রোমানিয়া ও চাদের পতাকায় পার্থক্য শুধু পতাকার নীল রঙের গাড়ত্বে। আবার পতাকার রঙের ব্যবহারে আঞ্চলিক পছন্দ লক্ষ্যনীয়। যেমন, স্লাভ অঞ্চলের দেশগুলির পতাকায় লাল, সাদা ও নীল রং বেশি ব্যবহার হয়েছে। চেক প্রজাতন্ত্র, রাশিয়া, স্লোভেনিয়া, এবং ক্রোয়েশিয়া এই ধারার উদাহরণ। এছাড়াও পশ্চিমী বিশ্বেও এই তিনটি রঙের আধিক্য দেখা যায়; যেমন, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নিউজিল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, হল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্র। আফ্রিকার দেশগুলি আবার লাল, হলুদ আর সবুজ রং বেশি পছন্দ করে। যেমন, ক্যামেরুন, মালি ও সেনেগাল। আবার আরব দেশগুলির পছন্দ কালো, সাদা ও লাল রং। যেমন, মিশর, ইরাক ও ইয়েমেন। এই আশ্চর্য্য মিলের কিছু কিছু কাকতালীয় হলেও, কিছু কিছু আবার দেশগুলির একই ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, ভেনেজুয়েলা, কলম্বিয়া, আর ইকুয়েডরের পতাকা আসলে গ্রেট কলম্বিয়ার পতাকারই বিভিন্ন রূপ। স্পেন থেকে প্রথমে গ্রেট কলম্বিয়া নামে ঐ ভূখণ্ড স্বাধীনতা লাভ করে; পরে ভেনেজুয়েলার বিখ্যাত স্বাধীনতা যোদ্ধা ফ্রানসিস্কো ডি মিরান্ডার সাহায্যে দেশ তিনটি পৃথক হয়। আবার আরব বিদ্রোহের পতাকার (১৯১৬-১৯১৮) সাথে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, ওইয়েমেনের পতাকার মিল লক্ষ্যনীয়। নর্ডিক দেশগুলির (মানে আইসল্যান্ড, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, এছাড়া ফারো দ্বীপপুঞ্জ ও আলান্ডের মত স্বশাসিত এলাকা গুলি) পতাকা আবার একই নক্সার। এই নক্সা হল এক রঙের জমির উপর আর এক রঙের "+"-চিহ্ন। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য উভয়ের পতাকাতেই লাল নীল ও সাদা রং ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম তেরটি রাজ্য যুক্তরাজ্যের প্রাক্তন উপনিবেশ ছিল। আবার অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের পতাকাতেও ব্রিটিশ ঐতিহ্যের কারণে সাযুজ্য লক্ষ্যনীয়। দুদেশের পতাকাতেই ইউনিয়ন জ্যাক আছে এক কোনায়, জমিতে গাঢ় নীল রং, এবং দুদেশের পতাকাতেই সাদার্ন ক্রস ভীষণ ভাবে উপস্থিত। আরো নানান রকম সাযুজ্যও বিভিন্ন দেশের জাতীয় পতাকায় দেখা যায়। যেমন উল্টো রঙের ব্যবহার যদি ধরা হয় তাহলে আইভরি কোস্ট আর আয়ার্ল্যান্ডের পতাকা এক। আবার প্রাচীন ঐতিহাসিক পতাকা ও আজকের পতাকা ধরলে, আজকের আলবানিয়ার জাতীয় পতাকা আসলে বাইজ্যান্টাইন (পূর্ব রোমান) সাম্রাজ্যের যুদ্ধ পতাকা। অদ্ভুত পতাকা নেপালের জাতীয় পতাকা বিশ্বের একমাত্র পতাকা যা আয়তাকার নয়। শুধু সুইজারল্যান্ড ও ভ্যাটিকান সিটির পতাকা আবার নিখুঁত বর্গাকার। লিবিয়ার জাতীয় পতাকায় শুধু একটাই রং সবুজ ব্যবহৃত হয়েছে। না অন্য কোন রং বা না অন্য কোন নক্সা। আবার সাইপ্রাস, ক্রিসমাস দ্বীপ ও কসোভোর পতাকায় আবার সে দেশের মানচিত্র আঁকা আছে (কোরীয় সংযুক্তিকরণ পতাকায় সমগ্র কোরীয় উপদ্বীপের মানচিত্র আছে যদিও এটি উত্তর কোরিয়া বা দক্ষিণ কোরিয়া কোথাওই সরকারীভাবে স্বীকৃত নয়। আদিতে বাংলাদেশের পতাকায় লাল বৃত্তখণ্ডে হলুদ বর্ণের মানচিত্র ছিল যা পরবর্তী কালে উঠিয়ে দেয়া হয়। এদিকে মলডোভা, প্যারাগুয়ে আর সৌদি আরবের পতাকা সামনে-পিছনে এক রকম নয়। মোজাম্বিকের পতাকা হল একমাত্র পতাকা যাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের (একটি AK-47) আছে (গুয়াতেমালার পতাকায় যদিও দুটি রাইফেল ব্যবহৃত হয়েছে, তবে সেগুলি ১৮৭১ সালের রেমিংটন রাইফেল)। পতাকা সম্পর্কিত রীতিনীতি জাতীয় পতাকা প্রদর্শন সংক্রান্ত অনেক রীতিনীতি আছে। সাধারণভাবে বলা যায় যে কোনো জাতীয় পতাকা সম্মানজনকভাবে প্রদর্শন করতে হবে এবং অন্য কোনো পতাকার তুলনায় কখনোই কোনোরূপ হীন অবস্থানে রাখা যাবে না (যদিও কোনো কোনো দেশে রাজ পতাকার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম করা হয়)। স্থলে পতাকা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত নিয়মাবলী পালন করা হয়। যখন জাতীয় পতাকা অন্য কোনো পতাকার সাথে ওড়ানো হয়, তখন জাতীয় পতাকাকে সর্বাগ্রে উত্তোলন করতে হবে ও সব শেষে নামাতএ হবে। যখন জাতীয় পতাকা অন্য কোনো দেশের জাতীয় পতাকার সাথে ওড়ানো হবে তখন সবার আকার মোটামুটি এক হতে হবে ও সবাইকে একই উচ্চতায় ওড়াতে হবে; যদিও সংগঠক দেশের পতাকার বিশেষ সম্মাণ প্রাপ্য (যদি বিজোড় সংখ্যক পতাকাদন্ড থাকে তাহলে মাঝখানে, অথবা জোড় সংখ্যক পতাকাদন্ডের ক্ষেত্রে ডানপ্রান্তে, মানে দর্শকের দৃষ্টিকোণ থেকে বামদিকে থাকবে)। যখন জাতীয় পতাকা অন্য সাধারণ পতাকার সাথে উড়বে তখন জাতীয় পতাকার জন্য আলাদা পতাকাদন্ডে হয় অধিক উচ্চতায় নয়তো সম্মানজনক অবস্থানে রাখতে হবে। যদি একান্তই একটি পতাকা দন্ডে অন্যান্য পতাকার সাথে জাতীয় পতাকাকে ওড়াতে হয় তবে অবশ্যই তা সবার উপরে থাকবে। যখন জাতীয় পতাকা আড়াআড়ি ভাবে রাখা পতাকাদন্ডে অন্য কোনো পতাকার সাথে ওড়াতে হবে তখন জাতীয় পতাকা দর্শকের বামদিকে ও এর পতাকাদন্ড অন্য পতাকাদন্ডটির সামনে থাকবে। যখন জাতীয় পতাকা কোনো মিছিলে বহন করা হবে অন্যান্য পতাকার সাথে তখন জাতীয় পতাকা মিছিলের ডানদিকে থাকবে। আর যদি পতাকা গুলি সারিবদ্ধভাবে বহন করা হয় তখন জাতীয় পতাকাকে সম্মানজনকভাবে বহন করতে হবে। যখন কোনো জাতীয় পতাকা উল্টো করে টাঙানো হয় তার মানে হল ভয়ংকর সমস্যা। যদিও এটা একটা প্রথামাত্র। এটার আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক সংঘর্ষ প্রতিরোধক নিয়মাবলীতে সেভাবে কোনো স্বীকৃতি নেই। তাছাড়া, সাধারণভাবে কোনো দেশের জাতীয় পতাকা উল্টো করে টাঙিয়ে সেই দেশের প্রতি ধিক্কার বা প্রতিবাদ জানানো হয়। এখনো পর্যন্ত্য, শুধু ফিলিপাইন্সে উল্টো করে পতাকা টাঙানো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি বোঝায়। আরও দেখুন Flag terminology Flag desecration পতাকা দিবস Flags of the World Flag protocol National emblem Coat of arms সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের প্রতীকের গ্যালারি List of countries সার্বভৌম রাষ্ট্রসমূহের তালিকা Gallery of sovereign-state flags Gallery of maritime flags পূর্বতন স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের পতাকা Flags of active autonomist and secessionist movements নির্ভরশীল অঞ্চলসমূহের পতাকা Scandinavian Cross বহিঃসংযোগ Flags of the World, a massive online vexillological database on national and many other kinds of flags The World All Countries Flags, a website about national symbols World Flag Database reverse search for ID by color and layout তথ্যসূত্র জাতীয় প্রতীক জাতীয় পতাকা
https://en.wikipedia.org/wiki/National_flag
National flag
A national flag is a flag that represents and symbolizes a given nation. It is flown by the government of that nation, but can also be flown by its citizens. A national flag is typically designed with specific meanings for its colours and symbols, which may also be used separately from the flag as a symbol of the nation. The design of a national flag is sometimes altered after the occurrence of important historical events.
2027
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%88%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A6%20%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%A4%E0%A6%AC%E0%A6%BE%20%E0%A6%86%E0%A6%B2%E0%A7%80
সৈয়দ মুজতবা আলী
সৈয়দ মুজতবা আলী (; ১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯০৪ – ১১ই ফেব্রুয়ারি ১৯৭৪) ছিলেন একজন প্রখ্যাত বাঙালি লেখক, সাংবাদিক, ভ্রামণিক, আকাদেমিক, পণ্ডিত ও বহুভাষী। তিনি পড়াশোনা ও চাকরিসূত্রে বাংলাদেশ, ভারত, জার্মানি, আফগানিস্তান ও মিসরে বসবাস করেছেন। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, অনুবাদক ও রম্যরচয়িতা সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ভ্রমণকাহিনীর জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। তাঁর রচনা একই সঙ্গে পাণ্ডিত্য এবং রম্যবোধে পরিপুষ্ট। জন্ম সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতে আসামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা খান বাহাদুর সৈয়দ সিকান্দার আলী সাব-রেজিস্ট্রার ছিলেন। তাঁর পৈতৃক ভিটা মৌলভীবাজার, পৈতৃক নিবাস হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার উত্তরসূর গ্রামে। শিক্ষাজীবন সৈয়দ মুজতবা আলী সিলেট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। পিতার বদলির চাকরি হওয়ায় মুজতবা আলীর প্রাথমিক শিক্ষাজীবন কাটে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন বিশ্বভারতীর প্রথমদিকের ছাত্র। এখান থেকে সংস্কৃত, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফার্সি, হিন্দি, গুজরাটি, ফরাসি, জার্মান ও ইতালীয়সহ পনেরোটি ভাষাশিক্ষা লাভ করে ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। অতঃপর দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে গবেষণার জন্য তিনি ডি.ফিল লাভ করেন ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে। ১৯৩৪-১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মিশরে কায়রোর আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। কর্মজীবন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করে ১৯২৭ থেকে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত মুজতবা আলী কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। সেখানে তিনি ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক ছিলেন। ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে বরোদার মহারাজার আমন্ত্রণে তিনি বরোদা কলেজে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি আট বছর কাটান। এরপর দিল্লির শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানের বগুড়ার আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের খণ্ডকালীন প্রভাষকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পঞ্চাশের দশকে কিছুদিন আকাশবাণীর স্টেশন ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন পাটনা, কটক, কলকাতা এবং দিল্লিতে। ১৯৬১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শান্তিনিকেতনে প্রত্যাবর্তন করেন। বিশ্বভারতীর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের রিডার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অবসরগ্রহণ করেন। তাদের পরিবারের পরিচয় তুলে ধরতে মৌলভীবাজারে তার ও তার পিতার নামে দুটি সড়কের নাম রাখা হয়েছে। যার একটি সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী সড়ক এবং আরেকটি খান বাহাদুর সৈয়দ সিকন্দর আলী সড়ক। এছাড়াও তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার লেখা বইয়ের নামে গ্রন্থাগারের নাম রাখা হয়েছে  ‘দেশে বিদেশে’। লেখালেখি শান্তিনিকেতনে পড়ার সময় সেখানের বিশ্বভারতী নামের হস্তলিখিত ম্যাগাজিনে মুজতবা আলী লিখতেন। পরবর্তীতে তিনি ‘সত্যপীর’, ‘ওমর খৈয়াম’, ‘টেকচাঁদ’, ‘প্রিয়দর্শী’ প্রভৃতি ছদ্মনামে বিভিন্ন পত্রিকায়, যেমন: দেশ, আনন্দবাজার, বসুমতী, সত্যযুগ, মোহাম্মদী প্রভৃতিতে কলাম লিখেন। তার বহু দেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছেন ভ্রমণলিপি। এছাড়াও লিখেছেন ছোটগল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা। বিবিধ ভাষা থেকে শ্লোক ও রূপকের যথার্থ ব্যবহার, হাস্যরস সৃষ্টিতে পারদর্শিতা এবং এর মধ্য দিয়ে গভীর জীবনবোধ ফুটিয়ে তোলার ক্ষমতা তাঁকে বাংলা সাহিত্যে এক বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। অনেকের মতে, ১৯৫০-৬০ দশকে মুজতবা আলী ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক। তার একটি বিখ্যাত উক্তি হলো: তুলনাত্মক ভাষাতত্ত্বের অধ্যাপক মুজতবার ধর্মদর্শন নিয়ে বড় ভাই সৈয়দ মুর্তাজা আলী মন্তব্য করেন: তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০। গ্রন্থতালিকা উপন্যাস অবিশ্বাস্য (১৯৫৪) শবনম (১৯৬০) শহর-ইয়ার (১৯৬৯) তুলনাহীনা ভ্রমণকাহিনী দেশে বিদেশে (১৯৪৯) জলে ডাঙ্গায় (১৯৬০) ভবঘুরে ও অন্যান্য মুসাফির বিদেশে রম্যরচনা/ছোটগল্প চাচা কাহিনী (১৯৫২) পঞ্চতন্ত্র (১৯৫২) ময়ূরকণ্ঠী (১৯৫৭) টুনি মেম (১৯৬৪) দ্বন্দ্বমধুর চতুরঙ্গ বড়বাবু দু-হারা সত্যপীরের কলমে বিচিত্রা রায় পিথৌরার কলমে যাত্রাপথে প্রবন্ধ ধূপছায়া রাজা উজির কত না অশ্রুজল পরিবর্তনে অপরিবর্তনীয় বাংলাদেশ উভয় বাঙলা পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা ভাষা সংস্কৃতি সাহিত্য আত্মজীবনী/স্মৃতিকথা দিনলিপি (২০১৫ - বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংস্করণ) গুরুদেব ও শান্তিনিকেতন (২০১৫ - বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংস্করণ) অনুবাদ প্রেম ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব হিটলার (২০১৫ - বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র সংস্করণ) পুরস্কার ও সম্মাননা নরসিংহ দাস পুরস্কার (১৯৪৯) আনন্দ পুরস্কার (১৯৬১)। একুশে পদক (মরণোত্তর) মৃত্যু ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি সোমবার ঢাকা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২৭ নং কক্ষে সৈয়দ মুজতবা আলী মৃত্যুবরণ করেন। তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ গুডরিডসে সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪-এ জন্ম ১৯৭৪-এ মৃত্যু বাঙালি লেখক বাঙালি রম্যরচনাকার বাঙালি সাহিত্যিক বাঙালি ভ্রমণ বিষয়ক লেখক ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক বিজয়ী আনন্দ পুরস্কার বিজয়ী সিলেট জেলার ব্যক্তি ২০০৫-এ একুশে পদক বিজয়ী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক বাংলাদেশী পুরুষ ঔপন্যাসিক বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বাঙালি ঔপন্যাসিক হামবোল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মৌলভীবাজার জেলার ব্যক্তি একুশে পদক বিজয়ী করিমগঞ্জ জেলার ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাঙালি আরব বংশোদ্ভূত বাংলাদেশী বাঙালি মুসলিম বাংলা ভাষার লেখক
https://en.wikipedia.org/wiki/Syed_Mujtaba_Ali
Syed Mujtaba Ali
Syed Mujtaba Ali (Bengali: সৈয়দ মুজতবা আলী, Bengali pronunciation: [soi̯od̪ mud͡ʒt̪ɔba ali]; 13 September 1904 – 11 February 1974) was a Bengali writer, journalist, travel enthusiast, academic, scholar and linguist. He lived in Bangladesh, India, Germany, Afghanistan and Egypt.
2032
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A7%8E%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%20%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (১৫ সেপ্টেম্বর ১৮৭৬ – ১৬ জানুয়ারি ১৯৩৮ ; ৩১ ভাদ্র ১২৮৩ - ২ মাঘ ১৩৪৪ বঙ্গাব্দ) ছিলেন একজন বাঙালি লেখক, ঔপন্যাসিক, ও গল্পকার। তিনি দক্ষিণ এশিয়া এবং বাংলা ভাষার অন্যতম জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। লেখালিখির গুরু মানেন ফরাসি সাহিত্যিক এমিল জোলাকে। তার অনেক উপন্যাস ভারতবর্ষের প্রধান ভাষাগুলোতে অনূদিত হয়েছে। বড়দিদি (১৯১৩), পরিণীতা (১৯১৪), পল্লীসমাজ (১৯১৬), দেবদাস (১৯১৭), চরিত্রহীন (১৯১৭), শ্রীকান্ত (চারখণ্ডে ১৯১৭-১৯৩৩), দত্তা (১৯১৮), গৃহদাহ (১৯২০), পথের দাবী (১৯২৬), শেষ প্রশ্ন (১৯৩১) ইত্যাদি শরৎচন্দ্র রচিত বিখ্যাত উপন্যাস। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অপ্রতিদ্বন্দ্বী জনপ্রিয়তার জন্য তিনি 'অপরাজেয় কথাশিল্পী' নামে খ্যাত। তিনি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে জগত্তারিণী স্বর্ণপদক পান৷ এছাড়াও, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে 'ডিলিট' উপাধি পান ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দে। শরৎচন্দ্রের অনেকগুলি উপন্যাস চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়েছে। জন্ম ও পরিবার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ৩১শে ভাদ্র, ১২৮৩ বঙ্গাব্দে (১৮৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ সেপ্টেম্বর) ব্রিটিশ ভারতের প্রেসিডেন্সি বিভাগের হুগলি জেলার দেবানন্দপুর গ্রামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃপুরুষের নিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগণা জেলার কাঁচড়াপাড়ার নিকট মামুদপুরে৷ দেবানন্দপুর ছিল প্রকৃতপক্ষে তার পিতার মতিলাল৷ তার পিতার নাম মতিলাল চট্টোপাধ্যায় ও মাতার নাম ভুবনমোহিনী দেবী। তার মাতা উত্তর ২৪ পরগণা জেলার হালিশহরের রামধন গঙ্গোপাধ্যায়ের জ্যেষ্ঠ পুত্র কেদারনাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা৷ গঙ্গোপাধ্যায়রা কালক্রমে ভাগলপুর নিবাসী হন৷ পাঁচ ভাই আর বোনের মধ্যে শরৎ চন্দ্র ছিলেন দ্বিতীয়। তার দিদি অনিলা দেবী ছাড়াও প্রভাসচন্দ্র ও প্রকাশচন্দ্র নামে তার দুই ভাই ও সুশীলা দেবী নামে তার এক বোন ছিল। শরৎ চন্দ্রের ডাকনাম ছিল ন্যাঁড়া। দারিদ্র্যের কারণে মতিলাল স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ভাগলপুরে শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন বলে শরৎ চন্দ্রের শৈশবের অধিকাংশ সময় এই শহরেই কেটেছিল। শিক্ষাজীবন শরৎচন্দ্রের পাঁচ বছর বয়সকালে মতিলাল তাকে দেবানন্দপুরের প্যারী পণ্ডিতের পাঠশালায় ভর্তি করে দেন, যেখানে তিনি দু-তিন বছর শিক্ষালাভ করেন। এরপর ভাগলপুর শহরে থাকাকালীন তার মামা তাকে স্থানীয় দুর্গাচরণ বালক বিদ্যালয়ে ছাত্রবৃত্তিতে ভর্তি করিয়ে দেন। ১৮৮৭ খ্রিষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র ভাগলপুর জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ১৮৮৯ খ্রিষ্টাব্দে মতিলালের ডিহিরির চাকরি চলে গেলে তিনি তার পরিবার নিয়ে দেবানন্দপুরে ফিরে গেলে শরৎচন্দ্র জেলা স্কুল ত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই সময় তিনি হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলে ভর্তি হন, কিন্তু ১৮৯২ খ্রিষ্টাব্দে দারিদ্র্যের কারণে স্কুলের ফি দিতে না-পারার কারণে তাকে এই বিদ্যালয়ও ত্যাগ করতে হয়। এই সময় তিনি 'কাশীনাথ' ও 'ব্রহ্মদৈত্য' নামে দুটি গল্প লেখেন। ১৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মতিলাল পুনরায় ভাগলপুর ফিরে গেলে প্রতিবেশী সাহিত্যিক তথা তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় শিক্ষালাভের প্রতি শরৎচন্দ্রের আগ্রহ লক্ষ করে তাকে তার বিদ্যালয়ে ভর্তি করে দেন। এই বিদ্যালয় থেকে ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিভাগে এনট্রান্স পরীক্ষা পাস করে তেজনারায়ণ জুবিলি কলেজে ভর্তি হন। এই সময় তিনি তার মাতামহের ছোটো ভাই অঘোরনাথের দুই পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ও গিরীন্দ্রনাথকে প্রতি রাতে পড়াতেন, তার বিনিময়ে অঘোরনাথ তার কলেজে পড়ার প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাতেন। এতৎসত্ত্বেও এফএ পরীক্ষার ফি জোগাড় করতে না-পারার জন্য তিনি পরীক্ষায় বসতে পারেননি। ভাগ্যান্বেষণ কলেজ ত্যাগ করার পর শরৎচন্দ্র ভাগলপুর শহরের আদমপুর ক্লাবের সদস্যদের সঙ্গে খেলাধুলো ও অভিনয় করে সময় কাটাতে শুরু করেন। এই সময় প্রতিবেশী বিভূতিভূষণ ভট্টের বাড়িতে একটি সাহিত্যসভার আয়োজন করেছিলেন, যার ফলশ্রুতিতে তিনি বড়দিদি, 'দেবদাস', চন্দ্রনাথ, শুভদা ইত্যাদি উপন্যাস এবং 'অনুপমার প্রেম', আলো ও ছায়া, 'বোঝা', হরিচরণ' ইত্যাদি গল্প রচনা করেন। এই সময় তিনি বনেলী রাজ-এস্টেটে কয়েকদিন চাকরি করেন। কিন্তু পিতার ওপর কোনো কারণে অভিমানবশত তিনি সন্ন্যাসী সেজে ঘর ছেড়ে চলে যান। এই সময় তার পিতার মৃত্যু হলে তিনি ভাগলপুর ফিরে এসে পিতার শ্রাদ্ধ সম্পন্ন করে কলকাতা যাত্রা করেন, সেখানে তিনি কলকাতা উচ্চ আদালতের উকিল লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে হিন্দি বইয়ের ইংরেজি তর্জমা করার জন্য মাসে ত্রিশ টাকা বেতনের চাকরি পান। এই সময়, তিনি 'মন্দির' নামে একটি গল্প লিখে 'কুন্তলীন' প্রতিযোগিতায় পাঠালে তা বিজয়ী ঘোষিত হয়। ছয় মাস লালমোহনের বাড়িতে কাটানোর পর শরৎচন্দ্র ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাসে রেঙ্গুনে লালমোহন গঙ্গোপাধ্যায়ের ভগ্নিপতি উকিল অঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে চলে যান। অঘোরনাথ তাকে বর্মা রেলওয়ের অডিট অফিসে একটি অস্থায়ী চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। দুই বছর পর তার চাকরি চলে গেলে তিনি তার বন্ধু গিরীন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে পেগু চলে যান ও সেখানে অবিনাশ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে বসবাস করেন। ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দের এপ্রিল মাসে বর্মার পাবলিক ওয়ার্কস অ্যাকাউন্টস অফিসের ডেপুটি একজামিনার মণীন্দ্রনাথ মিত্রের সাহায্যে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে এই অফিসে চাকরি পান ও পরবর্তী দশ বছর এই চাকরি করেন। ১৯১২ খ্রিষ্টাব্দের অক্টোবর মাসে শরৎচন্দ্র এক মাসের ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে এলে 'যমুনা' নামে পত্রিকার সম্পাদক ফনীন্দ্রনাথ পাল তাকে পত্রিকার জন্য লেখা পাঠাতে অনুরোধ করেন। সেই অনুযায়ী, শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে ফিরে গিয়ে রামের সুমতি গল্পটি পাঠিয়ে দেন, যা যমুনা পত্রিকায় ১৩১৯ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন ও চৈত্র্য সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি 'ভারতবর্ষ' পত্রিকার জন্যেও লেখা পাঠাতে শুরু করেন। ফনীন্দ্রনাথ পাল তার উপন্যাস বড়দিদি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। এম সি সরকার অ্যান্ড সন্স ও গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় অ্যান্ড সন্স তার উপন্যাসগুলি পুস্তকাকারে প্রকাশ করেন। ১৯১৬ খ্রিষ্টাব্দে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ছুটি নিয়ে মনোমালিন্যের কারণে শরৎচন্দ্র চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে রেঙ্গুন ত্যাগ করে বাংলায় ফিরে আসেন। বৈবাহিক জীবন শরৎচন্দ্র বার্মা রেলের হিসাব পরীক্ষক হিসেবে পচাত্তর টাকা মাইনের কেরেনিগিরির চাকরি লাভ করেন ১৯০৫ সালে। রেঙ্গুনের উপকণ্ঠে বোটাটং পোজনডং অঞ্চলে কলকারখানার মিস্ত্রিদের পল্লিতে বসবাস করতেন। তার বাসার নিচে শান্তি দেবী নামে এক ব্রাহ্মণ মিস্ত্রির কন্যা বসবাস করতেন। তার পিতা তার সঙ্গে এক মদ্যপের বিয়ের ঠিক করলে শান্তি দেবী শরৎচন্দ্রকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করায় শরৎচন্দ্র তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। তাদের এক পুত্র সন্তানেরও জন্ম হয়, কিন্তু রেঙ্গুনের প্লেগে আক্রান্ত হয়ে শান্তি দেবী ও তার এক বছরের সন্তান মৃত্যুবরণ করেন। এর অনেক কাল পরে শরৎচন্দ্র রেঙ্গুনে কৃষ্ণদাস অধিকারী নামে এক ভাগ্যান্বেষী ব্যক্তির অনুরোধে তার ১৪ বছরের কন্যা মোক্ষদাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তিনি মোক্ষদার নাম রাখেন হিরন্ময়ী দেবী। তারা নিঃসন্তান ছিলেন। শেষ জীবন মধ্যবয়সে শরৎচন্দ্র হাওড়া জেলার পানিত্রাস (সামতাবেড়) গ্রামের মাটির বাড়িতে বাস করতেন। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের দেউলটি স্টেশন থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটারের পথ সামতাবেড়ের বাড়িটা রূপনারায়ণ নদের তীরে এক মনোরম পরিবেশে অবস্থিত। পাশাপাশি দুটো পুকুরে স্নানের ঘাট, বাগান, ডালিম, পেয়ারা গাছে ঘেরা। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ঘরভাঙানি বন্যায় পাশাপাশি সব গাঁয়ের মাটির বাড়ি নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। শরৎচন্দ্রের মাটির বাড়িটা রূপনারায়ণের কূলে থেকেও আশ্চর্যজনকভাবে রক্ষা পেয়ে যায়। জানালা পর্যন্ত ভিতটি ইট-সিমেন্টে গাঁথা ছিল বলে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পড়ে যায়নি। পরে সরকারি উদ্যোগে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে শরৎচন্দ্র শিবপুরেও থাকতেন। শিবপুর ব্যাতাইতলা বাজার থেকে চ্যাটার্জিহাট পর্যন্ত রাস্তা শরৎচন্দ্রের নামেই চালু আছে। ১৯৩৭ খ্রিষ্টাব্দে শরৎচন্দ্র প্রায়শই অসুস্থ থাকতেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি স্বাস্থ্য উদ্ধারের উদ্দেশ্যে দেওঘরে তিন চার মাস কাটিয়ে কলকাতা ফিরে এলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তার যকৃতের ক্যান্সার ধরা পড়ে, যা তার পাকস্থলী পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল। বিধানচন্দ্র রায়, কুমুদশঙ্কর রায় প্রমুখ চিকিৎসক তার অস্ত্রোপচারের পক্ষে মত দেন। চিকিৎসার জন্য তাকে প্রথমে দক্ষিণ কলকাতার সাবার্বান হসপিটাল রোডের একটি ইউরোপীয় নার্সিং হোমে ও পরে ৪ নম্বর ভিক্টোরিয়া টেরাসে অবস্থিত পার্ক নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি শল্য চিকিৎসক ললিতমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তার দেহে অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি। চার দিন পর ১৬ জানুয়ারি সকাল দশটায় শরৎচন্দ্র শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। প্রকাশিত বই উপন্যাস বড়দিদি, ১৯০৭ বিরাজবৌ, ১৯১৪ পরিণীতা, ১৯১৪ পন্ডিতমশাই, ১৯১৪ মেজ দিদি, ১৯১৬ পল্লী-সমাজ, ১৯১৬ চন্দ্রনাথ, ১৯১৬ বৈকুন্ঠের উইল, ১৯১৬ অরক্ষণীয়া, ১৯১৬ শ্রীকান্ত-প্রথম পর্ব, ১৯১৭ নিষ্কৃতি, ১৯১৭ দেবদাস, ১৯১৭ চরিত্রহীন, ১৯১৭ কাশীনাথ, ১৯১৭ দত্তা, ১৯১৮ স্বামী , ১৯১৮ শ্রীকান্ত-দ্বিতীয় পর্ব, ১৯১৮ ছবি, ১৯২০ গৃহদাহ, ১৯২০ বামুনের মেয়ে, ১৯২০ দেনা পাওনা, ১৯২৩ নব-বিধান, ১৯২৪ পথের দাবী, ১৯২৬ শ্রীকান্ত-তৃতীয় পর্ব, ১৯২৭ শেষ প্রশ্ন, ১৯৩১ শ্রীকান্ত-চতুর্থ পর্ব, ১৯৩৩ বিপ্রদাস, ১৯৩৫ শুভদা, ১৯৩৮ শেষের পরিচয় ,১৯৩৯} বর পরিনীতা নাটক ষোড়শী, ১৯২৮ রমা, ১৯২৮ বিজয়া, ১৯৩৫ গল্প মন্দির, লালু প্রবন্ধ চলচ্চিত্রায়ণ তার সাহিত্য-কর্মকে ঘিরে ভারতীয় উপমহাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি চলচ্চিত্র বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে। তার মধ্যে 'দেবদাস' উপন্যাসটি বাংলা, হিন্দি এবং তেলুগু ভাষায় আটবার তৈরি হয়। বিভিন্ন সময়ে 'দেবদাস' বাংলা ও হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেছেন প্রমথেশ বড়ুয়া, কানন দেবী, উত্তমকুমার, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, দিলীপ কুমার, সুচিত্রা সেন, সুপ্রিয়া দেবী, সুমিত্রা মুখার্জি, শাহরুখ খান, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন, মাধুরী দীক্ষিত প্রমুখ। এছাড়া সন্ধ্যারানি ও উত্তমকুমার অভিনীত বিখ্যাত বাংলা ছবি 'বড়দিদি', সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও মৌসুমি চট্টোপাধ্যায় অভিনীত 'পরিণীতা' ছবি নির্মিত হয়। 'পরিণীতা' উপন্যাস দু-বার চলচ্চিত্রায়িত হয়, বাংলা ছবি উত্তমকুমার ও সুচিত্রা সেন অভিনীত 'চন্দ্রনাথ', রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত, উত্তমকুমার ও মাধবী মুখার্জি অভিনীত 'বিরাজ বউ', ঋষিকেশ মুখার্জির হিন্দি ছবি 'মাঝলি দিদি' অন্যতম। 'স্বামী' (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের জন্য ফিল্মফেয়ার সেরা লেখকের পুরস্কার পান। 'বিন্দুর ছেলে' অবলম্বনে 'ছোটি বহু' (১৯৭১) নামে বিখ্যাত চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দে 'দত্তা' চলচ্চিত্রে সুচিত্রা সেন এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এছাড়া তার 'নববিধান' উপন্যাসের ছায়া অবলম্বনে ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে 'তুমহারি পাখি' নামে একটি ভারতীয় টিভি ধারাবাহিক নির্মিত হয়| তথ্যসূত্র আরও পড়ুন শরৎ মূল্যায়ন ১৮৭৬-এ জন্ম ১৯৩৮-এ মৃত্যু বাঙালি ঔপন্যাসিক বাঙালি সাহিত্যিক বাঙালি ছোটগল্পকার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক বাঙালি লেখক কলকাতার লেখক বাঙালি হিন্দু ভারতীয় পুরুষ ঔপন্যাসিক বাংলা ভাষার লেখক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী পশ্চিমবঙ্গের কবি পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিক যকৃতের ক্যান্সারে মৃত্যু ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ছোটগল্পকার হাওড়ার ব্যক্তি
https://en.wikipedia.org/wiki/Sarat_Chandra_Chattopadhyay
Sarat Chandra Chattopadhyay
Sarat Chandra Chattopadhyay (also spelt as Sarat Chandra Chatterjee and Saratchandra Chatterji; 15 September 1876 – 16 January 1938), was a Bengali novelist and short story writer of the early 20th century. He generally wrote about the lives of Bengali family and society in cities and villages. However, his keen powers of observation, great sympathy for fellow human beings, a deep understanding of human psychology (including the "ways and thoughts and languages of women and children"), an easy and natural writing style, and freedom from political biases and social prejudices enable his writing to transcend barriers and appeal to all Indians. He remains the most popular, translated, and adapted Indian author of all time.
2033
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%80%E0%A6%B0%20%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%81%E0%A6%A8
মুনতাসীর মামুন
মুনতাসীর উদ্দিন খান মামুন (জন্ম ২৪ মে ১৯৫১) একজন বাংলাদেশি ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। ঢাকা শহরের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করে থাকেন। জন্ম এবং পরিবার মুনতাসীর মামুনের জন্ম ১৯৫১ সালের ২৪ মে ঢাকার ইসলামপুরে নানার বাড়িতে। তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার গুলবাহার গ্রামে। তার বাবার নাম মেজবাহ উদ্দিন খান এবং মায়ের নাম জাহানারা খান। পিতামাতার তিন পুত্রের মধ্যে তিনি জ্যেষ্ঠ। তিনি ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন। তার স্ত্রী ফাতেমা মামুন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। মুনতাসীর মামুনের দুই ছেলে মিসবাহউদ্দিন মুনতাসীর ও নাবীল মুনতাসীর এবং কন্যা রয়া মুনতাসীর। শিক্ষা জীবন মুনতাসীর মামুনের শৈশব-কৈশোর কেটেছে চট্টগ্রামের চাঁটগায়। চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট প্রাইমারি ও হাইস্কুলে এবং চট্টগ্রাম কলেজে তিনি পড়াশোনা করেন। ১৯৬৮ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে। ১৯৭২ সালে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন এবং একই বিভাগ থেকে ১৯৮৩ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। স্বাধীনতার পর ইতিহাস বিভাগ থেকে তিনিই প্রথম পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। কর্মজীবন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই দৈনিক বাংলা-বিচিত্রায় সাংবাদিক হিসেবে যোগ দেন মুনতাসীর মামুন। ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এর পাশাপাশি ঢাকা শহরের অতীত ইতিহাস নিয়ে তিনি গবেষণা করেছেন। এছাড়া তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের 'মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ গবেষণা ইন্সটিটিউটে' সাম্মানিক প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে ১৯৯৯-২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। কৈশোর থেকে লেখালেখির সাথে জড়িত হয়ে ১৯৬৩ সালে পাকিস্তানে বাংলা ভাষায় সেরা শিশু লেখক হিসেবে প্রেসিডেন্ট পুরস্কার লাভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর অনুবাদ, চিত্র সমালোচনা ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রচনা করেন অনেক বই। তার লেখালেখি ও গবেষণার বিষয় উনিশ, বিশ ও একুশ শতকের পূর্ববঙ্গ বা বাংলাদেশ ও ঢাকা শহর। ২০১৬ সালের ৩০ জুন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসরকালীন ছুটিতে যান। ১৬ আগস্ট ২০১৭ তারিখের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা তাকে পরবর্তী এক বছরের জন্য বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে নিয়োগ করে। এই দায়িত্ব সফলভাবে সম্পন্ন করার পর ২০২১ সালে ১৫ মার্চ তিনি পুনরায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদে যোগদান করেন। যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী দুই বছর তিনি এই পদে দায়িত্ব পালন করবেন। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ডাকসুর প্রথম নির্বাচনে মুনতাসীর মামুন ছিলেন সম্পাদক। একই সময়ে তিনি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি। ডাকসুর মুখপত্র "ছাত্রবার্তা" প্রথম প্রকাশিত হয় তার সম্পাদনায়। তিনি বাংলাদেশ লেখক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও যথাক্রমে প্রথম যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সম্পাদক। তিনি জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ড ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি এবং জাতীয় আর্কাইভসের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন। ঢাকা নগর জাদুঘরের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ঢাকার ইতিহাস চর্চার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন সেন্টার ফর ঢাকা স্টাডিজ (ঢাকা চর্চা কেন্দ্র)। এ কেন্দ্র থেকে ঢাকার ওপর ধারাবাহিক ভাবে ১২টি গবেষণামূলক গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বাংলা একাডেমির একজন ফেলো এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিনেটের নির্বাচিত সদস্য হয়েছেন কয়েকবার। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তিনি একজন প্রতিষ্ঠাতা ও সক্রিয় সদস্য। তিনি এবং তার স্ত্রী ফাতেমা মামুন প্রতিষ্ঠা করেছেন মুনতাসীর মামুন-ফাতেমা মামুন ট্রাস্ট। এ ট্রাস্ট গরিব শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের নিয়মিত সাহায্য করছে। সাহিত্য কর্ম মুনতাসীর মামুনের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ২২০। গল্প, কিশোর সাহিত্য, প্রবন্ধ, গবেষণা, চিত্র সমালোচনা, অনুবাদ সাহিত্যের প্রায় সব ক্ষেত্রেই মুনতাসীর মামুনের বিচরণ থাকলেও ইতিহাসই তার প্রধান কর্মক্ষেত্র। প্রশাসনের অন্দরমহল | প্রকাশকাল: ১৯৮৭ ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী | প্রকাশকাল: ১৯৯৩ বাংলাদেশের রাজনীতি: এক দশক | প্রকাশকাল: ১৯৯৯ ১৯ শতকের ঢাকার মুদ্রণ ও প্রকাশনা | সময় প্রকাশন | প্রকাশকাল: এপ্রিল ২০০৪ ১৯ শতকে পূর্ববঙ্গের মুদ্রণ ও প্রকাশনা | | সময় প্রকাশন | প্রকাশকাল: ফেব্রুয়ারি ২০০৫ আইন, আদালত ও জনতা | | অনুপম প্রকাশনী | প্রকাশকাল: জুলাই ২০০৫ ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ ও পূর্ব বাংলার প্রতিক্রিয়া | | মাওলা ব্রাদার্স | প্রকাশকাল; জানুয়ারি ২০০৬ ১৯৭১ চুকনগরে গণহত্যা | সুবর্ণ প্রকাশনী | প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০০৮ আমার ছেলেবেলা | | প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০০৮ দুঃসময়ের দিনগুলি | প্রকাশকাল: ২০১০ ঢাকার স্মৃতি ৯ এবং ১০ | প্রকাশকাল: ২০১০ ঢাকার স্মৃতি ৮ | প্রকাশকাল: ২০১০ পুরস্কার বাংলা একাডেমী পুরস্কার লেখক শিবির পুরস্কার সিটি আনন্দ আলো পুরস্কার একুশে পদক (২০১০) নূরুল কাদের ফাউন্ডেশন পুরস্কার হাকিম হাবিবুর রহমান ফাউন্ডেশন স্বর্ণপদক পুরস্কার ইতিহাস পরিষদ পুরস্কার অগ্রণী ব্যাংক পুরস্কার অলক্ত স্বর্ণপদক পুরস্কার ড. হিলালী স্বর্ণপদক প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (১৯৬৩) মার্কেন্টাইল ব্যাংক স্বর্ণপদক এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউ অর্লিয়েন্স শহর তাকে 'অনারেবল ইন্টারন্যাশনাল অনারারি সিটিজেনশিপ' প্রদান করে। তথ্যসূত্র বাংলাদেশী পুরুষ লেখক ১৯৫১-এ জন্ম বাঙালি সাহিত্যিক বাংলাদেশী সাহিত্যিক জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশী শিক্ষাবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী সামগ্রিক অবদানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চাঁদপুর জেলার ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ইতিহাসবিদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু চেয়ার অধ্যাপক বাঙালি লেখক ঢাকার লেখক একুশে পদক বিজয়ী বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ইতিহাসবিদ
https://en.wikipedia.org/wiki/Muntassir_Mamoon
Muntassir Mamoon
Muntasir Mamoon (born 1951) his full name is Muntasir Uddin Khan Mamun, he is a Bangladeshi writer, historian, scholar, secularist, translator, and professor at University of Dhaka. He was awarded Bangla Academy Literary Award and Ekushey Padak by the government of Bangladesh.
2035
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A7%81%E0%A6%B2%20%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%A8
হাবিবুল বাশার সুমন
হাবিবুল বাশার সুমন (জন্ম: আগস্ট ১৭, ১৯৭২, নাগকান্দা কুষ্টিয়া জেলা) বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং বাংলাদেশের সফলতম টেস্ট ব্যাটসম্যান। তার পুরো নাম কাজী হাবিবুল বাশার। তিনি একজন ডান-হাতি ব্যাটসম্যান। তার বোলিংয়ের ধরন অফ ব্রেক। বাংলাদেশ জাতীয় দল ছাড়াও তিনি জাতীয় ক্রিকেট লীগে খুলনা জেলা এবং ঢাকার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেটে বাংলাদেশ বিমান দলের হয়ে খেলছেন। তার টেস্ট অভিষেক হয় ২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে। আর একদিনের খেলায় অভিষেক হয় ১৯৯৫ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায়। তার অধীনে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল প্রথম কোন টেস্ট ম্যাচে জয়লাভ করে এবং অস্ট্রেলিয়া, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে জয়লাভ করেছে। খেলোয়াড়ী জীবন টেস্ট টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষ হয়ে বর্তমানে তিনি চতুর্থ সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হিসেবে রয়েছেন। এ পর্যন্ত তিনি তিন হাজারেরও অধিক রান করেছেন। টেস্ট অভিষেক: বিপক্ষ ভারত, বঙ্গবন্ধু, ২০০০ টেস্টে সর্বোচ্চ রান ১১৩, বিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ২০০৪ একদিনের আন্তর্জাতিক একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক: বিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, শারজাহ, ১৯৯৫ একদিনের খেলায় সর্বোচ্চ রান ৭৮, বিপক্ষ জিম্বাবুয়ে, ২০০৭ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলা ক্রিকেট খেলোয়াড় প্রোফাইল Bangladesh টেস্ট ব্যাটিং গড় ১৯৭২-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার বাংলাদেশী ক্রিকেটার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটার বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্রিকেটার ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার খুলনা বিভাগের ক্রিকেটার কুষ্টিয়া জেলার ব্যক্তি খুলনা বিভাগ থেকে আগত ক্রিকেটার ঢাকা ওয়ারিয়র্সের ক্রিকেটার আইসিএল বাংলাদেশ একাদশের ক্রিকেটার মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ক্রিকেটার ব্রাদার্স ইউনিয়নের ক্রিকেটার
https://en.wikipedia.org/wiki/Habibul_Bashar
Habibul Bashar
Qazi Habibul Bashar (Bengali: কাজী হাবিবুল বাশার; born 17 August 1972) is a retired Bangladeshi cricketer and the former captain of the Bangladesh cricket team. Under the managership of Dav Whatmore, he has been found to be the most successful captain to lead the Bangladesh team to overcome several milestones. The first test victory of Bangladesh came under his hands in 2005 against Zimbabwe. Under Habibul Bashar's captaincy, Bangladesh have beaten Australia, India, South Africa and Sri Lanka in limited overs matches. Habibul Bashar is currently one of the chief selectors of BCB, along with Abdur Razzak and Minhajul Abedin.
2036
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%B2%E0%A7%8B%E0%A6%95%20%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF
অলোক কাপালি
অলোক কাপালি (জন্ম: জানুয়ারি ১, ১৯৮৪) একজন বাংলাদেশী সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার। তিনি একজন অলরাউন্ডার, যিনি ডানহাতি মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ও ডানহাতি লেগ ব্রেক বোলার। তিনি প্রথম বাংলাদেশি বোলার হিসেবে টেস্ট ও আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হ্যাটট্রিক করেন। তিনি ২০০২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে অংশ নেন। ২০০৮ সালে বিতর্কিত আইএসএল-এ অংশ নেওয়ার জন্য নিষিদ্ধ হয়েছিলেন। পুনরায় ফিরে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে ২০১২ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত বিভিন্ন দলের হয়ে খেলেছেন। ২০১৫ সালে তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলের হয়ে শিরোপা ও সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেন। আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি খেলার বাইরে ২০০৬-০৭ মৌসুম থেকে তিনি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছেন। ২০২২ সালে তিনি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। প্রারম্ভিক জীবন এবং পটভূমি অলোক কাপালি বাংলাদেশের সিলেটে একটি বাঙালি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারে ছয় ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তার বাবা তার নিজ শহর সিলেটে একটি হিন্দু মন্দিরে কাজ করতেন। আন্তর্জাতিক টেস্ট ২০০২ সালে কলম্বোতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কাপালির টেস্ট অভিষেক হয়। সেই ম্যাচে তিনি ব্যাট হাতে ৩৯ ও ২৩ রান করার পাশাপাশি ২ উইকেট শিকার করেন । তার পরের ১৬ টেস্টে তিনি আরও ৪টি উইকেট নেন। এর মধ্যে ২০০৩ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে পরপর তিন বলে শাব্বির রহমান, দীনেশ ক্যানেরিয়া ও উমর গুলকে আউট করে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হ্যাট-ট্রিক অর্জন করেন। ব্যাট হাতে কাপালি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চট্টগ্রামে তার সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেছেন। কাপালি বাংলাদেশের হয়ে তার ১৭টি টেস্ট ম্যাচের সবকটিতেই হেরেছেন। ২০০৬ সালের পর আর টেস্ট খেলার সুযোগ হয়নি। একদিনের আন্তর্জাতিক একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি দলের ভেতরে এবং বাইরে ছিলেন, বলের চেয়ে ব্যাট দিয়েই বেশি মুগ্ধ করেছেন। ২০০৮ সালের এশিয়া কাপের সময় ভারতের বিপক্ষে একটি ম্যাচে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের দ্বারা দ্রুততম (৮৬ বলে ) সেঞ্চুরি করেন। দুই বছর পর সাকিব আল হাসান তার এই রেকর্ড ভাঙ্গে। ২০০৬ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে করা খালেদ মাসুদের সাথে ৮৯ রানের বাংলাদেশী রেকর্ড ৭ম উইকেট জুটি গড়েন। জাতীয় দলের হয়ে সবশেষ ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলেছেন ২০১১ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেট কাপালি ২০০৬-০৭ সালের বাংলাদেশী জাতীয় ক্রিকেট লীগে সিলেটের হয়ে ৩টি সেঞ্চুরি করেছিলেন এবং ৭৪৪ রানের সাথে শেষ করেছিলেন। তিনি ২০১৬-১৭ জাতীয় ক্রিকেট লিগ প্রতিযোগিতার ফাইনাল ম্যাচে কেরিয়ার-সেরা ২০০ অপরাজিত ৫৯৮ রান সহ শীর্ষস্থানীয় রানকারী ছিলেন। ২০১৮ সালে, তিনি ২০১৭-১৮ বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগে মধ্যাঞ্চল ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে পূর্বাঞ্চলের হয়ে ব্যাটিং করে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে তার ২০তম সেঞ্চুরি করেন। ২০২২ সালের ২৯ আগস্ট তিনি প্রথম শ্রেনির ক্রিকেট থেকে অবসর নেন। আইসিএল ক্যারিয়ার ২০০৮ সালে, কাপালিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার জন্য ১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছিল কারণ তিনি অ-অনুমোদিত ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লীগে যোগ দিয়েছিলেন এবং ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে ঢাকা ওয়ারিয়র্সের হয়ে খেলেছিলেন । আইসিএলের দুই মৌসুমে হায়দরাবাদ হিরোসের বিপক্ষে ৬০ বলে ১০০ রানের মাধ্যমে প্রথম সেঞ্চুরি করেন। তিনি ৮ ম্যাচে ৫৪ গড়ে ৩২৪ রান করে লিগ পর্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে সমাপ্ত হন। তবে কাপালি জুন ২০০৯ সালে আইসিএল ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ এর পর আবারো বাংলাদেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। বিপিএল ক্যারিয়ার ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ৬টি দল নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের টুয়েন্টি২০ প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিসিবি প্রতীকি খেলোয়াড় হিসেবে তাকে সিলেট রয়্যালস দলে নির্বাচিত করে। ঐ প্রতিযোগিতার ৯ খেলায় তিনি সর্বমোট ১২৪ রান করেছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বেশ কয়েকটি বিপিএল দলের হয়েও খেলেন, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে ২০১৫-১৬ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনাল ম্যাচে তিনি সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের অক্টোবরে, ২০১৮-১৯ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের খসড়ার পর তাকে সিলেট সিক্সার্স দলে রাখা হয়েছিল। ২০১৯ সালের নভেম্বরে, তিনি ২০১৯-২০ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে রাজশাহী রয়্যালসের হয়ে খেলার জন্য নির্বাচিত হন। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশী ক্রিকেটার ১৯৮৪-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটার টেস্ট ক্রিকেটে হ্যাট্রিক লাভকারী বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার বাংলাদেশের টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সিলেট বিভাগের ক্রিকেটার সিলেট স্ট্রাইকার্সের ক্রিকেটার খুলনা টাইগার্সের ক্রিকেটার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ক্রিকেটার ব্রাদার্স ইউনিয়নের ক্রিকেটার লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের ক্রিকেটার গাজী গ্রুপের ক্রিকেটার প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের ক্রিকেটার আইসিএল বাংলাদেশ একাদশের ক্রিকেটার ঢাকা ওয়ারিয়র্সের ক্রিকেটার বাংলাদেশ পূর্বাঞ্চলের ক্রিকেটার ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার বাংলাদেশী হিন্দু সিলেট বিভাগ থেকে আগত ক্রিকেটার ফরচুন বরিশালের ক্রিকেটার
https://en.wikipedia.org/wiki/Alok_Kapali
Alok Kapali
Alok Kapali (Bengali: অলোক কাপালী; born 1 January 1984) is a Bangladeshi cricketer. He is an allrounder who bats in the middle to lower order and bowls leg spin. He was the first Bangladeshi to take a Test hat-trick.
2038
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A7%87%E0%A6%A6%20%E0%A6%93%E0%A6%AE%E0%A6%B0%20%E0%A6%AC%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AE
জাভেদ ওমর বেলিম
জাভেদ ওমর বেলিম(জন্ম: ২৫ নভেম্বর, ১৯৭৬) (ডাকনাম: গুল্লু) বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের একজন ক্রিকেটার। তার ডাক নাম গোল্লা। তিনি জাতীয় দলে মূলত ওপেনার হিসেবে খেলতেন। একজন দক্ষ ফিল্ডার হিসেবে তার সুনাম আছে। ওডিআই ক্রিকেটে বাংলাদেশ জাতীয় দলে তার স্থান পাওয়া নিয়ে অনেকের মনে দ্বিধা থাকলেও টেস্ট দলে ওপেনার হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা সবসময়ই ছিল। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ১৯৭৬-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশী ক্রিকেটার বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটার বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ২০শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটার ঢাকার ক্রিকেটার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ক্রিকেটার বরিশাল বিভাগের ক্রিকেটার
https://en.wikipedia.org/wiki/Javed_Omar
Javed Omar
Mohammad Javed Omar Belim (born 25 November 1976), known in the early days of his career by the nickname Gullu is a former Bangladeshi cricketer who has played Tests and ODI cricket since 1995, and a former captain in both formats. Jawed bid bye after a friendly domestic match on January 3, 2014.
2042
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B2%20%E0%A6%AE%E0%A6%A7%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A7%82%E0%A6%A6%E0%A6%A8%20%E0%A6%A6%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4
মাইকেল মধুসূদন দত্ত
মাইকেল মধুসূদন দত্ত (২৫ জানুয়ারি ১৮২৪ – ২৯ জুন ১৮৭৩) ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি এবং নাট্যকার ও প্রহসন রচয়িতা।হিন্দু কলেজে অধ্যয়নের সময়ে মধুসূদন প্রথম কাব্য চর্চা শুরু করেন তাকে বাংলার নবজাগরণ সাহিত্যের অন্যতম পুরোধা ব্যক্তিত্ব গণ্য করা হয়। ঐতিহ্যের অনুবর্তিতা অমান্য করে নব্যরীতি প্রবর্তনের কারণে তাকে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবেও অভিহিত করা হয়। তিনি বাংলা সনেটের জনক। ব্রিটিশ ভারতের(বর্তমান বাংলাদেশের) যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে জন্ম হলেও মধুসূদন যৌবনে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করে মাইকেল মধুসূদন নাম গ্রহণ করেন এবং পাশ্চাত্য সাহিত্যের দুর্নিবার আকর্ষণবশত ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। জীবনের দ্বিতীয় পর্বে মধুসূদন নিজ মাতৃভাষার প্রতি মনোযোগ দেন। এ পর্বে তিনি বাংলায় নাটক, প্রহসন ও কাব্যরচনা করেন। মাইকেল মধুসূদন বাংলা ভাষায় সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। মধুসূদনের ব্যক্তিগত জীবন ছিল নাটকীয় এবং বেদনাঘন। মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কলকাতায় এই মহাকবির মৃত্যু হয় এক শোকাবহ অবস্থার মধ্য দিয়ে। জীবন ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি বাংলা প্রেসিডেন্সির যশোর জেলার (অধুনা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার) সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু কায়স্থ পরিবারে মধুসূদন দত্তের জন্ম হয়। তিনি ছিলেন রাজনারায়ণ দত্ত ও তার প্রথমা পত্নী জাহ্নবী দেবীর একমাত্র সন্তান। রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালতের এক খ্যাতনামা উকিল। মধুসূদনের যখন তেরো বছর বয়স, সেই সময় থেকেই তাকে কলকাতায় বসবাস করতে হত। খিদিরপুর সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোডে (বর্তমানে কার্ল মার্কস সরণী) অঞ্চলে তিনি এক বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করেছিলেন। শিক্ষাজীবন মধুসূদনের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় তার মা জাহ্নবী দেবীর কাছে। জাহ্নবী দেবীই তাকে রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ প্রভৃতির সঙ্গে সুপরিচিত করে তোলেন। সাগরদাঁড়ির পাশের গ্রামের শেখপুরা মসজিদের ইমাম মুফতি লুৎফুল হকের কাছে তার প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয়। বিদ্বান ইমামের কাছে তিনি বাংলা, ফারসি ও আরবি পড়েছেন। সাগরদাঁড়িতেই মধুসূদনের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। তেরো বছর বয়সে মধুসূদন কলকাতায় আসেন। স্থানীয় একটি স্কুলে কিছুদিন পড়ার পর তিনি তদনীন্তন হিন্দু কলেজে (বর্তমানে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। মধুসূদন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তাই অচিরেই কলেজের অধ্যক্ষ ক্যাপ্টেন ডি. এল. রিচার্ডসনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। রিচার্ডসন মধুসূদনের মনে কাব্যপ্রীতি সঞ্চারিত করেছিলেন। হিন্দু কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ডিরোজিওর স্বদেশানুরাগের স্মৃতিও তাকে বিশেষ উদ্বুদ্ধ করত। এছাড়া কলেজে তার সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক, প্যারীচরণ সরকার প্রমুখ ঊনবিংশ শতাব্দীর বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। আঠারো বছর বয়সেই মহাকবি হওয়ার ও বিলাতে যাওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা তার মনে বদ্ধমূল হয়ে যায়। ১৮৪৩ সালে রেভারেন্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিকট মধুসূদন খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপর ওই বছরই ৮ ফেব্রুয়ারি মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামে এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। তাকে দীক্ষিত করেছিলেন পাদ্রী ডিলট্রি। তিনিই তার "মাইকেল" নামকরণ করেন। মধুসূদন পরিচিত হন "মাইকেল মধুসূদন দত্ত" নামে। তার এই ধর্মান্তর সমাজে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। রাজনারায়ণ দত্ত তার বিধর্মী পুত্রকে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণা করেন। খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর মধুসূদন শিবপুরের বিশপস কলেজে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এখানে তিনি গ্রিক, লাতিন, সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিক্ষা করেন। রাজনারায়ণ দত্ত তাকে পরিত্যাগ করলেও, বিশপস কলেজে পড়াশোনার ব্যয়ভার বহন করছিলেন। চার বছর পর তিনি টাকা পাঠানো বন্ধ করেন। বিশপস কলেজে কয়েকজন মাদ্রাজি ছাত্রের সঙ্গে মধুসূদনের বন্ধুত্ব হয়েছিল। বিশপস কলেজে অধ্যয়ন শেষ করে যখন কলকাতায় চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন মধুসূদন। তখন তার সেই মাদ্রাজি বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজে (অধুনা চেন্নাই) চলে যান মধুসূদন। কথিত আছে, আত্মীয়স্বজনের অজ্ঞাতসারে নিজের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করে সেই টাকায় মাদ্রাজ গিয়েছিলেন তিনি। কর্মজীবন মধুসূদন মাদ্রাজেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেন নি। স্থানীয় খ্রিষ্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় তিনি একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান। তবে বেতন যা পেতেন, তাতে তার ব্যয়সংকুলান হত না। এই সময় তাই তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লিখতে শুরু করেন। মাদ্রাজ ক্রনিকল পত্রিকায় ছদ্মনামে তার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে। হিন্দু ক্রনিকল নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছিলেন তিনি। কিন্তু অল্পকালের মধ্যেই অর্থাভাবে পত্রিকাটি বন্ধ করে দিতে হয়। পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্র্যের মধ্যেই তিনি দ্য ক্যাপটিভ লেডি তার প্রথম কাব্যটির রচনা করেন। কবি ও দক্ষ ইংরেজি লেখক হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে বিবাহ মাদ্রাজে আসার কিছুকাল পরেই মধুসূদন রেবেকা ম্যাকটিভিস নামে এক ইংরেজ যুবতীকে বিবাহ করেন। উভয়ের দাম্পত্যজীবন আট বছর স্থায়ী হয়েছিল। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন এমিলিয়া হেনরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। হেনরিয়েটা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন। এদিকে মাইকেল তার এক কপি দ্য ক্যাপটিভ লেডি বন্ধু গৌরদাস বসাককে উপহার পাঠালে, গৌরদাস সেটিকে জে ই ডি বেথুনের কাছে উপহার হিসেবে পাঠান। উক্ত গ্রন্থ পাঠ করে অভিভূত বেথুন মাইকেলকে চিঠি লিখে দেশে ফিরে আসতে এবং বাংলায় কাব্যরচনা করতে পরামর্শ দেন। ১৮৫৬ সালে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে আসেন। পত্নীকে সেই সময় তিনি সঙ্গে আনেন নি। ফ্রান্সে কবি ইংল্যান্ডে আইন বিষয়ে পড়ালেখা করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানের আবহাওয়া এবং বর্ণবাদিতার কারণে বেশি দিন ইংল্যান্ডে থাকেন নি। তারপর তিনি ১৮৬০ সালে ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা ছিল খুব খারাপ। একমাত্র ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর এর জন্য তিনি তার আইন বিষয়ে পড়া শেষ করে ভারতে আসতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কখনোই কলকাতায় তার এই লেখাপড়াকে কাজে লাগান নি, উপরন্তু দরিদ্রতার জন্য মৃত্যুবরণ করেন। সাহিত্য জীবন মধুসূদন দত্ত নাট্যকার হিসেবেই প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে পদার্পণ করেন। রামনারায়ণ তর্করত্ন বিরচিত 'রত্নাবলী' নাটকের ইংরেজি অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব বোধ করেন। এই অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়েই তিনি নাটক লেখায় আগ্রহী হয়েছিলেন। ১৮৫৯ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর রচিত‘শর্মিষ্ঠা' নাটকটি প্রথম প্রকাশিত হয়।১৮৫৯ সালে ৩রা সেপ্টেম্বর "শর্মিষ্ঠা" নাটক বেলগাছিয়া নাট্যশালায় মহাসমারোহে অভিনীত হয়। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন দুটি প্রহসন, যথা: 'একেই কি বলে সভ্যতা' এবং 'বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ' এবং পূর্ণাঙ্গ 'পদ্মাবতী'(১৮৬০) নাটক। পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন 'তিলোত্তমাসম্ভব' কাব্য। এরপর একে একে রচিত হয় 'মেঘনাদ বধ কাব্য' (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, 'ব্রজাঙ্গনা' কাব্য (১৮৬১), 'কৃষ্ণকুমারী' নাটক (১৮৬১), 'বীরাঙ্গনা' কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬), ১৮৭১ সালের শেষভাগে মহাকবি হোমারের " ইলিয়ড " মহাকাব্যের উপয়াখ্যাব ভাগ অবলম্বন করিয়া মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলায় "হেকটর বধ" প্রকাশ করেন। তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক), পদ্মাবতী (নাটক), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্য, চতুর্দশপদী কবিতাবলী, হেকটর বধ ইত্যাদি। সাহিত্য জীবনের অনুপ্রেরণা মধুসূদন দত্ত তাঁর সাহিত্য জীবনে বিশেষ করে ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের সাহিত্য কর্ম এবং তাঁর জীবন দ্বারা অত্যন্ত বেশি অনুপ্রাণিত হয়ে ছিলেন। তাঁর মহান সৃষ্টি মেঘনাদ বধ মহাকাব্য প্রকাশ এবং এটি পরিচিত করে তোলা যদিও খুব সহজ ছিল না, তারপরও তিনি নিজেকে মহাকাব্যটির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যে এক স্বতন্ত্রভাব প্রকাশ করেছিলেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি কাব্যে প্রথম হোমেরিক স্টাইলের লেখার প্রবর্তন করেন। তিনি এক সময় নিজেকে বলেছিলেন : "আমি এক সকালে উঠে নিজেকে সফল হিসেবে পাই নি, এই কাব্যের সফলতা বহু বছরের কঠিন পরিশ্রমের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে।" ভাষাগত দক্ষতা মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছিলেন বহু ভাষাবিদ। মাতৃভাষা ছাড়া তিনি আরো বারোটি ভাষা জানতেন। শিশু কালে গ্রামের টোল থেকে ফারসি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমে তার ভাষা শিক্ষার শুরু হয়। তিনি ইংরেজি ছাড়াও ল্যাটিন, গ্রিক, ফারসি, হিব্রু, তেলুগু, তামিল ইত্যাদি ভাষায় অনায়াসে কথা বলতে পারতেন। তিনি এমনকি ফারসি ও ইতালীয় ভাষায় কবিতাও লিখতে পারতেন। নাটক বাংলা নাটকে মাইকেল মধুসূদনের আবির্ভাব আকস্মিক। ১৮৫২ সালে তারাচরণ শিকদার, জে. সি. গুপ্ত ও রামনারায়ণ তর্করত্নের হাত ধরে বাংলায় শৌখিন রঙ্গমঞ্চে নাট্য মঞ্চায়ন শুরু হয়। এই সময় লেখা নাটকগুলির গুণগত মান খুব ভালো ছিল না। ১৮৫৮ সালে পাইকপাড়ার জমিদার ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ ও প্রতাপচন্দ্র সিংহের পৃষ্ঠপোষকতায় কলকাতার বেলগাছিয়া নাট্যমঞ্চে রামনারায়ণ তর্করত্নের রত্নাবলী নাটকটি অভিনীত হয়। শিল্পগুণবিবর্জিত এই সাধারণ নাটকটির জন্য জমিদারদের বিপুল অর্থব্যয় ও উৎসাহ দেখে মধুসূদনের শিক্ষিত মন ব্যথিত হয়ে ওঠে। এরপর তিনি নিজেই নাট্যরচনায় ব্রতী হন। রামনারায়ণ তর্করত্নের সংস্কৃত নাট্যশৈলীর প্রথা ভেঙে তিনি পাশ্চাত্য শৈলীর অনুসরণে প্রথম আধুনিক বাংলা নাটক রচনা করেন। মাইকেল মধুসূদনের নাট্যচর্চার কাল ও রচিত নাটকের সংখ্যা দুইই সীমিত। ১৮৫৯ থেকে ১৮৬১ - এই তিন বছর তিনি নাট্যচর্চা করেন। এই সময়ে তার রচিত নাটকগুলি হল : শর্মিষ্ঠা (১৮৫৯), একেই কি বলে সভ্যতা (১৮৬০), বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০), পদ্মাবতী (১৮৬০), কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১)। এছাড়া মৃত্যুর পূর্বে মায়াকানন (১৮৭৪) নামে একটি অসমাপ্ত নাটক। শর্মিষ্ঠা শর্মিষ্ঠা একটি পৌরাণিক নাটক। রচনাকাল ১৮৫৮। এটিই আধুনিক পাশ্চাত্য শৈলীতে রচিত প্রথম বাংলা নাটক। নাটকের আখ্যানবস্তু মহাভারতের আদিপর্বে বর্ণিত রাজা যযাতি, শর্মিষ্ঠা ও দেবযানীর ত্রিকোণ প্রেমের কাহিনী থেকে গৃহীত। অবশ্য পাশ্চাত্য নাট্যশৈলীতে লিখলেও, মাইকেল এই নাটকে সংস্কৃত শৈলীকে সম্পূর্ণ বর্জন করেন নি। এই নাটকের কাব্য ও অলংকার-বহুল দীর্ঘ সংলাপ, ঘটনার বর্ণনাত্মক রীতি, প্রবেশক, নটী, বিদুষক প্রভৃতির ব্যবহার সংস্কৃত শৈলীর অনুরূপ। আবার ইংরেজি সাহিত্যের রোম্যান্টিক ধারার প্রভাবও এই নাটকে স্পষ্ট। প্রথম রচনা হিসেবে ত্রুটিবিচ্যুতি থাকলেও, সেই যুগের ইংরেজি-শিক্ষিত পাঠকসমাজে এই নাটকটি খুবই সমাদৃত হয়। বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে সাফল্যের সঙ্গে নাটকটি অভিনীতও হয়। একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ শর্মিষ্ঠার পরে ১৮৬০ সালে মাইকেল রচনা করেন একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ নামে দুটি প্রহসন। এই প্রহসন দুটি তার দুটি শ্রেষ্ঠ নাট্যরচনা। প্রথম নাটকটির বিষয় ছিল ইংরেজি শিক্ষিত নব্য বাবু সম্প্রদায়ের উচ্ছৃঙ্খলতা ও দ্বিতীয়টির বিষয় ছিল সনাতনপন্থী সমাজপতিদের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন। এই নাটকে মাইকেলের পর্যবেক্ষণ শক্তি, সমাজবাস্তবতাবোধ ও কাহিনী, চরিত্র ও সংলাপ রচনায় কুশলতা বিশেষ প্রশংসা লাভ করে। কিন্তু নাটকের বিষয়বস্তু নব্য ও সনাতনপন্থী উভয় সমাজকেই বিক্ষুব্ধ করে তুলেছিল। তাই বেলগাছিয়া রঙ্গমঞ্চে নাটকটি অভিনীত হওয়ার কথা থাকলেও, শেষপর্যন্ত তা হয় নি। এতে মাইকেল খুবই হতাশ হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে প্রহসন রচনা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছিলেন। পদ্মাবতী ১৮৬০ সালেই মধুসূদন রচনা করেন পদ্মাবতী নাটকটি। এটিও পৌরাণিক নাটক। তবে এই নাটকের ভিত্তি পুরোপুরি ভারতীয় পুরাণ নয়। গ্রিক পুরাণের ‘অ্যাপেল অফ ডিসকর্ড’ গল্পটি ভারতীয় পুরাণের মোড়কে পরিবেশন করেছেন মধুসূদন। গ্রিক পুরাণের জুনো, প্যালাস ও ভেনাস এই নাটকে হয়েছেন শচী, মুরজা ও রতি। হেলেন ও প্যারিস হয়েছেন পদ্মাবতী ও ইন্দ্রনীল। তিন দেবীর মধ্যে রতিকে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী নির্বাচিত করলে অন্য দুই দেবী ইন্দ্রনীলের প্রতি রুষ্টা হন এবং ইন্দ্রনীলের জীবনে বিপর্যয় নামিয়ে আনেন। শেষে রতি ও ভগবতীর চেষ্টায় ইন্দ্রনীল উদ্ধার পান এবং বিচ্ছিন্না স্ত্রী পদ্মাবতীর সঙ্গে তার মিলন ঘটে। মূল গ্রিক উপাখ্যানটি বিয়োগান্তক হলেও, মাইকেল এই নাটকটিকে ইংরেজি ট্র্যাজি-কমেডির ধাঁচে করেছেন মিলনান্তক। এই নাটকে সংস্কৃত নাট্যরীতির প্রভাব অল্পই। প্লট-নির্মাণ, নাটকীয় দ্বন্দ্ব উপস্থাপনা ও চরিত্র চিত্রণে মাইকেল এখানে আগের থেকে পরিণত হয়েছেন। মায়াকানন কৃষ্ণকুমারী নাটক রচনার পর মাইকেল কাব্যরচনায় পুরোদমে মনোনিবেশ করেন। শেষ জীবনে মৃত্যুশয্যায় শুয়ে বেঙ্গল থিয়েটারের কর্ণধার শরচ্চন্দ্র ঘোষের অনুরোধে তিনি মায়াকানন নাটকটি রচনায় হাত দেন। নাটকটি তিনি শেষ করতে পারেন নি। করেছিলেন ভুবনচন্দ্র মুখোপাধ্যায়। এই নাটকটির শিল্পমূল্য বিশেষ নেই। মাইকেলের সৃষ্টিপ্রতিভার কোনো সাক্ষর এতে পাওয়া যায় না। মেঘনাদবধ কাব্য মধুসূদন দত্তের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হচ্ছে -- অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণ উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্যটি। চরিত্র-চিত্র হিসেবে রয়েছেন : রাবণ, ইন্দ্রজিৎ, সীতা, সরমা, প্রমীলা প্রমুখ। তিনি তার কাব্যকে নয়টি সর্গে বিভক্ত করেছেন এবং সংস্কৃত অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এতে নগর, বন, উপবন, শৈল, সমুদ্র, প্রভাত, সন্ধ্যা, যুদ্ধ, মন্ত্রণা প্রভৃতির সমাবেশও করেছেন। কিন্তু সর্গান্তে তিনি নতুন ছন্দ ব্যবহার করেন নি, সর্গশেষে পরবর্তী সর্গকথা আভাসিত করেন নি। যদিও তিনি বলেছিলেন, তবুও কাব্যে করুণ রসেরই জয় হয়েছে। মেঘনাদবধ কাব্য রামায়ণ-আহৃত কাহিনীর পুনরাবৃত্তি নয়—এটি নবজাগ্রত বাঙালির দৃষ্টি নিয়তি-লাঞ্ছিত নবমানবতাবোধের সকরুণ মহাকাব্যের রূপে অপূর্ব গীতি-কাব্য। মেঘনাদবধ কাব্য এ দিক দিয়ে বাংলা কাব্য সাহিত্যে একক সৃষ্টি। মধুসূদন অতি আশ্চর্য্যজনক ভাবে নির্মাণ-কুশলতা গুণে মহাকাব্যোচিত কাব্য-বিগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। এ কাব্যের তাৎপর্য রাবণ-চরিত্রের প্রতীকতায়। তার সৃষ্ট রাবণ চরিত্রে পরম দাম্ভিকতা প্রকট হয়ে উঠে নি। রামায়ণকে তিনি তার মানবতার আলোকে বিধৌত করে যে মহাকাব্য রচনা করেছেন, তা আসলে রোমান্টিক মহাকাব্য। এ কারণে আকারে 'মেঘনাদবধ কাব্য' মহাকাব্যোচিত হলেও, এর প্রাণ-নন্দিনী সম্পূর্ণ রোমান্টিক এবং মধুসূদন এ কাব্যে জীবনের যে জয়গান করেছেন, তা বীররসের নয়, কারুণ্যের। কবি তাই, রবীন্দ্রনাথের ভাষায়, বীরাঙ্গনা পত্রকাব্য (১৮৬২) বাংলা সাহিত্যে পত্রাকার কাব্যরচনা প্রথম দেখা যায় বীরাঙ্গনা কাব্যে। ১৮৬২ সালে এই গ্রন্থ রচিত ও প্রকাশিত হয়। দুষ্মন্তের প্রতি শকুন্তলা, সোমের প্রতি তারা, দ্বারকনাথের প্রতি রুক্মিণী, দশরথের প্রতি কৈকয়ী, লক্ষ্মণের প্রতি সূপর্ণখা, অর্জুনের প্রতি দ্রৌপদী, দুর্যোধনের প্রতি ভানুমতী, জয়দ্রথের প্রতি দুঃশলা, শান্তনুর প্রতি জাহ্নবী, পুরুবার প্রতি উর্বশী, নীলধ্বজের প্রতি জনা— এই ১১টি পত্ররূপী কবিতা নিয়ে কাব্যগ্রন্থটি রচিত। মধুসূদন তার কাব্যে এই নারীদের পুরাণ-পরিচিতির মূলে আঘাত করেছেন। তিনি মানবিক অনুভূতির আলোকে নারী-হৃদয়ের কথকতায় ব্যক্ত করিয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবন দাম্পত্য জীবন মাদ্রাজে গিয়ে প্রতিষ্ঠা লাভের চেয়েও কবি যে বিশেষ কাজটি করেছিলেন তা হচ্ছে এক শ্বেতাঙ্গিনীকে বিয়ে করা। মাদ্রাজে অবস্থানকালীন সময়ে তিনি রেবেকা ম্যাকটাভিশ নামক এক ইংরেজ যুবতীকে বিয়ে করেন। অরফান আস্যাইলাম স্কুলে পড়াতে শুরু করার পরই পরিচয় হয় তার ভাবী স্ত্রী রেবেকার সাথে। বিয়ের এই প্রক্রিয়াটি অবশ্য খুব সহজ ছিল না। তার বন্ধু গৌরি দাশকে লিখেছিলেন""রেবেকাকে পেতে খুব ঝামেলা হয়েছিল, বুঝতেই তো পারছো তার(রেবেকা) সমস্ত শুভাকাঙ্ক্ষী এই বিয়ের বিরুদ্ধে ছিল"" তাদের বিয়ে সম্পাদন হয় ৩১ জুলাই ১৮৪৮ সালে। বিদেশে গিয়ে রোগ ভোগ করা, চাকরি জোটানো তারপর এই বিদেশিনীকে বিয়ে করা এই সবই হয়েছিল মাদ্রাজ পৌঁছানোর ছ' মাসের ভিতরে। কিন্তু তাদের এই দাম্পত্য জীবন বেশি দিন স্থায়ী ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন বিয়ের পর তার প্রাণের রেবেকাকে সাথে নিয়ে সুখী হবেন। কিন্তু সুখ জিনিসটা বিধাতা হয়ত তার কপালে লিখেন নি। সংসারের নানা ঝঞ্ঝাট, গোলমাল দেখা দিল। মাইকেলের একগুয়েমির কারণে স্ত্রীর মতের সাথে অমিল হতে লাগল। এর ফলে তিনি কয়েক বছরের মধ্যেই রেবেকার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করেন। রেবেকার গর্ভে মধুসূদনের দুই পুত্র ও দুই কন্যার জন্ম হয়। মাদ্রাজ জীবনের শেষ পর্বে রেবেকার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হওয়ার অল্পকাল পরে মধুসূদন মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের কোনো এক শিক্ষকের কন্যা হেনিরিয়েটা সোফিয়া নামে এক ফরাসি তরুণীকে বিবাহ করেন। হেনিরিয়েটাও সর্বগুণ সম্পন্ন রুচিমার্জিত মেয়ে ছিলেন। হেনিরিয়েটা মধুসূদনের সারাজীবনের সঙ্গিনী ছিলেন। তাদের নেপোলিয়ান নামক এক ছেলে এবং শর্মিষ্ঠা নামক এক মেয়ে ছিল। তার বংশধরদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিখ্যাত টেনিস খেলোয়াড় লিয়েন্ডার পেজ। মৃত্যু মধুসূদনের শেষ জীবন চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। আইন ব্যবসায়ে তিনি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারেন নি। তাছাড়া অমিতব্যয়ী স্বভাবের জন্য তিনি ঋণগ্রস্তও হয়ে পড়েন। ১৮৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে কপর্দকহীন (অর্থাভাবে) অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং তাকে কলকাতার সার্কুলার রোডে সমাধি দেওয়া হয়। মহাকবি জীবনের অন্তিম পর্যায়ে জন্মভূমির প্রতি তার সুগভীর ভালোবাসার চিহ্ন রেখে গেছেন অবিস্মরণীয় পংক্তিমালায়। তার সমাধিস্থলে নিচের কবিতাটি লেখা রয়েছে : সাহিত্যকর্ম বাংলা রচনা নাটক ও প্রহসন শর্মিষ্ঠা নাটক (১৮৫৯) একেই কি বলে সভ্যতা? (১৮৬০) বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০) পদ্মাবতী নাটক (১৮৬০) কৃষ্ণকুমারী নাটক (১৮৬১) মায়া-কানন (১৮৭৪) কাব্য / কাব্যের ধরন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০) :-আখ্যান কাব্য মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১):- মহাকাব্য ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১) :-গীতিকাব্য বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) :-পএকাব্য চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৫) :-সনেট জাতীয় কাব্য অনুবাদ গ্রন্থ হেক্‌টর-বধ (১৮৭১) ইংরেজি রচনা কাব্য কালেক্টেড পোয়েমস দি অপ্সরি: আ স্টোরি ফ্রম হিন্দু মিথোলজি দ্য ক্যাপটিভ লেডি ভিশনস অফ দ্য পাস্ট কাব্যনাট্য রিজিয়া: ইমপ্রেস অফ ইন্ডে অনুবাদ নাটক রত্নাবলী শর্মিষ্ঠা নীল দর্পণ অর দি ইন্ডিগো প্ল্যান্টিং মিরর প্রবন্ধ সাহিত্য দি অ্যাংলো-স্যাক্সন অ্যান্ড দ্য হিন্দু অন পোয়েট্রি এটসেট্রা অ্যান এসে অন্যান্য রচনা আ সাইনপসিস অফ দ্য রুক্মিণী হরণ নাটক তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বীরাঙ্গনা কাব্য ব্রজাঙ্গনা কাব্য তিলোত্তমা সম্ভব কাব্য ১৮২৪-এ জন্ম পূর্ববঙ্গে জন্ম ১৮৭৩-এ মৃত্যু বাঙালি কবি বাঙালি পুরুষ কবি বাঙালি লেখক সনেট রচয়িতা বাংলাদেশী কবি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত ভারতীয় পুরুষ কবি যশোর জেলার ব্যক্তি কলকাতার লেখক বাঙালি খ্রিস্টান বাংলা ভাষার কবি পশ্চিমবঙ্গের কবি বাংলা ভাষার লেখক বাঙালি জাতীয়তাবাদী হিন্দুধর্ম থেকে খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি
https://en.wikipedia.org/wiki/Michael_Madhusudan_Dutt
Michael Madhusudan Dutt
Michael Madhusudan Dutt (; 25 January 1824 – 29 June 1873) was a Bengali poet and playwright. He is considered one of the pioneers of Bengali literature.
2043
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%AC
জয়দেব
কবি জয়দেব গোস্বামী সংস্কৃত সাহিত্যের একজন মধ্যযুগীয় অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি। তিনি গীতগোবিন্দ কাব্যের রচয়িতা। সংস্কৃত কাব্য গীতগোবিন্দের অত্যন্ত ব্যাপক ও গভীর প্রভাব রয়েছে। বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির সূচনা জয়দেবের গীতগোবিন্দের পদাবলি থেকেই বলে ধারণা করা হয়।ভক্তি বিজয়ের রচয়িতা সন্ত মহীপতির মতে জয়দেব হলেন বেদব্যাসের অবতার। কবি জয়দেবের জন্ম ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বীরভূমের কেন্দুবিল্ব বা কেঁদুলি গ্রামে। তার নামে সেখানে প্রতি বছর মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বেশ কিছু মন্দির ও আশ্রম পরিবেষ্টিত এই গ্রামটি একটি ধর্মীয় তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর মকর সংক্রান্তি উপলক্ষে এই স্থানে বাউল মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।এই গ্রামে জয়দেব দ্বারা প্রতিষ্ঠিত রাধামাধবের মূর্তির পুজো করা হয়ে থাকে এবং যে আসনে বসে তিনি সিদ্ধিলাভ করেছিলেন বলে মনে করা হয়, তা সংরক্ষণ করা রয়েছে।এই গ্রামের যুগলকিশোর মুখোপাধ্যায় বর্ধমান রাজদরবারের সভাকবি ছিলেন। মনে করা হয়ে থাকে, তার অনুরোধে বর্ধমানের মহারাণী ব্রজকিশোরী ১৬৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এই গ্রামে জয়দেবের জন্মভিটেয় রাধাবিনোদ মন্দির স্থাপন করেন। ১৮৬০-এর দশকে নির্বাক বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের রাধারমণ ব্রজবাসী এই গ্রামে তাদের কুলগুরু জয়দেবের জন্মভিটেয় নির্বাক আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে রাধাবল্লভ মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়। তার পিতার নাম ভোজদেব গোস্বামী ও মাতার নাম রামাদেবী।বাংলা,উড়িষ্যা ও দাক্ষিণাত্যর সংস্কৃৃতিতে জয়দেবের প্রভাব অনস্বীকার্য৷ জয়দেব ছিলেন লক্ষ্মণসেনের (১১৭৮-১২০৬) রাজসভার পঞ্চরত্নের অন্যতম; অপর চারজন হলেন গোবর্ধন আচার্য, শরণ, ধোয়ী ও উমাপতিধর। লক্ষ্মণসেনের সভায় সেকশুভোদয়ায় একটি গল্প আছে লক্ষ্মণসেনের সভায় জয়দেবের আগমন নিয়ে। একদিন লক্ষ্ণণসেনের সভায় এক বিখ্যাত সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদ এসে নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে জাহির করলেন। রাজা তার দাবি স্বীকার করে নিয়ে জয়পত্র লিখে দিতে চাইলেন। খবর পেয়ে জয়দেব পত্নী পদ্মাবতী রাজসভায় এসে অনুরোধ করলেন তার স্বামীর সাথে না প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে যেন তাকে জয়পত্র না দেওয়া হয়। রাজা সভায় জয়দেবকে আনলেন। তথাকথিত সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদের গানে গাছের সব পাতা ঝরে গেল। সবাই সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদকে ধন্য ধন্য করতে লাগল। জয়দেব বললেন এ আর এমন কী! গাছে আবার পাতা গজিয়ে দেখাও। সঙ্গীতনিপুণ কলাবিদ অপারগতা প্রকাশ করলেন। তখন জয়দেব গান ধরলেন, আর সাথে সাথে গাছের পাতা গজিয়ে উঠল। সকলে জয়দেবের শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করল। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ উড়িষ্যার সংস্কৃত পণ্ডিত এনসাইক্লোপিয়া ব্রিটানিকায় জয়দেব ভারতীয় কবি সংস্কৃত কবি বাঙালি লেখক ১২শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি ভারতীয় পুরুষ কবি হিন্দু কবি জগন্নাথ ভক্ত ভক্তি আন্দোলন
https://en.wikipedia.org/wiki/Jayadeva
Jayadeva
Jayadeva (pronounced [dʑɐjɐˈdeːʋɐ]; born c. 1170 CE), also spelt Jaideva, was a Sanskrit poet during the 12th century. He is most known for his epic poem Gita Govinda which concentrates on Krishna's love with the gopi, Radha, in a rite of spring. This poem, which presents the view that Radha is greater than Krishna, is considered an important text in the Bhakti movement of Hinduism. Little is known of his life, except that he was a loner poet and a Hindu mendicant celebrated for his poetic genius in eastern India. Jayadeva is the earliest dated author of hymns that are included the Guru Granth Sahib, the primary scripture of Sikhism – a religion founded in the Indian subcontinent centuries after his death.
2044
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%88%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%20%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত
ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত (৬ মার্চ ১৮১২ - ২৩ জানুয়ারি ১৮৫৯) ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি কবি, সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। তিনি সংবাদ প্রভাকর (বা 'সম্বাদ প্রভাকর') এর সম্পাদক। কিন্তু ব্যাপকার্থে তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর একজন কবি ও সাহিত্যিক। তাঁর হাত ধরেই বাংলা কবিতা জগৎ মধ্যযুগীয় সীমানা অতিক্রম করে আধুনিকতার পথে পা বাড়িয়েছিল। তিনি "গুপ্ত কবি" নামেও পরিচিত ছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সহ তাঁর পরবর্তী বহু সাহিত্যিক ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে 'গুরু'পদে বরণ করেন। এছাড়া নানাবিধ পত্র-পত্রিকা সম্পাদনার কাজেও তিনি নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন। জন্ম এবং পারিবারিক পরিচিতি তাঁর জন্ম উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার কাঞ্চনপল্লী (বর্তমানে কাঁচড়াপাড়া) গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত বৈদ্য পরিবারে, যা বর্তমান পশ্চিমবঙ্গে অবস্থিত। তাঁর প্রপিতামহ নিধিরাম দাশগুপ্ত ছিলেন নামকরা কবিরাজ এবং তার পিতা হরিনারায়ণ দাশগুপ্ত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক ছিলেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল শ্রীমতি। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত তাঁর পারিবারিক পদবী দাশগুপ্ত পরিবর্তন করে গুপ্ত করেছিলেন। তাঁর বয়স যখন দশ তখন তার মা পরলোকগমন করেন। পিতা ২য় বিয়ে করলে এর পর থেকে তিনি কোলকাতার জোড়াসাঁকোতে মামার বাড়িতে বাস করতে শুরু করেন। মাত্র ১৫ বৎসর বয়সে তার বিয়ে হয় গৌরহরি মল্লিকের কন্যা দুর্গামণি দেবী রেবার সঙ্গে। শিক্ষা জীবন তাঁর যখন মাত্র দশ বছর বয়স, তখন হঠাৎই তাঁর জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। অকালেই প্রয়াণ ঘটে মা শ্রীমতী দেবীর। মাতৃবিয়োগের পর ঈশ্বরচন্দ্রকে কলকাতায় চলে আসতে হয়। আশ্রয় নেন জোড়াসাঁকোয় মামারবাড়িতে। শৈশবকালে লেখাপড়ার প্রতি অমনোযোগিতার কারণে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশিদূর না অগ্রসর না হলেও, অসাধারণ মেধা ও স্মৃতিশক্তির জোরে ঈশ্বরচন্দ্র নিজ চেষ্টায় বাংলা,সংস্কৃত ও ইংরেজি ভাষা শেখেন এবং বেদান্তদর্শনে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেন। কর্ম জীবন সংস্কৃত কলেজের অধ্যাপক প্রেমচন্দ্র তর্কবাগীশের প্রেরণায় এবং বন্ধু যোগেন্দ্রমোহন ঠাকুরের আনুকূল্যে ১৮৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকার সম্পাদনায় নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৮৩২ খ্রিষ্টাব্দে তিনি তিনি সংবাদ রত্নাবলী পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেন। সংবাদ প্রভাকর ছিল একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা,কিছু দিন বন্ধ থাকার পর পত্রিকাটি ১৮৩৬ সালে পুনরায় চালু হয়। তিনি এটিকে দৈনিকে রূপান্তর করেন ১৮৩৯ খ্রিষ্টাব্দে। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দে সাপ্তাহিক পাষণ্ড পত্রিকার সঙ্গে সম্পাদক হিসাবে সংযুক্ত। পরবতী বৎসর তিনি সংবাদ সাধুরঞ্জন পত্রিকার দায়িত্বভার পালন করেন। তিনি গ্রাম গ্রামে ঘুরে বেড়াতেন এবং কবিগান বাঁধতেন। প্রায় বারো বৎসর গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে তিনি প্রাচীন কবিদের তথ্য সংগ্রহ ক'রে জীবনী রচনা করেছেন। সাংবাদিক অধ্যায় আধুনিক বাংলার সমাজ গঠনে সংবাদ প্রভাকরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ঈশ্বরচন্দ্র প্রথমে নব্যবঙ্গ আন্দোলনের বিরুদ্ধে রক্ষণশীলদের পক্ষভুক্ত ছিলেন। তিনি হিন্দু কলেজের শিক্ষাপদ্ধতিরও বিরোধিতা করেছিলেন। কিন্তু নবপর্যায়ে সংবাদ প্রভাকর সম্পাদনার সময় থেকে তার মনোভাবের পরিবর্তন হতে থাকে। তিনি দেশের প্রগতিশীল ভাবধারার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। হিন্দু থিয়ফিলানথ্রফিক সভা এবং তত্ত্ববোধিনী সভায় তিনি বক্তৃতাও করতেন। প্রথম দিকে তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বিধবাবিবাহ আন্দোলনের বিরোধিতা করে এ বিষয়ে নানা ব্যঙ্গ কবিতা রচনা করলেও পরে স্ত্রীশিক্ষার সমর্থন, ধর্মসভার বিরোধিতা, দেশের বৈজ্ঞানিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়ন প্রচেষ্টা এবং দরিদ্র জনগণের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের মাধ্যমে উদার মনোভাবের পরিচয় দেন। এমনকি তিনি অক্ষতযোনি বিধবার বিবাহেও আর আপত্তি করেননি। সাহিত্যিক জীবন ঈশ্বরচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে যুগসন্ধির কবি হিসেবে পরিচিত, কারণ তিনি সমকালের সামাজিক ও ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে কবিতা রচনা করলেও তার ভাষা, ছন্দ ও অলঙ্কার ছিল মধ্যযুগীয়। মঙ্গলকাব্যের শ্রেষ্ঠ কবি ভারতচন্দ্রের সাহিত্যাদর্শ যখন লুপ্ত হয়ে আসছিল, তখন তিনি বিভিন্ন বিষয় অবলম্বনে খন্ডকবিতা রচনার আদর্শ প্রবর্তন করেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপই ছিল তার রচনার বিশেষত্ব। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের এ ভঙ্গি তিনি আয়ত্ত করেছিলেন কবিয়ালদের নিকট থেকে। ব্যঙ্গের মাধ্যমে অনেক গুরু বিষয়ও তিনি সহজভাবে প্রকাশ করতেন। স্বদেশ ও স্বসমাজের প্রতি ঈশ্বরচন্দ্রের অনুরাগ ছিল অত্যন্ত নিবিড়। তিনি বাংলা ভাষার উন্নয়নের জন্য যে আন্দোলন করেছেন তা আজ স্মরণীয় হয়ে আছে। তিনি সবসময় ইংরেজি প্রভাব বর্জিত খাঁটি বাংলা শব্দ ব্যবহার করতেন। ভাষা ও ছন্দের ওপর তার বিস্ময়কর অধিকারের প্রমাণ পাওয়া যায় তার বোধেন্দুবিকাশ (১৮৬৩) নাটকে। ঈশ্বরচন্দ্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো ভারতচন্দ্র রায়, রামপ্রসাদ সেন, নিধুগুপ্ত, হরু ঠাকুর ও কয়েকজন কবিয়ালের লুপ্তপ্রায় জীবনী উদ্ধার করে প্রকাশ করা। পরবর্তীকালের বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, দীনবন্ধু মিত্র, রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ লেখকের জন্য একটি উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরি করার কৃতিত্বও তার। যদিও ঈশ্বরচন্দ্রের কাব্যরীতি পরবর্তীকালের বাংলা সাহিত্যে আর অনুসৃত হয়নি, তথাপি এ কথা স্বীকার্য যে, ভবিষ্যৎ বাংলা সাহিত্যের জন্য তার গঠনমূলক চিন্তাভাবনা ও আদর্শ এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সাহিত্যকীর্তি বাংলা সাহিত্যে তার চিরস্থায়ী আসনলাভ সম্ভব হয়েছে কারণ একদিকে মধ্যযুগের দেবমাহাত্ম্য ব্যঞ্জক বিষয় থেকে বাংলা কবিতাকে মুক্ত করে তিনি যেমন অনায়াসে 'পাঁঠা', 'আনারস', 'তোপসে মাছ' ইত্যাদি বিষয় অবলম্বনে কবিতা লেখেন; তার কবিতায় উঠে আসে সমসাময়িক রাজনইতিক,সামাজিক ঘটনাবলির চিত্ররূপ তার নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে। তৎকালীন কবিওয়ালা দের জিম্মা থেকে বাংলা কবিতাকে তিনি নাগরিক বৈদগ্ধ ও মার্জিত রুচির আলোয় নিয়ে আসেন। সাংবাদিক রূপেও ঊনবিংশ শতকের এই আধুনিক মানুষটি যথাযোগ্য কৃতিত্বের সাক্ষর রেখেছেন।সাহিত্য অঙ্গনে তার আবির্ভাব মধ্যযুগের শেষ ও আধুনিক যুগের শুরুর পর্যায়ে । বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাকে "খাঁটি বাঙালি কবি" বলে অবহিত করেছেন । তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ রামপ্রসাদ সেন কৃত কালীকীর্তন(১৮৩৩), কবিবর ভারতচন্দ্র রায় ও তার জীবনবৃত্তান্ত(১৮৫৫), বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত কাব্যসংগ্রহ(১৮৯২) । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তাহার স্থান অসাধারণ। যমক যমক (একই বর্ণসমষ্টি একাধিকবার একাধিক অর্থে প্রয়োগ করা) ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের একটি প্রিয় কাব্যকৌশল। কতগুলো নমুনাঃ ১। অতনু শাসনে তনু তনু অণুদিন (১ম তনু= দেহ, ২য় তনু= কৃশ) ২। ভাবে নাহি ভাবি ভাবি (১ম ভাবি= ভাবনা করি, ২য় ভাবি= ভবিষ্যৎ) ৩। আনা দরে আনা যায় কত আনারস (১ম আনা= টাকার ১/১৬ অংশ, ২য় আনা= আনয়ন করা) ৪। প্রকাশিয়া প্রভাকর শুভ দিন দিন (১ম দিন= দিবস, ২য় দিন= প্রদান করুন) ৫। মিথ্যার কাননে কভু ভ্রমে নাহি ভ্রমে (১ম ভ্রমে= ভুলে, ২য় ভ্রমে= ভ্রমণ করে) ৬। দুহিতা আনিয়া যদি না দেহ, নিশ্চয় আমি ত্যাজিব দেহ (১ম দেহ= প্রদান কর, ২য় দেহ= শরীর) ৭। ওরে ভণ্ড হাতে দণ্ড এ কেমন রোগ। দণ্ডে দণ্ডে নিজ দণ্ডে দণ্ড কর ভোগ।। (অর্থঃ দণ্ডে দণ্ডে= সময়ে সময়ে, নিজ দণ্ডে= নিজের ডাণ্ডায়, দণ্ড= শাস্তি) ৮। কয় মাস খাও মাস উদর ভরিয়া। (অর্থঃ ১ম মাস= ৩০ দিন, ২য় মাস= মাংস) ৯। চিত্রকরে চিত্র করে করে তুলি তুলি। (অর্থঃ চিত্রকরে = চিত্রকর+ ৭মী বিভক্তি। চিত্র করে = ছবি আঁকে। করে= হাতে। ১ম তুলি = উত্তোলন করে, ২য় তুলি= আঁকার কাঠি) ১০। সেতার অনেক আছে, সে তার ত নাই। (অর্থঃ সেতার= বাদ্যযন্ত্রবিশেষ, সে তার= সেই তন্ত্র) ১১। তানপুরা আছে মাত্র, তান পুরা নাই। (অর্থঃ তানপুরা= বাদ্যযন্ত্রবিশেষ, তান পুরা= সম্পূর্ণ তান) তথ্যসূত্র বহি:সংযোগ বাংলাপিডিয়া ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত হায় আমি কি করিলাম বাঙালি কবি ১৮১২-এ জন্ম ১৮৫৯-এ মৃত্যু বাঙালি লেখক ১৯শ শতাব্দীর কবি ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি বাঙালি পুরুষ কবি বাংলা ভাষার কবি বাংলা ভাষার লেখক হিন্দু কবি উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যক্তি পশ্চিমবঙ্গের লেখক
https://en.wikipedia.org/wiki/Ishwar_Chandra_Gupta
Ishwar Chandra Gupta
Ishwar Chandra Gupta (Bengali: ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত; 6 March 1812 – 23 January 1859) was a Bengali poet and writer. Gupta was born in Kanchrapara, in Bengal.
2045
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%99%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%AE%E0%A6%9A%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%20%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় (২৬ জুন ১৮৩৮ – ৮ এপ্রিল ১৮৯৪) ছিলেন উনিশ শতকের বিশিষ্ট বাঙালি ঔপন্যাসিক। বাংলা গদ্য ও উপন্যাসের বিকাশে তাঁর অসীম অবদানের জন্যে তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমরত্ব লাভ করেছেন। তাঁকে সাধারণত প্রথম আধুনিক বাংলা ঔপন্যাসিক হিসেবে গণ্য করা হয়। তবে গীতার ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে, সাহিত্য সমালোচক হিসেবেও তিনি বিশেষ খ্যাতিমান। তিনি জীবিকাসূত্রে ব্রিটিশ রাজের কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বাংলা ভাষার আদি সাহিত্যপত্র বঙ্গদর্শনের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। তিনি ছদ্মনাম হিসেবে কমলাকান্ত নামটি বেছে নিয়েছিলেন। তাঁকে বাংলা উপন‍্যাসের জনক বলা হয়। এছাড়াও তিনি বাংলা সাহিত্যের সাহিত্য সম্রাট হিসেবে পরিচিত। বঙ্কিমচন্দ্র রচিত আনন্দমঠ (১৮৮২) উপন্যাসের কবিতা বন্দে মাতরম ১৯৩৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস কর্তৃক ভারতের জাতীয় স্তোত্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। জীবনী জন্ম ও বংশপরিচয় বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয় বর্তমান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার নৈহাটি শহরের নিকটস্থ কাঁঠালপাড়া গ্রামে। তারিখ ২৬ জুন, ১৮৩৮। চট্টোপাধ্যায়দের আদিনিবাস ছিল হুগলি জেলার দেশমুখো গ্রামে। বঙ্কিমচন্দ্রের পূর্বপুরুষ রামজীবন চট্টোপাধ্যায় কাঁঠালপাড়ার রঘুদেব ঘোষালের কন্যাকে বিবাহ করেন৷ রামজীবনের পুত্র তথা বঙ্কিমচন্দ্রের প্রপিতামহ রামহরি চট্টোপাধ্যায় মাতামহের সম্পত্তি পেয়ে কাঁঠালপাড়ায় আসেন এবং সেখানেই বসবাস শুরু করেন। রামহরির পৌত্র যাদবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের তৃতীয় পুত্র বঙ্কিমচন্দ্র,মাতা দুর্গাসুন্দরী দেবী,বঙ্কিমের পূর্বে তার আরও দুই পুত্রের জন্ম হয় – শ্যামাচরণ ও সঞ্জীবচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বঙ্কিমের জন্মকালে তিনি সদ্য অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার ডেপুটি কালেক্টর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। শিক্ষা জন্মের পর ছয় বছর বঙ্কিমচন্দ্র কাঁঠালপাড়াতেই অতিবাহিত করেন। পাঁচ বছর বয়সে কুল-পুরোহিত বিশ্বম্ভর ভট্টাচার্যের কাছে বঙ্কিমচন্দ্রের হাতেখড়ি হয়। শিশু বয়সেই তার অসামান্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায়। বঙ্কিমের কনিষ্ঠ সহোদর পূর্ণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, “শুনিয়াছি বঙ্কিমচন্দ্র একদিনে বাংলা বর্ণমালা আয়ত্ত করিয়াছিলেন।” যদিও গ্রামের পাঠশালায় বঙ্কিম কোনওদিনই যান নি। পাঠশালার গুরুমশাই রামপ্রাণ সরকার বাড়িতে তার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত হন। বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা থেকে মনে হয় তিনি রামপ্রাণের শিক্ষা থেকে বিশেষ উপকৃত হন নি। তিনি লিখেছেন, “সৌভাগ্যক্রমে আমরা আট দশ মাসে এই মহাত্মার হস্ত হইতে মুক্তিলাভ করিয়া মেদিনীপুর গেলাম।” ১৮৪৪ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পিতার কর্মস্থল মেদিনীপুরে আনীত হলে, সেখানেই তাঁর প্রকৃত শিক্ষার সূচনা হয়। মেদিনীপুরের ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জনৈক এফ টিডের পরামর্শে যাদবচন্দ্র শিশু বঙ্কিমকে তার স্কুলে ভর্তি করে দেন। এখানেও বঙ্কিম অল্পকালের মধ্যেই নিজ কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হন। পূর্ণচন্দ্রের রচনা থেকে জানা যায়, বার্ষিক পরীক্ষার ফলে সন্তুষ্ট হয়ে টিড সাহেব বঙ্কিমকে ডবল প্রমোশন দিতে উদ্যত হলে যাদবচন্দ্রের হস্তক্ষেপে তিনি নিরস্ত হন। ১৮৪৭ সালে টিড ঢাকায় বদলি হয়ে গেলে সিনক্লেয়ার তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন; তাঁর কাছেও বঙ্কিম প্রায় দেড় বছর ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৮৪৯ সালে বঙ্কিমচন্দ্র পুনরায় কাঁঠালপাড়ায় ফিরে আসেন। এইসময় কাঁঠালপাড়ার শ্রীরাম ন্যায়বাগীশের কাছে বঙ্কিম বাংলা ও সংস্কৃতের পাঠ নেন। বঙ্কিমচন্দ্র খুব ভালো আবৃত্তিকারও ছিলেন। সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জন নামক সংবাদপত্রে প্রকাশিত বহু কবিতা তিনি এই বয়সেই কণ্ঠস্থ করে ফেলেন। ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর বিরচিত বিদ্যাসুন্দর কাব্য থেকে বিদ্যার রূপবর্ণন ও জয়দেব প্রণীত গীতগোবিন্দম্ কাব্য থেকে ধীরে সমীরে যমুনাতীরে কবিতাদুটি তিনি প্রায়শই আবৃত্তি করতেন। এছাড়াও পণ্ডিত হলধর তর্কচূড়ামণির কাছে এই সময় তিনি মহাভারত শ্রবণ করতেন। হলধরই তাকে শিক্ষা দেন - “শ্রীকৃষ্ণ আদর্শ পুরুষ ও আদর্শ চরিত্র”। এই শিক্ষা তার পরবর্তী জীবনে রচিত নানা রচনাতে প্রতিফলিত হয়েছিল। কিছুকাল পরে ১৮৪৯ সালে হুগলি কলেজে (অধুনা হুগলী মহসিন কলেজ) ভর্তি হন। এখানে তিনি সাত বছর পড়াশোনা করেন। হুগলি কলেজ পড়াকালীন ১৮৫৩ সালে জুনিয়র স্কলারশিপ পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে মাসিক আট টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরেই সংবাদ প্রভাকরে কবিতা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে কুড়ি টাকা পুরস্কার লাভ করেন। হুগলি কলেজ অধ্যয়নকালেই বঙ্কিমচন্দ্র কবিবর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সংবাদ প্রভাকর ও সংবাদ সাধুরঞ্জনে গদ্য-পদ্য রচনা আরম্ভ করেন। পরবর্তীকালে তার বহু রচনা এই দুই কাগজে প্রকাশিত হয়। হুগলি কলেজ ১৮৫৬ সালে সিনিয়র বৃত্তি পরীক্ষায় সব বিষয়ে বিশেষ কৃতিত্ব প্রদর্শন করে তিনি দুই বছরের জন্য কুড়ি টাকা বৃত্তি লাভ করেন। এই বছরই তিনি হুগলি কলেজ ছেড়ে আইন পড়বার জন্য কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। ১৮৫৭ সালে জানুয়ারী মাসে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এন্ট্রান্স বা প্রবেশিকা পরীক্ষা প্রবর্তন করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের আইন বিভাগ থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দিয়ে বঙ্কিমচন্দ্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। পরের বছর ১৮৫৯ সালে প্রথমবারের মতো বি.এ. পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট দশজন ছাত্র প্রথমবারে পরীক্ষা দিয়েছিলেন। উত্তীর্ণ হয়েছিলেন কেবলমাত্র বঙ্কিমচন্দ্র ও যদুনাথ বসু। তার বাবার মতো তিনিও সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্‌টার পদে। সারা জীবন তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যান। স্বীকৃতি স্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে দুটি খেতাবে ভূষিত করে - ১৮৯১ সালে রায় বাহাদুর খেতাব এবং ১৮৯৪ সালে কম্প্যানিয়ন অফ দ্য মোস্ট এমিনেন্ট অর্ডার অফ দ্য ইন্ডিয়ান এম্পায়ার খেতাব। তবে সরকারি কর্মকর্তা নয় বরং লেখক এবং বাঙলা তথা ভারতের নবজাগরণের অন‍্যতম মুখ হিসেবেই তিনি অধিক প্রখ্যাত। বিবাহ বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম বিয়ে হয় ১৮৪৯ সালে। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র ১১ বছর। নারায়নপুর গ্রামের এক পঞ্চমবর্ষীয়া বালিকার সাথে তার বিয়ে হয়। কিন্তু চাকুরি জীবনের শুরুতে যশোর অবস্থান কালে ১৮৫৯ সালে এ পত্নীর মৃত্যু হয়। অতঃপর ১৮৬০ সালের জুন মাসে হালি শহরের বিখ্যাত চৌধুরী বংশের কন্যা রাজলক্ষী দেবীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কর্মজীবন তার কর্মজীবনের সংক্ষেপিত তালিকা: যশোর - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - যোগদানের তারিখ: ১৮৫৮, ৭ আগস্ট নেগুয়া (মেদিনীপুর) - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - যোগদানের সাল: ১৮৬০, ৯ ফেব্রুয়ারি খুলনা - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - যোগদানের সাল: ১৮৬০, ৯ নভেম্বর বারুইপুর (২৪ পরগনা) - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - যোগদানের সাল: ১৮৬৪, ৫ মার্চ মুর্শিদাবাদ - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - উচ্চতর কার্যভার গ্রহণের তারিখ: ১৮৬৯, ১৫ ডিসেম্বর। মুর্শিদাবাদ - কালেক্টর - পদোন্নতির তারিখ: ১৮৭১, ১০ জুন। কলিকাতা - বেঙ্গল গভর্নমেন্টের অ্যাসিটেন্ট সেক্রেটারি - যোগদানের তারিখ: ১৮৮১, ৪ সেপ্টেম্বর। আলিপুর - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - ১৮৮২, ২৬ জানুয়ারি। জাজপুর (কটক) - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - ১৮৮৩, ৮ আগস্ট। হাওড়া - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - ১৮৮৩, ১৪ ফেব্রুয়ারি। ঝিনাইদহ - ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও ডেপুটি কালেক্টর - ১৮৮৫, ১ জুলাই। অবসর গ্রহণের তারিখ: ১৮৯১, ১৪ সেপ্টেম্বর। মৃত্যু শেষ জীবনে তার স্বাস্থ্য ততটা ভালো ছিল না। ১৮৯৪ সালের মার্চ মাসে তার বহুমূত্র রোগ বেশ বেড়ে যায়। এই রোগেই অবশেষে তার মৃত্যু হয়, এপ্রিল ৮, ১৮৯৪ (বাংলা ২৬ চৈত্র ১৩০০ সাল)। সাহিত্যে অবদান বাংলা ভাষার প্রথম সার্থক ঔপন্যাসিক ছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। দুর্গেশনন্দিনী ছিলো প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস যেটা বাংলা সাহিত্যের দ্বার উন্মোচন করেছিলো। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মোট ১৫টি উপন্যাস লিখেছিলেন এবং এর মধ্যে একটি ইংরেজি ভাষার উপন্যাস ছিলো। বঙ্কিমচন্দ্রই বাংলা ভাষাকে প্রথম সত্যিকারের মর্যাদা দিয়েছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট আসলে উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে। তৎকালীন সময়ের প্রথা ও সংস্কার আন্দোলন, হিন্দু ধর্মের পুনরুত্থান, হিন্দু ধর্মের রক্ষণশীলতা, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য ভাবধারার সংঘাত, প্রগতিশীল ভাবধারার অভাব, সমাজতান্ত্রিক ভাবধারার প্রাধান্য প্রভৃতি হল উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে আর্থসামাজিক পটভূমিকা এবং এই পটভূমিকাই বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস রচনার প্রেক্ষাপট। তার রচনা 'বঙ্কিমী শৈলী' বা 'বঙ্কিমী রীতি' নামে পরিচিত। গ্রন্থ তালিকা তথ্যসূত্র ১৫. সাহিত্যপাঠ, পৃষ্ঠা নং- ১৫ (জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে একাদশ-দ্বাদশ ও আলিম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকরূপে নির্ধারিত) আরও দেখুন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সাহিত্য কর্ম বঙ্কিম পুরস্কার ১৮৩৮-এ জন্ম ১৮৯৪-এ মৃত্যু বাঙালি ঔপন্যাসিক বাঙালি সাংবাদিক বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ভারতীয় বিচারপতি ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি ঔপন্যাসিক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী হুগলী মহসিন কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যক্তি ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক বাঙালি হিন্দু বাঙালি লেখক নব্য-বেদান্ত বাংলা ভাষার লেখক ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি ভারতীয় বেসামরিক কর্মচারী ভারতীয় গীতিকার ভারতীয় সাহিত্য সমালোচক ভারতীয় ম্যাগাজিন সম্পাদক ভারতীয় সংবাদপত্র সম্পাদক কলকাতার লেখক ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি ১৯শ শতাব্দীর ভারতীয় সাংবাদিক
https://en.wikipedia.org/wiki/Bankim_Chandra_Chatterjee
Bankim Chandra Chatterjee
Bankim Chandra Chattopadhyay (anglicized as Chatterjee) (26 or 27 June 1838 – 8 April 1894) was an Indian novelist, poet, essayist and journalist. He was the author of the 1882 Bengali language novel Anandamath, which is one of the landmarks of modern Bengali and Indian literature. He was the composer of Vande Mataram, written in highly Sanskritised Bengali, personifying India as a mother goddess and inspiring activists during the Indian Independence Movement. Chattopadhayay wrote fourteen novels and many serious, serio-comic, satirical, scientific and critical treatises in Bengali. He is known as Sahitya Samrat (Emperor of Literature) in Bengali.
2047
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A7%80%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%20%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B6
জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক৷ তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের মধ্যে অন্যতম৷ তাঁর কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে৷ জীবনানন্দের প্রথম কাব্যে নজরুল ইসলামের প্রভাব থাকলেও দ্বিতীয় কাব্য থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন মৌলিক ও ভিন্ন পথের অনুসন্ধানী। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তাঁর জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন৷ গ্রামবাংলার ঐতিহ্যময় নিসর্গ ও রূপকথা-পুরাণের জগৎ জীবনানন্দের কাব্যে হয়ে উঠেছে চিত্ররূপময়, তাতে তিনি ‘রূপসী বাংলার কবি’ অভিধায় খ্যাত হয়েছেন৷ বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷ অন্যদিকে, অন্নদাশঙ্কর রায় তাঁকে ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। সমালোচকদের অনেকে তাঁকে রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল-পরবর্তী বাংলা সাহিত্যের প্রধান কবি বলে মনে করেন। জীবনানন্দের বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থ নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনে পুরস্কৃত (১৯৫৩) হয়৷ ১৯৫৫ সালে শ্রেষ্ঠ কবিতা গ্রন্থটি ভারত সরকারের সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দ দাশের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে রূপসী বাংলা, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, বেলা অবেলা কালবেলা, শ্রেষ্ঠ কবিতা ইত্যাদি৷ জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন৷ তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি৷ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন৷ বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তাঁর প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে৷ জন্ম ও শৈশব জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির (বর্তমানে বাংলাদেশ) অন্তর্গত বরিশাল শহরে জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর পূর্বপুরুষগণ বাংলাদেশের ঢাকা জেলার বিক্রমপুর (বর্তমান মুন্সীগঞ্জ) পরগণার কুমারভোগ নামক স্থানে “গাওপারা” গ্রামের নিবাসী ছিলেন যা পদ্মায় বর্তমানে বিলীন হয়ে গেছে৷ স্থানটি মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায় অবস্থিত৷ তার পিতামহ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৩৮-৮৫) বিক্রমপুর থেকে বরিশালে স্থানান্তরিত হন৷ সর্বানন্দ দাশগুপ্ত জন্মসূত্রে হিন্দু ছিলেন; পরে ব্রাহ্মধর্মে দীক্ষা নেন৷ তিনি বরিশালে ব্রাহ্ম সমাজ আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেন এবং তার মানবহিতৈষী কাজের জন্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হন৷ জীবনানন্দের পিতা সত্যানন্দ দাশগুপ্ত সর্বানন্দের দ্বিতীয় পুত্র৷ সত্যানন্দ দাশগুপ্ত (১৮৬৩-১৯৪২) ছিলেন বরিশাল ব্রজমোহন স্কুলের শিক্ষক, প্রাবন্ধিক, বরিশাল ব্রাহ্ম সমাজের সম্পাদক এবং ব্রাহ্মসমাজের মুখপত্র ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক৷ জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন গৃহিণী, কিন্তু তিনি কবিতা লিখতেন৷ তার সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণির পাঠ্য৷ জীবনানন্দ ছিলেন পিতামাতার জ্যেষ্ঠ সন্তান; তার ডাকনাম ছিল মিলু৷ তার ভাই অশোকানন্দ দাশ ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দে এবং বোন সুচরিতা দাশ ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন৷ পিতা কম বয়সে স্কুলে ভর্তি হওয়ার বিরোধী ছিলেন বলে, বাড়িতে মায়ের কাছেই জীবনানন্দের বাল্যশিক্ষার সূত্রপাত৷ ভোরে ঘুম থেকে উঠেই পিতার কণ্ঠে উপনিষদ আবৃত্তি ও মায়ের গান শুনতেন৷ লাজুক স্বভাবের হলেও মিলুর খেলাধুলা, বাগান করা, ভ্রমণ ও সাঁতারের অভ্যাস ছিল৷ ছেলেবেলায় মামার সঙ্গে বহু জায়গায় বেড়িয়েছেন৷ শৈশবে একবার কঠিন অসুখে পড়েন৷ স্বাস্থ্য উদ্ধারের জন্যে মাতা ও মাতামহ হাসির গানের কবি চন্দ্রনাথের সঙ্গে লক্ষ্মৌ, আগ্রা, দিল্লী প্রভৃতি স্থান ভ্রমণ করেন৷ জন্মসূত্রে তাঁর পদবি "দাশগুপ্ত" হলেও তিরিশের দশকের শুরুতে জীবনানন্দ "গুপ্ত" বর্জন করে কেবল দাশ লেখা শুরু করেন৷ শিক্ষাজীবন ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারিতে আট বছরের জীবনানন্দকে ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়৷ বিদ্যালয়ে থাকাকালীন তার বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় রচনার সূচনা হয়৷ এছাড়া সে সময়ে তার ছবি আঁকার দিকেও ঝোঁক ছিল৷ ১৯১৫ খ্রিষ্টাব্দে ব্রজমোহন বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ দু‘বছর পর ব্রজমোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্বের ফলাফলের পুনরাবৃত্তি ঘটান; অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার উদ্দেশ্যে বরিশাল ত্যাগ করেন৷ ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্স সহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন৷ ওই বছরেই ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম কবিতা ছাপা হয়৷ কবিতার নাম ছিল বর্ষ আবাহন৷ ওতে কবির নাম ছাপা হয়নি, কেবল সম্মানসূচক শ্রী কথাটি লেখা ছিল৷ তবে পত্রিকার বর্ষশেষের নির্ঘণ্টসূচিতে তার পূর্ণ নাম ছাপা হয়: শ্রীজীবনানন্দ দাস, বিএ৷ ১৯২১ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে এম. এ. ডিগ্রি লাভ করেন৷ তবে পরীক্ষার ঠিক আগেই তিনি রক্ত আমাশয় রোগে আক্রান্ত হন, যা তার প্রস্তুতি বাধাগ্রস্ত করে৷ সে সময়ে তিনি হ্যারিসন রোডের প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ে থাকতেন৷ এরপর তিনি আইন বিষয়ে পড়া শুরু করেন, কিন্তু অচিরেই তা পরিত্যাগ করেন৷ ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ কলকাতার সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে অধ্যাপনা শুরু করেন৷ সাহিত্যচর্চা ও জীবনসংগ্রাম যৌবনের প্রারম্ভেই জীবনানন্দের কবিপ্রতিভা বিকশিত হতে শুরু করে৷ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২৫ এর জুনে মৃত্যুবরণ করলে জীবনানন্দ তাঁর স্মরণে 'দেশবন্ধুর প্রয়াণে' নামক একটি ব্রাহ্মবাদী কবিতা রচনা করেন, যা বঙ্গবাণী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়৷ কবিতাটি পরবর্তীতে তাঁর প্রথম কাব্য-সংকলন ঝরা পালকে স্থান করে নেয়৷ কবিতাটি পড়ে কবি কালিদাস রায় মন্তব্য করেছিলেন, “এ ব্রাহ্মবাদী কবিতাটি নিশ্চয়ই কোনো প্রতিষ্ঠিত কবির ছদ্মনামে রচনা”৷ ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দেই তাঁর প্রথম প্রবন্ধ স্বর্গীয় কালীমোহন দাশের শ্রাদ্ধবাসরে প্রবন্ধটি ব্রাহ্মবাদী পত্রিকার পরপর তিনটি সংখ্যায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়৷ ওই বছরেই কল্লোল পত্রিকায় ‘নীলিমা’ কবিতাটি প্রকাশিত হলে তা অনেক তরুণ কাব্যরসিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ ধীরে ধীরে কলকাতা, ঢাকা এবং অন্যান্য জায়গার বিভিন্ন সাহিত্যপত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হতে থাকে; যেগুলোর মধ্যে ছিল সে সময়কার সুবিখ্যাত পত্রিকা কল্লোল, কালিকলম, প্রগতি প্রভৃতি৷ ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়৷ সে সময় থেকেই তিনি তাঁর পারিবারিক উপাধি ‘দাশগুপ্তের’ বদলে কেবল ‘দাশ’ লিখতে শুরু করেন৷ প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের কয়েক মাসের মাথাতেই তিনি সিটি কলেজে তাঁর চাকরিটি হারান৷ ধর্মীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে কলেজটিতে ছাত্র অসন্তোষ দেখা দেয়, ফলাফলস্বরূপ কলেজটির ছাত্রভর্তির হার আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়৷ জীবনানন্দ ছিলেন কলেজটির শিক্ষকদের মধ্যে কনিষ্ঠতম; আর্থিক সমস্যাগ্রস্ত কলেজ প্রথমে তাঁকেই চাকরিচ্যুত করে৷ এই চাকরিচ্যুতি দীর্ঘকাল জীবনানন্দের মনোবেদনার কারণ ছিল৷ কলকাতার সাহিত্যচক্রেও সে সময় তার কবিতা কঠিন সমালোচনার মুখোমুখি হয়৷ সে সময়কার প্রখ্যাত সাহিত্য-সমালোচক কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস শনিবারের চিঠি পত্রিকায় তাঁর রচনার নির্দয় সমালোচনায় প্রবৃত্ত হন৷ কলকাতায় করবার মতো কোনো কাজ ছিল না বলে কবি ছোট্ট শহর বাগেরহাটের প্রফুল্ল চন্দ্র কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন৷ তবে মাত্র দুই মাস কুড়ি দিন পরেই তিনি কলকাতায় প্রত্যাবর্তন করেন৷ এ সময় তিনি প্রেসিডেন্সি বোর্ডিংয়ে থাকতেন৷ চাকরি না থাকায় এ সময় তিনি চরম আর্থিক দুর্দশায় পড়ে গিয়েছিলেন৷ জীবনধারণের জন্যে তিনি গৃহশিক্ষকরূপে কাজ করতেন, এবং লেখালেখি থেকে সামান্য কিছু রোজগার হতো৷ সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরির সন্ধান করছিলেন। ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বরে তিনি দিল্লির রামযশ কলেজে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এখানেও তাঁর চাকরির মেয়াদ মাত্র চার মাস৷ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে তারিখে তিনি লাবণ্য দেবীর সঙ্গে বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হন৷ বিয়ে হয়েছিল ঢাকা শহরে, পুরান ঢাকায় সদরঘাট সংলগ্ন ব্রাহ্ম সমাজের রামমোহন লাইব্রেরিতে। লাবণ্য গুপ্ত সে সময় ঢাকার ইডেন কলেজ লেখাপড়া করছিলেন। জীবনানন্দ দাশের বিয়েতে কবি বুদ্ধদেব বসু, অজিতকুমার দত্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বিয়ের পর আর তিনি দিল্লিতে ফিরে যাননি। এরপর প্রায় বছর পাঁচ-এক সময় জীবনানন্দ কর্মহীন অবস্থায় ছিলেন। মাঝে কিছু দিন একটি বীমা কোম্পানির অ্যাজেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন; ছোটো ভাইয়ের কাছ থেকে অর্থ ধার করে ব্যবসা করেছেন; কিন্তু কোনোটাই স্থায়ী হয়নি। এ সময় তার পিতা জীবিত এবং জীবনান্দের স্ত্রী বরিশালেই ছিলেন বলে জীবনানন্দের বেকারত্ব পারিবারিক দুরবস্থার কারণ হয়নি। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে কবির প্রথম সন্তান মঞ্জুশ্রীর জন্ম হয়। প্রায় সে সময়েই তার ক্যাম্পে কবিতাটি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত সম্পাদিত পরিচয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তা কলকাতার সাহিত্যসমাজে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়। কবিতাটির আপাত বিষয়বস্তু ছিল জোছনা রাতে হরিণ শিকার। অনেকেই এই কবিতাটি পাঠ করে তা অশ্লীল হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি তাঁর বেকারত্ব, সংগ্রাম ও হতাশার এই সময়কালে বেশ কিছু ছোটোগল্প ও উপন্যাস রচনা করেছিলেন;- তবে তার জীবদ্দশায় সেগুলো প্রকাশ করেননি। ১৯৩৪ খ্রিষ্টাব্দে তিনি একগুচ্ছ গীতিকবিতা রচনা করেন যা পরবর্তীকালে তাঁর রূপসী বাংলা কাব্যের প্রধান অংশ নির্মাণ করে। এ কবিতাগুলিও জীবনানন্দ প্রকাশ করেননি। ১৯৫৪-তে তাঁর মৃত্যুর পর কবিতাগুলো একত্র করে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশের ব্যবস্থা করেন তাঁর বোন সুচরিতা দাশ এবং ময়ুখ পত্রিকা খ্যাত কবি ভূমেন্দ্র গুহ। বরিশালে প্রত্যাবর্তন ১৯৩৫ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ তাঁর পুরোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ব্রজমোহন কলেজে ফিরে যান, যা তখন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ছিল। তিনি সেখানকার ইংরেজি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটি আনকোরা নতুন কবিতাপত্রিকা বের করার তোড়জোড় করছিলেন, যার নাম দেয়া হয় কবিতা। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতেই জীবনানন্দের একটি কবিতা স্থান করে নেয়, যার নাম ছিল 'মৃত্যুর আগে'। কবিতাটি পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেবকে লেখা একটি চিঠিতে কবিতাটিকে 'চিত্ররূপময়' বলে মন্তব্য করেন। কবিতা পত্রিকার দ্বিতীয় সংখ্যাতে (পৌষ ১৩৪২ সংখ্যা; ডিসে ১৯৩৪/জানু ১৯৩৫) তাঁর কিংবদন্তিসম বনলতা সেন কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এই আঠারো লাইনের কবিতাটি বর্তমানে বাংলা ভাষার সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতার প্রধান একটি হিসেবে বিবেচিত। পরের বছর জীবনানন্দের দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপি প্রকাশিত হয়। জীবনানন্দ এর মধ্যেই বরিশালে সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছিলেন। ১৯৩৬-এর নভেম্বরে তার পুত্র সমরানন্দের জন্ম হয়। ১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথ একটি কবিতা সংকলন সম্পাদনা করেন, যার নাম ছিল বাংলা কাব্য পরিচয় এবং এতে জীবনানন্দের মৃত্যুর আগে কবিতাটি স্থান পায়। ১৯৩৯ সালে আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয় আবু সয়ীদ আইয়ুব ও হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায়; এতে জীবনানন্দের চারটি কবিতা - পাখিরা, শকুন, বনলতা সেন এবং নগ্ন নির্জন হাত অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৪২ সালে কবির পিতৃবিয়োগ হয় এবং ওই বছরেই তাঁর তৃতীয় কবিতাগ্রন্থ বনলতা সেন প্রকাশিত হয়। বইটি বুদ্ধদেব বসুর কবিতা ভবন হতে 'এক পয়সায় একটি' সিরিজের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হয় এবং এর পৃষ্ঠাসংখ্যা ছিল ষোলো। বুদ্ধদেব বসু ছিলেন জীবনানন্দের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং তাঁর সম্পাদিত কবিতা পত্রিকায় জীবনানন্দের বহু কবিতা ছাপা হয়। ১৯৪৪ সালে তাঁর চতুর্থ কাব্যগ্রন্থ মহাপৃথিবী প্রকাশিত হয়। এর আগের তিনটি কাব্যগ্রন্থ তাঁকে নিজের পয়সায় প্রকাশ করতে হয়েছিল, তবে মহাপৃথিবীর জন্যে তিনি প্রকাশক পান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে প্রকাশিত এই কবিতাগুচ্ছে যুদ্ধের ছাপ স্পষ্ট। চাকরির প্রয়োজনে বরিশালে প্রত্যাবর্তন করলেও কলকাতা জীবনানন্দকে খুব টানতো। কলকাতার সুবিস্তৃত পরিসর তিনি উপভোগ করতেন। তিনি সর্বদাই কলকাতায় অভিবাসনের কথা ভাবতেন। সুযোগ পেলেই স্টিমারে বরিশাল থেকে খুলনা তারপর ট্রেনে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় পাড়ি জমাতেন। পুনরায় কলকাতা গমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠে। জিন্নাহর নেতৃত্বে মুসলিম নেতৃবৃন্দ মুসলমানদের জন্যে পৃথক রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানান। এর ফলে বাংলা দ্বিখণ্ডিত হওয়া অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, কারণ এর পূর্ব অংশ ছিল মুসলমান সংখ্যাপ্রধান আর পশ্চিমাংশে হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগুরু। ১৯৪৭ এর দেশভাগ পূর্ববর্তী ওই সময়টিতে বাংলায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিভৎসরূপে দেখা দেয়। জীবনানন্দ সব সময়ই সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতির সপক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কলকাতায় যখন ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে আবার হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে কবি তখন লেখেন ১৯৪৬-৪৭ কবিতাটি। দেশবিভাগের কিছু আগে তিনি বি.এম. কলেজ থেকে ছুটি নিয়ে কলকাতায় এসেছিলেন। ছুটি বাড়িয়ে কলকাতায় দীর্ঘ কয়েক মাস অবস্থান করেছেন। এরপর পূর্ববঙ্গে এসেছেন কিন্তু তা ছিল সাময়িক। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের কিছু পূর্বে সপরিবারে বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করেন এবং কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। কলকাতায় তিনি দৈনিক স্বরাজ পত্রিকার রোববারের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনা করেন। কিন্তু এই চাকুরির স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র সাতমাস। কাজী নজরুল ইসলাম বিষয়ক একটি গদ্য রচনা মালিক পক্ষের মনঃপুত না-হওয়ায় এই চাকুরিচ্যূতি। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি আরও দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন - মাল্যবান ও সুতীর্থ, তবে আগেরগুলোর মতো এ দুটিও অপ্রকাশিত রেখেছেন। এ বছরের ডিসেম্বরে তাঁর পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ সাতটি তারার তিমির প্রকাশিত হয়। একই মাসে কলকাতায় তাঁর মাতা কুসুমকুমারী দাশের জীবনাবসান ঘটে। ইতোমধ্যেই জীবনানন্দ কলকাতার সাহিত্যিক সমাজে নিজস্ব একটি অবস্থান তৈরি করে নেন। তিনি 'সমকালীন সাহিত্যকেন্দ্র' নামে একটি সংস্থার সহসভাপতি নির্বাচিত হন এবং এই সংস্থার মুখপত্র দ্বন্দ্ব পত্রিকার অন্যতম সম্পাদক নিযুক্ত হন। মাঝে তিনি কিছুকাল খড়গপুর কলেজে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে তাঁর জনপ্রিয় কবিতার বই বনলতা সেন সিগনেট প্রেস কর্তৃক পরিবর্ধিত আকারে প্রকাশিত হয়। বইটি পাঠকানুকূল্য লাভ করে এবং নিখিল বঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন-কর্তৃক ঘোষিত "রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার" জয় করে। মৃত্যুর কিছু পূর্বে হাওড়া গার্লস কলেজ-এ অধ্যাপনার চাকুরি জুটে গেলে তাঁর কলকাতা জীবনের অপরিসীম দৈন্যদশার সুরাহা হয়। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারত সরকারের সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন। কর্মজীবন অধ্যাপনার কাজে তাঁর কর্মজীবনের সূচনা ও সমাপ্তি। এমএ পাসের পর কলকাতায় কলেজের বোর্ডিংয়ে থাকার প্রয়োজন হলে তিনি আইন পড়া শুরু করেন। এ সময় তিনি ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে কলকাতার ব্রাহ্মসমাজ পরিচালিত সিটি কলেজে টিউটর হিসেবে শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯২৮ সালে সরস্বতী পূজা নিয়ে গোলযোগ শুরু হলে অন্যান্য কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তাঁকেও ছাঁটাই করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। জীবনের শেষভাগে কিছুদিনের জন্য কলকাতার একটি দৈনিক পত্রিকা স্বরাজ-এর সাহিত্য বিভাগের সম্পাদনায় নিযুক্ত ছিলেন। অধ্যাপনা করেছেন বর্তমান বাংলাদেশ ও ভারতের অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, যার মধ্যে আছে সিটি কলেজ, কলকাতা (১৯২২-১৯২৮), বাগেরহাট কলেজ, খুলনা (১৯২৯); রামযশ কলেজ, দিল্লী (১৯৩০-১৯৩১), ব্রজমোহন কলেজ, বরিশাল (১৯৩৫-১৯৪৮), খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২), বড়িশা কলেজ (অধুনা 'বিবেকানন্দ কলেজ', কলকাতা) (১৯৫৩) এবং হাওড়া গার্লস কলেজ, কলকাতা (১৯৫৩-১৯৫৪) তাঁর কর্মজীবন আদৌ মসৃণ ছিল না। চাকরি তথা সুস্থির জীবিকার অভাব তাকে আমৃত্যু কষ্ট দিয়েছে। একটি চাকুরির জন্য হন্যে হয়ে তিনি দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। স্ত্রী লাবণ্য দাশ স্কুলে শিক্ষকতা করে জীবিকার অভাব কিছুটা পুষিয়েছেন। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে অকাল মৃত্যুর সময় তিনি হাওড়া গার্লস কলেজ কর্মরত ছিলেন। দুই দফা দীর্ঘ বেকার জীবনে তিনি ইন্সুরেন্স কোম্পানির এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন এবং প্রধানত গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালিয়েছেন। এছাড়া ব্যবসায়ের চেষ্টাও করেছিলেন বছরখানেক। দারিদ্র্য এবং অনটন ছিল তাঁর কর্মজীবনের ছায়াসঙ্গী। ব্যক্তিগত জীবন জীবনানন্দ দাশ ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দের ৯ মে (বঙ্গাব্দ ১৩৩৭, ২৬ বৈশাখ) ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ মন্দিরে রোহিণীকুমার গুপ্তের কন্যা লাবণ্য গুপ্তকে বিয়ে করেন। তাঁর কন্যা মঞ্জুশ্রী দাশ এবং পুত্র সমরানন্দ দাশ। অভিনয়শিল্পী অপর্ণা সেন সম্পর্কে তাঁর ভাগ্নি হন। অপর্ণার মা সুপ্রিয়া দাশগুপ্ত ছিলেন সম্পর্কে খুড়তুতো বোন। অপর্ণা সেনরা কবিকে ‘বিলু মামা’ বলে ডাকতেন। অপর্ণার বাবা-মা তাঁকে বংশের বড়ো বলে ‘বড়ো দা’ বলে ডাকতেন। সাহিত্যিক জীবন সম্ভবত মা কুসুমকুমারী দাশের প্রভাবেই ছেলেবেলায় পদ্য লিখতে শুরু করেন তিনি। ১৯১৯ সালে তাঁর লেখা একটি কবিতা প্রকাশিত হয়। এটিই তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা। কবিতাটির নাম বর্ষা আবাহন। এটি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার ১৩২৬ সনের বৈশাখ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। তখন তিনি তাঁর নাম লেখতেন ‘শ্রী জীবনানন্দ দাশগুপ্ত’। ১৯২৭ সাল থেকে তিনি জীবনানন্দ দাশ নামে লেখতে শুরু করেন। ১৬ জুন ১৯২৫ দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ-এর লোকান্তর হলে তিনি 'দেশবন্ধুর প্রয়াণে' শিরোনামে একটি কবিতা লিখেছিলেন যা বংগবাণী পত্রিকার ১৩৩২ সনের শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়। তবে দীনেশরঞ্জন দাস সম্পাদিত কল্লোল পত্রিকায় ১৩৩২ (১৯২৬ খ্রি.) ফাল্গুন সংখ্যায় তার নীলিমা শীর্ষক কবিতাটি প্রকাশিত হলে আধুনিক বাংলা কবিতার ভুবনে তার অন্নপ্রাশন হয়। জীবদ্দশায় তার ৭টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। প্রথম প্রকাশিত ঝরাপালক শীর্ষক কাব্যগ্রন্থে তার প্রকৃত কবিত্বশক্তি ফুটে ওঠেনি, বরং এতে কবি কাজী নজরুল ইসলাম, মোহিতলাল মজুমদার ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের প্রকট প্রভাব প্রত্যক্ষ হয়। তবে দ্রুত তিনি স্বকীয়তা অর্জন করেছিলেন। দীর্ঘ ব্যবধানে প্রকাশিত দ্বিতীয় কাব্য সংকলন ধূসর পাণ্ডুলিপি-তে তার স্বকীয় কাব্য কৌশল পরিস্ফুট হয়ে ওঠে। বাংলা সাহিত্যের ভূবনে তার বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে। শেষের দিককার কবিতায় অর্থনির্মলতার অভাব ছিল। সাতটি তারার তিমির প্রকাশিত হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে দুবোর্ধ্যতার অভিযোগ ওঠে। নিজ কবিতার অবমূল্যায়ন নিয়ে জীবনানন্দ খুব ভাবিত ছিলেন। তিনি নিজেই স্বীয় রচনার অর্থায়ন করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিলেন যদিও শেষাবধি তা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তবে কবি নিজেই নিজ রচনার কড়া সমালোচক ছিলেন। তাই সাড়ে আটশত কবিতার বেশি কবিতা লিখলেও তিনি জীবদ্দশায় মাত্র ২৬২টি কবিতা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও কাব্যসংকলনে প্রকাশ করতে দিয়েছিলেন। এমনকি, রূপসী বাংলার সম্পূর্ণ প্রস্তুত পাণ্ডুলিপি তোরঙ্গে মজুদ থাকলেও তা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি জীবনানন্দ দাশ। তবে তিনি এ কাব্যগ্রন্থটির নাম দিয়েছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা যা তার মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয় এবং রূপসী বাংলা প্রচ্ছদনামে প্রকাশিত হয়। আরেকটি পাণ্ডুলিপি আবিষ্কৃত হয় মৃত্যু পরবর্তীকালে যা বেলা অবেলা কালবেলা নামে প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় তার একমাত্র পরিচয় ছিল কবি। অর্থের প্রয়োজনে তিনি কিছু প্রবন্ধ লিখেছিলেন ও প্রকাশ করেছিলেন। তবে নিভৃতে গল্প এবং উপন্যাস লিখেছিলেন প্রচুর যার একটিও প্রকাশের ব্যবস্থা নেননি। এছাড়া ষাট-পঁয়ষট্টিটির বেশি খাতায় "লিটেরেরী নোটস" লিখেছিলেন যার অধিকাংশ এখনও (২০০৯) প্রকাশিত হয়নি। সাহিত্যকৃতি কবিতা জীবনানন্দ দাশের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ রয়েছে । ১.ঝরা পালক (এটি তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ) ২.ধূসর পান্ডুলিপি ৩.বনলতা সেন ৪.মহা পৃথিবী ৫.বেলা অবেলা কালবেলা ৬.রূপসী বাংলা (এটি তাঁর মৃত্যুর পরে প্রকাশিত হয়) কথা সাহিত্য জীবদ্দশায় কথাসাহিত্যিক হিসাবে জীবনানন্দের কোনোও পরিচিতি ছিল না। ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ অবধি প্রকাশিত তার রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ২১ এবং ছোটগল্পের সংখ্যা শতাধিক। তিনি সম্পূর্ণ নিভৃতে উপন্যাস-ছোটগল্প লিখেছিলেন এবং জীবদ্দশায় একটিও প্রকাশ করে যাননি। তার মৃত্যুর পর উপন্যাস-গল্পের পাণ্ডুলিপির খাতাগুলো আবিষ্কৃত হয়। কবিতায় যেমনি, কথাসাহিত্যেও তিনি তার পূর্বসূরীদের থেকে আলাদা, তার সমসাময়িকদের থেকেও তিনি সম্পূর্ণ আলাদা। তার গল্প-উপন্যাসে আত্মজৈবনিক উপাদানের ভিত লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু তাই বলে এই রচনাগুলো আত্মজৈবনিক নয়। তার সর্বাধিক পরিচিত উপন্যাস মাল্যবান, তবে "মাল্যবান" তার বিরচিত প্রথম উপন্যাস নয়। প্রবন্ধ জীবনানন্দ দাশের প্রাবন্ধিক পরিচয় অদ্যাবধি বিশেষ কোন মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয় নি। তবে তিনি বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ-আলোচনা লিখেছেন যার প্রতিটি অত্যন্ত মৌলিক চিন্তা-ভাবনার স্বাক্ষর বহন করে। তার প্রবন্ধ সংকলন কবিতার কথা বেরিয়েছিল তার মৃত্যুর পর - বঙ্গাব্দ ১৩৬২ তে । এতে তার জীবদ্দশায় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় মুদ্রিত পনেরটি প্রবন্ধ সংকলিত হয়েছিল। এই প্রবন্ধগুলো বহুল পঠিত। এই বিখ্যাত পনেরটি প্রবন্ধের বাইরেও জীবনানন্দের আরো কিছু প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সমালোচনা রয়েছে। এই রচনাসমষ্টির সংখ্যা খুব বেশি নয়। হিসেব করলে দেখা যায়, তার সাহিত্য-সমাজ-শিক্ষা বিষয়ক রচনার সংখ্যা ৩০, গ্রন্থ'ভূমিকা ও গ্রন্থালোচনা জাতীয় রচনার সংখ্যা ৯, স্মৃতিতর্পণমূলক রচনার সংখ্যা ৩ এবং বিবিধ প্রবন্ধ-নিবন্ধের সংখ্যা ৭। তদুপরি আরো ৭টি খসড়া প্রবন্ধের হদিশ করা গেছে। বুদ্ধদেব বসু কবিতা পত্রিকার একটি প্রবন্ধ সংখ্যার (১৩৪৫, বৈশাখ) পরিকল্পনা করেছিলেন মূলত কবিদের গদ্য প্রকাশের উদ্দেশ্য নিয়ে। এরই সূত্রে জীবনানন্দ তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটি লিখেছিলেন যার নাম ‘কবিতার কথা’। এ প্রবন্ধের শুরু এই ভাবে - তার গদ্য ভাষারীতিও বিশেষ প্রণিধানযোগ্য। প্রারম্ভিক বাক্যটি হ্রস্ব হলেও অব্যবহিত পরেই তিনি দীর্ঘ বাক্যের ঘন বুনোট গড়ে তুলেছেন। ‘এবং, ‘ও’ ইত্যাদি অন্বয়মূলক পদ এবং ’কমা’, ‘সেমিকোলন‘, ‘ড্যাশ‘ প্রভৃতি যতিচিহ্নের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে এমন একটি গদ্যভাষা যার সঙ্গে সমকালীন বাঙালি লেখক-পাঠকের আদৌ পরিচয় ছিল না। বস্তুত তার প্রবন্ধগুলোর বাক্য গঠনরীতি সমসাময়িককালে সুপরিচিত ছিল না। এমনকি, মনোযোগী পাঠকের কাছেও তা জটিল প্রতীয়মান হতে পারে। জীবনানন্দের অধিকাংশ গদ্য রচনাই ফরমায়েশী। সাহিত্য, শিক্ষা, সমাজ, এই তিনটি পরিক্ষেত্রে জীবনানন্দ প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলো লিখেছেন। তার বিশিষ্ট প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম এরকম - ‘কবিতার কথা’, ‘রবীন্দ্রনাথ ও আধুনিক বাংলা কবিতা’, ‘মাত্রাচেতনা’, ‘উত্তররৈবিক বাংলা কাব্য’, ‘কবিতার আত্মা ও শরীর’, ‘কি হিসাবে কবিতা শ্বাশত’, ‘কবিতাপাঠ’, ‘দেশকাল ও কবিতা’, ‘সত্যবিশ্বাস ও কবিতা’, ‘রুচি, বিচার ও অন্যান্য কথা’, ‘কবিতার আলোচনা’, ‘আধুনিক কবিতা’, ‘বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ’, ‘কেন লিখি’, ‘রবীন্দ্রনাথ’, ‘শরৎচন্দ্র’, ‘কঙ্কাবতী ও অন্যান্য কবিতা’, ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ভবিষ্যৎ’, ‘পৃথিবী ও সময়’, ‘যুক্তি, জিজ্ঞাসা ও বাঙালি’, 'অর্থনৈতিক দিক’, ‘শিক্ষা ও ইংরেজি’, ‘শিক্ষা-দীক্ষা-শিক্ষকতা’, ‘শিক্ষার কথা’, ‘শিক্ষা সাহিত্যে ইংরেজি’ এবং ‘শিক্ষা-দীক্ষা’। বলা যায় যে, সাহিত্য, বিশেষ করে কবিতা নিয়ে জীবনানন্দ বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ উপহার দিয়েছেন। প্রতিটি রচনাই বহুমাত্রিক মৌলিক চিন্তাসূত্রের স্বাক্ষর বহন করে। স্বীকৃতি ও সমালোচনা জীবদ্দশায় অসাধারণ কবি হিসেবে পরিচিতি থাকলেও তিনি খ্যাতি অর্জন করে উঠতে পারেননি। এরজন্য তার প্রচারবিমুখতাও দায়ী; তিনি ছিলেন বিবরবাসী মানুষ। তবে মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই তিনি বাংলা ভাষায় আধুনিক কবিতার পথিকৃৎদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। জীবনানন্দ দাশের জীবন এবং কবিতার উপর প্রচুর গবেষণালব্ধ গ্রন্থ লিখিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে, বাংলা ভাষায়। এর বাইরে ইংরেজিতে তার ওপর লিখেছেন ক্লিনটন বি সিলি, আ পোয়েট আপার্ট নামের একটি গ্রন্থে। ইংরেজি ছাড়াও ফরাসি সহ কয়েকটি ইউরোপীয় ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়েছে। তিনি যদিও কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত কিন্তু মৃত্যুর পর থেকে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ অবধি তার যে বিপুল পাণ্ডুলিপিরাশি উদ্ঘাটিত হয়েছে তার মধ্যে উপন্যাসের সংখ্যা ১৪ এবং গল্পের সংখ্যা শতাধিক। মৃত্যু ১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে কলকাতার বালিগঞ্জে এক ট্রাম দুর্ঘটনায় তিনি আহত হন। ট্রামের ক্যাচারে আটকে তার শরীর দলিত হয়ে। ভেঙ্গে যায় কণ্ঠ, ঊরু এবং পাঁজরের হাড়। গুরুতরভাবে আহত জীবনানন্দের চিৎকার শুনে ছুটে এসে নিকটস্থ চায়ের দোকানের মালিক চূণীলাল এবং অন্যান্যরা তাকে উদ্ধার করে। তাকে ভর্তি করা হয় শম্ভূনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এ সময় ডা. ভূমেন্দ্র গুহ সহ অনেক তরুণ কবি জীবনানন্দের সুচিকিৎসার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। কবি-সাহিত্যিক সজনীকান্ত দাস এ ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তার অনুরোধেই পশ্চিমবঙ্গের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় কবিকে দেখতে এসেছিলেন এবং আহত কবির সুচিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছিলেন যদিও এতে চিকিৎসার তেমন উন্নতি কিছু হয়নি। তবে জীবনানন্দের অবস্থা ক্রমশ জটিল হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে পড়েন কবি। চিকিৎসক ও সেবিকাদের সকল প্রচেষ্টা বিফল করে ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪ তারিখে রাত্রি ১১টা ৩৫ মিনিটে কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। আবদুল মান্নান সৈয়দ সহ কেউ কেউ ধারণা করেছেন হয় আত্মহত্যা স্পৃহা ছিল দুর্ঘটনার মূল কারণ। জীবনানন্দ গবেষক ডা. ভূমেন্দ্র গুহ মনে করেন জাগতিক নিঃসহায়তা কবিকে মানসিকভাবে কাবু করেছিল এবং তার জীবনস্পৃহা শূন্য করে দিয়েছিল। মৃত্যুচিন্তা কবির মাথায় দানা বেঁধেছিল। তিনি প্রায়ই ট্রাম দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা ভাবতেন। গত এক শত বৎসরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি। তিনি আর কেউ নন, কবি জীবনানন্দ দাশ। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীর মতে এ সময় দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে ট্রাম লাইন পার হচ্ছিলেন কবি। আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিয়ে দুই হাতে দুই থোকা ডাব নিয়ে গৃহে ফেরার সড়কে ওঠার জন্য ট্রাম লাইন পাড়ি দেওয়া খুব গ্রহণযোগ্য যুক্তি নয়। গ্রন্থাবলি কাব্যগ্রন্থ জীবনানন্দের কাব্যগ্রন্থসমূহের প্রকাশকাল সম্পর্কে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, কয়েকটি কাব্যগ্রন্থের একাধিক পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। নিচে কেবল প্রথম প্রকাশনার বৎসর উল্লিখিত। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ঝরা পালক প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে। এর দীর্ঘ কাল পর ১৯৩৬-এ প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ধূসর পাণ্ডুলিপি। ইত্যবসরে কবির মনোজগতে যেমন পরিবর্তন হয়েছে তেমনি রচনাকৌশলও অর্জন করেছে সংহতি এবং পরিপক্বতা। তার তৃতীয় কাব্যগ্রন্থ বনলতা সেন প্রকাশিত হয় ১৯৪২-এ। এটি "কবিতাভবন সংস্করণ" নামে অভিহিত। সিগনেট প্রেস বনলতা সেন প্রকাশ করে ১৯৫২-তে। বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থের কবিতাসমূহ সহ পরবর্তী কবিতাগ্রন্থ মহাপৃথিবী ১৯৪৪-এ প্রকাশিত। জীবনানন্দর জীবদ্দশায় সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ সাতটি তারার তিমির (১৯৪৮)। ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর কিছু আগে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবির মৃত্যু-পরবর্তী প্রকাশিত গ্রন্থসমূহ হলো ১৯৫৭-তে প্রকাশিত রূপসী বাংলা এবং ১৯৬১-তে প্রকাশিত বেলা অবেলা কালবেলা। জীবনানন্দ দাশ রূপসী বাংলা'র পাণ্ডুলিপি তৈরি করে থাকলেও জীবদ্দশায় এর প্রকাশের উদ্যোগ নেননি। তিনি গ্রন্থটির প্রচ্ছদ নাম নির্ধারণ করেছিলেন বাংলার ত্রস্ত নীলিমা। ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশকালে এর নামকরণ করা হয় "রূপসী বাংলা।" তার অগ্রন্থিত কবিতাবলি নিয়ে প্রকাশিত কবিতা সংকলনগুলো হলো: সুদর্শনা (১৯৭৩), আলো পৃথিবী (১৯৮১), মনোবিহঙ্গম, হে প্রেম, তোমারে ভেবে ভেবে (১৯৯৮), অপ্রকাশিত একান্ন (১৯৯৯) এবং আবছায়া (২০০৪)। কবির প্রকাশিত-অপ্রকাশিত গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত সকল কবিতার আঁকড় দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত জীবনানন্দ দাশের কাব্যসংগ্রহ সর্বপ্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে। অব্যবহিত পরে গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত সকল কবিতার পরিবর্ধিত সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে আবদুল মান্নান সৈয়দের উদ্যোগে। পরবর্তী কালে আবিষ্কৃত আরো কবিতা অন্তর্ভুক্ত করে ক্ষেত্র গুপ্ত ২০০১-এ প্রকাশ করেন জীবনানন্দ দাশের কাব্য সমগ্র। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে ভূমেন্দ্র গুহ প্রতিক্ষণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করেন জীবনানন্দ দাশের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত-গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত সকল কবিতার আঁকড় গ্রন্থ পাণ্ডুলিপির কবিতা (১৪ খন্ড)। গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস জীবনানন্দ দাশের মৃত্যুর পর আবিষ্কৃত হয় অজস্র গল্প ও উপন্যাস। এগুলোর প্রথম সংকলন জীবনানন্দ দাশের গল্প (১৯৭২, সম্পাদনা : সুকুমার ঘোষ ও সুবিনয় মুস্তাফী)। বেশ কিছুকাল পর প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৮৯, সম্পাদনা: আবদুল মান্নান সৈয়দ। প্রকাশিত ১৪টি উপন্যাস হলো : মাল্যবান (১৯৭৩), সুতীর্থ (১৯৭৭), চারজন (২০০৪ : সম্পাদক : ভূমেন্দ্র গুহ ও ফয়সাল শাহরিয়ার)। প্রবন্ধ মূলত কবি হলেও সাহিত্যের অধ্যাপক কবি জীবনানন্দ দাশ জীবৎকালে কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছিলেন। ওগুলো প্রকাশিত হয় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়। এর একটি অংশ নিয়ে কবিতার কথা প্রবন্ধগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে। বাকি প্রবন্ধ-নিবন্ধগুলো দীর্ঘকাল অপ্রকাশিত ছিল। ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দে সর্বপ্রথম জীবনানন্দের প্রকাশিত-অপ্রকাশিত-গ্রন্থিত-অগ্রন্থিত সকল প্রবন্ধ এক মলাটে আবদ্ধ করে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের প্রবন্ধ সমগ্র। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জীবনানন্দ দাশের জন্ম শতবর্ষে আরো কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ আবিষ্কৃত হলে প্রকাশিত হয় জীবনানন্দ দাশের অগ্রন্থিত প্রবন্ধ সমগ্র। পত্র দীপেনকুমার রায়-এর উদ্যোগে ও সম্পাদনায় জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী প্রকাশিত হয় বাংলা ১৩৮৫ সনে। পরবর্তী কালে আবদুল মান্নান সৈয়দ জীবনানন্দ দাশের পত্রাবলী প্রকাশ করেন ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে। ১০১টি চিঠির সংকলন জীবনানন্দ দাশের চিঠিপত্র () প্রকাশিত হয় ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে। সমগ্র একবিংশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে ‘ঐতিহ্য’ প্রকাশনী প্রকাশ করেছে জীবনানন্দ দাশের লেখা সমগ্র। নাম দিয়েছে “জীবনানন্দ রচনাবলী” এটি ৬ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এতে কবিতা‚ গল্প‚ উপন্যাস‚ প্রবন্ধ সহ জীবনানন্দ দাশের প্রায় সকল লেখা উঠে এসেছে। লিট্যারেরি নোটস ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাঁধানো এক্সারসাইজ খাতায় ধারাবাহিকভাবে কিছু টুকরো-টাকরা কথা, টীকা-টিপ্পনী লিখতে শুরু করেছিলেন যা তিনি লিট্যারেরি নোটস নামে চিহ্নিত করেছিলেন। ৫৬টি বাঁধানো এক্সারসাইজ খাতায় লেখা, তারিখ ধরে লেখা। উদ্ধারকৃত পাণ্ডুলিপি সমগ্র কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত থাকলেও দিনলিপির খাতাগুলো জীবনানন্দ-গবেষক ভূমেন্দ্র গুহের কাছে সংরক্ষিত ছিল ভূমেন্দ্রের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। লিট্যারেরি নোটস-এর খাতাগুলোর পৃষ্ঠা সংখ্যা ৪,২৭২ এবং শব্দ সংখ্যা ৬,৬২,১৬০-এর আশপাশে। দিনলিপি প্রায় ধাঁধার মতো, পাঠোদ্ধারের প্রধান সমস্যা হল প্রায়শ ক্ষুদ্রায়তন অনুচ্ছেদে অসম্পূর্ণ বাক্যে লেখা, কখনও ব্যবহার করেছেন সংকেত। প্রায়ই ব্যবহার করেছেন 1 সংখ্যাটি যেমন— ১৪ আগস্ট ১৯৩১-এর পাতায় লেখা নিচে উদ্ধৃত অনুচ্ছেদটিতে : লিখতে গিয়ে কবি the লিখতে 1 ব্যবহার করেছেন সময় বাঁচানোর স্বার্থে। এ রকম আরও বোঝা যায় : Wd = would; Sh/shd = should; Acc = According; Re = Regarding, ?= because ইত্যাদি। তাতে পঠন সহজতর হলেও অর্থনির্মলতা খুব একটি বৃদ্ধি পায়না। নিছকই নিজের জন্য দিনলিপির খাতায় কিছু টীকা-টিপ্পনী লিখেছিলেন জীবনানন্দ, প্রকাশের জন্য নয়। পুরস্কার ও স্বীকৃতি নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণ বনলতা সেন কাব্যগ্রন্থটি বাংলা ১৩৫৯-এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ বিবেচনায় পুরস্কৃত করা হয়। কবির মৃত্যুর পর ১৯৫৫ খ্রিষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা (১৯৫৪) সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। জীবনানন্দের স্মৃতি ও উত্তরাধিকার কবি জীবনানন্দের নামে কোলকাতা কবিতা সঙ্গম এবং ভাষা সংসদ-এর সহযোগিতায় কবিতা অনুবাদের জন্য জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার প্রতিষ্ঠা করেছে। অনুবাদের জন্য জীবনানন্দ দাশ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে দশটি ভিন্ন ভারতীয় ভাষায়। জীবনানন্দ পুরুষ্কার নামে একটি সাহিত্য পুরস্কার, জীবনানন্দ পুরস্কার নামেও পরিচিত, বাংলাদেশ-এ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশী লেখকদের কবিতা এবং গদ্যের সেরা কাজের জন্য বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করে। বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ এর একটা ছাত্রাবাস এর নাম কবি জীবনানন্দ ছাত্রাবাস আরও দেখুন বাংলার জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা তথ্যসূত্র আরও দেখুন বাঙালি কবিদের তালিকা বহিঃসংযোগ এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকায় জীবনানন্দ দাশ জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯-এ জন্ম পূর্ববঙ্গে জন্ম ১৯৫৪-এ মৃত্যু বাংলা ভাষার লেখক বাঙালি কবি ২০শ শতাব্দীর বাঙালি কবি আধুনিক কবি বাঙালি লেখক বাঙালি ঔপন্যাসিক ২০শ শতাব্দীর বাঙালি ঔপন্যাসিক বাংলাদেশী কবি বাঙালি ছোটগল্পকার বাঙালি প্রাবন্ধিক সরকারি ব্রজমোহন কলেজ, বরিশালের প্রাক্তন শিক্ষার্থী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী রবীন্দ্র-স্মৃতি পুরস্কার বিজয়ী বাংলা ভাষায় সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার বিজয়ী বরিশালের ব্যক্তি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বাঙালি পুরুষ কবি বাংলা ভাষার কবি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভারতীয় কবি ভারতীয় পুরুষ কবি ভারতীয় ঔপন্যাসিক ভারতীয় পুরুষ ঔপন্যাসিক ভারতীয় পুরুষ লেখক বাঙালি জাতীয়তাবাদী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় লেখক ভারতীয় প্রাবন্ধিক ভারতীয় পুরুষ প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় প্রাবন্ধিক ভারতীয় সাহিত্য সমালোচক ভারতীয় ছোটগল্পকার ভারতীয় পুরুষ ছোটগল্পকার ভারতীয় অ-কল্পকাহিনী লেখক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় অ-কল্পকাহিনী লেখক ভারতীয় সম্পাদক ভারতীয় ম্যাগাজিন সম্পাদক ব্রাহ্ম কলকাতার লেখক পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিক ভারতীয় প্রভাষক সিটি কলেজ, কলকাতার শিক্ষক
https://en.wikipedia.org/wiki/Jibanananda_Das
Jibanananda Das
Jibanananda Das (Bengali pronunciation: ['dʒibonˌanondoː daʃ]) (17 February 1899 – 22 October 1954) was an Indian poet, writer, novelist and essayist in the Bengali language. Popularly called "Rupashi Banglar Kabi'' ('Poet of Beautiful Bengal'), Das is the most read poet after Rabindranath Tagore and Kazi Nazrul Islam in Bangladesh and West Bengal. While not particularly well recognised during his lifetime, today Das is acknowledged as one of the greatest poets in the Bengali language. Born in Barisal to a Baidya Brahmin family, Das studied English literature at Presidency College, Kolkata and earned his MA from Calcutta University. He had a troubling career and suffered financial hardship throughout his life. He taught at many colleges but was never granted tenure. He settled in Kolkata after the partition of India. Das died on 22 October 1954, eight days after being hit by a tramcar. The witnesses said that though the tramcar whistled, he did not stop, and got struck. Some deem the accident as an attempt at suicide. Das was very underrated poet in his time; he wrote profusely, but as he was a recluse and introvert, he did not publish most of his writings during his lifetime. Most of his work were hidden, and only seven volumes of his poems were published. After his death, it was discovered that apart from poems, Das wrote 21 novels and 108 short stories. His notable works include Ruposhi Bangla, Banalata Sen, Mahaprithibi, Shreshtha Kavita. Das's early poems exhibit the influence of Kazi Nazrul Islam, but in the later half of the 20th century, Das's influence became one of the major catalysts in the making of Bengali poetry. Das received Rabindra-Memorial Award for Banalata Sen in 1953 at All Bengal Rabindra Literature Convention. Das's Shrestha Kavita won the Sahitya Academy Award in 1955. A film inspired by Das's short story Jamrultola, named 'Sunder Jibon' directed by Sandeep Chattopadhyay (Chatterjee), produced by Satyajit Ray Film And Television Institute won the National Film Award for Best Short Fiction Film at the 50th National Film Awards with Shantanu Bose in the lead.
2048
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%20%E0%A6%AD%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%BE%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%AF
সুকান্ত ভট্টাচার্য
সুকান্ত ভট্টাচার্য (; ১৫ আগস্ট ১৯২৬ – ১৩ মে ১৯৪৭) ছিলেন বাংলা সাহিত্যের মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী তরুণ কবি। মাত্র একুশ বৎসর বয়সে প্রতিভাধর কবির দেহাবসান ঘটলেও সামান্য কয়েকবছরে অত্যাশ্চর্য কবিত্ব শক্তির পরিচয় দিয়ে অশেষ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। জন্ম ও পরিবার পিতা নিবারণ ভট্টাচার্য, মা সুনীতি দেবী। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট তিনি তার মাতামহের বাড়ি কলকাতার কালীঘাটের ৪৩, মহিম হালদার স্ট্রীটের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। এক নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম। ওর পৈতৃক বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার অন্তর্গত ঊনশিয়া গ্রামে। বেলেঘাটা দেশবন্ধু স্কুল থেকে ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এই সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তার আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু ছিলেন কবি অরুণাচল বসু। সুকান্ত সমগ্রতে লেখা সুকান্তের চিঠিগুলির বেশিরভাগই অরুণাচল বসুকে লেখা। অরুণাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। নিকটেই কবির ভাইদের মধ্যে দুজন, বিভাস ভট্টাচার্য ও অমিয় ভট্টাচার্যের বাড়ী। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের সম্পর্কিত ভ্রাতুষ্পুত্র। প্রগতিশীল রাজনীতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। সেই বছর আকাল নামক একটি সংকলন গ্রন্থ তার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়। কৈশোর থেকেই সুকান্ত যুক্ত হয়েছিলেন সাম্যবাদী রাজনীতির সঙ্গে। পরাধীন দেশের দুঃখ দুর্দশা জনিত বেদনা এবং শোষণ মুক্ত স্বাধীন সমাজের স্বপ্ন, শোষিত মানুষের কর্ম জীবন এবং ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য সংগ্রাম তার কবিতার মূল প্রেরণা। ১৯৪১ সালে সুকান্ত কলকাতা রেডিওর গল্প দাদুর আসরে যোগদান করেন। সেখানে প্রথমে তিনি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর সেই আসরেই নিজের লেখা কবিতা পাঠ করে তাকে শ্রদ্ধা জানান। গল্প দাদুর আসরের জন্য সেই বয়সেই তার লেখা গান মনোনীত হয়েছিল আর তার সেই গান সুর দিয়ে গেয়েছিলেন সেকালের অন্যতম সেরা গায়ক পঙ্কজ মল্লিক। সুকান্তকে আমরা কবি হিসেবেই জানি। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ যেমন কেবল মাত্র কবি ছিলেন না, সাহিত্যের সকল ক্ষেত্রে তার ছিলো অবাধ বিচরণ। তেমনি সুকান্তও ঐ বয়সেই লিখেছিলেন কবিতা ছাড়াও, গান, গল্প, নাটক এবং প্রবন্ধ। তার ‘ছন্দ ও আবৃত্তি’ প্রবন্ধটি পাঠেই বেশ বোঝা যায় ঐ বয়সেই তিনি বাংলা ছন্দের প্রায়োগিক দিকটিই শুধু আয়ত্বে আনেন নি, সে নিয়ে ভালো তাত্ত্বিক দক্ষতাও অর্জন করেছিলেন। সাহিত্যকর্ম আট-নয় বছর বয়স থেকেই সুকান্ত লিখতে শুরু করেন। স্কুলের হাতে লেখা পত্রিকা ‘সঞ্চয়ে’ একটি ছোট্ট হাসির গল্প লিখে আত্মপ্রকাশ করেন। তার দিনকয়েক পরে বিজন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শিখা’ কাগজে প্রথম ছাপার মুখ দেখে তার লেখা বিবেকান্দের জীবনী। মাত্র এগারো বছর বয়সে ‘রাখাল ছেলে’ নামে একটি গীতি নাট্য রচনা করেন। এটি পরে তার ‘হরতাল’ বইতে সংকলিত হয়। বলে রাখা ভালো, পাঠশালাতে পড়বার কালেই ‘ধ্রুব’ নাটিকার নাম ভূমিকাতে অভিনয় করেছিলেন সুকান্ত। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় বাল্য বন্ধু লেখক অরুণাচল বসুর সঙ্গে মিলে আরেকটি হাতে লেখা কাগজ ‘সপ্তমিকা’ সম্পাদনা করেন। অরুণাচল তার আমৃত্যু বন্ধু ছিলেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। সুকান্তকে বলা হয় গণমানুষের কবি। অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ তার কবিতার প্রধান বিষয়। অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের স্বার্থে ধনী মহাজন অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে নজরুলের মতো সুকান্তও ছিলেন সক্রিয়। যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে সুকান্তের ছিল দৃঢ় অবস্থান। তিনি তার কবিতার নিপুণ কর্মে দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণি বৈষম্য। মানবতার জয়ের জন্য তিনি লড়াকু ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। মানুষের কল্যাণের জন্য সুকান্ত নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন। তিনি মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন। তার অগ্নিদীপ্ত সৃষ্টি প্রণোদনা দিয়ে সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে প্রয়াসী ছিলেন। মানবিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন। সুকান্ত কমিউনিস্ট পার্টির পত্রিকা দৈনিক স্বাধীনতার (১৯৪৫) ‘কিশোর সভা’ বিভাগ সম্পাদনা করতেন। মার্কসবাদী চেতনায় আস্থাশীল কবি হিসেবে সুকান্ত কবিতা লিখে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র স্থান করে নেন। তার কবিতায় অনাচার ও বৈষ্যমের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ পাঠকদের সংকুচিত করে তোলে। গণমানুষের প্রতি গভীর মমতায় প্রকাশ ঘটেছে তার কবিতায়। তার রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তার রচনাবলি প্রকাশিত হয়। সুকান্ত ফ্যাসিবাদবিরোধী লেখক ও শিল্পীসঙ্ঘের পক্ষে আকাল (১৯৪৪) নামে একটি কাব্যগ্রন্থ সম্পাদনা করেন। সুকান্তের কবিতা বিষয় বৈচিত্র্যে ও লৈখিক দক্ষতায় অনন্য। সাধারণ বস্তুকেও সুকান্ত কবিতার বিষয় করেছেন। বাড়ির রেলিং ভাঙা সিঁড়ি উঠে এসেছে তার কবিতায়। সুকান্তের কবিতা সব ধরনের বাধা-বিপত্তিকে জয় করতে শেখায়। যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবিলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকে পাওয়া যায়। তারুণ্যের শক্তি দিয়ে উন্নত শিরে মানুষের মর্যাদার জন্য মানুষকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান সুকান্তের কবিতায় লক্ষণীয়। সুকান্তের কবিতা সাহসী করে, উদ্দীপ্ত করে। তার বক্তব্য প্রধান সাম্যবাদী রচনা মানুষকে জীবনের সন্ধান বলে দেয়। স্বল্প সময়ের জীবনে তিনি বাংলা সাহিত্যকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি। নিজের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে গেছেন নিজ প্রতিভা, মেধা ও মননে। সুকান্ত তার বয়সিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করেছেন তার পরিণত ভাবনায়। ভাবনাগত দিকে সুকান্ত তার বয়স থেকে অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন। মৃত্যু একাধারে বিপ্লবী ও স্বাধীনতার আপোসহীন সংগ্রামী কবি সুকান্ত ছিলেন কম্যুনিস্ট পার্টির সারাক্ষণের কর্মী। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে নিজের শরীরের উপর যে অত্যাচারটুকু তিনি করলেন তাতে তার শরীরে প্রথম ম্যালেরিয়া ও পরে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৩ মে মাত্র ২১ বছর বয়সে কলিকাতার ১১৯ লাউডন স্ট্রিটের রেড এড কিওর হোমে মৃত্যুবরণ করেন। সুকান্ত ভট্টাচার্যের জীবন মাত্র ২১ বছরের আর লেখালেখি করেন মাত্র ৬-৭ বছর। সামান্য এই সময়ে নিজেকে মানুষের কবি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তার রচনা পরিসরের দিক থেকে স্বল্প অথচ তা ব্যাপ্তির দিক থেকে সুদূরপ্রসারী। সংশ্লিস্ট স্থান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়ায় সুকান্তের পৈতৃক বাড়ি। বেলেঘাটার '৩৪ হরমোহন ঘোষ লেন এর বাড়ি'। গ্রন্থতালিকা ছাড়পত্র (১৩৫৪) ছাড়পত্র আগামী রবীন্দ্রনাথের প্রতি চারাগাছ খবর ইউরোপের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত প্রার্থী একটি মোরগের কাহিনী সিঁড়ি কলম দুরাশা মৃত্যু আগ্নেয়গিরি ঠিকানা লেনিন  অনুভব কাশ্মীর সিগারেট দেশলাই কাঠি বিরতি চিল চট্টগ্রাম ১৯৪৩ মধ্যবিত্ত’৪২ সেপ্টেম্বর’৪৬ ঐতিহাসিক শত্রু এক মজুরদের ঝড়(ল্যাংস্টন হিউজ) ডাক বোধন রানার মৃত্যুঞ্জয়ী গান কনভয় ফসলের ডাকঃ১৩৫১ কৃষকের গান এই নবান্নে আঠারো বছর বয়স হে মহাজীবন ঘুম নেই (১৩৫৭ ব*) শুরুতেই বিক্ষোভ পয়লা মে-র কবিতাঃ১৯৪৬ পরিখা সব্যসাচী উদ্বীক্ষণ  বিদ্রোহের গান অনন্যেপায় অভিবাদন জনতার মুখে ফোটে বিদ্যুৎবাণী কবিতার খসড়া আমরা এসেছি একুশে নভেম্বরঃ১৯৪৬ দিন বদলের পালা মুক্ত বীরদের প্রতি প্রিয়তমাসু ছুরি সূচনা অদ্বৈত মণিপুর দিকপ্রান্তে চিরদিনের নিভৃত(অনিশ্চিত পৃথিবীতে অরণ্যের ফুল) বৈশম্পায়ন নিভৃত(বিষন্ন রাত প্রসন্ন দিন আনো) কবে অলক্ষ্যে মহাত্মাজীর প্রতি পঁচিশে বৈশাখের উদ্দেশে পরিশিষ্ট মীমাংসা অবৈধ ১৯৪১ সাল রোমঃ১৯৪৩ জনরব রৌদ্রের গান দেওয়ালী পূর্বাভাস (১৩৫৭ ব*) পূর্বাভাস হে পৃথিবী সহসা স্মারক নিবৃত্তির পূর্বে স্বপ্নপথ সুতরাং বুদ্বুদমাত্র আলো অন্ধকার প্রতিদ্বন্দ্বী আমার মৃত্যুর পর স্বতঃসিদ্ধ মুহূর্ত (ক) মুহূর্ত (খ) তরঙ্গ ভঙ্গ আসন্ন আঁধারে পরিবেশন অসহ্য দিন উদ্যোগ পরাভব বিভীষণের প্রতি ঘুম ভাঙার গান হদিশ দেয়ালিকা প্রথমবার্ষিকী তারুণ্য মৃত পৃথিবী দূর্মর অভিযান নাটিকা (১৩৬০ ব* ) অভিযান(১৩৫০ সাল) সূর্যপ্রণাম(১৩৪৮ সাল) বইয়ের শেষে সচিত্র মঞ্চ নির্দেশনা। মিঠে-কড়া (১৯৫১ ইং) অতি কিশোরের ছড়া এক যে ছিল ভেজাল গোপন খবর জ্ঞানী মেয়েদের পদবী বিয়েবাড়ির মজা রেশন কার্ড খাদ্য-সমস্যার সমাধান পুরানো ধাঁধা ব্ল্যাক-মার্কেট পৃথিবীর দিকে তাকাও সিপাহী বিদ্রোহ আজব লড়াই হরতাল (১৩৬৯ ব* ) লেজের কাহিনী(সোভিয়েট শিশুসাহিত্যিক ডি বিয়াঙ্কির ‘টেইলস’ গল্পের অনুবাদ) ষাঁড়-গাধা ছাগলের কথা দেবতাদের ভয়(ব্যাঙ্গার্থক নাটিকা) রাখাল ছেলে গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) আকাল (১৯৪৪) তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ১৯২৬-এ জন্ম আদিনিবাস পূর্ববঙ্গে ১৯৪৭-এ মৃত্যু গোপালগঞ্জ জেলার কবি কলকাতার ব্যক্তি বাংলার নবজাগরণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি বাঙালি কবি বিদ্রোহী কবি ২০শ শতাব্দীর বাঙালি কবি ২০শ শতাব্দীর পুরুষ লেখক ভারতে যক্ষ্মায় মৃত্যু বাঙালি লেখক বাংলা ভাষার লেখক বাংলা ভাষার কবি কলকাতার লেখক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি বাঙালি পুরুষ কবি
https://en.wikipedia.org/wiki/Sukanta_Bhattacharya
Sukanta Bhattacharya
Sukanta Bhattacharya (Bengali: সুকান্ত ভট্টাচার্য) (; 15 August 1926 – 13 May 1947) was a Bengali poet. He was called 'Young Nazrul' and 'Kishore Bidrohi Kobi', a reference to the great rebel poet Kazi Nazrul Islam for Sukanta's similar rebellious stance against the tyranny of the British Raj and the oppression by the social elites through the work of his poetry. He died from tuberculosis, three months before India achieved independence. He was a paternal uncle of Buddhadeb Bhattacharya, former Chief Minister of West Bengal.
2091
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%20%E0%A6%9B%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%20%E0%A6%87%E0%A6%89%E0%A6%A8%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%A8
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশের একটি ছাত্র গণ সংগঠন। এটি বাংলাদেশের অন্যতম একটি ছাত্র সংগঠন। সংগঠনটি ১৯৫২ সালের ২৬শে এপ্রিল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। সংগঠনটি বিভিন্ন সময় বৈষম্যহীন, বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক ও প্রগতিশীল ধারার শিক্ষানীতির জন্য আন্দোলন করে থাকে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংগঠনটির নিজস্ব গেরিলা বাহিনী ছিল। ১৯৭৩ সালের ১লা জানুয়ারি এই সংগঠনের মতিউল ও কাদের নামের দুজন কর্মী আমেরিকা দ্বারা ভিয়েতনাম আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ঢাকায় একটি সাম্রাজ্যবাদবিরোধী আন্দোলনের মিছিল চলাকালে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেন। এর ফলস্বরূপ ভিয়েতনাম সরকার মতিউল ও কাদেরকে ভিয়েতনামের জাতীয় বীরের মর্যাদা দিয়েছিল। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ৪১ জন সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত। এটি বাংলাদেশের পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ছাত্র এবং যুব সংগঠনের সদস্য হিসাবে বিশ্বজুড়েও কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। অন্যান্য কার্যক্রমের মধ্যে এটি প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারিতে “জয়ধ্বনি” নামক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের পত্রিকা প্রকাশ করে থাকে। এটি প্রগতিশীল ছাত্র জোটভুক্ত সংগঠন। ইতিহাস ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় ছাত্র আন্দোলন তথা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সম্মুখে যেসব নতুন সমস্যা ও প্রশ্নের দেখা দিয়েছিলো তা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্য ১৯৫২ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকায় একটি প্রাদেশিক সম্মেলন হয়। যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শিক্ষার্থীদের একতাবদ্ধ করতে পারে এমন একটি অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ গণ ছাত্র সংগঠন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে ১৯৫২ সালের ২৬ এপ্রিল ঐক্য, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি -এ চার মূলনিতীকে ভিত্তি করে ঢাকার বার লাইব্রেরি হলে পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। জন্মলগ্নে এ-ই সংগঠনের যুগ্ন আহ্বায়ক ছিলেন কাজী আনোয়ারুল আজিম ও সৈয়দ আব্দুস সাত্তার। এরপর ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে প্রথম সম্মেলনে মোহাম্মদ সুলতান সভাপতি ও মোহাম্মদ ইলিয়াস সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়। এই সম্মেলনেই সংগঠনের ঘোষনাপত্র ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে ছাত্র ইউনিয়ন ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি পূর্বপাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের এক জরুরী কাউন্সিলে শাসনতন্ত্র সম্পর্কে ১৪ দফা দাবি প্রণয়ন করা হয়। এতে বলা হয়- "পাকিস্তানের যে মূল পাঁচটি ভাষাভাষী জাতির অবস্থান, উহাদের সকলকে পাকিস্তান ফেডারেশন হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া স্বতন্ত্র স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের অধিকার সহ পূর্ণ আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার দিতে হইবে।" ১৯৭১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউরোপে তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার (বর্তমানে স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লভায়) অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়নের দশম কংগ্রেসে ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্বের শতাধিক দেশের ছাত্র প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণের ন্যায্য দাবি ও সংগ্রামের কথা তুলে ধরে। ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সংসদের অধিবেশন বাতিল করা হলে বায়তুল মোকারম মসজিদের কাছে বিক্ষোভ সমাবেশ ও ২রা মার্চ সারাদেশে হরতাল পালন করে সংগঠনটি। মার্চের শুরু থেকেই প্রতিদিন বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ছাত্র-গণ সমাবেশ আয়োজন করে চলমান ঘটনাবলি ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জনগণকে ব্রিফিং করা হতো। ৭-ই মার্চ ঐতিহাসিক ভাষণের পর থেকেই শোষণ মুক্ত পূর্ব বাংলা কায়েমের জন্য সম্ভাব্য দীর্ঘস্থায়ী সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণ করে ছাত্র ইউনিয়ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে প্রতিদিন সকাল থেকে ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা শুরু করে কুচকাওয়াজ ও সামরিক প্রশিক্ষণ। সেখানে ডামি রাইফেল দিয়ে অস্ত্র চালানো শেখানো হয়। সংগঠনের নারী কর্মীরাও এ প্রশিক্ষণে অংশ নেয়। প্রয়াত বিপ্লবী ও শহীদদের নামে আলাদা আলাদা ব্রিগেড গঠন করা হয়। এসব ব্রিগেডকে রাজনৈতিক দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সামরিক কুচকাওয়াজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এছাড়াও ছাত্র ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জেলা, থানা, প্রাথমিক শাখাসমূহকে সর্বাত্মক রাজনৈতিক প্রচার চালানো, জনগণের মধ্যে সংগ্রাম কমিটি ও গণবাহিনী গঠন করা, গ্রামে কৃষকের মধ্যে আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া ও গণবাহিনীর সমন্বয়ে নিয়মিত প্যারেড কার্যক্রম চালনা করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নেতা আজিম, শুসীল সহ আরো কয়েজন পাকিস্তানি বাহিনীর গুলিতে শহিদ হন। ১৯৭১ সালের ৬ মে দিল্লিতে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্র ইউনিয়ন। সেখানে গণহত্যা ও প্রতিরোধ সংগ্রামের সামগ্রিক পরিস্থিতি তুলে ধরা হয় বিশ্ববাসীর কাছে যেটা সারা দুনিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে এটাই ছিল এ ধরনের প্রথম সংবাদ সম্মেলন, যেখানে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সার্বিক পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে ১০ মে, ১৯৭১, আন্তর্জাতিক ছাত্র ইউনিয়ন (IUS) এবং বিশ্ব গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশন (WFDY) সহ বিশ্বের সকল আন্তর্জাতিক ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং সকল দেশের ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলোর কাছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন ও সহযোগিতা প্রদানের আহবান জানিয়ে চিঠি পাঠায় ছাত্র ইউনিয়ন। তারপর সারা বিশ্বের ছাত্র-যুব সংগঠনগুলো দ্রুত বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন জানিয়ে ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন। ছাত্র ইউনিয়নের স্ব-উদ্যোগে যুদ্ধ পরিচালনা ও ব্যাবস্থাপনায় অংশ নিতে মে মাসেই ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টির সাথে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠিত হয়। মে মাসের ২৮ তারিখে আসামের তেজপুরের নিকটবর্তী সালোনবাড়ি-র ক্যাম্পে এ-র প্রশিক্ষণ শুরু হয়। প্রশিক্ষণ শেষে ত্রিপুরার বেজক্যাম্প থেকেই অপারেশন প্ল্যানিং কমিটির পরিচালনায় দেশের ভেতর গেরিলাদের 'ইনডাকশনে'র কার্যক্রম ও গেরিলা অপারেশনসহ সামরিক তৎপরতা চালানো হয়। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে এ-ই বিশেষ বাহিনী ছোট ছোট অপারেশন করতে থাকে। অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অপারেশন সংখ্যা বাড়তে থাকে। রায়পুরা, মনোহরদী, শিবপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্রগ্রাম, বৃহত্তর বরিশাল প্রভৃতি এলাকায় একের পর এক সফল অভিযান পরিচালিত হয়। ১১ নভেম্বর কুমিল্লার সীমান্তবর্তী বেতিয়ারায় পাকিস্তানি বাহিনীর সাথে গেরিলা বাহিনীর তুমুল যুদ্ধ হয়। এতে শহীদ হোন ছাত্র ইউনিয়ন নেতা নিজামউদ্দিন আজাদ, সিরাজুল মনির, শহীদুল্লাহ সাউদসহ ৯ জন গেরিলা যোদ্ধা। গেরিলা বাহিনীর একশনগুলাতে ছাত্র ইউনিয়নের যোদ্ধারা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামকরণ জন্মলগ্নে সংগঠনটির নাম ছিলো "পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন।" পরবর্তীতে ১৯৫২ সালের ডিসেম্বর মাসে সংগঠনটির প্রথম সম্মেলনে অবিভক্ত পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের অর্থনীতি, সমাজচেতনা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য আলাদা হওয়ায় শুধু পূর্ব পাকিস্তান ভিত্তিক সংগঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সংগঠনটির নাম "পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন" করা হয়। বাংলাদেশ স্বাধীনতার পরে সংগঠনটির নাম "বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন" রাখা হয়। সংগঠনের নাম "বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন" ও ইংরেজিতে “Bangladesh Students' Union”, সংক্ষেপে বাংলায় "ছাত্র ইউনিয়ন" ও ইংরেজিতে “BSU” নামে অভিহিত করা হয়। নেতৃবৃন্দের তালিকা ছাত্র ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে শুরু করে বর্তমান সময় পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সংসদের নেতৃবৃন্দের তালিকা: আরও দেখুন বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠনসমূহের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন -এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল বাংলাদেশের ছাত্র সংগঠন ১৯৫২-এ প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন
https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Students_Union
Bangladesh Students Union
Bangladesh Students' Union is a leading student organization in Bangladesh. The organization was established on 26 April 1952. It is an organisation of students that provides protection for student interests and ensures the enforcement of student rights. During the Liberation War of Bangladesh, the organization had its guerrilla force.
2094
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%9F
পাট
পাট (বৈজ্ঞানিক নাম: corchorus spp) একটি বর্ষাকালীন ফসল। পাট একটি বর্ষাকালীন ফসল। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত। বাংলাদেশে পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়ে থাকে এবং পাটই বাংলার (বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গের) শত বর্ষের ঐতিহ্য। দুই ধরনের পাট বাংলাদেশে দেখতে পাওয়া যায়: Corchorus capsularis (সাদা পাট) ও Corchorus olitorius (তোষা পাট)। এটি Tiliaceae পরিবারের অন্তর্গত একটি উদ্ভিদ। মনে করা হয় সংস্কৃত শব্দ পট্ট থেকে পাট শব্দের উদ্ভব হয়েছে। চট্টগ্রামে পাটকে "নারিস" শাক নামেও অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী পাটকে কৃষিপণ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। ১লা মার্চ ২০২৩ প্রজ্ঞাপনের গেজেট প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সরকার। ৬ মার্চ জাতীয় পাট দিবস।বাংলাদেশে বর্তমানে পৃথিবীর মাত্র ২৪ শতাংশ পাট জন্মে। এত উৎকৃষ্ট পাট পৃথিবীর অন্য কোথাও উৎপন্ন হয় না। বর্তমানে পাট উৎপাদনে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চল প্রথম, ফরিদপুর অঞ্চল দ্বিতীয়, যশোর অঞ্চল তৃতীয় এবং কুষ্টিয়া অঞ্চল চতুর্থ। জিনোম অনুক্রম ১৬ জুন ২০১০ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে পাটের জিনোম অনুক্রম (জীবনরহস্য) আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। পাটের জিনোম এর আবিষ্কারক ড.মাকসুদুল আলম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও ডেটাসফ্ট সিস্টেম্স বাংলাদেশ লি. বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে বিজ্ঞান-পত্রিকায় প্রকাশিতব্য এ খসড়া জিনোম আবিষ্কার করেছে। এতে সহায়তা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয় ও মালয়েশিয়া বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়। পাটের পরিচিতি পাট একটি বর্ষজীবী ফসল। এর জীবনকাল ১০০ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত। চৈত্র/বৈশাখ থেকে আষাঢ়/শ্রাবণ। পাট বৃষ্টি নির্ভর ফসল। বায়ুর আদ্রতা ৬০% থেকে ৯০% এর পছন্দ। পাট চাষে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োজন হয় না। গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ২ টন। পাটের আঁশঃ পাটের আঁশ নরম উজ্জ্বল চক্চকে এবং ১-৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে একক আঁশ কোষ ২-৬ মিলি মিটার লম্বা এবং ১৭-২০ মাইক্রণ মোট হয়। পাটের আঁশ প্রধানত সেলুলোজ এবং লিগনিন দ্বারা গঠিত। সাধারণত: পাট গাছ জৈব প্রক্রিয়ায় পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়ানো হয় পাটের কৃষিতাত্ত্বিক উপযোগীতা ধান ও গম বাংলাদেশের প্রধান দুটি খাদ্য শস্য। কিন্তু বছরের পর বছর একই জমিতে ধান এবং গমের আবাদ করা হলে পরিবেশগত দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সৃষ্টি হয়। ধান ও গমের শিকড় ৩-৪ ইঞ্চির বেশি গভীরে প্রবেশ করতে পারে না। তাছাড়া শিকড়ের নিচে একটি শক্ত আস্তরণ সৃষ্টি হয়; এর নিচে গাছের খাদ্য উপাদান জমা হয়। কিন্তু ধান ও গমের শিকড় সেখানে পৌঁছাতে পারে না। তবে এর উপরের স্তরের খাদ্য উপাদান নিশেষিত হয়ে যায়। এ অবস্থায় ফসল- চক্রে পাট চাষ করা হলে পাটের ১০-১২ ইঞ্চি লম্বা শিকড় মাটির তলার শক্ত আস্তরণ ভেঙ্গে ফেলে এবং নিচের স্তর থেকে খাদ্য গ্রহণ করে। আরো জানা যায় যে, পাটগাছ যে খাবার খায় তার ৬০% মাঠে দাঁড়ানো অবস্থায় পাতা ঝড়ানোর মাধ্যমে মাটিতে ফিরিয়ে দেয়। তাই ধান, গম এবং অন্যান্য ফসলের আবাদ টিকিয়ে রাখতে হলে শস্য পর্যায়ে পাট চাষ অবশ্যই করতে হয়। পাট চাষ বায়ুর ৭০-৯০% আপেক্ষিক আর্দ্রতায়, চৈত্র-বৈশাখ মাসের প্রাক বর্ষায় পাট বীজ বোনা হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসের অপেক্ষাকৃত খড়ায় নিড়ী,গাছ বাছাই ও অন্যান্য অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যা সম্পন্ন করা হয়। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসের ভরা বর্ষায় যখন নালা-ডোবা, খাল-বিল, পানিতে ভরে ওঠে তখন পাট কাটা হয়। নিকটবর্তী জলাশয়ে পাট গাছ জাগ দেয়া হয়। পাট পচানোর এ পদ্ধতির নাম "রিবন রেটিং"। পরিবেশের এ সব কিছুই পাট চাষের সাথে নিবীড়ভাবে সম্পর্কিত। পাট সম্পূর্ণ বৃষ্টি নির্ভর ফসল। সাময়িক খরা অথবা জলাবদ্ধতায় পাট ফসল তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। পাট ক্ষেতে কোন রকম সেচ অথবা পানি নিষ্কাশন প্রয়োজন হয় না। পাটের উৎপাদন বাংলাদেশে সবচাাইতে বেশি পাট উৎপন্ন হয় ফরিদপুর জেলায়। পাটের বিপণন পাট তিন পর্যায়ে বাজার জাত করা হয়। প্রথম পর্যায়ে ছোট ছোট বাজারে, দ্বিতীয় পর্যায়ে বড় বড় বাজারে এবং তৃতীয়পর্যায়ে দেশীয় পাটকল সমূহে এবং বিদেশী বাজারে রপ্তানী করা হয়। কৃষকের হাত হতে একটি বিপণন ব্যবস্থার মাধ্যমে পাট রপ্তানী করা হয়। মার্কেটিং প্রক্রিয়ায় মধ্যস্বত্ব ভোগীরা জড়িত রয়েছেন। এব্যবস্থায় ফড়িয়া, বেপারী, আড়তদার, দালাল, কাঁচাবেলার ও পাকা বেলাররা জড়িত থাকেন। পাটের ব্যবহার পাট পরিবেশ বান্ধব,বহুমুখী ব্যবহারযোগ্য আঁশ। শিল্প বিপ্লবের সময় ফ্লাক্স এবং হেম্প এর স্থান দখল করে পাটের যাত্রা শুরু। বস্তা তৈরির ক্ষেত্রে পাট এখনও গুরুত্বপূর্ণ। পাটের আঁশের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অন্য অনেক আঁশের সঙ্গে মিশ্রণ করে ব্যবহার করা যায়। টেক্সটাইলঃ প্রচলিত বয়ন শিল্পে পাটের উল্লেখযোগ্য ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে সুতা, পাকানো সুতা, বস্তা, চট, কার্পেট ব্যাকিং ইত্যাদি। পর্দার কাপড়, কুশন কভার, কার্পেট, ইত্যাদি পাট থেকে তৈরি হয়। গরম কাপড় তৈরীর জন্য উলের সঙ্গে মিশ্রণ করা হয়। মোড়কঃ কৃষি পণ্য এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি বস্তাবন্দি ও প্যাকিং করার জন্য ব্যাপকভাবে পাট ব্যবহার করা হয়। পাট খড়ি পাট চাষের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ। পাট আঁশের দ্বিগুণ পরিমাণ খড়ি উৎপাদিত হয়। ঘরের বেড়া, ছাউনী এবং জ্বালানী হিসাবে খড়ির ব্যবহার সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। উপজাতঃ পাটের আঁশের বহুমুখী ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে প্রসাধনী, ওষুধ, রং ইত্যাদি। পাট খড়ি জ্বালানী, ঘরের বেড়া, ঘরের চালের ছাউনীতে ব্যবহার হয়। বাঁশ এবং কাঠের বিকল্প হিসাবে পার্টিকেল বোর্ড, কাগজের মন্ড ও কাগজ তৈরিতেও পাট খড়ি ব্যবহৃত হয়।সম্প্রতি পাট থেকে জুট পলিমার তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন ড.মোবারক আহমেদ খান যা "সোনালি ব্যাগ" নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের অনেক এলাকায় পাটের কচি পাতাকে শাক হিসেবে রান্না করে খাওয়া হয়। চট্টগ্রামে অঞ্চলে এটি " নারিস শাক " হিসেবে পরিচিত। চিত্রশালা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ শস্য আঁশ শাক পাট মোড়কজাতকরণ উপাদান
https://en.wikipedia.org/wiki/Jute
Jute
Jute is a long, rough, shiny bast fibre that can be spun into coarse, strong threads. It is produced from flowering plants in the genus Corchorus, of the mallow family Malvaceae. The primary source of the fiber is Corchorus olitorius, but such fiber is considered inferior to that derived from Corchorus capsularis. Jute is one of the most affordable natural fibers and second only to cotton in the amount produced and variety of uses. Jute fibers, composed primarily of cellulose and lignin, are collected from bast (the phloem of the plant, sometimes called the "skin") of plants like kenaf, industrial hemp, flax (linen), and ramie. The industrial term for jute fiber is raw jute. The fibers are off-white to brown and range from 1–4 meters (3.3–13.1 ft) long. In Bangladesh, jute is called the "golden fiber" for its color and high cash value. The bulk of the jute trade is centered in South Asia, with India and Bangladesh as the primary producers. The majority of jute is used for durable and sustainable packaging, such as burlap sacks. Its production and usage declined as disposable plastic packaging became common, but this trend has begun to reverse as merchants and even nations phase out or ban single-use plastics.
2099
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%9F%E0%A6%BF%E0%A6%B2%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE
জটিল সংখ্যা
গণিতে জটিল সংখ্যা ()-কে বাস্তব সংখ্যার একটি গাণিতিক সম্প্রসারণ হিসেবে গণ্য করা হয়। কাল্পনিক একক i কে বাস্তব সংখ্যাসমূহের সাথে যুক্ত করে জটিল সংখ্যা পাওয়া যায়। i কে নিচের সমীকরণের সাহায্যে সংজ্ঞায়িত করা হয়: প্রতিটা জটিল সংখ্যাকেই a+ib আকারে লেখা যায়, যেখানে a এবং b বাস্তব সংখ্যা। a ও b-কে জটিল সংখ্যার বাস্তব অংশ এবং i-কে জটিল সংখ্যার কাল্পনিক অংশ বলা হয়। জটিল সংখ্যাগুলি একটি ফিল্ড তৈরি করে। এই কারণে এদের উপর যোগ, বিয়োগ, গুণ ও ভাগ—এই চারটি দ্বিমিক অপারেশন প্রয়োগ করা সম্ভব। এই জটিল সংখ্যার অপারেশনগুলি বাস্তব সংখ্যার অপারেশনগুলিরই সম্প্রসারিত রূপ। তবে জটিল সংখ্যার উপর প্রয়োগ করার সময় এসব অপারেশনের আরও কিছু কার্যকর বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন, কিছু জটিল সংখ্যাকে বর্গ করে ঋণাত্মক বাস্তব সংখ্যা পাওয়া সম্ভব। ইতালীয় গণিতবিদ জিরোলামো কার্দানো ত্রিঘাত সমীকরণ সমাধান করতে গিয়ে প্রথম জটিল সংখ্যা আবিষ্কার করেন। তিনি এগুলিকে "কাল্পনিক" অভিধা দিয়েছিলেন। সাধারণ ত্রিঘাত সমীকরণের সমাধান প্রক্রিয়ায় অনেক মধ্যবর্তী হিসেবের সময় এমন কিছু পদ চলে আসে যেগুলোতে ঋণাত্মক সংখ্যার বর্গমূল থাকে, এমনকি যখন মূল সমাধানে শুধু বাস্তব সংখ্যা থাকে তখনও। এই পর্যবেক্ষণ থেকেই বীজগণিতের মৌলিক উপপাদ্যের সৃষ্টি। এই উপপাদ্য অনুসারে জটিল সংখ্যার সাহায্যে এক বা একের বেশি মাত্রার যে কোন বহুপদী সমীকরণের সমাধান খুঁজে বের করা সম্ভব। জটিল সংখ্যার যোগ, বিয়োগ, গুণ এবং ভাগের নিয়ম প্রথমে তৈরি করেন ইতালীয় গণিতবিদ রাফায়েল বোমবেল্লি। আইরিশ গণিতবিদ উইলিয়াম রোয়ান হ্যামিলটন জটিল সংখ্যার আরও বিমূর্ত একটি বিধিবদ্ধ রূপ দেন। তিনি জটিল সংখ্যার তত্ত্বকে চতুষ্টির তত্ত্বে উন্নীত করেন। তড়িৎচৌম্বকত্ব, কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান, ফলিত গণিত, বিশৃঙ্খলা তত্ত্ব ছাড়াও প্রকৌশলের বিভিন্ন ক্ষেত্রে জটিল সংখ্যার প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাম থেকেও বোঝা যায় যে সেখানে এগুলিতে অন্তর্নিহিত গাণিতিক সংগঠন হিসেবে জটিল সংখ্যার ব্যবহার রয়েছে। যেমন- জটিল বিশ্লেষণ, জটিল ম্যট্রিক্স, জটিল বহুপদী এবং জটিল লি বীজগণিত। সংজ্ঞা প্রতীক পদ্ধতি একটি জটিল সংখ্যাকে সাধারণত a+ib আকারে প্রকাশ করা হয়, যেখানে a এবং b হচ্ছে বাস্তব সংখ্যা এবং i হচ্ছে কাল্পনিক একক, যেটি সূত্রটি মেনে চলে। বাস্তব সংখ্যা a কে বলা হয় জটিল সংখ্যাটির বাস্তব অংশ এবং বাস্তব সংখ্যা b কে বলা হয় জটিল সংখ্যাটির কাল্পনিক অংশ। যেমন- 3+2i একটা জটিল সংখ্যা, যার বাস্তব অংশ 3 এবং কাল্পনিক অংশ 2। যদি z = a + ib হয় তখন বাস্তব অংশ a কে প্রকাশ করা হয় Re(z) বা ℜ(z) এবং কাল্পনিক অংশ b কে প্রকাশ করা হয় Im(z) or ℑ(z) দ্বারা। জটিল সংখ্যার সার্বিক সেটকে C বা প্রতীক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। বাস্তব সংখ্যার সেট R কে বলা যেতে পারে জটিল সংখ্যার সেট C এর একটা উপসেট যেখানে বাস্তব সংখ্যাগুলি হলো সেইসব জটিল সংখ্যা যাদের কাল্পনিক অংশ শূন্য। অর্থাৎ, বাস্তব সংখ্যা a কে a+0iহিসেবে ভাবা যেতে পারে। যেসব জটিল সংখ্যার বাস্তব অংশ শূন্য তাদেরকে বলা হয় কাল্পনিক সংখ্যা, এবং 0+bi এর বদলে তাদেরকে শুধুমাত্র bi দ্বারা প্রকাশ করা হয়। এখন যদি a=0 এবং b = 1 হয় তখন 0+1i বা 1i লেখার বদলে সংখ্যাটিকে শুধু i লেখা হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে (বিশেষ করে তড়িৎ প্রকৌশলে, যেখানে i দ্বারা বর্তনীর বিদ্যুৎ প্রবাহ নির্দেশ করা হয়), কাল্পনিক একককে i এর বদলে j দ্বারা প্রকাশ করা হয়। তাই জটিল সংখ্যাকে কখনো কখনো a+bj আকারে লিখতে দেখা যায়। সমতা দুইটি জটিল সংখ্যাকে পরস্পরের সমান বলা হয় যদি এবং কেবল যদি তাদের বাস্তব অংশ এবং কাল্পনিক অংশ পরস্পর সমান হয়। অন্যভাবে বললে, দুইটি জটিল সংখ্যা a+ib এবং c+id পরস্পরের সমান হবে যদি এবং কেবল যদি a = c এবং b = d হয়। অপারেশন বাস্তব সংখ্যার ক্রমজোড় হিসাবে জটিল সংখ্যাকে বাস্তব সংখ্যার একটি ক্রমজোড় (x,y) হিসেবে উপস্থাপন করা যেতে পারে, যেখানে সংখ্যাটি হচ্ছে জটিল সমতলে একটি বিন্দু, যেখানে x এবং y হচ্ছে স্থানাংকের অক্ষ। ঠিক যেমন বাস্তব সংখ্যাগুলিকে সংখ্যারেখার উপর একটি বিন্দু হিসেবে প্রকাশ করা হয়। জটিল সংখ্যার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় জটিল সমতল বা জেড তল। এক্ষেত্রে x-অক্ষ বরাবর বাস্তব অংশ এবং y-অক্ষ বরাবর সংখ্যাটির অবাস্তব বা কাল্পনিক অংশ ধরা হয়। এখান থেকে সহজেই দেখা যায় (x,0) আকারের প্রতিটি জটিল সংখ্যাই আসলে জটিল সমতলে x-অক্ষ বরাবর একেকটা বিন্দু, যারা কিনা নিজেরা একই সাথে একেকটা বাস্তব সংখ্যা। এভাবে জটিল সমতলের x-অক্ষ বরাবর ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক দিকে যেতে থাকলে আমরা R এর প্রতিটি সংখ্যা অর্থাৎ প্রত্যেকটা বাস্তব সংখ্যাকেই খুজে পাব। তার মানে আমরা এই x-অক্ষ কে আমাদের পরিচিত সংখ্যারেখা হিসেবে ভাবতে পারি। অতএব, দেখা যাচ্ছে সংখ্যারেখার প্রতিটি বিন্দুই আসলে জটিল সমতলের অন্তর্ভুক্ত। এখান থেকে সহজেই দেখা যায় যে । যদি (x,y) ক্রমজোড়টিকে আমরা z নাম দেই তাহলে লেখা হয়। যেখানে এবং । দুইটি জটিল সংখ্যা এবং সমান হবে যদি তারা জটিল সমতলে একই বিন্দু নির্দেশ করে। অর্থাৎ হয়। তাদের যোগফল এবং গুণফল কে সংজ্ঞায়িত করা হয় যথাক্রমে: দ্বারা। লক্ষণীয় যে, এখানে বর্ণিত এই দুইটি অপারেশন হচ্ছে জটিল সংখ্যার সেটের উপর ক্রিয়াশীল দুইটি মৌলিক অপারেশন যারা বাস্তব সংখ্যার আনুসাঙ্গিক অপারেশন থেকে উৎসারিত। অর্থাৎ অপারেশনগুলোকে কোনোভাবে প্রতিপাদন করা হয়নি। শুধুমাত্র স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। যদি আমাদের আলোচ্য জটিল সংখ্যা দুইটির কাল্পনিক অংশ শূন্য হয়, তাহলে এই অপারেশন দুইটি বাস্তব সংখ্যার অপারেশনে পরিণত হয়। অর্থাৎ এবং এর জন্য। অর্থাৎ, জটিল সংখ্যা পদ্ধতি আসলে বাস্তব সংখ্যা পদ্ধতির একটা ‘ন্যাচারাল এক্সটেনশন’ বা ‘প্রাকৃতিক প্রবৃদ্ধি’ যে কোনো জটিল সংখ্যা কে একটু আগে বর্ণিত যোগের নিয়ম অনুসারে লেখা যেতে পারে এবং পূর্বে বর্ণিত গুণন এর নিয়ম অনুযায়ী একটু হিসাব করলেই আমরা পেতে পারি । অর্থাৎ, এখন আমরা যদি বাস্তব সংখ্যা x কে জটিল সমতলে ( x, 0 ) আকারে কল্পনা করি তাহলে দেখি যে এই সমীকরণে (y, 0) আসলে একটা বাস্তব সংখ্যা যেটি (0, 1) এর সাথে গুন হয়ে z এর অবাস্তব অংশ (0, y) তৈরি করছে। অর্থাৎ এই (0, 1) ই হল সেই কাল্পনিক একক যাকে আমরা এখন থেকে দ্বারা প্রকাশ করব। এখন (x, 0) আকারের রাশিসমূহকে শুধু x আকারে লিখলে আমরা পাই: যা আমাদের পরিচিত জটিল সংখ্যার আকার। এখন আমরা লক্ষ করি যে, অর্থাৎ যেখান থেকে আমাদের পরিচিত সূত্রটির সৃষ্টি। যদিও বর্গমূল অপারেশন টি ঋণাত্মক সংখ্যার উপর ধনাত্মক সংখ্যার মতো করে সংজ্ঞায়িত নয়। এই নোটেশনাল অ্যাবিউজ এর জন্য আমাদের প্রায়ই কিছু ভুল উপসংহারে পৌছাতে হয়। <ref>Ruel. V. Churchill & J. W. Brown, 'COMPLEX VERIABLES and APPLICATIONS, 2004, Mc Graw Hill, p. 1 </ref> বীজগাণিতিক ভিত্তিতে জটিল সংখ্যার যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ—এই সব অপারেশনই বীজগণিতের সহযোগী বিধি, বিনিময় বিধি, এবং বণ্টন বিধি মেনে চলে এবং সেই সাথে এই সমীকরণটি মেনে চলে। যোগ: বিয়োগ: গুণ: ভাগ: যেখানে c এবং d এর অন্তত একটি শূন্য নয়। জটিল সংখ্যার ফিল্ড একটি ফিল্ড হচ্ছে একটি বীজগাণিতিক সংগঠন যার যোগ, বিয়োগ, গুণ, এবং ভাগের অপারেশনগুলি কিছু নির্দিষ্ট বীজগাণিতিক নিয়ম মেনে চলে। জটিল সংখ্যাগুলি একটা ফিল্ড গঠন করে যাকে C দ্বারা প্রকাশ করা হয়। নির্দিষ্ট করে বললে, জটিল সংখ্যাগুলির জন্য: যোগাত্মক অভেদ ("শূন্য"), 0 + 0i; গুণাত্মক অভেদ ("এক"), 1 + 0i; যোগাত্মক বিপরীত, যেমন- a + bi এর যোগাত্মক বিপরীত −a − bi; প্রতিটি অশূন্য জটিল সংখ্যার ক্ষেত্রে একটি গুণাত্মক বিপরীত যেমন- a + bi-এর গুণাত্মক বিপরীত রয়েছে। এক্ষেত্রে দ্বিতীয় সংখ্যাটি অনোন্যক এর সমতুল্য। অন্যান্য ফিল্ডের মধ্যে আছে বাস্তব সংখ্যা এবং মূলদ সংখ্যাগুলি। যখন প্রতিটি বাস্তব সংখ্যা a কে জটিল সংখ্যা a + 0i আকারে প্রকাশ করা হয় তখন বাস্তব সংখ্যার ফিল্ড R জটিল সংখ্যার ফিল্ড  C -এর একটি উপফিল্ড গঠন করে। জটিল সংখ্যার সার্বিক সেট C-কে বীজগাণিতিক সংখ্যাসমূহের টপোগাণিতিক আবদ্ধতা হিসেবে অথবা R এর বীজগাণিতিক আবদ্ধতা হিসেবে দেখানো যেতে পারে। নিচে উভয়েরই বর্ণনা দেওয়া হল। জটিল সমতল জটিল সংখ্যা z কে দেখা যেতে পারে একটি দ্বিমাত্রিক কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থার উপর একটি অবস্থান ভেক্টর হিসেবে। এই দ্বিমাত্রিক কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থাকে কে বলা হয় জটিল সমতল বা কম্পলেক্স প্লেন অথবা জেন-রবার্ট আরগ্যান্ড এর নামানুসারে আরগ্যান্ড সমতল (see and )। একটা জটিল সংখ্যা z কে তাই কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় একটা বিন্দু হিসেবে ভাবা যায়। কার্তেসীয় স্থানাংক ব্যবস্থায় জটিল সংখ্যাটির x = Re(z) হচ্ছে x অক্ষ এবং একইভাবে y = Im(z) হচ্ছে y অক্ষ। একটি জটিল সংখ্যাকে এভাবে কার্তেসীয় আকারে প্রকাশিত রূপকে বলা হয় সংখ্যাটির আয়তাকার রূপ বা বীজগাণিতিক রূপ। পরম মান, অনুবন্ধী এবং দূরত্ব একটি জটিল সংখ্যা z=x+yi এর পরম মান (বা মডুলাস বা মান) হিসাব করা হয় দ্বারা। পরম মানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল: যেখানে হবে যদি এবং কেবল যদি হয়। (ত্রিভুজ অসমতা) এখানে z এবং w যেকোনো জটিল সংখ্যা। এখান থেকে আমরা পাই এবং . আমরা যদি জটিল সমতলে দূরত্বকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করি যে , তাহলে জটিল সংখ্যার সেটটা একটা মেট্রিক স্পেস এ পরিণত হয় এবং তখন আমরা লিমিট বা সীমা এবং অবিচ্ছিন্নতাকে সংজ্ঞায়িত করতে পারি। একটি জটিল সংখ্যা z=x+yi এর অনুবন্ধী জটিল হচ্ছে x-yi':, যেটাকে বা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। চিত্র হতে আমরা দেখি হচ্ছে x অক্ষের সাপেক্ষে z প্রতিবিম্ব। তাই এবং উভয়ই বাস্তব সংখ্যা। জটিল সংখ্যা এবং তাদের অনুবন্ধী নিয়ে বেশ কিছু অভেদ বা সূত্র আছে।   যদি এবং কেবল যদি z বাস্তব হয়   যদি এবং কেবল যদি z কাল্পনিক হয় অর্থাৎ z এর বাস্তব অংশ শূন্য হয়।   যদি z অশুন্য হয়. শেষের সূত্রটি বিশেষ ভাবে ব্যবহৃত হয় যখন z কে কার্টেসিয়ান কো-অর্ডিনেটে দেওয়া থাকে। জটিল সংখ্যার অপারেশন সমুহের জ্যামিতিক ব্যাখ্যা জটিল সংখ্যার যোগ, গুণ এবং অনুবন্ধীকরণ অপারেশন গুলো সাধারণ জ্যামিতিক ব্যাখ্যা মেনে চলে। জটিল সমতলে দুইটি বিন্দু A এবং B এর যোগফল X = A + B এমন যেন ত্রিভুজ 0, A, B, এবং ত্রিভুজ X, B, A, সর্বসম। দুইটি বিন্দু A এবং B এর গুনফল X = AB হচ্ছে এমন একটা বিন্দু যেন ত্রিভুজ 0, 1, A, এবং ত্রিভুজ 0, B, X,পরস্পর সদৃশ। একটি বিন্দু A এর অনুবন্ধী জটিল X = A* হচ্ছে এমন একটা বিন্দু যেন ত্রিভুজ 0, 1, A, এবং ত্রিভুজ 0, 1, X, x- অক্ষের সাপেক্ষে পরস্পরের প্রতিবিম্ব। এই জ্যামিতিক ইন্টারপ্রিটেশন এর সাহায্যে জ্যামিতিক সমস্যা কে অ্যালজেব্রিক (এখানে অ্যালজেব্রা শব্দটি প্রচলিত বীজগণিত থেকে একটু আলাদা) সমস্যায় পরিবর্তন করা যায় এবং একই ভাবে অ্যালজেব্রিক সমস্যাকে জ্যামিতিক সমস্যায় হিসেবে দেখা এবং সমাধান করা যায়। যেমন, একটা একটা সম ১৭-ভুজ তৈরির জ্যামিতিক সমস্যা কে অ্যালজেব্রিক্যালি x17 = 1 এই সমীকরণের সাহায্যে বিশ্লেষণ করা সম্ভব। যেখানে সমীকরণের সমাধান গুলো সেই ১৭-ভুজের শীর্ষ বিন্দুগুলো কে প্রতিনিধিত্ব করে। পোলার আকৃতি z = x+iy, এই কার্তেসীয় প্রকাশকে পোলার আকৃতিতেও প্রকাশ করা হয়। z এর আনুসাঙ্গিক পোলার স্থানাংকটি r =  |z| ≥ 0, যেটাকে বলা হয় পরম মান বা মডুলাস এবং φ = arg(z), যেটাকে বলা হয় z এর আর্গুমেন্ট অথবা কোণ. যদি r = 0 হয় তখন φ এর যেকোনো মানের জন্যই z একই বিন্দু নির্দেশ করে। এক্ষেত্রে একটা অনন্য প্রকাশ (ইউনিক রিপ্রেজেন্টেশন) পাওয়ার জন্য arg(0) = 0। ধরা হয়। যদি r > 0 হয় তখন আর্গুমেন্ট φ মডুলো 2π; অনন্য(ইউনিক) হয়। অর্থাৎ, যদি যেকোনো দুইটি জটিল সংখ্যার আর্গুমেন্ট এর পার্থক্য 2π এর গুণিতক হয়, তখন তাদেরকে ইকুইভ্যালেন্ট বা সমতুল্য ধরা হয়। অনন্য পাওয়ার জন্য φ এর মানকে অনেক সময় (-π,π], অর্থাৎ, −π < φ ≤ π ব্যবধিতে আবদ্ধ করা হয়। তখন এই আর্গুমেন্ট কে মুখ্য আর্গুমেন্ট বলে। এভাবে কোনো জটিল সংখ্যাকে তার পোলার স্থানাংকে প্রকাশ করলে তাকে বলা পোলার আকৃতি বলা হয়। পোলার আকৃতি থেকে কার্তেসীয় আকৃতিতে রূপান্তর কার্তেসীয় আকৃতি থেকে পোলার আকৃতিতে রূপান্তর (দেখুন আর্গ ফাংশন এবং atan2.) এই ফর্মুলা থেকে প্রাপ্ত φ এর মান (−π, +π] ব্যবধিতে আবদ্ধ। যেখানে y এর ঋণাত্মক মানের জন্য φ ও ঋণাত্মক। যদি শুধু মাত্র [0, 2π) ব্যবধির ধনাত্মক সংখ্যা প্রয়োজন হয়। তখন সূত্র থেকে প্রাপ্ত φ এই এর মানের সাথে 2π': যোগ করে নিতে হবে। পোলার আকৃতির চিহ্ন পোলার আকৃতিতে সাধারণত প্রকাশ করা হয় আকারে। এটাকে বলা হয় ত্রিকোণমিতিক আকৃতি, কখনো কখনোcis φ দ্বারা cos φ + i sin φ. বোঝানো হয় তখন লেখা হয় z = r cis φ অয়লার’স ফর্মুলা বা অয়লারের সূত্র ব্যবহার করে জটিল সংখ্যার আরেকটা সুন্দর প্রকাশ হচ্ছে যেটাকে বলা হয় এক্সপনেনশিয়াল আকৃতি পোলার আকৃতিতে গুণ, ভাগ, ঘাত এবং মূল নির্ণয় কার্তেসীয় আকৃতির চেয়ে পোলার আকৃতির এই অপারেশনসমূহ অনেক বেশি সহজ। ত্রিকোণমিতির সূত্রসমূহ ব্যবহার করে দেখানো যায় যেঃ এবং পূর্ণ সংখ্যার ঘাতের জন্য দ্য মরগানের সূত্র অনুসারে আমরা পাই, যেখান থেকে পাওয়া যায়, দুইটি জটিল সংখ্যার যোগ কোনো ভেক্টর সমতলে দুইটি ভেক্টরের যোগের মতোই। আর দুইটি জটিল সংখ্যার গুণকে দেখা যেতে পারে একই সাথে প্রয়োগ করা একটা রোটেশন বা ঘূর্ণন এবং স্ট্রেচিং বা বিবর্ধনের মত। i দিয়ে গুণ করাকে দেখা যেতে পারে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে একটা 90 ডিগ্রি (π/2 রেডিয়ান) ঘূর্ণন হিসাবে। তাই জ্যামিতিকভাবে দেখলে i 2 =  −1 সমীকরণের অর্থ হলো দুইটা 90 ডিগ্রি ঘূর্ণন অর্থাৎ একটা 180 ডিগ্রি (π রেডিয়ান) ঘূর্ণন. এমনকি এই হিসাবে (−1) • (−1) = +1 কে জ্যামিতিক ভাবে দেখা যেতে পারে দুইটা 180 ডিগ্রি ঘূর্ণন হিসাবে। যদি c একটি জটিল সংখ্যা হয় এবং n যদি একটা ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যা হয় তখন কোনো জটিল সংখ্যা z যদি zn = c এই সমীকরণ সিদ্ধ করে তাহলে z কে বলা হয় c এর n-তম মূল। যদি c=0 হয় তাহলে তার ঠিক n টি ভিন্ন ভিন্ন n-তম মূল থাকবে। এই n-তম মূল গুো কে পাওয়া যাবে যদি আমরা c কে লিখি হিসাবে যেখানে r > 0 and φ, হচ্ছে বাস্তব সংখ্যা তখন c এর n-মূ মূলসমুহের সেট হচ্ছে যেখানে দ্বারা বাস্তব সংখ্যা r এর প্রচলিত n-তম ধনাত্মক মূল কে বোঝানো হয়। যদি c = 0, হয় তখন c এর n-তম মূল হয় শুধু মাত্র 0। যেখানে n-তম মূল হিসাবে এই 0 এর মাল্টিপ্লিসিটি  n ধরা হয়। জটিল সংখ্যা সংক্রান্ত প্রচলিত ধারণা এবং অস্বচ্ছতা জটিল সংখ্যা কতটা জটিল/বাস্তব/অবাস্তব/কাল্পনিক? জটিল সংখ্যার সেটকে সংজ্ঞায়িত করা যায় এভাবে এখান থেকে আমরা সহজেই দেখি যে যখন b=0. ঐতিহাসিকভাবে দেখলে জটিল সংখ্যার থিওরি ডেভেলপড হয়েছে বাস্তব সংখ্যার বেশ পরে। আমরা আগেই দেখেছি এই ধরনের সমীকরণের সমাধান করতে গিয়ে এই জটিল বা কাল্পনিক সংখ্যার উৎপত্তি। যেখানে একটি সমাধান হিসেবে কে ধরা হয় যেন হয়। এই হলো আমাদের পরিচিত কাল্পনিক একক যার সাহায্যে গণিতের থিওরিসমূহ বাস্তব সংখ্যার সেট থেকে জটিল সংখ্যার সেটে উন্নীত হয়। অস্বচ্ছতার সূচনা জটিল সংখ্যা সম্পর্কে প্রথম অস্বচ্ছতার সূচনা হয় এর নামকরণ থেকে। ইংরেজি বা বাংলা, সব ভাষায় এই সংখ্যার পরিভাষা হচ্ছে ‘কম্পলেক্স’, ‘ইমাজিনারি’, ‘অবাস্তব’, ‘কাল্পনিক’ এবং সর্বোপরি ‘জটিল’ সংখ্যা। নাম শুনেই শিক্ষার্থীদের মনে সন্দেহপ্রবণতার সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। একজন শিক্ষার্থী যখন প্রথম যোগ বা বিয়োগ শেখে তখন পরিচিত হয় ধনাত্মক পূর্ণ সংখ্যার সাথে। তখনও পর্যন্ত সে জানে যে ছোট সংখ্যা থেকে বড় সংখ্যা বিয়োগ করা সম্ভব নয়। তার সামনে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হয় একটি ব্যাগে বলের সংখ্যার, বা একছড়া কলায় কলার সংখ্যা। এরপর যখন সে পাটিগণিত শেখে, তখন পরিচিত হয় ভগ্নাংশের সাথে। তখন সে এই ভগ্নাংশ বা দশমিক সংখ্যা কে কল্পনা করতে পারে অতিক্রান্ত দূরত্ব বা অন্যান্য উদাহরণ দিয়ে। যেমন, হয়তো একজন লোক ১ ১/২ কিমি. দূরত্ব অতিক্রম করেছে। এর পর বীজগণিত শেখার সময় যখন তার প্রথম পরিচয় হয় ঋণাত্মক সংখ্যার সাথে। এই সংখ্যাকে সে প্রথমে একটু সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিতে দেখে। কারণে এই সংখ্যার বাস্তব উদাহরণ সৃষ্টি করা সহজসাধ্য নয়। তার পরে এক সময় সে হয়ত এটা বুঝতে সেখে ঋণ এর ধারণা থেকে। যেমন, আমার কাছে কেউ 5 টাকা পায়, সেসময় আমার কাছে আর কোনো টাকা না থাকার অর্থ হলো ওই মুহূর্তে আমি -5 টাকার মালিক। কিন্তু এরপর উচ্চতর গণিত শিখতে গিয়ে সে যখন পরিচিত হয় জটিল সংখ্যার সাথে, তখন তার পক্ষে এরকম বাস্তব উদাহরণ খুঁজে বের করা মুশকিল হয়ে যায়। কিছু বহুপদীর মূল এর সাহায্যে উদাহরণ দেওয়া হলেও সেগুলো সন্তোষজনক মনে হয় না। উপরন্তু সংখ্যাটির নাম ‘জটিল সংখ্যা’ যার আবার একটা ‘কাল্পনিক’ অথবা ‘অবাস্তব’ অংশ আছে। নামকরণ থেকে প্রাপ্ত এই বিভ্রান্তিকর তথ্যের জন্য তার পক্ষে জটিল সংখ্যাকে একটা সংখ্যা হিসেবে ‘ইমেজ’ বা কল্পনা করা কঠিন (বেশিরভা তাহলে জটিল সংখ্যা কি? আসলে সকল সংখ্যাই কাল্পনিক!! আমাদের অতিপরিচিত সংখ্যা 1,2,3,... -1 বা এরা সবই আমাদের মনের কল্পনা ! এসব সংখ্যাকে আমরা কল্পনা করে নিয়েছি আমাদের বাস্তব জীবনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য এবং পর্যবেক্ষণের সাহায্যে নিশ্চিত হয়েছি যে আদর্শ অবস্থায় আমাদের গাণিতিক সমাধান গুলো ব্যবহারিক সমস্যার সমাধান হিসেবেও কাজ করে। এ বিষয়ে মনে করা যেতে পারে যে, সব ধরনের গণিতের সূচনাই হয় কিছু ‘স্বীকার্যের’ উপর ভিত্তি করে। যে স্বীকার্যগুলো আমরা প্রমাণ ছাড়াই মেনে নিই(আসলে প্রমাণ সম্ভব নয়)। শুধু এই ‘পর্যবেক্ষণ’ থেকে যে তারা বাস্তব সমস্যার সমাধানে কার্যকরী এবং স্ববিরোধী নয়। আমাদের পরিচিত বাস্তব সংখ্যা গুলিকে যেমন আমরা ব্যবহার করি বীজগণিত/পাটিগণিতের সাহায্যে আমাদের বাস্তব জগৎ এর সমস্যা সমাধান এর জন্য। তেমনি আমরা জটিল সংখ্যাকেও ব্যবহার করি কোয়ান্টাম মেকানিক্স, কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞান(দুইটি সম্পর্কিত, কিন্তু আলাদা বিষয়), কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রো ডাইনামিক্স ছাড়াও উচ্চতর গণিত বা বিজ্ঞানের এমন হাজার ক্ষেত্রে, যেখানে গাণিতিক সমীকরণ বা রাশিগুলো আমাদের বাস্তব জগৎ এর বিভিন্ন ঘটনা, পরিমাপ, এবং রাশিমালা নির্দেশ করে। আসলে বীজগণিত শেখার শুরুতে একজন শিক্ষার্থী যেমন প্রশ্ন করে, " এই সমীকরণের বাস্তব অর্থ কি? a এর সাথে b কে যোগ করে কি লাভ? a বা b কি কোনো সংখ্যা হতে পারে?” তেমনই জটিল সংখ্যা নাম শুনে এবং আর এ ধরনের (তখন পর্যন্ত তার গাণিতিক ধারণা অনুযায়ী) প্রথাবিবিরুদ্ধ সমীকরণ দেখে এবং এদের নাম “জটিল”, “অবাস্তব” এসব দেখে সে নিজেও এটাকে “অবাস্তব” ভাবতে শুরু করে। জটিল সংখ্যা শিক্ষার প্রাথমিক বাধা এটাই। অতএব, জটিল সংখ্যা ঠিক ততটাই জটিল বা কাল্পনিক বা বাস্তব যতটা জটিল বা কাল্পনিক বা বাস্তব অন্য আর সব সংখ্যা। তাই জটিল সংখ্যা, কাল্পনিক অংশ এসব নাম কে শাব্দিক অর্থে না নিয়ে জটিল সংখ্যা সম্পর্কে যে সঠিক চিত্রটা আমরা পেতে পারি তা হোল। জটিল সংখ্যাও আরেক ধরনের সংখ্যা, যেটা আর সব সংখ্যার মতোই, শুধু তাদের হিসাবের নিয়ম একটু আলাদা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও বাস্তব সমস্যা সমাধানের জন্য জটিল সংখ্যা অপরিহার্য অর্থাৎ, জটিল সংখ্যা অবাস্তব সংখ্যা নয়।(আক্ষরিক অর্থে) একটি প্রচলিত বিভ্রান্তি আমরা যখন জটিল সংখ্যার কাল্পনিক একক কে হিসাবে দেখি তখন সহজেই একটা সমীকরণে পৌছতে পারি। এই সমীকরণ ও শিক্ষার্থীদের কাছে জটিল সংখ্যাকে জটিল বা অবাস্তব মনে হবার আরেকটা কারণ। কিন্তু এর ব্যাখ্যা হচ্ছে। অপারেশন টি শুধু মাত্র তখনই ডিস্ট্রিবিউটিভ যখন a এবং b ধনাত্মক বাস্তব সংখ্যা। তাই সমীকরণটি অশুদ্ধ। এই ভুল থেকে বাঁচার জন্য গাউস কর্তৃক প্রস্তাবিত পন্থা হচ্ছে, বর্গমূল এর মধ্যে ঋনাত্মক সংখ্যা এসে গেলেই প্রথমেই সেটাকে আকারে লিখে নেওয়া যাতে পরবর্তীতে বর্গমূল চিহ্নের মধ্যে ঋনাত্মক চিহ্নের কোনো অপারেশন না হয়। বাস্তব সংখ্যার কাল্পনিক ঘাত: অয়লারের তত্ত্ব কোনো বাস্তব সংখ্যার কাল্পনিক ঘাত অয়লার এর তত্ত্ব অনুযায়ী বের করা যায়। তত্ত্ব টি নিম্নরূপ যেমনঃ প্রয়োগ "বাস্তব" এবং "কাল্পনিক" শব্দ দুটি অর্থবহ ছিল যখন জটিল সংখ্যাকে শুধু বাস্তব সংখ্যা সংক্রান্ত হিসাবে সাহায্যকারী ধারণা হিসাবে ব্যবহার করা হতো। যেখানে শুধু "বাস্তব অংশ" আক্ষরিক অর্থে "বাস্তব জগৎ"-এর প্রতিনিধিত্ব করত। পরবর্তীকালে, বিশেষ করে কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের আবিষ্কারের পরে দেখা যায় যে বাস্তব সংখ্যার প্রতি প্রকৃতির কোনো অতিরিক্ত প্রীতি নেই। বরং অনেক "বাস্তব" ঘটনাই গাণিতিকভাবে বর্ণনার সময় জটিল সংখ্যা অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। ফলে জটিল সংখ্যার সেই "কাল্পনিক অংশ" "বাস্তব অংশের" মতই ভৌত বাস্তবতা নিয়ে হাজির হয়। নিয়ন্ত্রণ তত্ত্ব নিয়ন্ত্রণ তত্ত্বে প্রায়ই ভৌত ব্যবস্থাকে লাপ্লাস রূপান্তরের মাধ্যমে সময় ডোমেইন থেকে ফ্রিকোএন্সি ডোমেন-এ নিয়ে যাওয়া হয়। এর পর সেই ব্যবস্থার পোল এবং জিরো কে জটিল সমতলে বিশ্লেষণ করা হয়। রুট লোকাস, নাইকুইস্ট প্লট এবং নিকোল প্লট এইসব বিশ্লেষণী পদ্ধতিতে জটিল সমতলকে ব্যবহার করা হয়। যেমন, রুট লোকাস পদ্ধতিতে পোল এবং জিরো সমুহ জটিল সমতলের বাম অর্ধতল নাকি ডান অর্ধতলে অবস্থিত তা বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ( অর্থাৎ, রুট এর বাস্তব অংশ শুন্য অপেক্ষা বড় নাকি ছোট)। যদি কোন সিস্টেমের পোল সমুহ, ডান অর্ধতলে থাকে, তাহলে এটা আনস্টেবল বাম অর্ধতলে থাকে, তাহলে স্টেবল যদি মাঝের অক্ষের উপর থাকে, তাহলে এটা মারজিনাল স্টেবল কোন সিস্টেমের জিরো যদি ডান অর্ধতলে থাকে তাহলে সিস্টেমটি ননমিনিমাম ফেজ সিস্টেম। সিগন্যাল বিশ্লেষণ সিগন্যাল বিশ্লেষণ এবং অন্য আরও কিছু ক্ষেত্রে জটিল সংখ্যাকে পর্যায়বৃত্ত ভাবে পরিবর্তনশীল সিগন্যাল এর গাণিতিক প্রকাশে ব্যবহার করা হয়। সাইন এবং কোসাইন দ্বারা প্রকাশিত কোনো বাস্তব ফাংশন যার প্রকাশে জটিল ফাংশন ব্যবহৃত হয় এবং সেখানে জটিল ফাংশনের বাস্তব অংশ সেই সিস্টেমের ভৌত পরিমাপ সমূহ প্রকাশ করে। যেমন নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের একটা সাইন তরঙ্গের জটিল প্রকাশে পরম মান |z| দ্বারা বিস্তার এবং আর্গুমেন্ট arg(z) দ্বারা ফেজ বা দশা নির্দেশিত হয়। যেখানে z হচ্ছে সেই সাইন তরঙ্গের জটিল সংখ্যায় প্রকাশিত রূপ। ফুরিয়ার বিশ্লেষণে সময় কোনো সিগন্যালকে (যেটা বাস্তব সংখ্যার একটি ফাংশন আকারে প্রকাশিত) অনেকগুলো পর্যায়বৃত্ত ফাংশনের সমষ্টি আকারে প্রকাশ করতে জটিল সংখ্যার ফাংশন ব্যবহৃত হয়। এক্ষেত্রে ব্যবহৃত পর্যায়বৃত্ত ফাংশনগুলি এই, আকারের। ω দ্বারা কৌণিক গতি বোঝানো হয় এবং জটিল সংখ্যা z, পূর্বে বর্ণিত পদ্ধতিতে একই সাথে বিস্তার এবং দশা উভয়কেই ধারণ করে। তড়িৎ প্রকৌশলে পরিবর্তনশীল বিভব এবং তড়িৎ প্রবাহের বিশ্লেষণে ফুরিয়ার ট্রান্সফর্ম ব্যবহৃত হয়। রোধ, ধারক এবং আবেশক কে জটিল সংখ্যার সাহায্যে কম্পাঙ্কনির্ভর একটা একীভূত রাশিতে প্রকাশ করা হয়। যাকে আমরা বলি ইম্পিডেন্স. (যেহেতু i দ্বারা পরিবর্তী প্রবাহ প্রকাশ করে সেহেতু তড়িৎ প্রকৌশলি এবং পদার্থ বিজ্ঞানীগণ অনেক সময় কাল্পনিক একক i কে j লিখে প্রকাশ করে থাকে)। ইম্পিডেন্সের সাহায্যে পরিবর্তী প্রবাহ এবং বিভবের বিশ্লেষণে ব্যবহৃত এই গাণিতিক প্রক্রিয়াকে বলা হয় ফেজর ক্যালকুল্যাস। এই পদ্ধতিকে সম্প্রসারিত করে ডিজিটাল সিগন্যাল প্রসেসিং এবং ডিজিটাল ইমেজ প্রসেসিং এ প্রয়োগ করা হয়। যেখানে সিগন্যাল ট্রান্সমিট, কম্প্রেস এবং পুনরুদ্ধারে ফুরিয়ার বিশ্লেষণে ব্যবহৃত হয়। ইমপ্রোপ্রার ইন্টিগ্রাল ফলিত গণিতে অনেক বাস্তব সংখ্যার ফাংশনের ইম্প্রোপার ইন্টিগ্রাল বের করার জন্য জটিল সংখ্যার ফাংশন ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। (দেখুন কন্টুর ইন্টিগ্রেশন) কোয়ান্টাম মেকানিক্স জটিল সংখ্যার ফিল্ড কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের গাণিতিক সূত্রায়নের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। যেখানে সাধারণত জটিল সংখ্যা ভিত্তিক হিলবার্ট স্পেস কে অন্তর্নিহিত গাণিতিক সংগঠন হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্সের মূল ভিত্তি- তথা শ্রোডিঙার সমীকরণ এবং হাইজেনবার্গের মেট্রিক্স মেকানিক্স- জটিল সংখ্যার সাহায্যে গঠিত। আপেক্ষিকতা বিশেষ আপেক্ষিকতা এবং সাধারণ আপেক্ষিকতাতে স্পেস-টাইম বা স্থান-কালএর মেট্রিকসংক্রান্ত কিছু সমীকরণ অনেক সরল হয়ে যায় যদি সময় কে কাল্পনিক সংখ্যার চলক হিসাবে প্রকাশ করা হয় (ক্লাসিক্যাল রিলেটিভিটিতে এধরনের ব্যবহার তেমন না থকলেও কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরিতে এটা অত্যাবশ্যক)। আপেক্ষিকতায় ব্যবহৃত স্পিনর (সেটা টেন্সর এর একটা সাধারণীকৃত রূপ) এর জন্যেও জটিল সংখ্যা অত্যাবশ্যক। ফলিত গণিত ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশনের সমাধানের সময় সাধারণত, প্রথমে ক্যারেক্ট্যারিস্টিক ইকুয়েশনের জটিল মূল গুলো নির্ণয় এবং এর পরে পুরো সিস্টেম কে f(t) = ert আকারের বেস ফাংশনের সাপেক্ষে সমাধান করা হয়। ফ্লুইড ডাইনামিক্স ফ্লুইড ডাইনামিক্সে জটিল সংখ্যার ফাংশন দ্বারা দ্বিমাত্রিক পোটেনশিয়াল ফ্লো প্রকাশ করা হয়। ফ্র্যাক্টাল কিছু কিছু ফ্র্যাক্টাল জটিল সমতলে প্লট করা হয়। যেমন, ম্যান্ডেলব্রট সেট এবং জুলিয়া সেট ইত্যাদি। পাদটীকা তথ্যসূত্র গাণিতিক তথ্যসূত্র ঐতিহাসিক তথ্যসূত্র A gentle introduction to the history of complex numbers and the beginnings of complex analysis. An advanced perspective on the historical development of the concept of number. অতিরিক্ত তথ্যের জন্য দেখুন The Road to Reality: A Complete Guide to the Laws of the Universe, by Roger Penrose; Alfred A. Knopf, 2005; . Chapters 4-7 in particular deal extensively (and enthusiastically) with complex numbers. Unknown Quantity: A Real and Imaginary History of Algebra, by John Derbyshire; Joseph Henry Press; (hardcover 2006). A very readable history with emphasis on solving polynomial equations and the structures of modern algebra. Visual Complex Analysis, by Tristan Needham; Clarendon Press; (hardcover, 1997). History of complex numbers and complex analysis with compelling and useful visual interpretations. পরিভাষা (পড়বার সূত্র: English term (বাংলা লিপিতে ইংরেজি শব্দের ধ্বনিভিত্তিক উচ্চারণ) - বাংলা পরিভাষা) Mathematical expansion (ম্যাথাম্যাটিক্‌ল্‌ ইক্‌স্‌প্যান্‌শ্‌ন্‌) - গাণিতিক সম্প্রসারণ Binary operation (বাইনারি অপারেইশ্‌ন্‌) - দ্বিমিক প্রক্রিয়া Theory of Quarternion (থিআরি অভ় কোঅর্‌টার্‌নাইঅন্‌) - চতুষ্টির তত্ত্ব Associative rule (আসৌশেটিভ্‌ রুল্‌, মার্কিনী উচ্চারণ আসৌশিয়েইটিভ্‌ রুল্‌) - সহযোগী বিধি Commutative rule (কমিউটেটিভ রুল্‌) - বিনিমেয় বিধি Distributive rule (ডিস্‌ট্রিবিউটিভ্‌ রুল্‌) - বণ্টন বিধি Algebraic structure (অ্যাল্‌জিব্‌রেইক্‌ স্ট্রাক্‌চার্‌) - বীজগাণিতিক সংগঠন Additive identity (অ্যাডিটিভ্‌ আইডেন্‌টাটি) - যোগাত্মক অভেদ Multiplicative identity (মাল্‌টিপ্লিকাটিভ্‌ আইডেন্‌টাটি) - গুণাত্মক অভেদ Additive inverse (অ্যাডিটিভ্‌ ইন্‌ভার্স্‌) - যোগাত্মক বিপরীত Multiplicative inverse (মাল্‌টিপ্লিকাটিভ্‌ ইন্‌ভার্স্‌) - গুণাত্মক বিপরীত Field (ফীল্‌ড্‌) - ফিল্ড Subfield (সাব্‌ফীল্‌ড্‌) - উপফিল্ড Algerbraic number (অ্যাল্‌জিব্‌রেইক্‌ নাম্‌বার্‌) - বীজগাণিতিক সংখ্যা Topological closure (টপোলজিক্‌ল্‌ ক্লৌঝ়ার্‌) - টপোগাণিতিক আবদ্ধতা Algebraic closure (অ্যাল্‌জিব্‌রেইক্‌ ক্লৌঝ়ার্‌) - বীজগাণিতিক আবদ্ধতা বহিঃসংযোগ সমূহ Euler's work on Complex Roots of Polynomials at Convergence John and Betty's Journey Through Complex Numbers "Argand Diagram" by এরিক ডব্লিউ. ওয়াইস্টাইন, The Wolfram Demonstrations Project, 2007, and Argand Diagram on Weisstein's ম্যাথওয়ার্ল্ড. Complex Numbers Module by John H. Mathews সংখ্যা জটিল সংখ্যা
https://en.wikipedia.org/wiki/Complex_number
Complex number
In mathematics, a complex number is an element of a number system that extends the real numbers with a specific element denoted i, called the imaginary unit and satisfying the equation i 2 = − 1 {\displaystyle i^{2}=-1} ; every complex number can be expressed in the form a + b i {\displaystyle a+bi} , where a and b are real numbers. Because no real number satisfies the above equation, i was called an imaginary number by René Descartes. For the complex number a + b i {\displaystyle a+bi} , a is called the real part, and b is called the imaginary part. The set of complex numbers is denoted by either of the symbols C {\displaystyle \mathbb {C} } or C. Despite the historical nomenclature, "imaginary" complex numbers have a mathematical existence as firm as that of the real numbers, and they are fundamental tools in the scientific description of the natural world. Complex numbers allow solutions to all polynomial equations, even those that have no solutions in real numbers. More precisely, the fundamental theorem of algebra asserts that every non-constant polynomial equation with real or complex coefficients has a solution which is a complex number. For example, the equation ( x + 1 ) 2 = − 9 {\displaystyle (x+1)^{2}=-9} has no real solution, because the square of a real number cannot be negative, but has the two nonreal complex solutions − 1 + 3 i {\displaystyle -1+3i} and − 1 − 3 i {\displaystyle -1-3i} . Addition, subtraction and multiplication of complex numbers can be naturally defined by using the rule i 2 = − 1 {\displaystyle i^{2}=-1} along with the associative, commutative, and distributive laws. Every nonzero complex number has a multiplicative inverse. This makes the complex numbers a field with the real numbers as a subfield. The complex numbers also form a real vector space of dimension two, with { 1 , i } {\displaystyle \{1,i\}} as a standard basis. This standard basis makes the complex numbers a Cartesian plane, called the complex plane. This allows a geometric interpretation of the complex numbers and their operations, and conversely some geometric objects and operations can be expressed in terms of complex numbers. For example, the real numbers form the real line, which is pictured as the horizontal axis of the complex plane, while real multiples of i {\displaystyle i} are the vertical axis. A complex number can also be defined by its geometric polar coordinates: the radius is called the absolute value of the complex number, while the angle from the positive real axis is called the argument of the complex number. The complex numbers of absolute value one form the unit circle. Adding a fixed complex number to all complex numbers defines a translation in the complex plane, and multiplying by a fixed complex number is a similarity centered at the origin (dilating by the absolute value, and rotating by the argument). The operation of complex conjugation is the reflection symmetry with respect to the real axis. The complex numbers form a rich structure that is simultaneously an algebraically closed field, a commutative algebra over the reals, and a Euclidean vector space of dimension two.
2100
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%AC%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE
বাস্তব সংখ্যা
গণিতে, বাস্তব সংখ্যা (ইংরেজি:Real number) হলো একটি অবিচ্ছিন্ন পরিমাণের মান যা একটি রেখা বরাবর দূরত্ব উপস্থাপন করে বা প্রদর্শন করে। অন্যভাবে বলা যায়, বাস্তব সংখ্যা হলো একটি পরিমাণ যাকে একটি অসীম সংখ্যক দশমিক প্রসারণ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়। সপ্তদশ শতাব্দীতে, রেনে দেকার্ত, সর্বপ্রথম বহুপদী সমীকরণের বাস্তব এবং কাল্পনিক মূল বা বীজ এর পার্থক্য নির্দেশ করতে রিয়েল বা বাস্তব বিশেষণটি ব্যবহার করেন। বাস্তব সংখ্যা বলতে সকল মূলদ সংখ্যা যেমন: পূর্ণ সংখ্যা (–৫) এবং ভগ্নাংশ বা ৪/৩ এবং সকল অমূলদ সংখ্যা যেমন- ২ এর বর্গমূল বা (১.৪১৪২১৩৫৬. . .) যা একটি বীজগাণিতিক সংখ্যা প্রভৃতি অন্তর্ভুক্ত। এছাড়া, সকল ট্রান্সেডেন্টাল বা তুরীয় সংখ্যা যেমন- (৩.১৪১৫৯২৬৫...)। বাস্তব সংখ্যা প্রায়শ পর্যবেক্ষণযোগ্য ভৌত বিষয় যেমন- সময়, ভর, শক্তি এবং একক মাত্রা, দূরত্ব, গতিবেগ, ত্বরণ, বল, ভরবেগ প্রভৃতি পরিমাপকরণে ব্যবহৃত হয়। বাস্তব সংখ্যার সেটকে R অথবা এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। বাস্তব সংখ্যাগুলোকে একটি অসীম দৈর্ঘ্যের সরলরেখায় অবস্থিত পরস্পর সমদূরবর্তী অসংখ্য বিন্দু দিয়ে প্রকাশ করা হয়। এই রেখাকে বলা হয়, সংখ্যারেখা বা বাস্তব সংখ্যা রেখা। যেকোনো বাস্তব সংখ্যা একটি সম্ভাব্য অসীম দশমিক উপস্থাপনা দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে, যেমন- ৮.৬৩২ যেখানে প্রতিটি ক্রমিক অঙ্ক পূর্ববর্তী সংখ্যার এক দশমাংশের একক হিসেবে পরিমাপ করা হয়। বাস্তব সংখ্যারেখাকে একটি জটিল সমতলের অংশ ধরা হয় এবং বাস্তব সংখ্যাগুলো হলো ঐ সমতলে অবস্থিত জটিল সংখ্যার অংশ। বিশুদ্ধ গণিতের আধুনিক মান অনুযায়ী, বাস্তব সংখ্যার উপরিউক্ত বিবরণ যথেষ্ট সুসংজ্ঞায়িত নয়। প্রকৃতপক্ষে, উনবিংশ শতকের গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিকাশগুলোর মধ্যে একটি হলো- বাস্তব সংখ্যার সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ণয় ও তা অনুধাবন। বর্তমান আদর্শ স্বতঃসিদ্ধ সংজ্ঞা হলো যে, বাস্তব সংখ্যাগুলো আইসোমরফিজম পর্যন্ত একটি অনন্য ডিডেকাইন্ড-কমপ্লিট অর্ডারড ক্ষেত্র তৈরি করে। অন্যদিকে, বাস্তব সংখ্যার জনপ্রিয় গঠনমূলক সংজ্ঞা হলো- (মূলদ সংখ্যার) কচি অনুক্রম, ডিডেকাইন্ড কাট, ও অসীম দশমিক প্রসারণ এর গাণিতিক প্রক্রিয়া এবং ক্রম সম্পর্ক সহ একত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা অন্তর্ভুক্ত করে। এসব সংজ্ঞা, স্বতঃসিদ্ধ সংজ্ঞার সমার্থক ও সমতুল্য। বাস্তব সংখ্যার সেট অসংখ্য সেট। এই অর্থে যে, সমস্ত স্বাভাবিক সংখ্যার সেট এবং সব বাস্তব সংখ্যার সেট উভয়ই অসীম সেট, বাস্তব সংখ্যা থেকে স্বাভাবিক সংখ্যা পর্যন্ত কোনো এক-এক অপেক্ষক হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, সকল বাস্তব সংখ্যার অঙ্কবাচকতা প্রকাশ করা হয় "" এই প্রতীক দিয়ে এবং একে কনটিয়ামের অঙ্কবাচকতা বলা হয়। আরো উল্লেখ্য যে, এটি অবশ্যই সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেট (যাকে , 'আলেফ-নট' বলা হয়) এর থেকে বৃহত্তম হবে। বাস্তব সংখ্যার অঙ্কবাচকতার এমন কোনো উপসেট নেই, যা সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে থেকে বৃহত্তর এবং সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্টভাবে থেকে ক্ষুদ্রতর।— এমন বিবৃতিকে কনটিনিয়াম হাইপোথিসিস বলা হয়। আধুনিক গণিতশাস্ত্রের আদর্শ সংস্থা এর মতে— জারমেলো-ফ্রেংকেল সেট তত্ত্ব এবং নির্বাচন স্বতঃসিদ্ধ বা (জেএফসি) অনুযায়ী উপরিউক্ত বিবৃতিটি প্রমাণযোগ্যও নয়, আবার, খণ্ডনযোগ্যও নয়। বস্তুত, জেএফসি-এর কিছু মডেল কনটিনিয়াম হাইপোথিসিস এর শর্ত পূরণ করলেও, অন্যগুলো তা লঙ্ঘন করে। ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ১০০০ অব্দ নাগাদ প্রাচীন মিশরীয়গণ সাধারণ ভগ্নাংশের ব্যবহার জানত; আবার, খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ অব্দ নাগাদ প্রাচীন বৈদিক যুগে শূল্ব সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়, যেখানে অমূলদ সংখ্যার বর্ণনা উল্লেখযোগ্য। খ্রিস্টপূর্ব ৭৫০-৬৯০ অব্দের দিকে ভারতীয় গণিতবিদ যেমন- মানব সংখ্যার অমূলদত্ব সম্পর্কে জানতেন। তিনি কিছু সংখ্যার বর্গমূল নির্ণয় করেন, যেমন- ২ ও ৬২ এর বর্গমূল। তবে তিনি এই সংখ্যাগুলোর বর্গমূল পুরোপুরি নিঁখুতভাবে নির্ণয় করতে পারেন নি। প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দের দিকে গ্রিক গণিতবিদ পিথাগোরাস অমূলদ সংখ্যার গুরুত্ব অনুধাবন করেন ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অমূলদ সংখ্যা ব্যবহার করেন। তিনি ২ এর বর্গমূলের অমূলদত্ব ব্যাখ্যা করেন। মধ্যযুগে, ভারতীয় ও চীনা গণিতবিদগণ শূন্য, ঋণাত্মক সংখ্যা, পূর্ণসংখ্যা এবং ভগ্নাংশ সংখ্যা সম্পর্কে অবগত হয় এবং বিভিন্নক্ষেত্রে এগুলো ব্যবহার করতে থাকে। পরবর্তীতে, এসব গণিতবিদদের হাত ধরে আরবীয় গণিতবিদগণ উপরিউক্ত সংখ্যা ও অমূলদ সংখ্যা ধারণার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করে। আরবীয় গণিতবিদগণ অমূলদ সংখ্যাকে বীজগাণিতিক বিষয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং এর ফলে তাদের দ্বারা অ্যালজেব্রা বা বীজগণিতের উদ্ভব ও বিস্তৃত বিকাশ সাধিত হয়। আরবীয় গণিতবিদগণ সংখ্যা এবং ব্যাপকতাকে একীভূত করে বাস্তব সংখ্যা ধারণা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন। মিশরীয় গণিতবিদ আবু কামিল শুজা ইবনে আসলাম (৮৫০-৯৩০ খ্রিস্টাব্দ) সর্বপ্রথম অমূলদ সংখ্যার সাহায্যে দ্বিঘাত সমীকরণের সমাধান নির্ণয় করেন। এছাড়া, তিনি সমীকরণের সহগ, যা প্রায়শ বর্গমূল, ঘনমূল এবং চতুর্থক মূল পর্যন্ত হয়, তা নির্ণয় করেন অমূলদ সংখ্যা বা বাস্তব সংখ্যার সাহায্যে। ষোড়শ শতকে, সাইমন স্টিভিন আধুনিক দশভিত্তিক সংখ্যা পদ্ধতির ভিত্তি ব্যাখ্যা করেন দিয়ে এবং জোর দিয়ে বলেন যে, দশ ভিত্তিতে মূলদ এবং অমূলদ সংখ্যার কার্যপদ্ধতির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সপ্তদশ শতাব্দীতে, ডেকার্ত প্রথম বহুপদী সমীকরণের বীজ নির্ণয়ে "রিয়েল" বা "বাস্তব" শব্দ প্রয়োগ করেন। তিনি দেখান যে, বাস্তব সংখ্যা, "কাল্পনিক" বা "অবাস্তব" সংখ্যা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। ১৮দশ এবং ১৯শ শতকে, বাস্তব সংখ্যার অংশ অমূলদ সংখ্যা ও তুরীয় সংখ্যা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা হয়েছে৷ জন হেনরিচ ল্যাম্বার্ট (১৭৬১) প্রথম প্রমাণ করেন যে, পাই মূলদ সংখ্যা হতে পারে না; যদিও প্রমাণটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। পরবর্তীতে, অ্যাড্রিয়েন ম্যারি ল্যাগেনড্রি (১৭৯৪) প্রমাণটি সম্পূর্ণ করেন, এবং আরো প্রমাণ করেন যে, পাই কোনো মূলদ সংখ্যার বর্গমূল নয়। পাওলো রুফিনি (১৭৯৯) এবং নিলস্ হেনরিক আবেল (১৮৪২) উভয়েই আবেল-রুফিনি উপপাদ্য আবিষ্কার করেন এবং প্রমাণ করেন, পাটিগণিতীয় গাণিতিক প্রক্রিয়া ও সমীকরণের বীজ যুক্ত সাধারণ সূত্র দিয়ে, কুইন্টিক বা উচ্চতর সমীকরণগুলো সমাধান করা যাবে না। ফরাসি গণিতবিদ এভরিস্টে গ্যালোস (১৮৩২), একটি প্রদত্ত সমীকরণ সমাধানে র্যাডিকেল বা সমীকরণ বীজ ব্যবহার করার কৌশল আবিষ্কার করেন ও প্রদর্শন করেন। যাকে গ্যালোস তত্ত্ব বলা হয় ও যা সমীকরণ সমাধানে নতুন দিগন্ত তৈরি করে। ফরাসি গণিতবিদ জোসেফ লিউভল (১৮৪০) প্রমাণ করেন যে, e অথবা e২, পূর্ণসংখ্যা ভিত্তিক দ্বিঘাত সমীকরণের বীজ বা মূল হতে পারবে না। তিনি আরো প্রমাণ করেন, তুরীয় সংখ্যার অস্তিত্ব রয়েছে। জর্জ ক্যান্টর (১৮৭৩) এই প্রমাণটি সম্প্রসারণ করেন এবং খুব সংক্ষিপ্তভাবে পুনরায় এটি প্রমাণ করেন। চার্লস হারমাইট (১৮৭৩) সর্বপ্রথম প্রমাণ করেন, '''e''' একটি ট্রানসেডেনটাল বা তুরীয় সংখ্যা। জার্মান গণিতবিদ ফার্ডিনান্দ ভন লিন্ডম্যান (১৮৮২) প্রমাণ করেন, একটি ট্রানসেডেনটাল বা তুরীয় সংখ্যা। পরবর্তীতে, ওয়েরসট্রাস (১৮৮৫), লিন্ডম্যানের প্রমাণকে সরলীকরণ করেন, আরো পরে ডেভিড হিলবার্ট (১৮৯৩) এবং সর্বশেষ অ্যাডলফ হারউইটজ ও পল গর্ডন আধুনিকভাবে ঐ প্রমাণটি সম্পাদন করেন। ১৮ শতকে ক্যালকুলাসের বিকাশে বাস্তব সংখ্যার সম্পূর্ণ সেটকে সুস্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না করেই ব্যবহার করা হতো। ১৮৭১ সালে জর্জ ক্যান্টর সুস্পষ্টভাবে ক্যালকুলাসে বাস্তব সংখ্যা সফল প্রয়োগ করেন। প্রথম সুস্পষ্ট সংজ্ঞা ১৮৭১ সালে জর্জ ক্যানটর দ্বারা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৮৭৪ সালে, তিনি দেখিয়েছেন, সমস্ত বাস্তব সংখ্যার সেট অগণিতভাবে অসীম, কিন্তু সমস্ত বীজগাণিতিক সংখ্যার সেট গণনাযোগ্যভাবে অসীম। ব্যাপকভাবে প্রচলিত বিশ্বাসের পরিবর্তে বিশ্বাস করা হয়, তাঁর প্রথম পদ্ধতিটি, ১৮৭১ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত ডায়গোনাল আর্গিউমেন্ট নয়। শ্রেণিবিভাগ বাস্তব সংখ্যাকে দুই শ্রেণীতে ভাগ করা যায়: মূলদ সংখ্যা এবং অমূলদ সংখ্যা বাস্তব সংখ্যার স্বীকার্যসমূহ যে সকল স্বীকার্যসমূহের উপরে বাস্তব সংখ্যা ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত সেগুলি হচ্ছেঃ আবদ্ধতা (Closure) অনন্যতা (Uniqueness) বিনিময়যোগ্যতা (Commutativity) সংযোজনযোগ্যতা (Associativity) বণ্টনযোগ্যতা (Distributivity) অভেদকের অস্তিত্ব (Existence of identity) বিপরীতকের অস্তিত্ব (Existence of inverse) ব্যাবহার যোগ্যতা। ইত্যাদি তথ্যসূত্র সংখ্যা বাস্তব সংখ্যা প্রাথমিক গণিত
https://en.wikipedia.org/wiki/Real_number
Real number
In mathematics, a real number is a number that can be used to measure a continuous one-dimensional quantity such as a distance, duration or temperature. Here, continuous means that pairs of values can have arbitrarily small differences. Every real number can be almost uniquely represented by an infinite decimal expansion. The real numbers are fundamental in calculus (and more generally in all mathematics), in particular by their role in the classical definitions of limits, continuity and derivatives. The set of real numbers, sometimes called "the reals", is traditionally denoted by a bold R, often using blackboard bold, ⁠ R {\displaystyle \mathbb {R} } ⁠. The adjective real, used in the 17th century by René Descartes, distinguishes real numbers from imaginary numbers such as the square roots of −1. The real numbers include the rational numbers, such as the integer −5 and the fraction 4 / 3. The rest of the real numbers are called irrational numbers. Some irrational numbers (as well as all the rationals) are the root of a polynomial with integer coefficients, such as the square root √2 = 1.414...; these are called algebraic numbers. There are also real numbers which are not, such as π = 3.1415...; these are called transcendental numbers. Real numbers can be thought of as all points on a line called the number line or real line, where the points corresponding to integers (..., −2, −1, 0, 1, 2, ...) are equally spaced. Conversely, analytic geometry is the association of points on lines (especially axis lines) to real numbers such that geometric displacements are proportional to differences between corresponding numbers. The informal descriptions above of the real numbers are not sufficient for ensuring the correctness of proofs of theorems involving real numbers. The realization that a better definition was needed, and the elaboration of such a definition was a major development of 19th-century mathematics and is the foundation of real analysis, the study of real functions and real-valued sequences. A current axiomatic definition is that real numbers form the unique (up to an isomorphism) Dedekind-complete ordered field. Other common definitions of real numbers include equivalence classes of Cauchy sequences (of rational numbers), Dedekind cuts, and infinite decimal representations. All these definitions satisfy the axiomatic definition and are thus equivalent.
2101
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%A6%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE
মূলদ সংখ্যা
মূলদ সংখ্যা(Rational Number) হচ্ছে সেই সকল বাস্তব সংখ্যা যাদের (ভগ্নাংশ) আকারে প্রকাশ করা যায়। যেখানে এবং উভয় পূর্ণ সংখ্যা, ও সহমৌলিক সংখ্যা এবং । সাধারণ ধারণা যেকোন পূর্ণ সংখ্যা একটি মূলদ সংখ্যা। মূলদ সংখ্যা হচ্ছে সেই সংখ্যা যে সংখ্যাকে দুইটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে (শূন্য দিয়ে ভাগ করা ছাড়া) প্রকাশ করা যায়। মূলদ সংখ্যাকে দশমিক আকারেও প্রকাশ করা যায় এবং তা হয় সসীম ঘর দশমিক (যেমন: ১.২৯, ৫.৬৯৮৭, ৮.৯৭৯৮৭) অথবা পৌনঃপুনিক (recurrent) দশমিক (যেমন: ১.৬৩৬৩৬৩৬৩৬৩, ৪.৬৯৬৯৬৯৬৯৬৯, .১০১১০১১০১১০১)। সব পূর্ণসংখ্যাই মূলদ সংখ্যা (কারণ যদি একটি পূর্ণসংখ্যা হয়, তবে । সুতরাং, কে দুইটি পূর্ণসংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যাচ্ছে)। অর্থাৎ, , , , , , ইত্যাদি সবই মূলদ সংখ্যা। এছাড়া সব ভগ্নাংশগুলিও (যেমন , , , ইত্যাদি) মূলদ সংখ্যা। অর্থাৎ মূলদ সংখ্যাসূমহ তিন ভাবে প্রকাশ করা যায়। (এখানে কিছু মূলদ সংখ্যার উদাহরণ দেওয়া হলো:) {| class="wikitable sortable" |- | ধরণ ! উদাহরণ-০১ ! ব্যাখ্যা ! উদাহরণ-০২ ! ব্যাখ্যা |- ! ভগ্নাংশ | দশমিক → ভগ্নাংশ অনুপাত → ভগ্নাংশ | | দশমিক → ভগ্নাংশ অনুপাত → ভগ্নাংশ | |- ! দশমিক | ভগ্নাংশ → দশমিক |- ! অনুপাত | |} যেসব বাস্তব সংখ্যা মূলদ সংখ্যা নয়, অর্থাৎ যাদেরকে দুইটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাত হিসেবে প্রকাশ করা যায় না তাদেরকে বলা হয় অমূলদ সংখ্যা। যেমন: , , (পাই) ইত্যাদি। তথ্যসূত্র সংখ্যা প্রাথমিক গণিত মূলদ সংখ্যা
https://en.wikipedia.org/wiki/Rational_number
Rational number
In mathematics, a rational number is a number that can be expressed as the quotient or fraction ⁠ p q {\displaystyle {\tfrac {p}{q}}} ⁠ of two integers, a numerator p and a non-zero denominator q. For example, ⁠ 3 7 {\displaystyle {\tfrac {3}{7}}} ⁠ is a rational number, as is every integer (e.g., − 5 = − 5 1 {\displaystyle -5={\tfrac {-5}{1}}} ). The set of all rational numbers, also referred to as "the rationals", the field of rationals or the field of rational numbers is usually denoted by boldface Q, or blackboard bold ⁠ Q . {\displaystyle \mathbb {Q} .} ⁠ A rational number is a real number. The real numbers that are rational are those whose decimal expansion either terminates after a finite number of digits (example: 3/4 = 0.75), or eventually begins to repeat the same finite sequence of digits over and over (example: 9/44 = 0.20454545...). This statement is true not only in base 10, but also in every other integer base, such as the binary and hexadecimal ones (see Repeating decimal § Extension to other bases). A real number that is not rational is called irrational. Irrational numbers include the square root of 2 (⁠ 2 {\displaystyle {\sqrt {2}}} ⁠), π, e, and the golden ratio (φ). Since the set of rational numbers is countable, and the set of real numbers is uncountable, almost all real numbers are irrational. Rational numbers can be formally defined as equivalence classes of pairs of integers (p, q) with q ≠ 0, using the equivalence relation defined as follows: ( p 1 , q 1 ) ∼ ( p 2 , q 2 ) ⟺ p 1 q 2 = p 2 q 1 . {\displaystyle (p_{1},q_{1})\sim (p_{2},q_{2})\iff p_{1}q_{2}=p_{2}q_{1}.} The fraction ⁠ p q {\displaystyle {\tfrac {p}{q}}} ⁠ then denotes the equivalence class of (p, q). Rational numbers together with addition and multiplication form a field which contains the integers, and is contained in any field containing the integers. In other words, the field of rational numbers is a prime field, and a field has characteristic zero if and only if it contains the rational numbers as a subfield. Finite extensions of ⁠ Q {\displaystyle \mathbb {Q} } ⁠ are called algebraic number fields, and the algebraic closure of ⁠ Q {\displaystyle \mathbb {Q} } ⁠ is the field of algebraic numbers. In mathematical analysis, the rational numbers form a dense subset of the real numbers. The real numbers can be constructed from the rational numbers by completion, using Cauchy sequences, Dedekind cuts, or infinite decimals (see Construction of the real numbers).
2102
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%AE%E0%A7%82%E0%A6%B2%E0%A6%A6%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE
অমূলদ সংখ্যা
অমূলদ সংখ্যা হল সেসব বাস্তব সংখ্যা যেগুলোকে দুটি পূর্ণ সংখ্যার অনুপাতে প্রকাশ করা যায় না। অমূলদ সংখ্যাকে দশমিক-এ প্রকাশ করার চেষ্টা করলে দশমিকের পর যত ঘর অবধি-ই দেখা হবে, কোন পৌনঃপুনিকতা (recurrence) দেখা যাবে না। অমূলদ সংখ্যার মধ্যে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত π, ইউলারের সংখ্যা e, গোল্ডেন অনুপাত φ এবং দুই এর বর্গমূল ; আসলে বর্গসংখ্যা বাদে সকল অখণ্ডসংখ্যার সমস্ত বর্গমূল, অমূলদ। ইতিহাস প্রাচীন গ্রিসে পিথাগোরাস সম্পর্কিত অমুলদ সংখার ইতিহাসটি বেশ রোমাঞ্চকর। হিপ্পসাস নামক পিথাগোরাসের শিষ্য( যারা পিথাগোরিয়ান নামে পরিচিত) আবিষ্কার করেন। হিপ্পসাস পিথাগোরাসের সদ্য আবিস্কৃত সমকোণী ত্রিভুজের সূত্র (কোন সমকোনী ত্রিভূজের অতিভূজের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্র অপর দুই বাহুর উপর অঙ্কিত বৰ্গক্ষেত্রেরদ্বয়ের সমষ্টির সমান)ব্যবহার করে, দুই বাহুর দৈর্ঘ্য ১ একক ধরে, অতিভুজ বের করতে গিয়ে একটা গোল বাধিয়ে ফেলেন। তিনি কিছুতেই অতিভুজ হিসাবে যে পেয়েছেন তার মান আর হিসাব করতে পারছিলেন না। পরে বুঝলেন যে, এটা আর সব অন্য মুলদ সংখ্যার মত নয়, যাদের দুইটি পুর্ণ সংখ্যার অনুপাত আকারে লেখা সম্ভব। পরবর্তিতে আরো এরকম সংখ্যা আবিস্কৃত হয়। আর গণিতবিদেরা এদের নাম দেন অমুলদ সংখ্যা। প্রাচীন ভারতবৰ্ষেও অমূলদ সংখ্যার চিহ্ন পাওয়া যায়৷ শ্রীনিবাস রামানুজন বলেছিলেন যে এর মান যতো খুশি ততো ঘর। অতি সুপরিচিত একটি অমুলদ সংখ্যা হচ্ছে বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত(যাকে গ্রিক অক্ষর পাই π দ্বারা নির্দেশ করা হয়)। π= ৩.১৪১৫৯২৬৫ ....... প্রকারভেদ তুরীয় সংখ্যা (ইংরেজি: transcendental number) বীজগাণিতিক সংখ্যা (ইংরেজি: algebraic tamim) তথ্যসূত্র আরো পড়া Adrien-Marie Legendre, Éléments de Géometrie, Note IV, (1802), Paris Rolf Wallisser, "On Lambert's proof of the irrationality of π", in Algebraic Number Theory and Diophantine Analysis, Franz Halter-Koch and Robert F. Tichy, (2000), Walter de Gruyer বহিঃসংযোগ Zeno's Paradoxes and Incommensurability (n.d.). Retrieved April 1, 2008
https://en.wikipedia.org/wiki/Irrational_number
Irrational number
In mathematics, the irrational numbers (in- + rational) are all the real numbers that are not rational numbers. That is, irrational numbers cannot be expressed as the ratio of two integers. When the ratio of lengths of two line segments is an irrational number, the line segments are also described as being incommensurable, meaning that they share no "measure" in common, that is, there is no length ("the measure"), no matter how short, that could be used to express the lengths of both of the two given segments as integer multiples of itself. Among irrational numbers are the ratio π of a circle's circumference to its diameter, Euler's number e, the golden ratio φ, and the square root of two. In fact, all square roots of natural numbers, other than of perfect squares, are irrational. Like all real numbers, irrational numbers can be expressed in positional notation, notably as a decimal number. In the case of irrational numbers, the decimal expansion does not terminate, nor end with a repeating sequence. For example, the decimal representation of π starts with 3.14159, but no finite number of digits can represent π exactly, nor does it repeat. Conversely, a decimal expansion that terminates or repeats must be a rational number. These are provable properties of rational numbers and positional number systems and are not used as definitions in mathematics. Irrational numbers can also be expressed as non-terminating continued fractions (which in some cases are periodic), and in many other ways. As a consequence of Cantor's proof that the real numbers are uncountable and the rationals countable, it follows that almost all real numbers are irrational.
2107
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%9F
সেট
সেট () হলো বাস্তব বা চিন্তাজগতের সু-সংজ্ঞায়িত বস্তুর সমাবেশ। অন্যভাবে, বাস্তব বা চিন্তা জগতের বস্তুর যেকোনো সুনির্ধারিত সংগ্রহকে সেট বলে। কোনো সেট গঠন করতে হলে যে শর্ত পূরণ করতে হয়, তা হলো যে কোনো বস্তু সেটটির সদস্য কি না তা কোনো দ্ব্যর্থতা ছাড়া নিরূপণ করা যাবে। জার্মান গণিতবিদ জর্জ ক্যান্টর (১৮৪৫–১৯১৮) সেট সর্ম্পকে প্রথম ধারণা ব্যাখ্যা করেন। তিনি অসীম সেটের ধারণা প্রদান করেন। এখানে হলো সেট। হলো সেটের উপাদান। সেটের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, সেট হবার জন্য দুটো শর্ত পালন করতে হয়। শর্ত দুটি হচ্ছে– সুনির্দিষ্টতা হওয়া: প্রথমে সেট হবার জন্য উপাদানগুলো সুনির্দিষ্ট হতে হবে। অর্থাৎ উপাদানগুলোর মাঝে কোনো না কোনো মিল থাকতে হবে। উক্ত উদাহরণে, ইংরেজি বর্ণমালার অক্ষর। সু-সংজ্ঞায়িত হওয়া: সেটের সংজ্ঞায় এমন কোনো বর্ণনা ব্যবহার করা যাবে না যা নিয়ে কোনো প্রকার মতভেদ থাকতে পারে। সেটের উপাদান যেসকল বস্তু নিয়ে সেট গঠিত, তাদেরকে ঐ সেটের উপাদান বা সদস্য বলা হয়। সেটের প্রত্যেক বস্তু বা সদস্যকে সেটের উপাদান () বলা হয়। সেটের উপাদানগুলোকে সাধারণত কমা () দ্বারা আলাদা করা হয়। সেট প্রকাশের জন্য ইংরেজি বড় হাতের অক্ষর (যেমন- ) ব্যবহার করা হয়। সেট প্রকাশের জন্য সবসময় দ্বিতীয় বন্ধনী () ব্যবহার করা। কোনো সেটের উপাদানকে ‘’ () দ্বারা প্রকাশ করা হয়। আর সেটের উপাদান নয় বুঝাতে ‘’ () ব্যবহার করা হয়। সেটের প্রকাশের পদ্ধতি সেটকে সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে প্রকাশ করা হয়: তালিকা পদ্ধতি ( বা ) সেট গঠন পদ্ধতি ( বা ) তালিকা পদ্ধতি সেটকে তালিকার সহায্যে বর্ণনা করাকে তালিকা পদ্ধতি বলা হয় । পদ্ধতিতে প্রকাশের জন্য দ্বিতীয় বন্ধনী ব্যবহার করা হয়। বন্ধনীর অভ্যন্তরে উপাদানগুলোকে আলাদা ভাবে লিখা হয়। উদাহরণ: সেট গঠন পদ্ধতি সেট গঠন পদ্ধতিতে উপাদানগুলোর মধ্যে মিলসমূহ বন্ধনীর অভ্যন্তরে প্রকাশ করা হয়। এখানেই সু-সংজ্ঞায়িত হওয়ার বৈশিষ্ট্য লুকায়িত। পূর্বে প্রকাশিত সেটকে সেট গঠন পদ্ধতিতে প্রকাশের জন্য উপাদানগুলোর মধ্যে মিল দ্বারা লেখা হয়। অর্থাৎ, সকল উপাদান সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ থাকে না। উপাদান নির্ণয়ে জন্য সাধারণ ধর্মের উল্লেখ থাকে। এক্ষেত্রে লিখার নিয়ম হলো: A= {x:x সকল ইংরেজি স্বরবর্ণ}, উচ্চারণ করা হয়: x যেন x সকল ইংরেজি স্বরবর্ণ। বিশেষ সংখ্যা সেট বা : স্বাভাবিক সংখ্যার সেট । যেমন: বা : সকল পূর্ণসংখ্যার সেট । যেমন: বা : সকল মূলদ সংখ্যার সেট । : ও পূর্ণসংখ্যা এবং ≠ 0 বা : বাস্তব সংখ্যার সেট । বা : সকল জটিল সংখ্যার সেট । ফাঁকা সেট কোন উপাদান নেই তাকে ফাঁকা সেট বলে । ফাঁকা সেটকে ∅ অথবা দ্বারা প্রকাশ করা হয় । যেমন: মৌলিক সংখ্যা এবং ইত্যাদি । সসীম সেট বা সান্ত সেট সেটের উপাদান সংখ্যা যদি নির্দিষ্ট হয় তবে তাকে সসীম সেট বলে। কোনো সেট সসীম না হলে, একে অসীম সেট বলা হয় । যেমন: । এটা সসীম সেট, কারণ এর উপাদান 4 টি যা নির্দিষ্ট। এই গণনার কাজ সেটের সঙ্গে সেটের একটি এক-এক মিল স্থাপন করে সম্পন্ন করা হয় । যেমন: ১. ফাঁকা সেট সান্ত সেট, এর সদস্য সংখ্যা 0 । ২. যদি কোনো সেট এবং সমতুল হয়, যেখানে ,তবে একটি সান্ত সেট এবং এর সদস্য সংখ্যা । ৩. কোনো সান্ত সেট হলে, এর সদস্য সংখ্যাকে দ্বারা সূচিত করা হয় । অসীম সেট বা অনন্ত সেট যে সেটের উপাদান সংখ্যা গণনা করে শেষ করা যায় না, তাকে অসীম সেট বলে। যেমন: সকল বিজোড় সংখ্যার সেট, সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেট । মূলদ সংখ্যার সেট : ও পূর্ণসংখ্যা এবং ≠ 0 , বাস্তব সংখ্যার সেট , পূর্ণ পূর্ণ সংখ্যার সেট ইত্যাদি অসীম সেট । শক্তি সেট সেটের সকল উপসেটের সেটকে এর পাওয়ার সেট বা শক্তি সেট বলা হয় এবং দ্বারা নির্দেশ করা হয় । শক্তি সেটের উপাদান সংখ্যা দ্বারা সংজ্ঞায়িত যেখানে সেটের উপাদান সংখ্যা এবং অবশ্যই স্বাভাবিক সংখ্যা । সেটের সংযোগ হলে এদের সংযোগ সেট হচ্ছে অথবা সার্বিক সেট আলোচনা সংশ্লিষ্ট সকল সেট একটি নির্দিষ্ট সেটের উপসেট । যেমন: সেটটি এর একটি উপসেট । এখানে সেটকে সেটের সাপেক্ষে সার্বিক সেট বলে । সুতরাং আলোচনা সংশ্লিষ্ট সকল সেট যদি একটি নির্দিষ্ট সেটের উপসেট হয় তবে ঐ নির্দিষ্ট সেট কে তার উপসেটের সাপেক্ষে সার্বিক সেট বলে । সার্বিক সেটকে সাধারণত দ্বারা প্রকাশ করা হয় । যেমন: সকল জর স্বাভাবিক সংখ্যার সেট এবং সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেট হলে সেটের সাপেক্ষে সার্বিক সেট হবে । সেটের সমতা ও সেট যদি এমন হয় যে এদের উপাদান গুলো একই তবে ও একই সেট এবং তা লিখে প্রকাশ করা হয় । যেমন: , । ছেদ সেট এবং এর ছেদ সেট হলো এমন একটি সেট যা শুধুমাত্র এবং এর সাধারণ সদস্যদের নিয়ে গঠিত। অর্থাৎ কোনো বস্তু এর সেটটির সদস্য যদি এবং কেবল যদি তা এবং উভয়ের সদস্য হয়। অর্থাৎ এবং সেট তত্ত্ব তথ্যসূত্র আরও দেখুন ক্লাস (গণিত) কোন কোন সেটের মত গাণিতিক সত্ত্বাকে সেট ধরা হয় না কারণ তারা অন্য কোন সেটের সদস্য হতে পারে না। ক্লাস রাসেলের প্যারাডক্সের কারণে সেট নয়। বীজগণিতীয় ভগ্নাংশ চলক বীজগণিত যুক্তিবিজ্ঞানের ধারণা গাণিতিক বস্তু সেট তত্ত্ব
https://en.wikipedia.org/wiki/Set_(mathematics)
Set (mathematics)
In mathematics, a set is a collection of different things; these things are called elements or members of the set and are typically mathematical objects of any kind: numbers, symbols, points in space, lines, other geometrical shapes, variables, or even other sets. A set may have a finite number of elements or be an infinite set. There is a unique set with no elements, called the empty set; a set with a single element is a singleton. Sets are uniquely characterized by their elements; this means that two sets that have precisely the same elements are equal (they are the same set). This property is called extensionality. In particular, this implies that there is only one empty set. Sets are ubiquitous in modern mathematics. Indeed, set theory, more specifically Zermelo–Fraenkel set theory, has been the standard way to provide rigorous foundations for all branches of mathematics since the first half of the 20th century.
2108
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%9F%20%E0%A6%97%E0%A6%A0%E0%A6%A8%20%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%A4%E0%A6%BF
সেট গঠন পদ্ধতি
গণিত শাস্ত্রে কোন সেটকে প্রকাশ করার দুইটি প্রচলিত পদ্ধতির মধ্যে এটি অন্যতম। (আরেকটি হচ্ছে তালিকা পদ্ধতি)। সেট গঠনকারী পদ্ধতিতে সকল জোড় সংখ্যার সেটকে প্রকাশ করার উপায়:{x : x % ২ = ০} বা {x | x % ২ = ০} (পড়তে হবে, x, যেন, x মড দুই সমান শূন্য)। আবার, ১ এর চেয়ে বড় কিন্তু ৫ এর চেয়ে ছোট সংখ্যার সেটকে লেখা হয়: {x:x ১<x<৫}। সেট তত্ত্ব গাণিতিক অঙ্কপাতন
https://en.wikipedia.org/wiki/Set-builder_notation
Set-builder notation
In set theory and its applications to logic, mathematics, and computer science, set-builder notation is a mathematical notation for describing a set by enumerating its elements, or stating the properties that its members must satisfy. Defining sets by properties is also known as set comprehension, set abstraction or as defining a set's intension.
2132
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC
সুকুমার রায়
সুকুমার রায় (৩০ অক্টোবর ১৮৮৭ – ১০ সেপ্টেম্বর ১৯২৩) ছিলেন একজন বাঙালি শিশুসাহিত্যিক ও ভারতীয় সাহিত্যে "ননসেন্স ছড়া"র প্রবর্তক। তিনি একাধারে লেখক, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যিক, রম্যরচনাকার, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও সম্পাদক। তিনি ছিলেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সন্তান এবং তাঁর পুত্র খ্যাতিমান ভারতীয় চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। তাঁর লেখা কবিতার বই আবোল তাবোল, গল্প হ-য-ব-র-ল, গল্প সংকলন পাগলা দাশু এবং নাটক চলচ্চিত্তচঞ্চরী বিশ্বসাহিত্যে সর্বযুগের সেরা "ননসেন্স" ধরনের ব্যঙ্গাত্মক শিশুসাহিত্যের অন্যতম বলে মনে করা হয়, কেবল অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড ইত্যাদি কয়েকটি মুষ্টিমেয় ধ্রুপদী সাহিত্যই যাদের সমকক্ষ। মৃত্যুর শত বর্ষ পরেও তিনি বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম একজন। পারিবারিক ইতিহাস রায় পরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায় তাঁদের পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন৷ ভাগ্যাণ্বেষণে তিনি পৈতৃক গ্রাম ত্যাগ করে পূর্ববঙ্গের টাউন শেরপুরে(জেলা শেরপুর) গমন করেন ৷ সেখানে শেরপুরের জমিদার বাড়িতে তাঁর সাক্ষাৎ হয় যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সাথে ৷ রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের সুন্দর চেহারা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন এবং রামসুন্দরকে তাঁর সাথে তাঁর জমিদারিতে নিয়ে যান ৷ যশোদলে জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে তিনি রামসুন্দরকে তাঁর জামাতা বানান ৷ সেই থেকে রামসুন্দর যশোদলে বসবাস শুরু করেন ৷ তাঁর বংশধররা সেখান থেকে সরে গিয়ে কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলায় মসূয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন৷ জীবনী সুকুমার রায়ের জন্ম ১৮৮৭ সালের ৩০শে অক্টোবর কলকাতার এক দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ বংশীয় ব্রাহ্ম পরিবারে। তিনি ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর পুত্র। তাঁর মা বিধুমুখী দেবী ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের মেয়ে। তাঁর আদিনিবাস বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলা) কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে। মসূয়াতে বসবাসের আগে তাঁর পূর্বপুরুষের আদিনিবাস ছিল অধুনা পশ্চিমবঙ্গের নদিয়া জেলার অন্তর্গত চাকদহে৷ সুবিনয় রায় ও সুবিমল রায় তার দুই ভাই। এ ছাড়াও তার তিন বোন ছিল, তারা হলেন সুখলতা, পুণ্যলতা ও শান্তিলতা। সুকুমার রায় জন্মেছিলেন বাঙালি নবজাগরণের স্বর্ণযুগে। তাঁর পারিবারিক পরিবেশ ছিল সাহিত্যানুরাগী, যা তাঁর মধ্যকার সাহিত্যিক প্রতিভা বিকাশে সহায়ক হয়। পিতা উপেন্দ্রকিশোর ছিলেন শিশুতোষ গল্প ও জনপ্রিয়-বিজ্ঞান লেখক, চিত্রশিল্পী, সুরকার ও শৌখিন জ্যোতির্বিদ। উপেন্দ্রকিশোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি সুকুমারকে সরাসরি প্রভাবিত করেছিলেন। এছাড়াও রায় পরিবারের সাথে জগদীশ চন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় প্রমুখের সম্পর্ক ছিল। উপেন্দ্রকিশোর ছাপার ব্লক তৈরির কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, এ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান এবং মানসম্পন্ন ব্লক তৈরির একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। মেসার্স ইউ. রয় এন্ড সন্স নামে ঐ প্রতিষ্ঠানের সাথে সুকুমার যুক্ত ছিলেন। শিক্ষাজীবন তিনি গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর কলকাতার সিটি স্কুল থেকে এন্ট্রাস পাশ করেন। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়ন ও পদার্থবিদ্যায় বি.এস.সি. (অনার্স) করার পর সুকুমার মুদ্রণবিদ্যায় উচ্চতর শিক্ষার জন্য ১৯১১ সালে বিলেতে যান। সেখানে তিনি আলোকচিত্র ও মুদ্রণ প্রযুক্তির ওপর পড়াশোনা করেন এবং কালক্রমে তিনি ভারতের অগ্রগামী আলোকচিত্রী ও লিথোগ্রাফার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯১৩ সালে সুকুমার কলকাতাতে ফিরে আসেন। সুকুমার ইংল্যান্ডে পড়াকালীন, উপেন্দ্রকিশোর জমি ক্রয় করে, উন্নত-মানের রঙিন হাফটোন ব্লক তৈরি ও মুদ্রণক্ষম একটি ছাপাখানা স্থাপন করেছিলেন। তিনি ছোটদের একটি মাসিক পত্রিকা, 'সন্দেশ', এই সময় প্রকাশনা শুরু করেন। সুকুমারের বিলেত থেকে ফেরার অল্প কিছুদিনের মধ্যেই উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যু হয়। উপেন্দ্রকিশোর জীবিত থাকতে সুকুমার লেখার সংখ্যা কম থাকলেও উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা সম্পাদনার দায়িত্ব সুকুমার নিজের কাঁধে তুলে নেন। শুরু হয় বাংলা শিশুসাহিত্যের এক নতুন অধ্যায়। পিতার মৃত্যুর পর আট বছর ধরে তিনি সন্দেশ ও পারিবারিক ছাপাখানা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন। তার ছোটভাই এই কাজে তার সহায়ক ছিলেন এবং পরিবারের অনেক সদস্য 'সন্দেশ'-এর জন্য নানাবিধ রচনা করে তাদের পাশে দাড়ান। কর্ম জীবন সুকুমার রায়ের স্বল্পস্থায়ী জীবনে তার প্রতিভার শ্রেষ্ঠ বিকাশ লক্ষ্য করা যায়। 'সন্দেশ'এর সম্পাদক থাকাকালীন তার লেখা ছড়া, গল্প ও প্রবন্ধ আজও বাংলা শিশুসাহিত্যে মাইলফলক হয়ে আছে। তার বহুমুখী প্রতিভার অনন্য প্রকাশ তার অসাধারণ ননসেন্স ছড়াগুলোতে। তার প্রথম ও একমাত্র ননসেন্স ছড়ার বই আবোল তাবোল শুধু বাংলা সাহিত্যে নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে নিজস্ব জায়গার দাবিদার। {{Quote box2|width=25%|quote=“সাগর যেথা লুটিয়ে পড়ে নতুন মেঘের দেশেআকাশ-ধোয়া নীল যেখানে সাগর জলে মেশে।মেঘের শিশু ঘুমায় সেথা আকাশ-দোলায় শুয়ে-ভোরের রবি জাগায় তারে সোনার কাঠি ছুঁয়ে।”|source=—সুকুমার রায় রচিত ছড়ার অংশবিশেষ।}} প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়বার সময় তিনি ননসেন্স ক্লাব নামে একটি সংঘ গড়ে তুলেছিলেন। এর মুখপাত্র ছিল সাড়ে বত্রিশ ভাজা নামের একটি পত্রিকা। সেখানেই তার আবোল-তাবোল ছড়ার চর্চা শুরু। পরবর্তীতে ইংল্যান্ড থেকে ফেরার পর মানডে ক্লাব (ইংরেজি ভাষা: Monday Club) নামে একই ধরনের আরেকটি ক্লাব খুলেছিলেন তিনি। মনডে ক্লাবের সাপ্তাহিক সমাবেশে সদস্যরা 'জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ' পর্যন্ত সব বিষয়েই আলোচনা করতেন। সুকুমার রায় মজার ছড়ার আকারে এই সাপ্তাহিক সভার কয়েকটি আমন্ত্রণপত্র করেছিলেন সেগুলোর বিষয়বস্তু ছিল মুখ্যত উপস্থিতির অনুরোধ এবং বিশেষ সভার ঘোষণা ইত্যাদি। ইংলান্ডে থাকাকালীন তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের বিষয়ে কয়েকটি বক্তৃতাও দিয়েছিলেন, রবীন্দ্রনাথ তখনও নোবেল পুরস্কার পাননি। ইতিমধ্যে সুকুমার লেখচিত্রী/প্রচ্ছদশিল্পীরূপেও সুনাম অর্জন করেছিলেন। তার প্রযুক্তিবিদের পরিচয় মেলে, নতুন পদ্ধতিতে হাফটোন ব্লক তৈরি আর ইংল্যান্ডের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত তার প্রযুক্তি বিষয়ক রচনাগুলো থেকে। সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল কার্য ছাড়াও সুকুমার ছিলেন ব্রাহ্মসমাজের সংস্কারপন্থী গোষ্ঠির এক তরুণ নেতা। ব্রাহ্ম সমাজ, রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত একেশ্বরবাদী, অদ্বৈতে বিশ্বাসী হিন্দুধর্মের এক শাখা যারা ৭ম শতকের অদ্বৈতবাদী হিন্দু পুরান ঈশ-উপনিষদ মতাদর্শে বিশ্বাসী। সুকুমার রায় 'অতীতের কথা' নামক একটি কাব্য রচনা করেছিলেন, যা ব্রাহ্ম সমাজের ইতিহাসকে সরল ভাষায় ব্যক্ত করে - ছোটদের মধ্যে ব্রাহ্ম সমাজের মতাদর্শের উপস্থপনা করার লক্ষে এই কাব্যটি একটি পুস্তিকার আকারে প্রকাশ করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি ওই সময়ের সবথেকে প্রসিদ্ধ ব্রাহ্ম ছিলেন, তার ব্রাহ্মসমাজের সভাপতিত্বের প্রস্তাবের পৃষ্ঠপোষকতা সুকুমার করেছিলেন। মৃত্যু ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে কালাজ্বরে (লেইশ্মানিয়াসিস) আক্রান্ত হয়ে মাত্র পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে সুকুমার রায় মৃত্যুবরণ করেন, সেই সময় এই রোগের কোনো চিকিৎসা ছিল না। তার মৃত্যু হয় একমাত্র পুত্র সত্যজিত এবং স্ত্রীকে রেখে। সত্যজিত রায় ভবিষ্যতে একজন ভারতের অন্যতম চলচ্চিত্র পরিচালকরূপে খ্যাতি অর্জন করেন ও নিজের মৃত্যুর ৫ বছর আগে ১৯৮৭ সালে সুকুমার রায়ের উপরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রযোজনা করেন। রচনাবলি আবোল তাবোল পাগলা দাশু হেশোরাম হুশিয়ারের ডায়েরি খাই-খাই অবাক জলপান লক্ষ্মণের শক্তিশেল ঝালাপালা ও অনান্য নাটক হ য ব র ল শব্দ কল্প দ্রুম চলচ্চিত্তচঞ্চরী বহুরুপী ভাষার অত্যাচার'' (১৯১৫, Torture of Language) </div> তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি সুকুমার সমগ্র, সম্পাদক: সুনীল জানা, দশম সংস্করণ:জ্যৈষ্ঠ ১৪২১, প্রকাশক: সুধাংশুশেখর দে, দে'জ পাবলিশিং, ১৩ বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রিট, কলকাতা ৭০০ ০৭৩। ISBN 978-81-295-1328-1 বহিঃসংযোগ সুকুমার রায় শিশু সাহিত্য সমগ্র সুকুমার রায় ১৮৮৭-এ জন্ম আদিনিবাস পূর্ববঙ্গে ১৯২৩-এ মৃত্যু ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় লেখক বাঙালি কবি বাঙালি ছড়াকার বাঙালি শিশুসাহিত্যিক বাঙালি রম্যরচনাকার বাঙালি সম্পাদক বাঙালি নাট্যকার বাংলা ভাষার লেখক বাংলার নবজাগরণ ভারতীয় শিশু সাহিত্যিক বাংলা ভাষার বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় ঔপন্যাসিক প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় আলোকচিত্রশিল্পী বাঙালি লেখক বাঙালি হিন্দু ২০শ শতাব্দীর বাঙালি ১৯শ শতাব্দীর বাঙালি বাঙালি পুরুষ কবি কলকাতার লেখক বাঙালি জমিদার কলকাতার সংস্কৃতি ভারতীয় শিশুসাহিত্যিক ভারতীয় চিত্রালংকরণশিল্পী ভারতীয় আলোকচিত্রশিল্পী ব্রাহ্ম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভারতীয় কবি ভারতীয় পুরুষ কবি ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় কবি ভারতীয় ঔপন্যাসিক ভারতীয় পুরুষ ঔপন্যাসিক ভারতীয় পুরুষ লেখক ভারতীয় সম্পাদক ভারতীয় ম্যাগাজিন সম্পাদক পশ্চিমবঙ্গের ঔপন্যাসিক পশ্চিমবঙ্গের কবি ভারতীয় নাট্যকার ভারতীয় পুরুষ নাট্যকার ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় নাট্যকার ভারতীয় প্রাবন্ধিক ভারতীয় পুরুষ প্রাবন্ধিক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় প্রাবন্ধিক ভারতীয় চিত্রশিল্পী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় চিত্রশিল্পী ভারতীয় প্রকাশক (ব্যক্তি) ভারতীয় শিল্পী ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় শিল্পী
https://en.wikipedia.org/wiki/Sukumar_Ray
Sukumar Ray
Sukumar Ray (; 30 October 1887 – 10 September 1923) was a Bengali writer and poet from British India. He is remembered mainly for his writings for children. He was the son of children's story writer Upendrakishore Ray Chowdhury and the father of Indian filmmaker Satyajit Ray.
2139
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B9%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A7%82%E0%A6%A8%20%E0%A6%86%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A7%87%E0%A6%A6
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ (১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ - ১৯ জুলাই ২০১২) ছিলেন একজন বাংলাদেশি ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার এবং গীতিকার, চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র নির্মাতা। তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কথাসাহিত্যিক। তাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও জনপ্রিয় লেখক বলে গণ্য করা হয়। বাংলা কথাসাহিত্যে তিনি সংলাপপ্রধান নতুন শৈলীর জনক। অন্য দিকে তিনি আধুনিক বাংলা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর পথিকৃৎ। নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক হিসাবেও তিনি সমাদৃত। তার প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা তিন শতাধিক। তার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর নানা ভাষায় অনূদিত হয়েছে, বেশ কিছু গ্রন্থ স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত। মিসির আলি এবং হিমু তার সৃষ্ট অন্যতম দুটি জনপ্রিয় চরিত্র। ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন এবং নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পলিমার রসায়ন শাস্ত্র অধ্যয়ন করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক হিসাবে দীর্ঘকাল কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীকালে লেখালেখি এবং চলচ্চিত্র নির্মাণের স্বার্থে অধ্যাপনা ছেড়ে দেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাকে আটক করে এবং নির্যাতনের পর হত্যার জন্য গুলি চালায়। তিনি অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। হুমায়ূন আহমেদ রচিত প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয়। সত্তর দশকের সময় থেকে শুরু করে মৃত্যু অবধি তিনি ছিলেন বাংলা গল্প-উপন্যাসের অপ্রতিদ্বন্দ্বী কারিগর। এই কালপর্বে তার গল্প-উপন্যাসের জনপ্রিয়তা ছিল তুলনারহিত। তার অভূতপূর্ব সৃষ্টি হিমু এবং মিসির আলি ও শুভ্র চরিত্রগুলি বাংলাদেশের যুবকশ্রেণীকে গভীরভাবে উদ্বেলিত করেছে। বিজ্ঞান কল্পকাহিনীও তার সৃষ্টিকর্মের অন্তর্গত, তার রচিত প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী তোমাদের জন্য ভালোবাসা। তার টেলিভিশন নাটকসমূহ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। সংখ্যায় বেশি না হলেও তার রচিত গানগুলোও জনপ্রিয়তা লাভ করে। তার রচিত অন্যতম উপন্যাসসমূহ হলো মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, মাতাল হাওয়া, লীলাবতী, কবি, বাদশাহ নামদার ইত্যাদি। বাংলা সাহিত্যের উপন্যাস শাখায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি প্রদত্ত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তার অবদানের জন্য ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। তার নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো সর্ব সাধারণ্যে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়। ১৯৯৪-এ তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক আগুনের পরশমণি মুক্তি লাভ করে। চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার সহ আটটি পুরস্কার লাভ করে। তার নির্মিত অন্যান্য সমাদৃত চলচ্চিত্রগুলো হলো শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯), দুই দুয়ারী (২০০০), শ্যামল ছায়া (২০০৪), ও ঘেটু পুত্র কমলা (২০১২)। শ্যামল ছায়া ও ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র দুটি বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে অস্কারের জন্য দাখিল করা হয়েছিল। এছাড়া ঘেটু পুত্র কমলা চলচ্চিত্র পরিচালনার জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। জীবনী জন্ম ও শৈশব হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) ময়মনসিংহ জেলার অন্তর্গত নেত্রকোণা মহকুমার মোহনগঞ্জে তার মাতামহের বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ী নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে। তার পিতা শহীদ ফয়জুর রহমান আহমদ এবং মাতা আয়েশা ফয়েজ। তার পিতা একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তৎকালীন পিরোজপুর মহকুমার উপ-বিভাগীয় পুলিশ অফিসার (এসডিপিও) হিসেবে কর্তব্যরত অবস্থায় শহীদ হন। তার বাবা সাহিত্যনুরাগী মানুষ ছিলেন। তিনি পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। বগুড়া থাকার সময় তিনি একটি গ্রন্থও প্রকাশ করেছিলেন, গ্রন্থের নাম দ্বীপ নেভা যার ঘরে। তার মা'র লেখালেখির অভ্যাস না থাকলেও শেষ জীবনে একটি আত্মজীবনী গ্রন্থ রচনা করেছেন যার নাম জীবন যে রকম। পরিবারে সাহিত্যমনস্ক আবহাওয়া ছিল। তার অনুজ মুহম্মদ জাফর ইকবাল দেশের একজন শিক্ষাবিদ এবং কথাসাহিত্যিক; সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা আহসান হাবীব রম্য সাহিত্যিক এবং কার্টুনিস্ট। তার তিন বোন হলেন সুফিয়া হায়দার, মমতাজ শহিদ, ও রোকসানা আহমেদ। তার রচিত আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা থেকে জানা যায় যে ছোটকালে হুমায়ূন আহমেদের নাম রাখা হয়েছিল শামসুর রহমান; ডাকনাম কাজল। তার পিতা (ফয়জুর রহমান) নিজের নামের সাথে মিল রেখে ছেলের নাম রাখেন শামসুর রহমান। পরবর্তীতে আবার তিনি নিজেই ছেলের নাম পরিবর্তন করে ‌হুমায়ূন আহমেদ রাখেন। হুমায়ূন আহমেদের ভাষায়, তার পিতা ছেলে-মেয়েদের নাম পরিবর্তন করতে পছন্দ করতেন। তার ছোট ভাই মুহম্মদ জাফর ইকবালের নাম আগে ছিল বাবুল এবং ছোটবোন সুফিয়ার নাম ছিল শেফালি। ১৯৬২-৬৪ সালে চট্টগ্রামে থাকাকালে হুমায়ুন আহমেদের নাম ছিল বাচ্চু। তার দাদা আজিমুদ্দিন আহমেদের বাবার নাম জাঙ্গির মুনশি। জাঙ্গির মুনশির এলাকায় পীরসাহেব হিসেবে খ্যাতি ছিল। তার দাদার বাড়ি মৌলভী বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। তার বড় মামা ফজলুল করিমের কাছ থেকে তিনি ছবি আঁকা শেখেন। শিক্ষাজীবন তার বাবা চাকরি সূত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেছেন বিধায় হুমায়ূন আহমেদ দেশের বিভিন্ন স্কুলে লেখাপড়া করার সুযোগ পেয়েছেন। তার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় ১৯৫৫ সালে সিলেটের কিশোরী মোহন পাঠশালায় (বর্তমান কিশোরী মোহন (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়)। সেখানে তিনি ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি ১৯৬৩ সালে বগুড়া জিলা স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬৫ সালে তিনি এই বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দেন এবং রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে অধ্যয়ন করেন এবং প্রথম শ্রেণীতে বিএসসি (সম্মান) ও এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন এবং ৫৬৪ নং কক্ষে তার ছাত্রজীবন অতিবাহিত করেন (নন্দিত নরকে উপন্যাসটি মুহসীন হলেই লেখা)। ১৯৭০-এর দশক ১৯৭১ ১৯৭১ সালে হুমায়ুন আহমেদের বয়স ছিল ২৩ বছর। থাকতেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুহসীন হলে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানিদের হাতে গ্রেপ্তার হন। ১৯৭১ সালে ঢাকায় পাকিস্তানি সৈন্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল থেকে হুমায়ূন আহমেদ ও রফিক কায়সারকে গ্রেপ্তার করে। প্রথমে চড়থাপ্পড়–লাথি, এরপর এক চেয়ারে মাথা এবং আরেক চেয়ারে পা রেখে পিটিয়ে টানা তিন দিন রেখে দিয়েছিল। শেষে দুজনের হাতের দশ আঙুলে মোটা সুই ঢুকিয়ে রেখেছিল। নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল কারাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জীবনে একটি নাতিদীর্ঘ উপন্যাস রচনার মধ্য দিয়ে হুমায়ূন আহমেদের সাহিত্য জীবনের শুরু। এই উপন্যাসটির নাম নন্দিত নরকে। ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে উপন্যাসটি প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। ১৯৭২-এ কবি-সাহিত্যিক আহমদ ছফার উদ্যোগে উপন্যাসটি খান ব্রাদার্স কর্তৃক গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রখ্যাত বাংলা ভাষাশাস্ত্র পণ্ডিত আহমদ শরীফ স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে এ গ্রন্থটির ভূমিকা লিখে দিলে বাংলাদেশের সাহিত্যমোদী মহলে কৌতূহল সৃষ্টি হয়। বইটির প্রচ্ছদ করেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও ভাস্কর শামীম শিকদার। উপন্যাসটি লেখক শিবির হতে বর্ষসেরা উপন্যাসের পুরস্কার লাভ করে। শঙ্খনীল কারাগার তার লেখা প্রথম উপন্যাস, কিন্তু প্রকাশিত ২য় গ্রন্থ। তার রচিত তৃতীয় উপন্যাস বিজ্ঞান কল্পকাহিনীমূলক তোমাদের জন্য ভালোবাসা। বিজ্ঞান সাময়িকী সাপ্তাহিক পত্রিকায় উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। অধ্যাপনা ও পিএইচডি ১৯৭৩ সালে ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। তার বেতন ছিল ৬৫০ টাকা। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্থায় তিনি তার প্রথম ছোটগল্প রচনা করেন। সৌরভ নামক গল্পটি বিচিত্রা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে যোগদান করেন। এই বছর বিচিত্রা পত্রিকায় ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তার রচিত উপন্যাস অচিনপুর। পরে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে পলিমার রসায়ন বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি লাভ করেন। বিবাহ হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে গুলতেকিন খানকে বিয়ে করেন। গুলতেকিন প্রিন্সিপাল ইবরাহীম খাঁর নাতনী। এই দম্পতির তিন মেয়ে এবং এক ছেলে। বড় মেয়ে নোভা আহমেদ, মেজো মেয়ে শীলা আহমেদ এবং ছোট মেয়ে বিপাশা আহমেদ। তার বড় ছেলের নাম নুহাশ হুমায়ূন। বাবার মত নুহাশও পরিচালনায় মনোনিবেশ করেন। অন্য আরেকটি ছেলে সন্তান অকালে মারা যায়। তিনি তার নাম রেখেছিলেন রাশেদ হুমায়ূন। ১৯৮০-এর দশক প্রথম প্রহর ও এইসব দিনরাত্রি টেলিভিশন নাট্যকার হিসেবে হুমায়ূন আহমেদকে আবিষ্কার করেন নওয়াজিশ আলী খান । হুমায়ূন আহমেদের "নন্দিত নরকে ও শঙ্খনীল" কারাগার পড়ার পর তিনি একদিন ধানমন্ডির দখিন হাওয়াতে "রত্নদ্বীপ " নাটকের চিত্রায়নকালে নওয়াজিশ আলী খান হুমায়ূন আহমেদ এর সাথে পরিচিত হন। তিনি আহমেদকে টেলিভিশনের জন্য নাটক লিখতে আহ্বান জানান। টেলিভিশনের জন্য হুমায়ূন আহমেদের প্রথম কাজ হল টেলিভিশন নাটক "প্রথম প্রহর"। এটি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্প্রচারিত হয়। নাটকটি পরিচালনা করেন নওয়াজিশ আলি খান। মানুষের সততাকে কেন্দ্র করে নির্মিত নাটকটি প্রচারের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। পরবর্তীতে খান আহমেদ রচিত অসময়, অযাত্রা, বিবাহ, এসো নিপবনে, নিমফুল নাটক প্রযোজনা করেন। হুমায়ূন আহমেদ এর রচিত প্রথম ধারাবাহিক নাটক এইসব দিনরাত্রি (১৯৮৫)। নাটকে লিউকোমিয়া আক্রান্ত শিশু চরিত্র 'টুনি'কে বাঁচিয়ে রাখার জন্য হুমায়ূন আহমেদের কাছে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনে দর্শকের প্রচুর চিঠি আসে, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ তার চিত্রনাট্য এর ধারায় অটল থাকেন। বহুব্রীহি ও কোথাও কেউ নেই নওয়াজিশ আলি খানের প্রযোজনায় হুমায়ূন আহমেদ এর রচনায় প্রথম টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক বহুব্রীহি। এটি ১৯৮৮-৮৯ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত হয়। এই ধারবাহিকটির প্রতিটি পর্ব ছিল বিষয়ভিত্তিক ও স্বয়ংসম্পূর্ণ, যা ছিল বাংলাদেশের টিভি নাটকের অভিনব অধ্যায়। এই ধারাবাহিকের মাধ্যমে কিছু সামাজিক বিষয় যেমন - মিথ্যা না বলা ও পুষ্টি সংরক্ষণের জন্য সপ্তাহে এক দিন মাছ না খাওয়া, এবং মুক্তিযুদ্ধ এর চেতনা নতুন ভাব্ব জাগিয়ে তোলা ইত্যাদি । ধারাবাহিকের একটি সংলাপ "তুই রাজাকার" এটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ওই সময়ে নির্মিত হয় টেলিভিশন ধারাবাহিক নাটক অয়োময় । এই নাটকেই তার কন্যা শীলা আহমেদের অভিনয়ে অভিষেক হয়। শীলা আহমেদের অভিনীত আরেকটি জনপ্রিয় নাটক হচ্ছে "আজ রবিবার''। আহমেদ এই নাটকের মহড়া, চিত্রায়ণ ও সম্পাদনার সাথে যুক্ত ছিলেন, যা তাকে পরবর্তীতে পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে। তার রচিত আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক হল কোথাও কেউ নেই (১৯৯০)। এই ধারাবাহিকের বাকের ভাই চরিত্রটি তুমুল দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এই চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাকের ভাইয়ের ফাঁসি রুখতে দর্শক 'বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে' স্লোগান দিয়ে মিছিল বের করে। এমনকি-হুমায়ূন আহমেদের ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের বাড়িতে দর্শকেরা আক্রমণ করে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে তিনি রমনা থানায় জিডিও করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে তিনি বহু এক পর্বের নাটক নির্মাণ করেছেন। যার মধ্যে খেলা, অচিন বৃক্ষ, খাদক, একি কাণ্ড, একদিন হঠাৎ, অন্য- ভুবন উল্লেখযোগ্য। মিসির আলি চরিত্র মিসির আলি চরিত্রটি আহমেদের মাথায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ডাকোটার ফার্গো শহরে স্ত্রী গুলতেকিনের সাথে গাড়িতে ভ্রমণকালে। এই ঘটনার অনেকদিন পর তিনি মিসির আলি বিষয়ক প্রথম উপন্যাস দেবী লিখেন। ১৯৮৫ সালে উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে তিনি এই চরিত্রকে কেন্দ্র করে রচনা করেন নিশীথিনী (১৯৮৭), নিষাদ (১৯৮৮), অন্য ভুবন (১৯৮৯) ও বৃহন্নলা (১৯৮৯)। এছাড়াও হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলিকে নিয়ে লেখা প্রথম উপন্যাস দেবী থেকে ২০১৮ সালে নির্মিত হয় দেবী নামের একটি চলচ্চিত্র। যেটির মাধ্যমে প্রথমবারের মতো মিসির আলির বড় পর্দায় অভিষেক হয়। ছবিটি পরিচালনা করেন অনম বিশ্বাস। এতে মিসির আলির ভূমিকায় অভিনয় করেন চঞ্চল চৌধুরী। ১৯৯০-এর দশক হিমু ও শুভ্র চরিত্র হুমায়ূন আহমেদ সৃষ্ট হিমু চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে ময়ূরাক্ষী উপন্যাস দিয়ে। ১৯৯০ সালে মে মাসে অনন্যা প্রকাশনী থেকে বইটি প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে চরিত্রটি পাঠকদের, বিশেষ করে তরুণ সাহিত্যপ্রেমীদের মাঝে জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে একে একে প্রকাশিত হতে থাকে দরজার ওপাশে (১৯৯২), হিমু (১৯৯৩), পারাপার (১৯৯৪), এবং হিমু (১৯৯৫), হিমুর হাতে কয়েকটি নীলপদ্ম (১৯৯৬), হিমুর দ্বিতীয় প্রহর (১৯৯৭), হিমুর রূপালী রাত্রি (১৯৯৮), এবং একজন হিমু কয়েকটি ঝিঁ ঝিঁ পোকা (১৯৯৯) ইত্যাদি। এছাড়া এই উপন্যাসগুলো নিয়ে হিমু সমগ্র (১৯৯৪), হিমু সমগ্র (দ্বিতীয় খণ্ড) (১৯৯৮), এবং হিমু অমনিবাস (২০০০) প্রকাশিত হয়। হুমায়ূন আহমেদ এর লেখায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত- এরকম একটি কথা বলাও হলেও হিমুর লেখাগুলোর ক্ষেত্রে তা সত্যি নয়। শুভ্র চরিত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটে দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাস দিয়ে। যদিও শুভ্র চরিত্রটি প্রথম আসে তার লেখা একটি ছোটগল্পে, যার নাম 'শাদা গাড়ি।' দারুচিনি দ্বীপ বইটি অনুপম প্রকাশনী থেকে ১৯৯১ সালে প্রকাশিত হয়। শুভ্রকে নিয়ে রচিত তার দ্বিতীয় উপন্যাস হল মেঘের ছায়া। এটি ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয়। দারুচিনি দ্বীপ উপন্যাসের গল্পের শেষ থেকে শুরু হয় পরবর্তী উপন্যাস রূপালী দ্বীপ (১৯৯৪)। শঙ্খনীল কারাগার ও আগুনের পরশমণি ১৯৯২ সালে হুমায়ূন আহমেদ রচিত শঙ্খনীল কারাগার উপন্যাস অবলম্বনে মোস্তাফিজুর রহমান একই নামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটি নির্মাণের জন্য পরিচালক বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান পান এবং আহমেদ চিত্রনাট্য লেখার সম্মানী হিসেবে ১০,০০০ টাকা পান। মুক্তির পর চলচ্চিত্রপ্রেমীদের মধ্যে ছবিটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে, কিন্তু শাকুর মজিদ কাহিনী, কাহিনীর সময়কাল, সেট ও পোশাকে গড়মিল খুঁজে পান। তবে শঙ্খনীল কারাগার শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ চারটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং আহমেদ শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৯৪ সালে আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্র দিয়ে তার পরিচালনায় অভিষেক হয়। এই চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি ২৫,০০০ টাকা সরকারি অনুদান পান। তিনি মূলত তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু চলচ্চিত্রকার আনিস সাবেতের অকাল মৃত্যুর খবর শোনার পর চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী হন। চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষকতার চাকরি থেকে অব্যহতি দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধভিত্তিক চমৎকার গল্প ও দুর্দান্ত নির্মাণশৈলী দিয়ে তিনি দর্শকের মন জয় করেন। চলচ্চিত্র পরিচালক কবীর আনোয়ার বলেন, "এতোবড় মাপের ছবি বাংলাদেশে আগে কখনো হয় নি, জানি না সামনে কেউ আসবেন কিনা এরকম ছবি বানানোর মেধা নিয়ে।" চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রসহ আটটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে এবং আহমেদ শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও সংলাপ রচয়িতা বিভাগে পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত হয় তার উপন্যাস কবি। এতে তিনজন কবির গল্প বিবৃত হয়েছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ছোটদের কাগজ পত্রিকায় কালো জাদুকর উপন্যাসটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করতে থাকেন। পার্ল পাবলিকেশন্স ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একুশে বইমেলায় বইটি গ্রন্থাকারে প্রকাশ করে। শ্রাবণ মেঘের দিন ও গীত রচনা ১৯৯৯ সালে তিনি নির্মাণ করেন লোক-নাট্যধর্মী শ্রাবণ মেঘের দিন। এটি তার নিজের রচিত একই নামের উপন্যাসের চলচ্চিত্রায়ণ। চলচ্চিত্রটি সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে এবং ২০০২ সালে ব্রিটিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের অধিভুক্ত সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের করা জরিপে সমালোচকদের বিচারে এটি সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকায় নবম স্থান অধিকার করে। এছাড়া ছবিটি সাতটি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করে। হুমায়ূন আহমেদ মূলত গান রচয়িতা বা গীতিকার নন। কেবল নাটক ও চলচ্চিত্রের প্রয়োজনে তিনি গান রচনা করে থাকেন। এই চলচ্চিত্রের জন্য তার রচিত "একটা ছিল সোনার কন্যা" এবং "আমার ভাঙা ঘরে" গান দুটি বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রথম গানটিতে কণ্ঠ দিয়ে গায়ক সুবীর নন্দী শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০-এর দশক ২০০০ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয় তার রচিত উপন্যাস বৃষ্টিবিলাস। মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন নিয়ে লেখা বইটি তার সর্বাধিক বিক্রিত বইয়ের একটি। ২০০০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসেই বইটির দ্বাদশ মুদ্রণ বের করতে হয়। ২০০১ সালে দুই দুয়ারী চলচ্চিত্র সকল শ্রেণির দর্শকদের কাছে দারুণ গ্রহণযোগ্যতা পায়। ছবিতে জাদু বাস্তবতার প্রকাশ পায় রিয়াজ অভিনীত রহস্য মানব চরিত্রের আশ্চর্য উপায়ে মানুষের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চিত্রায়নের মধ্য দিয়ে। এই চরিত্রে অভিনয় করে রিয়াজ শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। ২০০৩-এ নির্মাণ করে জমিদারদের কঠোর মনোভাব, বিলাসিতা আর শিল্পকর্মের প্রতি গভীর অনুরাগ নিয়ে চিত্রিত চলচ্চিত্র চন্দ্রকথা। এই ছবিতে তিনি একই সাথে মানবতা ও নিষ্ঠুরতার প্রতিফলন ঘটান। ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ২০০৪ সালে নির্মাণ করেন শ্যামল ছায়া চলচ্চিত্রটি। এটি ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের জন্য বাংলাদেশ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। এছাড়াও চলচ্চিত্রটি কয়েকটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়। ২০০৪ সালে প্রকাশিত হয় তার রচিত যুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস জোছনা ও জননীর গল্প। বিবাহবিচ্ছেদ ও দ্বিতীয় বিবাহ ১৯৯০ দশকের মধ্যভাগ থেকে তার কন্যা শীলার সমবয়সী এবং তার বেশ কিছু নাটক-চলচ্চিত্রে অভিনয় করা অভিনেত্রী শাওনের সাথে হুমায়ূন আহমেদের ঘনিষ্ঠতা জন্মে। এর ফলে সৃষ্ট পারিবারিক অশান্তির অবসানকল্পে ২০০৩ সালে গুলতেকিনের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয় এবং ঐ বছরই তিনি শাওনকে বিয়ে করেন। এ ঘরে তাদের তিন ছেলে-মেয়ে জন্মগ্রহণ করে। প্রথম ভূমিষ্ঠ কন্যাটি মারা যায়। এ কন্যার নাম তিনি রাখতে চেয়েছিলেন লীলাবতী। ছেলেদের নাম নিষাদ ও নিনিত হুমায়ূন। ২০০৬ সালে হুমায়ূন আহমেদের লেখা উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র, সেগুলো হল মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত দূরত্ব, বেলাল আহমেদ পরিচালিত নন্দিত নরকে এবং আবু সাইয়ীদ পরিচালিত নিরন্তর। ২০০৬ সালে অন্যপ্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয় তার ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন-এর প্রথম খণ্ড এবং পরের বছর এর দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হয়। ২০০৭ সালে তার উপন্যাস অবলম্বনে শাহ আলম কিরণ নির্মাণ করেন সাজঘর এবং তৌকীর আহমেদ নির্মাণ করেন দারুচিনি দ্বীপ। চলচ্চিত্র দুটি ৩২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে একাধিক বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। এ সময়ে তিনি হাস্যরসাত্মক নয় নম্বর বিপদ সংকেত (২০০৭) এবং ত্রিভুজ প্রেমের গল্প নিয়ে আমার আছে জল (২০০৮) নির্মাণ করেন। ২০১০-এর দশক ঘেটুপুত্র কমলা ও দেয়াল ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) তার পরিচালিত সর্বশেষ চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি ৮৫তম একাডেমি পুরস্কারে সেরা বিদেশী ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগের জন্য বাংলাদেশ থেকে নিবেদন করা হয়েছিল। ২০১২ সালের মে মাসে দৈনিক প্রথম আলোর সাহিত্য সাময়িক দেয়াল উপন্যাসের দুটি অধ্যায় প্রকাশিত হয়। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনার বিবরণে তথ্যগত ভুল থাকায় আদালত তা সংশোধনের নির্দেশ দেয় এবং কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করে। এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের ভাষ্যমতে, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে খন্দকার মোশতাক আহমেদ জড়িত ছিলেন বলে মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে উঠে এসেছে। কিন্তু মোশতাক আহমেদ কিছুই জানতেন না, এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে ঐ উপন্যাসে। তবে এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও সাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, "দেয়াল কোনো রাজনৈতিক উপন্যাস নয়, এ এক ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাস৷ এতে ইতিহাসের খলনায়কদেরকে খলনায়ক হিসেবেই দেখানো হয়েছে"। পরবর্তীকালে হুমায়ূন আহমেদ কর্তৃক সংশোধিত বইটি অন্যপ্রকাশ ২০১৩ সালে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশ করে। ক্যান্সার ও মৃত্যু জীবনের শেষভাগে ঢাকা শহরের অভিজাত আবাসিক এলাকা ধানমন্ডির ৩/এ রোডে নির্মিত দখিন হাওয়া ভবনের একটি ফ্লাটে তিনি বসবাস করতেন। খুব ভোর বেলা ওঠা অভ্যাস ছিল তার, ভোর থেকে সকাল ১০-১১টা অবধি লিখতেন তিনি। মাটিতে বসে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কখনো অবসর পেলে ছবি আঁকতেন। ২০১১-এর সেপ্টেম্বের মাসে সিঙ্গাপুরে ডাক্তারী চিকিৎসার সময় তার দেহে মলাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে। তিনি নিউইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। তবে টিউমার বাইরে ছড়িয়ে না-পড়ায় সহজে তার চিকিৎসা প্রাথমিকভাবে সম্ভব হলেও অল্প সময়ের মাঝেই তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ১২ দফায় তাকে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের পর তার কিছুটা শারীরিক উন্নতি হলেও, শেষ মুহূর্তে শরীরে অজ্ঞাত ভাইরাস আক্রমণ করায় তার অবস্থা দ্রুত অবনতির দিকে যায়। মলাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘ নয় মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন। কৃত্রিমভাবে লাইভ সাপোর্টে রাখার পর ১৯শে জুলাই ২০১২ তারিখে তিনি নিউ ইয়র্কের বেলেভ্যু হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তাকে নুহাশ পল্লীতে দাফন করা হয়। নুহাশ পল্লী হুমায়ূন আহমেদ ১৯৮৭ সালে ঢাকার অদূরে গাজীপুর জেলার সদর উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের পিরুজালী গ্রামে ২২ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত বাগান বাড়ি নুহাশ পল্লী গড়ে তুলেন। বাড়িটির নামকরণ করা হয় স্ত্রী গুলতেকিন ও তার প্রথম পুত্র নুহাশ হুমায়ূনের নামে। বর্তমানে এর আয়তন আরও বৃদ্ধি করে ৪০ বিঘা করা হয়েছে। অভিনেতা এজাজুল ইসলাম তাকে এই জমি কেনা ও ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করেন। বাড়িটির সর্ব উত্তরে একটি পুকুর রয়েছে। পুকুরটির নাম 'লীলাবতী'। এর নামকরণ করা হয় শাওন ও তার অকালপ্রয়াত কন্যার নামে, যে পৃথিবীর আলো দেখার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে। পুকুরে একটি কাঠের পুল রয়েছে। পুকুরের মাঝখানে একটি কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে তাবু পোঁতা আছে। রচনাশৈলী মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি দুই শতাধিক গল্পগ্রন্থ ও উপন্যাস রচনা করেছেন। তার রচনার প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো 'গল্প-সমৃদ্ধি'। এছাড়া তিনি অনায়াসে ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে অতিবাস্তব ঘটনাবলীর অবতারণা করেন যাকে একরূপ যাদু বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করা যায়। তার গল্প ও উপন্যাস সংলাপপ্রধান। তার বর্ণনা পরিমিত এবং সামান্য পরিসরে কয়েকটি মাত্র বাক্যের মাধ্যমে চরিত্র চিত্রণের অদৃষ্টপূর্ব প্রতিভা তার রয়েছে। যদিও সমাজসচেতনতার অভাব নেই তবু লক্ষ্যণীয় যে তার রচনায় রাজনৈতিক প্রণোদনা অনুপস্থিত। তিনি কোন চরিত্রে তার নিজস্ব মতামত চাপিয়ে দেননি। সকল রচনাতেই একটি প্রগাঢ় শুভবোধ ক্রিয়াশীল থাকে এবং চরিত্রের বয়ানে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট নয়। তিনি চরিত্রের পক্ষপাত ও প্রবঞ্চনা থেকে দূরে থাকেন, যার ফলে 'নেতিবাচক' চরিত্রও তার লেখনীতে লাভ করে দরদী রূপায়ণ। এ বিষয়ে তিনি মার্কিন লেখক জন স্টাইনবেক দ্বারা প্রভাবিত। এছাড়া অনেক রচনার মধ্যে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধির প্রচ্ছাপ লক্ষ্য করা যায়। তার প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে-এ তিনি ক্ষমতা, অর্থবিত্ত ও সামাজিক স্তরের উপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিপাত করেন। তিনি নিজে গল্পকথক হয়ে আমাদের মধ্যে বাস করা অপশক্তিকে উন্মোচন করেছেন। তার দ্বিতীয় উপন্যাস শঙ্খনীল কারাগার-এ তিনি শ্যামবর্ণের যুবতী মেয়ের জন্য পাত্র খোঁজা, যুবক ছেলের চাকরি অন্বেষণ, প্রতিনিয়ত সমাজের শ্লেষোক্তি শোনা ও অসংখ্য বিধি-নিষেধ-সহ নানা পারিবারিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে রচিত উপন্যাস মধ্যাহ্ন তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে পরিগণিত। এছাড়া জোছনা ও জননীর গল্প আরেকটি বড় মাপের রচনা, যা ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ অবলম্বন করে রচিত। তবে সাধারণত তিনি সমসাময়িক ঘটনাবলী নিয়ে লিখতেন। দর্শক ও সমালোচকদের প্রতিক্রিয়া নোবেল বিজয়ী বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস হুমায়ূন আহমেদের সামগ্রিক প্রভাব মূল্যায়ন করে বলেন, "হুমায়ূনের কাজসমূহ সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের পরে সবচেয়ে গভীর ভাবসম্পন্ন ও সবচেয়ে ফলপ্রসূ।" একই রকমভাবে, বাংলাদেশী কবি আল মাহমুদ তার সম্পর্কে বলেন, "ঠাকুর ও নজরুলের মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যের একটি স্বর্ণযুগ শেষ হয়েছে এবং আরেকটি শুরু হয়েছে হুমায়ূন আহমেদের মধ্য দিয়ে।" বাংলাদেশী লেখক ইমদাদুল হক মিলন তাকে "বাংলা সাহিত্যের সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকারী" বলে উল্লেখ করেন, যিনি তার সৃষ্ট চরিত্রের সকল কাজ ও চিন্তা-ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করেন।" বাঙালি লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাকে "বাংলা সাহিত্যে একটি শতাব্দীর সবচেয়ে জনপ্রিয় লেখক" উল্লেখ করেন, এবং তার মতে "আহমেদ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধায়ের চেয়েও জনপ্রিয় ছিলেন।" বাঙালি লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তাকে "উপমহাদেশের অন্যতম সেরা লেখক" বলে উল্লেখ করেন। বাংলাদেশী লেখক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, "তিনি বাংলা সাহিত্যে একটি নতুন যুগের সূচনা করেছিলেন।" পাকিস্তানের প্রাচীনতম ও সর্বাধিক পঠিত ইংরেজি সংবাদপত্র ডন তাকে "বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কিংবদন্তি" বলে উল্লেখ করে। প্রভাব ও উত্তরাধিকার হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিনের যৌথ উদ্যোগে "হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার" প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতি বছর আহমেদের জন্মদিনে ১২ নভেম্বর দুজন সাহিত্যিককে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ২০১৭ সালে তার জন্মদিনে গুগল তাদের হোমপেজে হুমায়ূন আহমেদের গুগল ডুডল প্রদর্শন করে উদ্‌যাপন করে। গুগল ডুডলটিতে দেখা যায় চায়ের টেবিলে বই হাতে বসে আছেন হ‌ুমায়ূন আহমেদ। তার তৈরি জনপ্রিয় চরিত্র হিমু হলুদ পাঞ্জাবি পরে খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। আর চারপাশে প্রকৃতির আবহ দিয়ে সাজানো হয়েছে ইংরেজি গুগল লেখাটি। অনুপ্রেরণা হুমায়ূন আহমেদের তুমুল জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিক কোথাও কেউ নেই থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মাতা রেদওয়ান রনি নির্মাণ করেন সাত পর্বের একটি মিনি-ধারাবাহিক বাকের ভাই, হিমু। এর গল্প শুরু হয় কোথাও কেউ নেই-এর পর থেকে, যেখানে হুমায়ূন আহমেদের সৃষ্ট চরিত্র হিমু মুনাকে কথা দেয় সে বাকের ভাইকে খুঁজে বের করবে। ঘটনাপ্রবাহে একদিন সত্যি সত্যি বাকের ভাইয়ের সাথে দেখা হয় হিমুর। ধারাবাহিকটি ২০১০ সালের ঈদুল ফিতরে দেশ টিভিতে প্রচারিত হয়। সৃষ্টিকর্ম লেখক ও চলচ্চিত্রকার হুমায়ূন আহমেদ অসংখ্য গান রচনা করেছেন। গানগুলো তিনি তাঁর নাটক ও চলচ্চিত্রে ব্যবহার করেন। গানগুলোর সুরকার ও শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন মকসুদ জামিল মিন্টু, সেলিম চৌধুরী, সুবীর নন্দী, এস আই টুটুল, মেহের আফরোজ শাওন, সাবিনা ইয়াসমিন, খান আসিফুর রহমান আগুন, হাবিব ওয়াহিদ, ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ। তাঁর সর্বাধিক পরিচিত গান দুটো হলো একটা ছিল সোনার কন্যা ও যদি মন কাঁদে। এছাড়া রয়েছে চলো বৃষ্টিতে ভিজি, আমার আছে জল, নদীর নাম ময়ূরাক্ষী, চলো না যাই, আজ জরির বিয়ে, ও আমার রসিক বন্ধু রে, ও আমার উড়াল পঙ্খী রে, আমার ভাঙ্গা ঘরের ভাঙ্গা চালা, মাথায় পরেছি সাদা ক্যাপ, কন্যা নাচিল রে, ঠিকানা আমার নোটবুকে আছে, বাজে বংশী, বরষার প্রথম দিনে, আমি আজ ভেজাব চোখ সমুদ্র জলে, চান্নি পসরে কে আমায় স্মরণ করে, চান্নি পসর রাইতে যেন আমার মরণ হয় ইত্যাদি। পুরস্কার ও সম্মাননা হুমায়ুন আহমেদ তার অসংখ্য বহুমাত্রিক সৃষ্টির জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা কথাসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে লেখক শিবির পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা উপন্যাসে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৭ সালে তিনি মাইকেল মধুসুদন পদক লাভ করেন। ১৯৯০ সালে তিনি হুমায়ূন কাদির স্মৃতি পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৯২ সালের শঙ্খনীল কারাগার চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনন্য অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ১৯৯৪ সালে দেশের দ্বিতীয় বেসামরিক সম্মাননা একুশে পদকে ভূষিত করে। একই বছরের আগুনের পরশমণি চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে তিনটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। শ্রাবণ মেঘের দিন (১৯৯৯) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার ও শ্রেষ্ঠ গীতিকার বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া চলচ্চিত্রটি সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনের জরিপে সমালোচকদের বিচারে সেরা দশ বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের তালিকায় নবম স্থান লাভ করে। তার উপন্যাস অবলম্বনে তৌকির আহমেদ নির্মিত দারুচিনি দ্বীপ (২০০৭) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আমার আছে জল (২০০৮) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ১১তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক পুরস্কার শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালক বিভাগে মনোনয়ন লাভ করেন। তার উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত প্রিয়তমেষু (২০০৯) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার বিভাগে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। ঘেটুপুত্র কমলা (২০১২) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ পরিচালক এবং শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার বিভাগে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এই চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ১৫তম মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচক পুরস্কার শাখায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার লাভ করেন। তার উপন্যাস অবলম্বনে মোরশেদুল ইসলাম নির্মিত অনিল বাগচীর একদিন (২০১৫) চলচ্চিত্রের জন্য তিনি ৪০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মরণোত্তর শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার লাভ করেন। চিত্রশালা আরও দেখুন হিমু মিসির আলী নুহাশ পল্লী শুভ্র কেন্দুয়া উপজেলা শহীদ স্মৃতি বিদ্যপীঠ তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি বহিঃসংযোগ হুমায়ুন আহমেদ ডট অৰ্গ - হুমায়ুন আহমেদ এর ওয়েবসাইট, আমার বই ডট কম সৌজন্যে হুমায়ূন আহমেদ — ইয়াহু মুভিজ হুমায়ূন আহমেদ — কমপ্লিট ইনডেক্স টু ওয়ার্ল্ডস ফিল্ম হুমায়ূন আহমেদের সাক্ষাৎকার ১৯ ফ্রেব্রুয়ারি ২০১০ ১৯৪৮-এ জন্ম ২০১২-এ মৃত্যু বাঙালি ঔপন্যাসিক বাঙালি ছোটগল্পকার বাঙালি রম্যরচনাকার বাঙালি ভ্রমণ বিষয়ক লেখক বাংলাদেশী পুরুষ ঔপন্যাসিক বাংলাদেশী গীতিকার বাংলাদেশী নাট্যকার বাংলাদেশী চলচ্চিত্র পরিচালক বাংলাদেশী চলচ্চিত্র প্রযোজক ভাষা ও সাহিত্যে একুশে পদক বিজয়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বগুড়া জিলা স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বাঙালি মুসলিম ময়মনসিংহ জেলার ব্যক্তি নেত্রকোণা জেলার ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী শ্রেষ্ঠ কাহিনীকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী কথাসাহিত্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী বাংলাদেশী বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক ঢাকা কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ২০শ শতাব্দীর পুরুষ লেখক মলাশয়ের ক্যান্সারে মৃত্যু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক বাঙালি লেখক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বাঙালি গোয়েন্দা কাহিনি লেখক বাংলা ভাষার বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক বাংলা ভাষার লেখক বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকারের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (বাংলাদেশ) বিজয়ী ২০শ শতাব্দীর বাঙালি
https://en.wikipedia.org/wiki/Humayun_Ahmed
Humayun Ahmed
Humayun Ahmed (Bengali: হুমায়ূন আহমেদ [ɦumajuːn aɦmed]; 13 November 1948 – 19 July 2012) was a Bangladeshi novelist, dramatist, screenwriter, filmmaker, songwriter, scholar, and academic. His breakthrough was his debut novel Nondito Noroke published in 1972. He wrote over 200 fiction and non-fiction books. He was one of the most popular authors and filmmakers in post-independence Bangladesh. Pakistani English newspaper Dawn referred to him as the cultural legend of Bangladesh. In the early 1990s, Humayun Ahmed emerged as a filmmaker. He went on to make a total of eight films – each based on his novels. Some of his notable films are: Daruchini Dip, Aguner Poroshmoni, Srabon Megher Din, Shonkhonil Karagar, Dui Duari, Shyamol Chhaya and Ghetuputra Komola. He was one of the most influential dramatist in Bangladesh during the 1990s, when he wrote the most popular soap operas. His works, such as Kothao Keu Nei, Aaj Robibar, and Bohubrihi, are still considered masterpieces by fans and critics. Many Bangladeshi filmmakers are still inspired by his works. His film Shyamol Chhaya and Ghetuputra Komola were gradually submitted for the 78th Academy Awards and 85th Academy Awards in the Best Foreign Language Film category from Bangladesh. Later he set up his own production company named Nuhash Chalachitra. Widely regarded as the greatest novelist in Bangladesh's history, he is considered one of the cornerstones in modern Bengali literature, his works are characterized by non-violence, realistic storylines, family drama, and humor styles. In recognition of the works of Humayun, The Times of india wrote, "Humayun was a custodian of the Bangladeshi literary culture whose contribution single-handedly shifted the capital of Bengali literature from Kolkata to Dhaka without any war or revolution." and entitled him "The Shakespeare of Bangladesh".Sunil Gangopadhyay described him as the most popular writer in the Bengali language for a century, and according to him (Sunil), Humayun Ahmed was even more popular than Sarat Chandra Chattopadhyay. Humayun Ahmed's books have been the top sellers at the Ekushey Book Fair during every year of the 1990s and 2000s. He won the National Film Awards a record 7 times in directing, screenplay and story for the films Ghetuputra Komola, Aguner Poroshmoni, Shonkhonil Karagar, Daruchini Dwip and Anil Bagchir Ekdin. He also won the Bangla Academy Literary Award in 1981 and the Ekushey Padak in 1994 for his contribution to the Bengali literature.
2144
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A7%A7%E0%A7%AF%E0%A7%AD%E0%A7%A7
১৯৭১
১৯৭১ সালের ঘটনাপঞ্জী। ঘটনা তালিকা জানুয়ারি জানুয়ারি ৪ : জাতীয় মুজাহিদ সংঘ পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের পৃথকীকরণ ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। জানুয়ারি ৩১ – এপোলো ১৪ চাঁদের উদ্দেশ্যে যাত্রা ফেব্রুয়ারি ফেব্রুয়ারি ৫ – এপোলো ১৪ চাঁদে অবতরন মার্চ মার্চ ২: ডাকসুর ভি.পি. আ.স.ম. আবদুর রব কলা ভবনে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। মার্চ ৭ : ঢাকা শহরের রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক জনসভায় তার ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এ ভাষণে সরাসরি স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলেও তিনি জনগণকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান। মার্চ ২৪ : জেনারেল ইয়াহিয়া খান বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। তার সাথে বাংলাদেশে বসবাসরত অনেক পাকিস্তানি নাগরিক পাকিস্তান চলে যায়। বাংলাদেশী নাগরিকদের বিমান বন্দরে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ থাকে। মার্চ ২৫ : এই দিন দিবাগত রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকা সহ সারা দেশে বাঙালিদের উপর আক্রমণ শুরু করে। ইতিহাসে তা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। মার্চ ২৬ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পক্ষে আওয়ামী লীগের নেতা জনাব আব্দুল হান্নান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। মার্চ ২৭ : মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র দখল করেন এবং সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এপ্রিল এপ্রিল ১০ : স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়। এপ্রিল ১৭ : মেহেরপুর জেলার মুজিবনগরের বৈদ্যনাথতলায় স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি ও মন্ত্রীরা শপথ গ্রহণ করে। এপ্রিল ১৮ : জেনারেল মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানী বাংলাদেশের সেনা প্রধান নিযুক্ত হন। কলকতায় বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়। ডিসেম্বর ডিসেম্বর ৩ : বাংলাদেশ ভারত যৌথ বাহিনী গঠিত হয় এবং ভারতীয় সৈন্যরা সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করে। ডিসেম্বর ১৪ : যুদ্ধে পরাজয় নিশ্চত বুঝতে পেরে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর বুদ্ধিজীবীদেরকে হত্যা করে। এ দিনটিকে বাংলাদেশে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ডিসেম্বর ১৬ : বিকাল ৫ টা ৩০ মিনিটে রমনা রেস্‌কোর্স মাঠে মিত্র বাহিনীর প্রধান জগজিৎ সিং অরোরা'র কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সেনাপতি জেনারেল এ কে খান নিয়াজী আত্মসমর্পণ করেন। জন্ম ৭ জানুয়ারি - জেরেমি রেনার, মার্কিন অভিনেতা ও গায়ক। ১১ জানুয়ারি - ম্যারি জে. ব্লাইজ, মার্কিন গায়িকা, গীতিকার, অভিনেত্রী ও মানবহিতৈষী। ৩ সেপ্টেম্বর - কিরণ দেসাই, ম্যান বুকার পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন সাহিত্যিক। ১৯ সেপ্টেম্বর - সালমান শাহ, বাংলাদেশি অভিনেতা। (মৃ. ১৯৯৬) মৃত্যু মে ৭ মে - রণদাপ্রসাদ সাহা বিখ্যাত বাঙালি সমাজসেবক এবং দানবীর, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নিহত হন। অক্টোবর ২ অক্টোবর - খালেক নওয়াজ খান, ভাষাসৈনিক ও বাঙালি রাজনীতিবিদ, পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। (জ. ১৯২৬) নভেম্বর ২৭ নভেম্বর - হারুনুর রশীদ (বীর প্রতীক), বীর প্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বুলেটে শহীদ। নোবেল পুরস্কার পদার্থবিদ্যা - ডেনেস গাবর রসায়ন - গেরহার্ড হার্জবার্গ চিকিৎসাবিজ্ঞান - আর্ল উইলবার সাদারল্যান্ড জুনিয়র সাহিত্য - পাবলো নেরুদা শান্তি - উইলি ব্রান্ড অর্থনীতি - সাইমন কুজ্‌নেত্‌স তথ্যসূত্র
https://en.wikipedia.org/wiki/1971
1971
1971 (MCMLXXI) was a common year starting on Friday of the Gregorian calendar, the 1971st year of the Common Era (CE) and Anno Domini (AD) designations, the 971st year of the 2nd millennium, the 71st year of the 20th century, and the 2nd year of the 1970s decade. The year 1971 had three partial solar eclipses (February 25, July 22 and August 20) and two total lunar eclipses (February 10, and August 6). The world population increased by 2.1% this year, the highest increase in history.
2148
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%20%E0%A6%95%E0%A7%83%E0%A6%B7%E0%A6%BF%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AF%E0%A6%BC
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) বাংলাদেশের কৃষি বিষয়ক একটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৯৬১ সালের ১৮ আগস্ট ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশের প্রথম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং আয়তনে দ্বিতীয় বৃহত্তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে এতে ৪৪টি বিভাগ চালু রয়েছে। ওয়েবম্যাট্রিক্স বিশ্ববিদ্যালয় র‍্যাঙ্কিং ২০১৭ অনুসারে এটি বাংলাদেশের এক নম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন (টিএইচই) প্রকাশিত সর্বশেষ র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ১০০১ থেকে ১২০০–এর মধ্যে। আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা সংস্থা অ্যালপার ডজার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্সের প্রকাশিত ২০২২ সালের বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫৬ জন গবেষকের নাম স্থান পেয়েছে। ইতিহাস ১৯৬১ সালে ভেটেরিনারি ও কৃষি অনুষদ নামে দু'টি অনুষদ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়, তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ঘোষণা করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যেই পশুপালন অনুষদ নামে তৃতীয় অনুষদের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৬৩-৬৪ শিক্ষাবর্ষে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি প্রকৌশল ও কারিগরি অনুষদ এবং ১৯৬৭-৬৮ শিক্ষাবর্ষে মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদ শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয় সমাবর্তন মঞ্চে আয়োজিত এক সংবর্ধনা সভায় ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়াদের মতো কৃষিবিদদেরও চাকরিক্ষেত্রে প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা ঘোষনা দেন। অবস্থান এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়। ময়মনসিংহ শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পশ্চিম প্রান্তে প্রায় ১২৬১ একর জায়গা নিয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী ঢাকা থেকে ১২০ কিলোমিটার উত্তরে এ ক্যাম্পাসের অবস্থান। ভৌত স্থাপনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মূল প্রশাসন ভবনসহ বিভিন্ন অনুষদীয় ভবন, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, ২০০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সম্প্রসারিত ভবন, ব্যায়ামাগার, স্টেডিয়াম, স্বাস্থ্য কেন্দ্র, জিটিআই ভবন এবং শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ১৩টি হল আছে। যার মধ্যে ৪টি হল ছাত্রীদের জন্য। এছাড়াও রয়েছে ড. ওয়াজেদ মিয়া ডরমিটরী। উপাচার্য ওসমান গণি (১৯৬১ - ১৯৬৩) মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী একেএম আমিনুল হক চৌধুরী (১৯৮০ - ১৯৮৮) শাহ মোহাম্মদ ফারুক (২৩ আগস্ট ১৯৯৩ – ১৩ নভেম্বর ১৯৯৬) এম এ সাত্তার মণ্ডল রফিকুল হক (২০১১ - ২০১৫) আলী আকবর (২৪ মে ২০১৫ - ৩১ মে ২০১৯) লুৎফুল হাসান (২০১৯-২০২৩) এমদাদুল হক চৌধুরী (২০২৩-বর্তমান) অনুষদ এবং বিভাগসমূহ বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ টি অনুষদ এবং ৪৪ টি বিভাগ রয়েছে। ভেটেরিনারি অনুষদ ভেটেরিনারি অনুষদ আটটি বিভাগ নিয়ে গঠিত। এগুলো হল - শারীরস্থান এবং তন্তুবিন্যাসবিদ্দ্যা হিস্টোলজি বিভাগ শারীরবিদ্যা বিভাগ অণুজীববিজ্ঞান এবং স্বাস্থ্যবিধি বিভাগ ফার্মাকোলজি বিভাগ পরজীববিদ্যা বিভাগ রোগবিদ্যা বিভাগ মেডিসিন বিভাগ সার্জারি ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগ ক্রায়োসার্জারি কৃষি অনুষদ কৃষি অনুষদ ষোলটি বিভাগ নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো: কৃষি অর্থনীতি বিভাগ মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগ পতঙ্গবিজ্ঞান বিভাগ উদ্যানবিদ্যা বিভাগ উদ্ভিদের রোগবিদ্যা বিভাগ ফসল উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগ জেনেটিক্স এবং উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগ কৃষি রসায়ন বিভাগ জীববিজ্ঞান বিভাগ পদার্থবিদ্যা বিভাগ রসায়ন বিভাগ ভাষা বিভাগ কৃষি বন বিভাগ বায়োপ্রযুক্তি বিভাগ পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ পশুপালন অনুষদ পশু প্রজনন ও জেনেটিক্স বিভাগ পশু বিজ্ঞান বিভাগ পশু পুষ্টি বিভাগ পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগ দুগ্ধ বিজ্ঞান বিভাগ কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান অনুষদ কৃষি অর্থনীতি বিভাগ কৃষি অর্থ বিভাগ কৃষি পরিসংখ্যান বিভাগ সহযোগিতা ও বিপণন বিভাগ গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান বিভাগ কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ ফার্ম স্ট্রাকচার বিভাগ ফার্ম পাওয়ার ও মেশিনারি বিভাগ সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগ খাদ্য প্রযুক্তি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগ কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং গণিত বিভাগ বায়োইনফরমেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং মৎসবিজ্ঞান অনুষদ মৎস্য জীববিজ্ঞান ও জেনেটিক্স বিভাগ অ্যাকক্যাকালচার বিভাগ মৎস্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ মৎস্য প্রযুক্তি বিভাগ সামুদ্রিক মৎস্য বিজ্ঞান স্নাতক ডিগ্রিসমূহ ডক্টর অব ভেটেনারী মেডিসিন ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন এগ্রিকালচার ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন এনিম্যাল হাজব্রেন্ডী ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন এগ্রিকালচারাল ইকোনমিক্স ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন এগ্রিকালচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন ফিশারিজ ব্যাচেলর অব সায়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স আবাসিক হলসমুহ ছাত্র হলসমুহ ঈশা খাঁ হল শাহজালাল হল শহীদ শামসুল হক হল শহীদ নাজমুল আহসান হল আশরাফুল হক হল শহীদ জামাল হোসেন হল হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী হল ফজলুল হক হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হল ছাত্রী হলসমুহ সুলতানা রাজিয়া হল তাপসী রাবেয়া হল বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল বেগম রোকেয়া হল রোজী জামাল হল শেখ হাসিনা হল বিভিন্ন সংগঠন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কম্পাস নাট্য সম্প্রদায় সাংবাদিক সমিতি বাকৃবি রোভার স্কাউট রোটার‍্যাক্ট ক্লাব বাকৃবি ডিবেটিং সংঘ বিনোদন সংঘ অঙ্কুর পদচিহ্ন ক্যানভাস ঘাসফুল হাসিমুখ বাকৃবি ফটোগ্রাফিক সোসাইটি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বাকৃবি শাখা পাঠচক্র বিএইউ সাইক্লিষ্টস্ বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র চারণ সংস্কৃতিক কেন্দ্র বাঁধন শুভ সংঘ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিক্যাল রেজিমেন্ট বিএনসিসি ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা বাংলাদেশ মুজিবসেনা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ ছাত্র জমিয়ত বাংলাদেশ গবেষণায় সাফল্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শস্যের জাত ও উৎপাদন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এগুলোর মধ্যে বাউ-৬৩, বাউকুল, বাউধান-২, নামে উফশী ধান জাত- সম্পদ ও সম্বল, বাউ-এম/৩৯৫, বাউ-এম/৩৯৬ নামে ৪টি উফসি সরিষা জাত, ডেভিস, ব্র্যাগ, সোহাগ, জি-২ ও বিএস-৪ নামে ৫টি সয়াবিন জাত, কমলা সুন্দরী ও তৃপ্তি নামে আলুর জাত, লতিরাজ, বিলাসী ও দৌলতপুরী নামে তিনটি মুখীকচুর জাত, কলা ও আনারস উৎপাদনের উন্নত প্রযুক্তি, রাইজোবিয়াম জৈব সার উৎপাদন প্রযুক্তি, সয়েল টেস্টিং কিট, পেয়ারা গাছের মড়ক নিবারণ পদ্ধতি, বীজের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সহজ পদ্ধতি, অ্যারোবিক পদ্ধতিতে ধান চাষ প্রযুক্তি, শুকানো পদ্ধতিতে বোরো ধান চাষ, পশু খাদ্য হিসেবে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির কলাকৌশল। আফ্রিকান ধৈঞ্চার অঙ্গজ প্রজনন, এলামনডা ট্যাবলেট, আইপিএম ল্যাব বায়োপেস্টিসাইড, বিলুপ্তপ্রায় শাকসবজি ও ফলের জার্মপ্লাজম সংরক্ষণ ও মলিকুলার বৈশিষ্ট সনাক্তকরণ কলাকৌশল। ব্রুসেলোসিসের 'হিট ফিল্ড ভ্যাকসিন' উদ্ভাবনের দাবি করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মো. সিদ্দিকুর রহমান।মোরগ-মুরগির রাণীক্ষেত রোগ ও ফাউলপক্সের প্রতিষেধক টিকা উৎপাদন, হাঁসের প্লেগ ভ্যাকসিন ও হাঁস-মুরগির ফাউল কলেরার ভ্যাকসিন তৈরি, রাণীক্ষেত রোগ সহজেই সনাক্তকরণে মলিকুলার পদ্ধতির উদ্ভাবন, মুরগির স্যালমোনোসিস রোগ নির্ণয় প্রযুক্তি; হাওর এলাকায় হাঁস পালনের কলাকৌশল, কমিউনিটি ভিত্তিক উৎপাদনমুখী ভেটেরিনারি সেবা, গবাদিপশুর ভ্রুণ প্রতিস্থাপন, ছাগল ও মহিষের কৃত্রিম প্রজনন, কৃত্রিম প্রজননে ব্যবহৃত ষাঁড়ের আগাম ফার্টিলিটি নির্ণয়, গাভীর উলানফোলা রোগ প্রতিরোধ কৌশল, হরমোন পরীক্ষার মাধ্যমে গরু ও মহিষের গর্ভ নির্ণয়, সুষম পোল্ট্রি খাদ্য, গো-খাদ্য হিসেবে খড়ের সঙ্গে ইউরিয়া-মোলাসেস ব্লক ব্যবহার, হাঁস-মুরগির উন্নত জাত উৎপাদন। কৃষি অর্থনীতি বিষয়ে মাঠপর্যায়ে বিভিন্ন অনুসন্ধানী গবেষণা তৎপরতার মাধ্যমে টেকসই শস্যবীমা কার্যক্রম, ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রমের উন্নয়ন, পশুসম্পদ উপখাত ও ডেয়রি উৎপাদনের উন্নয়ন, স্বল্প ব্যয়ে সেচনালা তৈরি, উন্নত ধরনের লাঙ্গল ও স্প্রে মেশিন, বাকৃবি জিয়া সার-বীজ ছিটানো যন্ত্র, সোলার ড্রায়ার, উন্নত ধরনের হস্তচালিত টিউবয়েল পাম্প, জ্বালানি সাশ্রয়ী উন্নতমানের দেশি চুলা, মাগুর ও শিং মাছের কৃত্রিম প্রজননের কলাকৌশল, ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ পদ্ধতি, খাচায় পাঙ্গাস চাষ, পেরিফাইটন বেজড মৎস্যচাষ, দেশি পাঙ্গাসের কৃত্রিম প্রজনন, ডাকউইড দিয়ে মিশ্র মৎস্যচাষ, মাছের জীবন্ত খাদ্য হিসেবে টিউবিফিসিড উৎপাদনের কলাকৌশল, পুকুরে মাগুর চাষের উপযোগী সহজলভ্য মৎস্যখাদ্য তৈরি, শুক্রাণু ক্রয়োপ্রিজারভেশন প্রযুক্তি, স্বল্প ব্যয়-মিডিয়ামে ক্লোরেলার চাষ, মাছের পোনা পালনের জন্য রটিফারের চাষ, মাছের রোগ প্রতিরোধকল্পে ঔষধি গাছের ব্যবহার এবং মলিকুলার পদ্ধতি ব্যবহার করে মাছের বংশ পরিক্রম নির্ণয়, তারাবাইম, গুচিবাইম ও বাটা মাছের কৃত্রিম প্রজনন, ধানক্ষেতে মাছ ও চিংড়ি চাষ, পুকুরে মাছ চাষ, সহজলভ্য মাছের খাদ্য তৈরি, একোয়াপনিক্সের মাধ্যমে মাছ এবং সবজি উৎপাদন, মাছের বিকল্প খাদ্যের জন্য ব্লাক সোলজার ফ্লাই চাষ এবং কচি গমের পাউডার উৎপাদন। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) বিজ্ঞানীরা মিলে দেশে প্রথমবারের মতো লবণাক্ততা ও জলমগ্নতা সহিষ্ণু ধানের পূর্ণাঙ্গ জীবনরহস্য (জিনোম সিকোয়েন্স) উন্মোচন করেছেন। আরও দেখুন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ওয়েবসাইট বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬১-এ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ময়মনসিংহ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬১-এ পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত ময়মনসিংহ জেলার বিশ্ববিদ্যালয়
https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_Agricultural_University
Bangladesh Agricultural University
Bangladesh Agricultural University (Bengali: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, lit. 'Bangladesh Krishi Bishshobiddalôe'), abbreviated as BAU, was established in 1961. It is the first agricultural university and also the second largest public university of Bangladesh. This university is located in Mymensingh. The university has 44 departments. BAU was the second highest budgeted public university in Bangladesh for the year 2013–2014. It is ranked number one university of Bangladesh according to the webometrics university ranking 2017. BAU has been ranked 2nd in the Bangladesh in the Times higher education world university ranking 2022. In May 2024 BAU ranked 3rd in the country in the Times Higher Education Ranking. It is one of the top ranked agricultural university in Asia.
2162
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B7%E0%A6%AE%E0%A6%A4%E0%A6%BE%20%28%E0%A6%AA%E0%A6%A6%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A5%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%9E%E0%A6%BE%E0%A6%A8%29
ক্ষমতা (পদার্থবিজ্ঞান)
পদার্থবিজ্ঞানে, ক্ষমতা হলো প্রতি একক সময়ে স্থানান্তরিত বা রূপান্তরিত শক্তির পরিমাণ। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে, ক্ষমতার একক হলো ওয়াট, যা প্রতি সেকেন্ডে এক জুলের সমান। আগেকার দিনের আলোচনায়, ক্ষমতাকে কখনও কখনও কার্যকলাপও বলা হতো। ক্ষমতা একটি স্কেলার পরিমাপ। ক্ষমতা অন্যান্য পরিমাপের সাথেও সম্পর্কিত; উদাহরণস্বরূপ, একটি স্থল যান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা যানটির চাকার উপর বায়ুগতিগত ড্র্যাগ ও আকর্ষণ বলের যোগফল এবং যানটির বেগের গুনফলের সমান। একটি মোটরের উৎপাদন ক্ষমতা হলো মোটর যে টর্ক তৈরি করে তার এবং এর আউটপুট শ্যাফ্টের কৌণিক বেগের গুনফলের সমান। একইভাবে, একটি বর্তনীর মধ্য দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক উপাদানে ব্যবহৃত ক্ষমতা উপাদানটির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বিদ্যুৎ এবং উপাদানের বিভবের গুণফল। সংজ্ঞা ক্ষমতা হলো সময়ের সাপেক্ষে যে হারে কাজ করা হয় সেটির পরিমাণ; এটি সময়ের সাপেক্ষে কাজের অন্তরজ: এখানে, হচ্ছে ক্ষমতা, কাজের পরিমাণ এবং হচ্ছে সময়। যদি x দূরত্বে ধ্রুব বল F প্রয়োগ করা হয় তবে কাজের পরিমাণ দাঁড়াবে । এক্ষেত্রে, ক্ষমতাকে এভাবে লেখা যায়ঃ ধ্রুব বলের পরিবর্তে যদি পরিবর্তনশীল বল একটি ত্রিমাত্রিক বক্ররেখা C বরাবর প্রয়োগ করা হয় তবে ব্যবহৃত ক্ষমতাকে লাইন ইন্টিগ্রালের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়ঃ ক্যালকুলাসের মৌলিক উপপাদ্য থেকে আমরা জানতে পারি তাই সূত্রটি যে কোনো সাধারণ পরিস্থিতির জন্য বৈধ। একক সমূহ ক্ষমতার মাত্রা হলো সময় দ্বারা বিভক্ত শক্তি। আন্তর্জাতিক একক পদ্ধতিতে (এসআই), ক্ষমতার একক হলো ওয়াট (W), যা প্রতি সেকেন্ডে এক জুলের সমান। অন্যান্য সাধারণ এবং ঐতিহ্যগত পরিমাপ হলো ঘোড়ার শক্তির সাথে তুলনা করা অশ্বক্ষমতা (এইচপি); এক যান্ত্রিক অশ্বক্ষমতা প্রায় ৭৪৫.৭ ওয়াটের সমান। ক্ষমতার অন্যান্য এককগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতি সেকেন্ডে আর্গ (erg/s), প্রতি মিনিটের ফুট-পাউন্ড, ডিবিএম, যা ১ মিলিওয়াটের সাথে সম্পর্কিত একটি লগারিদমিক পরিমাপ, ঘণ্টা প্রতি ব্যবহৃত ক্যালরি, ঘণ্টা প্রতি BTU (BTU/h), এবং টন অব রেফ্রিজারেশন। গড় ক্ষমতা উদাহরণস্বরূপ, এক কিলোগ্রাম কয়লা পোড়ালে এক কিলোগ্রাম টিএনটি বিস্ফোরণের চেয়ে অনেক বেশি শক্তি নির্গত হয়, কিন্তু টিএনটি বিক্রিয়াটি অনেক দ্রুত শক্তি নির্গত করার ফলে এটি কয়লার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতা সরবরাহ করে। যদি সময়কালের মাঝে সম্পাদিত কাজের পরিমাণ হয়, তবে সেই সময়কালে গড় ক্ষমতা এর সূত্র হচ্ছে এটি প্রতি একক সময়ে সম্পাদিত কাজ বা পরিবর্তিত শক্তির গড় পরিমাণ। গড় ক্ষমতাকে প্রায়শই কেবল "ক্ষমতা" বলা হয় যখন প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনা করা হয়। তাৎক্ষনিক ক্ষমতা গড় ক্ষমতার সীমিতকারী মান হয়ে দাড়ায় যখন সময়ের ব্যবধান শূন্যের কাছাকাছি পৌঁছে। ধ্রুবক শক্তি এর ক্ষেত্রে, সময়কালের মধ্যে সম্পাদিত কাজের পরিমাণকে এভাবে দেখানো যায় শক্তি রূপান্তরের ক্ষেত্রে, এর পরিবর্তে চিহ্নটিই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যান্ত্রিক ক্ষমতা যান্ত্রিক সিস্টেমে ক্ষমতা হলো শক্তি এবং সরণের সমন্বয়। বিশেষ করে, ক্ষমতা হলো একটি বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত বল এবং বস্তুর বেগের গুণফল, অথবা একটি শ্যাফটের উপর প্রয়োগকৃত টর্ক এবং শ্যাফ্টের কৌণিক বেগের গুণফল। যান্ত্রিক ক্ষমতাকে কাজের সময়ের সাপেক্ষে কাজের অন্তরজ হিসাবেও বর্ণনা করা হয়। বলবিজ্ঞানে, একটি বক্ররেখা বরাবর ভ্রমণকারী বস্তুর উপর বল দ্বারা সম্পাদিত কাজকে লাইন ইন্টিগ্রাল দ্বারা প্রকাশ করা হয়ঃ এখানে হচ্ছে বক্ররেখা -এর গতিপথ এবং হচ্ছে ওই রেখা বরাবর বেগ। যদি বল একটি বিভবশক্তি (সংরক্ষণশীল বল) থেকে পাওয়া যায়, তাহলে গ্রেডিয়েন্ট উপপাদ্য প্রয়োগ করলে (এবং মনে রাখতে হবে যে এখানে বল বিভব শক্তির গ্রেডিয়েন্টের ঋণাত্মক) পাওয়া যায়ঃ এখানে এবং দ্বারা যথাক্রমে কাজ সম্পাদনের পথের শুরু এবং শেষ বুঝানো হয়েছে। বক্ররেখা বরাবর যে কোনো বিন্দুতে ক্ষমতা হল সময়ের ডেরিভেটিভঃ একমাত্রিক ক্ষেত্রে, সমীকরণটিকে এভাবে সরলীকরণ করা যেতে পারেঃ ঘূর্ণায়মান ব্যবস্থায়, ক্ষমতা হলো টর্ক এবং কৌণিক বেগের গুণফল , এখানে হলো সেকেন্ড প্রতি রেডিয়ান। দ্বারা স্কেলার গুণন বুঝানো হয়। ফ্লুইড পাওয়ার সিস্টেমে, যেমন উদপ্রবাহ অ্যাকচুয়েটরে, ক্ষমতাকে এভাবে দেখানো হয়ঃ এখানে হচ্ছে প্যাস্কেলে প্রকাশিত চাপ অথবা N/m2 , এবং হচ্ছে m3/s-এ প্রকাশিত এসআই একক। যান্ত্রিক সুবিধা যদি একটি যান্ত্রিক সিস্টেমের কোন লস না থাকে, তাহলে প্রদত্ত ক্ষমতা অবশ্যই প্রাপ্ত ক্ষমতার সমান হবে। এটি সিস্টেমের যান্ত্রিক সুবিধার একটি সহজ সূত্র প্রদান করে। ধরা যাক, একটি ডিভাইসের প্রদত্ত ক্ষমতা হচ্ছে বল যা একটি বিন্দুতে কাজ করে এবং যার বেগ এবং প্রাপ্ত ক্ষমতা হচ্ছে বল যা একটি বিন্দুতে কাজ করে যার বেগ । যদি সিস্টেমে কোন লস না থাকে, তাহলে এবং সিস্টেমের যান্ত্রিক সুবিধা (প্রতি একক ইনপুট বলের বিপরীতে আউটপুট বল) হচ্ছে একই ধরণের সম্পর্ক ঘূর্ণায়মান সিস্টেমের জন্যেও পাওয়া যায়, যেখানে এবং হলো যথাক্রমে ইনপুটের টর্ক আর কৌণিক বেগ এবং এবং হলো যথাক্রমে আউটপুটের টর্ক এবং কৌণিক বেগ। যদি সিস্টেমে কোন ক্ষতি না থাকে, তাহলে এখান থেকে যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায় এই সম্পর্কগুলো গুরুত্বপূর্ণ কারণ এর মাধ্যমে একটি যন্ত্রের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতা নির্ধারণ করা যায় বেগ অনুপাতের পরিপ্রেক্ষিতে তার শারীরিক মাত্রা দ্বারা। উদাহরণস্বরূপ গিয়ার অনুপাত দেখুন। বৈদ্যুতিক ক্ষমতা একটি বৈদ্যুতিক উপাদানে সরবরাহকৃত তাৎক্ষণিক বৈদ্যুতিক ক্ষমতা P এর পরিমাণ এখানে হচ্ছে ওয়াটে (সেকেন্ড প্রতি জুল) পরিমাপকৃত তাৎক্ষনিক বৈদ্যুতিক ক্ষমতা, হচ্ছে ভোল্টে পরিমাপকৃত উপাদানের বিভব পার্থক্য (অথবা বিভব পতন), হচ্ছে অ্যাম্পিয়ারে পরিমাপকৃত উপাদানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহ। উপাদানটি যদি ভোল্টেজ ও তড়িৎ প্রবাহের অনুপাতের সময়-অপরিবর্তনীয় একটি রোধক হয়, তবেঃ যেখানে হচ্ছে ওহমে পরিমাপকৃত তড়িৎ রোধ। সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও কর্ম চক্র পর্যায়ের পর্যায়ক্রমিক সংকেত -এর ক্ষেত্রে, অনেকটা অভিন্ন স্পন্দনের ট্রেনের মতো, তাৎক্ষনিক ক্ষমতা পর্যায় -এরও একটি ফাংশন। শীর্ষ ক্ষমতাকে এভাবে দেখানো যায়: শীর্ষ ক্ষমতা সমসময় একবারে পরিমাপ করা যায়না, তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন যন্ত্রে গড় ক্ষমতা -এর মাপজোখই হয়ে থাকে। যদি প্রতি স্পন্দনে শক্তিকে এভাবে দেখানো হয় তাহলে গড় ক্ষমতা দাড়ায় স্পন্দন দৈর্ঘ্য যেখানে তাহলে অনুপাত দুটি সমান হয়। এই অনুপাতগুলোকে স্পন্দন ট্রেনের কর্ম চক্র বলা হয়। দীপ্তিমান ক্ষমতা ক্ষমতা ব্যাসার্ধ -এ তীব্রতার সাথে সম্পর্কিত; একটি উৎস দ্বারা নির্গত ক্ষমতা এভাবে লেখা যেতে পারেঃ আরও দেখুন সরল যন্ত্র মাত্রার ক্রম (ক্ষমতা) স্পন্দিত ক্ষমতা প্রাবল্য (পদার্থবিজ্ঞান) - বিকিরণের ক্ষেত্রে, ক্ষেত্রফল প্রতি ক্ষমতা ক্ষমতা লাভ - রৈখিক, দুই পোর্ট সম্বলিত নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে ক্ষমতার ঘনত্ব সংকেত শক্তি শব্দ ক্ষমতা তথ্যসূত্র পদার্থবিজ্ঞান বল অস্থায়ী হার ভৌত রাশি
https://en.wikipedia.org/wiki/Power_(physics)
Power (physics)
Power is the amount of energy transferred or converted per unit time. In the International System of Units, the unit of power is the watt, equal to one joule per second. Power is a scalar quantity. Specifying power in particular systems may require attention to other quantities; for example, the power involved in moving a ground vehicle is the product of the aerodynamic drag plus traction force on the wheels, and the velocity of the vehicle. The output power of a motor is the product of the torque that the motor generates and the angular velocity of its output shaft. Likewise, the power dissipated in an electrical element of a circuit is the product of the current flowing through the element and of the voltage across the element.
2321
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A2%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A6%BE%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AF%E0%A6%BC
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ঢাকায় অবস্থিত বাংলাদেশের একটি স্বায়ত্তশাসিত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ ভারতে অক্সব্রিজ শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণে এটি স্থাপিত হয়। এর শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সূচনালগ্নে বিভিন্ন প্রথিতযশা বৃত্তিধারী ও বিজ্ঞানীদের দ্বারা কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রিত হবার প্রেক্ষাপটে এটি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড নামে স্বীকৃতি পায়। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩টি অনুষদ, ৮৩টি বিভাগ, ১৩টি ইনস্টিটিউট, ৫৬টি গবেষণা ব্যুরো ও কেন্দ্র, ২০টি আবাসিক হল ও ৪ টি ছাত্রাবাস, এবং ৭টি স্নাতক পর্যায়ের অধিভুক্ত সরকারি কলেজসহ মোট ১০৫টি অধিভুক্ত কলেজ রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অসংখ্য কৃতি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করেছেন, তন্মধ্যে রয়েছে ১৩ জন রাষ্ট্রপতি, ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এবং একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী। বাংলাদেশের জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান এখানে পড়াশোনা করেছেন এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করতে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিশেষ অবদান ছিল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি পদক লাভ করেছেন। এছাড়া এটি বাংলাদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এশিয়া উইকের শীর্ষ ১০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় জায়গা করে নেয়। ইতিহাস ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনকালে স্বাধীন জাতিসত্ত্বার বিকাশের লক্ষ্যে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ব্রিটিশ ভারতে তৎকালীন শাসকদের অন্যায্য সিদ্ধান্তে পূর্ববঙ্গের মানুষের প্রতিবাদের ফসল হচ্ছে এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন ঢাকা স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী গ্রন্থে লিখেছেন, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। লর্ড লিটন যাকে বলেছিলেন স্প্লেনডিড ইম্পিরিয়াল কমপেনসেশন। পূর্ববঙ্গ শিক্ষাদীক্ষা, অর্থনীতি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে ছিল। বঙ্গভঙ্গ হওয়ার পর এ অবস্থার খানিকটা পরিবর্তন হয়েছিল, বিশেষ করে শিক্ষার ক্ষেত্রে। ১৯১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ। এর মাত্র তিন দিন পূর্বে ভাইসরয় এর সাথে সাক্ষাৎ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়ে ছিলেন ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ীর নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক এবং অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। ২৭ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য প্রস্তাব করেন ব্যারিস্টার আর. নাথানের নেতৃত্বে ডি আর কুলচার, নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, নওয়াব সিরাজুল ইসলাম, ঢাকার প্রভাবশালী নাগরিক আনন্দচন্দ্র রায়, জগন্নাথ কলেজ (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়)-এর অধ্যক্ষ ললিত মোহন চট্টোপাধ্যায়, ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি. আচির্বল্ড, ঢাকা মোহসিনীয়া মাদ্রাসার (বর্তমান কবি নজরুল সরকারি কলেজ) তত্ত্বাবধায়ক শামসুল উলামা আবু নসর মুহম্মদ ওয়াহেদ, মোহাম্মদ আলী (আলীগড়), প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যক্ষ এইচ. এইচ. আর. জেমস, প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক সি.ডব্লিউ. পিক, এবং সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য। ১৯১৩ সালে প্রকাশিত হয় নাথান কমিটির ইতিবাচক রিপোর্ট এবং সে বছরই ডিসেম্বর মাসে সেটি অনুমোদিত হয়। ১৯১৭ সালে গঠিত স্যাডলার কমিশনও ইতিবাচক প্রস্তাব দিলে ১৯২০ সালের ১৩ মার্চ ভারতীয় আইন সভা পাশ করে 'দি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট (অ্যাক্ট নং-১৩) ১৯২০'। লর্ড রোনাল্ডসে ১৯১৭ হতে ১৯২২ সাল পর্যন্ত বাংলার গভর্নর থাকা কালে সৈয়দ শামসুল হুদা কে বিশ্ববিদ্যালয়ের আজীবন সদস্য ঘোষণা করেন। সৈয়দ শামসুল হুদার সুপারিশে স্যার এ. এফ. রাহমান কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট মনোনীত করা হয়, তিনি ইতঃপূর্বে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যরত ছিলেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সম্পর্কে রফিকুল ইসলামের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮০ বছর গ্রন্থ থেকে জানা যায়, নাথান কমিটি রমনা অঞ্চলে ৪৫০ একর জায়গায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। এই জায়গায় তখন ছিল ঢাকা কলেজ, গভর্নমেন্ট হাউস, সেক্রেটারিয়েট ও গভর্নমেন্ট প্রেসসমূহ। সৃষ্টির শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নানা প্রতিকূলতার মুখে পড়ে। এ ছাড়া ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এর ফলে পূর্ব বাংলার মানুষ হতাশা প্রকাশ করে। ১৯১৭ সালের মার্চ মাসে সাম্রাজ্যিক বিধান পরিষদে সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী সরকারের কাছে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিল পেশের আহ্বান জানান। ১৯২০ সালের ২৩ মার্চ গভর্নর জেনারেল এ বিলে সম্মতি দেন। এ আইনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ভিত্তি। এ আইনের বাস্তবায়নের ফলাফল হিসেবে ১৯২১ সালের ১ জুলাই ৮৭৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে । এ ৮৭৭ জনের মধ্যে নারী ছিলেন একজন। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১ জুলাই। সে সময়ের ঢাকার সবচেয়ে অভিজাত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির উপর পূর্ববঙ্গ এবং আসাম প্রদেশের পরিত্যক্ত ভবনাদি এবং ঢাকা কলেজের (বর্তমান কার্জন হল) ভবনসমূহের সমন্বয়ে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার এই দিনটি প্রতিবছর "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস" হিসেবে পালন করা হয়। তিনটি অনুষদ ও ১২টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ডিগ্রি ক্লাসে অধ্যয়নরত ছাত্রদের নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। শুধু ছাত্র নয়, শিক্ষক এবং লাইব্রেরির বই ও অন্যান্য উপকরণ দিয়েও এই দুটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করে। এই সহযোগিতা দানের কৃতজ্ঞতা হিসেবে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি হলের নামকরণ করা হয় ঢাকা হল (বর্তমানে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল) ও জগন্নাথ হল। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত ছিল সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামি অধ্যয়ন, ফার্সি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন। প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ছাত্রী লীলা নাগ (ইংরেজি বিভাগ; এমএ-১৯২৩)। যে সব প্রথীতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার সাথে জড়িত ছিলেন তারা হলেনঃ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ.সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, জি.এইচ. ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ.এ.জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, স্যার এ. এফ. রাহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন অস্থিরতা ও ভারত বিভক্তি আন্দোলনের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রযাত্রা কিছুটা ব্যাহত হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত প্রদেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এ দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা উজ্জীবিত হয়। নতুন উদ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড শুরু হয়। তৎকালীন পূর্ববাংলার ৫৫ টি কলেজ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। ১৯৪৭-৭১ সময়ের মধ্যে ৫টি নতুন অনুষদ, ১৬টি নতুন বিভাগ ও ৪টি ইন্সটিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আক্রমণের শিকার হয়। এতে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্র-ছাত্রী সহ অনেকে শহীদ হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের কঠোর নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে ১৯৬১ সালে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের সরকার প্রবর্তিত অধ্যাদেশ বাতিলের জন্য ষাটের দশক থেকে শিক্ষকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে স্বাধীনতার পর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ উক্ত অধ্যাদেশ বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডার-১৯৭৩ জারি করে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় এই অর্ডার দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছে। প্রাঙ্গণ ও অবকাঠামো মূল প্রাঙ্গণ ৬০০ একর নগর এলাকার উপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল প্রাঙ্গণ অবস্থিত। এই এলাকার মধ্যে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, আবাসিক হল ও অন্যান্য অবকাঠামো অবস্থিত। কার্জন হল ও কলা ভবন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহাসিক ও অন্যতম প্রতীকী ভবন। কার্জন হলে বিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান বিভাগসমূহ, এবং কলা ভবনে কলা বিভাগসমূহের ও সমাজবিজ্ঞানের কয়েকটি বিভাগের পাঠদান ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগসমূহ, ব্যবসায় শিক্ষা ভবন ও এমবিএ ভবনে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগসমূহ, এবং চারুকলা ইনস্টিটিউশনে চারুকলা বিভাগসমূহের পাঠদান ও পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য ১৯৫২ সালের বাংলা ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ঢাকা মেডিকেল কলেজের পাশে অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মারক হিসেবে রয়েছে একাধিক ভাস্কর্য। কলাভবনের সামনে অবস্থিত অপরাজেয় বাংলা ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম স্মারক ভার্স্কর্য। ৬ ফুট বেদির ওপর নির্মিত ১২ ফুট উচ্চতা, ৮ ফুট প্রস্থ ও ৬ ফুট ব্যাসবিশিষ্ট ভাস্কর্যটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৩ সালে এবং উন্মোচন করা হয় ১৯৭৯ সালে। ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সড়কদ্বীপে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে স্বোপার্জিত স্বাধীনতা। ১৯৮৮ সালের ২৫শে মার্চ এর নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় ও উন্মোচন করা হয়। ফুলার রোডে সলিমুল্লাহ হল, জগন্নাথ হল ও বুয়েট সংলগ্ন সড়ক দ্বীপে অবস্থিত স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্যটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ভাস্কর্য। ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা অর্জন পর্যন্ত বাঙালির ইতিহাসের সমস্ত বীরত্বগাথাকে ধারণ করে নির্মিত ভাস্কর্যটি ১৯৯৯ সালে উন্মোচন করা হয়। ফুলার রোডের সড়কদ্বীপে উপাচার্যের ভবনের পাশে রয়েছে স্মৃতি চিরন্তন। এর নামফলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৪ জন শহীদের নাম রয়েছে। জগন্নাথ হলে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার শিকার হওয়া ৪ জন শিক্ষক, ৩৬ জন ছাত্র এবং ২১ জন কর্মচারী ও অতিথি স্মরণে নির্মিত হয়েছে গণহত্যা ফলক। কলাভবনের সামনের চত্ত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদদের নামফলক রয়েছে। কার্জন হলের সামনে অবস্থিত দোয়েল চত্বর বাংলাদেশের জাতীয় পাখি দোয়েলের একটি স্মারক ভাস্কর্য। এটি বাংলাদেশের জাতীয় বৈশিষ্ট্যের ধারক ও বাহক, এবং বাঙালি সংস্কৃতির পরিচায়ক। দোয়েল চত্বরের উত্তর পাশে অবস্থিত তিন নেতার মাজার ঢাকার অন্যতম স্থাপত্য নিদর্শন। এটি স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলার তিন রাজনৈতিক নেতা - হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন ও শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হকের সমাধি। তিনটি উঁচু কলাম দ্বারা নির্মিত এ সমাধির নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৯৭৯ সালে এবং সমাপ্ত হয় ১৯৮৫ সালে। তিন নেতা মাজারের পাশেই অবস্থিত ঢাকা গেইট বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার একটি ঐতিহাসিক মোঘল স্থাপনা। ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের সামনে অবস্থিত সন্ত্রাস বিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি প্রধান ভাস্কর্য। সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নেতা মঈন হোসেন রাজুর স্মরণে এবং সন্ত্রাসবিরোধী চেতনা ধরে রাখার প্রত্যয়ে ১৯৯৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ভাস্কর্যটি উন্মোচন করা হয়। ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের চত্বরে রয়েছে শান্তির পায়রা ভাস্কর্য। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত অন্যান্য ভাস্কর্যসমূহ হল স্বামী বিবেকানন্দ ভাস্কর্য, ঘৃণাস্তম্ভ, মধুদার ভাস্কর্য, সপ্তশহীদ স্মৃতিস্তম্ভ, বৌদ্ধ ভাস্কর্য ও শহীদ ডা. মিলন ভাস্কর্য। কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবৎ মোট ২৯ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ও ২৯ তম উপাচার্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করলেও বর্তমানে পূর্ণকালীন উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অনুষদসমূহ ইনস্টিটিউট শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট: দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য যোগ্য শিক্ষক, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাবিজ্ঞানী গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে ইন্সটিটিউটটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ইন্সটিটিউট হিসেবে ইউএসএইড-এর অর্থায়নে কলোরাডো স্টেট কলেজের (বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব নর্দার্ন কলোরাডো) টেকনিকাল সহায়তায় ১৯৫৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই ইন্সটিটিউটের বিভিন্ন কোর্সের মধ্যে রয়েছে চার বছরের বি.এড (সম্মান), এক বছরের এম. এড (নিয়মিত), দুই বছরের এম. এড সান্ধ্যকালীন কোর্স, এম. ফিল. ও পিএইচ.ডি.। পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট: ইস্টিটিউটটি সাধারণত আই. এস. আর. টি নামে পরিচিত। ১৯৬৪ সালে এই ইস্টিটিউটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। পরিসংখ্যানবিদ ডঃ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন এই ইন্সটিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক, বর্তমানে এর পরিচালক হলেন মোহাম্মদ সোয়াইব। এই ইন্সটিটিউটে ফলিত পরিসংখ্যান বিষয়ে চার বছর মেয়াদি বি.এস(সম্মান) ও এক বছর মেয়াদি এম. এস কোর্সে পাঠদান করা হয়। ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউট পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট তথ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউট ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট: গত তিন দশক ধরে স্বাস্থ্য অর্থনীতিতে অর্থনীতির একটি প্রধান শাখা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে যা উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় দেশের শিক্ষাবিদদের স্বাস্থ্যের নির্ধারকদের উপর প্রভাব ফেলতে পারে এবং আমরা কীভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করি এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি (আইএইচই) ইনস্টিটিউট, ১৯৯৮ সালে স্বাস্থ্য অর্থনীতির উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখে, যা দক্ষিণ-এশিয়াতে একমাত্র স্বাস্থ্য অর্থনীতি শিক্ষাদান ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। আইএইচই শৃঙ্খলা সব অঞ্চলে কাজ করে, পদ্ধতিগত চিন্তাধারা উপর একটি বিশেষ জোর দেওয়া এবং সংক্ষিপ্ত কোর্স/প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন একাডেমিক ডিগ্রী প্রোগ্রাম প্রস্তাব মাধ্যমে উচ্চ নীতি প্রভাব। এটি তার মানের শিক্ষার জন্য এবং স্বাস্থ্যের পরিমাপের পরিমাপ, কর্মক্ষমতা পরিমাপ এবং উত্পাদনশীলতা, স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন, বিকল্প স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির অর্থনৈতিক মূল্যায়ন এবং চিকিৎসা পদ্ধতি, রোগব্যাধি পরিমাপের পরিমাপ, এবং অর্থনীতির পদ্ধতিতে কাজ করার জন্যও পরিচিত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত স্নাতক পর্যায়ের ৭টি কলেজ: ঢাকা কলেজ ইডেন কলেজ কবি নজরুল সরকারি কলেজ সরকারি তিতুমীর কলেজ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ সরকারি বাঙলা কলেজ আবাসিক হলসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্র-ছাত্রীকে কোনো না কোনো হলের সাথে আবাসিক/অনাবাসিক ছাত্র-ছাত্রী হিসেবে যুক্ত থাকতে হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জন্য ১৪ টি এবং ছাত্রীদের জন্য ৫ টি আবাসিক হল রয়েছে। এছাড়া চারুকলা অনুষদ, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি ইন্সটিটিউট এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইন্সটিটিউটের ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে আলাদা হোস্টেল এবং বিদেশী ছাত্রদের জন্য আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাস। শিক্ষা কার্যক্রম ভর্তি স্নাতক পর্যায়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের গৃহীত ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। বিজ্ঞান অনুষদের জন্য বিজ্ঞান ইউনিট, মানবিক,আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের জন্য 'কলা,আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান' ইউনিট, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের জন্য 'ব্যবসায় শিক্ষা' ইউনিট, আইবিএ অনুষদের জন্য 'আইবিএ' ইউনিট এবং চারুকলা অনুষদের জন্য 'চারুকলা' ইউনিটে পরীক্ষা গ্রহণ করা হয়। একজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের যোগ্যতা হিসেবে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ক ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ৮.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.৫০), খ ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ৭.৫০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০), এবং গ ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ৭.৫০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০) থাকতে হবে। ঘ ইউনিটের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান শাখার মোট জিপিএ মোট জিপিএ ৮.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০), মানবিক ও বাণিজ্য শাখার ক্ষেত্রে মোট জিপিএ ৭.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০) থাকতে হবে এবং চ ইউনিটের জন্য মোট জিপিএ ন্যূনতম ৭.০০ (আলাদাভাবে ন্যূনতম ৩.০০) থাকতে হবে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে আসন সংখ্যা অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা তাদের পরীক্ষার ফল ও পছন্দ অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে পারে। শিক্ষাদান ও ডিগ্রি অধিকাংশ বিভাগেই শিক্ষাবর্ষ দুটি সেমিস্টারে বিভক্ত। একটি সাধারণত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত এবং অপরটি জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রতিটি সেমিস্টারে দুটি মধ্যবর্তী পরীক্ষা ও একটি চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে, বাকি বিভাগগুলোতে একটি বার্ষিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেসব বিভাগে বছরের বিভিন্ন সময়ে টিউটোরিয়াল নেওয়া হয়। স্নাতক পর্যায়ে চার বছর মেয়াদী এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এক বছর মেয়াদী শিক্ষাদান করা হয়। বিজ্ঞান অনুষদের বিভাগগুলোতে বিভাগ-ওয়ারী নানা ধরনের গবেষণাগার কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রতি সেমিস্টারে বা শিক্ষাবর্ষে এক বা একাধিক অ্যাসাইনমেন্ট করতে হয়। অধ্যাপকবৃন্দ তাদের পাঠদানের অংশ থেকে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষার্থীদের এই অ্যাসাইনমেন্ট প্রদান করে থাকেন। এছাড়া শেষ বর্ষে শিক্ষার্থীদের কোন একজন তত্ত্বাবধায়ক শিক্ষকের অধীনে একটি সন্দর্ভ লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দিতে হয়। বৃত্তি ও আর্থিক সহায়তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার উন্নতির জন্য বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ও আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। স্নাতক পর্যায়ে সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্তকে কালিনারায়ণ বৃত্তি প্রদান করা হয়। ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্র নারায়ণ রায় তার পিতা কালিনারায়ণের স্মরণার্থে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য এই বৃত্তি চালু করেন। পরবর্তীকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর বৃত্তির তহবিল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্যের দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। অনুষদ ভিত্তিক বিভাগ ওয়ারি স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের সরকারি মেধা বৃত্তি ও সরকারি সাধারণ বৃত্তি প্রদান করা হয়। এছাড়া স্নাতক পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের ভিত্তিতে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের দেশের উল্লেখযোগ্য শিক্ষাবিদ ও ব্যক্তিদের স্মরণার্থে প্রদত্ত বিভিন্ন বৃত্তি প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল নুজহাত জাহাঙ্গীর মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শফি ট্রাস্ট ফান্ড ও আমেনা-লতিফ মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ড বৃত্তি, রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য অধ্যাপক আবদুল মুকতাদির স্মারক বৃত্তি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনও স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের বৃত্তি প্রদান করে থাকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন স্নাতক অধ্যয়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করে। অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী সদস্যদের নিয়ে আটটি বোর্ড বৃত্তি গ্রহীতাদের নির্বাচন করে। ২০২১ সাল থেকে জাপানের সুমিতমো কর্পোরেশন এশিয়া এন্ড ওসিনিয়া প্রাইভেট লি. কর্তৃপক্ষ স্নাতক পর্যায়ের নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য চার বছর মেয়াদী বৃত্তি চালু করে। ফার গ্রুপ এবং রয়েল টিউলিপ সি পার্ল বিচ রিসোর্ট এন্ড স্পার ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিভিন্ন বিভাগের ২৫ ছাত্রীকে বৃত্তি প্রদানের জন্য অনুদান প্রদান করে। গ্রন্থাগার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার আঠারো হাজার বই নিয়ে যাত্রা শুরু করে। গ্রন্থাগারে বর্তমানে নয় লক্ষাধিক বই রয়েছে। প্রকাশনা শিক্ষার্থী কার্যক্রম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ১৯২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুতে এর নাম ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে অনেকবার ডাকসু নির্বাচন হলেও ২০০০ সাল পূর্ব থেকেই ডাকসু নির্বাচন বন্ধ ছিল। দীর্ঘ ১৮ বছর পর কিছুটা সাংবিধানিক পরিবর্তন এনে ২০১৯ সালে বহুল প্রতিক্ষিত ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভিপি হন নুরুল হক নুর এবং জিএস গোলাম রাব্বানী। সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো হল বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী এছাড়াও উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি সমাবর্তন ১৯২১ সালের ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর ব্রিটিশ আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বপ্রথম নিয়মিত সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি। এরপর ১৯২৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরই (সর্বমোট ২৪ বার) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। ব্রিটিশ আমলে শেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২১ নভেম্বর। পাকিস্তান আমলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৮ সালের ২৪ মার্চ। এরপর ১৯৭০ সাল পর্যন্ত আরও ১৫ বার সমাবর্তন হয়। পাকিস্তান আমলে সর্বশেষ সমাবর্তন হয় ১৯৭০ সালের ৮ মার্চ; সেটি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯তম সমাবর্তন। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো (৪০তম) সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাষ্ট্রপতি হিসেবে সমাবর্তন উদ্বোধন করার কথা ছিল; কিন্তু তার আগেই ভোররাতে ঘটে যায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড, ১৫ আগস্ট ট্র্যাজেডি। এরপর ৪০তম সমাবর্তন হয় ১৯৯৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর। এরপর ২০০১ সালে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। তারপর থেকে নিয়মিত ভাবেই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সর্বশেষ ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে। প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী শিক্ষায়তনিক ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাদের মধ্যে একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ীসহ, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিক, দার্শনিক, ধর্মীয় ব্যক্তি, ক্রীড়াবিদসহ নানা পেশায় জড়িত ব্যক্তি রয়েছেন। রাজনীতি বাংলাদেশের ১৩ জন রাষ্ট্রপতি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তারা হলেন বাংলাদেশের জাতির জনক ও প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদউল্লাহ, শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর অঘোষিতভাবে রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ, আ ফ ম আহসানউদ্দিন চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ, দুইবার রাষ্ট্রপতির দায়িত্বপালনকারী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, আবদুর রহমান বিশ্বাস, জমির উদ্দিন সরকার, ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ, ও জিল্লুর রহমান। এছাড়া আবু সাঈদ চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন। বাংলাদেশের ৭ জন প্রধানমন্ত্রী এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। তারা হলেন তাজউদ্দীন আহমদ, শেখ মুজিবুর রহমান, মশিউর রহমান, আতাউর রহমান খান, মওদুদ আহমেদ, কাজী জাফর আহমেদ, এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী জামাল উদ্দিন আহমেদ এখানে পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া শতাধিক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। বিজ্ঞান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকারী এ এফ এম ইউসুফ হায়দার ১৯৯৪ ও ২০১৩ সালে এবং শাহিদা রফিক ২০০১ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন। আব্দুল মতিন চৌধুরী, এ কে এম সিদ্দিক, গোলাম মোহাম্মদ ভূঁঞা বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী ও নোবেল কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া পদার্থবিজ্ঞানী অজয় রায়, আহমেদ শফি, ইমদাদুল হক খান, এ এম হারুন-অর-রশিদ, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রতিষ্ঠাতা এম ইন্নাস আলী, এম এ ওয়াজেদ মিয়া, এম শমশের আলী, কামরুল হায়দার, খন্দকার আব্দুল মুত্তালিব, খন্দকার সিদ্দিক-ই-রাব্বানী, ফজলে বারী মালিক, ড. মুহাম্মদ ইব্রাহিম, মুহম্মদ মুনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আতাউল করিম, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, ও সুলতানা নুরুন নাহার এবং ভারতীয় পদার্থবিজ্ঞানী শ্রীনিবাস কৃষ্ণণ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। রসায়নবিজ্ঞানী ফজলুল হালিম চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ছিলেন। এছাড়া রসায়নবিজ্ঞানী আব্দুস সাত্তার খান, আবুল হুসসাম, ও আল-নকীব চৌধুরী, উদ্ভিদবিজ্ঞানী এ কে এম নুরুল ইসলাম, প্রাণিবিজ্ঞানী কাজী ফজলুর রহিম, কলেরার জীবাণু ভিব্রিও কলেরির অগ্রগণ্য গবেষক শাহ মোহাম্মদ ফারুক, জিনবিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী, জ্যোতির্বিজ্ঞানী আনোয়ারুর রহমান খান ও আব্দুস সাত্তার খান, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী আব্দুল করিম এবং বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক আলী আজগর এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। এছাড়া পরিসংখ্যানবিদ এম সি চক্রবর্তী, কাজী মোতাহার হোসেন, ও খোন্দকার মনোয়ার হোসেন; গণিতবিদ ভূপতিমোহন সেন; পুরকৌশলী ও স্থপতি ফজলুর রহমান খান এবং জিনতত্ত্ববিদ তাসিন আলম ভূইয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। সামাজিক বিজ্ঞান অর্থনীতিবিদ ও গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে জড়িত সামাজিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ হলেন অর্থনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিত, এ. বি. মির্জ্জা মোঃ আজিজুল ইসলাম, এম হাফিজ উদ্দিন খান, ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, ওয়াহিদুল হক, কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ, খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ ও রেহমান সোবহান; অর্থনীতিবিদ ও কূটনীতিবিদ শাহ এ এম এস কিবরিয়া; কূটনীতিবিদ আবিদা ইসলাম, আবুল আহসান, এনায়েত করিম, এম.এম রেজাউল করিম ও মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস, ইতিহাসবিদ আবদুল করিম, আবু মোহাম্মাদ হাবিবুল্লাহ, আবু মো. দেলোয়ার হোসেন, আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন ও রমেশচন্দ্র মজুমদার; ভাষাবিদ মুহম্মদ আবদুল হাই, মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী; বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিশারদ আনিসুজ্জামান ও মহামোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। এছাড়া দার্শনিক গোবিন্দ চন্দ্র দেব, ও সরদার ফজলুল করিম; রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আবদুর রাজ্জাক, আলী রীয়াজ, ও এমাজউদ্দিন আহমদ, এবং সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন ও এ কে নাজমুল করিম এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাহিত্য ও শিল্পকলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত সাহিত্যিকদের মধ্যে রয়েছেন আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আনোয়ার পাশা, আবুবকর সিদ্দিক, আবুল ফজল, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আসকার ইবনে শাইখ, আসহাব উদ্দীন আহমদ, আহমদ ছফা, আহমদ শরীফ, আহমাদ মোস্তফা কামাল, ওমর আলী, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, নুরুল মোমেন, পূরবী বসু, বুদ্ধদেব বসু, মুনীর চৌধুরী, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, রাশিদ আসকারী, শহীদুল জহির, শহীদুল্লা কায়সার, শামসুর রাহমান, শাহীন আখতার, সেলিম আল দীন, হুমায়ূন আজাদ, হুমায়ূন আহমেদ, হুমায়ুন কাদির, আবুল হোসেন মিয়া অভিনয়শিল্পী আলী যাকের, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জ্বল, খান আতাউর রহমান, খালেদ খান, চঞ্চল চৌধুরী, ডলি আনোয়ার, ডলি জহুর, ফেরদৌস আহমেদ, ফেরদৌসী মজুমদার, মাসুম পারভেজ রুবেল, সারা যাকের, সুবর্ণা মুস্তাফা, সোহেল রানা, বাংলাদেশী ব্রিটিশ কৌতুক অভিনেতা দীনু শফিক, এবং পরিচালক আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ, আবু শাহেদ ইমন, আলমগীর কবির, ইবনে মিজান, জহির রায়হান, জাকির হোসেন রাজু, তারেক মাসুদ, নারগিস আক্তার, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মোরশেদুল ইসলাম এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেছেন। সঙ্গীতশিল্পী আনোয়ার উদ্দিন খান, আঞ্জুমান আরা বেগম, জাহেদুর রহিম, নাশিদ কামাল, ফৌজিয়া ইয়াসমিন, রথীন্দ্রনাথ রায়, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, লায়লা আর্জুমান্দ বানু, শাহাদাত হোসেন খান, সাবিনা ইয়াসমিন ও তাহসান রহমান খান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, পটুয়া কামরুল হাসান, চিত্রশিল্পী আমিনুল ইসলাম, মনসুর উল করিম, মোবিনুল আজিম, শাহাবুদ্দিন আহমেদ, ও হাশেম খান; ভাস্কর নিতুন কুন্ডু, সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ ও হামিদুজ্জামান খান; এবং কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আইন বিচারপতি ও আইনজীবীদের মধ্যে রয়েছেন প্রধান বিচারপতি এ. বি. এম. খায়রুল হক, এ. টি. এম. আফজাল; উচ্চ আদালতের বিচারক আমির হোসেন, আশীষ রঞ্জন দাশ, কাশেফা হুসাইন, নাইমা হায়দার, ফারাহ মাহবুব; সুপ্রিম আদালতের আইনজীবী আব্দুর রব চৌধুরী, এবিএম নুরুল ইসলাম। ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ধর্ম-বিশারদ ও পণ্ডিতদের মধ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, মতিউর রহমান নিজামী, আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া, আব্দুল মালেক, আহমদ আবদুল কাদের, আজিজুল হক, রাবি উপাচার্য মুহাম্মদ আবদুল বারী, ইবি উপাচার্য মুহাম্মাদ মুস্তাফিজুর রহমান, আব্দুল হালিম বুখারী। খেলাধুলা শেখ কামাল, আমিনুল হক মনি, আথার আলী খান, ক্রিকেটার ফারুক আহমেদ, ও শাহরিয়ার নাফীস, মোশাররফ হোসেন রুবেল; অ্যাথলেট কাজী আবদুল আলীম, এ কে এম মিরাজ উদ্দিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরিবেশ বৃক্ষরাজি প্রায় ২৫৪.০৮ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নানা রকম বৃক্ষরাজিতে পরিপূর্ণ। এদের মধ্যে দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষও রয়েছে। পুরো ক্যাম্পাসে রয়েছে রেইনট্রি, মেহগনি, দেবদারু, জারুল, তেলসুর, কৃষ্ণচূড়া ও নাগেশ্বর। ২০১৬ সালের এক গবেষণ অনুযায়ী ক্যাম্পাসে ৫৪১ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এর মধ্যে দেশি উদ্ভিদ মাত্র ৪১ শতাংশ। এই ৫৪১ প্রজাতির উদ্ভিদের ৩৭ শতাংশ বিরুৎ, ২৯ শতাংশ বৃক্ষ, ২১ শতাংশ গুল্ম, ১১ শতাংশ আরোহী, ২ শতাংশ এপিফাইট ও ০.২ শতাংশ পরগাছাজাতীয় উদ্ভিদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের তত্বাবধানে কার্জনহলে একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন রয়েছে। এখানে দুর্লভ ও বিপন্নপ্রায় নানা উদ্ভিদ রয়েছে। এই বাগানে আছে তালিপাম, কুরচি, উদাল, আগর, গর্জন, ম্যাগনোলিয়া, আফ্রিকান বাওবাব, ৭০/৮০ বছর বয়সের তেলসুর, জিমনোস্পার্ম বা বাঁশপাতা বৃক্ষ, উড়ি আম, লতা আম, সুন্দরী বৃক্ষ, বিড়ি পাতা, পালাম, রক্তচন্দন, বিলাতি বেল, রুটি ফল, পলাশ, ডেফল, বাস্কেট বাদাম, পাইন, মেন্দা, মাধবীলতা, অঞ্জন। পালিত দিবসসমূহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পালিত দিবসসমূহ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস - প্রতি বছর ১ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস - প্রতি বছর ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস - প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর চিত্রশালা আরও দেখুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অক্সব্রিজ ১৯২১-এ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯২১-এ ব্রিটিশ ভারতে প্রতিষ্ঠিত ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বাংলাদেশে ব্রিটিশ উপনিবেশিক স্থাপত্য স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী ঢাকা জেলার বিশ্ববিদ্যালয়
https://en.wikipedia.org/wiki/University_of_Dhaka
University of Dhaka
The University of Dhaka (Bengali: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, romanized: Ḍhākā biśbabidyālaẏa; also known as Dhaka University or DU) is a public research university located in Dhaka, Bangladesh. It was established in 1921 as University of Dacca and it is the oldest active university in Bangladesh. The university was founded in 1921 under the Dacca University Act 1920 of the Indian Legislative Council. Nawab Bahadur Sir Khwaja Salimullah, who pioneered the university in Dhaka, donated 600 acres of land from his estate for this purpose. It is modeled after British Universities. Currently it is the largest public research university in Bangladesh, with a student body of 46,150 and a faculty of 1,992. It has made significant contributions to the modern history of Bangladesh. After the Partition of India, it became the focal point of progressive and democratic movements in Pakistan. Its students and teachers played a central role in the rise of Bengali nationalism and the independence of Bangladesh in 1971. Notable alumni include Satyendra Nath Bose, known for Bose–Einstein statistics and the theory of Bose–Einstein condensate, Muhammad Yunus (winner 2006 Nobel Peace Prize, pioneer of microcredit), Muhammad Shahidullah, Natyaguru Nurul Momen Pioneer of Cultural & theatric activities of Dhaka University (He was both a student of DU & later a teacher), Serajul Islam Choudhury (the country's leading public intellectual and writer), Mohammad Ataul Karim (physicist), Buddhadeb Bose (20th-century Bengali poet) and Sheikh Mujibur Rahman (the founding father of Bangladesh).
2324
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B8
লিনাক্স
লিনাক্স বা গ্নু/লিনাক্স () বলতে লিনাক্স কার্নেলের সাথে বিশেষত গ্নু ও অন্যান্য উপাদানের সংমিশ্রণে প্যাকেজ করা অপারেটিং সিস্টেম এর একটি পরিবারকে বুঝায়। সাধারণত, ডেস্কটপ ও সার্ভার দু'ধরনের ব্যবহারের জন্যেই লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বা ডিস্ট্রো নামে একটি আকারে প্যাকেজকৃত থাকে। একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনকে বোঝানোর উপাদানই হলো এর কার্নেল - লিনাক্স কার্নেল, যেটি একটি অপারেটিং সিস্টেম কার্নেল, যা লিনাস টরভল্ডস ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৯১ তারিখে প্রথম প্রকাশ করেন। অনেক লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনই লিনাক্স শব্দটি তাদের অপারেটিং সিস্টেমের নামের সাথে ব্যবহার করে এবং ফ্রি সফটওয়্যার ফাউন্ডেশন গ্নু/লিনাক্স শব্দটি এ অপারেটিং সিস্টেম পরিবারকে বুঝাতেই ব্যবহার করে। লিনাক্স মূলত ইন্টেল এক্স৮৬ স্থাপত্যের(আর্কিটেকচার) উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত কম্পিউটারের জন্য উন্নয়ন করা হলেও, বর্তমানে এটি অন্য যেকোন অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে বেশি প্ল্যাটফর্মে পোর্ট করা হয়েছে। স্মার্টফোন জগতে লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েড এর আধিপত্যের কারণে, বর্তমানের অন্য সব অপারেটিং সিস্টেমের চেয়ে লিনাক্সের সবচেয়ে বড় ইন্সটল-ভিত তৈরি হয়েছে। লিনাক্স সার্ভার এবং অন্যান্য বড় আইরন সিস্টেম, যেমন মেইনফ্রেম কম্পিউটার, এবং বৃহত্তর ৫০০ সুপারকম্পিউটারে ব্যবহৃত একমাত্র অপারেটিং সিস্টেম (লিনাক্স ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে, অন্য সব প্রতিযোগীদের এ বাজার ধীরে ধীরে সরিয়ে দিচ্ছে)। প্রায় ২.৩% ডেস্কটপ কম্পিউটারে বর্তমানে লিনাক্স ব্যবহার করা হয়। লিনাক্স কার্নেল-ভিত্তিক ক্রোম অপারেটিং সিস্টেম চালিত ক্রোমবুক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কে-১৩ শিক্ষার বাজারে গুরুত্বারোপ করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৩০০ ডলারের নিচের নোটবুক বিক্রির ২০% ক্রোমবুকই প্রতিনিধিত্ব করে। লিনাক্স গ্রত্থিত সিস্টেম-ডিভাইসগুলোতেও অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে টিভো এবং অনুরূপ ডিভিআর ডিভাইস, রাউটার, সুবিধা স্বয়ংক্রিয়করণ নিয়ন্ত্রণ, টিভি, ভিডিও গেম কনসোল এবং স্মার্টওয়াচ অন্তর্ভুক্ত। অনেক স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেট কম্পিউটার অ্যান্ড্রয়েড এবং অন্যান্য লিনাক্স ডিস্ট্রোতে চলে। লিনাক্সকে মুক্ত সোর্স ও মুক্ত সফটওয়্যার ধারার একটি আদর্শ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যান্য স্বত্ত্ব-সংরক্ষিত অপারেটিং সিস্টেম যেমন উইন্ডোজ এবং ম্যাক ওএস হতে লিনাক্স বিভিন্নভাবে আলাদা। লিনাক্সের অন্তর্নিহিত সোর্স কোড যে কেউ গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স মোতাবেক বাধাহীনভাবে ব্যবহার করতে পারেন, এর উন্নতিসাধন করতে পারেন, এমনকি পুনঃবিতরণ করতে পারেন। একেবারে ঠিকভাবে বলতে গেলে, লিনাক্স বলতে শুধু লিনাক্স কার্নেলকেই বোঝায়। তবে যেসব ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম লিনাক্স কার্নেলের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এবং মূলত গ্নু (ও অন্যান্য) প্রকল্পের কোড সংগ্রহ (লাইব্রেরি) ও হাতিয়ার (টুলস) ওই কার্নেলের সাথে যুক্ত করে বানানো হয়েছে, সাধারণভাবে সেসব অপারেটিং সিস্টেমকে লিনাক্স হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। আরও ব্যাপক অর্থে একটি লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন বলতে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম ও এর সাথে সরবরাহকৃত বিপুল পরিমাণের অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যারের সমষ্টিকে বোঝায়। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো সহজেই কম্পিউটারে সংস্থাপন (ইন্সটল) ও হালনাগাদ (আপডেট) করা যায়। কিছু ডেস্কটপ পরিবেশ যেমন গ্নোম, কেডিই প্লাজমা ও এক্সএফসিই সাধারণত কেবল লিনাক্সের সাথে জড়িত বলে ধারণা করা হলেও এগুলো অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমেও (যেমন ফ্রিবিএসডি-তে) ব্যবহৃত হয়। প্রাথমিকভাবে কেবল কিছু উৎসাহী ব্যক্তিই মূলত লিনাক্স ব্যবহার ও এর উন্নতিসাধন করতেন। এখন বড় বড় কর্পোরেশন যেমন ডেল, আইবিএম, সান মাইক্রোসিস্টেম্‌স, হিউলেট-প্যাকার্ড, নভেলসহ আরও অনেক বড় কোম্পানি সার্ভারে ব্যবহারের জন্যে লিনাক্সকে বেছে নিয়েছে। ডেস্কটপ বাজারেও লিনাক্সের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। লিনাক্স বিশেষজ্ঞ ও লিনাক্স সমর্থকদের মতে লিনাক্সের এই উত্থানের পেছনে কারণ লিনাক্স সস্তা, নিরাপদ, নির্ভরযোগ্য এবং এটি কোনো নির্দিষ্ট বিক্রেতার কাছ থেকে কিনতে হয় না, অর্থাৎ এটি বিক্রেতা-অধীন নয়। লিনাক্স প্রাথমিকভাবে ইন্টেল ৩৮৬ মাইক্রোপ্রসেসর এর জন্য তৈরি করা হলেও এখন এটি বর্তমানের সব জনপ্রিয় (এমনকি অনেক পুরনো ও বিরল) কম্পিউটার স্থাপত্যের অধীনে কাজ করে। গ্রত্থিত ব্যবস্থা(এম্বেডেড সিস্টেম), যেমন মোবাইল ফোন, ব্যক্তিগত ভিডিও রেকর্ডার, ইত্যাদি থেকে শুরু করে ব্যক্তিগত ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ কম্পিউটার, এমনকি সুপারকম্পিউটার - সব জায়গাতেই এখন লিনাক্স ব্যবহৃত হয়। ইতিহাস ১৯৮৩ সালে রিচার্ড স্টলম্যান গ্নু প্রকল্প প্রতিষ্ঠা করেন। গ্নু প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল পরিপূর্ণ মুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করে একটি পূর্ণাঙ্গ ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। ৯০-এর দশকের শুরুর দিকেই গ্নু এই অপারেটিং সিস্টেমের প্রায় সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো বানাতে বা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়। উপাদানগুলোর মধ্যে ছিল বিভিন্ন কোড লাইব্রেরি, কম্পাইলার, লেখা সম্পাদক(টেক্সট এডিটর), একটি ইউনিক্স-সদৃশ শেল, এবং আরও অন্যান্য কিছু সফটওয়্যার। কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তখনও উন্নয়ন করা হয়নি, আর তা হল কার্নেল - অপারেটিং সিস্টেমটির নিম্নতম স্তরের উপাদান বা ভিত্তি। ১৯৯০ সালে গ্নু প্রকল্প তাদের নিজস্ব কার্নেল গ্নু হার্ডের ওপর কাজ শুরু করে। হার্ডের প্রাথমিক পরিকল্পনাকারী টমাস বুশনেলের কথানুযায়ী গ্নুর প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল বিএসডি ৪.৪-লাইট কার্নেলটি হার্ডের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করা। সে সময়ের কথা মনে করে তিনি বলেন, “এখন আমি নিশ্চিত, যদি পরিকল্পনাটি সফল হত, বিশ্বকে তখন একদম আলাদাভাবে দেখতে পারতাম আমরা।” কিন্তু বার্কলির প্রোগ্রামারদের মধ্যে সহযোগিতার ঘাটতি দেখে স্টলম্যান হার্ড প্রকল্পের জন্য মাখ মাইক্রোকার্নেল ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পরে দেখা যায় এটির ব্যবহার আশাতীতভাবে কষ্টসাধ্য, ফলে হার্ডের উন্নয়নকাজ ধীরগতিতে এগোতে থাকে। প্রায় কাছাকাছি সময়ে ১৯৯১ সালে, লিনাস টরভল্ডস নামের এক ফিনীয় ছাত্র হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত অবস্থায় শখের বশে আরেকটি কার্নেলের ওপর কাজ শুরু করেন। এই কার্নেলটিই পরে লিনাক্স কার্নেলে রূপ নেয়। লিনুস প্রথমদিকে মিনিক্স নামের একটি সরলীকৃত ইউনিক্স-সদৃশ অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে কাজ শুরু করেন। মিনিক্সের রচয়িতা ছিলেন এন্ড্রু টানেনবম, একজন প্রখ্যাত অপারেটিং সিস্টেম ডিজাইন প্রশিক্ষক। তবে টানেনবম তার মিনিক্স সিস্টেমের ওপর সরাসরি কাজ করে উন্নতিসাধনের অনুমতি দিতেন না। ফলে লিনুসকে মিনিক্সের সমতুল্য একটি সিস্টেম বানাতে হয়। লিনুস প্রথমে আইএ-৩২ এসেম্বলার ও সি'র সাহায্যে একটি টার্মিনাল ইমুলেটর তৈরী করেন ও এটিকে কম্পাইল করে বাইনারি আকারে রূপান্তরিত করেন, যাতে এটি যেকোনো অপারেটিং সিস্টেমের বাইরেও ফ্লপি ডিস্ক থেকে বুট করে চালানো যায়। টার্মিনাল ইমুলেটরটিতে একসাথে দুটো থ্রেড চলত। একটি থ্রেড ছিল সিরিয়াল পোর্ট থেকে ক্যারেক্টার পড়ার জন্য, আর অন্যটি ছিল পোর্টে ক্যারেক্টার পাঠানোর জন্য। যখন লিনুসের ডিস্ক থেকে ফাইল পড়া ও লেখার প্রয়োজন পড়ল, তখন তিনি এই ইমুলেটরটির সাথে একটি সম্পূর্ণ ফাইল সিস্টেম হ্যান্ডলার যোগ করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি এটিকে একটি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেম কার্নেলে রূপ দেন, যাতে এটিকে পজিক্স-অনুগামী সিস্টেমসমূহের ভিত্তিরূপে ব্যবহার করা যায়। লিনাক্স কার্নেলের প্রথম সংস্করণ (০.০.১) ইন্টারনেটে প্রকাশ পায় ১৯৯১ সালের ১৭ই সেপ্টেম্বর। কিছুদিন পরেই ১৯৯১-এর অক্টোবরে এর দ্বিতীয় সংস্করণটি বের হয়। তখন থেকে সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার উন্নয়নকারী(ডেভলপার) লিনাক্সের এই প্রকল্পে অংশ নিয়েছেন। এরিক রেমনডের লেখা প্রবন্ধ দ্যা ক্যাথেড্রাল এন্ড দ্যা বাজারে লিনাক্স কার্নেলের (ও অন্যান্য সমজাতীয় সফটওয়্যারের) উন্নয়নপ্রক্রিয়ার মডেল সম্পর্কে আলচনা করা হয়েছে। লিনাক্সের ০.০১ সংস্করণে লিনুস যথেষ্টসংখ্যক পজিক্স সিস্টেম কল বাস্তবায়ন করেন, যাতে লিনাক্স গ্নুর ব্যাশ শেল চলতে পারে। এ বুটস্ট্র্যাপিং প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়ন লিনাক্সের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। প্রথমদিকে লিনাক্স সংস্থাপন (ইন্সটল), গঠন-প্রকৃতি নির্ধারণ (কনফিগার) ও সংকলন (কম্পাইল) করার জন্য মিনিক্স-চালিত কম্পিউটারের প্রয়োজন হত। এছাড়া লিনাক্সের প্রাথমিক সংস্করণগুলোকে হার্ড ডিস্ক থেকে বুট করানোর জন্য অপর একটি অপারেটিং সিস্টেমের উপস্থিতির প্রয়োজন হত। তবে শীঘ্রই এ সমস্যার সমাধান হিসেবে তৈরি করা হয় কিছু আত্মনির্ভরশীল বুটলোডার; এই বুটলোডারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পরিচিত ছিলো লিলো। এরপর লিনাক্স উপযোগিতার হিসেবে মিনিক্সকে দ্রুত ছাড়িয়ে যায়। লিনুস ও লিনাক্স কার্নেলের অন্যান্য প্রাথমিক ডেভেলপারেরা কার্নেলের পরিবর্তন সাধন করেন যাতে সেটি গ্নুর বিভিন্ন উপাদান ও ব্যবহারকারীদের জন্য লেখা প্রোগ্রামগুলোর সাথে কাজ করতে পারে। এভাবে ধীরে ধীরে লিনাক্স গঠন ও উপযোগিতার দিক থেকে একটি সম্পূর্ণ অপারেটিং সিস্টেমের রূপ নিতে থাকে। বর্তমানে লিনাক্স কার্নেলের উন্নয়নে দিকনির্দেশনা দেন লিনাস টরভল্ডস নিজে, তবে কার্নেলের সহযোগী অন্যান্য ব্যবস্থাগুলো, যেমন গ্নু উপাদান, আলাদাভাবে উন্নয়ন করা হয়। আর লিনাক্স বিতরণকারী বিক্রেতা বা প্রতিষ্ঠানগুলোর বর্তমান কাজ হচ্ছে এই সবগুলো উপাদান একত্র করে এবং এর সাথে গ্রাফিক্যাল ইন্টারফেস (যেমন এক্স-উইন্ডো সিস্টেম-ভিত্তিক গ্নোম বা কেডিই) ও অ্যাপলিকেশন সফটওয়্যার যোগ করে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিচালক ব্যবস্থা তৈরি করা। লিনাক্সের ম্যাসকট ও লোগো হচ্ছে টাক্স নামের একটি পেঙ্গুইন। ১৯৯৬ সালে ল্যারি ইউয়িঙের আঁকা একটি ছবি থেকে টাক্স আঁকার অনুপ্রেরণা নেওয়া হয়েছে। টাক্স ছাড়াও ওএস-ট্যান ও আরও কিছু লিনাক্স প্রতিনিধিত্বকারী চরিত্র রয়েছে, তবে সেগুলো খুব একটা প্রচলিত নয়। “লিনাক্স” নামটি কিন্ত লিনাস টরভল্ডসের দেওয়া নয়। লিনাক্সের নামকরণের কৃতিত্ব আরি লেমকের। লেমকে হেলসিংকি ইন্সটিটিউট অব টেকনলজিতে ftp.funet.fi নামক একটি এফটিপি সার্ভারের প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। সার্ভারটি ছিল ফিনীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা নেটওয়ার্কের একটি অংশ, আর এই নেটওয়ার্কের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে একটি ছিল লিনুসের হেলসিংকি বিশ্ববিদ্যালয়। লিনুস যখন তার অপারেটিং সিস্টেম প্রকল্পটি এই সার্ভারটিতে সংরক্ষণ করার জন্য লেমকে-কে দেন, লেমকে তখন তা একটি ডিরেক্টরিতে রাখেন ও ডিরেক্টরিটির নাম দেন “লিনাক্স”, অর্থাৎ “লিনুসের মিনিক্স” কথাটির সংক্ষিপ্ত রূপ। লিনুস অবশ্য নিজে প্রকল্পটির নাম “ফ্রিক্স” (freax) রাখতে চাচ্ছিলেন, যা ছিল “ফ্রি” (মুক্ত) ও ইউনিক্সের শেষ অক্ষর “এক্স”-এর সম্মিলিত রূপ। অবশ্য শেষ পর্যন্ত লেমকের দেয়া লিনাক্স নামটিই টিকে যায়। কপিরাইট ও ট্রেডমার্ক লিনাক্স কার্নেল ও বেশির ভাগ গ্নু উপাদান গ্নু জেনারেল পাবলিক লাইসেন্স (জিপিএল)-এর আওতাধীন। জিপিএলকৃত উৎসের কোডের সংশোধন ও এর থেকে উদ্ভূত সব কাজও জিপিএলের আওতাধীন হয়ে থাকে। লিনুস এ সম্পর্কে ১৯৯৭ সালে বলেন, “লিনাক্সের জিপিএলকরণ নিশ্চিতভাবেই আমার করা সেরা কাজ।“ লিনাক্সের অন্যান্য সহযোগী ব্যবস্থাগুলো অন্য লাইসেন্স ব্যবহার করে, যেমন অনেকগুলো কোড লাইব্রেরি এলজিপিএল ব্যবহার করে, আর এক্স-উইন্ডো ব্যবস্থা এমআইটি লাইসেন্স ব্যবহার করে। তোরভাল্দ্‌স বলেছেন যে, লিনাক্স কার্নেল জিপিএল সংস্করণ ২ থেকে সংস্করণ ৩ এ উন্নীত হবেনা। তিনি স্পষ্ট বলেছেন, নতুন লাইসেন্সের কিছু বিষয় তার পছন্দ হয়নি যেগুলো ডিজিটাল রাইট ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যারের ব্যবহার নিষিদ্ধ করে, এছাড়া সকল স্বত্ত্বধারীদের নিকট থেকে অনুমতি নেওয়ার বিষয়টিও অবাস্তবিক, যেখানে তারা সংখ্যায় হাজারেরও উপরে হতে পারে। ২০০১ সালে রেড হ্যাট লিনাক্স ৭.১ বিশ্লেষন করে দেখা গেছে যে তাতে ৩ কোটি লাইনেরও বেশি উৎস কোড (সোর্স কোড) রয়েছে। গঠনমূলক ব্যয় কাঠামো বিবেচনা করে দেখা গেছে, এই ডিস্ট্রিবিউশনটির উন্নয়নে ৮ হাজার মানববর্ষ লেগে যেতো, যদি এই সব সফটওয়্যার প্রথাগত স্বত্ত্বযুক্ত পদ্ধতিতে উন্নয়ন হতো এবং শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ১১ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা (২০১৯ সালের বাংলাদেশি টাকা হিসাবে) খরচ হতো। বেশিরভাগ কোড (৭১%) সি দ্বারা উন্নয়নকৃত, এর পাশাপাশি অন্যান্য প্রোগ্রামিং ভাষাও ব্যবহার হয়েছে যেমন, সি++, অ্যাসেম্বলি ভাষা, পার্ল, পাইথন, ফোরট্রান এবং বিভিন্ন শেল স্ক্রিপ্টিং ভাষা। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক বা তার কিছু বেশি লাইন জিপিএল লাইসেন্সের আওতায় রয়েছে। লিনাক্স কার্নেল নিজে ছিল ২.৪ মিলিয়ন লাইন কোড, অথবা মোট পরিমাণের ৮%। পরববর্তীতে একই বিশ্লেষণ ডেবিয়ান গ্নু/লিনাক্স সংস্করণ ৪.০ (ইচ, যেটি ২০০৭ সালে মুক্তি পায়) এর উপর চালানো হয়। এই ডিস্ট্রিবিউশনে রয়েছে ২৮৩ মিলিয়ন এর কাছাকাছি উৎস কোড লাইন, যেটি যদি প্রথাগত পদ্ধতিতে করা হলে প্রয়োজন হতো ৭৩ হাজার মানববর্ষ এবং খরচ হতো প্রায় ৬.৫ হাজার কোটি বাংলাদেশি টাকা (২০১৮ সালের বাংলাদেশি মূদ্রা হিসাবে)। ট্রেডমার্ক লিনাস টরভল্ডস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লিনাক্স ট্রেডমার্কটির মালিক। ট্রেডমার্কটির লাইসেন্সকরণ বর্তমানে দেখাশোনা করছে লিনাক্স মার্ক ইন্সটিটিউট (এলএমআই)। এলএমআই যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও অন্যান্য দেশে লিনাক্স ট্রেডমার্ক প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছে। দর্শন পারস্পারিক ব্যবহারযোগ্যতা লিনাক্সের বহনযোগ্যতা বহনযোগ্যতা বলতে এখানে একই সফটওয়্যারের বিভিন্ন পরিবেশে কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝানো হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে লিনাক্স কার্নেল কেবল ৩৮৬-জাতীয় প্রসেসরের জন্যই বানানো হতো। পরবর্তীতে একে অন্যান্য স্থাপত্যের অধীনেও কর্মক্ষম করা হয়। যেমন: ইন্টেল/এএমডি (এক্স৮৬ স্থাপত্য) এক্স৮৬-৬৪ (এএমডির এএমডি৬৪ ও ইন্টেলের ইএম৬৪টি) আইএ-৬৪ এআরএম স্থাপত্য ডিইসি আলফা ইএসএ/৩৯০ মোটোরোলা ৬৮কে মিপ্স স্থাপত্য পিএ আরআইএসসি পাওয়ারপিসি সুপারএইচ স্পার্ক সম্প্রদায় একটি ডিস্ট্রিবিউশন ব্যাপক অর্থে এর উন্নয়নকারী এবং ব্যবহারকারী সম্প্রদায় কর্তৃক পরিচালিত হয়। কিছু বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে তাদের ডিস্ট্রিবিউশন উন্নয়ন ও অনুদানের কাজ করে থাকে, একটি ভালো উদাহরণ হিসাবে বলা যায় ডেবিয়ান। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানকে তাদের বাণিজ্যিক পণ্যের একটি সম্প্রদায় চালিত সংস্করণ রাখতেও দেখা যায়, যেমন- রেড হ্যাট কর্তৃক ফেডোরা এবং নভেল কর্তৃক ওপেনসুয্যে। বিভিন্ন শহর ও অঞ্চলে, স্থানীয় সহযোগী যারা লিনাক্স ইউজার গ্রুপ (লাগ) নামে পরিচিত তারা তাদের পছন্দের ডিস্ট্রিবিউশন প্রচারণার কাজ করে, সেই সাথে ফ্রি সফটওয়্যার নিয়েও প্রচার চালায়। তারা মাঝেমধ্যে দেখা সাক্ষাতের আয়োজন করে, প্রদশর্নী, প্রশিক্ষণ, কারিগরী সহায়তা এবং অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটলে নতুন ব্যবহারকারীদের সাহায্য প্রদান করে। বিভিন্ন ইন্টারনেট সম্প্রদায়ও লিনাক্স ব্যবহারকারী এবং উন্নয়নকারীদের সহায়তা প্রদান করে। বেশিরভাগ ডিস্ট্রিবিউশন, ফ্রি/মুক্তসোর্স প্রকল্পের রয়েছে নিজস্ব আইআরসি চ্যাটরুম অথবা নিউজগ্রুপ, অনলাইন ফোরামসমূহও সহায়তার একটি ক্ষেত্র, উল্লেখ্যযোগ্য উদাহরণ হিসাবে- linuxquestions.org এবং বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশনভিত্তিক সহায়তা ও সম্প্রদায় ফোরাম, যেমন- উবুন্টু, ফেডোরা, জেন্টু ইত্যাদি ফোরাম। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলোর রয়েছে মেইলিং লিস্ট; সাধারণত সেখানে নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় যেমন, নির্দিষ্ট একটি তালিকার উন্নয়ন এবং ব্যবহার নিয়ে। বিভিন্ন প্রযুক্তি ওয়েবসাইট রয়েছে যেখানে লিনাক্সকে তুলে ধরা হয়। লিনাক্সভিত্তিক ছাপানো পত্রিকাসমূহে প্রচ্ছদ ডিস্ক অন্তর্ভুক্ত থাকে যেখানে সফটওয়্যার অথবা এমনকি সম্পূর্ণ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন থাকতে পারে। যদিও লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো বিনামূল্যে পাওয়া যায়, তবে বেশকিছু বৃহৎ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান বিক্রয়, সহায়তা এবং বিভিন্ন উপকরনসমূহ ও ফ্রি সফটওয়্যারের উন্নয়নে অবদান রাখে। এক বিশ্লেষনে দেখা গেছে যে, ডিসেম্বর ২০০৮ থেকে জানুয়ারি ২০১০ পর্যন্ত লিনাক্স কার্নেলের প্রায় ৭৫% কোড বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রোগ্রামারদের দ্বারা লিখিত হয়েছে, প্রায় ১৮% লিখিত হয়েছে প্রথাগত মুক্ত সোর্স সম্প্রদায় দ্বারা। কিছু উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যারা এতে অবদান রেখেছে তার মধ্যে রয়েছে ডেল, আইবিএম, হিউলেট-প্যাকার্ড, ওরাকল, সান মাইক্রোসিস্টেম (এখন ওরাকলের অংশ), নভেল এবং নকিয়া। কিছু বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, বিশেষত রেড হ্যাট, নভেল, ক্যানোনিকেল লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ব্যবসা করছে। ফ্রি সফটওয়্যার লাইসেন্স, যার উপর ভিত্তি করে লিনাক্স কার্নেল নির্ভর বিভিন্ন সফটওয়্যার উন্নয়ন করা হয়, সেটি বাণিজ্যিকীকরণে ব্যাপকভাবে অনুমতিপ্রদান এবং উৎসাহিত করে; সম্পূর্ণ এবং পৃথক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের মধ্যে সম্পর্ককে মিথোজীবি হিসাবে কল্পনা করা যায়। বাণিজ্যিক সরবরাহকারীদের ব্যবসার একটি সাধারণ কাঠামো হল সহায়তার জন্য মূল্য নির্ধারণ করা, বিশেষত বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীদের জন্য। কিছু প্রতিষ্ঠান তাদের ডিস্ট্রিবিউশনের বিশেষায়িত ব্যবসায়িক সংস্করণ প্রকাশ করে, যেখানে থাকে স্বত্ত্বযুক্ত সহায়তা এবং অনেক বেশি সংখ্যক ইন্সটলেশন নিয়ন্ত্রণকারী সুবিধাযুক্ত ব্যবস্থা বা প্রশাসনিক কার্যক্রম সহজীকরণের ব্যবস্থা। আরেকটি ব্যবসায়িক কাঠামো হল, হার্ডওয়্যার বিক্রয়ের জন্য সফটওয়্যার প্রদান করা। কম্পিউটার শিল্পতে এটি একটি সাধারণ বিষয়, যেমন অপারেটিং সিস্টেম সিপি/এম, অ্যাপল ডস এবং ম্যাক ওএস ৭.৫ এর আগের সংস্করণগুলো, যেগুলো বিনামূল্যে কপিযোগ্য (কিন্তু পরিবর্ধন/পরিবর্তন যোগ্য নয়)। যেহেতু ১৯৮০ এর পুরোটা জুড়ে হার্ডওয়্যার একটি আদর্শ কাঠামোবদ্ধ হয়ে আসছে, ফলে হার্ডওয়্যার নির্মাতাদের জন্য এই পদ্ধতিতে লাভবান হওয়া বেশ কষ্টকর হয়ে গেছে। বর্তমানে সিস্টেম৭৬-এর পপ!_ওএস এমনই একটি উদাহরণ। ডিস্ট্রিবিউশন লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, সংক্ষেপে ডিস্ট্রো হলো একটি সফটওয়্যার সংগ্রহ থেকে তৈরি করা অপারেটিং সিস্টেম, যেটার মূল ভিত্তি লিনাক্স কার্নেল এবং মাঝেমধ্যে একটি স্বকীয় প্যাকেজ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। লিনাক্স ব্যবহারকারীরা যেকোন একটি ডিস্ট্রিবিউশন ডাউনলোডের মাধ্যমে লিনাক্স ধারণ করে থাকে, যেগুলো আবার অনেকগুলো যন্ত্রের জন্যে উপযোগী। সে তালিকায় আছে গ্রত্থিত যন্ত্র(ওপেন্ডব্লিউআরটি) আর ব্যক্তিগত কম্পিউটার (লিনাক্স মিন্ট) থেকে ক্ষমতাসম্পন্ন সুপারকম্পিউটারও(রক ক্লাস্টার ডিস্ট্রিবিউশন)। কিছু জনপ্রিয় লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন হলো— রেড হ্যাট এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স ফেডোরা (অপারেটিং সিস্টেম) ওপেন সুসে আর্চ লিনাক্স (লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন) মানজারো ডেবিয়ান লিনাক্স মিন্ট উবুন্টু কালি লিনাক্স ব্যাকবক্স (লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন) এলিমেন্টারি ওএস ডিপিন লিনাক্স লাইট এভি লিনাক্স বোধি লিনাক্স ইন্টারফেস কমান্ড লাইন ইন্টারফেস বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনেই ডিফল্টভাবে গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহৃত হয় যেখানে কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস একটি টার্মিনাল ইমুলেটর বা আলাদা ভার্চুয়াল কনসোল দ্বারা বাস্তবায়িত করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ নিম্নধাপের লিনাক্স উপকরণসমূহ, যেমন গ্নু ইউজারল্যান্ড, ব্যাপকভাবে কমান্ড-লাইন ইন্টারফেস ব্যবহার করে। কমান্ড লাইন ইন্টারফেস সাধারণত পূনরাবৃত্তিমূলক বা কালক্ষেপণমূলক কাজ সমূহের স্বয়ংক্রিকরণের কাজে বহুল ব্যবহৃত হয় এবং আন্তঃপ্রক্রিয়া যোগাযোগ প্রদান করে। একটি গ্রাফিক্যাল টার্মিনাল ইমুলেটর প্রোগ্রাম লিনাক্স ডেস্কটপ থেকে কমান্ড লাইন ইন্টারফেসে প্রবেশের কাজে ব্যবহৃত হয়। একটি লিনাক্স সিস্টেমে কমান্ড লাইন ইন্টারফেস সাধারণত শেল দ্বারা বাস্তবায়িত হয়, যেটি ইউনিক্স সিস্টেমের সাথে মিথস্ক্রিয়ারও একটি প্রথাগত উপায়। সার্ভারের জন্য উন্নয়নকৃত একটি লিনাক্স সিস্টেমে সাধারণত কমান্ড লাইন ইন্টারফেসই একমাত্র ইন্টারফেস হিসাবে ব্যবহার হতে পারে। এক্স উইন্ডো ব্যবস্থাপক বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনে ব্যবহৃত জনপ্রিয় গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশগুলো এক্স উইন্ডো সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে নির্মিত, যেটিকে সংক্ষেপে এক্স হিসাবেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। এটি নেটওয়ার্ক স্বচ্ছতা প্রদান করে এবং একটি সিস্টেমে চলা গ্রাফিক্যাল অ্যাপলিকেশনসমূহ অন্য আরেকটি সিস্টেমে প্রদর্শনের অনুমতি প্রদান করে যেখানে ব্যবহারকারীকে উক্ত অ্যাপলিকেশনগুলোর সাথে মিথস্ক্রিয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অন্যান্য ডেস্কটপ পরিবেশসমূহ সাধারণ এক্স উইন্ডো ম্যানেজার নামে পরিচিত, যেমন- এফভিডব্লিউএম, এনলাইটমেন্ট ও উইন্ডো মেকার, যেগুলো ডেস্কটপ পরিবেশের সাপেক্ষে আরও স্বল্প পরিমাণের কাজ সম্পন্ন করতে পারে। একটি উইন্ডো ম্যানেজার বিভিন্ন অ্যাপলিকেশন উইন্ডোসমূহের স্থানান্তর এবং চেহারা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে থাকে এবং এক্স উইন্ডো সিস্টেমের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে থাকে। ডেস্কটপ পরিবেশসমূহ এদের আদর্শ ইন্সটলেশনের অংশ হিসাবে উইন্ডো ব্যবস্থাপক অন্তর্ভুক্ত করে (যেমন ২০১০ সাল অনুযায়ী, গ্নোমের জন্য মেটাসিটি, কেডিই এর জন্য কেউইন এবং এক্সএফসিই এর জন্য এক্সএফডব্লিউএম), যদিও নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী ব্যবহারকারী অন্য কোন উইন্ডো ম্যানেজার বাছাই করতে পারেন। ডেস্কটপ পরিবেশ বর্তমান সময়ে ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ কম্পিউটারে লিনাক্সের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে বেশিরভাগ লিনাক্স ডিস্ট্রোই গ্রাফিক্যাল ডেস্কটপ পরিবেশ ব্যবহার করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্নোম ও কেডিই প্লাজমা ডেস্কটপ। এর পাশাপাশি এলএক্সডিই, এক্সএফসিই ইত্যাদি তুলনামূলক হালকা ডেস্কটপ পরিবেশও রয়েছে যেগুলো মূলত নিম্ন-কনফিগারেশনের কম্পিউটার সিস্টেমকে উদ্দেশ্য করে উন্নয়ন করা হয়েছে। ডেস্কটপে লিনাক্সের পারফরমেন্স সবসময়ই একটি বিতর্কিত ইশু, উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, ২০০৭ সালে কন কলিভাস শুধুমাত্র সার্ভারে লিনাক্সের পারফরমেন্সের দিকে নজর দেওয়ার জন্যে লিনাক্স সম্প্রদায়কে দায়ী করেন। তিনি ডেস্কটপের প্রতি এরুপ ঔদাসীন্য দেখে হতাশ হয়ে লিনাক্স কার্নেল উন্নয়ন থেকে সরে আসেন এবং পরবর্তীতে এই বিষয়ে একটি সাক্ষাৎকারও প্রদান করেন। তখন থেকেই ডেস্কটপে লিনাক্সের পারফরমেন্স উন্নয়নের জন্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কাজ শুরু হয়েছে। আপস্টার্ট এধরনেরই একটি প্রকল্প যেটির মূল লক্ষ্য হলো লিনাক্স বুটের সময় ত্বরান্বিত করা। প্রয়োগ অতীতে লিনাক্স সংস্থাপন ও এর গঠন-প্রকৃতি নির্ধারণের জন্য ব্যবহারকারীদের কম্পিউটার সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের প্রয়োজন হত। তাছাড়া ব্যবহারকারীরা লিনাক্সের ভেতরের অংশে সরাসরি প্রবেশাধিকার পান। এই কারণে অতীতের লিনাক্স ব্যবহারকারীরা বেশির ভাগই মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ও ম্যাকওএস ব্যবহারকারীদের চেয়ে বেশি প্রযুক্তিমনা হতেন। তারা নিজেদেরকে হ্যাকার বা গিক বলতেও ভালবাসতেন। তবে এখন লিনাক্স ব্যবহারকারীদের এই বাঁধাধরা রূপ আর দেখা যায় না। লিনাক্সের ব্যবহারকারী-বন্ধুভাবাপন্নতা অনেক বেড়েছে, আর লিনাক্সের বিভিন্ন ডিস্ট্রিবিউশন এখন অনেক জায়গায় ব্যবহার হচ্ছে। বিশেষ উদ্দেশ্য ক্ষেত্র, যেমন ইমেজ রেন্ডারিং, ওয়েব সেবা, ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং সার্ভারেও লিনাক্সের ব্যবহার চোখে পড়ার মত বৃদ্ধি পেয়েছে। লিনাক্স বর্তমানে ডেস্কটপেও উল্লেখযোগ্যভাবে জায়গা করে নিচ্ছে। লিনাক্স তথাকথিত ল্যাম্প সার্ভার-সফটওয়্যার সম্মিলনের (লিনাক্স, অ্যাপাচি, মাইএসকিউএল, পার্ল/পাইথন/পিএইচপি) ভিত্তি। ল্যাম্প প্ল্যাটফর্মটি ওয়েব উন্নয়নকারীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। উইকিপিডিয়ার জন্য লেখা মিডিয়াউইকি সফটওয়্যারটিও ল্যাম্প প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করছে। এছাড়া লিনাক্সে রয়েছে অনেক ডাটাবেস সফটওয়্যার যেমন - মাইএসকিউএল, সাইবেস এএসই, এমএসকিউএল, ইত্যাদি। সার্ভার এবং ডেস্কটপে সাধারণ ব্যবহারযোগ্য লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনের পাশাপাশি বিভিন্ন কাজের জন্য বিশেষভাবে উন্নয়নকৃত ডিস্ট্রিবিউশনও রয়েছে, এসকল কাজের মধ্যে রয়েছে, কম্পিউটার স্থাপত্য সমর্থন, গ্রথিত যন্ত্র, স্থায়ীত্ব, নিরাপত্তা, কোন একটি অঞ্চল বা ভাষার আঞ্চলিকতা, নির্দিষ্ট ব্যবহারকারী দলকে উদ্দেশ্য করা, রিয়েল টাইম অ্যাপলিকেশন সমর্থন, অথবা কোন ডেস্কটপ পরিবেশের নিজস্ব ডিস্ট্রিবিউশন। অধিকন্তু, কিছু বিশেষ ডিস্ট্রিবিউশনে কেবলমাত্র পূর্ণ ফ্রি সফটওয়্যার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে ৩০০ এর অধিক ডিস্ট্রিবিউশন উন্নয়নরত অবস্থায় আছে, যার মধ্যে এক ডজনের মত ডিস্ট্রিবিউশন সাধারণ উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা ও পরিচিতিঅর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বেশকিছু শিল্প সহযোগী প্রতিষ্ঠান এবং হার্ডওয়্যার কনফারেন্স লিনাক্সের জন্য বিভিন্ন প্রচলিত হার্ডওয়্যারসমূহ পরিচালনা ও সহায়তা উন্নত করার কাজে নিয়োজিত আছে, যেমন- ফ্রিডমএইচইসি। লিনাক্স ব্যবহার ডেস্কটপ লিনাক্সে চালানোর মত উচ্চমানের ডেস্কটপ সফটওয়ারের প্রচন্ড চাহিদা আছে। এধরনের সফটওয়ার হচ্ছে লেখালাখি (word processors), হিসাবনিকাশ (spreadsheets), ইমেইল গ্রাহক (email clients), ওয়েব ব্রাউজার (web browsers) ইত্যাদি। নিচে কিছু প্রধান লিনাক্স সফটওয়ারের তালিকা দেয়া হলঃ অপিস: ওপেনঅফিস, লিব্রাঅফিস, আইবিএম লোটাস সিম্ফনি ইত্যাদি অপিস ব্যবস্থাপনার কাজে লাগে ইন্টারনেট: মোজিলা ফায়ারফক্স, মোজিলা থান্ডারবার্ড, ব্রেভ ওয়েব ব্রাউজার, অপেরা, গুগল ক্রোম, ক্রোমিয়াম, পিজিন, কোপেতে, ট্রান্সমিশন, এমপ্যাথি, ডেল্যুয, জিডব্লিউগেট, ইউগেট, টিমভিউয়ার মাল্টিমিডিয়া: ভিএলসি মিডিয়া প্লেয়ার, সেলুলয়েড, টোটেম (গ্নোম ভিডিওজ), অ্যামারক, ক্যাফেইন, এসএম প্লেয়ার,রিদমবক্স, ক্লেমেন্টাইন, কেথ্রিবি গ্রাফিক্স: গিম্প, ইঙ্কস্পেস, স্ক্রাইবাস, ব্লেন্ডার, গ্নোম ফটোজ, জিথাম্ব প্রোগ্রামিং: অ্যাটম, ভিজুয়াল স্টুডিও কোড, কোড::ব্লকস, নেটবিনস, এক্লিপ্স, কেডেভেলপ, পাইচার্ম, কোয়ান্টা প্লাস, কিউটি ডিজাইনার যদিও লিনাক্সে ডেস্কটপ প্রকাশনা অথবা পেশাদার সঙ্গীতের মত বিশেষ বিষয়ের জন্য বাণিজ্যিক মানের সফটওয়্যারের অভাব আছে, তা সত্ত্বেও যে সমস্ত ব্যবহারকারী ম্যাক ওএস অথবা উইন্ডোজ ছেড়ে লিনাক্স ব্যবহার করা শুরু করেছেন, তারা আগের অপারেটিং সিস্টেমের সমতুল্য প্রায় সব সফটওয়্যারই লিনাক্সে সুলভ। তাছাড়া যেসব সফটওয়ার উইন্ডোজ বা ম্যাক ওএসের জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যায়, সেগুলোও সাধারণত লিনাক্সের জন্য পাওয়া যায়। অনেক স্বত্বযুক্ত সফটওয়ারও বর্তমানে লিনাক্স সমর্থন করে; যেমন- অ্যাডোব ফ্ল্যাশ প্লেয়ার, অ্যাডোব রিডার, নিরো বার্নিং রম, অপেরা ওয়েব ব্রাউজার, রিয়েল প্লেয়ার, স্কাইপি। ওয়াইন নামে উম্মুক্ত সোর্সের একটি প্রকল্পের ক্রসওভার এমন একটি সমাধান যা কিনা মাইক্রোসফট অফিস, অ্যাডোবি ফটোশপ, ড্রিমওয়েভার, এডোব ইলাস্ট্রেটর ইত্যাদিের উইন্ডোজ সংস্করণ লিনাক্সে চালাতে পারে। গেমস উইন্ডোজ, বিভিন্ন গেমিং কনসোল কিংবা ম্যাক ওএস টেনের তুলনায় লিনাক্সে খেলার সফটওয়্যার নেই বললেই চলে। লিনাক্সের বাজার খুব সীমিত হওয়ায় কোন খেলা তৈরির প্রতিষ্ঠান লিনাক্সের জন্য গেম তৈরি করতে আগ্রহী হয়নি। তবে এখন লিনাক্সে স্টীম দিয়ে অনেক গেমস খেলা যায়। লিনাক্স গেমার্স গেম লিস্ট ও দ্য লিনাক্স গেম টোম এ অনেকগুলো লিনাক্সে খেলার মত খেলার তালিকা আছে। কিছু কিছু উম্মুক্ত সোর্সের খেলা আছে যেগুলো বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যেমন নেটহ্যাক ও টাক্স রেসার। এদের উপর ভিত্তি করে অনেক খেলা যেমন ফ্রিসিভ ও দি আর-কুয়ান মাস্টার্স তৈরি হয়েছে। এছাড়াও লিনাক্স প্লাটফর্মের জন্য নির্মিত আরো কিছু জনপ্রিয় এবং উচ্চমানসম্পন্ন খেলার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হলো- এসল্ট কিউব, আরবান টেরর, আমেরিকান আর্মি, ড্রিমচেজ, ভিড্রিফট, টরকস, ডুম, এলিয়েন এরিনা, জিরোএডি, এনিমি টেরিটরি, এক্সমোটো, ফ্রোজেন বাবল ইত্যাদি। কোন কোন খেলা তৈরির প্রতিষ্ঠান সরাসরি লিনাক্সের উপযোগী খেলা প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। যেমন- আইডি সফটওয়ারের কোয়েক ৪। অনেক প্রতিষ্ঠান উইন্ডোজে চলা খেলাগুলোকে লিনাক্সের উপযোগী করে তৈরি করছেন। ১৯৯৮ সালে প্রতষ্ঠিত লোকি সফটওয়ার, ২০০১ সালে প্রতিষ্ঠিত লিনাক্স গেম পাবলিশিং এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। ওয়াইন, সেডেজা ও ক্রসওভার গেমস উইন্ডোজের অনেক গেম লিনাক্সে চালানোর সুবিধা দিচ্ছে। ভার্চুয়াল মেশিন ও নিম্ন-স্তিরের ইমুলেটর'' এর মাধ্যমেও অন্য প্লাটফর্মের (যেমন- সনি প্লেস্টেশন, নিনটেন্ডো উই]] ইত্যাদি) জন্য তৈরীকৃত খেলা লিনাক্সে চালানো যাচ্ছে। সার্ভার, সুপারকম্পিউটার এবং এম্বেডেড যন্ত্র লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো দীর্ঘসময় ধরেই সার্ভার সার্ভার অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, এই ক্ষেত্রে তারা উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণে অবদান রেখেছে, ২০০৬ সালে নেটক্রাফটের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বের ১০টির মধ্যে ৮টি নির্ভরযোগ্য ইন্টারনেট হোস্টিং কোম্পানী তাদের ওয়েব সার্ভারে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবহার করে থাকে। ২০০৮ এর জুন পর্যন্ত, ১০টির মধ্যে ৫টিতে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, ১০টির মধ্যে ৩টিতে ফ্রিবিএসডি এবং ১০টির মধ্যে ২টিতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ চলছে, ২০১০ এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, ১০টির মধ্যে ৬টিতে লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন, ১০টির মধ্যে ২টিতে ফ্রি-বিএসডি এবং ১০টির মধ্যে ১টিতে মাইক্রোসফট উইন্ডোজ চলছে। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো হলো ল্যাম্প সার্ভার-সফটওয়্যার সংমিশ্রনের (লিনাক্স, অ্যাপাচে, মাইএসকিউএল, পার্ল/পিএইচপি/পাইথন) প্রধান অনুষংগ যেটি সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়নকারীদের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং যেটি ওয়েবসাইট হোস্টিংয়ের একটি কমন প্লাটফর্ম হিসাবে বর্তমানে সমাদৃত। লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো মেইনফ্রেম কম্পিউটারের অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমগুলোর তুলনায় তাদের মূল্যমানের কারণে বিগত কয়েক দশক যাবত মেইনফ্রেম কম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হিসাবেও জনপ্রিয়তা পেয়ে আসছে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে, বড় কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটারভিত্তিক এন্টারপ্রাইজ লিনাক্স সার্ভার বিস্তৃত অর্থে বাজারজাতকরন ও বিক্রয়ের ঘোষণা দেয়। সুপারকম্পিউটারের অপারেটিং সিস্টেম হিসাবেও লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশনগুলো সমাদৃত, ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ সিস্টেমের মধ্যে ৪৫৯ টি (৯১.৮%) লিনাক্স ডিস্ট্রিবিউশন দ্বারা চলে। বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুততম সুপার-কম্পিউটার বলে পরিচিত আইবিএমের সিকুয়া এর অপারেটিং সিস্টেম হিসাবেও লিনাক্স ব্যবহৃত হবে যেটি ২০১১ সালে কার্যক্ষম হবে। কম দাম ও উচ্চমানের কাস্টমাইজেশন সুবিধার কারণে গ্রথিত যন্ত্রগুলোতে লিনাক্স ব্যবহৃত হয়ে থাকে। গুগল কর্তৃক উন্নয়নকৃত অ্যান্ড্রয়েড এধরনেরই একটি লিনাক্সভিত্তিক কাস্টোমাইজড অপারেটিং সিস্টেম যেটি এমুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম। মুক্তসোর্স প্লাটফর্মে লিনাক্স ভিত্তিক পিডিএ এবং মুঠোফোন ২০০৭ সাল থেকে জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে; উদাহরণস্বরুপ, নকিয়া এন৮১০, ওপেনমোকো নিও১৯৭৩ এবং মটোরোলার আরওকেআর এইট। এই ধারা অব্যাহত রেখে পাম (পরবর্তীতে এইচপি কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত) একটি লিনাক্সভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম উন্নয়ন করে যেটির নাম হলো 'ওয়েবওএস' এবং যেটি পাম প্রি স্মার্টফোন সিরিজে ব্যবহৃত হয়। জনপ্রিয় টিভো ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার একটি কাস্টমাইজড লিনাক্স ব্যবহার করে, একইভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন- সিসকো/লিংকসিস কর্তৃক বাজারজাত কৃত বিভিন্ন রাউটার ও নেটওয়ার্ক ফায়ারওয়ালেও এধরনের লিনাক্স সিস্টেম ব্যবহৃত হয়। কর্গ ওয়েসিস, কর্গ ক্রোনাস, ইয়ামাহা মোটিফ এক্সএফ/এক্সএস মিউজিক ওয়ার্কস্টেশন, ইয়ামাহা এস৯০এক্সএস/এস৭০এক্সএস, ইয়ামাহা এমওএক্স৬/এমওএক্স৮ সিন্থেসাইজার, ইয়ামাহা মোটিফ-র‍্যাক এক্সএফ টক জেনারেটর মডিউল এবং রোল্যান্ড আরডি-৭০০জিএক্স ডিজিটাল পিয়ানো লিনাক্স ব্যবহার করে। মঞ্চসজ্জায় ব্যবহৃত আলোক সিস্টেমেও লিনাক্স ব্যবহৃত হয়, যেমন- হোলহুগল কনসোল। পাদটীকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ লিনাক্স ইন্টার্নালের গ্রাফিক্যাল ম্যাপ লিনাক্স কার্নেলের ওয়েবসাইট এবংং আর্কাইভ লিনাক্সের ইতিহাস অপারেটিং সিস্টেম ওপেন সোর্স লিনাক্স ১৯৯১ের সফটওয়্যার কম্পিউটিং প্ল্যাটফর্ম লিনাস টরভল্ডস ইউনিক্স-সদৃশ ১৯৯১-এর সফটওয়্যার ক্রস-প্ল্যাটফর্ম সফটওয়্যার ফিনল্যান্ডীয় উদ্ভাবন
https://en.wikipedia.org/wiki/Linux
Linux
Linux (, LIN-uuks) is a generic name for a family of open-source Unix-like operating systems based on the Linux kernel, an operating system kernel first released on September 17, 1991, by Linus Torvalds. Linux is typically packaged as a Linux distribution (distro), which includes the kernel and supporting system software and libraries, many of which are provided by the GNU Project. Popular Linux distributions include Debian, Fedora Linux, Arch Linux, and Ubuntu. Commercial distributions include Red Hat Enterprise Linux and SUSE Linux Enterprise. Desktop Linux distributions include a windowing system such as X11 or Wayland and a desktop environment such as GNOME, KDE Plasma or Xfce. Distributions intended for servers may not have a graphical user interface at all or include a solution stack such as LAMP. Many Linux distributions use the word "Linux" in their name, but the Free Software Foundation uses and recommends the name "GNU/Linux" to emphasize the use and importance of GNU software in many distributions, causing some controversy. Because Linux is freely redistributable, anyone may create a distribution for any purpose. Linux was originally developed for personal computers based on the Intel x86 architecture, but has since been ported to more platforms than any other operating system. Because of the dominance of Linux-based Android on smartphones, Linux, including Android, has the largest installed base of all general-purpose operating systems as of May 2022. Linux is, as of March 2024, used by around 4 percent of desktop computers. The Chromebook, which runs the Linux kernel-based ChromeOS, dominates the US K–12 education market and represents nearly 20 percent of sub-$300 notebook sales in the US. Linux is the leading operating system on servers (over 96.4% of the top one million web servers' operating systems are Linux), leads other big iron systems such as mainframe computers, and is used on all of the world's 500 fastest supercomputers (as of November 2017, having gradually displaced all competitors). Linux also runs on embedded systems, i.e., devices whose operating system is typically built into the firmware and is highly tailored to the system. This includes routers, automation controls, smart home devices, video game consoles, televisions (Samsung and LG Smart TVs), automobiles (Tesla, Audi, Mercedes-Benz, Hyundai, and Toyota), and spacecraft (Falcon 9 rocket, Dragon crew capsule, and the Perseverance rover). Linux is one of the most prominent examples of free and open-source software collaboration. The source code may be used, modified, and distributed commercially or non-commercially by anyone under the terms of its respective licenses, such as the GNU General Public License (GPL). The Linux kernel, for example, is licensed under the GPLv2, with an exception for system calls that allows code that calls the kernel via system calls not to be licensed under the GPL.
2341
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%82%E0%A6%B6%E0%A7%80%20%28%E0%A6%89%E0%A6%AA%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%BF%29
বংশী (উপজাতি)
বংশী বাংলাদেশের একটি ক্ষুদ্রতম উপজাতি। এরা টাঙ্গাইল জেলার মহানান্দপুর এবং দন্দোনিয়া নামে পাশাপাশি দুইটি গ্রামের বসবাস করে। তারা নিজেদেরকে সূর্য-বংশী বলে থাকে। তথ্যসূত্র বাংলাদেশের জাতিগোষ্ঠী
null
null
null
2352
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%89%E0%A6%87%E0%A6%95%E0%A6%BF
উইকি
উইকি ( ) একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, যেখানে এর ব্যবহারকারীরা সম্মিলিতভাবে সহযোগিতামূলক সম্পাদনার মাধ্যমে এর বিভিন্ন বিষয়বস্তু যোগ, পরিবর্তন, সংশোধন, মানোন্নয়ন অথবা অপসারণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। সাধারণত উইকিতে, রচনার বিষয়বস্তু একটি সরলীকৃত মার্কআপ ভাষা বা একটি রিচ টেক্সট এডিটর ব্যবহার করে লেখা হয়। যদিও উইকি বিষয়বস্তু ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির একটি ধরন, যা ব্লগ বা অন্যান্য পদ্ধতি থেকে পৃথক। ব্লগ বা এ-ধরনের পদ্ধতি ব্যবহারে বিষয়বস্তু নির্দিষ্ট সংজ্ঞায়িত মালিক বা নেতা ছাড়াই তৈরি হয়ে থাকে, এবং উইকিতে, অন্তর্নিহিত কাঠামো গঠনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের প্রয়োজন অনুযায়ী বিষয়বস্তুসমূহ সাজানো হয়। বিশ্বকোষ প্রকল্প উইকিপিডিয়া, পৃষ্ঠা প্রদর্শনের পরিপ্রেক্ষিতে সার্বজনীন ওয়েবে সবচেয়ে জনপ্রিয় উইকি, কিন্তু উইকি সফটওয়্যারে বিভিন্ন ধরনের সক্রিয় অনেক সাইট রয়েছে। বৈশিষ্ট্যসমূহ ইতিহাস উইকিউইকিওয়েব ছিল প্রথম উইকি। ওয়ার্ড কানিংহাম ১৯৯৪ সালে ওরেগনের পোর্টল্যান্ডে উইকিউইকিওয়েব তৈরি করা শুরু করেন এবং ২৫ মার্চ ১৯৯৫ সালে এটি ইন্টারনেট ডোমেইন c2.com-এ ইনস্টল করেন। এটি কানিংহাম দ্বারা নামকরণ করা হয়েছিল, যিনি হনলুলু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাউন্টার কর্মচারীকে "উইকি" নিতে বলেছিলেন। উইকি শাটল" বাস যা বিমানবন্দরের টার্মিনালের মধ্যে চলে। কানিংহামের মতে, "আমি 'দ্রুত'-এর বিকল্প হিসাবে উইকি-উইকি বেছে নিয়েছি এবং এর ফলে এই জিনিসের দ্রুত-ওয়েব নামকরণ এড়িয়ে চলেছি।" কানিংহাম আংশিকভাবে অ্যাপল হাইপারকার্ড দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন, যা তিনি ব্যবহার করেছিলেন। হাইপারকার্ড অবশ্য একক-ব্যবহারকারী ছিল। অ্যাপল এমন একটি সিস্টেম ডিজাইন করেছে যা ব্যবহারকারীদের বিভিন্ন কার্ডের মধ্যে ভার্চুয়াল "কার্ড স্ট্যাক" সমর্থনকারী লিঙ্ক তৈরি করতে দেয়। কানিংহাম ব্যবহারকারীদের "একে অপরের পাঠ্যের উপর মন্তব্য করতে এবং পরিবর্তন করার" অনুমতি দিয়ে ভ্যানেভার বুশের ধারণাগুলি বিকাশ করেছিলেন। কানিংহাম বলেছেন যে তার লক্ষ্য ছিল প্রোগ্রামিং প্যাটার্নগুলি নথিভুক্ত করার জন্য একটি নতুন সাহিত্য তৈরি করার জন্য মানুষের অভিজ্ঞতাকে একত্রিত করা, এবং এমন একটি প্রযুক্তির সাথে কথা বলার এবং গল্প বলার মানুষের স্বাভাবিক ইচ্ছাকে কাজে লাগানো যা "লেখক" করতে অভ্যস্ত নয় তাদের কাছে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। উইকিপিডিয়া সর্বাধিক বিখ্যাত উইকি সাইট হয়ে ওঠে, যা ২০০১ সালের জানুয়ারিতে চালু হয় এবং ২০০৭ সালে শীর্ষ দশটি জনপ্রিয় ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে। প্রাথমিকভাবে প্রযুক্তিগত ব্যবহারকারীদের জন্য সাধারণ ব্যবহার প্রকল্প যোগাযোগ, ইন্ট্রানেট এবং ডকুমেন্টেশন অন্তর্ভুক্ত। কিছু কোম্পানি উইকিগুলিকে তাদের একমাত্র সহযোগী সফ্টওয়্যার হিসাবে এবং স্ট্যাটিক ইন্ট্রানেটের প্রতিস্থাপন হিসাবে ব্যবহার করে, এবং কিছু স্কুল এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গ্রুপ লার্নিং উন্নত করতে উইকি ব্যবহার করে। পাবলিক ইন্টারনেটের চেয়ে ফায়ারওয়ালের পিছনে উইকির বেশি ব্যবহার হতে পারে। ১৫ মার্চ, ২০০৭-এ, উইকি শব্দটি অনলাইন অক্সফোর্ড ইংরেজি অভিধানে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। আরও দেখুন বিষয়বস্তু ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি বিচ্ছুরিত জ্ঞান উইকি তালিকা বিশ্বজনীন সম্পাদনা বাটন উইকি এবং শিক্ষা টীকা তথ্যসূত্র আরও পড়ুন বহিঃসংযোগ WikiIndex, a directory of wikis Exploring with Wiki, an interview with Ward Cunningham by Bill Verners WikiMatrix, উইকি সফটওয়্যার এবং হোস্ট তুলনা করার জন্যে একটি ওয়েবসাইট WikiPapers , উইকি সম্পর্কিত প্রকাশনা সম্পর্কে একটি উইকি WikiTeam, উইকি সংরক্ষণ করার কাজে নিয়োজিত একটি স্বেচ্ছাসেবক দল Murphy, Paula (April 2006). Topsy-turvy World of Wiki. University of California. হাওয়াইয়ান শব্দ এবং শব্দসমষ্টি মানব–কম্পিউটার মিথষ্ক্রিয়া হাইপারটেক্সট আত্ম–প্রতিষ্ঠান সামাজিক তথ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ
https://en.wikipedia.org/wiki/Wiki
Wiki
A wiki ( WI-kee) is a form of hypertext publication on the internet which is collaboratively edited and managed by its audience directly through a web browser. A typical wiki contains multiple pages that can either be edited by the public or limited to use within an organization for maintaining its internal knowledge base. Wikis are powered by wiki software, also known as wiki engines. Being a form of content management system, these differ from other web-based systems such as blog software or static site generators in that the content is created without any defined owner or leader. Wikis have little inherent structure, allowing one to emerge according to the needs of the users. Wiki engines usually allow content to be written using a lightweight markup language and sometimes edited with the help of a rich-text editor. There are dozens of different wiki engines in use, both standalone and part of other software, such as bug tracking systems. Some wiki engines are free and open-source, whereas others are proprietary. Some permit control over different functions (levels of access); for example, editing rights may permit changing, adding, or removing material. Others may permit access without enforcing access control. Further rules may be imposed to organize content. In addition to hosting user-authored content, wikis allow those users to interact, hold discussions, and collaborate. There are hundreds of thousands of wikis in use, both public and private, including wikis functioning as knowledge management resources, note-taking tools, community websites, and intranets. Ward Cunningham, the developer of the first wiki software, WikiWikiWeb, originally described wiki as "the simplest online database that could possibly work". "Wiki" (pronounced [wiki]) is a Hawaiian word meaning "quick". The online encyclopedia project Wikipedia is the most popular wiki-based website, as well being one of the internet's most popular websites, having been ranked consistently as such since at least 2007. Wikipedia is not a single wiki but rather a collection of hundreds of wikis, with each one pertaining to a specific language. The English-language Wikipedia has the largest collection of articles, standing at 6,870,443 as of August 2024.
2353
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%20%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%95%E0%A7%8C%E0%A6%B6%E0%A6%B2%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AF%E0%A6%BC
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (সংক্ষেপে: বুয়েট) হচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল-সম্পর্কিত উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি ঢাকা শহরের লালবাগ থানার পলাশী এলাকায় অবস্থিত। কারিগরি শিক্ষা প্রসারের জন্য ১৮৭৬ সালে ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি পরবর্তীতে আহসানউল্লাহ স্কুল অব ইঞ্জিনিয়ারিং এ পরিণত করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে এর নাম হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস প্রাথমিক পর্যায় বুয়েট উনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে জরিপকারদের জন্য একটি জরিপ শিক্ষালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৬ সালে তদানীন্তন ব্রিটিশ রাজ ঢাকা সার্ভে স্কুল নামে একটি প্রতিষ্ঠান চালু করে। এর উদ্দেশ্য ছিল সেই সময়কার ব্রিটিশ ভারতের সরকারি কাজে অংশগ্রহণকারী কর্মচারীদের কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা। ঢাকার তৎকালীন নওয়াব খাজা আহসানউল্লাহ এ বিদ্যালয়ের প্রতি আগ্রহী হন এবং মুসলমানদের শিক্ষাদীক্ষায় অগ্রগতির জন্য তিনি ঢাকার সার্ভে স্কুলটিকে ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) উন্নীত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের স্বার্থে এক লক্ষ ১২ হাজার টাকা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তার জীবদ্দশায় তা সম্ভব হয়নি। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র নওয়াব সলিমুল্লাহ ১৯০২ খ্রিষ্টাব্দে এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলেন। তার অনুদানে এটি পরবর্তীতে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষালয় হিসেবে প্রসার লাভ করে এবং তার স্বীকৃতি হিসেবে ১৯০৮ সালে বিদ্যায়তনটির নামকরণ করা হয় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল।আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স দিতে শুরু করে পুরকৌশল, তড়িৎকৌশল এবং যন্ত্রকৌশল বিভাগে। শুরুতে একটি ভাড়া করা ভবনে বিদ্যালয়টির কার্যক্রম চলত। ১৯০৬ সালে সরকারি উদ্যোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের কাছে এর নিজস্ব ভবন নির্মিত হয়। এ স্থানের একটি উঁঁচু চিমনি কিছুদিন আগেও এই স্মৃতি বহন করত। ১৯১২ সালে এটি বর্তমান অবস্থানে স্থানান্তরিত হয়। শুরুতে বিদ্যালয়টি ঢাকা কলেজের সাথে সংযুক্ত ছিল। পরবর্তীতে এটি জনশিক্ষা পরিচালকের অধীনে পরিচালিত হতে থাকে। মি. এন্ডারসন এর প্রথম অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। এরপর ১৯৩২ সালে শ্রী বি. সি. গুপ্ত ও ১৯৩৮ সালে জনাব হাকিম আলী অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বাংলার শিল্পায়নের জন্য তৎকালীন সরকার ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করে। তখন এতদঞ্চলে দক্ষ জনশক্তির অভাব দেখা দেয়। তৎকালীন সরকার নিযুক্ত একটি কমিটি যন্ত্র, তড়িৎ, কেমি ও কৃষি প্রকৌশলে ৪ বছর মেয়াদী ডিগ্রি কোর্সে ১২০ জন ছাত্রের জন্য ঢাকায় একটি প্রকৌশল কলেজ স্থাপন এবং স্কুলটিকে তৎকালীন পলাশী ব্যারাকে স্থানান্তর করে পুর, যন্ত্র, ও তড়িৎ কৌশলে ৪ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সে ৪৮০ জন ছাত্র ভর্তির সুপারিশ করেন। ১৯৪৭ সালের মে মাসে সরকার ঢাকায় একটি প্রকৌশল কলেজ স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন ও ছাত্র ভর্তির জন্য বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের শিবপুরস্থ বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ঢাকায় আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে পরীক্ষা নেয়া হয়। দেশবিভাগের পর ১৯৪৭ এর দেশবিভাগের ফলে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলের মুষ্টিমেয় কয়েকজন শিক্ষক ছাড়া বাকি শিক্ষকদের সবাই ভারতে চলে যান ও ভারত থেকে ৫ জন শিক্ষক এ স্কুলে যোগদান করেন। ১৯৪৭ এর আগস্ট মাসে এটিকে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রূপে উন্নীত করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ হিসেবে। জনাব হাকিম আলী এর অধ্যক্ষ নিযুক্ত হন। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান সরকার এই কলেজটিকে অনুমোদন দেন এবং এটি তখন পুরকৌশল, তড়িৎ প্রকৌশল, যন্ত্র প্রকৌশল, কেমিকৌশল, কৃষি প্রকৌশল ও টেক্সটাইল প্রকৌশল বিভাগে চার বছর মেয়াদী ব্যাচেলর ডিগ্রি এবং পুরকৌশল, তড়িৎ প্রকৌশল ও যন্ত্র প্রকৌশল বিভাগে তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা প্রদান করতে শুরু করে। তবে শেষ পর্যন্ত কৃষি ও টেক্সটাইলের পরিবর্তে ধাতব প্রকৌশল অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৫৬ সালে কলেজে সেমিস্টার প্রথা চালু হয় ও নতুন পাঠ্যক্রম অনুমোদিত হয়। ১৯৫৭ সালে ডিগ্রি কোর্সে আসন সংখ্যা ১২০ থেকে বাড়িয়ে ২৪০ করা হয়। ১৯৫৮ সালে কলেজ থেকে ডিপ্লোমা কোর্স বন্ধ করে দেয়া হয়। এর মধ্যে ১৯৫১ সালে টি. এইচ. ম্যাথুম্যান এবং ১৯৫৪ সালে ড. এম. এ. রশিদ কলেজের অধ্যক্ষ হয়েছিলেন। এসময়ে এগ্রিকালচারাল এন্ড মেকানিক্যাল কলেজ অব টেক্সাস (বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়) ও আহসানউল্লাহ কলেজের সাথে যৌথ ব্যবস্থাপনার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, ফলে ওখান থেকে অধ্যাপকগণ এদেশে এসে শিক্ষকতার মান, ল্যাবরেটরি ও পাঠ্যক্রম উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য কিছু শিক্ষককে স্নাতকোত্তর পড়াশোনার জন্য টেক্সাস এ. এন্ড এম. কলেজে পাঠানো হয়। এসময় এশিয়া ফাউন্ডেশন লাইব্রেরিকে কিছু প্রয়োজনীয় বইপত্র দান করে এবং রেন্টাল লাইব্রেরি প্রথা চালু করা হয়। কলেজ থাকা অবস্থায় ছাত্রদের জন্য কেবল দুটি ছাত্রাবাস ছিলঃ মেইন হোস্টেল (বর্তমান ড. এম. এ. রশীদ ভবন) ও সাউথ হোস্টেল (বর্তমান নজরুল ইসলাম হল) প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পাকিস্তান আমলে ১৯৬২ সালের ১ জুন তারিখে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করে নাম দেয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও কারিগরী বিশ্ববিদ্যালয় (East Pakistan University of Engineering and Technology, or EPUET)। তৎকালীন কারিগরি শিক্ষা পরিচালক ড. এম. এ. রশিদ প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন। অধ্যাপক এ. এম. আহমেদ প্রকৌশল অনুষদের প্রথম ডীন নিযুক্ত হন। খ্যাতনামা গণিতজ্ঞ এম. এ. জব্বার প্রথম রেজিস্ট্রার ও মমতাজউদ্দিন আহমেদ প্রথম কম্পট্রোলার নিযুক্ত হন। ড. এম. এ. রশিদের যোগ্য নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়রূপে প্রতিষ্ঠিত হবার পরে ছাত্রদের জন্য তিনটি নতুন আবাসিক হল তৈরি করা হয়। অধ্যাপক কবিরউদ্দিন আহমেদ প্রথম ছাত্রকল্যাণ পরিচালক পদে নিযুক্ত হন। ১৯৬২ সালেই প্রথম স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে স্থাপত্য বিভাগ গঠন করা হয়, এই বিভাগের জন্য টেক্সাস এ. এন্ড এম. কলেজের কয়েকজন শিক্ষক যোগদান করেন। এভাবে প্রকৌশল ও স্থাপত্য এই দুটি অনুষদে পুর, যন্ত্র, তড়িৎ, কেমি ও ধাতব প্রকৌশল এবং স্থাপত্য বিভাগ নিয়ে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যাত্রা শুরু করে। ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণের জন্য ১৯৬৪ সালে আসন সংখ্যা ২৪০ থেকে ৩৬০ জনে বৃদ্ধি করা হয়। একই বছরে বর্তমান ৭ তলা পুরকৌশল ভবন নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৬৯-৭০ সালে আসন সংখ্যা ৪২০ জনে উন্নীত হয়। এসময় স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদে ফিজিক্যাল প্ল্যানিং নামে একটি নতুন বিভাগ চালু হয়। এটিই পরবর্তীকালে নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে পরিণত হয়েছে। স্বাধীনতার পর ১৯৭১-এ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পরে এর নাম পরিবর্তন করে বর্তমানের নাম, অর্থাৎ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রাখা হয়। পরবর্তীতে ২০০৩ সালে এর নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০০ পরবর্তী সময় আবরার ফাহাদ হত্যা ও রাজনীতি নিষিদ্ধকরণ ২০১৯ সালে, আবরার ফাহাদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে বুয়েট ছাত্রলীগ কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ বুয়েট রাজনীতিবিরোধী আন্দোলন ২০২৪ বুয়েট ছাত্রজনীতিবিরোধী প্রতিবাদ হলো বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি অনুপ্রবেশের চেষ্টার বিপক্ষে হওয়া প্রতিবাদ। ২৮শে মার্চ ২৮ তারিখ রাত ৩টার দিকে ছাত্রলীগের এর শখানেক কর্মী বুয়েটে প্রবেশ করে স্লোগান দিতে থাকে ও শোডাউন করে। তৎকালীন সময় গার্ডরা শিক্ষার্থীদের জানায় ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তরের প্রধানের অনুমতি নিয়েই তারা এসেছে। কর্মীরা হুমকি-ধামকি করে ও পরে চলে যায়। ২৮শে মার্চ রাতের দিকে ২০-ব্যাচ পরবর্তী দিনের পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। এর কিছুক্ষণ পরে ১৮-ব্যাচ ও অন্যান্য ব্যাচও পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। ২৯শে মার্চ শুক্রবারে জুমার নামাজের পর আন্দোলন ডাকা হয়। আন্দোলন দুপুর ২টা থেকে রাত ৮:৩০ পর্যন্ত চলে। আন্দোলন শুরুতে শহিদ মিনারের সামনে পরবর্তীতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে যায়। এসময় ছাত্ররাজনীতি বিরোধী স্লোগান দেওয়া হয় ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার বিপক্ষে স্লোগান দিতে থাকে শিক্ষার্থীরা। সন্ধ্যার দিকে ডিএসডাব্লিউ আসলেও শিক্ষার্থীদের সংখ্যা দেখে ইফতারের পরে কথা বলার আশ্বাস দিয়ে চলে যায়। রাত ৮টার দিকে ভাইস-চ্যান্সেলর সত্য প্রসাদ মজুমদার, ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তরের(ডিএসডাব্লিউ) প্রধান মিজানুর রহমান ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যক্তিরা আসে। ভাইস-চ্যান্সেলর প্রাপ্ত আবেদনপত্রে কারোর স্বাক্ষর নেই বলে অভিযোগ করে এবং রাজনীতি সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী বহিষ্কারের জন্য সময় চায়, শিক্ষার্থীরা এতে নাখোস হলে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বে থাকা ডিএসডাব্লিউকে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তিনি সামনে ডাকেন। ভাইস-চ্যান্সেলর এর বক্তব্যের পরে যখন ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তরের প্রধান মিজানুর রহমান বক্তব্য দিতে দিতে বলে, "ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার না", তখন শিক্ষার্থীরা ফুঁসে উঠে। এতে তিনি ভঁড়কে যান ও বক্তব্য দ্রুত শেষ করে প্রশাসনিক ব্যক্তিদের নিয়ে চলে যান। পরবর্তী দিনের প্রতিবাদ সমাবেশ নিয়ে আলোচনা করে শিক্ষার্থীরা উক্ত দিনের আন্দোলন শেষ করে। ৩০শে মার্চ আগের দিনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এইদিন ২২-ব্যাচের পরীক্ষা সম্পূর্ণ বর্জন করা হয়। সকাল ৭টা থেকে বুয়েট শহিদ মিনারের সামনে অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীরা। এতে বুয়েট বাস ঢুকতে অপারগ হয়। শিক্ষার্থীরা সকাল থেকে জমা হতে থাকে ও আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে ১০টার দিকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কেউ পরীক্ষা দিতে যায়নি। পরে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেন। ৩১শে মার্চ আগের রাতে ছাত্রলীগের হুমকির মুখে সংঘর্ষের আশঙ্কায় আন্দোলন সাময়িক স্থগিত করা হয়। আগেরদিনের ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্রলীগ শহিদ মিনার এলাকায় সমাবেশ করে। সভাপতি, সদ্য হল থেকে বহিষ্কৃত ইমতিয়াজ রাব্বিকে নিয়ে বুয়েট ক্যাম্পাসে জোড়পূর্বক ছাত্ররাজনীতি ফিরিয়ে আনার ঘোষণা ও হুমকি দেয়। এইদিন ২০ ব্যাচের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও ১৪০০+ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুইজন(নিয়মিত শিক্ষার্থী একজন) শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিতে এসেছিল, যার মধ্যে একজন আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল। ১টার দিকে বুয়েটে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্ট শতাধিক মানুষ ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে এসে প্রধান ফটকের সামনের শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক দিয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দেয়, অতঃপর উক্ত এলাকা ত্যাগ করে। বিকাল ৫:১৫ এর দিকে পরিস্থিতি শান্ত হলে বুয়েট শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি প্রেস কনফারেন্স করা হয়। শিক্ষার্থীরা আবারো ক্যাম্পাসে সকল প্রকার রাজনৈতিক কার্যক্রমের বিরোধিতা নিয়ে বক্তব্য দেয়। অজানা নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি, সামাজিক মাধ্যমে ক্যাম্পাসে এসে আক্রমণের হুমকির কথা তারা উল্লেখ করে। উপাচার্য এম এ রশীদ (১ জুন ১৯৬২ - ১৬ মার্চ ১৯৭০) মোহাম্মদ আবু নাসের (১৬ মার্চ ১৯৭০ - ২৫ এপ্রিল ১৯৭৫) ওয়াহিদউদ্দিন আহমেদ (২৫ এপ্রিল ১৯৭৫ - ২৪ এপ্রিল ১৯৮৩) আব্দুল মতিন পাটোয়ারি (২৪ এপ্রিল ১৯৮৩ - ২৫ এপ্রিল ১৯৮৭) মুশারফ হোসেন খান (২৫ এপ্রিল ১৯৮৭ - ২৪ এপ্রিল ১৯৯১) মুহাম্মদ শাহজাহান (২৪ এপ্রিল ১৯৯১ - ২৭ নভেম্বর ১৯৯৬) ইকবাল মাহমুদ (২৭ নভেম্বর ১৯৯৬ - ১৪ অক্টোবর ১৯৯৮) নূরউদ্দিন আহমেদ (১৪ অক্টোবর ১৯৯৮ - ৩০ আগস্ট ২০০২) মোহাম্মদ আলী মুর্তুজা (৩০ আগস্ট ২০০২ - ২৯ আগস্ট ২০০৬) এ এম এম সফিউল্লাহ (৩০ আগস্ট ২০০৬ - ২৯ আগস্ট ২০১০) এস এম নজরুল ইসলাম (৩০ আগস্ট ২০১০ - ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪) খালেদা একরাম (১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ - ২৪ মে ২০১৬) সাইফুল ইসলাম (২২ জুন ২০১৬ - ২৩ জুন ২০২০) সত্য প্রসাদ মজুমদার (২৫ জুন ২০২০ - বর্তমান) ক্যাম্পাস বুয়েট ক্যাম্পাস ঢাকার পলাশী এলাকায় অবস্থিত। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজে একই নওয়াবের প্রদানকৃত জমির উপরে গড়ে উঠেছে বিধায় পাশাপাশি অবস্থিত। ক্যাম্পাসের পশ্চিম দিকে ইইই, সিএসই এবং বিএমই বিভাগের জন্য ১২ তলা ইসিই ভবন নির্মিত হয়েছে। তবে ক্যাম্পাসের মূল অংশে যন্ত্রকৌশল, পুরাকৌশল, আর্কিটেকচার, ইউআরপি ভবনসহ ড. রশিদ একাডেমিক ভবন উপস্থিত। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলো একাডেমিক ভবন থেকে হাঁটার দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে ক্যাম্পাসের আয়তন হল ৭৬.৮৫ একর (৩১১,০০০ ব.মি.)। অনুষদ এবং বিভাগ সমূহ বুয়েটে বর্তমানে ৬টি অনুষদের অধীনে ১৮টি বিভাগ রয়েছে। ইনস্টিটিউটসমূহ জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্প্রসারণ এবং প্রকৌশল ও প্রযুক্তিতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বুয়েটে ৪টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়। এগুলো হলঃ তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট (আইআইসিটি) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট (আইডব্লিউএফএম) এপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (আইএটি) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) অধিদপ্তর, কেন্দ্র এবং অন্যান্য উপদেষ্টা, সম্প্রসারণ ও গবেষণা সেবা অধিদপ্তর ছাত্র কল্যাণ অধিদপ্তর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন অধিদপ্তর অব্যাহত শিক্ষা অধিদপ্তর শক্তি অধ্যয়ন কেন্দ্র পরিবেশ ও সম্পদ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র বায়োমেডিকেল প্রকৌশল কেন্দ্র গবেষণা, পরীক্ষা ও পরামর্শ ব্যুরো আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ নেটওয়ার্ক কেন্দ্র শহুরে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক অফিস আলোকবর্তিকা আলোকবর্তিকা ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের '১৪ ব্যাচের কতিপয় শিক্ষার্থী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটি উন্মুক্ত গ্রন্থাগার। কোনো নিবন্ধন ছাড়াই যে কেউ এখান থেকে যেকোন বই নিতে পারবেন। তবে একটি বই নিলে তাকে গ্রন্থাগারে একটি বই দিতে হবে। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে মূল ক্যাম্পাসে আলোকবর্তিকার অপর একটি শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। সংগঠনসমূহ ছাত্র সংগঠন অধ্যাদেশ ১৯৬২ অনুযায়ী বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে সকল সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে । আবরার ফাহাদ নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রকে বুয়েট ছাত্রলীগ কর্তৃক পিটিয়ে হত্যার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সাইফুল ইসলাম ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি এবং রাজনৈতিক সংগঠন ও তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী, ক্যাম্পাসে শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বিজ্ঞান সংগঠন সত্যেন বোস বিজ্ঞান ক্লাব বুয়েট নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাব বুয়েট অটোমোবাইল ক্লাব বুয়েট এনার্জি ক্লাব বুয়েট রোবোটিক্স সোসাইটি বুয়েট সাইবার সিকিউরিটি ক্লাব টিম ইন্টারপ্ল্যানেটার বুয়েট ইনোভেশন এন্ড ডিজাইনিং ক্লাব শিল্প ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বুয়েট ড্রামা সোসাইটি বুয়েট ফিল্ম সোসাইটি মূর্ছনা ওরেগ্যামি ক্লাব আলোকবর্তিকা-বুয়েট বুয়েট সাহিত্য সংসদ চারকোল- আরটিস্টা সোসাইটি কণ্ঠ্যঃ বুয়েট বুয়েট ফটোগ্রাফিক সোসাইটি পরিবেশ সংঠন ইনভাইরনমেন্ট ওয়াচ খেলাধুলা বিষয়ক সংঠন বুয়েট চেজ ক্লাব মানবহিতৈষী সংগঠন বাঁধন-বুয়েট জোন বুয়েট রোভার স্কাউট ক্যারিয়ার ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক সংগঠন বুয়েট ক্যারিয়ার ক্লাব বুয়েট ডিবেটিং ক্লাব বুয়েট এন্টারপ্রিনিউরশিপ ডেভেলপমেন্ট ক্লাব অন্যান্য সংগঠন বুয়েট ব্রেনিয়াক্স বুয়েট সাংবাদিক সমিতি বুয়েট সেলফ ডিফেন্স ক্লাব হাউজ অব ভলান্টিয়ারস- বুয়েট স্থাপত্যসমূহ বুয়েট শহীদ মিনার নিহত সাবেকুন্নাহার সনি স্মরণে ভাস্কর্য নিহত আরিফ রায়হান দীপ স্মরণে স্মৃতিফলক উল্লেখযোগ্য ছাত্র-ছাত্রী অপি করিম (অভিনেত্রী) আইনুন নিশাত আনিসুল হক (কবি, লেখক, নাট্যকার এবং সাংবাদিক) আবুল হায়াত (অভিনেতা) আরশাদ এম চৌধুরী আলম খোরশেদ - বাংলাদেশি কবি, প্রাবন্ধিক, সম্পাদক, অনুবাদক ও যন্ত্র প্রকৌশলী। একরাম হোসেন এম তাহের এ সাইফ জামিলুর রেজা চৌধুরী জিয়াউর রহমান জিয়া (বেস, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরোনামহীন) তারিক দুররানি তৌকীর আহমেদ (অভিনেতা) তানজির তুহিন (ভোকাল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আভাস) ফজলুর রহমান খান মুহাম্মদ আশরাফুল আলম সৈয়দ আবু নসর সাইফুর রহমান (প্রকৌশলী) সায়ীফ সালাহউদ্দিন হাসানুল হক ইনু - রাজনীতিবিদ হাবীবুল্লাহ সিরাজী - সাহিত্যিক চমক হাসান - লেখক ও তরুন ইনফ্লুয়েন্সার মাহমুদুল হাসান সোহাগ - উদ্ভাবক-উদ্যোক্তা এবং বাংলাদেশে প্রথম ইভিএম তৈরীকারক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন - গ্ৰিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য এম শফিউল আজম - সাবেক সহকারী নৌ বাহিনী প্রধান উল্লেখযোগ্য শিক্ষক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ সুযোগ-সুবিধাসমূহ মিলনায়তন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ১০৩৬ আসনের একটি কেন্দ্রীয় মিলনায়তন কমপ্লেক্স রয়েছে। এতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রকসহ আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান। এ কমপ্লেক্সে মিলনায়তন ছাড়াও ১৮৬ আসনের সেমিনার কক্ষ ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ক্যাফেটেরিয়া রয়েছে। এছাড়া পুরকৌশল ভবনের দোতলায় ২০০ আসনবিশিষ্ট আরেকটি সেমিনার কক্ষ আছে। শিক্ষা ও বিনোদনের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য এতে ৩৫ ও ১৬ মি. মি. ফিল্ম প্রোজেক্টর রয়েছে। লাইব্রেরি প্রায় ২০,০০০ বর্গফুট জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয় লাইব্রেরির চারতলা ভবনটি ক্যাম্পাসের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। লাইব্রেরিতে আধুনিক সকল সুবিধা রয়েছে। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে একসাথে প্রায় ২০০ জন ছাত্রের একসাথে পড়ার ব্যবস্থা আছে। বুয়েট লাইব্রেরিতে রেফারেন্স ও জার্নালের একটি বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। রিপোগ্রাফিক বিভাগ নামে একটি বিভাগ রয়েছে যাতে রেফারেন্স বই ফটোকপি করার ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র বুয়েটে স্বাস্থ্য রক্ষার মৌলিক সুবিধাদি সংবলিত একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ( বুয়েট হেলথ কমপ্লেক্স) রয়েছে। রোগ নির্ণয়ে সহায়ক অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম, ই.সি.জি. মেশিন এবং আধুনিক স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি প্যাথলজিক্যাল ল্যাব আছে। ব্যায়ামাগার বুয়েটের শিক্ষার্থীদের নিয়মিত শরীরচর্চা এবং ইনডোর গেম্‌স খেলার সুবিধার্থে বাস্কেটবল কোর্ট সংবলিত একটি সমৃদ্ধ ব্যায়ামাগার রয়েছে। এটি শেরে বাংলা হলের দক্ষিণে পাশে বিশাল জায়গা জুড়ে অবস্থিত। ভার্চুয়াল ক্লাসরুম ই.সি.ই (ECE) ভবন এ ৭০৫ নম্বর রুমটি ভার্চুয়াল ক্লাসরুম হিসেবে ব্যবহার করা যায়। আই.আই.সি.টি এর তত্ত্বাবধানে এই ভার্চুয়াল ক্লাসরুমটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছাত্র এবং শিক্ষকগণ বিভিন্ন দূরবর্তী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগনের সাথে ক্লাস শেয়ার এবং মেধার আদান প্রদান করতে পারেন। ভার্চুয়াল ক্লাসরুমটিতে আধুনিক সকল সুবিধা রয়েছে। এখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে একসাথে প্রায় ১০০ জন যে কোন ভার্চুয়াল সমাবেশ করতে পারবেন। আবাসিক হল সমূহ বুয়েটে নয়টি ছাত্রাবাস রয়েছে। এর মধ্য থেকে আহসান উল্লাহ হল (উত্তর) শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য বরাদ্দ। শহীদ স্মৃতি হল তরুণ শিক্ষক এবং স্নাতকোত্তর ছাত্রদের জন্য বরাদ্দকৃত যাদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক আবাসস্থল নেই। এছাড়াও আধুনিক সুবিধাসম্পন্ন ১২ তলা ছাত্রী হল নির্মাণ প্রায় শেষের দিকে। হলগুলো বিভিন্ন সময়ে তৈরি করা হয়েছে। একারণে বিভিন্ন হল বিভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শন বহন করে। প্রতিটি হলের তত্ত্বাবধানে থাকেন প্রভোস্ট। সাধারণত সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্য থেকে প্রভোস্ট নির্বাচন করা হয়। প্রতিটি হলে তিনজন সহকারী প্রভোস্ট নিযুক্ত আছেন। হলগুলোর বেশিরভাগই জাতীয় বীর ও নেতাদের স্মরণে নামকরণ করা হয়েছে। হলগুলো হল: আরও দেখুন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বুয়েটের প্রাতিষ্ঠানিক ওয়েবসাইট বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের প্রকৌশল শিক্ষা ১৮৭৬-এ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৭৬-এ ব্রিটিশ ভারতে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা জেলার বিশ্ববিদ্যালয়
https://en.wikipedia.org/wiki/Bangladesh_University_of_Engineering_and_Technology
Bangladesh University of Engineering and Technology
Bangladesh University of Engineering and Technology (Bengali: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, romanized: Bānlādēśa prakauśala biśbabidyālaẏa), commonly known by the acronym BUET, is a public technological research university in Dhaka, Bangladesh. Founded in 1876 as the Dacca Survey School and gained university status in 1962, it is the oldest institution for the study of engineering, architecture, and urban planning in Bangladesh. BUET is considered to be the most prestigious university in Bangladesh for science and research. A large number of BUET alumni are active in notable engineering and non-engineering roles in Bangladesh and abroad.
2358
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%B0%20%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B8
অলিভার স্যাক্স
অলিভার উল্ফ স্যাক্স (৯ জুলাই, ১৯৩৩ - ৩০ আগস্ট, ২০১৫) একজন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ৷ তিনি তার রোগীদের উপজীব্য করে প্রচুর জনপ্রিয় বই লিখেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হচ্ছে অ্যাওকেনিংস যার ওপরে নির্মিত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন রবিন উইলিয়ামস ও রবার্ট ডি নিরো। গ্রন্থ তালিকা Migraine (1970) Awakenings (1973) A leg to stand on (1984) The Man Who Mistook His Wife for a Hat (1985) Seeing voices: A journey into the land of the deaf. (1989). Berkeley: University of California Press. . An Anthropologist on Mars (1995) The Island of the Colorblind (1997) Uncle Tungsten: Memories of a Chemical Boyhood (2001) Oaxaca Journal (2002) তথ্যসূত্র ব্রিটিশ স্নায়ুবিজ্ঞানী ১৯৩৩-এ জন্ম ২০১৫-এ মৃত্যু ইংরেজ ইহুদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজ প্রবাসী ২০শ শতাব্দীর নাস্তিক ২১শ শতাব্দীর নাস্তিক আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড লেটার্সের সদস্য কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কমান্ডার অব দি অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার নিউ ইয়র্কে ক্যান্সারে মৃত্যু ইংরেজ নাস্তিক ইহুদি নাস্তিক এলজিবিটি ইহুদি ইংল্যান্ডের এলজিবিটি লেখক সঙ্গীত মনোবিজ্ঞানী লন্ডনের লেখক
https://en.wikipedia.org/wiki/Oliver_Sacks
Oliver Sacks
Oliver Wolf Sacks (9 July 1933 – 30 August 2015) was a British neurologist, naturalist, historian of science, and writer. Born in London, Sacks received his medical degree in 1958 from The Queen's College, Oxford, before moving to the United States, where he spent most of his career. He interned at Mount Zion Hospital in San Francisco and completed his residency in neurology and neuropathology at the University of California, Los Angeles (UCLA). Later, he served as neurologist at Beth Abraham Hospital's chronic-care facility in the Bronx, where he worked with a group of survivors of the 1920s sleeping sickness encephalitis lethargica, who had been unable to move on their own for decades. His treatment of those patients became the basis of his 1973 book Awakenings, which was adapted into an Academy Award-nominated feature film, in 1990, starring Robin Williams and Robert De Niro. His numerous other best-selling books were mostly collections of case studies of people, including himself, with neurological disorders. He also published hundreds of articles (both peer-reviewed scientific articles and articles for a general audience), about neurological disorders, history of science, natural history, and nature. The New York Times called him a "poet laureate of contemporary medicine", and "one of the great clinical writers of the 20th century". Some of his books were adapted for plays by major playwrights, feature films, animated short films, opera, dance, fine art, and musical works in the classical genre. His book The Man Who Mistook His Wife for a Hat, which describes the case histories of some of his patients, became the basis of an opera of the same name.
2371
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%82%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%80%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A6%BE%20%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%AC%E0%A6%B8
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ১৯৭২ হতে প্রতিবছর ২৬ মার্চ তারিখে উদযাপিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে (কাল রাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এক তার বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে এম. এ. হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। পরে ২৭ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান একই কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরবর্তিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং ভারতের অবিস্মরণীয় সমর্থনের ফলস্বরূপ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়। অপারেশন সার্চলাইট অপারেশন সার্চলাইট ১৯৭১ সালে ২৫ মার্চ থেকে শুরু হওয়া পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত পরিকল্পিত গণহত্যা, যার মাধ্যমে তারা ১৯৭১ এর মার্চ ও এর পূর্ববর্তী সময়ে সংঘটিত বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। এই গণহত্যা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি শাষকদের আদেশে পরিচালিত,যা ১৯৭০ এর নভেম্বরে সংঘটিত অপারেশন ব্লিটজ্‌ এর পরবর্তি অনুষঙ্গ। অপারেশনটির আসল উদ্দেশ্য ছিল ২৬ মার্চ এর মধ্যে সব বড় বড় শহর দখল করে নেয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। স্বাধীনতার ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫ মার্চ রাত ১২টার পর (২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। ঘোষণাটি নিম্নরুপ: অনুবাদ: এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগে পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক। ২৬শে মার্চ বেলাল মোহাম্মদ, আবুল কাসেম সহ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রের কয়েক'জন কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ. হান্নান প্রথম শেখ মুজিব এর স্বাধীনতার ঘোষণা পত্রটি মাইকিং করে প্রচার করেন। পরে ২৭ মার্চ তৎকালীন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ঘোষণাপত্রটির ভাষ্য নিম্নরুপ: অনুবাদ: আমি,মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রাদেশিক কমাণ্ডার-ইন-চিফ, শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও আইনসিদ্ধ সরকার গঠন করেছি যা আইন ও সংবিধান অনুযায়ী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সরকার জোট-নিরপেক্ষ নীতি মেনে চলতে বদ্ধপরিকর। এ রাষ্ট্র সকল জাতির সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বিশ্বশান্তির জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে। আমি সকল দেশের সরকারকে তাদের নিজ নিজ দেশে বাংলাদেশের নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার একটি সার্বভৌম ও আইনসম্মত সরকার এবং বিশ্বের সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাবার দাবিদার। ১৯৭১ সালে ২৭ মার্চের এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মাটিতে রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা ঘটে যা নয় মাস স্থায়ী হয়। স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস বেশ বর্ণাঢ্য ভাবে উদ্‌যাপন করা হয়। জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে উদ্‌যাপন শুরু হয়। ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত এবং ব্যক্তিমালিকানাধীন ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। দিবসটি উপলক্ষে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপসমূহ জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন রঙের পতাকা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। জাতীয় স্টেডিয়ামে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের সমাবেশ, কুচকাওয়াজ, ডিসপ্লে ও শরীরচর্চা প্রদর্শন করা হয়। এই দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকে। পত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র বের করে। বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করে। স্বাধীনতার ৫০ বছর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয়। স্বাধীনতা পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদক। ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে এই পদক প্রদান করা হয়। এই পুরস্কার জাতীয় জীবনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন ক্ষেত্রে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের নাগরিক এমন ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে প্রদান করা হয়ে থাকে। আরও দেখুন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশের দিবস স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের ইতিহাস স্বাধীনতা যুদ্ধ বাংলাদেশের সরকারি ছুটির দিন মার্চ উদ্‌যাপন
https://en.wikipedia.org/wiki/Independence_Day_(Bangladesh)
Independence Day (Bangladesh)
The Independence Day of Bangladesh (Bengali: স্বাধীনতা দিবস Shadhinôta Dibôsh) is celebrated on 26 March as a national holiday in Bangladesh. It commemorates the country's declaration of independence from Pakistan in the early hours of March 26, 1971.
2374
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%95%20%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8
তারেক রহমান
তারেক রহমান (জন্ম: ২০ নভেম্বর, ১৯৬৫ ঢাকা, বাংলাদেশ) হচ্ছেন একজন বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তিনি সাধারণত তারেক জিয়া নামে পরিচিত; যার শেষাংশটি এসেছে তাঁর পিতা বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম থেকে। প্রাথমিক জীবন তারেক রহমানের জন্ম ১৯৬৫ সালের ২০ নভেম্বর। তার পিতা জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এবং মাতা বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তারেক শিক্ষা জীবনের শুরুতে বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকাতে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন। এরপর তিনি সেন্ট জোসেফ কলেজ এবং ঢাকা রেসিডেনসিয়াল কলেজে পড়াশোনা করে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ হতে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ হতে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেন। ১৯৮৪ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথমে আইন বিভাগে ও পরে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি স্নাতক শ্রেণির পড়াশোনা শেষ করতে পারেন নি। পরবর্তীতে তিনি পেশা হিসেবে ব্যবসাকে বেছে নিয়ে বস্ত্রশিল্প ও নৌ-যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ করেন। রাজনীতি পিতা জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বগুড়া কমিটির সদস্য হিসেবে যোগদান করে তারেক রহমান তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা করেন। আনুষ্ঠানিক ভাবে সংগঠনে যোগ দেয়ার পূর্বেই তারেক রাজনীতিতে অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তারেক তার মা খালেদা জিয়ার সহচর হিসেবে সারা দেশের নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও তারেক রহমান মা বেগম জিয়ার প্রচারণা কার্যক্রমের পাশাপাশি পৃথক পরিকল্পনায় দেশব্যাপী নির্বাচনী প্রচারণা চালান। মূলত ২০০১ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় তার অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনীতিতে তারেক রহমানের সক্রিয় আগমন ঘটে। ২০০২ সালের পর গণ-সংযোগ ২০০২ সালে তারেক রহমান দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্মপ্রাপ্ত হন। দলের ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে নিয়োগ লাভের পরপরই তারেক রহমান দেশব্যাপী দলের মাঠপর্যায়ের নেতা, কর্মী ও সমর্থকদের সাথে ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেন। মূল সংগঠন সহ সহযোগী সংগঠন যেমন জাতীয়তাবাদী যুব দল, জাতীয়তাবাদী ছাত্র দল, জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ইত্যাদি আয়োজিত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তারেক রহমান কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন ও মাঠপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বক্তব্য ও মতামত গ্রহণ করেন। মূলত এই জনসংযোগ কার্যক্রমের ফলে দলের নেতাকর্মীদের তরুণ অংশটির মাঝে তারেক রহমান শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানমন্ত্রীর সন্তানের পরিচিত থেকে বেরিয়ে এসে দলের একজন দক্ষ সংগঠক ও সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। অভিযোগ ও বিতর্ক রাজনৈতিক দলের উত্থাপিত অভিযোগ ২০০২ সালে ৩৫ বছর বয়সী তারেক রহমানকে দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের একজন নেতা হিসেবে দায়িত্ব দেয়ার ফলে কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এই সিদ্ধান্তকে স্বজনপ্রীতি বলে চিহ্নিত করে এই সিদ্ধান্তের নিন্দা করেন। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যারা ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছিল, দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং কিছু সংবাদপত্রের প্রকাশিত খবরে বিভিন্ন সময় তারেকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারসহ দূর্নীতির অভিযোগ আনে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া সহ তারেক রহমানের কার্যালয় ঢাকার বনানীস্থ হাওয়া ভবনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অভিযোগ প্রচারিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোগ ছিল যে, তারেক রহমানের তত্ত্বাবধানে হাওয়া ভবন সরকারের অদৃশ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করছে এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্যুৎ খাতে দুর্নীতিসহ আরো অনেক অভিযোগ আনা হয়। বর্তমানে ২১শে অগাস্ট তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামীলীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে এবং এই মামলায় এফবিআই এর কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রেভেটি বাংলাদেশে এসে সাক্ষ্য দেন। উইকিলিক্সের তথ্য ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর সাড়াজাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিক্স বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের গোপন তারবার্তা ফাঁস করে। বার্তায় বলা হয় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস বিশ্বাস করে, “গুরুতর রাজনৈতিক দুর্নীতির জন্য দোষী, মার্কিন জাতীয় স্বার্থের উপর একটি বিরূপ প্রভাব ফেলছে।” দুর্নীতির অভিযোগ মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-এফবিআই বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী  বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং তার ঘনিষ্ট বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে  ঘুষ ও মানি লন্ডারিং নিয়ে  তদন্ত করেছে এবং বাংলাদেশের আদালতে তাদের বিরুদ্ধে এসে  সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ প্রতিনিধি। এফবিআইয়ের তদন্তে উঠে এসেছে যে, তারেক ও মামুন তাদের সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে নির্মান কনস্ট্রাকশন লিমিটেড এর পরিচালক এবং চীনের হারবিন ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন এর এদেশীয় এজেন্ট খাদিজা ইসলামের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ মার্কিন ডলার ঘুষ নিয়েছিল। হারবিন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানীর লোকাল এজেন্ট হিসেবে টঙ্গীতে ৮০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের কাজ পাওয়ার  জন্য তারেক ও মামুনকে ওই টাকা দিয়েছিল ঘুষ হিসেবে। এফবিআইয়ের এজেন্ট ডেব্রা লাপ্রিভেট গ্রিফিথ এই বিষয়ে তারেক  ও মামুনের দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত করেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের আদালতের সামনে সাক্ষ্য দেন যে, ব্যবসায়ী খাদিজা ইসলাম সিঙ্গাপুরে মামুনের সিটি ব্যাংকে (তারেকের বন্ধু মামুনের সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার: ১৫৮০৫২-০১৬-০০৮) ওই টাকা জমা দিয়েছিলেন। ওই একই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারেক রহমানের নামে সাপ্লিমেন্টারি গোল্ড ভিসা কার্ড ( যার নাম্বার: ৪৫৬৮-৮১৭০-১০০৬-৪১২২) ইস্যু করা হয়। সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকের কাছ থেকে সাপ্লিমেন্টারি গোল্ড ভিসা কার্ড নিতে তারেক রহমান তার পাসপোর্টের একটি ফটো কপি জমা দিয়েছিল ( তারেক রহমানের পাসপোর্ট নাম্বার: Y ০০৮৫৪৮৩) যেখানে তার পিতার নামের জায়গাতে লেখা ছিল জিয়াউর রহমান এবং মাতার নাম ছিল বেগম খালেদা জিয়া। তারেক রহমান এই কার্ড বিভিন্ন দেশে যেমন; গ্রিস, জার্মানী, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রমোদ ভ্রমণের জন্য ব্যবহার করেছিল এমন তথ্যই উঠে এসেছে এফবিআইয়ের তদন্তে। এভাবে মোয়াজ্জেম হোসাইন এবং মারিনা জামান ঘুষের টাকা মামুনের সিঙ্গাপুরের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দিয়েছিল যে অ্যাকাউন্টে তারেক রহমানের সরাসরি  ছিল। ২১ জুলাই ২০১৬ সালে বাংলাদেশের উচ্চ আদালত তারেক রহমানকে সাত বছরের জেল এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা করেছে মানি লন্ডারিং এর জন্য। দেশের সর্বোচ্চ আদালত শুধু রায়ই দেননি তখন রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছিল যে, এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ ‘ ফিনানশিয়াল ক্রাইম’ ছিল এবং এ ধরনের কাজ দেশের অর্থনৈতিক  উন্নয়নের জন্য বড় ধরনের একটি বাধা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কর্তৃক গ্রেপ্তার রাজনৈতিক দলগুলোর ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কারণে দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১১ জানুয়ারি, ২০০৭ তারিখে নিয়মতান্ত্রিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অপসারণ করে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় যার প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সেনাপ্রধান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (পরে জেনারেল হিসেবে অবসর নেন) মঈন উদ্দিন আহমেদ। ১২ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ নাম্নী একটি মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ মামলা দায়ের করা হয়। ৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে একটি দুর্নীতি মামলার আসামি হিসেবে তারেক রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টনমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আরও ১৩টি দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় ও তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। আটকাবস্থায় শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ গ্রেপ্তারের কিছুদিন পর তারেককে আদালতে হাজির করা হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতির জন্য তার আইনজীবীরা আদালতে অভিযোগ করেন যে জিজ্ঞাসাবাদের সময়ে তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে চিকিৎসকদের একটি দল পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আদালতকে জানায় যে তারেক রহমানের উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ যুক্তিযুক্ত। এই পর্যায়ে আদালত রিমান্ডে নেয়ার আদেশ শিথিল করে তা কমিয়ে ১ দিন ধার্য করেন ও জিজ্ঞাসাবাদকারীদের সাবধানতা অবলম্বনের আদেশ দেন। এরপর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের পরিবর্তে ঢাকার শাহবাগস্থ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২৫ আগস্ট, ২০০৭ তারিখে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তারেক রহমান তার হাসপাতাল কক্ষে পা পিছলে পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ দেখা দেয়, বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। মুক্তিলাভ ২০০৮ এর আগস্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আদালতে গতি লাভ করে। প্রায় আঠারো মাস কারান্তরীণ থাকার পর ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে সবগুলো মামলায় তারেক রহমানের জামিন লাভ করেন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মুক্তি লাভ করেন। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগগুলো এই মুহূর্তে জাতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়ে আছে। কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক সন্দেহ পোষণ করেছেন তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনেকাংশেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য-প্রণোদিত। চিকিৎসা ও বিদেশে অবস্থান ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে বিশেষ কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পুত্র তারেক রহমানকে দেখতে যান। সেদিন রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। বর্তমানে লন্ডনের সাউথ ওয়েলিংটন হসপিটাল ও লন্ডন হসপিটালে তার চিকিৎসা চলছে এবং চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে সপরিবারে বসবাস করছেন। তারেক বিদেশে অবস্থান করায় তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো বর্তমানে অমীমাংসিত অবস্থায় রয়েছে। সিঙ্গাপুরে অর্থপাচার মামলায় দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তার করা আবেদনের প্রেক্ষিতে, ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার একটি আদালত তারেক রহমানকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের পরোয়ানা জারি করে। এর প্রতিবাদে বিএনপি দেশের বিভিন্ন এলাকায় হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। উক্ত কাউন্সিলে তারেক রহমানের একটি ধারণকৃত বক্তব্য উপস্থিত জনসমাবেশের উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়। বক্তব্যটিতে তারেক রহমান জানুয়ারি ২০০৭-এ ক্ষমতায় আসা অগণতান্ত্রিক সরকারের হাতে তার অন্যায় গ্রেপ্তার ও বন্দি অবস্থায় নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তিনি নিশ্চিত করেন যে আপাতদৃষ্টিতে মনে হওয়া বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থার আড়ালে তাকে নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। তারেক রহমান তার শারীরিক অবস্থার বর্ণনা দেন ও জানান তার চিকিৎসা সম্পন্ন হতে আরও সময় প্রয়োজন। এই বক্তব্য প্রচারিত হওয়ার সময় উপস্থিতদের কেউ কেউ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। উক্ত কাউন্সিলে আরও বক্তব্য রেখেছেন ব্রিটিশ সংসদ সদস্য জর্জ গ্যালোওয়ে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রচারমাধ্যম বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ। আরও দেখুন জিয়াউর রহমান খালেদা জিয়া তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ |- ১৯৬৭-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ জাতীয় নেতার সন্তান মজুমদার–জিয়া পরিবার ১৯৬৫-এ জন্ম জিয়াউর রহমান বগুড়া জেলার ব্যক্তি ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিএএফ শাহীন কলেজ ঢাকার প্রাক্তন শিক্ষার্থী
https://en.wikipedia.org/wiki/Tarique_Rahman
Tarique Rahman
Tarique Rahman (Bengali: তারেক রহমান, born 20 November 1965), also known as Tarique Zia (Bengali: তারেক জিয়া), is a Bangladeshi politician and businessman who is the acting chairman of Bangladesh Nationalist Party (BNP) since February 2018. He is the eldest son of former president Ziaur Rahman and former two-time prime minister Khaleda Zia. He is widely seen as a powerful figure in BNP and held several high-profile positions within the party, including the post of senior joint secretary general. Born on 20 November 1965, Tarique was involved in politics from a young age and rose to prominence in BNP during his mother's tenure as prime minister in the early 2000s. In 2008, Tarique went to seek medical care in London after he was brutally tortured in prison. Later on citing concerns for his safety and claiming that he was being persecuted by the authorities he went into self exile. Tarique remains a controversial figure in the country's politics, with many accusing him of corruption and nepotism. He was also notorious for stealing electric poles and selling them for money.
2379
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%9F
সিলেট
সিলেট উত্তর-পূর্ব বাংলাদেশের একটি প্রধান শহর, একই সাথে এই শহরটি সিলেট বিভাগের বিভাগীয় শহর। এটি সিলেট জেলার অন্তর্গত। সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকাই মূলত সিলেট শহর হিসেবে পরিচিত। সিলেট ২০০৯ সালের মার্চ মাসে একটি মেট্রোপলিটন শহরের মর্যাদা লাভ করে। সুরমা নদীর তীরবর্তী এই শহরটি বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এ শহরটি দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। সিলেট অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত। শিল্প, প্রাকৃতিক সম্পদ ও অর্থনৈতিক ভাবে সিলেট দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ধনী জেলা। এ শহরের বিশাল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বসবাস করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। সিলেটের পাথর, বালুর গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এখানকার প্রাকৃতিক গ্যাস সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। শাহ জালাল ও শাহ পরান-এর পবিত্র মাজার শরীফ এ শহরে অবস্থিত। প্রতি বছর বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ লোক মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে আগমন করে। আসে বিপুল সংখ্যক পর্যটক। নামকরণ বাংলা ও আঞ্চলিক সিলটি ভাষায় প্রাচীনকাল থেকেই সিলেটকে শ্রীহট্ট নামে ডেকে আসা হয়েছে। কিন্তু শ্রীহট্ট নামের উৎস নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অস্পষ্টতা। এর সাথে হিন্দু পৌরাণিক আখ্যানের প্রভাব জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী শ্রী শ্রী হাটকেশ্বর হচ্ছে মহাদেব শিবের বহু নামের অন্যতম। তৎকালীন গৌড় (শ্রীহট্ট) রাজাদের কর্তৃক পুজিত শ্রী হাটকেশ্বরই শ্রীহট্ট নামের উৎস বলে অনেকে মনে করেন। আবার হিন্দুদেবী লক্ষ্মীর আরেক নাম শ্রী, বর্তমান সিলেট শহরের অনতিদূরে দেবী মহালক্ষ্মীর একটি সুপ্রসিদ্ধ মন্দির‌ও রয়েছে, যেটি আবার সতীপীঠের মধ্যেও অন্যতম, অত‌এব, শ্রীহট্ট নামটি শ্রী-এর হাট (অর্থাৎ বাজার) থেকেও হতে পারে। আর, সিলেটের নামকরণের বিষয়ে একটি প্রচলিত কিংবদন্তীতুল্য কাহিনী হলো, হযরত শাহজালাল যখন শ্রীহট্টের দিকে আগমন করেন তখন তৎকালীন হিন্দু রাজা গৌড়গোবিন্দ তার আগমন থামাতে শ্রীহট্ট সীমান্তে তার কথিত জাদু ক্ষমতার দ্বারা পাথরের দেয়াল বা পাহাড়ের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন। হযরত শাহজালালও তার অলৌকিক ক্ষমতা দিয়ে ‘শিল হট্’ বলতেই সেই শিল বা পাথরের প্রতিবন্ধক হটে যায় বা অপসারিত হয়। এ থেকেই এই ভূমির অন্য নাম হয়েছে শিল-হট থেকে সিলেট। বরং ব্রিটিশ আমলেই এই সিলেট শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। পুরনো কাগজপত্রে বাংলায় শ্রীহট্ট হিসেবে লেখা হলেও ভারতের সরকারি নথিপত্রে যেমন আসাম গেজেটিয়ারে (Assam District Gazetteers) বা অন্যত্র শ্রীহট্টকে ইংরেজিতেই প্রথম ‘সিলহেট’ (Sylhet) হিসেবে উদ্ধৃত হতে দেখা যায়। তৎকালীন ভারতবর্ষে শাসক হিসেবে আধিপত্যকারী ব্রিটিশদের নিজস্ব ইংরেজি উচ্চারণে অন্য অনেক বাংলা যুক্তশব্দের বিবর্তন প্রক্রিয়ার মতোই ‘শ্রীহট্ট’ শব্দটিও যে ভিন্নমাত্রিক ‘সিলহেট’ শব্দে বিবর্তিত হয়ে বর্তমান ‘সিলেট’-এ রূপান্তরিত হয়েছে, এই ব্যাখ্যাই যুক্তিসঙ্গত মনে হয়। আবার আরেক মত অনুযায়ী, রাজার কনিষ্ঠ মেয়ে শীলা। এবং শীলার জন্মদিন উপলক্ষে প্রতিবছর বড় করে হাট বসতো। সেই হাটে দেশ বিদেশ থেকে প্রচুর জনসমাগম হতো। সেই হাট থেকে শীলার হাট, তা থেকে শীলহাট এবং পরবর্তীতে শ্রীহট্ট। যা থেকে বর্তমান সিলেটের জন্ম। ইতিহাস ইতিহাসবিদেরা বলেন, বহুযুগ ধরে সিলেট একটি বাণিজ্যিক শহর হিসেবে প্রচলিত আছে। ধারণা করা হয়ে থাকে যে, "হরিকেল রাজত্বের" মূল ভূখণ্ড ছিল এই সিলেট। চতুর্দশ শতকের দিকে এই অঞ্চলে ইসলামি প্রভাব দেখা যায় সুফী দার্শনিকদের আগমনের মাধ্যমে। ১৩০৩ সালে কালৈতিহাসিক মুসলিম ধর্মপ্রচারক হযরত শাহ জালাল রহ.-এর আবির্ভাব ঘটে এই সময়ে। তিনি মক্কা থেকে দিল্লি ও ঢাকা হয়ে এই এলাকায় আসেন। তার আধ্যাত্মিক ক্ষমতার প্রভাবে ও তার অনুসারী ৩৬০ জনের মাধ্যমে আরও অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। পরবর্তীতে তা দেশের অন্যত্র ও ছড়িয়ে পড়ে। তার দরগাহ সিলেটের একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়।একসময় তার নামানুসারে এ অঞ্চল জালালাবাদ নামে পরিচিত হয়। হযরত শাহ্ পরান ও শাহ্ কামাল কাহাফানের সান্নিধ্যে এসেও অনেকে বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছিল। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এর শাসনামলে ইন্ডিয়ান লস্করেরা এই এলাকায় তাঁবেদারি শাসন চালাতো। ১৭৭৮ সালে রবার্ট লিন্ডসে কে সিলেটের দায়ভার দেয়া হয়। তবে তখনকার স্থানীয় সিলেটিরা তাকে ভালোভাবে নেয় নি। ১৭৮১ সালে এই এলাকায় একটি বড় ধরনের বন্যা হয়েছিল। এতে অসংখ্য ফসল ও পাখি মারা যায়। স্থানীয়রা এজন্য ব্রিটিশদের দায়ী করে। এই আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহাদী (পীরজাদা নামে পরিচিত)। লিন্ডসের সাথে তখন তাদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় যাতে প্রচুর ভারতীয় তস্কর অংশ নেয়। ফলশ্রুতিতে অনেকেই সিলেট ছেড়ে লন্ডনে চলে যায় ও বসতি গড়ে তোলে। ব্রিটিশ শাসনের সময় আসাম ও সিলেট একত্রিত হয়ে আসামের অংশ ছিল। পরবর্তীতে ভারত ও পাকিস্তান আলাদা দেশ গঠনের সময় আসাম ও সিলেট আলাদা হয়ে যায়। ১৯৭১-এর যুদ্ধে জয়লাভের পর এটি পূর্ব পাকিস্তান তথা বাংলাদেশ-এর ভূখণ্ডে পড়ে। ভূগোল সিলেট বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের সিলেট জেলার সিলেট সদর উপজেলায়, দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। কোপেন জলবায়ু শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী সিলেটে সাধারণত বাংলাদেশ গ্রীষ্মমণ্ডলীয় বর্ষা জলবায়ু (কোপ্পেন এএম) বিরাজমান, যা এর উচ্চতার কারণে আর্দ্র উষ্ণমঞ্চলীয় জলবায়ু (সিডব্লিউএ) এর সাথে সীমাবদ্ধ। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে বর্ষাকাল, যার ফলে প্রায় প্রতিদিন প্রচণ্ড ভারী বৃষ্টিপাত এবং ঝড়বাতাস সহ আবহাওয়া গরম এবং আর্দ্র থাকে, যদিও নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্বল্প শুকনো মৌসুম খুব উষ্ণ এবং আকাশ মোটামুটি পরিষ্কার থাকে। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের ৪,২০০ মিলিমিটার (১৭০ ইঞ্চি) এবং ৮০% বৃষ্টিপাত হয় মে থেকে সেপ্টেম্বর মাসে। জনসংখ্যা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী সিলেট মহানগরের জনসংখ্যা ছিল ৫,৩১,৬৬৩ জন (সিটি কর্পোরেশন এলাকার জনসংখ্যা ছিল ৪,৭৯,৮৩৭ জন), যা জাতীয় মোট জনসংখ্যার ২.২৫%। এর মধ্যে ২,৮৫,৮৯২ জন পুরুষ এবং ২,৪৫,৮২১ জন নারী। নারী ও পুরুষের লিঙ্গ অনুপাত ১০০:১১৬, যেখানে জাতীয় লিঙ্গ অনুপাত হল ১০০.৩ এবং জাতীয় শহুরে লিঙ্গ অনুপাত হল ১০৯.৩। ২০১১ সালে তথ্য অনুযায়ী স্বাক্ষরতার হার ৬৭.৬%, যেখানে জাতীয় শহুরে স্বাক্ষরতার হার ৬৬.৪% এর চেয়ে বেশি। সিলেট শহরে ১০৬,১০৭টি খানা বা পরিবার রয়েছে। শহরের জনংখ্যার ৮৭.৭৭% মুসলমান, ১২.৬৩% হিন্দু, ০.০৯% খ্রিস্টান, ০.০৬% বৌদ্ধ এবং ০.০৭% অন্যান্য ধর্মের অনুসারী। এখানে নাস্তিক বা ধর্মহীনদের কোন পরিসংখ্যানগত তথ্য নেই। সরকার ও রাজনীতি সিলেট মহানগরী সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক শাসিত হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন ২৭টি ওয়ার্ড ও ২৩৬টি মহল্লায় বিভক্ত। সিটি কর্পোরশেন এলাকার আয়তন ২৬·৫০ বর্গ কিলোমিটার। ২০০১ সালের ৯ এপ্রিল সিলেট শহরকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের অধীন করা হয়। সিলেট শহর হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও সিলেটের বিভাগীয় শহর হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সিলেট সিটি কর্পোরেশন মূলত সিলেট শহরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, রাস্তা নির্মাণ, ট্রাফিক পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ, নিবন্ধনসহ আরও অনেক কাজে সংশ্লিষ্ট কাজ সম্পাদন করে। কর্পোরেশনের মেয়র ও ২২ জন কমিশনার পুরো শহরের সব ধরনের উন্নয়নের কাজ করে থাকেন। শিক্ষা শিক্ষাক্ষেত্রে সিলেটের রয়েছে এক সমৃদ্ধ ইতিহাস। এ শহরে সাক্ষরতার হার প্রায় ৬৭.৬%। এখানে রয়েছে শত বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত মুরারিচাঁদ কলেজ। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রদানের জন্য সরকারি বেসরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারি অগ্রগামী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় অন্যতম। উচ্চ মাধ্যমিক এবং অনার্স স্তরের জন্য এখানে রয়েছে সিলেট সরকারি কলেজ, সিলেট সরকারি মহিলা কলেজ, সিলেট বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ , সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা সহ আরও অনেক কলেজ এবং মাদ্রাসা। উচ্চতর শিক্ষার জন্য রয়েছে সিলেট সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, সিলেট, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। যাতায়াত ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে প্রতিদিন সিলেটে যাওয়া আসা করে ৩টা (পারাবত, জয়ন্তিকা, উপবন) ট্রেন। এবং সিলেট থেকে প্রতিদিন যাওয়া আসা করে ১টি (কালনী) ট্রেন। ট্রেনের ভাড়া প্রকারভেদে ২৬৫ টাকা থেকে ২৬০০ টাকা পর্যন্ত। আর সময় লাগবে ৭-৮ ঘণ্টা। এছাড়া বাসেও যাওয়া যাবে। এর মধ্যে শ্যামলি, হানিফ, ইউনিক, এনা, গ্রীন লাইন উল্লেখযোগ্য। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশের তৃতীয় বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। প্রতিদিন ঢাকা- সিলেট রুটে বিমান, ইউ-এস বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনা করে। তাছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেট থেকে প্রতিদিন যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে। ফ্লাই দুবাই প্রতিদিন (দুবাই-সিলেট-দুবাই) রুটে একটি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। টিএসি অ্যাভিয়েশন (TAC Aviation) এই বিমানবন্দর থেকে বিমান চালানো প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এই এয়ারপোর্ট থেকে সেনা প্যারাট্রুপার প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে। খেলাধুলা বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের মতো সিলেটে বিভিন্ন জনপ্রিয় খেলা যেমন ফুটবল, ক্রিকেট, বিলিয়ার্ড, টেবিল টেনিস, অ্যাথলেটিক্স, সকার, দাবা, বাস্কেটবল, হকি, কাবাডি, ভলিবল ইত্যাদি প্রচলিত রয়েছে। বর্তমানে দেশী খেলার চেয়ে ক্রিকেট খেলা অত্যন্ত জনপ্রিয়। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের ফ্র্যাঞ্চাইজি সিলেট সিক্সার্স এখানে অবস্থিত, যা সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামকে (এম এ জি ওসমানী স্টেডিয়াম) তাদের ঘরের মাঠ হিসেবে ব্যবহার করে। এটি ২০০৭ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং এর ধারণ ক্ষমতা ১৮,৫০০। ২০১৪ সালে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামটি নতুন করে সংস্কার করা হয়েছিল বিশেষত ২০১৪ আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচগুলি আয়োজন করার জন্য। এটি শহরের বাইরে সবুজ চা বাগানের কাছাকাছি অবস্থিত। সিলেট বিভাগ ক্রিকেট দল জাতীয় ক্রিকেট লীগে বিজয়ী হতে না পারলেও ২০০১-০২ সেশনে জাতীয় ক্রিকেট লীগ ওয়ানডেতে শিরোপা জিতেছিল। সিলেটের উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটার, যারা বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে খেলেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন রাজিন সালেহ,আবু জাহেদ রাহি, এনামুল হক জুনিয়র, তাপস বৈশ্য, এবং অলোক কাপালি। সিলেটের দাবা খেলোয়াড় রানী হামিদ ১৯৮৫ সালে ফিদে আন্তর্জাতিক মহিলা মাস্টার খেতাব পান। সিলেট জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, সিলেট জেলা স্টেডিয়াম হচ্ছে শহরের দ্বিতীয় প্রধান স্টেডিয়াম। ঘরোয়া টুর্নামেন্ট এই মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। দর্শনীয় স্থানসমূহ সিলেট শহরের অন্যতম দর্শনীয় স্থানসমূহ হলো: হযরত শাহজালালের দরগাহ শাহী ঈদগাহ শাহ পরাণের মাজার গাজী বুরহান উদ্দীনের মাজার ক্বীন ব্রীজ আলী আমজদের ঘড়ি মালনি ছড়া চা বাগান মুরারিচাঁদ কলেজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়াম অব রাজাস টিলাগড় ইকোপার্ক জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ জিতু মিয়ার বাড়ী জাফলং শীমঙ্গল চা বাগান উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হযরত শাহজালাল ইয়ামনি র.-ইসলাম প্রচারক। মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য দেব- বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক। সন্তদাস কাঠিয়াবাবা- হিন্দুধর্মের দার্শনিক ও যোগসাধক হাছন রাজা- মরমি কবি। সৈয়দ মুজতবা আলী - সাহিত্যিক। জেনারেল এম এ জি ওসমানী - মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। গোবিন্দ চন্দ্র দেব - দার্শনিক। শামসুল উলামা আবু নসর ওহীদ- শিক্ষাবিদ ও রাজনীতিবিদ অশোকবিজয় রাহা - কবি। হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী - সাবেক স্পীকার। মাওলানা আতহার আলী - রাজনীতিবিদ। শিতালং শাহ - সুফি কবি। আবদুল মতিন চৌধুরী - পাকিস্তানের কৃষিমন্ত্রী। আলতাফ হোসেইন- প্রখ্যাত সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ। আবুল মাল আবদুল মুহিত - রাজনীতিবিদ। যতীন্দ্রমোহন ভট্টাচার্য - সাহিত্য গবেষক। ভূদেব চৌধুরী- সাহিত্যিক। রিয়ার এডমিরাল এম এ খান- সাবেক উপপ্রধান সামরিক আইন প্রশাসক, নৌবাহিনী প্রধান, কৃষিমন্ত্রী ও যোগাযোগ মন্ত্রী সুন্দরীমোহন দাস- ব্রিটিশ বিরোধী রাজনীতিবিদ ও চিকিৎসক আল্লামা মুশাহিদ বাইয়মপুরী- ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক ও রাজনীতিবিদ। আল্লামা ফুলতলী র. - প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তাবিদ এবং ক্বিরাত ও হাদীসশাস্ত্রের যুগবিখ্যাত পণ্ডিত মাওলানা উবায়দুল হক - জাতীয় মসজিদের সাবেক খতিব আল্লামা নূর উদ্দিন গহরপুরী - বিখ্যাত মুসলিম সাধক ডক্টর জামিলুর রেজা চৌধুরী - বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও শিক্ষাবিদ। দিলওয়ার - গণমানুষের কবি। নুরুল ইসলাম নাহিদ - সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। ব্রিগেডিয়ার (অব.) ডাঃ এম এ মালিক- জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন - জাতীয় অধ্যাপক রুনা লায়লা- কণ্ঠশিল্পী। সালমান শাহ - চিত্রাভিনেতা হেনা দাস- ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী। রাণী হামিদ - বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নারী দাবাড়ু। মুহাম্মদ নুরুল হক - সাহিত্যসেবক। মাহমুদুল আমিন চৌধুরী - সাবেক প্রধান বিচারপতি। ইসমাঈল আলম- উর্দু ভাষার কবি। সাইফুর রহমান, সাবেক অর্থমন্ত্রী রুশনারা আলী, ব্রিটিশ রাজনৈতিক ব্যক্তি একলিমুর রাজা কাব্যবিশারদ- কবি কমরেড অজয় ভট্টাচার্য - নানকার কৃষক বিদ্রোহের নেতা। এ কে আব্দুল মোমেন, বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী। অলোক কাপালি, বাংলাদেশি ক্রিকেটার। গ্যালারি আরও দেখুন সিলেট বিভাগ সিলেট জেলা বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমূহ সিলেট সিটি কর্পোরেশন সিলেটি নাগরী সিলেটি ভাষা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশের শহর সিলেট বঙ্গের প্রাচীন রাজ্য সিলেট জেলা সিলেট জেলার জনবহুল স্থান ভারতের প্রাক্তন রাজধানী শহর
https://en.wikipedia.org/wiki/Sylhet
Sylhet
Sylhet (Bengali: সিলেট; IPA: [sileʈ]), is a metropolitan city located in the northeastern region of Bangladesh. It is the administrative center of Sylhet Division and is situated on the banks of the Surma River. Sylhet is the fifth-largest city in Bangladesh, with a population of around 700,000 people. Sylhet is known for its tea plantations and natural beauty. The city has a history dating back to the 14th century and has been ruled by various dynasties and empires, including the Mughals, British, and the Nawabs of Bengal. The city is also home to several important landmarks, such as the Shah Jalal Dargah, which is one of the holiest sites in Bangladesh and attracts thousands of pilgrims every year. Sylhet is one of the most economically important cities in Bangladesh after Dhaka and Chittagong. Sylhet is a major commercial and financial center, and it is home to several multinational companies and industries, including the tea industry, which generates a significant amount of revenue for the city. The city has a diverse population, with Bengalis, Tripuris, and other ethnic groups living together. The official language of Sylhet is Standard Bengali, while Sylheti is the most spoken. English is widely spoken and understood because people from Sylhet form a significant portion of the Bangladeshi diaspora, particularly in the United Kingdom and the United States. According to The Daily Star, about 95% of Bangladeshi population in the UK comes from the Sylhet district. Sylhet has diverse transport infrastructure, with a modern airport, railway station, and bus terminals that connect it to other parts of the country. The city also has several educational institutions, including Sylhet Agricultural University, Shahjalal University of Science and Technology, and Sylhet Cadet College.
2380
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AE%E0%A7%8B%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A6%A6%20%E0%A6%86%E0%A6%B6%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AB%E0%A7%81%E0%A6%B2
মোহাম্মদ আশরাফুল
মোহাম্মদ আশরাফুল (জন্ম ৭ জুলাই ১৯৮৪) বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক ব্যাটসম্যান এবং অধিনায়ক। তিনি টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে সেঞ্চুরি করার রেকর্ডের অধিকারী। তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে শ্রীলঙ্কারই মাটিতে। ব্যাটিংয়ে দক্ষতা ছাড়াও তিনি মাঝে মাঝে ডানহাতে লেগ স্পিন বল করে থাকেন। ক্যারিয়ার টেস্ট ক্রিকেট আশরাফুল বিশ্বের কনিষ্ঠতম খেলোয়াড় হিসেবে টেস্ট শতক করার রেকর্ডের অধিকারী। নিজের ১৭তম জন্মদিনের একদিন পূর্বে ২০০১ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত এশিয়ান টেস্ট চ্যাম্পিয়নশীপে তিনি তার অভিষেক টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১১৪ রান করে এই কৃতিত্ব অর্জন করেন। কিন্তু ঐ খেলায় বাংলাদেশ দল ইনিংস ও ১৩৭ রানের ব্যবধানে পরাজিত হয়। তার জন্মতারিখ নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তার সূত্রপাত হয়েছিল - অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যা জুলাই ৭ বলা হচ্ছে, কিন্তু তার পাসপোর্টে জন্মতারিখ রয়েছে সেপ্টেম্বর ৯ হিসেবে। অবশ্য উভয় তারিখ হিসেব করলেও তিনি তার রেকর্ড ধরে রাখতে পারবেন (পূর্ববর্তী রেকর্ড ছিল পাকিস্তানের মুস্তাক মোহাম্মদের, যিনি ১৯৬০-০১ মৌসুমে ১৭ বছর ৮২ দিন বয়সে এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন)। এই ধরনের শুরুর পর আশরাফুলের কাছে প্রত্যাশার চাপ অনেক বৃদ্ধি পায়। তবে টানা কয়েক ম্যাচ খারাপ ফর্ম এবং বাজে বলে আউট হওয়ার স্বভাবের কারণে তিনি জাতীয় দল থেকে ছিটকে পড়েন। ২০০৪ সালে জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের পর ভারতের বিরুদ্ধে ১৫৮* রান করেন, যা ঐ সময়কালে তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় শতক এবং কোন বাংলাদেশী ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ টেস্ট রান। ২০০৬ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি ১৩৬ রান করেন। টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে তার অভিষেক হয় ২০০৭ এ, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। অধিনায়কের ভূমিকায় শুরুটা তার ভালো ছিল না। প্রথম টেস্টের দু' ইনিংসে তিনি যথাক্রমে ৭ ও ৩৭ রান করেন এবং দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে প্যাভিলিয়নে ফেরত যান। অবশ্য দ্বিতীয় ইনিংসেই তিনি ১২৯ রানে অপরাজিত থেকে প্রথম বাংলাদেশী ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্টে ৪টি সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে আশরাফুল বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার (প্রথম হাবিবুল বাশার)। ২০০৭-০৮ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে একটি টেস্টে আশরাফুল খুবই ব্যতিক্রমী উপায়ে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে আউট করেন। বোলারের হাত থেকে ছুটে যাওয়া বল দু'বার বাউন্স খায় এবং ব্যাটসম্যান বলটিকে সজোরে হিট না করে বোলারের হাতে তুলে দেন। আশরাফুল বলটিকে লুফে নেন। ফলশ্রুতিতে আম্পায়ার স্টিভ বাকনার ব্যাটসম্যানকে আউট ঘোষণা করেন। আউটটি 'ক্রিকেটের আইনের' ২৪ নম্বর, অনুচ্ছেদ নম্বর ৬ অনুযায়ী সিদ্ধ ছিল। এ আইনানুসারে 'নো বল' হতে হলে বলটিকে ২ বারের বেশি ড্রপ খেতে হবে কিংবা গড়িয়ে যেতে হবে। একদিনের আন্তর্জাতিক আশরাফুলের ওয়ানডে অভিষেক হয় জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে, ১১ই এপ্রিল, ২০০১। ম্যাচটিতে তিনি মাত্র ৯ রান করেন, বাংলাদেশ হারে ৩৬ রানে। নিজের প্রথম বিশ্বকাপেও তার পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। পুরো টুর্নামেন্টে তিনি মাত্র ১৪.২০ গড়ে মাত্র ৭১ রান করেন। বাংলাদেশ বিদায় নেয় গ্রুপ পর্ব থেকেই। ক্যারিয়ারের শুরুটা ভালো না হলেও আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশের কিছু বিখ্যাত জয়ে আশরাফুলের অনেক অবদান রয়েছে। ২০০৫ সালের ১৮ জুন তারিখে ইংল্যান্ডের কার্ডিফে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে তৎকালীন বিশ্বের একনম্বর ক্রিকেট পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্মরণীয় জয়ে আশরাফুল ১০০ রান করেন। এটি তার একমাত্র শতক, এবং সেট খেলাটি বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে স্মরণীয় ম্যাচ। ২০০৭ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে তৎকালীন একনম্বর ক্রিকেট দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আশরাফুল ৮৩ বলে ৮৭ রান করেন, যা বাংলাদেশকে আরেকটি স্মরণীয় বিজয় উপহার দেয়। এতে তিনি ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কারে ভূষিত হন। ২৪ গড়ে ২১৬ রান করে আশরাফুল ঐ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান স্কোরার হন। বিশ্বকাপের পর তিনি শাহরিয়ার নাফিসের স্থলে দলের সহ-অধিনায়ক নির্বাচিত হন। ভারতের বিপক্ষে টেস্ট ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সিরিজের পর তাকে টেস্ট ও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলের অধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম অধিনায়ক। ২০০৭ এর সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা টি-২০ বিশ্বকাপের আয়োজন করে। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ই বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট ছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত পুরো সিরিজে এটাই বাংলাদেশের একমাত্র জয় হয়ে দাঁড়ায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে আশরাফুল মাত্র ২০ বলে অর্ধ-শতক করে রেকর্ড করেন। ছ'দিন পরেই অবশ্য যুবরাজ সিং ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ১২ বলে অর্ধ-শতক করে রেকর্ডটি ভেঙ্গে দেন। ঘরোয়া ক্রিকেট ঘরোয়া লীগে আশরাফুল ঢাকা বিভাগীয় দলের অধিনায়ক হিসেবে অনিয়মিতভাবে খেলে থাকেন। ২০০৬ এর নভেম্বরে তিনি চট্টগ্রাম বিভাগীয় দলের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে ২৬৩ রানের একটি রেকর্ড ইনিংস খেলেন। সতীর্থ রকিবুল হাসান অবশ্য রেকর্ডটি পরে ভেঙ্গে ফেলেন। আশরাফুল প্রিমিয়ার ডিভিশন লীগে 'সোনারগাঁও ক্রিকেটার্স'-কে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তিনি যখন অধিনায়কের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন, তখন দলটি লীগ টেবিলের একেবারে নিচের দিকে ছিল। তার নেতৃত্বে দলটি টেবিলের দ্বিতীয় দল হিসেবে মৌসুম শেষ করে। আশরাফুল 'রেইনহিল সিসি'র হয়েও ইংল্যান্ডের একটি ঘরোয়া লীগে খেলেন। ২০২০-এর নভেম্বরে, ২০২০-২১ বঙ্গবন্ধু টি২০ কাপ প্রতিযোগিতা শুরুর পূর্বে ১২ নভেম্বর অনুষ্ঠিত খেলোয়াড় নিলামে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী তাকে কিনে নেয়। বিতর্ক ২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএলে) ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠার পর আশরাফুল এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন এবং জাতির কাছে ক্ষমা চান। পরে আশরাফুলকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ Cricinfo Profile Mohammad Ashraful's Profile on BanglaCricket Ashraful's battle to make his mark by S.Rajesh বাংলাদেশী ক্রিকেটার ১৯৮৪-এ জন্ম জীবিত ব্যক্তি বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটার বাংলাদেশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ২০০৩ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপের ক্রিকেটার বাংলাদেশের টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ২১শ শতাব্দীর বাংলাদেশী ক্রিকেটার ঢাকা বিভাগের ক্রিকেটার বাংলাদেশী মুসলিম এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের প্রতিযোগী ২০১০ এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটার এশিয়ান গেমসে স্বর্ণপদক বিজয়ী বাংলাদেশী এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে পদক বিজয়ী এসিসি এশীয় একাদশের একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ক্রিকেটার ঢাকা ডমিনেটর্সের ক্রিকেটার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ক্রীড়াবিদ ঢাকার ক্রিকেটার রুহুনা রয়্যালসের ক্রিকেটার বাংলাদেশ মধ্যাঞ্চলের ক্রিকেটার ২০১০ এশিয়ান গেমসের পদক বিজয়ী কলাবাগান ক্রীড়া চক্রের ক্রিকেটার দুর্নীতির অভিযোগে নিষিদ্ধঘোষিত ক্রিকেটার চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ক্রিকেটার
https://en.wikipedia.org/wiki/Mohammad_Ashraful
Mohammad Ashraful
Mohammad Ashraful (Bengali: মোহাম্মদ আশরাফুল; born 7 July 1984) is a Bangladeshi cricketer, who has represented the Bangladesh men's national team. Between 2007 and 2009, Ashraful captained his country in 13 Tests, and 38 One Day Internationals (ODIs) of which Bangladesh won eight. Ashraful has scored the fastest fifty in Test and ODI for any Bangladeshi cricketer. Ashraful also played domestic cricket for the Dhaka Division cricket team in Bangladesh's domestic one-day and first-class competitions, captaining both sides on occasion. In 2014 the Bangladesh Cricket Board banned him for eight years after he was found guilty of match fixing. The ban was later reduced to 5 years with 2 years suspended. At the end of the suspension, Ashraful returned to playing domestic cricket.
2386
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B2%20%E0%A6%AB%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E2%80%8C%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%20%E0%A6%97%E0%A6%BE%E0%A6%89%E0%A6%B8
কার্ল ফ্রিড‌রিশ গাউস
ইয়োহান কার্ল ফ্রিডরিশ গাউস (: ইয়োহান্‌ কাল্‌ ফ্রিড্‌রিশ্‌ গাউস্‌; জার্মান ভাষায়: Johann Carl Friedrich Gauß) (৩০শে এপ্রিল, ১৭৭৭ - ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৫) একজন প্রতিভাবান জার্মান গণিতবিদ এবং বিজ্ঞানী। গণিত ও বিজ্ঞানের প্রায় সকল বিভাগে তার অবদান আছে। তাকে "গণিতের যুবরাজ" ও "সর্বকালের সেরা গণিতবিদ" বলা হয়। গণিতের যে সব বিষয়ে তার অবদান আছে সেগুলোর মধ্যে আছে সংখ্যা তত্ত্ব, গাণিতিক বিশ্লেষণ, অন্তরক জ্যামিতি, চুম্বকের ধর্ম, আলোকবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান ইত্যাদি। গণিত এবং বিজ্ঞানের বহু শাখায় তার প্রশংসাযোগ্য প্রভাব ছিল, যে কারণে তাকে ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী গণিতবিদদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। গাউস ছোটবেলা থেকেই অসম্ভব প্রতিভাবান ছিলেন । ছোটবেলার তার গাণিতিক প্রতিভা নিয়ে অনেক গল্প শোনা যায়। তিনি কৈশোরেই তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক আবিষ্কারগুলো সম্পাদন করেন। ১৭৯৮ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি তার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কাজ ডিসকিশিয়নেস অ্যারিথমেটিকা লেখা সমাপ্ত করেন, যা ১৮০১ সালে প্রকাশিত হয়। তার এই কাজ গণিতের একটি পৃথক শাখা হিসেবে সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তি স্থাপন করে এবং আজও এর প্রভাব অপরিসীম। শৈশব ও কৈশোর (১৭৭৭–১৭৯৮) কার্ল ফ্রিড‌রিশ গাউস ১৭৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান নিম্ন জাখসেন অঞ্চলের অন্তর্গত ব্রাউনশ্ভা‌ইগ শহরে। তার পিতামাতা ছিলেন নিতান্তই খেটে-খাওয়া শ্রেণীর। শৈশবেই তিনি তার গাণিতিক প্রতিভার পরিচয় দিতে শুরু করেন। তার অসাধারণ প্রতিভা সম্বন্ধে বেশ কিছু গল্প প্রচলিত আছে। কথিত আছে মাত্র তিন বছর বয়সে তিনি তার বাবার হিসাবের খাতার ভুল ধরে দেন মনে মনে গণনা করে। তার সম্বন্ধে আরেকটি বহুল প্রচলিত গল্প হচ্ছে- একবার তার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক দুষ্টু ছাত্রদের ব্যস্ত রাখবার জন্যে ১ থেকে ১০০ পর্যন্ত সংখ্যাগুলো যোগ করতে বলেন। গাউস তার শিক্ষককে অবাক করে দিয়ে মুহুর্তের মধ্যেই সঠিক উত্তরটি বের করে ফেলেন। গাউসের যোগ করার পদ্ধতিটি ছিল অত্যন্ত সহজ - তিনি লক্ষ্য করেন ধারাটির দুই বিপরীত দিক থেকে পদ নিয়ে জোড়া তৈরি করতে থাকলে তাদের যোগফল সমান থাকে 1 + 100 = 101, 2 + 99 = 101, 3 + 98 = 101, এবং এভাবে সম্পূর্ণ যোগফলটি দাঁড়ায় 50 × 101 = 5050। তবে এই গল্পটির বিস্তারিত বিবরণ কিছুটা অনুমান করা বলেই মনে করা হয়; কিছু লেখক, যেমন জোসেফ রটম্যান তার বই এ ফার্স্ট কোর্স ইন এলজেবরাতে ঘটনাটি আদৌ ঘটেছিল কিনা তা নিয়েই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। গাউসের বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতা ব্রাউনশ্ভা‌ইগের ডিউকের নজর কাড়ে, যিনি তাকে কলোজিয়াম কারোলিনামে (বর্তমান টেকনিশে উইনিভার্সিটেট ব্রাউনশ্ভা‌ইগ)-এ পড়ালেখা করবার সুযোগ করে দেন। তিনি ১৭৯২ থেকে ১৭৯৫ পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করেন এবং তারপর গোটিঙেন গেয়র্গ-আউগুস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭৯৫ থেকে ১৭৯৮ পর্যন্ত পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় গাউস বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপপাদ্য নতুন করে আবিষ্কার করেন এবং ১৭৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য অর্জন করেন; তিনি প্রমাণ করতে সক্ষম হন যে যেসব সুষম বহুভুজের সংখ্যা ফের্মা মৌলিক সংখ্যা (এবং, সেই সাথে যেসব বহুভুজের বাহুর সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন ফের্মা মৌলিক সংখ্যা ও ২ এর ঘাতের গুণফল) তাদের কম্পাস ও দাগ-না-কাটা রুলার ব্যবহার করে আঁকা সম্ভব। এ আবিষ্কারটি গণিতের ক্ষেত্রে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল; অঙ্কণের সমস্যা গণিতবিদদের প্রাচীন গ্রিক আমল থেকেই ভাবিয়ে আসছিল, এবং এই আবিষ্কারই গাউসকে ভাষাবিজ্ঞানের পরিবর্তে গণিতকে পেশা হিসেবে বেছে নিতে অনুপ্রাণিত করে। গাউস তার এই উদ্ভাবন নিয়ে অত্যন্ত গর্ববোধ করতেন এবং তার ইচ্ছে ছিল তার স্মৃতিফলকে একটি সুষম সপ্তদশভুজ (heptadecagon) খোদাই করা থাকবে। তবে কারিগররা এতে অপারগতা প্রকাশ করে, কারণ সপ্তদশভুজ খোদাই করা বেশ কঠিন ব্যাপার ছিল, এবং এই শ্রমসাধ্য সপ্তদশভুজকে ভালোভাবে লক্ষ্য না করলে বৃত্তের সাথে পার্থক্য করা যেত না। ১৭৯৬ সালটি ছিল গাউস এবং সংখ্যাতত্ত্ব উভয়ের জন্যেই অন্যতম সফল একটি বছর। মার্চের ৩০ তারিখ তিনি সপ্তদশভুজ অঙ্কনের একটি কৌশল উদ্ভাবন করেন। তিনি মডিউলভিত্তিক পাটীগণিত আবিষ্কার করেন, যা সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব-নিকাশ বহুগুণ সহজতর করে। তিনি 8 এপ্রিল দ্বিঘাত অন্যোন্যতা (quadratic reciprocity) নিয়মটি প্রমাণ করেন। এই অসাধারণ সাধারণ সূত্রের মাধ্যমে কোন দ্বিঘাত সমীকরণ মডুলার পাটীগণিতের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব কি না, তা নির্ধারণ করা যায়। ৩১শে মে তারিখে তিনি মৌলিক সংখ্যা উপপাদ্যটি অনুমান করেন, যা মৌলিক সংখ্যার বণ্টন সম্বন্ধে ধারণা প্রদান করে। গাউস আরও আবিষ্কার করেন যে সকল ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে সর্বোচ্চ তিনটি ত্রিভুজীয় সংখ্যা (triangular number) যোগফল হিসেবে প্রকাশ করা যেতে পারে; এই উদ্ভাবনের তারিখটি ছিল ১০ জুলাই এবং এ সম্বন্ধে তার ডায়েরিতে লেখা ছিল সেই বিখ্যাত শব্দগুচ্ছ, "ইউরেকা! num = Δ + Δ + Δ." অক্টোবর 1 তারিখে তিনি সসীম ক্ষেত্র (finite field) সহগবিশিষ্ট বহুপদীর সমাধান সংখ্যার ওপর একটি নিবন্ধ প্রকাশ করেন, যা ১৫০ বছর পর ভেইল অনুমিতির জন্ম দেয়। মধ্যজীবন (১৭৯৯–১৮৩০) ১৭৯৯ সালে তার ডক্টরেট অভিসন্দর্ভ সকল একক-চলকবিশিষ্ট সমাকলক মূলদ বীজগাণিতিক ফাংশনকে প্রথম বা দ্বিতীয় ঘাতের বাস্তব উৎপাদকের গুণফল আকারে প্রকাশ করার তত্ত্বের একটি নতুন প্রমাণ-এ গাউস বীজগণিতের মৌলিক তত্ত্বটি (fundamental theorem of algebra) প্রমাণ করেন, যা হল জটিল সংখ্যায় সকল অ-ধ্রুবক একক-চলকধারী বহুপদীর কমপক্ষে একটি মূল আছে। তার পূর্বে কিছু গণিতবিদ এ তত্ত্বটির ভুল প্রমাণ দিয়েছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন জঁ ল্য রোঁ দালঁবের (Jean le Rond d'Alembert)। তবে শ্লেষের ব্যাপার হল এই যে বর্তমান মানদন্ডে গাউসের প্রমাণটিও পুরোপুরি সঠিক নয়, কারণ তিনি জর্ডানের বক্রতা তত্ত্বের (Jordan curve theorem) পরোক্ষ ব্যবহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে তিনি এ তত্ত্বের তিনটি প্রমাণ উপস্থাপন করেন, যার শেষটি ছিল সাধারণভাবে কড়াকড়ি প্রমাণ। তার প্রচেষ্টা পাশাপাশি জটিল সংখ্যার ধারণাও স্পষ্টতর করে। গাউস সংখ্যাতত্ত্বেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। ১৮০১ সালে প্রকাশিত বই ডিসকিশিয়নেস এরিথমেটিকা (ল্যাটিন, পাটীগণিতে অনুসন্ধান) এ তিনি কনগ্রুয়েন্স বা অনুসমতার জন্যে একটি নতুন চিহ্নের &equiv ব্যবহার প্রচলন করেন এবং এর মাধ্যমে ভাগশেষ পাটীগণিতের পরিষ্কার উপস্থাপনা করেন, দ্বিঘাত অন্যোন্যতা তত্ত্বের প্রথম দুইটি প্রমাণ লিপিবদ্ধ করেন, দ্বিমিক (binary) ও ত্রিমিক (ternary) দ্বিঘাত রূপের তত্ত্ব বর্ণনা করেন, তাদের জন্যে শ্রেণী সংখ্যা সমস্যা (class number problem) উদ্ধৃত করেন, এবং দেখান যে সুষম সপ্তদশভুজ কম্পাস ও দাগ-না-কাটা রুলার দিয়ে অঙ্কণ (Compass and straightedge constructions) করা সম্ভব। একই বছর ইতালীয় জ্যোতির্বিজ্ঞানী জুসেপ্পে পিয়াৎজি (Giuseppe Piazzi) বামন গ্রহ সেরেস (Ceres) আবিষ্কার করেন, কিন্তু তিনি মাত্র কয়েকদিন গ্রহটি পর্যবেক্ষণ করতে সমর্থ হন। গাউস গ্রহটির অবস্থান সঠিকভাবে হিসাব করে পুনরায় একে খুঁজে পাওয়ার পথ বাতলে দেন, এবং ১৮০১ সালের ৩১শে ডিসেম্বর ফ্রাঞ্জ জাভের ফন জাখ (Franz Xaver von Zach) গোথায় গ্রহটি পুনরাবিষ্কার করেন এবং তার এক দিন পর হাইনরিশ অলবের্স-ও (Heinrich Wilhelm Matthäus Olbers) ব্রেমেনে বসে গ্রহটি খুঁজে পেতে সমর্থ হন। জাখ মন্তব্য করেন, "ডক্টর গাউসের বুদ্ধিদীপ্ত গণনা ছাড়া আমরা হয়তো গ্রহটি আর খুঁজে পেতাম না।" যদিও তখন পর্যন্ত গাউস ডিউকের কাছ থেকে বৃত্তি পাচ্ছিলেন, তিনি এই ব্যবস্থার নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত ছিলেন, তাছাড়া তিনি মনে করতেন বিশুদ্ধ গণিত অর্থনৈতিক সহায়তা লাভ করার মত যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ নয়। তিনি জ্যোতির্বিজ্ঞানী হিসেবে চাকরি খঁজতে শুরু করেন এবং ১৮০৭ সালে গোটিঙেনের জ্যোতির্বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জ্যোতির্বিজ্ঞান অধ্যাপক ও পরিচালক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তিনি এ চাকরিতে বহাল ছিলেন। ১৮০১ সালের ১লা জানুয়ারি পিয়াৎজির সেরেস আবিষ্কার গাউসকে বৃহৎ গ্রহ দ্বারা বাঁধাগ্রস্ত উপগ্রহের গতি নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে, যা ১৮০৯ সালে Theoria motus corporum coelestium in sectionibus conicis solem ambientum ("সূর্যের চারপাশে মহাকাশের বস্তুসমূহের কোণক আকৃতির গতি সম্পর্কিত তত্ত্ব") নামে প্রকাশিত হয়। পিয়াৎজি সেরেসকে কেবলমাত্র কয়েক মাসের জন্য পর্যবেক্ষণ করতে সমর্থ হন, তার সেরেসের পর্যবেক্ষণ রাতের আকাশে তিন ডিগ্রি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল। এরপর গ্রহটি সূর্যের আড়ালে ক্ষণস্থায়ীভাবে ঢাকা পড়ে যায়। কয়েকমাস পরে সেরেসকে যখন পুনরায় দেখতে পাবার কথা, তখন পিয়াৎজি তা খুঁজে পেতে ব্যর্থ হন: সে সময়কার গাণিতিক উৎকর্ষ কেবলমাত্র তিন ডিগ্রি কক্ষপথের হিসাব থেকে প্রকৃত কক্ষপথ হিসাব করবার মতো যথেষ্ট দক্ষ ছিল না— তিন ডিগ্রি প্রকৃত কক্ষপথের ১% এরও কম অংশ। ২৩ বছর বয়সে গাউস এ সমস্যার সাথে পরিচিত হন এবং তা নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন। তিন মাসের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তিনি ডিসেম্বর ১৮০১ সালের জন্যে সেরেসের কক্ষপথ ভবিষদ্বাণী করেন— এবং তা এক ডিগ্রির অর্ধেকেরও কম ত্রুটিসহ সঠিক প্রমাণিত হয়। স্বর্গীয় বস্তুসমূহের গতি আজও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গণনায় মাইলফলক হিসাবে বিবেচিত। এ তত্ত্বে তিনি গাউসীয় মহাকর্ষ ধ্রুবক ধারণাটির জন্ম দেন এবং সর্বনিম্ন বর্গ পদ্ধতি ব্যবহার করেন, যা কিনা আজও বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় ত্রুটি সর্বনিম্নকরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। গাউস ১৮০৯ সালে এ তত্ত্বটি স্বাভাবিকভাবে বন্টিত ত্রুটির জন্যে প্রমাণ করতে সমর্থ হন। গাউস অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতির (non-Euclidean geometry) সম্ভাবনার কথাও আবিষ্কার করেছিলেন বলে দাবি করেন, কিন্তু এ সম্পর্কে তার কোন কাজ তিনি প্রকাশ করেন নি। এ আবিষ্কারটি ছিল গণিতের জগতে একটি যুগান্তকারী পরিবর্তনের সূচনা, কেবলমাত্র ইউক্লিডের স্বতঃসিদ্ধের মাধ্যমেই যুক্তিযুক্ত ও অসঙ্গতিবিহীন জ্যামিতি তৈরি করা যায় - এ ভ্রান্ত ধারণা থেকে গণিতবিদদের মুক্ত করে। এ ধরনের জ্যামিতির ওপর গবেষণার মাধ্যমে অনেক নতুন আবিষ্কার হয়, যার মধ্যে অন্যতম হল আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব, যা মহাবিশ্বকে অ-ইউক্লিডীয় হিসেবে ব্যাখ্যা করে। গাউসের বন্ধু ফারকাস উলফগ্যাং বোলাই যার সাথে তিনি ছাত্রাবস্থায় ভ্রাতৃত্ব ও সত্যের পতাকার শপথ নিয়েছিলেন, তিনি বহু বছর ধরে ইউক্লিডের অন্যান্য উপপাদ্য ব্যবহার করে সমান্তরাল স্বীকার্যটি প্রমাণ করার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। বোলাইয়ের পুত্র জেনোস বোলাই ১৮২৯ সালে অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আবিষ্কার করেন; তার কাজ ১৮৩২ সালে প্রকাশিত হয়। তা দেখার পর গাউস ফারকাস বোলাইকে লেখেন: "এর প্রশংসা করা আমার জন্যেও গৌরবের। কারণ কাজটির প্রায় সম্পূর্ণ অংশই.... আমার এ সংক্রান্ত গত তিরিশ বা পয়ত্রিশ বছরের চিন্তা-ভাবনার সাথে মিলে যায়।" এ প্রমাণহীন বাক্যটি গাউসের সাথে জেনাস বোলাইয়ের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি করেন (যিনি ভেবেছিলেন গাউস তার আইডিয়া চুরি করছেন)। ১৮২৯ এর আগে লেখা গাউসের পত্র থেকে জানা যায় তিনি সমান্তরাল স্বীকার্য নিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করছিলেন। গাউসের পুরনো ছাত্র ওয়ালডো ডানিংটন জানান গাউসের মতো প্রতিভাবান বিজ্ঞানীর অ-ইউক্লিডীয় জ্যামিতি আবিষ্কারের সকল যোগ্যতাই ছিল, তবে তিনি এ সংক্রান্ত কোন কাজ প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন, কারণ তিনি ভেবেছিলেন তা বিতর্কের সৃষ্টি করবে। হ্যানোভারে সংঘটিত জরিপ অন্তরক জ্যামিতির প্রতি গাউসের আগ্রহ বাড়িয়ে তোলে, গণিতের যে ক্ষেত্রে বক্ররেখা এবং তল নিয়ে কাজ করা হয়। অন্যান্য অনেক কিছুর মতো তিনি গাউসীয় বক্রতার ধারণার জন্ম দেন। এ ধারণাই ১৮২৮ সালে Theorema Egregium (ল্যাটিনে অবিস্মরণীয় তত্ত্ব) এর আবিষ্কারের পথ প্রশস্ত করে, যা বক্রতার ধারণার একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠা করে। সহজ কথায় বলতে গেলে তত্ত্বটির মূল কথা হল কোন তলের বক্রতা তলটির ওপরে কোণ ও দূরত্ব মেপে সম্পূর্ণরূপে নির্ণয় করা যায়। এর মানে হল, ত্রিমাত্রিক বা দ্বিমাত্রিক স্থানে কোন তল কেমন করে গাঁথা আছে তার ওপর বক্রতা নির্ভর করে না। ১৮২১ সালে তাকে রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর বিদেশী সভ্য নির্বাচন করা হয়। জীবনের শেষভাগ ও মৃত্যু (১৮৩১–১৮৫৫) ১৮৩১ সালে গাউস পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ভিলহেলম ওয়েবারের সাথে যৌথ গবেষণায় নিযুক্ত হন, যার ফলস্বরূপ চুম্বকত্বে নতুন জ্ঞান (যার মধ্যে রয়েছে ভর, দৈর্ঘ্য ও সময়ের সাপেক্ষে চুম্বকত্ব প্রকাশের একক) এবং তড়িতের কার্শফের বর্তনী সংক্রান্ত সূত্র আবিষ্কৃত হয়। তারা ১৮৩৩ সালে তড়িৎ-যান্ত্রিক টেলিগ্রাফ উদ্ভাবন করেন, যা অবজার্ভেটরির সাথে গোটিগেনের পদার্থবিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের সংযোগ সাধন করে। তিনি অবজার্ভেটরির বাগানে একটি চৌম্বক অবজার্ভেটর স্থাপনের আদেশ করেন এবং ওয়েবারের সাথে magnetischer Verein (জার্মান ভাষায় চৌম্বক সভা ) স্থাপন করেন, যা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রে পরিমাপ কাজকে সহায়তা করে। তিনি চৌম্বক ক্ষেত্রের সমান্তরাল তীব্রতা পরিমাপের একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেন যা ২০ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয় এবং পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের আভ্যন্তরীন (মজ্জা এবং ত্বক) এবং বহির্গত উৎসের পার্থক্যসূচক গাণিতিক তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। গাউস ১৮৫৫ সালে গোটিগেনে মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখানেই তাকে সমাহিত করা হয়। দু'জন ব্যক্তি তার শেষকৃত্যানুষ্ঠানে প্রশংসাবাক্য পাঠ করেন, গাউসের জামাতা হাইনরিখ এওয়াল্ড এবং উলফগ্যাং সার্টরিয়াস ফন ভালটারশসেন, যিনি ছিলেন গাউসের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও তার জীবনীকার। তার মস্তিষ্ক রুডলফ ভাগনার কর্তৃক সংরক্ষিত ও পর্যবেক্ষিত হয়, যিনি সেটির ভর গণনা করেন ১৪৯২ গ্রাম এবং সেরেব্রাল এলাকা ২,১৯,৫৮৮ বর্গ মিমি। (৩৪০.৩৬২ বর্গ ইঞ্চি)। সুগঠিত মোচড়ও সেখানে আবিষ্কৃত হয়, যাকে ২০ শতকের গোড়ার দিকে তার অসামান্য প্রতিভার কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তথ্যসূত্র উচ্চতর পঠন বহিঃসংযোগ Complete works Gauss and his children Gauss biography রাজপুত্র নন রাজার ছেলে Gauss: mathematician of the millennium, by Jürgen Schmidhuber English translation of Waltershausen's 1862 biography Gauss general website on Gauss MNRAS 16 (1856) 80 Obituary Carl Friedrich Gauss on the 10 Deutsche Mark banknote Carl Friedrich Gauss at Wikiquote গণিতবিদ ১৭৭৭-এ জন্ম ১৮৫৫-এ মৃত্যু জার্মান গণিতবিদ জার্মান পদার্থবিজ্ঞানী জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী কপলি পদক বিজয়ী আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য রয়েল সোসাইটির সভ্য জার্মান লুথারান রয়্যাল নেদারল্যান্ডস কলা ও বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য রয়েল সুয়েডীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য আলোক পদার্থবিজ্ঞানী জার্মান উদ্ভাবক মানসিক গণনাকারী
https://en.wikipedia.org/wiki/Carl_Friedrich_Gauss
Carl Friedrich Gauss
Johann Carl Friedrich Gauss (German: Gauß [kaʁl ˈfʁiːdʁɪç ˈɡaʊs] ; Latin: Carolus Fridericus Gauss; 30 April 1777 – 23 February 1855) was a German mathematician, astronomer, geodesist, and physicist who contributed to many fields in mathematics and science. He was director of the Göttingen Observatory and professor of astronomy from 1807 until his death in 1855. While studying at the University of Göttingen, he propounded several mathematical theorems. Gauss completed his masterpieces Disquisitiones Arithmeticae and Theoria motus corporum coelestium as a private scholar. He gave the second and third complete proofs of the fundamental theorem of algebra, made contributions to number theory, and developed the theories of binary and ternary quadratic forms. Gauss was instrumental in the identification of Ceres as a dwarf planet. His work on the motion of planetoids disturbed by large planets led to the introduction of the Gaussian gravitational constant and the method of least squares, which he had discovered before Adrien-Marie Legendre published it. Gauss was in charge of the extensive geodetic survey of the Kingdom of Hanover together with an arc measurement project from 1820 to 1844; he was one of the founders of geophysics and formulated the fundamental principles of magnetism. Fruits of his practical work were the inventions of the heliotrope in 1821, a magnetometer in 1833 and – alongside Wilhelm Eduard Weber – the first electromagnetic telegraph in 1833. Gauss refused to publish incomplete work and left several works to be edited posthumously. He believed that the act of learning, not possession of knowledge, provided the greatest enjoyment. Gauss confessed to disliking teaching, but some of his students became influential mathematicians.
2389
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%93%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%A1%20%E0%A6%85%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%B2%E0%A6%BE%E0%A6%B0
লেওনার্ড অয়লার
লেওনার্ড অয়লার ( — উচ্চারণ: , লেওনাআট্‌ অয়লা ) () (১৫ এপ্রিল, ১৭০৭, বাসেল, সুইজারল্যান্ড - ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৭৮৩, সেন্ট পিটার্সবার্গ, রাশিয়া) একজন সুইস গণিতবিদ এবং পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি ক্যালকুলাস, সংখ্যাতত্ত্ব, অন্তরক সমীকরণ, গ্রাফ তত্ত্ব ও টপোগণিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আধুনিক গণিতে ব্যবহৃত অনেক পরিভাষা ও ধারণা তার অবদান। গাণিতিক বিশ্লেষণে ব্যবহৃত গাণিতিক ফাংশন-এর ধারণা তারই আবিষ্কার। অয়লার e , পাই এর জন্য π , যোগের জন্য Σ চিহ্নের প্রবর্তন করেন। তিনি বলবিজ্ঞান, আলোকবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিজ্ঞানেও অবদান রাখেন। সমসাময়িককালে তার মত প্রকাশনা সম্পন্ন কোনো গণিতবিদ ছিলেন না। এমনকি মুদ্রণ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ার পরও তার সমপরিমাণ প্রকাশনা সম্পন্ন বিজ্ঞানীর সংখ্যা খুবই কম। অয়লারকে ১৮শ শতকের সেরা গণিতবিদ ও সর্বকালের সেরা গণিতবিদদের একজন বলে মনে করা হয়। গণিতবিদদের মধ্যে তার প্রকাশিত গবেষণা কাজের পরিমাণ আজও সর্বাধিক এবং এটি একটি গিনেস রেকর্ড। বলা হয় তার সম্পর্কে লাপ্লাস বলেছিলেন: "Lisez Euler, lisez Euler, c'est notre maître à tous" ("অয়লার পড়, অয়লার পড়, তিনি আমাদের সবার শিক্ষক।")। 2002 Euler নামের গ্রহাণুটি তার সম্মানে নামকরণ করা হয়। সুইস ১০-ফ্রা এর নোট এবং সুইজারল্যান্ড, রাশিয়া ও জার্মানির অসংখ্য ডাকটিকেটে তার ছবি রয়েছে। জীবন প্রথম জীবন অয়লার এর বাবা ছিলেন পল অয়লার। তিনি ছিলেন রিফর্মড চার্চের একজন যাজক। মা ছিলেন মার্গারিট ব্রুকার, তিনিও ছিলেন একজন যাজকেরই মেয়ে। অয়লারের ছোট দুই বোন ছিল, আন্না মারিয়া এবং মারিয়া ম্যাগডালেনা। অয়লারের বয়স যখন এক বছর, তখন অয়লার পরিবার ব্যাসেল ছেড়ে রাইহেনে বসবাস করতে শুরু করেন এবং সেখানেই শৈশব কাটান অয়লার। পল অয়লার ছিলেন বের্নুলি পরিবারের—ইয়োহান বের্নুলির পারিবারিক বন্ধু, যিনি সে সময়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ বিবেচিত ছিলেন। বের্নুলি তরুণ অয়লারের ওপর গভীর প্রভাব রাখেন। প্রাথমিক শিক্ষার জন্য অয়লারকে ব্যাসেলে তার মাতামহের কাছে পাঠানো হয়েছিল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে তিনি ব্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ১৭২৩ সালে তিনি দেকার্ত ও নিউটনের দার্শনিক ধারণাসমূহের তুলনামুলক বিশ্লেষণ করে দর্শনে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন। এ সময়ে তিনি ইয়োহান বের্নুলির কাছে প্রতি শনিবার বিকেলে পড়তে যেতেন, যিনি তার ছাত্রের অসাধারণ গাণিতিক প্রতিভা বুঝতে পারেন। তার পিতার ইচ্ছানুযায়ী ধর্মযাজক হবার লক্ষ্যে এ সময় তিনি ধর্মতত্ত্ব, গ্রীক ও হিব্রু নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন, তবে বের্নুলি পল অয়লারকে বোঝান যে তার পুত্র শ্রেষ্ঠ গণিতবিদদের সারিতে স্থান করে নেবার জন্যেই জন্মগ্রহণ করেছে। বেরনুলির সাহায্যে ১৭২৬ সালে অয়লার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন এবং ডি সোনো শিরোনামে শব্দ সঞ্চালনের ওপর পি.এইচ.ডি সম্পন্ন করেন। ১৭২৭ সালে 'জাহাজের পালের সবচেয়ে ভালো সন্নিবেশ কীভাবে করা যায়' তার ওপর একটি প্রবন্ধ লিখে প্যারিস আকাডেমির প্রাইজ প্রবলেম প্রতিযোগিতাতে জমা দেন গ্র্যান্ড প্রাইজের জন্য। সে বছর প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন নেভাল আর্কিটেকচার এর জনক পিয়েরে বুগুয়ের। অয়লার লাভ করেন দ্বিতীয় স্থান। পরবর্তীকালে অয়লার তার জীবনে মোট ১২ বার এই পুরস্কার পেয়েছিলেন। সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ এ সময়ে ইয়োহান বের্নুলির দুই পুত্র দানিয়েল ও নিকোলাস, সেন্ট পিতেরবুর্গে অবস্থিত ইমপেরিয়াল রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসে কাজ করছিলেন। ১৭২৬ সালের জুলাই মাসে নিকোলাস রাশিয়ায় অবস্থানের এক বৎসরকাল অতিক্রান্ত হবার পর অ্যাপেন্ডিসাইটিসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। দানিয়েল তার ভাইয়ের গণিত/পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পদটিতে নিয়োগ পাবার পর শারীরতত্ত্ব বিভাগে তার ছেড়ে আসা পদটির জন্যে সুহৃদ অয়লারের নাম সুপারিশ করেন। ১৭২৬ এর নভেম্বরে অয়লার আগ্রহের সাথেই আমন্ত্রণটি গ্রহণ করেন, কিন্তু মধ্যবর্তী সময়ে ইউনিভার্সিটি অফ বাসেলে পদার্থবিজ্ঞানে অধ্যাপক হবার ব্যর্থ চেষ্টা করে তার সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে যোগদান করতে একটু বিলম্ব হয়। অয়লার ১৭২৭ সালের ১৭ মে রাশিয়ার রাজধানীতে পদার্পণ করেন। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান বিভাগের কনিষ্ঠ পদ হতে পদোন্নতিসহ গণিত বিভাগে যোগদান করেন। তিনি দানিয়েল বের্নুলির সাথে একই আবাসস্থলে অবস্থান করতেন এবং তারা যৌথভাবে বহু গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। অয়লার রুশ ভাষায় দক্ষতা অর্জন করেন এবং সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে থিতু হন। তাছাড়া তিনি রুশ নৌবাহিনীতে চিকিৎসকের কাজেও নিয়োজিত ছিলেন। রুশ সম্রাট পিটার দ্য গ্রেট প্রতিষ্ঠিত সাংক্‌ত পিতেরবুর্গের একাডেমিটির লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার শিক্ষার উন্নতিসাধন এবং পশ্চিম-ইউরোপের সাথে বৈজ্ঞানিক পার্থক্য কমিয়ে আনা। তাই এ প্রতিষ্ঠানটিতে অয়লারের মত বিদেশী জ্ঞানসাধকদের জন্যে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে পরিচালনা করা হত। একাডেমির যথেষ্ট অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা ছিল এবং এর ছিল একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরি যা কিনা স্বয়ং পিটারের ও রাশিয়ার অভিজাত ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত লাইব্রেরির দানে গড়ে উঠেছিল। শিক্ষকদের ওপর ক্লাসের চাপ কমানোর জন্যে খুব অল্প সংখ্যক ছাত্র ভর্তি করা হত এবং একাডেমি তার বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকদের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক প্রশ্ন নিয়ে চিন্তাভাবনা করার মত পর্যাপ্ত সময় ও স্বাধীনতা প্রদান করত। একাডেমির পৃষ্ঠপোষক রাশিয়ার সম্রাজ্ঞী প্রথম ক্যাথারিন পরলোকগত স্বামীর প্রগতিশীল নীতি অনুসরণ করে আসছিলেন। কিন্তু অয়লারের আগমনের আগেই তার মৃত্যু হয়। রুশ সিংহাসনে অভিষেক হয় ১২ বছর বয়সী সম্রাট দ্বিতীয় পিটারের। তার ওপর প্রভাব বিস্তারে সমর্থ হয় রাশিয়ার রক্ষণশীল অভিজাত সমাজ। একাডেমির বিদেশী গবেষকদের বিষয়ে সন্দিগ্ধ এই অংশটি অয়লার ও তার সহকর্মীদের জন্য বরাদ্দ তহবিলের পরিমাণ হ্রাস করাতে সমর্থ হয়। এমন কি তাদের প্রচেষ্টায় বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিদেশি ও অনভিজাত শিক্ষার্থীদের প্রবেশের দ্বার রুদ্ধ হয়। তবে সম্রাট দ্বিতীয় পিটারের মৃত্যুর পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি ঘটে। অয়লার দ্রুত পদোন্নতি পেয়ে ১৭৩১ সালে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপকে পরিণত হন। রুশ নৌবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট হিসেবে পদোন্নতির প্রস্তাব থাকলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং নৌবাহিনী থেকে বিদায় নেন। এর দুই বছর পর দানিয়েল বার্নুলি সেন্সরশিপ ও বৈরিতায় বিরক্ত হয়ে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ ছেড়ে বাসেলে চলে যান। তখন অয়লার গণিত বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে তার উত্তরসূরি মনোনীত হন। ১৭৩৪ সালের ৭ জানুয়ারি বার্নুলি ক্যাথারিনা সেল্লের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন, যিনি ছিলেন একাডেমি জিমন্যাসিয়ামের চিত্রকর গিওর্গ সেল্লের কন্যা। এই তরুণ দম্পতি নেভা নদীর পাড়ে একটি বাড়ি ক্রয় করে সংসার শুরু করেন। তাদের তেরটি সন্তানের মধ্যে কেবল পাঁচজন শৈশব উত্তীর্ণ করতে সক্ষম হয়। বার্লিন রাশিয়ার ক্রমাবনতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে অয়লার ১৯ জুন ১৭৪১ সালে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ ছেড়ে বার্লিন একাডেমিতে যোগদান করেন, যা ফ্রেডেরিক দ্য গ্রেট অফ প্রুসিয়া তাকে প্রস্তাব করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ পঁচিশ বছর বার্লিনে অবস্থান করেন এবং ৩৮০ টির বেশি প্রবন্ধ রচনা করেন। বার্লিনেই তিনি তার শ্রেষ্ঠ দু'টি কাজ সম্পন্ন করেন: Introductio in analysin infinitorum, ১৭৪৮ সালে প্রকাশিত ফাংশানের ওপর একটি রচনা এবং Institutiones calculi differentialis, ১৭৫৫ সালে ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের ওপর রচিত প্রবন্ধ। ১৭৫৫ সালে তিনি রয়েল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর বিদেশী সভ্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি অয়লার ফ্রেডেরিকের ভাগ্নী রাজকুমারী আনয়াল্ট-দেসাঁউকে শিক্ষাদানে নিযুক্ত হন। অয়লার তাকে প্রায় ২০০ টি চিঠি লেখেন, যা পরবর্তীকালে একত্রিত হয়ে একটি বহুল-বিক্রিত গ্রন্থে রূপায়িত হয়, যার নাম ছিল প্রাকৃতিক দর্শনের বিবিধ বিষয়ে জার্মান রাজকন্যাকে লেখা অয়লারের পত্রগুচ্ছ। বইটিতে পদার্থবিজ্ঞান এবং গণিত সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে অয়লারের দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় মেলে, পাশাপাশি অয়লারের ব্যক্তিত্ব ও ধর্মবিশ্বাস সম্বন্ধেও অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা যায়। বইটি তার যেকোন গাণিতিক প্রকাশনার চাইতে অধিক পঠিত পুস্তকে পরিণত হয়, এবং এটি ইউরোপজুড়ে এবং আমেরিকাতে প্রকাশিত হয়। এই 'চিঠিগুলোর' জনপ্রিয়তা বৈজ্ঞানিক বিষয় সাধারণ মানুষের জন্যে বোধগম্যরূপে উপস্থাপনের ব্যাপারে অয়লারের প্রতিভার পরিচায়ক, যা ছিল তার মতো গবেষক বৈজ্ঞানিকদের মধ্যে বিরল একটি গুণ। একাডেমির সম্মান বৃদ্ধিতে অনন্য ভূমিকা পালন করা সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত অয়লারকে বার্লিন ছাড়তে বাধ্য করা হয়। তার একটি কারণ ছিল ফ্রেডেরিকের সাথে ব্যক্তিত্বের সংঘর্ষ, যিনি অয়লারকে স্থূল বিবেচনা করতেন, বিশেষ করে জার্মান রাজের চক্রের অন্যান্য দার্শনিকদের তুলনায়। ফ্রেডেরিকের নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেন ভলতেয়ার, এবং এই ফরাসি দার্শনিক রাজার সামাজিক গন্ডিতে একটি বিশেষ সম্মানের অধিকারী ছিলেন। অয়লার, যিনি ছিলেন একজন সাদাসিধে ও ধর্মভীরু মানুষ, তিনি তার বিশ্বাস ও রুচির দিক দিয়ে ছিলেন সাধারণ। তিনি নানাভাবে ভলতেয়ারের ঠিক বিপরীত ছিলেন। অয়লারের বাগ্মিতার সুখ্যাতি ছিল না, তথাপি তিনি এমন সব বিষয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়তেন যে বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল খুবই সামান্য, যার ফলে তিনি ভলতেয়ারের ক্ষুরধার বুদ্ধির নিয়মিত শিকারে পরিণত হতেন। ফ্রেডেরিকও অয়লারের ফলিত প্রকৌশল বিদ্যা সম্বন্ধে এভাবে হতাশা ব্যক্ত করেন: দৃষ্টিশক্তি হারানো অয়লারের দৃষ্টিশক্তি তার কর্মজীবন জুড়ে ক্রমাগত হ্রাস পেতে থাকে। তিন বছর দুরারোগ্য জ্বরে ভোগাড় পর ১৭৩৫ সালে তিনি তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি প্রায় পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন, তবে অয়লার এর জন্যে সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ একাডেমিতে তার মানচিত্রাঙ্কণের কষ্টকর অভিজ্ঞাতাকেই দায়ী করতেন। তার ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি বার্লিনে অবস্থানকালে আরও কমতে থাকে এবং অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ফ্রেডেরিক তাকে "সাইক্লপ" হিসেবে অভিহিত করতেন। অয়লার পরবর্তীকালে তার সুস্থ বামচোখেও ছানিতে আক্রান্ত হন এবং ১৭৬৬ সালে অসুখটি ধরা পরার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই প্রায় পুরোপুরি অন্ধ হয়ে যান। তবে তার অসুস্থতা তার কাজের ওপর অল্পই প্রভাব ফেলে, দৃষ্টিশক্তির অভাব তিনি পুষিয়ে নিয়েছিলেন তার মানসিক হিসাবনিকাশে দক্ষতা ও অসাধারণ স্মৃতিশক্তি দিয়ে। দৃষ্টান্তস্বরূপ, অয়লার ভার্জিল রচিত ঈনীড কাব্যগ্রন্থ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত না থেমে আবৃত্তি করতে পারতেন এবং সে সংস্করণের প্রতিটি পৃষ্ঠার প্রথম ও শেষ বাক্য কি ছিল তাও তিনি বলতে পারতেন। অনুলেখকদের সহযোগিতার ফলে বিভিন্ন শাখায় অয়লারের উৎপাদনশীলতা প্রকৃতপক্ষে বৃদ্ধি পায়। ১৭৭৫ সালে তিনি প্রায় প্রতি সপ্তাহে একটি করে গাণিতিক গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করতেন। রাশিয়ায় প্রত্যাবর্তন ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের সিংহাসনে আরোহণের পর রাশিয়ার পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে এবং ১৭৬৬ সালে অয়লার সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে একাডেমিতে ফিরে যাবার আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং তার জীবনের বাকি অংশ রাশিয়াতেই অবস্থান করেন। তার দ্বিতীয় দফায় রাশিয়ায় অবস্থান ছিল বেদনাভারাক্রান্ত। সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে ১৭৭১ সালের এক অগ্নিকান্ডে তার বাড়ি ভস্মীভূত হয় এবং সে যাত্রা কোন মতে তার প্রাণ রক্ষা হয়। ১৭৭৩ সালে তিনি তার স্ত্রী সুইস চিত্রকর গিওর্গ সেল্লের কন্যা ক্যাথারিন মাত্র ৪০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। প্রথম পক্ষের স্ত্রীর মৃত্যুর তিন বছর পর অয়লার তার স্ত্রীর সৎ বোন সালোম আবিজিল সেল্লেকে বিয়ে করেন। অয়লারের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের দাম্পত্য জীবন স্থায়ী হয়েছিল। ১৮ সেপ্টেম্বর ১৭৮৩ সালে পরিবারের সদস্যদের সাথে মধ্যাহ্নভোজ সমাপ্ত করার পর আন্দ্রে লেক্সেলের সাথে নতুন আবিষ্কৃত ইউরেনাস এবং তার কক্ষপথ নিয়ে আলোচনা করবার সময় অয়লার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের শিকার হন এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন। জ্যাকব ফন স্টেলিন রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেসের পক্ষে একটি সংক্ষিপ্ত শোকবার্তা রচনা করেন এবং একটি শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন রুশ গণিতবিদ ও অয়লারের শিষ্য নিকোলাস ফাস, যিনি অয়লারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে তা পাঠ করেন। ফরাসি একাডেমির পক্ষে লিখিত শোকবার্তায় ফরাসি গণিতবিদ ও দার্শনিক মার্কুই দ্য কন্ডরসেট মন্তব্য করেন: তাকে ভাসিলিয়েভস্কি দ্বীপের স্মলেনস্ক লুথেরান সমাধিক্ষেত্রে তার মৃতা পত্নীর পাশে সমাহিত করা হয়। ১৭৮৫ সালে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস পরিচালকের আসনের প্বার্শে অয়লারের একটি আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে। ১৮৩৭ সালে রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সেস তার কবরে একটি সমাধিফলক স্থাপন করে, যা ১৯৫৬ সালে অয়লারের ২৫০ তম জন্মবার্ষিকীতে তার দেহাবশেষ সহ XVIII শতাব্দীর সমাধিক্ষেত্র আলেক্সান্ডার নেভস্কি লাভ্রায় স্থানান্তরিত করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে অবদান অয়লার গণিতের প্রায় সকল শাখাতেই কাজ করেছেন: জ্যামিতি, ইনফিনিটসিমাল ক্যালকুলাস, ত্রিকোণমিতি, বীজগণিত, এবং সংখ্যা তত্ত্ব, পাশাপাশি কন্টিনিউয়াম পদার্থবিজ্ঞান, চন্দ্র তত্ত্ব পদার্থবিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে। তিনি গণিতের ইতিহাসে একজন বহুপ্রজ ব্যক্তিত্ব; ছাপানো হলে তার রচনাবলী, যার কিনা বেশিরভাগই ভিত্তিস্বরূপ কাজ, প্রায় ৬০ থেকে ৮০ টি কোয়ার্টো ভলিউম দখল করবে। অয়লারের নাম বহুসংখ্যক বিষয়ের সাথে যুক্ত। গাণিতিক প্রতীক অয়লার নিজের লেখা বিপুল পরিমাণ ও সুপ্রচারিত পাঠ্যপুস্তকে বেশ কিছু নতুন প্রতীকের প্রচলন ও জনপ্রিয়করণ করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল তিনি প্রথম ফাংশনের ধারণা প্রচলন করেন এবং f(x) চিহ্ন দ্বারা f কে x এর ফাংশন রূপে প্রকাশ করেন। তিনি ত্রিকোণমিতিক ফাংশন প্রকাশের আধুনিক রীতিটিরও প্রচলন করেন, e দ্বারা স্বাভাবিক লগারিদমের ভিত্তি (যা বর্তমানে অয়লারের সংখ্যা হিসাবেও পরিচিত), গ্রিক বর্ণ Σ দ্বারা যোগফল এবং i দ্বারা কাল্পনিক সংখ্যা প্রকাশের প্রচলন করেন। গ্রিক বর্ণ 'π দ্বারা বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত প্রকাশের রীতিটিও তিনি জনপ্রিয় করে তোলেন, তবে এ প্রতীকটি তার আবিষ্কৃত নয়। বিশ্লেষণ ইনফিনিটসিমাল ক্যালকুলাসের গড়ে ওঠা ছিল ১৮ শতকের গাণিতিক গবেষণার অগ্রদূত, এবং বের্নুলিরা—যারা ছিলেন অয়লারের পারিবারিক বন্ধু—এ ক্ষেত্রে গবেষণার পথিকৃৎ ছিলেন। তাদের প্রভাবেই ক্যালকুলাস অধ্যয়ন অয়লারের কাজের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। যদিও অয়লারের সব প্রমাণই আধুনিক গাণিতিক কড়াকড়ির মানদন্ডে উত্তীর্ণ হয়নি, তথাপি তার ধারণা থেকে অসাধারণ অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। অয়লার বিশ্লেষণে খ্যাতিমান হয়ে আছেন তার শক্তিধারার পুনঃপুনঃ ব্যবহার এবং অগ্রগতি সাধনের মাধ্যমে, যেমন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, অয়লার e এবং বিপরীত বৃত্তীয় ফাংশানের শক্তি ধারায় বিস্তৃতি সরাসরি প্রমাণ করেছিলেন (নিউটন এবং লিবনিজ ১৬৭০ থেকে ১৬৮০ এর পরোক্ষ প্রমাণ করেছিলেন)। শক্তি ধারার সাহসী ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ১৭৩৫ সালে বিখ্যাত ব্যাসেল সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হন (১৭৪১ সালে তিনি এর আরো বিস্তারিত একটি প্রমাণ প্রদান করেন): অয়লার বিশ্লেষণী প্রমাণে সূচকীয় ফাংশন এবং লগারিদমের ব্যবহারের সূচনা করেন। তিনি শক্তি ধারার ব্যবহার করে বহুবিধ লগারিদমীয় ফাংশন আবিষ্কার করেন এবং সফলভাবে ঋণাত্মক ও জটিল সংখ্যার লগারিদম সজ্ঞায়িত করেন, যা লগারিদমের গাণিতিক ব্যবহারে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া তিনি জটিল সংখ্যার সূচকীয় ফাংশনকে সজ্ঞাবদ্ধ করেন এবং এর সাথে ত্রিকোণমিতিক ফাংশনের সম্পর্ক আবিষ্কার করেন। যেকোন বাস্তব সংখ্যা φ এর জন্যে অয়লারের সূত্রানুসারে জটিল সূচকীয় ফাংশন নিম্নলিখিত শর্তটি মেনে চলে উপরিউক্ত সূত্রটির একটি বিশেষ ক্ষেত্র হল অয়লারের অভেদ, যাকে রিচার্ড ফাইনম্যান গণিতের আকর্ষনীয়তম সমীকরণ" হিসেবে মন্তব্য করেছেন, কারণ এতে একই সঙ্গে যোগ, গুণন, সূচকীয় এবং সমতা চিহ্ন ব্যবহৃত হয়েছে এবং সাথে গণিতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধ্রুবক 0, 1, e, i এবং π ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ম্যাথেমেটিকাল ইনটেলিজেন্সারের পাঠকেরা এটিকে "সর্বকালের সবচেয়ে সুন্দর গাণিতিক সমীকরণ" হিসাবে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করে। অয়লার সেই নির্বাচনের সেরা পাঁচটি সমীকরণের তিনটির সাথেই যুক্ত ছিলেন। দ্য ময়ভার সূত্র অয়লারের সূত্রের সরাসরি উপজাত। এ ছাড়াও অয়লার উচ্চতর তুরীয় ফাংশনের ধারণাটি বিস্তৃত করেন গামা ফাংশন আবিষ্কার করে এবং চতুর্ঘাত সমীকরণ সমাধানের একটি নতুন পন্থা তৈরি করেন। তিনি জটিল সীমা বিশিষ্ট সমাকলন করবারও একটি উপায় আবিষ্কার করেন, যা আধুনিক কমপ্লেক্স এনালিসিসের পথ প্রদর্শন করে। তার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল বৈচিত্রের ক্যালকুলাস, যার একটি বিখ্যাত ফলাফল অয়লার লাগ্রাঞ্জ সমীকরণ। অয়লার বিশ্লেষণী পদ্ধতির ব্যবহারের মাধ্যমে সংখ্যাতাত্তিক সমস্যা সমাধানের পথ দেখান। এর মাধ্যমে তিনি গণিতের দু'টি ভিন্ন শাখা একত্রিত করেন এবং বিশ্লেষণী সংখ্যা তত্ত্ব নামক একটি নতুন শাখার সূচনা করেন। এ নতুন শাখাটির ভিত্তি তৈরি করবার সময় অয়লার অধিজ্যামিতিক ধারা, q-ধারা, অধিবৃত্তীয় ত্রিকোণমিতিক ধারা এবং অবিরত ভগ্নাংশের বিশ্লেষণী তত্ত্বের সূচনা করেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মৌলিক সংখ্যার অসীমতা প্রমাণ করেন হারমনিক ধারার অপসারিতা ব্যবহার করে, এবং তিনি মৌলিক সংখ্যার বণ্টন অনুধাবনের লক্ষ্যে বিশ্লেষণী পদ্ধতি ব্যবহার করেন। অয়লারের এ কাজের ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব। সংখ্যাতত্ত্ব সংখ্যাতত্ত্বে অয়লারের আকর্ষণের কারণ ছিলেন ক্রিস্টিয়ান গোল্ডবাখ, তার সাংক্‌ত পিতেরবুর্গে একাডেমির সুহৃদ। সংখ্যাতত্ত্বে অয়লারের প্রাথমিক অনেক কাজেরই ভিত্তি ছিল সংখ্যাতত্ত্বের আরেক দিকপাল পিয়ে দ্য ফার্মার কাজ। অয়লার ফার্মার কিছু কাজকে বিস্তৃত করেন এবং কিছু অনুমান ভুল প্রমাণিত করেন। অয়লার মৌলিক সংখ্যার বণ্টনের প্রকৃতির সাথে বিশ্লেষণের যোগসূত্র স্থাপন করেন। তিনি প্রমাণ করেন যে, মৌলিক সংখ্যার বিপরীতকের যোগফল অপসারী হয়। এটি প্রমাণ করতে গিয়ে তিনি রিম্যান জিটা ফাংশন ও মৌলিক সংখ্যার মাঝে সম্বন্ধ খুঁজে পান; যা রিম্যান জিটা ফাংশনের অয়লার উৎপাদক সূত্র নামে পরিচিত। অয়লার নিউটনের অভেদ, ফার্মার ছোট্ট উপপাদ্য, ফার্মার দুই বর্গের সমষ্টির উপপাদ্য প্রমাণ করেন এবং লাগ্রাঞ্জের চার বর্গ তত্ত্বে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। তিনি টশিয়েন্ট ফাংশন φ(n) উদ্ভাবন করেন যা হল কোন পূর্ণসংখ্যা n এর সমান বা তার চাইতে ছোট এবং n এর সাথে সহমৌলিক এমন সংখ্যার সংখ্যা। এই ফাংশনের বিশেষত্ব ব্যবহার করে তিনি ফার্মার ছোট্ট উপপাদ্যের সাধারণীকরণ করেন, যা বর্তমানে অয়লারের তত্ত্ব নামে সুবিদিত। তিনি নিখুঁত সংখ্যার গবেষণায় নতুন মাত্রা যোগ করেন, গণিতের যে বিষয়টি ইউক্লিডের সময় থেকেই গণিতবিদদের বিশেষ আকর্ষণের বস্তু। তাছাড়া অয়লার মৌলিক সংখ্যা তত্ত্ব উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন, এবং বর্গীয় বিপরীততার নিয়মটি অনুমান করেন। এ দু'টি ধারণা সংখ্যাতত্ত্বের ভিত্তিরূপ তত্ত্ব হিসাবে বিবেচিত এবং তার এই ধারণা পরবর্তী সময়ে গাউসের কাজের পথ প্রশস্ত করে। গ্রাফ তত্ত্ব ১৭৩৬ সালে অয়লার কনিসবার্গের সাতটি সেতুর সমস্যাটি সমাধান করেন। প্রুসিয়ার অন্তর্গত কনিসবার্গ শহরটি ছিল প্রেজেল নদীর তীরে এবং সেখানকার দু'টি বৃহৎ দ্বীপ সাতটি সেতুর মাধ্যমে সংযুক্ত ছিল। সমস্যাটি ছিল এরকম যে, সাতটি সেতুর প্রত্যেকটি ঠিক একবার ব্যবহার করে শুরুর অবস্থানে ফেরত আসা সম্ভব কিনা। তা সম্ভব নয়: কারণ তা অয়লার বর্তনী তৈরি করে না। এ সমাধানটিকে গ্রাফ তত্ত্বের প্রথম উপপাদ্য বিবেচনা করা হয়, বিশেষত সমতলীয় গ্রাফ তত্ত্বের। অয়লার যেকোন উত্তল বহতলকের শীর্ষ, ধার এবং তলের মধ্যে একটি সম্পর্কসূচক সমীকরণ আবিষ্কার করেন V − E + F = 2, যা সমতলীয় গ্রাফের ক্ষেত্রেও সত্য। সমীকরণটির ধ্রুবকটি তার গ্রাফের অয়লার বিশেষত্ব নামে পরিচিত, যা বস্তুটির গণের সাথে সম্পৃক্ত। কশি এবং লা ইলিয়ের এ সমীকরণটির সাধারণীকরণ করেন, যা টপোলজি নামক গণিতের একটি নতুন শাখার সূচনা করে। ফলিত গণিত অয়লারের শ্রেষ্ঠ সাফল্যের অন্যতম ছিল বাস্তব জগতের নানান সমস্যার বিশ্লেষণী সমাধান প্রদান, এবং বের্নুলি সংখ্যা, ফুরিয়ার ধারা, ভেন চিত্র, অয়লার সংখ্যা, ধ্রুবক e এবং π, অবিরত ভগ্নাংশ এবং সমাকলনের অসংখ্য প্রয়োগ বর্ণনা। তিনি লিবনিজের ডিফারেন্সিয়াল ক্যালকুলাসের সঙ্গে নিউটনের ফ্লাক্সিয়ন পদ্ধতির গাঁটছড়া বাঁধেন এবং বাস্তব সমস্যার সমাধানের ক্যালকুলাস ব্যবহারের বিভিন্ন সহায়ক কৌশল আবিষ্কার করেন। তিনি ডিফারেন্সিয়াল সমীকরণ ব্যবহারেরও পথিকৃৎ, বিশেষ করে অয়লার-মাসকেরনির ধ্রুবকের উদ্ভাবন: অয়লারের সঙ্গীতে গাণিতিক ধারণার ব্যবহারের খেয়ালী শখ ছিল। ১৭৩৯ সালে তিনি Tentamen novae theoriae musicae রচনা করেন এই আশায় যে একসময় সঙ্গীততত্ত্ব একসময় গণিতের মাঝে স্থান করে নেবে। কিন্তু তার এই বিশেষ কাজটি সেভাবে জনপ্রিয়তা পায়নি এবং এ সম্বন্ধে বলা হত এটি সঙ্গীতশিল্পীদের জন্যে একটু বেশি গাণিতিক আর গণিতবিদদের জন্যে একটু বেশি সুরেলা। পদার্থবিজ্ঞান ও জ্যোতির্বিদ্যা অয়লার বের্নুলির সাথে যৌথভাবে অয়লার–বের্নুলি বিম সমীকরণ তৈরি করেন, যা প্রকৌশলবিদ্যার একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে বিবেচিত। অয়লার চিরায়ত বলবিদ্যা এবং জ্যোতির্বিদ্যায়ও তার প্রতিভার পরিচয় রাখেন। জ্যোতির্বিদ্যায় তার কাজের স্বীকৃতি হিসেবে তার ক্যারিয়ারজুড়ে বেশ কয়েকটি প্যারিস একাডেমি পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অর্জনের মধ্যে রয়েছে ধূমকেতু ও অন্যান্য মহাকাশীয় বস্তুর কক্ষপথের নিখুঁত হিসাব, ধূমকেতুর আচরণ উপলব্ধিকরণ, এবং সূর্যের প্যারালাক্স হিসাবকরণ। লঙ্গিটিউড সারণী তৈরিতেও তার করা গণনার অবদান রয়েছে। তদু[পরি, অয়লার অপটিক্সে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। তিনি তার অপটিকস গ্রন্থে নিউটনের কণা তত্ত্বের সাথে দ্বিমত পোষণ করেন, যা ছিল সে সময়ের প্রতিষ্ঠিত একটি তত্ত্ব। তার ১৭৪০ সালে উপস্থাপিত প্রবন্ধ ক্রিস্টিয়ান হাইগেনের আলোর তরঙ্গ সংক্রান্ত মতবাদটি প্রতিষ্ঠিত করতে সাহায্য করে, যা আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্বের প্রচলনের পূর্ব পর্যন্ত প্রভাবশালী ছিল। যুক্তিবিদ্যা তিনি বদ্ধ রেখার মাধ্যমে সাইলোজিস্টিক কারণ নির্ণয় (১৭৬৮) তত্ত্বের জন্যেও খ্যাত। এ ধরনের চিত্রকে তার নামানুসারে অয়লার চিত্র বলা হয়। ব্যক্তিগত দর্শন এবং ধর্মীয় বিশ্বাস অয়লার এবং তার বন্ধু দানিয়েল বার্নুয়ি ছিলেন লাইবনিৎসের একক সত্ত্বা এবং ক্রিস্টিয়ান উলফের দর্শনের পরিপন্থী। অয়লার দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন জ্ঞান সঠিক পরিমাণগত নিয়মের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত, যে মতবাদ একক সত্ত্বা তত্ত্ব ও উলফীয় বিজ্ঞানে অনুপস্থিত ছিল। অয়লারের ধর্মীয় বিশ্বাসও হয়তো তার মতবাদটি অপছন্দ করায় ভূমিকা রেখেছিল; তিনি এমনকি উলফের মতবাদকে "পৌত্তলিক ও নাস্তিকতাবাদ" হিসাবেও চিহ্নিত করেন। অয়লারের ধর্মবিশ্বাসের অনেকটুকুই তার জার্মান রাজকুমারীকে লেখা পত্রগুচ্ছ এবং তার আগের একটি রচনা Rettung der Göttlichen Offenbahrung Gegen die Einwürfe der Freygeister (মুক্তচিন্তাবিদদের অভিযোগের জবাবে স্বর্গীয় উদ্ভাসনের আত্মরক্ষা) থেকে ধারণা করতে পারা যায়। এসব রচনা থেকে বোঝা যায় অয়লার ছিলেন একজন পুরোদস্তুর ধর্মভীরু খ্রিস্টান। ধর্মনিরপেক্ষ দার্শনিকদের সাথে ধর্ম বিষয়ে অয়লারের বিতর্ক সম্বন্ধে একটি বিখ্যাত হাস্যরসাত্মক গল্প প্রচলিত আছে, যা অয়লারের দ্বিতীয় দফায় সাংক্‌ত পিতেরবুর্গ বাসের সময় ঘটেছিল। ফরাসি দার্শনিক দেনিস দিঁদেরো ক্যাথারিন দ্য গ্রেটের আমন্ত্রণে রাশিয়া ভ্রমণ করছিলেন। তো সম্রাজ্ঞী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছিলেন যে দার্শনিকের নাস্তিকতাবাদের যুক্তি হয়তো তার দরবারের সদস্যদের প্রভাবিত করছে, এবং তাই অয়লার ফরাসি দার্শনিককে মোকাবিলা করবার জন্যে আদিষ্ট হলেন। দিঁদেরোকে জানানো হয় একজন প্রাজ্ঞ গণিতবিদ ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব প্রমাণ করেছেন: তিনি দরবারে উপস্থাপিত প্রমাণটি দেখতে সম্মত হলেন। অয়লার সেখানে উপস্থিত হলেন, দিঁদেরোর নিকটবর্তী হলেন এবং গলায় সম্পূর্ণ প্রত্যয় নিয়ে ঘোষণা করলেন, "জনাব, , তাই ঈশ্বর আছেন—উত্তর করুন!" দিঁদেরো, যার কাছে (গল্পানুসারে) গণিতশাস্ত্র ছিল হিব্রু ভাষা, হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন এবং সমগ্র দরবার অট্টহাস্যে ফেটে পড়ল। লজ্জিত হয়ে তিনি সম্রাজ্ঞীর নিকট রাশিয়া ছেড়ে যাবার অনুমতি প্রার্থনা করলেন, যাতে সম্রাজ্ঞী খুশিমনেই সম্মতি জানালেন। তবে গল্পটি যতটা হাস্যকর হোক না কেন, এটি অতরঞ্জিত বলেই মনে হয়, কারণ দিঁদেরো ছিলেন একজন স্বনামধন্য গণিতবিদ যার গাণিতিক গবেষণামূলক আলোচনা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। নির্বাচিত গ্রন্থতালিকা অয়লার গণিতে মহান অবদান রেখেছেন। তার শ্রেষ্ঠ রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে: এলিমেন্টস অফ এলজেবরা। এই প্রাথমিক বীজগণিত বইটি সংখ্যার প্রকৃতির ওপর আলোচনার মাধ্যমে শুরু হয়েছে এবং বহুপদী সমীকরণের সমাধানের কৌশল শেখানোর পাশাপাশি বীজণিতের প্রাথমিক ভিত্তি তৈরি করতে সাহায্য করে। ইন্ট্রোডাকটিও ইন এনালাইসিন ইনফিনিটোরাম (১৭৪৮). ইংরেজি অনুবাদ Introduction to Analysis of the Infinite (অসীমের বিশ্লেষণে প্রথম ধাপ) অনুবাদক জন ব্লানটন (Book I, , Springer-Verlag 1988; Book II, , Springer-Verlag 1989)। ক্যালকুলাসের দু'টি প্রভাবশালী পাঠ্যপুস্তক: ইন্সটিটিউশনেস ক্যালকুলি ডিফারেন্সিয়ালস (১৭৫৫) এবং ইনস্টিটিউশনাম ক্যালকুলি ইন্টিগ্রালিস (১৭৬৮–১৭৭০)। Lettres à une Princesse d'Allemagne (জার্মান রাজকুমারীকে লেখা পত্রগুচ্ছ) (১৭৬৮–১৭৭২)। Available online (in French). English translation, with notes, and a life of Euler, available online from Google Books: Volume 1, Volume 2 Methodus inveniendi lineas curvas maximi minimive proprietate gaudentes, sive solutio problematis isoperimetrici latissimo sensu accepti (১৭৪৪)। এই ল্যাটিন শিরোনামটির অনুবাদ হল সর্বোচ্চ বা সর্বনিম্ন বৈশিষ্ট্য সংবলিত বক্ররেখা অঙ্কনের কৌশল, অথবা সুপারপেরিমেট্রিক সমস্যা সমাধানের সর্বগ্রহণযোগ্য পদ্ধতি. অয়লারের রচনাবলী Opera Omnia নামে, ১৯১১ সাল থেকে সুইস একাডেমি অফ সায়েন্সেস এর অয়লার কমিশন কর্তৃক প্রকাশিত হয়ে আসছে। টীকা তথ্যসূত্র উচ্চতর পঠন Lexikon der Naturwissenschaftler, 2000. Heidelberg: Spektrum Akademischer Verlag. Demidov, S.S., 2005, "Treatise on the differential calculus" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 191–98. Dunham, William (1999) Euler: The Master of Us All, Washington: Mathematical Association of America. Fraser, Craig G., 2005, "Leonhard Euler's 1744 book on the calculus of variations" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 168–80. Gladyshev, Georgi, P. (2007) “Leonhard Euler’s methods and ideas live on in the thermodynamic hierarchical theory of biological evolution,” International Journal of Applied Mathematics & Statistics (IJAMAS) 11 (N07), Special Issue on Leonhard Paul Euler’s: Mathematical Topics and Applications (M. T. A.). Heimpell, Hermann, Theodor Heuss, Benno Reifenberg (editors). 1956. Die großen Deutschen, volume 2, Berlin: Ullstein Verlag. Krus, D.J. (2001) "Is the normal distribution due to Gauss? Euler, his family of gamma functions, and their place in the history of statistics," Quality and Quantity: International Journal of Methodology, 35: 445–46. Nahin, Paul (2006) Dr. Euler's Fabulous Formula, New Jersey: Princeton, Reich, Karin, 2005, " 'Introduction' to analysis" in Grattan-Guinness, I., ed., Landmark Writings in Western Mathematics. Elsevier: 181–90. Richeson, David S. (2008) Euler's Gem: The Polyhedron Formula and the Birth of Topology. Princeton University Press. Sandifer, Edward C. (2007), The Early Mathematics of Leonhard Euler, Mathematical Association of America. Simmons, J. (1996) The giant book of scientists: The 100 greatest minds of all time, Sydney: The Book Company. Singh, Simon. (1997). Fermat's last theorem, Fourth Estate: New York, Thiele, Rüdiger. (2005). The mathematics and science of Leonhard Euler, in Mathematics and the Historian's Craft: The Kenneth O. May Lectures, G. Van Brummelen and M. Kinyon (eds.), CMS Books in Mathematics, Springer Verlag. . বহিঃসংযোগ Encyclopedia Britannica article How Euler did it contains columns explaining how Euler solved various problems Euler Archive Euler Committee of the Swiss Academy of Sciences References for Leonhard Euler Euler Tercentenary 2007 The Euler Society Leonhard Euler Congress 2007—St. Petersburg, Russia Project Euler Euler Family Tree Euler's Correspondence with Frederick the Great, King of Prussia "Euler - 300th anniversary lecture" , given by Robin Wilson at Gresham College, 9 May 2007 (can download as video or audio files) ১৭০৭-এ জন্ম ১৭৮৩-এ মৃত্যু সুইজারল্যান্ডীয় গণিতবিদ সুইজারল্যান্ডীয় পদার্থবিজ্ঞানী আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেসের বিশিষ্ট সভ্য রয়েল সোসাইটির সভ্য প্রবাহী গতিবিজ্ঞানী গাণিতিক বিশ্লেষক ফরাসি বিজ্ঞান একাডেমির সদস্য রয়েল সুয়েডীয় বিজ্ঞান অ্যাকাডেমির সদস্য আলোক পদার্থবিজ্ঞানী মানসিক গণনাকারী
https://en.wikipedia.org/wiki/Leonhard_Euler
Leonhard Euler
Leonhard Euler ( OY-lər, German: [ˈleːɔnhaʁt ˈʔɔʏlɐ] , Swiss Standard German: [ˈleːɔnhart ˈɔʏlər]; 15 April 1707 – 18 September 1783) was a Swiss mathematician, physicist, astronomer, geographer, logician, and engineer who founded the studies of graph theory and topology and made pioneering and influential discoveries in many other branches of mathematics such as analytic number theory, complex analysis, and infinitesimal calculus. He introduced much of modern mathematical terminology and notation, including the notion of a mathematical function. He is also known for his work in mechanics, fluid dynamics, optics, astronomy, and music theory. Euler is held to be one of the greatest, most prolific mathematicians in history and the greatest of the 18th century. Several great mathematicians who produced their work after Euler's death have recognised his importance in the field as shown by quotes attributed to many of them: Pierre-Simon Laplace expressed Euler's influence on mathematics by stating, "Read Euler, read Euler, he is the master of us all." Carl Friedrich Gauss wrote: "The study of Euler's works will remain the best school for the different fields of mathematics, and nothing else can replace it." His 866 publications as well as his correspondences are being collected in the Opera Omnia Leonhard Euler which, when completed, will consist of 81 quartos. He spent most of his adult life in Saint Petersburg, Russia, and in Berlin, then the capital of Prussia. Euler is credited for popularizing the Greek letter π {\displaystyle \pi } (lowercase pi) to denote the ratio of a circle's circumference to its diameter, as well as first using the notation f ( x ) {\displaystyle f(x)} for the value of a function, the letter i {\displaystyle i} to express the imaginary unit − 1 {\displaystyle {\sqrt {-1}}} , the Greek letter Σ {\displaystyle \Sigma } (capital sigma) to express summations, the Greek letter Δ {\displaystyle \Delta } (capital delta) for finite differences, and lowercase letters to represent the sides of a triangle while representing the angles as capital letters. He gave the current definition of the constant e {\displaystyle e} , the base of the natural logarithm, now known as Euler's number. Euler is also credited with being the first to develop graph theory (partly as a solution for the problem of the Seven Bridges of Königsberg, which is also considered the first practical application of topology). He also became famous for, among many other accomplishments, providing a solution to several unsolved problems in number theory and analysis, including the famous Basel problem. Euler has also been credited for discovering that the sum of the numbers of vertices and faces minus the number of edges of a polyhedron equals 2, a number now commonly known as the Euler characteristic. In the field of physics, Euler reformulated Newton's laws of physics into new laws in his two-volume work Mechanica to better explain the motion of rigid bodies. He also made substantial contributions to the study of elastic deformations of solid objects.
2425
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%81%E0%A6%87%E0%A6%82%20%28%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%29
সুইং (জাভা)
সুইং জাভা প্রোগ্রামিং ভাষার জন্য তৈরি একটি গুই হাতিয়ারসম্ভার (GUI toolkit)। এটি জাভা ফাউন্ডেশন ক্লাসগুলোর (JFC) একটি অংশ। সুইং-এ রয়েছে বিভিন্ন গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেস উইজেট, যেমন - টেক্সট বক্স (textboxes), বোতাম (buttons), দ্বিবিভক্ত জানালা (split panes), টেবিল (tables) ইত্যাদি। ইতিহাস ১৯৯৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর নেটস্কেপ কমিউনিকেশন কর্পোরেশন কর্তৃক অবমুক্ত হওয়া ইন্টারনেট ফাউন্ডেশন ক্লাসেস (আইএফসি) মূলত ছিলো জাভাস্ক্রিপ্টের জন্য গ্রাফিক্স লাইব্রেরি। জাভা ফাউন্ডেশন ক্লাসেস গঠনের জন্যে ১৯৯৭ সালের ২ এপ্রিল সান মাইক্রোসিস্টেমস এবং নেটস্কেপ কমিউনিকেশন কর্পোরেশন যৌথভাবে অন্যান্য প্রযুক্তির সাথে আইএফসিকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্পর্কিত তাদের অভিপ্রায় ঘোষণা করে। এই "জাভা ফাউন্ডেশন ক্লাসেস"-এরই পরবর্তীতে নামকরণ করা হয় "সুইং।" তথ্যসূত্র জাভা প্রোগ্রামিং ভাষা জাভা প্রোগ্রামিং উইজেট টুলকিট
https://en.wikipedia.org/wiki/Swing_(Java)
Swing (Java)
Swing is a GUI widget toolkit for Java. It is part of Oracle's Java Foundation Classes (JFC) – an API for providing a graphical user interface (GUI) for Java programs. Swing was developed to provide a more sophisticated set of GUI components than the earlier Abstract Window Toolkit (AWT). Swing provides a look and feel that emulates the look and feel of several platforms, and also supports a pluggable look and feel that allows applications to have a look and feel unrelated to the underlying platform. It has more powerful and flexible components than AWT. In addition to familiar components such as buttons, check boxes and labels, Swing provides several advanced components such as tabbed panel, scroll panes, trees, tables, and lists. Unlike AWT components, Swing components are not implemented by platform-specific code. Instead, they are written entirely in Java and therefore are platform-independent. In December 2008, Sun Microsystems (Oracle's predecessor) released the CSS / FXML based framework that it intended to be the successor to Swing, called JavaFX.
2426
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%20%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%B8
প্রজাতন্ত্রী টেক্সাস
প্রজাতন্ত্রী টেক্সাস ছিল উত্তর আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র এবং মেক্সিকোর মধ্যবর্তী একটি ক্ষণস্থায়ী দেশ, যা ১৮৩৬ হতে ১৮৪৫ সাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। টেক্সাস বিদ্রোহের ফলস্বরূপ মেক্সিকো হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া একটি প্রজাতন্ত্র হিসেবে এর উৎপত্তি, দেশটির অধিভূক্ত সীমানা কেবল বর্তমান মার্কিন অঙ্গরাজ্য টেক্সাসই নয়, বরং বর্তমান সময়ের নতুন মেক্সিকো, ওকলাহোমা, কান্সাস, কলোরাডো, এবং ওয়াইয়োমিং এর অংশবিশেষ নিয়ে বিস্তৃত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সহিত পূর্ব সীমানা এ‌‌ডাম্স-ওনিস চুক্তির মাধ্যমে নির্ধারিত হয়, এই চুক্তি ১৮১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং স্পেনের মধ্যে সম্পাদিত হয়। মেক্সিকোর সহিত এর দক্ষিণ এবং সর্বপশ্চিমের সীমানা প্রজাতন্ত্রের জীবদ্দশায় সর্বসময়ের জন্য বিতর্কিত ছিল, যখন টেক্সাস সীমানা হিসেবে দাবী করে রিও গ্রাণ্ডেকে এবং মেক্সিকো নুয়েসেস নদীকে সীমানা হিসেবে দাবী করে। এই বিরোধই পরবর্তীতে টেক্সাস সংযুক্তির পর আমেরিকা ও মেক্সিকোর মধ্যে সংঘটিত মার্কিন-মেক্সিকিয় যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটায়। ইতিহাস টেক্সাস বিদ্রোহের সূত্রপাত ঘটাবার জন্য দায়ী ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে দেখুন মেক্সিকিয় টেক্সাস। টেক্সাসের প্রথম অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় ১৮৩৫ সালের ৭ই নভেম্বর সান ফেলিপে ডি অস্টিন-এ। এই কাউন্সিল ১৮২৪ এর মেক্সিকিয় সংবিধান এর প্রতি সমর্থন প্রজ্ঞাপন পাস করে, এবং গভর্নর ও অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দকে নিয়োগ দেয়। এই কাউন্সিল টেক্সাসের স্বাধীনতা ঘোষণায় পিছুপা হয়। আধুনিক টেক্সাসের প্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা ইঙ্গ-টেক্সিয় বসতি স্থাপনকারীগণ এবং স্থানীয় টেখানো উভয়ের দ্বারা স্বাক্ষরিত হয় ২০শে ডিসেম্বর, ১৮৩৫-এ গোলিয়াদ-এ। ১৮৩৬ এর সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয় ব্রাজোসের তীরবর্তী ওয়াশিংটন-এ, যার সভাপতিত্ব করেন রিচার্ড এলিস, এবং টেক্সাসের স্বাধীনতা ঘোষণা বিধিবদ্ধ হয় [২রা মার্চ], ১৮৩৬, যার মাধ্যমে কার্যত প্রজাতন্ত্রী টেক্সাসের অভ্যুদয় ঘটে। এবং টেক্সাসের স্বাধীনতা ঘোষণা বিধিবদ্ধ হয় ২রা মার্চ, ১৮৩৬-এ, যার মাধ্যমে কার্যত প্রজাতন্ত্রী টেক্সাসের অভ্যুদয় ঘটে। চার দিন পর, মেক্সিকিয় জেনারেলের আন্তনিয় লোপেজ ডি সান্তা আন্নার বাহিনীর হাতে ১৮৩ জন টেক্সিয়র পরাজয়ের মধ্য দিয়ে তের দিনের আলামো অবরোধ শেষ হয়। এঁরা একটি ছোটো প্রেষণ পাহাড়া দিচ্ছিলেন যা পরবর্তীতেসান আন্টনিও). স্মরণ করূন আলামো! টেক্সাস বিদ্রোহের সিংহনাদ হয়ে ওঠে। সান খাসিন্তোর লড়াই সংঘটিত হয় ২১ শে এপ্রিল, ১৮৩৬এ, বর্তমান সময়ের হাউস্টন শহরের নিকটে। টেক্সাস জেনারেল স্যাম হাউস্টন-এর ৮০০ টেক্সিয়ানের বাহিনীর হাতে জেনারেল সান্তা আন্নার ১,৬০০ সৈন্যের পুরো বাহিনী হয় নিহত হয় অথবা ধৃত হয়; অন্যদিতে মাত্র ৯ জন টেক্সিয় মারা যান। এই চূড়ান্ত যুদ্ধই মেক্সিকো হতে টেক্সাসের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। ১৮৩৬ এর মে মাসে সম্পাদিত ভেলাস্কো চুক্তি অনুযায়ী টেক্সাস রিও গ্রাণ্ডেকে এর দক্ষিণ ও পশ্চিম সীমা হিসেবে দাবী করে। মেক্সিকো এই চুক্তিকে অবৈধ বলে প্রত্যাখ্যান করে এবং প্রজাতন্ত্রী টেক্সাসের অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দিতে প্রত্যাখ্যান করে, যদিও সকল প্রধান শক্তিই একে স্বীকৃতি দেয়। মেক্সকো দৃঢ়ভাবে টেক্সাসকে এর প্রদেশ বলে প্রচার করে। টেক্সাস মেক্সিকোর নিকট হতে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি আদায় করতে চেষ্টা করে, এমনকি আলাপ আলোচনার টেবিলে নুয়েসেসকে এর ভূখণ্ডের সীমানা হিসেবে মানতে রাজী হয়, কিন্তু কোনো ফল ছাড়াই। ব্রিটিশগণ মধ্যস্থতা করতে চাইলেও মেক্সিকিয় সরকার তা প্রত্যাখ্যান করে। ১৮৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র রিও গ্রাণ্ডের ওপর টেক্সাসের দাবী মেনে নিতে সম্মত হয় যদি টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রে যোগদান করে। মেক্সিকো যুদ্ধের হুমকি দেয়, যদি সংযুক্তি সংঘটিত হয়। ভার্জিনিয়ার অধিবাসী স্যাম হাউস্টন, দুইটি ভিন্ন মেয়াদের জন্য প্রজাতন্ত্রী টেক্সাসের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ১৮৩৬–১৮৩৮ এবং ১৮৪১–১৮৪৪। তিনি ১৮৫৯ হতে ১৮৬১ পর্যন্ত টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের রাজ্যপাল (গভর্নর) ছিলেন। প্রথম প্রজাতন্ত্রী টেক্সাসের সংসদ (কংগ্রেস) ১৮৩৬ সালের অক্টোবরে কলাম্বিয়ায় আহ্বায়িত হয় (বর্তমান পশ্চিম কলাম্বিয়া)। নতুন প্রজাতন্ত্রের সরাষ্ট্র সচিব (মন্ত্রী) হিসেবে দুই মাস দায়িত্ব পালনের পর স্টিফেন ফুলার অস্টিন, যিনি "টেক্সাসের পিতা" হিসেবে খ্যাত, ডিসেম্বর ২৭, ১৮৩৬, সালে মৃত্যুবরণ করেন। ১৮৩৭-এ স্যাম হাউস্টন রাজধানী হাউস্টনে সরিয়ে নেয়ার পূর্বে ১৮৩৬ সালে পাঁচটি জায়গা টেক্সাসের অস্থায়ী রাজধানী হিসেবে ব্যবহৃত হয় যার মধ্যে প্রথম ছিল ভেলাস্কো (বর্তমান ফ্রিপোর্ট)। এছড়াও ছিল ব্রাজোসের তীরবর্তী ওয়াশিংটন, হ্যারিসবার্গ, গ্যালভেস্টন, এবং কলাম্বিয়া (বর্তমান পশ্চিম কলাম্বিয়া)। ১৮৩৯ সালে রাজধানী নতুন শহর অস্টিনে সরিয়ে নেয়া হয়। প্রজাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি দুইটি গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। এক পক্ষ ছিল জাতীয়তাবাদী যা মিরাবো ব. লামার এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছিল এবং এদের ইচ্ছে ছিল টেক্সাসের স্বাধীনতা বলবৎ রাখা। এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যকার দ্বন্দের ওপরই ভিত্তি করে অভ্যন্তরীণ রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মিরাবো ব. লামারের নেতৃত্বে জাতিয়তাবাদী দল চাইছিল টেক্সাসের চলমান স্বাধীনতা। গ্রন্থপঞ্জি Campbell, Randolph B. Sam Houston and the American Southwest. New York: Harper-Collins, 1993. Campbell, Randolph B. An Empire for Slavery: The Peculiar Institution in Texas, 1821–1865. Baton Rouge: Louisiana State University Press, 1989. Friend, Llerena B. Sam Houston: The Great Designer. Austin: University of Texas Press, 1954. Gambrell, Herbert P. Mirabeau Bonaparte Lamar: Troubadour and Crusader. Dallas: Southwest Press, 1934. Hardin, Stephen L. Texian Iliad: A Military History of the Texas Revolution, 1835–1836. Austin: University of Texas Press, 1994. Lack, Paul D. The Texas Revolutionary Experience: A Political and Social History, 1835–1836. College Station: Texas A&M University Press, 1992. Lowrie, Samuel H. Culture Conflict in Texas, 1821–1835. New York: Columbia University Press, 1932. Montejano, David. Anglos and Mexicans in the Making of Texas, 1836–1986. Austin: University of Texas Press, 1987. Nance, Joseph Milton. After San Jacinto: The Texas-Mexican Frontier, 1836–1841. Austin: University of Texas Press, 1963. Nance, Joseph Milton. Attack and Counterattack: The Texas-Mexican Frontier, 1842. Austin: University of Texas Press, 1964. Poyo, Gerald E., ed. Tejano Journey, 1770–1850. Austin: University of Texas Press, 1996. Reséndez, Andrés. “National Identity on the Shifting Border: Texas and New Mexico in the Age of Transition, 1821–1846.” Journal of American History 86 (September 1999): 668–688. in JSTOR Weber, David J. The Mexican Frontier, 1821–1846: The American Southwest under Mexico. Albuquerque: University of New Mexico Press, 1982. Winders, Bruce. Crisis in the Southwest: The United States, Mexico, and the Struggle over Texas. Wilmington, DE: Scholarly Resources, 2002. বহিঃসংযোগ Joint Resolution for Annexing Texas to the United States, Approved March 1, 1845 Texas State Library & Archives Commission. The Handbook of Texas Online: Republic of Texas Texas: the Rise, Progress, and Prospects of the Republic of Texas, Vol. 1, published 1841, hosted by Portal to Texas History Texas: the Rise, Progress, and Prospects of the Republic of Texas, Vol. 2, published 1841, hosted by Portal to Texas History Laws of the Republic, 1836-1838 from Gammel's Laws of Texas, Vol. I. hosted by the Portal to Texas History. Laws of the Republic, 1838-1845 from Gammel's Laws of Texas, Vol. II. hosted by the Portal to Texas History. Republic of Texas Historical Resources Republic of Texas প্রজাতন্ত্রী টেক্সাস যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক অঞ্চল ও ভূখণ্ড টেক্সাসের ইতিহাস প্রজাতন্ত্রী টেক্সাস প্রাক্তন অস্বীকৃত রাষ্ট্র প্রাক্তন প্রজাতন্ত্র
https://en.wikipedia.org/wiki/Republic_of_Texas
Republic of Texas
The Republic of Texas (Spanish: República de Tejas), or simply Texas, was a breakaway state in North America. It existed for just under 10 years, from March 2, 1836 to February 19, 1846. It shared borders with Mexico, the Republic of the Rio Grande (another Mexican breakaway republic), and the United States of America. Much of its territory was controlled by Mexico or Comancheria; Mexico considered it a rebellious province during its entire existence. It was bordered by Mexico to the west and southwest, the Gulf of Mexico to the southeast, the two U.S. states of Louisiana and Arkansas to the east and northeast, and United States territories encompassing parts of the current U.S. states of Oklahoma, Kansas, Colorado, Wyoming, and New Mexico to the north and west. The Anglo residents of the area and of the republic were referred to as Texians. The Mexican state of Coahuila y Tejas declared its independence from Mexico during the Texas Revolution in 1835–1836, when the Centralist Republic of Mexico abolished autonomy from states of the Mexican federal republic. Major fighting ended on April 21, 1836, but the Mexican Congress refused to recognize the independence of the Republic of Texas, as the Treaties of Velasco was signed by Mexican President General Antonio López de Santa Anna under duress as prisoner of the Texians. The majority of the Mexican Congress did not approve the agreement. Intermittent conflicts between Mexico and Texas continued into the 1840s. The United States recognized the Republic of Texas in March 1837 but declined to annex the territory at that time. Texas was annexed by the United States on December 29, 1845, and was admitted to the Union as the 28th state on that day, with the transfer of power from the Republic to the new state of Texas formally taking place on February 19, 1846. However, the United States inherited the southern and western border-disputes with Mexico, which had refused to recognize Texas's independence or to accept U.S. offers to purchase the territory. Consequently, the annexation led to the Mexican–American War (1846–1848).
2445
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%20%E0%A6%AF%E0%A7%80%E0%A6%B6%E0%A7%81%20%E0%A6%97%E0%A6%BF%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9C%E0%A6%BE
সত্য যীশু গির্জা
সত্য যীশু গির্জা একটি স্বায়ত্বশাসিত খ্রিস্টান সম্প্রদায়। এটি সর্বপ্রথম চীন এর বেইজিং শহরে ১৯১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে পৃথিবীর ৪৫টি দেশে এর ১৫ লাখ সদস্য আছে। ভারতে এর শাখা ১৯৩২ সাল থেকে আছে। এটি প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের অনুসারী। এই মতবাদে বিশ্বাসীরা বড়দিন ও ইস্টার উদ্‌যাপন করা হয় না। যীশুর দ্বিতীয় উত্থানের পূর্বে সকল রাষ্ট্রে যীশুর শিক্ষা পৌছে দেওয়াই হচ্ছে চার্চের লক্ষ্য। এই সম্প্রদায়ের প্রধান ১০টি বিশ্বাস হল: পবিত্র আত্মা "পবিত্র আত্মার অনুভূতি প্রাপ্তি, যা আমাদের জিহ্বার সাহায্যে কথা বলার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়, হল প্রমাণ যে আমরা স্বর্গরাজ্যের উত্তরাধিকার"। পবিত্র বাণীদ্বারা অভিসিঞ্চন "পবিত্র পানি দ্বারা অভিসিঞ্চন বা ব্যাপ্টিজম হল পাপমোচন এবং পূণর্জাগরণের জন্য ঈশ্বরের অনুগ্রহ লাভের প্রক্রিয়া। ব্যাপ্টিজম প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিক প্রবহমান পানির উৎস যেমন নদী, সমুদ্র বা ঝরণায় সম্পাদিত হয়। একজন ব্যাপটিস্ট, যিনি আগেই পানির ব্যাপ্টিজমে দিক্ষিত হয়েছেন এবং পবিত্র উদ্দীপনা প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি প্রভু যীশু খ্রিস্টের নামে ব্যাপ্টিজম সম্পন্ন করেন। ব্যাপ্টিজমের দীক্ষা গ্রহণকারী ব্যক্তি অবশ্যই পানিতে সম্পুর্ণভাবে ডুব দেবে এবং এ সময় তার মাথা নোয়ানো এবং মুখ নিচের দিকে থাকবে"। পদ ধৌতকরণ "পদ পরিষ্কার করার আধ্যাত্মিক প্রক্রিয়া একজন ব্যক্তিকে প্রভূ যীশুর সাথে একটি অংশের অংশীদারিত্বের সুযোগ করে দেয়। এটি নিত্য স্মরণ করিয়ে দেয় যে একজন ব্যক্তির অবশ্যই প্রেম, পবিত্রতা, নম্রতা, ক্ষমাশীলতা এবং পরার্থপরায়ণতা থাকবে। পানি বা ওয়াটার ব্যাপ্টিজম গ্রহণ করেছে এমন সব ব্যক্তিকে অবশ্যই যীশু খ্রিস্টের নামে তাদের পদ ধৌতকরণ করতে হবে। পারস্পরিক পদ ধৌতকরণের চর্চা উপযুক্ত পরিবেশে করা সম্ভব"। খ্রিস্টের শেষ সান্ধ্যভোজপর্বের আধ্যাত্মিক যোগাযোগ "পবিত্র ধ্যান হল প্রভূ যীশু খ্রিস্টের মৃত্যুর স্মরণে অনুষ্ঠান। এটি আমাদেরকে প্রভূর মাংস ও রক্তের অংশী করে এবং তার সাথে ধ্যানে মগ্ন করে যাতে আমরা চিরন্তন জীবন লাভ করি এবং চূড়ান্ত দিনে উত্থিত হই। সংস্কার অনুষ্ঠানটি অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব সম্পন্ন করতে হবে। কেবল কিণ্ব বা খমির মিশিয়ে গাঁজানো হয় নি এমন একটি রুটি এবং আঙ্গুরের রস ব্যবহার করা যাবে"। সাবাথ বা সাপ্তাহিক পবিত্র দিন "কর্মবিরতির জন্য শাস্ত্রনির্ধারিত দিন, সপ্তাহের সপ্তম দিন (শনিবার), একটি পবিত্র দিবস, যা ঈশ্বরের আর্শীবাদপুষ্ট এবং পবিত্রীকৃত। এই দিনটিকে প্রভূর মাধুর্যের অধীনে ঈশ্বরের সৃষ্টি এবং আত্মশুদ্ধি উৎযাপন এবং আসন্ন জীবনের শ্বাশ্বত শান্তির আকাঙ্খায় পালিত হবে"। যীশু খ্রীস্ট "যীশু খ্রিস্ট, সেই বাইবেল যা মানবদেহে পরিণত হয়েছিল, পাপিষ্ঠদের প্রায়শ্চিত্ত করতে ক্রুশবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তৃতীয় দিনে তার পুনরুত্থান ঘটে এবং তিনি স্বর্গে অধিষ্ঠিত হন। তিনি মানবজাতির একমাত্র রক্ষাকর্তা, স্বর্গ ও পৃথিবীর স্রস্টা, এবং একমাত্র শ্বাশ্বত ঈশ্বর"। বাইবেল "পবিত্র বাইবেল, যাতে পুরনো ও নতুন সাক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত তা ঈশ্বরের দ্বারা অনুপ্রাণিত, একমাত্র শাস্ত্রসম্মত সত্য, এবং খ্রিস্টীয় জীবনাচারের আদর্শ"। মোক্ষলাভ "ঈশ্বরের মাধুর্য মুক্তির পথ দিয়েছে বিশ্বাসের মাধ্যমে। বিশ্বাসীরা পবিত্রতা অর্জনে অবশ্যই পবিত্র প্রেরণার উপর নির্ভরশীল হবে, ঈশ্বরকে ভক্তি করবে এবং মানবতাকে ভালবাসবে"। গির্জা "ল্যাটার রেইন" বা বিলম্বিত বৃষ্টিপাতের সময়ে যীশু খ্রিস্টের পবিত্র প্রেরণার মাধ্যমে স্থাপিত ট্রু জিসাস চার্চ বা সত্য যীশু গির্জা হল প্রচারকত্ব সময়ের পুনর্স্থাপিত সত্য গির্জা"। শেষ বিচার "যীশুর দ্বিতীয় আগমন ঘটবে চূড়ান্ত দিনে যখন তিনি স্বর্গ থেকে অবরোহন করে বিশ্বের বিচার করবেন: ন্যায়পরায়ণরা চিরন্তন জীবন লাভ করবেন, আর দুর্বৃত্তরা চিরকালের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হবে"। বহিঃসংযোগ TJC Evangelical site TJC International Assembly The TJC United States General Assembly TJC United Kingdom TJC West Malaysia TJC Hong Kong World TJC websites directory সত্য যীশু গির্জা ১৯১৭-এ প্রতিষ্ঠিত খ্রিস্টান সংগঠন ১৯১৭-এ চীনে প্রতিষ্ঠিত
https://en.wikipedia.org/wiki/True_Jesus_Church
True Jesus Church
The True Jesus Church (TJC) is a non-denominational Christian Church that originated in Beijing, China, during the Pentecostal movement in the early twentieth century. The True Jesus Church is currently one of the largest Christian groups in China and Taiwan, as well as one of the largest independent churches in the world.
2452
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%20%E0%A6%B8%E0%A6%82%E0%A6%96%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE
স্বাভাবিক সংখ্যা
গণিতে স্বাভাবিক সংখ্যা হলো সেইসব পূর্ণসংখ্যা যা গণনার কাজে (যেমন ৫টি আপেল) বা ক্রম নির্দেশ করতে (যেমন চট্টগ্রাম বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম শহর) ব্যবহার করা হয়। স্বাভাবিক সংখ্যা মানুষের ব্যবহার করা সবচেয়ে আদিম সংখ্যা পদ্ধতিগুলোর একটি। মানুষ প্রতিদিনের গণনার কাজে এই সংখ্যাগুলো ব্যবহার করে। গণনার জন্য ব্যবহৃত সংখ্যাগুলোকে অঙ্কবাচক সংখ্যা এবং ক্রম করার জন্য ব্যবহৃত সংখ্যাগুলিকে ক্রমবাচক সংখ্যা বলা হয়।স্বাভাবিক সংখ্যাগুলি সেট তৈরি করে। স্বাভাবিক সংখ্যার সেটকে ধারাবাহিকভাবে প্রসারিত করে আরও অনেক সংখ্যার সেট তৈরি করা হয়: পূর্ণসংখ্যা,মূলদ সংখ্যা,বাস্তব সংখ্যা; জটিল সংখ্যা,ইত্যাদি। স্বাভাবিক সংখ্যার সেটে শূন্যকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কেউ কেউ শুধু ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে স্বাভাবিক সংখ্যাকে বলেন {১,২,৩, ...}, কেউ কেউ অঋণাত্মক সংখ্যার সেট {০,১,২,৩, ...} দিয়ে সংজ্ঞা প্রদান করেন। প্রথম সংজ্ঞাটি প্রাচীনকাল থেকে চলে আসছে, দ্বিতীয়টি উনিশ শতকে জনপ্রিয় হয়। স্বাভাবিক সংখ্যার সেট অসীম। একে দিয়ে প্রকাশ করা হয়। ইতিহাস একটি প্রাকৃতিক সংখ্যা উপস্থাপনের সবচেয়ে আদিম পদ্ধতি হল প্রতিটি বস্তুর জন্য একটি চিহ্ন রাখা।বিমূর্তকরণের প্রথম প্রধান অগ্রগতি ছিল সংখ্যার প্রতিনিধিত্ব করতে সংখ্যার ব্যবহার।প্রাচীন মিশরীয়রা 1, 10, এবং 10-এর সমস্ত শক্তি 1 মিলিয়ন পর্যন্ত স্বতন্ত্র হায়ারোগ্লিফ সহ সংখ্যার একটি শক্তিশালী পদ্ধতি তৈরি করেছিল।প্রাকৃতিক সংখ্যার সেট-তাত্ত্বিক সংজ্ঞা ফ্রেজ শুরু করেছিলেন।তিনি প্রাথমিকভাবে একটি স্বাভাবিক সংখ্যাকে নির্দিষ্ট সেটের সাথে এক-এক চিঠির মধ্যে থাকা সমস্ত সেটের শ্রেণী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করেছিলেন।দ্বিতীয় শ্রেণীর সংজ্ঞাটি চার্লস স্যান্ডার্স পিয়ার্স দ্বারা প্রবর্তন করা হয়েছিল, রিচার্ড ডেডেকিন্ড দ্বারা পরিমার্জিত, এবং আরও অন্বেষণ করেন জিউসেপ্পে পিয়ানো; এই পদ্ধতিকে এখন পিয়ানো পাটিগণিত বলা হয়। এটি অর্ডিনাল সংখ্যার বৈশিষ্ট্যগুলির একটি স্বতঃসিদ্ধকরণের উপর ভিত্তি করে: প্রতিটি প্রাকৃতিক সংখ্যার একটি উত্তরসূরি রয়েছে এবং প্রতিটি অ-শূন্য প্রাকৃতিক সংখ্যার একটি অনন্য পূর্বসূরী রয়েছে। আরো দেখুন পূর্ণ সংখ্যা তথ্যসূত্র সংখ্যা অঙ্কবাচক সংখ্যা প্রাথমিক গণিত পূর্ণ সংখ্যা সংখ্যাতত্ত্ব
https://en.wikipedia.org/wiki/Natural_number
Natural number
In mathematics, the natural numbers are the numbers 0, 1, 2, 3, etc., possibly excluding 0. Some define the natural numbers as the non-negative integers 0, 1, 2, 3, ..., while others define them as the positive integers 1, 2, 3, ... . Some authors acknowledge both definitions whenever convenient. Some texts define the whole numbers as the natural numbers together with zero, excluding zero from the natural numbers, while in other writings, the whole numbers refer to all of the integers (including negative integers). The counting numbers refer to the natural numbers in common language, particularly in primary school education, and are similarly ambiguous although typically exclude zero. The natural numbers can be used for counting (as in "there are six coins on the table"), in which case they serve as cardinal numbers. They may also be used for ordering (as in "this is the third largest city in the country"), in which case they serve as ordinal numbers. Natural numbers are sometimes used as labels—also known as nominal numbers, (e.g. jersey numbers in sports)—which do not have the properties of numbers in a mathematical sense. The natural numbers form a set, commonly symbolized as a bold N or blackboard bold ⁠ N {\displaystyle \mathbb {N} } ⁠. Many other number sets are built by successively extending the set of natural numbers: the integers, by including an additive identity 0 (if not yet in) and an additive inverse −n for each nonzero natural number n; the rational numbers, by including a multiplicative inverse 1 / n {\displaystyle 1/n} for each nonzero integer n (and also the product of these inverses by integers); the real numbers by including the limits of Cauchy sequences of rationals; the complex numbers, by adjoining to the real numbers a square root of −1 (and also the sums and products thereof); and so on. This chain of extensions canonically embeds the natural numbers in the other number systems. Properties of the natural numbers, such as divisibility and the distribution of prime numbers, are studied in number theory. Problems concerning counting and ordering, such as partitioning and enumerations, are studied in combinatorics.
2454
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%85%E0%A6%B8%E0%A7%80%E0%A6%AE
অসীম
অসীম (ইংরেজি: Infinity) হলো যা সীমাহীন বা অন্তহীন, অনন্ত। গণিতে অসীম হলো সীমাহীন কোনো সংখ্যা যা যেকোনো স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে বড়। এটি প্রায়শই অসীম প্রতীক দ্বারা প্রকাশ করা হয়। প্রাচীনকালে, গ্রিক গণিতে অসীমের দার্শনিক রূপ প্রদানের জন্য গ্রিক দার্শনিকগণ বিস্তর আলোচনা ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। ১৭ শতকের দিকে, গণিতবিদগণ অসীম প্রতীক এবং অসীম ক্যালকুলাস ধারণার বিকাশ সাধন করেন। গণিতবিদগণ অসীম সিরিজ নিয়ে কাজ করতে শুরু করেন এবং কোনো কোনো গণিতবিদ যেমন: লো'পিটাল এবং বার্নোলি অসীম সংখ্যক ক্ষুদ্রবস্তুর ধারণা বিবেচনা করেন এবং অসীম বস্তু গণনায় অসীম প্রক্রিয়া ধারণার উন্মেষ ঘটান। যেহেতু, গণিতবিদগণ ক্যালকুলাসের ভিত্তি তৈরিতে তৎপর ছিলেন, কিন্তু এটি অস্পষ্ট যে, অসীমকে একটি সংখ্যা বা মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে কিনা এবং যদি তাই হয় তবে এটি কীভাবে করা যেতে পারে। ১৯ শতকের শেষ দিকে জর্জ ক্যান্টর অসীম সেট এবং অসীম সংখ্যা নিয়ে গবেষণা করেন এবং দার্শনিক তত্ত্ব থেকে অসীমকে সুস্পষ্ট গাণিতিক ধারণা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন এবং গণিতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসীম ধারণার পথ নির্দেশ করেন এবং দেখান যে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসীমের আকার বিভিন্ন রকম। উদাহরণস্বরূপ: যদি একটি তলে অবস্থিত একটি রেখাকে তার সমস্ত বিন্দুর সেট হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তবে তাদের অসীম সংখ্যা (অর্থাৎ, রেখার অঙ্কবাচকতা) সবচেয়ে বড় পূর্ণসংখ্যার চেয়েও বড়। এর ফলে, অসীমকে একটি গাণিতিক ধারণা হিসেবে প্রকাশ করা, অসীম গাণিতিক বস্তু অধ্যয়ন করা, অন্য গাণিতিক ধারণার মতোই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এই ধারণা ব্যবহার করা যায়। অসীমতার পুরোনো দার্শনিক ধারণাকে পরিমার্জিত করে এবং প্রসারিত করে, বিশেষত বিভিন্ন আকারের অসীমের ধারণা প্রবর্তন করা হয়। জার্মেলো-ফ্রাংকেলের সেট তত্ত্বের স্বতঃসিদ্ধসমূহের ওপর ভিত্তি করে আধুনিক গণিতের বিকাশ সাধিত হয়েছে। মূলত, এই স্বতঃসিদ্ধগুলো হলো অসীমতার স্বতঃসিদ্ধতা, যা অসীম সেটের বিদ্যমানতা সিদ্ধ করে। অসীমতার গাণিতিক ধারণা এবং অসীম সেটের স্বতঃসিদ্ধতা আধুনিক গণিতের সর্বত্র ব্যবহৃত হয়। এমনকি, কম্বিনেট্রিক্সের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসীমতার ধারণা ব্যবহার করে সমস্যা সমাধান করা হয়। উদাহরণস্বরূপ: ফার্মার শেষ উপপাদ্যের ওয়াইলেসের প্রমাণে বিশাল আকারের অসীম সেটের ধারণা ব্যবহার করা হয়েছে। পদার্থবিজ্ঞান এবং বিশ্ব তত্ত্বে, মহাবিশ্ব স্থানিকভাবে অসীম কী না- তা বর্তমানে একটি বহুল আলোচিত প্রশ্ন। ইতিহাস প্রাচীনকালের গণিতবিদগণ বিভিন্ন প্রকারের অসীম সম্পর্কে অবগত ছিলেন। আধুনিক গণিতবিদগণ গাণিতিক বিষয়বস্তু হিসেবে অসীমকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত এবং এর প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন ঠিক সেভাবে প্রাচীন ভারতীয় এবং প্রাচীন গ্রিসের গণিতবিদগণ অসীমকে সংজ্ঞায়িত ও বিশ্লেষণ করেননি। বরং, প্রাচীনকালের গণিতবিদগণ অসীমকে দার্শনিক ধারণা রূপে ব্যাখ্যা করেন। প্রাচীন গ্রিস প্রাচীন গ্রিসের প্রাক-সক্রেটিসীয় দার্শনিক আনাক্সিমান্দ্রোস (খ্রিস্টপূর্ব ৬১০ - খ্রিস্টপূর্ব ৫৪৬) সর্বপ্রথম অসীমের ধারণা ব্যাখ্যা করেন, এমন লিপিবদ্ধ ইতিহাস পাওয়া গেছে। তিনি অ্যাপিরন শব্দটি ব্যবহার করেন, যার অর্থ "সীমাহীন", "অনন্ত", এবং সম্ভবত "অসীম" হিসাবে অনুবাদ করা যেতে পারে। অ্যারিস্টটল (খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০) সম্ভাব্য অসীমকে প্রকৃত অসীম থেকে আলাদা করেন, যেটিকে তিনি অসম্ভব বলে গণ্য করতেন এবং বিভিন্ন প্যারাডক্সের কারণে এটি উৎপন্ন হয়েছে বলে মনে করতেন। এমন বিতর্ক প্রচলিত যে, এই দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সামঞ্জস্যের ফলে মনে করা হয়, হেলেনিস্টিক গ্রিকদের "অসীমের প্রতি ভীতি ছিল"। উদাহরণস্বরূপ, ইউক্লিড (প্রায় খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ) বলেননি যে, মৌলিক সংখ্যা অসীম। বরং, তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, "মৌলিক সংখ্যা, কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যক মৌলিক সংখ্যার চেয়েও অনেক বেশি। এটিও প্রচলিত রয়েছে যে, মৌলিক সংখ্যার অসীমতা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে, ইউক্লিড "অসীমের প্রতি ভীতি কাটিয়ে উঠেন"। জিনোর প্যারাডক্স: একিলিস এবং কচ্ছপ এলিয়ার জিনো (খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৫ - খ্রিস্টপূর্ব ৪৩০) অসীম বিষয়ক কোনো ধারণা ব্যক্ত করেননি। বরং তার প্যারাডক্স", বিশেষ করে "অ্যাকিলিস এবং কচ্ছপ", একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা যা, তৎকালীন অসীম বিষয়ক জনপ্রিয় ধারণার অপর্যাপ্ততাকে স্পষ্ট করে। দার্শনিক বারট্রান্ড রাসেল বলেছেন যে, এসব প্যারাডক্স "অপরিমেয়ভাবে সূক্ষ্ম এবং গভীর চিন্তাপূর্ণ।" প্যারাডক্সটি এরকম, অ্যাকিলিস এবং একটি কচ্ছপের মধ্যে একটি দৌড় প্রতিযোগিতা হয়। শর্ত হলো কচ্ছপ কিছুটা এগিয়ে থেকে দৌড় শুরু করবে। ধাপ #১: প্রতিযোগিতায় অ্যাকিলিস যখন কচ্ছপের দৌড় শুরুর বিন্দুতে ছুটে যায়, তখন কচ্ছপ কিছু পথ এগিয়ে থাকে। ধাপ #২: অ্যাকিলিস, কচ্ছপের ধাপ #১ এর শেষে যেখানে ছিল সেখানে পৌছায় তখন কচ্ছপ আরও এগিয়ে যায়। ধাপ #৩: অ্যাকিলিস অগ্রসর হয়ে যেখানে কচ্ছপের ধাপ #২ এর শেষ সে অবস্থানে পৌছায়, তখন কচ্ছপ আরও এগিয়ে যায়। ধাপ #৪: অ্যাকিলিস কচ্ছপের ধাপ #৩ এর শেষ যেখানে ছিল সেখানে পৌছায় তখন কচ্ছপ তার থেকে আরও পথ এগিয়ে যায়। ইত্যাদি। স্পষ্টতই দেখা যায় যে, অ্যাকিলিস কখনই কচ্ছপকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না, যেহেতু সে যতই ধাপ অতিক্রম করুক না কেন, কচ্ছপটি তার থেকে এগিয়ে থাকে। জিনো অসীম বিন্দু বা অসীম সম্পর্কে কোনো ধারণা প্রদান করেননি। ইলিয়াটিক্স স্কুলের সদস্য, জিনো মনে করতেন গতি হলো মায়া বা বিভ্রম। তিনি মনে করতেন, অ্যাকিলিস আদৌ দৌড়ে কচ্ছপকে অতিক্রম করতে পারবে না। পরবর্তী চিন্তাবিদগণ, এই সমাধানটিকে অগ্রহণযোগ্য মনে করেন, এই প্যারাডক্সের অন্যান্য দুর্বলতা খুঁজে পেতে দুই সহস্রাব্দেরও বেশি সময় ধরে ব্যাপক চিন্তাভাবনা করেছেন। অবশেষে, ফরাসি গণিতবিদ অগাস্টিন লুই কোশি ১৮২১ সালে, এই প্যারাডক্সের একটি সন্তোষজনক সমাধান প্রদান করেন এবং প্রমাণ করেন যে, , তিনি বলেন, ধরুন, অ্যাকিলিস প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার বেগে ছুটছে, কচ্ছপটি প্রতি সেকেন্ডে ০.১ মিটার বেগে হাঁটছে এবং কচ্ছপ ১০০ মিটার এগিয়ে থেকে দৌড় শুরু করে। কোশির প্যাটার্ন অনুযায়ী, কচ্ছপের গতি এবং অ্যাকিলিসের গতি । অ্যাকিলিস, কচ্ছপকে অতিক্রম করতে পারে। এতে অ্যাকিলিসের সময় লাগে: প্রাচীন ভারত প্রাচীন ভারতের জৈন গণিতবিদ সূর্য প্রজ্ঞাপ্তি (খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ - ৩য় অব্দ) সমস্ত স্বাভাবিক সংখ্যাকে তিনটি সেটে শ্রেণিবিন্যাস করেন: গণনাযোগ্য, অগণনাযোগ্য এবং অসীম। এই তিন প্রকারকে আরো তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়: গণনাযোগ্য: সর্বনিম্ন, মধ্যবর্তী এবং সর্বোচ্চ, অগণনাযোগ্য: প্রায় অগণনাযোগ্য, প্রকৃত অগণনাযোগ্য এবং অসংখ্য অগণনাযোগ্য, অসীম: প্রায় অসীম, প্রকৃত অসীম এবং অসীম সংখ্যক অসীম। সপ্তদশ শতক ১৭ শতকে, ইউরোপীয় গণিতবিদগণ পদ্ধতিগতভাবে অসীম সংখ্যা এবং অসীম অভিব্যক্তি ব্যবহার শুরু করেন। ১৬৫৫ সালে, গণিতবিদ জন ওয়ালিস তাঁর ডে সেকশনিবাস কনিসিস বইয়ে সর্বপ্রথম অসীম সংখ্যক সংখ্যা বুঝাতে অসীম প্রতীক ব্যবহার করেন। তিনি অর্ডারে প্রস্থ বরাবর ইনফিনিটেসিমাল সংখ্যক ভাগ করে কোনো আকৃতির ক্ষেত্রফল নির্ণয়ে এটি ব্যবহার করেন। এছাড়া, ১৬৫৫ সালে রচিত অ্যারিথমেটিকা ইনফিনিটোরাম-এ, তিনি কতগুলো পদ বা গুণনীয়ক লিখেন এবং তারপর অসীম সিরিজ, অসীম সংখ্যক গুণফল এবং অসীম সংখ্যক ভগ্নাংশ প্রকাশ করেন, যেমন: "&c.", "১, ৬, ১২, ১৮, ২৪, &c. ১৬৯৯ সালে, আইজ্যাক নিউটন, লাতিন ভাষায় লেখা তাঁর বই ডে অ্যানালাইসি পার একুশনেস নিউমেরো তেরমিনোরাম ইনফিনিতাস-এ অসীম সংখ্যক পদের সমীকরণ ব্যাখ্যা করেন। গণিতে অসীম ১৯৩০ সালে জার্মান গণিতবিদ হের্মান ওয়াইল আধুনিক গণিতে অসীমকে দার্শনিক বিষয় হিসেবে প্রথম ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেছেন: অসীম প্রতীক গণিতে, অসীম রাশির ধারণা প্রকাশের জন্য অসীম প্রতীক ব্যবহার করা হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এই প্রতীককে লেমনিসক্যাট বলা হয়। এই প্রতীকটি ইউনিকোডে U+221E ∞ INFINITY (∞) এবং ল্যাটেক (LaTeX) ভাষায় \infty রূপে এনকোডিং করা হয়েছে। ১৬৫৫ সালে, গণিতবিদ জন ওয়ালিস সর্বপ্রথম গণিতে অসীম প্রতীকটি ব্যবহার করেন। এর প্রথম প্রচলনের পর হতেই এটি গণিতের বাইরে আধুনিক রহস্যবিদ্যা এবং সাহিত্যের প্রতীকবিদ্যায়ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্যালকুলাস জার্মান গণিতজ্ঞ এবং ইনফিনিটেসটিম্যাল ক্যালকুলাসের সহযোগী উদ্ভাবক গটফ্রিড লাইবনিৎজ, অসীম সংখ্যা এবং গণিতে তাদের ব্যবহার সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা ও বিস্তারিত বর্ণনা করেন। লাইবনিৎজের মতে, সম প্রকৃতির না হলেও অসীম সংখ্যা এবং অসীম রাশি উভয়ের আদর্শ সত্তা রয়েছে। অবিচ্ছিন্নতার নীতি অনুযায়ী, এরা একই বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। রিয়েল অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে অসীম ধারণা রিয়েল অ্যানালাইসিসে অসীম প্রতীককে অসীম বা ইনফিনিটি বলা হয় এবং অসীম সীমা প্রকাশে এটি ব্যবহৃত হয়। নোটেশন বুঝায় যে, চলক এর মান অসীম মাত্রায় বৃদ্ধি পায় এবং বুঝায় যে, চলক এর মান অসীম মাত্রায় হ্রাস পায়। উদাহরণস্বরূপ: যদি এর প্রতিটি মানের জন্য for every , তাহলে- বুঝায় যে, ফাংশন এর মান থেকে এর মধ্যে নেই এর কোনো সসীম সীমা নেই। বুঝায় যে, ফাংশন এর মান অসীম। বুঝায় যে, ফাংশন সকল মান সসীম এবং এর সমান। অসীম ধারার সাহায্যেও অসীম ধারণা প্রকাশ করা যায়। যেমন: বুঝায় যে, (কনভার্জেন্ট সিরিজে) অসীম ধারার যোগফল বাস্তব সংখ্যা বা মান এর দিকে অভিসারী হয়। বুঝায় যে, অসীম সিরিজের যোগফল সঠিকভাবে অসীমে বিবর্তিত হয়, এই অর্থে যে আংশিক যোগফল সীমা ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। (ডাইভার্জেন্ট সিরিজ) অধিকন্তু, একটি সীমাকে সংজ্ঞায়িত করার পাশাপাশি, বর্ধিত বাস্তব সংখ্যা পদ্ধতিতে অসীমকে একটি মান হিসাবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। বাস্তব সংখ্যার টপোলজিক্যাল স্পেস বা জ্যামিতিক সমতলে ধনাত্মক অসীম এবং ঋণাত্মক অসীম , বাস্তব সংখ্যার পরিধি বুঝাতে দুটি বিন্দু হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে, এই ধারণার অন্য নাম কম্পেকটিফিক্যাশন। এই দুটিতে বীজগাণিতিক বৈশিষ্ট্য যুক্ত করলে বা বীজগণিতীয় রাশি হিসেবে ব্যাখ্যা করা হলে এক্সটেন্ডেড রিয়েল নাম্বার সংখ্যারেখা পাওয়া যায়। বীজগাণিতিকভাবে ধনাত্মক অসীম () ও ঋণাত্মক অসীম ()কে একই তলে একটি বিন্দু ধরে নেওয়া হলে, বাস্তব সংখ্য়ার ওয়ান-পয়েন্ট কম্পেকটিফিক্যাশন রেখা বা ধারণা পাওয়া যায়। একে গণিতের ভাষায় রিয়েল প্রজেক্টিভ লাইন বা রেখা বলা হয়। অভিক্ষেপ জ্যামিতি হলো অসীম সংখ্যক সরল রেখার সমতলীয় জ্যামিতি, যেখানে একটি ত্রিমাত্রিক সমতলে ও স্থানিক পর্যায়ে বা ডাইমেনশনে অসীম সংখ্যক বিন্দুর সমন্বয়ে অসীম রেখা ও হাইপার অসীম সরলরেখাকে‌‌ উপস্থাপন করা হয়। কমপ্লেক্স অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে অসীম কমপ্লেক্স অ্যানালাইসিস বা জটিল সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে অসীম প্রতীক ()-কেই অসীম বলা হয়, এটা দিয়ে বুঝানো হয় যে, অনির্দিষ্ট সংখ্যক অসীম সীমা। দ্বারা বুঝানো হয় যে, of  এর ম্যাগনিটুড একটি নির্দিষ্ট মাত্রার চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পায়। জটিল সংখ্যার টপোলজিক্যাল স্পেস বা জ্যামিতিক সমতলে অসীম বিন্দু () যুক্ত করা যেতে পারে, যাকে বলা হয় ওয়ান-পয়েন্ট কম্পেক্টিফিক্যাশন। যখন এটি করা হয়, তখন একটি এক-মাত্রিক কমপ্লেক্স বা জটিল ম্যানিফোল্ড তৈরি হয়, যার নাম রিম্যান সারফেস। আর রিম্যান সারফেসের বর্ধিত রূপকে এক্সটেন্ডেড জটিল সমতল বা রিম্যান গোলক বলা হয়। বর্ধিত বাস্তব সংখ্যার জন্য উপরে দেওয়া অনুরূপ গাণিতিক ক্রিয়াকলাপগুলিও সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে, প্রতীকরূপে এটার কোনো পার্থক্য নেই। তবে, একটি ব্যতিক্রম ধারণা হতে পারে, অসীম নিজে নিজে যোগ হতে পারে না। অন্য়দিকে, জটিল সংখ্যার অসীম ধারণা শূন্য দ্বারা ভাগ ধারণাকে প্রকাশ করে। অর্থাৎ কোনো অশূন্য জটিল সংখ্যা এর ক্ষেত্রে, । এই প্রসঙ্গে, রিম্যান গোলকের শীর্ষবিন্দুর মান হলে মেরোমরফিক ফাংশনগুলোকে রিম্যান গোলকে উপস্থাপন করা যায়। অসীম বিন্দুর ক্ষেত্রে জটিল সংখ্যাভিত্তিক কোনো ফাংশনের মান অসীম পর্যন্ত বর্ধিত করা যেতে পারে। এইরকম ফাংশনের অন্যতম উদাহরণ হলো মরবিউস ট্রান্সফরমেশন ফাংশনগুলো। ননস্ট্যান্ডার্ড অ্যানালাইসিস আইজ্যাক নিউটন এবং গটফ্রিড লাইবনিজ তাদের অসীম ক্যালকুলাসের মূল ধারণা প্রণয়নের ক্ষেত্রে ইনফিনিটেসিমাল পরিমাণ ব্যবহার করেন। বিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে এসে দেখা যায় যে, আধুনিক বিভিন্ন যৌক্তিক সিস্টেমের আলোকে বিবেচনার ক্ষেত্রে নিউটন এবং লাইবনিজের এই ধারণা আধুনিক অসীম বিশ্লেষণ এবং ননস্ট্যান্ডার্ড অ্যানালাইসিসে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে গণিতবিদগণ ব্যাখ্যা করেন যে, ইনফিনিটেসিমালগুলো বিপরীতমুখী এবং তাদের ইনভার্সগুলোর মান অসীম। এই ধারণা অনুসারে অসীমগুলো হলো একটি হাইপাররিয়েল ক্ষেত্রের অংশ; ক্যান্টোরিয়ান ট্রান্সফিনাইটের মতো তাদের মধ্যে কোন সমতা নেই। উদাহরণস্বরূপ: এই অর্থে যদি H একটি অসীম সংখ্যা হয়, তবে H + H = 2H এবং H + 1 হলো স্বতন্ত্র অসীম সংখ্যা। ‌‌ননস্ট্যান্ডার্ড ক্যালকুলাসে এই পদ্ধতিটি কেইসলার (১৯৮৬) কর্তৃক সম্পূর্ণরূপে বিকশিত হয়েছে। সেট তত্ত্ব গণিতবিদ গেয়র্গ কান্টর তাঁর সেট তত্ত্বে ট্রান্সফিনিট নাম্বার ধারণার ভিত্তিতে দুই ধরনের অসীমের কথা উল্লেখ করেছেন- অর্ডিনাল অসীম এবং কার্ডিনাল অসীম। এই পদ্ধতিতে, অঙ্কবাচক সকল স্বাভাবিক সংখ্যার সেটের প্রথম ট্রান্সফিনিট কার্ডিনাল হল আলেফ-নাল (ℵ0)। পরিমাণগত অসীমের এই আধুনিক গাণিতিক ধারণাটি ১৯ শতকের শেষের দিকে সংগ্রহ বা সেটের ধারণার আলোকে ক্যান্টর, গটলব ফ্রেজ, রিচার্ড ডেডেকিন্ড এবং অন্যান্য গণিতবিদদের কাজ থেকে বিকশিত হয়েছে। ডেডেকিন্ডের দৃষ্টিভঙ্গি হলো- সেটের আকারের তুলনা করার জন্য একের সাথে-এক সমরূপতা ধারণাকে একটি মান হিসেবে গ্রহণ করা এবং গ্যালিলিওর তত্ত্ব (মূলত ইউক্লিড প্রথম ব্যাখ্যা করেন) প্রত্যাখ্যান করা যে, পূর্ণ তার অংশের আকারের সমান হতে পারে না। (তবে, গ্যালিলিওর প্যারাডক্সে, গ্যালিলিও উপসংহারে পৌঁছেছেন যে, ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাগুলোর সাথে ধনাত্মক পূর্ণবর্গসংখ্যার উপসেটের সাথে তুলনা করা যায় না। কারণ, উভয়ই অসীম সেট।) একটি অসীম সেটকে সহজভাবে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যেটির আকার কমপক্ষে এর একটি প্রকৃত অংশের সমান; অসীমতার এই ধারণাটিকে ডেডেকিন্ড অসীম বলা হয়। ক্যান্টর দুই ধরনের অসীম সংখ্যাকে সংজ্ঞায়িত করেছেন: ক্রমবাচক সংখ্যা এবং কার্ডিনাল সংখ্যা। অবিচ্ছিন্নতার কার্ডিন্যালিটি ক্যান্টরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিজাল্টের মধ্যে একটি হলো- অবিচ্ছিন্নতার কার্ডিনালিটি , স্বাভাবিক সংখ্যা -এর থেকে বৃহত্তর: অর্থাৎ, স্বাভাবিক সংখ্যা থেকে অধিক সংখ্যক বাস্তব সংখ্যা রয়েছে। ক্যান্টর সূত্রাকারে তা দেখিয়েছেন যে, । অবিচ্ছিন্নতার উপপাদ্য অনুসারে, বাস্তব সংখ্যার অঙ্কবাচকতা এবং স্বাভাবিক সংখ্যার অঙ্কবাচকতার মধ্যে কোনো অঙ্কবাচক সংখ্যা নেই। অর্থাৎ, । এই হাইপোথিসিসটি ব্যাপকভাবে গৃহীত জারমেলো-ফ্রেঙ্কেল সেট তত্ত্বের আলোকে এমনকি পছন্দের স্বতঃসিদ্ধতার আলোকে প্রমাণিত বা অপ্রমাণিত করা যায় না। জ্যামিতি ১৯ শতকের শেষ অবধি, জ্যামিতিতে অসীম খুব কমই আলোচিত হয়েছে, এমন প্রক্রিয়ার প্রেক্ষাপটে যা কোনো সীমা ছাড়াই চালিয়ে যেতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, একটি রেখা যাকে বর্তমানে রেখাংশ বলা হয়, এই শর্তে যে কেউ এটিকে যতদূর চায় ততদূর প্রসারিত করতে পারে; কিন্তু এটাকে অসীম পর্যন্ত প্রসারিত করতে চাইলে তা জ্যামিতিতে প্রশ্নাতীত ধারণা মনে করা হত। একইভাবে, একটি রেখাকে সাধারণত অসীমভাবে অনেকগুলো বিন্দু দিয়ে গঠিত বলে পূর্বে মনে করা হত না, তবে এটি এমন একটি অবস্থান যেখানে একটি বিন্দু স্থাপন করা যেতে পারে। এমনকি, যদি অসীমভাবে অনেক সম্ভাব্য স্থান থাকে, তবে একটি রেখায় শুধুমাত্র কতিপয় সীমিত সংখ্যক বিন্দু স্থাপন করা যেতে পারে। পূর্বের গণিতবিদগণ মনে করতেন, ‍‍‍‍‍"একটি বিন্দুর লোকাস বা অবস্থান কিছু বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে" (একবচনে)। অন্যদিকে, আধুনিক গণিতবিদগণ সাধারণত বলেন, " একটি রেখা হলো বহু বিন্দুর একটি সেট যার কিছু বৈশিষ্ট্য আছে" (বহুবচনে)। প্রকৃত অসীমের সাথে সম্পর্কিত গাণিতিক ধারণার বিরল ব্যতিক্রমগুলোর মধ্যে একটি হল প্রোজেক্টিভ জ্যামিতি, যেখানে ইউক্লিডীয় সমতলে অসীমসংখ্যক বিন্দু যুক্ত করে পরিপ্রেক্ষিত বা পারস্পেক্টিভ প্রভাব মডেলিং বা তৈরি করা হয়। যেখানে দেখা যায় যে, সমান্তরাল রেখাগুলো পরষ্পরকে অসীম বিন্দুতে ছেদ করছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি প্রজেক্টিভ সমতলে, দুটি স্বতন্ত্র রেখা ঠিক একটি বিন্দুতে ছেদ করে, অন্য়দিকে, সমান্তরাল সরলরেখার ক্ষেত্রে অসীম বিন্দু ছাড়া এদের অন্য কোনো ছেদ বিন্দু থাকে না। সেট তত্ত্ব ব্যবহৃত হওয়ার আগে গণিতে মনে করা হতো, বিন্দু এবং রেখা উভয়ই স্বতন্ত্র সত্তা এবং একটি রেখায় বিন্দুগুলো আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। তবে, এই ধারণা ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। বর্তমানে, সর্বজনীন সেট তত্ত্ব অনুসারে বিবেচনা করা হয় যে, একটি রেখা হলো অসংখ্য বিন্দুর একটি সেট, একটি বিন্দু হলো ঐ রেখারই অংশ। যাহোক, আধুনিক গণিতে, রেখা হলো অসীম বিন্দুর একটি সেট। অসীম মাত্রা ধ্রুপদী জ্যামিতিতে যে ভেক্টর তল রয়েছে তার সর্বদা একটি সসীম মাত্রা থাকে, সাধারণত দুই বা তিনটি। যাহোক, এটি একটি ভেক্টর স্থানের বিমূর্ত সংজ্ঞা দ্বারা বিবেচিত নয়, বরং অসীম মাত্রার ভেক্টর স্থানও বিবেচনা করা যেতে পারে। সাধারণত, এটি ফাংশনাল অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে বিবেচিত হয়, যেখানে ফাংশন স্পেসগুলো সাধারণত অসীম মাত্রার ভেক্টর স্পেস। টপোলজিতে, কিছু আকৃতি অসীম মাত্রার টপোলজিকাল স্পেস তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে, এটি পুনরাবৃত্তি করা লুপ স্পেসগুলির ক্ষেত্রে। ফ্রাক্টাল একটি ফ্র্যাক্টাল অবজেক্টের গঠন তার বিবর্ধনে পুনরাবৃত্তি করা যায়। ফ্র্যাক্টালগুলোকে তাদের গঠন বিকৃত না করে অনির্দিষ্টভাবে বড় এবং মসৃণ করা যেতে পারে; তাদের অসীম পরিধি রয়েছে এবং তাদের অসীম বা সসীম ক্ষেত্রফল থাকতে পারে। অসীম পরিধি এবং সসীম ক্ষেত্রফল সহ এমন একটি ফ্র্যাক্টাল বক্ররেখা হল কচ স্নোফ্লেক। অসীম ব্যতীত গণিত ১৮৭০ এবং ১৮৮০ এর দশকে লিওপোল্ড ক্রোনেকার অসীমতার ধারণা এবং তার সমসাময়িক গণিতবিদরা কীভাবে এটি ব্যবহার করতেন তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। গণিতের দর্শনে এই সংশয়বাদ সসীমতা নামে বিকশিত হয়। এটি গঠনবাদ এবং অন্তর্দৃষ্টিমূলক সাধারণ দার্শনিক এবং গাণিতিক মতবাদে গাণিতিক দর্শনের একটি চরম রূপও বটে। পদার্থবিদ্যা পদার্থবিজ্ঞানে অসীম একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা। সাধারণত ধারাবাহিক বা কন্টিনিউয়াস পরিমাপে বাস্তব সংখ্যা ব্যবহার করা হয় এবং বিচ্ছিন্ন পরিমাপে স্বাভাবিক সংখ্যা ব্যবহৃত হয় (যেমন: সাধারণ গণনায়)। অসীম বস্তুর ধারণা যেমন, অসীম সমপ্রবাহ তরঙ্গ ধারণা পদার্থবিজ্ঞানে প্রচলিত রয়েছে, কিন্তু তা উৎপন্ন করার কোনো পরীক্ষামূলক উপায় এখনো পর্যন্ত উদ্ভাবিত হয়নি। বিশ্বতত্ত্ব ১৫৭৬ সালে থমাস ডিগস সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন যে, এই মহাবিশ্ব অসীম। এর ৮ বছর পরে ১৫৮৪ সালে ইতালীয় দার্শনিক এবং জ্যোতির্বিদ জর্দানো ব্রুনো তাঁর বই অন দ্যা ইনফিনিট ইউনিভার্স অ্যান্ড ওয়ার্ল্ডে-এ অসীম মহাবিশ্বের কথা উল্লেখ করেন এবং আরো বলেছেন যে: ""অসংখ্য সূর্যের অস্তিত্ব রয়েছে; অসংখ্য পৃথিবী এই সূর্যের চারপাশে এমনভাবে ঘোরে যেভাবে সাতটি গ্রহ আমাদের সূর্যের চারপাশে ঘোরে। জীবন্ত প্রাণীরা এই পৃথিবীতে বাস করে। বিশ্বতত্ত্ববিদগণ দীর্ঘদিন ধরে আবিস্কার করার চেষ্টা করেছেন যে, আমাদের ভৌত মহাবিশ্ব অসীম কি না: অসীম সংখ্য়ক তারা আছে কি? মহাবিশ্বের আয়তন কি অসীম? মহাবিশ্ব কি চিরকাল ধরে প্রসারিত হচ্ছে? এগুলো এখনও পর্যন্ত বিশ্বতত্ত্বের অনির্ণেয় প্রশ্ন। যৌক্তিকভাবে, অসীম হওয়ার প্রশ্ন থেকে সীমানা থাকার প্রশ্ন আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, পৃথিবীতে দ্বিমাত্রিক স্থান বা তল সসীম তবুও এর কোনো প্রান্ত নেই। পৃথিবীর বক্রতার সাপেক্ষে একটি সরল রেখা বরাবর কেউ ভ্রমণ করলে, যে জায়গা থেকে ভ্রমণ শুরু করবে শেষ পর্যন্ত সে জায়গায় ফিরে আসবে। নীতিগতভাবে, মহাবিশ্বের অন্তত, একই রকম টপোলজি থাকতে পারে। যদি তাই হয়, মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে একটি সরল রেখা বরাবর দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণ করার পর কোনো ব্যক্তি যে বিন্দু থেকে ভ্রমণ শুরু করবে, অবশেষে, সে বিন্দুতেই ফিরে আসবে। মহাজাগতিক পটভূমি বিকিরণের বর্ণালীতে মাল্টিপোল মোমেন্টামের মাধ্যমে মহাবিশ্বের বক্রতা পরিমাপ করা যেতে পারে। আজ অবধি, উইলকিনসন মাইক্রোওয়েভ অ্যানাইসোট্রপি প্রোব (WMAP) মহাকাশযান দ্বারা রেকর্ডকৃত বিকিরণ নিদর্শনগুলোর বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দেয় যে, মহাবিশ্বের একটি সমতল টপোলজি রয়েছে। এটি একটি অসীম ভৌত মহাবিশ্বের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। যুক্তিবিদ্যায় যুক্তিবিদ্যায়, একটি অসীম রিগ্রেস আর্গুমেন্ট হল "একটি স্বতন্ত্র দার্শনিক ধরনের যুক্তিতে দেখা যায় যে, একটি থিসিস ত্রুটিপূর্ণ কারণ এটি একটি অসীম প্রকারের ধারা বা সিরিজ তৈরি করে— যখন হয় (ফর্ম A) এই ধরনের কোনো সিরিজ বিদ্যমান থাকে না বা (ফর্ম B) এটি বিদ্যমান থাকত, তখন থিসিসের ভূমিকার (যেমন: ন্যায্যতার) অভাব হবে যা এটি পালন করার কথা।" কম্পিউটিং কম্পিউটার বিজ্ঞানে, আইইইই ফ্লোটিং-পয়েন্ট আদর্শ (IEEE 754) ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক অসীম মান এবং অনির্দিষ্ট মানও ব্যাখ্যা করে। মূলত, এগুলো পাটিগণিতীয় ওভারফ্লো, শূন্য দ্বারা ভাগ এবং অন্যান্য ব্যতিক্রমী ক্রিয়াকলাপের ফলাফলের ক্ষেত্রে সংজ্ঞায়িত করা হয়। কম্পিউটার বিজ্ঞানের কিছু প্রোগ্রামিং ভাষা, যেমন: জাভা (প্রোগ্রামিং ভাষা) ও J প্রোগ্রামারকে ভাষা ধ্রুবক হিসেবে ধনাত্মক এবং ঋণাত্মক অসীম মান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট অ্যাক্সেসের সুযোগ দেয়। এগুলো বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে, কারণ, অন্য সব মানের তুলনায় যথাক্রমে এগুলো কত বড় বা কত ছোট তা জানা যায়। ডেটা সর্টিং, সার্চিং, বা উইন্ডোয়িং করার ক্ষেত্রে জড়িত অ্যালগরিদমগুলোতে এগুলো সেন্টিনল ভ্যালু হিসেবে ব্যবহার করা হয়। যেসব প্রোগ্রামিং ভাষায় বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম উপাদান নেই, কিন্তু রিলেশনাল অপারেটরদের ওভারলোড করার সুযোগ দেয়, একজন প্রোগ্রামারের পক্ষে বৃহত্তম এবং ক্ষুদ্রতম উপাদান তৈরি করা সম্ভব। যেসব ভাষা প্রোগ্রামের প্রাথমিক অবস্থা থেকে এই ধরনের মানগুলোতে স্পষ্ট অ্যাক্সেস প্রদান করে না, কিন্তু ফ্লোটিং-পয়েন্ট ডেটা টাইপ প্রয়োগ করে, অসীম মানগুলো এখানে কিছু ক্রিয়াকলাপের ফলাফল হিসাবে অ্যাক্সেসযোগ্য এবং ব্যবহারযোগ্য হতে পারে। প্রোগ্রামিং-এ, অসীম লুপ' হল এমন একটি লুপ যার প্রস্থান অবস্থা কখন থামে না, এইভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য এটি কার্যকর করা হয়। শিল্পকলায়, গেইমে এবং কগনিটিভ সায়েন্সে পরিপ্রেক্ষিত শিল্পকর্মে ভ্যানিশিং বিন্দুর ধারণা ব্যবহার করে বিভিন্ন বিষয় অংকন করা হয়। এটি মোটামুটিভাবে অসীম গাণিতিক বিন্দু ধারণার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা পর্যবেক্ষক থেকে অসীম দূরত্বে অবস্থিত বলে মনে হয়। এই ধারণার মাধ্যমে শিল্পীরা যেসব শিল্পকর্ম তৈরি করেন, সেগুলো বাস্তবিকভাবে, স্থান, দূরত্ব ও আকৃতি প্রকাশ করে। এই ধারণা প্রয়োগ করে শিল্পকর্ম তৈরি করার জন্য এম. সি. এশ্যর খুবই প্রখ্যাত। অসীম দাবা নামে দাবা খেলার একটি প্রকারভেদ রয়েছে। কগনিটিভ বিজ্ঞানী জর্জ লেকফ গণিতে এবং বিজ্ঞানে অসীম ধারণাকে মেটাফোর বা রূপক হিসেবে বিবেচনা করেন। এই দৃষ্টিকোণটি অসীমের মৌলিক রূপক (BMI)-এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠেছে, যার অন্য নাম চিরক্রমবর্ধমান ধারা: <১,২,৩,.......>। আরও দেখুন ০.৯৯৯... আলেফ সংখ্যা ভারতীয় ধর্মদর্শনে অসীম বা অনন্ত সূচকীকরণ ইন্ডিটারমিনেট ফর্ম অসীম বানর উপপাদ্য অসীম সেট ইনফিনিটেসিমাল হেঁয়ালিসমূহের তালিকা সুপারটাস্ক অধিবাস্তব সংখ্যা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি গণিতের দর্শন যুক্তিবিজ্ঞানের ধারণা গাণিতিক বস্তু
https://en.wikipedia.org/wiki/Infinity
Infinity
Infinity is something which is boundless, endless, or larger than any natural number. It is often denoted by the infinity symbol ∞ {\displaystyle \infty } . Since the time of the ancient Greeks, the philosophical nature of infinity has been the subject of many discussions among philosophers. In the 17th century, with the introduction of the infinity symbol and the infinitesimal calculus, mathematicians began to work with infinite series and what some mathematicians (including l'Hôpital and Bernoulli) regarded as infinitely small quantities, but infinity continued to be associated with endless processes. As mathematicians struggled with the foundation of calculus, it remained unclear whether infinity could be considered as a number or magnitude and, if so, how this could be done. At the end of the 19th century, Georg Cantor enlarged the mathematical study of infinity by studying infinite sets and infinite numbers, showing that they can be of various sizes. For example, if a line is viewed as the set of all of its points, their infinite number (i.e., the cardinality of the line) is larger than the number of integers. In this usage, infinity is a mathematical concept, and infinite mathematical objects can be studied, manipulated, and used just like any other mathematical object. The mathematical concept of infinity refines and extends the old philosophical concept, in particular by introducing infinitely many different sizes of infinite sets. Among the axioms of Zermelo–Fraenkel set theory, on which most of modern mathematics can be developed, is the axiom of infinity, which guarantees the existence of infinite sets. The mathematical concept of infinity and the manipulation of infinite sets are widely used in mathematics, even in areas such as combinatorics that may seem to have nothing to do with them. For example, Wiles's proof of Fermat's Last Theorem implicitly relies on the existence of Grothendieck universes, very large infinite sets, for solving a long-standing problem that is stated in terms of elementary arithmetic. In physics and cosmology, whether the universe is spatially infinite is an open question.
2457
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%97%E0%A6%B2%20%E0%A6%85%E0%A6%A8%E0%A7%81%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A7%E0%A6%BE%E0%A6%A8
গুগল অনুসন্ধান
গুগল অনুসন্ধান ওয়েবের বৃহত্তম অনুসন্ধান ইঞ্জিন। গুগলের লক্ষ্য "বিশ্বের যাবতীয় তথ্য সুবিন্যস্ত করা এবং সেগুলো সর্বসাধারণের জন্য উপযোগী করে প্রকাশ করা।" এটি সর্ববৃহৎ অনুসন্ধান ইঞ্জিন। গুগল প্রতিদিন তার বিভিন্ন সেবার মাধ্যমে প্রায় ৫.৪ বিলিয়ন বা ৫০০ কোটিরও বেশি অনুসন্ধানের অনুরোধ গ্রহণ করে। আরও পড়ুন মাইক্রোসফট বিং ইয়াহু! সার্চ মার্কেটিং তথ্যসূত্র ইন্টারনেট অনুসন্ধান ইঞ্জিন গুগল বহুভাষিক ওয়েবসাইট গুগল পরিষেবা ১৯৯৭-এ প্রতিষ্ঠিত ইন্টারনেট সম্পত্তি গুগল অনুসন্ধান আলফাবেট ইনকর্পোরেটেড ১৯৯৭-এ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত
https://en.wikipedia.org/wiki/Google_Search
Google Search
Google Search (also known simply as Google or Google.com) is a search engine operated by Google. It allows users to search for information on the Internet by entering keywords or phrases. Google Search uses algorithms to analyze and rank websites based on their relevance to the search query. It is the most popular search engine worldwide. As of 2020, Google Search has a 92% share of the global search engine market. By 2012, it handled more than 3.5 billion searches per day. Google Search is the most-visited website in the world. Approximately 26.75% of Google's monthly global traffic comes from the United States, 4.44% from India, 4.4% from Brazil, 3.92% from the United Kingdom and 3.84% from Japan according to data provided by Similarweb. The order of search results returned by Google is based, in part, on a priority rank system called "PageRank". Google Search also provides many different options for customized searches, using symbols to include, exclude, specify or require certain search behavior, and offers specialized interactive experiences, such as flight status and package tracking, weather forecasts, currency, unit, and time conversions, word definitions, and more. The main purpose of Google Search is to search for text in publicly accessible documents offered by web servers, as opposed to other data, such as images or data contained in databases. It was originally developed in 1996 by Larry Page, Sergey Brin, and Scott Hassan. The search engine would also be set up in the garage of Susan Wojcicki's Menlo Park home. In 2011, Google introduced "Google Voice Search" to search for spoken, rather than typed, words. In 2012, Google introduced a semantic search feature named Knowledge Graph. Analysis of the frequency of search terms may indicate economic, social and health trends. Data about the frequency of use of search terms on Google can be openly inquired via Google Trends and have been shown to correlate with flu outbreaks and unemployment levels, and provide the information faster than traditional reporting methods and surveys. As of mid-2016, Google's search engine has begun to rely on deep neural networks. In August 2024, it was ruled that Google's search engine held an illegal monopoly over Internet search.
2459
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%9C%E0%A6%BF%E0%A7%8E%20%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC
সত্যজিৎ রায়
সত্যজিৎ রায় (২ মে ১৯২১ – ২৩ এপ্রিল ১৯৯২) ছিলেন একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সংগীত পরিচালক এবং লেখক। তাঁকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিতের জন্ম কলকাতা শহরে সাহিত্য ও শিল্প সমাজে খ্যাতনামা রায় পরিবারে। তার পূর্বপুরুষের ভিটা ছিল তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জে মহকুমার (বর্তমানে বাংলাদেশ) কটিয়াদী উপজেলার মসূয়া গ্রামে। তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ ও শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। সত্যজিতের কর্মজীবন একজন বাণিজ্যিক চিত্রকর হিসেবে শুরু হলেও প্রথমে কলকাতায় ফরাসি চলচ্চিত্র নির্মাতা জঁ রনোয়ারের সাথে সাক্ষাৎ ও পরে লন্ডন শহরে সফররত অবস্থায় ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী চলচ্চিত্র লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (, বাইসাইকেল চোর) দেখার পর তিনি চলচ্চিত্র নির্মাণে উদ্বুদ্ধ হন। চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে সত্যজিৎ ছিলেন বহুমুখী এবং তার কাজের পরিমাণ বিপুল। তিনি ৩৭টি পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র, প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। তার নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র পথের পাঁচালী (১৯৫৫) ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে, এর মধ্যে অন্যতম ১৯৫৬ কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া “শ্রেষ্ঠ মানুষে-আবর্তিত প্রামাণ্যচিত্র” (Best Human Documentary) পুরস্কার। পথের পাঁচালী, অপরাজিত (১৯৫৬) ও অপুর সংসার (১৯৫৯) – এই তিনটি একত্রে অপু ত্রয়ী নামে পরিচিত, এবং এই চলচ্চিত্র-ত্রয়ী সত্যজিতের জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম হিসেবে বহুল স্বীকৃত। চলচ্চিত্র মাধ্যমে সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনা, চরিত্রায়ন, সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা, চিত্রগ্রহণ, শিল্প নির্দেশনা, সম্পাদনা, শিল্পী-কুশলীদের নামের তালিকা ও প্রচারণাপত্র নকশা করাসহ নানা কাজ করেছেন। চলচ্চিত্র নির্মাণের বাইরে তিনি ছিলেন একাধারে কল্পকাহিনী লেখক, প্রকাশক, চিত্রকর, গ্রাফিক নকশাবিদ ও চলচ্চিত্র সমালোচক। বর্ণময় কর্মজীবনে তিনি বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে বিখ্যাত হল ১৯৯২ সালে পাওয়া একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার (অস্কার), যা তিনি সমগ্র কর্মজীবনের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। তিনি এছাড়াও ৩২টি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১টি গোল্ডেন লায়ন, ২টি রৌপ্য ভল্লুক লাভ করেন। তিনি বেশ কয়েকটি ছোট গল্প এবং উপন্যাস রচনা করেছেন, প্রাথমিকভাবে শিশু-কিশোরদের পাঠক হিসেবে বিবেচনা করে। কল্পবিজ্ঞানে তার নির্মিত জনপ্রিয় কাল্পনিক চরিত্র গোয়েন্দা ফেলুদা এবং প্রোফেসর শঙ্কু। সত্যজিৎ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯২ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ভারত রত্ন সম্মাননা প্রদান করে। সত্যজিৎ ভারত রত্ন এবং পদ্মভূষণসহ সকল মর্যাদাপূর্ণ ভারতীয় পুরস্কার লাভ করেছেন। ২০০৪ সালে, বিবিসির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় সত্যজিৎ ১৩তম স্থান লাভ করেছিলেন। হৃদযন্ত্রের জটিলতার কারণে ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ মৃত্যুবরণ করেন। পারিবারিক ইতিহাস রায় পরিবারের ইতিহাস থেকে জানা যায়, তাঁদের এক পূর্বপুরুষ শ্রী রামসুন্দর দেও (দেব) নদীয়া জেলার চাকদহ গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। ভাগ্যান্বেষণে তিনি পূর্ববঙ্গের শেরপুরে গমন করেন। সেখানে শেরপুরের জমিদার বাড়িতে তার সাক্ষাৎ হয় যশোদলের জমিদার রাজা গুণীচন্দ্রের সাথে। রাজা গুণীচন্দ্র রামসুন্দরের সুন্দর চেহারা ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন এবং রামসুন্দরকে তার সাথে তার জমিদারিতে নিয়ে যান। যশোদলে জমিজমা, ঘরবাড়ি দিয়ে তিনি রামসুন্দরকে তার জামাতা বানান। সেই থেকে রামসুন্দর যশোদলে বসবাস শুরু করেন। তার বংশধররা সেখান থেকে সরে গিয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের ধারে মসুয়া গ্রামে বসবাস শুরু করেন। জীবন এবং কর্মজীবন প্রাথমিক জীবন সত্যজিৎ রায়ের বংশানুক্রম প্রায় দশ প্রজন্ম অতীত পর্যন্ত বের করা সম্ভব। তার আদি পৈত্রিক ভিটা বর্তমান বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রামে অবস্থিত। সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী এবং বাবা সুকুমার রায় দুজনেরই জন্ম হয়েছিল এখানে। উপেন্দ্রকিশোরের সময়েই সত্যজিতের পরিবারের ইতিহাস এক নতুন দিকে মোড় নেয়। লেখক, চিত্রকর, দার্শনিক, প্রকাশক ও শখের জ্যোতির্বিদ উপেন্দ্রকিশোরের মূল পরিচিতি ১৯শ শতকের বাংলার এক ধর্মীয় ও সামাজিক আন্দোলন ব্রাহ্ম সমাজের অন্যতম নেতা হিসেবে। উপেন্দ্রকিশোরের ছেলে সুকুমার রায় ছিলেন বাংলা সাহিত্যের ননসেন্স ও শিশু সাহিত্যের সেরা লেখকদের একজন। দক্ষ চিত্রকর ও সমালোচক হিসেবেও সুকুমারের খ্যাতি ছিল। ১৯২১ সালে কলকাতায় জন্ম নেন সুকুমারের একমাত্র সন্তান সত্যজিৎ রায়। সত্যজিতের মাত্র তিন বছর বয়সেই বাবা সুকুমারের মৃত্যু ঘটে; মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন। সত্যজিৎ বড় হয়ে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অর্থনীতি পড়তে যান, যদিও চারুকলার প্রতি সবসময়েই তার দুর্বলতা ছিল। ১৯৪০ সালে সত্যজিতের মা তাকে শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার জন্য পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। কলকাতাপ্রেমী সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনের শিক্ষার পরিবেশ সম্বন্ধে খুব উঁচু ধারণা পোষণ করতেন না, কিন্তু শেষে মায়ের প্ররোচনা ও রবিঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধার ফলে রাজি হন। শান্তিনিকেতনে গিয়ে সত্যজিৎ প্রাচ্যের শিল্পের মর্যাদা উপলব্ধি করতে সক্ষম হন। পরে তিনি স্বীকার করেন যে, সেখানকার বিখ্যাত চিত্রশিল্পী নন্দলাল বসু এবং বিনোদ বিহারী মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন। সত্যজিৎ বিনোদবিহারীর ওপর পরবর্তীকালে একটি প্রামাণ্যচিত্রও বানান। অজন্তা, ইলোরা এবং এলিফ্যান্টায় ভ্রমণের পর ভারতীয় শিল্পের ওপর সত্যজিতের গভীর শ্রদ্ধা ও অনুরাগ জন্মায়। নিয়মানুযায়ী বিশ্বভারতীতে সত্যজিতের পাঁচ বছর পড়াশোনা করার কথা থাকলেও তার আগেই ১৯৪৩ সালে তিনি শান্তিনিকেতন ছেড়ে কলকাতায় চলে আসেন এবং সেখানে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনের বিনিময়ে “জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার” হিসেবে যোগ দেন। চিত্রসজ্জা বা ভিজুয়াল ডিজাইন সত্যজিতের পছন্দের একটি বিষয় ছিল ও সংস্থাটিতে তিনি ভালো সমাদরেই ছিলেন, কিন্তু সংস্থাটির ইংরেজ ও ভারতীয় কর্মচারীদের মধ্যে চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল (ইংরেজ কর্মচারীদেরকে অনেক বেশি বেতন দেয়া হত), আর সত্যজিতের মনে হত প্রতিষ্ঠানটির "ক্লায়েন্টরা ছিলেন মূলত বোকা।" ১৯৪৩ সালের দিকে সত্যজিৎ ডি কে গুপ্তের প্রকাশনা সংস্থা 'সিগনেট প্রেস'-এর সাথে জড়িয়ে পড়েন। ডি কে গুপ্ত তাকে সিগনেট প্রেস থেকে ছাপা বইগুলোর প্রচ্ছদ আঁকার অনুরোধ করেন ও এ ব্যাপারে তাকে সম্পূর্ণ শৈল্পিক স্বাধীনতা দেন। এখানে সত্যজিৎ প্রচুর বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন করেন, যার মধ্যে জিম করবেটের ম্যানইটার্স অব কুমায়ুন ও জওহরলাল নেহেরুর দ্য ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া উল্লেখযোগ্য। এছাড়া তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা কালজয়ী বাংলা উপন্যাস পথের পাঁচালীর একটি শিশুতোষ সংস্করণ আম আঁটির ভেঁপু-র ওপরেও কাজ করেন। বিভূতিভূষণের লেখা এ উপন্যাসটি সত্যজিৎকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে এবং এটিকেই পরবর্তীকালে সত্যজিৎ তার প্রথম চলচ্চিত্রের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্বাচন করেন। বইটির প্রচ্ছদ আঁকা ছাড়াও তিনি এর ভেতরের বিভিন্ন ছবিগুলোও এঁকে দেন। এই ছবিগুলোই পরে দৃশ্য বা শট হিসেবে তার সাড়া জাগানো চলচ্চিত্রে স্থান পায়। ১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ চিদানন্দ দাসগুপ্ত ও অন্যান্যদের সাথে মিলে কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। সোসাইটির সদস্য হবার সুবাদে তার অনেক বিদেশী চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ হয়। এ সময় তিনি প্রচুর ছবি গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি কলকাতায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করেন; তিনি তাদের কাছ থেকে শহরে আসা নতুন মার্কিন চলচ্চিত্রগুলোর খবর নিতেন। এ সময় তিনি নরম্যান ক্লেয়ার নামের রয়েল এয়ার ফোর্সের এক কর্মচারীর সংস্পর্শে আসেন, যিনি সত্যজিতের মতোই চলচ্চিত্র, দাবা ও পাশ্চাত্যের ধ্রুপদী সঙ্গীত পছন্দ করতেন। ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ তার দূরসম্পর্কের বোন ও বহুদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন। সত্যজিৎ দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক। ঐ একই বছরে জঁ রনোয়ার তার দ্য রিভার চলচ্চিত্রটির শুটিং করতে কলকাতায় আসেন। সত্যজিৎ রনোয়ারকে গ্রামাঞ্চলে চিত্রস্থান খুঁজতে সহায়তা করেন। ঐ সময়েই সত্যজিৎ রনোয়ারের সাথে পথের পাঁচালীর চলচ্চিত্রায়ণ নিয়ে কথা বলেন এবং রনোয়ার এ ব্যাপারে তাকে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দেন। ১৯৫০ সালে ডি জে কিমার সত্যজিৎকে লন্ডনে তাদের প্রধান কার্যালয়ে কাজ করতে পাঠান। লন্ডনে তিন মাস থাকাকালীন অবস্থায় সত্যজিৎ প্রায় ৯৯টি চলচ্চিত্র দেখেন। এদের মধ্যে ইতালীয় নব্য বাস্তবতাবাদী ছবি লাদ্রি দি বিচিক্লেত্তে (, "সাইকেল চোর") তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। ঐ ছবিটি দেখে সিনেমা হল থেকে বের হওয়ার সময়েই সত্যজিৎ ঠিক করেন যে তিনি একজন চলচ্চিত্রকার হবেন। কর্মজীবন অপুর বছরগুলো (১৯৫০–৫৯) সত্যজিৎ ঠিক করেন যে, বাংলা সাহিত্যের ধ্রুপদী “বিল্ডুংস্‌রোমান” পথের পাঁচালী-ই হবে তার প্রথম চলচ্চিত্রের প্রতিপাদ্য। ১৯২৮ সালে প্রকাশিত বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা এই প্রায়-আত্মজীবনীমূলক উপন্যাসটিতে বাংলার এক গ্রামের ছেলে অপু’র বেড়ে ওঠার কাহিনী বিধৃত হয়েছে। এ ছবি বানানোর জন্য সত্যজিৎ কিছু পূর্ব-অভিজ্ঞতাবিহীন কুশলীকে একত্রিত করেন, যদিও তার ক্যামেরাম্যান সুব্রত মিত্র ও শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত দুজনেই পরবর্তীকালে নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিলাভ করেন। এ ছাড়া ছবির বেশির ভাগ অভিনেতাই ছিলেন শৌখিন। ১৯৫২ সালের শেষ দিকে সত্যজিৎ তার নিজের জমানো পয়সা খরচ করে দৃশ্যগ্রহণ শুরু করেন। তিনি ভেবেছিলেন প্রাথমিক দৃশ্যগুলো দেখার পরে হয়ত কেউ ছবিটিতে অর্থলগ্নি করবেন। কিন্তু সে ধরনের আর্থিক সহায়তা মিলছিল না। পথের পাঁচালী-র দৃশ্যগ্রহণ তাই থেমে থেমে অস্বাভাবিকভাবে প্রায় দীর্ঘ তিন বছর ধরে সম্পন্ন হয়। কেবল তখনই দৃশ্যগ্রহণ করা সম্ভব হত যখন সত্যজিৎ বা নির্মাণ ব্যবস্থাপক অনিল চৌধুরী প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান করতে পারতেন। শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ঋণ নিয়ে ১৯৫৫ সালে ছবিটি নির্মাণ সম্পন্ন হয় ও সে বছরই এটি মুক্তি পায়। মুক্তি পাওয়ার পর পরই ছবিটি দর্শক-সমালোচক সবার অকুণ্ঠ প্রশংসা লাভ করে ও বহু পুরস্কার জিতে নেয়। ছবিটি বহুদিন ধরে ভারতে ও ভারতের বাইরে প্রদর্শিত হয়। ছবিটি নির্মাণের সময় অর্থের বিনিময়ে চিত্রনাট্য বদলের জন্য কোন অনুরোধই সত্যজিৎ রাখেননি। এমনকি ছবিটির একটি সুখী সমাপ্তির (যেখানে ছবির কাহিনীর শেষে অপুর সংসার একটি “উন্নয়ন প্রকল্পে” যোগ দেয়) জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অনুরোধও তিনি উপেক্ষা করেন। ভারতে ছবিটির প্রতিক্রিয়া ছিল উৎসাহসঞ্চারী। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-তে লেখা হয়, "It is absurd to compare it with any other Indian cinema … Pather Panchali is pure cinema" (“একে অন্য যেকোনও ভারতীয় চলচ্চিত্রের সাথে তুলনা করা অবাস্তব... পথের পাঁচালী হল বিশুদ্ধ চলচ্চিত্র”)। যুক্তরাজ্যে লিন্‌জি অ্যান্ডারসন চলচ্চিত্রটির অত্যন্ত ইতিবাচক একটি সমালোচনা লেখেন। তবে ছবিটির সব সমালোচনাই এ রকম ইতিবাচক ছিল না। বলা হয় যে ফ্রাঁসোয়া ত্রুফো ছবিটি দেখে মন্তব্য করেছিলেন: “কৃষকেরা হাত দিয়ে খাচ্ছে - এরকম দৃশ্যসম্বলিত ছবি আমি দেখতে চাই না।” দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর সবচেয়ে প্রভাবশালী সমালোচক বসলি ক্রাউদার ছবিটির একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন এবং সেটি পড়ে মনে করা হয়েছিল যে ছবিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলেও ভাল করবে না। কিন্তু এর বদলে ছবিটি সেখানে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি দিন ধরে প্রদর্শিত হয়। সত্যজিতের পরবর্তী ছবি অপরাজিত-এর সাফল্য তাকে আন্তর্জাতিক মহলে আরও পরিচিত করে তোলে। এই ছবিটিতে তরুণ অপুর উচ্চাভিলাষ ও তার মায়ের ভালবাসার মধ্যকার চিরন্তন সংঘাতকে মর্মভেদী রূপে ফুটিয়ে তোলা হয়। বহু সমালোচক, যাদের মধ্যে মৃণাল সেন ও ঋত্বিক ঘটক অন্যতম, ছবিটিকে সত্যজিতের প্রথম ছবিটির চেয়েও ওপরে স্থান দেন। অপরাজিত ভেনিসে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জেতে। অপু ত্রয়ী শেষ করার আগে সত্যজিৎ আরও দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ সমাপ্ত করেন। প্রথমটি ছিল পরশ পাথর নামের একটি হাস্যরসাত্মক ছবি। আর পরেরটি ছিল জমিদারী প্রথার অবক্ষয়ের ওপর নির্মিত জলসাঘর, যেটিকে তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। সত্যজিৎ অপরাজিত নির্মাণের সময় একটি ত্রয়ী সম্পন্ন করার কথা ভাবেননি, কিন্তু ভেনিসে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা শুনে তার মাথায় এটি বাস্তবায়নের ধারণা আসে। অপু সিরিজের শেষ ছবি অপুর সংসার ১৯৫৯ সালে নির্মাণ করা হয়। আগের দুটি ছবির মত এটিকেও বহু সমালোচক সিরিজের সেরা ছবি হিসেবে আখ্যা দেন (রবিন উড, অপর্ণা সেন)। এ ছবির মাধ্যমেই সত্যজিতের দুই প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও শর্মিলা ঠাকুরের চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটে। ছবিটিতে অপুকে দেখানো হয় কলকাতার এক জীর্ণ বাড়িতে প্রায়-দরিদ্র অবস্থায় বসবাস করতে। এক অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অপর্ণার সাথে অপুর বিয়ে হয়। তাদের জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যে “বিবাহিত জীবন সম্পর্কে ছবিটির ধ্রুপদী ইতিবাচকতা ফুটে ওঠে”, কিন্তু শীঘ্রই এক বিয়োগান্তক পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। একজন বাঙালি সমালোচক অপুর সংসার-এর একটি কঠোর সমালোচনা লেখেন এবং সত্যজিৎ এর উত্তরে ছবিটির পক্ষে একটি সুলিখিত নিবন্ধ লেখেন - যা ছিল সত্যজিতের কর্মজীবনে একটি দুর্লভ ঘটনা (সত্যজিতের প্রত্যুত্তরের এরকম ঘটনা আরেকবার ঘটে তার পছন্দের চারুলতা ছবিটি নিয়ে)। সত্যজিতের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর তার কর্মজীবনের সাফল্যের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। সত্যজিতের নিজস্ব কোন বাড়ি ছিল না; তিনি তার মা, মামা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে এক ভাড়া বাড়িতেই সারা জীবন কাটিয়ে দেন। তার স্ত্রী ও ছেলে দুজনেই তার কাজের সাথে জড়িয়ে ছিলেন। বেশির ভাগ চিত্রনাট্য বিজয়াই প্রথমে পড়তেন এবং ছবির সঙ্গীতের সুর তৈরীতেও তিনি স্বামীকে সাহায্য করতেন। আয়ের পরিমাণ কম হলেও সত্যজিৎ নিজেকে বিত্তশালীই মনে করতেন, কেননা পছন্দের বই বা সঙ্গীতের অ্যালবাম কিনতে কখনোই তার কষ্ট হয়নি। দেবী থেকে চারুলতা (১৯৫৯–৬৪) কর্মজীবনের এই পর্বে সত্যজিৎ নির্মাণ করেন রাজ পর্বের ওপর চলচ্চিত্র (যেমন দেবী), রবীন্দ্রনাথের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি হাস্যরসাত্মক ছবি (‘‘মহাপুরুষ’’) এবং মৌলিক চিত্রনাট্যের ওপর ভিত্তি করে তার প্রথম চলচ্চিত্র (কাঞ্চনজঙ্ঘা)। এছাড়াও তিনি বেশ কিছু চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন, সমালোচকদের মতে যেগুলোর মত করে ছবির পর্দায় ভারতীয় নারীদের এত অনুভূতি দিয়ে এর আগে কেউ ফুটিয়ে তোলেনি। পলিন কেল মন্তব্য করেন যে তিনি বিশ্বাস করতে পারেন নি সত্যজিৎ নারী নন, পুরুষ। অপুর সংসার নির্মাণের পরে সত্যজিৎ দেবী ছবির কাজে হাত দেন। হিন্দু সমাজের বিভিন্ন মজ্জাগত কুসংস্কার ছিল ছবিটির বিষয়। ছবিটিতে শর্মিলা ঠাকুর দয়াময়ী নামের এক তরুণ বধূর চরিত্রে অভিনয় করেন, যাকে তার শ্বশুর কালী বলে পূজা করতেন। শর্মিলা পরে এই ছবিতে তার অভিনয় নিয়ে মন্তব্য করেন যে দেবীতে তিনি নিজের থেকে কিছু করেননি, বরং এক জিনিয়াস তাঁকে দিয়ে সেটা করিয়ে নিয়েছিলেন। সত্যজিৎ আশঙ্কা করেছিলেন যে ভারতীয় সেন্সর বোর্ড হয়ত ছবিটি প্রদর্শনে বাধা দেবে, বা হয়ত তাঁকে ছবিটি পুনরায় সম্পাদনা করতে বলবে, কিন্তু সেরকম কিছু ঘটে নি। ১৯৬১ সালে প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর প্ররোচনায় সত্যজিৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে কবিগুরুর ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। রবীন্দ্রনাথের ভিডিও ফুটেজের অভাবে সত্যজিৎকে মূলত স্থিরচিত্র দিয়েই ছবিটি বানানোর চ্যালেঞ্জ হাতে নিতে হয় এবং তিনি পরে মন্তব্য করেন যে ছবিটি বানাতে তার সাধারণের চেয়ে তিন গুণ বেশি সময় লেগেছিল। একই বছরে সুভাষ মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যের সাথে মিলে সত্যজিৎ সন্দেশ নামের শিশুদের পত্রিকাটি - যেটি তার পিতামহ একসময় প্রকাশ করতেন - পুনরায় প্রকাশ করা শুরু করেন। সত্যজিৎ এ জন্য বহুদিন ধরে অর্থসঞ্চয় করেছিলেন। পত্রিকাটি ছিল একাধারে শিক্ষামূলক ও বিনোদনধর্মী, এবং “সন্দেশ” নামটিতে (শব্দটির দুটি অর্থ হয়: “খবর” ও “মিষ্টি”) এই দ্বিত্বতার প্রতিফলন ঘটেছে। সত্যজিৎ পত্রিকাটির ভেতরের ছবি আঁকতেন ও শিশুদের জন্য গল্প ও প্রবন্ধ লিখতেন। পরবর্তী বছরগুলোতে লেখালেখি করা তার আয়ের অন্যতম প্রধান উৎসে পরিণত হয়। ১৯৬২ সালে সত্যজিৎ কাঞ্চনজঙ্ঘা ছবিটি পরিচালনা করেন। এটি ছিল তার বানানো প্রথম মৌলিক চিত্রনাট্যনির্ভর রঙিন চলচ্চিত্র। দার্জিলিং নামের এক পাহাড়ী রিসোর্টে একটি উচ্চবিত্ত পরিবারের কাটানো এক বিকেলের কাহিনী নিয়ে এই জটিল ও সঙ্গীতনির্ভর ছবিটি বানানো হয়, যে বিকেলে পরিবারের সদস্যরা হঠাৎ করেই পরিবারের দণ্ডমুণ্ড কর্তা ইন্দ্রনাথ রায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ছবিটি প্রথমে একটি বিরাট ম্যানশনে চিত্রায়িত করার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে সত্যজিৎ সেই বিখ্যাত রিসোর্টেই দৃশ্যগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, যাতে তিনি চিত্রনাট্যটির উত্তেজনা আলো-আঁধারের খেলা ও কুয়াশাকে ব্যবহার করে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। সত্যজিৎ পরে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন যে তার চিত্রনাট্যে যেকোন ধরনের আলোকসম্পাতেই দৃশ্যগ্রহণ সম্ভব ছিল, অথচ একই সময়ে দার্জিলিং-এ অবস্থানকারী একটি বাণিজ্যিক চলচ্চিত্র নির্মাণকারী দল সূর্যালোকের অভাবে একটি শটও সম্পন্ন করতে পারেনি। ছবিটিতে ইন্দ্রনাথ রায়ের চরিত্রে রূপদানের জন্য সত্যজিৎ ছবি বিশ্বাস-কে নির্বাচন করেন। এটিই ছিল ছবি বিশ্বাসের করা শেষ ছবি; এর কিছুদিন পরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি মারা যান। এর ফলে সত্যজিৎ পরবর্তীকালে কিছু চরিত্র অঙ্কনে বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়, কেননা তার মনে হয়েছিল একমাত্র ছবি বিশ্বাসই সেসব চরিত্র রূপদান করার যোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। এসময় সত্যজিৎ একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন এবং বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, যদিও তিনি অনুযোগ করতেন যে কলকাতার বাইরে তার নিজেকে সৃষ্টিশীল মনে হত না। ১৯৬৩ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে তিনি বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন, ফেদেরিকো ফেলিন্নির 8½ ছবিটি সেরা পুরস্কার জেতে। ষাটের দশকে জাপান সফরের সময় তার অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় চলচ্চিত্র পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার সাথে সাক্ষাৎ করেন। দেশে অবস্থানকালে কলকাতার ব্যস্ত জীবন থেকে ছুটি নিয়ে তিনি মাঝে মাঝে দার্জিলিং বা পুরি-তে চলে যেতেন ও সেখানে নির্জনে চিত্রনাট্য লিখতেন। ১৯৬৪ সালে সত্যজিৎ চারুলতা ছবিটি নির্মাণ করেন, যেটি ছিল তার কর্মজীবনের এই পর্বের শেষ ছবি এবং অনেক সমালোচকের মতে তার সবচেয়ে সফল চলচ্চিত্র। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প নষ্টনীড় অবলম্বনে নির্মিত ছবিটিতে ১৯শ শতকের এক নিঃসঙ্গ বাঙালি বধূ চারু ও ঠাকুরপো অমলের প্রতি তার অনুভূতির কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। মোৎসার্টীয় এই ছবিটিকে প্রায়ই "নিখুঁত" বলে অভিহিত করা হয়। সত্যজিৎ নিজেও বলেছেন যে এই ছবিটিতে তার ভুলের সংখ্যা সবচেয়ে কম এবং এটিই তার নির্মিত একমাত্র ছবি, যেটি আবার সুযোগ পেলে তিনি ঠিক একইভাবে বানাতেন। ছবিটিতে চারু চরিত্রে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের অভিনয় এবং সুব্রত মিত্র ও বংশী দাশগুপ্তের কাজ উচ্চপ্রশংসা পায়। ছবিটির দুটি দৃশ্য সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রথমটি হচ্ছে ছবিটির নির্বাক প্রথম সাত মিনিট, যা চারুর একঘেয়েমি জীবন ফুটিয়ে তোলে এবং দ্বিতীয়টি হল "বাগানের দোলনার দৃশ্য", যেখানে চারু অমলের জন্য তার ভালবাসার মুখোমুখি হয়। এ পর্বে সত্যজিতের নির্মিত অন্যান্য চলচ্চিত্রের মধ্যে রয়েছে মহানগর, তিন কন্যা, অভিযান এবং কাপুরুষ ও মহাপুরুষ। নতুন দিকনির্দেশনা (১৯৬৫–১৯৮২) কাছের মানুষদের কাছে সত্যজিতের ডাকনাম ছিল “মানিক”। তিনি তার সমসাময়িক চলচ্চিত্রকারদের চেয়ে সাধারণ জনগণের সাথে অনেক বেশি মিশেছেন। অচেনা লোকদের তিনি প্রায়ই সাক্ষাৎ দিতেন। কিন্তু সাক্ষাৎকারীদের অনেকেই সত্যজিৎ ও তাদের মাঝে একটা দূরত্ব অনুভব করতেন। বাঙালিরা এটাকে ভাবতেন তার ইংরেজ মানসিকতার প্রকাশ, আর পশ্চিমীরা ভাবতেন তার শীতল ও গম্ভীর আচরণ ছিল ব্রাহ্মণদের মত। অভিনেতাদের প্রতি তার অগাধ আস্থা ছিল, কিন্তু তাদের অযোগ্যতায় বিরূপভাবও কখনো কখনো প্রকাশ করতেন। তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কখনোই তেমন আলোকপাত করা হয়নি, তবে কারও কারও মতে মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সাথে ষাটের দশকে তার সম্পর্ক ছিল। চারুলতা-পরবর্তী বছরগুলোতে সত্যজিৎ ছিলেন বৈচিত্র্যের সন্ধানী; এসময় কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা কাহিনী থেকে শুরু করে ঐতিহাসিক ছবিও তিনি বানান। এ পর্বে তিনি তার ছবিগুলোতে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান এবং সমকালীন ভারতীয় জীবনের বিভিন্ন দিকগুলো তার ছবিতে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেন। এ পর্বে তার প্রথম প্রধান চলচ্চিত্র ছিল নায়ক, যার বিষয় ছিল এক চলচ্চিত্র তারকার সাথে এক সহানুভূতিশীল তরুণী সাংবাদিকের রেলযাত্রার সময়কার সাক্ষাৎ ও সংলাপ। উত্তম কুমার ও শর্মিলা ঠাকুর অভিনীত এই ছবিতে ট্রেন যাত্রার ২৪ ঘণ্টার পরিসরে এক আপাতসফল চলচ্চিত্র তারকার মনের অন্তর্সংঘাতগুলো উন্মোচন করা হয়। ছবিটি বার্লিনে সমালোচকদের পুরস্কার জিতলেও এটি নিয়ে তেমন আর কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। ১৯৬৭ সালে সত্যজিৎ দি এলিয়েন নামের একটি ছবির জন্য চিত্রনাট্য লেখেন। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ প্রযোজনার এই ছবিটির প্রযোজক ছিল কলাম্বিয়া পিকচার্স এবং পিটার সেলার্স ও মার্লোন ব্রান্ডো ছবিটির প্রধান অভিনেতা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু চিত্রনাট্য লেখা শেষ করার পর সত্যজিৎ জানতে পারেন যে সেটির স্বত্ব তার নয় ও এর জন্য তিনি কোন সম্মানও পাবেন না। পরবর্তীকালে মার্লোন ব্র্যান্ডো প্রকল্পটি ত্যাগ করেন। তার স্থানে জেমস কোবার্ন কে আনার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু ততদিনে সত্যজিতের আশাভঙ্গ ঘটে এবং তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। পরে ৭০ ও ৮০-র দশকে কলাম্বিয়া বহুবার প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ১৯৮২ সালে যখন স্টিভেন স্পিলবার্গের ই.টি. দ্য এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল মুক্তি পায়, তখন অনেকেই ছবিটির সাথে সত্যজিতের লেখা চিত্রনাট্যের মিল খুঁজে পান। সত্যজিৎ ১৯৮০ সালে সাইট অ্যান্ড সাউন্ড ম্যাগাজিনে লেখা একটি ফিচারে প্রকল্পটির ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলেন ও পরে সত্যজিতের জীবনী লেখক অ্যান্ড্রু রবিনসন এ ঘটনার ওপর আরও বিস্তারিত লেখেন (১৯৮৯ সালে প্রকাশিত দি ইনার আই-এ)। সত্যজিৎ বিশ্বাস করতেন যে তার লেখা দি এলিয়েন-এর চিত্রনাট্যটির মাইমোগ্রাফ কপি সারা যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে না পড়লে স্পিলবার্গের ছবিটি বানানো হয়ত সম্ভব হত না। সত্যজিতের ছেলে সন্দ্বীপের অনুযোগ ছিল তিনি সবসময় বড়দের জন্য গম্ভীর মেজাজের ছবি বানান। এর উত্তরে ও নতুনত্বের সন্ধানে সত্যজিৎ ১৯৬৮ সালে নির্মাণ করেন তার সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি গুপী গাইন বাঘা বাইন। এটি ছিল সত্যজিতের পিতামহ উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ছোটদের জন্য একটি গল্পের ওপর ভিত্তি করে বানানো সঙ্গীতধর্মী রূপকথা। গায়ক গুপী ও ঢোলবাদক বাঘা ভুতের রাজার তিন বর পেয়ে ভ্রমণে বেরিয়ে পড়ে ও দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মধ্যে আসন্ন যুদ্ধ থামানোর চেষ্টা করে। ছবিটির নির্মাণকাজ ছিল ব্যয়বহুল, এবং অর্থাভাবে সত্যজিৎ ছবিটি সাদা-কালোয় ধারণ করেন। যদিও তার কাছে বলিউডের এক অভিনেতাকে ছবিতে নেয়ার বিনিময়ে অর্থের প্রস্তাব এসেছিল, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এর পরে সত্যজিৎ তরুণ কবি ও লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা একটি উপন্যাসের ওপর ভিত্তি করে অরণ্যের দিনরাত্রি ছবিটি নির্মাণ করেন। বলা হয় এই ছবিটির সঙ্গীত-কাঠামো চারুলতার চেয়েও বেশি জটিল ছিল। ছবিটিতে চার শহুরে তরুণ ছুটিতে বনে ঘুরতে যায় এবং একজন বাদে সকলেই নারীদের সাথে বিভিন্ন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ে যা তাদের মধ্যবিত্ত চরিত্রের নানা দিক প্রকাশ করে। রবিন উডের মতে “[ছবিটির] একটিমাত্র দৃশ্য থেকেই...একটি ছোট গল্প লেখার রসদ পাওয়া সম্ভব। এ ছবিতে সত্যজিৎ মুম্বাই-ভিত্তিক অভিনেত্রী সিমি গারেওয়াল-কে এক আদিবাসী মহিলা হিসেবে চরিত্রায়ণ করেন; তার মত শহুরে নারীকে সত্যজিৎ চরিত্রটির জন্য নির্বাচন করেছেন শুনে সিমি অবাক হয়েছিলেন। অরণ্যের দিনরাত্রি-তে নির্মাণকুশলতা প্রদর্শনশেষে সত্যজিৎ মনোযোগ দেন তৎকালীন বাঙালি বাস্তবতার মর্মমূলে, যখন বামপন্থী নকশাল আন্দোলনের তীব্রতা সর্বত্র অনুভূত হচ্ছিল। সত্যজিৎকে প্রায়ই বলা হত তিনি সমসাময়িক ভারতীয় শহুরে অভিজ্ঞতার ব্যাপারে উদাসীন। এর জবাবে ১৯৭০-এর দশকে তিনি কলকাতাকে কেন্দ্র করে তিনটি ছবি বানান যেগুলো ‘‘কলকাতা ত্রয়ী’’ নামেও পরিচিত: প্রতিদ্বন্দ্বী (১৯৭০), সীমাবদ্ধ (১৯৭১), এবং জন অরণ্য (১৯৭৫)। চলচ্চিত্র তিনটি আলাদাভাবে পরিকল্পনা করা হলেও বিষয়বস্তুর মিলের কারণে এগুলোকে একটি দুর্বল ত্রয়ী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। প্রতিদ্বন্দ্বী-র নায়ক এক আদর্শবাদী তরুণ স্নাতক যার মোহমুক্তি ঘটলেও ছবির শেষ পর্যন্ত সে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েনি। জন অরণ্য-র নায়ক আরেক তরুণ যে জীবিকা নির্বাহের জন্য দুর্নীতির কাছে আত্মসমর্পণ করে। এবং সীমাবদ্ধ-র অর্থনৈতিকভাবে সফল প্রধান চরিত্রটি আরও লাভ করার জন্য সমস্ত আদর্শ বিসর্জন দেয়। এগুলির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বী ছবিতে সত্যজিৎ ভিন্ন ধরনের (elliptical) বর্ণনাভঙ্গি ব্যবহার করেন, যেখানে নেগেটিভ, স্বপ্নদৃশ্য ও হঠাৎ ফ্ল্যাশব্যাকের সহায়তা নেয়া হয়। এ ছাড়া ৭০-এর দশকে সত্যজিৎ তার নিজের লেখা জনপ্রিয় গোয়েন্দা কাহিনীর নায়ক ফেলুদার ওপর ভিত্তি করে সোনার কেল্লা ও জয় বাবা ফেলুনাথ ছবি দুটিও নির্মাণ করেন। সত্যজিৎ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে একটি ছবি তৈরি করার কথা ভেবেছিলেন, কিন্তু পরে এ পরিকল্পনা ত্যাগ করেন এই মন্তব্য করে যে একজন চলচ্চিত্রকার হিসেবে তিনি শরণার্থীদের বেদনা ও জীবন-অভিযাত্রার প্রতিই বেশি আগ্রহী ছিলেন, তাদের নিয়ে রাজনীতির প্রতি নয়। ১৯৭৭ সালে সত্যজিৎ শতরঞ্জ কে খিলাড়ি নামের একটি হিন্দি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। ছবিটি মুন্সি প্রেমচাঁদ-এর একটি গল্প অবলম্বনে তৈরি করা হয়; ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিপ্লবের এক বছর আগে অযোধ্যা রাজ্যের লক্ষ্ণৌ ছিল গল্পটির পটভূমি। ছবিটিতে ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদের সূত্রপাতের ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে। এটিই ছিল বাংলা ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় নির্মিত সত্যজিতের প্রথম চলচ্চিত্র। এটি আরও ছিল তার সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও তারকাসমৃদ্ধ ছবি, যাতে সঞ্জীব কুমার, সাইদ জাফরি, আমজাদ খান, শাবানা আজমি, ভিক্টর বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিচার্ড অ্যাটনবারা-র মত অভিনেতারা অংশ নেন। পরবর্তীকালে সত্যজিৎ প্রেমচাঁদের গল্পের ওপর ভিত্তি করে হিন্দি ভাষায় এক-ঘণ্টা দীর্ঘ সদগতি নামের একটি ছবি নির্মাণ করেন। ছবিটিতে ভারতে বিদ্যমান অস্পৃশ্যতার ক্রূর বাস্তবতাকে তুলে ধরা হয়। ১৯৮০ সালে সত্যজিৎ গুপী গাইন বাঘা বাইন ছবির পরবর্তী পর্ব হীরক রাজার দেশে নির্মাণ করেন, যেটিতে তার রাজনৈতিক মতামতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ছবিটির চরিত্র হীরক রাজা ছিল ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণাকালীন সরকারের প্রতিফলন। বহুল প্রশংসাপ্রাপ্ত স্বল্পদৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র পিকু নির্মাণের মধ্য দিয়ে সত্যজিতের কর্মজীবনের এই পর্বের সমাপ্তি ঘটে। শেষ পর্যায় (১৯৮৩–১৯৯২) ১৯৮৩ সালে ঘরে বাইরে ছবির কাজ করার সময় সত্যজিতের হার্ট অ্যাটাক ঘটে এবং এ ঘটনার ফলে জীবনের অবশিষ্ট নয় বছরে তার কাজের পরিমাণ ছিল অত্যন্ত সীমিত। স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের সহায়তায় সত্যজিৎ ১৯৮৪ সালে ঘরে বাইরে নির্মাণ সমাপ্ত করেন। এরপর থেকে তার ছেলেই তার হয়ে ক্যামেরার কাজ করতেন। অন্ধ জাতীয়তাবাদের ওপর লেখা রবীন্দ্রনাথের এই উপন্যাসটি চলচ্চিত্রে রূপদানের ইচ্ছা সত্যজিতের অনেকদিন ধরেই ছিল এবং তিনি ৪০-এর দশকে ছবিটির একটি চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন। যদিও ছবিটিতে সত্যজিতের অসুস্থতাজনিত ভুলের ছাপ দেখা যায়, তা সত্ত্বেও ছবিটি কিছু সমালোচকের প্রশংসা কুড়ায় এবং এই ছবিতেই সত্যজিৎ প্রথমবারের মত একটি চুম্বনদৃশ্য যোগ করেন। ১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ তার বাবা সুকুমার রায়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন। শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে সত্যজিৎ তার শেষ তিনটি ছবি অভ্যন্তরীণ মঞ্চে নির্মাণ করেন। এগুলি তার আগের ছবিগুলির চেয়ে আলাদা ও অনেক বেশি সংলাপনির্ভর। ১৯৮৯ সালে নির্মিত গণশত্রু ছবিটিতে তার পরিচালনা তুলনামূলকভাবে দুর্বল এবং এটিকে দীর্ঘদিনের অসুস্থতাশেষে ফিরে আসার পর সত্যজিতের চলচ্চিত্র নির্মাণের পুনঃপ্রচেষ্টা হিসেবেই গণ্য করা হয়। ১৯৯০ সালে নির্মিত শাখা প্রশাখা সে তুলনায় উন্নততর ছবি হিসেবে গণ্য করা হয়। এ ছবিতে এক আজীবন সততার সাথে কাটানো বৃদ্ধ ব্যক্তি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে তার তিন ছেলের দুর্নীতির কথা জানতে পারেন; ছবির শেষ দৃশ্যে তিনি তার মানসিকভাবে অসুস্থ কিন্তু দুর্নীতিমুক্ত চতুর্থ সন্তানের সান্নিধ্যে সান্ত্বনা খুঁজে পান। সত্যজিতের শেষ ছবি আগন্তুক ছিল হালকা আবহের। এ ছবিতে বহুদিনের হারিয়ে যাওয়া মামার পরিচয় দিয়ে একজন আগন্তুক এক পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তার এই সাক্ষাতের অভিজ্ঞতার (যেখানে পরিবারের ছোট ছেলেটি আগন্তুকটিকে আগ্রহভরে স্বাগত জানায়, কিন্তু পরিবারের বড়রা তাকে অনীহা ও সন্দেহের চোখে দেখেন) ভেতর দিয়ে সত্যজিৎ দর্শকের কাছে মানুষের পরিচয়, স্বভাব-প্রকৃতি ও সভ্যতা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জাল বোনেন। সত্যজিতের ছবি গভীর মানবিক আবেদন সমৃদ্ধ। ১৯৯২ সালে হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে অসুস্থ সত্যজিৎ হাসপাতালে ভর্তি হন এবং সে অবস্থা থেকে তার স্বাস্থ্য আর ভালো হয়নি। মৃত্যুর কিছু সপ্তাহ আগে অত্যন্ত অসুস্থ ও শয্যাশায়ী অবস্থায় তিনি তার জীবনের শেষ পুরস্কার একটি সম্মানসূচক অস্কার গ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল সত্যজিৎ মৃত্যুবরণ করেন। চলচ্চিত্র কুশলতা সত্যজিৎ চিত্রনাট্য রচনাকে পরিচালনার অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে গণ্য করতেন। এ কারণেই কর্মজীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে তিনি বাংলা ছাড়া অন্য কোন ভাষায় চলচ্চিত্র নির্মাণে আগ্রহী ছিলেন না। তার দুই বিদেশী ভাষায় নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য তিনি ইংরেজিতে লিখেছিলেন, এবং তারপর সেগুলো তার তত্ত্বাবধানে অনুবাদকেরা হিন্দি ও উর্দুতে ভাষান্তরিত করেন। সত্যজিৎ ও তার শিল্প নির্দেশক বংশী চন্দ্রগুপ্ত মনে করতেন চলচ্চিত্রের “চলচ্চিত্রের রঙ্গমঞ্চের অস্তিত্বই চিত্রনাট্যের ওপর নির্ভরশীল”। সত্যজিৎ সবসময় প্রথমে ইংরেজিতে চিত্রনাট্য লিখতেন যেন অবাঙালি বংশী চন্দ্রগুপ্ত তা পড়তে পারেন। সত্যজিতের প্রথম দিকের চলচ্চিত্রগুলোর ক্যামেরার কাজ করতেন সুব্রত মিত্র, যিনি পরবর্তীকালে তিক্ততার মধ্য দিয়ে সত্যজিতের কর্মীদল থেকে বেরিয়ে যান। কিছু সমালোচকের মতে সুব্রতের প্রস্থানের কারণে সত্যজিতের চলচ্চিত্রের চিত্রধারণের মান নেমে যায়। বাইরে সুব্রতের প্রশংসা করলেও চারুলতা-র সময় থেকেই ক্যামেরার কাজে সত্যজিৎ নিজের নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি করতে থাকেন, এবং এর পরিণতিতে ১৯৬৬ সালের পর থেকে সুব্রত আর সত্যজিতের হয়ে কাজ করেননি। সুব্রত মিত্রের পথপ্রদর্শক কাজের মধ্যে রয়েছে "বাউন্স আলোকসজ্জা" কৌশল, যেখানে কাপড়ে আলো প্রতিফলিত করে অভ্যন্তরীণ সেটেও বাইরের প্রাকৃতিক আলোর আভাস তৈরি করা যায়। এছাড়া সত্যজিৎ তার নিজের অনেক কারিগরি ও চলচ্চিত্র-সংক্রান্ত উদ্ভাবনের পেছনে জঁ-লুক গদার ও ফ্রঁসোয়া ত্রুফোর মত ফরাসি নবতরঙ্গের পরিচালকদের কাজের কথা স্বীকার করেছেন। সত্যজিতের চলচ্চিত্র নিয়মিত সম্পাদনা করতেন দুলাল দত্ত, তবে বেশীর ভাগ সময় সত্যজিৎ-ই দুলালকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিতেন। আর্থিক অসচ্ছলতা এবং সত্যজিতের অনুপুঙ্খ পরিকল্পনা ও পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের কারণে তার বেশীর ভাগ চলচ্চিত্রের সম্পাদনা প্রকৃতপক্ষে ক্যামেরাতে দৃশ্যধারণের সময়েই সম্পন্ন হয়ে যেত (পথের পাঁচালী বাদে)। কর্মজীবনের শুরুতেই রবি শংকর, বেলায়েত খান ও আলি আকবর খানের মত প্রতিভাবান ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞদের সাথে সত্যজিতের কাজ করার সুযোগ হয়েছিল। কিন্তু তার এ অভিজ্ঞতা ছিল মূলত বেদনাদায়ক। তিনি বুঝতে পারেন যে সঙ্গীতজ্ঞেরা তার চলচ্চিত্রের চেয়ে তাদের নিজেদের সাঙ্গীতিক ধারার প্রতিই বেশি অনুগত। সত্যজিৎ পাশ্চাত্য ধারার ধ্রুপদী সঙ্গীতের ব্যবহার পছন্দ করতেন, বিশেষত তার শহুরে পটভূমিতে বানানো ছবিগুলোর জন্য। এ জন্য পরবর্তীকালে তিন কন্যা ছবিটির সময় থেকে তিনি নিজেই নিজের চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত স্বরলিপি রচনা করতেন। সত্যজিতের ছবিতে অভিনেতাদের কাজও সমানভাবে প্রশংসিত হয়েছে। তার ছবিতে চলচ্চিত্র তারকারা যেমন অভিনয় করেছেন, তেমনি কখনো চলচ্চিত্র দেখেননি এরকম মানুষও অভিনয় করেছেন (যেমন অপরাজিত ছবিটিতে)। রবিন উড-সহ অনেকেই সত্যজিতকে শিশু অভিনেতাদের জন্য সেরা পরিচালক হিসেবে আখ্যা দেন, এবং উদাহরণ হিসেবে পথের পাঁচালী ছবিতে অপু ও দুর্গা, পোস্টমাস্টার ছবিতে রতন এবং সোনার কেল্লা ছবিতে মুকুল চরিত্রগুলোর উল্লেখ করেন। সত্যজিতের নির্দেশনার প্রকৃতি অভিনেতার প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করত। উৎপল দত্তের মত অভিনেতাদের তেমন কোন নির্দেশনাই তিনি দেননি, অন্যদিকে অপু চরিত্রে সুবীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে কিংবা অপর্ণা চরিত্রে শর্মিলা ঠাকুরকে তিনি অনেকটা "পুতুলের" মত ব্যবহার করেছেন। সত্যজিতের চলচ্চিত্রগুলোর বিষয়বস্তু ছিল বহুমুখী। এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৭৫ সালে বলেন যে সমালোচকেরা প্রায়ই তার বিরুদ্ধে এক বিষয় থেকে আরেক বিষয়ে, এক ধরন থেকে অন্য ধরনে ঘাসফড়িঙের মতো লাফ দেয়ার প্রবণতা প্রদর্শনের অভিযোগ করেন ও তার ছবিতে চেনাজানা কোন ধরন খুঁজে পান না যাতে তার গায়ে কোন একটি বিশেষ তকমা এঁটে দেয়া যায়। এ ব্যাপারে আত্ম-সমর্থন করে তিনি বলেন যে এই বহুমুখীতা তার নিজের চরিত্রেরই প্রতিফলন, এবং তার প্রতিটি ছবির পেছনে ঠাণ্ডা মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত কাজ করেছে। সাহিত্যকর্ম সত্যজিৎ বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় দুটি চরিত্রের স্রষ্টা। একটি হল প্রাতিজনিক গোয়েন্দা ফেলুদা, অন্যটি বিজ্ঞানী প্রফেসর শঙ্কু। এছাড়া তিনি প্রচুর ছোটগল্প লিখেছেন যেগুলো বারটির সংকলনে প্রকাশ পেত এবং সংকলনগুলোর শিরোনামে “বার” শব্দটি বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হত (যেমন ‘‘একের পিঠে দুই”, “এক ডজন গপ্পো”, ইত্যাদি)। ধাঁধা ও শব্দ-কৌতুক (pun)-এর প্রতি তার আগ্রহ এ গল্পগুলোতে প্রকাশ পায়। অনেক সময় ফেলুদাকে ধাঁধাঁর সমাধান বের করে কোন কেসের রহস্য উন্মোচন করতে হত। ফেলুদার বিভিন্ন গল্পে তার সঙ্গী উপন্যাস-লেখক জটায়ু (লালমোহন গাঙ্গুলি), আর তার খুড়তুতো ভাই তপেশরঞ্জন মিত্র ওরফে তোপসে হচ্ছে গল্পের বর্ণনাকারী, যার ভূমিকা অনেকটা শার্লক হোমসের পার্শ্বচরিত্র ডক্টর ওয়াটসনের মত। প্রফেসর শঙ্কুর বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলো ডায়েরী আকারে লেখা, যে ডায়েরী বিজ্ঞানীটির রহস্যময় অন্তর্ধানের পর খুঁজে পাওয়া যায়। সত্যজিতের ছোটগল্পগুলোতে অনিশ্চিত উৎকণ্ঠা, ভয় ও অন্যান্য বিষয়ে সত্যজিতের আগ্রহের ছাপ পড়ে, যে ব্যাপারগুলো তিনি চলচ্চিত্রে এড়িয়ে চলতেন। সত্যজিতের অধিকাংশ রচনাই ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে এবং বর্তমানে তার বইগুলোর দ্বিতীয় প্রজন্মের পাঠকসমাজ গড়ে উঠেছে। তার লেখা অধিকাংশ চিত্রনাট্যও “একশান” সাহিত্যপত্রে বাংলায় প্রকাশিত হয়েছে। সত্যজিৎ তার ছেলেবেলার কাহিনী নিয়ে লেখেন যখন ছোট ছিলাম (১৯৮২)। চলচ্চিত্রের ওপর লেখা তার প্রবন্ধের সংকলনগুলো হল: আওয়ার ফিল্মস, দেয়ার ফিল্মস (১৯৭৬), বিষয় চলচ্চিত্র (১৯৮২), এবং একেই বলে শুটিং (১৯৭৯)। ৯০-এর দশকের মাঝামাঝি সত্যজিতের চলচ্চিত্র বিষয়ক নিবন্ধের একটি সঙ্কলন পশ্চিমে প্রকাশ পায়। এই বইটির নামও Our Films, Their Films। বইটির প্রথম অংশে সত্যজিৎ ভারতীয় চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করেন, এবং দ্বিতীয় অংশে হলিউড, কিছু পছন্দের চিত্রনির্মাতা (চার্লি চ্যাপলিন, আকিরা কুরোসাওয়া) ও ইতালীয় নব্যবাস্তবতাবাদের ওপর আলোচনা করেন। বিষয় চলচ্চিত্র বইটিতে চলচ্চিত্রের নানা বিষয়ে সত্যজিতের ব্যক্তিগত দর্শন আলোচিত হয়েছে। সম্প্রতি বইটির একটি ইংরেজি অনুবাদ Speaking of Films নামে প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও সত্যজিৎ ‘‘তোড়ায় বাঁধা ঘোড়ার ডিম’’ নামে একটি ননসেন্স ছড়ার বই লেখেন, যেখানে লুইস ক্যারলের ‘‘জ্যাবারওয়কি’’-র একটি অনুবাদ রয়েছে। সত্যজিৎ “রে রোমান” (Ray Roman) ও “রে বিজার” (Ray Bizarre) নামের দুইটি টাইপফেস নকশা করেন। এর মধ্যে রায় রোমান ১৯৭০ সালে একটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার জেতে। চলচ্চিত্র জগতে পদার্পণের অনেক পরেও কলকাতার কিছু মহলে তিনি একজন প্রভাবশালী গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যজিত তার নিজের লেখা সমস্ত বইয়ের প্রচ্ছদ ও ভেতরের ছবি আঁকতেন। এছাড়া তার চলচ্চিত্রের সব বিজ্ঞাপনগুলোও তিনিই তৈরি করতেন। চলচ্চিত্রের তালিকা তিনি মোট ৩৬টি ছবি পরিচালনা করেন। এর মধ্যে ২৯টি ছিল কাহিনিচিত্র, পাঁচটি তথ্যচিত্র ও দু’টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি। দর্শক ও সমালোচকের প্রতিক্রিয়া সত্যজিতের চলচ্চিত্রের অন্যতম প্রধান ও পুনরাবৃত্ত উপাদান ছিল এর মানবতাবাদ। তার ছবিগুলো আপাতদৃষ্টিতে সরল, কিন্তু এই সরলতার গভীরে লুকিয়ে আছে জটিলতা। তার চলচ্চিত্রের বর্ণনাভঙ্গি ও চরিত্রায়ন নিখুঁত বলে অনেকবার প্রশংসিত হয়েছে। অনেকেই তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, এবং এর মধ্যে অন্যতম হল আকিরা কুরোসাওয়ার করা এই উক্তিটি: "সত্যজিতের চলচ্চিত্র না দেখা আর পৃথিবীতে বাস করে চন্দ্র-সূর্য না দেখা একই কথা। অন্যদিকে সত্যজিতের নিন্দুকেরা মনে করেন তার ছবিগুলো অত্যন্ত ধীর গতির, যেন “রাজকীয় শামুকের” চলার মত। তারা সত্যজিতের মানবতাবাদকে ভাবেন সরলমনস্কতার বহিঃপ্রকাশ, আর তার কাজকে মনে করেন আধুনিকতা-বিরোধী। তারা আরও বলেন যে সত্যজিতের চলচ্চিত্রে তার সমসাময়িক পরিচালকদের মত (যেমন জঁ-ল্যুক গদার) নতুন অভিব্যক্তি কিংবা পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখতে পাওয়া যায় না। স্ট্যানলি কফম্যান লিখেছেন যে সত্যজিতের কিছু সমালোচক মনে করেন যে সত্যজিৎ “আগে থেকেই ধরে নিয়েছেন যে যেসব চলচ্চিত্র কেবল তাদের চরিত্রগুলোকে নিয়েই পড়ে থাকে, কিন্তু চরিত্রগুলোর জীবনে কোন নাটকীয় বিন্যাস আরোপ করে না, সেসব চলচ্চিত্র দর্শকেরা পছন্দ করবে। সত্যজিৎ নিজেই বলেছেন যে তার চলচ্চিত্রগুলোর ধীরগতির ব্যাপারে তার কিছুই করার নেই, এবং কুরোসাওয়া সত্যজিতের পক্ষ নিয়ে বলেন যে "সত্যজিতের ছবিগুলো মোটেই ধীরগতির নয়। বরং এগুলোকে শান্তভাবে বহমান এক বিরাট নদীর সাথে তুলনা করা যায়।" সমালোচকেরা প্রায়ই সত্যজিৎকে চলচ্চিত্র ও অন্যান্য মাধ্যমের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের সাথে তুলনা করেছেন, যেমন আন্তন চেখভ, জঁ রনোয়ার, ভিত্তোরিও দে সিকা, হাওয়ার্ড হক্‌স কিংবা ভোল্‌ফগাং আমাদেউস মোৎসার্ট। শেক্সপিয়ারের সাথেও তাঁকে তুলনা করা হয়েছে। । ভি এস নাইপল শতরঞ্জ কে খিলাড়ি-র একটি দৃশ্যকে শেক্সপিয়ারের নাটকের সাথে তুলনা করে বলেছেন: "only three hundred words are spoken but goodness! – terrific things happen." সত্যজিতের চলচ্চিত্রের নান্দনিকতা নিয়ে যারা সন্তুষ্ট ছিলেন না তারাও স্বীকার করেন যে একটি সম্পূর্ণ সংস্কৃতিকে তার বিভিন্ন সূক্ষ্ম দ্যোতনাসহ চলচ্চিত্রে তুলে ধরার ব্যাপারে তিনি ছিলেন একমেবাদ্বিতীয়ম। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকায় সত্যজিতের ওপর লেখা শ্রদ্ধাঞ্জলিতে এই অনুভূতিই প্রকাশ পায় এভাবে: "Who else can compete?" তবে সাধারণের মতে তার হার্ট অ্যাটাকের পরে বানানো ছবিগুলো তার পুরনো ছবিগুলোর মত জীবন্ত ছিল না। ১৯৮০-র শুরুর দিকে ভারতীয় লোকসভা সদস্য ও প্রাক্তন অভিনেত্রী নার্গিস দত্ত তার বিরুদ্ধে এই বলে অভিযোগ আনেন যে তিনি "দারিদ্র্য রফতানি" করছেন, এবং সত্যজিতের কাছে “আধুনিক ভারত”-এর প্রতিনিধিত্ব করে এমন ছবি বানানোর দাবি করেন অন্যদিকে ভারতজুড়ে সমাজতন্ত্রের প্রবক্তারা মনে করতেন সত্যজিৎ জাতির নিপীড়িত শ্রেণীর প্রতি "প্রত্যয়ী" ছিলেন না, বরং তিনি ‘‘পথের পাঁচালী’’ ও ‘’অশনি সংকেত’’ ছবিতে বর্ণনাভঙ্গি ও নান্দনিকতার মাধ্যমে দারিদ্র্যকে মহৎ করে দেখিয়েছেন। তারা আরও অভিযোগ করে যে সত্যজিৎ তার ‘‘বুর্জোয়া’’ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে এসে তার ছবির সংঘাতগুলোর কোন সমাধান দেখাতে পারেন নি। ৭০-এর দশকের নকশাল আন্দোলনের সময় তার ছেলে সন্দীপ এক পর্যায়ে শারীরিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন। ৬০-এর দশকে সত্যজিৎ ও মার্ক্‌স্‌বাদী চলচ্চিত্রকার মৃণাল সেন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। বাণিজ্যিক অভিনেতা উত্তম কুমার-কে ছবিতে নেয়ার জন্য মৃণাল সত্যজিতের সমালোচনা করেন। সত্যজিৎ জবাব দেন যে মৃণাল কেবল "সহজ লক্ষ্য"গুলোতেই (তথা বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রেণী) আঘাত হানতে জানেন। কিংবদন্তি ভারতে ও বিশ্বব্যাপী বাঙালি সম্প্রদায়ের কাছে সত্যজিৎ রায় একজন সাংস্কৃতিক প্রতিভূ। তার মৃত্যুর পর কলকাতার জীবনযাত্রা থেমে পড়ে। হাজার হাজার লোক শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার বাড়িতে আসেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ গভীর প্রভাব ফেলেন। সত্যজিতের চলচ্চিত্র কৌশল অপর্ণা সেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ, গৌতম ঘোষ এবং বাংলাদেশের তারেক মাসুদ ও তানভীর মোকাম্মেল-কে অনুপ্রাণিত করেছে। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, মৃণাল সেন, ও আদুর গোপালকৃষ্ণন-এর মত চলচ্চিত্র নির্মাতারা ভারতীয় চলচ্চিত্রে সত্যজিতের অসামান্য অবদান স্বীকার করেছেন। ভারতের বাইরে মার্টিন স্কোরসেজি, জেমস আইভরি, আব্বাস কিয়ারোস্তামি ও এলিয়া কাজান-এর মত চিত্রনির্মাতারা তার কাজ দেখে প্রভাবিত হয়েছেন বলে ধারণা করে হয়। ইরা সাক্‌স-এর ২০০৫ সালে নির্মিত Forty Shades of Blue ছিল চারুলতা-র একটি দুর্বলভাবে অনুসৃত পুনর্নির্মাণ, আর ১৯৯৫ সালের মাই ফ্যামিলি ছবিটির শেষ দৃশ্য অপুর সংসার-এর শেষ দৃশ্যকে অনুসরণ করে তৈরি। ইদানীংকার কিছু ছবি, যেমন স্যাক্রেড এভিল, দীপা মেহতার এলিমেন্ট্‌স ত্রয়ী, এমনকি জঁ-ল্যুক গদার-এর চলচ্চিত্রেও সত্যজিতের চলচ্চিত্রের প্রতি নির্দেশ খুঁজে পাওয়া যায়। মার্কিন অ্যানিমেটেড টেলিভিশন সিরিজ দ্য সিম্পসন্‌স-এর আপু নাহাসাপিমাপেটিলন চরিত্রটির নাম রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নির্বাচন করা হয়। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের সাথে সত্যজিতের ছবি ডোমিনিকা-র স্ট্যাম্পে স্থান পায় - কোন ভারতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের জন্য এ জাতীয় ঘটনা এটাই প্রথম। বহু সাহিত্যকর্মে সত্যজিৎ কিংবা তার কাজকে নির্দেশ করা হয়েছে। সালমান রুশদির লেখা হারুন অ্যান্ড দ্য সি অফ স্টোরিজ-এ দুইটি মাছের নাম ছিল গুপী ও বাঘা (সত্যজিতের “গুপী গাইন” ও “বাঘা বাইন” চরিত্র দুটির নামে)। বহু প্রতিষ্ঠান সত্যজিতকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে। এদের মধ্যে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র দ্বিতীয় চলচ্চিত্রকার হিসেবে (চ্যাপলিনের পর) তাকে এই ডিগ্রী প্রদান করে। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্স সরকার তাকে লেজিওঁ দনর পুরস্কার প্রদান করেন। তার মৃত্যুর অল্প কিছু দিন আগে ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক পদক ভারতরত্ন প্রদান করেন। ১৯৯৩ সালে ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, সান্টা ক্রুজ সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডি কালেকশন প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৫ সালে ভারত সরকার চলচ্চিত্র বিষয়ে গবেষণার জন্য সত্যজিৎ রায় চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৭ সালে ব্রিটিশ ব্রডক্যাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি) ঘোষণা দেয় যে, ফেলুদা সিরিজের দুটি গল্প নিয়ে রেডিও অনুষ্ঠান নির্মাণ করা হবে। লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবের সময় থেকে "সত্যজিৎ রায় পুরস্কার" নামে একটি নিয়মিত পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রথম সারির পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের পরিচালক যাদের চলচ্চিত্রের শিল্পগুণ, সহানুভূতি এবং মানবতার দিকটি সত্যজিতের মত তাদেরকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। ওয়েস অ্যান্ডারসন দাবী করেছেন যে তার চলচ্চিত্রে সত্যজিতের বিশেষ প্রভাব রয়েছে। তার সাম্প্রতিক ছবি দ্য দার্জিলিং লিমিটেড সত্যজিৎ রায়কে উৎসর্গ করেছেন। পুরস্কার, সম্মাননা এবং স্বীকৃতি সত্যজিৎ রায় তার জীবদ্দশায় প্রচুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনিই দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যাঁকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। প্রথম চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হিসেবে অক্সফোর্ডের ডিলিট পেয়েছিলেন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৮৭ সালে ফ্রান্সের সরকার তাকে সেদেশের বিশেষ সম্মনসূচক পুরস্কার লেজিওঁ দনরে ভূষিত করে। ১৯৮৫ সালে পান ভারতের সর্বোচ্চ চলচ্চিত্র পুরস্কার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার। ১৯৯২ সালে মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বে একাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সাইন্সেস তাকে আজীবন সম্মাননাস্বরূপ একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করে। মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেই ভারত সরকার তাকে প্রদান করেন দেশের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন। সেই বছরেই মৃত্যুর পরে তাকে মরণোত্তর আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার প্রদান করা হয়। প্রয়াত পরিচালকের পক্ষে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন শর্মিলা ঠাকুর। রায় পরিবার আরো দেখুন পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র সমান্তরাল চলচ্চিত্র ফেলুদা চলচ্চিত্রে ফেলুদা প্রোফেসর শঙ্কু সত্যজিৎ রায়ের সাহিত্যকর্ম সন্দীপ রায় বাংলার সংস্কৃতি পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি কলকাতার সংস্কৃতি বাংলা সাহিত্য বাঙালি সাহিত্যিকদের তালিকা (কালানুক্রমিক) টীকা তথ্যসূত্র গ্রন্থ ও রচনাপঞ্জি বহিঃসংযোগ সত্যজিৎ রায় ফাউন্ডেশন সত্যজিৎ রায় সোসাইটি ওয়ার্ল্ড অফ রায় সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড স্টাডি কালেকশন ১৯২১-এ জন্ম ১৯৯২-এ মৃত্যু ১৯শ শতাব্দীর পুরুষ সঙ্গীতজ্ঞ ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় সুরকার বাঙালি চলচ্চিত্র পরিচালক বাংলা ভাষার চলচ্চিত্র পরিচালক ভারতীয় চলচ্চিত্র পরিচালক বাঙালি লেখক বাঙালি গোয়েন্দা কাহিনি লেখক বাংলা ভাষার বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখক বাংলা ভাষার লেখক ভারতীয় লেখক ভারতীয় রহস্য লেখক ভারতীয় শিশুদের লেখক ভারতীয় শিশু সাহিত্যিক ভারতীয় শিশুদের বইয়ের চিত্রালংকরণ শিল্পী ভারতীয় চিত্রালংকরণশিল্পী ভারতীয় পুরুষ চিত্রনাট্যকার ভারতীয় চলচ্চিত্র সঙ্গীত সুরকার ভারতীয় পুরুষ গীতিকার ভারতীয় পুরুষ সুরকার পুরুষ চলচ্চিত্র সঙ্গীত সুরকার একাডেমি সম্মানসূচক পুরস্কার বিজয়ী ভারতীয় একাডেমি পুরস্কার বিজয়ী আকিরা কুরোসাওয়া পুরস্কার বিজয়ী আনন্দ পুরস্কার বিজয়ী দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার বিজয়ী ভারতরত্ন প্রাপক রামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার বিজয়ী লেজিওঁ দনর প্রাপক শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) বিজয়ী শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালনা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) বিজয়ী শ্রেষ্ঠ পরিচালক বিভাগে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার বিজয়ী শিল্পকলায় পদ্মশ্রী প্রাপক শিল্পকলায় পদ্মভূষণ প্রাপক শিল্পকলায় পদ্মবিভূষণ প্রাপক স্বর্ণ সিংহ বিজয়ী পরিচালক স্বর্ণ ভল্লুক বিজয়ী পরিচালক শ্রেষ্ঠ পরিচালনা বিভাগে রৌপ্য ভল্লুক বিজয়ী সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার প্রাপক সংগীত নাটক অকাদেমি ফেলোশিপ প্রাপক কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতার প্রাক্তন শিক্ষার্থী বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ভারতে রাষ্ট্রীয় অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শান্তিনিকেতনের সাথে যুক্ত ব্যক্তি কলকাতার চিত্রনাট্যকার বাঙালি হিন্দু কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক কলকাতার সঙ্গীতজ্ঞ কলকাতার ব্যক্তি কলকাতার সংস্কৃতি ব্রাহ্ম নির্বাচিত জীবনী নিবন্ধ শ্রেষ্ঠ পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র পরিচালক ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় নাট্যকার ২০শ শতাব্দীর পুরুষ সঙ্গীতজ্ঞ বাঙালি গীতিকার ভারতীয় নাস্তিক ভারতীয় শিশুসাহিত্যিক শ্রেষ্ঠ শিশুতোষ চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (ভারত) বিজয়ী পরিচালক
https://en.wikipedia.org/wiki/Satyajit_Ray
Satyajit Ray
Satyajit Ray (Bengali pronunciation: [ˈʃotːodʒit ˈrae̯] ; 2 May 1921 – 23 April 1992) was an Indian director, screenwriter, documentary filmmaker, author, essayist, lyricist, magazine editor, illustrator, calligrapher, and composer. Ray is widely considered one of the greatest and most influential film directors in the history of cinema. He is celebrated for works including The Apu Trilogy (1955–1959), The Music Room (1958), The Big City (1963), Charulata (1964), and the Goopy–Bagha trilogy (1969–1992).[a] Ray was born in Calcutta to author Sukumar Ray and Suprabha Ray. Starting his career as a commercial artist, Ray was drawn into independent film-making after meeting French filmmaker Jean Renoir and viewing Vittorio De Sica's Italian neorealist film Bicycle Thieves (1948) during a visit to London. Ray directed 36 films, including feature films, documentaries, and shorts. Ray's first film, Pather Panchali (1955), won eleven international prizes, including the inaugural Best Human Document award at the 1956 Cannes Film Festival. This film, along with Aparajito (1956) and Apur Sansar (The World of Apu) (1959), form The Apu Trilogy. Ray did the scripting, casting, scoring, and editing for the movie and designed his own credit titles and publicity material. He also authored several short stories and novels, primarily for young children and teenagers. Popular characters created by Ray include Feluda the sleuth, Professor Shonku the scientist, Tarini Khuro the storyteller, and Lalmohan Ganguly the novelist. Ray received many major awards in his career, including a record thirty-seven Indian National Film Awards which includes Dadasaheb Phalke Award, a Golden Lion, a Golden Bear, two Silver Bears, many additional awards at international film festivals and ceremonies, and an Academy Honorary Award in 1992. In 1978, he was awarded an honorary degree by Oxford University. The Government of India honoured him with the Bharat Ratna, its highest civilian award, in 1992. On the occasion of the birth centenary of Ray, the International Film Festival of India, in recognition of the auteur's legacy, rechristened in 2021 its annual Lifetime Achievement award to the "Satyajit Ray Lifetime Achievement Award". In April 2024, Forbes ranked Ray as the 8th greatest director of all time, further cementing his position as a monumental figure in the history of cinema.
2468
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B2%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
বরিশাল জেলা
বরিশাল জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের বরিশাল বিভাগের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল। এটি ১৭৯৭ সালে বাকেরগঞ্জ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়। বরিশাল বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীবন্দর। উপজেলার সংখ্যানুসারে বরিশাল বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। অবস্থান ও আয়তন উত্তরে মাদারীপুর জেলা, শরীয়তপুর জেলা ও চাঁদপুর জেলা, দক্ষিণে ঝালকাঠি জেলা, বরগুনা জেলা ও পটুয়াখালী জেলা, পূর্বে লক্ষ্মীপুর জেলা, ভোলা জেলা ও মেঘনা নদী, পশ্চিমে পিরোজপুর জেলা, ঝালকাঠি জেলা ও গোপালগঞ্জ জেলা। নদ-নদী মেঘনা, আড়িয়াল খাঁ, বিষখালী, কীর্তনখোলা, তেতুলিয়া, টর্কি, সন্ধ্যা ও বুড়িশ্বর ইত্যাদি। ইতিহাস নামকরণের ইতিহাস বরিশালের নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, পূর্বে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো; আর শাল গাছ থেকেই 'বরিশাল' নামের উৎপত্তি। 'আইতে শাল, যাইতে শাল / তার নাম বরিশাল' প্রবাদটি উল্লেখ্য। আবার, কেউ কেউ দাবি করেন যে, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায়, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকার নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ও চৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে 'বরিসল্ট' বলতো। আবার, অনেকের ধারণা, এখানকার লবণের দানাগুলোর আকার বড় বড় ছিল বলে 'বরিসল্ট' বলা হতো। পরবর্তিতে এ শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামের উৎপত্তি হয়েছে। সাধারণ ইতিহাস বাকেরগঞ্জে ম্যাজিস্ট্রেসি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৭৯৭ সালে রেগুলেশন-৭ অনুযায়ী বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ নিয়ে বাকেরগঞ্জ জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন সময়ের প্রভাবশালী জমিদার আগা বাকের খানের নামানুসারে এ জেলার নামকরণ হয়। ১৮০১ সালের ১লা মে স্যার জন শ্যোর এ জেলার সদর দপ্তর বর্তমানে বরিশাল শহরে স্থানান্তরিত করেন। পরবর্তীতে বরিশাল নামেই এ জেলা পরিচিতি পায়। ১৮১৭ সালে এই জেলা একটি কালেক্টরেটে পরিণত হয়। ১৮২৯ সালে ঢাকা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হলে এই জেলা ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হয়। যে চারটি কালেক্টরেট নিয়ে ঢাকা বিভাগ বা কমিশনারশিপ গঠিত এটি তারই একটি। এটি কলকাতা থেকে প্রায় ১৮০ মাইল পূর্বে অবস্থিত ছিল। সেসময় জেলার আয়তন ছিল ৪,০৬৬ বর্গমাইল (১৮৭২ সাল অনুসারে) যা বর্তমান মাদারীপুর, বরিশাল, ঝালকাঠী, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা জেলা জুড়ে বিস্তৃত ছিল। ১৮৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত 'Calcutta Gadget' থেকে তৎকালীন বাকেরগঞ্জ জেলার সীমানার উল্লেখ পাওয়া যায়, তাতে বলা হয়, "বিশদভাবে এই জেলার উত্তরে ফরিদপুর, পশ্চিমে ফরিদপুর ও বলেশ্বর নদী যা যশোর থেকে পৃথক করেছে, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে মেঘনা নদী ও এর মোহনা।" যে গঙ্গা বা পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার সম্মিলিত জলরাশি বাহিত পলিমাটি দ্বারা গঠিত ব-দ্বীপের নিম্নভাগে এ জেলার অবস্থান, আর এটি ২১ ডিগ্রি থেকে ২৩ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯ ডিগ্রি থেকে ৯১ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমায় অবস্থিত। সংক্ষেপে এর সীমারেখা হচ্ছে: উত্তরে ফরিদপুর, পশ্চিমে ফরিদপুর ও বালেশ্বর নদী ( এ নদী জেলাটিকে যশোর থেকে পৃথক করেছে), দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর এবং পূর্বে মেঘনা ও তার মোহনা। উত্তর থেকে দক্ষিণে এ জেলার দৈর্ঘ্য হচ্ছে প্রায় ৮৫ মাইল আর দক্ষিণ শাহবাজপুর দ্বীপসহ এর প্রশস্ততা হচ্ছে প্রায় ৬০ মাইল। এর আয়তন হচ্ছে প্রায় ৪,৩০০ বর্গমাইল। এ জেলায় গ্রাম ও শহরের সংখ্যা ৩৩১২ টি হবে বলে মনে হয়। ভূমি রাজস্ব হচ্ছে প্রায় ১৩ লাখ ৭০ হাজার রুপি (১৩৭,০০০ পাউন্ড) এবং সব উৎস থেকে প্রাপ্ত মোট রাজস্বের পরিমাণ হচ্ছে ১৬ লাখ রুপি। স্থানীয় প্রশাসনের ব্যয় তিন লাখেরও কম। প্রশাসনিক এলাকাসমূহ বরিশাল জেলা ৩০ ওয়ার্ডবিশিষ্ট ১টি সিটি কর্পোরেশন, ১০টি উপজেলা, ১৪টি থানা, ৬টি পৌরসভা, ৮৭টি ইউনিয়ন ও ৬টি সংসদীয় আসন নিয়ে গঠিত। উপজেলাসমূহ বরিশাল জেলায় মোট ১০টি উপজেলা রয়েছে। উপজেলাগুলো হল: সংসদীয় আসন জনসংখ্যার উপাত্ত ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরিশাল জেলার মোট জনসংখ্যা ২৩,২৪,৩১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১১,৩৭,২১০ জন এবং মহিলা ১১,৮৭,১০০ জন। মোট পরিবার ৫,১৩,৬৭৩টি। শিক্ষা ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বরিশাল জেলার সাক্ষরতার হার ৬১.২%। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উদয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ ব্রজমোহন কলেজ শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বরিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজ সরকারি বরিশাল কলেজ আলেকান্দা সরকারি কলেজ, বরিশাল বরিশাল সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ বরিশাল মডেল কলেজ জামিয়া ইসলামিয়া মাহমুদিয়া বরিশাল শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় বরিশাল জিলা স্কুল বরিশাল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় শহীদ আরজুমনি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চরমোনাই জামিয়া রশিদিয়া ইসলামিয়া ব্রজমোহন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বরিশাল কালেক্টরেট মাধ্যমিক বিদ্যালয় এস.সি.জি.এস মাধ্যমিক বিদ্যালয় টাউন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কামারখালি কে এস ইউ মাধ্যমিক বিদ্যালয় আলহাজ্ব হযরত আলি ডিগ্রি কলেজ মানিক মিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় আছমত আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় নুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় ব্যাপ্টিষ্ট মিশন বালক মাধ্যমিক বিদ্যালয় হানুয়া লক্ষ্মীপাশা মুহাম্মাদিয়া আলিম মাদ্রাসা (কবাই, সৈয়দ আব্দুল মান্নান ডি. ডি. এফ আলিম মাদরাসা মুসলিম গোরস্থান রোড, বরিশাল সদর]] [পাতারহাট ইসলামিয়া ফাযিল মাদরাসা ][ মেহেন্দিগঞ্জ, বরিশাল ] বাকেরগঞ্জ, বরিশাল) উলানিয়া করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়(উলানিয়া, মেহেন্দিগন্জ) নপাইয়া হোগলটুলি হামিদিয়া ফাজিল মাদরাসা, মেহেন্দিগঞ্জ কাশিপুর গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ রূপাতলী জাগুয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় শেরে-ই-বাংলালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় মথুরানাথ পাবলিক স্কুল অক্সফোর্ড মিশন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কাউনিয়া বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় জগদীশ সাবস্বত বালিকা স্কুল ও কলেজ এম.এম. (মমতাজ মজিদু্ন্নেছা) বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় [[বরিশাল নৈশ মাধ্যমিক বিদ্ পাতারহাট ইসলামীয়া ফাযিল মাদ্রাসা, মেহেন্দিগঞ্জ লস্করপুর দাথিল মাদ্রাসা, মেহেন্দিগঞ্জ পাতারহাট সরকারি আর. সি. কলেজ, মেহেন্দিগঞ্জ রত্নপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আগৈলঝাড়া ধামুড়া ডিগ্রি কলেজ,উজিরপুর কাজলাকাঠি হাফেজ তালুকদার মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৬৫নং নেহালগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হিজলতলা মৌলভীরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয় উজিরপুর আলিম মাদ্রাসা ডব্লিউ বি ইউনিয়ন ইনষ্টিটিউশন, উজিরপুর কাসেমাবাদ সিদ্দিকিয়া কামিল মাদ্রাসা, গৌরনদী এ ওয়াহেদ মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়,বরিশাল মেদাকুল বি.এম.এস.ইনস্টিটিউশন, গৌরনদী সরকারি মুলাদী মাহামুদজান মাধ্যমিক বিদ্যালয় এ.বি.আর মাধ্যমিক বিদ্যালয়,[রামচর,আলীমাবাদ] মুলাদী। চন্দ্রমোহন আর এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বরিশাল চরকালেখান আইডিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয় চরকালেখান আদর্শ ডিগ্রি কলেজ চিত্তাকর্ষক স্থান চর মোনাই দরবার ও মাদ্রাসা শাপলা বিল,উজিরপুর,বরিশাল। বিবির পুকুর,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল বরিশাল মহাশ্মশান,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল জীবনানন্দ দাশ এর বাড়ি(ধানসিঁড়ি),বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিউদ্দীনের বাসভবন,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল অক্সফোর্ড মিশন গীর্জা,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল বেল ইসলামিয়া হসপিটাল,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যান(বেলস পার্ক),বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল ৩০ গোডাউন,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল ৩০ গোডাউন বধ্যভূমি,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল অশ্বিনী কুমার টাউন হল।,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল এবাদুল্লাহ মসজিদ,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল শ্বেতপদ্ম পুকুর,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল চারণকবি মুকুন্দদাস প্রতিষ্ঠিত কালী মন্দির ,বরিশাল সদর উপজেলা,বরিশাল দুর্গাসাগর দিঘী,বাবুগঞ্জ উপজেলা,বরিশাল বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়,বরিশাল বাইতুল আমান জামে মসজিদ(গুঠিয়া মসজিদ),উজিরপুর উপজেলা,বরিশাল মাহিলারা মঠ। সংগ্রাম কেল্লা। শরিফলের দুর্গ। শের-ই-বাংলা জাদুঘর। শংকর মঠ। মাধবপাশা জমিদার বাড়ি কলসকাঠী জমিদার বাড়ি কবি বিজয়গুপ্তর মনসামঙ্গল কাব্যে উল্লেখিত মনসা মন্দির। পাক্কা বাড়ি দূর্গ মেহেন্দিগঞ্জ লাকুটিয়া জমিদার বাড়ি (বরিশাল সদর উপজেলা, বরিশাল) নাটু বাবুর জমিদার বাড়ি উজিরপুরে ঐতিহ্যবাহী মা তাঁরা মন্দির (তারাবাড়ী) সন্ধ্যা নদী অক্সফোর্ড মিশন গির্জা মিয়াবাড়ি জামে মসজিদ দুর্গাসাগর দীঘি বিখ্যাত ব্যাক্তিবর্গ সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক পীর সাহেব সৈয়দ ফজলুল করিম পীর সাহেব ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ রেজাউল করিম পীর সাহেব ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ ফজলুল করিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অশ্বিনী কুমার দত্ত কামিনী রায় আবুল কাশেম ফজলুল হক এ কে এম নুরুল করিম খায়ের:রাজনীতিবিদ। কুসুমকুমারী দাশ জীবনানন্দ দাশ আরজ আলী মাতুব্বর বেগম সুফিয়া কামাল উৎপল দত্ত বীরশ্রেষ্ঠ মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর লোকমান হোসেন মিয়া:-সরকারি কর্মকর্তা। হানিফ সংকেত: গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। আবদুর রহমান বিশ্বাস ডঃ সুরেন্দ্র নাথ ডঃ কামাল হোসেন আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ মোশাররফ করিম ফজলুর রহমান খন্দকার :-বীর বিক্রম। মোহাম্মদ সিদ্দিক:-বীর প্রতীক। গোলাম মুস্তাফা সুরকার আলতাফ মাহমুদ শওকত হোসেন হিরন সরদার ফজলুল করিম মুকুন্দ দাস পিয়ারীমোহন দাস ফণিভুষণ দাশগুপ্ত মনোরঞ্জন ব্যাপারী রাশেদ খান মেনন প্রাণকুমার সেন সীতানাথ সিদ্ধান্তবাগীশ বিজয় গুপ্ত সুনীল কুমার গুপ্ত মিঠুন চক্রবর্তী:প্রখ্যাত অভিনেতা। পঙ্কজ নাথ তথ্যসূত্র আরো দেখুন বরিশাল বরিশাল বিভাগ বাংলাদেশের জেলাসমূহ বহিঃসংযোগ বরিশাল জেলা - জাতীয় তথ্য বাতায়ন। বাংলাদেশের জেলা বরিশাল জেলা বরিশাল বিভাগের জেলা ১৯৭১-এর পূর্বে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের জেলা
https://en.wikipedia.org/wiki/Barisal_District
Barisal District
Barisal District, officially spelled Barishal District from April 2018, is a district in south-central Bangladesh, formerly called Bakerganj district, established in 1797. Its headquarters are in the city of Barisal, which is also the headquarters of Barisal Division.
2469
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%B6%E0%A6%B9%E0%A7%80%E0%A6%A6%20%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার বা জাতীয় শহীদ মিনার ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বহিঃপ্রাঙ্গণে অবস্থিত। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারিতে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। এটি ঢাকার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ইতিহাস প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল অতিদ্রুত এবং নিতান্ত অপরিকল্পিতভাবে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু করে রাত্রির মধ্যে তা’ সম্পন্ন করে। শহীদ মিনারের খবর কাগজে পাঠানো হয় ঐ দিনই। শহীদ বীরের স্মৃতিতে - এই শিরোনামে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ছাপা হয় শহীদ মিনারের খবর। মিনারটি তৈরি হয় মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেলের (ব্যারাক) বার নম্বর শেডের পূর্ব প্রান্তে। কোণাকুণিভাবে হোস্টেলের মধ্যবর্তী রাস্তার গা-ঘেঁষে। উদ্দেশ্য বাইরের রাস্তা থেকে যেন সহজেই চোখে পড়ে এবং যে কোনো শেড থেকে বেরিয়ে এসে ভেতরের লম্বা টানা রাস্তাতে দাঁড়ালেই চোখে পড়ে। শহীদ মিনারটি ছিল ১০ ফুট উঁচু ও ৬ ফুট চওড়া। মিনার তৈরির তদারকিতে ছিলেন জিএস শরফুদ্দিন (ইঞ্জিনিয়ার শরফুদ্দিন নামে পরিচিত), নকশা করেছিলেন বদরুল আলম; সাথে ছিলেন সাঈদ হায়দার। তাদের সহযোগিতা করেন দুইজন রাজমিস্ত্রী। মেডিকেল কলেজের সম্প্রসারণের জন্য জমিয়ে রাখা ইট, বালি এবং পুরান ঢাকার পিয়ারু সর্দারের গুদাম থেকে সিমেন্ট আনা হয়। ভোর হবার পর একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় মিনারটি। ঐ দিনই অর্থাৎ ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে, ২২ ফেব্রুয়ারির শহীদ শফিউরের পিতা অনানুষ্ঠানিকভাবে শহীদ মিনারের উদ্বোধন করেন। ২৬ ফেব্রুয়ারি সকালে দশটার দিকে শহীদ মিনার উদ্বোধন করেন আজাদ সম্পাদক আবুল কালাম শামসুদ্দিন। উদ্বোধনের দিন অর্থাৎ ২৬ ফেব্রুয়ারি পুলিশ ও সেনাবাহিনী মেডিকেলের ছাত্র হোস্টেল ঘিরে ফেলে এবং প্রথম শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলে। এরপর ঢাকা কলেজেও একটি শহীদ মিনার তৈরি করা হয়, এটিও একসময় সরকারের নির্দেশে ভেঙ্গে ফেলা হয়। ১৯৫৪ সালে প্রথম শহীদ মিনারের একই স্থানে পুনরায় দ্বিতীয় আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটির উদ্বোধন করেন নাট্যগুরু নুরুল মোমেন। অবশেষে, বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেবার পরে ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এর নকশা করেছিলেন ভাস্কর হামিদুর রহমান। কিন্তু ১৯৫৮তে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান পাকিস্তানে সামরিক আইন জারীর পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীকালে লেফটিন্যাণ্ট জেনারেল আযম খানের আমলে এর নির্মাণ কাজ পুনরায় শুরু করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত একটি কমিটি এর নির্মাণ কাজের তত্ত্বাবধান করে। মূল নকশা ছেঁটে-কেটে দ্রুত নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়। মূল নকশার ফোয়ারা ও নভেরা আহমেদ এর ম্যুরাল ইত্যাদি বাদ পড়ে। নির্মাণ কাজ শেষ হয় ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের শুরুতে। ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ ব্যক্তিত্ব আবুল বরকতের মাতা হাসিনা বেগম কর্তৃক নতুন শহীদ মিনারের উদ্বোধন করা হয়। [ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে আবু হোসেন সরকারের মুখ্যমন্ত্রীত্বের আমলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বর্তমান স্থান নির্বাচন এবং ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। তৎকালীন পূর্ত সচিব (মন্ত্রী) জনাব আবদুস সালাম খান মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে 'শহীদ মিনারের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের জন্য চূড়ান্তভাবে একটি স্থান নির্বাচন করেন। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে ফ্রেব্রুয়ারি তারিখে জনৈক মন্ত্রীর হাতে 'শহীদ মিনারের' ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও তাতে উপস্থিত জনতা প্রবল আপত্তি জানায় এবং ভাষা আন্দোলনের অন্যতম শহীদ রিক্সাচালক আওয়ালের ৬ বছরের মেয়ে বসিরণকে দিয়ে এই স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। স্থাপত্য নকশা শেরেবাংলা এ.কে. ফজলুল হক এবং আওয়ামী লীগের উদ্যোগে যুক্তফ্রন্ট সরকার কর্তৃক ১৯৫৬ সালে পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে একুশে ফেব্রুয়ারি পালিত হয়। এর ফলেই শহীদ মিনারের নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা সহজতর হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী হামিদুর রহমান মহান ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত শহীদ মিনারের স্থপতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছেন। তারই রূপকল্পনায় ছিল স্নেহময়ী আনত মস্তক মাতার প্রতীক হিসেবে মধ্যস্থলে সুউচ্চ কাঠামো, এবং দুই পাশে সন্তানের প্রতীক স্বরূপ হ্রস্বতর দুটি করে কাঠামো। সামনে বাঁধানো চত্বর। পেছনভাবে দেয়ালচিত্র। সম্মুখ চত্বরে ভাস্কর নভেরা আহমেদের দুটি ম্যুরাল স্থাপনের পরিকল্পনাও ছিল। এছাড়া ছিল বেদনাঘন শহীদ দিবসের প্রতীক হিসেবে একটি ফোয়ারা স্থাপনের পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা মফিক ১৯৫৭ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এ নকশায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হোস্টেলের সম্মুখভাগের বিস্তৃত এলাকা এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে দ্রুত কাজ সমাপ্তির উদ্দেশ্যে মূল নকশার সরলীকরণ করা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। যদিও বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এ শহীদ মিনারে ২১শে ফেব্রুয়ারির শ্রদ্ধার্ঘ্য অনুষ্ঠানের জন্য অনুদান প্রদান করে থাকে, সার্বিক দেখ-ভাল ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন রকম কর্মকাণ্ড পরিচালিত হলেও এটি এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ২১ ফেব্রুয়ারি ব্যতীত শহীদ মিনার অবহেলিত অবস্থায় পড়ে থাকে। এ সময় শহীদ মিনার এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। মাদক সেবন থেকে শুরু করে ভাসমান মানুষের বর্জ্য ত্যাগের স্থানে পরিণত হয় এই ঐতিহাসিক এলাকা। ফলে শহীদ মিনার এলাকার পবিত্রতা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকার ২০ কাঠা জায়গা দখলকারীরা দখল করে রেখেছে। চিত্রশালা আরও দেখুন অমর একুশে (ভাস্কর্য) মোদের গরব আরো পড়ুন তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাংলা ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্থাপত্য শহীদ মিনার স্মৃতিসৌধ ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান ঢাকার স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মারক বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক ঢাকা মেডিকেল কলেজ
https://en.wikipedia.org/wiki/Shaheed_Minar,_Dhaka
Shaheed Minar, Dhaka
The Shaheed Minar (Bengali: শহীদ মিনার romanised:- Shohid Minar lit. " The Martyr Tower") is a national monument in Dhaka, Bangladesh, established to commemorate those killed during the Bengali Language Movement demonstrations of 1952 in then East Pakistan. On 21 and 22 February 1952, students from Dhaka University and Dhaka Medical College and political activists were killed when the Pakistani police force opened fire on Bengali protesters who were demanding official status for their native tongue, Bengali. The massacre occurred near Dhaka Medical College and Ramna Park in Dhaka. A makeshift monument was erected on 23 February by students of Dhaka medical college and other educational institutions, but soon demolished on 26 February by the Pakistani police force. The Language Movement gained momentum, and after a long struggle, Bengali gained official status in Pakistan (with Urdu) in 1956. To commemorate the dead, the Shaheed Minar was designed and built by Bangladeshi sculptors Hamidur Rahman in collaboration with Novera Ahmed. Construction was delayed by martial law, but the monument was finally completed in 1963, and stood until the Bangladesh Liberation War in 1971, when it was demolished completely during Operation Searchlight. After Bangladesh gained independence later that year, it was rebuilt. It was expanded in 1983. National, mourning, cultural and other activities are held each year on 21 February (Ekushey February) to mark Language Movement Day or Shaheed Dibas (Martyrs' Day), centred on the Shaheed Minar. Since 2000, 21 February is also recognised as International Mother Language Day.
2474
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%A8%E0%A6%AF%E0%A6%BC%E0%A6%BE%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BF
নয়াদিল্লি
নয়াদিল্লি (, , ; , , IAST: নঈ দিল্লী; নতুন দিল্লি নামেও পরিচিত) হলো ভারতের রাজধানী ও ভারত সরকারের প্রশাসনিক, আইন ও বিচারবিভাগীয় কেন্দ্র। এটি দিল্লি সরকারেরও কেন্দ্র। নয়াদিল্লি, দিল্লি মহানগরের অংশ। ১৯১১ সালে দিল্লি দরবারে ভারত-সম্রাট পঞ্চম জর্জ নয়াদিল্লি শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ব্রিটিশ স্থপতি স্যার এডউইন লুটিয়েনস ও স্যার হারবার্ট বেকার এই শহরের নকশা প্রস্তুত করেছিলেন। ১৯৩১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি নতুন রাজধানী উদ্বোধন করেন তদনীন্তন ভাইসরয় লর্ড আরউইন। ইতিহাস প্রতিষ্ঠা ১৯১১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত কলকাতা ছিল ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী। যদিও প্রাচীনকালে, দিল্লী সালতানাত ও মুঘল যুগে দিল্লি ছিল ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশকে ব্রিটিশ ভারতীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লিতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি প্রস্তাব ব্রিটিশ প্রশাসনের কাছে রাখা হয়েছিল। কলকাতা ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। দিল্লির অবস্থান ভারতের উত্তরাঞ্চলে। তাই ব্রিটিশ সরকারের মনে হয়েছিল, দিল্লি থেকে ভারত শাসন করা অপেক্ষাকৃত সহজতর হবে। ১৯১১ সালের ১২ই ডিসেম্বর দিল্লি দরবারে তদনীন্তন ভারত সম্রাট পঞ্চম জর্জ ও তার রানী মেরি দিল্লির কিংসওয়ে ক্যাম্পের করোনেশন পার্কে ভাইসরয়ের বাসভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করার সময় দিল্লি থেকে কলকাতায় রাজধানী পরিবর্তনের কথা ঘোষণা করেন। ১৯১১ সালের ১৫ই ডিসেম্বর, কিংসওয়ে ক্যাম্পে দিল্লি দরবারেই রাজা পঞ্চম জর্জ ও রানী মেরি নয়াদিল্লি শহরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। নয়াদিল্লির একটি বড়ো অংশের নকশা করেছিলেন এডউইন লুটিয়েনস (১৯১৮ সাল থেকে স্যার এডউইন)। তিনি ১৯১২ সালে প্রথম দিল্লিতে আসেন। তার সহকারী ছিলেন হারবার্ট বেকার (১৯২৬ সাল থেকে স্যার হারবার্ট)। দুজনেই ছিলেন বিংশ শতাব্দীর উল্লেখযোগ্য স্থপতি। শোভা সিংকে (পরে স্যার শোভা সিং) নির্মাণকাজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। শহর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এবং তা শেষ হয় ১৯৩১ সালে। "লুটিয়েনস দিল্লি" নামে চিহ্নিত এই শহরের উদ্বোধন করা হয় ১৯৩১ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি। উদ্বোধক ছিলেন তদানীন্তন ভাইসরয় স্যার আরউইন। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী ধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে লুটিয়েনস দিল্লির কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক এলাকাটির নকশা প্রস্তুত করেছিলেন। সাম্রাজ্যের নিউ রাজধানী স্থাপনের জন্য দিল্লি টাউন প্ল্যানিং কমিটি গঠিত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন জর্জ সুইনটন এবং সদস্য ছিলেন জন এ. ব্রডি ও লুটিয়েনস। এই কমিটি উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের পরিকল্পনা জমা দেয়। তবে নিউ শহর তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমির অধিগ্রহণের খরচ অত্যধিক হচ্ছে দেখে ভাইসরয় এই পরিকল্পনা বাতিল করে দেন। নয়াদিল্লির কেন্দ্রীয় রাস্তাটির মুখ পূর্বে ইন্ডিয়া গেটের দিকে। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুসারে, এটি পাহাড়গঞ্জ থেকে ভাইসরয়ের বাসভবন পর্যন্ত প্রসারিত উত্তর-দক্ষিণে প্রসারিত হওয়ার কথা ছিল। কাজ শুরুর পর প্রথম কয়েক বছর ইন্ডিয়া গেটকে পর্যটকেরা স্বর্গের দরজা মনে করতেন। উত্তর দিকে স্থান সংকুলান ও বেশ কিছু ঐতিহ্যশালী স্থানের উপস্থিতির জন্য কমিটি দক্ষিণাঞ্চলেই নয়াদিল্লি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। এখন যেটি রাইসিনা হিল নামে পরিচিত, সেটি আগে ছিল রাইসিনা নামে একটি মেও গ্রাম। এই স্থানটি ভাইসরয়ের বাসভবন (অধুনা রাষ্ট্রপতি ভবন, ভারত) নির্মাণের জন্য নির্বাচিত হয়। এই স্থানটি নির্বাচনের কারণ ছিল, এটি "দিনাপানাহ্‌" দুর্গের ঠিক বিপরীতে অবস্থিত, যেটিকে আবার প্রাচীন ইন্দ্রপ্রস্থ নগরীর স্থান মনে করা হয়। ১৯১১-১২ সালের দিল্লি দরবারের জায়গায় করোনেশন পিলারটি সচিবালয় ভবনের সামনের উঠানের দেওয়ালে গাঁথা ছিল। এখান থেকে ভিত্তিপ্রস্তরটি সরিয়ে আনা হয়। কর্তব্য পথ বা কিংস ওয়ে ইন্ডিয়া গেট থেকে রাষ্ট্রপতি ভবন পর্যন্ত প্রসারিত হয়। রাষ্ট্রপতি ভবনের দুধারে সচিবালয়ের দুটি ব্লকে এখন ভারত সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। ভারতীয় সংসদ ভবনও এর কাছে রাজপথের সমান্তরালে প্রসারিত সংসদ মার্গে অবস্থিত অবস্থিত। সবগুলির নকশা করেছিলেন হারবার্ট বেকার। দক্ষিণে সফদরজঙ্গের সমাধিসৌধ পর্যন্ত অঞ্চল অধিগ্রহণ করে লুটিয়েনস বাংলো অঞ্চল নির্মিত হয়। রাইসিনা হিলের পাথুরে শৈলশিরায় নির্মাণকাজ শুরুর আগে, কাউন্সিল হাউসকে (অধুনা ভারতীয় সংসদ) ঘিরে একটি রেলপথ গড়ে ওঠে। এর নাম ছিল "ইম্পিরিয়াল দিল্লি রেলওয়ে"। এই রেলপথে পরবর্তী ২০ বছর নির্মাণস্থলে মালপথ ও শ্রমিক আদানপ্রদান করা হত। সেই সময় পুরনো দিল্লি রেল স্টেশন সারা শহরের প্রধান রেল স্টেশন ছিল। তাই আগ্রা-দিল্লি রেলপথটি অল-ইন্ডিয়া ওয়ার মেমোরিয়াল (ইন্ডিয়া গেট) ও কিংসওয়ের (কর্তব্য পথ) উপর দিয়ে যাওয়ায় নির্মাণকাজে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। এই লাইনটি যমুনা নদী বরাবর সরিয়ে দেওয়া হয়। নিউ রেলপথটি চালু হয় ১৯২৪ সালে। ১৯২৬ সালে চালু হয় নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন। সেই সময় আজমিঢ়ী গেটের কাছে পাহাড়গঞ্জে এই স্টেশনের একটি মাত্র প্ল্যাটফর্ম ছিল। স্টেশনটি সম্পূর্ণ চালু হয় ১৯৩১ সালে নয়াদিল্লি উদ্বোধনের সময়। ভাইসরয়ের বাসভবন (বর্তমান রাষ্ট্রপতি ভবন, ভারত), কেন্দ্রীয় সচিবালয়, সংসদ ভবন ও অল-ইন্ডিয়া ওয়ার মেমোরিয়াল (ইন্ডিয়া গেট) নির্মাণের পর শহরের বাণিজ্য এলাকা কনট প্লেসের নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯২৯ সালে। এই কাজ শেষ হয় ১৯৩৩ সালে। প্রিন্স আর্থার, ফার্স্ট ডিউক অফ কনটের (১৮৫০-১৯৪২) নামানুসারে এই স্থানের নামকরণ করা হয়েছিল। এই স্থানের নকশা করেছিলেন পূর্ত বিভাগের মুখ্য স্থপতি রবার্ট টোর রাসেল। ভারতের রাজধানী দিল্লিতে সরে আসার পর উত্তর দিল্লিতে ১৯১২ সালে একটি অস্থায়ী সচিবালয় ভবন তৈরি করা হয়েছিল। পুরান দিল্লির "ওল্ড সেক্রেটারিয়েট" (অধুনা দিল্লি বিধানসভা) থেকে সরে আসে শহর উদ্বোধনের এক দশক আগেই। বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি ও মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির মতো ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক কর্মচারীদের নতুন রাজধানীতে নিয়ে আসা হয়েছিল। ১৯২০-এর দশকে গোল মার্কেটের কাছে তাদের জন্য একটি আবাসন এলাকা গড়ে তোলা হয়। ১৯৪০-এর দশকে ঐতিহাসিক লোদি উদ্যানের কাছে লোদি কলোনিতে লোদি এস্টেট এলাকায় সরকারের কর্মচারীদের বাড়ি ও উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের যে বাংলোগুলি তৈরি হয়, তাই দিল্লিতে ব্রিটিশ শাসনে নির্মিত শেষ আবাসিক এলাকা। স্বাধীনতা-উত্তর যুগ ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা অর্জন করে। এর পর ভারত সরকার দিল্লিকে সীমিত স্বায়ত্তশাসন দিয়ে একজন চিফ কমিশনার নিয়োগ করে। ১৯৫৬ সালে দিল্লিকে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত করা হয়। এরপর চিফ কমিশনারের পদের বদলে দিল্লিতে লেফট্যানেন্ট গভর্নর নিয়োগ করা হয়। ১৯৯১ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৬৯তম সংশোধনী বলে দিল্লি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলটির সরকারি নামকরণ করা হয় "দিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চল"। এই দ্বৈত শাসনব্যবস্থায় দিল্লির নির্বাচিত সরকারকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা সহ নানা বিষয়ে প্রভূত ক্ষমতা দেওয়া হয়, যা আগে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ছিল। এই আইন কার্যকর করা হয় ১৯৯৩ সালে। লুটিয়েনস দিল্লির বাইরে নয়াদিল্লির প্রথম বড়ো সম্প্রসারণ ঘটে ১৯৫০-এর দশকে। এই সময় উক্ত অঞ্চলের দক্ষিণ-পশ্চিমে কেন্দ্রীয় পূর্ত বিভাগ চাণক্যপুরী নামে একটি দূতাবাস-এলাকা গড়ে তোলে। এই এলাকায় বিভিন্ন রাষ্ট্রের দূতাবাস, রাষ্ট্রদূতগণের বাসভবন এবং দিল্লির অন্যতম প্রধান রাস্তা "শান্তিপথ" অবস্থিত। ভূগোল নয়াদিল্লির আয়তন এবং এটি দিল্লি মহানগরের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। এই অঞ্চলটি সিন্ধু-গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে এবং এর আশেপাশের অঞ্চলগুলি একদা আরাবল্লি পর্বতমালার দিল্লি শৈলশিরা অবশিষ্টাংশের অন্তর্গত বলে এখানকার ভূতল সর্বত্র সমান উচ্চতায় অবস্থিত নয়। দিল্লি শৈলশিরা ‘দিল্লির ফুসফুস’ নামে পরিচিত। নয়াদিল্লি যমুনা নদীর প্লাবন সমভূমিতে অবস্থিত। এটি মূলত স্থলবদ্ধ একটি শহর। নদীর পূর্বদিকে শাহদারা অঞ্চল অবস্থিত। নয়াদিল্লি সিসমিক ক্ষেত্র-চারের অন্তর্গত। এটি অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল। জলবায়ু নয়াদিল্লির জলবায়ু মৌসুমি বায়ু প্রভাবিত আর্দ্র উপক্রান্তীয় প্রকৃতির। এখানে শীত ও গ্রীষ্মকালের তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিমাণে বিরাট পার্থক্য থাকে। গ্রীষ্মে থেকে শীতে তাপমাত্রা ওঠানামা করে। দিল্লির বৈশিষ্ট্য দীর্ঘ উষ্ণ গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতল শীতকাল। এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এখানে গ্রীষ্মকাল থাকে। গ্রীষ্মের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। নভেম্বরে শীতের শুরু। জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড শীত পড়ে। বার্ষিক গড় তাপমাত্রা । মাসিক দৈনিক গড় তাপমাত্রা -এর মধ্যে ওঠানামা করে। দিল্লির সর্বাধিক তাপমাত্রা নথিবদ্ধ হয়েছিল । নথিবদ্ধ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল . দিল্লি মহানগর অঞ্চলের নথিবদ্ধ সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা হল যথাক্রমে ও । বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ । জুলাই-অাগস্ট মাসেই সর্বাধিক বৃষ্টি হয়ে থাকে। বায়ু দূষণ নয়াদিল্লিতে বায়ুদূষণের পরিমাণ অত্যধিক। বায়ুদূষণের কারণ প্রধানত যানবাহনের ধোঁয়া। সরকার নয়াদিল্লি ভারতের জাতীয় রাজধানী। এখানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ভারত সরকার ও স্থানীয় দিল্লি সরকারের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। নয়াদিল্লি জাতীয় রাজধানী অঞ্চলেরও রাজধানী। নয়াদিল্লির পৌর প্রশাসন সংস্থাটির নাম নয়াদিল্লি পৌর পরিষদ। ২০০৫ সালের ব্যবস্থা অনুসারে, নয়াদিল্লি পৌর পরিষদ একজন পুরপ্রধান, দিল্লি বিধানসভার তিন জন সদস্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী মনোনীত দুই জন সদস্য ও কেন্দ্রীয় সরকার মনোনীত পাঁচ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। দিল্লির বাকি অঞ্চল দিল্লি পৌরসংস্থার দায়িত্বে থাকে। দিল্লির রাজ্যপ্রধান হলেন উপরাজ্যপাল। কেন্দ্রীয় সরকারের পরামর্শক্রমে ভারতের রাষ্ট্রপতি তাঁকে নিয়োগ করেন। উপরাজ্যপালের পদটি আনুষ্ঠানিক। কারণ, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীই সরকার প্রধান এবং দিল্লির যাবতীয় প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী। ভারতীয় সংবিধান অনুসারে, দিল্লির বিধানসভায় পাস হওয়া কোনো আইনের সঙ্গে সংসদে পাস হওয়া আইনের বিরোধ বাধলে সংসদের আইনটিই বলবৎ থাকবে। নগরাঞ্চলের গঠন নয়াদিল্লির অধিকাংশ অঞ্চলের পরিকল্পনাই বিংশ শতাব্দীর ব্রিটিশ স্থপতি এডউইন লুটিয়েনস করেছিলেন। এটি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী আদর্শে নির্মিত শহরের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক অঞ্চল। কর্তব্য পথ (পূর্বনাম কিংসওয়ে ও রাজপথ) ও জনপথ (পূর্বনাম কুইনসওয়ে) দুটি কেন্দ্রীয় প্রমোদপথকে কেন্দ্র করে নয়াদিল্লি গড়ে উঠেছে। কর্তব্য পথ রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে ইন্ডিয়া গেট পর্যন্ত প্রসারিত। অন্যদিকে জনপথ কনট প্লেস থেকে শুরু হয়ে কর্তব্য পথকে ছেদ করেছে। শান্তিপথের ধারে ১৯টি রাষ্ট্রের দূতাবাস অবস্থিত। এই অঞ্চলটি ভারতের বৃহত্তম কূটনৈতিক অঞ্চল। নয়াদিল্লির কেন্দ্রস্থলে রয়েছে রাষ্ট্রপতি ভবন (আগেকার নাম ভাইসরয়েজ হাউস)। এটি রাইসিনা হিলের উপর অবস্থিত। রাষ্ট্রপতি ভবনের দুপাশে কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের দুটি ব্লক অবস্থিত। এই দুই ব্লকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সহ ভারত সরকারের একাধিক মন্ত্রকের প্রধান কার্যালয়ের অবস্থিত। রাজপথের সমান্তরালে অবস্থিত সংসদ মার্গে ভারতীয় সংসদ ভবনটি অবস্থিত। কনট প্লেস নয়াদিল্লির একটি বৃহৎ বৃত্তাকার বাণিজ্য এলাকা। এটি ইংল্যান্ডের রয়্যাল ক্রেসেন্টের অনুকরণে নির্মিত। কনট প্লেসের বাইরের বৃত্তাকার পথটিতে পৌঁছতে মোট বারোটি রাস্তা ব্যবহার করা যায়। তার মধ্যে একটি হল জনপথ। পরিবহন বাস, অটোরিকশা ও মেট্রো রেল নয়াদিল্লির গণপরিবহনের প্রধান মাধ্যম। বাস এর মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়। পরিবহন সংক্রান্ত ৬০% যাত্রী-চাহিদা বাস পূরণ করে। দিল্লির অধিকাংশ বাস রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সংস্থা দিল্লি পরিবহন নিগমের (ডিটিসি) সম্পত্তি। এই সংস্থার কাছে পরিবেশ বান্ধব সিএনজি বাসের বৃহত্তম সম্ভার রয়েছে। দিল্লি বিআরটিএস অম্বেডকর নগর ও দিল্লি গেটের মধ্যে বাস র‌্যাপিড ট্রানসিড পরিষেবা দেয়। নয়াদিল্লি একটি পরিকল্পিত নগরী হওয়ায় এখানে অনেকগুলি আর্টেরিয়াল রোড আছে। এর মধ্যে কর্তব্য পথ, জনপথ ও আকবর রোড বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। নয়াদিল্লি পৌর পরিষদের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এই শহরে রাস্তা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে নিযুক্ত। দিল্লি মেট্রো এখানকার পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। ১৯৭১ সালে দিল্লি পরিবহন নিগমের প্রশাসনিক দায়িত্ব দিল্লি পৌরসংস্থার হাত থেকে ভারত সরকারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর নয়াদিল্লি দিল্লি পরিবহন নিগমের আওতাধীন হয়। ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল নয়াদিল্লির প্রধান বিমানবন্দর। সাধারণ উড়ানের জন্য সফদরজং বিমানবন্দরটিও ব্যবহৃত হয়। দিল্লি মেট্রো ভারতের বৃহত্তম মেট্রো ব্যবস্থা, যা দিল্লি এবং পার্শ্ববর্তী গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রাম ও নয়ডার বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করেছে। নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন নয়াদিল্লির প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। এটি এশিয়ার দ্বিতীয় ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশন, যার মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ রক্ষিত হয়। জনপরিসংখ্যান নয়াদিল্লির জনসংখ্যা ২৯৪,৯৯৮। এই পৌরসভার জনঘনত্ব । ধর্ম দিল্লির অধিবাসীদের মধ্যে ৮৩.৮% হিন্দু। এছাড়া আছে মুসলমান (৬.৩%), শিখ (৫.৪%), জৈন (১.১%) ও খ্রিস্টানরা (০.৯%)। অবশিষ্টদের (২.৫%) মধ্যে আছে পার্সি, বৌদ্ধ ও ইহুদি ধর্মাবলম্বী মানুষ। সংস্কৃতি নয়াদিল্লির আমলাতন্ত্র ও রাজনৈতিক ব্যবস্থা একে একটি বহুজাতিক শহর হিসেবে গড়ে তুলেছে। রাজধানী হওয়ার জন্য নয়াদিল্লিতে কয়েকটি জাতীয় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব খুবই বেশি। প্রজাতন্ত্র দিবস, স্বাধীনতা দিবস ও গান্ধী জয়ন্তী নয়াদিল্লিতে বিশেষভাবে পালিত হয়। ভারতের স্বাধীনতা দিবস (১৫ অগস্ট) উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী লালকেল্লায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও সামরিক শক্তিকে তুলে ধরা হয়। দীপাবলি, শিবরাত্রি, তিজ, গুরু নানক জয়ন্তী, বৈশাখী, দুর্গাপূজা, দোলযাত্রা, লোহরি, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আজহা, বড়দিন ও মহাবীর জয়ন্তী দিল্লির প্রধান ধর্মীয় উৎসব। কুতুব মিনার চত্বরে কুতুব উৎসব নামে নৃত্যগীতের একটি বিশেষ উৎসব খুব বিখ্যাত। অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ঘুড়ি ওড়ানোর উৎসব, আন্তর্জাতিক আম উৎসব ও বসন্তপঞ্চমী প্রতি বছর আয়োজিত হয়। দর্শনীয় স্থান স্থাপত্য নয়াদিল্লি শহর ও তার স্থাপত্যের পরিকল্পনা করা হয়েছিল ব্রিটিশদের শক্তি ও সার্বভৌমত্ব প্রদর্শনের জন্য। নগর পরিকল্পনার সব স্তরের সিদ্ধান্তের পিছনে সেই মানসিকতাই কাজ করেছিল। শুধু কিছু কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু ও ইসলামি স্থাপত্যের প্রভাব দেখা গিয়েছিল। ১৯১১ সালের পর শহর তৈরি করতে ২০ বছর সময় লেগেছিল। নয়াদিল্লির স্থাপত্যে অনেক স্থানীয় প্রভাব আছে। তবে সেগুলিকে ব্রিটিশ ক্ল্যাসিকাল ও প্যালাডিয়ান স্থাপত্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া হয়েছিল। স্থাপত্যে স্থানীয় প্রভাবগুলির মূল কারণ ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ ও আর্নেস্ট বিনফিল্ড হ্যাভেল প্রমুখ ঐতিহাসিকদের ঐ বিষয়ে আগ্রহ। ঐতিহাসিক স্থান ও জাদুঘর নয়াদিল্লিতে একাধিক ঐতিহাসিক স্থান ও জাদুঘর আছে। ১৯৪৭-৪৮ সালে রয়্যাল অ্যাকাডেমিতে রক্ষিত ভারতীয় শিল্পবস্তু ও অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে চালু হয় জাতীয় সংগ্রহালয়। ১৯৪৯ সালে তা রাষ্ট্রপতি ভবনের অন্তর্ভুক্ত হয়। পরে সেই সব শিল্পবস্তু নিয়েই স্থায়ীভাবে জাতীয় সংগ্রহালয় গড়ে ওঠে। ১৯৪৯ সালের ১৫ই অাগস্ট ৫০০০ বছর সময়কালের ২০০,০০০ ভারতীয় ও বিদেশি শিল্পবস্তু নিয়ে এই জাতীয় সংগ্রহালয় আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। ১৯৩১ সালে গঠিত হয় ইন্ডিয়া গেট। এই স্মারকটি প্যারিসের আর্ক দ্য ত্রিয়োম্ফের (Arc de Triomphe) আদলে নির্মিত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ ও তৃতীয় ইঙ্গ-আফগান যুদ্ধে নিহত ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯০,০০০জন জওয়ানের স্মৃতিতে নির্মিত এই স্মারক ভারতের জাতীয় স্মৃতিসৌধ। প্যারিসের শঁজেলিজের (Champs-Élysses) আদলে নির্মিত কর্তব্য পথ নয়াদিল্লির একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা। এটি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের জাতীয় অনুষ্ঠানগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ এই রাস্তায় আয়োজিত হয়। নয়াদিল্লির গান্ধী স্মৃতিতে মহাত্মা গান্ধী জীবনের শেষ ১৪৪ দিন কাটিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৩০শে জানুয়ারি এইখানেই তিনি নিহত হন। ওই বছর ৩১শে জানুয়ারি যে স্থানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল, সেই স্থানটির নাম রাজঘাট। যমুনা নদীর ধারে এই খানেই তার চিতাভস্ম সমাধিস্থ করা হয়েছিল। রাজঘাটে তার সমাধিস্থলে একটি বর্গাকার কালো পাথরের স্মারক রয়েছে। এটির স্থপতি ভানু ভুটিয়া। কনট প্লেস অঞ্চলের যন্তরমন্তর নির্মাণ করেছিলেন জয়পুরের রাজা দ্বিতীয় জয় সিংহ। এখানে ১৩টি জ্যোতির্বিজ্ঞান যন্ত্র রয়েছে। এই মানমন্দিরটির সাহায্যে জ্যোতির্বিদ্যা-সংক্রান্ত সারণি, সূর্য, চাঁদ ও অন্যান্য গ্রহের সঞ্চারণ-সংক্রান্ত গণনা চলত। নয়াদিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধী স্মৃতি সংগ্রহালয়, জাতীয় আধুনিক শিল্প গ্যালারি, জাতীয় প্রাকৃতিক ইতিহাস সংগ্রহালয়, জাতীয় রেল সংগ্রহালয়, জাতীয় কুটির ও বস্ত্রশিল্প সংগ্রহালয়, জাতীয় ডাকটিকিট সংগ্রহালয়, নেহেরু তারামণ্ডল, শঙ্করের আন্তর্জাতিক পুতুল সংগ্রহালয় ও ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সংগ্রহালয় নয়াদিল্লির প্রধান প্রধান জাদুঘর। যন্তরমন্তর, গান্ধীস্মৃতি, বুদ্ধজয়ন্তী পার্ক ও লোদি উদ্যান নয়াদিল্লির কয়েকটি ঐতিহাসিক স্থান। জাতীয় যুদ্ধ সংগ্রহালয় ও জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতি সংগ্রহালয় বর্তমানে নয়াদিল্লিতে নির্মাণাধীন। খেলাধুলা নয়াদিল্লিতে ২০১০ কমনওয়েলথ গেমস অনুষ্ঠিত হয়। প্রতি বছর এখানে দিল্লি হাফ ম্যারাথন একটি ফুট-রেস আয়োজিত হয়। নয়াদিল্লিতে ১৯৫১ এশিয়ান গেমস ও ১৯৮২ এশিয়ান গেমস আয়োজিত হয়েছিল। নয়াদিল্লির প্রধান প্রধান ক্রীড়াঙ্গনগুলি হল জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়াম, আম্বেডকর স্টেডিয়াম, ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়াম, অরুণ জেটলি ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মেজর ধ্যানচাঁদ জাতীয় স্টেডিয়াম, তালকোটারা স্টেডিয়াম ও সিরি ফোর্ট ক্রীড়া চত্বর। অর্থনীতি নয়াদিল্লির উত্তর অংশে অবস্থিত কনট প্লেস উত্তর ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র। এর আশেপাশের বারাখাম্বা রোড, আইটিও ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যকেন্দ্র। সরকারি ও আধা-সরকারি ক্ষেত্রগুলিই নয়াদিল্লির প্রধান কর্মক্ষেত্র। এখানে অনেক বহুজাতিক সংস্থায় বহুসংখ্যক ইংরেজি-শিক্ষিত কর্মচারী কাজ করে। এখানকার প্রধান শিল্পগুলি হল তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিকমিউনিকেশন, হোটেল, ব্যাংকিং, গণমাধ্যম ও পর্যটন। বিশ্ব সম্পদ রিপোর্ট -২০১১ অনুসারে, অর্থনৈতিক ক্রিয়াকাণ্ডের নিরিখে নয়াদিল্লির স্থান ৩৯তম। তবে সামগ্রিকভাবে রাজধানীর স্থান ৩৭তম। এই স্থান জাকার্তা ও জোহানেসবার্গ শহরের উপরে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাজারগুলির মধ্যে রিটেল গন্তব্য হিসেবে নয়াদিল্লি ও বেইজিং একসঙ্গে শীর্ষস্থান দখল করেছে। দিল্লি সরকার নয়াদিল্লির জন্য কোনো পৃথক অর্থনৈতিক তথ্য প্রকাশ করে না। তবে সামগ্রিকভাবে দিল্লির একটি সরকারি বার্ষিক অর্থনৈতিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। ইকোনমিক সার্ভে অফ দিল্লি-র সমীক্ষা অনুসারে, দিল্লি মহানগর অঞ্চলের নেট স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা এসডিপি হল ৮৩,০৮৫ কোটি টাকা (২০০৪-০৫ সালের হিসেব অনুসারে)। এই অঞ্চলের মাথাপিছু আয় ৫৩,৯৭৬ টাকা (১,২০০ ডলার)। ২০১১-১২ সালের হিসেব অনুযায়ী, দিল্লির গ্রস স্টেট ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট হল ৩.১৩ লক্ষ কোটি টাকা, যা বিগত আর্থিক বছরের তুলনায় ১৮.৭% বেশি। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও সংস্থা নয়াদিল্লিতে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থার কার্যালয় রয়েছে। ইউএসএএসসিএপি-এর এশিয়ান অ্যান্ড প্যাসিফিক সেন্টার ফর ট্রান্সফার অফ টেকনোলজির এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সদরদপ্তর নয়াদিল্লিতে অবস্থিত। এছাড়া ভারতে রাষ্ট্রসংঘের অধিকাংশ আঞ্চলিক কার্যালয় নয়াদিল্লিতে অবস্থিত। ১৪৫টি দেশের দূতাবাস ও হাই কমিশন নয়াদিল্লিতে অবস্থিত। ভগিনী শহর নয়াদিল্লির ভগিনী শহর হলো নিম্নরূপ: জার্সি সিটি, যুক্তরাষ্ট্র মস্কো, রাশিয়া সমরকন্দ, উজবেকিস্তান শীর্ষ সম্মেলন ১৯৮৩ সালে সপ্তম এনএএম শীর্ষ সম্মেলন ও ২০১২ সালে বিআরআইসিএস শীর্ষ সম্মেলন নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আরও দেখুন জাতীয় রাজধানী অঞ্চল লালকেল্লা তথ্যসূত্র গ্রন্থপঞ্জি Johnson, David A. "A British Empire for the twentieth century: the inauguration of New Delhi, 1931," Urban History, Dec 2008, Vol. 35 Issue 3, pp 462–487 Ridley, Jane. "Edwin Lutyens, New Delhi, and the Architecture of Imperialism," Journal of Imperial & Commonwealth History, May 1998, Vol. 26 Issue 2, pp 67–83 Sonne, Wolfgang. Representing the State: Capital City Planning in the Early Twentieth Century (2003) 367pp; compares New Delhi, Canberra, Washington & Berlin. বহিঃসংযোগ দিল্লির সরকারি পোর্টাল নয়াদিল্লি পৌর পরিষদ দিল্লি ট্যুরিজম দিল্লির পাড়া এশিয়ার রাজধানী ভারতের রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী ১৯১১-এ ভারতে প্রতিষ্ঠিত ১৯১১-এ ব্রিটিশ ভারতে প্রতিষ্ঠিত নগরকেন্দ্র ভারতের পরিকল্পিত শহর ভারতের রাজধানী শহর দিল্লি ভারতের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের রাজধানী উত্তর ভারত পরিকল্পিত রাজধানী
https://en.wikipedia.org/wiki/New_Delhi
New Delhi
New Delhi ( , Hindi: [ˈnəiː ˈdɪlːiː], ISO: Naī Dillī), is the capital of India and a part of the National Capital Territory of Delhi (NCT). New Delhi is the seat of all three branches of the Government of India, hosting the Rashtrapati Bhavan, Sansad Bhavan, and the Supreme Court. New Delhi is a municipality within the NCT, administered by the NDMC, which covers mostly Lutyens' Delhi and a few adjacent areas. The municipal area is part of a larger administrative district, the New Delhi district. Although colloquially Delhi and New Delhi are used interchangeably to refer to the National Capital Territory of Delhi, both are distinct entities, with the municipality and the New Delhi district forming a relatively small part within the megacity of Delhi. The National Capital Region is an even larger entity, comprising the entire NCT along with adjoining districts in the two neighbouring states forming a continuously built-up area with it, including Ghaziabad, Noida, Greater Noida, Meerut, YEIDA City, Gurgaon, and Faridabad. The foundation stone of New Delhi, south of central Delhi, was laid by George V during the Delhi Durbar of 1911. It was designed by British architects Edwin Lutyens and Herbert Baker. The new capital was inaugurated on 13 February 1931, by Viceroy and Governor-General Irwin.
2475
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%B0%E0%A6%B9%E0%A6%BE%E0%A6%9F%20%E0%A6%9C%E0%A7%87%E0%A6%B2%E0%A6%BE
বাগেরহাট জেলা
বাগেরহাট বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি জেলা। এটি খুলনা বিভাগের অন্তর্গত। উপজেলার সংখ্যা বিবেচনায় বাগেরহাট বাংলাদেশের একটি “এ” শ্রেণীভুক্ত জেলা। নামকরণের পটভূমি বাগেরহাটের নাম কে কবে দিয়েছিলেন তা গবেষণা সাপেক্ষ হলেও আজ তা নিরূপন করা দুঃসাধ্য। কারো কারো মতে বাগেরহাটের নিকটবর্তী সুন্দরবন থাকায় এলাকাটিতে বাঘের উপদ্রব ছিল, এ জন্যে এ এলাকার নাম হয়ত ‘‘বাঘেরহাট’’ হয়েছিল এবং ক্রমান্বয়ে তা বাগেরহাট-এ রূপান্তরিত হয়েছে। মতান্তরে হযরত খান জাহান আলী এর প্রতিষ্ঠিত ‘‘খলিফাত-ই-আবাদ’’ এর বিখ্যাত ‘‘বাগ’’ অর্থ বাগান, এ অঞ্চলে এতই সমৃদ্ধি লাভ করে যে, তা থেকেই হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগের আবাদ তথা ‘‘ বাগেরহাট’’। তবে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতটি হচ্ছে শহরের পাশ দিয়ে প্রবাহিত ভৈরব নদীর উত্তর দিকের হাড়িখালী থেকে বর্তমান নাগের বাজার পর্যন্ত যে লম্বা বাঁক অবস্থিত, পূর্বে সে বাঁকের পুরাতন বাজার এলাকায় একটি হাট বসত। আর এ হাটের নামে এ স্থানটির নাম হলো বাঁকেরহাট। কালক্রমে বাঁকেরহাট পরিবর্তিত হয়ে দাঁড়িয়েছে বাগেরহাট নামে। অবস্থান ও আয়তন বাগেরহাট জেলার উত্তরে গোপালগঞ্জ জেলা ও নড়াইল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে পিরোজপুর জেলা ও বরগুনা জেলা, পশ্চিমে খুলনা জেলা। ২২°৩২’ থেকে ২২°৫৬’ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৩২’ থেকে ৮৯°৪৮’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে বাগেরহাট জেলার অবস্থান। এ জেলার আয়তন ৩৯৫৯.১১ বর্গকিলোমিটার; তারমধ্যে ১৮৩৪.৭৪ বর্গকিলোমিটার বনাঞ্চল, ৪০৫.৩ বর্গকিলোমিটার জলাশয় এবং অবশিষ্টাংশ নিম্ন-সমভূমি। বাগেরহাট জেলা সদরের অধিকাংশ ভৈরব নদীর পশ্চিম তীরে এবং শহরের বর্ধিত অংশ ভৈরবের দক্ষিণ প্রবাহ দড়াটানার পশ্চিম তীরে অবস্থিত।বঙ্গবসাগরেের উত্তরে এটি অবস্থিত। প্রশাসনিক এলাকা পৌরসভা ০৩ টি, গ্রামেরসংখ্যা ১,০৪৭ টি। বাগেরহাট জেলা মোট ৯ টি উপজেলায় বিভক্ত। এগুলো হলো: মোড়েলগঞ্জ উপজেলা চিতলমারী উপজেলা ফকিরহাট উপজেলা বাগেরহাট সদর উপজেলা মোংলা উপজেলা কচুয়া উপজেলা মোল্লাহাট উপজেলা রামপাল উপজেলা শরণখোলা উপজেলা ইতিহাস বাগেরহাটে প্রথম বসতি স্থাপন করে অনার্য শ্রেণীর মানুষ। এদের মধ্যে রয়েছে ভূমধ্য সাগরীয় অঞ্চল হতে আসা অস্ট্রিক ও দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় আলপাইন প্রভৃতি। এ অঞ্চলে অনার্য প্রভাবের বড় নিদর্শন হল পৌন্ড্রক্ষত্রিয় সম্প্রদায়। এ জেলার বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে রামপাল উপজেলায় এ সম্প্রদায়ের লোক বেশি বাস করে। পৌন্ড্র শব্দের অপভ্রংশ পুড়া বা পোদ। পৌন্ড্র শব্দটি দ্রাবিড় শব্দজাত যার অর্থ ইক্ষু। অনার্য শ্রেণীভূক্ত নমশূদ্র সম্প্রদায়ের মানুষ ও বাগেরহাটে প্রচুর বাস করে। এদের পূর্ব নাম চন্ডাল। এরা বরেন্দ্র অঞ্চল হতে এসে এখানে বসবাস শুরু করে। এ ছাড়া বাগেরহাটে এক শ্রেণীর মৎস্য শিকারী বা জেলে বসবাস করে যাদের আদি পুরুষ নিগ্রোবটু(নিগ্রয়েড) । এরা ভারত উপমহাদেশের আদিমতম অধিবাসী। খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় আড়াই হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া হতে এ অঞ্চলে আর্য তথা আদি নর্কিভ বা ইন্ডিভদের আগমণ ঘটে। আর্য-অনার্যের শোণিত ধারাই এ অঞ্চলের অধিবাসীদের মধ্যে ।বস্ত্ত পূজারী অনার্যগণ কৌমধর্ম (টাইবাল ধর্ম) অনুসরণ করতো। শক্তি পূজারী আর্যরা নিয়ে আসে বৈদিক ধর্ম। সূর্য ও অগ্নি ছিল তাদের অন্যতম উপাস্য। আর্য ও অনার্য উভয় ধর্মের আচার অনুষ্ঠান রীতিনীতির মিশ্রণে প্রতিষ্ঠিত হয় হিন্দুধর্ম। বাগেরহাটের অতি প্রাচীন স্থান পানিঘাটে প্রাপ্ত কষ্টি পাথরের অষ্টাদশ ভূজা দেবীমূর্তি, মরগা খালের তীরে খানজাহান আলী এর পাথর ভর্তি জাহাজ ভিড়বার স্থান জাহাজঘাটায় মাটিতে গ্রোথিত পাথরে উৎকীর্ণ অষ্টাদশ ভূজা মহিষ মর্দিনী দেবীমূর্তি, চিতলমারী উপজেলাধীন খরমখালি গ্রামে প্রাপ্ত কৃষ্ণ প্রস্তরের বিষ্ণু মূর্তি ইত্যাদি নিদর্শন এখানে হিন্দু সভ্যতা বিকাশের পরিচয় বহন করে। ১৪৫০ খ্রিঃ খানজাহান আলী খাঞ্জেলী দীঘি খনন করান। এ সময় অনন্য সাধারণ ধ্যাণী বৌদ্ধমূর্তি পাওয়া যায়। ১৯৭১ সালে বৌদ্ধ পুরোহিত বিশুদ্ধানন্দ মহাথেরো পাল আমলে নির্মিত ঐ বৌদ্ধমূর্তিটি কমলাপুর বৌদ্ধ বিহারে সংস্থাপন করেন। এটা এ অঞ্চলে বৌদ্ধ প্রভাবের পরিচয় বহন করে। অর্থনীতি বাগেরহাট জেলার মানুষ প্রধানত কৃষি নির্ভর। এ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে নারিকেল ও সুপারি জন্মে। ধান, মাছ ও বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ এ অঞ্চলের মানুষের অর্থনীতির প্রধান উৎস। সুন্দরবন উপকূলের কিছু মানুষ মধু ও গোলপাতা সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। শিক্ষাতথ্য বাগেরহাট জেলায় সাক্ষরতার হার ৭৪.৬২% (পুরষ ৭৬.৭৫%,মহিলা ৭২.৪৮%), শিক্ষার হার ৬৫%, প্রাথমিক বিদ্যালয় মোট ১০৯০টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২৮২টি, নিম্ন-মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৫০টি,কলেজিয়েট ০৬টি, মহাবিদ্যালয় ৩৩টি, মাদ্রাসা ২৪৫টি। অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: কারিগরী কলেজ-০১টি, পিটিআই-০১টি, ভিটিআই-০১টি, কারিগরী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র-০৪টি, কৃষি ও প্রযুক্তি কলেজ ০১টি, যুবপ্রশিক্ষন কেন্দ্র-০১টি, হোমিওপ্যাথিক কলেজ ০১টি, মেডিকেল এ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল-০১টি, মেরিণ ইনস্টিটিউট-০১টি, শারীরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ০১টি, সরকারি শিশুসদন-০২টি, আইন কলেজ-০১টি, টেক্সটাইল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট- ০১টি। স্বাস্থ্যতথ্য বাগেরহাট জেলায় হাসপাতাল ১১টি, শয্যাসংখ্যা ৪১৫টি, (সদর হাসপাতাল-২৫০শয্যা, ০৩টি ৫০শয্যা, ৫টি ৩১ শয্যাবিশিষ্ট, মাতৃসদন কেন্দ্র ১০ শয্যাবিশিষ্ট), ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ৬২টি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩৯%, নলকূপের সংখ্যা ২০,০৫২টি, গভীর নলকূপ ৫,১৯৯টি (সচল-৫,১৪৩টি, অকেজো-৫৬টি), অ-গভীর নলকূপ ১৪,৮৫৩টি (সচল-১২,৯৩০টি, অকেজো-১,৯২৩টি), পিএসএফ ১৮৫৮টি (সচল-১৫০৮টি, অকেজো-৩৫০টি), ভিএসএসটি ১২২৮টি (সচল-১০৫০টি, অকেজো-১৭৮টি), এসএসটি ২,৬১৯টি (সচল-২৪৬৪টি, অকেজো-১৫৫টি), রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ৮৮টি, স্যানিটেশন কভারেজ ১০টি। কৃষিতথ্য মোট জমির পরিমাণ ১,৭৪,৮২৪হেক্টর। আবাদী ১,৫৬,৩৮৮হেক্টর (ফসলীজমি ১,৩৩,৮৯৮ হেক্টর, ফলবাগান ২২,৪৯০হেক্টর), অনাবাদী/পতিত ৮,৯৭৮হেক্টর, স্থায়ীজলাবদ্ধজমি ৯,৪৫৮হেক্টর।প্রধান উৎপন্ন ফসল: ধান, পাট, পান, কলা, নারিকেল, সুপারি, ডাল, আলু, তরমুজ, আখ ও শাকসবজি। এ অঞ্চল চিংড়ি মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। শিল্পতথ্য সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ০৪টি, এলপিজি প্লান্ট ০২টি, ক্ষুদ্র শিল্প ৫৪২টি, কুটির শিল্প ২,৩০২টি, বিসিক শিল্পনগরী ০১টি। নদ-নদী পানগুছি নদী পশুর নদী হরিণঘাটা নদী মধুমতি নদী দড়াটানা নদী মোংলা নদী বগুড়া নদী বলেশ্বর নদী ভাংগ্রা নদী গোসাইরখালী নদী চিত্তাকর্ষক স্থান প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা মসজিদের শহর ষাট গম্বুজ মসজিদ খান জাহানের সমাধি কোদলা মঠ রেজা খোদা মসজিদ জিন্দা পীর মসজিদ ঠান্ডা পীর মসজিদ সিংগাইর মসজিদ বিবি বেগনী মসজিদ চুনাখোলা মসজিদ নয়গম্বুজ মসজিদ সিংগার মসজিদ এক গম্বুজ জামে মসজিদ, বাগেরহাট পীর আলীর সমাধি মুনিগঞ্জ শিবমন্দির, বাগেরহাট। শ্রী শ্রী গঞ্জেশ্বরী কালী মন্দির, বাগেরহাট। রণবিজয়পুর মসজিদ দশ গম্বুজ মসজিদ কুটিবাড়ি,জমিদারবাড়ি,মোড়েলগঞ্জ। বড় আজিনা ছয় গুম্বজ মসজিদ, বৈটপুর খান জাহানের নির্মিত প্রাচীন রাস্তা বড়বাড়িয়া মুন্সীবাড়ি প্রাচীন মসজিদ,চিতলমারী,বাগেরহাট প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সুন্দরবন ঢাংমারী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য মাঝের চর, শরণখোলা চাঁদপাই বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য দুধমুখী বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য সুন্দরবন পূর্ব বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য দুবলার চর কটকা সমুদ্র সৈকত টাইগার পয়েন্ট দীঘি/ জলাশয় ঘোড়া দীঘি ঠাকুর দীঘি পচা দীঘি কোদাল ধোয়া দীঘি ঝলমলিয়া দীঘি অন্যান্য মংলা বন্দর খান জাহান আলী বিমানবন্দর সুন্দরবন রিসোর্ট, বারাকপুর চন্দ্রমহল, রনজিতপুর। বাগেরহাট জাদুঘর ওয়ান্ডার কিংডম বাগেরহাট পৌর পার্ক শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়াম রুপা চৌধুরী পৌর পার্ক ডিসি পার্ক, যাত্রাপুর উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব শিক্ষাবিদ আবদুল জাব্বার জাহানাবাদী, বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাসচিব মাওলানা মোহাম্মাদ গোলাম মাওলা, শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ মাওলানা মুজিবুর রহমান শিক্ষাবিদ কবি ও সাহিত্যিক রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, (কবি) নীলিমা ইব্রাহিম (সাহিত্যিক) আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ (সাহিত্যিক, সংগঠক) মোহাম্মদ রফিক (কবি) মতিউর রহমান মল্লিক (কবি ও সাহিত্যিক) আবুল হোসেন (কবি) মোহাম্মদ মোহর আলী (ইতিহাসবেত্তা) স্বরোচিষ সরকার (আভিধানিক ও বৈয়াকরনিক) প্রশান্ত মৃধা (সাহিত্যিক) সুশান্ত মজুমদার (সাহিত্যিক) খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী খান (বীর উত্তম) খিজির আলী বীর বিক্রম মোহাম্মদ হোসেন বীর প্রতীক এনামুল হক (বীর প্রতীক) রাজনীতিবিদ শেখ আবদুল আজিজ আ স ম মুস্তাফিজুর রহমান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খেলোয়াড় রুবেল হোসেন,ক্রিকেট (খেলোয়াড়) আব্দুর রাজ্জাক (সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড়) জুপিটার ঘোষ,ক্রিকেট (খেলোয়াড়) হেমায়েত মোল্লা,ক্যারম (খেলোয়াড়) অন্যান্য শহীদ রহিমউল্লাহ, সুন্দরবনের বিদ্রোহী নেতা হালিমা খাতুন ভাষা আন্দোলন, একুশে পদক কে এম আলী আজম, সরকারি কর্মকর্তা। আবরারুল হক আসিফ ইসলামি চিন্তাবিদ সংসদীয় আসন বাগেরহাট-১, ৯৫ নং আসন বাগেরহাট-২, ৯৬ নং আসন বাগেরহাট-৩, ৯৭ নং আসন বাগেরহাট-৪, ৯৮ নং আসন মিডিয়া সংবাদপত্র দক্ষিণ বাংলা উত্তাল দক্ষিণ কণ্ঠ বাগেরহাট দর্পন বাগেরহাট বার্তা দূত সাপ্তাহিক খানজাহান নোনাজল লোক সংস্কৃতি মেলা খানজাহান আলী (রঃ) মাজারের ওরস দুবলার চরের রাস মেলা রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মেলা যাত্রাপুরের রথের মেলা তালেশ্বরের রথের মেলা মঘিয়ার মেলা কালাচাঁদ ফকিরের মেলা কালখেরবেড়ের মেলা চাঁদপাই এর মেলা বাণিজ্য মেলা বৈশাখী মেলা ভৈরব নদের নৌকা বাইচ মধুমতী নদীর নৌকা বাইচ আরও দেখুন খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের জেলাসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ জেলা তথ্য বাতায়ন জেলার সরকারি ওয়েব বাংলাদেশের জেলা খুলনা বিভাগের জেলা বাগেরহাট জেলা
https://en.wikipedia.org/wiki/Bagerhat_District
Bagerhat District
Bagerhat District (Bengali: বাগেরহাট, pron: bageɾɦaʈ) is a district in south-western Bangladesh. It is a part of the Khulna Division.
2476
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BE%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A6%BE%E0%A6%97
খুলনা বিভাগ
খুলনা বিভাগ বাংলাদেশের আটটি বিভাগের মধ্যে একটি এবং এটি দেশের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারী অনুয়ায়ী, বিভাগটির আয়তন ২২,২৮৫ বর্গ কিলোমিটার এবং জনসংখ্যা ১৫,৫৬৩,০০০ জন। খুলনা বিভাগের সদর দপ্তর খুলনা শহর। এই বিভাগের সদর দপ্তর খুলনা শহর হলো ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। খুলনা বিভাগের ২য় বহত্তম শহর কুষ্টিয়া, ৩য় বহত্তম শহর যশোর। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা নদী এবং ভৈরব নদীর তীরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম। খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোর অঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনা ও কুষ্টিয়া এবং যশোর অঞ্চল নিয়ে গঠিত এই বিভাগ কে শিল্প ইন্ডাস্ট্রির বিভাগ হিসেবে ডাকা হয়। খুলনা শহর থেকে ৪৮ কি.মি. দূরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্র বন্দর মোংলা বন্দর অবস্থিত। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বন্দর খুলনা বিভাগের যশোরে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রথম রেলপথ এবং এশিয়ার সর্ববৃহৎ চিনিকল কেরু এন্ড কোম্পানি খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গা জেলাতে অবস্থিত। এছাড়া কুষ্টিয়ায় রয়েছে ভারী শিল্পাঞ্চল। বাংলাদেশের কয়েকটি উঁচু ভবনের মধ্যে কুষ্টিয়ার বিআরবি কেবল টাওয়ার অন্যতম যা ৪০ তালা। এছাড়া চুয়াডাঙ্গাতে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভিটা, যশোরে রয়েছে মাইকেল মধুসূদন দত্তের ভিটা, কুষ্টিয়ায় রয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথের ভিটা, মেহেরপুরে রয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর, বাগেরহাটে রয়েছে ষাট গম্বুজ মসজিদ সহ খুলনা বিভাগের জেলা গুলো তে রয়েছে অনেক নিদর্শন। পৃথিবী বিখ্যাত উপকূলীয় বন সুন্দরবন খুলনা বিভাগের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। খুলনা বিভাগের খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় সুন্দরবনের বিস্তৃতি ঘটেছে। খুলনাকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বলা হয়। এছাড়া কুষ্টিয়া তে রয়েছে লালন শাহ এর মাজার, চুয়াডাঙ্গাতে রয়েছে ঘোলদাড়ী শাহী মসজিদ এবং যশোরে রয়েছে বহু ঐতিহাসিক সব নিদর্শন। রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনা শহরের দূরত্ব সড়কপথে ২১০ কি.মি.। রাজধানী সহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংগে স্থলপথ, আকাশপথ, জলপথ ব্যবহার করা যায়। ১৯১২ সালে থেকে অত্র অঞ্চলে নদীপথে স্টিমার (স্টিমবোট) চলাচল করে।খুলনা বিভাগের জেলা গুলোর মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের অন্যান্য জেলা গুলোর থেকে অনেক ভালো প্রতিষ্ঠাকাল এবং ইতিহাস ব্রিটিশ ভারতে খুলনা বিভাগ ছিল প্রেসিডেন্সি বিভাগ এর একটি অংশ। ১৯৪৭ সালের আগে প্রেসিডেন্সি বিভাগের ছয়টি প্রধান জেলা ছিল, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, চব্বিশ পরগনা, খুলনা, অবিভক্ত যশোর এবং অবিভক্ত নদিয়া। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় এই বিভাগটিকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে। খুলনা জেলা এবং যশোর এবং নদিয়া জেলার সিংহভাগ নব প্রতিষ্ঠিত পূর্ব বাংলার অংশ হয়ে যায়। এবং প্রেসিডেন্সি বিভাগের বাকি জেলাগুলি পশ্চিমবঙ্গ এর অংশ হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে পূর্ববঙ্গের নদিয়া জেলার সিংহভাগ নিয়ে নতুন কুষ্টিয়া জেলা গঠন করে। এবং পূর্ববঙ্গ সরকার যশোর, খুলনা ও কুষ্টিয়া জেলাকে রাজশাহী বিভাগে যুক্ত করে৷ ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার সেই সময়ের রাজশাহী বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা এবং ঢাকা বিভাগের বরিশাল,নিয়ে খুলনা বিভাগের যাত্রা শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে খুলনা বিভাগ থেকে আলাদা করে বরিশাল বিভাগ গঠিত হয়। ভৌগোলিক অবস্থান খুলনা বিভাগ এর পশ্চিমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানা, উত্তরে রাজশাহী বিভাগ, পূর্বে বরিশাল বিভাগ এবং দক্ষিণে বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ নামে পরিচিত সুন্দরবন সহ বঙ্গোপসাগরেরগা ঘেষে রয়েছে নয়নাভিরাম সমুদ্র সৈকত এবং দ্বীপপুঞ্জ।দশটি জেলা সমৃদ্ধ এই বিভাগ পদ্মা নদী এর ব-দ্বীপ বা গ্রেটার বেঙ্গল ডেল্টার একটি অংশবিশেষ। অন্যান্য নদীর মধ্যে রয়েছে মধুমতি নদী, ভৈরব নদ, কপোতাক্ষ নদ, কুমার নদ, চিত্রা নদী, রুপসা নদী, পশুর নদী ইত্যাদি। প্রশাসনিক জেলা খুলনা বিভাগ ৫৯টি উপজেলা (উপবিভাজন) ও নিম্নলিখিত ১০টি জেলা (জিলা) নিয়ে গঠিত হয়েছে: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিভাগ সহ উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল কলেজ কলেজ সরকারি জয়বাংলা কলেজ, খুলনা খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ চৌগাছা ডিগ্রি কলেজ, যশোর সরকারি মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজ, খুলনা ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ সরকারি বি. এল. কলেজ যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ সরকারি কেশবপুর কলেজ সরকারি এম. এম. কলেজ আযম খান সরকারি কমার্স কলেজ সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, মাগুরা সরকারি কেশব চন্দ্র কলেজ চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ চুয়াডাঙ্গা সরকারি মহিলা কলেজ চুয়াডাঙ্গা পৌর ডিগ্রি কলেজ আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজ দর্শনা সরকারি কলেজ জীবনগর ডিগ্রি কলেজ জীবনগর আদর্শ সরকারি মহিলা কলেজ উথলী মহাবিদ্যালয় কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজ সরকারি আদর্শ সুন্দরবন কলেজ মিলেটারী কলেজিয়েট স্কুল (এমসিএসকে) খুলনা সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ (খালিশপুর) মেহেরপুর সরকারি কলেজ লক্ষীখোলা কলেজিয়েট স্কুল,পাইকগাছা মুজিবনগর আদর্শ মহিলা কলেজ খুলনা পাবলিক কলেজ যশোর সরকারি সিটি কলেজ সরকারি কে.এম.এইস. কলেজ কোটচাঁদপুর ঝিনাইদহ মহেশপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজ আলফাতুননেছা মহাবিদ্যালয় শেখ-হাসিনা ডিগ্রি কলেজ,পদ্মপুকুর গভর্নমেন্ট ভিক্টোরিয়া কলেজ,নড়াইল নড়াইল সরকারি মহিলা কলেজ মাইজপাড়া ডিগ্রী কলেজ মোংলা সরকারি কলেজ ডুমুরিয়া কলেজ ভেড়ামারা কলেজ ভেড়ামারা সরকারি মহিলা কলেজ ভেড়ামারা আদর্শ কলেজ খুলনা সরকারি মহিলা কলেজ,খুলনা বাঘারপাড়া ডিগ্রী কলেজ,বাঘারপাড়া সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা সিটি কলেজ, সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা দিবা নৈশ কলেজ, সাতক্ষীরা। আশাশুনি সরকারি কলেজ, আশাশুনি, সাতক্ষীরা গঙ্গানন্দপুর ডিগ্রী কলেজ, ঝিকরগাছা কায়েমকোলা কলেজ, ঝিকরগাছা সরকারী বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ কলেজ, শার্শা ডা. আফিল উদ্দীন ডিগ্রী কলেজ, শার্শা শৈলকুপা সরকারি ডিগ্রী কলেজ বেগম হামিদা সিদ্দিক স্কুল এন্ড কলেজ, কুষ্টিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, খুলনা খুলনা জিলা স্কুল সেন্ট জোসেফ'স উচ্চ বিদ্যালয়,খুলনা খুলনা সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলনা কলেজিয়েট স্কুল বেলফুলিয়া ইসলামিয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রুপসা, খুলনা জে কে এস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রুপসা, খুলনা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ, চুয়াডাঙ্গা চুয়াডাঙ্গা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় চুয়াডাঙ্গা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ সোহরাওয়ার্দী স্মরণী বিদ্যাপীঠ, ডিঙ্গেদহ, চুয়াডাঙ্গা নাটুদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয় উথলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাগুরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাগুরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাগুরা কালেক্টরেট কলেজিয়েট স্কুল মাগুরা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয় করোনেশন গভ. গার্ল স্কুল গভঃ ল্যাবরেটরি হাই স্কুল, খুলনা সরকারি দৌলতপুর মুহসিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় খালিশপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়,খুলনা যশোর ক্যান্টেন্টমেন্ট পাবলিক স্কুল যশোর জিলা স্কুল কায়বা- বাইকোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শার্শা চালতাবাড়িয়া আর.ডি. মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শার্শা শাড়াতলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, শার্শা গিলাতলা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়.রামপাল. বাগেরহাট লবণচরা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাইজপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়,নড়াইল খালিশপুর বহুমূখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খালিশপুর, ঝিনাইদহ বাঘারপাড়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়,বাঘারপাড়া টাটিবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোংলা, বাগেরহাট। ইসমাইল মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মোংলা সেন্ট পলস উচ্চ বিদ্যালয়, মোংলা,বাগেরহাট কুষ্টিয়া জিলা স্কুল সাতক্ষীরা সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা। সাতক্ষীরা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সাতক্ষীরা সাতক্ষীরা পি এন হাই স্কুল, সাতক্ষীরা। তালতলা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়,তালতলা, বিনেরপোতা,সাতক্ষীরা। ঋশিল্পী সেন্টার স্কুল, গোপিনাথপুর, বিনেরপোতা, সাতক্ষীরা ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়, খাজরা, আশাশুনি, সাতক্ষীরা কাকবাসিয়া বঙ্গবন্ধু মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আনুলিয়া, আশাশুনি, সাতক্ষীরা আশাশুনি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কায়েমকোলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, যশোর। শার্শা পাইলট স্কুল, শার্শা শৈলকুপা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ ঝিনাইদহ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,ঝিনাইদ। মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়,মেহেরপুর। মেহেরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মেহেরপুর। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট মাগুরা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট খুলনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট খুলনা মহিলা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ঝিনাইদহ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট চুয়াডাঙ্গা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সাতক্ষীরা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট মাগুরা টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ বিসিএমসি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি মহাবিদ্যালয় ম্যানগ্রোভ ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি খান জাহান আলী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট সরকারি টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট,খুলনা মাদ্রাসা খুলনা আলিয়া কামিল মাদ্রাসা, খুলনা দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা-খুলনা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা খুলনা চুয়াডাঙ্গা ফাজিল মাদ্রাসা চুয়াডাঙ্গা মহিলা দাখিল মাদ্রাসা ফয়লাহাট আছিয়া কারামতিয়া সিনিয়র আলিম মাদ্রাসা- রামপাল, বাগেরহাট। আগরদাড়ী আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসা,সাতক্ষীরা কায়বা-বাইকোলা ওসমানীয়া দাখিল মাদ্রাসা, শার্শা মনিপুর ভি, বি দাখিল মাদ্রাসা, আনুলিয়া আশাশুনি, সাতক্ষীরা অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলনায় ৬টি সমন্বিত সাধারণ ও বৃত্তিমূলক (আইজিভি) বিদ্যালয় রয়েছে এবং এবং ইউসেপ এর একটি টেকনিক্যাল স্কুল (অবহেলিত শিশুদের জন্য শিক্ষা), যা একটি অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেবা করে আসছে। শিল্প খুলনা বিভাগ শিল্পে সমৃদ্ধ একটি বিভাগ। খুলনা বিভাগের প্রধান সমৃদ্ধ জেলা হল: খুলনা কুষ্টিয়া যশোর খুলনা বিভাগের কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনা জেলাতে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়াও বাগেরহাট সহ বাকি জেলা গুলোতে কিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সংবাদপত্র ও পত্রিকা খুলনা বিভাগ থেকে প্রকাশিত দৈনিক এবং সাপ্তাহিক খবরের কাগজ সমূহ: গ্রামের কাগজ স্পন্দন দৈনিক পূর্বাঞ্চল দৈনিক খুলনাঞ্চল দৈনিক দৃষ্টিপাত দৈনিক দক্ষিণের মশাল খুলনা নিউজ লোকসমাজ দৈনিক মাথাভাঙ্গা দৈনিক সাতক্ষীরা নিউজ দৈনিক খেদমত দৈনিক সময়ের খবর দৈনিক আমার একুশ Daily Tribune দৈনিক জন্মভূমি দৈনিক অনির্বাণ দৈনিক প্রবাহ দৈনিক তথ্য পত্রদূতখুলনা গেজেটদৈনিক খুলনার জনগন 24 যুগের বার্তা দৈনিক খুলনা খুলনা অবজারভার উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ খুলনা বিভাগের সরকারি ওয়েবসাইট, বাংলাদেশী জাতীয় তথ্য বাতায়ন বাংলাদেশের বিভাগ খুলনা বিভাগ
https://en.wikipedia.org/wiki/Khulna_Division
Khulna Division
The Khulna Division (Bengali: খুলনা বিভাগ) is the second largest of the eight divisions of Bangladesh. It has an area of 22,285 km2 (8,604 sq mi) and a population of 17,416,645 at the 2022 Bangladesh census (preliminary returns). Its headquarters and largest city is Khulna city in Khulna District.
2483
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A7%8C%E0%A6%A7
জাতীয় স্মৃতিসৌধ
জাতীয় স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি স্মারক স্থাপনা। এটি সাভারে অবস্থিত।স্মৃতিসৌধে সাতটি স্তম্ভ আছে যা বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রধান সাতটি আন্দোলনের নিদর্শন বহন করে। এর নকশা প্রণয়ন করেছেন স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন। এখানে মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের দশটি গণকবর রয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রনায়কগণ সরকারিভাবে বাংলাদেশ সফরে আগমন করলে এই স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন রাষ্ট্রাচারের অন্তর্ভুক্ত। ইতিহাস ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নবীনগরে এই স্মৃতিসৌধের শিলান্যাস করেন। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্মৃতিসৌধটি নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং নকশা আহ্বান করা হয়। ১৯৭৮-এর জুন মাসে প্রাপ্ত ৫৭টি নকশার মধ্যে সৈয়দ মাইনুল হোসেন প্রণীত নকশাটি গৃহীত হয়। ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে মূল স্মৃতিসৌধের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে বিজয় দিবসের অল্প পূর্বে সমাপ্ত হয়। ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে গৃহীত প্রকল্প অনুযায়ী এখানে একটি অগ্নিশিখা, সুবিস্তৃত ম্যুরাল এবং একটি গ্রন্থাগার স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। বাংলাদেশ সফরকারী বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানগণ নিজ হাতে এখানে স্মারক বৃক্ষরোপণ করে থাকেন। স্মৃতিসৌধের মিনার ব্যতীত প্রকল্পটির মহা-পরিকল্পনা ও নৈসর্গিক পরিকল্পনাসহ অন্য সকল নির্মাণ কাজের স্থাপত্য নকশা প্রণয়ন করে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্থাপত্য অধিদপ্তর। নির্মাণ কাজের গোড়াপত্তন হয় ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই মাসে এবং শেষ হয় ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দের মাসে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ধীন গণপূর্ত অধিদপ্তর সমগ্র নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। বর্তমানে সৌধটির নির্মাণকাজ তিন পর্যায়ে মোট ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে সম্পন্ন হয়। স্থাপত্য ও তাৎপর্য ১৯৭১'র ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। একই বছর ১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের মাধ্যমে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। এই যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি হয়। এই স্মৃতিসৌধ বাংলাদেশের জনসাধারণের বীরত্বপূর্ণ লড়াইয়ের স্মরণে নিবেদিত এবং মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের প্রতি জাতির শ্রদ্ধার উজ্জ্বল নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। স্মৃতিস্তম্ভ এবং এর প্রাঙ্গণের আয়তন ৩৪ হেক্টর (৮৪ একর)। এ ছাড়াও রয়েছে একে পরিবেষ্টনকারী আরও ১০ হেক্টর (২৪ একর) এলাকা নিয়ে বৃক্ষরাজি পরিপূর্ণ একটি সবুজ বলয়। এই স্মৃতিসৌধ সকল দেশ প্রেমিক নাগরিক এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় ও সাফল্যের যুগলবন্দি রচনা করেছে। সাতটি ত্রিভুজাকৃতি মিনারের শিখর দেশের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায়ের প্রতিটি এক ভাবব্যঞ্জনাতে প্রবাহিত হচ্ছে। এই সাতটি পর্যায়ের প্রথমটি সূচিত হয় বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। পরবর্তীতে চুয়ান্ন, ছাপ্পান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টি ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। মিনারটি ৪৫ মিটার (১৫০.০০ ফুট)উঁচু এবং জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিন্দুতে অবস্থিত। মিনার ঘিরে আছে কৃত্রিম হ্রদ এবং বাগান। স্মৃতিসৌধ চত্বরে আছে মাতৃভূমির জন্য আত্মোৎসর্গকারী অজ্ঞাতনামা শহীদের দশটি গণসমাধি। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে আরও রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, অভ্যর্থনা কক্ষ, মসজিদ, হেলিপ্যাড, ক্যাফেটেরিয়া। স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণের সর্বমোট আয়তন ৮৪ একর। স্মৃতিস্তম্ভ পরিবেষ্টন করে রয়েছে ২৪ একর এলাকাব্যাপী বৃক্ষরাজিশোভিত একটি সবুজ বলয়। স্মৃতিসৌধটির উচ্চতা ১৫০ ফুট। সৌধটি সাত জোড়া ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে গঠিত। দেয়ালগুলো ছোট থেকে ক্রমশ বড়ক্রমে সাজানো হয়েছে। এই সাত জোড়া দেয়াল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাতটি ধারাবাহিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন,১৯৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬ এর শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যূত্থান, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ - এই সাতটি ঘটনাকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পরিক্রমা হিসাবে বিবেচনা করে সৌধটি নির্মিত হয়েছে। চিত্রশালা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ২৫-৩-২০০২ তারিখে জারী সরকারী প্রজ্ঞাপন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ ঢাকা জেলার দর্শনীয় স্থান সাভার উপজেলার দর্শনীয় স্থান বাংলাদেশের আধুনিকতাবাদী স্থাপত্য ঢাকার স্মৃতিস্তম্ভ ও স্মারক বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক আধুনিক স্থাপত্য বাংলাদেশের স্থাপত্য
https://en.wikipedia.org/wiki/National_Martyrs%27_Memorial
National_Martyrs%27_Memorial
null
2488
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9A%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%9F%E0%A6%97%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%AE%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AF%E0%A6%BC
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের তৃতীয় সরকারি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষাঙ্গন আয়তনের দিক থেকে এটি দেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। এটি বাংলাদেশের সরকারি বহু-অনুষদভিত্তিক স্বায়ত্তশাসিত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। গানের ক্যাম্পাস নামে খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালের ১৮ আগস্ট চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলায় স্থাপিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বে এই বিশ্ববিদ্যালয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল। সে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বাঙালি জাতীয়তাবাদের উত্থান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল। ২০২৩ সালের হিসাবে, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ২৭,৫৫০ শিক্ষার্থী এবং ৯০৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। বর্তমানে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অর্ন্তভূক্ত রয়েছে। এখানে রয়েছে দেশের অন্যতম বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণ হলো শাটল ট্রেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উল্লেখযোগ্য প্রাক্তন শিক্ষক-শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ ও অধ্যাপনা করেছেন যার মধ্যে ১ জন নোবেল বিজয়ী এবং একাধিক একুশে পদক বিজয়ী অর্ন্তভূক্ত রয়েছেন। অবস্থান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় উত্তরে হাটহাজারী থানার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার ২৩১২.৩২ একর পাহাড়ি এবং সমতল ভূমির উপর অবস্থিত। পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়তন ছিল , যা পরবর্তীতে ২০১৬ সালের এপ্রিলে প্রায় ৯ কোটি ৭১ লক্ষ টাকা ব্যয়ে সীমানা প্রাচীর নিমার্ণের মাধ্যমে বর্ধিত করা হয়। ১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষাঙ্গণ আয়তনের দিক থেকে দেশের সর্ববৃহৎ এই বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম শুরু হয়। ইতিহাস বিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে চট্টগ্রাম বিভাগে কোন বিশ্ববিদ্যালয় না থাকায় চট্টগ্রামের অধিবাসিরা স্থানীয়ভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজন অনুভব করে । ১৯৪০ সালের ২৮ ডিসেম্বর, কলকাতায় অনুষ্ঠিত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সম্মেলনে মওলানা মুনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি ‘ইসলামিক ইউনিভার্সিটি’ নির্মাণের কথা উপস্থাপন করেন এবং একই লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের জন্য ভূমি ক্রয় করেন। দুই বছর পর, ১৯৪২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি নূর আহমদ বঙ্গীয় আইন পরিষদে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক দাবি উত্থাপন করেন। ষাটের দশকে তৎকালীন পাকিস্তানের দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (১৯৬০-১৯৬৫) প্রণয়নকালে চট্টগ্রামে একটি ‘বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মানের স্থান হিসেবে শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত চট্টগ্রাম সরকারি কলেজকে সম্ভাব্য ক্যাম্পাস হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। ১৯৬২ সালে, তৎকালিন পূর্ব-পাকিস্তানের জনশিক্ষা উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদাউস খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার একটি প্রাথমিক খসড়া পরিকল্পনা তৈরি করেন। একই বছর, ১৯৬২ সালের নির্বাচন প্রচারনায় ফজলুল কাদের চৌধুরী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাধারণ প্রতিশ্রুতি দেন। এবং নির্বাচন পরবর্তীকালে তিনি কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের স্থানে এই বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তিত হওয়ার পর, ১৯৬১ সালের ৭ মে চট্টগ্রামের নিবাসির উদ্যোগে স্থানীয় মুসলিম হলে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রধান অতিথির ভাষণে চট্টগ্রামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত প্রকাশ করেন এবং তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করেন। পরবর্তীকালে ১৯৬২ সালে ৩০ ডিসেম্বর, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-সংগ্রাম পরিষদ’ নামে আরেকটি পরিষদ গঠিত হয়। এই সকল সংগঠনের উদ্যোগে বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ ও স্মারকলিপি প্রদান, পত্রপত্রিকায় বিবৃতি, সেমিনার অনুষ্ঠিত হতে থাকে। সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে ১৯৬২ সালের ৯ ডিসেম্বর লালদিঘী ময়দানে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৬৩ সালের ৮ জানুয়ারি, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে চট্টগ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালিত হয়। ১৯৬৩ সালের ২৯ নভেম্বর, ফজলুল কাদের চৌধুরী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের স্পিকার মনোনীত হন। প্রথমদিকে এ বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট, কুমিল্লা ও নোয়াখালিতে স্থাপনের পরিকল্পনা করা হলেও ১৯৬৩ সালের ১২ ডিসেম্বর, রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের অনুপস্থিতিতে মন্ত্রীসভার এক বৈঠকে সভাপতিত্বকালে ফজলুল কাদের চৌধুরী কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী এ.টি.এম মোস্তফাকে বিশ্ববিদ্যালয়টি কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে স্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন। ১৯৬৪ সালের ৯ মার্চ তার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একটি জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের বৈঠকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ মঞ্জুর করা হয়। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডক্টর এম ওসমান গণিকে চেয়ারম্যান এবং ডক্টর কুদরাত-এ-খুদা, ডক্টর মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, এম ফেরদৌস খান ও ডক্টর মফিজউদ্দীন আহমদকে সদস্য নির্বাচিন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’ গঠিত হয়। এই কমিশন সরেজমিন পর্যবেক্ষণ করে হাটহাজারী উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নের জঙ্গল পশ্চিম-পট্টি মৌজার নির্জন পাহাড়ি ভূমিকে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান হিসেবে সুপারিশ করে। ১৯৬৪ সালের ১৭-১৯ জুলাই পাকিস্তানের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ফজলুল কাদের চৌধুরীর সভাপতিত্বে ইসলামাবাদে জাতীয় অর্থনৈতিক কাউন্সিলের সভায় ‘স্থান নির্বাচন কমিশন’-এর সুপারিশের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহণ এবং এর চূড়ান্ত অনুমোদন প্রদান করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৯ আগস্ট পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ১৯৬৫ সালের ৩ ডিসেম্বর, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরের প্রাক্তন কিউরেটর ড. আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প-পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এরপর আজিজুর রহমান মল্লিককে চট্টগ্রাম শহরের নাসিরাবাদ হাউজিং সোসাইটির ৩নং সড়কের ‘কাকাসান’ নামের একটি ভবনে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্পের অফিস স্থাপন করেন। ১৯৬৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর, এক সরকারি প্রজ্ঞাপন বলে তৎকালীন পাকিস্তান শিক্ষা পরিদপ্তরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সমস্ত কর্মকর্তাকর্মচারীকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প অফিসে বদলি করা হয়। স্থপতি মাজহারুল ইসলামের ‘বাস্তকলা’ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাষ্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। প্রাথমিকভাবে ১টি দ্বিতল প্রশাসনিক ভবন, বিভাগীয় অফিস, শ্রেণিকক্ষ ও গ্রন্থাগারে জন্য একতলা ভবন তৈরি করার পাশাপাশি শিক্ষক ও ছাত্রদের আবাসনের ব্যবস্থাও করা হয়। ২০১৬ সালের ১৮ নভেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার পঞ্চাশ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করে। স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধের পাঁচ বছর পূর্বে চালু হওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ সহ দেশের বিভিন্ন আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখে। পরবর্তীতে ১৯৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন এবং ২০১৩ সালের শাহবাগ আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিলো। ১৯৭১ সালে, মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য আক্রমণের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আজিজুর রহমান মল্লিকের সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়েছিল। ২৪ মার্চ, স্বাধীনতা সংগ্রামের সমর্থনে প্রাক্তণ ছাত্র সমিতির আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মাঠে আয়োজন করা হয় গণসঙ্গীত। ২৬ মার্চ পাকিস্তানি সেনারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দখল করে, এবং টানা নয় মাস তাদের ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে। পাকিস্তানি সেনারা এখানে তাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বানিয়েছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধের শেষে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাফর ইমামের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালায় এবং ১৬ ডিসেম্বর ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের নয়দিন পর ২৫ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পাকিস্তানিদের আওতা মুক্ত হয়। ১৯৭১ সালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক, বারোজন শিক্ষার্থী সহ তিন জন কর্মকর্তা নিহত হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল দপ্তরের কর্মচারী মোহাম্মদ হোসেনকে বীরপ্রতীক খেতাব দেয়া হয়। হোসেন গণবাহিনী (সেক্টর-১)-এর অধিনে নৌ-কমান্ডো হিসাবে যুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন। এই ইতিহাস সংরক্ষণের লক্ষে, মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০০৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে জিরো পয়েন্ট চত্বরে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ। মুক্তিযুদ্ধে নিহতরা হলেন: শিক্ষাঙ্গন জাদুঘর বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর ১৯৭৩ সালের ১৪ জুন, মধ্যযুগের চারটি কামান নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে জাদুঘরে বেলে পাথরের একাধিক ভাস্কর্যসহ বেশকিছু প্রাচীন পাথরের ভাস্কর্য এবং একটি কামান রয়েছে। জাদুঘর ভবনটি পাঁচটি গ্যালারিতে বিভক্ত। যেখানে রয়েছে: প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গ্যালারি, ভাস্কর্য গ্যালারি, ইসলামিক আর্ট গ্যালারি, লোকশিল্প গ্যালারি এবং সমসাময়িক আর্ট গ্যালারি। জাদুঘরের মূল কক্ষের প্রবেশ পথে রয়েছে দ্বাদশ শতকের একটি প্রাচীন শিলালিপি। এখানে অষ্টম শতকের পাহাড়পুর থেকে প্রাপ্ত পোড়ামাটির চিত্রফলক, বৌদ্ধমূর্তি, মধ্যযুগের ১০-১৫টি বিষ্ণুমূর্তি, সৈন্যদের ব্যবহৃত অস্ত্র-শস্ত্র, বিভিন্ন রকম মুদ্রা, প্রাচীন বই, বাদ্যযন্ত্র, আদবিাসীদের বিভিন্ন নিদর্শন, চিনামাটির পাত্র ইত্যাদি সংরক্ষিত রয়েছে। সমসাময়িক আর্ট গ্যালারিতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন, কামরুল হাসান, রশিদ চৌধুরী, জিয়া উদ্দীন চৌধুরী, নিতুন কুন্ডু চৌধুরীর পেইন্টিংস এবং সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদের ভাস্কর্য রয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক আর্ট গ্যালারিতে প্রাচীনকালের চিত্রকর্ম, জীবাশ্ম, মাটির মূর্তি রয়েছে। ভাস্কর্য গ্যালারিতে রয়েছে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সময়কালের কাঠের মূর্তি, বিষ্ণুমূর্তি, শিবলিঙ্গ প্রভৃতী। লোকশিল্প গ্যালারিতে সপ্তদশ ও অষ্টাদশ শতকের তামা, পিতল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈজসপত্র, বেতের ঝুড়ি, মাটির ভাস্কর্য, মাটির পুতুল প্রভৃতির বিশাল সম্ভার রয়েছে। ইসলামিক আর্ট গ্যালারিতে রয়েছে মোগল আমলের কামান, স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, হস্তলিখিত কুরআন, মধ্যযুগীয় অস্ত্র, প্রাচীন মসজিদের ও তাদের ধ্বংসাবশেষের ছবি। জাদুঘরটি সকল খোলার দিনে দর্শকদের জন্য উম্মুক্ত থাকে। প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত প্রাণিবিদ্যা জাদুঘর ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের পাঠক্রমের সমর্থনে সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্থাপিত হয়। জাদুঘরে প্রায় ৫৪০ টি নমুনা সংরক্ষিত রয়েছে, এর মধ্যে প্রাণীর সংখ্যা ৫৭ টি এবং ফরমালিন (ভেজা সংরক্ষিত) নমুনার সংখ্যা ৪৮৫ টি। সমুদ্র সম্পদ জাদুঘর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামুদ্রিক বিজ্ঞান ইন্সটিটিউটের একটি কক্ষে গড়ে তোলা হয়েছে এ জাদুঘর। এখানে ৫৫০ টির মতো সামুদ্রিক প্রাণী সংরক্ষণ করা হয়েছে। হাঙ্গর থেকে শুরু করে বৈদ্যুতিক মাছ আজব বাণাকেল, অক্টোপাস, শামুক, বিভিন্ন প্রজাতীর সাপ সহ রয়েছে অসংখ্য বিস্ময়কর জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ। স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বিপরীত পাশে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভ অবস্থিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে ভাষ্কর্যটি স্থাপন করা হয় বলে স্তম্ভটির অবস্থান বুদ্ধিজীবী চত্বর নামে পরিচিত। প্রথিতযশা শিল্পী রশিদ চৌধুরী স্মৃতিস্তম্ভের নকশা প্রণয়ন করেন। ১৯৮৫ সালে স্থাপিত স্মৃতিস্তম্ভটি এখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল কর্মের সূতিকাগার হিসাবে ভাবা হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ষাটের দশকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর, তিনটি স্তম্ভের আদলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে প্রাকৃতির দুযোর্গে সেটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হওয়ায়, বুদ্ধিজীবী স্মৃতিস্তম্ভের বিপরীত পাশে প্রায় দশ শতক জায়গার ওপর ১৯৯৩ সালে বর্তমান কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটির নকশা প্রনয়ন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক অধ্যাপক ও ভাস্কর সৈয়দ আব্দুল্লাহ খালিদ। ত্রিভুজাকৃতির তিনটি মিনারের চূড়ায় রয়েছে একটি শাপলা ফুলের কলি। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য রফিকুল ইসলাম চৌধুরী ১৯৯৩ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। স্মরণ স্মৃতিস্তম্ভ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথেই ২০০৯ সালের ৫ নভেম্বরে স্থাপন করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ স্মরণ। স্মৃতিস্তম্ভটির স্থপতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ সাইফুল কবীর। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের চট্টগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন শিক্ষক, ১১ জন ছাত্র এবং ৩ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী সহ সর্বমোট ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগ আর বীরত্বের স্মৃতিস্বরূপ ভাস্কর্যটি নির্মিত হয়েছে। ভূমি থেকে স্মরণের মূল বেদি পর্যন্ত সর্বমোট চারটি ধাপ যার প্রতিটি ধাপ বাংলাদেশের ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। প্রথম ধাপ বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় ধাপ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, তৃতীয় ধাপ সত্তরের নির্বাচন ও চতুর্থ ধাপে প্রতিফলিত হয়েছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্মৃতিস্তম্ভে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন মুক্তিযোদ্ধার নাম ও ছবি রয়েছে, তারা হলেন- প্রকৌশল দপ্তরের চেইন ম্যান বীর প্রতীক মোহাম্মদ হোসেন, চাকসুর জিএস আব্দুর রব, শিক্ষার্থী ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ, ফরহাদ-উদ-দৌলা, নাজিম উদ্দিন খান, উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রভাষ কুমার বড়ুয়া এবং প্রহরী সৈয়দ আহমদ। স্বাধীনতা স্মৃতি ম্যুরাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের সামনে ভাস্কর্যটির অবস্থান। খ্যাতিমান শিল্পী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষক মুর্তজা বশীরের একক প্রচেষ্টায় এটি নির্মিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক সৈয়দ সাইফুল কবীর ভাস্কর্যটির নকশায় করেন। ভাস্কর্যটিতে ৪টি পাখির প্রতীকী নির্মাণে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে বাঙালির ছয় দফা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের ক্রমধারা এবং পাখির ডানায় ২১টি পাথরের টুকরায় লিপিবদ্ধ হয়েছে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের সমৃতি। ভাস্কর্টির মূল ভিত্তি রচিত হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলার ওপর। ২৫ মার্চ, ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য আবু ইউসুফ, ও উপ-উপাচার্য মোহাম্মদ আলাউদ্দিন এটি উদ্ভোধন করেন। জয় বাংলা বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে নির্মিত জয় বাংলা ভাস্কর্যটি স্থাপন করা হয় অক্টোবর ২০১৮ সালে। সৈয়দ মোহাম্মদ সোহরাব জাহানের নকশাকৃত ভাস্কর্যটির নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৮ সালের মার্চে এবং তৈরি করতে সময় লাগে নয় মাস। এটি নির্মাণ সহযোগী ছিলেন মুজাহিদুর রহমান মূসা ও জয়াশীষ আচার্য। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত এই ভাস্কর্যের দুটি স্তরের, উপরের অংশে রয়েছে চামড়া সংযুক্ত তিনজন সরাসরি মুক্তিযোদ্ধার অবয়ব; যাাদের মধ্যে দুজন পুরুষ ও একজন নারী। নিচের অংশে ব্যবহৃত ২০টি মানব অবয়বের মধ্যে রয়েছে রয়েছে দুজন পাহাড়ি-বাঙালির অবয়ব, যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি ও বাঙালিদের অংশগ্রহণ তুলে ধরা হয়েছে। বেদি থেকে প্রায় ১৮ ফুট উচ্চতার ভাস্কর্যটির প্রস্থ প্রায় ২০ ফুট। উপরের স্তরে দুই পুরুষ মুক্তিযোদ্ধার উচ্চতা ১১ ফুট এবং নিচের স্তরে প্রতিটি মানব অবয়বের উচ্চতা ‘লাইফ সাইজ’ ফুট হিসাবে বিবেচিত। ২০ লক্ষ টার্ক ব্যায়ে নির্মিত ভাস্কর্ডটি ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭তম উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। শিক্ষায়তনিক অনুষদসমূহ ২০২৪ সালের হিসেবে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৪টি বিভাগ রয়েছে। ইনস্টিটিউটসমূহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৭টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট চারুকলা ইনস্টিটিউট আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট কমিউনিটি ওফথমোলজি ইনস্টিটিউট বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্স সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা কেন্দ্রসমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ৬টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে। জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র নজরুল গবেষণা কেন্দ্র ব্যুরো অব বিজনেস রিসার্চ সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেন্টার ফর এশিয়ান স্টাডিস অধিভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিনে বর্তমানে ২৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে: সরকারি কলেজ চট্টগ্রাম কলেজ,চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম স্যার আশুতোষ সরকারি কলেজ,চট্টগ্রাম সরকারি কমার্স কলেজ, চট্টগ্রাম সাতকানিয়া সরকারি কলেজ,চট্টগ্রাম সরকারি মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা চাঁদপুর মেডিকেল কলেজ, চাঁদপুর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজ, নোয়াখালী, নোয়াখালী, কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ, কক্সবাজার রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ,রাঙ্গামাটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ইউনাইটেড কেয়ার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইস্টার্ন মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতাল মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া মেডিকেল কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ময়নামতি মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সাউদার্ন মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, চট্টগ্রাম ইউনাইটেড কেয়ার ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল টেকনোলজি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া নার্সিং কলেজ চট্টগ্রাম নার্সিং কলেজ, চট্টগ্রাম ফৌজদারহাট নার্সিং কলেজ, ফৌজদারহাট, চট্টগ্রাম ডেন্টাল কলেজ চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক ডেন্টাল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম আর্ট নার্সিং কলেজ,কুমিল্লা শামসুন নাহার খান নার্সিং কলেজ,চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, চট্টগ্রাম নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম ইনস্টিটিউট অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি, চট্টগ্রাম অন্যান্য হোম ইকোনমিক্স কলেজ, চট্টগ্রাম গ্রন্থাগার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ গ্রন্থাগার যা দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম। এই গ্রন্থাগারে বর্তমান সংগ্রহ সংখ্যা প্রায় ৩.৫ লক্ষ যার মধ্যে রয়েছে বিরল বই, জার্নাল, অডিও-ভিজ্যুয়াল উপাদান, পান্ডুলিপি এবং অন্ধদের জন্য ব্রেইল বই। ১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোবধনের সাথে এই গ্রন্থাগারের যাত্রা শুরু হয় মাত্র ৩০০ বই নিয়ে। লাইব্রেরি বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয় ১৯৯০ সালের নভেম্বরে। তিনতলা বিশিষ্ট গ্রন্থাগারটিতে শিক্ষার্থী, গবেষক এবং শিক্ষকদের জন্য পৃথক কক্ষ রয়েছে। গ্রন্থাগার ভবনে একটি মিলনায়তনও রয়েছে। গ্রন্থাগারে ফটোকপির ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রন্থাগারটিতে প্রতিদিন জাতীয় ও আঞ্চলিক পত্রিকা পড়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। গ্রন্থাগারটিকে বর্তমানে অটোমেশনের আওতায় আনা হয়েছে। মেডিকেল সেন্টার বিশ্ববিদ্যালয়েরর আইন অনুষদের কাছেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার অবস্থিত। এটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মচারীদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদানের এবং প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা গ্রহণের জন্য কাজ করে থাকে। পাশাপাশি এখানে শিক্ষক ও কর্মচারীদের পরিবারের সদস্যদের জন্যও বিনামূল্যে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। এই মেডিকেল সেন্টারে সপ্তাহের প্রতিদিন সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের ব্যবস্থা রয়েছে, যেখানে চিকিৎসকগণ পালা করে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে থাকেন। এই সেন্টারে ১১ জন চিকিৎসক ও ৪ টি অ্যাম্বুলেন্স রয়েছে। এছাড়াও মেডিকেল সেন্টার প্রাঙ্গণে ৬ টি অস্থায়ী বিছানার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাস প্রাকৃতিক সৌর্ন্দের লীলাভূমি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ জুড়ে রয়েছে আঁকাবাঁকা পথ, পাহাড়ী পথ, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ এবং বন্য প্রাণী। প্রায়ই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাটা পাহাড়, বাণিজ্য অনুষদের পেছনে, ফরেস্ট্রি একালাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক পরিবেশে ছোট আকারের লালচে বাদামী পিঙ্গল রংয়ের মায়া হরিণ দেখা যায়। এইসব মায়া হরিণগুলো খর্বকায় ও লাজুক স্বভাবের। তবে এই হরিণের প্রকৃত সংখ্যা কত তা জানাে নেই। এছাড়াও কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের পেছনে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন পাহাড়ি ঝরনা। আবাসিক হলসমূহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানে ১২টি আবাসিক হল রয়েছে যার মধ্যে ৮টি ছাত্র হল ও ৪টি ছাত্রী হল। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ১টি হোস্টেল রয়েছে। ছাত্র হল ছাত্রী হল ছাত্রাবাস সংগঠন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ভবনের ৩য় তলায় সাংবাদিক সমিতির অবস্থান। ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর এটির যাত্রা শুরু। শুরু থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্যগণ পদাধিকারবলে সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। চবি সাংবাদিক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট অনুমোদিত একটি সংগঠন। সদস্যরা সরাসরি ভোট দিয়ে সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং অন্যান্য পদ নির্বাচন করেন। ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠার পরে এখন পর্যন্ত মোট ৬ বার চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয় ১৯৭০ সালে। সর্বশেষ ১৯৯০ সালে নির্বাচনের পর এ ছাত্র সংসদের নির্বাচন ২৪ বছর ধরে বন্ধ আছে। সাংস্কৃতিক বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী - চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদ সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চ চবি বন্ধুসভা উত্তরায়ণ সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ লোকজ সাংস্কৃতিক সংগঠন অঙ্গন, চবি সাহিত্য বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি শাখা চবিয়ান পাঠচক্র বিজ্ঞান প্রগতি বিজ্ঞান আন্দোলন বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ বাংলাদেশ ওপেন সায়েন্স অর্গানাইজেশন চবি অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল এসোসিয়েশন রাজনৈতিক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগ গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ বিতর্ক সংগঠন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং সোসাইটি (সিইউডিএস) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অব ডিবেট (সিইউএসডি) ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং ডিপার্টমেন্ট ডিবেট অ্যাসোসিয়েশন রক্তদান সংগঠন কণিকা - একটি রক্তদাতা সংগঠন নওগাঁ ব্লাড সার্কেল, চবি শাখা বিবিধ চবিয়ান দ্বীনি পরিবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (চবিসাস) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় হিস্ট্রি ক্লাব চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব (সিইউসিসি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ ও হাইয়ার স্টাডি সোসাইটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তথ্য প্রযুক্তি সমাজ (সিইউআইটিএস) বিএনসিসি সেনা নৌ ও বিমান শাখা রোভার স্কাউটস সমাবর্তন ১৯৯৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এর পূর্বে ১৯৮১ সালে একটি বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সর্বশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৬ সালের জানুয়ারি ৩১ তারিখ। সম্মানসূচক ডক্টরেট প্রদান উপাচার্যবৃন্দ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরবর্তী এ যাবৎকাল পর্যন্ত মোট ১৯ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য মো. আবু তাহের বিশিষ্ট শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশনা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জার্নাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন গবেষণাপত্র প্রকাশের উন্মুক্ত সাধারণ মাধ্যম। পূর্বে এর নাম ছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় স্টাডিজ। আলাদা পৃথক অনুষদ জন্য এর সাথে প্রত্যয়রূপে অনুষদের নাম যুক্ত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব আর্টস, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব সোশ্যাল সায়েন্স, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব বিজনেস এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নাল অব ল দুই বছর অন্তর প্রকাশিত হয়। এছাড়াও বাংলা বিভাগ থেকে পান্ডুলিপি, ইতিহাস বিভাগ থেকে ইতিহাস পত্রিকা এবং অর্থনীতি বিভাগ থেকে ইকনমিক ইকো পত্রিকা প্রকাশিত হয়। যাতায়াত বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ট্রেন ব্যাবস্থা রয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন একক প্লাটফর্ম বিশিষ্ট দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন। এছাড়াও শিক্ষকদের যাতায়াতের জন্য রয়েছে বাস এবং মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাটল ট্রেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১০টি বগি বিশিষ্ট দুইটি শাটল ট্রেনের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ৯ থেকে ১০ হাজার শিক্ষার্থী শাটল ট্রেনে যাতায়াত করে থাকে। বর্তমানে ট্রেন দুইটি দৈনিক সাতবার চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ও ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন থেকে পুনরায় বটতলি ও ষোলশহর স্টেশন পর্যন্ত নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী যাতায়াত করে। ১৯৮০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের একমাত্র বাহন হিসেবে শাটল ট্রেনের প্রথম যাত্রা শুরু হয়। শাটল ট্রেনের পাশাপাশি কমিউটার ট্রেনের ব্যবস্থাও রয়েছে। চিত্রশালা আরও দেখুন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ ও ইনস্টিটিউটসমূহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের তালিকা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ১৯৬৬-এ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৯৬৬-এ পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হাটহাজারী উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম জেলার বিশ্ববিদ্যালয়
https://en.wikipedia.org/wiki/University_of_Chittagong
University of Chittagong
The University of Chittagong (also known as Chittagong University, abbreviated as CU; Bengali: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, romanized: Caṭṭagrāma Biśbabidyālaẏa) is a public research university located in Hathazari, Chattogram, Bangladesh. It was established on 18 August 1966. It is one of the oldest universities in Bangladesh. Its 2,312.32 acres (935.76 ha) campus is the largest among universities in Bangladesh. It is one of the four autonomous by the act universities of Bangladesh.
2522
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%96%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%A8%E0%A6%BE
খুলনা
খুলনা হলো বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত খুলনা বিভাগের দশটি জেলার বিভাগীয় সদর দপ্তর। এটি খুলনা বিভাগের কেন্দ্রীয় শহর। ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরের পরে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর। এটি বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরগুলার মধ্যে অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা, ভৈরব এবং ময়ুর নদীর তীর জুড়ে অবস্থিত। বাংলাদেশের প্রাচীনতম এবং ব্যস্ততম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা নদী বন্দর অন্যতম। খুলনা বাংলাদেশের অন্যতম শিল্প ও বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় খুলনাকে শিল্প নগরী হিসেবে ডাকা হয়। খুলনার সমুদ্র বন্দর মংলা খুলনা নগরীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে পশুর নদীর তীরে অবস্থিত যেটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং দ্বিতীয় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর যার কারণে খুলনাকে চট্টগ্রামের পর ২য় বৃহত্তম বন্দর নগরীও বলা হয়ে থাকে। ইউনেস্কো স্বীকৃতি প্রাপ্ত পৃথিবীর সর্ব বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন খুলনা জেলার দক্ষিণাংশে অবস্থিত। খুলনাকে সুন্দরবনের প্রবেশদ্বার বলা হয়। রাজধানী ঢাকা থেকে খুলনা শহরের দূরত্ব সড়কপথে পদ্মাসেতু হয়ে ২১২ কি.মি.। রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সংগে স্থলপথ, আকাশপথ, জলপথ ব্যবহার করা যায়। ১৮৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা থেকে খুলনা পর্যন্ত রেলওয়ে পরিসেবা চালু করা হয় যা ছিল খুলনার প্রথম রেলওয়ে, এই রেলপথ টি খুলনা জংশন রেলওয়ে স্টেশন-এর মাধ্যমে খুলনায় প্রবেশ করে।রাজধানী ঢাকার সাথে ১৯১২ সালে খুলনা থেকে নদীপথে ঐতিহাসিক স্টিমার চলাচল শুরু করে।অর্থনৈতিক উন্নতি,ভৌগলিক অবস্থান ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সুবিধার কারণে খুলনা কে বাংলার কুয়েত সিটি বলা হয়। নামকরণ খুলনা সদরের নামে খুলনা বিভাগের নামকরণ করা হয়েছে। প্রচলিত মতানুসারে খুলনা শহর থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ভৈরব নদীর তীরে খুল্লেনেশ্বরী দেবীর মন্দির ছিলো এবং এই দেবীর নামানুসারে খুলনা অঞ্চলের নামকরণ করা হয়েছে। মেট্রোপলিটন থানা দৌলতপুর থানা খালিশপুর থানা খানজাহান আলী থানা সোনাডাঙ্গা থানা কোতোয়ালী থানা লবণচরা থানা আড়ংঘাটা থানা হরিণটানা থানা আবহাওয়া ও জলবায়ু গ্রীষ্মকালে খুলনার আবহাওয়া উষ্ণ এবং আর্দ্র। শীতকালে খুলনা নগরীর আবহাওয়া থাকে কিছুটা শীতল ও মনোরম। খুলনার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা এবং মাসের তাপমাত্রা জানুয়ারিতে এবং মে মাসে এর মাঝে থাকে। খুলনায় বার্ষিক বৃষ্টিপাত । বছরের মোট বৃষ্টিপাতে ৮০ ভাগ সংঘটিত হয় মে এবং অক্টোবর মাসের মাঝামাঝি সময়ে। শিক্ষা খুলনা শহরে ১৯০২ সালে প্রতিষ্ঠিত সরকারি বি. এল কলেজ এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার চাহিদা মিটিয়ে আসছে। ১৯৯১ সালে খুলনাতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও খুলনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। ২০০৩ সালে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় যা পূর্বে বাংলাদেশ ইনিষ্টিটিউট অব টেকনোলজি, খুলনা নামে পরিচিত ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০১২ সালে সর্বপ্রথম নর্থ ওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করে। ২০১৭ সালে যাত্রা করে নর্দান ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি।এছাড়া নগরীর শিরোমণিতে জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।আরও রয়েছে দৌলতপুর দিবা-নৈশ কলেজ,আজম খান কমার্স কলেজ,মজিদ মেমোরিয়াল সিটি কলেজ,সুন্দরবন কলেজ, শাহপুর মধুগ্রাম কলেজ,খুলনা পাবলিক কলেজ,বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ খুলনা,মিলিটারি কলেজিয়েট স্কুল খুলনা(এমসিএসকে),জাহানাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুল এন্ড কলেজ,খুলনা কলেজিয়েট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ,সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পল্লিমঙ্গল বয়েজ ও গার্লস স্কুল, খুলনা জিলা স্কুল, পাইওনিয়ার কলেজ, আফিল উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাইওনিয়ার স্কুল, মন্নুজান স্কুল, রটারি স্কুল,খুলনা কালেক্টরেট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সেন্ট জোসেফ্‌স উচ্চ বিদ্যালয়, সেন্ট জেভিয়ারস স্কুল, খুলনা কলেজিয়েট স্কুল, সরকারি ইকবালনগর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, এছাড়া মাদ্রাসার মধ্যে দারুল কুরআন সিদ্দিকীয়া কামিল মাদ্রাসা-খুলনা, ডব্লিউ এফ এইচ ফাউন্ডেশন স্কুল এ্যন্ড কলেজ, খুলনা সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা খুলনার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে অন্যতম। মাধ্যমিক শিক্ষার পর কারিগরি শিক্ষার জন্য খুলনা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ও সিটি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট আছে।খুলনা পাবলিক কলেজ এছাড়া সাউথ-ইস্ট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ,খুলনা ও অত্র অঞ্চলের বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলার মধ্যে অন্যতম। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান শহিদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল খুলনা বিএনএসবি চক্ষু হাসপাতাল বাংলাদেশ আই হসপিটাল খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পপুলার ডায়াগনস্টিক লিমিটেড ডক্টরস পয়েন্ট স্পেশালাইজড হাসপাতাল ল্যাবএইড হাসপাতাল রাশিদা মেমোরিয়াল হসপিটাল এন্ড ডায়াগনস্টিক নারগিস মেমোরিয়াল হসপিটাল ন্যাশনাল হাসপাতাল খুলনা জেলা সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতাল গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আদ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল খালিশপুর ক্লিনিক শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়,খুলনা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ইত্যাদি। শিল্প ও অর্থনীতি খুলনা দেশের অন্যতম শিল্প নগরী। খুলনাকে বলা হয় রুপালি শহর। খুলনা নগরীর হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি শিল্পের কারণে খুলনা এই নামটি দ্বারা পরিচিত হয়েছে। এখন কৃষির দিক বাদ দিয়ে মানুষের শিল্পের দিকে ঝোক বেশি, তারপরও খুলনার গ্রামাঞ্চলে এখনো নোনা পানি, মিষ্টি পানির বিভিন্ন জাতের চিংড়ি, সাদা মাছ চাষ হচ্ছে। এই কারণে খুলনার গ্রামাঞ্চলে অনেক ঘের দেখতে পাওয়া যায়। খুলনায় বর্তমানে মাছ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে খুলনা মহানগরীতে মংলা সমুদ্র বন্দর যা কিনা দেশের ২য় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর এবং নোয়াপাড়া নদী বন্দর,দেশের সব থেকে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল এবং খুলনার নিজস্ব নদী বন্দরের বদৌলতে এবং পদ্মা সেতুকে ঘিরে খুলনায় একাধিক বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ায় খুলনাঞ্চলের অর্থনীতি শিল্প বাণিজ্য বেশ দ্রুত এগোচ্ছে। পূর্বে খুলনায় সব থেকে বেশি ছিল পাটপাটজাত উৎপাদন শিল্প, তবে বর্তমানে সারা দেশের ন্যায় খুলনায়তেও পাটশিল্পের অবনতি হচ্ছে যদিও এখনো বড় বড় পাট শিল্পকারখানার মধ্যে সব কারখানা বন্ধ হয়নি,এখনো ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।কয়েকটি পাট শিল্প কারখানা পিপিপি এর ভিত্তিতে বেসরকারি খাতে দেওয়ার কারণে অত্র অঞ্চলের শ্রমিক ও সাধারণ মানুষেরা নতুনভাবে স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে।টিকে থাকা বড় পাট কলকারাখানা গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্পিনিং মিলস (সেনহাটি) যা তার উৎপাদন রপ্তানি ও বাজারজাতকরণ ধরে রেখেছে সুনামের সাথে। বর্তমানে খুলনার উল্লেখযোগ্য শিল্প হলো বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা রপ্তানীযোগ্য চিংড়ী মাছ এবং হিমায়িত খাদ্য রপ্তানি শিল্প।দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত তারশিল্প কারখানা বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প লিমিটেড খুলনায় অবস্থিত। খুলনায় বর্তমানে সহজ উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, বন্দর সুবিধা এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব এবং পদ্মা সেতুকে ঘিরে বড় সব প্রকল্প হাতে নেওয়ায় খুলনায় অনেক শিল্প গড়ে উঠছে।নতুন গড়ে ওঠা শিল্পের মধ্যে অন্যতম হলো সিমেন্ট শিল্প ও এক্সপার্ট-ইমপোর্ট শিল্প। এ ছাড়া খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া তে ঐতিহ্যবাহী গ্রাম্য শিল্প বিদ্যমান রয়েছে যেমন মৃৎশিল্প,হস্তশিল্প ইত্যাদি।খুলনাঞ্চলের সব থেকে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প হলো মাদুড় বা পাটি, এটি বেতের তৈরী একধরনের কার্পেট যা মাটিতে বসার ক্ষেত্রে কিংবা অন্যান্য হরেক কাজে লাগে। নদ নদী খুলনায় রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নদী। এখানকার নদীগুলো হচ্ছে: রূপসা নদী ভৈরব নদ ময়ূর নদী শিবসা নদী পশুর নদী কপোতাক্ষ নদ নবগঙ্গা নদী চিত্রা নদী চিত্রা নদী পশুর নদী আঠারোবাঁকি নদী ভদ্রা নদী বুড়িভদ্রা নদী শৈলমারী নদী কাজিবাছা নদী ডাকাতিয়া নদী শাকবাড়িয়া নদী কাঁকরী নদী ঝপঝপিয়া নদী তেলিগঙ্গা-ঘেংরাইল নদী অর্পণগাছিয়া নদী কুঙ্গা নদী মারজাত নদী মানকি নদী বল নদী নলুয়া নদী ঘনরাজ নদী রাস্তাঘাট খুলনা শহরের রাস্তাঘাট মোটামুটি ভালো এবং প্রশস্ত।উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বর্তমানে খুলনা মহানগরীতে বিভিন্ন সড়ক প্রশস্তকরণ এবং ড্রেন ফুটপাত নির্মাণ কাজ চলছে এবং সম্পন্ন হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। মিডিয়া সংবাদপত্র দৈনিক পূর্বাঞ্চল, দৈনিক খুলনাঞ্চল, সময়ের খবর, দৈনিক খুলনা, দৈনিক জন্মভূমি, দৈনিক প্রবাহ, দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন, দৈনিক প্রবর্তন, দৈনিক তথ্য, দৈনিক অনির্বাণ, খুলনা টাইমস, দ্য ডেইলি ট্রিবিউন (ইংরেজি)। বেতার বাংলাদেশ বেতার খুলনা ১০৬.৫ এফএম, রেডিও সুন্দরবন ৯৮.৮ এফএম রেডিও খুলনা ৮৮.৮ এফএম। রেডিও স্ফূর্তি ৮৮.০ এফএম রেডিও টুডে ৮৯.৬ এফএম খুলনা টিভি খেলাধুলা বর্তমানে খুলনা শহরের তরুনদের মাঝে জনপ্রিয় খেলা হচ্ছে ক্রিকেট,ফুটবল এবং ব্যাডমিন্টন। খুলনা বিভাগের খুলনা বিভাগীয় ক্রিকেট দল একটি প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট দল। টুয়েন্টি২০ ক্রিকেট, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ এ খুলনার প্রতিনিধিত্ব করে খুলনা টাইগার্স। খুলনা আবাহনী ক্লাব খুলনার অন্যতম ফুটবল দল। অধুনা শেখ আবু নাসের স্টেডিয়াম (প্রাক্তন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়াম) খুলনার একমাত্র আন্তঃর্জাতিক ক্রীড়া ভেন্যু। এই মাঠকে ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর দেশের সপ্তম টেস্ট ক্রিকেট ভেন্যু হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই মাঠে টেস্ট ক্রিকেট, একদিনের আন্তর্জাতিক এবং আন্তর্জাতিক টুয়েন্টি২০ ক্রিকেটের আয়োজন করা হয়। খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়ামে অন্যান্য খেলার আয়োজন করা হয়। দর্শনীয় স্থান খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর খানজাহান আলী সেতু জাহানাবাদ বনবিলাস চিড়িয়াখানা ও শিশু পার্ক খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় উল্লাস এমিউজমেন্ট পার্ক ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক রানা রিসোর্ট এন্ড এমিউজমেন্ট পার্ক শহীদ হাদিস পার্ক জাতিসংঘ পার্ক ভরত ভায়না গল্লামারী লিনিয়ার পার্ক কেডিএ ময়ূরী আবাসিক এলাকা কবি কৃষ্ণ চন্দ্র ইনস্টিটিউট দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স গল্লামারী বধ্যভূমি বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিনের সমাধি সোনাডাঙ্গা সোলার পার্ক শেখ রাসেল ইকো পার্ক রানা রিসোর্ট এমিউজমেন্ট ওয়াটার পার্ক মংলা বন্দর সুন্দরবন কুয়েট </div> উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ খান জাহান আলী মিয়া গোলাম পরওয়ার - সাবেক এমপি, সাংবাদিক এবং শিক্ষাবিদ এস এম মোস্তফা রশিদী সুজা - জনপ্রিয় রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব, সাবেক এমপি ও হুইপ নারায়ন চন্দ্র চন্দ- এমপি ও মন্ত্রী হারুনুর রশিদ- রাজনীতিবিদ। প্রফুল্ল চন্দ্র রায় - বিজ্ঞানী হরপ্রসাদ শাস্ত্রী - চর্যাপদের আবিষ্কর্তা আশু মহণ শেখ- ইসলাম প্রচারক, ভূস্বামী ও দানবীর শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত - নাট্যকার কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদার - কবি ইন্দুভূষণ রায় - বিপ্লবী মৃণালিনী দেবী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সহধর্মিনী এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ - ১৭তম বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধান মৌসুমী - চিত্রনায়িকা পপি - চিত্রনায়িকা ক্রিকেটার শেখ সালাহউদ্দিন - সাবেক ক্রিকেটার ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাক - ক্রিকেটার রুমানা আহমেদ - একজন বাংলাদেশী মহিলা ক্রিকেটার জাহানারা আলম - একজন বাংলাদেশী মহিলা ক্রিকেটার শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় - বাঙালি সাহিত্যিক ও সম্পাদক মেহেদী হাসান মিরাজ - ক্রিকেটার শুকতারা রহমান - ক্রিকেটার আয়শা রহমান - মহিলা ক্রিকেট খেলোয়াড় পূজা চেরি - চিত্রনায়িকা সালমা খাতুন - ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান ক্রিকেটার আরও পড়ুন সুন্দরবন খুলনা বিভাগ খুলনা জেলা খুলনা সিটি করপোরেশন খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ খুলনা শিপইয়ার্ড খুলনা নদীবন্দর মংলা বন্দর বানৌজা তিতুমীর জাহানাবাদ সেনানিবাস খুলনা রেলওয়ে স্টেশন দক্ষিণবঙ্গ খান জাহান আলী বিমানবন্দর বাংলাদেশের জেলাসমূহ তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ খুলনা সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের শহর খুলনা খুলনা বিভাগের জনবহুল স্থান
https://en.wikipedia.org/wiki/Khulna
Khulna
Khulna (Bengali: খুলনা, [ˈkʰulna]) is the third-largest city in Bangladesh, after Dhaka and Chittagong. It is the administrative center of the Khulna District and the Khulna Division. Khulna's economy is the third-largest in Bangladesh, contributing $53 billion in gross regional domestic product and $95 billion in purchasing power parity (PPP) in 2020. In the 2024 census, the city corporation area had a population of 884,445. Khulna is on the Rupsha and Bhairab River, a strategic point in southwestern Bangladesh. It is also a center of Bangladeshi industry, hosting many of the nation's largest companies. It is served by the Port of Mongla, Bangladesh's second-largest seaport. A colonial steamboat service, which includes the Tern, Osrich and Lepcha, operates on the river route to the city. Khulna is considered the gateway to the Sundarbans, the world's largest mangrove forest and home of the Bengal tiger. It is north of the Mosque City of Bagerhat, a UNESCO World Heritage Site.
2523
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%95%E0%A7%81%E0%A6%AE%E0%A6%BF%E0%A6%B2%E0%A7%8D%E0%A6%B2%E0%A6%BE
কুমিল্লা
কুমিল্লা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত একটি মহানগরী। নগরীর পাশেই রয়েছে গোমতী নদী। প্রাচীন বাংলার শহরগুলোর মধ্যে কুমিল্লা ছিলো অন্যতম। এছাড়াও কুমিল্লা শহর একসময় ত্রিপুরা রাজ্যের রাজধানী ছিল। কুমিল্লা শহরের ডুলিপাড়া এলাকায় রয়েছে কুমিল্লা বিমানবন্দর। বিমানবন্দরের সাথে গড়ে উঠেছে কুমিল্লার ইকোনমিক জোন ইপিজেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা। ফলে বিমানবন্দর এলাকা হয়ে উঠেছে ব্যবসা বাণিজ্যিক একটি শহর। কুমিল্লা শহর একটি বিভাগ কেন্দ্রীক শহর। এই জেলার আশেপাশের জেলাগুলো থেকে অনেক লোকজন কুমিল্লায় আসেন বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে। এছাড়াও কুমিল্লা শহরের ৫ কিলোমিটার দূরে রয়েছে বিবির বাজার স্থলবন্দর। ডিজিটাল জনশুমারী ও গৃহগণনা- ২০২২ অনুযায়ী কুমিল্লা আয়তন এবং জনসংখ্যায় দেশের ১১তম বৃহত্তর মহানগর। ভৌগোলিক অবস্থান কুমিল্লা ভৌগোলিকভাবে ২৩°২৭′০″ উত্তর এবং ৯১°১২′০″ পূর্বে অবস্থিত। কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩°৫') কুমিল্লা শহরের দক্ষিণ দিকে টমসম ব্রিজের উপর দিয়ে অতিক্রম করেছে। এর উত্তরে বুড়িচং ও ত্রিপুরা, দক্ষিণে লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম এবং পশ্চিমে বরুড়া অবস্থিত। কুমিল্লার উপর দিয়ে যেসব নদী প্রবহমান, সেগুলোর মধ্যে গোমতী ও ছোট ফেনী উল্লেখযোগ্য। ইতিহাস কুমিল্লা শব্দটি উক্ত অঞ্চলের আদিনাম কমলাঙ্ক (চীনা পরিব্রাজক ওয়াং চুয়াং-এর মতে, কিয়া-মল-ঙ্কিয়া) এর ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত আঞ্চলিক অপভ্রংশ রূপ, যার অর্থ পদ্মফুলের দীঘি। কুমিল্লা অঞ্চলটি একসময় প্রাচীন সমতট অঞ্চলের অধীনে ছিল। পরবর্তীকালে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের সাথে যোগ দেয়। খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে কুমিল্লা জেলা হরিকেল অঞ্চলের রাজাদের অধীনে আসে। অষ্টম শতাব্দীতে লালমাই ময়নামতি দেব বংশ এবং দশম থেকে একাদশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত চন্দ্র বংশের শাসনাধীনে ছিল। ১৭৬৫ সালে এ অঞ্চলটি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে আসে। ১৭৬৯ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে কোম্পানী একজন তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ করে। তখন ঢাকা প্রদেশের অন্তর্গত ছিল কুমিল্লা। কুমিল্লাকে ১৭৭৬ সালে কালেক্টরের অধীনস্থ করা হয়। ১৭৯০ সালে কোম্পানী শাসনামলে ত্রিপুরা নামের জেলার সৃষ্টি হয় করা হয়। তৎকালে বর্তমান কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, শাহবাজপুর, হাতিয়া, ত্রিপুরার কিছু অংশ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই নিয়ে সমতল অঞ্চল নিয়ে ত্রিপুরা জেলা ও পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে পার্বত্য ত্রিপুরা নামে ভাগ করা হয়, এই জেলার সদর দপ্তর স্থাপিত হয় কুমিল্লায়। ১৮২১ সালে ত্রিপুরা জেলাকে ভাগ করে বর্তমান নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষীপুর নিয়ে ভূলুয়া জেলা গঠিত হয়, যা পরবর্তীতে নোয়াখালী নামকরন করা হয়। ১৯৬০ সালে সদর দপ্তরের নামানুসারে ত্রিপুরা জেলার নামকরণ করা হয় কুমিল্লা এবং তখন থেকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও কালেক্টর পদটির নামকরণ জেলা প্রশাসক করা হয়। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লার দু'টি মহকুমা চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াকে পৃথক জেলা হিসেবে পুনর্গঠন করা হয়। ঐতিহাসিক ঘটনা ১৭৬৪ সালে ত্রিপুরার রাজার বিরুদ্ধে শমসের গাজীর নেতৃত্বে পরিচালিত কৃষক আন্দোলন এ অঞ্চলের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেও শমসের গাজী সম্পূর্ণ চাকলা রওশানাবাদ অঞ্চলের শাসক হয়েছিলেন, যা পরবর্তীকালে দক্ষিণ কুমিল্লা থেকে উত্তর নোয়াখালী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এক সময় তিনি সমগ্র কুমিল্লাকে তার শাসনাধীনে নিয়ে আসেন। পরবর্তীকালে তিনি নিজামপুর পরগনা জয় করেন। এভাবে, তিনি মেঘনা, মুহুরি ও মনুগঙ্গা নদীসমূহের মধ্যবর্তী বিশাল জনপদের মুকুটবিহীন রাজায় পরিণত হন। শমসের গাজী ১৭১২ সালে উত্তর চট্টগ্রামের দক্ষিণ শিক পরগনার কুঙ্গুরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যা পরবর্তীকালে ত্রিপুরার মানিক রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্থানীয় জমিদার নাসির মোহাম্মদের অফিসে তেহশিলদার হিসেবে কাজ করার সময় তিনি একজন স্বর্গীয় পীরের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। শিশুকাল থেকেই শমসের গাজী ছিলেন সাহসী এবং বুদ্ধিমান। তৎকালীন সময়ে চাকলা রওশানাবাদ ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে ছিল। এর জমিদার ছিলেন নাসির মাহমুদ। নাসির মাহমুদ শমসেরকে অত্যন্ত যত্নের সাথে বড় করে তোলেন। কিন্তু তরুণ বয়সে শমসের অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী ছিলেন। তিনি জমিদারের কন্যাকে বিবাহ করতে চাইলে, তার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং তাকে বন্দী করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে শমসের গাজী একটি সশস্ত্র বাহিনী গঠন করেন। এর মাধ্যমে ১৭৪৫ সালে তিনি নাসির মাহমুদের রাজ্য দখল করেন। ব্রিটিশ শাসনামলের শুরুর দিকে, জমিদারী প্রথা কৃষকদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। শমসের গাজী ছিলেন বিজ্ঞ, যোগ্য, দয়ালু এবং উদার শাসক। তিনি দরিদ্র কৃষকদের কষ্ট লাঘবের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হন। ফলে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমতে থাকে। তিনি হিন্দু মুসলমান কৃষকদের জন্য নিষ্কর ভূমির ব্যবস্থা করেন। তিনি রাজধানী জগন্নাথ সোনাপুরের ভিতরে ও বাইরে বহু সংখ্যক দীঘি খনন করেন এবং বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি যেসব দীঘি স্থাপন করেছিলেন, তার মধ্যে 'কাইয়ার সাগর' ছিল সবচেয়ে বড়। দক্ষিণ শিক এবং মেহেরকুল পরগনার শাসক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে, শমসের ত্রিপুরার দিকে মনোনিবেশ করেন এবং ১৭৪৮ সালে রাজা কৃষ্ণ মানিক্যকে বেশ কয়েকটি যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করে তাকে রাজ্য থেকে বিতাড়িত করে ত্রিপুরা দখল করেন। তবে রাজ্যের পাহাড়ী উপজাতিরা কৃষ্ণ মানিক্যের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং শমসেরের প্রবল বিরোধিতা করে। কৃষ্ণ মানিক শমসের গাজীকে মোকাবেলা করার জন্য কুকি সৈন্যদের দুইটি শক্তিশালী অভিযান দল পাঠান। কিন্তু শমসেরের অসাধারণ রণকৌশল ও বীরত্বের কাছে দুইটি অভিযানই ব্যর্থ হয়। শমসের গাজী ত্রিপুরার রাজধানী উদয়পুর দখল করেন। এরপর তিনি আগরতলা যান এবং নবাব মীর কাসিমের প্রতিরক্ষা বুহ্য ভেদ করার প্রচেষ্টা চালান। কিন্তু মীর কাসিম শমসেরকে আলোচনার জন্য মিথ্যা আমন্ত্রণ জানান এবং তার আহবানে সাড়া দিতে গিয়ে ১৭৬০ সালে শমসের গাজী নিহত হন। এভাবে কৃষ্ণ মানিক তার হারানো রাজ্য পুনরুদ্ধার করেন। ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গের সময় কুমিল্লা শহরে গুলিবর্ষণে একজন মুসলমান নিহত হলে, পুরো কুমিল্লা জুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা বিস্তৃত হয়। ১৯২১ সালের ২১ নভেম্বর দেশব্যাপী হরতাল পালনের প্রস্তুতিগ্রহণের সময়, এখানে কাজী নজরুল ইসলাম দেশাত্মবোধক গান রচনা করেন এবং প্রিন্স অফ ওয়েলসের ভারত সফরের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলেন। এই সময়ে, দেশের জাতীয়তাবাদী সংগঠন অভয় আশ্রম একটি বিপ্লবী প্রতিষ্ঠান রূপে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মহাত্মা গান্ধী এই সময়েই কুমিল্লা সফর করেন। ১৯৩১ সালে, চৌদ্দগ্রাম উপজেলার মোহিনি গ্রামে চার হাজারেরও বেশি কৃষক একটি ভূমি রাজস্ব করের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। ব্রিটিশ গুর্খা সৈন্যরা সমবেত কৃষক জনতার উপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করলে চারজন নিহত হয়। ১৯৩২ সালে লাকসাম উপজেলার হাসনাবাদে আরেকটি কৃষক সমাবেশে পুলিশ গুলি চালালে দুইজন নিহত হয় এবং বহুসংখ্যক আহত হয়। ১৯৩১ সালের ১৪ ডিসেম্বর ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী সুনীতি চৌধুরী ও শান্তি ঘোষ গুলি করে ম্যাজিস্ট্রেট স্টিভেন্সকে হত্যা করে। স্বাধীনতা আন্দোলনে কোন নারীর অংশগ্রহণ সেবারই প্রথম ঘটে। কুমিল্লার যেসব স্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ের গণহত্যার চিহ্ন বহন করে চলেছে সেগুলো হলঃ লাকসাম, কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট, হোমনা, বেলতলী ও রসুলপুর। এছাড়াও বেতিয়ারা, মোজাফফরগঞ্জ, নাগারিপাড়া, ক্যান্টনমেন্ট, কৃষ্ণপুর, ধনাঞ্জয়, দিলাবাদ ও লাকসাম বিডি ফ্যাক্টরি এলাকায় গণকবর পাওয়া গেছে।কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ, বেতিয়ারা, পুলিশ লাইন, ক্যান্টনমেন্ট, লাকসাম, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশন এবং হারাতলীতে শহীদদের উদ্দেশ্যে নির্মিত স্মৃতিসৌধ রয়েছে। এছাড়া যুদ্ধের সময় বহু মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে এনে চৌদ্দগ্রাম হরিশ্চর ব্রিজের ওপর নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে বস্তার ভেতর ভরে বস্তার মুখ বন্ধ করে ব্রিজের ওপর থেকে খালের পানিতে ফেলে দেয়া হয়। তাদের একজনও বাঁচতে পারেননি। কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থানার চেহরিয়া গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ডা. লুৎফর রহমানের বাড়ি থেকে ২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ধরে নিয়ে যায় রাজাকাররা। তাদের একজন পালাতে সক্ষম হলেও আরেকজনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে রাজাকার বাহিনী। প্রশাসন অন্যান্য জেলাসমূহের মত, কুমিল্লা জেলাতেও একজন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) বা জেলা প্রশাসক আছেন, যিনি জেলার সকল প্রশাসনিক কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় শহরের ধর্মসাগরের পূর্বদিকে ফৌজদারী এলাকায় অবস্থিত। কুমিল্লা মূল শহরটি আদর্শ সদর থানার অন্তর্ভুক। কুমিল্লা সেনানিবাস বাংলাদেশের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ভারতীয় আর্মি ব্যাপকভাবে ক্যান্টনমেন্টটিকে ব্যবহার করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর এখানে রয়েছে। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কুমিল্লা পরিচালিত হয়। এর ২৭টি ওয়ার্ড রয়েছে। কুমিল্লা শহরের কিছু এলাকা হল: নাথেরপেটুয়া বাগমারা বড়পাড়া বেলঘর ভোলাইন (উত্তর) ভোলাইন (দক্ষিণ) বিজয়পুর চাপাপুর দুর্লভপুর চৌয়ারা গালিয়ারা পূর্ব জোড়কানন পশ্চিম জোড়কানন পেরুল (উত্তর) পেরুল (দক্ষিণ) জলবায়ু কুমিল্লা শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬ মিটার/১৯ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। মাসভিত্তিক ২৪ ঘণ্টার গড় তাপমাত্রা: জনসংখ্যা কুমিল্লা নগরের জনসংখ্যা হল ৭ লাখের বেশি এবং মহানগরের জনসংখ্যা প্রায় ৮ লাখ। ভূমি ও অর্থনীতি প্রধান পেশাঃ কৃষিকাজ ৩৩.২৮%, ব্যবসা ১৭.৬%, চাকরি ১৯.৭৮%, কৃষি শ্রমিক ১০.৮৯%, দিনমজুর ১.৪৬%, নির্মাণ শ্রমিক ১.০৩% এবং অন্যান্য ১১.৬%। ১০.০৭%(প্রায়) মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। ব্যবহারযোগ্য ভূমিঃ মোট আবাদযোগ্য জমি ২৪৩৫৯৬.৯৩ হেক্টর; একফসলা জমি ১৮.০৫%, দোফসলা জমি ৬৩.৯৯% এবং ত্রিফসলা জমি ১৭.৯৬%। ভূমি নিয়ন্ত্রণঃ কৃষকদের মধ্যে ৫৬% ভূমিহীন কৃষক, ২০% ছোট কৃষক, ২০% মধ্যম কৃষক এবং ৪% ধনী কৃষক। ভূমির মূল্যঃ ভাল মানের প্রতি শতাংশ ভূমির বাজারমূল্য হচ্ছে ১২৫০০ টাকা। প্রধান ফসলঃ ধান, পাট, গম, তেলবীজ, বেগুন ইত্যাদি। প্রধান ফলঃ আম, কাঁঠাল, কলা, নারিকেল, তাল, পেয়ারা ও কালোজাম। ফিশারি, ডেইরি ও পোলট্রিঃ ডেইরি ২৮ টি, পোলট্রি ১০৯ টি, ফিশারি ২৭ টি, হ্যাচারি ৬৯ টি ও নার্সারি ২০০ টি। শিল্পকারখানাঃ সপ্তদশ শতকের শেষার্ধে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ অঞ্চলের চার্পাতা নামক স্থানে একটি কটন মিল স্থাপন করে। বর্তমানে কুমিল্লার খদ্দর কাপড় সারা দেশে অত্যন্ত বিখ্যাত। হাট ও বাজার এবং মেলাঃ কুমিল্লার শহরের প্রধান প্রধান হাট ও বাজারসমূহ হচ্ছেঃ চকবাজার, রাজগঞ্জ, বাদশামিয়া বাজার, রানীর বাজার, বৌ বাজার, টমচমব্রীজ, গোলমার্কেট, পদুয়ার বাজার ইত্যাদি। বিখ্যাত মেলাসমূহের মধ্যে ময়নামতি মেলা, পুনরা মেলা, চন্দলা মেলা, বায়রা মেলা, বেতাখালী মেলা, ঠান্ডা কালিবাড়ি মেলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। প্রধান রপ্তানী পণ্যঃ খদ্দর কাপড়, শুটকি, ডিম, পোলট্রি। যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা কুমিল্লার যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত উন্নতমানের। উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সড়ক গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড কুমিল্লা শহরের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। বর্তমানে, বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক ঢাকা- কুমিল্লা - চট্টগ্রাম মহাসড়ক কুমিল্লা শহরের পাশ দিয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব ৯৭ কিলোমিটার। সড়ক অথবা রেলপথের মাধ্যমে ভ্রমণ করা যায়। তবে রেলপথে ঢাকা থেকে কুমিল্লা যেতে মোট ১৯৭ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। স্থানীয় প্রশাসন আরএইচডি, এলজিইডি ও সিটি কর্পোরেশন সকল রাস্তা তদারকি করে থাকে। কুমিল্লাতে আরএইচডি এবং এলজিইডি'র আঞ্চলিক সদর দপ্তর রয়েছে। কুমিল্লায় একটি অব্যবহৃত বিমানবন্দর রয়েছে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা যুদ্ধবিমান উঠা-নামা করার জন্য বানিয়েছিল। আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালটি আশ্রাফপুর, টমসমব্রীজ, শাসনগাছা ও চকবাজারে অবস্থিত এখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, নোয়াখালী, চাঁদপুর এর বাস ছেড়ে যায় । শিক্ষা আগে কুমিল্লাকে বলা হতো শিক্ষানগরী। কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা শহরে অবস্থিত। কুমিল্লাসহ বেশ কয়েকটি জেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা এই বোর্ডের অধীনে পরিচালিত হয়। আগে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম বিভাগ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ছিল। সাম্প্রতিককালে, আলাদাভাবে চট্টগ্রাম ও সিলেট শিক্ষা বোর্ড গঠিত হয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লায় শিক্ষার হার ৭০% (২০১১ সালের শিক্ষা জরিপ)। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কুমিল্লাতে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে রয়েছে: বিশ্ববিদ্যাল প্রতিষ্ঠানসমূহ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ আর্মি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিসিএন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় উম্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ ময়নামতি মেডিকেল কলেজ আর্মি মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা ইস্টার্ণ মেডিকেল কলেজ সেন্ট্রাল মেডিকেল কলেজ প্রকৌশল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ সার্ভে ইনস্টিটিউট সিসিএন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কুমিল্লা প্রাইভেট পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট জেনেটিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কলেজ সমূহ কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ সোনার বাংলা কলেজ পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজ ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা কুমিল্লা সরকারি কলেজ কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজ কুমিল্লা সরকারি সিটি কলেজ কুমিল্লা মডেল কলেজ ভোলাইন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ কুমিল্লা অজিত গুহ মহাবিদ্যালয় রূপসী বাংলা কলেজ কুমিল্লা বিজ্ঞান কলেজ কুমিল্লা সিটি কলেজ কুমিল্লা কমার্স কলেজ কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড সরকারি কলেজ ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ কুমিল্লা রেসিডেনশিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, কুমিল্লা সেনানিবাস কুমিল্লা মহিলা মহাবিদ্যালয় বিদ্যালয় সমূহ কুমিল্লা জিলা স্কুল নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় নাথেরপেটুয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় নাথেরপেটুয়া ফাজিল ডিগ্রী মাদরাসা বেলঘর গোসাই বাজার উচ্চ বিদ্যালয় শাকেরা রজ্জব আলী উচ্চ বিদ্যালয় আওয়ার লেডি অব ফাতিমা গার্লস স্কুল কুমিল্লা কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালক উচ্চ বিদ্যালয় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড মাধ্যমিক বিদ্যালয় কুমিল্লা হাই স্কুল কুমিল্লা মডার্ণ হাই স্কুল বুড়িচং আনন্দ পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ফরিদা বিদ্যায়তন ঈশ্বর পাঠশালা দুর্লভপুর হাই স্কুল,কুমিল্লা বিবিরবাজার হাই স্কুল কুমিল্লা পাইলট হাইস্কুল ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ, কুমিল্লা ময়নামতি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ হাউজিং এস্টেট উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ হলি ক্রিসেন্ট হাই স্কুল রেলওয়ে পাবলিক স্কুল, কুমিল্লা বেপজা পাবলিক স্কুল, কুমিল্লা হাজী আকরামউদ্দীন উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ শাকতলী উচ্চ বিদ্যালয় পুলিশ লাইন হাইস্কুল, কুমিল্লা কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ মনোহরপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরী উচ্চ বিদ্যালয় চাঁদপুর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় শেখ ফজিলাতুন্নেসা মর্ডাণ হাইস্কুল কুমিল্লা আলিয়া মাদ্রাসা কুমিল্লা নার্সিং কলেজ কুমিল্লা আইন কলেজ বঙ্গবন্ধু আইন কলেজ কুমিল্লা মেডিকেল এসিসটেন্ট ট্রেনিং স্কুল শেখ রাসেল টেকনিক্যাল কলেজ এথনিকা স্কুল (ইংরেজি মাধ্যম) কুমিল্লা গ্রামার স্কুল ময়নামতি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল চৌদ্দগ্রাম এইচ,জে মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মিঞা বাজার কলেজ মুন্সীরহাট প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান ডিগ্রি কলেজে আলহাজ্ব নূর মিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ,চৌদ্দগ্রাম(মেঘনা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজ) নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ, লাকসাম লাকসাম পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় নবাব ফয়জুন্নেছা ও বদরুন্নেসা যুক্ত উচ্চ বিদ্যালয়, লাকসাম কাশীপুর হাসেমিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, হোমনা চান্দিনা সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় পর্যটন কুমিল্লাতে বহুসংখ্যক পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে। কুমিল্লার লালমাই ময়নামতি পাহাড়ে একটি সমৃদ্ধ প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন রয়েছে। এখানে রয়েছে শালবন বিহার, কুটিলা মুড়া, চন্দ্রমুড়া, রূপবন মুড়া, ইটাখোলা মুড়া, সতের রত্নমুড়া, রাণীর বাংলার পাহাড়, আনন্দ বাজার প্রাসাদ, ভোজ রাজদের প্রাসাদ, চন্ডীমুড়া প্রভৃতি। এসব বিহার, মুড়া ও প্রাসাদ থেকে বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে যা ময়নামতি জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। ময়নামতি একটি বিখ্যাত বৌদ্ধ প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা। ময়নামতি জাদুঘরটি একটি অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। ১৯২১ সালে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও ভারতের নেতা মহাত্মা গান্ধী কুমিল্লায় এসেছিলেন। কুমিল্লাতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নিহত বিভিন্ন দেশের সৈন্যদের কবর ও ওয়ার সেমেট্রি রয়েছে। বতর্মানে রাজশে পুর ইকোপার্ক এবং তদসংলগ্ন বিরাহিম পুরের সীমান্তবর্তী শাল বন পর্যটন স্পট হিসেবে ব্যপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গ মঈনুল হোসেন- বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা। মহাস্থবির শীলভদ্র(৫২৯-৬৫৪)- বৌদ্ধশাস্ত্রের একজন শাস্ত্রজ্ঞ - দার্শনিক, নালন্দা বিহারের প্রধান। নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী (১৮৩৪-১৯০৪)- লেখিকা, নারী শিক্ষার অগ্রদূত, দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা নওয়াব, ফয়জুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। কামিনী কুমার দত্ত (১৮৭৮-১৯৫৮)- সাবেক মন্ত্রী। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত (১৮৮৬-১৯৭১)- সাবেক আইনমন্ত্রী, ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ও ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদ। ভাষা বীর ও মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ (১৯২০-২০০৫) ওস্তাদ আলী আকবর খান (১৯২২-২০০৯)- শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতের একজন অন্যতম পরিপূর্ণ সঙ্গীতজ্ঞ। বশিরুল আলম মিয়াজী (১৯৭০-বর্তমান)- বিশিষ্ট শিল্পপতি ও রাজনীতিবিদ। কাজী জাফর আহমেদ (১৯৩৯-২০১৫)- সাবেক প্রধানমন্ত্রী। আবদুল খালেক বাংলাদেশের প্রথম পুলিশের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আব্দুল মালেক বাংলাদেশের অন্যতম একজন ইসলামি ফিকাহশাস্ত্রবিদ। মোহাম্মদ নুরুল আমিন- বীর উত্তম। চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কৃতি সন্তান। মুজিবুল হক মুজিব (১৯৪৭- )- সাবেক রেলপথ মন্ত্রী। আফজল খান (১৯৪৫-২০২১ )- রাজনীতিবিদ ও বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। আ হ ম মোস্তফা কামাল (১৯৪৭- )- বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী ও ২০১৪-১৫ মেয়াদে আইসিসি’র সভাপতি। আ. ক. ম. বাহাউদ্দিন বাহার– রাজনীতিবিদ ,তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। খন্দকার মোশতাক আহমেদ (১৯১৮-১৯৯৬)- বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি, সাবেক মন্ত্রী ও মুজিবনগরে গঠিত প্রথম মন্ত্রীসভার সদস্য। ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, সাবেক আইনমন্ত্রী সমাজসেবক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী- বাংলাদেশের ১৪ তম রাষ্ট্রপতি তাজুল ইসলাম (রাজনীতিবিদ) - স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী। মহেশচন্দ্র ভট্টাচার্য্য (১৮৫৪-১৯৪৪) সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি শিক্ষাবিদ ও গবেষক ফজলুল হালিম চৌধুরী - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর। ডক্টর শামসুল হক - ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস-চ্যান্সেলর। মীজানুর রহমান (শিক্ষাবিদ)- উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু (১৯০৮-১৯৭৪)- বিখ্যাত বাংলা কবি, ঔপন্যাসিক, অনুবাদক ও সম্পাদক। আব্দুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪)- গবেষক, কবি ও সম্পাদক। আব্দুল মতিন খসরু, সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য রকিব হাসান গোয়েন্দাকাহিনী লেখক সঙ্গীত শচীন দেববর্মণ (১৯০৬-১৯৭৫)- এস ডি বর্মণ নামে পরিচিত, গায়ক, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। জান-এ-আলম চৌধুরী (১৮৮৪-১৯৬৭)- তবলাবাদক। ওস্তাদ মোহাম্মদ হুসাইন খসরু (১৯০৩-১৯৫৯)- ক্লাসিকাল সঙ্গীতের গায়ক ও সুরকার। হিমাংশু দত্ত (১৯০৮-১৯৪৪) - সুরকার ও গায়ক। রাহুল দেব বর্মণ - আর ডি বর্মণ নামে পরিচিত, এস ডি বর্মণের ছেলে, সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক। সুরেন্দ্র নারায়ণ দাশ, (১৯০৮-১৯৮৬) শাস্ত্রীয় সঙ্গীত বিশারদ সুধীন দাশ ব্রজলাল অধিকারী- গণসংগীত শিল্পী ও শহীদ। অলকা দাশ, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী আসিফ আকবর মোহাম্মদ আবুল হাশেম রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধা। অন্যান্য মেজর আব্দুল গণি- ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা। কৈলাশচন্দ্র সিনহা (১৮৫১-১৯১৪)- ঐতিহাসিক, রাজমালা বই এবং বহু ইতিহাস সম্পর্কিত প্রকাশনার গ্রন্থকার। এয়ার ভাইস মার্শাল জামাল উদ্দিন আহমেদ- বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর সাবেক চিফ এয়ার স্টাফ। গণমাধ্যম কুমিল্লায় স্থানীয়ভাবে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র ও অনলাইন পত্রিকা রয়েছে রয়েছে। প্রচিনতম পত্রিকার মধ্যে আমোদ, দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে রয়েছে দৈনিক কুমিল্লার কাগজ, দৈনিক শিরোনাম  এছাড়া কুমিল্লার বার্তা অনলাইন, দৈনিক রূপসী বাংলা, দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও চান্দিনা উপজেলা থেকে প্রকাশিত চান্দিনা প্রতিদিন প্রভৃতি। সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে সাপ্তাহিক আমোদ, মেগোতী, কথক, কুমিল্লা সাহিত্য পরিষদ পত্রিকা, সময়ের পথ উল্লেখযোগ্য। কিছু মাসিক পত্রিকাও এখানে রয়েছে। এছাড়াও দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রথম সারির সব সংবাদপত্রই এখানে পাওয়া যায়। কুমিল্লাতে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠনও রয়েছে। তথ্য গ্রন্থ ও সাময়িকী স্মৃতির মিনার, এডভোকেট এস এম মোফাখখর, সাবেক সভাপতি সুপ্রিমকোর্ট বার এসোসিয়েশন আলোকিত কুমিল্লা, নজরূল ইসলাম দুলাল, সাংবাদিক মুক্তির সংগ্রামে কুমিল্লা, আবুল কাসেম হৃদয়, সাংবাদিক সাপ্তাহিক স্বন্দীপ, ২১শে সংখ্যা ১৯৮৯ইং সাপ্তাহিক নগরী, ২১শে সংখ্যা ১৯৮৯ইং জীবন বৃত্তান্ত অভিধান, বাংলা একাডেমি প্রণিত। মহাস্থবির শিলাভদ্র, শহীদুল্লাহ মৃধা রচিত। মাসিক কোরক ১৯৪৭ ইং ভাষা বীর ও মুক্তিযোদ্ধা কবি শহীদুল্লাহ সম্পাদিত। </div> তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ বাংলাদেশের শহর কুমিল্লা ত্রিপুরার ইতিহাস ৮ম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত
https://en.wikipedia.org/wiki/Comilla
Comilla
Comilla (; Bengali: কুমিল্লা, Bengali pronunciation: [kumilla]), officially spelled Cumilla, is a metropolis on the banks of the Gomti River in eastern Bangladesh. Comilla was one of the cities of ancient Bengal. It was once the capital of Tripura kingdom. Comilla Airport is located in the Dulipara area of Comilla city. Along with the Comilla Economic Zone EPZ, various industrial factories have come up at the airport, making the airport area a business and commercial city. Comilla City is a division centered city district with surrounding districts coming to Comilla in more diverse areas of work. Bibir Bazar land port is located 5 km away from Comilla city. The area of Comilla City Corporation is 53.04 square kilometers, so the surrounding areas of the main city fall under the jurisdiction of the City Corporation. The urban areas falling outside the city corporation are considered as suburbs with a population of 600,000.
2524
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AC%E0%A6%97%E0%A7%81%E0%A6%A1%E0%A6%BC%E0%A6%BE
বগুড়া
বগুড়া বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের বগুড়া জেলার একটি শিল্প ও বাণিজ্যিক শহর। এটি রাজশাহী বিভাগ-এর অন্তর্গত একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। বগুড়া শহরে "শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম" নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে; এছাড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) শহর থেকে সামান্য দূরেই অবস্থিত। বগুড়া দইয়ের জন্য খুব বিখ্যাত। বগুড়া শহরে থেকে ১১ কি.মি. উত্তরে মহাস্থানগড় অবস্থিত, যা একসময় প্রাচীন বাংলার রাজধানী ছিল এবং সেসময় পুণ্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্ৰথমে ১ নং এবং পৱে নিজ হাতে গড়া বাংলাদেশ ফোৰ্সেস সেক্টর ১১ এৱ ফোৰ্স কমান্ডার এবং জেড ফোর্স ব্ৰীগেড কমান্ডাৱ লেঃ কৰ্ণেল জিয়াউর রহমান বগুড়া জেলার গাবতলী উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের রাজধানী বলা হয়। বগুড়া উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান শহর । ইতিহাস ইতিহাস থেকে জানা যায় বাংলার প্রাচীনতম একটি নগরী বগুড়া। মৌর্যযুগে এটি পুণ্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত ছিল। বগুড়ার প্রাচীন নাম পৌণ্ড্রবর্ধন ও এটি বরেন্দ্রভূমি বলে খ্যাত অঞ্চলের অংশবিশেষ। আজকের রাজশাহীও এই অঞ্চলভুক্ত ছিল। অঞ্চলটি ৯ থেকে ১২ শতক সেন রাজাদের দ্বারা শাসিত হয়। পরে ১৩শ শতকের শুরুতে তা মুসলিম শাসকদের অধীনে আসে। ১৩শ শতকের শুরুতে এই এলাকা মুসলিম শাসকদের হাতে যায়। তারপরও সেন বংশের নৃপতিরা সামন্তপ্রধান হিসাবে প্রায় ১০০ বছর শাসনকার্য চালায়। এরপর অচ্যুত সেনের আচরণে রাগান্বিত হয়ে গৌড়ের বাহাদুর শাহ (?-১৫৩৭) সেনদের বিতাড়িত করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বগুড়া ৭ নং বিডিএফ সেক্টরের অধীনে ছিল। ভৌগোলিক অবস্থান বগুড়া শহর বগুড়া জেলার মধ্যভাগে প্রবাহিত করতোয়া নদীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত। করতোয়া নদী উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে বগুড়াকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে। বগুড়ার উত্তরে গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা পশ্চিমে নওগাঁ জেলা, দক্ষিনে সিরাজগঞ্জ জেলা এবং পুর্বে যমুনা নদী এবং জামালপুর জেলার অবস্থান। জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ উপজেলার সাথে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার স্থল ও জল পথে সংযোগ রয়েছে। বগুড়া জেলার একদম মাঝখানে দিয়ে এন-৫ জাতীয় মহাসড়ক চলে গিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা বগুড়াকে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বলা হয়। মূলত ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের বেশির ভাগ জেলায় যেতে বগুড়াকে অতিক্রম করতে হয় বলেই এরকম বলা হয়ে থাকে। বগুড়ার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত মানের। ট্রেন এবং বাস উভয় ব্যবস্থায় ঢাকা থেকে আসা যায়। জেলায় মোট রাস্তার পরিমাণ ৬,০৪১ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা রাস্তা রয়েছে ২,৩১০ কিলোমিটার এবং কাঁচা রাস্তা রয়েছে ৩,৭৩১ কিলোমিটার। এছাড়াও জেলার উপর দিয়ে ৯০ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক বগুড়ার একেবারে মধ্যভাগ দিয়ে শেরপুর, শাহজাহানপুর, বগুড়া সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলা দিয়ে চলে গেছে। ভারী এবং দূর পাল্লার যানবাহন চলাচলের জন্য মূল সড়কের পাশাপাশি রয়েছে প্রশস্ত দুটি বাইপাস সড়ক। প্রথমটি ১ম বাইপাস নামে পরিচিত শহরের পশ্চিম দিকে মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে বারপুর, চারমাথা, তিনমাথা রেলগেট, ফুলতলা হয়ে বনানীতে গিয়ে শেষ হয়েছে। দ্বিতীয়টি ২য় বাইপাস নামে পরিচিত যা ২০০০ সালের পরবর্তীকালে নির্মিত হয়। দ্বিতীয় বাইপাসটি মাটিডালি থেকে শুরু হয়ে শহরের পূর্ব পাশদিয়ে জয়বাংলা বাজার, সাবগ্রাম হয়ে বনানীতে গিয়ে মুল সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে। এছাড়া নাটোর, পাবনা, রাজশাহী সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলা গুলোর সাথে যোগাযোগের জন্য একটি আলাদা মহাসড়ক রয়েছে যা নন্দীগ্রাম উপজেলার মধ্যদিয়ে নাটোরের সাথে সংযুক্ত। নওগাঁ জেলার সাথে যোগাযোগের জন্য চারমাথা থেকে আরেকটি সংযোগ সড়ক কাহালু, দুপচাঁচিয়া, সান্তাহারের মধ্য দিয়ে নওগাঁয় গিয়ে শেষ হয়েছে। এছাড়া বগুড়া জয়পুরহাট জেলাকে সংযুক্ত করার জন্য রয়েছে মোকামতলা হতে আলাদা সড়ক ব্যবস্থা। বগুড়া শহরের একেবারে ভিতর দিয়ে চলে গেছে সান্তাহার - লালমনিরহাট মিটারগেজ রেলপথ, এই রেলপথে রয়েছে শহরের একমাত্র স্টেশন বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন । বগুড়ার একমাত্র বিমানবন্দরটি বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। তবে বিমান বন্দরটি বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়। অর্থনীতি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বগুড়া শহরের অবকাঠামোগত প্রচুর উন্নতি সাধিত হয়েছে। নতুন শহর পরিকল্পনার মাধ্যমে রাস্তাগুলো পুননির্মাণ এবং দু লেনে উন্নীতকরণ করা হয়েছে । এখানকার মাটি বেশ উর্বর এবং এখানে প্রচুর শস্যের উৎপাদন হয়। বিগত কয়েক বছরে বগুড়ায় লাল মরিচের উৎপাদন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে যা কিনা ১০০ কোটি টাকার ব্যবসায় পরিণত হয়েছে। ব্যবসা- বাণিজ্যের উন্নতির সাথে সাথে এখানকার ব্যাংকিং ব্যাবস্থাপনাতেও এসেছে নতুন মাত্রা; সরকারি বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের একটি করে শাখা রয়েছে এখানে। ২৪ ঘণ্টাই শহরের যে কোনো প্রান্তে এটিএম বুথ খোলা পাওয়া যায়। ২০০৮ সালে ফ্রান্সের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ড্যানোন গ্রুপ গ্রামীণ গ্রুপের সাথে যৌথভাবে শক্তিদই তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। পর্যটন বগুড়া শহরের ১১ কি.মি. অদূরে মহাস্থানগড় অবস্থিত। এখানে পূর্বে রাজা পরশুরামের রাজ্য ছিল। এখানে বেহুলা-লখিন্দরের বাসর ঘর ও গোবিন্দ ভিটা রয়েছে; আছে জাদুঘরও। বগুড়া শহরে রয়েছে "নওয়াব প্যালেস"; যা ব্রিটিশ আমলে "নীলকুঠি" নামে পরিচিত ছিল। এখানে থাকার জন্য রয়েছে চার তারকা বিশিষ্ট হোটেল "নাজ গার্ডেন" এবং পাঁচ তারকা হোটেল "মম ইন"। এছাড়াও রয়েছে খেড়ুয়া মসজিদ, {শেরপুর} সাউদিয়া পার্ক, এছাড়াও রয়েছে মকটেল আইল্যান্ড ,যা শেরপুর শহরের অদূরে অবস্থিত। আমাদের পুরো বগুড়া জেলা জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন স্থানের পর্যটনকেন্দ্রে।-- সংস্কৃতি সুফি, মারাঠি, লালন ইত্যাদি নিয়ে বগুড়ার সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বগুড়া থেকে প্রকাশিত কয়েকটি আঞ্চলিক পত্রিকার মধ্যে আছে দৈনিক করতোয়া, দৈনিক আজ ও আগামীকাল, দৈনিক উত্তরকোণ, দৈনিক বগুড়া, দৈনিক চাঁদনি বাজার, দৈনিক উত্তরাঞ্চল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এখানকার মরিচ ও দই খুব বিখ্যাত। দর্শনীয় স্থান মহাস্থানগড় গোকুল মেধ (বেহুলার বাসরঘর) ভাসু বিহার শীলাদেবীর ঘাট গোবিন্দভিটা প্রেম যমুনার ঘাট (সারিয়াকান্দি) রাজা পরশুরামের বাড়ি জীয়ত কুণ্ড শাহ সুলতান বলখি (রহ.) এর মাজার মহাস্থানগড় যাদুঘর যোগীর ভবণ ‍‍‌নুর‌ইল বিল, শেখেরকোলা,বগুড়া ভীমের জাঙ্গাল খেরুয়া মসজিদ নবাব বাড়ি (সাবেক নীল কুঠির) বিজয়াঙ্গন যাদুঘর, বগুড়া সেনানিবাস, শাজাহানপুর (মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক) শহীদ চান্দু ক্রিকেট স্টেডিয়াম, পল্লী উন্নয়ন একাডেমী, শেরপুর, বাংলাদেশ মশলা গবেষণা কেন্দ্র, শিবগঞ্জ, মম-ইন, ঠেঙ্গামারা, বগুড়া সদর হোটেল নাজ গার্ডেন, ছিলিমপুর, বগুড়া সদর পর্যটন মোটেল, বনানী, বগুড়া সদর ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্ক, বগুড়া সদর মম-ইন ইকো পার্ক, ঠেঙ্গামারা, বগুড়া সদর রানার প্লাজা (শপিংমল), বগুড়া সদর। পৌরপার্ক [সাতমাথা,বগুড়া] জিয়া বাড়ি [শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এর জন্মস্থান, বাগবাড়ি, গাবতলী উপজেলা, বগুড়া ] নলডুবী মাজার শরীফ ( বগুড়া শহর থেকে ২২ কি.মি. দূরে কাহালু উপজেলাধীন নলডুবী গ্রামে অবস্থিত।) সাউদিয়া পার্ক,শেরপুর মকটেল আইল্যান্ড [ধুনট রোড শেরপুর বগুড়া] বগুড়া মিশন হাসপাতাল বগুড়া ওয়াইএমসিএ শিক্ষা বগুড়া জেলাতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কথা থাকলেও বিভিন্ন রাজরাজনৈতিক কারণে তা আর বাস্তবায়ন করা হয় নি। বগুড়া জেলার উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:পুন্ড্র ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, হামদর্দ ইউনানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল, সরকারি মুস্তাফাবিয়া আলিয়া মাদ্‌রাসা, সৈয়দ আহম্মেদ কলেজ, বগুড়া জিলা স্কুল, শেরপুর সরকারি ডি.জে মডেল হাই স্কুল, শেরপুর বগুড়া। শেরপুর সরকারি কলেজ , বগুড়া ।বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী মুজিবর রহমান মহিলা কলেজ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ বগুড়া, বিয়াম মডেল স্কুল ও কলেজ, বগুড়া,।পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ সরকারি শাহ সুলতান কলেজ, সরকারি আজিজুল হক কলেজ, বগুড়া কলেজ, বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ, বগুড়া ওয়াইএমসিএ পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, বগুড়া ওয়াইএমসিএ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ,মহাস্থান মাহিসাওয়ার ডিগ্রী কলেজ, সুবিধা বঞ্চিত ও ছিন্নমূল পথশিশুদের নৈতিক শিক্ষালয়-"আমিনা বেগম মেমোরিয়াল একাডেমী" ভি টি টি আই পলিটেকনিক,ওও ইত্যাদি জলবায়ু উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব জিয়াউর রহমান, বীর উত্তম (১৯৩৫-১৯৮১)–বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রফুল্ল চাকী (১৮৮৮-১৯০৮)–ব্রিটিশ বিরোধী আন্দলনের নেতা মোহাম্মদ আলী বগুড়া (মৃত্যুঃ ১৯৬৯)–কূটনীতিক এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাদেমুল বাশার, বীর উত্তম (১৯৩৫-১৯৭৬)– স্বাধীনতা যুদ্ধের বিডিএফ সেক্টর ৬ এৱ ফোৰ্স কমান্ডাৱ এবং বিমান বাহিনীর সবেক প্রধান ফরিদুর রেজা সাগর–মিডিয়া পরিচালক এস এম ফারুক–সাবেক সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াস (১৯৪৩-১৯৯৭)–সাহিত্যিক ও গল্পকার গাজীউল হক (১৯২৯-২০০৯)–ভাষা সৈনিক এম. আর. আখতার মুকুল (১৯২৯-২০০৪)–লেখক এবং সাংবাদিক মনোজ দাশগুপ্ত (১৯৪৯-১৯৯৭)–কবি ও লেখক মুশফিকুর রহিম–বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট টেস্ট দলের সাবেক অধিনায়ক রোমেনা আফাজ–সাহিত্যিক শফিউল ইসলাম সুহাস–একজন বাংলাদেশী ক্রিকেটার এনামুল হক–(একুশে পদক ২০১৪, স্বাধীনতা পদক ২০১৭) অপু বিশ্বাস–বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পী। তারেক রহমান–বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। মাহমুদুর রহমান মান্না–নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক তৌহিদ হৃদয়–(অনূর্ধ্ব - ১৯ ক্রিকেটার) তানজিদ হাসান–(অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটার) হিরো আলম বগুড়া জেলার উপজেলা ও পৌরসভা সমূহ বগুড়া সদর উপজেলা, সারিয়াকান্দি উপজেলা, শিবগঞ্জ উপজেলা, শেরপুর উপজেলা, নন্দীগ্রাম উপজেলা, ধুনট উপজেলা, কাহালু উপজেলা, গাবতলী উপজেলা, শাজাহানপুর উপজেলা, দুপচাঁচিয়া উপজেলা, আদমদীঘি উপজেলা, সোনাতলা উপজেলা । এছাড়াও বগুড়া জেলায় ১২ টি পৌরসভা রয়েছে, তা হলো- বগুড়া পৌরসভা, শেরপুর পৌরসভা, শিবগঞ্জ পৌরসভা, সান্তাহার পৌরসভা, কাহালু পৌরসভা, দুপচাঁচিয়া পৌরসভা, গাবতলী পৌরসভা, নন্দীগ্রাম পৌরসভা ধুনট পৌরসভা, সারিয়াকান্দি পৌরসভা, সোনাতলা পৌরসভা, তালোড়া পৌরসভা । তথ্যসূত্র বাংলাদেশের শহর বগুড়া
https://en.wikipedia.org/wiki/Bogra
Bogra
Bogra (Bengali: বগুড়া), officially known as Bogura, is a city located in Bogra District, Rajshahi Division, Bangladesh. The city is a major commercial hub in Northern Bangladesh. It is the second largest city in terms of both area and population in Rajshahi Division. The Bogra bridge connects the Rajshahi Division and Rangpur Division. Bogra is named after Nasiruddin Bughra Khan, the Governor of Bengal from 1279 to 1282 and the son of Delhi Sultan Ghiyasuddin Balban. The city is approximately 71.56 km2 (27.63 sq mi) and is divided into 21 wards. Bogra has a population of around 12,40,000 people. Since it is one of the oldest cities in Bengal, Bogra is famous for its many ancient Buddhist stupas, Hindu temples, and ancient palaces of Buddhist kings and Muslim sultans. The city has produced notable personalities including Prime Minister Muhammad Ali Bogra of Pakistan, President Ziaur Rahman of Bangladesh, both of whom were born and lived in the city.
2525
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A6%B6%E0%A6%BE%E0%A6%B9%E0%A7%80%20%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%AF%E0%A6%BC
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী জেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। এটি একটি সরকারি স্বায়ত্বশাসিত গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ জুলাই এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৩২ হাজার৷ প্রাচ্যের ক্যামব্রিজ খ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেলওয়ে স্টেশন ও ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের পাশে রাজশাহী শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ ইতিহাস ব্রিটিশ যুগে রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য ১৮৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী কলেজ৷ সে সময়ে রাজশাহী কলেজে আইন বিভাগসহ পোস্ট গ্রাজুয়েট শ্রেণী চালু করা হয়৷ কিন্ত এর কিছুদিন পরেই বন্ধ হয়ে যায় এসব কার্যক্রম৷ সে সময়েই রাজশাহীতে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রয়োজন অনুভূত হয়৷ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান সরকার দেশের সব কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করে৷ রাজশাহীতে এ সময় স্যাডলার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পক্ষে আন্দোলন শুরু হয়৷ ভাষা আন্দোলনের কিছুদিন আগ থেকেই মূলত রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু হয়৷ ১৯৫০ সালের ১৫ নভেম্বর রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়৷ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য সর্বপ্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী শহরের ভুবন মোহন পার্কে ৷ প্রথম অবশ্য দাবি ওঠে রাজশাহী কলেজেই৷ ১৯৫২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি শহরের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজশাহী কলেজ প্রাঙ্গনে সমবেত হয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ পাস করার দাবি তোলে৷ পরবর্তীতে ১৩ই ফেব্রুয়ারি ভূবন মোহন পার্কেই আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ এমএলএ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় আরও একটি জনসভা৷ উক্ত সভায় বক্তব্য রাখেন ইদ্রিস আহমেদ এমএলএ, প্রভাষ চন্দ্র লাহিড়ী, খোরশেদ আলম, আনসার আলী, আব্দুল জব্বার প্রমূখ৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ক্রমেই তীব্র হতে থাকে৷ এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানাতে গিয়ে কারারুদ্ধ হন ১৫ ছাত্রনেতা ৷ পরে ছাত্রজনতার পক্ষ থেকে ঢাকায় একটি ডেলিগেশন পাঠানো হয়৷ ওই ডেলিগেশনের সদস্যদের মধ্যে মরহুম আবুল কালাম চৌধুরী ও আব্দুর রহমানের নাম উল্লেখযোগ্য৷ এভাবে একের পর এক আন্দালনের চাপে স্থানীয় আইন পরিষদ রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়৷ এই আন্দোলনে একাত্ব হন পূর্ববঙ্গীয় আইনসভার সদস্য প্রখ্যাত আইনজীবী মাদার বখশ৷ ১৯৫৩ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ভুবন মোহন পার্কে আরও একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মাদার বখশ সরকারকে হুশিয়ার করে বলেন, যদি রাজশাহীতে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন না হয় তবে উত্তরবঙ্গকে একটি স্বতন্ত্র প্রদেশ দাবি করতে আমরা বাধ্য হব৷ মাদার বখশের এই বক্তব্যে সাড়া পড়ে দেশের সুধী মহলে এবং সাথে সাথে টনক নড়ে সরকারেরও৷ অবশেষে ১৯৫৩ সালের ৩১ মার্চ প্রাদেশিক আইনসভায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা আইন পাশ হয়। নতুন উপাচার্য প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে সঙ্গে নিয়ে মাদারবখশ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামো পরিকল্পনা প্রণয়ন করে৷ এ দুজনকে যুগ্ম সম্পাদক করে মোট ৬৪ সদস্য বিশিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন কমিটি গঠন করা হয়৷ এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার এম এ খুরশীদ৷ একই বছর ৬ জুলাই প্রফেসর ইতরাত হোসেন জুবেরীকে উপাচার্য নিয়োগ করে বিশ্ববিদ্যালয় আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু করে। শুরুতে ১৬১ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ক্লাস শুরু হয় রাজশাহী কলেজে৷ উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের দফতর প্রতিষ্ঠা করা হয় পদ্মার তীরের বড়কুঠি নামে পরিচিত ঐতিহাসিক রেশম কুঠি বা নীল কুঠির উপর তলায়৷ বড়কুঠির কাছেই তৎকালীন ভোলানাথ বিশ্বেশ্বর হিন্দু একাডেমিতে চিকিৎসাকেন্দ্র ও পাঠাগার তেরি করা হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতর স্থাপন করা হয় জমিদার কুঞ্জমোহন মৈত্রের বাড়িতে৷ বড়কুঠি পাড়ার মাতৃধামে স্থাপন করা হয় কলেজ পরিদর্শক দফতর৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন ওসমান গনি ও প্রথম পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত হন অধ্যাপক আব্দুল করিম৷ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভাড়া করা বাড়িতে গড়ে ওঠে ছাত্রাবাস৷ রাজশাহী কলেজ সংলগ্ন ফুলার হোস্টেলকে রুপান্তরিত করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাস হিসেবে৷ বড়কুঠি এলাকার লালকুঠি ভবন ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে ছাত্রী নিবাস স্থাপন করা হয়৷ ১৯৫৮ সালে বর্তমান ক্যাম্পাসে দালান-কোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণ শুরু হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম স্থানান্তর করা হয় মতিহারের নিজস্ব ক্যাম্পাসে এবং ১৯৬৪ সালের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল অফিস ও বিভাগ এখানে স্থানান্তরিত হয়৷ এই ক্যাম্পাসটি গড়ে ওঠে অস্ট্রেলিয়ান স্থপতি ড. সোয়ানি টমাসের স্থাপত্য পরিকল্পনায়৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহার প্রাণের বিনিময়ে স্বাধিকার সংগ্রামের ইতিহাসে যুক্ত হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম। প্রক্টর হিসেবে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালনরত ড. জোহা ছাত্রদের মিছিলকে সংযত রাখার চেষ্টা করেছিলেন, চেষ্টা করছিলেন তার প্রাণপ্রিয় ছাত্ররা যাতে পশ্চিমা শাসক চক্রের লেলিয়ে দেয়া সশস্ত্র বাহিনীর আক্রমণের শিকার না হয়। কিন্তু ওদের বর্বর আক্রোশ মুহূর্তে বিদীর্ণ করে তার বুক। ড. জোহার মৃত্যুতে সারাদেশ বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল। প্রতিবাদে টলে উঠেছিল আইয়ুব খানের গদি, পতন হয়েছিল সেই স্বৈরশাসকের। তারই ফলে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তির পথের একটি ধাপ পেরিয়ে এসেছিল মুক্তিকামী বাঙালী। বাঙালীর মনে অধ্যাপক জোহা বেঁচে আছেন শহীদ জোহা হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্বেই বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শহীদ হবিবুর রহমান, শহীদ [মীর আবদুল কাইয়ুম], শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার। অকথ্য নির্যাতন ভোগ করেছিলেন গণিত বিভাগের শিক্ষক মজিবর রহমান। এছাড়া আরও ত্রিশ জন ছাত্র, কর্মচারী-কর্মকর্তাও মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। প্রতীক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতীকে রয়েছে একটি বৃত্ত; সেটা বিশ্বের প্রতীক। একটি উন্মুক্ত গ্রন্থ; যা জ্ঞানের প্রতীক এবং আকাশদৃষ্টি থেকে শাপলা ফুল; যা সৌন্দর্য, পবিত্রতা ও জাতীয় প্রতীক। এটি সূর্য অর্থেও প্রাণ ও শক্তির প্রতীক। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রতীকের জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে নকশা আহ্বান করা হয়। শিল্পী গোলাম সারওয়ারের আঁকা মূল নকশা নির্বাচনের পর কিছুটা পরিবর্তন করে বর্তমান প্রতীকে রুপ দেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ও শিল্পী হাশেম খান। প্রতীকের রং বৃত্ত ও মূল গ্রন্থ কোবাল্ট ব্লু। সেটা আকাশ, নদী ও উদারতার রং। গ্রন্থের বহিঃরেখা রক্তলাল, জাতীয় পতাকার রং। গ্রন্থের মধ্যরেখা সোনালি, সোনার মতই মূল্যবান শিক্ষার গুনগত মূল্য। ক্যাম্পাস প্রায় ৭৫৩ একর বা ৩০৪ হেক্টর এলাকাজুড়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫টি উচ্চতর গবেষণা ইন্সটিটিউট, ৯টি অনুষদের অধীনে ৫৯টি বিভাগে বর্তমানে পরিচালিত হচ্ছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম৷ ক্যাম্পাসের উত্তর পূর্ব দিক জুড়ে রয়েছে ছাত্রদের জন্য ১১টি আবাসিক হল ৷ ছাত্রীদের জন্য রয়েছে ৬টি আবাসিক হল যা ক্যাম্পাসের পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত৷ পূর্ব দিকে গবেষকদের জন্য রয়েছে একটি ডরমিটরি। পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত জুড়ে রয়েছে শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আবাসিক এলাকা৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা এদেশের সর্বপ্রথম স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তাছাড়া রয়েছে সাবাস বাংলাদেশ নামে একটি ভাষ্কর্য৷ এছাড়াও রয়েছে গোল্ডেন জুবিলি টাওয়ার৷ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে তিনটি সাংবাদিক সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। ১৫টি সংগঠন নিয়ে রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট। রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং ফোরাম - আরইউডিএফ (পূর্বে বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টি ডিবেটিং ফোরাম - বিএফডিএফ নামে পরিচিত) ও গোল্ড বাংলাদেশ প্রধান দুটি বিতর্ক সংগঠন। এছাড়া আছে বিভিন্ন হল ভিত্তিক বিতর্ক ক্লাব। আইন বিভাগে রয়েছে একটি বিখ্যাত মুট কোর্ট সংগঠন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে সচেতন বা সহায়তা করতে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য সহায়তায় রয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হায়ার স্টাডি ক্লাব। উদ্যোগ, বিজনেস এবং ডেভেলপমেন্ট নিয়ে কাজ করছে স্টার্টআপ আরইউ। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম শিক্ষার্থীদের বই পাঠে মাধ্যমে বিকশিত হওয়ার একটি প্লার্টফর্ম হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। শিক্ষা সহায়ক সুবিধা সাধারণ শিক্ষার্থী ও গবেষকদের শিক্ষা সহায়ক হিসেবে এখানে রয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরী, বিভাগীয় কম্পিউটার ল্যাব, ইন্সটিটিউট ও অনুষদ লাইব্রেরী, বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ও লাইব্রেরী এবং কম্পিউটার সেন্টার। সংস্কৃতি চর্চার জন্য রয়েছে শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র - টিএসসিসি এবং খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুলসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো রয়েছে। বিভিন্ন ভবন পরিচিতি প্রশাসন ভবন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট পেরিয়ে বৃক্ষশোভিত গোল চত্বর। এখানে শায়িত ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ড. মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। সামনেই প্রশাসন ভবন। এর নিচতলায় জনসংযোগ দপ্তর, প্রক্টর এবং ছাত্র উপদেষ্টা দপ্তর, তথ্য সেল, বীমা ইউনিট, একাডেমিক শাখার একাংশ, অর্থ ও হিসাব দপ্তরের একাংশ, টেলিফোন শাখা। দোতালায় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্টার দপ্তর, সংস্থাপন শাখা - ১, অর্থ ও হিসাব দপ্তর, পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন দপ্তর, লিগ্যাল সেল। তিনতলায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তর ও সংস্থাপন শাখা - ২। বিশ্ববিদ্যালয় মেইন গেট থেকে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরের দিকে যতই এগোনো যায় বৃক্ষরাজির মধ্যে দিয়ে এই ভবনটি ততই উন্মুক্ত হতে থাকে। শেষে শহীদ শামসুজ্জোহা চত্বরে এসে পুরো ভবনটি বিশাল আকারে দর্শনার্থীর চোখে ধরা দেয়। এই অনুপম স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহারের সবুজ চত্বরের আলিঙ্গনে লুকিয়ে থাকা জ্ঞানের বিশালত্বকেই ফুটিয়ে তোলে। বামে গেলে প্যারিস রোডের সুউচ্চ গগনশিরীষের ফাঁকে শুভ্র মেঘ আর নীল আকাশের লুকোচুরি খেয়াল করা যায়। পুরো সড়কটি বিখ্যাত এর অসাধারণ সৌন্দর্য আর সবুজ আচ্ছাদনের জন্য। শহীদ ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী প্রশাসন ভবন কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পশ্চিমে এই ভবনে প্রকৌশল দপ্তর, এস্টেট শাখা, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের বিল শাখা, একডেমিক শাখার একাংশ, কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার, প্রকাশনা দপ্তর ও কৃষি প্রকল্প অফিস অবস্থিত। এই ভবনের পাশেই অগ্রণী ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। সিনেট ভবন আধুনিক অডিও সিস্টেমসহ ২০৬ আসনবিশিষ্ট শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সিনেট ভবন প্রশাসন ভবনের সামনে, ডান দিকে এবং সাবাস বাংলাদেশের পেছনে । এখানে রয়েছে পরিষদ শাখা। ডিনস কমপ্লেক্স এটি মূলত বিভিন্ন বিভাগের সমন্বয়ক দপ্তরের কেন্দ্র। এখানে অনেক প্রখ্যাত অধ্যাপকগনের চেম্বার এবং ডীন অফিস রয়েছে। শহীদুল্লাহ কলাভবনের ডানে এই ভবনে কলা, আইন, বিজনেস স্টাডিজ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ অফিস। এই ভবনে ইন্টারন্যাশনাল রিলেশনস বিভাগের অফিস আছে। ডিনস কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় একটি সম্মেলন কক্ষ রয়েছে। এছাড়াও ভবনটির নীচ তলায় রয়েছে একটি ক্যান্টিন। বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কেন্দ্রস্থলে প্রশাসন ভবন-১ এর দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে অবস্থিত মনোরম স্থাপত্য সমৃদ্ধ ভবনই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এতে রয়েছে প্রায় তিনলক্ষ পুস্তকের একটি সুবিশাল সংগ্রহ। বিভিন্ন বিভাগের প্রয়োজনীয় বই সহ রয়েছে বহু দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ। যা এটিকে দেশের বৃহত্তম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক গ্রন্থাগারের মর্যাদা দিয়েছে। গ্রন্থাগারটি খোলা থাকে প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮.১৫ থেকে সন্ধ্যা ৭.৪৫ পর্যন্ত। শুক্রবার দুপুর ৩.০০ থেকে সন্ধ্যা ৭.৪৫ পর্যন্ত। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি থাকলে এই সময় সূচিতে সমান্য পরিবর্তন হয়। গ্রন্থাগারের দোতলায় ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য দুটি মনোরম পাঠকক্ষ রয়েছে। তিনতলায় রয়েছে সাময়িকী, পত্র-পত্রিকা, ইন্টারনেট কক্ষ ও গ্রন্থাগার প্রশাসকের কার্যালয়। প্রায় সম্পূর্ণ নিচতলা জুড়ে সকল বইয়ের কপি এবং পুরাতন পত্র-পত্রিকা সংরক্ষণ করা আছে। দোতলায় প্রবেশ পথে একটি ক্যাটলগ ক্যাবিনেট রয়েছে। ক্যাবিনেটে সংরক্ষিত কার্ডে বইয়ের নাম এবং গ্রন্থাকারের নাম ক্রমানুসারে সাজানো থাকে। প্রতিটি কার্ডের জন্য একটি সতন্ত্র কল নাম্বার রয়েছে। এই কল নাম্বার অনুসারে গ্রন্থাগারে বই সজ্জিত থাকে। গ্রন্থাগারের নিচতলায় ধার শাখা রয়েছে যেখান থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা গ্রন্থাগার কার্ড দেখিয়ে বই ধার নিতে পারে। পুরো লাইব্রেরীর তিন লক্ষেরও অধিক পুস্তক ডিজিটালাইজড এবং গ্রন্থাগার ওয়েবসাইটে সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের সেমিনার লাইব্রেরীর সাথে সংযুক্ত এবং মূল ওয়েবসাইটের একটি অংশ। তাই ঘরে বসে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্যের বিবরণ ও প্রাপ্যতা যাচাই করা যায়। এছাড়া দোতলার একটি কক্ষে বই ফটোকপি করারও ব্যবস্থা রয়েছে। গ্রন্থাগারে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি দ্রুতগতির ওয়াইফাই জোন রয়েছে। সম্পূর্ণ গ্রন্থাগার শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবন লাইব্রেরীর পশ্চিমে শহীদুল্লাহ কলাভবনের পেছনে এই ভবনের অবস্থান। উত্তর ব্লকে পশ্চিমাংশ জুড়ে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী আইন বিভাগ। পূর্বের দোতলায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ। মধ্য ব্লকে দোতলায় ফাইনান্স বিভাগ। দক্ষিণ ব্লকে দোতলায় হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগ এবং তিনতলায় মার্কেটিং বিভাগ এবং ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগ। পশ্চিম ব্লকে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, ইনফরমেশন সায়েন্স এন্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, লোক প্রশাসন এবং আইন বিভাগ। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ একাডেমিক ভবন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এককালীন শিক্ষক, জ্ঞানতাপস ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর নামানুসারে এই ভবনটি লাইব্রেরির পশ্চিম দিকে অবস্থিত। নিচতলায় ইতিহাস, ইংরেজি, বাংলা এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ। দোতলায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ এবং কলা অনুষদের কম্পিউটার সেল। তিনতলায় আরবি ও সংস্কৃত বিভাগ। ড. মমতাজউদ্দিন আহমেদ একাডেমিক ভবন ডিনস কমপ্লেক্সের ডানে এই ভবনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় উপাচার্যের নামে। নিচতলায় সমাজকর্ম বিভাগ। দোতালায় অর্থনীতি, দর্শন ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগ। সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবন নিচতলায় ফোকলোর এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগ। দোতালায় নাট্যকলা এবং সংগীত বিভাগ এবং ভাষা বিভাগ (একাংশ) এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট। এবং তিন তলায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ রয়েছে। সত্যেন্দ্রনাথ বসু একাডেমিক ভবন এই ভবনের পূর্ব নাম ছিল প্রথম বিজ্ঞান ভবন। বাস স্ট্যান্ডের উত্তরে নিচতলায় আহমেদ হোসেন গ্যালারি। এই ভবনের দক্ষিণ পাশে পদার্থবিজ্ঞান, উত্তর পাশে ফলিত পদার্থ বিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইনজিনিয়ারিং এবং প্রকৌশল অনুষদের ডীন অফিস। ড. মুহম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবন প্রথম বিজ্ঞান ভবনের উত্তরে এই ভবন। এই ভবনের পূর্ব নাম ছিল দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবন। এই ভবনের প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় রসায়ন এবং এপ্লাইড কেমিস্ট্রি এন্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ। তিনতলায় মনোবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা এবং গণিত বিভাগ। চারতলায় প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ ও বিজ্ঞান অনুষদ রয়েছে। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবন এই ভবনের পূর্ব নাম ছিল তৃতীয় বিজ্ঞান ভবন। দ্বিতীয় বিজ্ঞানভবনের পশ্চিমে এই ভবনের নিচতলায় ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগ। তিনতলায় প্রাণিবিদ্যা ও পরিসংখ্যান বিভাগ। চারতলায় ইন্সটিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্সেস, জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলোজি, পপুলেশন সায়েন্স এন্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, অ্যানিম্যাল হাজব্র্যান্ডি এন্ড ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগ এবং জীব ও ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ অফিস। ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া একাডেমিক ভবন এই ভবনের পূর্ব নাম ছিল চতুর্থ বিজ্ঞান ভবন। গ্রন্থাগার ভবনের উত্তরে এই ভবনের নিচতলায় কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি ও ফলিত গণিত বিভাগ, পরিবেশ বিজ্ঞান ইন্সটিটিউট এবং সেন্ট্রাল সায়েন্স লাইব্রেরি। দ্বিতীয় তলায় ফার্মেসি বিভাগ, ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ও কম্পিউটার সেন্টার। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন একাডেমিক ভবন বোটানিক্যাল গার্ডেন এর পাশে, রেল লাইন এর পর, ক্যাম্পাস এর উত্তর গেট পেরিয়েই ডান দিকে চারুকলা অনুষদ অবস্থিত। এই ভবনের পূর্বের নাম ছিল চারুকলা বিভাগ (২০১৫ সালের পূর্বে)। এই ভবনের নিচতলায় ডীন অফিস, চিত্রকলা, ছাপচিত্র ও প্রাচ্যকলা বিভাগ, মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ, দ্বিতীয় তলায় শিক্ষকদের অফিস, তৃতীয় তলায় গ্রাফিক ডিজাইন, কারুশিল্প ও শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগের অফিস ও ক্লাসরুম এবং অনুষদের লাইব্রেরি অবস্থিত। মূল ভবনটির পেছনে রয়েছে একতলা বিশিষ্ট পুরাতন ভবনটি। পুরাতন ভবনের ঠিক পাশেই রয়েছে মৃৎশিল্পের ফায়ারিং রুম। কৃষি অনুষদ ভবন কৃষি অনুষদ ও চারুকলা অনুষদ পাশাপাশি অবস্থিত। বোটানিক্যাল গার্ডেন এর পাশে, রেল লাইন এর পর, ক্যাম্পাস এর উত্তর গেট পেরিয়ে বাম দিকে এর অবস্থান। এর উত্তর ব্লকে ফিসারিজ, দক্ষিণ ব্লকে এগ্রোনমি এন্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগ এবং কৃষি অনুষদ অফিস। নারিকেলবাড়িয়া ক্যাম্পাস রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের, রাজশাহী বাইপাস রোড থেকে ডানে এক কিলোমিটার ভিতরে এই ক্যাম্পাসে ক্রপ সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি বিভাগসহ কৃষি অনুষদের পরীক্ষণ ও গবেষণা খামার আছে। শেখ কামাল স্টেডিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশাল স্টেডিয়ামটি দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়াম। সুইমিংপুলে নিয়মিত সাঁতার ও ওয়াটার ভলি খেলা হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকেই খেলাধুলার জন্য বিখ্যাত। শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র (টিএসসিসি) প্রথম বিজ্ঞান ভবনের পূর্ব পাশেই রয়েছে শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার শিক্ষক-ছাত্র সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা টিএসসিসি। রাকসু ভবন শহিদ মিনারের উত্তরে এই ভবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ অফিস। এছাড়া বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের অফিস এখানে। কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া রাকসু ভবনের পেছনে ও শহীদ মিনারের উত্তর-পূর্বে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া। এখানে সুলভে নাস্তা এবং দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা আছে। বিজ্ঞান ওয়ার্কশপ রাকসু ভবনের উত্তর পাশে অবস্থিত। এখানে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষণ করা হয়। কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন আধুনিক শব্দ এবং আলোক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা সজ্জিত মিলনায়তন। ভবনটি এর স্থাপত্যকলা ও অত্যাধুনিম ডিজাইনের জন্য বিখ্যাত। এটি মানের দিক দিয়ে কোন পাশ্চাত্য অডিটোরিয়ামের চেয়ে কোন অংশেই কম নয়। ভবনের দক্ষিণাংশে রাকসু কোষাধ্যক্ষ অফিস। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিকিৎসার জন্য একটি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বদিকে বিনোদপুর গেটের কাছে অবস্থিত। এখানে সাধারণ বিভাগ, প্যাথলজি, এক্স-রে, ইসিজি, চক্ষু, ডেন্টাল ও পরিবার পরিকল্পনা ইউনিট রয়েছে। ১ জন প্রধান চিকিৎসক সহ মোট ২৫ জন চিকিৎসক আছেন এই কেন্দ্রে। চক্ষু, প্যাথলজি, অর্থপেডিক ও চর্মরোগ বিভাগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের সকল প্রকার চিকিৎসা বিনামূল্যে দেয়া হয় এবং বিনামূল্যে ঔষধ প্রদান করা হয়। জরুরী প্রয়োজনে রোগীদের দ্রুত চিকিৎসা প্রদানের জন্য রয়েছে চিকিৎসা কেন্দ্রের নিজস্ব এম্বুলেন্স। ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ এ বাংলদেশের জীবন ও সমাজের সঙ্গে বিশেষভাবে সম্পর্কযুক্ত বিষয়ে এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি দেওয়া হয়। ভবনটি বিনোদপুর গেটের পূর্বদিকে। বিএনসিসি ভবন প্রধান গেটের পাশে এই ভবনে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর - বিএনসিসি অফিস অবস্থিত। ধারণা করা হয় এই প্রান্তরেই এক সময় প্রাচীন ডাচ কুঠি ছিল। জুবেরী ভবন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের নাম অনুসারে এই অতিথি ভবনটি ক্যাম্পাসের পশ্চিম এলাকায়, কাজলা গেটের উত্তরে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষক ক্লাবও এখানে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল কাজলা গেটের পাশেই স্কুল ভবন। এর কলেজ শাখাও এখানে। শেখ রাসেল মডেল স্কুল বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজলা গেটের পাশে, রাজশাহী বিশবিদ্যালয় স্কুলের বিপরীতে এই স্কুলটি অবস্থিত। পূর্বে মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের পশ্চিমে ও মন্নুজান হলের দক্ষিণে শেখ রাসেল মডেল স্কুল অবস্থিত ছিল। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠিত দেশের সর্বপ্রাচীন সংগ্রহশালা - বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বঙ্গীয় শিল্পকলার বিপুল ও বর্ণাঢ্য সংগ্রহের জন্য সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত। রাজশাহী শহরে অবস্থিত, বাংলদেশের সুপ্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্মারক এই জাদুঘরটি ১৯৬৪ সাল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করে আসছে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাপাখানা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের সামনে, কেন্দ্রীয় মন্দিরের পাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একটি ছাপাখানা রয়েছে। কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদটি সুপরিসর ও সুন্দর তুর্কি স্থাপনাসমৃদ্ধ। এখানে একটি ইসলামি পাঠাগার রয়েছে। কেন্দ্রীয় হিন্দু মন্দির রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মন্দিরে প্রতিবছর সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বাণী অর্চনা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও জন্মাষ্টমী ও দীপাবলি উদযাপিত হয়ে থাকে। পরিবহন অফিস এবং বাস স্ট্যান্ড প্রশাসন ভবনের উত্তরে পরিবহন অফিস। অফিসের পেছনেই আছে একটা মার্কেট যা 'পরিবহন মার্কেট' নামে পরিচিত এবং সমাদৃত। পরিবহন অফিসের সামনেই সুপরিসর বাস স্ট্যান্ড। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পেট্রোলপাম্প রয়েছে। উল্লেখ্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস পরিবহন ব্যবস্থা বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বাস পরিবহন নেটওয়ার্ক। স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য শহীদ মিনার কমপ্লেক্স এখানে আছে রাবি শহীদ মিনার, শহীদ স্মৃতি সংগ্রহশালা দুটি ম্যুরাল ও উন্মুক্ত মঞ্চ। উল্লেখ্য, এটি একটি ওয়াই ফাই জোন। সাবাশ বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের স্মারক সাবাশ বাংলাদেশ ভাস্কর্যটি সিনেট ভবনের দক্ষিণ চত্বরে। প্রয়াত শিল্পী নিতুন কুণ্ডুর তৈরি এই ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি মুক্ত মঞ্চ আছে। বিদ্যার্ঘ মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ গণিত বিভাগের শিক্ষক হবিবুর রহমান স্মরনে "বিদ্যার্ঘ" স্মারকসৌধটি নির্মিত হয়। এটি শহীদ হবিবুর রহমান হল চত্বরে অবস্থিত| স্ফুলিঙ্গ উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষক ডঃ শামসুজ্জোহা স্মরনে নির্মিত স্ফুলিঙ্গ ভাস্কর্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বপাশে শহীদ শামসুজ্জোহা হল প্রাঙ্গণে অবস্থিত। সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ জয়ন্তির স্মারক এই সুবর্ণ জয়ন্তী টাওয়ার। প্রধান ফটক পেরিয়ে সড়ক দ্বীপের ডানে, প্রশাসন ভবনের সামনে গোল চত্বরের দক্ষিণপূর্বে। বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের প্রায় আধ কিলোমিটার দূরে বধ্যভূমি স্মৃতিস্তম্ভ অবস্থিত। শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের কাছে এই ফলকটি অবস্থিত। অনুষদ ও ইনস্টিটিউটসমূহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ১২ টি অনুষদের অধীনে ৫৯টি বিভাগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত সরকারি কলেজ রয়েছে ৪টি, প্রকৌশল কলেজ রয়েছে ৬টি এবং কৃষি কলেজ/ইনস্টিটিউট রয়েছে ৬টি; যার মধ্যে সরকারি ২টি ও বেসরকারি ১২টি। এছাড়া উচ্চতর গবেষণা ইনস্টিটিউট রয়েছে ৬টি। অনুষদসমূহঃ কলা অনুষদ বিজ্ঞান অনুষদ প্রকৌশল অনুষদ কৃষি অনুষদ বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ আইন অনুষদ জীববিজ্ঞান অনুষদ ভূ-বিজ্ঞান অনুষদ ফিশারীজ অনুষদ চারুকলা অনুষদ ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্সেস অনুষদ </div> উচ্চতর গবেষণা ইন্সটিটিউটসমূহ: ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ ইনস্টিটিউট অব বায়োলজিক্যাল সায়েন্স ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ এন্ড আদার ল্যাংগুয়েজেজ রাবি অধিভুক্ত সরকারি কলেজসমূহ: রাজশাহী কলেজ রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজ রাজশাহী নিউ গভঃ ডিগ্রি কলেজ প্রদত্ত ডিগ্রীসমূহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিশ্বমানের নিম্নলিখিত ডিগ্রী প্রদান করা হয়:- স্নাতক (অনার্স) বিএ, বিএফএ, বিপিএ, বিএসসি, বিফার্ম, এলএলবি, বিবিএ, বিএসএস, বিএসসি এজি, বিএসসি ফিশারীজ। স্নাতক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি ইন ফিজিওথেরাপি, বিএসসি ইন নার্সিং, বিএসসি ( পোস্ট বেসিক) নার্সিং/পাবলিল হেলথ নার্সিং, বিএসসি ইন মেডিকেল টেকনোলজি ( ল্যাবরেটরি/ডেন্টাল)। স্নাতকোত্তর এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এম ইঞ্জিনিয়ারিং, এমএ, এমএফএ, এমপিএ, এমএসসি, এমফার্ম, এলএলএম, এমবিএ, এমএসএস, এমএস এজি, এমএস ফিশারীজ, এমপিএস। বৃত্তিমূলক এমবিবিএস, বিডিএস, ডিভিএম। স্নাতকোত্তর (চিকিৎসা) এমফিল, এমএস, এমডি, এমপিএইচ, ডিপ্লোমা। উচ্চতর এমফিল, পিএইচডি। অন্যান্য সার্টিফিকেট ইন ল্যাংগুয়েজেস, সিনিয়র সার্টিফিকেট ইন ল্যাংগুয়েজেস, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন জেনারেল সেরিকালচার, পোস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন। আবাসিক হল সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য মোট ১৭টি হল এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের ডরমেটরি রয়েছে, যার মধ্যে ১১টি হল ছেলেদের এবং ৬টি মেয়েদের হল। ছেলেদের হল ছেলেদের সবগুলো হল ক্যাম্পাসের পূর্বদিকে অবস্থিত। হলে কোনো গণরুম নেই। মতিহার হল রাজশাহীর মতিহার থানার নাম অনুসারে এই হলটির নামকরণ করা হয়। ক্যাম্পাসটি এই থানার অধীনে থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রায়ই বলে থাকেন মতিহারের সবুজ চত্বর। ১৯৫৮ সালে টিনসেড দিয়ে তৈরী করা হয় হলটি। তবে ১৯৮০ সালে নতুন করে আবারও তিনতলা বিশিষ্ট হল তৈরী করা হয়। শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় হলটির নাম ‘শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল’। যদিও ১৯৬২-৭১ সাল পর্যন্ত হলটির নামকরণ ছিল ‘জিন্নাহ হল’। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর ৭২ সালে ফজলুল হকের নাম অনুসারে এই হলটির নামকরণ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ সংলগ্ন জমিতে এই হলটির অবস্থান। এই হলে আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছেন ৩০০ জন। হলটিতে একই কক্ষে চারজন থেকে শুরু করে একক সিটেরও কক্ষ রয়েছে। শাহ্‌ মখদুম হল বিশিষ্ট সুফিসাধক হয়রত শাহ মখদুম রুপস এর নাম অনুসারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় হলটির নামকরণ করা হয় ‘শাহ মখদুম হল’। তিনতলা বিশিষ্ট এ হলটি ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। হলের প্রশাসনিক কাজকর্ম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য হলকে অফিসিয়ালী পূর্ব ও পশ্চিম ব্লকে ভাগ করা হয়েছে। নীচতলা উত্তরে প্রাধ্যক্ষ কক্ষ সহ অতিথি কক্ষ, অফিস সমূহ, লাইব্রেরি ও ইন্টারনেট রুম। পশ্চিমে ক্যান্টিন, পত্রিকা কক্ষ, মসজিদ ও কমনরুম, আর পূর্বে আছে ২ টি ডাইনিং। হলের আসন সংখা ৪৩০। হলের আবাসিক ও অনাবাসিক ছাত্র সংখ্যা যথাক্রমে ৪৩০ ও ১৮৬৮ জন। নবাব আবদুল লতিফ হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের চতুর্থ হলটি অবস্থান শাহ মখদুম হলের সামনেই। দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ স্যার নবাব আব্দুল লতিফের নাম অনুসরনে হলটির নামকরণ করা হয়। নবাব আব্দুল লতিফ হলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। হলটিতে ৩০০ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এটিই একমাত্র হল যেখানে কোনো রুমেই দুই জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকার ব্যবস্থা নেই। সৈয়দ আমীর আলী হল একই বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাবিদ সৈয়দ আমীর আলীর নাম অনুসারে পঞ্চম হলটি নির্মান করা হয়। শাহ মখদুম ও লতিফ হলের পূর্ব পার্শ্বে এই ‘সৈয়দ আমীর আলী হল’টির অবস্থান। হলটিতে ৪২০ জন শিক্ষার্থীর এক সাথে আবাসিকতার ব্যবস্থা রয়েছে। এই হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব চেয়ে বেশি হিন্দু শিক্ষার্থী থাকেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এই হলটিতেই হিন্দু শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা একটি ডাইনিং চালু রয়েছে। এছাড়া মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ডাইনিংসহ খাওয়ার জন্য রয়েছে একটি ক্যান্টিন। শহীদ শামসুজ্জোহা হল বাংলাদেশের প্রথম শহীদ শিক্ষক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক এবং সাবেক প্রক্টর শহীদ শামসুজ্জোহার নাম অনুসরণে এখানে ষষ্ট হলটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৬৯ সালে শহীদ শামসুজ্জোহা হলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বপাড়ায় বধ্যভূমি এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইট দিয়ে উত্তর দিকে বেশ কিছুটা পথ আসার পরই এই হলটি পাওয়া যাবে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষকদের জন্য শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ূম ডরমেটরি নামে একমাত্র আন্তর্জাতিক হলের সামনেই হলটির অবস্থান। এই হলটিতে একসাথে ৩২০ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। শহীদ হবিবুর রহমান হল ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক হবিবুর রহমান। পরবর্তীতে ১৯৭৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ হবিবুর রহমান নামে একটি হল প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক দিয়ে কিছুটা সামনে এসে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তন থেকে কিছুটা পা বাড়ালে দেখা মিলবে সপ্তম হলটির। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই হলটিতেই সর্বোচ্চ ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। হলটিতে একসাথে ৬১৪ শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি হলটি নতুনভাবে নির্মান করা হয়। হলটির সামনে হবিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি তৈরী করা হয়েছে। মাদার বখশ হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন¯্রষ্টা অধ্যাপক মাদার বখশের নামের সাথে মিল রেখে অষ্টম হলটি নির্মাণ করা হয় ১৯৭৪ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেলস্টেশন এলাকায় মাদার বখ্শ হলের অবস্থান। হলটিতে একসাথে ৫৮৪ জন শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দী হল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নবম হলটি নির্মাণ করা হয় ১৯৭৮ সালে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী নামে এই হলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখ্শ হলের পিছনে স্টেশন এলাকায়। হলটিতে ৫৯২ জন শিক্ষার্থীর আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। হলটিতে একক সিট থেকে শুরু করে এক কক্ষে চারজন শিক্ষার্থীরও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। শহীদ জিয়াউর রহমান হল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম অনুসরণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম হলটি বির্মাণ করা হয় ১৯৯৩ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ ও শহীদ হবিবুর রহমনা হলের মাঝখানে এই হলটির অবস্থান। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়াম থেকে কিছুটা উত্তর পার্শ্বে এই হলটি। ৫৯৮ জন শিক্ষার্থী একসাথে হলটিতে থাকতে পারেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল বাংলাদেশের রূপকার বঙ্গবন্ধুর নাম অনুসারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সর্বশেষ হলটি নির্মাণ করা হয় ২০০৩ সালে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলটি বিশ্ববিদ্যালরে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেয়িার পেছনে অবস্থিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র এই হলেই গবেষকদের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। হলটিতে ৪৫০ জন শিক্ষার্থীর এক সাথে আবাসন ব্যবস্থা পেয়ে থাকেন। মেয়েদের হল মেয়েদের হলগুলো মূল ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। মন্নুজান হল ক্যাম্পাসের প্রথম এই ছাত্রী হল নির্মিত হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রায় ৭ বছর পূর্বে। ১৯৬৪ সালে ছাত্রীদের প্রথম আবাসিক হল দানবীর হাজি মুহম্মদ মহসিনের বড় বোন বেগম মন্নুজানের নামানুসারে নামকরণ করা হয়। রোকেয়া হল মুসলিম নারী শিক্ষা আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াৎ হোসেনের স্মৃতির উদ্দেশে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের দ্বিতীয় আবাসিক হল স্থাপিত হয় ১৯৮০ সালে। তাপসী রাবেয়া হল ছাত্রীদের তৃতীয় আবাসিক হলের নামকরণ করা হয়েছে তাপসী রাবেয়া হল। বেগম খালেদা জিয়া হল ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় ছাত্রীদের চতুর্থ হল। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামানুসারে এ হলের নাম রাখা হয় ‘বেগম খালেদা জিয়া হল’। রহমতুন্নেসা হল মেয়েদের জন্য নির্মিত ৫ম হল এটি। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল এই হলটির নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী এবং বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাতা "বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের" নামানুসারে।এটি মেয়েদের ৬ষ্ঠ হল। এটি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে অত্যাধুনিক হল। এছাড়াও গবেষক ও বিদেশী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক মানের ডরমেটরি রয়েছে। যার নাম শহীদ মীর আব্দুল কাইয়ুম ইন্টারন্যাশনাল ডরমেটরি। যেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পাশে অবস্থিত। সংগঠনসমূহ রাজনৈতিক বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী জাসদ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ </div> বিজ্ঞান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাব বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এগ্রিকালচারাল ক্লাব:কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থীদের পারস্পরিক সম্পর্ক, দক্ষতা ও লিডারশিপ উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষির উন্নয়ন ও কৃষি বিষয়ক গবেষণার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত সংগঠন ।(পূর্বনাম AFSA) ধর্মীয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমানে অনেকগুলি সক্রিয় ধর্মীয় দল রয়েছে। তাবলীগ জামাআত। বাংলাদেশ আহলেহাদীছ যুবসংঘ। শিক্ষা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এডুকেশন ক্লাব সাংস্কৃতিক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমানে ২২ টিরও বেশি সক্রিয় সাংস্কৃতিক দল রয়েছে। কবিতার সংগঠন স্বনন, ঐকতান নাটকের সংগঠন অনুশীলন নাট্যদল, সমকাল নাট্যচক্র, রাজশাহী ইউনিভার্সিটি ড্রামা এসোসিয়েশন (রুডা), তীর্থক নাটক, বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটার রাজশাহী, অ্যাসোসিয়েশন ফর কালচার অ্যান্ড এডুকেশন (এস্), বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্টি রা.বি. সংসদ। গানের সংগঠন বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, উদীচী, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অরণী সাংস্কৃতিক সংসদ সাংস্কৃতিক সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক জোট, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ডিবেটিং ফোরাম(RUDF) (পূর্ব নাম BFDF), গ্রুপ অব লিবারেল ডিবেটরস (গোল্ড) বাংলাদেশ, ক্রিডেন্স, রেটোরিক, মুক্তাঙ্গন অন্যতম। মুটিং সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় মুট কোর্ট সোসাইটি। সাহিত্য-বিষয়ক সংগঠন চিহ্ন, স্নান চলচ্চিত্র বিষয়ক সংগঠন ম্যাজিক লণ্ঠন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফিল্ম সোসাইটি সাংবাদিকতা চর্চার সংগঠন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাব, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার্স ইউনিটি শিল্পচর্চা বিষয়ক সংগঠন শিল্পযাত্রা, বরেন্দ্র আর্ট সোসাইটি, জলটল। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ইচ্ছে: ইচ্ছে হচ্ছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপ: এই সংগঠনটি ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত। আদর্শ নাগরিক হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক জন সচেতনতা মূলক কাজ করে সংগঠনটি । এছাড়াও প্রশাসনিক কাজে সহযোগিতা করায় ক্যাম্পাসে অধিক পরিচিত। সংগঠনটির নিয়ন্ত্রক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সংগঠনটির গ্রুপ কমিটির সভাপতি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পাঠক ফোরাম: ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি শিক্ষার্থীদের দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে বিষয়ভিত্তিক উন্মুক্ত আলোচনা, সেমিনার আয়োজন, অফিস ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ, বিতর্ক, উপস্থাপনা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। ক্যারিয়ার সচেতন ছাত্রদের জন্য ২০১৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যারিয়ার ক্লাব আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। এই সংগঠনটি ক্যারিয়ার ফেয়ার সহ স্কিল ডেভলপমেন্ট সংক্রান্ত নানা কাজ করে। ২০১৩ সালেই RUMUNA নামে একটি সংগঠন আত্নপ্রকাশ করে, যা জাতিসংঘ ভিত্তিক একটি সংগঠন। এছাড়া ২০১৪ সালে রাজশাহী ইউনিভার্সিটি হায়ার স্টাডি ক্লাব নামে আরো একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে এবং যারা ইতোমধ্যেই উচ্চশিক্ষা নিয়ে অনেক সেমিনারের আয়োজন করেছে। এছাড়া নবজগণ ফাউন্ডেশন, রোটারিক ক্লাব, ফটোগ্রাফিক ক্লাব সহ অনেক সংগঠন রয়েছে। সমাবর্তন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৩ সালে। এরপর ১৯৫৯, ১৯৬১, ১৯৬২, ১৯৬৫, ১৯৭০, ১৯৯৮, ২০১২, ২০১৫, ২০১৮ ও ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত হয়েছে যথাক্রমে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ সমাবর্তন। তবে মুক্তিযুদ্ধের আগের সমাবর্তনগুলোর বিস্তারিত কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয়, সেগুলো স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে থাকতে পারে। উল্লেখ্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সালের ২২ এপ্রিল অধ্যাপক খান সারওয়ার মুরশিদ উপাচার্য থাকাকালীন একটি বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। উক্ত সমাবর্তনে মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ফরাসি মনীষা আঁন্দ্রে মালরোকে ডি-লিট প্রদান করা হয়। সপ্তম সমাবর্তন দীর্ঘ ২৮ বছর বিরতির পর ১৯৯৮ সালের ২৯ নভেম্বর অধ্যাপক আব্দুল খালেক ভিসি থাকাকালীন সপ্তম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। অষ্টম সমাবর্তন ২০১২ সালের ০৯ ডিসেম্বার অধ্যাপক আব্দুস সোবহান উপাচার্য থাকাকালীন অষ্টম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসুস্থ থাকায় শিক্ষামন্ত্রী এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এই সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। নবম সমাবর্তন ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি অধ্যাপক মুহম্মদ মিজানউদ্দিন উপাচার্য থাকাকালীন নবম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিল্লির জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. তালাত আহমদ। দশম সমাবর্তন সর্বশেষ দশম সমাবর্তন ২০১৮ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সমাবর্তন বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য ও ইমেরিটাস অধ্যাপক আলমগীর আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দীন। সমাবর্তনে ৬ হাজার ১৪ জন গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছিল। বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই সমাবর্তনে দুই প্রখ্যাত সাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক ও দেশবরেণ্য সাহিত্যিক সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রিতে ভূষিত করা হয়। একাদশ সমাবর্তন একাদশ সমাবর্তন ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। সমাবর্তনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এতে সমাবর্তন বক্তৃতা করেন ভারতের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রঞ্জন চক্রবর্তী। এ সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ৩ হাজার ৪৩১ জন স্নাতক নিবন্ধন করে। ক্রীড়া স্টেডিয়াম: দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেখানে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম। প্রথম এবং দ্বিতীয় বিজ্ঞান ভবনের পূর্বে এর অবস্থান। নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলা অনুশীলন এবং প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয় এখানে। এখানে আরও রয়েছে শরীরচর্চা শিক্ষা বিভাগ, স্টুয়ার্ড শাখা, রোভার স্কাউট অফিস ও ডাকঘর। স্টেডিয়ামের পূর্ব দিকে রয়েছে জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল, টেনিস কমপ্লেক্স ও বাস্কেটবল কোর্ট।স্টেডিয়ামটির ধারণক্ষমতা প্রায় ৩০০০০। বর্তমানে এই স্টেডিয়ামের নাম শেখ কামাল স্টেডিয়াম করা হয়েছে। উপাচার্যগণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২৩ মেয়াদে মোট ২০ জন উপাচার্য দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রফেসর ডক্টর ইতরাত হোসেন জুবেরী ছিলেন প্রথম উপাচার্য এবং ২৪তম ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্য হচ্ছেন অধ্যাপক গোলাম সাব্বির। প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ আবদুল বারী ও প্রফেসর ডক্টর এম আবদুস সোবহান দুই মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেছেন। জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর ডক্টর সৈয়দ আলী আহসান এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উপ-উপাচার্যগণ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত মোট ১১ জন উপ-উপাচার্যের তালিকা দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রফেসর ড. আমানুল্লাহ আহমদ ছিলেন প্রথম উপ-উপাচার্য। বর্তমানে, প্রফেসর আনন্দ কুমার সাহা ও প্রফেসর ড. চৌধুরী মো. জাকারিয়া উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। উল্লেখযোগ্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষক বাংলাদেশের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা, ফেলোশিপ ও ছাত্র হিসেবে যুক্ত ছিলেন। চিত্রশালা আরও দেখুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তথ্যসূত্র বহিঃসংযোগ ১৯৫৩-এ পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত ১৯৫৩-এ প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রাজশাহী জেলার বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকেন্দ্র
https://en.wikipedia.org/wiki/University_of_Rajshahi
University of Rajshahi
The University of Rajshahi, also known as Rajshahi University or RU (Bengali: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়), is a public research university located in Motihar, Rajshahi, Bangladesh. It is the second oldest and third largest university in Bangladesh. The university's 59 departments are organized into 12 faculties. It is one of the four autonomous by the act (1973) of Bangladesh.
2526
https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%9B%E0%A6%AF%E0%A6%BC%20%E0%A6%A6%E0%A6%AB%E0%A6%BE%20%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8B%E0%A6%B2%E0%A6%A8
ছয় দফা আন্দোলন
ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন। ৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছান এবং তার পরদিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে নিজেই ৬ ফেব্রুয়ারি এর সম্মেলন বর্জন করেন। ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি সংগৃহীত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা সংবলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। যার নাম ছিল ছয় দফা আমাদের বাঁচার দাবি। ২৩শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীদলীয় সম্মেলনে ৬ দফা পেশ করেন। এরপর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে(প্ররাষ্ট্র/উপরাষ্ট্র)পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়। প্রতি বছর ৭ই জুন বাংলাদেশে '৬ দফা দিবস' পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া , শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি নিহত হন। ৬ দফা আন্দোলনে প্রথম নিহত হয়েছিলেন সিলেটের মনু মিয়া। ছয় দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফা ছিল। ছয় দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। ইতিহাস ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ রাজত্ব শেষে পাকিস্তান নামে একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পূর্ব পাকিস্তান (পরে বাংলাদেশ) জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল এবং পাকিস্তানের মোট রপ্তানি আয়ের সংখ্যাগরিষ্ঠ রপ্তানি (যেমন পাট) হতো পূর্ব পাকিস্তান থেকে। তবে, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতা ও অর্থনৈতিক সুবিধা আনুপাতিক ছিল না। বছরের পর বছর পূর্ব পাকিস্তান আঞ্চলিক ভিত্তিতে ক্রমাগত বৈষম্যের শিকার হওয়ায় গুরুতর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এর ফলে, অর্থনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা বৈষম্য সম্পর্কে প্রশ্ন বাড়াতে শুরু করে এবং ঐতিহাসিক ছয় দফা প্রদান করে। অর্থনৈতিক বৈষম্যের একটি পরিসংখ্যান এখানে দেওয়া হলঃ খসড়া প্রণয়ন রেহমান সোবহান, নুরুল ইসলামসহ প্রমুখ বুদ্ধিজীবী ছয় দফার খসড়া প্রণয়ন করেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা দাবিসমূহ প্রস্তাব - ১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি: লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে, যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে; প্রস্তাব - ২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা: কেন্দ্রীয় (ফেডারেল) সরকারের ক্ষমতা কেবল মাত্র দু'টি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে নিরঙ্কুশ। প্রস্তাব - ৩ : মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা: মুদ্রার ব্যাপারে নিম্নলিখিত দু'টির যে কোন একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা চলতে পারেঃ- (ক) সমগ্র দেশের জন্যে দু'টি পৃথক, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে। অথবা (খ) বর্তমান নিয়মে সমগ্র দেশের জন্যে কেবল মাত্র একটি মুদ্রাই চালু থাকতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শাসনতন্ত্রে এমন ফলপ্রসূ ব্যবস্থা রাখতে হবে যাতে করে পূর্ব-পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ হয়। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক ব্যাংকিং রিজার্ভেরও পত্তন করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পৃথক আর্থিক বা অর্থবিষয়ক নীতি প্রবর্তন করতে হবে। প্রস্তাব - ৪ : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা: ফেডারেশনের অঙ্গরাজ্যগুলির কর বা শুল্ক ধার্যের ব্যাপারে সার্বভৌম ক্ষমতা থাকবে। কেন্দ্রীয় সরকারের কোনরূপ কর ধার্যের ক্ষমতা থাকবে না। তবে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের জন্য অঙ্গ-রাষ্ট্রীয় রাজস্বের একটি অংশ কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাপ্য হবে। অঙ্গরাষ্ট্রগুলির সবরকমের করের শতকরা একই হারে আদায়কৃত অংশ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল গঠিত হবে। প্রস্তাব - ৫ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা: (ক) ফেডারেশনভুক্ত প্রতিটি রাজ্যের বহির্বাণিজ্যের পৃথক পৃথক হিসাব রক্ষা করতে হবে। (খ) বহির্বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অঙ্গরাজ্যগুলির এখতিয়ারাধীন থাকবে। (গ) কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা সমান হারে অথবা সর্বসম্মত কোন হারে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিই মিটাবে। (ঘ) অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির মধ্যে দেশজ দ্রব্য চলাচলের ক্ষেত্রে শুল্ক বা করজাতীয় কোন রকম বাধা-নিষেধ থাকবে না। (ঙ) শাসনতন্ত্রে অঙ্গরাষ্ট্রগুলিকে বিদেশে নিজ নিজ বাণিজ্যিক প্রতিনিধি প্রেরণ এবং স্ব-স্বার্থে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের ক্ষমতা দিতে হবে। প্রস্তাব - ৬ : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা: আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে। আরও দেখুন লাহোর প্রস্তাব বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথ্যসূত্র পূর্ব পাকিস্তানে সংঘটিত আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের কারণ ও সূচনালগ্ন বাংলাদেশের ইতিহাস ১৯৬৬-এ পাকিস্তান রাজনৈতিক কর্মসূচি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬-এ পূর্ব পাকিস্তান
https://en.wikipedia.org/wiki/Six_point_movement
Six point movement
The Six point movement was a significant political campaign in East Pakistan, led by Sheikh Mujibur Rahman, advocating for greater autonomy for the region. Initiated in 1966, the movement aimed to address the six demands proposed by a coalition of Bengali nationalist political parties to end the perceived exploitation by West Pakistani rulers. This movement is regarded as a crucial milestone on the path to Bangladesh's independence.